শ্রী কৃষ্ণের মামা কংস রাজা ছিলেন , মানে কংস ক্ষত্রীয় বর্ণজাত ছিলেন । যদি তাই হয় তাহলে “আয়ান ঘোষ” এর স্ত্রী, শ্রী কৃষ্ণের প্রেমিকা, রাধা কিভাবে শ্রী কৃষ্ণের মামী হন ? কারণ “আয়ান ঘোষ” ছিলেন গোপ মানে গোয়ালা । আর অন্যদিকে “শ্রী রাধিকা” জমিদার কন্যা হলেও ছিলেন গোপ বংশ জাত মানে গোপিনী ছিলেন । এই সমস্যার সমধান করতে হলে আমাদের শ্রী কৃষ্ণের জন্ম ও শৈশব সম্বন্ধে জানতে হবে । শ্রী কৃষ্ণের জন্মদাতা পিতার নাম বাসুদেব,যিনি গোষ্ঠপতি(সামান্ত প্রভু) ছিলেন । শ্রী কৃষ্ণের মাতার নাম দেবকী,যে কিনা রাজা কংসের কাকাতো বোন ছিলেন । কিন্তু কংসের হাত থেকে শ্রী কৃষ্ণ কে বাঁচাতে পিতা-মাতা মিলে শিশু কৃষ্ণকে “নন্দ ঘোষ” ও তার স্ত্রী “যশোদা” এর নিকট রেখে আসেন । সেই থেকে শ্রী কৃষ্ণ “নন্দ ঘোষ” ও তাঁর স্ত্রী “যশোদা” কে বাবা-মা হিসাবে ডাকতে থাকেন । এবং “নন্দ ঘোষ” ও “যশোদা” ছিলেন গোপ বা গোয়ালা । আর শ্রী কৃষ্ণের পালক মাতা যশোদার ভাই “আয়ান ঘোষ” । এই সূত্রেই শ্রী রাধিকা, শ্রী কৃষ্ণের মামী । এখানেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে “রাধিকা” কোনভাবেই শ্রী কৃষ্ণের আপন মামী নন । অন্যদিকে বড়ূ চন্ডীদাস বা অন্য কোন কবি বা শ্রী কৃষ্ণ গবেষক এটা পরিষ্কার করে বলেননি যে মাতা যশোদার কেমন ভাই “আয়ান ঘোষ” । শ্রী রাধিকার সাথে কৃষ্ণের পরিণত বয়সে প্রথম দেখা হয় “কালিয়া বধ” এর পরে । তখন কৃষ্ণ শ্রী রাধিকাকে চিনতে পারেন নি মামী হিসাবে। আর সেকারণেই “শ্রী কৃষ্ণ” তার বন্ধু “সুবল” কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন “ওই নারীটি কে” ? তার মানে এটা পরিষ্কার “আয়ান” দাদা “যশোদা” মাঈয়ের খুব একটা কাছের সম্পর্কের কোন ভাই নন । যদি আপন এমনকি কাজিন কুজিনও হতেন তাহলে তাদের দুই পরিবারের মধ্যে যাওয়া-আসা থাকত , আর সেটা থাকলে শ্রী রাধিকাকে চিনতে কৃষ্ণের কোন কষ্ট হত না । তাহলে আমরা বলতেই পারি “আয়ান ঘোষ” সম্পর্কে “যশোদা” এর রক্ত বা বৈবাহিক বা কোন সম্পর্কেই ভাই হন না । হয়ত একই এলাকায় বসবাস বা একই গোত্রভুক্ত হওয়ার কারণে আয়ান যশোদাকে দিদি বলে ডাকত ।উপযুক্ত প্রমাণে এটাই প্রমাণিত হয় শ্রী কৃষ্ণের জীবনী তে শ্রী রাধা নামে কোনো নারীর সাথে সম্পর্ক ছিল না। মামির সম্পর্ক তো দূরে থাক, রাধা নামে কোনো গোপী শ্রী কৃষ্ণের সমগ্র জীবনী তে ছিলো না। এই রাধা উৎপত্তি এবং তার সাথে মামির সম্পর্ক ও অবৈধ্য সম্পর্ক সৃষ্টিকার হলেন পূর্বের কিছু “রসময় সাহিত্যিক চরিত্রের বৈষ্ণব মানুষ ও তাদের তৈরী কিছু কাব্য”। নিচের অংশ গুলি- ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের “কৃষ্ণচরিত্র” গ্রন্থের লেখকের ভাবদৃষ্টি অনুসারে শ্রী রাধা শব্দের ব্যাখ্য সংগ্রহ করে তুলে ধরলাম।
ভাগবতের এই “রাসপঞ্চাধ্যয়ের” মধ্যে ‘রাধা’ নাম কোথাও পাওয়া যায় না।কিন্তু বৈষ্ণবদের অস্থিমজ্জার ভিতর রাধা নাম প্রবিষ্ট। তাঁহারা টীকাটিপ্পনীর ভিতর পুনঃ পুনঃ রাধাপ্রসঙ্গ উত্থাপিত করেছেন, কিন্তু মূলে কোথাও রাধার নাম নাই। গোপীদিগের অনুরাগাধিক্যজনিত ঈর্ষার প্রমাণ স্বরূপ কবি লিখিয়াছেন যে, তাহারা পদচিহ্ন দেখিয়া অনুমান করিয়াছিল যে, কোন একজন গোপীকে লইয়া কৃষ্ণ বিজনে প্রবেশ করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাও গোপীদিগের ঈর্ষাজনিত ভ্রমমাত্র। শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্হিত হইলেন এই কথাই আছে, কাহাকেও লইয়া অন্তর্হিত হইলেন, এমন কথা নাই এবং রাধার নামগন্ধও নাই।“রাসপঞ্চাধ্যায়ে” কেন, সমস্ত ভাগবতে কোথাও রাধার নাম নাই। ভাগবতে কেন, বিষ্ণুপুরাণে, হরিবংশে বা মহাভারতে কোথাও রাধার নাম নাই। অথচ এখনকার কৃষ্ণ উপাসনার প্রধান অঙ্গ রাধা। রাধা ভিন্ন এখন কৃষ্ণনাম নাই। রাধা ভিন্ন এখন কৃষ্ণের মন্দির নাই বা মূর্তি নাই। বৈষ্ণবদিগের অনেক রচনায় কৃষ্ণের অপেক্ষাও রাধা প্রাধান্যলাভ করিয়াছেন যদিও মহাভারতে, হরিবংশে, বিষ্ণুপুরাণে বা ভাগবতে ‘রাধা’ নাই। উপনিষদ সকলের মধ্যে একখানির নাম গোপালতাপনী। কৃষ্ণের গোপমূর্তির উপাসনা ইহার বিষয়। উহার রচনা দেখিয়া বোধ হয় যে, অধিকাংশ উপনিষদ্ অপেক্ষা উহা অনেক আধুনিক ও নবীন। ইহাতে কৃষ্ণ যে গোপগোপীপরিবৃত তাহা বলা হইয়াছে। কিন্তু ইহাতে গোপগোপীর যে অর্থ করা হইয়াছে, তাহা প্রচলিত অর্থ হইতে ভিন্ন। গোপী অর্থে “অবিদ্যা কলা”। টীকাকার বলেন,- “গোপায়ন্তীতি গোপ্যঃ পালনশক্তয়ঃ।” আর গোপীজনবল্লভ অর্থে “গোপীনাং পালনশক্তীনাং জনঃ সমূহঃ তদ্বাচ্যা অবিদ্যাঃ কলাশ্চ তাসাং বল্লভঃ স্বামী প্রেরক ঈশ্বরঃ।” উপনিষদে এইরূপ গোপীর অর্থ আছে। কিন্তু রাসলীলার কোন কথাই এখনে নাই। রাধার নামমাত্র নাই। এক জন প্রধানা গোপীর কথা কাছে, কিন্তু তিনি রাধা নহেন, তাঁহার নাম গান্ধর্বী। তবে এ ‘রাধা’ আসিলেন কোথা হইতে?
রাধাকে প্রথমে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে দেখিতে পাই। উইল্সন্ সাহেবর মতে ইহা পুরাণগণের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ বলিয়াই বোধ হয়। ইহার রচনাপ্রণালী আজিকালিকার ভট্টাচার্যদিগের রচনার মত। ইহাতে ষষ্ঠী মনসারও কথা। আছে। আদিম ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ বিলোপপ্রাপ্ত হইয়াছে। যাহা এখন আছে, তাহাতে এক নূতন দেবতত্ত্ব সংস্থাপিত হইয়াছে। পূর্বাবধিতে প্রসিদ্ধ যে, কৃষ্ণ বিষ্ণুর অবতার কিন্তু এখানে পুরানকার বলেন, কৃষ্ণ বিষ্ণুর অবতার হওয়া দূরে থাকুক, কৃষ্ণই বিষ্ণুকে সৃষ্টি করিয়াছেন। বিষ্ণু থাকেন বৈকুণ্ঠে, কৃষ্ণ থাকেন গোলোকে রাসমণ্ডলে,—বৈকুণ্ঠ তাহার অনেক নীচে। ইনি কেবল বিষ্ণুকে নহে, ব্রহ্মা, রুদ্র, লক্ষ্মী, দুর্গা প্রভৃতি সমস্ত দেবদেবী এবং জীবগণকে সৃষ্টি করিয়াছেন। ইঁহার বাসস্থান গোলকধামে, বলিয়াছি। তথায় গো, গোপ ও গোপীগণ বাস করে। তাহারা দেবদেবীর উপর। যে গুলি সবটায় মিথ্যা ছাড়া আর কিছু না। সেই গোলোকধামের অধিষ্ঠাত্রী কৃষ্ণবিলাসিনী দেবীই রাধা। রাধার আগে রাসমণ্ডল, রাসমণ্ডলে ইনি রাধাকে সৃষ্টি করেন। রাসের রা, এবং ধাতুর ধা, ইহাতে রাধা নাম নিষ্পন্ন করিয়াছেন। সেই গোপগোপীর বাসস্থান রাধাধিষ্ঠিত গোলোকধাম পূর্বক বিদিগের বর্ণিত বৃন্দাবনের বজনিশ নকল। এখনকার কৃষ্ণযাত্রায় যেমন চন্দ্রাবলী নামে রাধার প্রতিযোগিনী গোপী আছে, গোলকধামেও সেইরূপ বিরজা নাম্নী রাধার প্রতিযোগিনী গোপী ছিল। মানভঞ্জন যাত্রায় যেমন যাত্রাওয়ালারা কৃষ্ণকে চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে লইয়া যায়, ইনিও তেমনি কৃষ্ণকে গোলোকধামে বিরজার কুঞ্জে লইয়া গিয়াছেন। তাহাতে যাত্রার রাধিকার যেমন ঈর্ষা ও কোপ উপস্থিত হয়, ব্রহ্মবৈবর্তের রাধিকারও সেইরূপ ঈর্ষা ও কোপ উপস্থিত হইয়াছিল। তাহাতে আর একটা মহা গোলযোগ ঘটিয়া যায়। রাধিকা কৃষ্ণকে বিরজার মন্দিরে ধরিবার জন্য রথে চড়িয়া বিরজার মন্দিরে গিয়া উপস্থিত। সেখানে বিরজার দ্বারবান্ ছিলেন শ্রীদামা বা শ্রীদাম। শ্রীদামা রাধিকাকে দ্বার ছাড়িয়া দিল না। এ দিকে রাধিকার ভয়ে বিরজা গলিয়া জল হইয়া নদীরূপ ধারণ করিলেন। শ্রীকৃষ্ণ তাহাতে দুঃখিত হইয়া তাঁহাকে পুনর্জীবন এবং পূর্ব রূপ প্রদান করিলেন। বিরজা গোলোকনাথের সহিত অবিরত আনন্দানুভব করিতে লাগিল। ক্রমশঃ তাহার সাতটি পুত্র জন্মিল। কিন্তু পুত্রগণ আনন্দানুভবের বিঘ্ন, এ জন্য মাতা তাহাদিগকে অভিশপ্ত করিলেন, তাঁহারা অনেক ভর্ৎসনা করিলেন, তাঁহারা সাত সমুদ্র হইয়া রহিলেন। এ দিকে রাধা, কৃষ্ণবিরজা-বৃত্তান্ত জানিতে পারিয়া, কৃষ্ণকে অনেক ভর্ৎসনা করিলেন, এবং অভিশাপ প্রদান করিলেন, যে তুমি গিয়া পৃথিবীতে বাস কর। এ দিকে কৃষ্ণকিঙ্কর শ্রীদামা রাধার এই দুর্ব্যবহারে অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহাকে ভর্ৎসনা করিলেন। শুনিয়া রাধা শ্রীদামাকে তিরস্কার করিয়া শাপ দিলেন, তুমি গিয়া অসূর হইয়া জন্মগ্রহণ কর। শ্রীদামাও রাধাকে শাপ দিলেন, তুমিও গিয়া পৃথিবীতে মানুষী হইয়া পরপত্নী এবং কলঙ্কিনী হইয়া খ্যাত হইবে।
শেষ দুই জনেই কৃষ্ণের নিকট আসিয়া কাঁদিয়া পড়িলেন। শ্রীদামাকে কৃষ্ণ বর দিয়া বলিলেন যে, তুমি অসূরেশ্বর হইবে, যুদ্ধে তোমাকে কেহ পরাভব করিতে পারিবে না। শেষে শঙ্করশূলস্পর্শে মুক্ত হইবে। রাধাকেও আশ্বাসিত করিয়া বলিলেন, ‘তুমি যাও; আমিও যাইতেছি।’ শেষে পৃথিবীর ভারাবতরণ জন্য, তিনি পৃথিবীতে আসিয়া অবতীর্ণ হইলেন।
রাসে সম্ভূয় গোলোকে, সা দধাব হরেঃ পুরঃ।
তেন রাধা সমাখ্যাতা পুরাবিদ্ভির্দ্বিজোত্তম ||-ব্রহ্মখণ্ডে ৫ অধ্যায়ঃ।
কিন্তু আবার স্থানান্তরে,-
রাকারো দানবাচকঃ।
ধা নির্বাণঞ্চ তদ্দাত্রী তেন রাধা প্রকির্তিতা ||-শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডে ২৩ অধ্যায়ঃ। এ সকল কথা নূতন হইলেও, এবং সর্বশেষে প্রচারিত হইলেও এই ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ বাঙ্গালার বৈষ্ণবধর্মের উপর অতিশয় আধিপত্য স্থাপন করিয়াছে। জয়দেবাদি বাঙ্গালী বৈষ্ণবকবিগণ, বাঙ্গালার জাতীয় সঙ্গীত, বাঙ্গালার যাত্রা মহোৎসবাদির মূল ব্রহ্মবৈবর্তে। কিন্তু আবার স্থানান্তরে ব্রহ্মবৈবর্তের মতে তিনি বিধিবিধানানুসারে কৃষ্ণের বিবাহিতা পত্নী। সেই বিবাহবৃত্তান্তটি সবিস্তারে বলিতেছি, বলিবার আগে গীতগোবিন্দের প্রথম কবিতাটা পাঠকের স্মরণ করিয়া দিই।
“মেঘৈর্মেদুরমম্বরং বনভুবঃ শ্যামাস্তমালদ্রুমৈ—
র্নক্তং ভীরুরয়ং ত্বমেব তদিমং রাধে গৃহং প্রাপয়।
ইত্থং নন্দনিদেশতশ্চলিতয়োঃ প্রত্যধ্বকুঞ্জদ্রুমং
রাধামাধবয়োর্জয়ন্তি যমুনাকূলে রহঃকেলয়ঃ ||
অর্থ। হে রাধে! আকাশ মেঘে স্নিগ্ধ হইয়াছে, তমাল দ্রুম সকলে বনভূমি অন্ধকার হইয়াছে, অতএব তুমিই ইহাকে গৃহে লইয়া যাও, নন্দ এইরূপ আদেশ করায়, পথিস্থ কুঞ্জদ্রুমাভিমুখে চলিত রাধামাধবের যমুনাকূলে বিজনকেলি সকলের জয় হউক।
এ কথার অর্থ কি? টীকাকার কি অনুবাদকার কেহই বিশদ করিয়া বুঝাইতে পারেন না। একজন অনুবাদকার বলিয়াছেন, “গীতগোবিন্দের প্রথম শ্লোকটি কিছু অস্পষ্ট; কবি নায়ক-নায়িকার কোন্ অবস্থা মনে করিয়া লিখিয়াছেন, ঠিক বলা যায় না। টীকাকারের মত, ইহা রাধিকাসখীর উক্তি। তাহাতে ভাব এক প্রকার মধুর হয় বটে, কিন্তু শব্দার্থের কিছু অসঙ্গতি ঘটে।” বস্তুতঃ ইহা রাধিকাসখীর উক্তি নহে; জয়দেব গোস্বামী ব্রহ্মবৈবর্ত-লিখিত এই বিবাহের সূচনা স্মরণ করিয়াই এ শ্লোকটি রচনা করিয়াছেন। এক্ষণে আমি (বঙ্কিমচন্দ্র) ঠিক এই কথাই ব্রহ্মবৈবর্ত হইতে উদ্ধৃত করিতেছি; তবে বক্তব্য এই যে, রাধা শ্রীদামশাপানুসারে শ্রীকৃষ্ণের কয় বৎসর আগে পৃথিবীতে আসিতে বাধ্য হইয়াছিলেন বলিয়া, রাধিকা কৃষ্ণের অপেক্ষা অনেক বড় ছিলেন। তিনি যখন যুবতী, শ্রীকৃষ্ণ তখন শিশু।
“একদা কৃষ্ণসহিতো নন্দো বৃন্দাবনং যযৌ।
তত্রোপবনভাণ্ডীরে চারয়ামাস গোকুলম্ || ১ ||
সরঃসুস্বাদুতোয়ঞ্চ পায়য়ামাস তং পপৌ।
উবাস বটমূলে চ বালং কৃত্বা স্ববক্ষসি || ২ ||
এতস্মিন্নন্তরে কৃষ্ণো মায়াবালকবিগ্রহঃ।
চকার মায়য়াকস্মান্মেঘাচ্ছন্নং নভো মুনে || ৩ ||
মেঘাবৃতং নভো দৃষ্টা শ্যামলং কাননান্তরম্।
ঝঞ্ঝাবাতং মেঘশব্দং বজ্রশব্দঞ্চ দারুণম্ || ৪ ||
বৃষ্টিধারামতিস্থূলাং কম্পমানাংশ্চ পাদপান্।
দৃষ্ট্বৈং পতিতস্কন্ধান্ নন্দো ভয়মবাপ হ || ৫ ||
কথং যাস্যামি গোবৎসং বিহায় স্বাশ্রমং প্রতি।
গৃহং যদি ন যাস্যামি ভবিতা বালকস্য কিম্ || ৬ ||
এবং নন্দে প্রবদতি রুরোদ শ্রীহরিস্তদা।
মায়াভিয়া ভয়েভ্যশ্চ পিতুঃ কণ্ঠং দধার সঃ || ৭ ||
এতস্মিন্নন্তরে রাধা জগাম কৃষ্ণসন্নিধিম্।”
--- ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণম্, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডে, ১৫ অধ্যায়ঃ।
অর্থ। “একদা কৃষ্ণসহিত নন্দ বৃন্দাবনে গিয়াছিলেন। তথাকার ভাণ্ডীরবনে গোগণকে চরাইতেছিলেন। সরোবরে স্বাদু জল তাহাদিগকে পান করাইলেন, এবং পান করিলেন। এবং বালককে বক্ষে লইয়া বটমূলে বসিলেন। হে মুনে! তার পর মায়াতে শিশুশরীরধারণকারী কৃষ্ণ অকস্মাৎ মায়ার দ্বারা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন করিলেন, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং কাননান্তর শ্যামল; ঝঞ্ঝাবাত, মেঘশব্দ, দারুণ বজ্রশব্দ, অতিস্থূল বৃষ্টিধারা, এবং বৃক্ষসকল কম্পমান হইয়া পতিতস্কন্ধ হইতেছে, দেখিয়া নন্দ ভয় পাইলেন। ‘গোবৎস ছাড়িয়া কিরূপেই বা আপনার আশ্রমে যাই, যদি গৃহে না যাই, তবে এই বালকেরই বা কি হইবে,’ নন্দ এইরূপ বলিতেছিলেন, শ্রীহরি তখন কাঁদিতে লাগিলেন; মায়াভয়ে ভীতযুক্ত হইয়া বাপের কণ্ঠ ধারণ করিলেন। এই সময়ে রাধা কৃষ্ণের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন।”
রাধার অপূর্ব লাবণ্য দেখিয়া নন্দ বিস্মিত হইলেন, তিনি রাধাকে বলিলেন, “আমি গর্গমুখে জানিয়াছি, তুমি পদ্মারও অধিক হরির প্রিয়া; আর ইনি পরম নির্গুণ অচ্যুত মহাবিষ্ণু; তথাপি আমি মানব, বিষ্ণুমায়ায় মোহিত আছি। হে ভদ্রে! তোমার প্রাণনাথকে গ্রহণ কর; যথায় সুখী হও, যাও। পশ্চাৎ মনোরথ পূর্ণ করিয়া আমার পুত্র আমাকে দিও।”
এই বলিয়া নন্দ রাধাকে কৃষ্ণসমর্পণ করিলেন। রাধাও কৃষ্ণকে কোলে করিয়া লইয়া গেলেন। দূরে গেলে রাধা রাসমণ্ডল স্মরণ করিলেন, তখন মনোহর বিহারভূমি সৃষ্ট হইল। কৃষ্ণ সেইখানে নীত হইলে কিশোরমূর্তি ধারণ করিলেন। তিনি রাধাকে বলিলেন, “যদি গোলোকের কথা স্মরণ হয়, তবে যাহা স্বীকার করিয়াছি, তাহা পূর্ণ করিব।” তাঁহারা এরূপ প্রেমালাপে নিযুক্ত ছিলেন, এমন সময়ে ব্রহ্মা সেইখানে উপস্থিত হইলেন। তিনি রাধাকে অনেক স্তবস্তুতি করিলেন। পরিশেষে নিজে কন্যাকর্তা হইয়া, যথাবিহিত বেদবিধি অনুসারে রাধিকাকে কৃষ্ণে সম্প্রদান করিলেন। তাঁহাদিগকে বিবাহবন্ধনে বদ্ধ করিয়া তিনি অন্তর্হিত হইলেন। রায়াণের সঙ্গে রাধিকার যথাশাস্ত্র বিবাহ হইয়াছিল কি না, যদি হইয়া থাকে, তবে পূর্বে কি পরে হইয়াছিল, তাহা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে পাইলাম না অথচ পুরাণকারের দাবী করে রাধা রায়াণের স্ত্রী। রাধাকৃষ্ণের বিবাহের পর বিহারবর্ণন। বলা বাহুল্য যে, ব্রহ্মবৈবর্তের রাসলীলাও ঐরূপ, যেগুলি সবটাই বানানো।
· উপরক্ত মন্তব্য তথা “রাধা যখন যুবতী, শ্রীকৃষ্ণ তখন শিশু” ইহা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু না। কারণ হিসাব অনুসারে শ্রী কৃষ্ণজন্মাষ্টমী এর ১৫ দিন পর শুক্লপক্ষে রাধাজন্মাষ্টমী আসে। তাহলে এখনে রাধার বয়স < কৃষ্ণর বয়স। কিন্তু পুরাণকার বলছে উল্টোটা। তাই ব্রহ্মবৈবর্তকার পুরাণকার যে মিথ্যা এতে কোনো সন্দেহ নাই।
যাহা হউক, পাঠক দেখিলেন যে, ব্রহ্মবৈবর্তকার সম্পূর্ণ নূতন বৈষ্ণবধর্ম সৃষ্ট করিয়াছেন। সে বৈষ্ণবধর্মের নামগন্ধমাত্র বিষ্ণু বা ভাগবত বা অন্য পুরাণে নাই। রাধাই এই নূতন বৈষ্ণবধর্মের কেন্দ্রস্বরূপ। জয়দেব কবি, গীতগোবিন্দ কাব্যে এই নূতন বৈষ্ণবধর্মাবলম্বন করিয়াই গোবিন্দগীতি রচনা করিয়াছেন। তাঁহার দৃষ্টান্তানুসরণে বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস প্রভৃতি বাঙ্গালার বৈষ্ণবগণ কৃষ্ণসঙ্গীত রচনা করিয়াছেন। বলিতে গেলে, সকল কবি, সকল ঋষি, সকল পুরাণ, সকল শাস্ত্রের অপেক্ষা ব্রহ্মবৈবর্তকারই বাঙ্গালীর জীবনের উপর অধিকতর আধিপত্য বিস্তার করিয়াছেন।
· “শ্রী কৃষ্ণ কীর্ত্তনে” রচনা করে আবার চণ্ডীদাস এই আগুনে ঘি ঢ়েলেছেন। যদিও চণ্ডীদাসের লিখনী তে বহু বহু ভুল ও বানানো মন্তব্য পাওয়া যাই। আর এই মন্তব্যগুলো ভুল ছাড়া আর কিছু না। উদাহরণ স্বরূপ দেখুন চণ্ডীদাসের লিখা “শ্রী কৃষ্ণ কীর্ত্তনে” ২ টি মন্তব্য।– ·
শ্রীকৃষ্ণ কীর্ত্তন (চণ্ডীদাস বিরচিত): বৃন্দাবন খণ্ড পৃষ্ঠা-৮৯
“রাধে, তোমার এই নব যৌবনের সুষমা অহরহ আমার মনে জাগিতেছে। তাহাতে আবার তোমার সহিত রমণেচ্ছা প্রবল হইয়া আমার হৃদয়কে অতিমাত্রায় কর্ষণ করিতেছে”
· মাউলানীর যৌবনে কাহ্নের মন।
বিধুমুখে বোলেঁ কাহ্নাঞিঁ মধুর বচন
সম্বন্ধ না মানে কাহ্নাঞিঁ মোকে বোলেঁ শালী।
লজ্জা দৃষ্টি হরিল ভাগিনা বনমালী
দেহ বৈরি হৈল মোকে এরুপ যৌবন।
কাহ্ন লজ্জা হরিল দেখিআঁ মোর তন
- শ্রীকৃষ্ণ কীর্ত্তনের দানখণ্ড : রামগিরীরাগ : পৃষ্ঠা : ২০
(শব্দার্থঃ মাউলানী- মামী, কাহ্নের- কৃষ্ণের)
দেখেছেন এই শ্রী রাধা কে শ্রী কৃষ্ণের মামি বানিয়েছে এই চণ্ডীদাস।
এগুলো কোনোটাতে বিন্দুমাত্র সত্যতা নাই। এগুলো কেবল রসময় লেখকের রসময় সাহিত্য ছাড়া আর কিছু না।
তবে এই শ্রী রাধার প্রকৃত পরিচয় কি ?
এখানে শক্তিবাদের কথা মনে স্মরণ রাখিয়া ব্রহ্মবৈবর্তকার লিখিয়াছেন যে, কৃষ্ণ রাধাকে বলিতেছেন যে, তুমি না থাকিলে, আমি কৃষ্ণ, এবং তুমি থাকিলে আমি শ্রীকৃষ্ণ। বিষ্ণুপুরাণকথিত এই “শ্রী” লইয়াই তিনি শ্রীকৃষ্ণ। বিষ্ণুপুরাণে যাহা “শ্রী” সম্বন্ধে কথিত হইয়াছে, ব্রহ্মবৈবর্তে “রাধা” সম্বন্ধে ঠিক তাহাই কথিত হইয়াছে। অর্থ্যাৎ রাধা সেই “শ্রী” এর কাল্পণিক চরিত্র স্বরূপ। রাধা সেই কৃষ্ণের নারী রূপে কল্পিত সেই শক্তি। অর্থ্যাৎ শ্রী রাধা হল সেই শ্রী কৃষ্ণের “শ্রী” অর্থ্যাৎ “শক্তি” যা ছাড়া কৃষ্ণ অপূর্ণ।
এই নিয়ে শ্রী চৈতন্য চরিত্রামৃতে শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু বলিয়াছেন –
মহাভাবস্বরূপ শ্রীরাধাঠাকুরাণী ।
সর্বগুণখনি কৃষ্ণকান্তা-শিরোমণি ।।
অর্থাৎ, “মহাভাব-স্বরূপিনী শ্রীমতী রাধারাণী হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের সমস্ত গুণের আধার এবং শ্রীকৃষ্ণের শিরোমণি”
অর্থ্যাৎ শ্রী রাধা হল সেই শ্রী কৃষ্ণের “শ্রী” অর্থ্যাৎ “শক্তি” যা ছাড়া কৃষ্ণ অপূর্ণ। যা প্রমাণিত।
কিন্তু আদিম ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ‘রাধাতত্ত্ব’ ছিল কি? বোধ হয় ছিল; কিন্তু এই প্রকার নহে। বর্তমান ব্রহ্মবৈবর্তে রাধা শব্দের ব্যুৎপত্তি অনেক প্রকার দেওয়া হইয়াছে। তাহার দুইটি পূর্বে ফুটনোটে উদ্ধৃত, আর একটি উদ্ধৃত করিতেছি:—
“রেফো হি কোটিজন্মাঘং কর্মভোগং শুভাশুভম্।
আকারো গর্ভবাসঞ্চ মৃত্যুঞ্চ রোগমুৎসৃজেৎ || ১০৬ ||
ধকার আয়ুষো হানিমাকারো ভববন্ধনম্।
শ্রবণস্মরণোক্তিভ্যঃ প্রণশ্যতি ন সংশয়ঃ || ১০৭ ||
রাকারো নিশ্চলাং ভক্তিং দাস্যং কৃষ্ণপদাম্বুজে।
সর্বেস্পিতং সদানন্দং সর্বসিদ্ধৌঘমীশ্বরম্ || ১০৮ ||
ধকারঃ সহবাসঞ্চ তত্তুল্যকালমেব চ।
দদাতি সার্ষ্টিং সারূপ্যং তত্ত্বজ্ঞানং হরেঃ সমম্ || ১০৯ ||”
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণম্, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডে, ১৩ অঃ।
ইহার একটিও রাধা শব্দের প্রকৃত ব্যুৎপত্তি নয়। রাধ্ ধাতু আরাধনার্থে, পূজার্থে। যিনি কৃষ্ণের আরাধিকা, তিনিই রাধা বা রাধিকা। বর্তমান ব্রহ্মবৈবর্তে এ ব্যুৎপত্তি কোথাও নাই। যিনি (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণকার ও কিছু রসময় চরিত্রের বৈষ্ণব)এই রাধা শব্দের প্রকৃত ব্যুৎপত্তি গোপন করিয়া কতকগুলা অবৈয়াকরণিক কল কৌশলের দ্বারা ভ্রান্তি জন্মাইবার চেষ্টা করিয়াছেন, এবং ভ্রান্তির প্রতিপোষণার্থ মিথ্যা করিয়া সামবেদের দোহাই দিয়াছেন,তিনি কখনও ‘রাধা’ শব্দের সৃষ্টিকারক নহেন। যিনি রাধা শব্দের প্রকৃত ব্যুৎপত্তির অনুযায়িক হইয়া রাধারূপক রচনা করেন নাই, তিনি কখনও রাধা শব্দের সৃষ্টিকর্তা নহেন। সেই জন্য বিবেচনা করি যে, আদিম ব্রহ্মবৈবর্তেই রাধার প্রথম সৃষ্টি। এবং সেখানে রাধা কৃষ্ণারাধিকা আদর্শরূপিণী “শ্রী” ছিলেন, সন্দেহ নাই।
রাধা শব্দের আর একটি অর্থ আছে—বিশাখানক্ষত্রের# একটি নাম রাধা। কৃত্তিকা হইতে বিশাখা চতুর্দশ নক্ষত্র। পূর্বে কৃত্তিকা হইতে বৎসর গণনা হইত। কৃত্তিকা হইতে রাশি গণনা করিলে বিশাখা ঠিক মাঝে পড়ে। অতএব রাসমণ্ডলের মধ্যবর্তিনী হউন বা না হউন, রাধা রাশিমণ্ডলের বা রাসমণ্ডলের মধ্যবর্তী বটেন। এই ‘রাসমণ্ডলমধ্যবর্তিনী’ রাধার সঙ্গে ‘রাসমণ্ডলে রাধার কোন সম্বন্ধ আছে কি না, তাহা আসল ব্রহ্মবৈবর্তের অভাবে স্থির করা অসাধ্য।
রাধাশব্দস্য ব্যুৎপত্তিঃ সামবেদ নিরূপিতা || ১৩ অঃ, ১৫৩।
রাধা বিশাখা পুষ্যে তু সিধ্যতিযৌ শ্রবিষ্ঠয়া-অমরকোষ।
তাই, শ্রী রাধা হল সেই শ্রী কৃষ্ণের “শ্রী” অর্থ্যাৎ “শক্তি” যা ছাড়া কৃষ্ণ অপূর্ণ। ঠিক যেমন একজন “সন্তান” একজন “মা” ছাড়া অপূর্ণ। শ্রী রাধা কোনো সম্পর্কের মামি নহে।
(মূল রচনা - কৃষ্ণচরিত্র -দ্বিতীয় খণ্ড /দশম পরিচ্ছেদ, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)।
“রাধে, তোমার এই নব যৌবনের সুষমা অহরহ আমার মনে জাগিতেছে। তাহাতে আবার তোমার সহিত রমণেচ্ছা প্রবল হইয়া আমার হৃদয়কে অতিমাত্রায় কর্ষণ করিতেছে”
· মাউলানীর যৌবনে কাহ্নের মন।
বিধুমুখে বোলেঁ কাহ্নাঞিঁ মধুর বচন
সম্বন্ধ না মানে কাহ্নাঞিঁ মোকে বোলেঁ শালী।
লজ্জা দৃষ্টি হরিল ভাগিনা বনমালী
দেহ বৈরি হৈল মোকে এরুপ যৌবন।
কাহ্ন লজ্জা হরিল দেখিআঁ মোর তন
- শ্রীকৃষ্ণ কীর্ত্তনের দানখণ্ড : রামগিরীরাগ : পৃষ্ঠা : ২০
(শব্দার্থঃ মাউলানী- মামী, কাহ্নের- কৃষ্ণের)
দেখেছেন এই শ্রী রাধা কে শ্রী কৃষ্ণের মামি বানিয়েছে এই চণ্ডীদাস।
এগুলো কোনোটাতে বিন্দুমাত্র সত্যতা নাই। এগুলো কেবল রসময় লেখকের রসময় সাহিত্য ছাড়া আর কিছু না।
তবে এই শ্রী রাধার প্রকৃত পরিচয় কি ?
এখানে শক্তিবাদের কথা মনে স্মরণ রাখিয়া ব্রহ্মবৈবর্তকার লিখিয়াছেন যে, কৃষ্ণ রাধাকে বলিতেছেন যে, তুমি না থাকিলে, আমি কৃষ্ণ, এবং তুমি থাকিলে আমি শ্রীকৃষ্ণ। বিষ্ণুপুরাণকথিত এই “শ্রী” লইয়াই তিনি শ্রীকৃষ্ণ। বিষ্ণুপুরাণে যাহা “শ্রী” সম্বন্ধে কথিত হইয়াছে, ব্রহ্মবৈবর্তে “রাধা” সম্বন্ধে ঠিক তাহাই কথিত হইয়াছে। অর্থ্যাৎ রাধা সেই “শ্রী” এর কাল্পণিক চরিত্র স্বরূপ। রাধা সেই কৃষ্ণের নারী রূপে কল্পিত সেই শক্তি। অর্থ্যাৎ শ্রী রাধা হল সেই শ্রী কৃষ্ণের “শ্রী” অর্থ্যাৎ “শক্তি” যা ছাড়া কৃষ্ণ অপূর্ণ।
এই নিয়ে শ্রী চৈতন্য চরিত্রামৃতে শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু বলিয়াছেন –
মহাভাবস্বরূপ শ্রীরাধাঠাকুরাণী ।
সর্বগুণখনি কৃষ্ণকান্তা-শিরোমণি ।।
অর্থাৎ, “মহাভাব-স্বরূপিনী শ্রীমতী রাধারাণী হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের সমস্ত গুণের আধার এবং শ্রীকৃষ্ণের শিরোমণি”
অর্থ্যাৎ শ্রী রাধা হল সেই শ্রী কৃষ্ণের “শ্রী” অর্থ্যাৎ “শক্তি” যা ছাড়া কৃষ্ণ অপূর্ণ। যা প্রমাণিত।
কিন্তু আদিম ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ‘রাধাতত্ত্ব’ ছিল কি? বোধ হয় ছিল; কিন্তু এই প্রকার নহে। বর্তমান ব্রহ্মবৈবর্তে রাধা শব্দের ব্যুৎপত্তি অনেক প্রকার দেওয়া হইয়াছে। তাহার দুইটি পূর্বে ফুটনোটে উদ্ধৃত, আর একটি উদ্ধৃত করিতেছি:—
“রেফো হি কোটিজন্মাঘং কর্মভোগং শুভাশুভম্।
আকারো গর্ভবাসঞ্চ মৃত্যুঞ্চ রোগমুৎসৃজেৎ || ১০৬ ||
ধকার আয়ুষো হানিমাকারো ভববন্ধনম্।
শ্রবণস্মরণোক্তিভ্যঃ প্রণশ্যতি ন সংশয়ঃ || ১০৭ ||
রাকারো নিশ্চলাং ভক্তিং দাস্যং কৃষ্ণপদাম্বুজে।
সর্বেস্পিতং সদানন্দং সর্বসিদ্ধৌঘমীশ্বরম্ || ১০৮ ||
ধকারঃ সহবাসঞ্চ তত্তুল্যকালমেব চ।
দদাতি সার্ষ্টিং সারূপ্যং তত্ত্বজ্ঞানং হরেঃ সমম্ || ১০৯ ||”
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণম্, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডে, ১৩ অঃ।
ইহার একটিও রাধা শব্দের প্রকৃত ব্যুৎপত্তি নয়। রাধ্ ধাতু আরাধনার্থে, পূজার্থে। যিনি কৃষ্ণের আরাধিকা, তিনিই রাধা বা রাধিকা। বর্তমান ব্রহ্মবৈবর্তে এ ব্যুৎপত্তি কোথাও নাই। যিনি (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণকার ও কিছু রসময় চরিত্রের বৈষ্ণব)এই রাধা শব্দের প্রকৃত ব্যুৎপত্তি গোপন করিয়া কতকগুলা অবৈয়াকরণিক কল কৌশলের দ্বারা ভ্রান্তি জন্মাইবার চেষ্টা করিয়াছেন, এবং ভ্রান্তির প্রতিপোষণার্থ মিথ্যা করিয়া সামবেদের দোহাই দিয়াছেন,তিনি কখনও ‘রাধা’ শব্দের সৃষ্টিকারক নহেন। যিনি রাধা শব্দের প্রকৃত ব্যুৎপত্তির অনুযায়িক হইয়া রাধারূপক রচনা করেন নাই, তিনি কখনও রাধা শব্দের সৃষ্টিকর্তা নহেন। সেই জন্য বিবেচনা করি যে, আদিম ব্রহ্মবৈবর্তেই রাধার প্রথম সৃষ্টি। এবং সেখানে রাধা কৃষ্ণারাধিকা আদর্শরূপিণী “শ্রী” ছিলেন, সন্দেহ নাই।
রাধা শব্দের আর একটি অর্থ আছে—বিশাখানক্ষত্রের# একটি নাম রাধা। কৃত্তিকা হইতে বিশাখা চতুর্দশ নক্ষত্র। পূর্বে কৃত্তিকা হইতে বৎসর গণনা হইত। কৃত্তিকা হইতে রাশি গণনা করিলে বিশাখা ঠিক মাঝে পড়ে। অতএব রাসমণ্ডলের মধ্যবর্তিনী হউন বা না হউন, রাধা রাশিমণ্ডলের বা রাসমণ্ডলের মধ্যবর্তী বটেন। এই ‘রাসমণ্ডলমধ্যবর্তিনী’ রাধার সঙ্গে ‘রাসমণ্ডলে রাধার কোন সম্বন্ধ আছে কি না, তাহা আসল ব্রহ্মবৈবর্তের অভাবে স্থির করা অসাধ্য।
রাধাশব্দস্য ব্যুৎপত্তিঃ সামবেদ নিরূপিতা || ১৩ অঃ, ১৫৩।
রাধা বিশাখা পুষ্যে তু সিধ্যতিযৌ শ্রবিষ্ঠয়া-অমরকোষ।
তাই, শ্রী রাধা হল সেই শ্রী কৃষ্ণের “শ্রী” অর্থ্যাৎ “শক্তি” যা ছাড়া কৃষ্ণ অপূর্ণ। ঠিক যেমন একজন “সন্তান” একজন “মা” ছাড়া অপূর্ণ। শ্রী রাধা কোনো সম্পর্কের মামি নহে।
(মূল রচনা - কৃষ্ণচরিত্র -দ্বিতীয় খণ্ড /দশম পরিচ্ছেদ, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)।
রাধা নামী কুলটা, চরিত্রের নারীর খোঁজ পাবেন নীচের কিছু নোংরা বই এ
১)পুরুষবোধিনী ঊপনিষদ
২)গর্গসংহিতা( গোলকখন্ড ১৬ অধ্যায়, দ্বারকাখন্ড ১৮ অধ্যায় প্রভৃতি)
৩)সনদকুমার সংহিতা (৩০২-৩০৩, ৭২, ৭৪)
৪)নারদপঞ্চরাত্রম(২য়,৩য় ও ৫ম অধ্যায় জুড়ে)
৫)বৃহত-গৌতম তন্ত্র
৬)ঊর্ধ্বামনায় তন্ত্র
৭)পদ্মপুরাণ (#ভূমিখন্ডের ৭ম ও ২০তম অধ্যায়, #পাতালখন্ডের বহু অধ্যায় যেমন-৩৯-৪৫,৭১ অধ্যায় জুড়ে, #ব্রহ্মখন্ডের বিস্তৃত অংশজুড়ে যেমন -৭-৯ম অধ্যায়, স্বর্গখন্ডম ৪৬ অধ্যায় প্রভৃতি )
৮)দেবীভাগবতম (সমস্ত ৯ম স্কন্ধ জুড়ে),
৯) ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ( প্রকৃতিখন্ড ও শ্রীকৃষ্ণজন্মখন্ড জুড়ে)
১০)ব্রহ্মান্ডপুরাণ( সমগ্র উত্তরখন্ড জুড়ে, উপদগত পর্ব ৪২,৪৩ অধ্যায়)
১১)নারদপুরাণ ( ৩য় খন্ড ৮৯ অধ্যায় সহ অনেক স্থানে)
১২)শিবপুরাণ(রুদ্রসংহিতার ৩০,৩১ অধ্যায়)
১৩)মৎস্য পুরাণ(১৩ অধ্যায়)
১৪)স্কন্দ পুরাণ(বিষ্ণুখন্ডের শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্মের ১/২২ ও ২/১১-১৩,১৯, বাসুদেব মাহাত্ম্যের ১৬,১৭ প্রভৃতি অধ্যায়, প্রভাসখন্ডের দ্বারকামাহাত্ম্যম ১২ অধ্যায় প্রভৃতি)
১৫)শংকরাচার্যের জগন্নাথ-অষ্টকম(৬ নং শ্লোক)
১৬)শংকরাচার্যের যমুনা-অষ্টকম
১৭)রাধাতন্ত্র
১৮)রাধাপোনিষদ
১৯) মায়াতন্ত্র ২য় পটল
২০) নীলতন্ত্র (২২/৯-১১)
২১)মুক্তমালা তন্ত্র
২২) গোপালতাপনী ঊপনিষদ( আদি ও উত্তরে গান্ধর্বীদেবী হলেন শ্রীরাধিকা)
২৩) চৈতন্যচরিতামৃত( সমস্ত জুড়ে বিবিধ স্থানে)
২৪) চৈতন্য ভাগবত
২৫) বায়ুপুরাণ ১০৪/৫২
২৬) বরাহপুরাণ (১৬৪/৩৩,৩৪)
২৭) সৌভাগ্য লক্ষ্মী তন্ত্র ( ১৩ অধ্যায়)
২৮) শংকরাচার্যের অচ্যুত অষ্টকম( ৪ নং শ্লোক)
২৯) নির্বাণতন্ত্র (৫ম অধ্যায়)
৩০) শংকরাচার্যের নারায়ন গীতি-স্ত্রোত (১০ নং শ্লোক)
বিঃদ্রঃ-
" ইন্দ্র বয়ুমনিরাধং হবামহে"- অথর্ব কা০১৯ ব০১৫ ম০২
আমরা আরাধনা করিবার যোগ্য সেই ঐশ্বর্যশালী পরমেশ্বরের স্ততি করি।
বেদের এই মন্ত্র দেখে অনেক বৈষ্ণব পন্ডিতের মন পুলকিত হয় বেদে রাধা পেয়েছে ভেবে।
যতদূর জানা যায় আজ থেকে আনুমাণিক ৫০০ বৎসর পূর্বে নিত্যানন্দের স্ত্রী জাহ্নবী দেবী নয়ন ভাস্কর কে দিয়ে রাধার মূর্তি তৈরী করিয়ে বৃন্দাবনে গিয়ে জীব গোস্বামীর অজ্ঞাতে শ্রী কৃষ্ণের পাশে রাধারমূর্তি
প্রথম বসিয়ে রেখে আসেন। তার পূর্বে কৃষ্ণের পাশে রাধার মূর্তি কোনদিনই ছিল না।
বেদে অনেক স্থানে রাধা শব্দের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। ঋক, সাম, যজুর অনেক মন্ত্রে এ শব্দের প্রমান অাছে। এই রাধা শব্দটা অন্যান্যা সনাতন ধর্মীয় পুস্তকে পাওয়া যায়। কিন্তু সর্বত্র এই রাধা শব্দটা একই অর্থে ব্যবহার হয় না। বেদে রাধা শব্দের অর্থ এক প্রকার এবং অন্যান্য গ্রন্থে তাহা আবার আরেক প্রকারে অর্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পৌরানিক ও বৈষ্ণবরা তাদের পুস্তকে রাধা শব্দের ব্যবহার দেখতে পায়। কিন্তু তাদের রাধা একজন মানুষ।। এক কথায় রাধা হল কৃষ্ণের প্রেমিকাস্বরূপ। কিন্তু বেদের রাধা শব্দ কোন মানুষকে নির্দেশ করে না। বৈদিক শব্দকোষ নির্ঘন্টুতে রাধা শব্দের প্রমান অাছে [ রাধ ইতি ধননামসু পঠিতম্।। ( নির্ঘন্টু ২/১০)।। অত্র হলাশ্চ। ( অষ্টা ০ ৩/৩/১২১) ইতি ঘঞ] এ সকল স্থানে রাধা শব্দের অর্থ হল (ধননাম) অর্থাৎ ঐশ্বর্যাদি।। পৌরানিক বৈষ্ণবগন বেদে যখন রাধা শব্দ দেখতে পায় তখন তাহার কৃষ্ণের প্রেমিকা রাধা ধরে নেয় এ কারনে বেদ শাস্ত্রের প্রকৃত অর্থ লুপ্ত হয়ে রূঢ় অর্থ হয়ে যায়। বৈষ্ণবগন বেদের (ঋক ১/৩০/৫) মন্ত্রে রাধা শব্দের মাঝে তাদের পুরানাদির রাধাকে দর্শন করেছেন। অামি মনে করি তাদের এ ভূল ধারনা দূর করা দরকার তাই আমি এই মন্ত্রের বাংলা অর্থ দিচ্ছি।।
।।ওম্।। স্তোত্রং রাধানং পতে গির্বাহো বীর যস্য তে।
বিভুতিরস্তু সুনৃতা।। ঋক ( ১/৩০/৫)
পদার্থঃ হে ( গির্বাহঃ) জানিবারযোগ্য পদার্থকে জানিয়া এবং সুখ দুঃখকে নাশ কারী তথা ( রাধ আনাম্) যিনি পৃথিবী অাদি পদার্থে সুখ সিদ্ধ হয়ে থাকে, তাহাকে ( পতে) পালন কারী সভা বা সেনাদের স্বামী বিদ্বান ( যস্য) যিনি ( তে) অাপনাকে ( সুনৃতা) শ্রেষ্ঠতা দ্বারা সব গুনকে প্রকাশ কারী ( বিভূতি) অনেক প্রকার ঐশ্বর্য স্বরূপ। সে নিজের আশ্রয় দ্বারা আমাদের জন্য ( স্তোত্রম্) স্তুতি ( নঃ) আমাদের পূর্বোক্তো ( মদায়) আনন্দ এবং ( শুষ্মিনো) বল প্রাপ্তির জন্য ( অস্তু) হউক।।
অর্থঃ আমাদের সকলের স্বামী যিনি বেদে পরিপূর্ন বিজ্ঞান তর ঐ শ্বর্যযুক্ত এবং যথাযোগ্য ন্যায়কারী সভ্যাধ্যাক্ষ বা সেনাপতি বিদ্বান তাহাকে ন্যায়ধীশ বলে মান্যতা প্রদান করা উচিত।
এ মন্ত্রের পৌরানিক রাধা কোথাও নাই।। এখানে রাধ ইতি ধননামসু পঠিতম্ বলে জানিবে।। ( নির্ঘন্টু) ।।
আরো পডুন বেদে রাধা
কৃষ্ণ চরিত্র নিয়ে গালগল্প তৈরিতে যে দুটি গ্রন্থ অধিক ভূমিকা রেখেছে তা হলো —
১) ব্রহ্মবৈবর্ত্য পুরাণ ২) বড়ু চণ্ডীদাসের কাব্য (শ্রীকৃষ্ণকীর্তন)। বঙ্কিমচন্দ্রসহ অনেক সমালোচকওই ব্রহ্মবৈবর্ত্য পুরাণকে অর্বাচীন, আধুনিক ও জাল পুরাণ বলেছেন। আর এই পুরাণের বহু বিভ্রান্তিকর তথ্য বিদ্যমান। যেমন এই পুরাণ মতে রাধ ও কৃষ্ণ দুজন বিবাহিত দম্পতি। আরও অবাক করার মতো কথা হলো স্বয়ং ব্রহ্মা তাদের বিয়ে দিয়েছেন। ব্রহ্মবৈবর্ত্য পুরাণ মতে রাধার উৎপত্তি কৃষ্ণের বাহু থেকে, ভাগবত মতে রাধার মাতপিতা যথাক্রমে বৃষভানু ও কমলাবতী আর বড়ু চণ্ডীদাসের কাব্য মতে পদ্মা ও সাগর। এইসব বিভ্রান্তিকর তথ্য চরিত্রটির বাস্তব অস্তিত নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে। এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন ও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন বেচারা বড়ু চণ্ডীদাসের প্রতি তিনি রাধা চরিত্র দিয়ে কৃষ্ণকে কলঙ্কিত করেছেন। কিন্তু তারও বহু আগে থেকে রাধা চরিত্র সাহিত্যে পাকা স্থান করে নিয়েছিলো। সাতবাহন নরপতি হাল কর্তৃক
১) ব্রহ্মবৈবর্ত্য পুরাণ ২) বড়ু চণ্ডীদাসের কাব্য (শ্রীকৃষ্ণকীর্তন)। বঙ্কিমচন্দ্রসহ অনেক সমালোচকওই ব্রহ্মবৈবর্ত্য পুরাণকে অর্বাচীন, আধুনিক ও জাল পুরাণ বলেছেন। আর এই পুরাণের বহু বিভ্রান্তিকর তথ্য বিদ্যমান। যেমন এই পুরাণ মতে রাধ ও কৃষ্ণ দুজন বিবাহিত দম্পতি। আরও অবাক করার মতো কথা হলো স্বয়ং ব্রহ্মা তাদের বিয়ে দিয়েছেন। ব্রহ্মবৈবর্ত্য পুরাণ মতে রাধার উৎপত্তি কৃষ্ণের বাহু থেকে, ভাগবত মতে রাধার মাতপিতা যথাক্রমে বৃষভানু ও কমলাবতী আর বড়ু চণ্ডীদাসের কাব্য মতে পদ্মা ও সাগর। এইসব বিভ্রান্তিকর তথ্য চরিত্রটির বাস্তব অস্তিত নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে। এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন ও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন বেচারা বড়ু চণ্ডীদাসের প্রতি তিনি রাধা চরিত্র দিয়ে কৃষ্ণকে কলঙ্কিত করেছেন। কিন্তু তারও বহু আগে থেকে রাধা চরিত্র সাহিত্যে পাকা স্থান করে নিয়েছিলো। সাতবাহন নরপতি হাল কর্তৃক
গাথাসপ্তশতী
সঙ্কলনে রাধার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় । ধারণা করা হয় এইট খ্রিস্টিয় ১ম শতক থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যে লেখা হয়েছে। ভারতের আরও বহু সাহিত্যে রাধা চরিত্রের উল্লেখ আছে। তাই এই রাধা চরিত্র যতখানি না ধর্মের সাথে জড়িত তার থেকেও বেশি সাহিত্যের সাথে জড়িয়ে আছে।ভাগবত (বাল্যলীলা), মহাভারত (যৌবনকালের ইতিহাস), হরিবংশ (বৃদ্ধকালের ইতিহাস) এই তিন গ্রন্থের কোথাও রাধা নেই। রাধা একটি দার্শনিক তত্ত্ব। তাত্ত্বিক দিক থেকে তার গুরুত্ব অসাধারণ কিন্তু রাধার মানবীয় ইতিহাস যা আছে তা সাহিত্যে, রক্ত মাংসের মানুষে নন।
ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতি খণ্ড -৪৯/৫৯ শ্লোকেও বলা হয়েছে-
আদৌ রাধাং সমুচ্চার্য্য পশ্চাৎ কৃষ্ণম্ বদেদ্বুদঃ।
ব্যতিক্রমে ব্রহ্মহত্যাং লভতে নাত্র সংশয়ঃ।। ৫৯
অর্থাৎ অগ্রে রাধার নাম উচ্চারণ করে পশ্চাৎ কৃষ্ণ নাম উচ্চারণ করিবে। অন্যথা অগ্রে কৃষ্ণ পশ্চাৎ রাধা উচ্চারণে ব্রহ্মহত্যারপাপভাগী হইবে।
হরে কৃষ্ণ = রাধা কৃষ্ণ তাদের মান্য অর্থ। পুরাণ অনুযায়ীও তাহাই দাঁড়ায়। অসংখ্য ব্যক্তিদের মনে যে রাধা অবস্থান করছেন সেই রাধা আসলে কে? ছোট এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা যখন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিদের প্রশ্নটি করেছি তখন তারা বিভিন্নরকম উত্তর দিয়েছেন। যেমন -
১. রাধা হলো শ্রীকৃষ্ণের প্রেমিকা।↓
রাধা যে কৃষ্ণের প্রেমিকা সেকথা পুরাণের যত্রতত্র উল্লেখিত রয়েছে। আর যারা প্রেমিকা বলেন, তাদের অনেকেই রাধার সহিত কৃষ্ণের বিবাহ হয়েছে এরূপ মান্যতা দেন না। তাদের নিকট যখন প্রশ্ন করা হয় প্রেমিকা হলে শ্রীকৃষ্ণ তাকে বিয়ে করেন নি কেন? তাদের মধ্যে অনেকেই উত্তরে বলেন যে - শ্রীকৃষ্ণই রাধা, রাধা'ই শ্রীকৃষ্ণ। কেহ কি নিজেকে নিজে বিয়ে করতে পারে? সেইজন্য বিয়ে করেননি। আর ইহার প্রমাণও পাই ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ড-৪৮/২৯ শ্লোকে। সেখানে বলা হয়েছে -
দক্ষিণাঙ্গঞ্চ শ্রীকৃষ্ণো বামাঙ্গং সা চ রাধিকা।।২৯
অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের দক্ষিণ অংশ শ্রীকৃষ্ণরূপ হলো এবং বাম অংশের অঙ্গ রাধারূপ ধারণ করেছেন।
২.শ্রীকৃষ্ণই রাধা রাধাই শ্রীকৃষ্ণ
উপরেই এর প্রমাণ উদ্ধৃত করিয়াছি, তারপরেও আরও একটি প্রমান দেখিতে পাই যে শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলছেন যে, রাধা! তুমিই আমি, আমিই তুমি , আমাদের কোন ভেদ নেই।
যথা তঞ্চ তথাহঞ্চ ভেদো হি নাবয়োর্ধ্রুবম্।। জন্মখণ্ড-১৫/৫৭
৩.রাধা হলো শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী। ↓
গর্গ সংহিতা, গোলকখণ্ড, ১৬ তম অধ্যায়ে ব্রহ্মা দ্বারা রাধা-কৃষ্ণের বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই ব্রহ্মাকে তারা চার মস্তকযুক্ত মনে করিয়া থাকেন। ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ড-৪৮/৪৭ শ্লোকেও 'স্বয়ং রাধা কৃষ্ণপত্নী' বলিয়া উল্লেখিত আছে।
৪.রাধা হলো শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি।
শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ড-১৫/৬৩ শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন যে -
হে রাধা! তুমি আমার এবং সকলের শক্তিস্বরূপা।
স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুখণ্ডের শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্য-১/২২, ২/১১ শ্লোকে রাধাকে শ্রীকৃষ্ণের আত্মা বলা হয়েছে।
৫. রাধা শ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্ত ছিল।
রাধা শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করিতেন এর উল্লেখ ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ড-৪৮/৩৮ শ্লোকে রয়েছে -
রাধা ভজতি শ্রীকৃষ্ণং স চ তাঞ্চ পরস্পরম।। ৩৮
অর্থাৎ রাধা শ্রীকৃষ্ণকে এবং শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে আরাধনা করতেন।
এখানে শ্রীকৃষ্ণকেও রাধার ভক্ত বলা হয়েছে।
৬.রাধা মানে শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত অর্থাৎ যে/যারা শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত সে/তাহারাই রাধা।
এরূপ বিভিন্ন উত্তর পেয়েছি। যারা রাধাকে কৃষ্ণ হইতে আলাদা এবং নির্দিষ্ট এক ব্যক্তি বলিয়া থাকেন তারা সকলেই রাধাকে বৃষভানুর কন্যা বলিয়া জানেন, যার উল্লেখ পুরাণাদিতেও রয়েছে। রাধার মাতার নাম নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে পাওয়া যায় যে রাধার মাতার নাম কলাবতী। -
বৃষভানুসুতা সা চ মাতা যস্যাঃ কলাবতী। (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণ-জন্মখণ্ড-১৩/৯৩)
অর্থাৎ রাধা বৃষভানুসুতা তাহার মাতার নাম কলাবতী।
প্রকৃতিখণ্ড-৪৮/৫৫ শ্লোকেও রাধার পিতা-মাতার নাম বৃষভানু-কলাবতী পাওয়া যায়।
যখন রাধা ভক্তদের কতিপয় এই উত্তর ব্যতীত আর কোন উত্তর আছে কি নেই তা জানার জন্য গ্রন্থাদি অধ্যয়ণ করি, তখন চমৎকার কিছু তথ্য আমাদের নজরে আসে। আর সে তথ্যানুযায়ী রাধার আরও কিছু পরিচয় -
৭. রাধা শ্রীকৃষ্ণের মামি।
শ্রীকৃষ্ণের মামি পরিচয়ের মধ্যেই অন্য একটি পরিচয় বিদ্যমান রয়েছে, তা হলো রাধা শ্রীকৃষ্ণের কোন মামার স্ত্রী? পুরাণে বলা হয়েছে -
অতীতে দ্বাদশাব্দে তু দৃষ্ট্বা তাং নবযৌবনাম্।
সার্দ্ধং রায়াণবৈশ্যেন তৎ সম্বন্ধং চকার সঃ।। (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ডম- ৪৯/৩৯)
অনুবাদঃ- দ্বাদশ বৎসর অতীত হইলে, বৃষভানু, রায়াণ বৈশ্যের সহিত নবযৌবনা নিজ-কন্যার [রাধার] বিবাহ সম্বন্ধ করে।
অর্থাৎ ১২ বৎসর বয়সেই রাধার বিবাহ হয় রায়াণ বৈশ্যের সহিত। আর রায়াণ শ্রীকৃষ্ণের এক মাতা যশোদার আপন ভ্রাতা বলিয়াই পুরাণে উল্লেখিত রয়েছে-
কৃষ্ণমাতা যশোদা যা রায়াণস্তৎসহোদরঃ। (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ডম- ৪৯/৪২)
অনুবাদঃ- রায়াণ, কৃষ্ণজননী যশোদার সহোদর (অর্থাৎ এক মাতার গর্ভজাত ভ্রাতা)
৮.রাধা শ্রীকৃষ্ণের কন্যা।
আবির্বভূব কন্যৈকা কৃষ্ণস্য বামপার্শ্বতঃ। (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড-৫/২৫)
তেন রাধা সমাখ্যাতা পুরাবিদভির্শ্বজোত্তম ॥ (ব্রহ্মখণ্ড-৫/২৬)
অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের বামপার্শ্ব হইতে এক কন্যা আবির্ভূত হইয়াছিলো, পুরাণজ্ঞ পন্ডিতেরা তাহাকে রাধা নাম দিয়াছেন।
প্রকৃতিখণ্ড-৪৮/৪১ ও শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ড-১৭/২৩৪, দেবী ভাগবত পুরাণ-৯/২/৫৪ শ্লোকেও শ্রীকৃষ্ণের বামাংশ হইতে রাধার উৎপত্তির উল্লেখ রয়েছে।
যে যার হইতে উৎপন্ন হয় সে তাহার সন্তান, আর রাধা যেহেতু মেয়ে/নারী সেহেতু পুরাণের উক্ত শ্লোকানুযায়ী সে শ্রীকৃষ্ণের কন্যা বলিয়া প্রমাণিত হয়।
অনেকে বলে থাকেন শ্রীরাধা লক্ষ্মী দেবীর অবতার। কিন্তু ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ড-৪৮/৪৪ শ্লোকে বলা হয়েছে-
রাধাবামাংশভাগেন মহালক্ষ্মীবভূব সা।
চতুর্ভূজস্য সা পত্নী দেবী বৈকুণ্ঠবাসিনী।। ৪৪
অর্থাৎ রাধার বাম অংশ হইতে মহালক্ষ্মী উৎপন্ন হন এবং তিনি চতুর্ভুজ নারায়ণের প্রিয়তমা ; বৈকুণ্ঠে তাঁহার বাস।।
তারপর বলা হয়েছে -
তদংশা রাজলক্ষ্মীচ রাজসম্পৎপ্রদায়িনী॥ ৫
অর্থাৎ মহালক্ষ্মীর অংশ রাজলক্ষ্মী, রাজগণের সম্পদ বৃদ্ধি করেন।
শুধু তাহাই নয়, অন্যান্য গোপীসকলেও রাধার অংশ বিশেষ বলয়া উল্লেখিত রয়েছে।
তাছাড়াও অনেকেই বলেন যে রায়াণ বৈশ্যের সহিত রাধার নয় বরং রাধার ছায়ার বিবাহ হয়েছিল। এর ভিত্তিও রয়েছে, যেমন -
বভূব তস্য বৈশ্যস্য বিবাহশ্চছায়য়া সহ।। ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ, প্রকৃতিখণ্ড-৪৯/৪০
অর্থাৎ রাধার ছায়ার সহিত রায়াণ বৈশ্যের বিবাহ হয়।
আরও বলা হয়েছে - স্বয়ম্ রাধা হরেঃ ক্রোড়ে ছায়া রায়াণ মন্দিরে।। ৪৯/৪৪
অর্থাৎ রাধা স্বয়ম্ শ্রীকৃষ্ণের ক্রোড়ে বাস করিতেন এবং রায়াণ গৃহে রাধার ছায়া অবস্থান করিতেন।
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে আরও একটু বাড়িয়ে বলা হয়েছে-
নন্দাত্মজেন রাধায়া রহোবস্থানতোমুনে।
সহালাপাৎ সহাবেশা দনুরাগাৎ পরস্পরং।। (ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ - ২৪/১)
অনুবাদঃ- জগৎস্রষ্টা জগৎপিতা পিতামহ ব্রহ্মা অঙ্গিরাকে কহিতেছেন - হে বৎস! এইরূপে নন্দনন্দন শ্রীকৃষ্ণের সহিত শ্রীরাধিকার সর্ব্বদা গোপন স্থানে সহবাস এবং যমুনাকচ্ছে আলাপন ও রতিক্রীড়া পরস্পর উভয়ের লীলানুরাগ ও রসাবেশের জন্য গোকুলবাসীজনেরা পরস্পর কর্ণাকর্ণি করিতে লাগিলেন। [ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ অনুযায়ী এইসকলের জন্যই রাধা - কলঙ্কিনী রাধা বলিয়া পরিচিত হন ]
ছোট করে একটি কথা না বললেই নয় যে- কোন ছায়ার সহিত পৌরাণিক পদ্ধতিতে কারো বিবাহ সম্পন্ন করা আদৌতে কি সম্ভব? মালাবদল আদি কতো কি আচার অনুষ্ঠান পালন করা সম্ভব কি? আর এখানে শ্রীকৃষ্ণকে রায়াণের সহিত ছলনা করার, ধোকাবাজ বলে আরোপ করার একটা রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে।
৯. রাধা হল মূল প্রকৃতি।
প্রশ্ন- প্রকৃতি কাকে বলা হয়?
উত্তর : কার্য্য জগতের মূল উপাদান কারণ তথা সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ গুণের সাম্যাবস্থাকে প্রকৃতি বলা হয়।
আর এই মূল প্রকৃতি জড় পদার্থ। শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ড-১৫/৬৬ শ্লোকে রাধাকে মূল প্রকৃতি বলিয়াছেন।
এইসকল বিরোধী বিভিন্ন পরিচয়াদি - ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ,ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ,দেবীভাগবত,স্কন্দ পুরাণ,চৈতন্য চরিতামৃত আদি কতিপয় নব্য গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায়। এগুলোতে রাধা সহ রাধার অংশাদি গোপীদের শ্রীকৃষ্ণের সহিত যুক্ত করে অসংখ্য অশ্লীল কাহিনি উল্লেখ করে শ্রীকৃষ্ণকে চরিত্রহীন প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে স্বয়ম্ রাধা শ্রীকৃষ্ণ বলছেন যে-
সংগৃহ্যেমাং প্রিয়ামিষ্টাং গোলোকাদ্গচ্ছ লম্পট।
অন্যথা ন হি তে ভদ্রং ভবিষ্যতি ব্রজেশ্বর।। (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখণ্ডম্ - ১১/৪৪)
অনুবাদঃ- লম্পট! তুমি এই প্রিয় ভার্য্যা লইয়া গোলোক হইতে দূর হও। ব্রজেশ্বর। তাহা না হইলে কিছুতেই তোমার মঙ্গল নাই।
পুরাণের বিভিন্ন স্থানেই রাধাকে খুব রাগান্বিতা নারী বলেই পরিচয় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
➤কিন্তু বৈষ্ণবদিগের অতি প্রিয় ও প্রধান গ্রন্থ ভাগবত পুরাণেই রাধার নাম উল্লেখ নেই। অনেকে বলে শ্রীমদ্ভাগবত-১০/৩০ অধ্যায়ে রাধার উল্লেখ আছে, তা আদৌতে সত্য নয়। সেখানে শুধু এটা উল্লেখ আছে যে সকল গোপিদের মধ্য থেকে কোন এক গোপিকে নিয়ে কৃষ্ণ পালিয়েছিলো।
➤শ্রীকৃষ্ণের প্রমাণ্য ইতিহাস -মহাভারতে এই রাধার উল্লেখ নেই। মহাভারতে কর্ণের লালনপালন করেছেন যে মাতা সেই মাতা রাধার নাম উল্লেখ আছে। কর্ণ স্বয়ম্ শ্রীকৃষ্ণের সহিত বলেছেন যে - [যখন শিশু ছিল তখন] সুত আমাকে এনে নিজ পত্নী রাধাকে দিয়েছে, আর রাধা একজন মাতার যা দায়িত্ব তা সম্পূর্ণই করেছেন। (মহাভারত, উদ্যোগপর্ব - ১৪১/৫-৬)
➤যেসকল পুরাণে রাধার উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে প্রায় পুরাণেই শ্রীকৃষ্ণের অসংখ্য বিবাহের উল্লেখ করা হয়েছে, অনেকের নামও দেওয়া হয়েছে। বিষ্ণুপুরাণ-৪/১৩/৬৯ শ্লোকে ষোড়শ সহস্র, ৪/১৫/১৯ শ্লোকে ষোড়শ সহস্র একশত একটি স্ত্রী রয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে সব মিলিয়েও এত সংখ্যক স্ত্রীর নাম পাওয়া যায়না। অপরদিকে মহাভারতে বলা হয়েছে -
বৈদেহ্যাং চ যথা রামো রুক্মিণ্যাং চ জনার্দনঃ। (উদ্যোগপর্ব-১১৭/১৭)
অর্থাৎ যেমন বিদেহনন্দিনী সীতার জন্য রাম তেমনি রুক্মিণীর জন্য ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ।
রাধার এত এত পরিচয় দ্বারা এটা প্রমাণিত যে রাধার পরিচয়েরই ঠিক নেই। ঠিক থাকার কথাও নয় কেননা আদৌতে শ্রীকৃষ্ণের প্রেমিকা.... রাধার কোন অস্তিত্বই ছিলনা। বিয়ের পূর্বেই রুক্মিণী দেবী শ্রীকৃষ্ণের গুণে মুগ্ধ ছিল, ভালোবেসেও ছিল শ্রীকৃষ্ণকে, শ্রীকৃষ্ণও রুক্মিণীর প্রতি তেমনই ছিল। দুজন বিয়ের পর ১২ বছর ব্রহ্মচর্য পালন করে প্রদ্যুম্ন নামের এক সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। অথচ পুরাণে অসংখ্যাত পুত্রাদির গল্প রচনা করে দিয়েছে।
রাধার অস্তিত্ব ছিল কিনা তা নিয়ে অনেকেই অনেক গবেষণা করেছেন। সেই গবেষকগণ এটাই বলেছেন যে রাধার উল্লেখ প্রথমে অর্বাচীন ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ থেকেই শুরু হয়, সেই কাল্পনিক রাধার বিস্তার হতে হতে অন্যান্য পুরাণেও প্রবেশ করানো হয় রাধার বিষয়ে। কবিদের কল্পনায় বহু গল্প রচিত হয় রাধাকে নিয়ে, কিন্তু সত্যিকারে রাধা বলতে এমন কারো অস্তিত্বই ছিলনা।
ওম্ শম্
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ