উনবিংশ শতাব্দীতে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়, উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে স্ত্রী শিক্ষার ব্যবস্তা ছিল না, মাঝামাঝি সময়ে প্রাথমিক স্কুলের প্রতিষ্ঠা হয় যাতে মেয়েরা শিক্ষালাভ করার সুযোগ পায়। আগের ২০০০ বছরে কেবল উচ্চ বর্ণের মেয়েরাই শিক্ষালাব করত,অন্যরা ছিল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। উনবিংশ শতাব্দীতেই উচ্চ শিক্ষালাব করে অনেক মেয়ে অধ্যাপিকা, নার্স এবং ডাক্তার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শতাব্দীতে ভারতীয় সমাজে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যেখানে স্ত্রী শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না,তারা অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে ছিল, সেখানে এই শতাব্দীর শেষে অনেক মেয়ে স্কুল এবং কলেজে শিক্ষালাভ করতে শুরু করেন।
এই সময় মেয়েদের অবস্থা উন্নতির জন্য বহু বিদুষী মহিলাগণও সচেষ্ট হন। এই যুগে রমাবাঈ রানাডে মেয়েদের উন্নতির জন্য চেষ্টা চালান তাতেও হিন্দু নামক মূর্খদের কাছে নানা ভাবে অপমানিত হন। রমাবাঈ সংস্কৃতের পন্ডিতা ছিলেন। 1878 সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে তাঁকে সম্বর্ধনা দিয়ে ' পণ্ডিতা' উপাধি প্রদান করা হয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্কৃত গ্রন্থের ব্যাখ্যাতা হিসেবে দেশব্যাপী খ্যাতির জন্য দেওয়া হয়েছিল 'সরস্বতী ' উপাধি। রমাবাঈ হলেন " পণ্ডিতা রমাবাঈ সরস্বতী "। সেই সময়কালে একজন ভারতীয় নারীর এমন প্রাপ্তি অভাবনীয় !
তিনি সংস্কৃতের পন্ডিতা, তিনি দেশের বিভিন্ন অংশে ভ্রমণ করে স্ত্রীদের ওপর সামাজিক অন্যায়ের স্বরূপ সকলের সামনে তুলে ধরেন। তিনি আর্য়-মহিলা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন সেখানে ১৮৮২ সালে ৩০০ জন মহিলা শিক্ষালাভ করেছিলেন। ১৮৮৯ সালে তিনি বিধবাদের জন্য শ্রদ্ধাসদন আরম্ভ করেন। তিনি অশিক্ষিত স্ত্রী এবং বিধবাদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার আয়োজন করেন।
Pandita Ramabai & her gifted daughter Manoramabai |
ভারতের মহারাষ্ট্র নামক রাজ্যের গুণমলের অরণ্যে পন্ডিতা রমাবাঈ জন্মগ্রহণ করেন। রামাবাঈয়ের পিতা অতন্ত শাস্ত্রী একজন শিক্ষিত ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি ছিলেন মুক্ত বুদ্ধির একজন সমাজ সংস্কারক। তখন নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল রমাবাঈ-এর পিতা অনন্ত শাস্ত্রী তার বালিকা বধূকে শিক্ষা দানের উদ্যোগ নেয়ার তৎকালীন ব্রাহ্মণ সমাজের রোষানলে নিপতিত হন। এই সময় অনন্ত শাস্ত্রী গ্রাম ছেড়ে বনাঞ্চলে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এই নির্বাসিত জীবনে গুণমলের অরণ্যে জন্মগ্রহণ করেন পন্ডিতা রমাবাঈ, 23শে এপ্রিল, 1858 সালে জন্মগ্রহণ করেন। 1877 সালের দুর্ভিক্ষে রামাবাঈয়ের পিতা ও মাতা অনন্ত শাস্ত্রী ও লক্ষী বাঈ উভয়েই মারা যান। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর রামাবাঈ ও তার ভাইকে নিয়ে পিতার পথ ধরেন। নারী শিক্ষা প্রসারের কাজে অগ্রসর হন। তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা।
কলিকাতা হাইকোর্টের উকিল বিপিন বিহারী মেধ্বীর সাথে 13 নভেম্বর, 1880 সালে তাঁর বিবাহ হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর রমাবাঈ কলকাতা ছেড়ে পুনায় চলে যান। সেখানে ‘আর্য মহিলা সমাজ’ নামে এক সংগঠন গড়ে তোলেন। পুনাতে তিনি পুনা সেবাসদন এবং নার্সিং মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন স্তাপন করেন। ব্রিটিশ ভারতে 1882 সালে শিক্ষা বিষয়ে একটি কমিশন গঠিত হয়। রামাবাঈ এই কমিশনের কাছে, শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, মহিলা স্কুল ইন্সপেক্টর নিয়োগ করা এবং নারীদের চিকিৎসার জন্য মহিলা ডাক্তার প্রয়োজন, তাই মেডিকেল কলেজে মেয়েদের ভর্তি হবার সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ পেশ করেন। এই সুপারিশ তৎকালীন সময় বিপুল আলোড়ণ সৃষ্টি করেন। যার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে লেডী ডাফরিন মেয়েদের মেডিকেল শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়ার আন্দোলন করেন। 1883 সালে রমাবাঈ শিক্ষক হিসেবে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ইপিসকোপালিয়ান চার্চে যোগ দেন। এই চার্চের আমন্ত্রণে রমাবাঈ 1886 সালে শিক্ষা লাভের জন্য আমেরিকা গমন করেন। আমেরিকা থেকে ফিরে এসে বম্বেতে তিনি মহারাষ্ট্রের প্রথম কিশোরী বিধবাদের জন্য স্কুল ও হোস্টেল ‘সারদা সদন’ চালু করেন 1889 সালে।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ