হনুমান সাঁতার কেটে না উড়ে লঙ্কায় গিয়ে ছিলেন - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

16 April, 2020

হনুমান সাঁতার কেটে না উড়ে লঙ্কায় গিয়ে ছিলেন

হনুমান সাঁতার কেটে না উড়ে লঙ্কায় গিয়ে ছিলেন
রামায়ন আজ থেকে প্রায় ৯,৫০,০০০ বছর আগে হয়েছে ,তায় সত্য সত্য রামায়ন পাওয়া খুব কঠিন। কারন এই বছর পার হওয়া সময়ের মধ্যে এমন কোন বস্তু, সামগ্রী বা কোন ব্যাক্তি নেই যার সত্য সত্য ইতিহাস আপনার কাছে আছে।
রাহুল আর্য(thanks Bharat) এর আলোচনার অংশঃ👇
রামায়ন এর সুন্দর কাণ্ড( প্রথম স্বর্গ) এ ২৭ আর ২৯ শ্লোক এ বলা হয়েছে " Hanuman পর্বত সমান দৃঢ়সংকল্প ব্যাক্তি ছিলেন, আর তিনি এত তেজ এর সাথে দ্রুত সমুদ্রে সাঁতার কাটছে যা দেখে মনে হচ্ছে তিনি বায়ুপুত্র ,বায়ুপুত্রের সমান সমুদ্রে সাঁতার কেটে এগিয়ে চলেছে।"
শ্লোক নম্বর ৬৭ তে বলা আছে Hanuman কে দেখে মনে হচ্ছিল যেমন নৌকার উপরের অংশ উপরে আর নিচের অংশ জলের নিচে ডুব থেকে জলে এগিয়ে চলে ,ঠিক তেমনি Hanuman ও সমুদ্রে সাঁতার কেটে এগিয়ে চলেছে। যদি Hanuman উড়ে যেত তাহলে নৌকা আর জল এর উল্লেখ করত না। আর এই শ্লোক এ বলা আছে Hanuman সমুদ্রে যেই যেই জায়গা দিয়ে যাচ্ছিল সেখানে Hanuman এর হাতের বেগের জন্য সমুদ্রে অনেক উঁচু ঢেও তৈরি হচ্ছিল। মনে হচ্ছে হাওয়ার বেগে এগিয়ে যাচ্ছিল।
শ্লোক নম্বর ৬৯ ঃ- Hanuman এই প্রকার এগিয়ে যাচ্ছিল যেমন কোন পাহাড় এর টুকরো সমুদ্রে ফেলে দিলে সমুদ্রে যেমন ঢেও সৃষ্টি হয় ঠিক তেমন মহাকপি অর্থাৎ Hanuman তার বুকের সাথে সমুদ্রের জল চিরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
শ্লোক নম্বর ৭০ ঃ- Hanuman এর বেগে ভীষণ ঢেও উটছিল যেন গর্জন হচ্ছিল। এই বেগের সাথে এগিয়ে যাচ্ছিল।
শ্লোক নম্বর ৭৬ ঃ- Hanuman জী সমুদ্রে ক্লান্ত না হয়ে এই বেগের সাথে এগোনোর সময় আশে পাশে নাগ অক্ষ ও অনান্য প্রজাতি ছিল। তারা Hanuman এর প্রশংসা করতে লাগল।
Hanuman এর রামেশ্বরম থেকে লঙ্কা যাওয়ার দূরত্ব আজকের গণনা অনুসারে ৫০ কিমি আছে। আর প্রাচীন গ্রন্থ অনুসারে ৪৮ কিমি থেকে কিছু মিটার বেশি।
এতদুর সাঁতার কেটে যাওয়া চারটিখানি কথা না, যেখানে সমুদ্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রকার মাছ, সাপ ইত্যাদি ভয়ংকর জীব এর মধ্যে দিয়ে যাওয়া কোন খেলা না। আর শ্লোক এ বিষাক্ত সাপের কথা বলা হয়েছে।
আর Hanuman উড়ে যেত তাহলে এই সব এর কথা বলা হত না। শ্রীরাম এর সেনাদের মধ্যে এমন কেও ছিল না যে সাঁতার কেটে ৪৮ কিমি যেতে পারত। যদি মহাবাহু ,মহাবলি কেও ছিল সেটা একমাত্র Hanuman ছিল। আর শ্রীরাম এর Hanuman এর প্রতি পুরো বিশ্বাস ছিল। আজ একজন সাধারণ মানুষের ৪৮ কিমি হাঁটা সম্ভব না। আর Hanuman সাঁতার কেটে গিয়েছিল।
যদি Hanuman উড়ে যেত তাহলে সবার নজরে চলে আসত, যার জন্য সে ধরা পরে যেত। সেইসময় এর লোক অনুশাসন এর অন্তর্গত কাজ করত। আর খাবার দাবার ও উচিত প্রকার ছিল। এতদুর সাঁতার কেটে যাওয়া ৯,০০,০০০ বছর আগে সামান্য ব্যাপার ছিল না, কিন্তু একজন ব্রহ্মচারীর পক্ষে কোন কিছু কঠিন ছিল না। আর আজকের যুগেও ব্রহ্মচর্য আছে কিন্তু শ্রীরাম এর মতো রাজা নেই। কিন্তু বর্তমান সময়ে Hanuman কে দৈবিক শক্তির সাথে যুক্ত করে উড়ছে এইরকম দেখায়। যদি উড়েয় যায় তাহলে বিমান যত উঁচু তে উড়ে তত উচুতেয় উড়ে যেত। সমুদ্র থেকে ৫-১০ ফিট উচুতে উরতে দেখায় কেন।
যখন কুলকুণ্ডলিনী শক্তি অ্যাকটিভ হয়ে যায় তখন গ্রাভিটি যোগীর উপর কাজ করা বন্ধ করে দেয়। গ্রাভিটির বিপরীতী অপান প্রাণ এবং উদান প্রাণ সক্রিয় হয়ে যায়। সাধক যদি ইচ্ছা করে তবে তখন সে আকাশে ভেসে যেতে পারেন।
বৈদিক রশ্মি থিওরি অনুসারে মনুষ্যের দেহে ১০ প্রকারের বিশেষ প্রাণরশ্মি কাজ করে।
অপান প্রাণ রশ্মি পৃথিবীর সকল বস্তুকে আকর্ষণ করে ধরে বসে। অন্যদিকে উদান নামক বল অপানপ্রাণ ও প্রাণরশ্মির বিপরীত বলের সঞ্চার করে দেয়।
যে ব্যক্তি প্রাণ এবং অপানের বিপরীতে উদান প্রাণ রশ্মিকে অ্যাকটিভ করতে পারে সে ব্যক্তি পৃথিবীর আকষণ মুক্ত হয়ে শূন্যে ভাসতে থাকে।
পরে ধনঞ্জয় প্রাণরশ্মির সহয়তায় উক্ত আকাশে ভাসমান ব্যক্তি বিভিন্ন দিশায় গতি করে থাকে।
হনুমান আদি বানর বংশ উক্ত বিদ্যা আয়ত্ব করে আকাশ মার্গে উড়তে পারিত।
মনে রাখবেন বানর কিন্তু মনুষ্যে বংশের এক পদবী যাহা রামায়ণ কালে ব্যবহার করা হত। এই বানর এখনকার বানর নয়।
বাল্মিকী রামায়ণ থেকে হনুমানের উড়ে চলাচল করার কথা বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার কথা পাওয়া যায় । বাল্মিকী একজন মুনি ছিলেন , আর মুনি ঋষিরা কখনও মিথ্যা গ্রন্থ রচনা করতে পারেনা না ।
মনুষ্যের দেহে জীবাত্মার সহিত আরও ১০ প্রকারের বিশেষ প্রাণবায়ু কাজ করে থাকে , একত্রে যাকে আমরা একাদশ রুদ্র বলি । তো এই দশ প্রকার প্রাণ বায়ু হল - ১) প্রাণ ; ২) সমান ; ৩) অপান ; ৪) ব্যান ; ৫) উদান ; ৬) নাগ ; ৭) কূর্ম ; ৮) কৃকল ; ৯) দেবদত্ত ; ১০) ধনঞ্জয় ।
অপান বায়ু শরীরের মল মূত্র গর্ভ প্রভৃতি সকল বস্তুকে নিম্ন গতি প্রদান করে । অন্যদিকে উদান নামক বল অপান বায়ু ও প্রাণ বায়ুর বিপরীত বলের সঞ্চার করে দেয় । যে যোগী প্রাণ এবং অপানের বিপরীতে উদান বায়ুকে সক্রিয় করতে পারে সে যোগী পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থেকে মুক্ত হয়ে শূন্যে ভাসমান হতে পারে । পরে ধনঞ্জয় প্রাণবায়ুর সহয়তায় উক্ত ব্যক্তি আকাশে ভাসমান অবস্থা থেকে বিভিন্ন দিশায় চলমান বা গতিশীল হতে পারে ।
যোগ দর্শনে ৩ বিভূতি পাদের ৩৯ সূত্রে বলছে -
"উদানজয়াজ্জলপঙ্কককন্টকাদিষসঙ্গ উৎক্রান্তিশ্চ"
শব্দার্থ : (উদান-জয়াৎ) উদান প্রাণকে জিতে নিলে (জল-পঙ্ক-আদিষু-অসঙ্গ-উৎক্রান্তি-চ) জল পঙ্ক কণ্টক ইত্যাদি হতে যোগী অসঙ্গ হয় এবং উর্দ্ধ গতির প্রাপ্তি হয় ।
সূত্রার্থ : উদান প্রাণকে জিতে নিলে জল পঙ্ক কণ্টক ইত্যাদি হতে যোগী অসঙ্গ হয়ে যান এবং উর্দ্ধগতি হয়।
রামায়ণের হনুমান উক্ত বিদ্যা আয়ত্ত্ব করে শুন্যে চলাচল করতে পারতেন । এবং হনূমান বানর প্রজাতি ছিল না , মনুষ্যদের মধ্যে এক বিশেষ বংশীয় , বেদজ্ঞ অর্থাৎ বেদ জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন । তার কোনো লেজও ছিল না ।
বাল্মীকি রামায়ণে কিস্কিন্ধা কাণ্ড বর্ণনা -
রাজা বালির সাথে সুগ্রীবের শত্রুতার কারণে সুগ্রীব যখন আলাদা ছিলেন সেই সময় শ্রীরাম ও তার ভ্রাতা লক্ষন সীতাকে উদ্ধার হেতু সুগ্রীবের সহিত মিত্রতা লাভের জন্য খুঁজতে খুঁজতে পম্পা সরোবরের নিকট এসেছেন , তখন সুগ্রীব দূরের পর্বত থেকে রাম-লক্ষন কে দেখতে পেয়ে ভাবলেন যে রাজা বালি হয়তো কোনো গুপ্তচর পাঠিয়েছে সুগ্রীবের কোনো খবর নেওয়ার জন্য , তাই সুগ্রীব সঠিক সংবাদ জানার জন্য হনূমানকে পাঠিয়ে বললেন ওরা দুই জন কে কেন এসেছে তা জেনে এসো ।
সুগ্রীবের কথা মতো হনূমান সেখানে গিয়ে জানতে চাইলেন যে - আপনারা কারা , কোথা হতে এসেছেন , আপনাদের পরিচয় দিন । রামচন্দ্র তখন তার পরিচয় দিলেন ও হনুমানের সাথে আরও বাক্যালাপ করলেন ।
এবং পরিশেষে রামচন্দ্র লক্ষণকে বললেন যে -
"হুনুমান সেই পরিবারের বিদ্বান , যে ঋগ্বেদে অনভিজ্ঞ , যজুর্বেদের জ্ঞানহীন , সামবেদের জ্ঞান শুন্য ব্যক্তি এতো সুন্দর ভাবে পরিস্থিতি অনুসারে কথা বলতে পারেনা । নিশ্চই উনি একাধিক বার ব্যাকারণ পাঠ ও ব্যাকারণ জ্ঞান অর্জন করেছেন , কারণ এতো সময় বাক্যালাপ করে তিঁনি একটাও ভুল বাক্যালাপ করেননি । এমনকি কথা বলার সময় তার মুখে , চোখে , কপালে মনে কোথাও কোনো বিকৃতি , ভয় আদি উৎপন্ন হয়নি ।"
------------------------------------------------------------------------------
আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক এর মতঃ👇নীচের ভিডিও লিঙ্কে পাবেন।
বজরং বলী কি বাঁদর ছিলেন ?
বজরং বলী

কেশরী নন্দন মহাবীর বজরং বলী (হনুমান- রামায়ণের এক বহুল আলোচিত চরিত্র। রামচন্দ্রের প্রতি ভক্তির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু তাকে নিয়ে আলোচনারও শেষ নেই। একজন বানর কিভাবে এত উন্নত গুণ ও চরিত্রের অধিকারী হতে পারে? তাই আজকে আমরা এই রহস্যেরই সমাধান করব যুক্তি সহকারে।
হনুমান কি কোন বানর আদি পশু ছিলো? বাল্মীকি রামায়ণ মধ্যে সর্বদা পুরষোত্তম শ্রীরাম চন্দ্র মহারাজের পর পরম বলশালী বীর শিরোমণি হনুমান জীর নাম স্মরনে আসে। হনুমান জীর যখন আমরা চিত্র দেখি তো তার মধ্যে এক বানরের চিত্র দেখতে পাই যার পেছনে লেজ রয়েছে। আমাদের মনে প্রশ্ন উঠে যে, হনুমান জী কি আসলেই বানর ছিলো? তার কি সত্যিই লেজ ছিলো? এই প্রশ্নের উত্তর এইজন্য মহত্বপূর্ণ যে, অজ্ঞানী লোক বারবার বীর হনুমানজীর নাম নিয়ে পরিহাস করার অসফল প্রচেষ্টা করে। আসুন এই প্রশ্নের উত্তর বাল্মীকি রামায়ণ দ্বারাই অনুসন্ধান করি।
সর্বপ্রথম "বানর" শব্দের উপর বিচার করি। সাধারণত আমরা "বানর" শব্দ দ্বারা বান্দর আদি কোন পশু বুঝি। কিন্ত যদি এই শব্দের বিশ্লেষন করা হয় তাহলে আমরা দেখি যে " বানর" শব্দর অর্থ হল "বন মধ্যে উৎপন্ন হওয়া অন্ন গ্রহনকারী"। যেমন পর্বত অর্থাৎ গিরিমধ্যে অবস্থানকারী এবং ওখানকার অন্ন গ্রহনকারী কে "গিরিজন" বলে। সেই প্রকার বন মধ্যে অবস্থানকারীকে বানর বলা হয়। সুগ্রীব, বালি আদির যে চিত্র আমরা দেখি সেখানে তাদের লেজ দেখা যায়। কিন্তু তাদের স্ত্রীদের কেন লেজ নেই? নর এবং পশুর এরূপ সম্পর্ক সংসারের কোন বর্গের মধ্যে কোথাও দেখা যায় না। এই জন্য এটা স্পষ্ট যে, হনুমান আদির লেজ হওয়া কেবল চিত্রকারের কল্পনা মাত্র।
কিষ্কিন্ধ্যা কাণ্ডে শ্রীরামচন্দ্রে প্রথম ঋচ্যমুক পর্বতে হনুমান জীর সাথে কথোপকথনের পশ্চাতে লক্ষণকে বললেন-
ন অন ঋগবেদ বিনীতস্য ন অ যজুর্বেদ- ধারিন।
ন অ সামবেদ বিদুষ শক্যম এবম বিভাষিতু মদম।।
( বাল্মীকি রামায়ন ৪/৩/২৮)
অর্থাৎ “ঋগ্বেদ অধ্যয়নে অনভিজ্ঞ এবং যজুর্বেদে যার বোধ নেই তথা যার সামবেদ অধ্যয়ন নেই , সেই ব্যক্তি এইরূপ পরিস্কৃত বাক্য বলতে পারবে না। নিশ্চয় তাহার সম্পূর্ণ ব্যকরন অনেকবার অধ্যয়ন করা হয়েছে। কারন তার সাথে কথা বলার সময় সে কোন অশুদ্ধ শব্দের উচ্চারন করে নি। সংস্কার সম্পন্ন শাস্ত্রীয় পদ্ধতি দ্বারা উচ্চারন তাহার বাণী হৃদয়কে হর্ষিত করে দেয়।“
এই প্রমাণ দ্বারা ইহা সিদ্ধ হয় যে, হনুমান জীর চার বেদ, ব্যকরন এবং সংস্কৃত সাহিত্যের অগাধ জ্ঞান ছিলো।
হনুমান জী অশোক বাটিকা মধ্যে সীতাকে নিজ পরিচয় দেবার প্রথমে চিন্তা করলেন যে-
যদি বাচম্ প্রদাস্যামি দ্বিজাতিঃ ইব সংস্কৃতাম্ | রাবণম্ মন্যমানা মাম্ সীতা ভীতা ভবিষ্যতি || ৫-৩০-১৮ বানরস্য বিশেষেণ কথং স্যাদভিভাষণম্ম্ | অবশ্যম্ এব বক্তব্যম্ মানুষম্ বাক্যম্ অর্থবৎ || ৫-৩০-১৯ ময়া সান্ত্বয়িতুম্ শক্যা ন অন্যথা ইয়ম্ অনিন্দিতা | সা ইয়ম্ আলোক্য মে রূপম্ জানকী ভাষিতম্ তথা || ৫-৩০-২০ রক্ষোভিঃ ত্রাসিতা পূর্বম্ ভূয়ঃ ত্রাসম্ গমিষ্যতি |
সুন্দর কান্ড (৩০/১৮-২০)
অর্থাৎ "যদি দ্বিজাতি (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য) সমান পরিমার্জিত সংস্কৃত ভাষার প্রয়োগ করি তো সীতা আমাকে রাবণ ভেবে ভয়ে ভীত হয়ে যাবে। আমার এই বনবাসী রূপ দেখে তথা নগরী সংস্কৃত ভাষার প্রয়োগ করি তো আমাকে রাক্ষস ভেবে ভয়ে ভীত হয়ে যাবে। আমাকে কামরূপী রাবন ভেবে ভয়াতুর বিশালাক্ষী সীতা কোলাহল আরম্ভ করে দেবে। এইজন্য আমাকে সামান্য নাগরিকের সমান পরিমার্জিত ভাষার প্রয়োগ করতে হবে।"
এই অশোকবনেই যখন সীতার সাথে হনুমানের প্রথম সাক্ষাৎ হয় তখন হনুমান সীতাকে জিজ্ঞেস করে-
সুরাণাম্ অসুরাণাম্ চ নাগ গন্ধর্ব রক্ষসাম্ |
যক্ষাণাম্ কিম্নরাণাম্ চ কা ৎবম্ ভবসি শোভনে ||
(বাল্মীকি রামায়ণ ৫-৩৩-৫)
অর্থাৎ “ঐয়ি শোভনে! সুর, অসুর, নাগ গন্ধর্ব্ব ষক্ষ রক্ষ কিন্নর কোন্ কুলে আপনি জন্মেছেন?" তাহলেই বেশ বোঝা যাচ্ছে, সুর অসুর নাগ গন্ধর্ব্ব যক্ষ রক্ষ কিন্নর এবং মানুষের মধ্যে শারীরিক গঠনের বৈষম্য ছিল না। ঐ শ্লোকে ‘মানুষ’ কথাটি নেই। কারণ, হনুমান নিজেও মানুষ ছিলেন, তিনি অপর মানুষ দেহধারী আর একজনকে তিনি মানুষ কিনা এ অবাস্তর প্রশ্ন করে কেন ? দেব যক্ষ রক্ষ কিন্নর আর মানুষে আকৃতিগত কোন অমিল ছিল না, পারস্পরিক বৈষম্য ছিল শুধু শৌর্য্যে, বীর্য্যে, শিল্পকলায়, আচার-বিচার আর ধর্ম্ম বিশ্বাসে, তাই হনুমান সীতাকে ঐ ভাবে প্রশ্ন করছেন, যেমন আমরা কাউকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি চীনা না জাপানী ?
হনুমান জী অতিরিক্ত অন্য বানর যেমন, বালির পূত্র অঙ্গদ রামায়ণ মধ্যে সংসারের শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষদের মধ্যে ছিলেন।
বুদ্ধ্যা হি অষ্ট অংগয়া যুক্তম্ চতুর্ বল সমন্বিতম্ |
চতুর্ দশ গুণম্ মেনে হনুমান্ বালিনঃ সুতম্ || ৪৫৪২
(কিষ্কিন্ধা কান্ড ৫৪।২)
অর্থাৎ “হনুমান, বালি পূত্র অঙ্গদ অষ্টাঙ্গ বুদ্ধি সম্পন্ন, চার প্রকার বল দ্বারা যুক্ত এবং রাজনীতিতে চৌদ্দ গুন ছিলো।“
★ বুদ্ধির অষ্ট অঙ্গ হচ্ছে- শোনার ইচ্ছা, শোনা, শুনে ধারন করা, ভাবনা করা, অর্থ করা, তাৎপর্য সঠিকভাবে বোঝা, বিজ্ঞান ও তত্বজ্ঞান।
★ চার প্রকার বল হচ্ছে- শাম, দাম, দন্ড,ভেদ
★ রাজনীতির চৌদ্দ গুন হচ্ছে- দেশ কালের জ্ঞান, দৃঢতা, কষ্টসহিষ্ণুতা, সর্ববিজ্ঞানতা, দক্ষতা, উৎসাহ, মন্ত্রগুপ্তি, একবাক্যতা, শুরতা,ভক্তিজ্ঞান, কৃতজ্ঞতা,শরনাগত,বৎসলত্যা, অধর্মের প্রতি ক্রোধ এবং গম্ভীরতা।
এই সব গুন যুক্ত কোন ব্যক্তি কি করে বানর আদি কোন পশু হতে পারে?
রামায়ণে বানর সম্প্রদায়ে অন্তেষ্টিক্রিয়ার উল্লেখও পাওয়া যায়।
আজ্ঞাপয়ৎ তদা রাজা সুগ্রীবঃ প্লবগ ঈশ্বরঃ |
ঔর্ধ্ব দেহিকম্ আর্যস্য ক্রিয়তাম্ অনুরূপতঃ || ৪-২৫-৩০
কিষ্কিন্ধা কান্ড (২৫।৩০)
বালির অন্তিম সৎকারের সময় সুগ্রীব আজ্ঞা করে যে, "আমার জেষ্ঠ ভ্রাতা আর্যের সৎকার রাজকীয় নিয়ম অনুসারে করা হবে।"
আর্য নামে সম্বোধন কোন পশু কে করা হয়? না কি কোন শ্রেষ্ঠ গুন যুক্ত মানব কে?
সুতরাং এখান থেকেও এটাই প্রতিপন্ন হচ্ছে যে বানর কোনো লেজযুক্ত বৃক্ষচারী প্রাণী বোঝাতে রামায়ণে ব্যবহৃত হয় নি। এটা মানবেরই একটা প্রজাতি মাত্র।
মার্কণ্ডেয় পুরাণে আছে,
‘শকা যবন কম্বোজা: পারদা পহলবাস্তথা
কোলি সৰ্পা মাহিষকা দার্বাশ্চোলা: স কেরলা।
অর্থাৎ “মহারাজ সগর, শক, যবন, কম্বোজ, পারদ, পহ্লব, কোল, সর্প, মহিষ, দ্বাব চোল, কেরল প্রভৃতি জাতিকে ধর্ম্মচ্যুত এবং বেশভূষা বিহীন করলেন।”
শক, যবন, কোল, কেরল জাতির মত সর্প এবং মহিষও এক একটা জাতি— সবাই মানুষ।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ