শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সপ্তদশ-অধ্যায় - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

17 November, 2019

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সপ্তদশ-অধ্যায়

সপ্তদশ-অধ্যায়-শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ


 অর্জুন উবাচ
যে শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য যজন্তে শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ। 
তেষাং নিষ্ঠা তু কা কৃষ্ণ সত্ত্বমাহো রজস্তমঃ।।১।।

অর্জ্জুন উবাচ (অর্জ্জুন বলিলেন) [হে] কৃষ্ণ ! (হে কৃষ্ণ !) যে (যাহারা) শাস্ত্রবিধিম্ (শাস্ত্রবিধি) উৎসৃজ্য (পরিত্যাগ পূর্ব্বক) তু (কিন্তু) শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ [সন্তঃ] (শ্রদ্ধাযুক্ত হইয়া) যজন্তে (পূজা করে), তেষাং (তাহাদের) নিষ্ঠা (নিষ্ঠা) কা (কি বলা যায় ?) [স কিম্] (তাহা কি) সত্ত্বম্ (সাত্ত্বিক) আহো (কথিত হয়) রজঃ (বা রাজসিক) [উত] তমঃ (অথবা তামসিক ?) ॥১॥


অর্জ্জুন বলিলেন—হে কৃষ্ণ ! যাহারা শাস্ত্রবিধিকে পরিত্যাগ পূর্ব্বক, শ্রদ্ধা সহকারে পূজা করে, তাহাদের নিষ্ঠাকে কি বলা যায় ? উহা কি সাত্ত্বিক বা রাজসিক, অথবা তামকিস ? ॥১॥

অনুবাদঃ অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন- হে কৃষ্ণ! যারা শাস্ত্রীয় বিধান পরিত্যাগ করে শ্রদ্ধা সহকারে দেব-দেবীর পূজা করে, তাদের সেই নিষ্ঠা কি সাত্ত্বিক, রাজসিক না তামসিক?।

শ্রীভগবানুবাচ
ত্রিবিধা ভবতি শ্রদ্ধা দেহিনাং সা স্বভাবজা। 
সাত্ত্বিকী রাজসী চৈব তামসী চেতি তাং শৃণু।।২।।

শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভাগবান্ বলিলেন) দেহিনাং (জীবগণের) শ্রদ্ধা (শ্রদ্ধাই) সাত্ত্বিকী (সাত্ত্বিক) রাজসী (রাজসিক) তামসী চ (ও তামসিক) ইতি (এই) ত্রিবিধা (তিনপ্রকার) ভবতি (হইয়া থাকে) । সা (সেই শ্রদ্ধা) স্বভাবজা (পূর্ব্ব সংস্কার হইতে জাত) তাং (তাহা) শৃণু (শ্রবণ কর) ॥২॥


শ্রীভগবান্ কহিলেন—সেই শ্রদ্ধাই তিন প্রকার ; উহা জীবের পূর্ব্ব সংস্কার সঞ্জাত । উহা সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক ভেদে তিন প্রকার—তাহা শ্রবণ কর ॥২॥

অনুবাদঃ শ্রীভগবান বললেন-দেহীদের স্বভাব-জনিত শ্রদ্ধা তিন প্রকার- সাত্ত্বিকী, রাজসী ও তামসী। এখন সেই সম্বন্ধে শ্রবণ কর।

এন্ড্রয়েড এপস ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন

সত্ত্বানুরূপা সর্বস্য শ্রদ্ধা ভবতি ভারত। 
শ্রদ্ধাময়োহয়ং পুরুষো যো যচ্ছ্রদ্ধঃ স এব সঃ।।৩।।

[হে] ভারত ! (হে ভারতবংশীয় !) সর্ব্বস্য (সকল মানবেরই) শ্রদ্ধা (শ্রদ্ধা) সত্ত্বানুরূপা (চিত্তবৃত্তির অনুরূপ) ভবতি (হইয়া থাকে) । অয়ং (এই) পুরুষঃ (জীব) শ্রদ্ধাময়ঃ (ত্রিবিধ শ্রদ্ধা বিশিষ্ট) যঃ (যিনি) যচ্ছ্রদ্ধবঃ (যে প্রকার সাত্ত্বিকাদি শ্রদ্ধা বিশিষ্ট) সঃ (তিনি) সঃ এব (তৎস্বরূপেই পরিচিত হন) ॥৩॥


হে ভারত ! সকল মানবেরই শ্রদ্ধা নিজ নিজ চিত্তবৃত্তির অনুরূপ হইয়া থাকে । জীব মাত্রেই শ্রদ্ধাময় অর্থাৎ শ্রদ্ধানুরূপ তাহার বাহ্যাভ্যন্তর গঠিত, সুতরাং যাহার যেরূপ পূজ্যে শ্রদ্ধা হয়, তিনিও তৎস্বরূপই হইয়া থাকেন ॥৩॥

অনুবাদঃ হে ভারত! সকলের শ্রদ্ধা নিজ-নিজ অন্তঃকরণের অনুরূপ হয়। যে যেই রকম গুণের প্রতি শ্রদ্ধাযুক্ত, সে সেই রকম শ্রদ্ধাবান।

যজন্তে সাত্ত্বিকা দেবান্ যক্ষরক্ষাংসি রাজসাঃ।
প্রেতান্ ভূতগণাংশ্চান্যে যজন্তে তামসা জনাঃ।।৪।।

সাত্ত্বিকাঃ (সাত্ত্বিক শ্রদ্ধা বিশিষ্টগণ) দেবান্ (সত্ত্ব-প্রকৃতি দেবতাগণের) যজন্তে (পূজা করেন), রাজসাঃ (রাজসিক শ্রদ্ধাবন্তগণ) যক্ষরক্ষাংসি (রজঃপ্রকৃতি যক্ষ ও রাক্ষসগণের) যজন্তে (পূজা করেন), অন্যে (অপর) তামসাঃ জনাঃ (তামসিক শ্রদ্ধাযুক্তগণ) প্রেতান্ ভূতগণান্ চ (তমঃপ্রকৃতি প্রেত ও ভূতগণের) [যজন্তে] (পূজা করে) ॥৪॥


সাত্ত্বিক শ্রদ্ধাবন্তগণ সত্ত্বপ্রকৃতি দেবতাগণের পূজা করেন, রাজসিক শ্রদ্ধাবিশিষ্টগণ রজঃপ্রকৃতি যক্ষ ও রাক্ষসগণের এবং তামসিক শ্রদ্ধাযুক্তগণ তমঃপ্রকৃতি প্রেত ও ভূতগণের পূজা করে ॥৪॥

অনুবাদঃ সাত্ত্বিক ব্যক্তিরা দেবতাদের পূজা করে, সাজসিক ব্যক্তিরা যক্ষ ও রাক্ষসদের পূজা করে এবং তামসিক ব্যক্তিরা ভূত ও প্রেতাত্মাদের পূজা করে।
পদ০ :- যজন্তে । সাত্ত্বিকাঃ । দেবান্ । যক্ষরক্ষাংসি । রাজসাঃ । প্রেতান্ । ভূতগণান্ । চ । অন্যে । যজন্তে । তামসাঃ । জনাঃ ।।
পদার্থঃ- (সাত্ত্বিকাঃ, দেবান্, যজন্তে) সাত্ত্বিক ব্যক্তি দেব = বিদ্বানদের সৎকার করে, (রাজসাঃ) রাজস ব্যক্তি (যক্ষরক্ষাংসি) যক্ষ = বল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রক্ষাংসি = পাপী ব্যক্তিদের সৎকার করে (অন্যে, তামসাঃ, জনাঃ) এবং অন্য তামস ব্যক্তি (ভূতগণান্) অগ্নাদি ভূত পদার্থ (চ) এবং (প্রেতান্) মৃত ব্যক্তিদের (যজন্তে) পূজা করে।
অনুবাদঃ- সাত্ত্বিক ব্যক্তি দেব = বিদ্বানদের সৎকার করে, রাজস ব্যক্তি যক্ষ = বল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রক্ষাংসি = পাপী ব্যক্তিদের সৎকার করে এবং অন্য তামস ব্যক্তি অগ্নাদি ভূত পদার্থ এবং মৃত ব্যক্তিদের পূজা করে।
ভাষ্যকারঃ আর্যমুনি

অশাস্ত্রবিহিতং ঘোরং তপ্যন্তে যে তপো জনাঃ।
দম্ভাহঙ্কারসংযুক্তাঃ কামরাগবলান্বিতাঃ।।৫।।
কর্ষয়ন্তঃ শরীরস্থং ভূতগ্রামমচেতসঃ। 
মাং চৈবান্তঃশরীরস্থং তান্ বিদ্ধ্যাসুরনিশ্চয়ান্।।৬।।

যে (যে সকল) অচেতসঃ (অবিবেকী) জনাঃ (ব্যক্তি) দম্ভাহঙ্কার সংযুক্তঃ (দম্ভ ও অহঙ্কার অবলম্বন পূর্ব্বক) কামরাগবলান্বিতাঃ (কামনা মূলে মানসিক ও দৈহিক বিক্রম প্রকাশে) শরীরস্থং (দেহস্থিত) ভূতগ্রামম্ (পঞ্চভূতকে) কর্শয়ন্তঃ (কৃশ করিয়া) অন্তঃশরীরস্থং (শরীরাভ্যন্তরে স্থিত) মাং চ এব (আমার অংশ ভূত জীবাত্মাকেও) [দুঃখয়ন্তঃ] (দুঃখ প্রদান পূর্ব্বক) অশাস্ত্রবিহিতং (শাস্ত্রবিধির বহির্ভূত) ঘোরং (উৎকট) তপঃ (তপস্যা) তপ্যন্তে (অনুষ্ঠান করে), তান্ (তাহাদিগকে) আসুরনিশ্চয়ান্ (আসুর ধর্ম্মে নিষ্ঠীত বলিয়া) বিদ্ধি (জানিবে) ॥৫–৬॥


যে সকল অবিবেকী ব্যক্তি দম্ভ ও অহঙ্কার অবলম্বন পূর্ব্বক কামনামূলে মানসিক ও দৈহিক বিক্রমপ্রকাশে দেহস্থিত ভূতগণ ও তদভ্যন্তরে আমার অংশভূত জীবাত্মাকেও দুঃখ প্রদান পূর্ব্বক শাস্ত্রবিধির বহির্ভূত উৎকট তপস্যা করে, তাহাদিগকে আসুরধর্ম্মে নিষ্টিত বলিয়া জানিবে ॥৫–৬॥

অনুবাদঃ দম্ভ ও অহঙ্কারযুক্ত এবং কামনা ও আসক্তির প্রভাবে বলান্বিত হয়ে যে সমস্ত অবিবেকী ব্যক্তি তাদের দেহস্থ ভূতসমূহকে এবং অন্তরস্থ পরমাত্মাকে ক্লেশ প্রদান করে শাস্ত্রবিরুদ্ধ ঘোর তপস্যার অনুষ্ঠান করে, তাদেরকে নিশ্চিতভাবে আসুরিক বলে জানবে।

আহারস্তপি সর্বস্য ত্রিবিধো ভবতি প্রিয়ঃ। 
যজ্ঞস্তপস্তথা দানং তেষাং ভেদমিমং শৃণু।।৭।।

[গুণ ভেদাৎ] (গুণত্রয়ের ভেদ হেতু) সর্ব্বস্য (সমস্ত প্রাণীর) ত্রিবিধঃ (তিন প্রকার) আহারঃ তু অপি (আহারও) প্রিয়ঃ (প্রীতিজনক) ভবতি (হইয়া থাকে) তথা (সেইরূপ) যজ্ঞঃ (যজ্ঞ) তপঃ (তপস্যা) দানং (ও দান) [ত্রিবিধং] (তিন প্রকার), তেষাং (তাহাদের) ইমং (এই) ভেদম্ (ভেদ) শৃণু (শ্রবণ কর ) ॥৭॥


গুণত্রয়ের ভেদ হেতু সমস্ত প্রাণীর আহারও তিন প্রকার প্রিয় হইয়া থাকে এবং সেইরূপ যজ্ঞ, তপস্যা ও দান সমস্তই ত্রিবিধ হয় ; তাহাদের এই ভেদ শ্রবণ কর ॥৭॥

অনুবাদঃ সকল মানুষের আহারও তিন প্রকার প্রীতিকর হয়ে থাকে। তেমনই যজ্ঞ, তপস্যা এবং দানও ত্রিবিধ। এখন তাদের এই প্রভেদ শ্রবণ কর।
আয়ুঃসত্ত্ববলারোগ্যসুখপ্রীতিবিবর্ধনাঃ।
রস্যাঃ স্নিগ্ধাঃ স্থিরা হৃদ্যা আহারাঃ সাত্ত্বিকপ্রিয়াঃ।।৮।।

আয়ুঃসত্ত্ববলারোগ্যসুখপ্রীতিবিবর্দ্ধনাঃ (আয়ুঃ, উৎসাহ, বল, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতির বৃদ্ধিকারক) রস্যাঃ (রসযুক্ত) স্নিগ্ধাঃ (স্নেহযুক্ত) স্থিরাঃ (স্থির-গুণযুক্ত) হৃদ্যাঃ (চিত্তাকর্ষক) আহারাঃ (ভক্ষ্য ভোজ্যাদি) সাত্ত্বিকপ্রিয়াঃ (সাত্ত্বিকগণের প্রিয়) [ভবন্তি] (হইয়া থাকে) ॥৮॥


আয়ু, উৎসাহ, বল, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতির বর্দ্ধনকারী, রসযুক্ত, স্নেহযুক্ত, স্থিরগুণবিশিষ্ট ও হৃদয়গ্রাহী ভক্ষ্য ভোজ্যাদি—সাত্ত্বিক প্রকৃতির প্রিয় হইয়া থাকে ॥৮॥

অনুবাদঃ যে সমস্ত আহার আয়ু, সত্ত্ব, বল, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতি বর্ধনকারী এবং রসযুক্ত, স্নিগ্ধ, স্থায়ী ও মনোরম, সেগুলি সাত্ত্বিক লোকদের প্রিয়।
কট্বম্ললবণাত্যুষ্ণতীক্ষ্মরুক্ষবিদাহিনঃ। 
আহারা রাজসস্যেষ্টা দুঃখশোকাময়প্রদাঃ।।৯।।

কট্বাম্ললবণাত্যুষ্ণতীক্ষ্ণরুক্ষবিদাহিনঃ (অতিকটু, অত্যম্ল, অতি লবন, অত্যুষ্ণ, অতিতীক্ষ্ণ, অতিরুক্ষ, অতি বিদাহী) দুঃখ শোকাময়প্রদাঃ (দুঃখ, শোক ও রোগজনক) আহারাঃ (ভক্ষ্যদ্রব্য সমূহ) রাজসস্য (রাজসগণের) ইষ্টাঃ (প্রিয়) [ভবন্তি] (হইয়া থাকে) ॥৯॥


অতিকুট (নিম্বাদি), অত্যম্ল, অতিলবন, অত্যুষ্ণ, অতিতীক্ষ্ণ, (লঙ্কামরিচাদি) অতিরুক্ষ, (ভৃষ্ট চনকাদি) অতিবিদাহী, (সর্ষপাদি)—দুঃখ, শোক ও রোগপ্রদ ভক্ষ্যদ্রব্যসকল—রাজস প্রকৃতির ব্যক্তিদের প্রিয় হইয়া থাকে ॥৯॥

অনুবাদঃ যে সমস্ত আহার অতি তিক্ত, অতি অম্ল, অতি লবণাক্ত, অতি উষ্ণ, অতি তীক্ষ্ম, অতি শুষ্ক, অতি প্রদাহকর এবং দুঃখ, শোক ও রোগপ্রদ, সেগুলি রাজসিক ব্যক্তিদের প্রিয়।
যাতযামং গতরসং পূতি পর্যষিতং চ যৎ। 
উচ্ছিষ্টমপি চামেধ্যং ভোজনং তামসপ্রিয়ম্।।১০।।

যাতযামং (ঠাণ্ডা) গতরসং (নীরস) পূতি (দুর্গন্ধযুক্ত) পর্য্যুষিতং চ (বাসী দ্রব্য) উচ্ছিষ্টম্ অপি (গুরুজন ভিন্ন অপরের ভুক্তাবশিষ্ট) অমেধ্যং চ (ও অভক্ষ্য-পেয়াজ, মদ্য, মাংস প্রভৃতি) যৎ (যে সকল) ভোজনং (আহার্য্য বস্তু) [তৎ] (তাহা) তামসপ্রিয়ম্ (তামসগণের প্রিয়) [ভবতি] (হইয়া থাকে) ॥১০॥


প্রহরাধিক লাক পূর্ব্বে পক্ব হেতু ঠাণ্ডা, নীসর, দুর্গন্ধ যুক্ত, পূর্ব্বদিনের পক্ব, (গুরুজন ভিন্ন) অন্যের ভোজনাবশেষ ও অপবিত্র (পেয়াজ, মদ্য-মাংসাদি) ভজ্যাদি তামস জনের প্রিয় হইয়া থাকে ॥১০॥

অনুবাদঃ আহারের এক প্রহরের অধিক পূর্বে রান্না করা খাদ্য, যা নীরস, দুর্গন্ধযুক্ত, বাসী এবং অপরের উচ্ছিষ্ট দ্রব্য ও অমেধ্য দ্রব্য, সেই সমস্ত তামসিক লোকদের প্রিয়।
অফলাকাঙ্ক্ষিভির্যজ্ঞো বিধিদিষ্টো য ইজ্যতে। 
যষ্টব্যমেবেতি মনঃ সমাধায় স সাত্ত্বিকঃ।।১১।।

অফলাকাঙ্ক্ষিভিঃ (ফলাকাঙ্ক্ষা রহিত ব্যক্তি) যষ্টব্যম্ এব (যজ্ঞ অবশ্যই কর্ত্তব্য) ইতি (এই বিচারে) মনঃ (মনকে) সমাধায় (সুস্থির করিয়া) বিধিদিষ্টঃ (শাস্ত্রবিধি সস্মত) যঃ (যে) যজ্ঞঃ (যজ্ঞের) ইজ্যতে (অনুষ্ঠান করেন) সঃ (তাহাই) সাত্ত্বিকঃ (সাত্ত্বিক) ॥১১॥


ফলাকাঙ্ক্ষারহিত ব্যক্তি অবশ্যকর্ত্তব্য বোধে মনকে সুস্থির করিয়া, শাস্ত্রবিধি সম্মত যে যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন,—তাহাই সাত্ত্বিক ॥১১॥

অনুবাদঃ ফলের আকাঙ্ক্ষা রহিত ব্যক্তিগণ কর্তৃক শাস্ত্রের বিধি অনুসারে, অনুষ্ঠান করা কর্তব্য এভাবেই মনকে একাগ্র করে যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়, তা সাত্ত্বিক যজ্ঞ।



অভিসন্ধায় তু ফলং দম্ভার্থমপি চৈব যৎ। 
ইজ্যতে ভরতশ্রেষ্ঠ তং যজ্ঞং বিদ্ধি রাজসম্।।১২।।

[হে] ভরতশ্রেষ্ঠ ! (হে ভারত !) তু (কিন্তু) ফলং (ফলের) অভিসন্ধায় (অভিসন্ধান পূর্ব্বক) দম্ভার্থং অপি চ এব (ও দম্ভ প্রকাশের জন্যই) যৎ (যে) ইজ্যতে (যজ্ঞ করা হয়) তং (সেই) যজ্ঞং (যজ্ঞ) রাজসং (রাজসিক বলিয়া) বিদ্ধি (জানিবে) ॥১২॥


হে ভারত! কিন্তু ফলের অভিসন্ধি পূর্ব্বক ও দম্ভ প্রকাশ নিমিত্তই যে যজ্ঞ করা হয়—তাহাকে রাজসিক বলিয়া জানিবে ॥১২॥

অনুবাদঃ হে ভরতশ্রেষ্ঠ! কিন্তু ফল কামনা করে দম্ভ প্রকাশের জন্য যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়, তাকে রাজসিক যজ্ঞ বলে জানবে।

বিধিহীনমসৃষ্টান্নং মন্ত্রহীনমদক্ষিণম্। 
শ্রদ্ধাবিরহিতং যজ্ঞং তামসং পরিচক্ষতে।।১৩।।

বিধিহীনম্ (অশাস্ত্রীয়) অসৃষ্টান্নং (অন্নাদিদান রহিত) মন্ত্রহীনম্ (মন্ত্র বর্জ্জিত) অদক্ষিণম্ (দক্ষিণা শূন্য) শ্রদ্ধাবিরহিতং (অশ্রদ্ধাকৃত) যজ্ঞং (যজ্ঞকে) তামসং (তামসিক) পরিচক্ষতে (বলা হয়) ॥১৩॥


শাস্ত্রবিধিহীন, অন্নাদি-দানরহিত, মন্ত্রবর্জ্জিত, দক্ষিণাশূন্য ও অশ্রদ্ধাকৃত যজ্ঞকে তামসিক বলা হয় ॥১৩॥

অনুবাদঃ শাস্ত্রবিধি বর্জিত, প্রসাদান্ন বিতরণহীন, মন্ত্রহীন, দক্ষিণাবিহীন ও শ্রদ্ধারহিত যজ্ঞকে তামসিক যজ্ঞ বলা হয়।

দেবদ্বিজগুরুপ্রাজ্ঞপূনং শৌচমার্জবম্। 
ব্রহ্মচর্যমহিংসা চ শারীরং তপ উচ্যতে।।১৪।।

দেবদ্বিজগুরুপ্রাজ্ঞপূজনং (দেবতা, ব্রাহ্মণ, গুরু ও প্রাজ্ঞজনের পূজা) শৌচম্ (বাহ্যাভ্যন্তর শুদ্ধি) আর্জ্জবম্ (সরলতা) ব্রহ্মচর্য্যম্ (ব্রহ্মচর্য্য) অহিংসা চ (ও অহিংসাকে) শারীরং (শারীরিক) তপঃ (তপস্যা) উচ্যতে (বলা হয়) ॥১৪॥


দেবতা, ব্রাহ্মণ, গুরু ও প্রাজ্ঞজনের পূজা এবং শৌচ, সরলতা, ব্রহ্মচর্য্য ও অহিংসা—এই সরলকে শারিরীক তপস্যা বলা হয় ॥১৪॥

অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান, ব্রাক্ষণ, গুরু ও প্রাজ্ঞগণের পূজা এবং শৌচ, সরলতা, ব্রহ্মচর্য ও অহিংসা-এগুলিকে কায়িক তপস্যা বলা হয়।

অনুদ্বেগকরং বাক্যং সত্যং প্রিয়হিতং চ যৎ। 
স্বাধ্যায়াভ্যসনং চৈব বাঙ্ময়ং তপ উচ্যতে।।১৫।।

অনুদ্বেগকরং (অবেদনাদায়ক) সত্যং (সত্য) প্রিয়হিতং চ (ও প্রিয় অথচ হিতকর) যৎ (যে) বাক্যং (বাক্য) স্বাধ্যায়াভ্যসনং চ এব (এবং বেদপাঠাভ্যাসকে) বাঙ্­ময়ং (বাচিক) তপঃ (তপস্যা) উচ্যতে (বলা হয়) ॥১৫॥


অন্যের অনুদ্বেগকর, সত্য, প্রিয় অথচ হিতকর যে বাক্য এবং বেদাভ্যাস—এই সকলকে বাচিক তপস্যা বলা হয় ॥১৫॥

অনুবাদঃ অনুদ্বেগকর, সত্য, প্রিয় অথচ হিতকর বাক্য এবং বৈদিক শাস্ত্র পাঠ করাকে বাচিক তপস্যা বলা হয়।

মনঃপ্রসাদঃ সৌম্যত্বং মৌনমাত্মবিনিগ্রহঃ।
ভাবসংশুদ্ধিরিত্যেতৎ তপো মানসমুচ্যতে।।১৬।।

মনঃ প্রসাদঃ (চিত্তের প্রসন্নতা) সৌম্যত্বং (স্নিগ্ধতা) মৌনম্ (স্থৈর্য্য) আত্মবিনিগ্রহঃ (সংযম) ভাবসংশুদ্ধিঃ (পবিত্রতা) ইতি এতৎ (এই সকলকে) মানসং (মানসিক) তপঃ (তপস্যা) উচ্যতে (বলা হয়) ॥১৬॥


চিত্তের প্রসন্নতা, স্নিগ্ধগাম্ভীর্য্য, স্থৈর্য্য, সংযম ও ভাবশুদ্ধি এই সকলই মানসিক তপস্যা বলিয়া কথিত হয় ॥১৬॥

অনুবাদঃ চিত্তের প্রসন্নতা, সরলতা, মৌন, আত্মনিগ্রহ ও ব্যবহারে নিষ্কপটতা-এগুলিকে মানসিক তপস্যা বলা হয়।

শ্রদ্ধয়া পরয়া তপ্তং তপস্তৎ ত্রিবিধং নরৈঃ।
অফলাকাঙ্ক্ষিভির্যুক্তৈঃ সাত্ত্বিকং পরিচক্ষতে।।১৭।।

তৎ (সেই) ত্রিবিধং (কায়িক, বাচিক ও মানসিক রূপ তিন প্রকার) তপঃ (তপস্যা) অফলাকাঙ্ক্ষিভিঃ (নিষ্কাম) যুক্তৈঃ (একনিষ্ঠ) নরৈঃ (পুরুষগণ কর্ত্তৃক) পরয়া (পরম) শ্রদ্ধয়া (শ্রদ্ধা সহকারে) তপ্তং (অনুষ্ঠিত হইলে) (তাহাকে) সাত্ত্বিকং (সাত্ত্বিক) পরিচক্ষতে (বলিয়া অভিহিত হয়) ॥১৭॥


নিষ্কাম, একনিষ্ঠ জনের ভগবৎপর শ্রদ্ধা সহকারে অনুষ্ঠিত—সেই ত্রিবিধ তপস্যাকে সাত্ত্বিক বলা হয় ॥১৭॥

অনুবাদঃ ফলাকাঙ্ক্ষা রহিত মানুষের দ্বারা পরম শ্রদ্ধা সহকারে অনুষ্ঠিত ত্রিবিধ তপস্যাকে সাত্ত্বিক তপস্যা বলা হয়।
সৎকারমানপূজার্থং তপো দম্ভেন চৈব যৎ। 
ক্রিয়তে তদিহ প্রোক্তং রাজসং চলমধ্রুবম্।।১৮।।

সৎকারমানপূজার্থং (লাভ, পূজা, প্রতিষ্ঠার জন্য) দম্ভেন চ এব (ও দম্ভের সহিত) যৎ (যে) তপঃ (তপস্যা) ক্রিয়তে (কৃত হয়) তৎ (তাহা) ইহ (এই জগতে) চলম্ (অনিত্য) অধ্রুবম্ (অনিশ্চিত) রাজসং (রাজসিক তপস্যা) প্রোক্তং (বলিয়া অভিহিত হয়) ॥১৮॥


লাভ, পূজা ও প্রতিষ্ঠার জন্য দম্ভের সহিত যে তপস্যা কৃত হয়, সেই অনিত্য ও অনিশ্চিত তপস্যা রাজসিক বলিয়া অভিহিত হয় ॥১৮॥

অনুবাদঃ শ্রদ্ধা, সম্মান ও পূজা লাভের আশায় দম্ভ সহকারে যে তপস্যা করা হয়, তাকেই এই জগতে অনিত্য ও অনিশ্চিত রাজসিক তপস্যা বলা হয়।
মূঢ়গ্রাহেণাত্মনো যৎ পীড়য়া ক্রিয়তে তপঃ।
পরস্যোৎসাদনার্থং বা তত্তামসমুদাহৃতম্।।১৯।।
মূঢ়গ্রাহেণ (বিচারহীন আগ্রহের সহিত) আত্মনঃ (নিজেকে) পীড়য়া (পীড়া দিয়া) বা (অথবা) পরস্য (পরের) উৎসাদনার্থং (বিনাশের জন্য) যৎ (যে) তপঃ (তপস্যা) ক্রিয়তে (কৃত হয়) তৎ (তাহা) তামসম্ (তামসিক তপস্যা) উদাহৃতম্ (বলিয়া কথিত হয়) ॥১৯॥
মূঢ়ের ন্যায় বিচারহীন আগ্রহের সহিত নিজেকে পীড়া দিয়া অথবা পরের বিনাশের জন্য, যে তপস্যা কৃত হয়—তাহাকেই তামসিক তপস্যা বলা হয় ॥১৯॥
অনুবাদঃ মূঢ়োচিত আগ্রহের দ্বারা নিজেকে পীড়া দিয়ে অথবা অপরের বিনাশের জন্য যে তপস্যা করা হয়, তাকে তামসিক তপস্যা বলা হয়।
দাতব্যমিতি যদ্দানং দীয়তেহনুপকারিণে। 
দেশে কালে চ পাত্রে চ তদ্দানং সাত্ত্বিকং স্মৃতম্।।২০।।

অনুপকারিণে (প্রত্যুপকার লাভের বাসনা রহিত হইয়া) দেশে (তীর্থাদি পুণ্যক্ষেত্রে) কালে চ (শুভযোগাদি সময়ে) পাত্রে চ (এবং যোগ্যপাত্রে) দাতব্যম্ (দান করা অবশ্য কর্ত্তব্য) ইতি (এইরূপ বুদ্ধিতে) যৎ (যাহা) দানং (দান) দীয়তে (করা যায়) তৎ (সেই) দানং (দানকেই) সাত্ত্বিকং (সাত্ত্বিক দান) স্মৃতম্ (বলা হয়) ॥২০॥


প্রত্যুপকার লাভের বাসনা রহিত হইয়া, কর্ত্তব্যবোধে, উপযুক্ত দেশ, কাল ও পাত্র বিচারপূর্ব্বক, যে দান করা যায়, তাহাই সাত্ত্বিক দান বলিয়া কথিত হয় ॥২০॥

অনুবাদঃ দান করা কর্তব্য বলে মনে করে প্রত্যুপকারের আশা না করে উপযুুক্ত স্থানে, উপযুক্ত সময়ে এবং উপযুক্ত পাত্রে যে দান করা হয়, তাকে সাত্ত্বিক দান বলা হয়।

যত্তু প্রত্যুপকারার্থং  ফলমুদ্দিশ্য বা পুনঃ।
দীয়তে চ পরিক্লিষ্টং তদ্দানং রাজসং স্মৃতম্।।২১।।

যৎ তু (আর যাহা) প্রত্যুপকারার্থং (প্রত্যুপকারের নিমিত্ত) বা (অথবা) ফলং (ফলের) উদ্দিশ্য (উদ্দেশ্য করিয়া) পুনঃ চ (আবার) পরিক্লিষ্টং (অতি কষ্টে) দীয়তে (দেওয়া হয়) তৎ দানং (সেই দান) রাজসং (রাজসিক দান বলিয়া) স্মৃতম্ (কথিত হয়) ॥২১॥


আর, প্রত্যুপকার লাভের জন্য বা স্বর্গাদি কামনা করিয়া ও অতিশয় মনঃকষ্টের সহিত যে দান করা যায়, সেই দানকে রাজসিক দান বলা হয় ॥২১॥

অদেশকালে যদ্দানমপাত্রেভ্যশ্চ দীয়তে।
অসৎকৃতমবজ্ঞাতং তত্তামসমুদাহৃতম্।।২২।।

অদেশকালে (অস্থানে ও অকালে) অপাত্রেভ্যঃ (অযোগ্য ব্যক্তিকে) অসৎকৃতং (অনাদর) অবজ্ঞাতং চ (ও অবজ্ঞার সহিত) যৎ (যে) দানং (দান) দীয়তে (দেওয়া হয়) তৎ (সেই দান) তামসং (তামসিক দান বলিয়া) উদাহৃতম্ (কথিত হয়) ॥২২॥


অস্থানে, অকালে ও অযোগ্য পাত্রে অনাদর ও অবজ্ঞার সহিত যে দান দেওয়া হয়, সেই দানকে তামসিক দান বলা যায় ॥২২॥

অনুবাদঃ যে দান প্রত্যুপকারের আশা করে অথবা ফল লাভের উদ্দেশ্যে এবং অনুতাপ সহকারে করা হয়, সেই দানকে রাজসিক বলা হয়। অশুচি স্থানে, অশুভ সময়ে, অযোগ্য পাত্রে, অনাদরে এবং অবজ্ঞা সহকারে যে দান করা হয়, তাকে  তামসিক দান বলা হয়।
ওঁ তৎসাদিতি নির্দেশো ব্রহ্মণস্ত্রিবিধঃ স্মৃতঃ। 
ব্রাহ্মণাস্তেন বেদাশ্চ যজ্ঞাশ্চ বিহিতাঃ পুরা।।২৩।।

ওঁ তৎ সৎ (ওঁ তৎ সৎ) ইতি (এই) ত্রিবিধঃ (তিন প্রকার) ব্রহ্মণঃ (পরব্রহ্মের) নির্দ্দেশঃ (উদ্দেশক) স্মৃতঃ (বলিয়া উক্ত হইয়াছে) তেন (সেই শব্দত্রয়ের দ্বারা) পুরা (পূর্ব্বকালে) ব্রাহ্মণাঃ (ব্রাহ্মণ) বেদাঃ চ (বেদ) যজ্ঞাঃ চ (ও যজ্ঞসমূহ) বিহিতাঃ (বিহিত হইয়াছে) ॥২৩॥


ওঁ তৎ সৎ এই তিনটিই পরব্রহ্মের উদ্দেশক বলিয়া শাস্ত্রে উক্ত হইয়াছে । সেই শব্দত্রয়ের সহিত সৃষ্টির আদিকালে ব্রাহ্মণ, বেদ ও যজ্ঞ সমূহও বিহিত হইয়াছে ॥২৩॥

অনুবাদঃ ওঁ তৎ সৎ- এই তিন প্রকার ব্রহ্ম-নির্দেশক নাম শস্ত্রে কথিত আছে। পুরাকালে সেই নাম দ্বারা ব্রাহ্মণগণ, বেদসমূহ ও যজ্ঞসমূহ বিহিত হয়েছে।
তস্মাদ্ ওঁ ইত্যুদাহৃত্য যজ্ঞদানতপঃক্রিয়াঃ। 
প্রবর্তন্তে বিধানোক্তাঃ সততং ব্রক্ষবাদিনাম্।।২৪।।

তস্মাৎ (অতএব) ওঁ ইতি (ওঁ এই ব্রহ্মোদ্দেশক শব্দ) উদাহৃত্য (উচ্চারণ করিয়া) ব্রহ্মবাদিনাম্ (বেদবাদিগণের) বিধানোক্তাঃ (শাস্ত্রোক্ত) যজ্ঞদানতপঃক্রিয়া (যজ্ঞ ও তপস্যা প্রভৃতি কর্ম্ম) সততং (সর্ব্বদা) প্রবর্ত্তন্তে (অনুষ্ঠিত হয়) ॥২৪॥


সেই হেতু বেদবাদিগণের শাস্ত্রোক্ত যজ্ঞ, দান ও তপস্যা প্রভৃতি কর্ম্ম, সর্ব্বদা ওঁ এই ব্রহ্মোদ্দেশক শব্দ উচ্চারণ করিয়া অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে ॥২৪॥

অনুবাদঃ সেই হেতু ব্রহ্মবাদীদের যজ্ঞ, দান, তপস্যা ও ক্রিয়াসমূহ সর্বদাই ওঁ এই শব্দ উচ্চারণ করে শাস্ত্রের বিধান অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
তদিত্যনভিসন্ধায় ফলং যজ্ঞতপঃক্রিয়াঃ। 
দানক্রিয়াশ্চ বিবিধাঃ ক্রিয়ন্তে মোক্ষকাঙ্ক্ষিভিঃ।।২৫।।

তৎ ইতি (তৎ এই ব্রহ্মোদ্দেশক শব্দ) [উদাহৃত] (উচ্চারণ পূর্ব্বক) ফলং (কর্ম্মের ফল) অনভিসন্ধায় (কামনা না করিয়া) মোক্ষকাঙ্ক্ষিভি (মোক্ষকামিগণ) বিবিধাঃ (বিভিন্ন প্রকার) যজ্ঞ তপঃক্রিয়াঃ (যজ্ঞ ও তপস্যার অনুষ্ঠান) দানক্রিয়াঃ চ (ও দান কার্য্য) ক্রিয়ান্তে (সম্পন্ন করিয়া থাকেন) ॥২৫॥


মোক্ষ-কামিগণ কর্ম্মের ফল কামনা না করিয়া তৎ এই ব্রহ্মোদ্দেশক শব্দ উচ্চারণ পূর্ব্বক বিভিন্ন প্রকার যজ্ঞ ও তপস্যার অনুষ্ঠান ও দান কার্য্য সম্পন্ন করিয়া থাকেন ॥২৫॥

অনুবাদঃ মুক্তিকামীরা ফলের আকাঙ্ক্ষা না করে ‘তৎ’ এই শব্দ উচ্চারণ-পূর্বক নানা প্রকার যজ্ঞ, তপস্যা, দান আদি কর্মের অনুষ্ঠান করেন।
সম্ভাবে সাধুভাবে চ সদিত্যেতৎ প্রযুজ্যতে। 
প্রশন্তে কর্মণি তথা সচ্ছব্দঃ পার্থ যুজ্যতে।।২৬।।

[হে] পার্থ ! (হে কুন্তীনন্দন !) সদ্ভাবে (ব্রহ্মত্বে) সাধুভাবে চ (ও ব্রহ্মজ্ঞতে) সৎ ইতি (সৎ এই শব্দ) প্রযুজ্যতে (প্রযুক্ত হয়) । তথা (তদ্রূপ) প্রশস্তে (মাঙ্গলিক) কর্ম্মাণি (অনুষ্ঠানে) এতৎ সৎ শব্দঃ (এই ব্রহ্মবাচক সৎ শব্দ) যুজ্যতে (ব্যবহৃত হয়) ॥২৬॥


হে পার্থ! সৎ শব্দের লক্ষ্য—সত্য ও সত্যনিষ্ঠ জন এবং মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানেও এই সৎ শব্দ প্রযুক্ত হয় ॥২৬॥

যজ্ঞে তপসি দানে চ স্থিতিঃ সদিতি চোচ্যতে।
কর্ম চৈব তদর্থীয়ং সদিত্যেবাভিধীয়তে।।২৭।।

যজ্ঞে (যজ্ঞে) তপসি (তপস্যায়) দানে চ (এবং দানেও) স্থিতিঃ চ (তাৎপর্য্যের নিত্যত্ব) সৎ ইতি চ (এই সৎ শব্দে) উচ্যতে (কথিত হয়) । তদর্থীয়ং (ভগবৎ প্রীতির উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত) কর্ম্ম চ এব (কর্ম্মও) সৎ ইতি এব (সৎ এই শব্দেই) অভিধীয়তে (কথিত হয়) ॥২৭॥


যজ্ঞে, তপস্যায় এবং দানেও তাৎপর্য্যের নিত্যত্ব লক্ষ্য করিয়া সৎ শব্দ প্রযুক্ত হয় । ভগবৎ প্রীতির উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত কর্ম্মও সৎ শব্দেই অভিহিত হইয়া থাকে ॥২৭॥

অনুবাদঃ হে পার্থ! সৎভাবে ও সাধুভাবে ‘সৎ’ এই শব্দটি প্রযুক্ত হয়। তেমনই শুভ কর্মসমূহে ‘সৎ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়। যজ্ঞে, তপস্যায় ও দানে ‘সৎ’ শব্দ উচ্চারিত হয়। যেহেতু ঐ সকল কর্ম ব্রহ্মোদ্দেশক হলেই ‘সৎ’ শব্দে অভিহিত হয়।
অশ্রদ্ধয়া হুতং দত্তং তপস্তপ্তং কৃতং চ যৎ। 
অসদিত্যুচ্যতে পার্থ ন চ তৎ প্রেত্য নো ইহ।।২৮।।
অনুবাদঃ হে পার্থ! অশ্রদ্ধা সহকারে হোম, দান বা তপস্যা যা কিছু অনুষ্ঠিত হয়, তাকে বলা হয় ‘অসৎ’। সেই সমস্ত ক্রিয়া ইহলোকে ও পরলোকে ফলদায়ক হয় না।

যজ্ঞে (যজ্ঞে) তপসি (তপস্যায়) দানে চ (এবং দানেও) স্থিতিঃ চ (তাৎপর্য্যের নিত্যত্ব) সৎ ইতি চ (এই সৎ শব্দে) উচ্যতে (কথিত হয়) । তদর্থীয়ং (ভগবৎ প্রীতির উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত) কর্ম্ম চ এব (কর্ম্মও) সৎ ইতি এব (সৎ এই শব্দেই) অভিধীয়তে (কথিত হয়) ॥২৭॥


যজ্ঞে, তপস্যায় এবং দানেও তাৎপর্য্যের নিত্যত্ব লক্ষ্য করিয়া সৎ শব্দ প্রযুক্ত হয় । ভগবৎ প্রীতির উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত কর্ম্মও সৎ শব্দেই অভিহিত হইয়া থাকে ॥২৭॥

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ