যামিমাং পুষ্পিতাং বাচং প্রবদন্ত্যবিপশ্চিতঃ৷
বেদবাদরতাঃ পার্থ নান্যদস্তীতি বাদিনঃ॥৪২॥
পদপাঠ: যাম্ । ইমাম্ । পুষ্পিতাম্ । বাচম্ । প্রবদন্তি । অবিপশ্চিতঃ । বেদবাদরতা । পার্থ । ন । অন্যত্ । অস্তি । ইতি । বাদিনঃ॥
পদার্থ: (বেদবাদরতাঃ) বেদের মর্ম জানেনা এমন (অবিপশ্চিতঃ) অবিবেকী ব্যক্তি (যাম্ ইমাম্) যে এই (বাচম) বাণীর (পুষ্পিতাম্) অর্থাবাদরূপ কথন করে থাকে (পার্থ) হে অর্জুন! সেই ব্যক্তি (ন অন্যত্ অস্তি) বেদে তদ্ভিন্ন অন্য কোন পরমার্থ উপদেশ নেই (ইতি বাদিনঃ) এরূপ বলে থাকে অর্থাৎ বেদের তত্ত্ব না বুঝিয়া অজ্ঞানী ব্যক্তি ইহার অনেক অর্থাভাস করে থাকে।
সরলার্থ: বেদের মর্ম জানেনা এমন অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন, অবিবেকী ব্যক্তি বেদ বাণীর অর্থাবাদরূপ কথন করে থাকে। হে অর্জুন! সেই ব্যক্তি বেদে তদ্ভিন্ন অন্য কোন পরমার্থ উপদেশ নেই এরূপ বলে থাকে অর্থাৎ বেদের তত্ত্ব না বুঝিয়া অজ্ঞানী ব্যক্তি ইহার অনেক অর্থাভাস করে থাকে।
বিশ্লেষনঃ
পদার্থঃ-
( অবিপশ্চিতঃ) পন্ডিতের নাম বিপশ্চিৎ। যে পন্ডিত নয় তাকে অবিপশ্চিতঃ বলে,যে অবিপশ্চিতঃ ব্যক্তি ( যাম্) যে ( ইমাম) এই যে জন্ম কর্ম ফলপ্রদ এই বাক্যের পরের শ্লোকে বর্ননা করে যাইবে ( পুষ্পিতাম্) বিস্তীর্ন হবার মত ( বাচম) বাণীকে ( প্রবদন্তি) বলিয়া থাকে, হে পার্থ! সে ( বেদবাদরতা) বেদের অর্থবাদে রত,অর্থাৎ বেদের সঠিক অর্থ না করিয়া অন্য অর্থে রত থাকে এবং বেদের মর্মকে না জানিয়া বেদের নিন্দা করে( অন্যত্) ইহা হতে ভিন্ন ( ন, অস্তি) কোন ফল নাই( ইতি, বাদিনঃ) এরকম কথা বলতে থাকে।।
.
ভাষ্যঃ--
বেদের অর্থভাসে রত লোক এই রকম বিচার করে যে, সব মনোরথ যজ্ঞাদি কাম্য কর্মে সিদ্ধ হয়ে যায় কোন অন্য পুরুষার্থের আবশ্যকতা নাই, যেমন যজ্ঞের ফল শুধুমাত্র পুত্রপ্রাপ্তিকে মানিয়া থাকে এবং কেহ শুধু বৃষ্টি হবার জন্য মানিয়া থাকে, যেরূপ সোমযজ্ঞের ফল ব্রহ্মহত্যাদি পাপকে দূর করিবার ফর্দ মানা হয়,এবং কেহ এক অন্য পরিস্থিতে যজ্ঞকে পশুবদের ফর্দ মানিয়া থাকে। এই প্রকার বেদবাদে বিস্তৃত হয়ে এই বানীকে পুষ্পিত বানায় কিন্তু বাস্তবে এমন কোন তত্ব নাই।
.
★ নিষ্কাম যজ্ঞের কথা ভূলে বদ্ধপুরুষগন নানা প্রকারে বিক্ষিপ্তভাবে বেদের অর্থবাদ করে থাকে এবং বেদের মূল লক্ষসমুহকে বুঝতে অক্ষম হয়।
ওম্ শান্তিঃ।।
গীতা বিশ্লেষনঃ
"কামাত্মানঃ স্বর্গপরা জন্মকর্মফলপ্রদাম্ ।
ক্রিয়াবিশেষবহুলাং ভোগৈশ্বর্যগতিং প্রতি ॥"
=[]গীতা ২/৪৩ []=
.
পদার্থঃ--
( কামাত্মানঃ) সেই ব্যক্তি কামাত্মা অর্থাৎ তাহার আত্ম কামনা ( স্বর্গপরাঃ) এবং সে স্বর্গকে কামনাকারী এ জন্য সে এ রূপে বানীকে শরন নেয়, যে ( জন্ম কর্ম ফলপ্রদাম) জ্ঞানরূপী কর্মের ফল প্রদান কারী,কিন্তু কিভাবে? ( ক্রিয়াবিশোষবহুলাম্) ক্রিয়ার যে বিশেষতা তার অধিকতা যাহাতে অর্থাৎ ব্যর্থ ক্রিয়ার অধিকতা যাহাতে ( ভোগৈশ্বর্য্যগতিংপ্রতি) ভোগ এবং ঐশ্বয়ের গতির এরূপ বানীর আশ্রয় নিয়ে থাকে।
.
ভাষ্যঃ--
কামী লোক আপন কামনার সিদ্ধির জন্য নানা প্রকার অর্থবাদ বেদে কল্পনা করে নেয়, কেহ বলে যে ইহাকে পড়িলে শত্রু মড়িয়া যায়,কেহ বলে,ইহাকে করিলে রাজ্য মিলবে, ইত্যাদি অনেক অর্থের কল্পনা করতে করতে পুরুষার্থ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে যায়, এ জন্য এখানে অর্থবাদ দূর করিবার জন্য কৃষ্ণজী অর্জুনকে পরের শ্লোকে নিশ্চযাত্মক সত্য বুদ্ধির উপদেশ করছে।।
.
★বেদবিরোধীগণ এই শ্লোকটিকে না বুঝিয়া বেদের নিন্দাবাদ মনে করে অর্থাৎ বেদের অর্থবাদ করে। অর্থবাদ শব্দের অর্থ হল না বুঝিয়া আলাপ আলোচেনা। বস্তু এই শ্লোকে বেদের কোন নিন্দা নাই।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ