গীতা ২/৪৫ কি প্রক্ষিপ্ত ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

20 August, 2019

গীতা ২/৪৫ কি প্রক্ষিপ্ত ?

  ত্রৈগুণ্যবিষয়া বেদা নিস্ত্রৈগুণ্যো ভবার্জুন৷

নির্দ্বন্দ্বো নিত্যসত্ত্বস্থো নির্যোগক্ষেম আত্মবান্॥৪৫॥
পদপাঠ : ত্রৈগুণ্যবিষয়াঃ । বেদাঃ । নিস্ত্রৈগুণ্যঃ । ভব । অর্জুন । নির্দ্বন্দ্বঃ । নিত্যসত্ত্বস্থঃ । নির্যোগক্ষেমঃ । আত্মবান্ ॥
পদার্থ: তিন গুনের যে ভাব তাকে ''ত্রৈগুণ্য" বলা হয় অর্থাৎ তিন গুণযুক্ত যে পুরুষ রয়েছে তাহার বিষয় বেদ [ত্রৈগুণ্যবিষয়া বেদা=ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতি] ,এইজন্য "ত্রৈগুণ্যবিষয়া বেদা" বলেছেন, হে অর্জুন! এই মনুষ্য তিন গুণের ভাব = তিন গুণযুক্ত, এইজন্য বেদের অর্থাভাসে ফেসে যায় আর তুমি নিস্ত্রৈগুণ্যো = তিন গুণ থেকে [ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতির আকৃষ্টতা] রহিত (নির্দ্বন্দ্বঃ) শীত, উষ্ণ, কাম, ক্রোধ, মোহাদি দ্বন্দ্ব থেকে রহিত (নিত্যসত্ত্বস্থঃ) সদা সত্ত্বগুণে স্থির অর্থাৎ সত্ত্বপ্রধান হয়ে যাও (নির্যোগক্ষেম) অপ্রাপ্তিকে প্রাপ্তির নাম "যোগ" আর প্রাপ্তির রক্ষাকে "ক্ষেম" বলা হয় অর্থাৎ এই প্রকার নিষ্কাম কর্ম করো যাতে অপ্রাপ্তিকে প্রাপ্তি আর প্রাপ্তির রক্ষা করার চিন্তা না হয় (আত্মবান্) "আত্মবিদ্যতেযস্য স আত্মবান্"= তুমি আত্মিক বলশালী হও॥
ভাষ্যঃ - প্রকৃতির সত্ত্ব, রজ, তম এই তিন গুণে যে ফেসে গেছেন, সে অর্থাভাস এবং অর্থবাদ থেকে কদাপি বাঁচতে পারে না, সত্ত্বপ্রধান ব্যক্তিই বেদার্থে বেদবাদ থেকে বাঁচতে পারে, এই অভিপ্রায়ে "নিত্যসত্ত্বস্থো" বলেছেন, আর যে ব্যক্তি এর এরূ অর্থ করেন - বেদ কেবল তিন গুণ যুক্ত আর তুমি তিন গুণ থেকে পার হয়ে যাও, 'এই অর্থ সঠিক নয় ' কেননা সত্ত্ব গুণও তিন গুণের মধ্যে একটি গুণ তাহলে ''নিস্ত্রৈগুণ্যো'' কিভাবে? এইজন্য ''নিস্ত্রৈগুণ্যো'' এর অর্থ সত্ত্বপ্রধান বলা হয়েছে, অতএব বেদের ন্যূনতা এই শ্লোকে নেই কিন্তু সত্ত্ব গুণের প্রধানতার উপদেশ রয়েছে, কারন যে ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইহার সহিত সম্বদ্ধ রাখে সে জন্ম-মৃত্যু চক্রবন্ধনে আবদ্ধ হয় কিন্তু "ঊর্ধ্বং গচ্ছন্তি সত্ত্বস্থা (গীতা-১৪/১৮)" সত্ত্বপ্রধান ব্যক্তিই উর্দ্ধগতি প্রাপ্ত হয় "সত্ত্বাৎ সংজায়তে জ্ঞানং (গীতা-১৪/১৭)" সত্ত্বগুণ হইতেই জ্ঞান উৎপন্ন হয়, "ন বিনা জ্ঞান-বিজ্ঞানে মোক্ষস্যাধিগমো ভবেত্ (মহা০, শান্তি০-৩২৬/২২)" জ্ঞান-বিজ্ঞান ছাড়া মোক্ষ প্রাপ্তি হয় না অর্থাৎ জ্ঞান-বিজ্ঞান দ্বারাই মোক্ষপ্রাপ্তি হয়; জ্ঞানের পক্ষে শ্রীকৃষ্ণ গীতা অসংখ্য শ্লোক বলেছেন এটাও বলেছেন যে "ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে (গীতা-৪/৩৮) অর্থাৎ এই জগতে জ্ঞানের ন্যায় পবিত্র আর কিছুই নেই , আর এই ভাবকে প্রয়োগ করলে বর্তমান শ্লোক সঙ্গত হতে পারে, অন্যথা মোক্ষার্থ শ্রোত বেদকে কদাপি বর্ণন করতেন না আর না বলতেন যে, বিজ্ঞানী ব্রাহ্মণদের মোক্ষার্থের একমাত্র সাধন বেদ, যেমন—
যাবানর্থ উদপানে সর্বতঃ সংপ্লুতোদকে৷
তাবানসর্বেষু বেদেষু ব্রাহ্মণস্য বিজানতঃ॥৪৬॥
পদপাঠ : যাবান্ । অর্থঃ । উদপানে । সর্বতঃ । সংপ্লুতোদকে । তাবান্ । সর্বেষু । বেদেষু । ব্রাহ্মণস্য । বিজানতঃ ॥
পদার্থ + ভাবার্থঃ - (যাবান্) যেমন ( অর্থঃ) প্রয়োজন (উদপানে,সর্বতঃ,সংপ্লুতোদকে) সর্বদিক হইতে জল প্রবাহিত জলাশয়ের মতো হয় অর্থাৎ কেহ তা থেকে জমিনে জল দেয়, কেহ গৌ আদিকে পান করায়, কেহ স্বয়ং পান করেন, এবং সর্ব প্রয়োজন সিদ্ধির জন্য সেই জলাশয় পর্যাপ্ত হয়ে থাকে ( তাবান্) তেমনই ( সর্বেষু) সব (বেদেষু) বেদের মধ্যে ( বিজানতঃ,ব্রাহ্মণস্য) বিজ্ঞানী ব্রাহ্মণের সব প্রয়োজন হয় অর্থাৎ ব্রাহ্মণের দৃষ্টিতে ধর্ম সম্বন্ধী সর্বার্থ সিদ্ধির আকর বেদ, পরন্তু ওই মোক্ষার্থীর জন্য মোক্ষোপযোগী কথন উপদেশ রয়েছে॥
শ্রীকৃষ্ণ অন্য অনেক শ্লোকেই বেদের মহত্ত্ব প্রকাশ করেছেন -
বেদানাং সামবেতোহস্মি (গীতা-১০/২২)
অর্থাৎ সমস্ত বেদের মধ্যে আমি সামবেদ।।
[অহম্]ঋক্ সাম যজুরেব চ (গীতা-৯/১৭)
ঋগ্বেদ,যজুর্বেদ, সামবেদও আমিই।
যারা বলেন বেদ কেবল ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতিরই বর্ণন করে, পরমাত্মার নয় তাই শ্রীকৃষ্ণ উপরোক্ত ২/৪৫ শ্লোকে বেদ ত্যাগ করতে বলেছে তাদের ভাবনা সঠিক নয়। উপনিষদেই বলা হয়েছে-
সর্বে বেদা যৎ পদমামনন্তি....(কঠোপনিষদ-১/২/১৫)
(যৎ) যেই (পদম্) প্রাপণীয় ব্রহ্মের (সর্বে বেদাঃ) ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ তথা অথর্ববেদ এই সকল চারো বেদ (আমনন্তি) বারংবার প্রতিপাদন করে।
অর্থাৎ বেদ বারংবার পরমাত্মার বর্ণন করে। গীতায়ও তাই বলা হয়েছে-
বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যো (গীতা-১৫/১৫)
অর্থাৎ আমিই সর্ববেদ দ্বারা জ্ঞাতব্য বিষয়।
অর্থাৎ সকল বেদেই পরমাত্মার বর্ণন করা হয়েছে।
ত্রৈগুণ্যবিষয়াঃ বেদাঃ বলতে কোন কোন ভাষ্যকার ভৌতিক বিজ্ঞানীদের বিষয় ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতি বুঝিয়েছেন। ঈশাবাস্যোপনিষদ্-৯ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে - যে কেবল ভৌতিক বিজ্ঞানে রত থাকে সে গভীর অন্ধকারে প্রবেশ করে।
একপক্ষ বলে থাকে যে, বেদ অপরা বিদ্যার (ভৌতিক বিজ্ঞানের) আর উপনিষদ এবং গীতা পরা (আধ্যাত্ম) বিদ্যার গ্রন্থ। তাই বেদ আমাদের প্রয়োজন নেই আমরা গীতাতেই সন্তুষ্ট। যদিও তাদের এই ভাবনা সঠিক নয় কিন্তু তাদের জন্যও উক্ত ৯ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে - যে কেবল আধ্যাত্মিকতায় রত থাকে সে আরো অধিক অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। ১১ নং মন্ত্রেই বলা হয়েছে - যে ভৌতিক বিজ্ঞান এবং আধ্যাত্ম বিজ্ঞান উভয়ই জানেন সেই মোক্ষপ্রাপ্ত হয় বা করতে পারেন।
তাই বেদ ত্যাগ করতে বলা, এই যুগে, সেই যুগে বেদ প্রয়োজন নেই, বেদ চলেনা এইসকল অবান্তর মন্তব্য করা মূঢ়তা ব্যতীত আর কিছুই নয়।
বেদ ত্যাগকারী সম্পর্কে বেদেও বলা হয়েছে -
যস্তিত্যাজ সচিবিদং সখায়ং ন তস্য বাচ্যপি ভাগো অস্তি।
যদীং শৃণোত্যলকং শৃণোতি নহি প্রবেদ সুকৃতস্য পন্থাম্।।
---(ঋগ্বেদ - ১০/৭১/৬)
পদার্থঃ- (যঃ) যে মনুষ্য (সচিবিদম্) সর্বপ্রকার জ্ঞান আহরণে সহায়তা প্রদানকারী (সখায়ম্) বেদরূপী মিত্র কে (তিত্যাজ) ত্যাগ করে (তস্য) তাহার (বাচি অপি) বাণীতেও, কথনেও (ভাগঃ) কোন সার তত্ত্ব (ন অস্তি) রয় না (ঈম্) সেই ব্যক্তি (যত্) বেদ ভিন্ন অতিরিক্ত যাহা কিছু (শৃণোতি) শ্রবণ করে (অলকম্) ব্যর্থ'ই শ্রবণ করে। এমন মনুষ্য (সুকৃতস্য) সুকৃত, বাস্তবিক জ্ঞান, পূণ্য ধর্মের, সুন্দর কর্মানুষ্ঠানের (পন্থাম্) মার্গ সম্পর্কে (ন প্রবেদ) জানে না।
ভাবার্থঃ- বেদ আমাদের জীবন ধন, বেদ আমাদের সর্বস্ব। অতঃ প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিদিন বেদের সাধ্যায় করা উচিত্। কেননা -
১. বেদ সর্বপ্রকার জ্ঞান প্রাপ্ত করায়।
২. যে মনুষ্য বেদ কে ত্যাগ করে, বেদের সাধ্যায় করেনা, তাহার বাণী-কথনেও কোন প্রকার তত্ত্ব থাকে না।
৩. বেদ ত্যাগকারী ব্যক্তি যাহা কিছু শ্রবণ করে, তাহা সবকিছুই ব্যর্থ হয়, তা দ্বারা জীবনের নির্মাণ এবং উত্থান হয়না।
৪. বেদ ত্যাগকারী ব্যক্তির নিজ কর্তব্য কর্মের বোধ হয়না।

✍️প্রিয়রত্ন বিদ্যার্থী

ত্রৈগুণ্যবিষয়া বেদা নিস্ত্রৈগুণ্যো ভবার্জুন। 

নির্দ্বন্দ্বো নিত্যসত্বস্থো নির্যোগক্ষেম আত্মবান।। ( গীতা ২/ ৪৫)


পদার্থঃ তিনগুনের যে ভাব তাকে ' ত্রৈগুণ্য ' বলা হয় অর্থাৎ তিনগুনযুক্ত যে পুরুষ তাহার বিষয় বেদ এ জন্য ' ত্রৈগুণ্যবিষয়াঃ বেদাঃ = বলা হয়েছে, হে অর্জুন! এই মনুষ্য তিন গুনের ভাব - তিনগুনধারী, এ জন্য বেদের অর্থভাসে ফেসে যায় এবং তুমি "" নিস্ত্রৈগুণ্যোঃ = তীন গুন থেকে রহিত ""নিত্যসত্বস্থো = সদা সত্যগুনে স্থির অর্থাৎ সত্ব প্রধান হয়ে যাও "" নির্যোগক্ষেম = অপ্রাপ্তের প্রাপ্তি " যোগ' অার প্রাপ্তের রক্ষাকে ক্ষেম বলা হয় অর্থাৎ এই প্রকার নিষ্কাম কর্ম কর যেভাবে অপ্রাপ্তের প্রাপ্তি এবং প্রাপ্তের রক্ষা চিন্তা যেন না হয় "" আত্মবান = তুমি অত্মিক বলবান হও।

ভাষ্য- প্রকৃতির সত্ব, রজ, তম এই তিন গুনে যে ফেসে গেছে সে অর্থভাস এবং অর্থবাদ থেকে কদাপি বাচতে পারে না। সত্বপ্রধান লোকই বেদার্থে বেদবাদ থেকে বাচিতে পারে, এই অভিপ্রায়ে " নিত্যসত্বস্থো " বলা হয়েছে।[ব্রহ্মমুনি কৃত ভাষ্য]

।।আর যে সব লোক এই অর্থ করে যে, বেদ তিন গুনে গুনময় সেহেতু তুমি তিন গুনের উপরে উঠ। এ রকম অর্থ ঠিক নয় বরং এ রকম ভাষ্যকারী নিজেই ত্রিগুনে অাবদ্ধ হয়ে বেদে অর্থবাদ করে থাকে। অর্থবাদ শব্দের অর্থ হল কোন কিছুকে না বুঝিয়া মন্তব্য করা। এরূপ ভাষ্যকার বেদের গূঢ় উদ্দেশ্য না বুঝিয়া বেদে বিভিন্ন বিষয় দেখিয়ে অর্থবাদ করে থাকে।
।।এমনকি সত্ব ও তীন গুনের একগুন কিন্তু " নিত্রৈগুন্য কিভাবে হবে?
এ জন্য " নিত্রৈগুন্য ' এর অর্থ সত্বপ্রধান গুনকে বলা হয়েছে। অতএব বেদের নূন্যতা এই শ্লোকে নাই কিন্তু সত্ব গুনের প্রধানতার উপদেশ আছে আর এরকম ভাবের লাপন করিতে অজ্ঞ্যমাণ শ্লোক সঙ্গত হয়ে থাকে অন্যথা মোক্ষের একমাত্র সাধন বেদ বলিয়াছে। সেহেতু বেদের মহত্ব পরের শ্লোকে বর্ননা করেছে ( গী ২/৪৬)।।

বেদের মূল উদ্দেশ্য মোক্ষ লাভ করানো ( যজু ৩১/১৮)। তার পর ও যাহারা বেদকে ত্রিগুনের কারখানা বলেন তারা নিজেরাই বেদের অর্থভাসে রত আছেন। অর্থাৎ বেদেকে তারা বুঝতে না পেরে বিভিন্ন মনগড়া কথা বলে বেড়ায়।

ও৩ম্ শম্

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ