বেদ বিরোধী শ্লোক ও গীতা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

18 April, 2020

বেদ বিরোধী শ্লোক ও গীতা

বেদ বিরোধী শ্লোক ও গীতা

গীতার,অনেক শ্লোক,বেদ বিরোধী বা প্রক্ষিপ্ত।পুরাণগুলো,যেমন ব্যাসদেবের নামে চালানো হয়েছে,ঠিক তেমন, শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর বানিয়ে,গীতাতে,প্রক্ষিপ্ত শ্লোক ঢোকানো হয়েছে।

প্রশ্ন~তাহলে আর্য সমাজ,700 শ্লোকের গীতা প্রকাশিত করেছে কেন?
উত্তর~রামদেব আর্য সমাজের সন্ন্যাসী। উনি আর্য সমাজের সন্ন্যাসী হয়ে শিবলিঙ্গ পূজা, চুল ও দাড়ি বড় রাখা,হাতে লাল সুতো পড়া,যোগ ও প্রাণায়ামের নামে মিথ্যা প্রতারণা করেন।আর্য সমাজ আজ মেরুদণ্ডহীন,না হলে,বাবা রামদেবকে পদাঘাত করে আর্য সমাজ থেকে বার করে দিতো।এক্ষেত্রেও সেরকম কোনো কারণ থাকতে পারে।
"বিশ্বরূপ", দেখাবার আগে, শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন,'হে অর্জুন তুমি চর্মচক্ষু দ্বারা আমার বিশ্বরূপ দেখতে সমর্থ হবে না।এইজন্য তোমাকে দিব্যচক্ষু দান করছি। (গীতা-11/8)'
এখন এই, 'জ্ঞানচক্ষু' ও 'বিশ্বরূপ দর্শন' এই দুটি শব্দ কে বুঝতে হবে,না হলে অর্জুনের বিশ্বরূপ দর্শন যে প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা বা ভুয়ো তা বোঝা যাবে না।
জ্ঞানচক্ষু-জ্ঞানচক্ষু বাইরের কোনো ইন্দ্রিয় নয়।এর দ্বারা দেখা যায় না, কেবল অনুভব হয়।প্রকৃত জ্ঞানচক্ষু বিকশিত হলে অন্তরে নিরাকার পরমাত্মার দর্শন হয় এবং সমস্ত সংশয় নষ্ট হয়ে যায়।
বিশ্বরূপ দর্শন- যোগীর যখন 'আমিত্ব' লোপ পায় তখন তিনি পরমাত্মার সাথে যুক্ত হয়ে জগতের সব বস্তুর মধ্যে নিজেকে উপলব্ধি করেন অর্থাৎ তাঁর দ্বৈতভাবের বিনাশ হয়।
এইবার অর্জুনের,মিথ্যা বিশ্বরূপ দর্শন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, অর্জুন বিশ্বরূপ দর্শন করছেন বাইরে থেকে,অন্তর থেকে নয়। তিনি এবং ঈশ্বর যে আলাদা এই দ্বৈত ভাব তাঁর মধ্যে বর্তমান আছে।
বিশ্বরূপদর্শনযোগ অধ্যায়, ভালোভাবে পাঠ করলে বোঝা যাবে শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন উভয়ই মিথ্যা কথা বলছেন।
প্রথমে শ্রীকৃষ্ণের কথাই ধরা যাক।
11/47 শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
ময়া প্রসন্নেন তবার্জুনেদং
রূপং পরং দর্শিতমাত্নযোগাৎ।
তেজোময়ং বিশ্বনন্তমাদ্যং
যন্মে ত্বদ্যন্যেন ন দৃষ্টপূর্বম্।।
অর্থাৎ,শ্রীকৃষ্ণ বলছেন,হে অর্জুন, আমি তোমার উপর প্রসন্ন হয়ে,নিজের শক্তি দ্বারা,তোমাকে আমার এই তেজোময়,অনন্ত বিশ্বরূপ দেখালাম যা তোমার আগে আর কাউকে দেখাই নি।
কিন্তু এখানে বিবেচ্য বিষয় হলো যে, মহাভারতের বিশ্ব পর্বের ভগবদ্গীতাপর্ব্যাধ্যায়ে,আর একবার বিশ্বরূপ প্রদর্শন বর্ণিত আছে এবং দূর্যোধনাদি কৌরবসভাস্থ সকল লোকেই বিশ্বরূপ দর্শন করেছেন। এমনকি, অর্জুনকে তাঁর বিশ্বরূপ দর্শনের দৃশ্যটি সঞ্জয়ও সরাসরি দেখছেন ও ধৃতরাষ্ট্রের,রাজসিংহাসনের পাশে বসে তাঁকে বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন।যেমন,ইতর্জুনং বাসুদেবস্তথোক্তা,স্বকং রূপং দর্শয়ামাস ভূয়ঃ-গীতা-11/50
অর্থাৎ,সঞ্জয় বললেন, ভগবান(শ্রীকৃষ্ণ)অর্জুনকে এরূপ বলে,পুনরায় নিজের চতুর্ভুজ রূপ দেখালেন।
বিশ্বরূপ অধ্যায়ে, শ্রীকৃষ্ণের আরো মিথ্যা কথার দৃষ্টান্ত আছে।যেমন, ভক্ত্যা ত্বনন্যায়া শক্য অহমেবং বিধোহর্জুন।
জ্ঞাতং দ্রষ্টুঞ্চ তত্ত্বেন প্রবেষ্টুঞ্চ পরন্তপ।।
অর্থাৎ,হে পরন্তপ অর্জুন,অনন্য ভক্তি দ্বারাই আমাকে এইরূপে জ্ঞাত হতে পারবে এবং আমাকে দর্শন ও আমাতে,প্রবেশ করতে সমর্থ হবে।
কিন্তু এখানে দুষ্কৃতকারী, পাপাত্মা,ভক্তি শূন্য, দূর্যোধনাদি শত্রুগণও শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন দেখেছেন তাছাড়া সঞ্জয়ও দেখেছেন।
ভাগবতে আছে, শ্রীকৃষ্ণ, শিশুকালেই নাকি,খেলার ছলে হাঁ করে তাঁর মুখগহ্বরে,মা যশোদা কে বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন!!! তাহলে,হে আমাদের মহান বৈষ্ণব ভক্তগণ আপনাদের এই ঈশ্বর কেমন ঈশ্বর যিনি ভুলে যান এবং মিথ্যা কথা বলেন?
এইবার ভক্তশ্রেষ্ঠ অর্জুনের, মিথ্যা কথার দৃষ্টান্ত দিচ্ছি।
অনেকবক্তনয়নমনেকাদ্ভুতদর্শনম।
অনেক দিব্যাভরণং দিব্যনেকোদ্যতায়ুধম্।।-11/10
দিব্যমাল্যাম্বরধরং দিব্যাগন্ধানুলেপম্
সর্বাশ্চর্যময়ং দেবমনন্তং বিশ্বতোমুখম্।।11/11
কিরীটিনিং গদিনং চক্রিণঞ্চ।
তেজোরাশিং সর্বতো দীপ্তিমন্তম্।।11/17
রূপং মহত্তে বহুবক্তনেত্রং,
মহাবাহো বহুবাহূরুপাদম্।
বহূদরং বহুদ্রংষ্ট্রা করালং
দৃষ্টা লোকাঃ প্রব্যথিতাস্তথাহম্।।
গীতা-11/23
অর্থ- অর্জুন,দিব্যমুকুট শোভিত,অনেক মুখ,নেত্র-দন্ত সমন্বিত মস্তক দর্শন করলেন। দিব্যমালা সহ গলদেশ এবং বক্ষঃস্থল দর্শন করলেন।হস্তে ধৃত গদা-চক্র,দর্শন করলেন, বস্ত্রশোভিত কটি ও ঊরু দর্শন করলেন।বহু পদ দর্শন করলেন। সুতরাং,অর্জুন,ভগবানের পা হতে মাথা পর্যন্ত,সমস্ত দেহটাই দেখতে পেলেন। অর্থাৎ,অর্জুনের দেখার আর কিছুই বাকি থাকলো না।তাহলে,কি জন্য তিনি বলছেন,
নান্তং ন মধ্যং ন পুনস্তবাদিং
পশ্যামি বিশ্বেশ্বর বিশ্বরূপ।।গীতা-11/16
অর্থাৎ,আমি (অর্জুন)আপনার(শ্রীকৃষ্ণ),বহু উদর ও চোখমুখ বিশিষ্ট সর্বব্যাপী রূপ দেখতে পেলাম। কিন্তু আপনার আদি,মধ্য,অন্ত কিছুই দেখতে পেলাম না।
এখন বিবেচনার বিষয় হচ্ছে যে,অর্জুন এত পরস্পর বিরোধী বর্ণনা করছেন বা কথা বলছেন বা স্ববিরোধীতা করছেন, বিবেকানন্দের মত।আমরা জানি যে,বিবেকানন্দ বলেছিলেন,'জীবে প্রেম করে যেইজন,সেইজন সেবিছে ঈশ্বর'। অথচ,বিবেকানন্দ নিজেই, অত্যধিক মাছ-মাংস খেতেন।এই যদি হয় বিবেকানন্দর,জীব প্রেমের নমুনা,তাহলে অর্জুনের এই পরস্পর বিরোধী বর্ণনার একটাই অর্থ হয়।অর্জুন পুরোটাই মিথ্যা কথা বলছেন এবং অর্জুনের কোন বিশ্বরূপ দর্শন হয় নি।তাছাড়া,এই, বর্ণনা বেদ বিরোধী।যর্জুবেদের,মন্ত্র- 40/8 অনুযায়ী,ঈশ্বর নিরাকার। ঈশ্বর,স্থূল-সূক্ষ্ম-কারণ, কোনরূপ শরীর ধারণ করেন না।
অর্জুনের,বিশ্বরূপদর্শন, যথার্থ জ্ঞানের অবস্থায় হয়নি।জ্ঞানচক্ষু বিকাশ না হলে,উহা হয়না।অর্জুন, অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ডরূপ বিশ্বদর্শন করেছিলেন নিজের বাইরে অর্থাৎ মহাশূন্যের মধ্যে সুতরাং তাঁর দ্বৈতবোধ কখনো লুপ্ত হয় নি।যদি অর্জুন,নিজের সঙ্গে অভিন্নরূপে বিশ্বদর্শন করতেন তাহলে উহা প্রকৃত বিশ্বরূপ দর্শন বলে পরিগণিত হত।মায়া,নিবৃত্ত না হওয়ার জন্য,অর্জুন সমগ্র বিশ্বকে,নিজ হতে, ভিন্নরূপে দেখেছিলেন নিজের সঙ্গে অভিন্নরূপে নহে। অর্জুনের চোখের সামনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেহ, আর অর্জুন নতজানু হয়ে বসে আছেন দেহ থেকে অল্প দূরে কুরুক্ষেত্রের মাটিতে। এইবার অর্জুনের পাগলের প্রলাপ ও মিথ্যাচার দেখুন। অর্জুন দেখছিলেন শ্রীকৃষ্ণের দেহের মধ্যে, আপনার দেহে আমি সমস্ত দেবগণকে,নানা রূপ জীবগণকে,সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে,প্রলয়কর্তা শিবকে,পালনকর্তা বিষ্ণুকে,ঋষিগণকে এবং সমস্ত স্বর্গীয় সর্পকে দর্শন করছি।গীতা-11/15 এখানে বিবেচনার বিষয় হলো এই যে,বিষ্ণু,শিব,ব্রহ্মা, এইগুলো হল,নিরাকার ঈশ্বরের গুন ও কর্ম বাচক নাম।সুতরাং, অর্জুন ব্রহ্মা,বিষ্ণু শিবকে কি করে দেখতে পাচ্ছেন? এবং স্বর্গীয় সর্প বা সাপ,আবার কিরকম জন্তু?!!! অর্জুনের আরো মিথ্যা প্রলাপ দেখুন। রুদ্রগণ,আদিত্যগণ, বসুগণ,বিশ্বদেবগণ, অশ্বিনীকুমারদ্বয়,মরুদগণ পিতৃগণ,গন্ধর্ব,অসুর এবং এবং সিদ্ধগণ সকলেই বিস্মিত হয়ে আপনাকে দর্শন করছেন।গীতা-11/22 এখানে বিবেচনার বিষয় হল এই যে,রুদ্র-আদিত্য বসু-মরুদগণ,এরা সবাই জড় বস্তু।অশ্বিনীকুমার আলাদা কোন দেবতা নয়, নিরাকার পরমাত্মার নাম।মে মানুষ, ভালো গান গায়, তাঁকেই গন্ধর্ব বলে।যাহারা বেদ মানে না এবং কদাচারী,তাহারা হল অসুর।তো,এই জড় বস্তু,গায়ক,কদাচারী ব্যক্তিগণ,এরা কিভাবে, নিরাকার ঈশ্বরকে দর্শন করছে?!!! এটা হাস্যকর কথাবার্তা ওপাগলের প্রলাপ।এই নাকি গীতার জ্ঞান?!!!কোন মূর্খরা যেন বলে,গীতা বেদের সারাংশ?!!!সারাংশ কেন, গীতাতে, বেদের কোন অংশও নেই। অর্জুনের মিথ্যা প্রলাপ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে প্রায় সমস্ত বিশ্বই,বিশ্বরূপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে, অর্জুনের মতই,বাইরে থেকেই,ভগবানের দেহের মধ্যে বিশ্বরূপ দর্শন করছিলেন সুতরাং অর্জুনের বিশ্বরূপ দর্শন এর বাইরে পড়ে রইল, তাঁর দেহ,সাকার ভগবান এবং অন্তরীক্ষে সিদ্ধগণ,অসুরগণ!!!

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ