দুধ আমিষ নাকি নিরামিষ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

01 September, 2019

দুধ আমিষ নাকি নিরামিষ

দুধ আমিষ নাকি নিরামিষ
বাংলা ভাষায় আমিষ বা নিরামিষ শব্দ দুটো জটিল । ইংরেজি তে vegetarian এবং non-vegeterian বলে উল্লেখ করা হয় । যে সমস্ত খাবার উদ্ভিজ্য উৎস থেকে আসে সেগুলো vegetarian ও প্রানিজ উৎস থেকে আসা খাবারগুলো non vegetarian . খুবই সহজ হিসাব ।
কিন্তু বাংলায় "নিরামিষ খাদ্য " বললে তবে , ডাল , বিন্স , মাশরুম, সয়া এসব গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিজ্য আমিষ ও বাতিল যায় ।
এবার, vegan দের কথা বলি। ইংরেজিতে ভেগান হলো ,শুধু উদ্ভিজ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত খাদ্য সমূহ থাকবে , প্রাণিজ উৎস থেকে আসা সকল খাবার বাতিল হবে ।
দুধ ,দই, দধি, dairy milk চকলেট, আইসক্রিম সব প্রাণীজ উৎস থেকে আগত । তাই এসব non vegan ও non vegeterian খাবার ।
কিন্তু বাংলায় বলতে গেলে দুধ উচ্চমানের আমিষ , এর উৎকৃষ্ট whey প্রোটিন 20 ভাগ ও casein প্রোটিন 80 ভাগ । এটাতে 9 টি গুরুত্বপূর্ণ essential amino acid আছে ,যা মানব শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । সে হিসেবে দুধ আমিষ জাতীয় খাবার । কিন্তু দুধ থেকে তৈরী মাখন, ঘী ইত্যাদি নিরামিষ।
দুধ যেহেতু প্রাণীজ প্রোটিন এ সমৃদ্ধি তাই বৈজ্ঞানিক ভাবে এটিকে আমিষ বলতে চেয়েই প্রশ্নটির উদ্ভব হয়েছে বলেই অনুমান।
হিন্দু ধর্ম দুধ কে নিরামিষ বলে গণ্য করা হয়। আমাদের হিন্দুসমাজে একটি ভ্রান্ত সংস্কার আছে আমিষ ও নিরামিষ খাবারের ধারনা কে নিয়ে। এই বিষয়ে এক একজন মানুষ এক একটি মত পোষন করেন। অনেকে বলে থাকেন প্রোটিন জাতীয় খাবার মানেই আমিষ, কিন্তু সেই সব ব্যাক্তিরা মানব শরীরে প্রোটিনের গুরুত্বই সঠিক ভাবে জানেন না। এরজন্য সেইসব ব্যাক্তিরা মসুর ডাল কেও আমিষ জাতীয় খাবারের মধ্যে ধরে থাকে।
আবার প্রাণীজ উৎস মানে আমিষ হবে এই ধারনা টা ভুল, দুধ নিরামিষ। শুধু যে উদ্ভিদজাত আহার নিরামিষ হবে এই ধারনা টা ভুল, রসুন ও পেঁয়াজ যা ওই ব্যাক্তিদের ভাষাতে আমিষ কিন্তু যুক্তি ও প্রমান সাপেক্ষে ইহা অর্ধ-আমিষ । আসলে হিন্দুশাস্ত্র মতে আমিষ ও নিরামিষ বলে কোনো শব্দ নাই, যা আছে সেটা হল সাত্ত্বিক ,রাজসিক ও তামসিক ।
নিরামিষ এর অপর নাম স্বাত্মীক ।প্রাচীন আয়ুর্বেদ এর জ্ঞানের অনুসারে বৈদিক ঋষিরা আহার কে তিন ভাগে ভাগ করেন সাত্ত্বিক, রাজসিক ,তামসিক।
এর মধ্যে স্বাত্মীক শ্রেণীর আহার গুলির বেশীভাগটা উদ্ভিদজাত হবার জন্য, সবাই এটা ভাবে যে উদ্ভিদজাত আহারই নিরামিষ হবে । কিন্তু দুধ সাত্ত্বিক শ্রেণীর আহারের অর্ন্তগত ।
সাত্ত্বিক খাবারের বৈশিষ্ট্য –
১. এই খাবার গুলি সাধারণত হালকা,রসালো, মিষ্ট বা মিশ্র, সতেজক স্বাদ বা প্রকৃতি বিশিষ্ট।
২. এই শ্রেণীর আহারে প্রায় সবকটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বর্তমান। উদাহরণ নেন দুধ সুষমখাদ্য।
৩. এই শ্রেণীর আহারগুলির শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব সর্বনিম্ন।
৪. এই শ্রেণীর আহার গ্রহনে দৈহিক ও মানসিক শক্তি, কাম, ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- এরজন্য কোনো ধর্মীয় উপবাস চলাকালীন এই শ্রেণীর খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. এই শ্রেণীর আহার গুলিতে সর্বাধিক ভেষজ গুণাবলী বর্তমান।
- এর জন্য পিঁয়াজ ও রসুন অর্ধ-তামসিক খাবার, সাত্ত্বিক আহারের এই গুণাবলী টা পিঁয়াজ ও রসুনে প্রবল। কারণ পিঁয়াজ ও রসুনের ভেষজ গুণাবলী উল্লেখযোগ্য।
৬. এই শ্রেণীর আহার অতিরিক্ত গ্রহণে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব সর্বনিম্ন।
উদাহরণ-দুধ, শাকসব্জী, তণ্ডুল শস্য,দানা শস্য, ডাল শস্য, ফল ইত্যাদি
তামসিক খাবারের বৈশিষ্ট্য –
১. শুষ্ক, উষ্ণ, অসার প্রকৃতি বিশিষ্ট।
২. এই শ্রেণীর আহারে প্রায় স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বর্তমান।
৩. এই শ্রেণীর আহারগুলির শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব সর্বাধিক।
৪. এই শ্রেণীর আহারগুলি গ্রহণে দৈহিক ও মানসিক শক্তি, কাম, ক্রোধ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৫. এই শ্রেণীর আহার গুলিতে সর্বনিম্ন ভেষজ গুণাবলী বর্তমান। এছাড়া এতে কতিপয় বিষ (toxic) গুনাবলী বর্তমান।
৬. এই শ্রেণীর আহার অতিরিক্ত গ্রহণে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব সর্বাধিক।
উদাহরণ- মাংশ, ডিম, মাছ, পিঁয়াজ ও রসুন (অর্ধ-তামসিক) ইত্যাদি।
রাজসিক খাবারের বৈশিষ্ট্য –
১. সাধারণত তীব্র ও ঝাঁঝালো প্রকৃতি বিশিষ্ট।
২. এই শ্রেণীর আহারে প্রায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে না।
৩. এই শ্রেণীর খাবার গুলি মানব শরীরে উভয়ধর্মী অর্থাৎ উপকার ও ক্ষতিসাধন দুটো করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ- অতিরিক্ত মসলাদার খাবার, কোল্ড ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংক, কাফিনটেড ড্রিংক ইত্যাদি।
৪. এই শ্রেণীর আহার গ্রহনে দৈহিক ও মানসিক শক্তি ও ক্রোধ হ্রাস বা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৫. এই শ্রেণীর আহার গুলিতে ভেষজ ও বিষ (toxic) গুণাবলী দুটোই বর্তমান।
৬. এই শ্রেণীর অতিরিক্ত আহার গ্রহণে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব অনেকটা Slow Poisoning এর ন্যায়। অর্থাৎ শুরুতে ধীরে ধীরে এবং একসময়ে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে।
-উদাহরণ নেন বাঙালীদের প্রিয় তেলে ভাজা আলুর চপ ও বেগুনি, যা বহুদিন যাবৎ ধরে খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে অসম্পৃক্ত ফ্যাট ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়ক।
এইহলো ৩ ধরণের খাবারের বৈশিষ্ট্য, এবার আপনি যে খাবার টিকে তুলনা করতে চান সেটার বিজ্ঞান ভিত্তিক তুলনা করুন, অর্থ্যাৎ সেই খাবারে পুষ্টিমূল্য, ক্যালোরিমূল্য, সেই খাবারে উপকারিতা ও অপকারিতা প্রভৃতি গুণাবলী এবং সেই সংগ্রহিত তথ্যাদির সাথে এই ৩ ধরণের খাবারের বৈশিষ্ট্যর সঙ্গে তুলনা করুন, যার সাথে মিলবে সেটা হবে সেই শ্রেণীর খাবার। তবে পিঁয়াজ ও রসুন (অর্ধ-তামসিক) মূলত উপবাসের সময় খাওয়া হয় না এর আঁশটে গন্ধটার ও তীব্র স্বাদের জন্য এছাড়া দ্বিতীয় কোনো কারণ নেই।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ