আর্য কারা |
কর্তব্যমাচরণ কর্ম্মন্ অকর্তব্যম্ অনাচরণ তিষ্ঠতি
প্রকৃতাচারে য়ঃ স আর্য় ইতিস্মৃত
অর্থাৎঃ যিনি কর্তব্য পালন করেন,অকর্তব্য করেন না,
সতত সদাচারে প্রতিষ্ঠিত থাকেন এবং যিনি ন্যায়কারী মননীয় ও পূজ্য তিনিই প্রকৃত আর্য।।
"আর্য় ব্রতা বিস্জন্তো অধিক্ষমি"-ঋগ্বেদ০মন্ডল০ ১০ সূক্ত০ ৬৫ মন্ত্র০ ১
অর্থাৎঃ যারা অহিংসা, সত্য,পবিত্রতা ও পরোপকার ব্রত পালন করেন তাদের আর্য বলা হয়।।
মহাভারতে লিখিত আছে -
"ন বৈরমুদ্দীপয়তি প্রশান্তং ন দপমারােহন্তি নাস্তমেতি ।
ন দুর্গতােশ্মীতি করােত্যকায়ং তমায়শীলং পরমাহুরায়াঃ।
ন স্বে সুখে বৈকুরুতে প্রহর্ষং নান্যসাদুঃখেভবতি প্রহৃষ্ট ,
দত্বান পশ্চাৎ কুরুতেনুতাপং স কথ্যতে সৎপুরুষায় শীলঃ।
- মহাঃ উদ্যোগপর্ব/৩৩ অধ্যায়/১১৭-১১৮ শ্লোক
অর্থাৎ – সেই "আর্য" যে শান্ত , বৈরতা উদ্দীপ্ত করেনা , যে অভিমান করে না , যে কখনও নিরাশ হয় না , যে নিজের সুখে বেশী প্রসন্ন হয় না , অন্যের দুঃখ দেখে দুঃখী হয় না , দান দিয়ে অনুতাপ করে না ।
মহর্ষি বেদব্যাস নিম্নোক্ত আট গুণেযুক্ত ব্যক্তিকে আর্য বলেছেন -
জ্ঞানী তুষ্টশ্চ দান্তশ্চ , সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ।
দাতা দয়ালুর্নশ্চ স্যাদার্গো হৃষ্টভিগুণৈঃ।।
অর্থাৎ যে জ্ঞানী , সর্বদা সন্তুষ্ট , মনের নিয়ন্ত্রক , সত্যবাদী , জিতেন্দ্রিয় , দানী , দয়ালু ও নম্র – এই অষ্ট গুণধারী ব্যক্তি ‘ আর্য নামে অভিহিত হয় ।
রামায়ণে লিখিত আছে -
আয়ঃ সর্বসমশ্চায়ং সােমবৎ প্রিয়দর্শিনঃ ।।
- বাল্যকাণ্ড ১/১৬ শ্লোক
অর্থাৎ রামচন্দ্র আর্য , ধর্মাত্মা , সদাচারী , সকলকে সমদৃষ্টি দিয়ে দেখেন এবং চন্দ্রের মতাে প্রিয়দর্শন ।
গীতা ২/৩ শ্লোকে বলা হয়েছে -
কুতস্খা কশ্মলমিদং বিষমে সমুপস্থিত । অনায়জুষ্টমস্বৰ্গম , অকীর্তিকরমর্জুনঃ ।।
অর্থাৎ হে অর্জুন ! এই অনার্য ও দুর্জন দ্বারা সেবিত , নরকগামী , অপযশকারী পাপ তুমি এই দুঃসময়ে কেমন করে প্রাপ্ত হলে ?
মহাত্মা বুদ্ধ আর্য সম্বন্ধে বলেছেন -
ন তেন অরিয়াে হােতি য়েন পাণানি হিংসতি ।
অহিংসা সবপাণানং অরিয়ােতি গবুচ্চতি ।।
- ধম্মপদ ২৭০
অর্থাৎ প্রাণীদের হিংসাকারী আর্য হয় না । সর্ব প্রাণীদের মধ্যে অহিংসাভাব যে রাখে সেই আর্য ।
পারসীদের মান্য ধর্ম গ্রন্থ জেন্দাবস্তায় শ্রেষ্ঠ পুরুষদের জন্য "আর্য" শব্দের শত শত বার প্রয়ােগ পাওয়া যায় । উদাহরণার্থ জেন্দাবস্তার ভাগ সিরাজই ১-২৫ এ লিখিত আছে যে - "আমরা আর্যদের সম্মানার্থে হবন করি যাদেরকে মজদা তৈরী করেছেন।"
অস্তদ অস্তের ১৮ তম অধ্যায় আর্যদের বীরত্বে পূর্ণ । তার প্রারম্ভিক শ্লোকের অনুবাদ এই প্রকার । অহুর মজদা ষ্পিতামা জরদুস্তকে বললেন – ‘আমি আর্যদের ভােজন , পশুসমূহ , ধন , প্রতিষ্ঠা , জ্ঞান - ভাণ্ডার ও দ্রব্যরাশি দ্বারা সম্পন্ন করেছি , যার দ্বারা তারা তাদের প্রয়ােজন পূর্ণ করতে পারে ।'
( Zend Avestha , Par II , P.283 )
থাই ভারত সংস্কৃতি ভবন স্যাম থেকে আচার্য নরেন্দ্র নাথ দ্বারা প্রাপ্ত এবং উত্তর প্রদেশ শিক্ষা বিভাগ দ্বারা প্রকাশিত স্যামের । সংস্কৃতমূলক শব্দাবলীতে পৃষ্ঠা ৯ এ দুটি শব্দের সমপর্যায় দ্রষ্টব্য –
Civilisation - আর্য ধর্ম
Civilised People - আর্য জন ।
স্যামদেশের সভ্যতা ও সভ্য-জনের জন্য ক্রমশঃ আর্য ধর্ম ও আর্যজন শব্দ ব্যবহৃত হওয়ার পরেও কি সন্দেহের অবকাশ থাকে যে - ‘আর্য’ শব্দ কেবল গুণবাচক , কোনও জাতি বা দেশের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই ?
'আর্য -' নামের কোন জাতির অস্তিত্ব ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। 'আর্য' - মানে কোনো জাতি নয়, ‘ব্যবহারে যে মহান’ - তাকে আর্য বলা হতো। সাধারণত ক্ষত্রিয় রাজাদের 'আর্যপুত্র' - বলে সম্বোধন করা হতো। ভারতের আদি নাম 'আর্যাবর্ত'। ম্যাক্স মুলার আর্য বলতে ভাষা ভিত্তিক শ্রেণী বুঝিয়েছেন, জনজাতি হিসাবে নয়।
অথচ যুগের পর যুগ এই মিথ্যাচার করা হয়েছে যে, বাইরে থেকে আর্যরা এসে ভারতীয় হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংস করে দিয়েছে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য - এই তিনটি বর্ণের মানুষ হচ্ছে আর্য। এই আর্যরা ইউরোপ থেকে এসে, মূলনিবাসীদের অস্পৃশ্য-দলিতে পরিনত করেছে। আজো আসমুদ্রহিমাচল সিংহভাগ মানুষ মনে করে,আর্যরা বহিরাগত আক্রমণকারী এবং তারা ইউরোপীয় বংশধর।
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী, ঋষি অরবিন্দ, কিংবা বালগঙ্গাধর তিলক-এর মতো মুষ্টিমেয় কিছু মনীষী ব্যতীত, এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেনি।
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী, ঋষি অরবিন্দ, কিংবা বালগঙ্গাধর তিলক-এর মতো মুষ্টিমেয় কিছু মনীষী ব্যতীত, এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেনি।
বিদেশি ধর্মপ্রচারকরা 'আর্য বহিরাগত তত্ত্বটি' - অর্থ সহযোগে অবহেলিত মানুষের কাছে এমন ভাবে উপস্থাপন করেছে - যাতে তারা ধর্মান্তরিত হতে উৎসাহিত হয়। হিন্দু ধর্মগুরুরা,সাধারণ হিন্দুদের ইন্দ্রিয় পরায়ন হতে নিষেধ করে, অথচ তারা নিজেরা অত্যন্ত ভোগবিলাসী ; এদের অনেকে ৩/৪ টা বিয়ে পর্যন্ত করেছে। হিন্দু ধর্মগুরুরা, হিন্দুদের অন্ধ বিশ্বাসকে পুঁজি করে, তাদের পকেট কাটছে। কিভাবে হিন্দু জাতির ক্ষয় রোধ করা যায় - সে ব্যপারে হিন্দু ধর্মগুরুরা কোনো ভূমিকা রাখছে না। স্বাধীন ভারতে হাজার হাজার হিন্দু ধর্মগুরু ; অথচ দেখতে দেখতে ভারতের ন'টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। ভারতের যেসব এলাকায় হিন্দুরা সংখ্যালঘু, সেখানে নেমে এসেছে মধ্যযুগীয় তুর্কি-উজবেক অন্ধকার।
আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও দলিতরা একই রক্তধারার। তাছাড়া ধর্মশাস্ত্রে পরিস্কার লেখা আছে - অতীতের সমস্ত জাতিসমূহ 'ব্রাহ্মণ'- ছিল। 'বর্ণভেদ প্রথা' - পরিবার তান্ত্রিক রাজশক্তির একটি জাতিঘাতী-মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল।
পরিবারতন্ত্রের আবর্জনা গান্ধী-নেহেরু পরিবার, হিন্দু জাতিকে ধর্মনিরপেক্ষতার আইনি -শৃঙ্খলে বন্দী করে ফেলেছে। বর্ণভেদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দ দু'টি, হিন্দু জাতির ডিকশনারি থেকে মুছে দিতে হবে ; না হলে এই জাতি পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারবে না।
arya invention theory এবং Indo-Aryan migration তত্ত্ব ভুল প্রমান করেন
আর্কিলোজিস্ট বসন্ত সিন্ধে ও ডঃ নিরঞ্জন রায়
আর্য শব্দ গুন বাচক যা পূর্ব থেকে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। আর্য় মানে পবিত্র বা মহান। কোন ইতিহাসে আর্য় আক্রমনের ঘটনা নেই।
**Aryavarta** or ***Āryāvarta*** is the ancient name of our country. ***Āryāvarta*** is the oldest one but not much in common use these days. In ancient texts, there is sufficient usage of the word "**Aryavarta**". **Aryavarta** refers to the Land of ***Aryas*** means the land of Noble People.
Swami Dayanand in his magnum opus *Satyarth Prakash* writes the definition of *Aryavrata* as "the tract between the Himalaya and the Vindhya ranges, from the eastern side Bay of Bengal to the Western side the Arabian Sea. Manusmriti 2/22
Here the *Vindhya *range is considered up to the southern tip of the Indian peninsula not up to the Deccan plateau.
***Āryāvarta*** means the land of Aryans or Arya.
The word Arya do not indicates for any specific race or tribe named as Aryans. The word Arya defines a person who has integrity, courage, honesty, gentleness, compassion, eagerness for knowledge and respect for the wise and learned. The Arya is one who is humane, dedicated to doing good to the world through the use of truth, love, protection of the weak and absolute fairness between men and men and nations and nations. He strives to overcome all outside him and within him that stands opposed to advancing justice, freedom and meritocracy in society. Self-conquest is the first law of his nature. He overcomes the mind and its habits and does not live in a shell of ignorance based on inherited prejudices, fashionable customs and hedonism. Instead he knows how to be pure, to be large and flexible in intelligence as well as being firm and strong in his will. The Aryas a worker and a warrior.
Sri Aurobindo also supports the same stand on definition of Arya.
One confusion comes regarding Aryan Invasion theory (AIT)
Aryan invasion theory is a fake theory coined by western indologists to divide our country. Still today many politicians are promoting this theory for their vested interests.Until today no evidence of any invasion have been found to prove Aryan Invasion Theory. Swami Dayanand was first to reject Aryan Invasion Theory. Even Dr B.R.Ambedkar rejected Aryan Invasion theory (AIT).
He concluded: "the Brahmins and the Untouchables belong to the same race."
In his book Who were the Shudras? in 1946 B. R. Ambedkar famous for his work on the Indian Constitution, as well as his campaign in support of the *Harijans*, studied the Vedas. He devoted a complete chapter - Shudras versus Aryans -to an examination of the issue.
Citing extensively the Vedic sources which suggest that the distinction between an Arya and *Dasa/Dasyu* was not a racial distinction of color and physiognomy and thus the origin of Sudra could not have anything to do with race, Ambedkar conclusion are unequivocal, though regrettably they are largely ignored. This is what he said:
"The theory of invasion is an invention. This invention is necessary because of a gratuitous assumption that the *Indo-Germanic* people are the purest of the modern representation of the original Aryan race. The theory is perversion of scientific investigation. It is not allowed to evolve out of facts. On the contrary, the theory is preconceived and facts are selected to prove it. It falls to the ground at every point. '
Dr. Ambedkar concludes:
"The Vedas do not know any such race as the Aryan race.There is no evidence in the Vedas of any invasion of India by the Aryan race and its having conquered the *Dasas* and *Dasyus* supposed to be the natives of India.There is no evidence to show that the distinction between Aryans, *Dasas* and *Dasyus *was a racial distinction. The Vedas do not support the contention that the Aryans were different in color from the *Dasas* and *Dasyus.*....". "If anthropometry is a science which can be depended upon to determine the race of a people...(then its) measurements establish that the Brahmans and the Untouchables belong to the same race. From this it follows that if the Brahmans are Aryans the Untouchables are also Aryans. If the Brahmans are Dravidian's, the Untouchables are also Dravidian's...."
Ambedkar was aware of the hold of this theory over the masses and scholars alike. He offered a succinct explanation.
"why the Aryan race theory is not dead because of the general insistence by European scholars that the word *varna*, means color and the acceptance of that view by a majority..."
"The British were visualized as being the last of the invaders in a chain beginning with the Aryans. He could clearly see the implications of such ill-founded hypotheses which colonial Indology imposed on India and which Indian scholars went on repeating ad nauseam.
(source: The Invasion That Never Was - By Michel Danino and Sujata Nahar and Dr. Babasaheb Ambedkar Writings and Speeches. Reprint of Pakistan or The Partition of India. Education Department. Government of Maharashtra 1990 Vol. 7 p.302). Refer to chapter on First Indologists and European Imperialism.
Thus, ***Āryāvarta*** is the land of Aryans means noble people.
আমাদের জাতিগত বা সমাজগত পরিচয়ে আমরা কোনক্রমেই হিন্দু নই। অতীতকালে এই ভূ-ভাগের নাম ছিল ভারতবর্ষ বা আর্যাবর্ত। এই আর্যাবর্তে যাঁরা বাস করতেন তাঁদের বলা হত আর্য। ‘হিন্দু’ নামটি বিদেশিদের দেওয়া নাম। ফার্সি অভিধান ‘লুগা’তে এই ‘হিন্দু’ নামটি গালি এবং কদর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আরবি ভাষাতেও ‘হিন্দু’ শব্দের অর্থ ‘ঘৃণাযুক্ত’।
ইংরেজ শাসনামলে ভারতবাসীকে তারা ঘৃণাভরে বলত ‘নেটিভ ব্লাক’। আবার কেউ কেউ বলেন ‘সিন্ধু’ নদের নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘হিন্দু’ শব্দ হয়েছে-এটাও ঠিক নয়। ঐতিহাসিক ও ভাষাতাত্ত্বিকগণ গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন যে, ‘হিন্দু’ নামটি বিদেশি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া নাম। কালে কালে এই ভূ-ভাগে আর্য জনসাধারণ বিদেশি শাসকদের চাপে ‘হিন্দু’ নামটি স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছিল। ১৮৩০ সালে ভারতীয় সংবিধানে ইংরেজ সরকার ‘হিন্দু’ নামটি পাকাপাকিভাবে সংবিধানে জুড়ে দেন। সনাতন ধর্মের প্রামাণ্য ধর্মপুস্তকসমূহ প্রমাণ দেয় যে, আমদের ধর্ম সনাতন ধর্ম বা বৈদিক ধর্ম এবং আমাদের পরিচয় আমরা আর্যজাতি।
যাস্কাচার্যের মতে ‘আর্য’ শব্দের নিরুক্তগত অর্থ ‘ঈশ্বরপুত্র’। অর্থাৎ ঈশ্বরের যথার্থ পুত্রকে ‘আর্য’ নামে সম্বোধন করা হয়। পিতার অনেক পুত্র থাকা সত্ত্বেও পিতার অনুবর্তী, আজ্ঞা পালনকারী, সদাচারী, আদর্শ পুত্রকেই প্রকৃতপক্ষে পুত্র বলা হয়ে থাকে। সেইরূপ, যদ্যপি মানবমাত্রেই ঈশ্বরের পুত্র তথাপি সদাচারপরায়ণ পুরুষকেই ঈশ্বরপুত্র অর্থাৎ ‘আর্য’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
প্রাচীন গ্রন্থসমূহে ‘আর্য’ শব্দের অর্থঃ
বেদঃ
• “আর্যা ব্রতা বিসৃজন্তো অধি ক্ষমি।” (ঋগ্বেদ ১০/৬৫/১১)
• “কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্।’’ (ঋগ্বেদ ৯/৬৩/৫)
• “বি জানীহ্যার্যান্যে চ দস্যবো বর্হিষ্মতে রন্ধয়া শাসদব্রতান্।” (ঋগ্বেদ ১/৫১/৮)
উক্ত মন্ত্রসমূহে সত্য, অহিংসা, পবিত্রতাদি উত্তম ব্রতধারী ব্যক্তিদের ‘আর্য’ বলা হয়েছে এবং বিশ্বের নর-নারী সকলকে এইরূপ ‘আর্য’ করার উপদেশ দেয়া হয়েছে।
• “আর্যবৃত্ত।’’ (গৌতম ধর্মসূত্র ১৯/৯৬)
এখানে সদাচারপরায়ণ অর্থে ‘আর্য’ শব্দ প্রযুক্ত হয়েছে।
বাল্মীকি রামায়ণঃ
• “সর্বদাভিগতঃ সদ্ভিঃ সমুদ্র ইব সিন্ধুভিঃ। আর্যসর্বসমশ্চৈব সদৈব প্রিয়দর্শন।।” (বাল্মীকি রামায়ণ ১/১/১৬)
অর্থাৎ, রামচন্দ্র সদাসর্বদা সৎপুরুষদের সাহচর্যে থাকতেন যেরূপ সমুদ্র সদা নদীসমূহের সাথে মিলে থাকে তথা তিনি আর্য, সমদর্শী ও সকলের প্রিয় ছিলেন।
বিদুর নীতিঃ
• “আর্য কর্মাণি রজ্যন্ত ভূতি কর্মাণি কুর্বতে হিতং চ নাভ্যসূযন্তি পণ্ডিতা ভরতর্ষভ।
ন স্বে সুখে বৈ কুরুতে প্রহর্ষ। নান্যস্য দুঃখে ভবতি প্রহৃষ্টঃ।।
দত্ত্বা ন পশ্চাৎ কুরুতেহনুতাপং স কথ্যতে সৎপুরুষার্য শীলঃ।।” (বিদুর নীতি ১/৩০/১/১৮)
এই বচনসমূহে অত্যন্ত ধার্মিককে ‘আর্য’ বলা হয়েছে।
চাণক্যনীতিঃ
• “অভ্যাসাদ্ ধার্যতে বিদ্যা কুলং শীলেন ধার্যতে। গুণেন জ্ঞাযতে আর্যঃ কোপো নেত্রেণ গম্যাতে।।” (চাণক্য নীতি ৫/৮)
এখানে গুণীজনকে ‘আর্য’ বলা হয়েছে।
মহাভারতঃ
• “স বাল এবার্যমতির্নৃপোত্তমঃ।” (মহাভারত আদিপর্ব ৪০/৭)
এই বচনে উত্তম রাজকুমারের সাথে ‘আর্যমতি’ বিশেষণ যুক্ত করা হয়েছে যার অর্থ শ্রেষ্ঠ, বুদ্ধিমান।
কৌটিল্য-অর্থশাস্ত্রঃ
• “ব্যবস্থিতার্যমর্যাদাঃ কৃতবর্ণাশ্রমস্থিতঃ।”
আর্যগণের মর্যাদাকে যে ব্যবস্থিত করতে সমর্থ সেই রাজ্যাধিকারী, এরূপ বর্ণিত হয়েছে।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাঃ
• “কুতস্ত্বা কশ্মলমিদং বিষমে সমুপস্থিতম্। অনার্যজুষ্টমস্বর্গ্যমকীর্তিকরম
র্জুন।।” (ভগবদ্গীতা ২/২)
এখানে যুদ্ধসাজে সজ্জিত ভীরুতাপ্রাপ্ত অর্জুনের বৃত্তিকে ‘অনার্যবৃত্তি’ বলা হয়েছে। এস্থলে আর্যকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে।
ধর্ম্মপদঃ
• “অরিযপ্পবেদিতে ধর্ম্মে সদা রমতি পণ্ডিতো।”
অর্থাৎ, পণ্ডিতগণ আর্যপ্রদর্শিত ধর্মে বিচরণ করেন।
• “ন তেন অরিযো হোতি যেন পাণতি হিংসতি। অহিংসা সব্ব পাণানং অরিযোতি পবচ্চতি।।” (ধর্ম্মপদ ২৭০/১৫)
অর্থাৎ, প্রাণীহিংসা করে কোনও ব্যক্তি আর্য হয় না। যে ব্যক্তি হিংসা করে না সে-ই আর্য।
শব্দকল্পদ্রুমঃ
• “মান্যঃ উদারচরিতঃ শান্তচিত্তঃ ন্যায়পথাবলম্বী প্রকৃতাচারশীলঃ সততকর্তব্যকর্মানুষ্ঠাতা।
যদুক্তং কর্তব্যমাচরন্ কার্যম্ অকর্তব্যমনাচরন্। তিষ্ঠতি প্রকৃতাচারে সতু আর্য ইতি স্মৃতঃ।।” (শব্দকল্পদ্রুম ১০/৫৭) অর্থাৎ, মান্য(সম্মানযোগ্য), উদারচরিত্র, শান্তচিত্ত, ন্যায়ের পথ অবলম্বনকারী, শাস্ত্রানুকুল আচরণকারী, নিরন্তর কর্তব্যকর্মের অনুষ্ঠানকারী এবং অসৎকর্ম বর্জনকারী পুরুষকেই স্মৃতি অনুসারে ‘আর্য’ বলা হয়।
পাশ্চাত্য বিদ্বানগণ কর্তৃক ‘আর্য’ শব্দের ব্যাখ্যাঃ
• ‘HISTORY OF THE WORLD’ গ্রন্থে ‘আর্য’ শব্দের ব্যাখ্যাঃ
“A tall skinned, long headed race, whose origin is still doubtfull though it was probably in Central Asia and who spread in pre-historic times over the whole of Europe and the parts of Asia and Africa. Almost all modern Europeans are of Aryan descent the family also called Indo-European or Indo-Germanic but these names are open objections from which of the word ‘Aryan’ is free.” (History of the world- Harms worth; Page-328)
• ‘Pear’s Cyclopedia General Mation’ গ্রন্থে ‘আর্য’ শব্দের ব্যাখ্যাঃ
“The word ‘Arya’ is derived from the Sanskrit, means an honourable lord of the soil.”
অর্থাৎ, সংস্কৃতে ‘আর্য’ শব্দের অর্থ মাননীয় ভূস্বামী।
• প্রসিদ্ধ ইংরেজ লেখক Emerson কর্তৃক ‘আর্য’ শব্দের ব্যাখ্যাঃ
“Whenever is open loyal true, of human, and affable demeanour, honourable himself, and in his judgement of other, faithful to his work as to law and faithful alike ton God and man such a man. The flowering of civilization is the finished man the of sense, of grace, of accomplishment of social power-the gentleman” – Emerson
অর্থাৎ, সেই ব্যক্তিই সভ্য ও আর্য যে উদার, নিষ্ঠাবান, সত্যপ্রেমী, দয়ালু এবং সরল। যে স্বীয় দৃষ্টিতে স্বয়ং মহান এবং যে অন্যের সম্মান করে, যে প্রতিজ্ঞা পালনকারী, যে পরমেশ্বর এবং মানবের প্রতি সত্যনিষ্ঠ, যে বুদ্ধিমান, সুন্দর গুণভূষিত, এবং সামাজিক শক্তিসম্পন্ন তথা ভদ্র সেই ব্যক্তিই সংস্কৃত।
• শ্রী অরবিন্দ ঘোষ রচিত ‘What is the significance of the name of Arya’ গ্রন্থে ‘আর্য’ শব্দের ব্যাখ্যাঃ
“The word ‘Arya’ expresses a particular, ethical and social ideal of well governed life, candour, courtesy, nobility, straight dealing, courage, gentleness, purity, humanity, compassion, protection of the weak, liberality, observance of social duty, eagerness for knowledge, social accomplishment; there is no word in human speech that has a nobler history. The Arya is he who strives and overcomes all outside him or within him that stand opposed to the human advance. In every thing he seeks truth, right and freedom.” (Arya Vol 1, p 61)
অর্থাৎ, ‘আর্য’ শব্দ দ্বারা এক সামাজিক তথা নৈতিক আদর্শের, এক মর্যাদাপূর্ণ জীবনের উদারতা, নম্রতা, সজ্জনতা, সরলতা, সাহস, সৌজন্য, পবিত্রতা, মানবতা, বলহীনের সহায়তা, সামাজিক কর্তব্যের অনুষ্ঠান, জ্ঞানপ্রাপ্তির উৎকণ্ঠা ইত্যাদি গুণের বোধ হয়ে থাকে। বাস্তবিকপক্ষে, মানবীয় ভাষায় এরূপ অন্য কোনও শব্দ নেই, যার ইতিহাস এই শব্দ হতে মহান হতে পারে।
অতএব উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে,
অতএব উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে,
• আর্যের সংজ্ঞাঃ
শ্রেষ্ঠ স্বভাবযুক্ত ব্যক্তিই আর্য।
• আর্যের গুণঃ
বিদ্যা, বিনয়, প্রেমপূর্ণ ব্যবহার, চাতুর্য, সময়ানুকুল কর্ম করা, জীবন ও মৃত্যুর ব্যবস্থাকে জেনে অধিক শোক বা হর্ষে জড়িয়ে না পড়া, ঈশ্বরাজ্ঞা ভঙ্গের ভয়।
• আর্যের কর্মঃ
আর্যোচিত গুণের প্রসারার্থে সদা উদ্যমশীলতা, জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য কায়মনোবাক্যের উপযোগ, সজ্জন, গম্ভীর ও উদার পুরুষদের সহযোগ।
• আর্যের স্বভাবঃ
সৌন্দর্য, তেজস্বিতা, পরহিত বিচার, স্বার্থবশীভূত অপরের অপকার করার ভাবনা মনে না আনা।
ইহা যথার্থ যে, যে সমাজে উক্ত আর্যোচিত গুণ, কর্ম ও স্বভাবের যত বিকাশ ঘটবে, সে সমাজ ততই সমৃদ্ধশালী হবে এবং অনবদ্য প্রতিভায় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
"अहं भूमिमददामार्याय" (ঋগ্বেদ ৪.২৬.২)
-- আমি (ঈশ্বর) এই পুরো ভূমি শুধুমাত্র আর্য্যদের দিয়েছি।
যাস্ক মুনির নিরক্ত শাস্ত্রও নিশ্চিত করে যে
"আর্য ঈশ্বরের পুত্র :" (নিরুক্ত ৬/২৬)
সুতরাং, সর্বপ্রথম ঈশ্বরের অমিথুনী সৃষ্টি থেকে জন্মগ্রহণকারী সকল মানবই আর্য হবে, অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ, মূর্খ নয়।
✍arya rishi
দারুন হয়েছে লেখা টা 👌👌👌
ReplyDeleteধন্যবাদ
Delete