শ্রীকৃষ্ণ যোগী না ঈশ্বর ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

10 October, 2019

শ্রীকৃষ্ণ যোগী না ঈশ্বর ?

শ্রীকৃষ্ণ যোগী না ঈশ্বর ?

 শ্রীকৃষ্ণকে যোগী না ভেবে যদি ঈশ্বর ভাবা হয় তাহলে গীতার শ্লোক স্ববিরোধী এবং গীতা একটি ভ্রান্তি পূর্ণ গ্রন্থ হবে

শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত অর্থাৎ বৈষ্ণব আদিরা গীতার সুবিশাল আকারের মাহাত্ম্য তুলে ধরে বলে যে গীতা শ্রেষ্ঠ, গীতাই সব, বেদের থেকেও নাকি গীতা শ্রেষ্ঠ। এরা এই প্রকারের যারা নিজের বাপকে বাদ দিয়ে কাকুকে শ্রেষ্ঠ বলে, গীতা অনুযায়ীই জানা যায় যে শ্রীকৃষ্ণ একজন যোগী ছিল গীতা ১১/৪,৯ শ্লোক এবং গীতার শেষের দিকে অর্থাৎ ১৮ অধ্যায়ের ৭৫ এবং ৭৮ শ্লোক দেখুন সেখানে সঞ্জয় কৃষ্ণ কে 'যোগেশ্বর' বলে কথন করেছে, আর যোগেশ্বর এর অর্থ যোগেন্দ্র, মহাযোগী, শ্রেষ্ঠযোগী। বেদ, উপনিষদ, দর্শনের জ্ঞান না থাকলে জানা যায়না যে যোগী কিরূপ হয়, এই সমস্ত কৃষ্ণ ভক্তরা বেদানুকূল কোনো শাস্ত্র মানেনা, এরা মানে অশ্লীল পুরাণ কাহিনী আর গীতার কয়েকটা শ্লোক পড়ে কৃষ্ণকে ঈশ্বর ঈশ্বর বলে চেল্লায়, গীতায় কৃষ্ণ যে শ্লোক গুলো যোগ যুক্ত মুক্ত আত্মা হিসাবে নিজেকে ঈশ্বর বলেছে সেই শ্লোক ধরে কৃষ্ণভক্তরা কৃষ্ণকে ঈশ্বর বানিয়ে দেয় আর যে শ্লোক গুলোতে কৃষ্ণ নিজেকে ঈশ্বর হতে ভিন্ন মেনেছে সেই সমস্ত শ্লোকের কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নাই, কারণ তারা পুরাণ কাহিনী ছাড়া কোনো বৈদিক শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান রাখেনা। আজ শ্রীকৃষ্ণের ওই গাঢ় ভক্তদের একটু দেখিয়ে দেই যে কৃষ্ণকে ঈশ্বর ভাবলে গীতা কেমন স্ববিরোধী এবং ভ্রান্ত পূর্ন হয়। আসুন দেখি__________
গীতা ৪ অধ্যায়, ৫-৬ শ্লোক
ভগবান বললেন -হে পরন্তপ অর্জুন আমার এবং তোমার বহুজনম অতিত হয়েছে, আমি সে সমস্ত জন্মের কথা মনে করতে পারি তুমি তা পার না।৫।
যদিও আমি জন্ম রহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্ব ভূতের ঈশ্বর তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি স্বীয় মায়ার দ্বারা অবতির্ন হই।৬।
ওপরের দুটি শ্লোক স্ববিরোধী কারণ ওপরের শ্লোকে কৃষ্ণ বলেছে তার অনেক বার জন্ম হয়েছে , কিন্তু দেখুন পরের শ্লোকে কৃষ্ণ বলছে যে আমি জন্ম রহিত অর্থাৎ তার জন্ম হয়না।
গীতা ৯ অধ্যায়, ২৯ শ্লোক
আমি সর্বভূতে সমান ভাবে বিরাজ করি, কেউ আমার প্রিয় নয় ও অপ্রিয়ও নয়।২৯।
গীতা ১৮ অধ্যায়, ৬৫-৬৯ শ্লোক
তুমি আমাতে চিত্ত স্থির কর এবং আমার ভক্ত হও। আমার পুজা কর এবং আমাকে নমস্কার কর। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। এই জন্য আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে এই ভাবে তুমি আমাকে প্রাপ্ত হবে।৬৫। **

পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে তার থেকে অধিক প্রিয়কারি এবং আমার প্রিয় আর কেউ নেই এবং ভবিষ্যতে কখন হবেও না।৬৯।
ওপরের শ্লোকে কৃষ্ণ বলছে তার কাছে কেও প্রিয়ও নয় এবং অপ্রিয়ও নয়। কিন্তু নিম্নের শ্লোকে কৃষ্ণজী অর্জুন কে প্রিয় বলছে এমন কেন ? কৃষ্ণ দুই ধরনের স্ববিরোধী কথা কেন বলছে গীতায় ? আবার নিচের শ্লোকে বলছে তার মতো প্রিয় কেও হবেনা, উত্তর আছে কি কোনো কৃষ্ণভক্তদের ? এখানেই শেষ নয় আরও আছে আসুন_____
গীতা ৭ অধ্যায়, ৬ শ্লোক
**
**
হে অর্জুন! সর্বভূত(জড় ও চেতন) এই উভয় প্রকৃতি হতেই উৎপন্ন বলে জানবে এবং আমি সমস্ত জগতের উৎপত্তি এবং প্রলয়রূপ অর্থাৎ সমগ্র জগতের মূল কারণ।৬।
**
গীতা ১৮ অধ্যায়, ৪৬ শ্লোক
**
যে পরমেশ্বর হতে সমস্ত প্রাণীর উৎপত্তি হয়েছে, যিনি এই সমগ্র জগৎ পরিব্যাপ্ত আছেন, সেই পরমেশ্বর কে নিজের স্বাভাবিক কর্মের দ্বারা অর্চনা করে মানুষ সিদ্ধি লাভ করে।৪৬।

**
**ওপরের শ্লোকে কৃষ্ণ বলছে যে কৃষ্ণই সমগ্র জগতের মূল কারণ, কিন্তু পরের শ্লোকে কৃষ্ণ স্বয়ং বলছে যে 'যে পরমেশ্বর হতে সমস্ত প্রাণীর উৎপত্তি হয়েছে, যিনি এই সমগ্র জগৎ পরিব্যাপ্ত আছেন'। বলছি গীতায় ঈশ্বর সংখ্যা কয়টা ? আর কৃষ্ণ একবার নিজেই নিজেকে ঈশ্বর বলছে আবার কৃষ্ণ নিজেই ঈশ্বরকে 'যিনি, সেই' বলে কথন করছে, বলছি গীতার শ্লোক এমন উল্টো পাল্টা স্ববিরোধী কেন ?
** গীতা ৯ অধ্যায়, ২৮ শ্লোক
**
এই ভাবে, আমাতে সমস্ত কর্ম অর্পণ দ্বারা সন্ন্যাসযোগে যুক্ত হয়ে তুমি শুভাশুভ ফলরূপ দ্বারা কর্মবন্ধন হতে মুক্ত হবে এবং এ থেকে মুক্ত হয়ে আমাকেই প্রাপ্ত হবে।
** **গীতা ১৮ অধ্যায়, ৬২ শ্লোক
হে ভারত! তুমি সর্বত্রভাবে সেই পরমেশ্বরই শরনাগত হও। তার কৃপায় তুমি পরমশক্তি এবং সনাতন পরমধাম প্রাপ্ত হয়।৬২।
ওপরের শ্লোকে কৃষ্ণজী বলছে যে 'আমাকেই প্রাপ্ত হবে'। কিন্তু নিচের শ্লোকটি দেখুন এখানে কৃষ্ণজী বলছে 'তুমি সর্বত্রভাবে সেই পরমেশ্বরই শরনাগত হও। তার কৃপায় তুমি পরমশক্তি এবং সনাতন পরমধাম প্রাপ্ত হয়'। এখানে কৃষ্ণজী 'সেই, তার' বলেছে ঈশ্বরকে অর্থাৎ কৃষ্ণজী এখানে ঈশ্বর কে নিজের থেকে ভিন্ন বলছে, কারণ কি ? উত্তর আছে কোনো ইসকন পাদ ভক্ত ? গীতার মধ্যে কৃষ্ণ এমন স্ববিরোধী কথন করছে কেন ? আসুন আরও দেখি_____
গীতা ১৩ অধ্যায়, ১৩, ১৪, ১৫ শ্লোক
তার সর্বদিকে হস্ত, পদ, চক্ষু, মস্তক, কান ও মুখ, কারণ তিনি সমগ্র জগতকে ব্যাপ্ত করে আবৃত বিরাজিত আছেন।১৩।
তিনি সমস্ত ইন্দ্রিয়ের বিষয় সমূহের জ্ঞাতা হয়েও প্রকৃত পক্ষে ইন্দ্রিয় রহিত এবং অনাসক্ত হয়েও সকলের ধারক ও পোষক, নির্গুণ হয়েও সমস্ত গুণের ভোক্তা।১৪। **
**
চর, অচর অর্থাৎ জঙ্গম ও স্থাবর সর্বভূতের ভেতর ও বাইরে এবং স্থাবর-জঙ্গম রূপেও তিনি বিরাজিত। অতি সূক্ষ্ম হওয়া সত্ত্বেও অবিজ্ঞেয়, তিনি জ্ঞানীর অতি নিকটে এবং অজ্ঞানীর অত্যন্ত দূরে।১৫।
এখানে কৃষ্ণজী নিজেই ঈশ্বরকে 'তার' বলছে কৃষ্ণজী বলছে যে 'তার সর্বদিকে হস্ত, পদ, চক্ষু, মস্তক, কান ও মুখ, কারণ তিনি সমগ্র জগতকে ব্যাপ্ত করে আবৃত বিরাজিত আছেন'
অর্থাৎ ঈশ্বর সমস্ত দিকেই ব্যাপক আছে বলে কৃষ্ণজী এমন বলছে, পৌরানিকরা এই সমস্ত শ্লোক দেখে তো ঈশ্বর যে সাকার বানিয়ে দেবে কিন্তু দেখুন কৃষ্ণ ওপরের শ্লোকে বলেছে যে '**তিনি সমস্ত ইন্দ্রিয়ের বিষয় সমূহের জ্ঞাতা হয়েও প্রকৃত পক্ষে ইন্দ্রিয় রহিত ' **এখানে কৃষ্ণজী বলছে যে ঈশ্বর প্রকৃত পক্ষে ইন্দ্রিয় রহিত অর্থাৎ ঈশ্বরের কোনো ইন্দ্রিয় নেই তিনি নিরাকার। তা কৃষ্ণ ভক্তরা উত্তর দিতে পারবে যে কৃষ্ণ যখন নিজেই ঈশ্বর তাহলে এখানে কৃষ্ণ কাকে 'তিনি' বলছে ? গীতা এমন কেন স্ববিরোধী উল্টো পাল্টা ?
পৌরানিকরা গীতার ওই শ্লোক গুলো ধরে টানে যে যেখানে কৃষ্ণ বলেছে যে আমিই ব্যাসদেব, আমিই কপিলমুনি, আমিই নারদ, আমিই সামবেদ, আমিই ওঙ্কার, আমিই ইন্দ্র আদি আমিই জগতের ঈশ্বর। গীতার এই সমস্ত বাণী গুলোকে প্রয়োগ করে কৃষ্ণভক্তরা কৃষ্ণকেই ঈশ্বর বানিয়ে দেয়।
🦚কৃষ্ণজী 'আমি' শব্দ দ্বারা বলেছে যে 'আমিই ঈশ্বর, আমিই জগতের মূল কারণ' অর্থাৎ কৃষ্ণই ঈশ্বর, এমন যুক্তি দ্বারা যদি কৃষ্ণকে ঈশ্বর ভাবা হয় তাহলে আমি এদেরই এই যুক্তিতেই ফেঁসে দেবো, দেখুন গীতা ১০/৩৭ শ্লোকে কৃষ্ণ বলেছে যে **'বৃঞ্চীনাম্‌ বাসুদেব অস্মি পাণ্ডবানাম্‌ ধনঞ্জয়ঃ' কৃষ্ণ বলেছেন যে 'পাণ্ডবের মধ্যে আমিই ধনঞ্জয়'। **এই শ্লোকে কৃষ্ণ স্পষ্ট ভাবে বলেছে যে কৃষ্ণ নিজেই ধনঞ্জয় অর্থাৎ অর্জুন, তাহলে কৃষ্ণ যদি নিজেই অর্জুন হয় তাহলে ফালতু ফালতু যুদ্ধে সময় নষ্ট করে গীতার এতগুলো বাণী অর্জুন বলার কি দরকার কি ছিল ? এখানে তো অবশ্যই বলা যায় যে কৃষ্ণ নিজেই অর্জুন হওয়া সত্ত্বেও গীতার জ্ঞান দেওয়ার নাটক কেন করলো যুদ্ধের মাঠে ? যদি কেউ বলে যে 'কৃষ্ণ মানব জাতিকে জ্ঞান দেওয়ার জন্য এমন করেছিল'। এই কথা বলাও ভুল হবে কারণ কৃষ্ণ যখন নিজেই অর্জুন তাহলে যুদ্ধের মাঠে গীতার জ্ঞান দিয়ে যুদ্ধের সময় নষ্ট করার কোনো মানেই ছিলনা, এই জ্ঞান তো কৃষ্ণজী তাদের বাড়িতে এসেই দিতে পারতো, আর এই (গীতা ১০/৩৭) শ্লোক অনুযায়ী গীতার ওই বিশ্বরূপ দর্শন অধ্যায়টি পুরোই একটা নাটকের অধ্যায় তা প্রমাণ হয় কারণ কৃষ্ণ যখন নিজেই অর্জুন তাহলে ফালতু কেন কৃষ্ণজী অর্জুন কে বিশ্বরূপ দেখাতে গেল ? বলুন কৃষ্ণভক্তরা কৃষ্ণকে ঈশ্বর ভাবলে তো গীতা একটা স্ববিরোধী এবং নাটক পূর্ণ গ্রন্থ হবে তাই না ? আবার দেখুন কৃষ্ণই যখন অর্জুন তাহলে গীতা ২/২ শ্লোকে কৃষ্ণ নিজেই অর্জুনকে অনার্য অর্থাৎ অসভ্য, মূর্খ বলেছে। তাহলে যুক্তিটি তো এই দাঁড়ায় যে কৃষ্ণ নিজেই নিজেকে অনার্য অর্থাৎ মূর্খ, অসভ্য বলেছে ? এমন উল্টো পাল্টা কেন গীতা ? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর কি ১০০০০ বছরে খুঁজে পাবেন কৃষ্ণভক্তরা 
মহাভারত- অশ্বমেধিক পর্ব-অধ্যায়-17, শ্লোক-11,12,13
ন চ শক্যং পুনর্বক্তুমশেষেণ ধনজ্ঞয়।
স হি ধর্মঃ সুপর্য্যাপ্তো ব্রহ্মণঃ পদবেদনে।
ন শক্যং তন্মষা ভূয়স্তথা বক্তুমশেষতঃ।
পরং হি ব্রহ্মা কথিতং যোগযুক্তেন তন্ময়া
ইতিহাসন্তু বক্ষ্যামি তস্মিন্নর্থে পুরাতনম।।
অর্থ-(শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন)হে, ধনজ্ঞয়(অর্জুন),সেই সমস্ত কথা(গীতার বাণী) আমার পক্ষে বলা আর সম্ভব নয়।সেই ধর্মটি পরমাত্নার স্বরূপ জানবার জন্য যথেষ্ঠ ছিল।আমি এখন সেই সমস্ত কথা,পুনরায় বলতে পারব না।সেই সময় আমি যোগযুক্ত হয়ে,পরব্রহ্মের বিষয় বলেছিলাম।এখন সেই বিষয়ে প্রাচীন বৃত্তান্ত বলছি।
এখানে, শ্রীকৃষ্ণ পরিস্কার ভাষায় বলছেন, তিনি যোগযুক্ত অবস্থায় ঈশ্বরের বিষয়ে বলেছেন।শ্রীকৃষ্ণ একবারও বলেননি যে,ঈশ্বর তাঁর(শ্রীকৃষ্ণের) মাধ্যমে,বাণী দিয়েছেন।
সুতরাং,গীতা কোন ঈশ্বরীয় বাণী নয়।ইহা শ্রীকৃষ্ণ নামক মরণশীল মানুষের নিজস্ব বানী
মুক্তি বিষয়ে,গীতা ও বেদের বিরোধ বর্তমান।এই বিরোধ প্রমাণ করে যে,গীতা ঈশ্বরের বাণী নয়। যদি গীতা ঈশ্বরের বাণী হয় তাহলে ঈশ্বর মিথ্যাবাদীতে রূপান্তরিত হন!! ঈশ্বর কি মিথ্যাবাদী?!!! এবং এটাও প্রমাণ হয় যে শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর নন একজন মরণশীল সাধারণ মানুষ মাত্র। শ্রীকৃষ্ণ যদি ঈশ্বর হতেন তাহলে গীতা ও বেদে পরস্পর বিরুদ্ধ কথা বলতেন না।
এইবার প্রমাণ দেখুন-
যদ্ গত্বা ন নির্বত্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম।-গীতা-15/6
এই শ্লোক থেকে জানা যায়,মানুষ বা জীব একবার মুক্তি পেলে পুনরায় কখনো সংসারে আগমন করে না বা চিরকালের মতো মুক্তির আনন্দ উপভোগ করে।
এইবার মুক্তি বিষয়ে বেদের প্রমাণ দেখুন।বেদ মন্ত্র অনুযায়ী গীতার বচন, কিভাবে,মিথ্যা প্রমাণিত হয়,প্রমাণ দেখুন-
কস্য নূনং কতমস্যামৃতানাং মনামহে চারু দেবস্য নাম।
কোনো মহ্যা অদিতযে পুনর্দাৎ পিতরং চ দৃশেযং মাতরং চ।।1।।
অগ্নের্বযং প্রথমস্যামৃতানাং মনামহে চারু দেবস্য নাম।
স নো মহ্যা অদিতযে পুনর্দা্ৎ পিতরং চ দৃশেযং মাতরং চ।।2।।
ঋগ্বেদ-1/24/1-2
অর্থ- আমরা কার নাম পবিত্র বলে জানব? অবিনাশী পদার্থ সমূহের মধ্যে বিদ্যমান, চির প্রকাশ রূপ কোন্ দেব আমাদের সকলকে মুক্তি সুখ ভোগ করিয়ে পুনরায় এই সংসারে জন্মদান করান এবং পিতা-মাতা'কে দর্শন করান?।।1।।
আমরা এই স্বপ্রকাশরূপ, অনাদি এবং সদামুক্ত পরমাত্মার নাম পবিত্র বলে জানব।পরমাত্না আমাদের মুক্তিতে আনন্দ ভোগ করিয়ে পুনরায় মাতা-পিতার সংযোগে জন্মদান করিয়ে তাঁহাদের দর্শন করান।। 2।।
                                                                                                                                     ✍বিক্রম
ভাগবত বনাম গীতায় অবতারবাদ

যদা যদ হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্ম্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।। [গী০ ৪।৭]
অনুবাদঃ হে ভারত ! যখন যখন ধর্ম্মের গ্লানি ও অধর্ম্মের অভ্যুত্থান হয়, তখনই আমি সৃষ্ট দেহবৎ আত্মপ্রকাশ করি, অর্থাৎ আবির্ভূত হই।।
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্ম্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।। [গী০ ৪।৮]
অনুবাদঃ সাধুগণের পরিত্রাণ, দুষ্কৃতকারিগণের বিনাশ ও ধর্ম্মকে সম্যক্ প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্য আমি যুগে যুগে আবির্ভূত হই।।
সমীক্ষাঃ পৌরাণিক মতবাদের ব্যাখ্যা অনুসারে এখানে আমরা দেখতে পাই যে, ধর্মের হানি ও অধর্মের বৃদ্ধি, সাধুদের রক্ষা, দুষ্টলোকদের বিনাশ ও ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ঈশ্বর অবতার রূপ ধারণ করেন। অথচ তাদেরই শ্রদ্ধ্যেয় ভাগবত পুরাণ যা কিনা রসজ্ঞ শ্রোতাদের জন্য কেননা তাদের পুণ্যকীর্তি ভগবানের লীলা শ্রবণেও তৃপ্তি আসে না, তাই তাদের লীলার মধ্যে নতুন নতুন রসের অনুভূতি চাই [ভা০ ১।১।৯]। সেই রসালো ভাগবত পুরাণে ঈশ্বর অবতরণের ভিন্ন কথা দেখতে পাই যা কিনা গীতার ৪।৭-৮ নং শ্লোকের সাথে মিলে না। এবার দেখা যাক, সেই রসালো ভাগবত অবতারবাদ সম্পর্কে কি বলে?
জীবের মঙ্গল এবং ভগবত প্রেম বৃদ্ধি করার জন্যই ভগবানের অবতার হয় [ভা০ ১।১।১৩]
তিনি লীলাচ্ছলেই অবতার ধারণ করেন [ভা০ ১।১।১৭]
তাহলে পৌরাণিক মতবাদ অনুসারে কোন কথাটা সত্য, ভাগবতের নাকি গীতার? যদি বলেন দুটোই সত্য। তা কখনো হতে পারেনা কেননা গীতার উক্ত শ্লোকদ্বয়ের বক্তা আপনাদের স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বরের এবং ভাগবতের উক্ত শ্লোকের বক্তা ভাগবতের ঋষিগণ, যারা কিনা সূত মহাশয়ের কাছে তত্ত্বকথা জানতে চাইছেন [ভা০ ১।১।১৩-১৭]। অতএব, উভয় বাক্য সত্য- একথা কখনো যুক্তিসিদ্ধ হয়না।
ন চ মৎস্থানি ভূতানি পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্। 
ভূতভৃন্ন চ ভূতস্থো মমাত্মা ভূতভাবনঃ।।
গীতা-নবম-অধ্যায়-রাজগুহ্য-যোগ ৫
পদার্থঃ - ( মতস্থানি, ভুতানি,ন,চ) আমাতে ভূত স্থির নয় ( ন,চ,ভুতভৃত্) এবং না আমি সব প্রানীকে ধারন পোষনকারী ( মে) আমার ( যোগম্) যোগ ( ঐশ্বরম্= ঈশ্বরেভবঃ= ঐশ্বরঃ, তং ঐশ্বরং যোগম্) ঈশ্বরে যে যুক্ত তাহাকে ঐশ্বর বলা হয়, সেই ঐশ্বর যোগকে তুমি ( পশ্য) দেখ ( মাম, আত্মা) আমার আত্মা ( ভূতভাবনঃ) ভূত সকলে সংকল্প করে থাকে।-[ আর্য মুনিকৃত ভাষ্য]
ভাষ্যঃ এই শ্লোকে কৃষ্ণজী ঈশ্বরের সহিত যোগযুক্ত ছিল তাহার ' পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্' এই কথন করে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আমার ঈশ্বরের সাথে এমন যোগ অাছে যাহা হতে আমি সব ভূতের কর্তা না হয়ে ও তাহাসকল করিবার অভিমান করিতে পারি, এখানে কৃষ্ণজী ঈশ্বরের সাথে অদ্ভুত যোগ ছিল যাহাকে সাধারন পুরুষ বুঝতে পারে না, একমাত্র বেদ বেদজ্ঞ জ্ঞানী যোগী পুরুষগন বুঝতে পারে।

শ্রীকৃষ্ণ যে ঈশ্বরের উপাসনা করতেন মহাভারত ও বৈষ্ণবপ্রীয় ভাগবতে তার প্রমাণঃ-
মহাভারতের শান্তিপর্বের ১৫২তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বেদমাতা গায়ত্রী মহামন্ত্র এর মাধ্যমে উপাসনা তথা সন্ধ্যা করতেনঃ-- "তত উণ্থায় দাশার্হঃ স্নাতঃ প্রাঞ্জলিরচ্যুতঃ। জপ্ত্বা গুহ্যং মহাবাহুরগ্নীনাশ্রিত্য তস্থিবান্।।" মহাভারতঃ শান্তিপর্বঃ অধ্যায়ঃ১৫২ শ্লোক ৭ ভাবার্থঃ অনন্তর মহাবাহু কৃষ্ণ শয্যা হইতে উঠিয়া, স্নান করিয়া, হস্তযুগল সংযোজন - পূর্ব্ব বেদমাতা গায়ত্রী মহামন্ত্র জপ ( প্রাতঃসন্ধ্যা) করিয়া, হোমাগ্নির নিকটে যাইয়া, প্রাতঃকালীয় হোম করিবার জন্য অবস্থান করিলেন।। মহাভারতের শান্তিপর্বের ১৫২তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় শ্রীকৃষ্ণ সনাতন ব্রহ্মের ধ্যান তথা উপাসনা করতেনঃ-
"স ধ্যানপথমাবিশ্য সর্ব্বজ্ঞানানি মাধবঃ। অবলোক্য ততঃ পশ্চাদ্দধৌ ব্রহ্ম সনাতনম্।।" মহাভারতঃ শান্তিপর্বঃঅধ্যায়ঃ৫২ শ্লোক ২ . ভাবার্থঃতদনন্তর যাহাতে সমস্ত জ্ঞান উৎপন্ন হয়, সেইভাবে ধ্যান অবলম্বন করিয়া, তিনি নাসিকার অগ্রদেশ দেখিতে থাকিয়া, সনাতন ব্রহ্মের চিন্তা করিলেন। ভাগবত থেকে বেদমাতা গায়ত্রী মহামন্ত্র মাধ্যমে উপাসনা করার এবং সনাতন ব্রহ্মের ধ্যান তথা উপাসনা করার প্রমাণঃ-
ভাগবতের ১০ম স্কন্দের ৪৫তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় শ্রীকৃষ্ণ বেদমাতা গায়ত্রী মহামন্ত্র এ দীক্ষিত হয়েছিলেনঃ- "ততশ্চ লব্ধসংস্কারৌ দ্বিজত্বং প্রাপ্ত সুব্রতৌ।
গর্গাদ যদুকুলাচার্যাদ্ গায়ত্রং ব্রতমাস্থিতৌ।।" ভাগবত ১০/৪৫/২৯ . ভাবার্থঃএইপ্রকার শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরাম যদুকুলাচার্য গর্গের নিকট উপনয়ন সংস্কার প্রাপ্ত হয়ে দ্বিজত্বে উপনিত হলেন এবং গায়ত্রী ধারণ ধারণপূর্বক ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত হলেন।
ভাগবতের ১০ম স্কন্দের ৭০তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় শ্রীকৃষ্ণ বেদমাতা গায়ত্রী মহামন্ত্রের মাধ্যমে উপাসনা তথা সন্ধ্যা করতেনঃ--
"অথপুতো নির্মলস্য জলে যথাবিধি ক্রিয়া কলাপং পরিধায় ব্যাসসী।
চকার সন্ধ্যাপগমাদি উত্তমো হুতানলো ব্রহ্ম জজাপ বাগযতঃ।।" ভাগবত ১০/৭০/৬ ভাবার্থঃ অতঃপর তিনি বিধি অনুসারে নির্মল ও পবিত্র জলে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র ও উত্তরীয় ধারন করে যথাবিদি নিত্যকর্ম সন্ধ্যা বন্দনা করেন। অতঃপর তিনি যজ্ঞ করতে বসেন ও মৌন হয়ে গায়ত্রী জপ করেন।
ভাগবতের ১০ম স্কন্দের ৭০তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় শ্রীকৃষ্ণ সনাতন ব্রহ্মের ধ্যান তথা উপাসনা করতেনঃ- "ব্রহ্ম মুহুর্তে উথ্থায় বায়ুর্সস্পৃশ্য মাধবঃ দধৌ প্রসন্ন করণ আত্মনং তমসঃ পরম।।" ভাগবত ১০/৭০/৪ . ভাবার্থঃশ্রীকৃষ্ণ ব্রাহ্মমুহুর্তে শয্যা ত্যাগ করতঃ প্রাতঃ কৃত্যাদি সম্পন্ন করে প্রসন্ন চিত্তে তমোগুন হতে দুরে থেকে ঈশ্বর উপাসনা করতেন।
"এক স্বয়ং জ্যোতি রণস্তমব্যয়ম স্ব সংস্থয়ান্বিত্য নিত্যরিস্তকল্মষম।
ব্রহ্মাথ্য মাসোদ্য ভবনাশ হেতুভিঃ স্বর্শক্তিভিলক্ষিত ভাবনিবৃতিম।।" ভাগবত ১০/৭০/৫ ভাবার্থঃ যিনি এক এবং জ্যোতি স্বরূপ, অনন্ত, অব্যয় অর্থাৎ একরুপ বা একরসে বিদ্যমান এব্য সর্বত্র নিজ অবস্থান হেতু নিয়ত অন্যায় কার্য দূর করেন এবং যাকে ব্রহ্ম বলা হয়, যিনি এই বিশ্ব চরাচর সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয় করার সামর্থ্য যুক্ত কৃষ্ণ তারই উপাসনা করতেন।
ওম্ ইতি একাক্ষরম্ ব্রহ্ম ব্যাহরন্ মাম্ অনুস্মরন্ ।
য়ঃ প্রযাতি ত্যজন্ দেহম্ সঃ যাতি পরামাম্ গতিম্ ।।
গীতা-৮/১৩
পদার্থঃ (ওম্, একাক্ষরম্, ব্রহ্ম) 'ওঁ' হলো এক অক্ষর ব্রহ্ম অর্থাৎ ব্রহ্মের বোধক যে 'ওঁ' অক্ষর আছে উহাকে (ব্যাহরন্) কথন করে (মাম্, অনুস্মরন্) আমাকে এর অনন্তর স্মরণ করে অর্থাৎ এই পদের উপদেষ্টা হিসেবে জেনে (য়ঃ) যে পুরুষ (দেহম্, ত্যজন্) দেহকে ত্যাগ করে (প্রযাতি) মৃত্যু হয় (সঃ) সে (পরামাম্, গতিম্, যাতি) পরম গতি কে প্রাপ্ত হয়।।
ভাবার্থঃ যে পুরুষ 'ওঁ' নামক ব্রহ্ম অক্ষর কে স্মরণ করতে করতে দেহ ত্যাগ দ্বারা প্রয়াণ করে সে পুরুষ পরম গতি কে প্রাপ্ত হয়।।
ভাষ্যঃ এখানে কথন করে যে 'ওঙ্কার' এর জপ সমাধি লাভে উপযোগী, যেমন 'ঈশ্বরপ্রণিধানাদ্বা' যোগদর্শন ১/২৩ সূত্রে কথন করা হয়েছে যে ঈশ্বরের 'প্রণিধান' ভক্তি বিশেষ দ্বারা সমাধি লাভ হয়।।
এই শ্লোকের ব্যাখ্যাতে অবতারবাদী টীকাকারগণ এই অক্ষর কে কৃষ্ণের সাথে মিলিয়ে দেয় অর্থাৎ কৃষ্ণ কে পরমেশ্বর বলে কথন করে। যদি মহর্ষি ব্যাসজীর এমন তাৎপর্য হতো তাহলে এই অক্ষর এর অনন্তর কৃষ্ণজী 'মাম্ অনুস্মর' কথন কথন করতো না, আমাদের বিচারে কৃষ্ণজী নিজেই নিজেকে ওই অক্ষরের উপদেষ্টা হওয়ার কারণে মহত্ত্ব কথন করে, নিজে অক্ষর ব্রহ্ম হওয়ার অভিমানে নয়, যদি স্বয়ং অক্ষর= ব্রহ্ম হওয়ার অভিমান করতো তাহলে 'তমাহুঃ পরমাম্ গতিম্' গীতা ৮/২১ এই বাক্য দ্বারা ওই অক্ষর কে পরম গতি নিরুপণ করে নিজের ধাম কথন করতো না। 'ধাম' শব্দের অর্থ হলো স্থিতি স্থান অর্থাৎ আমার স্থিতির স্থান হয় সেই অক্ষর, এই কথন করে আবার সামনে গিয়ে ওই অক্ষর প্রাপ্তির অন্যান্য ভক্তি দ্বারা কথন করে।।
[আর্যমুনি ভাষ্য ]

যজুর্বেদ ৩৪/৫৩
।। তিনি জন্মহীন, সর্বদা এক ও একক সত্তা বজায় রাখেন।।
বেদে বলাই আছে ঈশ্বর শরীর হীন।। আর ভন্ডরা অপরীবর্তনীয় ঈশ্বরকে কালক্রমে বহুবার পাল্টিয়েছে।।
ঈশ্বর সম্পর্কে মুন্ডোকপনিষদে বলা আছে,
দিব্যো হ্যমুর্তঃ পূরূষঃ স বাহ্যাভ্যন্তরো হ্যজঃ।
অপ্রাণো হ্যমনাঃ শূভো হ্যক্ষরাৎ পরতঃ পরঃ।। মূণ্ডকোপনিষৎ ২/১/২
বঙ্গানুবাদঃ- সেই দিব্য মূর্তিশূণ্য পুরুষঃ বাহ্যে এবং অন্তরে অবস্থিতি করেন। তিনি জন্মশূন্য-প্রানশূন্য-মনশূন্য এবং বিশুদ্ধ, তিনি পরম অক্ষর হতেও উর্ধে।
তিনি দিব্য, তিনি অমূর্ত্ত, চিন্ময় পুরুষ, বাহিরে তিনি অন্তরে তিনি, তিনি জন্মহীন, প্রাণের অতীত, মনের অতীত, জ্যোতির্ময়, অক্ষরেরও পারে পরমাত্মা ও তিনি,একমাত্র তার উপাসনা কর।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের অধ্যায় ৬, অনুচ্ছেদ ৯ এ বলা আছে -
''না চস্য কসুজ জানিত না কধিপহ''
অর্থ :- সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন বাবা নেই,মা নেই,তার কোন প্রভু নেই,তার চেয়ে বড় কেউ নেই।
,,এবার যারা বলবে চৈতন্য ঈশ্বর, তারা হচ্ছে অকাটমুর্খ, কারণ চৈতন্যজী বিয়ে করেছে, তার বাবা মা সবই ছিলো, সে কীভাবে ঈশ্বর হয়।।
আবার ঈশ্বর কখনো সংসার বন্ধনে আসেন না, দেখুন গীতা কী বলে,
#ঈশ্বর কি সংসার বন্ধনে আসে ? ঈশ্বরের কি কোনো ইন্দ্রিয় আছে ? দেখুন কৃষ্ণ জী কি বলেছে গীতায়....
গীতা / ১৩ অধ্যায় , ১৫ শ্লোক
সর্বেন্দ্রিয়গুণাভাসম্ সর্বান্দ্রিয়বিবর্জিতম্‌
অসক্তম্ সর্বভুত্ চ এব নির্গুণম্ গুনভোক্তৃ চ ।। ১৫
পদার্থ :- সেই জ্ঞেয় ব্রহ্ম কেমন ?( সর্বেন্দ্রিয়গুণাভাসম্ ) সেই ব্রহ্ম কে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের গুণ দ্বারা জানা যায় (সর্বান্দ্রিয়বিবর্জিতম্‌ )স্বয়ং সমস্ত ইন্দ্রিয় রহিত (অসক্তম্ )বন্ধন হইতে রহিত সমস্ত কিছু কে ধারণ কারী (নির্গুণম্ )নির্গুণ ( চ) আর (গুনভোক্তৃ) সমস্ত গুণের ভোক্তা ।
ভাবার্থ :- সেই পরম ব্রহ্ম কে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের গুণ হইতে জানা যায় , সেই ব্রহ্ম স্বয়ং ইন্দ্রিয় রহিত এবং তিনি সংসার বন্ধন হইতেও রহিত , সমস্ত কিছু কে ধারণকারী নির্গুণ ও সমস্ত গুণের ভোক্তা ।।
গীতা, বেদ ও উপনিষদ থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে ঈশ্বরের কোন শরীর হয় না, তিনি সংসার বন্ধনে আবদ্ধ হন না,, আর চৈতন্যজীর জীবণ পর্যবেক্ষণ করুন এর কোনটার সাথে তার মিল রয়েছে,,
যারা ভন্ড ও মুর্খ তারাই চৈতন্যজী কে ঈশ্বর বলে।।।
যজুর্বেদ ৪০/১৫ তে বলা আছে ওঁ জপ করো, গীতা ৮/১৩ তে কৃষ্ণজাী সেই একই ওঁ জপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু চৈতন্যজী বললো হরিনাম করতে,, ইনি তো বেদ গীতার বিরুদ্ধে কথা বললেন, এখন ইনি যদি কৃষ্ণ হয় তাহলে কী আমরা ভাববো কৃষ্ণজী দুইরকম কথা বলেন, তিনি বেদের বিরুদ্ধে যাবেন।। এসব ভন্ডরাই রটিয়ে বেরায়।।
চৈতন্যজী কৃষ্ণের একজন অন্ধভক্ত,, আর আমরা শাস্ত্র বাদ দিয়ে সেই অন্ধ ভক্ত কী বললো তা নিয়ে পড়ে থাকবো নাকী শাস্ত্র মানবো,।

গীতায় আমি বলতে কৃষ্ণ কাকে বুঝিয়েছেন
সনাতন ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদ। বেদ বুঝানোর জন্য উপনিষদ্। উপনিষদ্ এর সারাংশ হচ্ছে গীতা।
গীতায় (ধৃতরাষ্ট+ সঞ্জয়+শ্রীকৃষ্ণ+অর্জুন) এই চার ব্যক্তির বানীর মোট ১৮ অধ্যায়ে ৭০০ টি শ্লোক রয়েছে। ৭০০ শ্লোক থাকার কারনে গীতাকে সপ্তশতী শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতা বলা হয়।
আমরা সকলেই গীতা পাঠ করি। গীতা পাঠ করতে গিয়ে অনেক সময় অামরা অনেকই দো-টানার মধ্যে পড়ি। যেমনঃ-
★[গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছে- হে মহাবীর অর্জুন! আমার এবং তোমার বহুবার জন্ম হইয়া গিয়েছে। আমি সে সবই জানি কিন্তু তুমি তাহার কিছুই জান না। গীতা ৪/৫
(এই শ্লোক থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে অর্জুন এবং শ্রীকৃষ্ণের বহুবার জন্ম হয়েছে।)
★এবার পরের শ্লোকে দেখি কি বলা হয়েছে-
আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই। আমি সকলের ঈশ্বর। আমি নিজ প্রকৃতিতে আশ্রয় করিয়া নিজ মায়াবলে নিজেকে সৃষ্টি করিয়া থাকি। গীতা ৪/৬
(উপরক্ত গীতার ৪/৫ নং শ্লোকের সাথে ৪/৬ নং শ্লোকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলেছে। পূর্বের শ্লোকে সাথে কোন মিল নেই)]
★[গীতায় আবার দেখুন শ্রীকৃষ্ণ বলেছে-
আমি তোমাকে অত্যান্ত ভালবাসি বা তুমি আমার অতি প্রিয়; সে কারণে তোমার কল্যাণের জন্য সর্বাপেক্ষা গোপনীয় কথা বলিতেছি শোন। গীতা ১৮/৬৪
(এখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে তার প্রিয় বলেছে)
★আবার কোথাও বলেছে-
আমি সর্বভূতে সমান; অতএব আমার দ্বেষ্য বা প্রিয় নাই। ভাবার্থ- সকলকে আমি সমান দেখি, বিশেষ কাহারও প্রতি আমার বিদ্বেষ নাই, আমার প্রিয় বা অপ্রিয় কেহ নাই। যাঁহারা ভক্তির সহিত আমার অর্চনা করেন, আমি তাঁহার সহিত থাকি এবং তাঁহারাও আমার সহিত থাকে। গীতা-৯/২৯
(এখানে সবাই তাঁর কাছে সমান, কেহ তাঁর প্রিয় বা অপ্রিয় নেই। সবাইকে তিনি সমান দেখেন।)]
★[এরকম আরো বলেছে-
তুমি সর্বধর্ম পরিত্যাগ করিয়া একমাত্র আমারই আশ্রয় লও; আমি তোমাকে সর্বপাপ হইতে মুক্তি করিবো। গীতাঃ ১৮/৬৬
(এখানে "আমি" শব্দ উচ্চারিত করিয়া তাঁহার শরণ নিতে বলেছেন।)
★আবার কোথাও বলেছেন-
হে অর্জুন! তুমি তাঁহার শরণ লও। তবেই তাঁহার দয়ায় তুমি পরম শান্তি ও শাশ্বত স্থান লাভ করিবে। গীতাঃ ১৮/৬২
(এখানে শ্রীকৃষ্ণ "তাঁহার" শব্দ উচ্চরণ করিয়া- তাঁহার (পরমব্রহ্মের) শরণ নিতে বলেছে, এবং তবেই অর্জুন শান্তি ও শাশ্বত স্থান লাভ করিবে।)]
»»» গীতায় অর্জুনের সাথে শ্রীকৃষ্ণের এরুপ দু'ই-রকম কথোপকথন দেখে অনেকের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ারি কথা যে, শ্রীকৃষ্ণ কে ছিলেন? কেনই বা তিনি দু'ই রকম কথা বলিতেছেন?
»» গীতায় কখনো বলিতেছেন- শ্রীকৃষ্ণের বহুবার জন্মগ্রহন করেছেন! আবার বলিতেছেন তার জন্ম ও মৃত্যু নেই?
»» আবার কখনো বলিতেছেন- হে অর্জুন! তুমি আমার প্রিয়! আবার বলিতেছেন- তাঁহার কেহ প্রিয় নাই আবার অপ্রিয় নাই! সকলকেই তিনি সমান দেখন?
»» আবার কোথাও বলিতেছেন- হে অর্জুন! তুমি আমার শরণ লও! আবার কোথাও বলিতেছেন- তুমি তাঁহার (পরমব্রহ্মের) সরণ নেওয়ার কথা বলিতেছেন?
»»» আসুন, গীতা থেকে এর সমাধান খুঁজি!
»» গীতায় অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে বলিতেছেন-
★ হে প্রভু! যদি তুমি মনে কর যে সেই অদ্ভুত রূপ দেখিতে আমি সমর্থ, তাহা হইলে তুমি আমাকে তোমার নিত্যরূপ দেখাও, কারণ তুমি যোগেশ্বর। গীতাঃ ১১/৪
»» শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলিতেছে-
★হে অর্জুন! তোমার এই সামান্য চক্ষু দ্বারা তুমি আমায় দেখিতে পারিবে না; তাই তোমাকে দিব্য চক্ষু প্রদান করিতেছি, তদদ্বারা তুমি আমার যোগৈশ্বর্য রুপ দেখ। গীতাঃ ১১/৮
»» সঞ্জয় ধৃতরাষ্টকে বলিতেছে-
★ ব্যাসদেবের প্রসাদে যোগরূপ পরম গুহ্য জ্ঞান সাক্ষাৎ যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাক্য আমি নিজ কর্ণে শ্রবন করিয়াছি। গীতাঃ ১৮/৭৫
★ যেখানে শ্রেষ্ঠ যোগী শ্রীকৃষ্ণের ন্যায় উপদেষ্টা আছেন, আর মহাবীর অর্জুন আছেন, সেখানে শ্রী,বিজয়, ঐশ্বর্য, নীকি বিরাজ করিতেছে। ইহাই আমার মত। গীতাঃ ১৮/৭৮
(এখান থেকে বুঝা যায় যে- অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে যোগেশ্বর বললো আর শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং যোগেশ্বর বলে স্বীকার করলো এবং সঞ্জয় শ্রীকৃষ্ণকে যোগেশ্বর বলে সম্মধন করলেন।
এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় শ্রীকৃষ্ণ একজন যোগেশ্বর বা যোগী পুরুষ ছিলেন)
»»» এখন তাহলে এবার দেখি গীতায় "আমি" কে ছিলেন!
»»আমরা মহাভারতের অশ্বমেধিক পর্বের ১৬ অধ্যায় ১৩ নং শ্লোক পড়ে জানতে পারি যে-
"পরম হি ব্রহ্ম কথিতং যোগ যুক্তেন তন্ময়,
ইতিহাসং তু বক্ষামি তস্নবন্নথৈ পুরাতনম"।।
(মহাঃ অশ্বঃ পর্ব- ১৬/১৩)
বঙ্গানুবাদঃ- সে সময় আমি যোগযুক্ত হয়ে পরমাত্মাতত্ত্বের বর্ননা বিবর্তন করেছিলাম। এখন সেই বিষয় এর জ্ঞান করানোর জন্য আমি এক প্রাচিন ইতিহাস বর্ণনা করছি।
(এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত হয়ে অর্জুনকে গীতা দান করেছেন। কারন, শ্রীকৃষ্ণ একজন যোগেশ্বর ছিলেন।)
»»» কিন্তু গীতা পাঠ কালে আমারা দেখতে পারি যে, শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা যোগযুক্ত অবস্থায় গীতা দান করে নাই। শ্রীকৃষ্ণ কখনো যোগযুক্ত অবস্থায় গীতা দান করেছেন আবার যোগ মুক্ত অবস্থায় গীতা দান করেন। যখন শ্রীকৃষ্ণ যোগমুক্ত ছিলেন তখন সেটা শ্রীকৃষ্ণের বানী ছিল। আর যখন শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত ছিল, তখন সেটা শ্রীকৃষ্ণের মাধ্যমে পরমব্রহ্মের বানী ছিল। (মনে রাখতে হবে শ্রীকৃষ্ণ যোগেশ্বর ছিলেন)।
»»» দেখুন, এ বিষয়ে শ্রীকৃষ্ণ গীতায় কি বলেছে-
★ তিনি সর্ব জীবের অন্তরে আছেন এবং বাহিরে আছেন। তিনি স্থাবর ও জঙ্গম রুপে আছেন। তিনি সূক্ষ হইতেও সূক্ষতর, তিনি কাছে থাকিয়াও দূরেবলে মনে হয়। গীতাঃ ১৩/১৬
★ হে অর্জুন! ঈশ্বর সকলের দেহে অবস্থান করিয়া যন্ত্রের ন্যায় তাঁহার কার্য চালাইতেছেন।
গীতাঃ ১৮/৬১
»»» এই যোগযুক্ত অবস্থা বলতে শ্রীকৃষ্ণ গীতায় কি বলেছে দেখুন-
★ হে ধনঞ্জয়, ইন্দ্রিয়-সঙ্গ ত্যাগ করিয়া সিদ্ধি ও অসিদ্ধিতে সমভাপন্ন হইয়া, যোগে ("আমি" "আমার" ইত্যাদি বোধ রহিত অবস্থায়) অবস্থিত হইয়া কর্ম কর; সমত্বই যোগ বলিয়া উক্ত হয়।
গীতাঃ ২/৪৮
[ব্যখাঃ তুমি যোগস্থ হইয়া কর্ম কর,
যোগস্থ— যোগে অবস্থিত; যোগ অর্থাৎ মিলন!
“যোগশ্চিত্তবৃত্তি-নিরোধঃ” চিৎ- আত্মা, তদবৃত্তি অর্থাৎ প্রাণের গতি; এই গতির নিরোধাবস্থাই স্থিরাবস্থারূপ যোগ; অথাৎ প্রাণপানের গতিরূপ চিত্তের বৃত্তি স্বতঃ নিবৃত্ত হইয়া আত্মা (শ্রীকৃষ্ণ) পরমাত্মার (পরমব্রহ্ম) মিলনরূপ স্থিতির অবস্থাই যোগ। এ অবস্থায় "আমি" "আমার" বোধ থাকে না; এই অহংজ্ঞানরহিত স্থির সাম্যাবস্থারূপ সমত্বই যোগ বলিয়া উক্ত হয়।]
(যোগ অবস্থায় "আমি" "আমার" ইত্যাদি বোধ রহিত অবস্থা সম্পর্কে জানতে নিচের ৩ ও ৪ নং ছবিতে ব্যখা দেখুন )
»»এই সম্পর্কে পবিত্র বেদ মন্ত্রে কি বলা হয়েছে দেখুন-
★ "যদগ্নে স্যামহং ত্বং বা ঘাস্যা অহমৃ। স্যুষ্টে সত্যা ইহাশিষঃ"।।
(ঋগ্বেদঃ- ৮।৪৪।২৩।)
বঙ্গানুবাদঃ- হে প্রকাশ স্বরুপ পরমাত্মা্। যখন আমি তুমি হইয়া যাই বা তুমি আমি হইয়া যাও, তখনই এ সংসারে তোমার সব করুণা সার্থক হয়।
এখান থেকে বুঝতে পারি যে, যোগযুক্ত অবস্থায় "আমি" "আমার" অহম্ বোধ রহিত অবস্থা তা পরমাত্মার বানী! (গীতায় ৮/৩ বলা আছে, পরমাত্মাকেই ব্রহ্ম বলে ) । মোটেও প্রকাশকারীর বানী নয়।
(প্রমান স্বরুপ গীতার ১৮ অধ্যায় ৬১ নং শ্লোক দৃষ্টান্ত)
এরুপ অহং ভাবে গীতায় শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত অবস্থায় "আমি" "আমার" "আমাকে" শব্দের উচ্চারণ করেছে। কারন শ্রীকৃষ্ণ একজন যোগেশ্বর ছিলেন।
অনুরুপ ভাবে "অহম্' বোধে" যোগযুক্ত অবস্থায় আরো অনেকেই "আমি" "আমাকে" শব্দ উচ্চারণ করেছে।
উদাহরন স্বরুপ বলা যায় যে-
(১) লোকনাথ ব্রহ্মচারীও "আমি" "আমাকে" শব্দের উচ্চারণ করেছেন।
রণে বনে জলে জঙ্গলে, যেখানেই বিপদে পরিবে, "আমাকে" স্বরণ করিবে, "আমিই" রক্ষা করিবো।
(২) ছান্দোগ্য উপনিষদে আমরা তেখতে পাই যে, গুরু শিষ্যকে অহংভাবে "আমি" "আমার" বোধে উপদেশ দেয়ার প্রমাণ পেয়ে থাকি।
'অহম্' দৃষ্টিতে উপদেশ- আমিই অর্ধভাগে, আমিই ঊর্ধ্বে, আমি পশ্চাতে, আমি সম্মুখে, আমি দক্ষণে, আমিই বামে- আমিই এই সমস্ত।
(ছান্দোগ্য উপঃ ৭।২৫।১)
(৩) শ্রীরামকৃষ্ণ পরমাহংসদেব "আমি" শব্দেরউচ্চারন করেছেন-
"সত্যে নারায়ন, ত্রেতাতে রাম, দ্বাপরে কৃষ্ণ, কলিতে আমিই রামকৃষ্ণ"
(৪) অনুরুপ ভাবে আর্চার্য শংকরও নাকি (অহম্ বোধে) "আমি" শব্দের উচ্চারণ করেছেন।
তাহলে কি - শ্রীকৃষ্ণ, লোকনাথ ব্রহ্মচারী, শ্রীরামকৃষ্ণ, শংকরাচার্য এরা সকলেই পরমেশ্বর???
দেখি বহু ঈশ্বর সম্পর্কে পবিত্র বেদে কি বলেছে-
"ন দ্বিতীয় ন তৃতীয় শ্চতুর্থো নাপ্যুচ্যতে।
ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠ সপ্তমো নাপ্যুচ্যতে।
নাষ্টমো ন নবমো দশমো নাপ্যুচ্যতে।
য এতং দেবমেক বৃতং বেদ"।।
(অথর্ব্ববেদঃ ১৩।৪।২।) ও (১৬।১৭।১৮।)
বঙ্গানুবাদঃ পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম্, নবম বা দশম ঈশ্বর বলিয়া অভিহিত হয় না। যিনি তাঁহাকে শুধু এক বলিয়া জানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন।
»»শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন-
★"অক্ষরং ব্রহ্ম পরমং"
অর্থাৎ পরমাত্মাকেই ব্রহ্ম বলে। (গীতা ৮/৩)
»« তাহলে এখান থেকে এটা স্পষ্ট যে, যোগযুক্ত অবস্থায় যোগীপুরুষগণ (অহম্ বোধে) "আমি" "আমাকে" ইত্যাদি শব্দের উচ্চরণ করে। প্রকৃত পক্ষে এটা ("আমি" "আমার") শব্দ ঈশ্বরের বাণী!!! যোগীদের বানী নয়।
আত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন ঘটিয়েছেন যাঁরা, তাঁরা সবাই নিজেকে আমিই বলেছেন।
তাহলে ঐ আমি কে? যিনি আমি বলেছেন আসলেই তিনি নিজেই কি ঈশ্বর?
তদেজতি তন্নৈজতি তদ্ তদ্বন্তিকে। তদন্তরস্য সর্বদ্য তদু সর্বস্যাস্য বাহ্যতঃ।। ঈশাবাস্যোপনিষদ্-৫
অর্থঃ- তিনি চলেন এবং চলেনও না। তিনি বহুদুরে আবার অতি নিকটেও, তিনি সমস্ত জগতের অন্তরে পরিপূর্ণ আবার বাহিরেও পরিপূর্ণ।
জ্ঞানীদের জন্য তিনি পরমাত্মা অন্তরে বাস আর অজ্ঞানীদের জন্য দূরে থেকেও বহু দূরে।
অজ্ঞানীরা ঈশ্বরের স্বক্ষমতার বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে আকারেই খুঁজে, ফলশ্রুতিতে তারা জন্ম মৃত্যুর আবর্তে ঘুরতে থাকে আর জ্ঞানীরা ঈশ্বের শব্দ ব্রহ্ম ও৩ম্ এর সাধনা করে আত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন ঘঠিয়ে পরম সুখ লাভ করে।
স বেদৈতৎ পরমং ব্রহ্ম ধাম যত্র বিশ্বং নিহিতং ভাতি শুভ্রম্।
উপাসতে পুরুষং যে হ্যকামাস্তে শুক্রমেতদতিবর্তন্তি ধীরাঃ।।
মুন্ডকোপনিষদ
-৩য় মুণ্ডক/২য়/১
অর্থঃ- পরমাত্মার ধ্যানে রত নিষ্কামভাব যুক্ত সাধক প্রকাশময় পরব্রহ্ম পরমাত্মাকে উপলব্দি করেন, যার মধ্যে সম্পূর্নজগত প্রতীত হয়। সেই নিষ্কামভাবযুক্ত সাধকই বুদ্ধিমান, যাদের রজোবীর্যময় শরীর অতিক্রম করে আর পুনঃজন্ম হয়না।
অর্থাৎ তাঁহারা মোক্ষ লাভ করেন, বা ব্রহ্ম লাভ করেন।।
এখন দেখি ত্রিশঙ্ক মুনি ব্রহ্ম লাভের পর কি বলেছিলেনঃ-
অহং বৃক্ষস্য রেরিবা। কীর্তিঃ পৃষ্ঠং গিরেরিব। ঊর্ধ্বপবিত্রো বাজিনীব স্বমৃতমস্মি। দ্রবিণঁ সবর্চসম্। সুমেধা অমৃতোক্ষিতঃ। ইতি
ত্রিশঙ্কোর্বেদানুবচনম্।
তৈত্তিরীয়োপনিষদ- শিক্ষা বল্লী-দশম অনুবাক-১।।
অনুবাদঃ-
ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করার পর ত্রিশঙ্ক মুনি বলেছিলেন, আমি সংসাররূপী বৃক্ষের প্রেরয়িতা। ব্রহ্মে পরিনত হয়ে আমি সমস্ত বিশ্বের সাথে একাত্ম হতে পেরেছি।
গিরিপৃষ্ঠের, মতো আমার কীর্তি উচুঁ। ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত হবার দরুন আমার কীর্তি ব্রহ্মের মতো মহান ও অনন্ত। আমি ব্রহ্মের সাথে একাত্ম হতে পেরেছি কাজেই আমি পবিত্র। সূর্যে যেমন উত্তম অমৃত আছে আমিও সেরূপ উত্তম অমৃত। আমিই সেই ধনরূপ আত্মতত্ব শ্রেষ্ট মেধাযুক্ত। আমি অমৃত ও অক্ষয়।
ছান্দোগ্য উপনিষদে সনৎকুমার
তাঁর শিষ্য নারদকে বলেছেন-
স এবাধস্তাৎ স উপরিষ্টাৎ স পশ্চাৎ স পুরস্তাৎ স দক্ষিনতঃ স উত্তরতঃ স এবেদং সর্বমিতি। অথাতোহহঙ্কারাদেশ
এবাহমেবাধস্তাদহমুপরিষ্টাদহং
পশ্চাদহং পুরস্তাদহং
দক্ষিণতোহহমুত্তরতোহহমেবেদং
সর্বমিতি। (ছান্দোগ্যোপনিষদ ৭/২৫/১)
অর্থ: সেই ভুমাই নিম্নে, তিনি উর্ধ্বে, তিনিই পশ্চাতে, তিনিই সম্মূখে, তিনিই দক্ষিনে, তিনিই বামে- তিনিই এই সমস্ত কিছু। এখন "অহম" দৃষ্টিতে উপদেশ- আমিই অধোভাগে, আমি উর্ধ্বে, আমি পশ্চাতে, আমি সম্মূখে, আমি দক্ষিণে, আমি উত্তরে-আমিই এই সমস্ত।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ