রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

01 May, 2020

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব


রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
সেকুলার রামকৃষ্ণ!
১৮৩৫ খ্রী: রামকৃষ্ণের বাবা ক্ষুদিরাম তীর্থ ভ্রমণে যান। স্বামীর অবর্তমানে রামকৃষ্ণের মা চন্দ্রাদেবী স্বপ্ন দেখলেন একটি জ্যোতির্ময় মূর্তি তার শয্যায় রয়েছেন! তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিন্তু তখনও তিনি যেন ঐ জ্যোতির্ময় মূর্তি দেখতে পেলেন। মনে হল কে যেন দরজা ভেঙ্গে তার শয়ন কক্ষে ঢুকছে। তিনি তাড়াতাড়ি উঠে আলো জ্বালেন। কিন্তু দেখলেন, দরজায় খিল দেওয়া আছে, ঘরে কেউ নেই।

এরপর একদিন তিনি প্রতিবেশী ধ্বনি কামরানী সঙ্গে শিব মন্দিরে শিব বিগ্রহের সম্মুখে দাঁড়িয়েছিলেন। শিব বিগ্রহ থেকে একটি জ্যোতির্ময় শিখা বিচ্ছুরিত হয়ে তীর-বেগে তার দিকে ছুটে আসলো। এ সম্পর্কে ধ্বনীকে তিনি কিছু বলার আগেই তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। ধ্বনি তার চোখে মুখে জল দিয়ে তার মূর্ছা ভাঙ্গিয়ে তাকে ঘরে আনলো। সে তার কাছে আনুপূর্বক ঘটনা শুনে ভাবলো চন্দ্রার মাথায় অসুখ হয়েছে। কিন্তু চন্দ্রাদেবী ভাবলেন তিনি সন্তান সম্ভব্য হয়েছেন।
এইভাবে অলৌকিকতার মধ্য দিয়ে ১৮৩৬ খ্রী: ১৮ই ফেব্রুয়ারি তারিখে জন্ম হয় গদাধরের (রামকৃষ্ণের) (ঠাকুর রামকৃষ্ণের জীবন ও বাণী – স্বরূপানন্দ – পৃ: ৮)
রামকৃষ্ণ ছিলেন দারিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে। চরম দারিদ্র্যের কারণে তার ভাই রামকুমার দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের পৌরহিত্য গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। অথচ সেই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রাণী রাসমণি ছিলেন তথাকথিত শূদ্র বংশের। ভাইয়ের শূদ্রের মন্দিরের পৌরহিত্য গ্রহণ করার তীব্র বিরুধী ছিলেন রামকৃষ্ণ। প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি রামকুমারকে বলেছিলেন – “আমার পিতা ও পূর্বপুরুষরা কেউ শূদ্রের অন্ন গ্রহণ করেনি, এই মন্দিরে পৌরহিত্য গ্রহণ করে তিনি সর্বপ্রথম একাজ করবেন এবং তাতে চাটুজ্জে পরিবারের কলঙ্ক হবে।“
তারপরও রামকুমার ঐ মন্দিরের পুরোহিত হয়েছিলেন এবং রামকৃষ্ণকে সেখানে নিয়ে যান। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রামকৃষ্ণ ভাইয়ের মনযোগাতে সেখানে যান ঠিকই কিন্তু রীতিমত বেঁকে বসেন। তিনি মন্দিরের প্রসাদ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন এবং স্বহস্তে রান্না করে খেতেন। শেষে অনেকটা বাধ্য হয়ে মন্দিরের পৌরহিত্য গ্রহণ করেন এবং কালী সাধক হয়ে উঠেন।
আরেকটা ঘটনাবলি – একদিন তিনি সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় একগাছের তলায় বসে সাধনা করতে বসেছেন। সেই সময় উনার ভাগ্নে এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল – “মামা তুমি পৈতে খুলে রেখেছে? অথচ ব্রাহ্মণদের পৈতে খুলে রাখা অনুচিত। “
এর উত্তরে রামকৃষ্ণ ভাগ্নেকে বললেন – “আমি ব্রাহ্মণ, সকলের চেয়ে বড়’ – এই অভিমানের চিহ্ন এবং একটা পাশ, মাকে ডাকতে হলে ঐ সব ফেলে রেখে একমনে ডাকতে হয়। তাই পৈতে খুলে রেখেছি। ধ্যান করা শেষ হলে ফিরবার পথে আবার পরব।“
এখানে প্রশ্ন থাকে ব্রাহ্মণ, সকলের চেয়ে বড় এটা যদি অভিমানের চিহ্ন এবং পাশ হয় তবে ধ্যান শেষে পৈতে পরবার প্রয়োজন কি? না কি অদৃশ্য ভগবানের কল্পনা করার সময় আমি ব্রাহ্মণ নই সাধারণ মানুষ আর মানব সমাজে ফিরে আসলে “আমি ব্রাহ্মণ, সকলের চেয়ে বড়” ? তাই মনে হয় আসল কথা।
আমার ধর্ম ঠিক, আর অপরের ধর্ম ভুল – এ মত ভাল না। ঈশ্বর এক, দুই নাই। তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোকে ডাকে। কেউ বলে গড, কেউ বলে আল্লাহ, কেউ বলে কৃষ্ণ, কেউ বলে শিব, কেউ বলে ব্রহ্ম। যেমন পুকুরে জল আছে, একঘাটের লোক বলছে জল, আর একঘাটের লোক বলছে ওয়াটার, আর একঘাটের লোক বলছে পানি, হিন্দু বলছে জল, খ্রীষ্টান বলছে ওয়াটার, মুসলমান বলছে পানি, কিন্তু বস্তু এক। মত-পথ। এক-একটি ধর্মের মত এক-একটি পথ, ঈশ্বরের দিকে লয়ে যায়। যেমন নদী নানাদিক থেকে এসে সাগরসঙ্গমে মিলিত হয়।
রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।।।

রামকৃষ্ণ দেব এই অধমকে ক্ষমা করবেন, আমি আপনার কথার সাথে একমত হতে পারলাম না। কারণ কারো ধর্ম যদি হয় অংশীবাদীদের হত্যা করা, তাদের সম্পদ লুট করা, অন্য সম্প্রদায়ের নারী দের যৌন দাসী হিসাবে ব্যবহার করা; অন্য সম্প্রদায়ের আবাসভূমি এবং উপাসনালয় ধ্বংস করা। তবে সেই ধর্ম কে ঠিক, যাথার্থ্য মনে করার জন্য; আপনার মত কাণ্ডজ্ঞানহীন দিব্যজ্ঞান আমার নাই। আর কেও যদি বলে আমার ধর্ম ঠিক, আর অপরের ধর্ম ভুল তবে আমি তাকে বলব সে ধর্ম কি? সেটাই জানে না। মনুসংহিতা মতে, সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, দয়া, চুরি না করা, শুচিতা, ইন্দ্রিয় সংযম, শুদ্ধ বুদ্ধি, জ্ঞান, সত্য এবং ক্রোধহীনতা এ দশটি ধর্মের লক্ষণ। গীতার আলোকে ধর্ম হচ্ছে --- সরলতা, দান, অহিংসা, সত্যবাদিতা, সমস্ত জীবে দয়া, মৃদুতা, লজ্জা, তেজ, ক্ষমা, শান্তি, লোভহীনতা, ধৈর্য, দক্ষতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান মঙ্গলজনক ইত্যাদি এই গুলা হচ্ছে ধর্মের লক্ষণ এবং এই গুন গুলা যাদের মধ্যে বিদ্যমান তাঁরাই প্রকৃত ধার্মিক। পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী বলেছেন-- "ধারয়তি লোকম্" যা লোককে ধারণ করে তাহাকে ধর্ম বলা হয়। যাহার দ্বারা গ্রাম, নগর, দেশ, রাষ্ট্রের কল্যাণ হয় কেবল ইহাই নয়, অপিতু সম্পূর্ণ বিশ্বের সকল প্রাণী বর্গের জন্য যাহা কল্যাণকারী, মঙ্গলকারী হইবে, যাহা সংরক্ষক, সংবর্দ্ধক হইবে তাহাকে ধর্ম বলে। এখানে, আমার ধর্ম অপরের ধর্ম বলে কি কিছু আছে???
ধর্ম মনুষ্য মাত্র সকলের জন্য। যার মধ্যে ধর্মের এই গুণ গুলা নাই সে মানুষ নয়। সে জন্য বলে "ধর্ম হীন মানুষ পশুর সমান"। ধর্ম কখনো কেও পরিবর্তন করতে পারে না, মানুষ পরিবর্তন করে সম্প্রদায়। ধর্মের কাজ হচ্ছে মানুষের সাথে মানুষের ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন করা, কিন্তু যা মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সেটা ধর্ম নয় সেটা হচ্ছে মতবাদ এবং সম্প্রদায়।

আপনি বলেছেনঃ আমার ধর্ম ঠিক, আর অপরের ধর্ম ভুল – এ মত ভাল না। তাহলে তো আল্লাহ নিজে বলেছেনঃ আল্লাহ্ নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণযোগ্য হবে না।(৩:১৯, ৩:৮৫) তবে আপনি কেন আমার ধর্ম ঠিক, আর অপরের ধর্ম ভুল- এ মত ভাল না বলে ভাঁওতাবাজি করছেন? এটাকে আপনি বা আপনার অন্ধ ভক্তরা কি বলবে?
আরো বলেছেনঃ ঈশ্বর এক, কেউ বলে আল্লাহ, কেউ বলে শিব। যদি তাই হয় তবে আল্লাহ নিজে বলেছেনঃ আল্লাহ্ সাথে কাউকে শরীক না করার জন্য, অংশীদার না করার জন্য।(৪:৩৬) যদি কেউ আল্লার সাথে অংশীদারি করে তবে সে জাহান্নামে যাবে।(৫:৭২) তবে আপনি কেন আল্লাহ্ সাথে শরীক করছেন? অংশীস্থাপন করছেন?

রামকৃষ্ণদেব আপনি যথার্থ বলেছেন "ঈশ্বর এক, দুই নাই" পবিত্র বেদ আমাদের কে সেটাই বলে- এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুৎমান, যম, মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন।(ঋগ্বেদ. ১/১৬৪/৪৬।) কিন্তু বেদ এবং আমাদের ঋষি প্রদত্ত কোন বৈদিক গ্রন্থে আল্লাহ, গড নাম কোথাও নাই।
আবার বলেছেনঃ তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোকে ডাকে। দেখুন! সূর্য কে ভিন্ন ভিন্ন লোক ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকতে পারে যেমন রবি, সবিতা, দিবাকর, আদিত্য, প্রভাকর ইত্যাদি কারণ এগুলো সূর্যের বিভিন্ন নাম। কিন্তু কোন বিজ্ঞ লোক সূর্য কে কখনো জল, বারি, অশ্ব, ঘোটক নামে ডাকবে না; কারণ জল, বারি, অশ্ব আর সূর্য একই বস্তু নয়। একি ভাবে বেদে ঈশ্বরের অনেক নাম আছে কিন্তু আল্লাহ, গড নাম কোথাও নাই, কোথাও বলা হয়নি ঈশ্বরের আর এক নাম আল্লাহ, গড। তাই যিনি যথার্থ জ্ঞানী তিনি কখনো পরমাত্মাকে আল্লাহ, গড, নামে কখনো ডাকবেন না। কারণ আবার বলছি পরমাত্মার অনেক নামের মধ্যে আল্লাহ, গড নাম কোথাও নাই।

আপনি আমার মত অধম কে বুঝানোর জন্য, উদাহারণ দিয়ে বলেছেন “হিন্দু বলছে জল, খ্রীষ্টান বলছে ওয়াটার, মুসলমান বলছে পানি, কিন্তু বস্তু এক”। হ্যাঁ! জল, পানি, ওয়াটার এর বৈশিষ্ট্য এক, কোন পার্থক্য নাই তাই একই বস্তু; কিন্তু আল্লাহ, গড, ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য তো এক নয়! পার্থক্য বিদ্যমান। তাহলে আল্লাহ, গড, ঈশ্বর একই সত্তা হয় কিভাবে??? এক জন হয় কিভাবে??? সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে পানি এবং এসিড কে একই বস্তু বলে মনে হতে পারে কারণ পানিও তরল এসিডও তরল অবস্থায় থাকে। কিন্তু এসিড আর পানির পার্থক্য না বুঝে এসিড কে পানি মনে করে পান করলে মৃত্যু নিশ্চিত।

নদী নানাদিক ধরে সাগরসঙ্গমে মিলিত হয় কিন্তু নদী পথ ধরে যেমন কখনো চন্দ্রে পৌছাতে পারে না। নদী পথ ধরে সাগরে পৌছানো যায় আর চন্দ্রে পৌছাতে হলে আকাশ পথে যেতে হয়। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যে পৌছানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন পথের অনুসরণ করতে হয়। সেরকম অংশীবাদীদের হত্যা করা, তাদের সম্পদ লুট করা; অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যা করে তাদের স্ত্রী দের যৌন দাসী হিসাবে ব্যবহার করা; অন্য সম্প্রদায়ের আবাসভূমি এবং উপাসনালয় ধ্বংস করার জন্য যে মতবাদ নির্দেশ দেয় এরুপ ঘৃণ্য মতবাদ বা পথ অনুসরন করে কখনো পরমাত্মার সান্নিধ্য পাওয়া যায় না। সকল মত পথ, ঈশ্বরের দিকে লয়ে যায় এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা।।

স্বরূপানন্দ তার ঠাকুর রামকৃষ্ণের জীবন ও বাণী বইতে বলেছেন –
“সাধন-কালে রামকৃষ্ণ মাঝে মাঝে মথুরবাবুর(রাণী রাসমণির জামাতা) বাড়ীতে মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাতেন। মেয়েরা রামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে কোনরূপ সংকোচ করত না। রামকৃষ্ণ তাদেরই একজন এই বোধ তাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল। বাল্যকাল থেকে যখন কলসি কাঁধে জল নিয়ে বাড়ী ফিরতেন তখন কেউ তাকে পুরুষ বলে বুঝতেই পারতো না।“
এখানেও অন্ধবিশ্বাসী শিষ্যরা উনার মহত্ব বাড়াতে এই হরমোনের সমস্যাকে কালীর ভর বলে এখনও চালায়।
যাইহোক রামকৃষ্ণের গরীব দরদ সম্পর্কে একটু দৃষ্টিপাত করি –
তিনি একবার দেওঘরের বৈদ্যনাথ মন্দির দর্শনে গিয়েছিলেন। রামকৃষ্ণ একদিন পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম দিয়ে যাওয়ার সময় এখানকার গ্রামবাসীদের দারিদ্র করুন অবস্থা দেখে কাতর হলেন এবং জমিদার মথুর বাবুকে এই সব দারিদ্র লোকদের অন্ন বস্ত্র দিতে বললেন। মথুর বাবু ইতস্তত করে বললেন।
“এই তীর্থ যাত্রায় অনেক টাকা লাগবে। তাই এদের সাহায্যে করা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।“
কিন্তু রামকৃষ্ণ এদের শোচনীয় দু:খ দারিদ্র দেখে কাঁদতে লাগলেন “ছি: ছি:! তুমি কি বলছো? আমি এদের ছেড়ে বারানসিও যেতে চাই না।“ তিনি অবশেষে মথুরবাবুর সঙ্গ ছেড়ে দরিদ্র গ্রামবাসীর সঙ্গে বসলেন। মথুরবাবু শেষে বাধ্য হয়ে কলকাতা থেকে কয়েক গাঁট কাপড় এনে এদের মধ্যে বিতরণ করেন এবং এদের সকলকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলেন।
ভেবে দেখুন। একবেলা খাওয়ালে আর একবার বস্ত্র বিতরণ করলে যে দরিদ্রের দারিদ্র দূর হয় তাই আশ্চর্যের। বরং তিনি পুরো ভারতের প্রয়োজন নেই এই এলাকার স্থায়ী দারিদ্র দূরীকরণে একটা ব্যবস্থা নিতেন তাহলে উনাকে প্রকৃত গরীব দরদী বলতাম।
আর কাপড় ও খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য মথুরবাবুর দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন কি? মা কালী যেহেতু উনার সব কথা শুনেন। সেহেতু মা কালীর কাছে দরিদ্র গ্রামবাসীর সমস্যা কথা বললেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।
অবশ্য মা-কালির প্রতি তিনি কতটুকু আস্থাশীল ছিলেন তাও সন্দেহ হয়। কারণ তিনি নিজেই বলেছেন- “সত্যি কি তুই আছিস মা? না, এসবই মনের কল্পনা? তুই আছিস তবে আমি তোকে দেখতে পাই না কেন? তবে এসব কি আকাশ কুসুম? (ঠাকুর রামকৃষ্ণের জীবন ও বাণী – স্বরূপানন্দ- পৃ: ৮)
এইবার একবার ভাবুন তো পৃথিবীর সব মানুষ যদি তার কাজ কর্ম ছেড়ে ঈশ্বর সাধনায়
মগ্ন হয়ে যায় তবে সমস্ত পৃথিবীর কি অবস্থা হবে? না থাকবে মানব সমাজ, না থাকবে ঈশ্বর কল্পনা করার কেউ।
কিন্তু রামকৃষ্ণ তো এই আদর্শই প্রচার করতে চেয়েছিলেন। শুধু সংসার ত্যাগ নয় মানুষের সেবামূলক পেশার উপর আঘাত করতে দ্বিধা-বোধ করেন নি।
একটা উদাহরণ দেই – একদিন ঠাকুর তাঁর ভক্তদের কাছে বলছিলেন,”ডাক্তার উকিল ও দালাল এদের ঈশ্বর লাভের পথে এগোন কঠিন।“
বিশেষ করে ডাক্তারদের প্রতি বললেন, “মনটা যদি ঔষধের ফোটায় পড়ে থাকে, তবে কি করে সে অসীম অনন্তকে চিন্তা করবে?“
এটা শুনে রামকৃষ্ণের শিষ্য জনৈক নাগ মহাশয় ডাক্তারি ছাড়তে দৃঢ় সংকল্প হলেন এবং ঔষধের বাক্স বই গঙ্গায় ফেলে দিয়েছিলেন।
বাহ! আদর্শের প্রশংসা না করে পারা যায় না। ডাক্তারির মতো একটা বাস্তব মহত সমাজ সেবামূলক কাজ ছেড়ে যার অস্তিত্ব নেই তাকে খোজার মধ্যেই মহত্ব বেশী তাই না?

আমি প্রথমই বলেছিলাম রামকৃষ্ণ যখন ধর্মীয় ভাবধারা প্রচার শুরু করেন তখন ধর্মবিপ্লব চলছে।
তিনি ব্রাহ্মসমাজের তীব্র বিরুদ্ধি ছিলেন। অথচ ব্রাহ্ম সমাজকে তিনি অতি কৌশলে ঝোপ বুঝে কোপ মারতে দ্বিধা-বোধ করেন নি।
১৮৭৮ খ্রীষ্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজের নেতা কেশবচন্দ্র সেন কোচবিহারের মহারাজার সঙ্গে তার শিশু কন্যার বিয়ে দিলে বাল্যবিবাহ বিরুধী ব্রাহ্মসমাজ দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। কেশব চন্দ্রের অনুরাগী তাকে ত্যাগ করে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠা করে। এইভাবে ব্রাহ্মসমাজে বিভেদ সৃষ্টি হয়।
ব্রাহ্মসমাজ বিরোধী রামকৃষ্ণ সুযোগ বোঝে কেশবচন্দ্রের কার্যের সমর্থনে বললেন –
“জন্ম,মৃত্যু,বিবাহ ভগবানের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে তাই এতে দোষ কি আছে? কেশব গৃহী, সে মেয়ের বিয়ে দিয়ে পিতার কর্তব্য পালন করেছে, এতে ধর্মের কোন হানি হয় নি।“
বাহ! কি সুন্দর কথা। বিবাহ, জন্ম, মৃত্যু সব ভগবানের ইচ্ছা। অথচ উন্নত বিশ্বে আজ বাল্য বিবাহ নাই বলেই চলে, আর জন্ম যদি ভগবানের হাতেই থাকতো তবে আমরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কিভাবে গ্রহণ করছি? নাকি উন্নত বিশ্বের দেশ থেকে ভগবান সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছেন? যাদের ধর্ম-পুরুষ ভেবে জনসাধারণ পূজা করে এরাই প্রগতি বিরুধী সমাজের বড় শত্রু।
ব্রাহ্ম সমাজের বিরুধীতা করতে গিয়ে নারীকে গরু ছাগলের সাথে তুলনা করতে কার্পণ্য করেননি রামকৃষ্ণ।
শিবনাথ শাস্ত্রী রামকৃষ্ণের কামিনী-কাঞ্চন ত্যাগের আদর্শ সম্পর্কে তিনি রামকৃষ্ণকে বলেছিলেন, “
স্ত্রী লোকেরা ব্রাহ্মসমাজের সদস্যা ব্রাহ্মধর্ম হল একটি সামাজিক ও গাহস্থ্য ধর্ম, ব্রাহ্মসমাজ নারীজাতিকে শিক্ষা ও স্বাধীনতা দিতে চায়। সুতরাং কামিনী ত্যাগের কঠোর আদর্শ আমরা বিশ্বাস করি না।“
এর পরিপ্রেক্ষিতে রামকৃষ্ণ বলেছিলেন – “চারাগাছ নিয়ে মালী কি করে? ছাগল গরু থেকে বাঁচাবার জন্য বেড়া দেই। পরে চারাগাছ যখন বেড়ে ওঠে তখন আর বেড়া দেওয়ার দরকার হয় না। আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনেও আমরা তাই করি।“
শিবনাথ তাতে বলেছিলেন – “আমি আপনার মতো নারী জাতির কাজকে গরু ছাগলের মতো ধ্বংসাত্মক মনে করি না। আমাদের সংগ্রাম ও সামাজিক অগ্রগতিতে তারা সহায় হতে পারে।
রামকৃষ্ণের এক শিষ্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ শ্রী রামকৃষ্ণ, শ্রী শ্রী মা ও বিবেকানন্দ বইতে তখনকার ধর্ম বিপ্লবের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন –
“পরমহংসদেব যখন জগৎ সমক্ষে উদয় হন, তখন ঘোরতর ধর্মবিপ্লব।“
জড়বাদী মুক্তকণ্ঠে বলিতেছেন – “জড় হইতেই সমস্ত,জড়ের সংযোগেই আত্মা, জড় ব্যতীত আর কিছু নাই।“ ব্রাহ্ম সমাজ বলেন – “বেদ, বাইবেল, কোরান প্রভৃতি কিছুই মানিবার আবশ্যক নাই, কোনটিই অভ্রান্ত নয়, কোনটিই ঈশ্বর বাক্য নয়। এমন সময় পরমহংসদেব প্রচার করলেন “কোন ধর্ম কোন ধর্মের বিরোধী নয়। বাহ্য দৃষ্টিতেই বিরোধ কিন্তু সকল।
ধর্মে ধর্মে বিরোধ আছে কি নেই? তা অন্তর্দৃষ্টি বাহ্য দৃষ্টি দুভাবে দেখলেই বোঝা যায়।
যাক এখন প্রশ্ন উঠতে পারে প্রাচীন ভারত থেকে দেখে আসছি নানা সময় নানা যুক্তিবাদী মতবাদ আন্দোলনের আকার নিলেও তা পুরো সফল হতে পারে না। কোন না কোন ঈশ্বর সন্তান নামধারী ব্যক্তি এসে একে প্রতিহত করে দেয়। যেমন প্রাচীন ভারতে শঙ্কর বেদান্তের ভাব জোয়ারে বস্তুবাদ ধ্বংস হয় আর উনবিংশ শতকে ধর্ম-বিদ্রোহ প্রতিহত করে রামকৃষ্ণের ভাব জোয়ারে।
কিন্তু এর কারণ কি? 

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ