কুরআন
16:71
وَ اللّٰہُ فَضَّلَ بَعۡضَکُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ فِی الرِّزۡقِ ۚ فَمَا الَّذِیۡنَ فُضِّلُوۡا بِرَآدِّیۡ رِزۡقِہِمۡ عَلٰی مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ فَہُمۡ فِیۡہِ سَوَآءٌ ؕ اَفَبِنِعۡمَۃِ اللّٰہِ یَجۡحَدُوۡنَ ﴿۷۱﴾
আর আল্লাহ রিয্ক তোমাদের কতককে কতকের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন; কিন্তু যাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, তারা তাদের রিয্ক দাসদাসীদের ফিরিয়ে দেয় না। (এই ভয়ে যে,) তারা তাতে সমান হয়ে যাবে। তবে তারা কি আল্লাহর নিআমতকে অস্বীকার করছে?
তাফসীর
[১] যখন তোমরা নিজ দাসদেরকে এত সম্পদ ও জীবনোপকরণ দাও না, যাতে তারা তোমাদের সমান হয়ে যায়, তখন আল্লাহ কিভাবে পছন্দ করতে পারেন যে, তাঁরই কিছু দাসকে তাঁর শরীক করে তাঁর সমতুল্য করে দাও। এই আয়াতে এটিও প্রমাণিত হল যে, আর্থিক বিষয়ে মানুষের মধ্যে যে পার্থক্য পরিদৃষ্ট হয়, তা আল্লাহর সৃষ্ট প্রাকৃতিক নিয়মের অনুসারী। পৃথিবীর কোন মানব-রচিত সংবিধান তাকে আইনের বলে দূর করতে পারে না, যেমন সমাজতন্ত্রে তা বিদ্যমান। জীবিকা বন্টনের সমতা প্রতিষ্ঠাকল্পে প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপচেষ্টা না করে বরং প্রত্যেককেই জীবিকা সন্ধানের সমান সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়াই যুক্তিসঙ্গত।[২] আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ হতে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে নযর-নিয়ায বের করে, আর এভাবে তারা আল্লাহর (নিয়ামতের) অনুগ্রহের অকৃতজ্ঞতা করে।16:71তাফসীর আহসানুল বায়ান
16:75
ضَرَبَ اللّٰہُ مَثَلًا عَبۡدًا مَّمۡلُوۡکًا لَّا یَقۡدِرُ عَلٰی شَیۡءٍ وَّ مَنۡ رَّزَقۡنٰہُ مِنَّا رِزۡقًا حَسَنًا فَہُوَ یُنۡفِقُ مِنۡہُ سِرًّا وَّ جَہۡرًا ؕ ہَلۡ یَسۡتَوٗنَ ؕ اَلۡحَمۡدُ لِلّٰہِ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۷۵﴾
আল্লাহ উপমা পেশ করেছেন; একজন অধিনস্ত দাস যে কোন কিছুর উপর ক্ষমতা রাখে না। আর একজন যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে উত্তম রিযক দিয়েছি, অতঃপর সে তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। তারা কি সমান হতে পারে? সমস্ত প্রশংসা আল্লা্হর। বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।
তাফসীর
[১] কেউ কেউ বলেন, এটি পরাধীন দাস ও স্বাধীন মানুষের উপমা; প্রথমজন দাস ও দ্বিতীয়জন স্বাধীন। এরা দুজনই সমান নয়। আবার কেউ বলেন, এটি মু’মিন ও কাফেরের উপমা; প্রথমটি কাফের আর দ্বিতীয়টি মু’মিনের। এরাও সমান নয়। কেউ বলেন, এটি আল্লাহ ও গায়রুল্লাহ (দেবদেবীর) উদাহরণ; প্রথমটিতে আল্লাহ ও দ্বিতীয়টিতে দেবদেবীকে বুঝানো হয়েছে। এরা পরস্পর সমান নয়। অর্থ এই যে, একজন দাস ও অপরজন স্বাধীন; যদিও তারা দু’জনই মানুষ, দু’জনই আল্লাহর সৃষ্ট, অনেক জিনিস দু’জনের মধ্যে সমানভাবে বিদ্যমান, তা সত্ত্বেও মর্যাদা ও সম্মানে তাদেরকে তোমরা সমান সমান মনে কর না। তাহলে মহান আল্লাহ ও পাথরের মূর্তি বা কবর কিভাবে সমান হতে পারে?16:75তাফসীর আহসানুল বায়ান
দাসী ও যুদ্ধবন্দী নারী ধর্ষণ
4:23
حُرِّمَتۡ عَلَیۡکُمۡ اُمَّہٰتُکُمۡ وَ بَنٰتُکُمۡ وَ اَخَوٰتُکُمۡ وَ عَمّٰتُکُمۡ وَ خٰلٰتُکُمۡ وَ بَنٰتُ الۡاَخِ وَ بَنٰتُ الۡاُخۡتِ وَ اُمَّہٰتُکُمُ الّٰتِیۡۤ اَرۡضَعۡنَکُمۡ وَ اَخَوٰتُکُمۡ مِّنَ الرَّضَاعَۃِ وَ اُمَّہٰتُ نِسَآئِکُمۡ وَ رَبَآئِبُکُمُ الّٰتِیۡ فِیۡ حُجُوۡرِکُمۡ مِّنۡ نِّسَآئِکُمُ الّٰتِیۡ دَخَلۡتُمۡ بِہِنَّ ۫ فَاِنۡ لَّمۡ تَکُوۡنُوۡا دَخَلۡتُمۡ بِہِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ ۫ وَ حَلَآئِلُ اَبۡنَآئِکُمُ الَّذِیۡنَ مِنۡ اَصۡلَابِکُمۡ ۙ وَ اَنۡ تَجۡمَعُوۡا بَیۡنَ الۡاُخۡتَیۡنِ اِلَّا مَا قَدۡ سَلَفَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿ۙ۲۳﴾
তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে এবং দুই বোনকে একত্র করা(তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
4:24
وَّ الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ النِّسَآءِ اِلَّا مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ ۚ کِتٰبَ اللّٰہِ عَلَیۡکُمۡ ۚ وَ اُحِلَّ لَکُمۡ مَّا وَرَآءَ ذٰلِکُمۡ اَنۡ تَبۡتَغُوۡا بِاَمۡوَالِکُمۡ مُّحۡصِنِیۡنَ غَیۡرَ مُسٰفِحِیۡنَ ؕ فَمَا اسۡتَمۡتَعۡتُمۡ بِہٖ مِنۡہُنَّ فَاٰتُوۡہُنَّ اُجُوۡرَہُنَّ فَرِیۡضَۃً ؕ وَ لَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ فِیۡمَا تَرٰضَیۡتُمۡ بِہٖ مِنۡۢ بَعۡدِ الۡفَرِیۡضَۃِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا ﴿۲۴﴾
আর (হারাম করা হয়েছে) নারীদের মধ্য থেকে সধবাদেরকে। তবে তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে (দাসীগণ) তারা ছাড়া। এটি তোমাদের উপর আল্লাহর বিধান এবং এরা ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে চাইবে বিবাহ করে, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
তাফসীর
[১] কুরআন কারীমে إِحْصَانٌ শব্দটি চারটি অর্থে ব্যবহার হয়েছে। যথা, (ক) বিবাহ (খ) স্বাধীনতা (গ) সতীত্ব এবং (ঘ) ইসলাম। এই দিক দিয়ে مُحْصَنَات এর হবে চারটি অর্থঃ (ক) বিবাহিতা মহিলাগণ (খ) স্বাধীন মহিলাগণ (গ) সতী-সাধ্বী মহিলাগণ এবং (ঘ) মুসলিম মহিলাগণ। এখানে প্রথম অর্থকে বুঝানো হয়েছে। আয়াতের শানে নুযুল (অবতীর্ণ হওয়ার কারণ) সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যখন কোন কোন যুদ্ধে কাফেরদের মহিলারা মুসলিমদের হাতে বন্দিনী হল, তখন ঐ সকল মহিলারা বিবাহিতা হওয়ার কারণে মুসলিমরা তাদের সাথে সহবাস করার ব্যাপারে ঘৃণা অনুভব করল। অতঃপর নবী করীম (সাঃ)-কে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-গণ এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে এই আয়াত অবতীর্ণ হল। (ইবনে কাসীর) এ থেকে জানা গেল যে, যুদ্ধলব্ধ কাফের মহিলারা মুসলিমদের হাতে বন্দিনী হয়ে এলে, তাদের সাথে সহবাস করা জায়েয, যদিও তারা বিবাহিতা হয়। তবে গর্ভমুক্ত কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া জরুরী। অর্থাৎ, এক মাসিক দেখার পর অথবা গর্ভবতী হলে প্রসবের পর (নিফাস বন্ধ হলে তবেই) তার সাথে সহবাস করা যাবে।ক্রীতদাসীদের মাসআলাঃ কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় দাস-দাসীর রাখার প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। কুরআন এ প্রথাকে উচ্ছেদ তো করেনি, তবে তাদের ব্যাপারে এমন কৌশল ও যুক্তিময় পথ অবলম্বন করা হয়, যাতে তারা খুব বেশী বেশী সুযোগ-সুবিধা অর্জন করতে পারে এবং দাস-প্রথার প্রবণতা হ্রাস পায়। দু’টি মাধ্যমে এই প্রথা প্রচলিত ছিল। প্রথমটি হল, কোন কোন গোত্র এমন ছিল যাদের পুরুষ ও নারীকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ক্রয়-বিক্রয় করা হত। এই ক্রীত নর-নারীকেই ক্রীতদাস ও দাসী বলা হয়। মনিবের অধিকার হত তাদের দ্বারা সর্ব প্রকার ফয়দা ও উপকার অর্জন করা। আর দ্বিতীয়টি হল, যুদ্ধে বন্দী হওয়ার মাধ্যমে। কাফেরদের বন্দী মহিলাদেরকে মুসলিম যোদ্ধাদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হত এবং তারা দাসী হয়ে তাঁদের সাথে জীবন-যাপন করত। বন্দিনীদের জন্য এটাই ছিল উত্তম ব্যবস্থা। কারণ, তাদেরকে যদি সমাজে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেওয়া হত, তাহলে তাদের মাধ্যমে ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি হত। (বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ মৌলানা সাঈদ আহমদ আকবার আবাদী রচিত বই ‘আররিক্কু ফীল ইসলাম’ (ইসলামে দাসত্বের তাৎপর্য) মোট কথা হল, (স্বামীর বিবাহ বন্ধনে থাকা অবস্থায়) সধবা মুসলিম মহিলাদেরকে বিবাহ করা যেমন হারাম, তেমনি সধবা কাফের মহিলারাদেরকেও বিবাহ করা হারাম, তবে যদি তারা মুসলিমদের অধিকারে এসে যায়, তাহলে তারা গর্ভমুক্ত কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁদের জন্য (যৌন-সংসর্গ) হালাল হবে।[২] অর্থাৎ, কুরআন ও হাদীসে যে মহিলাদের সাথে বিবাহ করা হারাম বলে ঘোষিত হয়েছে, তাদেরকে ছাড়া অন্য মহিলাদেরকে বিবাহ করা জায়েয চারটি শর্তের ভিত্তিতে। (ক) তলব করতে হবে। অর্থাৎ, উভয় পক্ষের মধ্যে ইজাব ও কবুল (প্রস্তাব ও গ্রহণ) হতে হবে (এক পক্ষ প্রস্তাব দিবে এবং অপর পক্ষ কবুল করবে)। (খ) দেনমোহর আদায় করতে হবে। (গ) তাকে সব সময়ের জন্য বিবাহ বন্ধনে রাখা উদ্দেশ্য হবে, কেবল কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থ করাই লক্ষ্য হবে না। (যেমন, ব্যভিচারে অথবা শীয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত মুতআ’ তথা কেবল যৌনক্ষুধা নিবারণের লক্ষ্যে কয়েক দিন বা কয়েক ঘণ্টার জন্য সাময়িকভাবে চুক্তিবিবাহ হয়ে থাকে)। (ঘ) গোপন প্রেমের মাধ্যমে যেন না হয়, বরং সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহ হবে। এই চারটি শর্ত আলোচ্য আয়াত থেকেই সংগৃহীত। এ থেকে যেমন প্রমাণিত হয় যে, শীয়া সম্প্রদায়ের প্রচলিত মুতআ’ বিবাহ বাতিল, অনুরূপ প্রচলিত ‘হালালা’ (রীতিমত তিন তালাকের পর অন্য এক পুরুষের সাথে বিবাহের মাধ্যমে স্বামীর জন্য স্ত্রীকে হালাল করার) পদ্ধতিও না-জায়েয। কারণ, এতেও মহিলাকে সব সময়ের জন্য বিবাহ বন্ধনে রাখা উদ্দেশ্য হয় না, বরং প্রচলিত নিয়মানুযায়ী এই বিবাহ কেবল এক রাতের জন্য হয়।[৩] এখানে এ ব্যাপারে তাকীদ করা হচ্ছে যে, যে মহিলাদের সাথে তোমরা বৈধ বিবাহের মাধ্যমে যৌনসুখ ও স্বাদ গ্রহণ কর, তাদেরকে তাদের নির্দিষ্ট মোহর অবশ্যই আদায় করে দাও।[৪] এখানে পরস্পরের সম্মতিক্রমে মোহরের মধ্যে কম-বেশী করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।বিঃ দ্রষ্টব্যঃ استمتاع ‘ইস্তিমতা’ শব্দ থেকে শীয়া সম্প্রদায় মুতআ’ বিবাহের বৈধতা সাব্যস্ত করে। অথচ এর অর্থ হল, বিবাহের পর সহবাসের মাধ্যমে যৌনসুখ উপভোগ করা; যেমন এ কথা পূর্বেও বলা হয়েছে। অবশ্য মুতআ’ বিবাহ ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে বৈধ ছিল, কিন্তু তার বৈধতা এই আয়াতের ভিত্তিতে ছিল না, বরং সেই প্রথা অনুযায়ী ছিল, যা ইসলামের পূর্বে থেকেই চলে আসছিল। অতঃপর নবী করীম (সাঃ) একেবারে পরিষ্কার ভাষায় কিয়ামত পর্যন্ত তা হারাম ঘোষণা করে দিলেন।4:24তাফসীর আহসানুল বায়ান
23:5
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ لِفُرُوۡجِہِمۡ حٰفِظُوۡنَ ۙ﴿۵﴾
আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী।
23:6
اِلَّا عَلٰۤی اَزۡوَاجِہِمۡ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ فَاِنَّہُمۡ غَیۡرُ مَلُوۡمِیۡنَ ۚ﴿۶﴾
তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না।
33:50
یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ اِنَّاۤ اَحۡلَلۡنَا لَکَ اَزۡوَاجَکَ الّٰتِیۡۤ اٰتَیۡتَ اُجُوۡرَہُنَّ وَ مَا مَلَکَتۡ یَمِیۡنُکَ مِمَّاۤ اَفَآءَ اللّٰہُ عَلَیۡکَ وَ بَنٰتِ عَمِّکَ وَ بَنٰتِ عَمّٰتِکَ وَ بَنٰتِ خَالِکَ وَ بَنٰتِ خٰلٰتِکَ الّٰتِیۡ ہَاجَرۡنَ مَعَکَ ۫ وَ امۡرَاَۃً مُّؤۡمِنَۃً اِنۡ وَّہَبَتۡ نَفۡسَہَا لِلنَّبِیِّ اِنۡ اَرَادَ النَّبِیُّ اَنۡ یَّسۡتَنۡکِحَہَا ٭ خَالِصَۃً لَّکَ مِنۡ دُوۡنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ؕ قَدۡ عَلِمۡنَا مَا فَرَضۡنَا عَلَیۡہِمۡ فِیۡۤ اَزۡوَاجِہِمۡ وَ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ لِکَیۡلَا یَکُوۡنَ عَلَیۡکَ حَرَجٌ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿۵۰﴾
হে নবী! নিশ্চয় আমি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীগণকে বৈধ করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা প্রদান করেছ এবং বৈধ করেছি তোমার অধিকারভুক্ত দাসিগণকে যাদেরকে আমি যুদ্ধবন্দিনীরূপে দান করেছি এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচাতো ভগিনী, ফুফাতো ভগিনী, মামাতো ভগিনী ও খালাতো ভগিনীকে; যারা তোমার সঙ্গে দেশ ত্যাগ করেছে এবং কোন বিশ্বাসীনী নবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করলে এবং নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে (সেও তোমার জন্য বৈধ।) –এ (বিধান) বিশেষ করে তোমারই জন্য; অন্য বিশ্বাসীদের জন্য নয়; বিশ্বাসীদের স্ত্রী এবং তাদের দাসিগণ সম্বন্ধে যা নির্ধারিত করেছি তা আমি জানি। (এ বিধান এ জন্য) যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
তাফসীর
[২] সুতরাং সাফিয়্যা (রাঃ) ও জুওয়াইরিয়া (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর মালিকানায় এলে তিনি তাঁদেরকে মুক্ত করে বিবাহ করেছিলেন এবং রায়হানা (রাঃ) ও মারিয়া কিবত্বিয়া (রাঃ) ক্রীতদাসী হিসাবেই নবী (সাঃ)-এর নিকট ছিলেন।33:50তাফসীর আহসানুল বায়ান
70:29
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ لِفُرُوۡجِہِمۡ حٰفِظُوۡنَ ﴿ۙ۲۹﴾
আর যারা তাদের যৌনাংগসমূহের হিফাযতকারী।
70:30
اِلَّا عَلٰۤی اَزۡوَاجِہِمۡ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ فَاِنَّہُمۡ غَیۡرُ مَلُوۡمِیۡنَ ﴿ۚ۳۰﴾
তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে সে দাসীগণের ক্ষেত্র ছাড়া। তাহলে তারা সে ক্ষেত্রে নিন্দনীয় হবে না।
তাফসীর
[১] অর্থাৎ, মানুষের যৌন-ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য দুটি বৈধ মাধ্যম রেখেছেন। একটি হল স্ত্রী। আর দ্বিতীয়টি হল অধিকারভুক্ত (যুদ্ধবন্দিনী অথবা ক্রীত)দাসী। বর্তমানে এই অধিকারভুক্ত দাসীর ব্যাপারটা ইসলামের নির্দেশিত কৌশল অনুসারে প্রায় শেষই হয়ে গেছে। তবে আইনগতভাবে এই প্রথাকে একেবারে এই জন্য উচ্ছেদ করা হয়নি যে, ভবিষ্যতে যদি এই ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে অধিকারভুক্ত দাসী দ্বারা উপকৃত হওয়া যেতে পারে। মোট কথা ঈমানদারদের এটাও একটি গুণ যে, তাঁরা যৌন-ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য (উক্ত দুই মাধ্যম ছাড়া) কোন অবৈধ মাধ্যম অবলম্বন করে না।70:30তাফসীর আহসানুল বায়ান
দাসদাসীর মালিক নির্ধারন করে যে তার দাসদাসী কাকে বিয়ে করবে
24:32
وَ اَنۡکِحُوا الۡاَیَامٰی مِنۡکُمۡ وَ الصّٰلِحِیۡنَ مِنۡ عِبَادِکُمۡ وَ اِمَآئِکُمۡ ؕ اِنۡ یَّکُوۡنُوۡا فُقَرَآءَ یُغۡنِہِمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ؕ وَ اللّٰہُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۳۲﴾
আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।
তাফসীর
[১] أَيَامَى শব্দটি أَيِّم শব্দের বহুবচন। আর أَيِّم এমন মহিলাকে বলা হয়, যার স্বামী নেই। যার মধ্যে কুমারী, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা সবাই শামিল। এমন পুরুষকেও أَيِّم বলা হয়, যার স্ত্রী নেই। আয়াতে অভিভাবকদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, ‘বিবাহ দাও।’ ‘বিবাহ কর’– এ কথা বলা হয়নি; যাতে সম্বোধন সরাসরি বিবাহকারীকে করা হত। এ থেকে জানা যায় যে, মহিলারা অভিভাবকের অনুমতি ও সম্মতি ছাড়া নিজে নিজে বিবাহ করতে পারবে না। যার সমর্থন হাদীসসমূহেও পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে কেউ কেউ আজ্ঞাবাচক শব্দ থেকে দলীল গ্রহণ করে বলেছেন যে, বিবাহ করা ওয়াজেব। আবার কেউ কেউ মুবাহ ও মুস্তাহাব বলেও অভিহিত করেছেন। তবে যাদের বিবাহের শক্তি-সামর্থ্য আছে, তাদের জন্য বিবাহ সুন্নতে মুআক্কাদাহ; বরং কোন কোন অবস্থায় ওয়াজেবও হয়। আর এ থেকে একেবারে যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাকে শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার উম্মতের মধ্যে নয়।” (বুখারী ৫০৬৩, মুসলিম ১০২০ নং)[২] এখানে ‘সৎ’ বলতে ঈমানদারকে বুঝানো হয়েছে। এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে যে, মালিক বিবাহ দেওয়ার ব্যাপারে দাসীকে বাধ্য করতে পারে কি না? কেউ বাধ্য করার পক্ষে আবার কেউ তার বিপক্ষে। তবে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে শরিয়তের দৃষ্টিতে বাধ্য করা বৈধ; অন্যথা অবৈধ। (আইসারুত তাফসীর)[৩] অর্থাৎ, শুধু দারিদ্র্য ও অর্থের অভাব বিবাহে বাধার কারণ হওয়া উচিত নয়। হতে পারে বিবাহের পর আল্লাহ তাআলা নিজ কৃপায় তার দরিদ্রতাকে ধনবত্তায় পরিবর্তন করে দেবেন। হাদীসে এসেছে যে, তিন ব্যক্তি এমন আছে, যাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করে থাকেন; বিবাহকারী, যে পবিত্র থাকার ইচ্ছা করে। লিখিত চুক্তিবদ্ধ দাস, যে চুক্তিকৃত অর্থ পরিশোধ করার নিয়ত রাখে। এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী। (তিরমিযীঃ জিহাদ অধ্যায়)24:32তাফসীর আহসানুল বায়ান
দাসদাসী মুক্ত করা ভালো কর্ম
ইসলাম অনুযায়ী, ক্রীতদাসত্বমোচন ভাল কাজ। তবে তারমানে এই নয় যে ইসলাম দাস প্রথা সমর্থন করে না বা অনুমোদন দেয় না।
2:177
لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡہَکُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ وَ لٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ وَ الۡکِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ ۚ وَ اٰتَی الۡمَالَ عَلٰی حُبِّہٖ ذَوِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ ۙ وَ السَّآئِلِیۡنَ وَ فِی الرِّقَابِ ۚ وَ اَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَی الزَّکٰوۃَ ۚ وَ الۡمُوۡفُوۡنَ بِعَہۡدِہِمۡ اِذَا عٰہَدُوۡا ۚ وَ الصّٰبِرِیۡنَ فِی الۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیۡنَ الۡبَاۡسِ ؕ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا ؕ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُتَّقُوۡنَ ﴿۱۷۷﴾
ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে; বরং ভালো কাজ হল যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দিমুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী।
একজন দাস বা দাসী তার স্বাধীনতা ক্রয় করতে একটি চুক্তিতে রাজি হতে পারতো।
24:33
وَ لۡیَسۡتَعۡفِفِ الَّذِیۡنَ لَا یَجِدُوۡنَ نِکَاحًا حَتّٰی یُغۡنِیَہُمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ؕ وَ الَّذِیۡنَ یَبۡتَغُوۡنَ الۡکِتٰبَ مِمَّا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ فَکَاتِبُوۡہُمۡ اِنۡ عَلِمۡتُمۡ فِیۡہِمۡ خَیۡرًا ٭ۖ وَّ اٰتُوۡہُمۡ مِّنۡ مَّالِ اللّٰہِ الَّذِیۡۤ اٰتٰىکُمۡ ؕ وَ لَا تُکۡرِہُوۡا فَتَیٰتِکُمۡ عَلَی الۡبِغَآءِ اِنۡ اَرَدۡنَ تَحَصُّنًا لِّتَبۡتَغُوۡا عَرَضَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ؕ وَ مَنۡ یُّکۡرِہۡہُّنَّ فَاِنَّ اللّٰہَ مِنۡۢ بَعۡدِ اِکۡرَاہِہِنَّ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۳۳﴾
আর যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে। আর তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায় তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে বলে জানতে পার এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তোমরা তাদেরকে দাও। তোমাদের দাসীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে তোমরা দুনিয়ার জীবনের সম্পদের কামনায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না। আর যারা তাদেরকে বাধ্য করবে, নিশ্চয় তাদেরকে বাধ্য করার পর আল্লাহ তাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
তাফসীর
[২] ‘মুকাতাব’ এমন দাসকে বলা হয়, যে কিছু টাকার বিনিময়ে নিজেকে মুক্ত করার ব্যাপারে মালিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। ‘কল্যাণ আছে’ এর অর্থঃ তাদের সততা ও আমানতদারীর উপর তোমাদের বিশ্বাস থাকে অথবা তারা কোন শিল্প বা কাজের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা রাখে। যাতে সে উপার্জন করে চুক্তির টাকা আদায় করতে পারে। ইসলাম যেহেতু দাস প্রথা উচ্ছেদের স্বপক্ষে সুকৌশল অবলম্বন করেছিল, সেহেতু এখানেও মালিকদেরকেও তাকীদ করা হয়েছে যে, অর্থচুক্তি করতে ইচ্ছুক দাসদের সাথে চুক্তি করতে দ্বিধা করবে না; যদি তোমরা তাদের মধ্যে অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য আছে বলে বুঝতে পারো। কিছু উলামাদের নিকট এই আদেশ পালন ওয়াজেব এবং কিছুর নিকট মুস্তাহাব।[৩] অর্থাৎ দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যে চুক্তি তারা করেছে; যেহেতু এখন তাদের অর্থের প্রয়োজন, সেহেতু তাদেরকে তোমরা আর্থিক সাহায্য কর; যদি আল্লাহ্ তোমাদের অর্থশালী করে থাকেন। যাতে তারা চুক্তিকৃত অর্থ মালিককে আদায় দিতে পারে। এই কারণে দয়াময় আল্লাহ্ যাকাতের অর্থ বণ্টনের আট প্রকার যে খাতের কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে দাসমুক্তি একটি। অর্থাৎ যাকাতের পয়সা দাস মুক্তির জন্য খরচ করা যাবে।24:33তাফসীর আহসানুল বায়ান
হাদিস সমূহ
ইসলাম দাস প্রথার অনুমোদন দেয়
এই হাদিস সমূহ প্রত্যক্ষভাবে এবং পরোক্ষভাবে দাস প্রথাকে অনুমোদন দেয়।
২/২২. পাপ কাজ জাহিলী যুগের অভ্যাস। আর শির্ক ব্যতীত অন্য কোন গুনাহ্তে লিপ্ত হওয়াতে ঐ পাপীকে কাফির বলা যাবে না।لِقَوْلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم : إِنَّكَ امْرُؤٌ فِيكَ جَاهِلِيَّةٌ وَقَوْلِ اللهِ تَعَالَى }إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ{যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [আবূ যার (রাযি.)-কে লক্ষ্য করে] বলেছেনঃ তুমি এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে জাহিলী যুগের অভ্যাস রয়েছে। আর আল্লাহর বাণীঃ ‘‘আল্লাহ্ তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন করার গুনাহ ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।’’ (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/৪৮)৩০. মা‘রূর (রহ.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর (রাযি.)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ একবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আবূ যার! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন তাকে নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে। (২৫৪৫, ৬০৫০; মুসলিম ২৭/১০ হাঃ ১৬৬১, আহমাদ ২১৪৮৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৪৭/৫. শরীকদের মাঝে এজমালি দ্রব্যে উচিত দাম নির্ধারণ সম্পর্কে।২৪৯১. ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (শরীকী) গোলাম হতে কেউ নিজের অংশ আযাদ করে দিলে এবং তার কাছে গোলামের ন্যায্য মূল্য পরিমাণ অর্থ থাকলে সে গোলাম (সম্পূর্ণ) আযাদ হয়ে যাবে (তবে আযাদকারী ন্যায্য মূল্যে শরীকদের ক্ষতিপূরণ দিবে) আর সে পরিমাণ অর্থ না থাকলে যতটুকু সে মুক্ত করবে ততটুকুই মুক্ত হবে। (২৫০৩, ২৫২১-২৫২৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩২৯)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
২৪/৪৫. মুসলিমের উপর তার ঘোড়ায় কোন যাকাত নেই।১৪৬৩. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের উপর তার ঘোড়া ও গোলামের কোন যাকাত নেই। (১৪৬৪, মুসলিম ১২/২, হাঃ ৯৮২, আহমাদ ৭২৯৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৭৫)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
২৪/৪৬. মুসলিমের উপর তার গোলামের যাকাত নেই।১৪৬৪. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের উপর তার গোলাম ও ঘোড়ার কোন যাকাত নেই। (৯২১, মুসলিম ১২/৪১, হাঃ ১০৫২, আহমাদ ১১১৫৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৭৬)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
২৪/৭১. মুসলিমদের গোলাম ও আমাদের উপর সদাকাতুল ফিতর প্রযোজ্য।১৫০৪ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, মুসলিমদের প্রত্যেক আযাদ, গোলাম পুরুষ ও নারীর পক্ষ হতে সদাকাতুল ফিত্র হিসেবে খেজুর অথবা যব-এর এক সা‘ পরিমাণ আদায় করা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরজ করেছেন। (১৫০৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪১৩)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৩৭/২০. কৃতদাসী এবং পতিতার উপার্জন।২২৮৩. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসীদের অবৈধ উপার্জন নিষিদ্ধ করেছেন। (৫৩৪৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১৩৯)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৪৯/১৬. যে ক্রীতদাস উত্তমরূপে তার মহান প্রভুর (আল্লাহর) ইবাদত করে আর তার মালিকের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়।২৫৪৭. আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে লোক তার বাঁদীকে উত্তমরূপে জ্ঞান ও আদব শিক্ষা দেয় এবং তাকে মুক্ত করে ও বিয়ে করে, সে দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে। আর যে ক্রীতদাস আল্লাহর হক আদায় করে এবং মনিবের হকও আদায় করে, সেও দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে। (৯৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩৭৯)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৪৯/১৭. দাসদের মারধোর করা এবং আমার ক্রীতদাস ও আমার বাঁদী এরূপ বলা মাকরূহ।২৫৫৪. ‘আবদুল্লাহ [ইবনু ‘উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবে। যেমন- জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর ক্রীতদাস আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। শোন! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। (৮৯৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩৮৬)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর (كتاب التفسير)
হাদিস নম্বরঃ ৪৯৪২৬৫/৯১/১. পরিচ্ছেদ নাই।৪৯৪২. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যাম‘আহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুতবাহ দিতে শুনেছেন, খুতবায় তিনি কওমে সামূদের প্রতি প্রেরিত উষ্ট্রী ও তার পা কাটার কথা উল্লেখ করলেন। তারপর রাসূল إِذْمانْبَعَثَ أَشْقَاهَا-এর ব্যাখ্যায় বললেন, ঐ উষ্ট্রীটিকে হত্যা করার জন্য এক হতভাগ্য শক্তিশালী ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠ যে সে সমাজের মধ্যে আবূ যাম‘আর মত প্রভাবশালী ও অত্যন্ত শক্তিধর ছিল। এ খুতবায় তিনি মেয়েদের সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যে তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের মত মারপিট করে; কিন্তু ঐ দিনের শেষেই সে আবার তার সঙ্গে এক বিছানায় মিলিত হয়। তারপর তিনি বায়ু নিঃসরণের পর হাসি দেয়া সম্পর্কে বললেন, তোমাদের কেউ কেউ হাসে সে কাজটির জন্য যে কাজটি সে নিজেও করে। (অন্য সনদে) আবূ মু‘আবীয়াহ (রহ.)….‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ যাম‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যুবায়র ইবনু আওআমের চাচা আবূ যাম‘আর মত। [৩৩৭৭; মুসলিম ৫১/১৩, হাঃ ২৮৫৫, আহমাদ ১৬২২২] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৭৮)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৬৭/৯৪. স্ত্রীদের প্রহার করা নিন্দনীয় কাজ এবং আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ প্রয়োজনে) ‘‘তাদেরকে মৃদু প্রহার কর।’’ সূরাহ আন-নিসাঃ ৪/৩৪)৫২০৪. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যাম‘আহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সঙ্গে তো মিলিত হবে। [৩৩৭৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৫)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৩৮. যে ব্যক্তি কোনো মহিলাকে বিয়ে করার পরতাকে গর্ভবতী পায়২১৩১। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহ.) থেকে জনৈক আনসারী সূত্রে বর্ণিত। বর্ণনাকারী আবুস-সারী বলেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন এবং ‘আনসার’ শব্দটি বলেননি। অতঃপর সমস্ত বর্ণনাকারী একমত হয়ে বর্ণনা করেছেন। ‘বাসরা’ নামক এক ব্যক্তি বলেন, আমি জনৈকা কুমারী মেয়েকে না দেখে বিয়ে করি। অতঃপর বাসর যাপনের সময় আমি দেখি সে গর্ভবতী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যেহেতু তার বিশেষ অঙ্গ উপভোগ করেছো সেজন্য তোমাকে মোহরানা দিতে হবে। আর যে সন্তানটি জন্ম নিবে সে তোমার গোলাম হবে। সন্তান প্রসবের পর তুমি বা তোমরা তাকে চাবুক মারবে অথবা বলেছেনঃ তার উপর ‘হদ্দ’ কার্যকর করবে।আবূ দাঊদ বলেন, হাদীসটি কাতাদাহ (রহ.) সাঈদ ইবনু ইয়াযীদ থেকে ইবনুল মুসাইয়্যাব সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর ইয়াযীদ ইবনু নুয়াইমের মাধ্যমে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব থেকে, এবং ‘আতা আল-খোরাসারনী সরাসরি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এদের সকলের হাদীস মুরসাল। ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীরের হাদীসে রয়েছেঃ ‘বাসরা ইবনু আকসাম জনৈকা মহিলাকে বিয়ে করেন।’ আর সমস্ত বর্ণনাকারী বলেছেন, তিনি সন্তানটিকে তার গোলাম বানিয়েছেন।[1]দুর্বল।[1]. বায়হাক্বী, হাকিম। ইমাম হাকিম বলেন: সনদ সহীহ। ইমাম যাহাবী এতে নীরব থেকেছেন। কিন্তু হাদীসটি মুরসাল। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai’f)
ইসলাম যুদ্ধবন্দী নারী ও দাসী ধর্ষণের বৈধতা দেয়
৯. ইসতিবরার পর যুদ্ধ বন্দিনীর সাথে সঙ্গম করা জায়িয এবং তার স্বামী বর্তমান থাকলে সে বিবাহ বাতিল৩৫০০-(৩৩/১৪৫৬) উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল মায়সারাহ আল কাওয়ারীরী (রহঃ) ….. আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়ন এর যুদ্ধের সময় একটি দল আওত্বাস এর দিকে পাঠান। তারা শক্র দলের মুখোমুখী হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে এবং তাদের অনেক কয়েদী তাদের হস্তগত হয়। এদের মধ্য থেকে দাসীদের সাথে যৌন সঙ্গম করা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকজন সাহাবা যেন নাজায়িয মনে করলেন, তাদের মুশরিক স্বামী বর্তমান থাকার কারণে। আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন “এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” অর্থাৎ তারা তোমাদের জন্য হালাল, যখন তারা তাদের ইদ্দাত (ইদ্দত) পূর্ণ করে নিবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৭৩, ইসলামীক সেন্টার ৩৪৭২)[গর্ভবতী হলে প্রসব, অন্যথায় এক ঋতু অতিবাহিত হওয়াকে ইসতিবরার বলে।] হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
২২. আযল এর হুকুম৩৪৪৮-(১৩৪/১৪৩৯) আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ….. জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আমার একটি দাসী আছে যে আমাদের খিদমাত ও পানি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। আমি তার নিকট আসা যাওয়া করে থাকি, কিন্তু সে গর্ভবতী হোক তা আমি পছন্দ করি না। তখন তিনি বললেন, তুমি ইচ্ছে করলে তার সাথে আযল করতে পার। তবে তার তাকদীরে সন্তান থাকলে তা তার মাধ্যমে আসবেই। লোকটি কিছুদিন অতিবাহিত করল। অতঃপর সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, দাসীটি গর্ভবতী হয়েছে। তিনি বললেন, আমি তোমাকে এ মর্মে জানিয়ে ছিলাম যে, তার তাকদীরে যা আছে তা আসবেই। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪২১, ইসলামীক সেন্টার ৩৪২০)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
দাস প্রথা নিয়ে মুহাম্মদের কোনো বিদ্বেষ ছিল না
৮/৬৪. কাঠের মিম্বার তৈরি ও মাসজিদ নির্মাণে কাঠমিস্ত্রী ও রাজমিস্ত্রীর সাহায্য গ্রহণ।৪৪৮. সাহাল (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈকা মহিলার নিকট লোক পাঠিয়ে বললেনঃ তুমি তোমার গোলাম কাঠমিস্ত্রীকে বল, সে যেন আমার জন্য কাঠের মিম্বার বানিয়ে দেয় যাতে আমি বসতে পারি। (৩৭৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ৪২৯ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩৫)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৮/৬৪. কাঠের মিম্বার তৈরি ও মাসজিদ নির্মাণে কাঠমিস্ত্রী ও রাজমিস্ত্রীর সাহায্য গ্রহণ।৪৪৯. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। জনৈকা মহিলা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আপনার বসার জন্যে কিছু তৈরি করে দিব? আমার এক কাঠমিস্ত্রী গোলাম আছে। তিনি বললেনঃ তোমার ইচ্ছে হলে সে যেন একটি মিম্বার বানিয়ে দেয়। (৯১৮, ২০৯৫, ৩৫৮৪, ৩৫৮৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩৬)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৩৪/৩২. কাঠমিস্ত্রিদের সম্পর্কে।২০৯৪. আবূ হাযিম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিছু লোক সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ)-এর কাছে এসে মিম্বরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন (আনসারী) মহিলা- সাহল (রাঃ) যার নাম উল্লেখ করেছিলেন- তার কাছে তিনি সংবাদ পাঠালেন যে, তোমার সূত্রধর গোলামকে বল, সে যেন আমার জন্য কাঠ দিয়ে একটি (মিম্বর) তৈরী করে দেয়। লোকদের সাথে কথা বলার সময় যার উপর আমি বসতে পারি। সে মহিলা তাকে গাবা নামক স্থানের কাঠ দিয়ে মিম্বর বানানোর নির্দেশ দিলেন। তারপর গোলামটি তা নিয়ে এল এবং সে মহিলা এটি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁর নির্দেশক্রমে তা স্থাপন করা হল, পরে তার উপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপবেশন করলেন। (৩৭৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯৪৯ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৬৪)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৩৪/৯৫. ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা, মাপ ও ওজন ইত্যাদি প্রত্যেক শহরে প্রচলিত রসম ও নিয়ম গ্রহণযোগ্য। এ বিষয়ে তাদের নিয়্যত ও প্রসিদ্ধ পন্থাই অবলম্বন করা হবে।২২১০. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ তায়বা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে শিঙ্গা লাগালেন। তিনি এক সা‘ খেজুর দিতে বললেন এবং তার উপর হতে দৈনিক আয়কর কমানোর জন্য তার মালিককে আদেশ দিলেন। (২১০২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৬৮)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৩৭/১৯. কোন ব্যক্তির কোন কৃতদাসীর মালিকের সাথে এ মর্মে আবেদন করা- সে যেন তার উপর ধার্যকৃত কর কমিয়ে দেয়।২২৮১. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা প্রয়োগকারী এক গোলামকে ডাকলেন। সে তাঁকে শিঙ্গা লাগাল। তিনি তাকে এক সা‘ বা দু’ সা‘ অথবা এক মুদ বা দু’ মুদ (পারিশ্রমিক) দিতে নির্দেশ দিলেন। এরপর তার ব্যাপারে (তার মালিকের সাথে) কথা বললেন, ফলে তার উপর ধার্যকৃত মাসুল কমিয়ে দেয়া হল। (২১০২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১৩৭)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৪৬/১৪. যদি কোন ব্যক্তি কাউকে কোন বিষয়ে অনুমতি প্রদান করে তবে তা বৈধ।২৪৫৬. আবূ মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আবূ শুয়াইব (রাঃ) নামক এক আনসারীর গোশত বিক্রেতা একজন গোলাম ছিল। একদিন আবূ শুয়াইব (রাঃ) তাকে বললেন, আমার জন্য পাঁচজন লোকের খাবার তৈরী কর। আমি আশা করছি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাওয়াত করব। আর তিনি উক্ত পাঁচজনের একজন। উক্ত আনসারী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারায় ক্ষুধার ছাপ লক্ষ্য করেছিলেন। কাজেই তিনি তাঁকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াত করলেন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে আরেকজন লোক আসলেন, যাকে দাওয়াত করা হয়নি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আনসারীকে) বললেন, এ আমাদের পিছে পিছে চলে এসেছে। তুমি কি তাকে অনুমতি দিচ্ছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (২০৮১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৯৪)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মুহাম্মদের অধীনস্থ দাস-দাসী
মুহাম্মদের দাস-দাসী বিষয়ক হাদিস সমূহ
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)অধ্যায়ঃ ৪৬/ অত্যাচার, কিসাস ও লুণ্ঠন (كتاب المظالم)৪৬/২৫. দালানের ছাদে বা অন্য কোথাও উঁচু বা নীচু চিলেকোঠা ও কক্ষ নির্মাণ করা।২৪৬৮. ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণীদের মধ্যে ঐ দু’সহধর্মিণী সম্পর্কে উমার (রাঃ)-এর কাছে জিজ্ঞেস করতে সব সময় আগ্রহী ছিলাম, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘যদি তোমরা দু’জনে তাওবা কর (তাহলে সেটাই হবে কল্যাণকর)। কেননা, তোমাদের অন্তর বাঁকা হয়ে গেছে’’- (তাহরীমঃ ৪)। একবার আমি তাঁর [উমার (রাঃ)-এর] সঙ্গে হাজ্জে রওয়ানা করলাম। তিনি রাস্তা হতে সরে গেলেন। আমিও একটি পানির পাত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে গতি পরিবর্তন করলাম। তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে এলেন। আমি পানির পাত্র হতে তাঁর দু’হাতে পানি ঢাললাম, তিনি অযু করলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণীদের মধ্যে দু’সহধর্মিণী কারা ছিলেন, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘যদি তোমরা দু’জন তাওবাহ কর (তবে সেটাই হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর) কেননা, তোমাদের অন্তর বাঁকা হয়ে গেছে’’- (তাহরীমঃ ৪)। তিনি বললেন, হে ইবনু ‘আববাস! এটা তোমার জন্য তাজ্জবের বিষয় যে, তুমি তা জান না। তারা দু’জন হলেন, ‘আয়িশাহ ও হাফসা (রাযি.) অতঃপর উমার (রাঃ) পুরো ঘটনা বলতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, আমি ও আমার এক আনসারী প্রতিবেশী মাদ্বীনার অদূরে বনূ উমাইয়া ইবনু যায়দের মহল্লায় বসবাস করতাম। আমরা দু’জন পালাক্রমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট হাযির হতাম। একদিন তিনি যেতেন, আরেকদিন আমি যেতাম, আমি যে দিন যেতাম সে দিনের খবর (ওয়াহী) ইত্যাদি বিষয় তাঁকে অবহিত করতাম। আর তিনি যে দিন যেতেন, তিনিও অনুরূপ করতেন। আর আমরা কুরাইশ গোত্রের লোকেরা মহিলাদের উপর কর্তৃত্ব করতাম। কিন্তু আমরা যখন মাদ্বীনায় আনসারদের কাছে আসলাম তখন তাদেরকে এমন পেলাম, যাদের নারীরা তাদের উপর কর্তৃত্ব করে থাকে। ধীরে ধীরে আমাদের মহিলারাও আনসারী মহিলাদের রীতিনীতি গ্রহণ করতে লাগল। একদিন আমি আমার স্ত্রীকে ধমক দিলাম। সে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিউত্তর করল। আর এই প্রতিউত্তর আমার পছন্দ হল না। তখন সে আমাকে বলল, আমার প্রতিউত্তরে তুমি অসন্তুষ্ট হও কেন? আল্লাহর কসম! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণীরাওতো তাঁর কথার প্রতিউত্তর করে থাকেন এবং তাঁর কোন কোন সহধর্মিণী রাত পর্যন্ত পুরো দিন তাঁর কাছ হতে আলাদা থাকেন। এ কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম। বললাম, যিনি এরূপ করেছেন তিনি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারপর আমি জামা-কাপড় পরে (আমার মেয়ে) হাফসাহ (রাযি.)-এর কাছে গিয়ে বললাম, হে হাফসা! তোমাদের কেউ কেউ নাকি রাত পর্যন্ত পুরো দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অসন্তুষ্ট রাখে। সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তবে তো সে বরবাদ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তোমার কি ভয় হয় না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হবেন। এর ফলে তুমি বরবাদ হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বাড়াবাড়ি করো না এবং তাঁর কোন কথার প্রতিউত্তর দিও না এবং তাঁর হতে পৃথক থেক না। তোমার কোন কিছুর দরকার হয়ে থাকলে আমাকে বলবে। আর তোমার প্রতিবেশী তোমার চেয়ে অধিক সুন্দরী এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অধিক প্রিয় এ যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে। তিনি উদ্দেশ্য করেছেন ‘আয়িশাহ (রাযি.)-কে। সে সময় আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল যে, গাস্সানের লোকেরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ঘোড়াগুলিকে প্রস্তুত করছে। একদিন আমার সাথী তার পালার দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলেন এবং ঈশার সময় এসে আমার দরজায় খুব জোরে করাঘাত করলেন এবং বললেন, তিনি [‘উমার (রাঃ)] কি ঘুমিয়েছেন? তখন আমি ঘাবড়িয়ে তাঁর কাছে বেরিয়ে এলাম। তিনি বললেন, সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে গেছে। আমি বললাম, সেটা কী? গাস্সানের লোকেরা কি এসে গেছে? তিনি বললেন, না, বরং তার চেয়েও বড় ঘটনা ও বিরাট ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিণীদেরকে তালাক দিয়েছেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তাহলে তো হাফসার সর্বনাশ হয়েছে এবং সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার তো ধারণা ছিল যে, এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। আমি কাপড় পরে বেরিয়ে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোঠায় প্রবেশ করে একাকী বসে থাকলেন। তখন আমি হাফসাহ (রাযি.)-এর কাছে গিয়ে দেখি সে কাঁদছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাঁদছ কেন? আমি কি তোমাকে আগেই সতর্ক করে দেইনি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদেরকে তালাক দিয়েছেন? সে বলল, আমি জানি না। তিনি তাঁর ঐ কোঠায় আছেন। আমি বের হয়ে মিম্বরের কাছে আসলাম, দেখি যে লোকজন মিম্বরের চারপাশ জুড়ে বসে আছেন এবং কেউ কেউ কাঁদছেন। আমি তাঁদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বসলাম। তারপর আমার ঔৎসুক্য প্রবল হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোঠায় ছিলেন, আমি সে কোঠার কাছে আসলাম। আমি তাঁর এক কালো গোলামকে বললাম, উমারের জন্য অনুমতি গ্রহণ কর। সে প্রবেশ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে আলাপ করে বেরিয়ে এসে বলল, আমি আপনার কথা তাঁর কাছে উল্লেখ করেছি, কিন্তু তিনি নীরব রইলেন। আমি ফিরে এলাম এবং মিম্বরের পাশে বসা লোকদের কাছে গিয়ে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর আমার আবার উদ্বেগ প্রবল হল। তাই আমি আবার এসে গোলামকে বললাম। (‘উমারের জন্য অনুমতি গ্রহণ কর) এবারও সে আগের মতোই বলল। তারপর যখন আমি ফিরে আসছিলাম, গোলাম আমাকে ডেকে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। এখন আমি তাঁর নিকট প্রবেশ করে দেখি, তিনি খেজুরের পাতায় তৈরী ছোবড়া ভর্তি একটা চামড়ার বালিশে হেলান দিয়ে খালি চাটাই এর উপর কাত হয়ে শুয়ে আছেন। তাঁর শরীর ও চাটাই এর মাঝখানে কোন ফরাশ ছিল না। ফলে তাঁর শরীরের পার্শ্বদেশে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গেছে। আমি তাঁকে সালাম করলাম এবং দাঁড়িয়ে আবার আরয করলাম, আপনি কি আপনার সহধর্মিণীদেরকে তালাক দিয়েছেন? তখন তিনি আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন এবং বললেন, না। তারপর আমি (থমথমে ভাব কাটিয়ে) অনুকূল ভাব সৃষ্টির জন্য দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখুন, আমরা কুরাইশ গোত্রের লোকেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ব করতাম। তারপর যখন আমরা এমন একটি সম্প্রদায়ের নিকট এলাম, যাদের উপর তাদের নারীরা কর্তৃত্ব করছে। তিনি এ ব্যাপারে আলোচনা করলেন। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন। তারপর আমি বললাম, আপনি হয়তো লক্ষ্য করছেন যে, আমি হাফসার ঘরে গিয়েছি এবং তাকে বলেছি, তোমাকে এ কথা যেন ধোঁকায় না ফেলে যে, তোমার প্রতিবেশিনী (সতীন) তোমার চেয়ে অধিক আকর্ষণীয় এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অধিক প্রিয়। এ কথা দ্বারা তিনি ‘আয়িশাহ (রাযি.)-কে বুঝিয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার মুচকি হাসলেন। তাঁকে একা দেখে আমি বসে পড়লাম। তারপর আমি তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরের ভিতর এদিক সেদিক দৃষ্টি করলাম। কিন্তু তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তিনটি কাঁচা চামড়া ব্যতীত দৃষ্টিপাত করার মতো আর কিছুই দেখতে পেলাম না, তখন আমি আরয করলাম, আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করুন, তিনি যেন আপনার উম্মাতকে পার্থিব স্বচ্ছলতা দান করেন। কেননা, পারস্য ও রোমের অধিবাসীদেরকে স্বচ্ছলতা দান করা হয়েছে এবং তাদেরকে পার্থিব (অনেক প্রাচুর্য) দেয়া হয়েছে, অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত করে না। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন হেলান দিয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, হে ইবনু খাত্তাব! তোমার কি এতে সন্দেহ রয়েছে যে, তারা তো এমন এক জাতি, যাদেরকে তাদের ভালো কাজের প্রতিদান দুনিয়ার জীবনেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য ক্ষমার দু‘আ করুন। হাফসাহ (রাযি.) ‘আয়িশাহ (রাযি.)-এর কাছে এ কথা প্রকাশ করলেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণীদের হতে আলাদা হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! আমি এক মাস তাদের কাছে যাব না। তাঁদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ভীষণ রাগের কারণে তা হয়েছিল। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যখন ঊনত্রিশ দিন কেটে গেল, তিনি সর্বপ্রথম ‘আয়িশাহ (রাযি.)-এর কাছে এলেন। ‘আয়িশাহ (রাযি.) তাঁকে বললেন, আপনি কসম করেছেন যে, এক মাসের মধ্যে আমাদের কাছে আসবেন না। আর এ পর্যন্ত আমরা ঊনত্রিশ রাত অতিবাহিত করেছি, যা আমি ঠিক ঠিক গণনা করে রেখেছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়। আর মূলত এ মাসটি ঊনত্রিশ দিনেরই ছিল। ‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেন, যখন ইখতিয়ারের আয়াত নাযিল হল, তখন তিনি তাঁর সহধর্মিণীদের মধ্যে সর্বপ্রথম আমার কাছে আসলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই, তবে তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে এর জওয়াবে তুমি তাড়াহুড়ো করবে না। ‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা জানতেন যে, আমার পিতা-মাতা তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আলাদা হওয়ার পরামর্শ আমাকে কখনো দিবেন না। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ ‘‘হে নবী! আপনি আপনার সহধর্মিণীদের বলুন। তোমরা যদি পার্থিব জীবন এবং তার চাকচিক্য কামনা কর, তবে আস; আমি তোমাদেরকে কিছু সম্বল প্রদান করি আর তোমাদেরকে সদ্ভাবে বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে (এবং) তাঁর রাসূলকে চাও এবং কামনা কর পরলোক, তবে তোমার অন্তর্গত সৎকর্মশীলদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা মহাপ্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন’’- (আহযাবঃ ২৮-২৯)। আমি বললাম, এ ব্যাপারে আমি আমার পিতা-মাতার কাছে কী পরামর্শ নিব? আমি তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি এবং পরকালীন (সাফল্য) পেতে চাই। তারপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অন্য সহধর্মিণীদেরকেও ইখতিয়ার দিলেন এবং প্রত্যেকে সে একই জবাব দিলেন, যা ‘আয়িশাহ (রাযি.) দিয়েছিলেন। (৮৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩০৬)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ হিবা ও এর ফযীলত (كتاب الهبة وفضلها والتحريض عليها)
হাদিস নম্বরঃ ২৫৯২৫১/১৫. স্বামী আছে এমন নারীর স্বামী ব্যতীত অন্যের জন্য হিবা করা বা দাস মুক্ত করা। নির্বোধ না হলে বৈধ, নির্বোধ হলে অবৈধ।২৫৯২. মায়মূনাহ বিনতে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অনুমতি ব্যতীত তিনি আপন বাঁদীকে মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর তার ঘরে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অবস্থানের দিন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি জানেন না আমি আমার বাঁদী মুক্ত করে দিয়েছি? তিনি বললেন, তুমি কি তা করেছ? মায়মূনাহ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, শুন! তুমি যদি তোমার মামাদেরকে এটা দান করতে তাহলে তোমার জন্য বেশি নেকির কাজ হত। (২৫৯৪)অন্য সনদে বাকর ইবনু মুযার (রহ.) —- কুরায়ব (রহ.) হতে বর্ণিত যে, মায়মূনাহ (রাঃ) গোলাম মুক্ত করেছেন। (মুসলিম ১২/১৪, হাঃ ৯৯৯, আহমাদ ২৬৮৮৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪২১)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৫৭/৬. আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে আকস্মিক প্রয়োজনাদি ও মিসকীনদের জন্য গানীমাতের এক পঞ্চমাংশ।حِيْنَ سَأَلَتْهُ فَاطِمَةُ وَشَكَتْ إِلَيْهِ الطَّحْنَ وَالرَّحَى أَنْ يُخْدِمَهَا مِنْ السَّبْيِ فَوَكَلَهَا إِلَى اللهِযখন ফাতিমাহ (রাঃ) তাঁর নিকট আটা পিষার কষ্টের কথা জ্ঞাপন করতঃ বন্দীদের নিকট হতে তাঁর খেদমতের জন্য দাসী চাইলেন, তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলে সুফ্ফা ও বিধবাদের অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি তাঁকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করেন।৩১১৩. ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, ফাতিমাহ (রাঃ) আটা পিষার কষ্টের কথা জানান। তখন তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছে যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কয়েকজন বন্দী আনা হয়েছে। ফাতিমাহ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে একজন খাদিম চাইলেন। তিনি তাঁকে পেলেন না। তখন তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট তা উল্লেখ করেন। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলে ‘আয়িশাহ (রাঃ) তাঁর নিকট বিষয়টি বললেন। (রাবী বলেন) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এলেন। তখন আমরা শুয়ে পড়েছিলাম। আমরা উঠতে চাইলাম। তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাক। আমি তাঁর পায়ের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা যা চেয়েছ, আমি কি তোমাদের তার চেয়ে উত্তম জিনিসের সন্ধান দিব না? যখন তোমরা বিছানায় যাবে, তখন চৌত্রিশ বার ‘আল্লাহু আকবার’ তেত্রিশবার ‘আল্হামদু লিল্লাহ’ এবং তেত্রিশবার ‘সুব্হানাল্লাহ’ বলবে, এটাই তোমাদের জন্য তার চেয়ে উত্তম, যা তোমরা চেয়েছ।’ (৩৭০৫, ৫৩৬১, ৬৩১৮) (মুসলিম ৪৮/১৯ হাঃ ২৭২৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৯০)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৬৪/৩৯. খাইবার -এর যুদ্ধ।৪২৩৪. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খাইবার যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি কিন্তু গানীমাত হিসেবে আমরা সোনা, রুপা কিছুই পাইনি। আমরা গানীমাত হিসেবে পেয়েছিলাম গরু, উট, বিভিন্ন দ্রব্য-সামগ্রী এবং ফলের বাগান। (যুদ্ধ শেষে) আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ওয়াদিউল কুরা পর্যন্ত ফিরে এলাম। তাঁর [নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সঙ্গে ছিল মিদআম নামে তাঁর একটি গোলাম। বানী যিবাব (রাঃ)-এর এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এটি হাদিয়া দিয়েছিল। এক সময়ে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাওদা নামানোর কাজে ব্যস্ত ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে অজ্ঞাত একটি তীর ছুটে এসে তার গায়ে পড়ল। তাতে গোলামটি মারা গেল। তখন লোকেরা বলতে লাগল, কী আনন্দদায়ক তার এ শাহাদাত! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা? সেই মহান সত্তার কসম! তাঁর হাতে আমার প্রাণ, বণ্টনের আগে খাইবারের গানীমাত থেকে যে চাদরখানা তুলে নিয়েছিল সেটি আগুন হয়ে অবশ্যই তাকে দগ্ধ করবে। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা শুনে আরেক লোক একটি অথবা দু’টি জুতার ফিতা নিয়ে এসে বলল, এ জিনিসটি আমি বণ্টনের আগেই নিয়েছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ একটি অথবা দু’টি ফিতাও হয়ে যেত আগুনের (ফিতা)।[1] [৬৭০৭; মুসলিম ১/৪৯, হাঃ ১১৫] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯১২)[1] গানীমাতের মাল সব একত্র করা হবে এবং সেখান থেকে বণ্টন করা হবে। বণ্টিত ব্যতীত গানীমাতের কোন মাল হস্তগত করা বা চুরি করা মারাত্মক রকমের খিয়ানাত। কুরআন মাজীদের সূরা আলু ‘ইমরানের ১৬১ আয়াতে এ ব্যাপারে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে যা বলা হয়েছে অত্র হাদীসটি তারই ব্যাখ্যা স্বরূপ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৬৫/২৪/৬. পরিচ্ছেদ নাই।… তিনি বলেন, আমি সে রাত কেঁদে কাটালাম, এমন কি ভোর হয়ে গেল, তথাপি আমার কান্না থামল না এবং আমি ঘুমাতেও পারলাম না। আমি কাঁদতে কাঁদতেই ভোর করলাম। যখন ওয়াহী আসতে দেরী হল, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) ও উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে তাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদের ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শের জন্য ডাকলেন। তিনি বলেন, উসামাহ ইবনু যায়দ তাঁর সহধর্মিণী (‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর পবিত্রতা এবং তাঁর অন্তরে তাঁদের প্রতি তাঁর ভালবাসা সম্পর্কে যা জানেন তার আলোকে তাঁকে পরামর্শ দিতে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পরিবার সম্পর্কে আমরা ভাল ধারণাই পোষণ করি। আর ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্ আপনার উপর কোন পথ সংকীর্ণ করে দেননি এবং তিনি ব্যতীত বহু মহিলা রয়েছেন। আর আপনি যদি দাসীকে জিজ্ঞেস করেন, সে আপনার কাছে সত্য ঘটনা বলবে।তিনি [‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরাহ্কে ডাকলেন এবং বললেন, হে বারীরাহ! তুমি কি তার নিকট হতে সন্দেহজনক কিছু দেখেছ? বারীরাহ বললেন, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম! আমি এমন কোন কিছু তাঁর মধ্যে দেখতে পাইনি, যা আমি গোপন করতে পারি। তবে তাঁর মধ্যে সবচাইতে অধিক যা দেখেছি, তা হল, তিনি একজন অল্পবয়স্কা বালিকা। তিনি কখনও তাঁর পরিবারের আটার খামির রেখে ঘুমিয়ে পড়তেন। অর ছাগলের বাচ্চা এসে তা খেয়ে ফেলত। …হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৬৫/২৪/১২. আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ… এরপর আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লাম এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম যে, আমাকে আমার পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। তিনি একটি দাসকে আমার সঙ্গে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। আমি যখন ঘরে প্রবেশ করলাম, তখন উম্মু রূমানকে নিচে দেখতে পেলাম এবং আবূ বাকর (রাঃ) ঘরের ওপরে পড়ছিলেন। …হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৬৫/৬৬/২. আল্লাহর বাণীঃ{تَبْتَغِيْ مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ ط وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ – قَدْ فَرَضَ اللهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ أَيْمَانِكُمْ ج وَاللهُ مَوْلٰكُمْ ج وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ}.আপনি আপনার স্ত্রীদের খুশী করতে চাইছেন। আল্লাহ তো তোমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন কসম থেকে মুক্তির ব্যবস্থা। আল্লাহ তোমাদের বন্ধু। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/১-২)৪৯১৩. ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-কে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য আমি এক বছর অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তাঁর ব্যক্তি- প্রভাবের ভয়ে আমি তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। অবশেষে তিনি হাজ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হলে, আমিও তাঁর সঙ্গে গেলাম। ফেরার পথে আমরা যখন কোন একটি রাস্তা অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য একটি পিলু গাছের আড়ালে গেলেন। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, তিনি প্রয়োজন সেরে না আসা পর্যন্ত আমি সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম। এরপর তাঁর সঙ্গে পথ চলতে চলতে বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কোন্ দু’জন তার বিপক্ষে একমত হয়ে পরস্পর একে অন্যকে সহযোগিতা করেছিলেন? তিনি বললেন, তাঁরা দু’জন হল হাফসাহ ও ‘আয়িশাহ (রাঃ)। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করার জন্য এক বছর যাবৎ ইচ্ছে করেছিলাম। কিন্তু আপনার ভয়ে আমার পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, এ রকম করবে না। যে বিষয়ে তুমি মনে করবে যে, আমি তা জানি, তা আমাকে জিজ্ঞেস করবে। এ বিষয়ে আমার জানা থাকলে আমি তোমাকে জানিয়ে দেব। তিনি বলেন, এরপর ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! জাহিলী যুগে মহিলাদের কোন অধিকার আছে বলে আমরা মনে করতাম না। অবশেষে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে যে বিধান অবতীর্ণ করার ছিল তা অবতীর্ণ করলেন এবং তাদের হক হিসাবে যা নির্দিষ্ট করার ছিল তা নির্দিষ্ট করলেন। তিনি বলেন, একদিন আমি কোন এক ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করছিলাম, এমন সময় আমার স্ত্রী আমাকে বললেন, কাজটি যদি তুমি এভাবে এভাবে করতে। আমি বললাম, তোমার কী প্রয়োজন? এবং আমার কাজে তোমার এ অনধিকার চর্চা কেন। সে আমাকে বলল, হে খাত্তাবের বেটা! কি আশ্চর্য, তুমি চাও না যে, আমি তোমার কথার উত্তর দান করি অথচ তোমার কন্যা হাফ্সাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার পৃষ্ঠে কথা বলে থাকে। এমনকি একদিন তো সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাগান্বিত করে ফেলে। এ কথা শুনে ‘উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং চাদরখানা নিয়ে তার বাড়িতে চলে গেলেন। তিনি তাকে বললেন, বেটী! তুমি নাকি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার প্রতি-উত্তর করে থাক। ফলে তিনি দিনভর দুঃখিত থাকেন। হাফ্সাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তো অবশ্যই তাঁর কথার জবাব দিয়ে থাকি। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, জেনে রাখ! আমি তোমাকে আল্লাহর শাস্তি এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি সম্পর্কে সতর্ক করছি। রূপ-সৌন্দর্যের কারণে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভালবাসা যাকে গর্বিতা করে রেখেছে, সে যেন তোমাকে প্রতারিত না করতে পারে। এ কথা বলে ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বোঝাচ্ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) বলেন, এরপর আমি সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম এবং উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলাম ও এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলাম। কারণ, তাঁর সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। তখন উম্মু সালামাহ (রাঃ) বললেন, হে খাত্তাবের বেটা! কি আশ্চর্য, তুমি প্রত্যেক ব্যাপারেই নাক গলাচ্ছ, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার স্ত্রীদের ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছ। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে এমন শক্তভাবে ধরলেন যে, আমার রাগ খতম হয়ে গেল। এরপর আমি তাঁর নিকট হতে চলে আসলাম। আমার একজন আনসার বন্ধু ছিল। যদি আমি কোন মাজলিসে অনুপস্থিত থাকতাম তাহলে সে এসে মাজলিসের খবর আমাকে জানাত। আর সে যদি অনুপস্থিত থাকত তাহলে আমি এসে তাকে মাজলিসের খবর জানাতাম। সে সময় আমরা গাস্সানী বাদশাহর আক্রমণের আশংকা করছিলাম। আমাদেরকে বলা হয়েছিল যে, সে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য রওয়ানা হয়েছে। তাই আমাদের হৃদয়-মন এ ভয়ে শংকিত ছিল। এমন সময় আমার আনসার বন্ধু এসে দরজায় আঘাত করে বললেন, দরজা খুলুন, দরজা খুলুন। আমি বললাম, গাস্সানীরা চলে এসেছে নাকি? তিনি বললেন, বরং এর চেয়েও কঠিন ব্যাপার ঘটে গেছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিণীদের থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছেন। তখন আমি বললাম, হাফসাহ ও ‘আয়িশাহর নাক ধূলায় ধূসরিত হোক। এরপর আমি কাপড় নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উঁচু কক্ষে অবস্থান করছেন। সিঁড়ি বেয়ে সেখানে পৌঁছতে হয়। সিঁড়ির মুখে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন কালো গোলাম বসা ছিল। আমি বললাম, বলুন, ‘উমার ইবনু খাত্তাব এসেছেন। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অনুমতি দিলেন, আমি তাঁকে সব কথা বললাম, আমি যখন উম্মু সালামাহর কপোপকথন পর্যন্ত পৌঁছলাম তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন। এ সময় তিনি একটা চাটাইয়ের উপর শুয়ে ছিলেন। চাটাই এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাঝে আর কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নিচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার একটি বালিশ এবং পায়ের কাছে ছিল সল্ম বৃক্ষের পাতার একটি স্তূপ ও মাথার উপর লটকানো ছিল চামড়ার একটি মশক। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক পার্শ্বে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললে তিনি বললেন, তুমি কেন কাঁদছ? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কিসরা ও কায়সার পার্থিব ভোগ-বিলাসের মধ্যে ডুবে আছে, অথচ আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তারা দুনিয়া লাভ করুক, আর আমরা আখিরাত লাভ করি। [৮৯; মুসলিম ১৮/৫, হাঃ ১৪৭৯] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৪৮)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৬৭/৮৪. কোন ব্যক্তির নিজ কন্যাকে তার স্বামী সম্পর্কে নাসীহাত দান করা।৫১৯১. ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বহুদিন ধরে উৎসুক ছিলাম যে, আমি ‘উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করব, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণের মধ্যে কোন্ দু’জনের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেছেনঃ ‘‘তোমরা দু’জন যদি অনুশোচনাভরে আল্লাহর দিকে ফিরে আস (তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম), তোমাদের অন্তর (অন্যায়ের দিকে) ঝুঁকে পড়েছে।’’ (সূরাহ আত-তাহরীম ৬৬ঃ ৪) এরপর একবার তিনি [‘উমার (রাঃ)] হাজ্জের জন্য রওয়ানা হলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে হাজ্জে গেলাম। (ফিরে আসার পথে) তিনি ইস্তিনজার জন্য রাস্তা থেকে সরে গেলেন। আমি পানি পূর্ণ পাত্র হাতে তাঁর সঙ্গে গেলাম। তিনি ইস্তিনজা করে ফিরে এলে আমি ওযূর পানি তাঁর হাতে ঢেলে দিতে লাগলাম। তিনি যখন ওযূ করছিলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীগণের মধ্যে কোন্ দু’জন, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘তোমরা দু’জন যদি আল্লাহর কাছে তাওবাহ কর (তবে তোমাদের জন্য উত্তম), কেননা তোমাদের মন সঠিক পথ থেকে সরে গেছে।’’ জবাবে তিনি বললেন, হে ইব্নু ‘আববাস! আমি তোমার প্রশ্ন শুনে অবাক হচ্ছি। তাঁরা দু’জন তো ‘আয়িশাহ (রাঃ)ও হাফসাহ (রাঃ)। এরপর ‘উমার (রাঃ) এ ঘটনাটি বর্ণনা করলেন, ‘‘আমি এবং আমার একজন আনসারী প্রতিবেশী যিনি উমাইয়াহ ইবনু যায়দ গোত্রের লোক এবং তারা মদিনা্র উপকন্ঠে বসবাস করত। আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে পালাক্রমে সাক্ষাৎ করতাম।সে একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে যেত, আমি আর একদিন যেতাম। যখন আমি নিকটে যেতাম, ঐ দিন নিকটে ওয়াহী অবতীর্ণসহ যা ঘটত সবকিছুর খবর আমি তাকে দিতাম এবং সেও তেমনি খবর আমাকে দিত। আমরা কুরাইশরা নিজেদের স্ত্রীগণের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছিলাম। কিন্তু আমরা যখন আনসারদের মধ্যে এলাম, তখন দেখতে পেলাম, তাদের স্ত্রীগণ তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে আছে এবং তাদের ওপর কর্তৃত্ব করে চলেছে। সুতরাং আমাদের স্ত্রীরাও তাদের দেখাদেখি সেরূপ ব্যবহার করতে লাগল। একদিন আমি আমার স্ত্রীর প্রতি নারাজ হলাম এবং তাকে উচ্চৈঃস্বরে কিছু বললাম, সেও প্রতি-উত্তর দিল। আমার কাছে এ রকম প্রতি-উত্তর দেয়াটা অপছন্দ হল। সে বলল, আমি আপনার কথার পাল্টা উত্তর দিচ্ছি এতে অবাক হচ্ছেন কেন? আল্লাহর কসম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ তাঁর কথার মুখে মুখে পাল্টা উত্তর দিয়ে থাকেন এবং তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার একদিন এক রাত পর্যন্ত কথা না বলে কাটান।[‘উমার (রাঃ) বলেন], এ কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম এবং আমি বললাম, তাদের মধ্যে যারা এরূপ করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরপর আমি আমার কাপড় পরলাম এবং আমার কন্যা হাফসার ঘরে প্রবেশ করলাম এবং বললামঃ হাফ্সা! তোমাদের মধ্য থেকে কারো প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সারা দিন রাত পর্যন্ত অসন্তুষ্ট থাকেননি? সে উত্তর করল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। তোমরা কি এ ব্যাপারে ভীত হচ্ছো না যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসন্তুষ্টির কারণে আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হয়ে যাবেন? পরিণামে তোমরা ধ্বংসের মধ্যে পড়ে যাবে। সুতরাং তুমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অতিরিক্ত কোন জিনিস দাবি করবে না এবং তাঁর কথার প্রতি-উত্তর করবে না এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করবে না। তোমার যদি কোন কিছুর প্রয়োজন হয়, তবে আমার কাছে চেয়ে নেবে। আর তোমার সতীন তোমার চেয়ে অধিক রূপবতী এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিক প্রিয়- তা যেন তোমাকে বিভ্রান্ত না করে। এখানে সতীন বলতে ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বোঝানো হয়েছে।‘উমার (রাঃ) আরো বলেন, এ সময় আমাদের মধ্যে এ কথা ছড়িয়ে পড়েছিল যে, গাস্সানের শাসনকর্তা আমাদের ওপর আক্রমণ চালাবার উদ্দেশে তাদের ঘোড়াগুলোকে প্রস্তুত করছে। আমার প্রতিবেশী আনসার তার পালার দিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাত থেকে রাতে ফিরে এসে আমার দরজায় খুব জোরে করাঘাত করল এবং জিজ্ঞেস করল, আমি ঘরে আছি কিনা? আমি শংকিত অবস্থায় বেরিয়ে এলাম। সে বলল, আজ এক বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে। আমি বললাম, সেটা কী? গ্যাস্সানিরা কি এসে গেছে? সে বলল, না তার চেয়েও বড় ঘটনা এবং তা ভয়ংকর। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিণীগণকে তালাক দিয়েছেন। আমি বললাম, হাফসা তো ধ্বংস হয়ে গেল, ব্যর্থ হলো। আমি আগেই ধারণা করেছিলাম, খুব শিগগিরই এ রকম কিছু ঘটবে। এরপর আমি পোশাক পরলাম এবং ফাজরের সালাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আদায় করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওপরের কামরায় (মাশরুবা) একাকী আরোহণ করলেন, আমি তখন হাফসার কাছে গেলাম এবং তাকে কাঁদতে দেখলাম।আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কাঁদছ কেন? আমি কি তোমাকে এ ব্যাপারে আগেই সতর্ক করে দেইনি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদের সকলকে তালাক দিয়েছেন? সে বলল, আমি জানি না। তিনি ওখানে ওপরের কামরায় একাকী রয়েছেন। আমি সেখান থেকে বেরিয়ে মিম্বারের কাছে বসলাম। সেখানে কিছু সংখ্যক লোক বসা ছিল এবং তাদের মধ্যে অনেকেই কাঁদছিল। আমি তাদের কাছে কিছুক্ষণ বসলাম, কিন্তু আমার প্রাণ এ অবস্থা সহ্য করতে পারছিল না। সুতরাং যে ওপরের কামরায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান করছিলেন আমি সেই ওপরের কামরায় গেলাম এবং তাঁর হাবশী কালো খাদিমকে বললাম, তুমি কি ‘উমারের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যাবার অনুমতি এনে দেবে? খাদিমটি গেল এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বলল। ফিরে এসে উত্তর করল, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আপনার কথা বলেছি, কিন্তু তিনি নিরুত্তর আছেন। তখন আমি ফিরে এলাম এবং যেখানে লোকজন বসা ছিল সেখানে বসলাম। কিন্তু এ অবস্থা আমার কাছে অসহ্য লাগছিল। তাই আবার এসে খাদেমকে বললাম, তুমি কি ‘উমারের জন্য অনুমতি এনে দিবে? সে গেল এবং এবং ফিরে এসে বলল, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আপনার কথা বলেছি কিন্তু তিনি নিরুত্তর ছিলেন। তখন আমি আবার ফিরে এসে মিম্বরের কাছে ঐ লোকজনের সঙ্গে বসলাম।কিন্তু এ অবস্থা আমার কাছে অসহ্য লাগছিল। পুনরায় আমি খাদেমের কাছে গেলাম এবং বললাম, তুমি কি ‘উমারের জন্য অনুমতি এনে দেবে? সে গেল এবং আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল, আমি আপনার কথা উল্লেখ করলাম; কিন্তু তিনি নিরুত্তর আছেন। যখন আমি ফিরে যাবার উদ্যোগ নিয়েছি, এমন সময় খাদিমটি আমাকে ডেকে বলল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রবেশ করে দেখলাম, তিনি খেজুরের চাটাইর ওপর চাদরবিহীন অবস্থায় খেজুরের পাতা ভর্তি একটি বালিশে ভর দিয়ে শুয়ে আছেন। তাঁর শরীরে পরিষ্কার চাটাইয়ের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। আমি তাঁকে সালাম করলাম এবং দাঁড়ানো অবস্থাতেই জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আপনার স্ত্রীগণকে তালাক দিয়েছেন? তিনি আমার দিকে চোখ ফিরিয়ে বললেন, না (অর্থাৎ তালাক দেইনি)। আমি বললাম, আল্লাহু আকবার। এরপর কথাবার্তা হালকা করার উদ্দেশে দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি শোনেন তাহলে বলিঃ আমরা কুরাইশগণ, মহিলাদের ওপর আমাদের প্রতিপত্তি খাটাতাম; কিন্তু আমরা মদিনা্য় এসে দেখলাম, এখানকার পুরুষদের ওপর নারীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিদ্যমান।এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আপনি আমার কথার দিকে একটু নজর দেন। আমি হাফ্সার কাছে গেলাম এবং আমি তাকে বললাম, তোমার সতীনের রূপবতী হওয়া ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয় পাত্রী হওয়া তোমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে। এর দ্বারা ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার মুচকি হাসলেন। আমি তাঁকে হাসতে দেখে বসে পড়লাম। এরপর আমি তাঁর ঘরের চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম। আল্লাহর কসম! কেবল তিনটি চামড়া ব্যতীত আর আমি তাঁর ঘরে উল্লেখ করার মত কিছুই দেখতে পেলাম না। তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! দু‘আ করুন, আল্লাহ্ তা‘আলা যাতে আপনার উম্মাতদের সচ্ছলতা দান করেন। কেননা, পারসিক ও রোমানদের প্রাচুর্য দান করা হয়েছে এবং তাদের দুনিয়ার আরাম প্রচুর পরিমাণে দান করা হয়েছে; অথচ তারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করে না। এ কথা শুনে হেলান দেয়া অবস্থা থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোজা হয়ে বসে বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! তুমি কি এখনো এ ধারণা পোষণ করছ? ওরা ঐ লোক, যারা উত্তম কাজের প্রতিদান এ দুনিয়ায় পাচ্ছে! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমার ক্ষমার জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন।হাফসা (রাঃ) কর্তৃক ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর কাছে কথা ফাঁস করে দেয়ার কারণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনত্রিশ দিন তার স্ত্রীগণ থেকে আলাদা থাকেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, আমি এক মাসের মধ্যে তাদের কাছে যাব না তাদের প্রতি গোস্বার কারণে। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে মৃদু ভৎর্সনা করেন। সুতরাং যখন ঊনত্রিশ দিন হয়ে গেল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর কাছে গেলেন এবং তাঁকে দিয়েই শুরু করলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কসম করেছেন যে, একমাসের মধ্যে আমাদের কাছে আসবেন না; কিন্তু এখন তো ঊনত্রিশ দিনেই এসে গেলেন। আমি প্রতিটি দিন এক এক করে হিসাব করে রেখেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঊনত্রিশ দিনেও একমাস হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ মাস ২৯ দিনের। ‘আয়িশাহ (রাঃ) আরও বলেন, ঐ সময় আল্লাহ্ তা‘আলা ইখতিয়ারের আয়াত অবতীর্ণ করেন[1] এবং তিনি তাঁর স্ত্রীগণের মধ্যে আমাকে দিয়েই শুরু করেন এবং আমি তাঁকেই গ্রহণ করি। এরপর তিনি অন্য স্ত্রীগণের অভিমত চাইলেন। সকলেই তাই বলল, যা ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেছিলেন। [৮৯](আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১২)[1]সূরা আহযাবের ২৮ নং আয়াত অবতীর্ণ হল। যাতে নাবীﷺ-এর বিবিগণকে দুনিয়া বা আখিরাত- এ দু’টোর যে কোন একটিকে বেছে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৬৯/৬. স্বামীর গৃহে স্ত্রীর কাজকর্ম করা।৫৩৬১. ‘আলী হতে বর্ণিত যে, একদা ফাতিমাহ ( যাঁতা ব্যবহারে তাঁর হাতে যে কষ্ট পেতেন তার অভিযোগ নিয়ে নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। তাঁর কাছে নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দাস আসার খবর পৌঁছে ছিল। কিন্তু তিনি নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পেলেন না। তখন তিনি তাঁর অভিযোগ ‘আয়িশাহর কাছে বললেন। নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামঘরে আসলে ‘আয়িশাহ ( তাঁকে জানালেন। ‘আলী বলেনঃ রাতে আমরা যখন শুয়ে পড়েছিলাম, তখন তিনি আমাদের কাছে আসলেন। আমরা উঠতে চাইলাম, কিন্তু তিনি বললেনঃ তোমরা উভয়ে নিজ স্থানে থাক। তিনি এসে আমার ও ফাতিমার মাঝখানে বসলেন। এমনকি আমি আমার পেটে তাঁর দুপায়ের শীতলতা উপলব্ধি করলাম। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা যা চেয়েছ তার চেয়ে কল্যাণকর বিষয় সম্পর্কে তোমাদের কি জানাবো না? তোমরা যখন তোমাদের শয্যাস্থানে যাবে, অথবা বললেনঃ তোমরা যখন তোমাদের বিছানায় যাবে, তখন তেত্রিশবার ‘সুব্হানাল্লাহ’, তেত্রিশবার ‘আল্ হাম্দুলিল্লাহ’ এবং চৌত্রিশবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। এটা খাদিম অপেক্ষা তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণদায়ক। [1] [৩১১৩] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫৭)[1] আল্লাহ তা‘আলা সকল শক্তি ও ক্ষমতার উৎস। তিনিই মানুষকে জ্ঞান, বুদ্ধি, শক্তি, ক্ষমতা, সাহস, ধৈর্য সব কিছু দান করেন। একজন মানুষ আল্লাহর কাছে কাজের শক্তি ও ক্ষমতা চাইলে তিনি তা দান করবেন। মানুষ আল্লাহর নিকট হতে শক্তি ও ক্ষমতা প্রার্থনার মাধ্যমে চাকর বাকর রাখার প্রয়োজনীয়তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৭০/৩৫. কাউকে খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে নিজে অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়া।৫৪৩৫. আনাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ছোট ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে চলাফেরা করতাম। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক গোলামের কাছে গেলেন, সে ছিল দর্জি। সে তাঁর সামনে একটি পাত্র হাযির করল, যাতে খাবার ছিল। আর তাতে কদুও ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেছে বেছে কদু খেতে লাগলেন। এ দেখে আমি কদুর টুকরাগুলো তাঁর সামনে জমা করতে লাগলাম। তিনি বললেনঃ গোলাম তার কাজে লেগে গেল। আনাস বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যখন এরূপ করতে দেখলাম যা তিনি করলেন তারপর থেকে আমিও কদু খাওয়া পছন্দ করতে লাগলাম। [২০৯২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫০৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯২৮)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৭০/৩৩. কদু প্রসঙ্গে।৫৪৩৩. আনাস হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক দর্জি গোলামের বাড়ীতে আসলেন। তাঁর সামনে কদু উপস্থিত করা হলে তিনি বেছে বেছে) কদু খেতে লাগলেন। সে দিন থেকে আমিও কদু খেতে ভালবাসি, যেদিন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তা খেতে দেখেছি। [২০৯২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫০৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯২৬)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৭৮/৯৫. কাউকে ‘ওয়াইলাকা’ বলা সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে।৬১৬১. আনাস ইবনু মালিক হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এক সফরে ছিলাম। তাঁর সঙ্গে তখন আনজাশাহ নামের এক কালো গোলাম ছিল। সে পুঁথি গাইছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ওহে আনজাশাহ! তোমার সর্বনাশ। তুমি উটটিকে কাঁচপাত্র সদৃশ সওয়ারীদের নিয়ে ধীরে চালাও। [১৬৪৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬১৭)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৭৮/১১১. কারো সঙ্গীকে তার নামের কিছু অক্ষর কমিয়ে ডাকা।৬২০২.আনাস হতে বর্ণিত। একবার উম্মু সালীম সফরের সামগ্রীবাহী উটে সাওয়ার ছিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গোলাম আন্জাশ উটগুলোকে জলদি হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ওহে আন্জাশ! তুমি কাঁচের পাত্র বহনকারী উটগুলো আস্তে আস্তে হাঁকাও। [৬১৪৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৬)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৯৫/ ‘খবরে ওয়াহিদ’ গ্রহণযোগ্য (كتاب أخبار الآحاد)
হাদিস নম্বরঃ ৭২৬৩৯৫/৩. আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা অনুমতি ছাড়া নবীর গৃহে প্রবেশ করো না’’- (সূরাহ আন্-নূর ২৪/২৭)। যদি একজন তাকে অনুমতি দেয় তবে প্রবেশ করা বৈধ।৭২৬৩. ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আসলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দোতলার কক্ষে ছিলেন। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কালো গোলামটি দরজার সামনে দাঁড়ানো। আমি তাকে বললাম, তুমি বল, এইযে ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এসেছে। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। [৮৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৭)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আয়েশার দাস-দাসী বিষয়ক হাদিস সমূহ
৩. চুলে রং লাগানো প্রসঙ্গরেওয়ায়ত ৮. আবু সালমা ইবন আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, আবদুর রহমান ইবন আসওয়াদ আমার সঙ্গী ছিলেন। তাঁহার চুল ও দাড়ি সাদা ছিল। একদা তিনি চুলে লাল রং (লাল খেজাব বা মেহেদী) লাগাইয়া সকালে আগমন করিলেন। তখন সকলে বলিল, ইহা বেশ ভাল। তিনি বলিলেন, আমার আম্মা নবী-পত্নী আয়েশা (রাঃ) স্বীয় বাঁদী নুখাইলাকে কসম করিয়া বলিয়া সকালে (আমার কাছে) পাঠাইয়াছেন, খেজাব কর। আর ইহাও বয়ান করিয়াছেন যে, আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-ও রং (খেজাব) লাগাইতেন।মালিক (রহঃ) বলেন, কাল খেজাব সম্বন্ধে কোন হাদীস শুনি নাই। কাল রঙের খেজাব ব্যতীত অন্য রঙ হইলে ভাল। আল্লাহ্ চাহেন তো কোন রকম খেজাব না লাগানোই সবচেয়ে উত্তম। ইহাতে জনগণের কোন অসুবিধা নাই।[1]মালিক (রহঃ) বলেন, এই হাদীস দ্বারা বুঝা যইতেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজাব লাগান নাই। আর যদি তিনি খেজাব লাগাইতেন, তবে আয়েশা (রাঃ) আবদুর রহমান ইবনে আসওয়াদের নিকট নিশ্চয়ই উহা বলিয়া পাঠাইতেন।[1] সহীহ মুসলিমে আবু বকর (রাঃ)-এর পিতা আবু কুহাফা (রাঃ)-এর আলোচনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চুলের এই সাদা রং বদলাইয়া ফেলুন; তবে কাল রং লাগাইবেন না। আবু দাউদ এবং নাসায়ী শরীফে আছে যে, শেষ যুগে এক জাতি কাল খেজাব লাগাইবে। তাহারা বেহেশতের গন্ধও পাইবে না। এই প্রসঙ্গে প্রকৃত কথা এই যে, কাল খেজাব লাগানো জায়েয নহে। তবে যেই কাল রং-এ লাল মিশ্রিত আছে, উহা অবশ্য জায়েয আছে। হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
মুহাম্মদ মানুষকে দাসত্বে বন্দী করেছিলেন
৮/১২. ঊরু সম্পর্কে বর্ণনা।قَالَ أَبُو عَبْد اللهِ وَيُرْوَى عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ وَجَرْهَدٍ وَمُحَمَّدِ بْنِ جَحْشٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الْفَخِذُ عَوْرَةٌ وَقَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ حَسَرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنْ فَخِذِهِ قَالَ أَبُو عَبْد اللهِ وَحَدِيثُ أَنَسٍ أَسْنَدُ وَحَدِيثُ جَرْهَدٍ أَحْوَطُ حَتَّى يُخْرَجَ مِنْ اخْتِلَافِهِمْ وَقَالَ أَبُو مُوسَى غَطَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم رُكْبَتَيْهِ حِينَ دَخَلَ عُثْمَانُ وَقَالَ زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ أَنْزَلَ اللهُ عَلَى رَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم وَفَخِذُهُ عَلَى فَخِذِي فَثَقُلَتْ عَلَيَّ حَتَّى خِفْتُ أَنْ تَرُضَّ فَخِذِي.ইবনু ‘আববাস, জারহাদ ও মুহাম্মাদ ইবনু জাহশ (রাযি.) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, ঊরু সতরের অন্তর্ভুক্ত। আর আনাস (রাযি.) বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঊরু হতে কাপড় সরিয়েছিলেন (আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী [র] বলেন) সনদের দিক হতে আনাস (রাযি.)-এর হাদীস অধিক সহীহ্ আর জারহাদ (রাযি.)-এর হাদীস অধিকতর সতর্কতামূলক। এভাবেই আমরা (উম্মতের মধ্যে) মতবিরোধ এড়াতে পারি। আর আবূ মূসা (রাযি.) বলেছেনঃ ‘উসমান (রাযি.)-এর আগমনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাঁটু ঢেকে নেন। যায়িদ ইবনু সাবিত (রাযি.) বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর ওহী নাযিল করেছেন এমন অবস্থায় যখন তাঁর ঊরু ছিল আমার ঊরুর উপর। আমার নিকট তাঁর ঊরু এত ভারী বোধ হচ্ছিল যে, আমি আশংকা করছিলাম, হয়ত ঊরুর হাড় ভেঙ্গে যাবে।৩৭১. আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার অভিযানে বের হয়েছিলেন। সেখানে আমরা খুব ভোরে ফজরের সালাত আদায় করলাম। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হলেন। আবূ তালহা (রাযি.)-ও সওয়ার হলেন, আর আমি আবূ তালহার পিছনে উপবিষ্ট ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সওয়ারীকে খায়বরের পথে চালিত করলেন। আমার হাঁটু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঊরুতে লাগছিল। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঊরু হতে ইযার সরে গেল। এমনকি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঊরুর উজ্জ্বলতা যেন এখনো আমি দেখছি। তিনি যখন নগরে প্রবেশ করলেন তখন বললেনঃ আল্লাহু আকবার। খায়বর ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন কওমের প্রাঙ্গণে অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের ভোর হবে কতই না মন্দ! এ কথা তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন। আনাস (রাযি.) বলেনঃ খায়বারের অধিবাসীরা নিজেদের কাজে বেরিয়েছিল। তারা বলে উঠলঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ‘আবদুল ‘আযীয (রহ.) বলেনঃ আমাদের কোন কোন সাথী ‘‘পূর্ণ বাহিনীসহ’’ (ওয়াল খামীস) শব্দও যোগ করেছেন। পরে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা খায়বর জয় করলাম। তখন যুদ্ধবন্দীদের সমবেত করা হলো। দিহ্য়া (রাযি.) এসে বললেনঃ হে আল্লাহর নবী! বন্দীদের হতে আমাকে একটি দাসী দিন। তিনি বললেন যাও, তুমি একটি দাসী নিয়ে যাও। তিনি সাফিয়্যাহ বিনত হুয়াই (রাযি.)-কে নিলেন। তখন এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললঃ ইয়া নবীয়াল্লাহ! বনূ কুরাইযা ও বনূ নাযীরের অন্যতম নেত্রী সাফিয়্যাহ বিনত হুয়াইকে আপনি দিহ্য়াকে দিচ্ছেন? তিনি তো একমাত্র আপনারই যোগ্য। তিনি বললেনঃ দিহ্য়াকে সাফিয়্যাহসহ ডেকে আন। তিনি সাফিয়্যাহসহ উপস্থিত হলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যাহ (রাযি.)-কে দেখলেন তখন (দিহ্য়াকে) বললেনঃ তুমি বন্দীদের হতে অন্য একটি দাসী দেখে নাও। রাবী বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যাহ (রাযি.)-কে আযাদ করে দিলেন এবং তাঁকে বিয়ে করলেন। রাবী সাবিত (রহ.) আবূ হামযা (আনাস) (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কি মাহর দিলেন? আনাস (রাযি.) জওয়াব দিলেনঃ তাঁকে আযাদ করাই তাঁর মাহর। এর বিনিময়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করেছেন। অতঃপর পথে উম্মু সুলায়ম (রাযি.) সাফিয়্যাহ (রাযি.)-কে সাজিয়ে রাতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে পেশ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাসর রাত যাপন করে ভোরে উঠলেন। তিনি ঘোষণা দিলেনঃ যার নিকট খাবার কিছু আছে সে যেন তা নিয়ে আসে। এ বলে তিনি একটা চামড়ার দস্তরখান বিছালেন। কেউ খেজুর নিয়ে আসলো, কেউ ঘি আনলো। ‘আবদুল ‘আযীয (রহ.) বলেনঃ আমার মনে হয় আনাস (রাযি.) ছাতুর কথাও উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তাঁরা এসব মিশিয়ে খাবার তৈরি করলেন। এ-ই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওয়ালীমাহ।(৬১০, ৯৪৭, ২২২৮, ২২৩৫, ২৮৮৯, ২৮৯৩, ২৯৪৩, ২৯৪৪, ২৯৪৫, ২৯৯১, ৩০৮৫, ৩০৮৬, ৩৩৬৭, ৩৬৪৭, ৪০৮৩, ৪০৮৪, ৪১৯৭, ৪১৯৮, ৪১৯৯, ৪২০০, ৪২০১, ৪২১১, ৪২১২, ৪২১৩, ৫০৮৫, ৫১৫৯, ৫১৬৯, ৫৩৮৭, ৫৪২৫, ৫৫২৮, ৫৯৬৮, ৬১৮৫, ৬৩৬৩, ৬৩৬৯,৭৩৩৩; মুসলিম ১৫/৮৫ হাঃ ১৩৬৫, আহমাদ ১২৬১২ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)অধ্যায়ঃ ৫৭/ খুমুস (এক পঞ্চমাংশ) (كتاب فرض الخمس)
হাদিস নম্বরঃ ৩১৪৫৫৭/১৯. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের দিকে যাদের মন আকৃষ্ট করতে চাইতেন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস বা তদ্রূপ মাল থেকে দান করতেন।৩১৪৫. ‘আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দলকে দিলেন আর অন্য দলকে দিলেন না। তারা যেন এতে মনোক্ষুণ্ণ হলেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এমন লোকদের দেই, যাদের সম্পর্কে বিগড়ে যাওয়া কিংবা ধৈর্যচ্যুত হবার আশঙ্কা করি। আর অন্যদল যাদের অন্তরে আল্লাহ্ তা‘আলা যে কল্যাণ ও মুখাপেক্ষীহীনতা দান করেছেন, তার উপর ছেড়ে দেই। আর ‘আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ) তাদের মধ্যে। ‘আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সম্পর্কে যা বলেছেন, তার স্থলে যদি আমাকে লাল বর্ণের উট দেয়া হত তাতে আমি এতখানি আনন্দিত হতাম না। আর আবূ আসিম (রহ.) জারীর (রহ.) হতে হাদীসটি এতটুকু বেশি বর্ণনা করেছেন যে, হাসান (রহ.) বলেন, আমাকে ‘আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু মালামাল অথবা বন্দী আনা হয়, তখন তিনি তা বণ্টন করেন। (৯২৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯২১)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৬৪/৩৯. খাইবার -এর যুদ্ধ।৪২০০. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইবারের নিকটে সকালে কিছু অন্ধকার থাকতেই ফাজরের সালাত আদায় করলেন। তারপর আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করে বললেন, খাইবার ধ্বংস হয়েছে। আমরা যখনই কোন গোত্রের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হই তখনই সতর্ক করা গোত্রের সকালটি হয় মন্দরূপে। এ সময়ে খাইবারের অধিবাসীরা অলি-গলিতে গিয়ে আশ্রয় নিতে আরম্ভ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যকার যোদ্ধাদেরকে হত্যা করলেন। আর শিশু ও নারীদেরকে বন্দী করলেন। বন্দীদের মধ্যে ছিলেন সফিয়্যাহ। প্রথমে তিনি দাহ্ইয়াতুল কালবীর অংশে এবং পরে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অংশে বণ্টিত হন। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুক্তিদানকে (বিবাহের) মাহর হিসেবে গণ্য করেন। ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু সুহাইব (রহ.) সাবিত (রহ.)-কে বললেন, হে আবূ মুহাম্মাদ! আপনি কি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর [সফিয়্যাহ (রাঃ)-এর] মোহর কী ধার্য করেছিলেন? তখন সাবিত (রহ.) ‘হ্যাঁ’ বুঝানোর জন্য মাথা নাড়লেন। [৩৭১] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৮৮৩)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ১২/ খাওফ (শত্রুভীতির অবস্থায় সলাত) (كتاب صلاة الخوف)
হাদিস নম্বরঃ ৯৪৭১২/৬. তাকবীর বলা, ফাজরের সলাত সময় হলেই আদায় করা এবং শত্রুর উপর অতর্কিত আক্রমণ ও যুদ্ধাবস্থায় সলাত।৯৪৭. আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) ফজরের সালাত অন্ধকার থাকতে আদায় করলেন। অতঃপর সওয়ারীতে আরোহণ করলেন এবং বললেনঃ আল্লাহু আক্বার, খায়বার ধ্বংস হোক! যখন আমরা কোন সম্প্রদায়ের এলাকায় অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হয় কতই না মন্দ! তখন তারা (ইয়াহূদীরা) বের হয়ে গলির মধ্যে দৌঁড়াতে লাগল এবং বলতে লাগল, মুহাম্মাদ ও তাঁর খামীস এসে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, খামীস হচ্ছে সৈন্য-সামন্ত। পরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপর জয়লাভ করেন। তিনি যোদ্ধাদের হত্যা করলেন এবং নারী-শিশুদের বন্দী করলেন। তখন সফীয়্যাহ প্রথম দিহ্ইয়া কালবীর এবং পরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অংশে পড়ল। অতঃপর তিনি তাঁকে বিয়ে করেন এবং তাঁর মুক্তিদানকে মাহররূপে গণ্য করেন। ‘আবদুল ‘আযীয (রহ.) সাবিত (রাযি.)-এর নিকট জানতে চাইলেন, তাঁকে কি মাহর দেয়া হয়েছিল? তা কি আপনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? তিনি বললেন, তাঁর মুক্তিই তাঁর মাহর, আর মুচ্কি হাসলেন। (৩৭১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ , ৮৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯০০)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৮২/৪. আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহর বিধান সুনির্ধারণে নির্ধারিত। (সূরাহ আহযাব ৩৩/৩৮)৬৬০৩. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় আনসারদের এক লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো বাঁদীদের সঙ্গে সংগত হই অথচ মালকে ভালবাসি। কাজেই ‘আযল’র ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি এ কাজ কর? তোমাদের জন্য এটা করা আর না করা দুটোই সমান। কেননা, যে কোন জীবন যা পয়দা হওয়াকে আল্লাহ্ লিখে দিয়েছেন তা পয়দা হবেই। [২২২৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫০)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৬৪/৩১. আহযাব যুদ্ধ থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রত্যাবর্তন এবং তাঁর বনূ কুরাইযাহ অভিযান ও তাদেরকে অবরোধ।৪১২১. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ)-এর বিচার মতে বানী কুরাইযাহ গোত্রের লোকেরা দূর্গ থেকে বেরিয়ে আসল। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দকে আনার জন্য লোক পাঠালেন। তিনি গাধায় চড়ে আসলেন। তিনি মসজিদে নাবাবীর নিকটবর্তী হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার সহাবীগণকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা তোমাদের নেতা বা সর্বোত্তম লোককে স্বাগত জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে যাও। (অতঃপর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরা তোমার ফায়সালা মেনে নিয়ে দূর্গ থেকে নিচে নেমে এসেছে। তখন তিনি বললেন, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হবে এবং তাদের সন্তাদেরকে বন্দী করা হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সা‘দ! তুমি আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে ফায়সালা দিয়েছ। কোন কোন সময় তিনি বলেছেন, তুমি সকল রাজার রাজা আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক ফায়সালা করেছ। [৩০৪৩] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৮১৮)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মুহাম্মদ দাস-দাসী কেনাবেচা করতেন
দুইজন কালো দাসের বিনিময়ে একজন
গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ২৩। মুসাকাহ (পানি সেচের বিনিময়ে ফসলের একটি অংশ প্রদান) (كتاب المساقاة)
হাদিস নম্বরঃ ৪০০৫২৩. একই শ্রেণীর পশু ও কম-বেশি করে বিনিময় করা বৈধ৪০০৫-(১২৩/১৬০২) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী, ইবনু রুমূহ ও কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ….. জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গোলাম এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হিজরাতের উপর বাই’আত করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারেননি যে, সে লোকটি গোলাম। অতঃপর তার মনিব তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে চলে আসেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনঃ আমার কাছে একে বিক্রি করে দাও। তারপর তিনি দু’জন কালো রং বিশিষ্ট গোলামের বিনিময়ে একে খরিদ করেন। এরপর থেকে তিনি বাই’আত নিতেন না যতক্ষণ না জিজ্ঞেস করতেন যে, সে গোলাম কি-না? (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৬৮, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৬৭)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মুহাম্মদ দাস বিক্রি করেছিলেন
৪৪/৩. যে ব্যক্তি কোন নির্বোধ বা এ ধরনের কোন লোকের সম্পত্তি বিক্রি করে এবং বিক্রি মূল্য তাকে দিয়ে দেয় ও তাকে তার অবস্থার উন্নতি ও অর্থকে যথাযথ ব্যবহার করতে নির্দেশ দেয়। এরপর যদি সে তার অর্থ নষ্ট করে দেয় তাহলে সে তাকে অর্থ ব্যবহার করা হতে বিরত রাখবে।২৪১৫. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার গোলাম আযাদ করে দিয়েছিল। তার কাছে এ ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গোলাম আযাদ করে দেয়া প্রত্যাখ্যান করে দিলেন। পরে সে গোলামটি তার নিকট হতে ইবনু নাহ্হাম কিনে নিলেন। (২১৪১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৫৫)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৩৪/৫৯. নিলাম ডাকে কেনা-বেচা।وَقَالَ عَطَاءٌ أَدْرَكْتُ النَّاسَ لاَ يَرَوْنَ بَأْسًا بِبَيْعِ الْمَغَانِمِ فِيمَنْ يَزِيدُআতা (রহ.) বলেন, আমি লোকেদের (সাহাবায়ে কিরামকে) দেখেছি যে, তারা গনীমতের মাল অধিক মূল্য দানকারীর কাছে বিক্রি করাতে দোষ মনে করতেন না।২১৪১. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার মৃত্যুর পরে তার গোলাম আযাদ হবে বলে ঘোষণা দিল। তারপর সে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোলামটিকে নিয়ে নিলেন এবং বললেন, কে একে আমার নিকট হতে ক্রয় করবে? নু‘আঈম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) (তাঁর কাছ হতে) সেটি এত এত মূল্যে ক্রয় করলেন। তিনি গোলামটি তার হাওয়ালা করে দিলেন। (২২৩০, ২২৩১, ২৪০৩, ২৫১৫, ২৫৩৪, ২৭১৬, ২৯৪৭, ৭১৮৬, মুসলিম ১২/১৩, হাঃ ৯৯৭, আহমাদ ১৪২৭৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০০৮)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৮৪/৭. কাফফারা আদায়ের ক্ষেত্রে মুদাববার, উম্মু ওয়ালাদ, মুকাতাব এবং যিনার সন্তান আযাদ করা।৬৭১৬. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আনসার গোত্রের এক লোক তার গোলামকে মুদাবিবর বানালো (মনিবের মৃত্যু হলে গোলাম মুক্ত হয়ে যাবে)। ঐ গোলাম ছাড়া তার আর কোন মাল ছিল না। খবরটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছল। তিনি বললেনঃ গোলামটিকে আমার নিকট হতে কে কিনে নেবে? নু‘আয়ম ইবনু নাহ্হা (রাঃ) তাকে আটশ’ দিরহামের বিনিময়ে কিনে নিল। রাবী ‘আমর (রাঃ) বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, গোলামটি ছিল কিব্তী আর (আযাদ করার) প্রথম বর্ষেই সে মারা গিয়েছিল। [২১৪১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬২৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫৯)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৮৯/ বল প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা (كتاب الإكراه)
হাদিস নম্বরঃ ৬৯৪৭৮৯/৫. কাউকে যদি বাধ্য করা হয়, যার কারণে সে গোলাম দান করে ফেলে অথবা বিক্রি করে দেয় তবে তা কার্যকর হবে না।وَقَالَ بَعْضُ النَّاسِ فَإِنْ نَذَرَ الْمُشْتَرِي فِيهِ نَذْرًا فَهُوَ جَائِزٌ بِزَعْمِهِ وَكَذَلِكَ إِنْ دَبَّرَهُকেউ কেউ সে রকমই রায় পোষণ করেন। অন্য পক্ষে তার মতে ক্রেতা যদি এতে কিছু মানত করে তাহলে তা কার্যকর হবে। তদ্রূপ তাকে যদি মুদাববার বানিয়ে নেয় তাহলে তা কার্যকর হবে।৬৯৪৭. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক আনসারী লোক তার এক গোলাম মুদাববার বানিয়ে দেয়। অথচ তার এছাড়া অন্য কোন মাল ছিল না। এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেনঃ কে আমার নিকট হতে এ গোলাম কিনে নিবে? নু‘আয়ম ইবনু নাহ্হাম (রাঃ) আটশ’ দিরহামে তাকে ক্রয় করলেন। রাবী বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ঐ গোলামটি কিব্তী গোলাম ছিল এবং (ক্রয়ের) প্রথম বছরই মারা যায়। [২১৪১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৭৮)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৪৩/ ঋণ গ্রহণ, ঋণ পরিশোধ, নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দেউলিয়া ঘোষণা (كتاب فى الاستقراض)
হাদিস নম্বরঃ ২৪০৩৪৩/১৬. গরীব বা অভাবী ব্যক্তির সম্পত্তি বিক্রয় করে তা পাওনাদারদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া অথবা তার নিজের খরচের জন্য দিয়ে দেয়া।43/15. بَاب مَنْ أَخَّرَ الْغَرِيمَ إِلَى الْغَدِ أَوْ نَحْوِهِ وَلَمْ يَرَ ذَلِكَ مَطْلاً৪৩/১৫. অধ্যায় : যে ব্যক্তি পাওনাদারকে দু’এক দিনের জন্য বিলম্বিত করলো আর এটাকে টালবাহানা মনে করে না।وَقَالَ جَابِرٌ اشْتَدَّ الْغُرَمَاءُ فِي حُقُوقِهِمْ فِي دَيْنِ أَبِي فَسَأَلَهُمْ النَّبِيُّ أَنْ يَقْبَلُوا ثَمَرَ حَائِطِي فَأَبَوْا فَلَمْ يُعْطِهِمْ الْحَائِطَ وَلَمْ يَكْسِرْهُ لَهُمْ وَقَالَ سَأَغْدُو عَلَيْكَ غَدًا فَغَدَا عَلَيْنَا حِينَ أَصْبَحَ فَدَعَا فِي ثَمَرِهَا بِالْبَرَكَةِ فَقَضَيْتُهُمْজাবির (রাঃ) বলেন, আমার পিতার ঋণের ব্যাপারে পাওনাদাররা তাদের পাওনার জন্য কঠোর ব্যবহার করে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আমার বাগানের ফল গ্রহণ করতে বললেন। কিন্তু তারা অস্বীকার করল। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বাগান দিলেন না এবং তাদের জন্য ফলও নির্ধারণ করে দিলেন না। তিনি বললেন, আমি আগামীকাল সকালে তোমার ওখানে আসব। সকাল হলে তিনি আমাদের কাছে এলেন এবং বাগানের ফলের মধ্যে বারকাতের জন্য দু‘আ করলেন। তারপর আমি তাদের পাওনা পরিশোধ করে দিলাম। (মুসলিম ২২/৫, হাঃ ১৫৫৯, আহমাদ ৭১২৭)২৪০৩. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ তার গোলামকে মরণোত্তর শর্তে আযাদ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে আমার হতে এই গোলামটি ক্রয় করবে? তখন নু‘আঈম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) সেটি ক্রয় করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাম গ্রহণ করে গোলামের মালিককে দিয়ে দিলেন। (২১৪১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৪৫)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৪৯/৯. মুদাববার (ক্রীতদাস) বিক্রয় করা।২৫৩৪. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের কোন একজন তার এক ক্রীতদাসকে মুদাববার (মনিবের মৃত্যুর পর যে ক্রীতদাস মুক্ত বলে ঘোষিত হয়) রূপে মুক্ত ঘোষণা করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ক্রীতদাসকে ডেকে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, ক্রীতদাসটি সে বছরই মারা গিয়েছিল। (২১৪১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩৬৭)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মুহাম্মদ দাস-দাসীদের লেনদেন করা আরম্ভ করেন
৫৩/৫. অন্যায়ের উপর সন্ধিবদ্ধ হলে তা বাতিল।২৬৯৫-২৬৯৬. আবূ হুরাইরাহ্ ও যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বলেন যে, এক বেদুঈন এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কিতাব মুতাবেক আমাদের মাঝে ফয়সালা করে দিন।’ তখন তার প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে বলল, ‘সে ঠিকই বলেছে, হ্যাঁ, আপনি আমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ্ মুতাবেক ফয়সালা করুন।’ পরে বেদুঈন বলল, ‘আমার ছেলে এ লোকের বাড়িতে মজুর ছিল। অতঃপর তার স্ত্রীর সঙ্গে সে যিনা করে।’ লোকেরা আমাকে বললোঃ তোমার ছেলের উপর রাজম (পাথরের আঘাতে হত্যা) ওয়াজিব হয়েছে। তখন আমার আমার ছেলেকে একশ ‘বকরী এবং একটি বাঁদীর বিনিময়ে এর নিকট হতে মুক্ত করে এনেছি। পরে আমি আলিমদের নিকট জিজ্ঞেস করলে তারা বললেন, ‘তোমার ছেলের উপর একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন ওয়াজিব হয়েছে।’ সব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ্ মুতাবেকই ফয়সালা করব। বাঁদী এবং বকরী পাল তোমাকে ফেরত দেয়া হবে, আর তোমার ছেলেকে একশ’ বেত্রাঘাত সহ এক বছরের নির্বাসন দেয়া হবে।’ আর অপরজনের ব্যাপারে বললেন, ‘হে উনাইস! তুমি আগাীমকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর নিকট যাবে এবং তাকে রাজম করবে।’ উনাইস তার নিকট গেলেন এবং তাকে রাজম করলেন। (২৩১৪, ২৩১৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫১৩)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৫৪/৯. দন্ড বিধিতে যে সকল শর্ত বৈধ নয়।২৭২৪-২৭২৫. আবূ হুরাইরাহ্ ও যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, এক বেদুঈন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আমার বাপারে আল্লাহর কিতাব মত ফয়সালা করুন।’ তখন তার প্রতিপক্ষ, যে তার তুলনায় বেশি জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন সে বলল, ‘হ্যাঁ, আপনি আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব মত ফয়সালা করুন এবং আমাকে বলার অনুমতি দিন।’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘বল’। সে বলল, আমার ছেলে এর নিকট মজুর ছিলো। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে যিনা করেছে। আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, আমার ছেলের প্রাপ্য দন্ড হল রাজম। তখন আমি তাকে (ছেলেকে) একশ’ বকরী এবং একটি বাঁদীর বিনিময়ে তার নিকট হতে ছাড়িয়ে এনেছি। পরে আমি আলিমদের জিজ্ঞেস করলাম। তাঁরা আমাকে জানালেন যে, আমার ছেলের দন্ড হল একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন। আর এই লোকের স্ত্রীর দন্ড হল রাজম। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, অবশ্যই আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করব। বাঁদী এবং একশ’ বকরী তোমাকে ফেরত দেয়া হবে। আর তোমার ছেলের শাস্তি একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন। হে উনায়স! আগামীকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর নিকট যাবে। যদি সে স্বীকার করে তাহলে তাকে রাজম করবে। রাবী বলেন, উনায়স (রাঃ) পরদিন সকালে সে স্ত্রীলোকের নিকট গেলেন। সে অপরাধ স্বীকার করল। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশে তাকে রাজম করা হল। (২৩১৪-২৩১৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৩৮)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৮৭/২৫. মহিলার ভ্রূণ।৬৯০৪. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, হুযায়ল গোত্রের দু’জন মহিলার একজন আরেক জনকে পাথর ছুঁড়ে গর্ভপাত ঘটিয়ে দিল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মহিলার ব্যাপারে একটি গোলাম অথবা বাঁদী প্রদানের ফায়সালা দিলেন। [৫৭৫৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩৭)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বিবিধ
মুহাম্মদ কখনো কখনো দাস-দাসী মুক্ত করা নিরুৎসাহিত এবং খর্ব করেছেন
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ হিবা ও এর ফযীলত (كتاب الهبة وفضلها والتحريض عليها)
হাদিস নম্বরঃ ২৫৯২৫১/১৫. স্বামী আছে এমন নারীর স্বামী ব্যতীত অন্যের জন্য হিবা করা বা দাস মুক্ত করা। নির্বোধ না হলে বৈধ, নির্বোধ হলে অবৈধ।২৫৯২. মায়মূনাহ বিনতে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অনুমতি ব্যতীত তিনি আপন বাঁদীকে মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর তার ঘরে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অবস্থানের দিন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি জানেন না আমি আমার বাঁদী মুক্ত করে দিয়েছি? তিনি বললেন, তুমি কি তা করেছ? মায়মূনাহ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, শুন! তুমি যদি তোমার মামাদেরকে এটা দান করতে তাহলে তোমার জন্য বেশি নেকির কাজ হত। (২৫৯৪)অন্য সনদে বাকর ইবনু মুযার (রহ.) —- কুরায়ব (রহ.) হতে বর্ণিত যে, মায়মূনাহ (রাঃ) গোলাম মুক্ত করেছেন। (মুসলিম ১২/১৪, হাঃ ৯৯৯, আহমাদ ২৬৮৮৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪২১)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
১২. অংশীদারিত্ব আছে এমন গোলাম মুক্ত করা৪২২৭-(৫৬/১৬৬৮) আলী ইবনু হুজর সাদী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ….. ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার মৃত্যুকালে নিজের ছয়জন গোলামকে আযাদ করল। অথচ গোলামগুলো ব্যতীত তার আর কোন সম্পদও ছিল না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডাকালেন এবং তাদেরকে তিনভাগে ভাগ করলেন। তারপর তাদের মধ্যে লটারী করে দু’জনকে সম্পূর্ণভাবে আযাদ করলেন এবং বাকী চারজনকে গোলাম বানিয়ে রাখলেন। আর তার (মৃতের) প্রতি শক্ত ভাষা প্রয়োগ করলেন।* (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪১৮৮, ইসলামিক সেন্টার ৪১৮৮)* ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, অপর বর্ণনা থেকে জানা যায়, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শক্ত কথা ছিল, যদি পূর্বেই আমরা এ বিষয়টি জানতাম তাহলে তার জানায পড়তাম না। (সহীহ মুসলিম শরহে নবাবী, ২য় খণ্ড, ৫৪ পৃষ্ঠা) হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আবু মাসউদের তার দাসকে পেটানোতে মুহাম্মদ খুশি ছিলেন না
গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত]
অধ্যায়ঃ ২৫/ সদ্ব্যবহার ও পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখা (كتاب البر والصلة عن رسول الله ﷺ)
হাদিস নম্বরঃ ১৯৪৮৩০. খাদিমকে প্রহার করা এবং গালি দেয়া নিষেধ১৯৪৮। আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি আমার এক গোলামকে প্রহার করছিলাম। তখন আমার পিছন হতে একজন লোককে আমি বলতে শুনলাম, আবূ মাসউদ, জেনে রাখ, আবূ মাসউদ, জেনে রাখ! আমি পিছনে তাকানো মাত্রই দেখতে পাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বললেনঃ তুমি এর উপর যে পরিমাণ ক্ষমতার অধিকারী, তোমার উপর আল্লাহ তা’আলা এরচাইতে অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, এরপর হতে আমি আমার কোন গোলামকে আর কখনো মারিনি।সহীহ, মুসলিম।আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবরাহীম আত-তাইনীর পিতা ইয়ামীদ ইবনু শারীক।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বিনা অপরাধে কোন দাসের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হলে তাকে মুক্ত করে দিতে হবে (অর্থ্যাৎ, ইসলামের দৃষ্টিতে দাস অপরাধী হলে, তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো বৈধ)
ইসলাম প্রচারকরা দাবি করে থাকেন, ইসলাম দাস প্রথায় অনেক পরিবর্তন এনেছে। ইসলাম প্রচারকদের দাবি, ইসলাম দাস-দাসীদের সাথে ন্যায়বিচার করার কথা বলে, যা ইসলাম পূর্ব যুগে ছিল না। অথচ, দাস প্রথার ধারণাই প্রশ্নাতীতভাবে অসভ্য এবং অমানবিক, যেখানে ন্যায়বিচার শব্দটাই বেমানান। যাইহোক, ইসলাম পূর্বে যুগের দাস প্রথা নিয়ে ইসলাম প্রচারকদের দাবি একেবারেই মনগড়া। ইসলাম পূর্ব যুগে, পার্সি আইনে জুলুমের বিরুদ্ধে দাস-দাসীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ছিল এবং দাস-দাসী মুক্ত করা পূণ্য বলে বিবেচিত হতো, যারা নিজেদের স্বাধীনতা ক্রয় করতে পারতো। [1] এবিষয়টি প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যেও প্রচলিত ছিল। ইসলাম অনুযায়ী, বিনা অপরাধে কোনো দাসকে মারলে তাকে মুক্ত করে দিতে হবে। আবার, কোনো পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইলে একটি দাস মুক্ত করে দিতে হবে।
৮. ক্রীতদাসদের সাথে আচার-আচরণ এবং দাসকে চপেটাঘাতের কাফফারা৪১৯১-(৩০/…) মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ….. যযান (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, ইবনু উমার (রাযিঃ) তার এক গোলামকে ডাকলেন। এরপর তার পিঠে (প্রহারের) দাগ দেখতে পেলেন। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি এতে যন্ত্রণা অনুভব করছ? সে বলল, না। তখন তিনি বললেন, তুমি মুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি মাটি থেকে কোন বস্তু নিয়ে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে এতটুকু পুণ্যও মেলেনি। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আপন গোলামকে বিনা অপরাধে প্রহার করল কিংবা চপেটাঘাত করল, এর কাফফারাহ হল তাকে মুক্ত করে দেয়া। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪১৫৩, ইসলামিক সেন্টার ৪১৫২)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৮. ক্রীতদাসদের সাথে আচার-আচরণ এবং দাসকে চপেটাঘাতের কাফফারা৪১৯৬-(৩৩/…) আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদুস সামাদ (রহঃ) ….. সুওয়াইদ ইবনু মুকাররিন (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, তার একজন দাসী ছিল। এক ব্যক্তি একদা তাকে এক চপোটাঘাত করল। তখন সুওয়াইদ (রাযিঃ) তাকে বললেন, তুমি কি জাননা যে, চেহারায় চপেটাঘাত করা নিষিদ্ধ? নিশ্চয়ই তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ যে, আমরা সাত ভাই। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় আমাদের একজনের গোলাম ব্যতীত আর কারো গোলাম ছিল না। একদা আমাদের মধ্যকার জনৈক ব্যক্তি তাকে চপোটাঘাত করল। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে মুক্ত করে দেয়ার জন্য। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪১৫৮, ইসলামিক সেন্টার ৪১৫৭)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে দাস মুক্ত করতে হবে
৬৯/১৩. নিজ পরিবারের জন্য অসচ্ছল ব্যক্তির ব্যয় করা।৫৩৬৮. আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক লোক এলো এবং বলল আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ কেন? সে বললঃ রামাযান মাসে আমি দিবসে) স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ একটি দাস মুক্ত করে দাও। সে বললঃ আমার কাছে কিছুই নেই। তিনি বললেনঃ তাহলে একনাগাড়ে দু’মাস সওম পালন কর। সে বললঃ সে ক্ষমতাও আমার নেই। তিনি বলেনঃ তাহলে ষাটজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াও। সে বললঃ সে সামর্থ্যও আমার নেই। এ সময় নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এক বস্তা খেজুর এল। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি বললঃ আমি এখানে। রাসূল বললেনঃ এগুলো সাদাকাহ কর। সে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমারচেয়ে অভাবগ্রস্তকে দিব। সেই সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, মদিনা্র প্রস্তরময় দু’পার্শ্বের মধ্যে আমাদের চেয়ে অভাবগ্রস্ত কোন পরিবার নেই। তখন নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামহাসলেন এমন কি তাঁর চোয়ালের দাঁত পর্যন্ত দেখা গেল এবং বললেনঃ তবে তোমরাই তা নিয়ে যাও। [১৯৩৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬৪)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মুসলিম দাস-দাসী মুক্ত করার পুরষ্কার
৪৯/১. ক্রীতদাস আযাদ করা ও তার গুরুত্ব।وَقَوْلِهِ تَعَالَى { فَكُّ رَقَبَةٍ أَوْ إِطْعَامٌ فِي يَوْمٍ ذِي مَسْغَبَةٍ يَتِيمًا ذَا مَقْرَبَةٍ }আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘ক্রীতদাস মুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে ইয়াতীম আত্মীয়কে অন্নদান।’’ (বালাদ (৯০) : ১৩)২৫১৭. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ কোন মুসলিম ক্রীতদাস মুক্ত করলে আল্লাহ সেই ক্রীতদাসের প্রত্যেক অঙ্গের বিনিময়ে তার এক একটি অঙ্গ (জাহান্নামের) আগুন হতে মুক্ত করবেন। সাঈদ ইবনু মারজানা (রাঃ) বলেন, এ হাদীসটি আমি আলী ইবনু হুসাইনের খিদমতে পেশ করলাম। তখন ‘আলী ইবনু হুসাইন (রাঃ) তাঁর এক ক্রীতদাসের কাছে উঠে গেলেন যার বিনিময়ে ‘আবদুল্লাহ ইবনু জা‘ফার (রাঃ) তাকে দশ হাজার দিরহাম কিংবা এক হাজার দ্বীনার দিতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তাকে মুক্ত করে দিলেন। (৬৭১৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩৫১)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৮৪/৬. আল্লাহর বাণীঃ অথবা গোলাম আযাদ করা- (সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫/৮৯)।৬৭১৫. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে লোক একটি মুসলিম গোলাম আযাদ করবে আল্লাহ্ সে গোলামের প্রত্যেকটি অঙ্গের বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন হতে তার প্রত্যেকটি অঙ্গকে মুক্ত করবেন। এমন কি গোলামের গুপ্তাঙ্গের বিনিময়ে তার গুপ্তাঙ্গকেও।[1] [২৮১৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬২৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫৮)[1] ৫ম খন্ডের ৭নং টীকা দ্রষ্টব্য। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
কোনো দাসী স্বেচ্ছায় কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে বেত্রাঘাত করা এবং বিক্রি করে দেওয়া
৮৬/৩৭. দাসী যিনা করলে তাকে তিরস্কার করা ও নির্বাসন দেয়া যাবে না।৬৮৩৯. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দাসী যখন যিনা করে আর প্রমাণিত হয়ে যায়, তখন যেন তাকে বেত্রাঘাত করে এবং তিরস্কার না করে। আবার যদি যিনা করে তাহলেও যেন বেত্রাঘাত করে, তিরস্কার না করে। যদি তৃতীয়বারও যিনা করে তাহলে যেন চুলের একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দেয়। ইসমাঈল ইবনু উমাইয়াহ (রহ.) সা‘ঈদ…..আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে লায়স (রহ.) এর অনুসরণ করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৭৬)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
৩৪. রোগীর উপর হাদ্দ কার্যকর সম্পর্কে৪৪৭৩। আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের এক দাসী ব্যভিচার করলো। তখন তিনি আলী (রাঃ)-কে ডেকে বললেনঃ হে আলী! তুমি তাকে নিয়ে যাও এবং তার উপর হাদ্দ কার্যকর করো। আমি (আলী) তার নিকট গিয়ে দেখি বিরামহীনভাবে তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কাজেই আমি তাঁর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি বললেনঃ হে আলী! তুমি কি কাজ সেরে এসেছো? আমি বললাম, আমি তার নিকট গিয়ে দেখি, তার অবিরাম রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তিনি বললেনঃ রক্ত বন্ধ হওয়া পর্যন্ত তাকে রেখে দাও, অতঃপর তার উপর হাদ্দ কার্যকর করো। আর তোমাদের ডান হাতের মালিকানায় যারা আছে (দাস-দাসী) তাদের উপর হাদ্দ কায়িম করো। শু‘বাহ (রহঃ) আব্দুল আলা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ প্রসব করার পূর্ব পর্যন্ত তাকে প্রহার করো না। তবে প্রথম বর্ণনাটি অধিক সহীহ।[1]সহীহ।[1]. আহমাদ, বায়হাক্বী, তায়ালেসী। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
দাস-দাসীদের ইসলামে ধর্মান্তরীকরণ
৩/৩১ নিজের দাসী ও পরিবার পরিজনকে শিক্ষা প্রদান।৯৭. আবূ বুরদাহ, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ধরনের লোকের জন্য দুটি পুণ্য রয়েছেঃ (১) আহলে কিতাব- যে ব্যক্তি তার নাবীর উপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপরও ঈমান এনেছে। (২) যে ক্রীতদাস আল্লাহর হাক আদায় করে এবং তার মালিকের হাকও (আদায় করে)। (৩) যার বাঁদী ছিল, যার সাথে সে মিলিত হত। তারপর তাকে সে সুন্দরভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছে এবং ভালভাবে দ্বীনি ইল্ম শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে; তার জন্য দু’টি পুণ্য রয়েছে। অতঃপর বর্ণনাকারী ‘আমির (রহ.) (তাঁর ছাত্রকে) বলেন, তোমাকে কোন কিছুর বিনিময় ব্যতীতই হাদীসটি শিক্ষা দিলাম, অথচ পূর্বে এর চেয়ে ছোট হাদীসের জন্যও লোকেরা (দূর-দূরান্ত থেকে) সওয়ার হয়ে মদিনা্য় আসত। (২৫৪৪, ২৫৪৭, ২৫৫১, ৩০১১, ৩৪৪৬, ৫০৮৩; মুসলিম ১/৭০ হাঃ ১৫৪, আহমাদ ১৯৭৩২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
দাসীর বিয়ে
৯০/১১. বিয়ে৬৯৭০. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিধবাকে তার মতামত ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না। তারা বললেন, তার অনুমতি কেমন হবে? তিনি বললেনঃ তার চুপচাপ থাকা।কেউ কেউ বলেন, যদি কোন লোক কোন বিধবা নারীর মতানুসারে বিয়ে হওয়ার ওপর দু’জন মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে কূটকৌশলের গ্রহণ করে আর বিচারকও তাদের এ বিয়েকে কার্যকর করে দেন অথচ স্বামী জানে যে, সে তাকে এর পূর্বে বিয়ে করেনি, তাহলে তার জন্য এ বিয়ে বৈধ ও কার্যকর হয়ে যাবে এবং তার জন্য উক্ত মহিলার সঙ্গে বিবাহিত জীবন যাপনে কোন বাধা নেই। [৫১৩৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯৯)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
দাস তার নারী মনিবের চুল দেখতে পারে
৩৪. কৃতদাস তার নারী মনিবের চুল দেখতে পারে৪১০৬। আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কৃতদাসকে সঙ্গে নিয়ে ফাতিমাহ (রাঃ)-এর নিকট এলেন, যে কৃতদাসটি তিনি তাকে দান করেছিলেন। ফাতিমাহ (রাঃ)-এর পরিধানে এরূপ একটি কাপড় ছিলো যা দিয়ে তিনি মাথা ঢাকলে পা দু’টিতে পৌঁছে না; আর পা ঢাকলে মাথা পর্যন্ত পৌঁছে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ অবস্থা দেখে বলেনঃ তোমার কোনো পাপ হবে না, কারণ এখানে তো শুধু তোমার পিতা ও তোমার কৃতদাস রয়েছে।[1]সহীহ।[1]. বায়হাক্বী। ইরওয়াউল গালীল হা/ ১৫৯৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তথ্যসূত্র
1. Irani, K.M. & Silver, M. (editors), Social Justice in the Ancient World, Connecticut:Greenword Press, 1995, p.87
- সূরা তাহরীম | তাফসীরে মাযহারী
- ধর্মে নারীর সম্মানের ধারণা আসলেই সম্মান নাকি বেনেভোলেন্ট সেক্সিজম?
১.২ কেন এর অনুমোদন?