মানব জীবনের ষোড়শবিধ সংস্কার মনুষ্য জীবনকে সুন্দর ও কল্যাণকর করে গড়ে তোলার লক্ষে প্রাচীন ঋষিরা অনেক ধর্মীয় আচার-আচরণ ও মাঙ্গলিক কর্মের নির্দেশ দিয়েছেন।এগুলোকে সংস্কার বলা হয়। সকল আচার-আচরণ‘মনুসংহিতা',‘যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতা'‘পরাশরসংহিতা' প্রভৃতি স্মৃতিশাস্ত্রে (হিন্দু বিধি বিধানের গ্রন্থ) পাওয়া স্মৃতিশাস্ত্রে (হিন্দু বিধি বিধানের গ্রন্থ) পাওয়া যায়।
স্মৃতিশাস্ত্রে ১৬ প্রকার সংস্কারের উল্লেখ আছেঃ—
গর্ভাধান, পুংসবন,সীমন্তোন্নয়ন, জাতকর্ম,নামকরণ,নিষ্ক্রমণ,অন্নপ্রাশন,চুড়াকরণ,কর্ণবেধ, উপনয়ন,বেদারম্ভ,সমাবর্তন,বিবাহ,বানপ্রস্থ,সন্ন্যাস ও অন্ত্যেষ্টবিবাহ,বানপ্রস্থ,সন্ন্যাস ও অন্ত্যেষ্টি।।
স্মৃতিশাস্ত্রে ১৬ প্রকার সংস্কারের উল্লেখ আছেঃ—
গর্ভাধান, পুংসবন,সীমন্তোন্নয়ন, জাতকর্ম,নামকরণ,নিষ্ক্রমণ,অন্নপ্রাশন,চুড়াকরণ,কর্ণবেধ, উপনয়ন,বেদারম্ভ,সমাবর্তন,বিবাহ,বানপ্রস্থ,সন্ন্যাস ও অন্ত্যেষ্টবিবাহ,বানপ্রস্থ,সন্ন্যাস ও অন্ত্যেষ্টি।।
গর্ভাধানঃ—
গর্ভসঞ্চারের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানকে বলা হয় গর্ভাধান। বর্তমানে এই সংস্কারের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে।
পুংসবনঃ—
গর্ভসঞ্চারের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানকে বলা হয় গর্ভাধান। বর্তমানে এই সংস্কারের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে।
পুংসবনঃ—
পুত্র সন্তান কামনা করে যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করা হয়, তাকে পুংসবন বলে। গর্ভাধানের মত
এই সংস্কারটিও প্রায় হারিয়েই গেছএই সংস্কারটিও প্রায় হারিয়েই গেছে।
সীমন্তোন্নয়নঃ—
গর্ভধারনের পর ৬ বা ৮ মাসে সীমন্তোন্নয়ন করা হয়। এটি আমাদের সমাজে বর্তমানে সাধ-এর অনুষ্ঠান নামে পরিচিত।
জাতকর্মঃ—
এই সংস্কারটিও প্রায় হারিয়েই গেছএই সংস্কারটিও প্রায় হারিয়েই গেছে।
সীমন্তোন্নয়নঃ—
গর্ভধারনের পর ৬ বা ৮ মাসে সীমন্তোন্নয়ন করা হয়। এটি আমাদের সমাজে বর্তমানে সাধ-এর অনুষ্ঠান নামে পরিচিত।
জাতকর্মঃ—
জন্মের পর পিতা জব , যষ্টিমধু ও ঘৃত দ্বারা সন্তানের জিহ্বা স্পর্শ করে মন্ত্রোচ্চারণ করার মাধ্যমে জাতকর্ম
সংস্কারটি পালন করা হত। এটিও আজকাল আর তেমন পালন করা হয় না।
নামকরণঃ—
সংস্কারটি পালন করা হত। এটিও আজকাল আর তেমন পালন করা হয় না।
নামকরণঃ—
সন্তান ভূমিষ্ঠ দশম, একাদশ, দ্বাদশ ও শততম দিবসে নামকরণ করণীয়।
ঘরের বাইরে যেখানে নির্মল বায়ু সেখানে শিশুকে ভ্রমণ করানো। জন্মানোর তৃতীয় শুক্লপক্ষের তৃতীয়াতে অথবা চতুর্খ মাসের জন্মতিথিতে।
অন্নপ্রাশনঃ—
অন্নপ্রাশনঃ—
পুত্রের ৬ মাসে এবং কন্যার ৫, ৮ বা ১০ মাসে প্রথম অন্নভোজনের নাম অন্নপ্রাশন।
চুড়াকরণঃ—
চুড়াকরণঃ—
গর্ভাবস্থায় সন্তানের মস্তকে যে কেশ উৎপন্ন হয় তা মুণ্ডনের নাম চূড়াকরণ। বর্তমানে চূড়াকরণের কাজটি অন্নপ্রাশনের দিন-ই করে ফেলা হয়। তাই এই অনুষ্ঠানটিও এখন আর আলাধা করে করা হয় না।
কর্ণবেধঃ—
কর্ণবেধঃ—
‘উপনয়ন’ শব্দের অর্থ ‘নিকটে নিয়ে যাওয়া’। যে অনুষ্ঠানের পর ছাত্রকে বিদ্যাশিক্ষার জন্য গুরুর নিকটে নিয়ে যাওয়া হত তার নাম ছিল উপনয়ন।উপনয়ন শব্দের সহজ অর্থ যজ্ঞপবীত বা পৈতা ধারণ। বর্তমানে এই উপনয়ন সংস্কারটি আমাদের সমাজে ভিন্ন রূপে আছে। আগের মত আজকাল আর গুরুগৃহে বিদ্যাশিক্ষার জন্য প্রেরন না করা হলেও শিক্ষা জীবনের শুরুতে হাতেখড়ি বলে একটি অনুষ্ঠান আজও
প্রচলিত আছে যেটা কিনা সাধারনত সরস্বতী পুজোর সময় করা হয়।
বেদারম্ভঃ—
ব্রহ্মচর্যাশ্রম তথা গুরুকুলে থেকে শিক্ষলাভ যা বর্তমানে ছাত্রজীবন।
সমাবর্তনঃ—
প্রাচীনকালে পাঠ শেষে গুরুগৃহ থেকে নিজগৃহে ফিরে আসার সময় যে অনুষ্ঠান হত তাকে সমাবর্তন বলা হত। এটি আজকাল আর গৃহে প্রচলিত না থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজও প্রচলিত আছে। বরং এটি এখন ধর্মের সংস্কারের গন্ডি পেরিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বৃহৎ রুপ পেয়েছে।
বিবাহঃ—
প্রচলিত আছে যেটা কিনা সাধারনত সরস্বতী পুজোর সময় করা হয়।
বেদারম্ভঃ—
ব্রহ্মচর্যাশ্রম তথা গুরুকুলে থেকে শিক্ষলাভ যা বর্তমানে ছাত্রজীবন।
সমাবর্তনঃ—
প্রাচীনকালে পাঠ শেষে গুরুগৃহ থেকে নিজগৃহে ফিরে আসার সময় যে অনুষ্ঠান হত তাকে সমাবর্তন বলা হত। এটি আজকাল আর গৃহে প্রচলিত না থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজও প্রচলিত আছে। বরং এটি এখন ধর্মের সংস্কারের গন্ডি পেরিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বৃহৎ রুপ পেয়েছে।
বিবাহঃ—
যৌবনে দেব ও পিতৃ পুজার মাধ্যমে নারী-পুরুষের মিলনের যে অনুষ্ঠান করা হয় তাকে বিবাহ বলে। স্মৃতিশাস্ত্রের ১০ টি সংস্কারের মাঝসংস্কারের মাঝে এই
সংস্কারটির অস্তিত্বই সবচে প্রকট।
বানপ্রস্থঃ—
সংস্কারটির অস্তিত্বই সবচে প্রকট।
বানপ্রস্থঃ—
পুত্র যখন গৃহস্থ ধর্ম গ্রহণ করবে এবং পুত্রেরও সন্তান জন্ম নেবে এবং নিজের ৫০ বৎসর পূর্ণ হলে বানপ্রস্থ অবলম্বন করে সংসার থেকে দূরে বসবাস করবেন।
সন্যাসঃ—
সন্যাসঃ—
সম্পুর্ণরূপে সবকিছুই ত্যাগ করে পরমাত্মার প্রতি সন্যাসী বেদ শাস্ত্র দ্বারা সন্যাস এরূপ তৈরি হয়।
অন্ত্যেষ্টিঃ—
অন্ত্যেষ্টিঃ—
মৃত্যুর পর শাস্ত্রবিধি মোতাবেক শ্রাদ্ধাদি।
সাধারণভাবে 'সংস্কার' শব্দটি বলতে বোঝায় সমাজ বা কালের সঙ্গে অসংলগ্ন কোন বিষয়ের পুনর্নবীকরণ। সম-পূর্বক কৃ ধাতুর সঙ্গে বিভিন্ন প্রত্যয়যোগে 'সংস্কৃত', 'সংস্কৃতি', 'সংস্কার' ইত্যাদি শব্দের উৎপত্তি, তৎসত্ত্বেও অর্থগত দিক দিয়ে প্রতিটি শব্দ ভিন্ন।
ঋগ্বেদিক যুগের মন্ত্রে 'সংস্কৃত' শব্দটির ব্যাপক প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন, বৈদিক মন্ত্রপাঠ করে কোনও বস্তুকে বৈদিক কর্মের জন্য সংস্কৃত করে তোলা হত। সোমরসে পূর্ণ পাত্র, যাকে 'ঘর্ম' বলা হত, সেটি যজ্ঞের আগে 'সংস্কৃত' করা অতি প্রয়োজনীয় ছিল। পূর্বমীমাংসা দর্শনের জৈমিনি-সূত্রে 'সংস্কার' শব্দের ব্যাখ্যায় 'সম্মার্জন-সংস্কার' একত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। সেইসময় যজ্ঞপাত্রগুলি, যেমন 'গ্রহ', 'চমস' ইত্যাদি পরিস্কার করে ধুয়ে-মুছে নেবার ক্রিয়াকে 'সংস্কার' বলা হয়েছে।
তথ্যসুত্রঃ
স্কন্দপুরাণম.. উপনিষদ.. Glimpses of History -- Mr. Xavier Pinto…Indian History -- Dr. Sagarika Mukherjee ..আচার-বিচার-সংস্কার -- শ্রী নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী .. প্রবন্ধ সংগ্রহ -- শ্রী শিবনারায়ণ রায়
পাণিনি ৬.২.৭৬..পাণিনি ৪.১.৪৬.. মনুসংহিতা ২/৬৭.. গোভিল গৃহ্যসূত্রঃ
২.১.১৯.. গোভিল গৃহ্যসূত্রঃ ২.১.১৯.. অথর্ববেদ ১১.৫.১৮.. অথ সংস্কার বিধি
২.১.১৯.. গোভিল গৃহ্যসূত্রঃ ২.১.১৯.. অথর্ববেদ ১১.৫.১৮.. অথ সংস্কার বিধি
ভগবান মনু লিখেছেন এক ব্যক্তিজীবনে বারোটি সংস্কার :
(১) গর্ভাধান (২) পুংসবন (৩) সীমন্তোন্নয়ন (৪) জাতকর্ম (৫) নামকরণ (৬) নিষ্ক্রমণ (৭) অন্নপ্রাশন (৮) চূড়াকরণ (৯) উপনয়ন (১০) সমাবর্তন (১১) বিবাহ (১২) শ্মশানক্রিয়া বা শ্রাদ্ধ
- কিন্তু সংস্কারের তাৎপর্য যদি তিনহাজার বছর আগের মন্ত্র পড়া, মন্ত্র-পুরোহিত যোগে অন্নপ্রাশন, দিনক্ষণ দেখে উপনয়ন, জাতপাত মিলিয়ে বিবাহ, মস্তক-মুন্ডন করে শ্রাদ্ধে এসে দাঁড়ায়, তবে সংস্কারের উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়। একটি বিশেষ সমাজ-চেতনা নিয়ে সংস্কার তৈরী হয়েছিল।
ইতিহাস প্রমাণ করে, যে দেশে শাসক শক্তির যেমন ধর্মবিশ্বাস, ধর্ম ও আচারবিধির তেমন তেমন রূপান্তর হয়েছে বারবার। প্রাচীন মানুষের প্রকৃতির নিয়মে ভয়, অস্তিত্বের সঙ্কট, বর্ণাশ্রমজনিত শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপালাভের ইচ্ছা, যাগযজ্ঞ থেকে ধর্মীয় যে সংস্কারের শুরু, প্রাদেশিকতার প্রশ্নে কিন্তু তাতেও পার্থক্য অনেক। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সংস্কারের প্রচলন ও পালনের ভিন্ন রূপ। এর সঙ্গে ধর্ম ও আত্ম-উত্তরণের সংযোগ কোথায়?
এটাও সত্য যে, ধর্মীয় কুসংস্কারের জন্য মানুষের বিজ্ঞানমনস্কতা নষ্ট হয়। শীতলাপুজো, মনসাপুজো, অতি সম্প্রতি সন্তোষীমাতার পুজো -- এই তো সমাজের প্রথা এখন। প্রশ্ন এই যে, আজও তবে এই ধর্মীয় সংস্কারের মূল্য কতখানি?
আজ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এসে মানবসভ্যতার মূলকথা হওয়া উচিত --- এই সুখদুঃখে মেশা আশ্চর্য জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ, অহংকে মুক্ত করে মৈত্রী ও শান্তির অন্বেষণ এবং মূল্যবোধ ও আত্মদর্শনকে পাথেয় করে আত্ম-উত্তরণ। গভীর অনুভব, গভীরতর বিশ্লেষণ, ততোধিক গভীর সুশৃঙ্খল ভাবনা । ধর্ম নিয়ে, ঈশ্বর নিয়ে, সংস্কার নিয়ে নতুন আলোর বোধ।
ধর্ম-সংস্কার কোনো আচার অনুষ্ঠান নয়। ধর্ম এক নৈতিক অন্তর্দৃষ্টি, যা আমাদের দেখতে শেখায়, ভাবতে শেখায় । অনেকখানি আত্মশক্তি, অনেকখানি আত্মবিশ্বাস, যথা-অর্থে শিক্ষার আলো। সমর্পণ। তবেই আত্মশুদ্ধি। তবেই আত্মনির্মাণ। ‘আত্মদীপো ভব।‘ বড্ড গভীর কথা।
আত্ম-স্বীকৃতি আর আত্ম-আসক্তি। এই দুই শব্দে একটা সূক্ষ পার্থক্য। একটা নিজেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে, আরেকটা নিজেকে দিশাহীন করে রাখার জন্যে। পরিণত বিশ্লেষণ, সহিষ্ণু ব্যতিক্রমী আলোচনা, জীবনকে দেখার মনোরম বোধ, যাপনের প্রতি নিষ্ঠা এক নতুন দর্শনকে সাবলীল করে। যে দর্শনের উত্তরাধিকার পেয়েছি আমরা, নানা লেখার মধ্যে। সাহিত্য, গান, বৌদ্ধিক চর্চায়।
আচার-বিচার-সংস্কার মানুষের পক্ষে বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত নয়। মানুষের একমাত্র ধর্ম হওয়া উচিত মানবধর্ম, মানবপ্রেম যার মূলকথা। আত্মশক্তির বিকাশ আর মুক্ত অন্তঃকরণের এক পবিত্রতাবোধ। এই আজকের মানুষের সংস্কার হওয়া উচিত।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ