(ভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, ষষ্ঠ অধ্যায়, শ্লোক ৪)
শুকদেব, পরীক্ষিতকে বললেন— পরীক্ষিত! একবার মনুর হাঁচির ফলে উনার নাসিকা থেকে ইক্ষ্বাকু নামের একটি পুত্র সন্তান উৎপন্ন হলো।
সমীক্ষা ১. হাঁচি দিয়ে সন্তান জন্ম?? হেইডা কেমনে সম্ভব ভাই??
২. এটা কি ধরনের বিজ্ঞান?? নিশ্চয়ই লীলা বিজ্ঞান নাহলে বৈষ্ণবীয় বিজ্ঞান
বিচিত্র যোগী
(ভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, ২৩ নং অধ্যায়, শ্লোক ৩১,৩২,৩৩)
শশবিন্দু পরম যোগী, মহান ভোগৈশ্বর্যসম্পন্ন এবং অত্যন্ত পরাক্রমশালী ছিল। তাঁর দশ হাজার পত্নী ছিল। প্রত্যেক পত্নীর এক লক্ষ সন্তান ছিল। এইভাবে তাঁর দশ একশো কোটি সন্তান জন্ম হয়েছিল।
সমীক্ষা ১. একটা সন্তানের জন্ম হতে সময় লাগে ১০মাস ১০ দিন। এবার আপনারা বিচার করুন এক এক জন স্ত্রীর এক লক্ষ সন্তান জন্ম হতে কত সময় লাগবে?? শেষ সন্তান যখন জন্ম হয়েছিল তখন প্রথম সন্তানের বয়স কত ছিল?? রাজা ও তাঁর স্ত্রীদের আয়ু কত ছিল??
২. একদিকে বলেছে যোগী, অপরদিকে একশো কোটি সন্তানের বাবা!! হেইডা তো মাথার উপর দিয়া চইলা গেলো!
রাসলীলা
(ভাগবত পুরাণ, দশম স্কন্ধ, ২৯ নং অধ্যায়, শ্লোক ৪৬)
হাত প্রসারিত করে রাখা, আলিঙ্গন করা, গোপিদের হাত ধরা, তাদের চুল, জাং (উরু/thigh), নীবী (কোমরে বাঁধা কাপড়ের গাঁট), এবং স্তন ইত্যাদি স্পর্শ করা, বিনোদ করা, নখক্ষত করা (নখের আঁচড়ে যে দাগ বা চিহ্ন), হাসা — এই সব ক্রিয়ার দ্বারা গোপিদের দিব্য কামরসকে, পরমোজ্জ্বল প্রেমভাবকে উত্তেজিত করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাদের ক্রীড়া দ্বারা আনন্দিত করতে লাগলেন।
(ভাগবত পুরাণ, দশম স্কন্ধ, ৩৩ নং অধ্যায়, শ্লোক ১৩,১৪)
এক গোপী নৃত্য করছিল। নাচার কারণে তাঁর কুণ্ডল দুলছিল, সেই কুণ্ডলের ছটায় তাঁর কপাল চকচক করছিল। সে নিজের কপাল শ্রী কৃষ্ণের কপালে লাগিয়ে দিল এবং শ্রী কৃষ্ণ নিজের মুখের চেবানো পান তাঁকে দিয়ে দিল। কোনো গোপী নূপুর ও করধ্বনিতে ঘুংঘরুকে বাজিয়ে নৃত্য করছিল ও গাইছিল। সে যখন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল, তখন সে নিজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যামসুন্দরের শীতল হাত নিজের দুটি স্তনে রেখে দিল।
সমীক্ষা ১. বাহ্, খুব সুন্দর। কৃষ্ণ অবতার ধর্মের স্থাপনের জন্য হয়েছিল নাকি নারীদের সাথে এইসব করার জন্য?? কোন কথাটা সত্য?
২. একদিকে বলে শ্রী কৃষ্ণ ঈশ্বর, ১৬ কলা পূর্ণাবতার, আবার অপর দিকে শ্রী কৃষ্ণকে পরস্ত্রী গমনের দোষ লাগায়।
কুব্জার সাথে সমাগম
(ভাগবত পুরাণ, দশম স্কন্ধ, অধ্যায় ৪৮, শ্লোক ৬,৭)
তখনও অবস্য নবসঙ্গমের লজ্জা এবং ভীরুতায় কুব্জা কিছুটা সংকুচিত হয়ে ছিল। তাই ভগবান স্বহস্তে তার কঙ্কণশোভিত কর গ্ৰহণ করে তাকে শয্যায় বসালেন এবং তার সঙ্গে ক্রীড়া করতে লাগলেন। পরীক্ষিত! এই জন্মে কুব্জা কেবল শ্রী ভগবানকে অঙ্গরাগ অর্পণ করেছিল, সেই একটি শুভকর্মের ফলেই তার এই অনুপম সৌভাগ্য লাভ হল।।৬।। কুব্জা শ্রীভগবানের চরণকমল নিজের কামসন্তপ হৃদয়, বক্ষঃস্থল এবং নেত্রদ্বয়ে স্থাপন করে তার দিব্য সুগন্ধ আঘ্রাণ করতে লাগল এবং এইভাবে সে তার জীবনের সব ব্যাথা মুছে ফেলতে লাগল। বক্ষঃস্থলসংলগ্ন আনন্দ মূর্তি দয়িতকে নিজের ভূজদ্বয়ের দ্বারা গাঢ়ভাবে আলিঙ্গন করে, সুদীর্ঘকাল ধরে তার যত দুঃখ, যত জ্বালা জমেছিল, তা থেকে মুক্ত হল সে।।৭।।
সমীক্ষা শ্রী কৃষ্ণকে বদনাম করার জন্য ভাগবতকার খুব ভালো প্রয়াস করেছে। শ্রী কৃষ্ণকে ব্যাভিচারী বানিয়ে দিয়েছে আবার এটাও বলছে তিনি ভগবান
অবতার
(ভাগবত পুরাণ, প্রথম স্কন্ধ, তৃতীয় অধ্যায়, শ্লোক ২১,২২)
এরপর সতেরোতম অবতারে সত্যবতীর গর্ভ থেকে পরাশরের দ্বারা তিনি ব্যাসদেব রুপে অবতীর্ণ হলেন, সেই সময় লোকেদের বুদ্ধি ও ধারণা শক্তি দেখে বেদ রূপ বৃক্ষের অনেক শাখা তৈরী করলেন। আঠারো নং বারে দেবতাদের কার্য সম্পন্ন করার জন্য তিনি রাজার রূপে রাম অবতার গ্ৰহণ করলেন এবং সেতুবন্ধন, রাবণবধ ইত্যাদি বীরতাপূর্ণ অনেক লীলা করেছেন।
সমীক্ষা ১. ভাগবত বলছে, ১৭নং অবতার ব্যাসদেব ও ১৮নং অবতার শ্রী রাম। ইহার মধ্যে কতটুকু সত্যতা আছে??
২. শ্রী রামের জন্ম ত্রেতাযুগে, তাহলে তিনি ব্যাসদেবের পর এলেন কিভাবে??
(ভাগবত পুরাণ, প্রথম স্কন্ধ, তৃতীয় অধ্যায়, শ্লোক ২৩,২৪)
উনিশতম ও বিংশতম অবতারে তিনি যদুবংশে বলরাম ও শ্রীকৃষ্ণ নামে পৃথিবীতে প্রকট হন। এরপর কলিযুগে দেবতাদ্বেষীদের মোহিত করার জন্য বুদ্ধ অবতার হবেন।
আলোচনা — এরপর অবতারের একটি অনির্দিষ্ট সূচি পাওয়া যায়। ভাগবতে ২৪ টি অবতারের হিসাব পাওয়া যায় না। চৈতন্যদেবের নাম গন্ধও ভাগবতে নেই। তবুও বৈষ্ণবের কাছে তিনি অবতার।
সমীক্ষা ১. খাইসে!! বৈষ্ণবদের শাস্ত্রের লিস্ট এ প্রথমে আইসে গীতা, তারপরেই ভাগবতের স্থান।
২. ব্যাসদেব যদি ভাগবত লিখে থাকেন তাহলে তাঁর পক্ষে কি ২৪ অবতারের নাl মনে রাখা খুব কঠিন ব্যাপার??
(ভাগবত পুরাণ, অষ্টম স্কন্ধ, অধ্যায় ২৪, শ্লোক ৪৪)
সপ্ত ঋষিগণের আজ্ঞাতে রাজা সত্যব্রত ভগবানের ধ্যান করলেন। সেই সময় সেই মহান সমুদ্রে মৎস্য রূপে ভগবান প্রকট হলেন। মৎস্য ভগবানের শরীর সোনার সমান দীপ্তিমান ছিল এবং শরীরের বিস্তার চার লাখ ক্রোশ, উনার শরীরে একটা বড়ো শিং ছিল।
আলোচনা — ভাগবতকার হিসেবটা ও ঠিকঠাক জানেনা।
সমীক্ষা ১. ১ ক্রোশ=৩ কিলোমিটার বা ১.৯১ মাইল।
মাছের বিস্তার =৪০০০০০ ক্রোশ=৪০০০০০×৩কিলোমিটার=১,২০০,০০০ কিলোমিটার বা ৭৪৫৬৪৫.৪৩০৭ মাইল।
পৃথিবীর পরিধি= ২৪৯০১ মাইল বা ৪০,০৭৫ কিলোমিটার।
বৈষ্ণব গণের মতে ভাগবত স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবানের বাক্য, ও ব্যাসদেবের লেখা। ওহে বৈষ্ণবগণ আপনাদের পরমেশ্বর ভগবান ও ব্যাসদেব কি হিসেবটাও ঠিকঠাক করতে পারে না??
২. পৃথিবীর পরিধি= ২৪৯০১ মাইল বা ৪০,০৭৫ কিলোমিটার হলে, মাছের বিস্তার ১,২০০,০০০ কিলোমিটার বা ৭৪৫৬৪৫.৪৩০৭ মাইল হয় কিভাবে??
অসুরেরা ব্রহ্মার সঙ্গে মৈথুনের জন্য দৌড় দিল
(ভাগবত পুরাণ, তৃতীয় স্কন্ধ, অধ্যায় ২০, শ্লোক ২৩–৩৬)
তারপর ব্রহ্মা নিজের জাং থেকে কামাসক্ত অসুরদের উৎপন্ন করলেন। তাঁরা অত্যন্ত কামলোলুক হওয়ায় উৎপন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৈথুনের জন্য ব্রক্ষার দিকে যেতে লাগলো। ইহা দেখে প্রথমে তিনি প্রথমে হাসলেন , কিন্তু সেই নির্লজ্জ অসুরদের নিজের পিছনে লেগে থাকতে দেখে ভয়ভীতি হয়ে গেলেন এবং ক্রোধিত হয়ে জোরে দৌড়াতে লাগলেন। তারপর তিনি ভক্তের প্রতি কৃপা করার জন্য নিজের ভাবনা অনুসারে দর্শন দানকারী, শরণাগত বৎসল বরদায়ক শ্রী হরির কাছে গিয়ে বললেন— “পরমাত্মন! আমাকে রক্ষা করুন; আমি তো আপনার অজ্ঞাতেই প্রজা উৎপন্ন করেছি, কিন্তু এরা তো পাপে প্রবৃত্ত হয়ে আমাকে উলংগ করতে উদ্যত। নাথ! একমাত্র আপনিই দুঃখী জীবেদের দুঃখ দূর করেন এবং যে আপনার চরণশরণে আসেন না, তাঁকে দুঃখ দানকারীও একমাত্র আপনিই।” তিনি ব্রহ্মার অনুরোধ দেখে বললেন–“তুমি এই কামকলুষিত শরীর ত্যাগ করো।” ভগবানের বলাতেই তিনি সেই শরীর ত্যাগ করলেন। (ব্রহ্মার ত্যাগ করা সেই শরীর এক সুন্দরী স্ত্রী সন্ধ্যা দেবীরূপে পরিণত হয়ে গিয়েছিল) তার চরণ কমলের পায়েল ঝংকৃত হচ্ছিল। তার চোখ কামোদ্দীপক ছিল এবং কোমরে পরিহিত গহনার ঝুমকো দ্বারা সুশোভিত সুন্দর শাড়ি দ্বারা ঢাকা ছিল। তার স্ফীত বা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত স্তন এমন ভাবে একে অপরের সঙ্গে লেগে ছিল যে তাদের (স্তন দুটির) মাঝখানে কোনো ফাঁক ছিল না। নাসিকা ও দন্তাবলী অত্যন্ত সুগঠিত ছিল এবং সে মধুর মধুর হেসে অসুরদের দিকে দেখছিল। অলংকারে সুশোভিত সুকুমারী লজ্জায় নিজের আসলে যেন লুকিয়ে পড়তো। বিদুর! সেই রূপ দেখে অসুরগণ মোহিত হয়ে গেল। ওহো এ কেমন বিচিত্র রূপ কেমন অলৌকিক ধৈর্য এবং কেমন নতুন অবস্থা দেখো কাম পীড়িতদের মাঝে এ কেমন নির্বিকার (felling calm and relaxed) বিচরণ করছে। এই ভাবি সেই কুবুদ্ধি দৈত্যরা স্ত্রী রুপী সন্ধ্যার বিষয়ে বিভিন্ন তর্ক বিতর্ক করার পর অত্যন্ত আদরের সহিত প্রেম পূর্বক জিজ্ঞাসা করল— “সুন্দরী! তুমি কে এবং কার পুত্রী? এখানে তোমার আসার কি প্রয়োজন ছিল? তুমি নিজের এই অপরূপ অমূল্য রূপ পণ্যদ্রব্য দ্বারা আমাদের মতো এই অভাগাদের কেন পীড়া দিচ্ছো। অবলা! তুমি যেই হও না কেন, আমরা তোমার দর্শন পেয়েছি এটাই বড় সৌভাগ্যের কথা। তুমি নিজের স্তন নাড়িয়ে-নাড়িয়ে (bounce or leaping) দ্বারা আমাদের মন উন্মথিত করেছো। সুন্দরী! যখন তুমি করতলদ্বারা এই লাফানো স্তনে(bouncing boobs) বারবার আঘাত করছো ইহাতে তোমার পাদপদ্ম একস্থানে স্থির থাকতে পারছে না। তোমার এই কটিদেশ বৃহৎ স্তনভারে ক্লান্ত হচ্ছে, তোমার নির্ম্মল দৃষ্টিতে ক্লান্তি প্রতিফলিত হচ্ছে। আহা! তোমার এই কেশদাম কি শোভা বিস্তার করছে।
আলোচনা— নারীর সৌন্দর্য খুব ভালো ভাবে তুলে ধরেছে ভাগবতকার। একবার হাতের তালি হয়ে যাক। পাঠকগণ আপনারাই সমীক্ষা, বিশ্লেষণ, আলোচনা করুন আমার কিছু বলার নেই। ইংরেজি শব্দ গুলো ব্যবহার করেছি আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে।
১০০ যোজন উঁচু বৃক্ষ
(ভাগবত পুরাণ, চতুর্থ স্কন্ধ, ষষ্ঠ অধ্যায়, শ্লোক ৩২)
সেই বৃক্ষ ১০০ যোজন উঁচু ছিল এবং তার শাখা প্রশাখা ৭৫ যোজন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তার চারিদিকে সর্বদা অবিচল ছায়া থাকত, এই জন্য কষ্টের ঘাম ছিল না, এবং তাতে কোনো পাখির বাসাও ছিল না।
সমীক্ষা
১. ১ যোজন=১২,৩০০মিটার, ১০০যোজন=১,২৩০,০০০ মিটার। কৈলাসের উচ্চতা ৬৬৩৮ মিটার। বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর হলো এক্সোস্ফিয়ার যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০কিলোমিটার (৭০০,০০০মিটার)—১০,০০০কিলোমিটার(১০,০০০,০০০মিটার) উপরে অবস্থিত, যেখানে স্যাটেলাইট থাকে। তাহলে কি গাছটা এক্সোস্ফিয়ার পর্যন্ত ছিল? ভাগবতকার কি হিসেবটা ও ঠিকঠাক করতে পারে না??
২. কৈলাসের উচ্চতা ৬৬৩৮ মিটার হলে, কৈলাসের গাছের উচ্চতা ১,২৩০,০০০ মিটার হয় কিভাবে?? গাছটি যদি কৈলাসের থেকে বড়ো হয় তাহলে যে কোনো পৌরাণিক পুস্তক থেকে প্রমাণ দিন এখন সেই গাছ কোথায় গেল??
ভাগবতে বিরোধাভাস
(ভাগবত পুরাণ, দ্বিতীয় স্কন্ধ, নবম অধ্যায়, শ্লোক ৩৬)
ব্রহ্মা! তুমি অবিচল সমাধির দ্বারা আমার এই সিদ্ধান্তে পূর্ণ নিষ্ঠা করো। যার ফলে কল্প-কল্পান্তরে বিবিধ সৃষ্টি রচনা করেও কখনো মোহ হবে না।
(ভাগবত পুরাণ, দশম স্কন্ধ, ত্রয়োদশ অধ্যায়, শ্লোক ৪৪)
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মায়ায় সকলেই মুগ্ধ হচ্ছে কিন্তু কোনো মায়া-মোহ ভগবানকে স্পর্শ করতে পারে না। ব্রহ্মাজী সেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিজের মায়া দ্বারা মোহিত করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু উনাকে মোহিত করা তো দূর, তিনি অজন্মা হওয়া সত্ত্বেও নিজের মায়াতে নিজে-নিজেই মোহিত হয়ে গেলেন।
সমীক্ষা ১. যদি একজন মানুষই ভাগবত লিখেছে তাহলে বিরোধাভাস কোথা থেকে আসল??
২. এখানে তো বৈষ্ণবদের ভগবানের বরদান মিথ্যা হয়ে গেল!!
(ভাগবত পুরাণ, তৃতীয় স্কন্ধ, অধ্যায় ১২, শ্লোক ৩৪–৩৮)
এক বার ব্রহ্মাজী ভাবছিলেন ‘আমি আগের মতো সুব্যবস্থিত রূপে সমস্ত লোকের রচনা কিভাবে করবো?' সেই সময় উনার চার মুখ থেকে চার বেদ প্রকট হলো।
এগুলো ছাড়াও উপবেদ, ন্যায়শাস্ত্র, হোতা, উদ্গাতা, অধ্বর্যু এবং ব্রহ্মা- এই চার ঋত্বিজের কর্ম, যজ্ঞের বিস্তার, ধর্মের চার চরণ এবং চার আশ্রম ও সেগুলোর বৃত্তি- এগুলো ব্রহ্মাজীর মুখ থেকেই উৎপন্ন হলো । বিদুর জিজ্ঞেস করলেন-তপোধন! বিশ্বরচয়িতার স্বামী শ্রীব্রহ্মাজীন যখন নিজের মুখ থেকে ইন বেদাদিকো রচনা করেছিলেন, তখন তিনি নিজের কোন মুখ থেকে কোন বস্তু উৎপন্ন করেছিলেন- ইহা আপনি কৃপা করে আমাকে বলুন। শ্রীমৈত্রেয়জী বললেন -বিদুরজী! ব্রহ্মা নিজের পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম এবং উত্তরের মুখ থেকে ক্রমশঃ ঋক্, যজুঃ, সাম এবং অথর্ববেদ রচনা করলেন এবং এই ক্রমেই শস্ত্র (হোতার কর্ম), ইজ্যা (অধ্বর্যুর কর্ম), স্তুতিস্তোম (উদ্গাতার কর্ম) এবং প্রায়শ্চিত্ত (ব্রহ্মার কর্ম)- এই চারটি রচনা করলেন। এই প্রকারে আয়ুর্বেদ (চিকিৎসাশাস্ত্র), ধনুর্বেদ (শাস্ত্রবিদ্যা), গান্ধর্ববেদ (সংগীতশাস্ত্র) এবং স্থাপত্যবেদ (শিল্পবিদ্যা)- এই চার উপবেদেরও ক্রমশঃ সেই পূর্বাদি মুখ থেকেই উৎপন্ন করলেন। তারপর সর্বদর্শী ভগবান ব্রহ্মা নিজের চারটি মুখ থেকে ইতিহাস-পুরাণরূপ পঞ্চম বেদ তৈরি করলেন। এই ক্রমেই ষোড়শী এবং উক্থ, চয়ন এবং অগ্নিষ্টোম, আপ্তোযাম ও অতিরাত্র এবং বাজপেয় ও গোসব- এই দুই-
দুই যাগ ও উনার পূর্বাদি মুখ থেকে উৎপন্ন হলো।
(ভাগবত পুরাণ, প্রথম স্কন্ধ, অধ্যায় ৪, শ্লোক ১৯,২০)
তিনি ভাবলেন বেদোক্ত চাতুর্হোত্র কর্ম লোকেদের হৃদয় শুদ্ধ করে । ইস দৃষ্টিতে যজ্ঞের বিস্তার করার জন্য তিনি এক বেদকে চার বিভাগ কর দিলেন। ব্যাসজীর দ্ধারা ঋক্, যজুঃ, সাম এবং অথর্ব-এই চার বেদের উদ্ধার (পৃথক্করণ) হলো। ইতিহাস ও পুরাণকে পঞ্চম বেদ বলা হয়।
সমীক্ষা ১. যদি ব্রহ্মার চার মুখ থেকে ঋক্, যজুঃ, সাম এবং অথর্ব চার বেদ প্রকট হয়েছিল, তাহলে ব্যাসজী এক বেদকে চার বিভাগ কিভাবে করলেন? ব্যাসজীর দ্ধারা ঋক্, যজুঃ, সাম এবং অথর্ব-এই চার বেদের উদ্ধার (পৃথক্করণ) কিভাবে হলো?।
২. প্রথমে ব্রহ্মা চার বেদ উৎপন্ন করেছিলেন নাকি প্রথমে ব্যাসজী একটাই বেদকে চার বেদে পৃথক করেছিলেন?
(ভাগবত পুরাণ, ষষ্ঠ স্কন্ধ, অধ্যায় ৬, শ্লোক ২৮)
ক্রোধবশার পুত্র হলো-সাপ, বিছে ইত্যাদি বিষাক্ত জন্তু।
(ভাগবত পুরাণ, তৃতীয় স্কন্ধ, অধ্যায় ২০, শ্লোক ৪৭,৪৮)
এক বার ব্রহ্মাজী সৃষ্টির বিস্তার না হওয়ার কারণে অনেক চিন্তিত হয়ে হাত-পা আদি
অবয়ব ছড়িয়ে শুয়ে পড়লেন এবং তারপর ক্রোধবশে সেই ভোগময় শরীর ত্যাগ দিলেন ॥৪৭॥ তা থেকে যে চুল ঝড়ে পড়ল, তা অহি হলো তথা হাত-পা জুজু হয়ে চলার কারণে ক্রূরস্বভাব
সর্প ও নাগ হলো, যার শরীর ফণারূপে কাঁধের পাশে অনেক বিস্তৃত থাকে ॥৪৮॥
সমীক্ষা ১. একবার লেখা আছে কশ্যপের পত্নী ক্রোধবশা থেকে সর্পের উৎপত্তি হয়েছে। আবার এক বার লেখা আছে ব্রহ্মাজীর ত্যাগ করা শরীর থেকে সর্পের উৎপত্তি হয়েছে। এই দুটির মধ্যে কোনটা সত্য বলে মেনে নেবো? ভাগবতে এমন অনেক জায়গায় ব্রহ্মার বার-বার মরার বিবরণ রয়েছে, কিন্তু উনার বার-বার জন্ম নেওয়ার কোনো বর্ণন পাওয়া যায় না , এমনটা কেন??
২. ভাগবত যদি একজন মানুষ লিখেছে , তাহলে বিরোধাভাস কেন?? নেশা করে পুস্তক লিখতে বসলে এরকমই হয়, ব্যাসজী কি এমন ভূল করতে পারে??
ভাগবতে পশুবধের বর্ণনা
(ভাগবত পুরাণ, দশম স্কন্ধ, অধ্যায় ৩৯, শ্লোক ৩৫)
শ্রেষ্ঠ যাদবদের ঘিরে থাকা সিন্ধু দেশীয় ঘোড়ায় চড়ে মৃগয়া করছে, এই ভাবে যজ্ঞের জন্য মেধ্য পশুদের সংগ্ৰহ করছে।
(ভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ৬, শ্লোক ৬,৭,৮)
এক বার রাজা ইক্ষ্বাকু অষ্টকা-শ্রাদ্ধের সময় নিজের বড়ো পুত্রকে আজ্ঞা দিলেন -'বিকুক্ষে! শীঘ্রই গিয়ে শ্রাদ্ধের যোগ্য পবিত্র পশুদের মাংস নিয়ে এসো'। বীর বিকুক্ষি 'খুব ভালো' বলে বনের দিকে যাত্রা করলেন। সেখানে সে শ্রাদ্ধের যোগ্য অনেক পশুদের শিকার করল। সে ক্লান্ত তো হয়েই গিয়েছিল, ক্ষুধা ও পেয়েছিল; এই জন্য সে এই কথা ভূলেই গিয়েছিল যে শ্রাদ্ধের জন্য হত্যা করা পশুদের নিজের খাওয়া উচিত নয়। সে একটা খরগোশ খেয়ে নিল। বিকুক্ষি বাকি মাংস নিয়ে এসে নিজের পিতাকে দিয়েদিল। ইক্ষ্বাকু এখন নিজের গুরু দ্বারা উহাকে প্রোক্ষণ করার জন্য বললেন, তখন গুরুজী বললেন যে, এই মাংস তো দূষিত এবং শ্রাদ্ধের অযোগ্য।
সমীক্ষা- পশুবধের বর্ণন রয়েছে, তবুও ইহা বৈষ্ণবদের কাছে শাস্ত্র
বরাহ অবতারের সৃষ্টি
(ভাগবত পুরাণ, তৃতীয় স্কন্ধ, অধ্যায় ৯, শ্লোক ৩৬)
নিষ্পাপ বিদুরজী! ব্রহ্মাজী এই প্রকার বিচার করছিলেন তখন উনার নাসাছিদ্র থেকে অকস্মাৎ আঙ্গুলের বরাবর আকারের এক বরাহ-শিশু বেরিয়ে এলো। ভারত! বড়ো আশ্চর্যের কথা হলো আকাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বরাহ-শিশু ব্রহ্মাজীর দেখতে-দেখতে বড়ো হয়ে ক্ষণিকের মধ্যে হাতির বরাবর হয়ে গেল।
সমীক্ষা -
নাসাছিদ্র থেকে বরাহশাবক এর জন্ম
নারীর গর্ভ থেকে জড় জঙ্গমের রচনা
(ভাগবত পুরাণ, ষষ্ঠ স্কন্ধ, অধ্যায় ৬, শ্লোক ২৪,২৫,২৬,২৭,২৮,২৯)
তিনি দক্ষকে পুনরায় প্রসন্ন করে কৃষ্ণপক্ষের ক্ষীণ কলার শুক্লপক্ষে পূর্ণ হওয়ার বর তো প্রাপ্ত করে নিলেন, (কিন্তু নক্ষত্রাভিমানী দেবীদের থেকে উনার কোনো সন্তান হলোনা) এখন তুমি কশ্যপপত্নিদের মংগলময় নাম শোনো। তাঁরা হলেন লোকমাতা। তাঁদের থেকেই এই সমস্ত সৃষ্টি উৎপন্ন হয়েছে। উনাদের নাম হলো-অদিতি, দিতি, দনু, কাষ্ঠা, অরিষ্টা, সুরসা, ইলা, মুনি, ক্রোধবশা, তাম্রা, সুরভি, সরমা এবং তিমি। ইনাদের তিমির পুত্র হলো–জলচর জন্তু এবং সরমার বাঘ আদি হিংসক জীব ।।২৪-২৬।। সুরভির পুত্র হলো–মহিষ, গোরু ও অন্যান্য খুরওয়ালা পশু। তাম্রার সন্তান হলো–বাজ, গীধ আদি শিকারী পক্ষী। মুনির থেকে অপ্সরা উৎপন্ন হলো ।।২৭।। ক্রোধবশার পুত্র হলো–সাপ, বিছে আদি বিষাক্ত জন্তু। ইলার বৃক্ষ, লতা আদি পৃথিবীতে উৎপন্ন হওয়া বনস্পতি এবং সুরসা থেকে যাতুধান (রাক্ষস) ।।২৮।। অরিষ্টা থেকে গন্ধর্ব এবং কাষ্ঠ থেকে ঘোড়া আদি এক খুরওয়ালা পশু উৎপন্ন হলো। দনুর ৬১ পুত্র হলো। তাঁদের প্রধান-প্রধানের নাম শোনো ।।২৯।।
সমীক্ষা-
১. এক নারীর গর্ভ থেকে বৃক্ষ, লতা, বনস্পতি কিভাবে উৎপন্ন হতে পারে? নারী থেকে বাঘ, হাতি, ঘোড়া, সাপ আদির জন্ম হওয়া কতটা মূর্খতাপূর্ণ!!
২. কি বিচিত্রের কথা, এই গল্পের বইকে সনাতন ধর্মের শাস্ত্রের তকমা দেয় কিছু লোক, আমি এটাই ভাবি তাদের লঘুমস্তিষ্ক, গুরুমস্তিষ্ক, হাইপোথ্যালামাস, থ্যালামাস সব ঠিকঠাক আছে না নেই
একশো বছর পর্যন্ত গর্ভ ধারণ
(ভাগবত পুরাণ, তৃতীয় স্কন্ধ, অধ্যায় ১৫, শ্লোক ১,২)
শ্রীমৈত্রেয়জী বললেন–বিদুরজী! দিতির নিজের পুত্রদের দ্বারা দেবতাদের কষ্ট হওয়ার আশংকা ছিল, এইজন্য সে অপরের তেজ নাশ কারী সেই কশ্যপজীর তেজ (বীর্য)-কে ১০০ বছর পর্যন্ত নিজের উদরেই রাখলেন।।১।। সেই গর্ভস্থ তেজ থেকেই লোকে সূর্যাদির প্রকাশ ক্ষীণ হতে লাগলো এবং ইন্দ্রাদি লোকপালও তেজহীন হয়ে গেল।
সমীক্ষা ১০০বছর পর্যন্ত গর্ভ আটকে রাখা সম্ভব?? গর্ভকে আটকে রাখা নারীর নিজের হাতে নেই ১০০ বছর তো দূরের কথা ১ দিনও নিজের ইচ্ছায় আটকাতে রাখা যায় না ১০০ বছরে তো ব্যক্তি বৃদ্ধ হয়ে মরে যায়। সূর্যের তেজ ক্ষীণ করা যায় না। এই পুরাণকার তো ....... এর ও বাবা।
মৃত বালকদের ফিরিয়ে আনা
(ভাগবত পুরাণ, দশম স্কন্ধ, অধ্যায় ৮৫, শ্লোক ৪৭,৪৮,৪৯,৫০,৫১,৫২,৫৩)
ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ বললেন–'দৈত্যরাজ! স্বায়ম্ভুব মন্বন্তরে প্রজাপতি মরীচির পত্নী ঊর্ণার গর্ভ থেকে ছয়টি পুত্র উৎপন্ন হলো। তাঁরা সকলেই দেবতা ছিল। ব্রহ্মাজী নিজের পুত্রীর সঙ্গে সমাগম করার জন্য উদ্যত, দেখে তাঁরা হাসতে লাগলো ।।৪৭।। এই পরিহাসরূপ অপরাধের কারণে তাঁদের ব্রহ্মাজী অভিশাপ দিয়ে দিলেন এবং তাঁরা অসুর-যোনিতে হিরণ্যকশিপুর পুত্ররূপে উৎপন্ন হল। এখন যোগমায়া তাদেরকে সেখান থেকে নিয়ে দেবকীর গর্ভে রেখে দিল এবং তাদের জন্ম হওয়াতেই কংস মেরে দিল। দৈত্যরাজ! মাতা দেবকীজী নিজের সেই পুত্রদের জন্য অত্যন্ত শোকাতুর হয়েছিল এবং তাঁরা এখন তোমার কাছে আছে ।।৪৮-৪৯।। অতঃ আমি নিজের মাতার শোক করার জন্য এদেরকে এখান থেকে নিয়ে যাবো। এরপর এঁরা অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে এবং আনন্দপূর্বক নিজের লোকে চলে যাবে ।।৫০।। এদের ছয়জনের নাম হলো-স্মর, উদ্গীথ, পরিষ্বংগ, পতংগ, ক্ষুদ্রভৃৎ এবং ঘৃণি। এঁরা আমার কৃপায় পুনরায় সদ্গতি প্রাপ্ত হবে' ।।৫১।। পরীক্ষিৎ! এই বলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চুপ হয়ে গেলেন। দৈত্যরাজ বলি উনার পূজা করলেন; এরপর শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরামজী বালকদের নিয়ে আবার দ্বারকা ফিরে এলেন এবং মাতা দেবকীকে উনার পুত্র সঁপে দিলেন।।৫২।। সেই বালকদের দেখে দেবী দেবকীর হৃদয়ে বাৎসল্য-স্নেহের বন্যা এসে গেল। উনার স্তন থেকে দূধ বইতে লাগলো। তিনি বার-বার তাদের কোলে নিয়ে ছাতিতে লাগালেন এবং তাঁদের মাথা শুঁকে ছিলেন ।।৫৩।।
সমীক্ষা ১. সত্যিই কি মৃত বালকদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব? যদি হ্যাঁ তাহলে, এই পৃথিবীতে অনেক মাতাই আছেন যাঁদের সন্তান মারা গেছে, তাঁরাও তো ভগবানের কাছ থেকে তাদের সন্তান চেয়েছেন, কিন্তু তাঁরা তাঁদের মৃত সন্তান প্রাপ্ত হননি কেন??
২. ভাগবতকার শ্রী কৃষ্ণকে ঈশ্বর বানানোর অনেক চেষ্টা করেছে, শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা কিছু জাদুও করিয়েছেন কিন্তু আফসোস, যুক্তিতর্কের সামনে অন্ধভক্তি, অন্ধবিশ্বাস টিকতে পারলো না।
নারী দেখেই বীর্যপাত এবং সন্তান জন্ম
(ভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ২১, শ্লোক ৩৫,৩৬)
শতানন্দের পুত্র ছিল সত্যধৃতি, সে ধনুর্বিদ্যায় অত্যন্ত নিপুণ ছিল। সত্যধৃতির পুত্রের নাম ছিল শরদ্বান। এক দিন উর্বশী কে দেখে শরদ্বান এর বীর্য স্খলন হয়ে শরস্তম্ভে(নলবনে) পড়েছিল, তা থেকে এক শুভ লক্ষণযুক্ত পুত্র ও কন্যার জন্ম হয়। মহারাজ শান্তনু মৃগয়া করতে করতে দৈবাৎ সেখানে উপস্থিত হয়ে সেই শিশুদুটি দেখতে পান। দয়াপরবশ হয়ে তিনি দুই শিশুকে নিয়ে আসেন। ছেলেটির নাম কৃপাচার্য এবং কন্যার নাম কৃপী। এই কৃপী দ্রোণাচার্যের পত্নী হয়েছিলেন।।৩৫-৩৬।।
(ভাগবত পুরাণ, ষষ্ঠ স্কন্ধ, অধ্যায় ১৮, শ্লোক ৫,৬)
মহাযোগী বাল্মীকিও বরুণে পুত্র ছিলেন। বল্মীক থেকে উৎপন্ন হন বলে তাঁর নাম হয় বাল্মীকি। উর্বশী কে দেখে মিত্র ও বরুণ এই দুজনের বীর্য স্খলিত হয়ে পড়েছিল। তাঁরা সেই বীর্য কলসের মধ্যে রেখে দিয়েছিলেন। তার থেকে মুনিবর অগস্ত্য ও বশিষ্ঠ জন্মগ্ৰহণ করেন। মিত্রের পত্নী ছিলেন রেবতী। তাঁর তিনটি পুত্র হয়- উৎসর্গ, অরিষ্ট ও পিপ্পল।।৫-৬।।
সমীক্ষা ১. ভাগবতকার এটা জানত না যে, ঋষি কাকে বলে, এইজন্য মনে যা এসেছে লিখে দিয়েছে। পাঠক গণ আপনারা একটু বিচার করুন নারীকে দেখলেই আপনার বীর্য স্খলন হয়ে যায়? যদি আপনার বীর্য স্খলন না হয় তাহলে ঋষিদের কিভাবে হতে পারে?
২. যেখানে বীর্য স্খলন হয় সেখানেই সন্তান জন্ম হয়ে যায়? ইহা কি ধরনের বিজ্ঞান?
ভূবন কোষের বর্ণনা
(ভাগবত পুরাণ, পঞ্চম স্কন্ধ, অধ্যায় ১৬)
রাজা পরীক্ষিত বললেন–হে মুনিবর! সূর্যের আলোকে যতদূর আলোকিত হয় আর যে যে স্থানে নক্ষত্রগণ সহ চন্দ্রমা দৃষ্ট হয়, ততদূর পর্যন্ত ভূমন্ডলের বিস্তার বলে আপনি জানিয়েছেন আপনি একথাও বলেছেন যে, প্রিয়ব্রতের রথচক্রের আঘাতে সাত সমুদ্রের সৃষ্টি হয়েছে এবং যার জন্য এই পৃথিবীতে সাতটি দ্বীপের বিভাগ হয়েছে। এখন আমি এদের পরিমাণ ও সাধারণ লক্ষণ সম্পূর্ণরূপে অবগত হতে ইচ্ছুক।।২।। কারণ যে মন ভগবানের গুণময় স্থূল বিগ্ৰহে আবেশিত হয় সেই মন ভগবান বাসুদেবের স্বয়ংপ্রকাশ সূক্ষ্মতম নির্গুণ ব্রহ্মস্বরূপেও নিবিষ্ট হতে পারে। অতএব হে প্রভু! দয়া করে এই বিষয়ে বিশদভাবে বর্ণনা করুন।।৩।। ঋষি শুকদেব বললেন– হে মহারাজ! ভগবানের মায়া এবং গুণ এতই অপার যে, যদি কোনো পুরুষ দেবতুল্য আয়ু লাভ করে, তথাপি মন বা বাক্যের দ্বারা তাঁর ধারণা করতে সমর্থ হয় না। সেইজন্য ভগবানের যে সকল বিশেষ বিশেষ স্থান আছে তাদের নাম, রূপ, পরিমাণ ও লক্ষণের বিষয়ে ব্যাখ্যা করছি।।৪।। এই জম্বুদ্বীপ–যেখানে আমরা বাস করি, ভূমন্ডলরূপ পদ্মের কোশস্থানীয় যে সাতটি দ্বীপ আছে তা তাদের সকলের অভ্যন্তরীণ কোষ। এর বিস্তার লক্ষ যোজন এবং আকার পদ্মপত্রের মতো গোল।।৫।। এই দ্বীপে নয়টি বর্ষ আছে, যাদের (প্রত্যেকের) বিস্তার নয় সহস্র যোজন করে এবং আটটি পর্বত ওই সকল বর্ষকে সুবিভক্ত করেছে।।৬।। এর ঠিক মধ্যভাগে ইলাবৃত নামে দশম বর্ষ আছে। এই বর্ষের মধ্যভাগে কুলপর্বতরাজ মেরু পর্বত অবস্থিত; সে ভূমণ্ডলরূপ কমলের কর্ণিকা সদৃশ। এর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সুবর্ণময় এবং উচ্চতা এক লক্ষ যোজন। এর বিস্তার শিখরদেশে বত্রিশ হাজার যোজন এবং মূলদেশে ষোল হাজার যোজন এবং ভূমির ভিতরে ষোল হাজার যোজন প্রবিষ্ট হয়ে আছে। অর্থাৎ ভূমির বাইরে এর উচ্চতা চুরাশি হাজার যোজন।।৭।। ইলাবৃত বর্ষের উত্তরে ক্রমশ নীল, শ্বেত এবং শৃঙ্গবান নামে তিনটি পর্বত আছে–যারা রম্যক, হিরণ্ময় আর কুরু নামক বর্ষের সীমা নির্ধারণ করে। এরা পূর্ব থেকে পশ্চিম দিক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে লবণ সমুদ্রের সঙ্গে সংলগ্ন আছে। এদের প্রত্যেকের বিস্তার দুই সহস্র যোজন এবং দৈর্ঘ্যে প্রথম থেকে শুরু করে পরেরগুলি ক্রমশ এক-দশমাংশ অপেক্ষা কিছু কম। কিন্তু উচ্চতা ও প্রস্থে সবকটিই সমান।।৮।। সেইরকম ইলাবৃত বর্ষের দক্ষিণ দিকে ক্রমশ নিষধ, হেমকূট ও হিমালয় নামে তিনটি পর্বত আছে। নীলাদি পর্বতের মতো এরাও পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত আর দশ সহস্র যোজন এদের উচ্চতা। এদের এক-একটি ক্রমশ হরিবর্ষ, কিম্পুরুষ এবং ভারতবর্ষের সীমা নির্ধারণ করেছে।।৯।। ইলাবৃতের পূর্ব আর পশ্চিম দিকে–উত্তরে নীল পর্বত আর দক্ষিণে নিষধ পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত গন্ধমাদন ও মালাবান নামে দুটি পর্বত আছে। এরা প্রায় দুই সহস্র যোজন এবং ভদ্রাশ্ব ও কেতুমাল বর্ষদ্বয়ের সীমা নির্ধারক।।১০।। এছাড়া মন্দর, মেরুমন্দর, সুপার্শ্ব আর কুমুদ এই চারটি পর্বত দশ সহস্র যোজন উচ্চে ও প্রস্থে বিস্তৃত হয়ে মেরু পর্বতের স্তম্ভের মত শোভা পাচ্ছে।।১১।। পূর্বোক্ত চারটি পর্বতে যথাক্রমে আম, জাম কদম্ব ও বটবৃক্ষ সকল ধ্বজার ন্যায় শোভমান। ওই সকল একাদশ শত যোজন উচ্চ এবং তাদের সকল ও তাদৃশ বিস্তৃত এবং প্রস্থে শত শত যোজন।।১২।। হে ভরতশ্রেষ্ঠ! এই চারটি পর্বতে চারটি হ্রদ আছে–ঐসকল হ্রদ যথাক্রমে দুগ্ধ (দুধ), মধু, ইক্ষুরস ও সুস্বাদু জলে পরিপূর্ণ। উপদেবতাগণ এই জল পান করে স্বভাবতই যোগৈশ্বর্য প্রাপ্ত হন।।১৩।। এই চারটি পর্বতের উপর যথাক্রমে নন্দন, চিত্ররথ, বৈভ্রাজক এবং সর্বতোভদ্র নামে চারটি দেবোদ্যান আছে।।১৪।। এই দেবোদ্যানে প্রধান প্রধান দেবতাগণ সুরললনাদের ভূষণ হয়ে প্রধান প্রধান সুরাঙ্গনাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে বিহার করেন। সেই সময় গন্ধর্ব ইত্যাদি উপদেবতারা তাঁদের মহিমা কীর্তন করেন।।১৫।। মন্দর পর্বতের ক্রোড়ে যে একাদশ শত যোজন উচ্চ দেবভোগ্য আম্রবৃক্ষ আছে যা থেকে পর্বত শিখরের ন্যায় বিশালাকৃতি আর অমৃতের ন্যায় সুমিষ্ট ফল পতিত হয়।।১৬।। পতনের সময় ওই সকল ফল ফেটে তা থেকে অতি সুগন্ধ যুক্ত অরুণ বর্ণ মধুর রস নির্গত হয়। ওই রস অরুণোদা নামে নদী রুপে মন্দর গিরির শিখর থেকে প্রবাহিত হয়ে ইলাবৃতের পূর্বভাগ প্লাবিত করেছে।।১৭।। দেবী ভবানীর অনুচরী যক্ষপত্নীগণ এই জল সেবন করেন এবং সেইহেতু তাঁদের অঙ্গ থেকে এত সুগন্ধ নির্গত হয় যে বায়ু তাঁদের স্পর্শে সুগন্ধিত হয়ে দশ যোজন অবধি সমস্ত দেশকে সুগন্ধে ভরে দেয়।।১৮।। এইরকম জামগাছ থেকে হাতির সমান বড় বড় ফল যার মধ্যে বীজ প্রায়শ নেই বললেই হয়, পতিত হয়। অতি উচ্চ স্থান থেকে পতিত হয় বলে এই সকল ফল ফেটে গিয়ে তার রস দ্বারা জম্বু নদীর সৃষ্টি হয়। এই নদী মেরুমন্দর পর্বতের দশ সহস্র যোজন উচ্চ স্থান থেকে নিপতিত হয়ে ইলাবৃতের দক্ষিণ দিক প্লাবিত করে প্রবাহিত হয়।।১৯।। ওই নদীর দুই তীরেই যখন জম্বুরস মৃত্তিকার সাথে মিশ্রিত হয়ে বায়ু ও সূর্য তাপে শুষ্ক হয়ে যায়, তখন তা জম্বুনদ নামক সুবর্ণে পরিণত হয় এবং সর্বদা অমরলোকের আভরণস্বরূপ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।।২০।। এই জম্বুনদের স্বর্ণের দ্বারা মুকুটব কণ্কন আর কোমরের গহণা নির্মাণ করে দেবতা ও গন্ধর্বরা স্বীয় তরুণী স্ত্রীদের সঙ্গে শরীরে ধারণ করে থাকেন।।২১।। সুপার্শ্ব পর্বতের উপর যে বিশাল কদম্ব বৃক্ষ আছে তার পাঁচটি কোটর থেকে পঞ্চব্যাস পরিমিত পাঁচটি সুপার্শ্বের শিখর থেকে নির্গত হয়ে ইলাবৃত ভূখণ্ডের পশ্চিম ভাগকে নিজের সুগন্ধ দ্বারা আমোদিত করে।।২২।। যারা এই মধু পান করে তাদের মুখনিঃসৃত মধুসৌরভ চতুর্দিকে শত যোজন সুবাসিত করে রাখে।।২৩।।
এইরকম কুমুদ পর্বতে যে শতবল্শ(শতস্কন্ধ) নামক বটবৃক্ষ আছে তার জটা থেকে নীচের দিকে অনেক নদ প্রবাহিত হয়, তারা ইচ্ছামতো ভোগ্য বস্তু দান করে। তাদের থেকে দুধ, দই, মধু, ঘৃত, গুড়, অন্ন, বস্ত্র, শয্যা, আসন এবং অলংকার ইত্যাদি সব কিছুই পাওয়া যায়। এরা কুমুদের শিখর থেকে পতিত হয়ে ইলাবৃতের উত্তর ভাগকে প্লাবিত করে।।২৪।। এই নদ দ্বারা প্রবাহিত বস্তু সকল উপভোগ করলে প্রজাদের কদাপি বলীরেখা দেখা যায় না, চুল সাদা হয় না, ক্লান্তি হয় না, শরীরে স্বেদ দুর্গন্ধ, জরা, রোগ, মৃত্যু, শীত বা উষ্ণবোধ, শরীর বিবর্ণ কিংবা অঙ্গহানি ইত্যাদি কিছুই হয় না এবং শেষ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুখ উপভোগ করে।।২৫।। হে রাজন! পদ্মের কণিকাতে যেমন কেশর থাকে সেই রকম মেরুর মূলদেশের চারিদিকে কুরঙ্গ, কুরর, কুসুম্ভ, বৈকঙ্ক, ত্রিকূট, শিশির, পতঙ্গ, রুচক, নিষধ, শিনীবাস, কপিল, শঙ্খ, বৈদুর্য, জারুধি, হংস, ঋষভ, নাগ, কালঞ্জর এবং নারদ ইত্যাদি কুড়িটি পর্বত আছে।।২৬।। মেরুর পূর্বদিকে জঠর এবং দেবকূট নামে দুটি পর্বত আছে, যাদের দৈর্ঘ্য অষ্টাদশ সহস্র যোজন এবং প্রস্থ ও উচ্চতা দুই সহস্র যোজন। এইরকম পশ্চিমদিকে পবন ও পারিযাত্র, দক্ষিণ দিকে কৈলাশ ও করবীর এবং উত্তরে ত্রিশৃঙ্গ ও মকর নামে পর্বত আছে। এই আটটি পর্বত দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে কাঞ্চনগিরি মেরু পর্বত অগ্নির ন্যায় চতুর্দিকে দীপ্তি বিস্তার করে শোভা পাচ্ছে।।২৭।। বলা হয় যে, মেরুর শিখরের মধ্যভাগে ভগবান ব্রহ্মার সুবর্ণময় শাতকৌম্ভী পুরী বিরচিত আছে– যা বিস্তারে অযুত সহস্র অর্থাৎ কোটি যোজন ও সমচতুষ্কোণ বিশিষ্ট।।২৮।। তাদের নীচে পূর্বাদি আট দিকে তাদের অধিপতি ইন্দ্র-আদি আট লোকপালের আটটি পুরী আছে। যে দিকপালের যে বর্ণ তার পুরীও সেই বর্ণবিশিষ্ট। এদের আয়তন ব্রহ্মার পুরীর এক-চতুর্থাংশ।।২৯।।
সমীক্ষা ১. ভাগবতকার ভূগোল জানতো ই না, যদি জানতো তাহলে এই সব গালগল্প লিখত না। রথের চাকায় সমুদ্র সৃষ্টি হয়?
কর্ণের জন্ম
(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ২৪, শ্লোক ৩২-৩৬)
পৃথা দুর্বাসা ঋষিকে প্রসন্ন করে উনার থেকে দেবতাদের আহ্বান করার বিদ্যা শিখে নিল। এক দিন সেই বিদ্যার প্রভাবকে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পৃথা পরম পবিত্র ভগবান সূর্যের আবাহন করলেন ।।৩২।। সেই সময় ভগবান সূর্য সেখানে এসে পৌঁছাল। উনাকে দেখে কুন্তীর হৃদয় বিস্ময়ে ভরে গেল। উনি বললেন- 'ভগবান! আমাকে ক্ষমা করুন। আমি তো পরীক্ষা করার জন্যই এই বিদ্যার প্রয়োগ করেছিলাম। এখন আপনি যেতে পারেন ।।৩৩।। সূর্যদেব বললেন- 'দেবী! আমার দর্শন নিষ্ফল হতে পারে না। এইজন্য হে সুন্দরী! এখন আমি তোমার দ্বারা এক পুত্র উৎপন্ন করতে চাই। হ্যাঁ, অবশ্যই তোউ যোনি দূষিত হবে না, এর উপায় আমি করে দেবো' ।।৩৪।। এই বলে ভগবান সূর্য গর্ভ স্থাপিত করে দিলেন এবং এরপর তিনি স্বর্গে চলে গেলেন। সেই সময় কুন্তীর থেকে এক বড়োই সুন্দর এবং তেজস্বী শিশু উৎপন্ন হলো। সে দেখতে আরেক সূর্যের সমান ছিল ।।৩৫।। পৃথা লোকনিন্দার ভয় পেল। এইজন্য তিনি বড়ো দুঃখে সেই বালককে নদীর জলে ছেড়ে দিল। পরীক্ষিৎ! সেই পৃথার বিবাহ তোমার বড়দাদা(great grandfather) পাণ্ডুর সঙ্গে হয়েছিল, যিনি বাস্তবে সত্যিই বড়ো বীর ছিলেন ।।৩৬।।
সমীক্ষা ভাগবতকার এই কথাকে রচনা করে কুন্তীকে ব্যভিচারিণী এবং সূর্যকে ব্যভিচারী ঘোষিত করে দিয়েছি। সম্ভোগে যোনি দূষিত হওয়ার ক্ষেত্রে সূর্যদেব কোনো ওষুধ তো লাগায়নি যখন পুরুষ সঙ্গ হয়েই গেছে তখন যোনি তো দূষিত হয়েই যায় তাহলে আর কুমারীত্ব কোথায় থেকে গেল। ভাগবতকার কুন্তী কে পুরূষগামী ও বলেছে আবার শুদ্ধও রাখতে চেয়েছে। সূর্য তো আগুনের গোলা, যা এই পৃথিবী থেকে লক্ষ গুণ বড়ো, কারোর ডাকে তা কিভাবে আসতে পারে, তা জড় পদার্থ কোনো নারীর সঙ্গে সম্ভোগ সর্বথা অসম্ভব।
(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, দশম স্কন্ধ, অধ্যায় ২, শ্লোক ৮-১৪)
এই সময় আমার সেই অংশ যাঁকে শেষ বলা হয়, দেবকীর উদরে গর্ভ রূপে স্থিত হয়েছিলো। তাঁকে সেখান থেকে বের করে তুমি রোহিণীর পেটে রেখে দাও ॥৮॥ কল্যাণী! এখন আমি নিজের সমস্ত জ্ঞান, বল আদি অংশের সাথে দেবকীর পুত্র হবো এবং তুমি নন্দবাবার পত্নী যশোদার গর্ভে জন্ম নাও ॥৯॥ তুমি মনুষ্যগণকে তাদের আকাঙ্ক্ষিত বরদানে সমর্থ হবে। মনুষ্য তোমাকে নিজেদের সমস্ত অভিলাষ পূর্ণকারী হিসেবে জেনে ধূপ-দীপ, নৈবেদ্য এবং অন্য প্রকার সামগ্রী দ্বারা তোমার পূজা করবে ॥১০॥ পৃথিবীতে তোমার জন্য অনেক স্থান তৈরি হবে এবং দুর্গা, ভদ্রকালী, বিজয়া, বৈষ্ণবী, কুমুদা, চণ্ডিকা , কৃষ্ণা, মাধবী, কন্যা, মায়া, নারায়ণী, ঈশানী, শারদা ও অম্বিকা আদি বহু নামে তোমাকে ডাকা হবে ॥১১-১২॥ দেবকীর গর্ভ থেকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কারণে শেষজীকে মনুষ্যগণ সংসারে 'সংকর্ষণ' বলা হবে, লোকরঞ্জন করার কারণে 'রাম' বলা হবে এবং বলবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হওয়ার কারণে
'বলভদ্র'ও বলা হবে ॥১৩॥ যখন ভগবান এই প্রকার আদেশ দিলেন, তখন যোগমায়া 'যথা আজ্ঞা'- এরূপ বলে তাঁর কথা শিরোধার্য মেনে নিলেন এবং তাঁর পরিক্রমা করে তিনি পৃথিবী লোকে চলে আসলেন তথা ভগবান যেরূপ বলেছিলেন, তেমনিই করলেন।॥১৪॥
সমীক্ষা- এক নারীর পেট থেকে বিনা আপরেশনে ভ্রূণ বের করে দূর স্থানে অবস্থিত অপর স্ত্রীর গর্ভে প্রবেশ করানো এবং ওই দুই নারীর কেউ এই বিষয় বুঝতে পারে না যে তাদের গর্ভ প্রতিস্থাপন করার জন্য ভ্রুণ প্রবেশ করানো হয়েছে এবং কখন বের করা হয়েছে– এটি কল্প কাহিনী বিনা আর কি বা হতে পারে?
ভরদ্বাজের জন্ম
(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ২০, শ্লোক ৩৪-৩৮)
পরীক্ষিৎ! বিদর্ভরাজের তিন কন্যা সম্রাট ভরতের পত্মী ছিলেন। তিনি তাদের বড় স্নেহ করতেন। কিন্তু যখন ভরত তাদের বলেছিলেন যে, তোমাদের পুত্র আমার অনুরূপ নয়, তব তারা ভয় পেয়েছিলেন যে সম্রাট আমাদের আবার ত্যাগ না করে দেয়। এজন্য তারা নিজেদের বাচ্চাদের হত্যা করেল। ॥৩৪॥ এইভাবে সম্রাট ভরতের বংশ বিচ্ছিন্ন হতে লাগলো। তখন তিনি সন্তানের জন্য 'মরুৎস্তোম' নামক যজ্ঞ করলেন। এর ফলে মরুদ্গণ প্রসন্ন হয়ে ভরতকে ভরদ্বাজ নামক পুত্র দিলেন ॥৩৫॥ ভরদ্বাজের উৎপত্তির প্রসঙ্গ এটি যে, এক বার বৃহস্পতিজী নিজের ভাই উতথ্যের গর্ভবতী পত্নীর সাথে মৈথুন করতে চেয়েছিলেন। সেই সময় গর্ভে যে বালক (দীর্ঘতমা) ছিল, সে নিষেধ করেছিলো। কিন্তু বৃহস্পতিজী তার কথার উপর গুরুত্ব না দিয়ে 'তুই অন্ধ হয়ে যা' এই শাপ দিয়ে বলপূর্বক গর্ভাধান করেছিলেন॥৩৬॥ উতথ্যের পত্নী মমতা এই ঘটনার ফলে ভয় পেয়েছিলেন যে, আমার পতি আমাকে আবার ত্যাগ করে না দেয়। এজন্য তিনি বৃহস্পতিজী দ্বারা জন্ম নেওয়া পুত্রকে ত্যাগ করে দিতে চেয়েছিলেন। সেই সময় দেবতাগণ গর্ভস্থ শিশুর নাম নির্বচন করতে থেকে এটি বললেন ॥৩৭॥ বৃহস্পতিজী বললেন যে 'হে মূঢ়! এটি আমার ঔরসজাত এবং আমার ভাইয়ের ক্ষেত্রজ। এইভাবে এ দুইজনেরই পুত্র (দ্বাজ) হবে। এজন্য তুমি ভয় পেয়ো না, এর ভরণ-পোষণ করো।' এর উত্তরে মমতা বললে-'বৃহস্পতে! এ আমার পতীর নয়, আমাদের দুই জনেরই পুত্র। এজন্য তুমিই এর ভরণ-পোষণ করো।' এই ভাবে নিজেদের মধ্যে বিবাদ করতে থেকে মাতা-পিতা উভয়ই এই পুত্রকে ছেড়ে চলে গেলেন। এজন্য এই বালকের নাম 'ভরদ্বাজ' হয়েছে ॥৩৮॥
গর্ভ থেকে বালক কিভাবে নিষেধ করতে পারে? আর বৃহস্পতির নিজের ভাইয়ের গর্ভবতীর পত্নীর সাথে মৈথুন করা কতটা শিষ্টাচার মূলক আচরণ?
স্ত্রীগণ পাপী এবং দুরাচারিণী হয়ে থাকে
(ভাগবত পুরাণ, ষষ্ঠ স্কন্ধ, অধ্যায় ১৮, শ্লোক ৪১,৪২)
এটি সত্য যে, স্ত্রীদের চরিত্রকে কেউ জানে না। তাদের বদন দেখতে এরূপ যেন তা শরতের ফুটন্ত পদ্ম, কথাবার্তা শুনতে এমতই মিষ্টি যেন অমৃত মেশানো রয়েছে। কিন্তু হৃদয়, সেটি এতই তীক্ষ্ণ যেন তাতে ছুরি বসানো রয়েছে। ॥৪১॥ এতে কোনো সন্দেহ নাই যে স্ত্রীলোক নিজের লোভের দ্বারা বশীভূত কাঠের পুতুল ।সত্য বলতে, তারা কাউকেই ভালোবাসে না। স্বার্থবশত তারা তাদের পতি, পুত্র এবং ভাইকে মারতেও পারে অথবা অন্যকে দ্বারা মারাতেও পারে। ।৪২॥
সমীক্ষা স্ত্রীগণ ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষের সিদ্ধি সাধন রূপ হয়ে থাকে। কিন্তু ভাগবতকার স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে এমন মহান কথা রচনার করে গেছেন, তাতে তো মনে হয় ভাগবতকার নিশ্চয়ই পত্নী দ্বারা এক দুই বার বার পিটুনি খেয়েছিলো। ফলে এই অনুভূতিতে এসব কথাবার্তা লিখেছে। বেদোক্ত মহান নারীদের সম্পর্কে এহেন নিন্দাবাচক কথা বলার কারণ কী ভাগবতকারের, তা ভেবে দেখার বিষয়।
দেবতা এবং অসুরদের বিচিত্র বাহন
(ভাগবত পুরাণ, অষ্টম স্বন্ধ, অধ্যায় ১০, শ্লোক ৮-১১)
রণভূমিতে রথীদের সাথে রথী, পদাতিকের সাথে পদাতিক, ঘোড়সওয়ারের সাথে ঘোড়সওয়ার এবং হাতিসওয়ারের সাথে হাতিসওয়ার যুদ্ধে উপস্থিত হন ।।৮।। তাদের মধ্যে কোনো কোনো বীর উটের উপর, হাতির উপর এবং গাধার উপরে চড়ে যুদ্ধ করেছিলেন আবার কেউ কেউ রক্তমুখী বানর,, বাঘ এবং সিংহের উপরে ছিলেন ।।৯।। কোনো কোনো সৈনিক শকুন, কাক, সারস, বাজ এবং ভাস পাখিতে চড়ে এসেছিলেন। আবার অনেকে তিমিঙ্গিল, শরভ, মহিষ, গণ্ডার, ষাড়, নীলগাই এবং জংলী ষাড়ের উপর ছিলো ॥১০॥ প্রবল যুদ্ধ হচ্ছিলো, দুই পক্ষই ক্রোধে পূর্ণ ছিলো। একে-অন্যের উপর তীব্র আক্রমণ চালাতে লাগলো; কেউ কেউ শশক, ইঁদুর, গিরগিট এবং শিয়ালের উপরে চড়ে যুদ্ধ করছিলো। অনেকে আবার মনুষ্য, ছাগল, কৃষ্ণসার মৃগ, হংস এবং শুয়োরের উপর বসে ছিলো।।১১।।
সমীক্ষা ১. মনুষ্যদের বাহন ইঁদুর, গিরগিট, মাছ, খরগোশ, শকুন, বাজ আদিও হতে পারে কী??
২. এই সব গুলোর উপর চড়ে কিভাবে যুদ্ধ করা সম্ভব ??
গজ এবং কুমিরের এক হজার বছর পর্যন্ত চলা যুদ্ধ
(ভাগবত পুরাণ, অষ্টম স্কন্ধ, অধ্যায় ২, শ্লোক ২৯)
গজেন্দ্র এবং কুমির নিজের নিজের সম্পূর্ণ শক্তি লাগিয়েছিলো। কখনও গজেন্দ্র কুমিরকে বাইরে টেনে নিতো আবার কখনও কুমির গজেন্দ্রকে ভিতরে টেনে নিয়ে যেতো। পরীক্ষিৎ! এই ভাবে তাদের লড়তে-লড়তে এক হজার বর্ষ অতীত হয়ে যায় এবং উভয়েই জীবিত থাকে। এই ঘটনা দেখে দেবতারাও আশ্চর্য হয়ে গেলেন ॥২৯॥
সমীক্ষা এক হজার বছর পর্যন্ত খাদ্য পানীয় ছাড়াই নিরন্তর লড়তে থাকা এবং জীবিত থাকা কি করে সম্ভব?
একটি গজ এবং একটি কুমিরের আয়ু ১০০ বছরের অধিক নয়, তাহলে এখানে তো ভাগবতকার ১০০০ সাল পর্যন্ত এদের যুদ্ধ করিয়ে দিয়েন, ভাগবতকার তো একদম
কাল্পনিক সমুদ্র
শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের ৫ম স্কন্ধ, অধ্যায় ২০, শ্লোক ২,৭,১৩,১৮,২৪,২৯ এর মধ্যেও, এটি বলা হয়েছে যে, পৃথিবীতে সুমেরু এবং কিছু পর্বতের মাঝে লবণের সমুদ্র, ইক্ষুরসের সমুদ্র, মদিরার সমুদ্র, ঘৃতের সমুদ্র, দুধের সমুদ্র, ক্ষীরের সমুদ্র এবং ঘোলের সমুদ্র রয়ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে এই সমুদ্রগুলো (লবণ ব্যতীত) নাই। এছাড়াও ভাগবতে এদের বিস্তার এতই দূর পর্যন্ত বলা হয়েছে যে সেগুলো প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে অবস্থিত হওয়া সম্ভবই নয়।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ