বেদে মাংসাহার - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

24 November, 2019

বেদে মাংসাহার

কোন সাহিত্যের ব্যাখা করিতে হইলে সেই সাহিত্যের ব্যাকরণ ও অভিধান অনুসারে করিতে হয়। সংস্কৃত সাহিত্য দুই প্রকারের আছে—বৈদিক সাহিত্য ও লৌকিক সাহিত্য। লৌকিক সাহিত্যের ব্যাখ্যা মুগ্ধবোধ ও সংক্ষিপ্তসার আদি ব্যাকরণের এবং অমরকোষ অভিধান অনুসারে করিতে হয় বৈদিক সাহিত্যের ব্যাখ্যা বৈদিক ব্যাকরণ “পানিনি” এবং শব্দ কোষ নিঘন্টু ও নিরুক্ত অনুসারে না করিলে অনর্থের সৃষ্টি হয়। বেদে কোন রুঢ়ি শব্দ নাই, সকল শব্দই যৌগিক বা যোগারু। অনর্থের কিছু নমুনা প্রদর্শিত হইল।
| “প্রেত জয়ত নর ইন্দ্রে। বঃ শৰ্ম্ম যচ্ছতু উগ্ৰাবঃ সন্তু ৰাহৰ হনাবৃষ সয়থ যঃ বেদ”—এই মন্ত্রের দেবতা। ( বিষয় বস্তু Subject matter) হইতেছে যোদ্ধাগন । যোদ্ধাদের স্তুতি করা হইয়াছে—হে যোদ্ধাগণ তোমরা দ্রুত গতিতে অগ্রসর হও, তাহাদের উপর বিজয়লাভ কর। প্র-ইত ধাতু গমণ অর্থে প্রেতা হইয়াছে। লৌকিক ব্যাকরণ মতে মৃত মনুষ্যকে আহবান করা হইয়াছে বিষ্ণুরূপী প্রেত রাজের'ও অর্থ করা হইয়াছে।
“স্বধিতে মৈনং হিংসী”– লৌকিক ব্যাকরণ মতে অর্থ হইল তরবারিকে শানিত করিয়া পশুর উদরচ্ছেদ করিবে। মন্ত্রের অর্থ হইল হে পরশু পশুকে হত্যা করিও না । এই মন্ত্রের দেবতা হইল বিদ্বানগণ । অর্থ হইল হে প্রশস্ত অধ্যাপক তুমি কুমারী শিষ্যাকে অনুচিৎ তাড়না করিও না।

"নমঃ শ্বভ্যঃ" --লৌকিক ব্যাকরণ অনুসারে ভাষ্য হইল হে কুকুর রূপী রুদ্র, তোমাকে নমস্কার। বৈদিক শব্দকোষ অনুসারে ‘নম” অন্ন অর্থে প্রয়োগ হয়। সুতরাং এই মন্ত্রের অর্থ হইল “কুকুরকে অন্ন দাও।
বৈদিক কোষ ও ব্যাকরণ অনুসারে ঋগ্বেদের ১ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম মণ্ডলের মন্ত্র গুলিয় অর্থ এরূপ হইবে-ঋগ্ধের ১০ম ৮৬ সু মন্ত্র ১৫ । বৃষভো ন তিগ্ন শৃঙ্গে। Sন্ত যুথেষু রোবৎ মন্থস্তু ইন্দ্ৰ শং হৃদে যং তে সুনোতি ভাব, বিশস্মাদিন্দ্র উত্তরঃ ।।

পদাথঃ- (ন) যে প্রকার ( তীক্ষ্ম শৃঙ্গ) প্রখর শিং বিশিষ্ট বৃষভঃ) বদ (মুথেষু দলে অন্তরঃ) মধ্যে (য়োরুবৎ ) শব্দ করে ঐ প্রকার এই জীব শরীরের ৭িভিন্ন ইন্দ্রিয়ের মধ্যে প্রেরণা দান করে। হে (ই) পরমেশ্বর (ভায়, বিভিগুণ সমূহের মননদ্বারা উপাসকগণ যম) যাকে (তে) তোমাকে পাইবার জন্য {সুনেতি যে জ্ঞান উৎপন্ন করে (তে তােমার প্রাপ্তি তে (মন্থঃ) ঐ জ্ঞান দে) উপাসকের হৃদয়ে (শম, কলাণ কারী হয় (ইন্দ্র) পরমেশ্বর (বিশ্বস্মং) সকল পদাথের জীবজগৎ ও প্রকৃতি পরমাণুর কাৰ্য কারণের মধ্যে উত্তর ) সূহ্ম তম ও শ্রেষ্ঠ। ভাবার্থ -যে প্রকারে বলদ দলের মধ্যে শব্দ করে ঐরূপ এই জীব শরীরে বিভিঃ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে প্রেরনা দান করে গুন স্মুহের দ্বারা উপাসক গণের হৃদয়ে তোমার প্রাপ্তিতে কল্যাণ কারী জ্ঞান উৎপন্ন হয়। ঈশ্বর সকল পদার্থের মধ্যে সূক্ষতম ও শ্রেষ্ঠ।

এই মন্ত্রে ১৫ বা ২০ অঙ্ক বোধক কোন পদ নাই। প্রার্থনা উপাসনা আদি ভাব যুক্ত ইন্দ্ৰ শব্দ ঈশ্বর বোধক, অন্যাত্র রাজ; তেজস্বী পুরুষ ও নেতা আদি বুঝায়।

“কর্হি স্বিৎসা ত ইন্দ্র চেত্যাসদঘস্য যদ্ভিনদো রক্ষ এষৎ।
মিক্রূবো যচ্ছসনে ন গাবঃ পৃথিব্যা আপৃগমুয়া শয়ন্তে।।
ঋগ্বেদ ১০/৮৯/১৪
পদার্থঃ- হে (ইন্দ্র) তেজস্বী পুরুষ (তে) 'তোমার (অঘস) পাপ নাসকারী (চত্যা) শক্তি (কহিম্বিৎ) কখন (অসৎ) প্রকট হইবে (যৎ) যাহা হইতে তুমি (রক্ষ) রাক্ষস দিগকে (ভিনদঃ) ভেদ করিয়া( মিত্ৰক্রুৰঃ) মিত্রের উপর করতাকারীদের (এষৎ) আঈষৎ ভীত করিয়া (যৎ) যাহা হইতে (শসনে) শ্মশানে, ভাগাড়ে (গবঃ) পশুকে ! ন সমান (আপৃক) মারিয়া (অমুয়) এই (পৃথিব্যা) পৃথিবীর উপর শয়ন্তে পড়ে।

ভাবার্থ – হে তেজস্বী পুরুষ! তোমার পাপ নাশক শক্তি কখন প্রকট হইবে? যাহার দ্বারা তুমি রাক্ষস দিগের নাশ কর এবং মিত্র দিগের দ্রোহ ও কুতকারীগণকে ভীতকর এবং তাহাদের শরীর ভাগাড়ে ফেল যেমন মৃত পশুকে ভাগাড়ে ফেলে ।

ঋগ্বেদ ৬ মণ্ডল। ১৭। ১১ মন্ত্র
‘বর্ধানং বিশ্বে মরুতঃ সজোষাঃ পচচ্চতং মহিষাং তুভ্যম,
। পূষা বিষ্ণুত্রীণি সরাঃ মি ধাবনবৃত্রহণং মদিরমশুমস্মৈ ,

পদাথ-হে (ইন্দ্র) সূর্যের সমান বর্তমান রাজা (সজোষাঃ) তুল্য প্রীতির সহিত সেবনকারী অর্থাৎ প্রাণীমাত্রের প্রতি সমদর্শিতা (বিশ্বে) সম্পূর্ণ (মরুতঃ) মনুষ্য (যম) যিনি আপনাকে (বর্দ্ধান)
বৃদ্ধি করে আর যে (পুষা) পুষ্টিকারী | (ধাবন) ধাবিত হইয়া (বিষ্ণু) ব্যাপক বিজলি যে রূপ (ত্রীনি সরাংসি) দু লোক আন্তরিক ও পৃথিবী এই তিন লোকে প্রবাহিত অবস্থায় ব্যাপ্ত আছে (অ)ইহার জন্য (মদিবমং ) আন্দনকারী (অংশুম) বিভক্ত ( বৃত্রহনমং) সূৰ্য্য যে রূপ মেঘকে নাশ করে ঐরূপ শত্রুকে নাশকারী, আর যে (তুভ্যাম), ' আপনার জন্য (শতম,) বহু (মহিষান, ) উত্তম পদার্থের দান দ্বারা এবং পরোপকারের জন্য (পচং) পাক করে তাহাকে আপনারা জানুন।

| ভাৰাৰ্থ—যে রূপ প্রজাপালক রাজা রাজ্য বিস্তার করে সেইরূপ প্ৰজাদিগকে নিরস্থর বৃদ্ধি করুক।
১ম মণ্ডল ১৬২।১১ মন্ত্র
যত্তে গাত্রাদাগ্নিনা পচ্যমানদভি শূলং নিহতস্যাবধাবতি। মা তদ্ভূম্যামা শ্রিষন্মা তৃণেষু দেবেভ্যস্তদুশদ্ভ্যো রাতমস্তুু।।

পদাথ-হে বীর (নিধিতপ্ত) নি পূর্বক হন ধাতুর অর্থ প্রহার করা অস্ত্র প্রয়ােগ করিতে থাকা কালে (ত) তােমার ( অগ্নিনাং) ক্রোধাগ্নি হইতে ( গাত্রাং) হস্তদ্ধারা ( পচামানৎ) অগ্নি সংযোগ তীক্ষ্ণধার বিশিষ্ট (যৎ ) যে অস্ত্র (অভিশূলং) নিদ্ধারিত লক্ষে। (অবধাবতি) ধাবিত হয় (মা) না । (তদৃভূম্যানশিযৎ ) তৃণ আচ্ছাদিত ভূমির উপর পড়িয়া নিস্ফল না হয় ( উশদভাঃ) আমাদিগের সম্পত্তি আদি আক্রমনকারী ( দেবেভঃ) দিগুনশালী শত্রুর উপর ( রাতম) অস্ত্ৰ ( অস্তু) হোক। ভাবার্থ-যুদ্ধকুশল যোদ্ধার বর্ণনা করা হইয়াছে। সুস্থিরতা পূর্বক শত্রুর উপর অস্ত্র প্রয়োগ করিতে হইবে।
১ম মণ্ডল ১৬২ সুক্ত মন্ত্র ১২ ।
যে বাজিনং পরিপশ্যন্তি পক্কং য ঈমাহুঃ সুরভির্নির্হরেতি। যে চার্বতো মাসম্ভিক্ষামুপাসত উতাে তেষামতিগূর্তির্ন ইন্বতু।।
পদার্থ- (যে) যে মনুষ্য (বাজিনং) বহু অন্নাদি পদার্থ ’ ভােজনের (পক্কং) পাক করা (পরিপশ্যন্তি) চারিদিক হইতে দেখে ( যে) যে ( ইম্) জল পাক করে (অস্থি ) কহে ( তেষাম) উহাদের (অভিগুভিঃ) উদ্যম (সুরভিঃ) সুগন্ধ (নঃ ) আমাদিগকে (ইহুতু) প্রাপ্ত হয়। (যে চ) আর যে (অর্বতঃ) প্রাপ্ত ( মাসস্তিকান) মাংস পাইবার জন্য ( উতো) তর্ক বিতর্ক ( উদাসতে) করে, হে বিধান তুমি (ইতি) এই প্রকার মাংসাদি ভক্ষণ ত্যাগ দ্বারা উদ্যমকে (নিহর) নিরঙ্কর দৃঢ় কর।
ভাবার্থ-যে সকল মনুষ্য অল্প জল শোধন ও পাক করিতে জানে এবং মাংস ভােজন তাগ করে, তাহাৱা উদাম শীল হয়। মন্ত্র ১০!
“যন্নীক্ষণং মাংষ্পচন্যা উখায়া যা পাত্ৰাণি যূষ্ণ আসেচনানি।
উম্মন্যাপিধানা চরুণ্যমাঁকাঃ সূনাঃ পরিভূষন্ত্যশ্বম্ ।।
পদাথ’-(যৎ ) যে মনুষ্য ( মাংম্প ন্য। মাংসদি পাকের (উখায়া) পাকথলি কড়া আনি ত্যাগ করিয়া ( নিক্ষনং ) নিরস্থর দেখে (য) যে (যুষণ) রস বা জল ( আসেচনানি) ঠিক মত ঢালে (পাত্ৰানি) পাত্রে বড়া আদিতে (উষ্মন্যা) গরম রাখিতে ( অপিধান) ঢাকনা অাদি দেয় এবং (চরূণা)
অন্নাদি পাক কুশলী (অঙ্কঃ) উত্তমরূপে উপাদায়ে করিতে জানে ( অশ্বম) ঘােড়াকে শিক্ষা দেয় এবং (পরিভূসন্তি) জীন আদি আরা সুশোভিত করে সে (সূনাঃ) সুখে গমনা গমন করে।
ভাবার্থ- যে মনুষ মাংসাদি পাকদোষ বহিত পাকথলিতে অন্নপাক করে ' এর আগে ঠিকমত জল দেয় এবং উষ্ণ রাখে সে হয় উত্তম পাচক !
ঐ রূপ যে ঘড়াকে সুশিক্ষা দেয় এবং জীনাদী (সজ্জায়) দ্বারা সজ্জিত করে সে সুখে গমনাগমন করে।

ঋগ্বেদ ৮/১০১/১৫। মন্ত্র“
প্র নু ৰোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগামদিতিং বধিষ্ট ”
পলাখ'- (চিকিতুষে জনায় প্রবঅচ) জ্ঞানী বান পুরুষের নিকট আনি বলিতেছি যে, (অনাগাম) নিরপরাধ ( অদিতিম )পৃথিবী সদৃশ অহিংস (গম) গরুকে ( বধিষ্ঠ। হনন করিও না।
অনুবাদ— (পরমেশ্বর উপদেশ দিতেছেন যে ) আমি জ্ঞানবান পুরুষের নিকট বলিতেছি যে, নিরপরাধ পৃথিবী সদৃশ। অহিসংগো জাতিকে হত্যা করিও না।
অথর্ববেদ ৮।৩।১৫ তে আমরা দেখতে পাই সেখানে বেদ মাংস ভক্ষের সাপোর্ট না করে বরং মাংসাহারী কে কঠোরতম দন্ডের বিধান দিচ্ছে –
যঃ পৌরষেযেণ ক্রবিষাং সমঙ্কতে যো অশ্বয়েন পশুনাং যতুধান।
যো অঘ্ন্যায় ভরতি ক্ষীরমগ্নে তেষাং শীর্ষাণি হরসাপি বৃশ্চ।।
(অথর্ববেদ ৮।৩।১৫)
—- যে দুঃখদায়ী জীব  পুরুষ বধ দ্বারা প্রাপ্ত মাংস দ্বারা যে ঘোড়ার মাংস এবং পশু দ্বারা নিজেকে পুষ্ট করে এবং যে হত্যার অযোগ্য গাভীর দুধকে নষ্ট করে হে অগ্নি তাহার  শির  কে নিজের বল দ্বারা ছিন্ন করো।
মনুস্মৃতিতে ও মাংসকে অত্যন্ত ঘৃণার সাথে দেখা হয়েছে এবং মাংস ভোজীদের ঘাতক সঙ্গা দেওয়া হয়েছে –
সমুপত্তিঞ্চ মাংসস্য বধবন্ধৌ চ দেহিনাম।
প্রসমীক্ষ নিবর্তে সর্ব্বমাংস্য ভক্ষণাৎ।।
(মনুস্মৃতি,  ৫।৪৯)
— শুক্র শোনিক দ্বারা মাংসের উৎপত্তি হইয়া থাকে  অতএব ইহা ঘৃণিত। এবং বধ ও বন্ধন নিষ্ঠুর হদয়ের কর্ম। ইহা নিশ্চয় করিয়া সাধুরা মাংস ভক্ষন হইতে নিবৃত হন।
অনুমন্তা বিশাসিতা নিহতা ক্রয়বিক্রয়ী।
সংস্কর্তা চোপর্হত্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতক।
(মনুস্মতিঃ ৫।৫১)
— যাহার অনুমতিতে পশু হনন করা হয়, যে অস্ত্র দ্বারা পশুর অঙ্গ প্রতঙ্গ খন্ড করা হয়, যে পশু বধ করে, যে মাংসের ক্রয় বিক্রয় করে, যে মাংস পাক করে, যে মাংস পরিবেশন করে, যে ব্যক্তি ভোজন করে ইহাদিগকে ঘাতক বলা যায়।
বিদ্বান পন্ডিতরা মাংস শব্দের অর্থ নিম্নোক্ত প্রকার করেছেন –
মাংসাভক্ষয়িতামুত্র যস্য মাংসমিহাদ্ম্যহম।
(মনুস্মৃতিঃ ৫।৫৫)
— (মাম = আমাকে,  স= ভোজন করবে)  ইহ লোকে আমি যাহার মাংস ভোজন করিতেছি পরলোকে সে আমাকে ভোজন করবে।
যেহেতু হত্যা ব্যতিত মাংস প্রাপ্ত হয় না।  সেহেতু বেদ বহু জায়গায় পরিষ্কারভাবে পশু হত্যার নিষেধ করেছে। এবং সেই সাথে সেসব হত্যাকারীকে শাস্তির  বিধান দিয়েছে-
ইমং মা হিংসীদ্বিপাদ পশু সহস্রাক্ষ মেধায় চীয়মান।
(যজুর্বেদ ১১।৪৭)
—- হে সহস্র প্রকার দৃষ্টি যুক্ত রাজন! সুখ প্রাপ্ত করানোর জন্য নিরন্তর বৃদ্ধিশীল এই দ্বিপদী মনুষ্য এবং পশুকে হত্যা করো না।
প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগা মদিতিং বধিষ্ট।।
(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
— হে জ্ঞানবান পুরুষের নিকট আমি বলেতেছি  নিরপরাধ  অহিংস পৃথিবী সদৃশ গাভীকে হত্যা করিও না।
यदि॑ नो॒ गां हंसि॒ यद्यश्वं॒ यदि॒ पूरु॑षम्। 
तं त्वा॒ सीसे॑न विध्यामो॒ यथा॒ नो ऽसो॒ अवी॑रहा ॥-atharvaveda/1/16/4
যদি নো গাং হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম।তং ত্বা সীসেন বিধ্যামো যথা নোহসো অবীরহা।।
(অথর্বেদ ১।১৬।৪)
— যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে  যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব  যাহাতে আমাদের মধ্যে বীরদের বিনাশক কেহ না থাকে।
“অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গাম অশ্বম পুরুষং বধী”
(অথর্ববেদ ১০।১।২৯)
— নির্দোষের হত্যা অবশ্যই ভয়ানক। আমাদের গাভী, অশ্ব, পুরুষকে মেরো না।
“গোঘাতম্ ক্ষেধে যঃ গাম্ বিকৃন্তন্তম”
(যজুর্বেদ ৩০।১৮)
– গাভীর ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী যে, ক্ষুধার জন্য গাভীকে হত্যা করে। তাকে ছেদন করি।
” অদিতিম মা হিংসী”
(যজুর্বেদ ১৩। ৪৯)
– হত্যার অযোগ্য গাভীকে কখনো মেরো না।
” মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট”
(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
— নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না।
— “অঘ্না ইব” গাভী সমূহ বধের অযোগ্য। সর্বদা ( পশুন ত্রায়েথাম, যজুঃ ৬।১১) পশুদের রক্ষা করো তাদের পালন করো (অঃ ৩।৩০।১)।
অনেকে আবার এই কুতর্ক করা আরম্ভ করে যে,  বৈদিক কালে সরাসরি মাংস ভক্ষন না করলেও যজ্ঞে  পশুকে আহুতি দিয়ে তারপর করতো।  কিন্তু যজ্ঞ সর্বদাই পবিত্র সেখানে কোনরুপ হত্যা সম্ভব নয়।  সে জন্যই বেদ যজ্ঞকে অধ্বর সঙ্গা দিয়েছে। নিরুক্ত সংহিতা ১।৮ এ অধ্বর শব্দের অর্থ বলা হয়েছে “অধ্বর ইতি যজ্ঞনাম ধ্বরতিহিংসাকর্মা তৎপ্রতিষেধ ” অধ্বর = হিংসারহিত কর্ম অর্থাৎ  যাহাতে কোন রূপ হত্যা হয় না।
রাজসূয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্তদধ্বরঃ।
অর্কাশ্বমেধাবুচ্ছিষ্ট জীবর্বহিভমদিন্তম।।
(অথর্ববেদ ১১।৭।৭)
— রাজসূয়, বাজপেয়, অগ্নিষ্টোম এইসব যজ্ঞ  অধ্বর অর্থাৎ হিংসারহিত। অর্ক এবং অশ্বমেধ যজ্ঞ প্রভূর মধ্যে স্থিত, যাহা জীবের বৃদ্ধিকারী এবং অতন্ত্য হর্ষদায়ক।
অগ্নে যঃ যজ্ঞমধ্বরং বিশ্বত বিশ্বতঃ পরিভূরসি।  স ইদ্দেবেষু গচ্ছতি।।
(ঋগবেদ ১।১।৪)
— হে পরমেশ্বর যে অধ্বর অর্থাৎ হিংসা রহিত যজ্ঞকে সর্বত্র ব্যাপক হয়ে সব প্রকারে পালনকারী।  এই হিংসারহিত যজ্ঞে বিদ্বান লোক সুখ প্রাপ্ত করে।
যজ্ঞের জন্য অধ্বর (হিংসারহিত)  শব্দের প্রয়োগ ঋগবেদ ১।১।৮, ১।১৪।২১, ১।১৯।১, ১।২৮।১,  ৩।২১।১ এরূপ বহু স্থলে এসেছে।  এবং মহাভারতেও  স্বীকার করা হয়েছে যে যজ্ঞে পশু হত্যার স্বিকৃতি নেই। এগুলো যে ধূর্তেরাই প্রচলন করছে
ত্রিষ্টুপ মাংসম্ প্রাণস্য ( ঐ০ আ০ ২/১/৬) ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মিই মাংস।
সুরা মৎসা মধু মাংসমাসবং কৃসরোদনম্।
ধুর্তেঃ প্রবর্তিতং হোতন্নৈবদ্ বেদেষু কল্পিতম।।
(মহাঃ শান্তি পর্বঃ ২৬৫,শ্লোক ৯)
—সুরা, মৎস, মধু, মাংস, তালরস, স্বাগু এইসব বস্তুকে ধুর্তেরাই যজ্ঞে প্রচলিত করেছে।  বেদে এসব উপযোগের বিধান নেই।
অব্যবস্থিতমর্যদৈবিমূঢর্নাস্তিকৈর্তবৈ।
সংশয়াত্মাভিরব্যক্তৈহিংসা সমনুবর্তিত।।
(মহাঃ শান্তি পর্বঃ অঃ ২৬৫, শ্লোক ৪)
— যে ধর্মের মর্যাদা থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে মূর্খ, নাস্তিক তথা যার আত্মা সংশয়যুক্ত এবং যার কোন প্রসিদ্ধি নেই এইরূপ লোকই হিংসাকে সমর্থন করে।
মানান্মোহাচ্চ লোভাচ্চ লৌল্যমেত্যপ্রকল্পিতম্।।
(মহাঃ শান্তি পর্ব,  অঃ ২৬৫, শ্লোক ১০)
— সেই ধূর্তেরা অভিমান, মোহ এবং লোভের বশীভূত হয়ে সেই সব বস্তুর প্রতি লোলুপতা প্রকট করে থাকে।
যজ্ঞের মহিমা বর্ণনার  জন্য পিতামহ ভীষ্ম  যুধিষ্ঠির কে এক উপ্যাখান শোনান। উপাখ্যান টি মহাভারতের শান্তি পর্বের ২৭২ নং অধ্যায়ে এসেছে। সেই উপখ্যানে এক ব্রাহ্মণ যিনি কি না যজ্ঞে পশু বলি দেবার কথা চিন্তা মাত্রেই তার সমস্ত তপস্যা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।
তস্য তেনামুভাবনো মৃগহিংমমসাত্মনস্তদা।
তপো মহৎসমুচ্ছিন্নং তস্মাদ্হিংসান যজ্ঞিয়া।।
(মহাঃ শান্তি পর্ব,  অঃ২৭২, শ্লোক ১৮)
—-আমি সেই পশু কে বধ করে স্বর্গলোক প্রাপ্ত করবো।  এই ভেবে মৃগকে হিংসা করার জন্য উদ্যত সেই ব্রাহ্মণের মহান তপস্যা তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।  এই জন্য হিংসা যজ্ঞের জন্য হিতকর নয়।
এই জন্য বেদ আমাদের সর্বদা হিংসারহিত কর্ম করার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং আমাদের শরীর এবং দন্তের উপযোগী খাবার হিসেবে ভাত, ডাল,যব ইত্যাদি এসব খাবারের অনুমোদন দিয়েছে।
ব্রীহিমন্নং যবমত্তমথো মাষমথো তিলম ।
এষ বাং ভাগো নিহিতো রত্নেধেয়ায় দন্তৌ মা হিংসিষ্ট পিতরং মাতরং চ।।
(অথর্ববেদ ৬।১৪০।২)
— হে দন্ত! অন্ন খাও যব খাও  মাষ কালাই এবং তিল খাও তোমার এই ভাগ  উত্তম পদার্থ ধারনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে  হে দন্ত! পিতা ও মাতাকে হিংসিত করো না [মাংসাহার থেকে দূরে থাকো]
এবং বেদ মন্ত্রে সেই পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে যে, আমাদের দন্ত যেন ব্যাঘের ন্যায় না হয়।  কারন বাঘের দন্ত সর্বদা মাংসাহার করে থাকে।   সে জন্য আমাদের দন্ত কে ব্যাঘের ন্যায় না করে কল্যাণকারী করো।
যৌ ব্যাঘ্রাববরূঢৌ জিঘত্সতঃ পিতরং মাতরং চ।
তৌ দন্ত ব্রহ্মণস্পতে শিবৌ কৃণু জাতবেদঃ।।
(অথর্ববেদ ৬।১৪০।১)
— যে দন্ত ব্যাঘ্রের ন্যায় পিতা ও মাতাকে খাওয়ার জন্য চেষ্টা করে সেই দাঁত কে  হে সর্বব্যাপক জ্ঞানের পরিপালক কল্যাণকারী করো।
অর্থাৎ বেদ আমাদের সর্বদাই কল্যাণকারী হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।  যাতে  করে আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন কষ্ট না পায়।  আমরা যেন নিরীহ প্রাণীদের হিংসা না করি।  কারন,  “অহিংসা পরম ধর্ম ” (মহাঃ আদিঃ অঃ ১১, শ্লোঃ ১৩) এবং “হিংসা অধর্মস্তথহিত” (মহাঃ শান্তিঃ ২৭২, শ্লোক ১৮) হিংসা অধর্ম এবং অহিতকর। “প্রাণিনামবধস্তাত সর্বজায়ান্” (মহাঃ কর্ণ পর্ব, অঃ ২৬৯, শ্লোক ২৩)  অর্থাৎ প্রাণীদের বধ না করাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
জীবিতুং যঃ স্বযং চেচ্ছেত্ কথং সোন্যং প্রঘাতয়েত।
যদ যদাৎমসি চেচ্ছেত তত পরস্যাপি চিন্তয়েত।।
(মহাঃ শান্তি পর্ব, অঃ ২৫৯, শ্লোক ২২)
— যে স্বয়ং জীবিত থাকতে চায় সে অন্যের প্রাণ কিভাবে নিতে পারে? মানুষ  নিজের জন্য যে যে সুখ সুবিধা চায় সে অন্যের জন্যও সুখের চিন্তা করে।
এ জন্যই  বেদ বলছে –
স্বস্তি মাত্রে উত পিত্রে নো অস্তু স্বস্তি গোভ্যো জগতে পুরুষেভ্যঃ।
বিশ্বং সুভুতং সুবিদত্রং নো অস্তু জ্যোগেব দৃংশেম সূর্যম।।
(অথর্ববেদ ১।৩১।৪)
— আমাদের মাতার জন্য এবং পিতার জন্য সুখদায়ক হও এবং গাভীর জন্য পুরুষের জন্য জগতের জন্য সুখদায়ক হও সম্পূর্ণ উত্তম ঐশ্বর্য এর উত্তম জ্ঞান আমাদের জন্য হও  এভাবে বহু কাল পর্যন্ত সূর্য কে ই দেখতে থাকবো।
যজ্ঞে কি পশু বলি শঙ্কা সমাধানঃ
যজ্ঞের মহত্বতার গুনগান করে বেদ বলছে যে, সত্যনিষ্ঠ বিদ্বান লোক যজ্ঞ দ্বারাই পূজনীয় পরমেশ্বরের পূজা করে। "যজ্ঞ বৈ শ্রেষ্ঠতম কর্ম " আদি বচন অনুসারে যজ্ঞ কর্মেই সব শ্রেষ্ঠ ধর্মের সমাবেশ হয়ে থাকে। যাহাতে হিংসার কোন স্খান নেই, এজন্যই যজ্ঞে "অধ্বর" শব্দটি এসেছে। নিরুক্ত ১।৮ এ অধ্বর শব্দের অর্থ হিংসরহিত করা হয়েছে। এ জন্য ঋগবেদে বলা হয়েছে যে, এই হিংসারহিত যজ্ঞেই বিদ্বানরা সুখ প্রাপ্ত করে থাকে (ঋগবেদ ১।১।৪)।
অতএব বৈদিক যজ্ঞে পশুবলির বিধান শুধু একটি ভ্রান্ত ধারনা মাত্র। যজ্ঞে পশুবলির প্রথা মধ্য কালে এসেছে। প্রাচীন কালে যজ্ঞে পশুবলির প্রথা ছিলো না। ধর্ম পথ হতে বিচ্যুত লোক নিজ মাংসলোলুপতার বশীভূত হয়ে যজ্ঞে পশুবলির প্রথা প্রচলন করেছে। যার প্রমাণ আমরা মহাভারতে পাই -
.
সুরা মৎসা মধু মাংসমাসবং কৃসরোদনম্।
ধুর্তেঃ প্রবর্তিতং হোতন্নৈবদ্ বেদেষু কল্পিতম।।
(মহাঃ শান্তি পর্বঃ ২৬৫,শ্লোক ৯)
---সুরা, মৎস, মাংস, তালরস, এইসব বস্তুকে ধুর্তেরাই যজ্ঞে প্রচলিত করেছে। বেদে এসব উপযোগের বিধান নেই।
.
অব্যবস্থিতমর্যদৈবিমূঢর্নাস্তিকৈর্তবৈ।
সংশয়াত্মাভিরব্যক্তৈহিংসা সমনুবর্তিত।।
(মহাঃ শান্তি পর্বঃ অঃ ২৬৫, শ্লোক ৪)
--- যে ধর্মের মর্যাদা থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে মূর্খ, নাস্তিক তথা যার আত্মা সংশয়যুক্ত এবং যার কোন প্রসিদ্ধি নেই এইরূপ লোকই হিংসাকে সমর্থন করে।
.
মানান্মোহাচ্চ লোভাচ্চ লৌল্যমেত্যপ্রকল্পিতম্।।
(মহাঃ শান্তি পর্ব, অঃ ২৬৫, শ্লোক ১০)
--- সেই ধূর্তেরা অভিমান, মোহ এবং লোভের বশীভূত হয়ে সেই সব বস্তুর প্রতি লোলুপতা প্রকট করে থাকে।
.
অর্থাৎ মহাভারত থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, যজ্ঞে পশুবলি ধূর্তদের কাজ কিন্তু পাশ্চাত্য বিদ্বান মাক্সমুলার , গ্রিফিথ আদি বেদে মাংসাহারের প্রচার করে কেবল মাত্র পবিত্র বেদ কেই কলঙ্কিত করেছে। মধ্য কালে বাম মার্গ নামে একটি দলের প্রসার খুব হয়েছিলো। যারা মাংস, মদিরা, মৎস, মৈথুন আদি কে মোক্ষের মার্গ বলে মানতো। সায়ন,মহিধর আদি বিদ্বান যারা ছিলো তারা বাম মার্গ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারনেই বেদে বলিপ্রথা তথা মাংসাহারের কথা উল্লেখ করেন। বেদে মাংস ভক্ষন এবং বলি প্রথার মিথ্যা প্রচারের কারনে ধর্মের যে ক্ষতিসাধন হয়েছে তা অবর্ণনীয়। আজ কাল তো আমাদের সামনে এই শঙ্কা উপস্থিত হয়ে যে, বেদে গো আহুতি এবং গো মাংস ভক্ষনের নির্দেশ রয়েছে। অথচ আমরা গাভী কে মাতৃতূল্য জ্ঞান করে এসেছি এবং গাভীকে হত্যার চিন্তাও করতে পারি না। এবং বেদেও গাভীকে "অঘ্না" "অদিতি" ইত্যাদি শব্দে ভূষিত করা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে গাভীগুলো হত্যার অযোগ্য। এবং বেদের অসংখ্য জায়গায় গো হত্যার নিষেধ এবং গো হত্যাকারীকে শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। যেমন-
.
প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগা মদিতিং বধিষ্ট।।
(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
--- হে জ্ঞানবান পুরুষের নিকট আমি বলেতেছি নিরপরাধ অহিংস পৃথিবী সদৃশ গাভীকে হত্যা করিও না।
.
যদি নো গাং হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম।তং ত্বা সীসেন বিধ্যামো যথা নোহসো অবীরহা।।
(অথর্বেদ ১।১৬।৪)
--- যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব যাহাতে আমাদের মধ্যে বীরদের বিনাশক কেহ না থাকে।
.
"অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গাম অশ্বম পুরুষং বধী"
(অথর্ববেদ ১০।১।২৯)
--- নির্দোষের হত্যা অবশ্যই ভয়ানক। আমাদের গাভী, অশ্ব, পুরুষকে মেরো না।
.
"গোঘাতম্ ক্ষেধে যঃ গাম্ বিকৃন্তন্তম"
(যজুর্বেদ ৩০।১৮)
- গাভীর ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী যে, ক্ষুধার জন্য গাভীকে হত্যা করে। তাকে ছেদন করি।
.
" অদিতিম মা হিংসী"
(যজুর্বেদ ১৩। ৪৯)
- হত্যার অযোগ্য গাভীকে কখনো মেরো না।
.
" মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট"
(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
--- নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না।
.
--- "অঘ্না ইব" গাভী সমূহ বধের অযোগ্য। সর্বদা ( পশুন ত্রায়েথাম, যজুঃ ৬।১১) পশুদের রক্ষা করো তাদের পালন করো (অঃ ৩।৩০।১)।
.
অথচ এসব পৌরাণিক সায়ন, মহিধর, রমেশ আদি বেদ ভাষ্যকার দের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। তাদের ভাষ্যে এতটাই সুস্পষ্টভাবে গো আহুতি এবং মাংস ভক্ষনের নির্দেশনা পাওয়া যায় যে সেটা অস্ত্রস্বরূপ বেদ বিদ্বেষীরা ব্যবহার করে বেদকে কলুষিত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে। এ পর্যায়ে এরকমই কিছু মন্ত্র শঙ্কাস্বরূপ তুলে ধরবো এবং সেগুলোর বাস্তবিক অর্থ জানার প্রয়াস করবো -
.
=>> শঙ্কা - ০১
হে ভারত অগ্নি! তুমি আমাদিগের! তুমি বন্ধ্যাগাভী ও বৃষ ও গর্ভিনী গাভী সকলের দ্বারা আহুত হইয়াছো।
(ঋঃ ২।৭।৫)
.
সমাধানঃ
মন্ত্রটিতে যথাক্রমে তিনটি শব্দ এসেছে যথা - বশা, উক্ষ এবং অষ্টাপদী।
★ বশাঃ এ শব্দের অর্থ রমেশ বন্ধ্যাগাভী করেছে। কিন্তু বশা শব্দের আরো অনেক অর্থ হয়। শতপথ ব্রাহ্মণ ২।৮।৩।১৫ অনুসারে বশা অর্থ পৃথিবী -(ইয়ং [পৃথিবী] বৈ বশা পৃশ্নি)। অথর্ববেদ ১।১০।১ অনুসারে ঈশ্বরীয় নিয়ম বা নিয়ামক শক্তি। এবং অথর্ববেদ ১০।১০।৪ এ বশা অর্থে সংসারকে বশকারী পরমাত্মা শক্তি। বেদের বহুস্থলে বশা শব্দটি এসেছে যেগুলোতে এর অর্থ বশকারী, ঈশ্বরীয় শক্তি, পৃথিবী ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
★ উক্ষঃ এই শব্দটি সেচনার্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। "উক্ষেথাং মিত্রা বরুনা ঘৃতেন ; ঋঃ ৭।৬৪।৪"। নিরুক্ত ১৩।৯ অনুসারে "উক্ষঃ বৃদ্ধিকারক অথবা জল সেচন অর্থে। কিন্তু রমেশ এখানে বৃষ অর্থ করায় এমন অনর্থ ঘটেছে।
★ অষ্টাপদীঃ সরল অর্থে আমরা বুঝি আট পা। এ অর্থেই বোধ হয় রমেশ "অষ্টাপদী" = গর্ভবতী গাভী করেছে। অর্থাৎ গাভীর চার পা এবং গর্ভস্থ গাভীর চার পা এই আট পা। কিন্তু বেদের অর্থ আধ্যাত্মিক এবং গূঢ তাৎপর্য সম্পন্ন। এখানে অষ্টাপদী অর্থে যোগাঙ্গের আট চরন অর্থাৎ যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার,ধারনা, ধ্যান, সমাধি। সম্পূর্ণ মন্ত্রের ভাবার্থ এই যে প্রভূকে লাভের জন্য আমাদের তিন কার্য আবশ্যক। (ক) ইন্দ্রীয় কে বশ রাখা (খ) উৎপন্ন সোম শক্তি শরীরের মধ্যে সিঞ্চন করা এবং (গ) অষ্টাঙ্গ যোগ।
মন্ত্রটি নিম্নরূপ -
.
ত্বং নো অসি ভারতাগ্নে বশাভিরুক্ষভিঃ। অষ্টাপদীভিরাহুত।।
(ঋগবেদ ২।৭।৫)
.
সরলার্থঃ হে অগ্রনি প্রভূ! আপনি [ইন্দ্রীয়] বশীকরন দ্বারা নিজ ভিতর প্রাপ্ত করে আমাদের হও, এই প্রকার শরীরের মধ্যে শক্তি সেচন দ্বারা আপনি আট যোগাঙ্গরূপ চরন দ্বারা আহুত হয়ে [আমাদের হও]
(অনুবাদঃ হরিশরন সিদ্ধান্তলংকার)
.
=>> শঙ্কা - ০২
হে অগ্নি! আমরা তোমাকে হৃদয় দ্বারা সংস্কৃত ঋকরূপ হব্য প্রদান করছি। বলশালী বৃষভ ও ধেনুসকল তোমার নিকট পূর্বক্তরূপ হব্য হউক
(ঋগবেদ ৬।১৬।৪৭)
.
সমাধানঃ
এ মন্ত্রটিতেও তিনটি শব্দ এসেছে - বশা, উক্ষন এবং ঋষভ। যার অর্থ রমেশ বলশালী বৃষ এবং ধেনুসকল করে সেগুলোকে অগ্নির হব্য দ্রব্য তৈরী করেছে। বশা এবং উক্ষণ শব্দের অর্থ পূর্বেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে - উক্ষ (সেচনার্থে) + কনন্= উক্ষন। বাকী রয়েছে " বৃষভ" শব্দটি যার অর্থ শুধু বৃষ নয়। শতপথ ব্রাহ্মণ ৫।৩।১।৩ এ ইন্দ্র কে বৃষভ বলা হয়েছে "ইন্দ্র যদৃষভ"। ইন্দ্র শব্দে ঐশ্বর্যবান পুরুষ তথা একজন শ্রেষ্ঠ রাজা বুঝায়। অতএব মন্ত্রটির যথার্থ অর্থ নিম্নরূপ দাড়ায় -
.
আ তে অগ্নে হবির্হৃদা তষ্টং ভরামসি।
তে তে ভবন্তুক্ষণ ঋষভাসো বশা উত।।
(ঋগবেদ ৬।১৭।৪৭)
.
সরলার্থঃ হে তেজস্বিন! তোমার জন্য আমরা উত্তম মন্ত্র দ্বার হৃদয় দ্বারা সুসংস্কৃত গ্রাহ্য, অন্ন প্রস্তত করি তোমার কার্যের জন্য ঐ সব কার্যভার উঠানকারী তথা বীর্যসেচনে সামর্থ সত্য ন্যায় দ্বারা কান্তিমান, নরশ্রেষ্ঠ পুরুষ এবং রাষ্ট্রকে বশকারী অধিকারী তোমার অধিনে হোক।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
=>> শঙ্কা -০৩
হে ইন্দ্র! তোমার নিমিত্তে পুরোহিতদিগের সহিত একত্রে বৃষকে পাক করি এবং পঞ্চদশ তিথীর প্রত্যেক তিথীতে সোমরস প্রস্তুত করিয়া থাকি।
( ঋঃ ১০।২৭।২)
.
সমাধানঃ
মন্ত্রটিতে "বৃষভং পচানি" শব্দগুলো এসেছে। যার অর্থ রমেশ এখানে বৃষভ (ষাড়) কে পচানি (রান্না) করার কথা উল্লেখ করেছে। বৃষভ = বৃষ (সেচনার্থক) +অভচ (ঋষি বৃষিভ্যাং কিত) = বৃষভ। অথবা বৃহ (উদ যমন অর্থে) + অভচ = বৃষভ (বাহুলক নিয়ম দ্বারা "হ" কে "ষ") যাস্ক "বৃহ" ধাতুকে বর্ষণ অর্থ মেনেছেন। তাছাড়া নিরুক্তে বৃষভ এর অনেক প্রকার অর্থ রয়েছে। নিরুক্ত ৭।২৩ এ বৃষভ অর্থ বর্ষা বর্ষনকারী রয়েছে, "প্র নু মহিত্বং বৃষভস্য বোচম"। আবার নিরুক্ত ৬।২৩ এ "বৃষভ" অর্থ " বেদজ্ঞ বিদ্বান" রয়েছে - "অনর্বাণং বৃষভং মন্ত্রজিহ্লম" অর্থাৎ সুন্দর বাণীসম্পন্ন বেদজ্ঞ বিদ্বান কে অন্ন দ্বারা পোষন করো। ঋগবেদ ১০।১০।১০ এবং নিরুক্ত ৪।২০ এ "বৃষভ" অর্থ বীর্য সেচনে সামর্থ পুরুষ বলা হয়েছে। বাকী থাকলো "পচানি শব্দটি। বৈদিক কোষে "পচন" শব্দের অর্থ হচ্ছে বিদ্যা অথবা বল কে পরিপক্ক করা। ঋগবেদ ২।১২।১৪ এবং অঃ ২০।৩৪।১৫ এ একই কথা বলা হয়েছে, "যঃ সুনন্তম অবতি যঃ পচন্তম"। অর্থাৎ মন্ত্রটিতে মেঘের তূল্য পুরুষকে পরিপক্ক করার কথা বলা হয়েছে। কোন ষাড় কে রান্নার করার কথা বলা হয় নি। মন্ত্রটি নিম্নরূপ -
.
যদীদহং যুধয়ে সংয়ান্যদেবয়ুন্তন্বা শুশুজানান।
তে তুম্রেং বৃষভং পচানি তীব্রং সুতং পঞ্চদশং নিষিঞ্চম।।
(ঋগবেদ ১০।২৭।২)
.
সরলার্থঃযখনই আমি যুদ্ধ করবার নিমিত্তে দেহ বা বিস্তৃত সেনা দ্বারা বর্ধিত হয়ে, দেব বা বিদ্বান কে না দানকারী দুষ্ট জনকে লক্ষ্য করে নিজ সৈন্য বল কে একত্রিত করবো। হে প্রভু! আমার সাথে তোমার অতি বলশালী বৃষ্টিকারক মেঘের তূল্য শর বর্ষনকারীকে পরিপক্ক করবো এবং অতি তীক্ষ্ণ অভিষেক যোগ্য পূর্ণচন্দ্রবত বিরাজমান পুরুষকে মুখ্য পদের উপর অভিষিক্ত করবো।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
.
=>> শঙ্কা - ০৪
হে বৃষাকপি নিতে! তুমি ধনশালিনী ও উৎকৃষ্ট পুত্রযুক্তা আমার সুন্দরী পুত্রবধু! তোমার বৃষদিগকে (ষাড় কে) ইন্দ্র ভক্ষন করুন। তোমার অতি চমৎকার অতি সুখকর হোমদ্রব্য তিনি ভক্ষন করুন। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।
(ঋঃ ১০।৮৬।১৩)
.
সমাধানঃ
মন্ত্রটিতে "উক্ষণ" শব্দে বৃষ করায় এমন অনর্থ ঘটেছে। উক্ষন শব্দের অর্থ আমরা পূর্বেই ব্যাখ্যা করেছি। তবুও এস্থলে পুনরায় কিঞ্চিত তুলে ধরছি। উক্ষ (সেচন অর্থে) + কনিন্ = উক্ষন। এবং বৃদ্ধিকরন অর্থেও উক্ষ ধাতু এসেছে। নিরুক্ত সংহিতা ১৩।৯ এ উক্ষণ শব্দের অর্থটি পরিষ্কার হযেছে। "উক্ষণ উ- ক্ষেতের্বৃদ্ধিকর্মণ উক্ষনত্যুদকেনোতিবা ; নিরুঃ ১৩।৯ " অর্থাৎ বৃদ্ধি অর্থে উক্ষ অথবা জল সেচন কারী অর্থে। অতএব মন্ত্রটির সত্যার্থ এরূপ দাড়ায় - ইন্দ্র (পরমঐশ্বর্যবান প্রভূ) "উক্ষণ"সেচনকারী মেঘ দ্বারা উৎপন্ন "তে হবি" অন্নের তূল্য (জগত) কে "ঘসত" ভক্ষন করেন। অর্থাৎ প্রলয় কালে সমস্ত জগৎ কে লীন করে নেয়।
মন্ত্রটির সরলার্থ নিম্নরূপ -
.
বৃষকপায়ি রেবতি সুপুত্র আহু সুস্নুষে।
ঘসত্ত ইন্দ্র উক্ষণঃ প্রিয়ং কাচিৎকরং হবির্বিশ্বস্মাদিন্দ্র উত্তর।।
(ঋগবেদ ১০।৮৬।১৩)
.
সরলার্থঃ সমস্ত সুখ কে মেঘের তূল্য বর্ষনকারী প্রভূর অপার শক্তি! হে অনেক ঐশ্বর্যের স্বামিনি! হে উত্তম পুত্র, জীবধারী! হে উত্তম সুখপূর্বক বিরাজমান, সুখদায়িনি! পরমঐশ্বর্যবান প্রভূ সেচনকারী মেঘ দ্বারা উৎপন্ন প্রীতিকারক অনেক সুখ দান কারী তোমার উত্তম অন্ন সদৃশ [জগত কে] ভক্ষন করেন [প্রলয়কালে লীন করে নেয় ] পরমঐশ্বর্যবান প্রভূ সবার থেকে উপরে।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
.
=>> শঙ্কা - ০৫
আমার জন্য পঞ্চদশ এমন কি বিংশ বৃষকে (ষাড়) পাক করিয়া দেয়। আমি খাইয়া শরীরের স্থুলতা সম্পাদন করি। আমার উদরের দুইপার্শ পূর্ন হয়। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।
(ঋঃ ১০।৮৬।১৪)
.
সমাধানঃ
একই "উক্ষণ" শব্দের ব্যবহার এ মন্ত্রেও হয়েছে তাই এখানে এর ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। মন্ত্রটিতে পনেরো ষাড় নয় বরং সেচন সামর্থ পনেরো - দশ ইন্দ্রীয় এবং পঞ্চ প্রাণকে এবং শরীরস্থ বিশ অঙ্গকে পরিপক্ক করার বলা হয়েছে। বেদের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যাই সর্বাপেক্ষা গ্রহনযোগ্য কারন আক্ষরিক অর্থে সর্বদাই অনর্থ ঘটিয়া থাকে।
.
উক্ষ্ণো হি মে পঞ্চদশ সাকং পচন্তি বিংশতিম্।
উতাহমদ্মি পীব ইদুভা কুক্ষো পৃণন্তি মে বিশ্বস্মাদিন্দ্র উত্তর।।
(ঋগবেদ ১০।৮৬।১৪)
.
সরলার্থঃ আমার সেচনকারী পনেরো - দশ ইন্দ্রীয় এবং পঞ্চ প্রাণ হাত এবং পায়ের বিশ আঙ্গুলির সমান শরীরের ভিতর বিশ অঙ্গকে এক সাথে পরিপাক করে এবং পরিপুষ্ট হয়ে পুষ্টিদায়ক ভোগ্য দেহ এবং নানা প্রকার ভোগ কে বা সেই প্রাণকে ভোগ করি, ঐ সমস্ত প্রাণ নিশ্চয়রূপে আমার দুই পার্শ পূর্ণ করে, শক্তিশালী প্রভূ সবার থেকে উপরে।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)
.
অতএব ইহা স্পষ্ট যে বেদ যজ্ঞে গো আহুতি দেবার মিথা প্রচার নিতান্তই ভ্রান্ত।অধ্বর রূপ যজ্ঞকে বেদ কখনো নির্দোষ প্রাণীর রক্ত দিয়ে অপবিত্র করতে বলে নি। বরং পবিত্র বেদের নির্দেশ এই যে আমরা সর্বদা যেন জগতের সমস্ত প্রাণীর জন্য সুখকর হই -
"স্বস্তি মাত্রে উত পিত্রে নো অস্তু স্বস্তি গোভ্যো জগতে পুরুষেভ্যঃ।(অথর্ববেদ ১।৩১।৪)"
--- আমাদের মাতার জন্য এবং পিতার জন্য সুখদায়ক হও এবং গাভীর জন্য পুরুষের জন্য জগতের জন্য সুখদায়ক হও।

ওম্ শম্

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

तैत्तिरीय ब्राह्मणम्

  Conti..... Conti........ Conti..........

Post Top Ad

ধন্যবাদ