বৈদিক সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-
"নাসাদাসিস নঃ সদাসিত্ তদানীম নাসিদ রজ ন ব্যামাপ্রো যৎ..."
"শুরুতে কোন অস্তিত্ব(সৎ) বা অনস্তিত্ব(অসৎ) ছিলনা।সেখানে ছিলনা কোন বায়ুমন্ডল"
সৃষ্টির Initial state প্রকৃতি রূপে বিদ্যমান ছিল। তরঙ্গহীন সমুদ্রের জল যেমন অবস্থা ধারণ করে তদ্রুপ প্রকৃতিরূপি অব্যক্ত matter সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল কিন্তু কোণ লক্ষণ ছিল না।
যখন ঈশ্বর তত্ব দ্বারা সৃষ্টির কামনা হল তখন ঈশ্বর তত্ব সর্বপ্রথম পরা ওম্ রশ্মিকে মুক্ত করে যাহা তাহাতে অনাদি অবস্থায় অব্যক্ত ছিল।
ওম্ রশ্মি মুক্ত হতেই লক্ষণহীণ প্রকৃতিতে সামুদ্রিক ওয়েভের ন্যায় অসংখ্য তরঙ্গের নির্মান হতে থাকে।
এসব তরঙ্গই বেদ মন্ত্র।
পরা ওম্ রশ্মির কম্পণ অতি সূক্ষ হয়। যাহার সামান্য ব্যাপকতায় প্রকৃতিতে বৃহৎ ওয়েভের নির্মান হতে থাকে। এভাবে আস্তে আস্তে পার্টিকেল রচিত হল এবং আমাদের সৃষ্টির একেকটি ধাপ পর্যাক্রমে সম্পন্ন করতে কোটি কোটি বছর সময় ব্যতিত হয়েছিল। প্রলয় হতে ও তদ্রুপ কোটি কোটি বছর সময় লাগবে।
"তম অসিৎ তমস... তপসস্তন্মহিনাজায়াতৈকম”
"চারদিক ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। সমস্ত জিনিস একত্রে পুন্জীভুত ছিল।সেখান থেকে প্রচন্ড তাপের সৃষ্টি হল"
একইভাবে
ঋগবেদ ১০/১২১/১
"হিরন্যগর্ভ সামাভরতাগ্রে.."
"প্রথমেই হিরন্যগর্ভ সৃষ্টি হল"
ঋগবেদ ১০/১২১/৭
"আপ হ য়দ বৃহাতিরিবিশ্বমা য়ান গর্ভম..."
"সেই হিরন্যগের্ভ ছিল উত্তপ্ত তরল যাতে ছিল সৃষ্টির সমস্ত বীজ"
একই ধরনের কথা বলছে শতপথ ব্রাক্ষ্মন ১১.১.৬.১
"হিরন্যগর্ভানি অপঃ তে সলিলা..."
"প্রথমে হিরন্যগর্ভ সৃষ্টিহল।সেখানে ছিল উত্তপ্ত গলিত তরল।এটি ছিল মহাশুন্যে ভাসমান।বছরের পরবছর এই অবস্থায় অতিক্রান্ত হয়।"
ঋগবেদ ১০.৭২.২
"তারপর যেখানে বিস্ফোরন ঘটল গলিত পদার্থ থেকে,বিন্দু থেকে যেন সব প্রসারিত হতে শুরু হল"
ঋগবেদ ১০.৭২.৩
"সেই বিস্ফোরিত অংশসমূহ থেকে বিভিন্ন গ্রহ,নক্ষত্র তৈরী হল"
ঋগবেদ ১০.৭২.৪
"তার এক জীবনপ্রদ অংশ থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হল"
ঋগবেদ ১০.৭২.৮-৯
"তারপর সৃষ্ট ক্ষেত্রে সাতধাপে সংকোচন-প্রসারন সম্পন্ন হল।তারপর সৃষ্টি হল ভারসাম্যের।"
এই অংশটুকু পরলেই স্পষ্ট বোঝা যায় বেদের সৃষ্টিতত্ত আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ।সৃষ্টিতত্তের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মডেল “Lambda-CDM Concordance Model” অনুযায়ী “the evolution of the universe from a very uniform, hot, dense primordial state to its present অর্থাৎ একটি উত্তপ্ত, কেন্দ্রীভূত আদি অবস্থা থেকেই বর্তমান অবস্থার উত্থান।”এছাড়া বেদ এ উল্লেখিত বিস্ফোরণ বর্তমান বিশ্বের বহুল আলোচিত বিগ ব্যাংগ তত্তের সাথে প্রায় পুরোপুরি মিলে যায়।
আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়।বেদ এর মতে সৃষ্টির শুরুতেই ওঁম উচ্চারিত হয় আর এর প্রভাবেই হয় বিস্ফোরন ।
বেদান্ত সূত্র(4/22)
"অনাবৃতিঃ শব্দহম"
অর্থাৎ শব্দের মাধ্যমেই সৃষ্টির শুরু যা মাত্র দুই বছর আগে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন।
বিজ্ঞানীদের দেয়া নতুন STRING THEORY অনুযায়ী প্রথমেই একটা অতি নিম্ন তড়ঙ্গ দৈর্ঘ্য এর শব্দ তড়ঙ্গ তৈরী হয় যার ধাক্কায় বিস্ফোরণ শুরু হয়!
তাই বেদের সৃষ্টিতত্ত পড়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর Dr. Kevin Hurley বলেছিলেন
"How could Aryan sages have known all this 6000 years ago, when scientists have only recently discovered this using advanced equipments which didn't exist that time!"
সৃষ্টিতে যখন বেদোক্ত পঞ্চভূতের নির্মাণ হল তখন গ্রহ, নক্ষত্র সমূহ আকাশে নেবুলার রূপে গভীর নিদ্রায় মগ্ন। ঘুমন্ত মেঘমালা মধ্যে তিন নাভীর সৃষ্টি হয়। তাহা যথাক্রমে (ভূঃ) (ভুবঃ) ( সুবঃ)।
ভূ নাভি হতে অপ্রকাশিত গ্রহ উপগ্রহের সৃষ্টি হল। ভুবঃ নাভি হতে আকাশের বিস্তার হল।
সুবঃ নাভি হতে নক্ষত্রের নির্মাণ হল। ব্যাহৃত স্বর হতে তিন লোকের নির্মাণ হল। একশত এক দেব বর্ষ ধরে এই সৃষ্টির নির্মাণ হতে লাগিল। একশত দেব কর্মেরর্ভিয়ত। বেদে কস্মিক মেঘের নাম অদ্রিজা, অদ্রি।
সূর্য এই মেঘমালাকে শোষণ করে নষ্ট ভ্রষ্ট করে দেয় অথবা দূরে ছিকটে আকাশ মার্গকে স্পষ্ট করে দেয়।
কস্মিক মেঘের ভিতর ৫০ প্রকার বৈদিক ছন্দরশ্মি আহুতি হয়ে বৃষার পাক হইল। বৃষাই সূর্য। ঋক ১০ মন্ডলে সূর্য সৃষ্টির প্রসেস এমন ভাবেই বর্ণিত আছে।
সৃষ্টির মহানাভি হল গায়িত্রী ঋচা ছন্দ রশ্মি।
তথ্যসূত্র VEDA, The infallible word of GODসতং তেহয়ুগে হায়নান্ দ্বেযুগে ত্রীণি চত্বাতি কৃণ্মঃ।
ইন্দ্রাগ্নী বিস্বেদেবাস্তেনু মন্যস্তামহ্নণীয়মানাঃ।।
অথর্ব- ৮।২।২১
পদার্থ- হে মনুষ্য! ( তে) তোমাদের জন্য ( শতম্) শত ( অয়ুতম্) দশ হাজার (হায়নান্) বর্ষের ক্রম দ্বারা ( দ্বেযুগে) দুই যুগ ( ত্রীণি) তিন যুগ এবং ( চত্বারি) জার যুগ ( কৃণমঃ) আমি করিয়া থাকি। আর ( ইন্দ্রাগ্নী) বায়ু এবং অগ্নি ( তে) এই প্রসিদ্ধ ( বিশ্বে দেবাঃ) সমস্ত দিক্য পদার্থকে চন্দ্র,সূর্য ইত্যাদি পদার্থকে ( অহ্নণীয়মানাঃ) সংকোচ বা প্রলয় না করিয়া ( অনু মন্যস্তাম্) অনুকূলে মনস্তত্ত্ব দ্বারা ধারণ করে।
ভাবার্থ-পরমেশ্বর এই সৃষ্টির কাল চক্রকে মনুষ্যের উপকারের জন্য নার্মাণ করিয়াছে। বিজ্ঞানী মনুষ্য পরমেশ্বরের অপার মহিমায় নিজের পরাক্রম বৃদ্ধি করিয়া নতুন-নতুন আবিস্কার করিয়া অমর নাম করিয়া থাকেন।
এই মন্ত্র উত্তরার্দ্ধে আসিয়াছে -অথর্ব-১।৩৫।৪
এই মন্ত্রে পূর্বার্দ্ধে সৃষ্টির সময় মোট আয়ু ৪,৩২,০০০০০ বর্ষ। মন্ত্রে বর্ণিত তথ্য অনিসারে সাত শূন্যের বাম পাশে যথাক্রমে দুই,তিন এবং চার সংথ্যা লিখিলে সৃষ্টির মোট আয়ুর পরিমাণ বাহির হইয়া যায়। সৃষ্টিতে মোট ১০০০ চতুর্যুগী হইয়া থাকে। ১০০০ চতুর্যুগীতে মোট ১৪ টি মন্বস্তর হইয়া থাকে। বর্তমন ৭ মন্বস্তর চলয়মান আছে। সপ্তম বৈবস্বত মনু্র ২৮ তম চতুর্যুগী কলিযুগ চলমান আছে। বর্তমান কলিযুগে বর্ষ গতি চলয়মান আছে। সূর্যসিদ্ধান্ত এবং মনুস্মৃতির হিসাব অনুসারে বেদমন্ত্রের আলোকে হিসাব করিলে সৃষ্টির বয়স হইবে [ ১ অরব ৯৭ কোটি ৩৮ লক্ষ ১৩ হাজার ১২২বর্ষ ] এবং বেদ প্রকাশের কাল [ ১ অরব ৯৬ কোটি ০৮ লক্ষ ৫৩ হাজার ১২২ বর্ষ ] যাহারা ইহা হইতে অধিক তধ্য চান তাহারা সরাসরি বেদ, মনুস্মৃতি, সূর্যসিদ্ধান্ত অধ্যয়ন করিতে পারেন।।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ