ম্যাক্সমুলার ও ভারতের অবস্থা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

19 September, 2019

ম্যাক্সমুলার ও ভারতের অবস্থা

ফ্রেডরিক ম্যাক্সমুলার  (জন্ম: ৬ই ডিসেম্বর, ১৮২৩ - মৃত্যু: ২৮শে অক্টোবর, ১৯০০) ছিলেন বিখ্যাত ভারতবিশারদদার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ, সমাজতত্ত্ববিদ, অধ্যাপক, সংস্কৃত ভাষায় সুপ্রসিদ্ধ জার্মান পণ্ডিত ও অনুবাদক। 

মুলার ৬ই ডিসেম্বর, ১৮২৩ সালে তৎকালীন প্রুশিয়া সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত আন্‌হাল্ট রাজ্যের রাজধানী ডেসাউ শহরে (বর্তমানঃ মর্জন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা উইলহেম মুলার ছিলেন একজন বিশিষ্ট রোমান্টিক কবি ও গ্রন্থাগারিক। উইলহেম মুলারের কবিতাগুলোকে অস্ট্রিয়ান সুরকার 'ফ্র্যাঞ্জ স্কুবার্ট' 'ডাই স্কুন মুলারিন' এবং 'উইন্টাররিজ' নামের দু'টি গানে সুরারোপ করেন। তার মা এডেদলহেইড মুলার ছিলেন অ্যানহাল্ট-ডেসাউ শহরের মুখ্যমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠা কন্যা। ফেলিক্স মেন্ডেলসন এবং কার্ল মারিয়া ভন ওয়েবার-কে ধর্ম পিতা-মাতা হিসেবে সম্বোধন করতেন মাক্স মুলার। মাত্র চার বছর বয়ঃক্রমকালে পিতার মৃত্যুর পর আর্থিক কৃচ্ছ্রতার মধ্য দিয়ে শৈশবকাল অতিক্রম করতে হয়েছিল তাকে।

শৈশবে মাক্স মুলার সঙ্গীতশাস্ত্রে বিশেষ মেধার পরিচয় দিলেও জনৈক শুভানুধ্যায়ীর পরামর্শে জীবিকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঙ্গীতসাধনা পরিত্যাগ করেন। ১৮৩৬ সালে স্থানীয় বিদ্যালয়ের পড়াশোনা সমাপন করেন। ১৮৪১ সালে লিপজিগ নগরে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন বিভিন্ন প্রাচীন ইউরোপীয় ভাষা শিক্ষার উদ্দেশ্যে। গ্রীকল্যাটিনআরবীফার্সি ইত্যাদি ভাষার সঙ্গে সদ্যস্থাপিত সংস্কৃত ভাষার পাঠ্যক্রমও অধ্যয়ন করেন। ১৮৪৩ সালে বারুখ স্পিনোজা'র দর্শন-চিন্তার উপর লিখিত অভিসন্দর্ভের জন্য 'লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়' থেকে পি.এইচ-ডি বা 'ডক্টর অব ফিলোসোফি' উপাধিপ্রাপ্ত হন।

অনতিকাল পরে ১৮৪৪ সালে মাক্স মুলার তার প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তা ছিল বিষ্ণু শর্মা'র সংস্কৃত ভাষায় রচিত ভারতীয় উপকথার সংগ্রহশালা ও হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদের শেষাংশ হিতোপদেশ গ্রন্থের জার্মান ভাষার অনুবাদ। 

ঐ বছরই তিনি বার্লিন নগরে চলে আসেন আরো ভালোভাবে সংস্কৃত শিক্ষালাভের জন্য। সেখানে তিনি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবিশারদ অধ্যাপক ফ্রাঞ্জ বোপ্‌ ও দার্শনিক ফ্রেডরিখ শিলিংয়ের কাছে যথাক্রমে সংস্কৃত এবং দর্শন অধ্যয়ন করেন। তিনি সিলিংয়ের জন্য উপনিষদ অনুবাদ করতে শুরু করেন। সিলিং ভাষার ইতিহাসের সাথে ধর্মের ইতিহাসের সম্পর্ক বিষয়ে মুলারকে যথোপযুক্ত শিক্ষা দেন। এক বছর পর প্যারিস নগরে এসে প্রখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক ইউগেনি বার্নোফের তত্ত্বাবধানে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষালাভ করতে থাকেন। বার্নোফ ইংল্যান্ডে প্রাপ্ত পান্ডুলিপি ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে সংস্কৃত ভাষায় পূর্ণাঙ্গ ঋগ্বেদ প্রকাশের জন্য ব্যাপকভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তার সারাজীবন যে বিষয়ের পঠন-পাঠন ও বিশ্লেষণে অতিবাহিত হবে সেই ঋগ্বেদ চর্চার দিকে তাকে বার্নোফই পরিচালিত করেছিলেন।

লন্ডনের ইস্ট ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে প্রাচীন সংস্কৃত সংগ্রহ অনুধাবনের উদ্দেশ্যে প্যারিস থেকে বিলেত চলে আসেন তিনি ১৮৪৬ সালের জুন মাসে। সৃষ্টিশীল লেখনী হিসেবে তার 'জার্মান লাভ' উপন্যাসটি ঐসময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতিবিদ হিসেবে তিনি ব্রিটেনে কর্মজীবন গড়ে তোলেন। এরফলে তিনি ব্রিটিশশাসিত ভারতের শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে অন্যতম বুদ্ধিজীবী ও ভাষ্যকার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হন। এ নেতৃত্বগুণের ফলেই তিনি ব্রিটিশ এবং ভারতের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় বিশেষ করে ব্রাহ্মসমাজের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করেছিলেন। এখানে থাকার সময়েই প্রখ্যাত সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত হোরেস হেম্যান উইলসন প্রমুখের চেষ্টায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মাক্স মুলার সম্পাদিত ঋগ্বেদ প্রকাশের যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণ করতে রাজি হয়। এবং সায়নাচার্যের ভাষ্য সহযোগে ঋগ্বেদের একখানি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।গ্রন্থটি মুদ্রণের ব্যবস্থা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মুদ্রণালয়ে হবার ফলে তিনি ১৮৪৮ সালের মে মাসে লন্ডন থেকে অক্সফোর্ডে চলে আসেন। অতঃপর আমৃত্যু অক্সফোর্ড নগরেই বসবাস করতে থাকেন।

বৈদিক ভাষা হিসেবে সংস্কৃতকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন ভাষা হিসেবে মনে করা হয়। তারপরও মুলার নিজেকে মনেপ্রাণে এ ভাষা শিক্ষায় সমর্পণ করেছেন নতঃশিরে। এবং ঐ সময়েই তিনি নিজেকে সংস্কৃত ভাষায় অন্যতম প্রধান বিদ্যানুরাগী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরফলেই মুলার প্রাচীনকালের হস্ত লিখিত হরফের বৈদিক সাহিত্য হিসেবে ঋগ্বেদের নিগূঢ় রহস্য উন্মোচনে সফল হয়েছিলেন।

মুলার ঊনবিংশ শতকের প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালী যোগসাধক, দার্শনিক এবং ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের চিন্তাধারা বিশেষ করে 'বেদান্ত দর্শনের' প্রতি ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট ও উদ্বুদ্ধ হন। তিনি তার প্রচারিত ধর্মীয় চিন্তাধারা ও ভাবধারায় পরিবাহিত হয়ে তাকে ঘিরে অনেকগুলো মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন এবং বই লিখেন।

প্রতাপচন্দ্র মজুমদার প্রথম ইংরেজিতে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী রচনা করেন ১৮৭৯ সালে। থেইস্টিক কোয়ার্টারলি রিভিউ পত্রিকায় প্রকাশিত দ্য হিন্দু সেইন্ট নামের রচনাটি তার নজর কাড়ে। এর ফলেই তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। ফলশ্রুতিতে মানবতাবাদে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের অবদানের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মহাত্মা গান্ধীজওহরলাল নেহেরুরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরশ্রী অরবিন্দলিও তলস্তয় প্রমুখ চিন্তাবিদদের পাশাপাশি তিনিও। পরবর্তীকালে ১৮৯৮ সালে মুলার রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের উপর জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন।

স্বামী বিবেকানন্দের সাথে কিছু যোগাযোগ ছিল মাক্স মুলারের। ১৮৯৬ সালের মে মাসে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রধান শিষ্য এবং রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বিবেকানন্দ দ্বিতীয়বার ইংল্যান্ড ভ্রমণের সময় পিমলিকোতে এক গৃহে অবস্থান করেন। সেখানে মুলার তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

এতক্ষন উকিপিডিয়াতে বর্ণিত ওনার জীবনী আলোচনা করা হলো কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কি তাই নীচে বর্ননা করা হবে। আমরা দেখবো কি ভাবে ম্যাক্সমুলার ও মেকলে গুরুকুলের শিক্ষাব্যাবস্থা বন্ধ করে ডি এ ভি শিক্ষাব্যাবস্থার মাধ্যমে ভারতকে শেষ করার পূর্ন বব্যস্থা করেছিলেন।

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি লর্ড টমাস ব্যারিংটন মেকলে(১৮০০-১৮৫৮) যার প্রণীত শিক্ষাব্যাবস্থা এখনো চলছে, মোদি এবছর অনেকটাই চেঞ্জ করেছে।।

বাঙালীদের পাঠক্রমে মার্ক্সীয় চিন্তাভাবনা ইত্যাদি সংযোজিত হয়েছে মাত্র।।
মেকলে এডুকেশন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।।
তার পরিবার ছিল গোড়া খ্রীস্টান।।
তার বিশ্বাস ছিল ভারত শাসনে খৃষ্টধর্ম চাবির কাজ করবে।।
ইসাই ধর্মে ধর্মান্তরকরণ তার অসদুদ্দেশ্যের মধ্যে একটি।।
তিনি নিজেই বলেছিলেন- আমার পরিকল্পনা মত শিক্ষাব্যাবস্থা চললে ৩০ বছরের মধ্যে শিক্ষিত বাঙালীদের মধ্যে কোন মূর্তিপুজারি থাকবে না।
(মেকলে দি শেপিং অফ সি হিস্টোরিয়ান - জনক্লাইভ, পৃ. ৪১২-৪১৩)
তার এই উদ্যেশ্য সাধনের জন্য সে এমন একজনকে চাইছিল যে ভারতের শাস্ত্রকে এমন ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে যাতে শাস্ত্র ত্যাগ করে নিউটেস্টামেন্টের দিকে ভারতীয়রা আগ্রহান্বিত হয়।।
চেহারায় ভারতীয় থাকলেও মানসিকতায় ইংরেজদের দাশ হয়।।
প্রথমে সে হোরেস হেমান উইলসনকে ধরে।।
উইলসন রাজী না হয়ে ফ্রেডরিক ম্যাক্সমুলারকে এগিয়ে দেয়।।
মুলারের বয়স তখন ৩১.
১৮৫৪ এর ডিসেম্বরে ১ লক্ষ টাকা পাওয়ার চুক্তিতে মুলার দায়িত্ব নেয় সে এমন ভাবে বেদ অনুবাদ করবে যাতে হিন্দুদের বৈদিক শাস্ত্রের বিশ্বাস উঠে যায়।।
নিজে জার্মান(ইংরেজ বিরোধী) হলেও খ্রিস্টানদের স্বার্থে সে এ দায়িত্ব নেয়।।
তখন কার সময়ে ১ লক্ষ টাকা রাজ্যের সাথে রাজকণ্যা ফ্রির থেকে কম ছিল না।।

ম্যাক্সমুলার লিখেছেন-
Sacred Book of the East..
পরিকল্পিত প্রচারে মুলার হয়ে গেল বিশ্ববিখ্যাত ভারততত্ত্ববিদ যদিও তিনি ভারতবর্ষ ম্যাপে ব্যতীত অন্যভাবে দেখে নি।।ভারতবর্ষের ইতিহাস ম্যাক্সমুলার তত্বের উপর রচিত হলো।।
জাতি গর্ব( Racial Superiority)
প্রকৃতপক্ষে উনবিংশ শতাব্দীর মেকলে এবং অন্য ব্রিটিশ নেতারা প্রশাসনিক নীতি হিসেবে প্রতিপালন ও অনুসরণ করেছিল।

ম্যাক্সমুলার ছিল গোড়া খ্রিস্টান।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে ৪০০৪ খৃষ্টপূর্বাব্দে ২৩ অক্টোবর সকাল ৯ টায় পৃথিবীর জন্ম হয়েছে।।(খুবই হাস্যকর লক্ষ বছর আগের ফসিল পাওয়া গেছে এখনো পর্যন্ত)

ফলে ঐ তারিখের আগে ভারতীয় কোন সভ্যতা থাকা মানে বাইবেল মিথ্যে।।
তাই তার এই পাণ্ডিত্যপূর্ণ পুস্তক ভারতীয়দের খ্রিস্টধর্মে রুপান্তর করার গোপন প্রয়াস।।

বাইবেলের প্রতি মুলারের কতটা বিশ্বাস ছিল??
I look upon the account of creaction given in the Genesis as simply historical
(পৃ. ৪১৮-৮২ Life and letter by Georgina Muller)

বাইবেলের জেনেসিসে যা লেখা আছে সৃষ্টিতত্ব সম্পর্কে, তা আমি ঐতিহাসিক বিবরন বলে মনে করি(ইতিহাস মানে সত্য বিবরন হুবহু)।
এই প্রসঙ্গে মুলারের লেখা দুটো চিঠি প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।।
একটি চিঠি তিনি তার পত্নীকে লিখেছেন ১৮৬৬ সালে।।

" আমার এই পুস্তক( দি স্যাক্রেড বুক অফ দা ইস্ট) ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলবে।।
ফেলেছেও তাই।।
তাদের ধর্মের মূল কোথায় তারা জানতে পারবে না।।গত তিন হাজার বছর ধরে তারা যা বিশ্বাস করে এসেছে - সেই বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করার এইটাই একমাত্র উপায় বলে আমি মনে করি।।(Max Muller,F. 1902.Life and Letters Edited by Georgina Muller,page 328)....

লেখকঃ অনিন্দ আর্য

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ