ইনফেকশন - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

14 December, 2019

ইনফেকশন

 সংক্রমণের ইংরেজি পরিভাষা হল ইনফেকশনসংক্রমণ বলতে কোন পোষক জীবের দেহকোষে রোগ সৃষ্টিকারী সংঘটকের অনুপ্রবেশ, আক্রমণ, সংখ্যাবৃদ্ধি, পোষকের দেহকলার সাথে সংঘটিত বিক্রিয়া এবং এর ফলে উৎপন্ন বিষক্রিয়াকে বোঝায়। সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট রোগকে সংক্রামক রোগ বা ছোঁয়াচে রোগ বলে।সংক্রমণ বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ সংঘটক (এজেন্ট) যেমন- ভাইরাস, ভিরয়েড , প্রিয়ন, ব্যাকটেরিয়া, নেমাটোড ( বিভিন্ন প্রকার কৃমি), পিঁপড়া, আর্থ্রোপড যেমন উকুন, এঁটুল, মাছি এবং বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক দ্বারা সংঘটিত হয়।
পোষক (হোস্ট) তাদের অনাক্রম্যতন্ত্র বা প্রতিরক্ষাতন্ত্র ব্যবহার করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। স্তন্যপায়ী পোষক প্রাণী জন্মদত্ত আনাক্রম্যতন্ত্র ব্যবহার করে, যার ফলশ্রতিতে প্রদাহ এবং অভিযোজিত প্রতিক্রিয়া হয়।
সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট ঔষধগুলির মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া নিরোধক বা অ্যান্টিবায়োটিক, ভাইরাস নিরোধক (অ্যান্টিভাইরাল), ছত্রাক নিরোধক (অ্যান্টিফাঙ্গাল), প্রোটোজোয়া নিরোধক (অ্যান্টিপ্রোটোজোয়াল) এবং কৃমি নিরোধক (অ্যান্টিহেলমিনথিক) ঔষধ।
🔴ভাইরাস (Virus)হল একপ্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা বা অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভিতরেই মাত্র বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এরা অতি-আণুবীক্ষণিক এবং অকোষীয়। ভাইরাসকে জীব হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দ্বিমত আছে। ভাইরাস মানুষ,পশু-পাখি, উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। এমনকি, কিছু ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে- এদের ব্যাক্টেরিওফেজ (Bacteriophage) বলা হয়।
ভাইরাস ল্যাটিন ভাষা হতে গৃহীত একটি শব্দ। এর অর্থ হল বিষ। আদিকালে রোগ সৃষ্টিকারী যে কোন বিষাক্ত পদার্থকে ভাইরাস বলা হত। বর্তমান কালে ভাইরাস বলতে এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুকে বোঝায়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর বহু রোগ সৃষ্টির কারণ হল ভাইরাস। উদ্ভিদ, প্রাণী, ব্যাকটেরিয়া , সায়ানোব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রভৃতি জীবদেহের সজীব কোষে ভাইরাস সক্রিয় অবস্থায় অবস্থান করতে পারে। আবার নিষ্ক্রিয় অবস্থায় বাতাস, মাটি, পানি ইত্যাদি প্রায় সব জড় মাধ্যমে ভাইরাস অবস্থান করে। কাজেই বলা যায়, জীব ও জড় পরিবেশ উভয়ই ভাইরাসের আবাস।
ভাইরাস কে জীবাণু না বলে 'বস্তু' বলা হয়। কারণ, জীবদেহ ডিএনএ,আরএনএ ও নিওক্লিক এসিড দিয়ে গঠিত,প্রোটিন তাই ভাইরাস অকোষীয়।ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্ষুদ্র। ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এদের দেখা যায়না। সাধারণত এদের আকার 10 nm থেকে 300 nm পর্যন্ত হয়ে থাকে।তবে কিছু ভাইরাস এর চেয়ে বড় হতে পারে।ভাইরাস সাধারণত নিম্ন লিখিত আকৃতির হয়ে থাকে। গোলাকার, দণ্ডাকার, বর্তুলাকার, সূত্রাকার, পাউরুটি আকার, বহুভুজাক্রিতি, ব্যাঙ্গাচি আকার প্রভৃতি।বসন্ত জাতীয় ভাইরাস ঘটিত রোগর প্রতিরোধক হিসেবে ভ্যাক্সিন (Vaccine) প্রথম আবিষ্কার হয়।
ভাইরাস জনিত রোগ সমূহঃমানুষের রোগ
🟡আধুনিক ব্যাকটেরিয়ার পূর্বপুরুষেরা এককোষী অণুজীব ছিল এবং প্রায় চার বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে আবির্ভূত প্রথম জীবনের রূপ ছিল। প্রায় তিন বিলিয়ন সময় ধরে অধিকাংশ জীবই আণুবীক্ষণিক ছিল এবং ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তারকারী প্রাণের রুপ ছিল।ব্যাক্টেরিয়া হলো এক প্রকারের আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত,অসবুজ, এককোষী অণুজীব। এরা এবং (আরকিয়া) হলো প্রোক্যারিয়ট (প্রাক-কেন্দ্রিক)।ব্যাকটেরিয়া আণুবীক্ষণিক জীব।
যদিও ব্যাকটেরিয়ার জীবাশ্ম বিদ্যমান আছে, যেমন স্ট্রোমালোইটস, তবু তাদের বৈশিষ্ট্যসূচক অঙ্গসংস্থানের ঘাটতি ব্যাকটেরিয়ার বিবর্তনের ইতিহাস পরীক্ষায় তাদেরকে ব্যবহৃত হওয়া রোধ করে বা একটি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া প্রজাতির উদ্ভবের সময় নিরুপণে বাধা সৃষ্টি করে । তাসত্ত্বেও ব্যাকটেরিয়ার জাতিজনি পুনর্গঠনে জিন অনুক্রম ব্যবহৃত হতে পারে  আর এই গবেষণাগুলো নির্দেশ করে যে, ব্যাকটেরিয়া প্রথম অপসৃত হয় আর্কিয়া/প্রকৃতকেন্দ্রিক বংশধারা থেকে । ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়ার সবচেয়ে সাম্প্রতিক সাধারণ পূর্বপুরুষ সম্ভবত একটি হাইপারথার্মোফাইল(অত্যুষ্ণপ্রেমী) ছিল যেটি প্রায় ২.৫-৩.৫  বিলিয়ন বছর আগে বাস করত।  ব্যাকটেরিয়াও আর্কিয়া ও প্রকৃতকোষীর দ্বিতীয় বৃহৎ বিবর্তমূলক অপসারণে জড়িত ছিল।
অত্র, প্রকৃতকোষীরা প্রসূত হয় আদি ব্যাকটেরিয়ার প্রকৃতকেন্দ্রিক কোষের পূর্বপুরুষদের সাথে অন্তঃমিথোজীবী সম্পর্কে প্রবেশ করার পর, যেগুলো নিজেরা সম্ভবত আর্কিয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল ।  এই সম্পর্ক আলফা-প্রোটিওব্যাকটেরিয়াল মিথোজীবীদের প্রারম্ভিক প্রকৃতকোষীদের দ্বারা গ্রাসকরণ বিজড়িত করে হয় মাইটোকন্ড্রিয়া অথবা হাইড্রোজিনোসাম গঠন করে, যেগুলো এখনো সব জ্ঞাত প্রকৃতকোষী জীবে পাওয়া যায় ( কখনো অত্যন্ত হ্রাসপ্রাপ্ত রূপে, যেমনঃ প্রাচীন অ্যামিটোকন্ড্রিয়াল প্রোটোজোয়াতে) ।
পরবর্তীতে, কিয়ৎ প্রকৃতকোষী যেগুলো ইতোমধ্যে মাইটোকন্ড্রিয়াধারী ছিল, সেগুলোও সায়ানোব্যাকটেরিয়ার মতো জীবদের গ্রাস করে (Engulfing) এবং শৈবাল ও উদ্ভিদে ক্লোরোপ্লাস্ট গঠন পরিচালনা করে। এটি প্রাথমিক এন্ডোসিমবায়োসিস হিসাবে বিদিত।পৃথিবীতে আনুমানিক প্রায় ৫×১০৩০ টি ব্যাকটেরিয়া আছে (Whitman, William B.; Coleman, David C.; Wiebe, William J. (১৯৯৮-০৬-০৯)। "Prokaryotes: The unseen majority"। Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America। 95 (12): 6578–6583। PMID 9618454। আইএসএসএন 0027-8424)
🟢 আকৃতি অনুসারে ব্যাকটেরিয়া চার প্রকার ৷ যথা:
১। কক্কাস (এসমস্ত ব্যাকটেরিয়া গোলাকার আকৃতির। এরা এককভাবে বা দলবেঁধে থাকতে পারে। এরা নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টি কারী ব্যাকটেরিয়া।)
২৷ ব্যাসিলাস (দণ্ডাকার ব্যাকটেরিয়া)
৩৷ স্পাইরিলাম(সর্পিল আকৃতির ব্যাকটেরিয়া)
৪৷ কমা(এরা দেখতে কমার মত, উদাহরণ কলেরার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া)
(খ) রঞ্জনের ভিত্তিতে ২ প্রকার ৷
১৷ গ্রাম পজিটিভ (যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া ক্রিস্টাল ভায়োলেট রং ধরে রাখে সে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া )
২। গ্রাম নেগেটিভ (এরা ক্রিস্টাল ভায়োলেট রং ধরে রাখতে পারেনা)
🔵ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহারঃ
  • অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরীতে
  • প্রতিষেধক টিকা তৈরীতে
  • নাইট্রোজেন সংবদ্ধকরণে-এ
  • পতঙ্গ নাশকরণে
  • পাট শিল্পে→Clostridium
  • চামড়া শিল্পে→Bacillus
  • রাসায়নিক পদার্থ তৈরীতে
  • ভিটামিন তৈরীতে
  • চা,কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ।
🟣 "অ্যান্টিবায়োটিক" সাধারণভাবে ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়, ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না।অ্যান্টিবায়োটিক কয়েক ধরনের জৈব-রাসায়নিক ঔষধ যা অণুজীবদের (বিশেষ করে ব্যাক্টেরিয়া) নাশ করে বা বৃদ্ধিরোধ করে। সাধারানতঃ এক এক অ্যান্টিবায়োটিক এক এক ধরনের প্রকৃয়ায় অন্যান্য অণুজীবের বিরুদ্ধে কাজ করে। বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া(Bacteria) ও ছত্রাক(Fungi) অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করে Iঅ্যান্টিবায়োটিক হল আরও বড় জীবাণু-নাশক শ্রেণীর সদস্য যার মধ্যে আছে নানা প্রকার অ্যান্টি-ভাইরাল (ভাইরাস-নাশক), অ্যান্টি-ফাঙ্গাল (ছত্রাক-নাশক) ইত্যাদি। প্রকৃতিতেও বহু জীবাণু-নাশক আছে যাদের অনেককেই এখনও ঔষধ হিসাবে পরিক্ষা করে দেখা হয়নি, যেমন ব্যাক্টেরিওসিন (Bacteriocin)- ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা নিসৃত কাছাঁকাছি ধরনের ব্যাক্টেরিয়া-ঘাতক প্রোটিন টক্সিন (বিষ)। সাধারণভাবে অ্যান্টিবায়োটিক শব্দটি ক্ষুদ্র জৈব-রাসায়নিক পদার্থ বোঝায়, বৃহত প্রোটিন নয় বা অজৈব-রাসায়নিক অণু নয়, (যেমন আর্সেনিক)
🟠ভাইরাস নিরোধক ঔষধ বলতে এমন কিছু সক্রিয় রাসায়নিক পদার্থকে বোঝায় যেগুলি কোনও ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংক্রামক রোগের চিকিৎসাতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি হয় ভাইরাসকে বিনষ্ট করে কিংবা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করে। ভাইরাস-সৃষ্ট রোগব্যাধিগুলির মধ্যে রয়েছে এইচআইভি/এইডস (মানব প্রতিরক্ষা-অভাবসৃষ্টিকারী ভাইরাস / অর্জিত প্রতিরক্ষা অভাবজনিত উপসর্গ), ইনফ্লুয়েঞ্জা, বিসর্প (হার্পিস) সিমপ্লেক্স টাইপ ১ (মুখগহ্বরের বিসর্প) এবং টাইপ ২ (যৌনাঙ্গের বিসর্প), ঘুনশি ঘা (হার্পিস জোস্টার), ভাইরাসঘটিত যকৃৎপ্রদাহ (হেপাটাইটিস), মস্তিষ্কপ্রদাহ (এনসেফালাইটিস), সংক্রামক মনোনিউক্লিওসিস এবং সাধারণ সর্দিকাশি।
⚫ভাইরাস সাধারণত নিউক্লিয়িক অ্যাসিড (ডিএনএ বা আরএনএ) এবং একে ঘিরে থাকা একটি প্রোটিন আবরণ নিয়ে গঠিত। কোষের বিভিন্ন উপাদান উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক ভাইরাসদের নেই। তাই এগুলি নিরুপায় পরজীবী, অর্থাৎ বেঁচে থাকতে হলে ও প্রজনন করতে হলে তাদেরকে কোনও কোষে প্রবেশ করতে হয়। ভাইরাস একবার কোষে প্রবেশ করলে এটির নিউক্লিয়িক অ্যাসিড পোষক কোষকে ভাইরাসে উপাদান তৈরি করার নির্দেশ দেয়। কিছু ক্ষেত্রে যেমন হার্পিস সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভাইরাসের নিউক্লিয়িক অ্যাসিডটি কোনও প্রতিলিপিকরণ ছাড়াই আশ্রয় কোষের ভেতরে থেকে যায়, যাকে ভাইরাসের সুপ্তাবস্থা (ভাইরাল লেটেন্সি) বলে। অন্য কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাস উৎপাদন করতে গিয়ে পোষক কোষটির মৃত্যু হয়। কিছু ভাইরাসঘটিত রোগের চিকিৎসাপ্রণালীর একটি বড় সমস্যা হল সুপ্ত ভাইরাসগুলি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
ভাইরাস নিরোধক ঔষধ নকশা ও নির্মাণ করা বিভিন্ন কারণে দুরূহ। এখানে উল্লেখ্য যে ব্যাকটেরিয়া নিরোধক বা অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধগুলি ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরের উপাদানের সংশ্লেষণে বিঘ্নের সৃষ্টি করে, কিন্তু মানুষের কোষের উপর কোনও প্রভাব ফেলে না, কেননা ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরের ঔপাদানিক গঠন-কাঠামো মানুষের কোষপ্রাচীর থেকে ভিন্ন ও স্বাধীন। কিন্তু এর বিপরীতে ভাইরাসের জীবনচক্র প্রায় সম্পূর্ণরূপে পোষক মানবকোষের জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ার উপরে নির্ভরশীল। ভাইরাস পোষক কোষের ভেতরে অবস্থান করে বলে ভাইরাস নিরোধক পদার্থটিকে এমন হতে হয় যেন সেটি ভাইরাসের উপর ক্রিয়া করে কিন্তু একই সাথে পোষক কোষের উপর গুরুতর কোনও প্রভাব যেন না ফেলে। আবার দ্বিতীয় একটি সমস্যা হল এই যে, একেকটি ভাইরাসের কাঠামো একেক রকম। বহু রকমের ভাইরাসকে একসাথে আক্রমণ করতে পারে (broad spectrum; আক্ষরিক অর্থে "প্রশস্ত বর্ণালি"), এরকম ভাইরাস নিরোধক ঔষধ তৈরি করা প্রায় দুঃসাধ্য। সাধারণত কোনও ভাইরাস নিরোধক ঔষধ বিশেষ এক ধরনের ভাইরাসকে লক্ষ্য করে বানানো হয়। তৃতীয়ত, বিশেষ ভাইরাসকে লক্ষ্য করে নির্মিত ঔষধীয় চিকিৎসাও প্রায়শই দীর্ঘমেয়াদে নিষ্ফল হয়, কেননা ভাইরাস সাধারণত এমন কোনও দীর্ঘস্থায়ী বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে না, যা যেকোনও সময়ে অনন্যভাবে ঐ ভাইরাসটিকে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। কারণ সময়ের সাথে সাথে ভাইরাসের অ্যান্টিজেনিক বা প্রতিরক্ষা-উদ্দীপক প্রোটিনগুলি (যে প্রোটিনগুলি পোষকদেহে প্রতিরক্ষামূলক উত্তরের সৃষ্টি করে) প্রায়শই পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হয়।
ভাইরাসবিজ্ঞানীদেরকে ভাইরাস নিরোধক পদার্থ নকশা করার সময় তাই ভাইরাসের প্রজনন চক্রের সম্বন্ধে বিস্তারিত জ্ঞান আহরণ করতে হয়। একটি ভাইরাস নিরোধককে অবশ্যই ভাইরাসের প্রতিলিপিকরণ চক্রের (replication cycle) পাঁচটি মৌলিক ধাপের যেকোনও একটিকে ব্যাহত করতে হয়। এগুলি হল ১) পোষক কোষের গায়ে সংযুক্ত হওয়া ও প্রাচীর ভেদ করে কোষের ভেতরে প্রবেশ করা। ২) ভাইরাসের আবরণমোচন অর্থাৎ প্রোটিন পৃষ্ঠতল খুলে ভাইরাসের অন্তঃস্থ ডিএনএ বা আরএনএ-র নির্গমন, ৩) ভাইরাসের ডিএনএ-র নির্দেশ অনুযায়ী পোষক কোষ কর্তৃক নতুন ভাইরাসীয় উপাদানের সংশ্লেষ। ৪) ভাইরাসীয় উপাদানগুলির সন্নিবেশনের মাধ্যমে নতুন ভাইরাসের সৃষ্টি এবং ৫) পোষক কোষ থেকে ভাইরাসের নির্গমন। কিন্তু ভাইরাসের প্রতিলিপিকরণ চক্র নির্ণয় করা কঠিন। পরীক্ষাগারে মানব কোষ আক্রমণকারী ভাইরাসগুলিকে উৎপাদন করা কঠিন। ফলে পরীক্ষাগারে ভাইরাস নিরোধকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখাও কঠিন। মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণীর উপরে করা পরীক্ষাগুলিও মানবদেহের জন্য সাধারণত প্রযোজ্য নয়।
🟤ভাইরাসঘটিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সফল সমাধান হচ্ছে টিকাগ্রহণের মাধ্যমে দেহের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করা। ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিও, হাম, মাম্পস, জলবসন্ত, ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে এটি সফল হয়েছে। এক্ষেত্রে জীবন্ত কিন্তু দুর্বল ভাইরাস কিংবা মৃত ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। যেমন টিকাদান কর্মসূচির কারণে জলবসন্ত রোগ নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রতিনিয়ত তাদের প্রতিরক্ষা উদ্দীপক প্রোটিনগুলি পরিবর্তন করছে বলে পুনরায় টিকাগ্রহণ করতে হয়। কিছু কিছু ভাইরাসের দলে ৫০-এরও বেশি ভিন্ন ভিন্ন ভাইরাস থাকে, ফলে কার্যকরী টিকাদান দুঃসাধ্য।
নিষ্ক্রিয় টিকাদান পদ্ধতিতে প্রতিরক্ষাবিশিষ্ট (ইমিউন) ব্যক্তিদের রক্তরস বা প্রতিরক্ষিকা (অ্যান্টিবডি) ব্যবহার করে ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এইসব ইমিউনোগ্লোবিউলিন বা প্রতিরক্ষিকাগুলি (যেমন যেগুলি হেপাটাইটিস বা শ্বসনীয় সিনসাইশিয়াল ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়) কেবলমাত্র রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেই কার্যকর, সংক্রমণ-পরবর্তী চিকিৎসার জন্য নয়।
সারা বিশ্বে প্রায় ২০টি নিরাপদ ও কার্যকর ভাইরাস নিরোধক টিকা রয়েছে যেগুলি সারা বিশ্বে ব্যবহারের জন্য সুলভ্য। এই ভাইরাস নিরোধকগুলি জনস্বাস্থ্য ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অর্থসাশ্রয়ী উপকরণ হতে পারে। কিন্তু এগুলি বিশ্বের বহু দেশে পুরোপুরি এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে না, যার কারণ শিশুদের চিকিৎসার জন্য উন্নত স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা অবকাঠামোর অনুপস্থিতি। যেমন প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১ লক্ষ শিশু হামের কারণে মারা যায়, যদিও এটি নিরাপদে ও স্বল্প খরচে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ