শাস্ত্রে মাংসাহার - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 September, 2019

শাস্ত্রে মাংসাহার

শাস্ত্রে মাংসাহার

বেদে শব্দ এসেছে অঘ্ন্যাঃ
যজুর্বেদ  ১।১
অর্থাৎঃ- গো আদি পশু কখনো হত্যার যোগ্য নয়
" অদিতিম মা হিংসী
(যজুর্বেদ ১৩। ৪৯)
অর্থাৎঃ- হত্যার অযোগ্য গাভীকে কখনো মেরো না।

আবার উপনিষদে মাংস শব্দ এসেছে তা বিশ্লেষন করলে বুঝতে পারা যায় শাস্ত্রে মাংসাহার নিয়ে কি বলা আছে

অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পণ্ডিতো বিগীতঃ সমিতিঙ্গমঃ শুশ্রূষিতাং বাচং ভাষিতা জায়েত সর্বান্ বেদাননুব্রুবীত সর্বমায়ুরিয়াদিতি মাংসৌদনং পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্নীয়াতামীশ্বরৌ জনয়িতবৈ ঔক্ষেণ বার্ষভেণ বা।। (বৃহদারণ্যকোপনিষদ- ৬/৪/১৮)

পদার্থঃ- (অথ যঃ ইচ্ছেত্ ) আর- যে এই ইচ্ছা করে যে ; (পুত্রঃ মে) আমার পুত্র ; (পণ্ডিতঃ) পণ্ডিত [বিদ্যা-বুদ্ধি সম্পন্ন, চতুর] ; (বিগীতঃ) প্রশংসিত, প্রখ্যাত, যশস্বী ; (সমিতিম গমঃ) সভায় গমনকারী [সভা কার্য্যে কুশল] ; (শুশ্রূষিতাম) শ্রবণ যোগ্য, যাহার সব শ্রবণ করার মতো এমন ; (বাচম্) বাণীর ; (ভাষিতা) ভাষন প্রদানকারী [অপূর্ব রমণীয় বচনের বক্তা] ; (জায়েত) উৎপন্ন হোক ; (সর্বান্) সর্ব [চার] ; (বেদান্ অনুব্রুবীত) বেদের ব্যাখাতা [জ্ঞাতা] হোক ; (সর্বম্ আয়ুঃ ইয়াত্) পূর্ণ আয়ু প্রাপ্তকারী হোক; (ইতি) এমন [চায় সে] ; (মাংস+ঔদনম্) ঔষদের সার [কোমল ভাগ] এবং চাউল কে, [এইস্থানে উচিৎ পাঠ ভেদে] (মাষ+ঔদনম্) মাষকলাইয়ের সহিত চাউলকে ; (পাচয়িত্বা) রন্ধন করে ; (সর্পিষ্মন্তম্) ঘী মিশ্রিত করে ; (অশ্নীয়াতাম্) [পতি-পত্নী] আহার করে ; (ঈশ্বরৌ জনয়িতবৈ) [তারা এমন পুত্র] উৎপন্ন করতে সমর্থ হয় ; (ঔক্ষেণ বা) [সেই সার ভাগ] বা 'উক্ষা' [জীবক] নামক ঔষধির হোক; (আর্ষভেণ বা) বা 'ঋষভ'-নামক ঔষধিরই হোক।
উক্ত শ্লোকে মাংসৌদনম্ এর সঠিক পাঠ হবে মাষৌদনম্ পাঠভেদে মাংসৌদনম্ হয়। যদি 'মাংস' শব্দও গ্রহণ করা হয় তাহলেও কিন্তু বাংলা ভাষায় যাকে মাংস বলা হয় সেই অর্থ হয়না, উক্ত শ্লোকে বাংলা ভাষা নয় সংস্কৃত ভাষা প্রয়োগ হয়েছে আর সংস্কৃত 'মাংস' শব্দের অনেক অর্থ পাওয়া যায়। যেমন -
মাংস = ১. উত্তম অন্ন ২.উত্তম রস ৩. সাদন ৪. রসালো পদার্থ, ৫. মাংস ৬.পুরীষ ৭.শুদ্ধ..........ইত্যাদি ইত্যাদি ।।ত্রিষ্টুপ মাংসম্ প্রাণস্য ( ঐ০ আ০ ২/১/৬) ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মিই মাংস। [অথর্ববেদ-৬/৭০/১. মাংসম্=ফলের মূল অংশ (পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার ভাষ্যকার) ]
যে স্থলে যে অর্থে প্রয়োগ হয় সেটিই গ্রহণীয়। যারা 'মাংস' শব্দকেই মান্য করেন তাদের ক্ষেত্রে উক্ত শ্লোকে উত্তম অন্ন হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। [অন্ন বলতে অনেকেই কেবল ভাত বুঝে থাকেন কিন্তু আসলে তা নয় সকল ভোজনযোগ্য শস্য ভোজনকেই অন্ন বলা যায়] উত্তম অন্ন অর্থও কেন গ্রহণ করা যেতে পারে? কারণ উক্ত শ্লোক সহ কিছু পূর্ব শ্লোক থেকেই ঔষধি ভোজন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো , আর ঔষধি ভোজন অবশ্যই উত্তম ভোজন তথা অন্ন।
মাংস আদৌ উত্তম ভোজন নয়, মাংসাহার দ্বারা দেহের জন্য উপকার হোক বা না হোক মাংসাহারে অপকারীতা রয়েছে অবশ্যই। তাছাড়া শাস্ত্রে বলা হয়েছে -
নিবর্তেত সর্বমাংসস্য ভক্ষণাৎ (মনুস্মৃতি-৫/৪৯)
অর্থাৎ সর্বপ্রকার মাংস ভক্ষণ থেকে দূরে থাকো [কোন প্রকার মাংস'ই ভক্ষণ করিবে না]।
আরও বলা হয়েছে যে -
অনুমন্তা বিশসিতা নিহন্তা ক্রয়বিক্রয়ী।
সংস্কর্ত্তা চোপহর্ত্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতকাঃ।। (মনুস্মৃতি- ৫/৫১)
পদার্থঃ- (অনুমন্তা) বধ করার আজ্ঞাকারী (বিশসিতা) মাংস কর্তনকারী (নিহন্তা) পশু বধকারী (ক্রয়-বিক্রয়ী) মাংসের ক্রয়-বিক্রয়কারী (সংস্কর্ত্তা) রন্ধনকারী (চোপহর্ত্তা) পরিবেশনকারী (চ) এবং (খাদকশ্চেতি) ভোজনকারী (ঘাতকাঃ) ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী আর পাপী।
অনুবাদঃ- পশু বধ করার জন্য যিনি আজ্ঞা করেন, যিনি মাংস কর্তন করেন, যিনি পশু বধ তথা হত্যা করেন, যিনি মাংস ক্রয় করেন এবং যিনি বিক্রয় করেন, যিনি মাংস রন্ধন করেন, যিনি মাংস পরিবেশন করেন এবং যিনি ভোজন করেন, তাহারা ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী আর পাপী।
এখন প্রশ্ন আসে যে তাহলে উক্ত শ্লোকে কোন উত্তম অন্নের কথা বলা হয়েছে? এর উত্তর পূর্বেই বলা হয়েছে যে 'মাংসৌদনম্ এর সঠিক পাঠ হবে 'মাষৌদনম্' [মাষ+ঔদনম্] অর্থাৎ মাষকলাইয়ের সহিত চাউল। উক্ত বৃহদারণ্যক উপনিষদেও ১০টি উত্তম অন্নের উল্লেখ করা হয়েছে। যথা -
ব্রীহি ও যব ; তিল ও মাষ (মাষ=মাষকলাই); বাজরা ও প্রিয়ঙ্গু ; গোধূম, মসূর ও খল্ব (মটরের ন্যায়); খলকুল। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্- ৬/৩/১৩)
উক্ত বৃহদারণ্যক উপনিষদে ষষ্ঠ অধ্যায় চতুর্থ ব্রাহ্মণে গর্ভাধান বিষয়ক আলোচনা করা হয়েছে, বৃহ০-৬/৪/১৮ শ্লোকটিও গর্ভাধান বিষয়ক। এই বিষয়ে বেদে বলা হয়েছে -
ঋষভক [ঋষভ] নামক ঔষধি বীজের ব্যাবহার আমাদের অমোঘ-বীর্য বানায়। এই বীজ প্রয়োগকারী মাতা জীবিত সন্তানের জন্মদাত্রী হয়ে তাকে দুধ প্রদানকারী হয় [পান করায়] ।। (অথর্ববেদ-৩/২৩/৪)
তাহার পরেও যদি কারো বৃহদারণ্যক-৬/৪/১৮ শ্লোক নিয়ে বিভ্রান্তি থাকে অথবা কোন কুতর্কি কুতর্ক করেন তাহলে তাদের জন্য বলছি - শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে -
ধর্ম্মং জিজ্ঞাসমানানাং প্রমাণং পরমং শ্রুতিঃ।(মনুস্মৃতি-২/১৩)
অর্থাৎ যে ধর্ম জানার ইচ্ছে করে তার জন্য পরম প্রমাণ পবিত্র বেদ।
বেদে গো হত্যা নিয়ে কি বলা হয়েছে দেখে নিন -
"প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায়মা গামনা গামদিতিং বধিষ্ট" (ঋগ্বেদ-৮/১০১/১৫)
পদার্থঃ- (চিকিতুষে জনায়মা প্রবোচম্) জ্ঞানবান পুরুষের নিকট আমি বলিতেছি যে (অনাগাম্) নিরপরাধ (অদিতিম্) পৃথিবী সদৃশ অহিংস (গাম) গরুকে (মা বধিষ্ট) হনন করিওনা।
অনুবাদঃ- (পরমাত্মা উপদেশ দিতেছেন যে) জ্ঞানবান ব্যক্তির নিকট আমি বলিতেছি যে, নিরপরাধ পৃথিবী সদৃশ অহিংস গোজাতিকে হত্যা করিওনা।
বেদে শুধুমাত্র গোহত্যা নিষেধ করা হয়নি, সর্বপ্রকার পশু হত্যাই নিষেধ করা হয়েছে।
অনেকে আবার এই কুতর্ক করা আরম্ভ করে যে, বৈদিক কালে সরাসরি মাংস ভক্ষন না করলেও যজ্ঞে পশুকে আহুতি দিয়ে তারপর করতো। কিন্তু যজ্ঞ সর্বদাই পবিত্র সেখানে কোনরুপ হত্যা সম্ভব নয়। সে জন্যই বেদ যজ্ঞকে অধ্বর সংজ্ঞা দিয়েছে। নিরুক্ত সংহিতা ১।৮ এ অধ্বর শব্দের অর্থ বলা হয়েছে "অধ্বর ইতি যজ্ঞনাম ধ্বরতিহিংসাকর্মা তৎপ্রতিষেধ " অধ্বর = হিংসারহিত কর্ম অর্থাৎ যাহাতে কোন রূপ হত্যা হয় না। রাজসূয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্তদধ্বরঃ। অর্কাশ্বমেধাবুচ্ছিষ্ট জীবর্বহিভমদিন্তম।। (অথর্ববেদ ১১।৭।৭) --- রাজসূয়, বাজপেয়, অগ্নিষ্টোম এইসব যজ্ঞ অধ্বর অর্থাৎ হিংসারহিত। অর্ক এবং অশ্বমেধ যজ্ঞ প্রভূর মধ্যে স্থিত, যাহা জীবের বৃদ্ধিকারী এবং অতন্ত্য হর্ষদায়ক। অগ্নে যঃ যজ্ঞমধ্বরং বিশ্বত বিশ্বতঃ পরিভূরসি। স ইদ্দেবেষু গচ্ছতি।। (ঋগবেদ ১।১।৪) --- হে পরমেশ্বর যে অধ্বর অর্থাৎ হিংসা রহিত যজ্ঞকে সর্বত্র ব্যাপক হয়ে সব প্রকারে পালনকারী। এই হিংসারহিত যজ্ঞে বিদ্বান লোক সুখ প্রাপ্ত করে। যজ্ঞের জন্য অধ্বর (হিংসারহিত) শব্দের প্রয়োগ ঋগবেদ ১।১।৮, ১।১৪।২১, ১।১৯।১, ১।২৮।১, ৩।২১।১ এরূপ বহু স্থলে এসেছে। এবং মহাভারতেও স্বীকার করা হয়েছে যে যজ্ঞে পশু হত্যার স্বিকৃতি নেই। এগুলো যে ধূর্তেরাই প্রচলন করছে সে কথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে - সুরা মৎসা মধু মাংসমাসবং কৃসরোদনম্। ধুর্তেঃ প্রবর্তিতং হোতন্নৈবদ্ বেদেষু কল্পিতম।। (মহাঃ শান্তি পর্বঃ ২৬৫,শ্লোক ৯) ---সুরা, মৎস, মধু, মাংস, তালরস, স্বাগু এইসব বস্তুকে ধুর্তেরাই যজ্ঞে প্রচলিত করেছে। বেদে এসব উপযোগের বিধান নেই। অব্যবস্থিতমর্যদৈবিমূঢর্নাস্তিকৈর্তবৈ। সংশয়াত্মাভিরব্যক্তৈহিংসা সমনুবর্তিত।। (মহাঃ শান্তি পর্বঃ অঃ ২৬৫, শ্লোক ৪) --- যে ধর্মের মর্যাদা থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে মূর্খ, নাস্তিক তথা যার আত্মা সংশয়যুক্ত এবং যার কোন প্রসিদ্ধি নেই এইরূপ লোকই হিংসাকে সমর্থন করে। মানান্মোহাচ্চ লোভাচ্চ লৌল্যমেত্যপ্রকল্পিতম্।। (মহাঃ শান্তি পর্ব, অঃ ২৬৫, শ্লোক ১০) --- সেই ধূর্তেরা অভিমান, মোহ এবং লোভের বশীভূত হয়ে সেই সব বস্তুর প্রতি লোলুপতা প্রকট করে থাকে। যজ্ঞের মহিমা বর্ণনার জন্য পিতামহ ভীষ্ম যুধিষ্ঠির কে এক উপ্যাখান শোনান। উপাখ্যান টি মহাভারতের শান্তি পর্বের ২৭২ নং অধ্যায়ে এসেছে। সেই উপখ্যানে এক ব্রাহ্মণ যিনি কি না যজ্ঞে পশু বলি দেবার কথা চিন্তা মাত্রেই তার সমস্ত তপস্যা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। তস্য তেনামুভাবনো মৃগহিংমমসাত্মনস্তদা। তপো মহৎসমুচ্ছিন্নং তস্মাদ্হিংসান যজ্ঞিয়া।। (মহাঃ শান্তি পর্ব, অঃ২৭২, শ্লোক ১৮) ----আমি সেই পশু কে বধ করে স্বর্গলোক প্রাপ্ত করবো। এই ভেবে মৃগকে হিংসা করার জন্য উদ্যত সেই ব্রাহ্মণের মহান তপস্যা তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই জন্য হিংসা যজ্ঞের জন্য হিতকর নয়। এই জন্য বেদ আমাদের সর্বদা হিংসারহিত কর্ম করার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং আমাদের শরীর এবং দন্তের উপযোগী খাবার হিসেবে ভাত, ডাল,যব ইত্যাদি এসব খাবারের অনুমোদন দিয়েছে। ব্রীহিমন্নং যবমত্তমথো মাষমথো তিলম । এষ বাং ভাগো নিহিতো রত্নেধেয়ায় দন্তৌ মা হিংসিষ্ট পিতরং মাতরং চ।। (অথর্ববেদ ৬।১৪০।২) --- হে দন্ত! অন্ন খাও যব খাও মাষ কালাই এবং তিল খাও তোমার এই ভাগ উত্তম পদার্থ ধারনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে হে দন্ত! পিতা ও মাতাকে হিংসিত করো না [মাংসাহার থেকে দূরে থাকো] এবং বেদ মন্ত্রে সেই পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে যে, আমাদের দন্ত যেন ব্যাঘের ন্যায় না হয়। কারন বাঘের দন্ত সর্বদা মাংসাহার করে থাকে। সে জন্য আমাদের দন্ত কে ব্যাঘের ন্যায় না করে কল্যাণকারী করো। যৌ ব্যাঘ্রাববরূঢৌ জিঘত্সতঃ পিতরং মাতরং চ। তৌ দন্ত ব্রহ্মণস্পতে শিবৌ কৃণু জাতবেদঃ।। (অথর্ববেদ ৬।১৪০।১) --- যে দন্ত ব্যাঘ্রের ন্যায় পিতা ও মাতাকে খাওয়ার জন্য চেষ্টা করে সেই দাঁত কে হে সর্বব্যাপক জ্ঞানের পরিপালক কল্যাণকারী করো। অর্থাৎ বেদ আমাদের সর্বদাই কল্যাণকারী হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। যাতে করে আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন কষ্ট না পায়। আমরা যেন নিরীহ প্রাণীদের হিংসা না করি। কারন, "অহিংসা পরম ধর্ম " (মহাঃ আদিঃ অঃ ১১, শ্লোঃ ১৩) এবং "হিংসা অধর্মস্তথহিত" (মহাঃ শান্তিঃ ২৭২, শ্লোক ১৮) হিংসা অধর্ম এবং অহিতকর। "প্রাণিনামবধস্তাত সর্বজায়ান্" (মহাঃ কর্ণ পর্ব, অঃ ২৬৯, শ্লোক ২৩) অর্থাৎ প্রাণীদের বধ না করাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। জীবিতুং যঃ স্বযং চেচ্ছেত্ কথং সোন্যং প্রঘাতয়েত। যদ যদাৎমসি চেচ্ছেত তত পরস্যাপি চিন্তয়েত।। (মহাঃ শান্তি পর্ব, অঃ ২৫৯, শ্লোক ২২) --- যে স্বয়ং জীবিত থাকতে চায় সে অন্যের প্রাণ কিভাবে নিতে পারে? মানুষ নিজের জন্য যে যে সুখ সুবিধা চায় সে অন্যের জন্যও সুখের চিন্তা করে। এ জন্যই বেদ বলছে - স্বস্তি মাত্রে উত পিত্রে নো অস্তু স্বস্তি গোভ্যো জগতে পুরুষেভ্যঃ। বিশ্বং সুভুতং সুবিদত্রং নো অস্তু জ্যোগেব দৃংশেম সূর্যম।। (অথর্ববেদ ১।৩১।৪) --- আমাদের মাতার জন্য এবং পিতার জন্য সুখদায়ক হও এবং গাভীর জন্য পুরুষের জন্য জগতের জন্য সুখদায়ক হও সম্পূর্ণ উত্তম ঐশ্বর্য এর উত্তম জ্ঞান আমাদের জন্য হও এভাবে বহু কাল পর্যন্ত সূর্য কে ই দেখতে থাকবো।

সনাদগ্নে মৃণসি যাতুধানান্ন ৎবা রক্ষাংসি পৃতনাসু জিগ্যুঃ।  
অনু দহ সহমূরান্কয়াদো মা তে হেত্যা মুক্ষত দৈব্যায়াঃ।। 
সামবেদ ৮০ 

অনুবাদঃ (অগ্নে) হে শোধক অজ্ঞানান্ধকারনাশক পরমাত্মন্! তুমি (যাতুধানান্) নিজের তথা অন্যের  প্রতি কষ্টদানকারী ,  দুঃখদানকারী  পাপবিচারসমূহ তথা পাপীগণকে (সনাৎ-মৃণসি) নিত্য বা সর্বদা “সনাৎ নিত্যে—সর্বদা বা” [অব্যযার্থনিবন্ধনম্] হিংসিত করো বা নষ্ট করো [ তাদের যথাযথ কর্মফল প্রদান করে , কারণ তুমি ন্যায় বিচারক ] (ৎবা রক্ষাংসি পৃতনাসু ন জিগ্যুঃ) তোমাকে রাক্ষস—যাদের থেকে রক্ষা করা উচিৎ এমন পাপ ভাবনা ও  পাপীজন সংঘর্ষ সংগ্রামসমূহের মধ্যে [ “পৃতনাঃ সংগ্রাম নাম” - নিঘ০ ২.১৭] জয় করতে পারে না —তোমার  দণ্ডবিধানের উলঙ্ঘন করতে পারে না (মূরান্ কয়াদঃ-সহ-অনুদহ) মূঢ়—অজ্ঞানপরায়ণ তথা শরীরস্থ মাংস ভক্ষককে একসাথে ধ্বংস করে দাও—করে দিয়ে থাকো —তুচ্ছ অসমর্থ করে দাও  [ “লডর্থে লোট্” ] (দৈব্যায়াঃ-হেত্যাঃ) তোমার দৈবী—তীক্ষ্ণ  বজ্রশক্তি দ্বারা  [ “হেতিঃ-বজ্রনাম” নিঘ০ ২.২০] (তে মা মুুক্ষত) সে ছাড় পায় না — মুক্ত হতে পারে না ।
ভাবার্থঃপ রমাত্মা সদা  বা নিত্য মনুষ্যগণের পীড়াদায়ক বিচার—পাপ ভাবসমূহকে এবং পাপীগণকে যথোপযুক্ত কর্মফল প্রদানের মাধ্যমে বিনষ্ট করেন , পাপ এবং পাপী তার সম্মুখে তুচ্ছ   সেই এমন  শরীরের মাংস শুষ্ক তথা ভক্ষণকারী  পাপ-বিচারসমূহ ও পাপীগণকে একসাতগে ভস্ম করতে - তুচ্ছ করতে  সমর্থ  তার  দিব্য বজ্র থেকে কোন পাপ এবং পাপী রক্ষা পায় না , তার চিন্তনবল অর্থাৎ  তাকে স্মরণ করে পাপ করা ইচ্ছা দূর করা যায় এবং তার আশ্রয় পাপীগণকে পুনঃ পাপ করার হাত থেকে রক্ষা করে । 

[ ভাষ্যঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক  বিদ্যামার্তণ্ড ও পণ্ডিত কৃপারাম শাস্ত্রী , আর্যসমাজ ]
যজ্ঞে হিংসার নিন্দা এবং অহিংসার প্রশংসা" এই বৃত্তান্ত মহাভারতের শান্তিপর্বের অন্তর্গত ২৭২ অধ্যায়ে এসেছে। এখানে বলা হয়েছে যে, যদি কেউ যজ্ঞের মধ্যে পশু বধ করে, তবে নিশ্চয় তার সমস্ত তপ নষ্ট হয়ে যাবে। তস্য তেনানুভাবেন মৃগহিংসাত্মনস্তদা। তপো মহৎ সমুচ্ছিন্ন তস্মাদহিংসা ন যজ্ঞিয়া।। অহিংসা সকলো ধর্মাহিংসা ধর্মস্তথাবিধঃ। সত্যংতেহং প্রবক্ষামি, যো ধর্মঃ সত্যবাদিনাম।। এই প্রকরেন মহারাজ যুধিষ্ঠির পিতামহ ভীষ্ম কে জিজ্ঞেস করছেন যে, ধর্ম তথা সুখের জন্য যজ্ঞ কিভাবে করা উচিত? ইহার উত্তরে পিতামহ এক তপস্বী ব্রাহ্মন ব্রাহ্মণী দম্পতির বৃত্তান্ত দিয়ে বললেন যে, সেই তপস্বী ব্রাহ্মণের মহান তপ যজ্ঞের মধ্যে পশুবলি দেবার জন্য এক বণ্য মৃগ বধ করার ইচ্ছা মাত্র সমস্ত বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। এইজন্য যজ্ঞের মধ্যে কখনো হিংসা করা উচিৎ নয়। অহিংসা সার্বত্রিক এবং সর্বকালীন নিত্য ধর্ম। এই প্রমাণ দ্বারা জানা যায় যে, মহাভারত কালে পশু হিংসার বিধান ছিলো না। এমনকি এর পূর্বেও পবিত্র বেদে এ প্রকরন এসেছে- রাজসুয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্তদধ্বরঃ। অকাশ্বমেধাবৃচ্ছিষ্টে জীব বর্হিমমন্দিতমঃ।। (অথর্ববেদ ১১।৭।৭) রাজসূয়, বাজপেয়,অগ্নিষ্টোম, অশ্বমেধ আদি সব যজ্ঞ অধ্বরঃ অর্থাৎ হিংসা রহিত যজ্ঞ। যাহা প্রাণীমাত্রকে বৃদ্ধি এবং সুখ শান্তি দাতা। এই মন্ত্রে রাজসূয় আদি সব যজ্ঞকে অধ্বরঃ বলে গিয়েছেন। যার একমাত্র সর্ব্বসম্মত অর্থ হিংসা রহিত যজ্ঞ। তাহলে ইহা স্পষ্ট যে, বেদের মধ্যে কোন যজ্ঞে পশুবধের আজ্ঞা নেই। তবুও বেদের নাম নিয়ে যজ্ঞে পশু বধ করা মানে নিজেকে ধোকা দেওয়া এবং নিজের অজ্ঞানতাকে প্রকাশ করা। আবার ইহা দেখ যে, পশু বধ করে প্রাণীমাত্রের কিরকম বৃদ্ধি হচ্ছে? এবং মানুষ কি রকম সুখ প্রাপ্ত হচ্ছে? পরন্ত প্রাণীহত্যা করার সময় তার ঘোর যাতনা প্রাপ্ত হয় এবং তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, ইতিহাসও পশুবলির সমর্থন করে নি। এমন কি বেদও। কিন্তু কিছু মূর্খ যাজ্ঞিক( পৌরাণিক) লোক " বৈদিকী হিংসা হিংসা ন ভবতি" এর ঢোল পিটিয়ে যজ্ঞে পশুবধ কে অহিংসার সঙ্গা দিয়ে স্বর্গের মার্গ কে প্রশস্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। এদের বিচার দেখে মনে যে,নিশ্চয় এরা তাদের বুদ্ধি ঘাসক্ষেতে রেখে এসেছিলেন। নতুবা এরকম অর্থ তারা করতো না। " বৈদিকী হিংসা হিংসা ন ভবতি" এর অর্থে মনু মহারাজ কি বলেছেন দেখুন- যা বেদবিহিতা হিংসা নিয়তাস্মিংশ্চরাচরে। অহিংসামেব তাং বিদ্যাদ্বেদাদ ধর্মো হি নির্ব্বভৌ।। যো হিংসকানি ভুতানি হিনস্ত্যান্তসুখেচ্ছয়া। স জীবংশ্চ মৃতশ্চৈব, নকশ্চিক সুখমেধতে।। (মনুস্মৃতি ৫।৪৪- ৪৫) অর্থাৎ বেদে বিশ্ব সংসার মধ্যে দুষ্ট আততায়ী, ক্রুর পাপীকে দন্ড দান রূপ হিংসা বিহিত আছে তাহা অহিংসাই জানবে। কারন বেদ দ্বারাই যথার্থ ধর্মের প্রকাশ হয়। কিন্তু ইহার বিপরীতে যে নিরপরাধ,অহিংস প্রাণীকে নিজ সুখ প্রাপ্তির জন্য হত্যা করে সে জীবিত অথবা মৃত এই দুই অবস্থায় কখনোই সুখ পায় না। দুষ্টকে দন্ড প্রদান করা হিংসা নয় পরন্ত অহিংসারূপ পূণ্য তাহা মনুস্মৃতি ৮।৩৫১ এ স্পষ্ট আছে- " নাততায়িবধে দোষো হন্তুর্ভবতি কশ্চন" অর্থাৎ আততায়ি ( যে ব্যক্তি বধ উদ্যত) তাহাকে বধ করিলে কোন দোষ নেই।

বেদে মাংসাহার খাবারের ভ্রম -
এতদ্বা উ স্বাদীয়ো য়দধিগবং ক্ষীরং বা ।
মাংসং বা তদেব নাশ্নীয়াত্ ।।৯।। (অথর্ববেদ ৯.৩.৬.৯)
এই মন্ত্রে আচার্য সায়ণ ভাষ্য করেনি।
পণ্ডিত শ্রীপাদ দামোদর সাতবলেকর ভাষ্য -
পদার্থঃ (এতত্ বৈ উ স্বাদীয়ঃ) সে যে স্বাদযুক্ত আছে (য়ত্ অধিগবং ক্ষীরং বা মাংসং বা) যে গাভী থেকে প্রাপ্তকারী দুধ অথবা অন্য মাংসাদি পদার্থ আছে (তত্ এব ন আশ্নীয়াত্) তাহার মধ্যে থেকে কোন পদার্থ অতিথির পূর্বেও খাবে না ।।৯।।
এই মন্ত্রের উপর আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর মত -
ইনাদের ভাষ্যতে আর বিদ্বান প্রো০ বিশ্বনাথ বিদ্যালংকারই এই মাংসের অর্থ পনীর করেছেন, তবে পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদীই মনন সাধক (বুদ্ধিবর্ক) পদার্থকে মাংস বলেছেন । সবাই এই মন্ত্র তথা সূক্তের অন্য মন্ত্রের বিষয় অতিথি সৎকার বলেছেন । এই মন্ত্রের দেবতা পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদীর দৃষ্টিতে অতিথি বা অতিথিপতি, যখন পণ্ডিত সাতবলেকরই অতিথি বিদ্যা মেনেছেন । পণ্ডিত সাতবলেকরই ইহার ঋষি ব্রহ্মা মেনেছেন । ছন্দ পিপীলিকা মধ্যা গায়ত্রী । {ব্রহ্মা=মনো বৈ য়জ্ঞস্য ব্রহ্মা (শ০ ১৪/৬/১/৭); প্রজাপতিবৈ ব্রহ্মা (গো০ উ০ ৫/৮)। অতিথিঃ=য়ো বৈ ভবতি য়ঃ শ্রেষ্ঠতামশ্নুতে স বা অতিথির্ভবতি (ঐ০ আ০ ১/১/১)। অতিথিঃ= অতিথিপতির্বাবাতিথেরীশে (ক০ ৪৬/৪-ব্রা০ উ০ কো০ থেকে উদ্ধৃত)। পিপীলিকা=পিপীলিকা পেলতের্তিকর্ণঃ (দৈ০ ৩.৯)। স্বাদু=প্রজা স্বাদু (ঐ০আ০ ১.৩.৪); প্রজা বৈ স্বাদুঃ (জৈ০ ব্রা০ ২/১৪৪); মিথুনং বৈ স্বাদু (ঐ০ আ০ ১/৩/৪)। ক্ষীরম্=য়দত্যক্ষরত্ তত্ ক্ষীরস্য ক্ষীরত্বম্ (জৈ০ ব্রা০ ২/২২৮)। মাংসম্=মাংসং বৈ পুরীষম্ (শ০ ৮/৬/২/১৪); মাংসং বা মানসং বা মনোহস্মিন্ সীদতীতি বা (নি০ ৪/৩); মাংসং সাদনম্ (শ০৮/১/৪/৫)}
অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর আধিদৈবিক ভাষ্য -
পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) যে অতিথি অর্থাৎ সতত গমনশীলা প্রাণ, ব্যান রশ্মির এবং অতিথিপতি অর্থাৎ প্রাণোপান রশ্মির নিয়ন্ত্রক সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির স্বাদুযুক্ত হয়ে অর্থাৎ বিভিন্ন ছন্দাদি রশ্মিকে মিথুন বানিয়ে নানা পদার্থের উৎপন্ন করাতে সহায়ক হয় । (য়ত্) যে প্রাণব্যান বা সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির (অধিগবং ক্ষীরং বা মাংসং বা) গমনকারী অর্থাৎ ‘ও৩ম্’ ছন্দ রশ্মি রূপী সূক্ষ্মতম বাক্ তত্বে আশ্রিত হয়, সাথেই নিজের পুরীষ=পূর্ণ সংযোজন বল {পুরীষম্=পূর্ণং বলম্ (ম০ দ০ য়০ ভা০ ১২/৪৬); ঐন্দ্রং হি পুরীষম্ (শ০ ৮/৭/৩.৭); অন্নং পুরীষম্ (শ০ ৮/১/৪/৫)} এর সাথে নিরন্তর নানা রশ্মি বা পরমাণু আদি পদার্থের উপর ঝড়তে থাকে। এই ‘ও৩ম্’ রশ্মির ঝড়নাই ক্ষীরত্ব তথা পূর্ণ সংযোতাই মাংসত্ব বলা হয় । এখানে ‘মাংস’ শব্দ এই সংকেত দেয়, যে এই ‘ও৩ম্’ রশ্মির মনস্তত্ব এখানে সর্বাধিক মাত্রাতে বসে থাকেন । এই ‘ও৩ম্’ রশ্মির প্রাণব্যান এবং সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির উপর ঝড়ে অন্য স্থুল পদার্থের উপর পড়তে থাকে । (তত্ এব ন অশ্নুয়াত্) এই কারণ দ্বারা বিভিন্ন রশ্মি বা পরমাণু আদি পদার্থের মিথুন বানানোর প্রক্রিয়া নষ্ট হয় না । ইহা প্রক্রিয়া অতিথিরূপ প্রাণব্যানকে মিথুন বানানো কিংবা ইহার দ্বারা বিভিন্ন মরুদাদি রশ্মির আকৃষ্ট করার প্রক্রিয়া শান্ত হওয়াতে পূর্বে নষ্ট হয় না, বরং তাহার পশ্চাৎ অর্থাৎ দুই কণের সংযুক্ত হওয়ার পশ্চাৎ আর মিথুন বানানোর প্রক্রিয়া নষ্ট বা বন্ধ হয়ে যায়, ইহা জানা উচিত ।।৯।।
এই ঋচার সৃষ্টির উপর প্রভাব -
আর্ষ বা দৈবত প্রভাব- ইহার ঋষি ব্রহ্মা হওয়াতে সংকেত পাওয়া যায় যে ইহার উৎপত্তি মন এবং ‘ও৩ম্’ রশ্মির মিথুন দ্বারাই হয় । এই মিথুন এই ছন্দ রশ্মির নিরন্তর বা নিকটতা থেকে প্রেরিত করতে থাকে । ইহাকে দৈবত প্রভাব দ্বারা প্রাণ, ব্যান তথা সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির বিশেষ সক্রিয় হয়ে নানা সংযোগ কর্মের সমৃদ্ধ করেন ।
ছান্দস প্রভাব - ইহার ছন্দ পিপীলিকা মধ্যা গায়ত্রী হওয়াতে এই ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন পদার্থের সংযোগের সময় তাহার মধ্যে তীব্র তেজ বা বলের সাথে সতত সঞ্চারিত হয় । ইহা থেকে ঐ পদার্থের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থ তেজ এবং বলের প্রাপ্ত হতে থাকে ।
ঋচার প্রভাব - যখন কণার সংযোগ হয়, তখন তাহার মধ্যে প্রাণ, ব্যান বা সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির বিশেষ যোগদান হতে থাকে । এই রশ্মির বিভিন্ন মরুদ্ রশ্মির দ্বারা আকুঞ্চিত আকাশ তত্বকে ব্যাপ্ত করে নেয় । ইহা সময় এই রশ্মির উপর সূক্ষ্ম ‘ও৩ম্’ রশ্মির নিজের সেচন করে ইহাতে অধিক বল দ্বার যুক্ত করেন। ইহা থেকে উভয় কণার মধ্যে ফীল্ড নিরন্তর প্রভাবী হয়ে ঐ উভয় কনার পরস্পর সংযুক্ত করে দেয় ।
আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর আধিভৌতিক ভাষ্য -
পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) এই যে স্বাদিষ্ট ভোজ্য পদার্থ আছে। (য়দধিগবং ক্ষীরং বা) যে গাভী দ্বারা প্রাপ্তকারী দুধ, ঘৃত, মাখন, দই আদি পদার্থ আছে অথবা (মাংসম্ বা) মনন, চিন্তন আদি কার্যে উপযোগী ফল, শুকনো ফল আদি পদার্থ। (তদেব ন অশ্নীয়াত্) ঐ পদার্থকে অতিথির খাওয়ানোর পূর্বে খাবে না অর্থাৎ অতিথির খাওয়ানোর পশ্চাৎই খাওয়া উচিত । এখানে অতিথি থেকে পূর্বে না খাওয়ার প্রসংগত ইহার পূর্ব মন্ত্র থেকে সিদ্ধ হয়, যেখানে লেখা আছে - “অশিতাবত্যতিথাবশ্নীয়াত্”= অশিতাবতি অতিথৌ অশ্নীয়াত্ । এই প্রকরণের পূর্ব আধিদৈবিক ভাষ্যেও উপলব্দি করবেন।
....................................................................................
‘মাংসম্’ পদের বিবেচনাঃ- এই বিষয়ে সর্বপ্রথম আর্য বিদ্বান পণ্ডিত রঘুনন্দন শর্মা কৃত “বৈদিক সম্পত্তি” নামক গ্রন্থতে আয়ুর্বেদের কিছু গ্রন্থের উদ্ধৃত করে বলেন -
''সুশ্রুতে'' আমের ফলের বর্ণন করে লিখেছেন -
অপক্বে চূতফলে স্নায়্যস্থিমজ্জানঃ সূক্ষ্মত্বান্নোপলভ্যন্তে পক্বে ত্বাহবির্ভূতা উপলভ্যন্তে।
অর্থাৎ আমের কাচা ফলের আশে, হাড্ডির আর মজ্জা আদি প্রতীত হয় না, কিন্তু পাকার পরে সব আবির্ভূত হয়ে যায় ।
এখানে আটির তন্তু সর্বাঙ্গে, আটি হাড্ডির, আশে আর চিকন ভাগ মজ্জা বলা হয়েছে । এই প্রকারে বর্ণন ভাবপ্রকাশেও এসেছে। সেখানে লেখা আছে যে -
आम्रास्यानुफले भवन्ति युगपन्मांसास्थिमज्जादयो लक्ष्यन्ते न पृथक् पृथक् तनुतया पुष्टास्त एव स्फुटाः।
एवं गर्भसमु˜वे त्ववयवाः सर्वे भवन्त्येकदा लक्ष्याः सूक्ष्मतया न ते प्र्रकटतामायान्ति वृद्धिग्ताः।
অর্থাৎ যে প্রকার কাচা আমের ফলে মাংস, অস্থি আর মজ্জাদি পৃথক-পৃথক দেখা যায় না, কিন্তু পাকার পরেই জ্ঞাত হয় ওই প্রকার গর্ভের আরম্ভে মনুষ্যের অঙ্গ জ্ঞাতহয় না, কিন্তু যখন তাহার বৃদ্ধি হয়, তখন স্পষ্ট হয়ে যায়।
এই দুই প্রমাণের দ্বারা প্রকট হয়ে থাকে যে ফলের মধ্যেও মাংস, অস্তি, নাড়ী আর মজ্জা আদি ইহা প্রকার বলা হয়েছে, যে প্রকার প্রাণির শরীরে ।
বৈদ্যকের এক গ্রন্থে লেখা আছে যে -
प्रस्थं कुमारिकामांसम् ।
অর্থাৎ- এক কিলো কুমারিকার মাংস। এখানে ঘীকুমারকে কুমারিকা আর তাহার মজ্জাকে মাংস বলা হয়েছে।
বলার তাৎপর্য এই যে, যে প্রকার ঔষধির আর পশুদের নাম একই শব্দ দ্বারা রাখা হয়েছে ওই প্রকার ঔষধির আর পশুদের শরীরাবয়বও একই শব্দ দ্বারা বলা হয়েছে । এই ধরনের বর্ণনা আয়ুর্বেদের গ্রন্থে ভরা আছে ।
শ্রীবেনকটেশ্বর প্রেস, বুম্বাইতে ছাপানো ‘ঔষধিকোষ’ এ নীচে লেখা সমস্ত পশুসংজ্ঞক নাম আর অবয়ব বনস্পতির জন্যও এসেছে দেখে নিন। আমরা উদাহরণের জন্য কিছু শব্দ উদ্ধৃত করেছি -
বৃষভ - ঋষভকন্দ
সিংহী - কটেলী, বাসা
হস্তি - হস্তিকন্দ
শ্বান - কৃত্তাঘাস, গ্রন্থিপর্ণ
খর - খরপর্ণিনী
বপা - ঝিল্লী=বক্কল ওষুধ ব্যবহারের জালা
মার্জার - বল্লীঘাস, চিত্ত
কাক - কাকমাচী অস্থি-গুঠলী
ময়ুর - ময়ুরশিখা
বারাহ - বারাহীকন্দ
মাংস - গুদা, জটাংমাসী
বীছূ - বীছূবূটী
মহিষ - মহিষাক্ষ, গুগ্গুল
চর্ম - বক্কল
সর্প - মর্পিণীবূটী
শ্যেন - শ্যেনঘন্টী (দন্তী)
স্নায়ু - রেশা
অশ্ব - অশ্বগন্ধা, অজমোদা
মেষ - জীবনাশক
নখ - নখবূটী
নকুল - নাকুলীবূটী
কুক্কুট (টী) - শালামলীবৃক্ষ
মেদ - মেদা
হংস - হংসপদী
নর - সৌগন্থিক তৃণ
লোম (শা) - জটামাসী
মৎস্য - ঘমরা
হৃদ - দারচীনী
মূষক - মূষাকর্ণী
মৃগ - সহদেবী, ইন্দ্রায়ণ, জটামসী, কপুর
পেশী - জটামসী
গো - গৌলোমী পশু-অম্বাড়া, মোথা
রুধির - কেসর
মহাজ - বড়ী অজবায়ন
কুমারী - ঘীকুমার
আলম্ভন - স্পর্শ
এই সূচীতে সমস্ত পশু পক্ষীর আর তাহার অঙ্গের নাম তথা সমস্ত বনস্পতির আর তাহার অঙ্গের নাম একই শব্দ দ্বারা সূচিত করা হয়েছে । এরূপ অবস্থায় কিছু শব্দ দ্বারা পশু আর তাহার অঙ্গকেই গ্রহণ করা উচিত নয় ।
বিজ্ঞ পাঠক এখানে বিচার করুন ঐরূপ স্থিতিতে এখানে ‘মাংসম্’ পদ দ্বারা গৌ আদি পশুর বা পক্ষির মাংস গ্রহণ করা কি মুর্খতা নয় ? এখানে কোন পাশ্চাত্য শিক্ষা দ্বারা অভিভূত তথা বৈদিক বা ভারতীয় সংস্কৃতি বা ইতিহাসের উপহাসকর্তা কথিত প্রবুদ্ধ কিংবা মাংসাহারের পোষক সংস্কৃত ভাষার ঐরূপ নামের উপর ব্যঙ্গ্য যেন না করেন, এই কারণে আমরা তাহাদের ইংরেজি ভাষারও কিছু উদাহরণ দিচ্ছি -
1. Lady Finger ভেণ্ডী বলা হয়। যদি ভোজন বিষয়ে কেউ ইহার অর্থ কোন মহিলার আঙ্গুল করে, তখন কি তাহার অপরাধ হবে না ?
2. Vegetable কোন শাক বা বনস্পতিকে বলা হয়। এদিকে Chamber dictonary মধ্যে ইহার অর্থ dull understanding person ও দেওয়া আছে । যদি Vegetable খেতে বসা কোন ব্যক্তিকে দেখে কেউ তাহাকে মন্দবুদ্ধি মানুষের খাদ্য পদার্থ বলে, তখন কি ইহা মূর্খতা হবে না ?
3. আয়ুর্বেদে একটি চারা গাছ আছে - গোবিষ, যাহাকে হিন্দীতে কাকমারী তথা ইংরেজিতে Fish berry বলা হয় । যদি কেউ ইহার অর্থ মাছের রস লাগায়, তখন তাহাকে কি বলবেন?
4. potato আলুকে বলা হয়, এদিকে ইহার অর্থ A mentally handicaped person ও হয়, তখন কি আলু খাওয়া ব্যক্তিকে মানসিক রোগী মনুষ্যকে ভক্ষণকারী মানা হয় ?
5. Hag ইহা এক প্রকারের ফল আছে, এদিকে An ugly old woman কেও hag বলা হয়, তখন কি এটাও কোন hag ফলের অর্থ উল্টো লাগানোর প্রয়াস করবেন ?
এখন আমরা ইহার উপর বিচার করি দেখি যে ফলের মজ্জাকে মাংস কেন বলা হয় ? যেমনটি আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিকজীর আধিদৈবিক ভাষ্যে জেনে এসেছি যে পূর্ণবলযুক্ত বা পূর্ণবলপ্রদ পদার্থকে মাংস বলা হয়। সংসারে সব মনুষ্য ফলের মজ্জাকেই প্রয়োগ করেন, অন্য ভাগকে নয়, কেননা ফলের সার ভাগ সেই হয়। সেই ভাগ বল-বীর্যের ভাণ্ডার অর্থাৎ তাহার ভক্ষণ দ্বারা বল-বীর্য-বুদ্ধি আদির বুদ্ধি হয়। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে প্রাণিদের শরীরের মাংসকে মাংস বলে? ইহার উত্তর এই যে কোন প্রাণির শরীরের বল তাহার মাংসপেশীর অন্তর্গতই নিহিত থাকে, ইহার কারণে ইহাও মাংস বলা হয়। যেরূপ শাকাহারী প্রাণী ফলের মজ্জাকেই বিশেষ ভক্ষণ করেন, ঐরূই সিংহাদি মাংসাহারী প্রাণী, প্রাণীর মাংস ভাগকেই বিশেষ রূপে খেয়ে থাকে। এই উভয়ের মধ্যে সমানতা আছে। যে স্থান ফলের মধ্যে মজ্জার হয়, সেই স্থান প্রাণিদের শরীরে মাংস হয় । মনুষ্য হচ্ছে প্রাকৃতিক রূপে কেবল শাকাহারী বা দুগ্ধাহারী প্রাণী, এই কারণে বেদাদি শাস্ত্রে প্রাণিদের মাংস খাওয়ার চর্চা বেদাদি শাস্ত্রের ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞতার লক্ষণ । এরূপ চর্চাকারী কথিত বেদজ্ঞ, তা সে বিদেশী হোক বা স্বদেশী, আমাদের দৃষ্টিতে তাহারা বেদাদি শাস্ত্রের বর্ণমালাও জানে না, যদিও বা তাহারা ব্যাকারণাদি শাস্ত্রের যত বড় অধ্যেতা- অধ্যাপক হোন না কেন । মাংসাহারের বিষয়ে আমরা অন্য কোনো এক সময় একটি পৃথক গ্রন্থ লেখার বিবেচনা করব, যার মধ্যে সারা বিশ্বের মাংসাহার ভোগীদের সমস্ত সংশয় দূর হবে।
ত্রিষ্টুপ মাংসম্ প্রাণস্য (ঐ০ আ০ ২/১/৬) ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মিই মাংস।
সাধারন বাংলায় পশু Animal বোঝালেও বৈদিক সংস্কৃততে তা অন্যকিছুও বোঝায়। নিরুক্ত তে পাওয়া যায় পশু অর্থ কণাজাতীয় জিনিস। এটা ' পশ্ ' মুল থেকে এসেছে যার অর্থ হল যা দেখা সম্ভব । পশু শব্দের ধাতু হলো √পশ্ আর এই ধাতুগত অর্থ অনুসারে যাকে পশ্য অর্থাৎ দেখা হয় তাই পশু ।
প্রশ্ন - বেদে ‘মাংসম’ পদের অর্থ প্রাণিদের মাংস কখনো হয় না, ইহা আপনার পূর্বাগ্রহও তো ধরে নেওয়া যেতে পারে, যা শুধুমাত্র শাকাহারের আগ্রহবশেই করেছেন ?
উত্তর - যে সংস্কারেতে সামান্য যোগসাধকের জন্য অহিংসাকে প্রথম সোপান বলা হয়, যেখানে মন, বচন, কর্ম দ্বারা কোথাও কখনো সমস্ত প্রাণীর প্রতি ঘৃণা ত্যাগ অর্থাৎ প্রীতির সন্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে সিদ্ধ পুরুষ যোগিদের এবং সেই ক্রমে নিজের যোগসাধনা দ্বারা ঈশ্বর বা মন্ত্রের সাক্ষাৎকৃতধর্মা মহর্ষিরা, তাহার গ্রন্থে এবং বেদরূপ ঈশ্বরীয় গ্রন্থের দ্বারা হিংসার সন্দেশ দেওয়া মূর্খতা বা দুষ্টতা নয়, তো কি? যে বিদ্বান বৈদিক অহিংসার স্বরূপ দেখতে চান, তিনি পতঞ্জল যোগদর্শনের ব্যাসভাষ্য স্বয়ং পড়ে দেখুন । ইহা ঐতরেয় ব্রাহ্মণে যাহা প্রায়ঃ সব ভাষ্যকারই পশুর নৃশংস বধ এবং তাহার অঙ্গকে ভক্ষণের বিধান করেছেন, সেখানে আমরা তাহার কেমন গূঢ় বিজ্ঞান প্রকাশিত করেছি, ইহা পাঠক এই বেদ-বিজ্ঞান আলোক গ্রন্থের সম্পূর্ণ অধ্যয়ন দ্বারা জেনে যাবে। পাঠকদের জানার জন্য আমরা বেদের কিছু প্রমাণ দিচ্ছি -
য়দি নো গাং হংসি য়দ্যশ্চং য়দি পূরুষম।
তং ত্বা সীসেন বিধ্যামঃ।। অথর্ব০ ১/১৬/৪
অর্থাৎ - তুমি যদি আমাদের গাভী, ঘোড়া বা মনুষ্যকে হত্যা করো, তবে আমরা তোমাকে সীসা দিয়ে ছেদ করে দেবো ।
মা নো হিংসিষ্ট দ্বিপদো মা চতুষ্পদঃ ।। (অথর্বঃ ১১/২/১)
অর্থাৎ আমাদের মনুষ্য আর পশুদের নষ্ট করো না । অন্যত্র বেদে দেখুন -
ইমং মা হিংসীদ্রবিপাদ পশুম্ । (যজুঃ ১৩/৪৭)
অর্থাৎ এই দুই খুরবান পশুকে হিংসা করো না ।
ইমং মা হিংসীরেকশফং পশুম্ । (যজুঃ ১৩/৪৮)
অর্থাৎ এই এক খুরবান পশুদের হিংসা করো না ।
য়জমানস্য পশুন্ পাহি । (যজুঃ ১/১)
অর্থাৎ যজমানের পশুদের রক্ষা করো ।
আপনারা বলতে পারেন যে এই কথা যজমান বা কোন মনুষ্য বিশেষের পালিত পশুর কথাই বলেছে নাকি সমস্ত প্রাণির ? এই ভ্রমের নিবারণার্থ অন্য প্রমাণ -
মিত্রস্যাহং চক্ষুসা সর্বাণি ভূতানি সমীক্ষে । (যজুঃ ৩৬/১৮)
অর্থাৎ আমি সব প্রাণিদের মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি ।
মা হিংসীস্তন্বা প্রজাঃ । (যজুঃ ১২/৩২)
অর্থাৎ এই শরীর দ্বারা প্রাণিদের মেরো না ।
মা স্রেধত । (ঋ০৭/৩২/৯) অর্থাৎ হিংসা করো না ।
মহর্ষি জৈমিনীর পশ্চাৎ সব থেকে মহান বেদবেত্তা মহর্ষি দয়ানন্দের মাংসাহারের বিষয়ে বিচারও পাঠক পড়ুন -
“মদ্যমাংসাহারী অনার্য জাতির যাহার শরীর মদ্যমাংসে পরমাণুর দ্বারাই পরিপূর্ণ আছে, তাহার হাতে খাবে না ।”
“এই পশুদের হত্যাকারীরা সব মানুষ্যের হত্যাকারী জানবে ।”
“যখন থেকে বিদেশী মাংসাহারী এই দেশে এসে গরু আদি পশুদের হত্যাকারী মদ্যপায়ী রাজ্যাধিকারী হয়, তখন থেকে ক্রমশঃ আর্যের দুঃখের সীমা বাড়তে থাকে ।”
- সত্যার্থ প্রকাশ; দশম সমুল্লাস
দেখুন দয়ার সাগর ঋষি দয়ানন্দজী কি বলছেন -
“যাহারা পশুর গলা কেটে নিজেদের পেট ভরে তাহারা সারা পৃথিবীর ক্ষতি করে । সংসারে তাহাদের থেকেও অধিক কোন বিশ্বাসঘাতক, অনুপকারী, দুঃখ দানকারী পাপীজন আর আছে কি”?
“হে মাংসহারীরা ! যখন তোমরা কিছু সময় পর পশু পাবে না তখন মনুষ্যের মাংসকেও ছাড়বে কি ?”
“হে ধার্মিক লোকেরা ! আপনারা এই পশুদের রক্ষা তন, মন আর ধন দ্বারা কেন করেন না?” (গোকরুণানিধি)
আশা করি বুদ্ধিমান এবং নিষ্পক্ষ পাঠকদের মাংসাহারের ভ্রান্তি নির্মুল হয়ে গিয়েছে ।
....................................................................................
আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিকজীর আধ্যাত্মিক ভাষ্য -
{মাংসম্=মন্যতে জ্ঞয়তেহনেন তত্ মাংসম্ (উ০ কো০ ৩/৬৪); মাংসং পুরীষম্ (শ০ ৮/৭/৪/১৯); (পুরীষম্=পুরীষং পুণাতেঃ পূরয়তের্বা-নিরু০ ২/২২); সর্বত্রাহভিব্যাপ্তম্-ম০ দ০ য়০ ভা০ ৩৮/২১; য়ত্ পুরীষং স ইন্দ্রঃ-শ০১০/৪/১/৭; স এষ প্রাণ এব য়ত্ পুরীষম্-শ০৮/৭/৩/৬)}
পদার্থঃ (এতত্ বা উ স্বাদীয়ঃ) যোগী পুরুষের সামনে পরমানন্দের আস্বাদনকারী এই পদার্থ বিদ্যমান থাকে, যাহার কারণে জীব পরমাত্মার সাথে সহযোগে থাকে, (য়দধিগবং ক্ষীরং বা মাংসং বা) সেই পদার্থ যোগীর মন আদি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় । ঐ পদার্থ কি, ইহার উত্তর এই যে সর্বব্যাপী পরমৈশ্বর্য সম্পন্ন ইন্দ্ররূপ পরমাত্মা থেকে ঝড়তে থাকা ‘ও৩ম্’ বা গায়ত্রী আদি বেদের ঋচাই হলো সেই পদার্থ, যা যোগীর ইন্দ্রিয় বা অন্তঃকরণে নিরন্তর স্রবিত হতে থাকে । যোগী ঐ আনন্দময়ী ঋচার রসস্বাদন করতে থাকে, তখন সে পরমাত্মার অনুভব করতে থাকে। (তদেব ন অশ্নীয়াত্) যোগী ঐ ঋচার আনন্দকে ওই সময় পর্যন্ত অনুভব করতে পারে না, যতক্ষন পর্যন্ত না অতিথিরূপ প্রাণ তত্ব, তা যোগীর মস্তিক্য বা শরীরে সতত সঞ্চরিত না হয়, ওই ঋচার সাথে সংগত হয় না । এখানে অতিথি দ্বারা পূর্বের প্রকরণ পূর্ববৎ অভিপ্রায় হবে ।।৯।।
ভাবার্থঃ যখন কোন যোগী যোগসাধনা করেন আর এই অর্থে প্রণব বা গায়ত্রী আদির যথাবিধ জপ করেন, তখন সর্বত্র অভিব্যাপ্ত পরমৈশ্বর্যবান ইন্দ্ররূপ ঈশ্বর থেকে নিরন্তর প্রবাহিত ‘ও৩ম্’ রশ্মি ওই যোগীর অন্তঃকরণ তথা প্রাণের অন্তর স্রবিত হতে থাকে । ইহা থেকে সে যোগী ওই রশ্মির রসস্বাদন করে আনন্দে নিমগ্ন হয়ে যায় ।।৯।।
বেদবিজ্ঞান-আলোকঃ দ্বারা উদ্ধৃত
(পূর্বপীঠিকা-বেদের যথার্থ স্বরূপ, নবমোধ্যায়)
বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৬।৪।১৮ কন্ডিকা নিয়ে একটা শঙ্কা আমাদের সামনে প্রায়শই উঠে। শঙ্কটা এরূপ যে, বিদ্বান পূত্র লাভের জন্য স্বামী স্ত্রী উভয়ে বৃষের মাংস দ্বারা পাককৃত অন্ন আহার করবে । প্রায় সব অনুবাদক এমনটাই অনুবাদ করেছে ।
অর্থাৎ ইহা দ্বারা সনাতন ধর্মে গোমাংস খাওয়ার বিধান সিদ্ধ এমনটা দাবী করে অপপ্রচারকারীরা। মূলত আমাদের ধর্মের মূল স্রোত হলো বেদ।
বেদের জ্ঞান দ্বারাই পরবর্তিতে অনেক শাস্ত্র রচিত হয়েছে । সেই বেদে আমরা গোহত্যার বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ পাই ।
গো হত্যা সমন্ধ্যে বেদ বলছে যে -
"মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট"
(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
অর্থাৎ নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না ।
শুধু তাই নয় গোহত্যাকারীকে দন্ডের বিধান দিয়ে বেদ বলছে যে -
যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব । (অথর্ববেদ ১।১৬।৪)
উপনিষদ বেদেরই ব্যাখ্যা হওয়ার হেতু উপনিষদে গোমাংস আহারের নির্দেশ কদাপি থাকতে পারে না । আমাদের স্থুল বিচার বিবেচনার জন্যই মূলত এরূপ শঙ্কার উদ্ভব হয়েছে । আসুন বিষয়টি নিয়ে একটু বিস্তারিত বিশ্লেষন করা যাক -
অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পন্ডিতো বিজিগীতঃ সমিতিঙ্গমঃ শুশ্রুষিতাং বাচং ভাষিতা জায়েত সর্বাণ বেদাননুব্রুবিত সর্বমায়ুরিয়াদিতি মাষৌদনং পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্নীয়াতামীশ্বরৌ জনয়িতবা ঔক্ষেণ বাSSর্ষভেণ বা ।। (বৃহঃ উপঃ ৬।৪।১৮)
শব্দার্থঃ (অথ যঃ ইচ্ছেত্ পুত্রঃ মে) এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র (পন্ডিতঃ) বিদ্বান (বিজিগীথঃ) প্রসিদ্ধ (সমিতিয় গমঃ) সভায় গমন যোগ্য (শুশ্রুষিতাম বাচম্ ভাষিতা) আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী (জায়েত) হবে (সর্বাণ বেদাননুববীত সর্বম্ আয়ু ইয়াত্ ইতি) সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো (মাষৌদনম্) [পাঠভেদ - মাংসৌদম্] মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল (পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তম্ অশ্নীয়াতাম্ ইশ্বরী জনয়িতবৈঃ) পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো (অপেক্ষেত পুত্র) পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে (ঔক্ষেণ বা আর্ষভেণ) ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা ।
সরলার্থঃ এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র বিদ্বান প্রসিদ্ধ সভায় গমন যোগ্য আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী হবে, সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা ।
তাৎপর্যঃ এই কন্ডিকার মধ্যে বর্ণিত পুত্র প্রাপ্তির জন্য বলা হয়েছে যে, মাষের সাথে পাককৃত চাউল বিধির সাথে আহার করা উচিৎ । এই পুত্র এবং পুত্রি উৎপন্ন করার জন্য অপেক্ষিত সাধনের কাজে নেবার শিক্ষাকে সমাপ্ত করে ইহা বলা হয়েছে যে, সব প্রকারে পুত্র কে উৎপন্ন করা আদির কৃত্য ঔক্ষ এবং আর্ষভ বিধি দ্বারা করা উচিৎ ।
ঔক্ষ বিধি - ঔক্ষ শব্দ উক্ষ (সেচনে) ধাতু হতে এসেছে । উক্ষ দ্বারা উক্ষণ এবং উক্ষণের বিশেষন ঔক্ষ। ঔক্ষ বিধি বর্ণনাকারী শাস্ত্রকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলে । কোন মিশ্রিত ঔষধি পাক আদি তৈরীতে কোন কোন ঔষধি কি কি মাত্রায় পড়া উচিৎ তাহা বর্ণনাকারী শাস্ত্রের নাম ঔক্ষ শাস্ত্র। অভিপ্রায় এই যে, উপরিউক্ত মাষের অথবা তিলৌদন আদির প্রস্তুতে এই (ঔক্ষ শাস্ত্র) র মর্যাদা কে লক্ষ্য রেখে কাজ করা উচিৎ ।
আর্ষভ বিধি - আর্ষভ - ঋষভ শব্দের বিশেষন। ঋষভ এবং ঋষি শব্দ পর্যায়বাচক। আর্ষভের অর্থ ঋষিকৃত অথবা ঋষিদের বানানো কিছু । ঔক্ষ শাস্ত্রের সাথে এই আর্ষভ শব্দের ভাব এই যে, ঋষিদের বানানো বিধি (পদ্ধতি) র নামই ঔক্ষ শাস্ত্র । অর্থাৎ কোন অনভিজ্ঞর বানানো বিধিকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলা হয় না । ঋষিকৃত পদ্ধতিই ঔক্ষ শাস্ত্র ।
মাষৌদন - নিরুক্তেও মাংস শব্দের অর্থে মনন, সাধক, বুদ্ধিবর্ধক মনকে রুচি দানকারী বস্তুকে বলা হয়েছে যা ফলের রসালো অংশ, ঘী, মাখন, ক্ষীর আদি পদার্থ (মাংস মাননং বা মানসং বা মনোস্মিনৎসীদতীতি ; নিরুক্ত ৪।৩)। বলা হয়েছিল যে মাষৌদনের পাঠভেদ অনেক গ্রন্থে মাংসৌদন আছে। কেবল এই অর্থে যদি ধরে নেওয়া হয় (মনঃ সীদত্যাস্মিন্ স মাংস:) যাহাতে মন প্রসন্ন থাকে তাহাই মাংস এবং এই দৃষ্টি দ্বারা মাষৌদন কে মাংসৌদন বলা যায় । এই জন্য কোন প্রকরণে গো মাংস অর্থে মাংসের প্রয়োগ যা এই প্রকরনে নেই। এইজন্য যে দশ ঔষধিকে দ্বারা মাষ এবং ঔদন বর্ননার বিধান রয়েছে তাহার নাম স্বয়ং উপনিষদই উল্লেখ করেছে-
(১)ধান্য (২)যব (৩)তিল (৪)মাষ (৫)বাজরা (৬)প্রিয়জু (৭)গোধূম (৮)মসুর (৯)খল্ব (১০) থলকুল ।
(বৃহঃ উপঃ ৬।৩।১৩)
এখানে একটা বিষয়ে গভীর ভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ যে, এই ঔষধির গণনা করে দেখা যাচ্ছে তিলের পরেই মাষের উল্লেখ রয়েছে । এইজন্য সতেরো কন্ডিকায় তিলৌদন এবং তাহার পরে আঠারো কন্ডিকায় মাষৌদনের উল্লেখ রয়েছে । অন্যথা মাংসের তো এখানে যেমন বলা হলো তার কোন প্রকরনই নেই ।
"য আমং মাংস মদন্তি পৌরুষেয়ং চ যে করিঃ ।
গর্ভান্ খাদন্তি কেশবাস্তানিতো নাশয়ামসি।" - অথর্ববেদে (৪।৬।২৩)
যে কাঁচা বা রন্ধন করা মাংস খায়, যে গর্ভনাশ করে, এখানে আমি তাদের বিনাশ করি ।
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী সত্যার্থ প্রকাশে বলেছেন যে, মাংসাহার করলে মানুষের স্বভাব হিংস্র হয়ে যায় ।। যারা মাংসাহার করে বা মদ্য পান করে, তাদের শরীর ও বীর্য দূষিত হয় ।।
সহৃদয়ং সাংসন স্যমবিদ্বেষং কৃণোমি বঃ অন্যে অন্যমভি হর্যত বৎসং জাতমিবাঘ্ন্যা ।। - অথর্ববেদ ৩/৩০/১ মন্ত্র
ভাবার্থ : (হে মনুষ্যগন) আমি তোমাদের সম মনষ্ক ও অবিদ্বিষ্ট করছি । যেমন - অবধ্য গাভী (অঘ্ন্যা) তার জাত বৎসকে নিজের অভিমুখে কামনা করে,তেমনি তোমরা পরস্পরকে কামনা কর।
যঃ পৌরুষেয়েন ক্রবিষা সং মংক্তে যো অশ্ব্যেন পশুনা যাতুধানঃ যো অঘ্ন্যায়া ভরতি ক্ষীরমগ্নে তেষাং শীর্ষানি হরসাপি বৃশ্চ ।। - ঋগ্বেদ ১০/৮৭/১৬ মন্ত্র
ভাবার্থ : যে রাক্ষস নরমাংস সংগ্রহ করে অথবা অশ্ব প্রভৃতি পশুদিগের মাংস সংগ্রহ করে, যে হত্যা করিবার অযোগ্য গাভীর দুগ্ধ হরন করে, হে অগ্নি ! নিজ বলে তাহাদিকের মস্তক ছেদন করিয়া দাও ।
অথর্ববেদ ১৯/১/২৯ মন্ত্রে বলা হয়েছে -
অনা গোহত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গামশ্বং পুরুষং বধীঃ।
যত্র যত্রাসি নিহিতা ততসত্বোতথাপ যামসি পর্ণাল্লঘীযসী ভব।।
ভাবার্থ : নির্দোষদের হত্যা করা জঘন্যতম অপরাধ । কখনো মানুষ, গো, অশ্বাদিদের হত্যা করো না ।
রাজসুয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্তদধ্বরঃ।
অকাশ্বমেধাবৃচ্ছিষ্টে জীব বর্হিমমন্দিতমঃ ।। (অথর্ববেদ ১১।৭।৭)
রাজসূয়, বাজপেয়,অগ্নিষ্টোম, অশ্বমেধ আদি সব যজ্ঞ অধ্বরঃ অর্থাৎ হিংসা রহিত যজ্ঞ । যাহা প্রাণীমাত্রকে বৃদ্ধি এবং সুখ শান্তি দাতা ।
এই মন্ত্রে রাজসূয় আদি সব যজ্ঞকে অধ্বরঃ বলে গিয়েছেন । যার একমাত্র সর্ব্বসম্মত অর্থ হিংসা রহিত যজ্ঞ । তাহলে ইহা স্পষ্ট যে, বেদের মধ্যে কোন যজ্ঞে পশুবধের আজ্ঞা নেই ।

যজ্ঞে কি পশু বলি
শঙ্কা সমাধানঃ
যজ্ঞের মহত্বতার গুনগান করে বেদ বলছে যে, সত্যনিষ্ঠ বিদ্বান লোক যজ্ঞ দ্বারাই পূজনীয় পরমেশ্বরের পূজা করে। "যজ্ঞ বৈ শ্রেষ্ঠতম কর্ম " আদি বচন অনুসারে যজ্ঞ কর্মেই সব শ্রেষ্ঠ ধর্মের সমাবেশ হয়ে থাকে। যাহাতে হিংসার কোন স্খান নেই, এজন্যই যজ্ঞে "অধ্বর" শব্দটি এসেছে। নিরুক্ত ১।৮ এ অধ্বর শব্দের অর্থ হিংসরহিত করা হয়েছে। এ জন্য ঋগবেদে বলা হয়েছে যে, এই হিংসারহিত যজ্ঞেই বিদ্বানরা সুখ প্রাপ্ত করে থাকে (ঋগবেদ ১।১।৪)।
অতএব বৈদিক যজ্ঞে পশুবলির বিধান শুধু একটি ভ্রান্ত ধারনা মাত্র। যজ্ঞে পশুবলির প্রথা মধ্য কালে এসেছে। প্রাচীন কালে যজ্ঞে পশুবলির প্রথা ছিলো না। ধর্ম পথ হতে বিচ্যুত লোক নিজ মাংসলোলুপতার বশীভূত হয়ে যজ্ঞে পশুবলির প্রথা প্রচলন করেছে। যার প্রমাণ আমরা মহাভারতে পাই -
.
সুরা মৎসা মধু মাংসমাসবং কৃসরোদনম্।
ধুর্তেঃ প্রবর্তিতং হোতন্নৈবদ্ বেদেষু কল্পিতম।।
(মহাঃ শান্তি পর্বঃ ২৬৫,শ্লোক ৯)
---সুরা, মৎস, মাংস, তালরস, এইসব বস্তুকে ধুর্তেরাই যজ্ঞে প্রচলিত করেছে। বেদে এসব উপযোগের বিধান নেই।
.
অব্যবস্থিতমর্যদৈবিমূঢর্নাস্তিকৈর্তবৈ।
সংশয়াত্মাভিরব্যক্তৈহিংসা সমনুবর্তিত।।
(মহাঃ শান্তি পর্বঃ অঃ ২৬৫, শ্লোক ৪)
--- যে ধর্মের মর্যাদা থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে মূর্খ, নাস্তিক তথা যার আত্মা সংশয়যুক্ত এবং যার কোন প্রসিদ্ধি নেই এইরূপ লোকই হিংসাকে সমর্থন করে।
.
মানান্মোহাচ্চ লোভাচ্চ লৌল্যমেত্যপ্রকল্পিতম্।।
(মহাঃ শান্তি পর্ব, অঃ ২৬৫, শ্লোক ১০)
--- সেই ধূর্তেরা অভিমান, মোহ এবং লোভের বশীভূত হয়ে সেই সব বস্তুর প্রতি লোলুপতা প্রকট করে থাকে।
.
অর্থাৎ মহাভারত থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, যজ্ঞে পশুবলি ধূর্তদের কাজ। কিন্তু পাশ্চাত্য বিদ্বান মাক্সমুলার , গ্রিফিথ আদি বেদে মাংসাহারের প্রচার করে কেবল মাত্র পবিত্র বেদ কেই কলঙ্কিত করেছে। মধ্য কালে বাম মার্গ নামে একটি দলের প্রসার খুব হয়েছিলো। যারা মাংস, মদিরা, মৎস, মৈথুন আদি কে মোক্ষের মার্গ বলে মানতো। সায়ন,মহিধর আদি বিদ্বান যারা ছিলো তারা বাম মার্গ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারনেই বেদে বলিপ্রথা তথা মাংসাহারের কথা উল্লেখ করেন। বেদে মাংস ভক্ষন এবং বলি প্রথার মিথ্যা প্রচারের কারনে ধর্মের যে ক্ষতিসাধন হয়েছে তা অবর্ণনীয়। আজ কাল তো আমাদের সামনে এই শঙ্কা উপস্থিত হয়ে যে, বেদে গো আহুতি এবং গো মাংস ভক্ষনের নির্দেশ রয়েছে। অথচ আমরা গাভী কে মাতৃতূল্য জ্ঞান করে এসেছি এবং গাভীকে হত্যার চিন্তাও করতে পারি না। এবং বেদেও গাভীকে "অঘ্না" "অদিতি" ইত্যাদি শব্দে ভূষিত করা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে গাভীগুলো হত্যার অযোগ্য। এবং বেদের অসংখ্য জায়গায় গো হত্যার নিষেধ এবং গো হত্যাকারীকে শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। যেমন-
.
প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগা মদিতিং বধিষ্ট।।
(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
--- হে জ্ঞানবান পুরুষের নিকট আমি বলেতেছি নিরপরাধ অহিংস পৃথিবী সদৃশ গাভীকে হত্যা করিও না।
.
যদি নো গাং হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম।তং ত্বা সীসেন বিধ্যামো যথা নোহসো অবীরহা।।
(অথর্বেদ ১।১৬।৪)
--- যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব যাহাতে আমাদের মধ্যে বীরদের বিনাশক কেহ না থাকে।
.
"অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গাম অশ্বম পুরুষং বধী"
(অথর্ববেদ ১০।১।২৯)
--- নির্দোষের হত্যা অবশ্যই ভয়ানক। আমাদের গাভী, অশ্ব, পুরুষকে মেরো না।
.
"গোঘাতম্ ক্ষেধে যঃ গাম্ বিকৃন্তন্তম"
(যজুর্বেদ ৩০।১৮)
- গাভীর ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী যে, ক্ষুধার জন্য গাভীকে হত্যা করে। তাকে ছেদন করি।
.
" অদিতিম মা হিংসী"
(যজুর্বেদ ১৩। ৪৯)
- হত্যার অযোগ্য গাভীকে কখনো মেরো না।
.
" মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট"
(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
--- নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না।
.
--- "অঘ্না ইব" গাভী সমূহ বধের অযোগ্য। সর্বদা ( পশুন ত্রায়েথাম, যজুঃ ৬।১১) পশুদের রক্ষা করো তাদের পালন করো (অঃ ৩।৩০।১)।
.
অথচ এসব পৌরাণিক সায়ন, মহিধর, রমেশ আদি বেদ ভাষ্যকার দের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। তাদের ভাষ্যে এতটাই সুস্পষ্টভাবে গো আহুতি এবং মাংস ভক্ষনের নির্দেশনা পাওয়া যায় যে সেটা অস্ত্রস্বরূপ বেদ বিদ্বেষীরা ব্যবহার করে বেদকে কলুষিত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে। এ পর্যায়ে এরকমই কিছু মন্ত্র শঙ্কাস্বরূপ তুলে ধরবো এবং সেগুলোর বাস্তবিক অর্থ জানার প্রয়াস করবো -
.
=>> শঙ্কা - ০১
হে ভারত অগ্নি! তুমি আমাদিগের! তুমি বন্ধ্যাগাভী ও বৃষ ও গর্ভিনী গাভী সকলের দ্বারা আহুত হইয়াছো।
(ঋঃ ২।৭।৫)
.
সমাধানঃ
মন্ত্রটিতে যথাক্রমে তিনটি শব্দ এসেছে যথা - বশা, উক্ষ এবং অষ্টাপদী।
★ বশাঃ এ শব্দের অর্থ রমেশ বন্ধ্যাগাভী করেছে। কিন্তু বশা শব্দের আরো অনেক অর্থ হয়। শতপথ ব্রাহ্মণ ২।৮।৩।১৫ অনুসারে বশা অর্থ পৃথিবী -(ইয়ং [পৃথিবী] বৈ বশা পৃশ্নি)। অথর্ববেদ ১।১০।১ অনুসারে ঈশ্বরীয় নিয়ম বা নিয়ামক শক্তি। এবং অথর্ববেদ ১০।১০।৪ এ বশা অর্থে সংসারকে বশকারী পরমাত্মা শক্তি। বেদের বহুস্থলে বশা শব্দটি এসেছে যেগুলোতে এর অর্থ বশকারী, ঈশ্বরীয় শক্তি, পৃথিবী ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
★ উক্ষঃ এই শব্দটি সেচনার্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। "উক্ষেথাং মিত্রা বরুনা ঘৃতেন ; ঋঃ ৭।৬৪।৪"। নিরুক্ত ১৩।৯ অনুসারে "উক্ষঃ বৃদ্ধিকারক অথবা জল সেচন অর্থে। কিন্তু রমেশ এখানে বৃষ অর্থ করায় এমন অনর্থ ঘটেছে।
★ অষ্টাপদীঃ সরল অর্থে আমরা বুঝি আট পা। এ অর্থেই বোধ হয় রমেশ "অষ্টাপদী" = গর্ভবতী গাভী করেছে। অর্থাৎ গাভীর চার পা এবং গর্ভস্থ গাভীর চার পা এই আট পা। কিন্তু বেদের অর্থ আধ্যাত্মিক এবং গূঢ তাৎপর্য সম্পন্ন। এখানে অষ্টাপদী অর্থে যোগাঙ্গের আট চরন অর্থাৎ যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার,ধারনা, ধ্যান, সমাধি। সম্পূর্ণ মন্ত্রের ভাবার্থ এই যে প্রভূকে লাভের জন্য আমাদের তিন কার্য আবশ্যক। (ক) ইন্দ্রীয় কে বশ রাখা (খ) উৎপন্ন সোম শক্তি শরীরের মধ্যে সিঞ্চন করা এবং (গ) অষ্টাঙ্গ যোগ।
মন্ত্রটি নিম্নরূপ -
.
ত্বং নো অসি ভারতাগ্নে বশাভিরুক্ষভিঃ। অষ্টাপদীভিরাহুত।।
(ঋগবেদ ২।৭।৫)
.
সরলার্থঃ হে অগ্রনি প্রভূ! আপনি [ইন্দ্রীয়] বশীকরন দ্বারা নিজ ভিতর প্রাপ্ত করে আমাদের হও, এই প্রকার শরীরের মধ্যে শক্তি সেচন দ্বারা আপনি আট যোগাঙ্গরূপ চরন দ্বারা আহুত হয়ে [আমাদের হও]
(অনুবাদঃ হরিশরন সিদ্ধান্তলংকার)
.
=>> শঙ্কা - ০২
হে অগ্নি! আমরা তোমাকে হৃদয় দ্বারা সংস্কৃত ঋকরূপ হব্য প্রদান করছি। বলশালী বৃষভ ও ধেনুসকল তোমার নিকট পূর্বক্তরূপ হব্য হউক
(ঋগবেদ ৬।১৬।৪৭)
.
সমাধানঃ
এ মন্ত্রটিতেও তিনটি শব্দ এসেছে - বশা, উক্ষন এবং ঋষভ। যার অর্থ রমেশ বলশালী বৃষ এবং ধেনুসকল করে সেগুলোকে অগ্নির হব্য দ্রব্য তৈরী করেছে। বশা এবং উক্ষণ শব্দের অর্থ পূর্বেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে - উক্ষ (সেচনার্থে) + কনন্= উক্ষন। বাকী রয়েছে " বৃষভ" শব্দটি যার অর্থ শুধু বৃষ নয়। শতপথ ব্রাহ্মণ ৫।৩।১।৩ এ ইন্দ্র কে বৃষভ বলা হয়েছে "ইন্দ্র যদৃষভ"। ইন্দ্র শব্দে ঐশ্বর্যবান পুরুষ তথা একজন শ্রেষ্ঠ রাজা বুঝায়। অতএব মন্ত্রটির যথার্থ অর্থ নিম্নরূপ দাড়ায় -
.
আ তে অগ্নে হবির্হৃদা তষ্টং ভরামসি।
তে তে ভবন্তুক্ষণ ঋষভাসো বশা উত।।
(ঋগবেদ ৬।১৭।৪৭)
.
সরলার্থঃ হে তেজস্বিন! তোমার জন্য আমরা উত্তম মন্ত্র দ্বার হৃদয় দ্বারা সুসংস্কৃত গ্রাহ্য, অন্ন প্রস্তত করি তোমার কার্যের জন্য ঐ সব কার্যভার উঠানকারী তথা বীর্যসেচনে সামর্থ সত্য ন্যায় দ্বারা কান্তিমান, নরশ্রেষ্ঠ পুরুষ এবং রাষ্ট্রকে বশকারী অধিকারী তোমার অধিনে হোক।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
=>> শঙ্কা -০৩
হে ইন্দ্র! তোমার নিমিত্তে পুরোহিতদিগের সহিত একত্রে বৃষকে পাক করি এবং পঞ্চদশ তিথীর প্রত্যেক তিথীতে সোমরস প্রস্তুত করিয়া থাকি।
( ঋঃ ১০।২৭।২)
.
সমাধানঃ
মন্ত্রটিতে "বৃষভং পচানি" শব্দগুলো এসেছে। যার অর্থ রমেশ এখানে বৃষভ (ষাড়) কে পচানি (রান্না) করার কথা উল্লেখ করেছে। বৃষভ = বৃষ (সেচনার্থক) +অভচ (ঋষি বৃষিভ্যাং কিত) = বৃষভ। অথবা বৃহ (উদ যমন অর্থে) + অভচ = বৃষভ (বাহুলক নিয়ম দ্বারা "হ" কে "ষ") যাস্ক "বৃহ" ধাতুকে বর্ষণ অর্থ মেনেছেন। তাছাড়া নিরুক্তে বৃষভ এর অনেক প্রকার অর্থ রয়েছে। নিরুক্ত ৭।২৩ এ বৃষভ অর্থ বর্ষা বর্ষনকারী রয়েছে, "প্র নু মহিত্বং বৃষভস্য বোচম"। আবার নিরুক্ত ৬।২৩ এ "বৃষভ" অর্থ " বেদজ্ঞ বিদ্বান" রয়েছে - "অনর্বাণং বৃষভং মন্ত্রজিহ্লম" অর্থাৎ সুন্দর বাণীসম্পন্ন বেদজ্ঞ বিদ্বান কে অন্ন দ্বারা পোষন করো। ঋগবেদ ১০।১০।১০ এবং নিরুক্ত ৪।২০ এ "বৃষভ" অর্থ বীর্য সেচনে সামর্থ পুরুষ বলা হয়েছে। বাকী থাকলো "পচানি শব্দটি। বৈদিক কোষে "পচন" শব্দের অর্থ হচ্ছে বিদ্যা অথবা বল কে পরিপক্ক করা। ঋগবেদ ২।১২।১৪ এবং অঃ ২০।৩৪।১৫ এ একই কথা বলা হয়েছে, "যঃ সুনন্তম অবতি যঃ পচন্তম"। অর্থাৎ মন্ত্রটিতে মেঘের তূল্য পুরুষকে পরিপক্ক করার কথা বলা হয়েছে। কোন ষাড় কে রান্নার করার কথা বলা হয় নি। মন্ত্রটি নিম্নরূপ -
.
যদীদহং যুধয়ে সংয়ান্যদেবয়ুন্তন্বা শুশুজানান।
তে তুম্রেং বৃষভং পচানি তীব্রং সুতং পঞ্চদশং নিষিঞ্চম।।
(ঋগবেদ ১০।২৭।২)
.
সরলার্থঃযখনই আমি যুদ্ধ করবার নিমিত্তে দেহ বা বিস্তৃত সেনা দ্বারা বর্ধিত হয়ে, দেব বা বিদ্বান কে না দানকারী দুষ্ট জনকে লক্ষ্য করে নিজ সৈন্য বল কে একত্রিত করবো। হে প্রভু! আমার সাথে তোমার অতি বলশালী বৃষ্টিকারক মেঘের তূল্য শর বর্ষনকারীকে পরিপক্ক করবো এবং অতি তীক্ষ্ণ অভিষেক যোগ্য পূর্ণচন্দ্রবত বিরাজমান পুরুষকে মুখ্য পদের উপর অভিষিক্ত করবো।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
.
=>> শঙ্কা - ০৪
হে বৃষাকপি নিতে! তুমি ধনশালিনী ও উৎকৃষ্ট পুত্রযুক্তা আমার সুন্দরী পুত্রবধু! তোমার বৃষদিগকে (ষাড় কে) ইন্দ্র ভক্ষন করুন। তোমার অতি চমৎকার অতি সুখকর হোমদ্রব্য তিনি ভক্ষন করুন। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।
(ঋঃ ১০।৮৬।১৩)
.
সমাধানঃ
মন্ত্রটিতে "উক্ষণ" শব্দে বৃষ করায় এমন অনর্থ ঘটেছে। উক্ষন শব্দের অর্থ আমরা পূর্বেই ব্যাখ্যা করেছি। তবুও এস্থলে পুনরায় কিঞ্চিত তুলে ধরছি। উক্ষ (সেচন অর্থে) + কনিন্ = উক্ষন। এবং বৃদ্ধিকরন অর্থেও উক্ষ ধাতু এসেছে। নিরুক্ত সংহিতা ১৩।৯ এ উক্ষণ শব্দের অর্থটি পরিষ্কার হযেছে। "উক্ষণ উ- ক্ষেতের্বৃদ্ধিকর্মণ উক্ষনত্যুদকেনোতিবা ; নিরুঃ ১৩।৯ " অর্থাৎ বৃদ্ধি অর্থে উক্ষ অথবা জল সেচন কারী অর্থে। অতএব মন্ত্রটির সত্যার্থ এরূপ দাড়ায় - ইন্দ্র (পরমঐশ্বর্যবান প্রভূ) "উক্ষণ"সেচনকারী মেঘ দ্বারা উৎপন্ন "তে হবি" অন্নের তূল্য (জগত) কে "ঘসত" ভক্ষন করেন। অর্থাৎ প্রলয় কালে সমস্ত জগৎ কে লীন করে নেয়।
মন্ত্রটির সরলার্থ নিম্নরূপ -
.
বৃষকপায়ি রেবতি সুপুত্র আহু সুস্নুষে।
ঘসত্ত ইন্দ্র উক্ষণঃ প্রিয়ং কাচিৎকরং হবির্বিশ্বস্মাদিন্দ্র উত্তর।।
(ঋগবেদ ১০।৮৬।১৩)
.
সরলার্থঃ সমস্ত সুখ কে মেঘের তূল্য বর্ষনকারী প্রভূর অপার শক্তি! হে অনেক ঐশ্বর্যের স্বামিনি! হে উত্তম পুত্র, জীবধারী! হে উত্তম সুখপূর্বক বিরাজমান, সুখদায়িনি! পরমঐশ্বর্যবান প্রভূ সেচনকারী মেঘ দ্বারা উৎপন্ন প্রীতিকারক অনেক সুখ দান কারী তোমার উত্তম অন্ন সদৃশ [জগত কে] ভক্ষন করেন [প্রলয়কালে লীন করে নেয় ] পরমঐশ্বর্যবান প্রভূ সবার থেকে উপরে।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
.
=>> শঙ্কা - ০৫
আমার জন্য পঞ্চদশ এমন কি বিংশ বৃষকে (ষাড়) পাক করিয়া দেয়। আমি খাইয়া শরীরের স্থুলতা সম্পাদন করি। আমার উদরের দুইপার্শ পূর্ন হয়। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।
(ঋঃ ১০।৮৬।১৪)
.
সমাধানঃ
একই "উক্ষণ" শব্দের ব্যবহার এ মন্ত্রেও হয়েছে তাই এখানে এর ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। মন্ত্রটিতে পনেরো ষাড় নয় বরং সেচন সামর্থ পনেরো - দশ ইন্দ্রীয় এবং পঞ্চ প্রাণকে এবং শরীরস্থ বিশ অঙ্গকে পরিপক্ক করার বলা হয়েছে। বেদের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যাই সর্বাপেক্ষা গ্রহনযোগ্য কারন আক্ষরিক অর্থে সর্বদাই অনর্থ ঘটিয়া থাকে।
.
উক্ষ্ণো হি মে পঞ্চদশ সাকং পচন্তি বিংশতিম্।
উতাহমদ্মি পীব ইদুভা কুক্ষো পৃণন্তি মে বিশ্বস্মাদিন্দ্র উত্তর।।
(ঋগবেদ ১০।৮৬।১৪)
.
সরলার্থঃ আমার সেচনকারী পনেরো - দশ ইন্দ্রীয় এবং পঞ্চ প্রাণ হাত এবং পায়ের বিশ আঙ্গুলির সমান শরীরের ভিতর বিশ অঙ্গকে এক সাথে পরিপাক করে এবং পরিপুষ্ট হয়ে পুষ্টিদায়ক ভোগ্য দেহ এবং নানা প্রকার ভোগ কে বা সেই প্রাণকে ভোগ করি, ঐ সমস্ত প্রাণ নিশ্চয়রূপে আমার দুই পার্শ পূর্ণ করে, শক্তিশালী প্রভূ সবার থেকে উপরে।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
.
অতএব ইহা স্পষ্ট যে বেদ যজ্ঞে গো আহুতি দেবার মিথা প্রচার নিতান্তই ভ্রান্ত।অধ্বর রূপ যজ্ঞকে বেদ কখনো নির্দোষ প্রাণীর রক্ত দিয়ে অপবিত্র করতে বলে নি। বরং পবিত্র বেদের নির্দেশ এই যে আমরা সর্বদা যেন জগতের সমস্ত প্রাণীর জন্য সুখকর হই -
"স্বস্তি মাত্রে উত পিত্রে নো অস্তু স্বস্তি গোভ্যো জগতে পুরুষেভ্যঃ।(অথর্ববেদ ১।৩১।৪)"
--- আমাদের মাতার জন্য এবং পিতার জন্য সুখদায়ক হও এবং গাভীর জন্য পুরুষের জন্য জগতের জন্য সুখদায়ক হও।
ওম্ শম্

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ