বরাহ অবতার - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

09 September, 2019

বরাহ অবতার

বেদের ব্রাহ্মণ ভাগে বরাহ শব্দ বার বার এসেছে। চলতি বাংলার বরাহ মানে শুকর।বরাহ অবতান নাকি পৃথিবীকে জল হতে টেনে তুলেছিলেন। কথাটি সত্য কিন্তু বরাহ শব্দের অর্থ না জেনে অমন গল্প শুনতে যাওয়টা ও অন্যায়।পুরাণ বলে, তিনি হিরণ্যাক্ষ নামক রাক্ষসের হাত থেকে 

ভূদেবী পৃথিবীকে উদ্ধার করেন। হিরণ্যাক্ষ পৃথিবীকে মহাজাগতিক সমুদ্রের তলায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। বিষ্ণু বরাহ-এর বেশ ধারণ করে এক হাজার বছর ধরে হিরণ্যাক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত ও নিহত করেন। তারপর পৃথিবীকে মহাজাগতিক সমুদ্রের তলা থেকে উদ্ধার করেন। এবং ভগবান বিষ্ণু বরাহ অবতারে ভূদেবী(পৃথিবীর-দেবী) কে পত্নী হিসাবে গ্ৰহণ করেন।
শিল্পকলায় দুভাবে বরাহের চিত্র আঁকা হয়ে থাকে। কখনও তাকে দেখানো হয় সম্পূর্ণ পশুর রূপে; আবার কখনও দেখানো হয় আধা-মানুষ, আধা-পশুর রূপে। দ্বিতীয় রূপটিতে তার চারটি হাত; চার হাতে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম; এবং বরাহদন্তে ধরা থাকে পৃথিবী। বরাহ অবতার প্রলয়ের পর পৃথিবীর নবজন্ম ও নতুন কল্প প্রতিষ্ঠার প্রতীক। বরাহ পুরাণে বরাহ অবহারের পূর্ণাঙ্গ উপাখ্যান পাওয়া যায়।
আসুন বরাহ কি তা জেনে নেই।
বরাহোপিঅঙ্গিরস নামঃ উচ্চতে।। অর্থাৎ বরাহ মানে অঙ্গিরা। অাবার অঙ্গিরা মানে অগ্নি, মূল প্রাণ, মরুত রশ্মি,ছন্দরশ্মি আদি। এই বরাহ মোটে ও পশু বরাহ নয়।বরাহ জল থেকে পৃথিবীকে মুখে ধারণ করলেন।।
সৃষ্টিতে যখন আয়নিক ও অ্যাটমিক ক্লাউড সৃষ্টি হল তখন এই অবস্থাকেই ব্রাহ্মণকারগন জলমগ্ন অবস্থায় বললেন। বেদ ব্রাহ্মণের ভাষয় আয়ণ আর অ্যাটমই জল। ব্রাহ্মণের জল তন্মাত্রে সেটি বিস্তারিত বলা হয়েছে। বৈদিক রশ্মিগুলোর সহয়তায় মানে বরাহের সহয়তায় অায়ণ এবং অ্যাটমের মৌথুনে মলিকূল হল। মানে গন্ধ তন্মাত্রা পৃথিবী সৃষ্টি হল। আর এটি ই বরাহের পৃথিবী ধারণের কাহিনী। পৌরানিক মনুষ্য বা যবনগন বিচার না করেই বরাহকে পশু বুঝিয়া অনর্থ করে বেদ ব্রাহ্মণের বৈজ্ঞানিকতাকে মাটিতে পুতে ফেলে।
শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪.১.২.১১ অগ্রে পৃথিবী প্রাদেশ মাত্র ছিল
এমুষ নামক বরাহ তাঁকে উদ্ধার করে

তৈত্তরীয় আরণ্যক ১০.১.৮ (মৃত্তিকা ) তুমি পৃথিবী স্বরূপা ও ধেনু এবং সত্য ও প্রাণী সমূহের ধারণ কর্ত্রী একটি কৃষ্ণ বর্ণ শতবাহু বরাহ তোমাকে উদ্ধার করে

এই স্থলে বাহু = বল(শক্তি) ,
তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ৬।১।৮ "তস্মাহু বাহুবীর্যো (রাজন্যঃ) বাহুভ্যাং হই সৃষ্টঃ"

শতপথ ৫।৪।১।১৭ বাহুরাজার শক্তির প্রতীক"বীর্যংবাऽএতদ্রাজন্যস্য যদ্ বাহু"

ভাষার্থ : এই পৃথিবীতে বৃষ্টির বহুধারা রূপ শক্তি যুক্ত কালো রং এর মেঘ উদ্ধার করেছে

তৈত্তিরীয় সংহিতা ৭.১.৫ এই জগত প্রথমে সলিলময় ছিল প্রজাপতি বায়ু রূপ হইয়া তাহাতে বিচরণ করেন এই পৃথিবী দর্শন করিয়া তিনি বরাহ রূপ পরিগ্রহ পূর্ব্বক উদ্ধার করিলেন

তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ১.১.৩ এই জগত অগ্রে সলিলময় ছিল প্রজাপতি সৃষ্টি করিবার ঈক্ষণ করিলেন কিভাবে তাহাতে জগত নির্মিত হইবে ? তিনি দেখিলেন একটি পদ্মপত্র রহিয়াছে মনে করিলেন নিশ্চয়ই ইহার আধার স্বরূপ কোন বস্তু বিদ্যমান রহিয়াছে তিনি বরাহ রূপ ধারণ করিয়া সলিলে নিমগ্ন হইয়া নিচে পৃথিবী প্রাপ্ত হইলেন ও তাহা লইয়া উত্থিত হইলেন

লক্ষণীয় কোথাও দন্ত দ্বারা পৃথিবী উত্তোলন নেই সায়ণাচার্য ও অন্যান্য অনুবাদকগণ শুধুমাত্র পৌরাণিক কাহিনীর আধারে ভাষ্যে দন্ত লিখেছেন

এই প্রজাপতি সূর্য কারণ
য হৈব সবিতা স প্রজাপতি ; শতপথ ১২।৩।৫।১

বরাহ অর্থ মেঘ কারণ বরাহ মেঘৌ ভবতি নিরুক্ত ৫.৪.১

সুতরাং এই কাহিনীর অর্থ জগতের প্রথমে যখন পৃথিবী জলময় ছিল কিন্তু স্থলভাগ ছিল না তখন সূর্য কিরণ রূপ বল পৃথিবীতে জলের ওপর পড়ে এই জল ঐ কিরণ তথা বলের প্রভাবে মেঘ রূপ ধারণ করে ফলে স্থলভাগ বা মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় এবং তাতেও জীব সৃষ্টি হয়

আবার প্রজাপতি যজ্ঞও হয় কারণ "যজ্ঞ প্রজাপতি" শত০ ১১।৬।৩।৯

আর যজ্ঞ থেকে মেঘ বৃষ্টি ও জীবাদি সৃষ্টি গীতা সম্মত

अन्नाद्भवन्ति भूतानि पर्जन्यादन्नसम्भवः ।
यज्ञाद्भवति पर्जन्यो यज्ञः कर्मसमुद्भवः ॥
कर्म ब्रह्मोद्भवं विद्धि ब्रह्माक्षरसमुद्भवम् ।
तस्मात्सर्वगतं ब्रह्म नित्यं यज्ञे प्रतिष्ठितम् ॥
एवं प्रवर्तितं चक्रं नानुवर्तयतीह यः ।
अघायुरिन्द्रियारामो मोघं पार्थ स जीवति ॥
অন্নাদ্ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাদন্নসম্ভবঃ ।
যজ্ঞাদ্ভবতি পর্জন্যো যজ্ঞঃ কর্মসমুদ্ভবঃ ।।
কর্ম ব্রহ্মোদ্ভবং বিদ্ধি ব্রহ্মাক্ষরসমুদ্ভবম্ ।
তস্মাৎ সর্বগতং ব্রহ্ম নিত্যং যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিতম্ ।।

গীতা ৩য় অধ্যায় শ্লোক ১৪-১৫

=>>প্রাণিসকল অন্ন হইতে উৎপন্ন হয়, মেঘ হইতে অন্ন জন্মে, যজ্ঞ হইতে মেঘ জন্মে, কর্ম হইতে যজ্ঞের উৎপত্তি, কর্ম বেদ হইতে উৎপন্ন জানিও এবং বেদ পরব্রহ্ম হইতে সমুদ্ভূত; সেই হেতু সর্বব্যাপী পরব্রহ্ম সদা যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত আছেন ।

শ্রী যোগেশ চন্দ্র বিদ্যানিধি এই বরাহ অবতারের একটি জ্যোতিষপূরক অর্থ করেছেন যা নিম্নলিখিতরূপঃ

কালপুরুষ নক্ষত্র আমরা সকলেই চিনি। ইহাতে ১৩ টি তারা সহজেই প্রত্যক্ষ হয় ।

ইহাকে শ্রাবণ মাসের ভোর ৪ টায়, আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহে রাত ৮ টায় উদিত হতে দেখা যায়। কালপুরুষের ১৩ টি তারা লইয়া বহুবিধ আকারে কল্পিত হইয়াছিল। ঋগ্বেদে এই নক্ষত্র রুদ্রের প্রতিমা। সেখানেই ইনি স্বর্গীয় বরাহ ।

এই বরাহ দিব্য-বরাহ, শ্বেত-বরাহ, যজ্ঞ-বরাহ। তিনি আরণ্য পশু তুল্য ভীম (ভয়ঙ্কর) কালপুরুষের সংস্কৃত নাক মৃগনক্ষত্র। মৃগের মস্তকে তিনটি ছোট ছোট তারা ত্রিকোণাকারে আছে (মৃগশিরা)। চারি পদে চারিটি তারা উজ্জ্বল, সম্মুখ পদের পূর্বদিকে তারা তাম্রবর্ণ (আদ্রা)। কটিতে তিনটি এক তির্ষক রেখায় (ইন্বকা); পুচ্ছে তিনটি; মধ্যরটি এক নভন্য শুভ্র মেঘখন্ডবৎ। এই ১৩ টি তারায় মৃগ ও বরাহের দেহ গঠিত হইয়াছে।

সৃষ্টির পূর্বে জলমগ্ন ছিল। কৃষ্ণ যজুর্বেদে আছে প্রজাপতি বরাহ-রূপ ধারণ করিয়া পৃথিবীকে জল হইতে উত্তোলন করিয়াছিলেন। এখন ইহার অর্থ বুঝিতে হইবে। জল কি, পৃথিবী কি, বরাহ কেমন করিয়া পৃথিবী উত্তোলন করিয়াছিলেন, তাহা বুঝিতে হইবে।

নক্ষত্র-খচিত, আকাশকে ঋষিগণ স্বর্গ বলিতেন। কেমনে স্বর্গ শুন্যে রহিয়াছে? ঋষিগণ বলতেন, বল-শালী ইন্দ্র স্বর্গকে ধারণ করিয়া আছেন। তাঁহারা বিষ্ণুর মহিমার পার দেখিতে পান নাই (ঋ ৭/৯৯)। তিনি বৃহৎ স্বর্গকে উর্ধ্বে ধারণ করিয়া আছেন। তিনি সর্বত্রস্থিত ময়ূখ (খোঁটা) দ্বারা এই পৃথিবীকে ধারণ করিয়া আছেন।

মূলে "পৃথিবী" শব্দ আছে। এই স্থিরা পৃথিবীকে ধারণ করিবার কথা উঠিতে পারে না। এই পৃথিবী শুন্যেও নাই। ঋষিগণ জীও নভোমণ্ডলকে সমুদ্র বলিতেন। পার্থিব সমুদ্র যেমন নীল, আকাশ-সমুদ্রও তেমন নীল। এই আকাশ-সমুদ্র অর্ণব, মহার্ণবন। এই অর্ণব তরণ করে বলিয়াব তারার নাম তারা হইয়াছে। যেমন সমুদ্র দুইটি, একটি মর্ত্যলোকে, অপরটি স্বর্গলোকে, যেমন সরস্বতী দুইটি, একটি মর্ত্যলোকে (নদী) অপরটি স্বর্গলোকে (স্বর্গঙ্গা), তেমনি পৃথিবীও দুইটি, একটি মর্ত্যলোকে আরেকটি স্বর্গলোকে। ঋগ্বেদের পৃথিবী সূক্তে (ঋ ৫/৮৪) এক ঋষি বলিতেছেন, -"হে বিচিত্রগমনশালিনি! স্তোতৃগণ গমনশীল স্ত্রোত্র-দ্বারা তোমার স্তব করেন। হে অর্জুনি, তুমি শব্দায়মান অশ্বের ন্যায় বারিপূর্ণ মেঘকে উৎক্ষিপ্ত করো।

বলাবাহুল্য এই পৃথিবী গমনশীলা নহে, স্থিরা। অর্জুনি ও শ্বেতবর্ণ নহে। এখানে মেঘগর্জনও শুনিতে পাওয়া যায় না। সংস্কৃত শব্দে গো এর এক অর্থ পৃথিবী। কিন্তু এই পৃথিবী গমন করিতে পারে না, গো নাম পাইতে পারে না। এই গো নক্ষত্র-শোভিত নভোমণ্ডল বা স্বর্গ। বিষ্ণু ইহাকেই ধারণ করিয়া আছেন, নচেৎ পড়িয়া যাইত। ভূমণ্ডল বিস্তীর্ণা, এই হেতু পৃথিবী। স্বর্গ পৃথিবী গো, এই হেতু মর্ত্য-পৃথিবীও গো নাম পাইয়াছে।

যিনি প্রজা সৃষ্টি, পালন ও সংহার করেন, তিনি প্রজাশক্তি, কালরূপ। বিষ্ণু চরিষ্ণু সূর্য; যে সূর্য বর্ষচক্র পরিভ্রমণ করিতেছেন, পর্যায়ক্রমে ঋতু আনয়ন করিতেছেন, শীত, গ্রীষ্ম বর্ষা দ্বারা প্রজাপালন করিতেছেন। অতএব বিষ্ণু প্রজাপতি, আর বিষ্ণু সভাপতি। তিনি বৎসরের ও ঋতুর আরম্ভ দেখাইলেন। সে সময়ে যজ্ঞ হইত বলিয়া তিনি যজ্ঞপতি, যজ্ঞেশ্বর (বামনাবতারে বর্শিত হইবে)। প্রতি বৎসর সূর্য কালপুরুষ নক্ষত্র দিয়া গমন করিতেছেন, কিন্তু সূর্য ও নক্ষত্র একদা দেখিতে পাওয়া যায় না। এই কারণে সূর্যোদয়ের পূর্বে কিম্বা সূর্যাস্তের পরে দেখা যাইতো। যেদিন সূর্যোদয়ের পূর্বে দিব্য বরাহকে উদিত হইতে দেখা যাইতো, সেদিন প্রাতে যজ্ঞ হইতো; এই হেতু দিব্য-বরাহের নাম যজ্ঞ-বরাহ হইয়াছিল। প্রজাপতি বিষ্ণু স্বর্লোকে, বরাহ স্বর্লোকে; অতএব বলিতে পারি যে পৃথিবী উত্তোলিত হইয়াছিল, তাহাও স্বর্লোক বা স্বর্গ।


শূন্য প্রান্তরে দন্ডায়মান হইয়া চতুর্দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলে মনে হয়, আকাশ চারিদিকে এক বৃত্তে পৃথিবীকে স্পর্শ করেছে। এই বৃত্ত দিকচক্র। আকাশ নভোমণ্ডল, সমুদ্র, মহার্ণব। চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র পূর্ব সমুদ্র হইতে নিক্ষেপ হইয়া থাকেন; পশ্চিমসমুদ্রে নিমগ্ন হইলে আমরা বলি অস্ত। দিব্য বরাহের উদয়কালে মনে হয় যে ভূ-পৃথিবী হইতে উত্থিত হইতেছেন, আর সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য স্বর পৃথিবীকে উপরে তুলিতেছেন। ইহাই পৌরাণিক উপাখ্যানের অর্থ।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ