রোজার উপকারিতা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

11 May, 2020

রোজার উপকারিতা

ফেসবুকে প্রতি বছর ‘অটোফ্যাগি মানেই রোজা’, এ বিষয় নিয়ে যে অপবিজ্ঞান ও ভ্রান্তবিজ্ঞান
রোজার উপকারিতা
(সিউডোসায়েন্স) সবাই ছড়িয়ে থাকে, সে ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
☞ অটোফ্যাগি হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যা শুধুমাত্র শরীরে তখনই হয় যখন আপনি মেটাবলিক স্ট্রেসে আছেন, অথবা নিউট্রিয়েন্ট ডেপ্রাইভড স্টেটে আছেন, অর্থাৎ শরীরে পুষ্টি উপাদান কম এমন অবস্থায়। এই প্রক্রিয়ায়, যেসব কোষীয় অঙ্গানু পুরনো হয়ে গেছে এবং প্রয়োজন নেই তা কোষ ভেঙ্গে ফেলে অটোফ্যাগোসোম তৈরীর মাধ্যমে। অর্থাৎ ছোট ছোট কম্পার্ট্মেন্টে ওই অঙ্গানুগুলোকে আবদ্ধ করে এরপর ভেঙ্গে ফেলে এমিনো এসিডে। এটি একধরনের কোষীয় বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়া, ও প্রয়োজনীয় পদার্থগুলো রিসাইকেল করবার প্রক্রিয়া।
☞ না খেলে অবশ্যই শরীরে মেটাবলিক স্ট্রেস তৈরী হয়, নিউট্রিয়েন্ট ডেপ্রাইভেশন হয়। তখন শরীরে ইনসুলিন কমে যায়, গ্লুকাগন বেড়ে যায়। এই গ্লুকাগন হরমোন সিগন্যাল দেয় শরীরে অন্যান্য গ্রোথ হরমোন বাড়াতে। নতুন করে বিভিন্ন প্রোটিন তৈরী হয়। এছাড়া অনেকগুলো জিন সুইচ অন হয়, যার মধ্যে mTor, TOR ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এমনকি শরীরে বেশী প্রোটিন থাকলেও অটোফ্যাগি প্রসেস বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে যেকোনো ক্যান্সার রোগী না খেয়ে থাকলে আসলে লাভ হবে কিনা তা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে কারণ তার শরীরে এমনিতেই বেশী প্রোটিন।
☞ ক্যালোরিক রেস্ট্রিকশন হল অটোফ্যাগির ফিজিওলজিক্যাল ইন্ডিউসার। রাপা হল ফার্মাকোলজিক্যাল ইনডিউসার (ঔষধ)। এছাড়া p53 জিন যদি বন্ধ করে দেয়া যায়, তাহলেও অটোফ্যাগি হয়।
** ইন্ডিউসার মানে হল যা কোনো জিনিসকে শুরু হতে উস্কে দেয়।
এছাড়া atg, Sirt-1 ইত্যাদি বহু জিন আছে যা অটোফ্যাগি স্পেসিফিক। (এখন পর্যন্ত অটোফ্যাগির সাথে জড়িত ৩২টি জিন আবিষ্কৃত হয়েছে এবং তিন ধরনের অটোফ্যাগি প্রক্রিয়াঃ মাইক্রো, ম্যাক্রো এবং চ্যাপেরন মেডিয়েটেড আবিষ্কৃত হয়েছে) অটোফ্যাগি, অর্থাৎ ক্যালোরিক রেস্ট্রিকশন বুড়িয়ে যাবার প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেয়, এটি বিভিন্ন আর্টিকেলে লেখা আছে।
কিন্তু এ বিষয়ে উল্লেখ্য, ক্যালোরিক রেস্ট্রিকশন এবং ফাস্টিং/অর্থাৎ রোযা রাখা এগুলো কিন্তু এক জিনিস নয়, তা শিক্ষিত মানুষ মাত্রই জানে।
☞ শরীরে এমিনো এসিডের তিন ধরনের বিপাক প্রক্রিয়া আছে। কিছু এমিনো এসিড লিভারে চলে যায় ও গ্লুকোনিওজেনেসিস প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন করে। কিছু এমিনো এসিড ট্রাই কার্বক্সিলিক এসিড সাইকেল (TCA cycle) এ ঢুকে ও গ্লুকোজ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। আর কিছু এমিনো এসিড নতুন প্রোটিন তৈরীতে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ রিসাইকেল হয়।
এখন যদি শরীরে এর বেশী এমিনো এসিড থাকে, তাহলে শরীর তা বর্জ্য আকারেই বের করে দিবে।
☞ এ বিষয়ে আরও উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ইয়োশিনোরি উশুমি যে অটোফ্যাগি বিষয়ক গবেষণার জন্য নোবেল পেয়েছেন, তার বিষয়বস্তু হল অটোফ্যাগি-সেলুলার রিসাইকেলিং প্রসেস অর্থাৎ মেকানিজমটির বিষয়ে গবেষণা করে। তিনি অটোফ্যাগি ও রোযা অথবা অটোফ্যাগি ও পানি না খাওয়া ইত্যাদি বিষয়ের উপরে গবেষণা করে নোবেল পাননি, এ বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। আর এ গবেষণার মূল ভিত্তি হল স্ট্রেস হলেই অটোফ্যাগি হয়, এই স্ট্রেস শরীরে হয় হয় নিউট্রিয়েন্ট (পুষ্টি উপাদান) কম হলে, ইনফেকশন হলে, হাইপোক্সিয়া হলে (অর্থাৎ শরীরে অক্সিজেন কম হলে) এবং শরীরে গ্রোথ ফ্যাক্টর কম থাকলে। আমি সূত্র হিসেবে ন্যাচার জার্নালের রিভিউ দিয়ে দিচ্ছি। এটি অনেকেই দেখতে পারবেনা কারণ ন্যাচার হল পৃথিবির সর্বশ্রেষ্ঠ জার্নাল আর এখানে সবার এক্সেস নাই। আমার পিডিএফ ডাউনলোড করা আছে কেউ এক্সেস চাইলে আমি ইমেইল করে দিতে পারি।
☞ আরেকটি অপবিজ্ঞান যা ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকে, তা হল ক্যান্সারকে নাকি অটোফ্যাগি প্রতিহত করে!  
ক্যান্সার অথবা আলঝেইমার রোগের মূল ভিত্তি হল অধিক গ্রোথ। আলঝেইমারে প্রোটিন একিউমুলেশন হয়। অর্থাৎ অনেক প্রোটিন জমা হয়। এখন গবেষণার মূল বিষয়বস্তু হল টার্গেটেড অটোফ্যাগি কীভাবে করা যায়, অর্থাৎ শরীরের একটা জায়গায় ক্যান্সার অথবা আলঝেইমার হচ্ছে ব্রেইনে, তাহলে ওই জায়গার কোষগুলোকে কীভাবে সিগন্যাল দিয়ে সেখানে অটোফ্যাগির মাধ্যমে সেই প্রোটিনগুলোকে ধ্বংস করা যায়। সেক্ষেত্রে তৈরী হওয়া অতিরিক্ত এমিনো এসিড রিসাইকেল হবে, না শরীর বের করে দিবে তা শরীর সিদ্ধান্ত নিবে। কেউ যদি রোযা/উপবাস করে ভাবেন যে আমি ক্যান্সার থামিয়ে ফেললাম, তাহলে খুবই ভুল কথা, কারণ এসব রোগের চিকিৎসার জন্য সারা শরীরে অটোফ্যাগি না বরং টার্গেটেড অটোফ্যাগি প্রয়োজন।
এ বিষয়ে আরও উল্লেখ্য, ন্যাচারের রিভিউটিতে দেখা যাচ্ছে, অনেক প্রি-ম্যালিগন্যান্ট কোষ (অর্থাৎ যারা পুরো ম্যালিগন্যান্ট হয়ে যাবে যাবে ভাব) এমন কোষগুলো অনেকসময় অটোফ্যাগি ব্যবহার করে জিনোটক্সিক যে স্ট্রেস থাকে ক্যান্সারে, তাকে বাইপাস করে একেবারে ক্যান্সার ছড়াতে সাহায্য করে। অর্থাৎ অটোফ্যাগির নেগেটিভ ব্যবহারও শরীরে আছে। বিজ্ঞানের ভাষায় বলে অটোফ্যাগির যেমন এন্টি-টিউমোরাল ভূমিকাও আছে, প্রোটিউমোরাল ভূমিকাও আছে। অর্থাৎ কখনো কখনো ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, কখনো ক্যান্সার বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় ক্যান্সার কোষগুলো অটোফ্যাগির মাধ্যমে নতুন জীবন লাভ করে ও শরীরের আরও ক্ষতি করে। কিন্তু এ বিষয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
আলঝেইমার, পার্কিনসন, হান্টিংটন, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে অটোফ্যাগি দিয়ে আসলেই চিকিৎসা (টার্গেটেড থেরাপি) সম্ভব কিনা বা এর ভূমিকা কী এ বিষয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তবে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ, অর্থাৎ আলঝেইমার, হান্টিংটন, পার্কিনসনে এখনও অটোফ্যাগির ক্ষতিকারক প্রভাব পাওয়া যায়নি। [সূত্র ২ দ্রষ্টব্য]
☞ অনেকসময় ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন অথবা অটোইমিউন রোগগুলোর জন্য অটোফ্যাগির ভালো ভূমিকার কথা ফেসবুকে অনেকে ছড়িয়ে থাকে। এর ভেতরে অনেক ভুল আছে।
এ কথা সত্য, যে শরীরে ইনফেকশন হলে অটোফ্যাগি প্রক্রিয়ায় শরীর অনেক সময় তা তাড়িয়ে থাকে। কিন্তু আমরা জানি ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস ক্রমাগত মিউটেশনের মাধ্যমে নিজেদের জিনোমে পরিবর্তন আনে। এভাবে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া এই অটোফ্যাগি প্রক্রিয়া নকল অথবা বাইপাসের মেকানিজম অর্জন করে ফেলে। তখন কিন্তু অটোফ্যাগি কোনো সুস্থতার গ্যারান্টি দিতে পারেনা, বরং তখন ট্রেডিশনাল ট্রিটমেন্টেই যেতে হবে। [সূত্র ২ দ্রষ্টব্য]
☞ ক্রমাগত না খেয়ে থাকা আসলেই কি সবসময় অটোফ্যাগি চালাতে থাকে? না, বরং এতে শরীরেরই ক্ষতি হয় বেশী। ফাস্টিং-ফিডিং সাইকেলের একটি ভারসাম্য থাকতে হবে। অটোফ্যাগি পরিমাপক বিষয়ক যে মাউস মডেলগুলোর উল্লেখ আছে, সেখানে কিন্তু পানি খাওয়ার কথা বলা আছে। নিউট্রিয়েন্ট রেস্ট্রিকশন এবং ওয়াটার রেস্ট্রিকশন কিন্তু এক কথা নয়। সূত্র নং ৩ এ স্পষ্ট লেখা আছে, 
“The most potent known physiological inducer of autophagy is starvation. It is the most rapid and easiest method for stimulating the induction of the autophagy machinery in mice. Mizushima and colleagues measured an autophagy response in mice deprived of food for 24 or 48 h. During starvation experiments, mice should have water ad libitum and their temperature and blood pressure checked periodically. Although autophagy is regulated differently among organs, autophagy is still induced in most organs in response to nutrient starvation. However, the appropriate time of starvation should be determined empirically because autophagic responses to various stimuli or in disease states can differ between organs.” 
অর্থাৎ পানি খেতে হবে। এ বিষয়ে আরও উল্লেখ্য, মানুষের মধ্যে এই অটোফ্যাগি পরিমাপক গবেষণা এখনও করা হয়নি সেভাবে। এখন পর্যন্ত মানুষের মধ্যে (টিস্যু অথবা ব্লাড স্যাম্পল থেকে) অটোফ্যাগি পরিমাপের সঠিক মেথড/প্রটোকল নেই। [সূত্র ৫ দ্রষ্টব্য] কাজেই কেউ এখনও বলতে পারেনা মানুষের ভেতরে কী করলে কী হবে।
☞ ভালো অটোফ্যাগি আছে, মন্দ অটোফ্যাগিও আছে। [সূত্র ৬ দ্রষ্টব্য] এটি নির্ভর করে হোস্টের শারীরিক অবস্থা কেমন তার উপর।
রোজার উপকারিতা
রোজার উপকারিতা

শেষ কথাঃ শরীরের বর্জ্য পদার্থ পানির সাথেই কিডনী ছেঁকে বের করে দেয়। পানি সারাদিন না খেয়ে থাকাটা অটোফ্যাগি প্রসেস না। অটোফ্যাগির মাধ্যমে শরীরের যেটুকু এমিনো এসিড লাগবে তা শরীর রেখে দিবে, যা লাগবেনা তা বের করে দিবে। আর ক্যান্সার ও অন্যান্য অসুখের মূল বিষয়টিই হল অধিক গ্রোথ। জাংক প্রোটিন তো বের করে দিতেই হবে সেক্ষেত্রে। ড্রাই ফাস্টিং অর্থাৎ পানি ছাড়া থাকা ১-৩ দিনের বেশী অত্যন্ত ক্ষতিকারক। কেউ কেউ ধারণা করে থাকে, শরীরের ভেতরের রোগজীবাণু পানি পায়না দেখে মরে যায়, তাই এ ধরনের ড্রাই ফাস্টিং অত্যন্ত উপকারী। বাস্তবতা হল, শরীর নিজের পানি নিজে প্রস্তুত করতে থাকে এ সময়, বিভিন্ন ফ্যাট বার্নিং বিক্রিয়ার মাধ্যমে, কাজেই রোগজীবাণু পানি না পাবার বিষয়টি সত্য নয়। সারাদিনে শরীর বিভিন্ন মেটাবলিক রিয়েকশনের মাধ্যমে প্রায় ১ লিটার পর্যন্ত পানি প্রস্তুত করতে পারে। কিন্তু প্রতিদিন ড্রাই ফাস্টিং এর ফলে ডিহাইড্রেশন হয়ে যায়। এবিষয়ে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন আছে। এখন পর্যন্ত বেশীরভাগ পেপারই শুধুমাত্র ক্যালরিক রেস্ট্রিকশনে সীমাবদ্ধ, ওয়াটার রেস্ট্রিকশনের বিষয়টি এড্রেস করা হয়নি। নিউট্রিয়েন্ট ডেপ্রাইভেশন-ক্যালোরিক রেস্ট্রিকশন এর সাথে ওয়াটার রেস্ট্রিকটেড ফাস্টিং (অর্থাৎ রোযা) কে মিলাবেননা দয়া করে। বিজ্ঞান বিজ্ঞানের জায়গায় সুন্দর, ধর্ম ধর্মের জায়গায়। দুইয়ে মিলালে সিউডোসায়েন্স হয়ে যায় যা সবার জন্যই খারাপ। আর সবচেয়ে বড় কথা, রিসার্চ পেপার ও জার্নাল দেখে কথা বলা উচিত। কোনো ব্লগ অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার কথায় কারোরই বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত না।
ধর্মে মূলকথা হল বিশ্বাস। চলুন আমরা স্রষ্টাকে খুশি করতে রোযা করি যা একটি ফরয ইবাদত। কোনো ধরনের ভ্রান্ত বিজ্ঞানে অথবা ফেসবুকের ভ্রান্ত জ্ঞানে উদ্বুদ্ধ হয়ে নয়। ধন্যবাদ।

(এই লেখার লেখিকা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী, নাস্তিক নন, ইসলামের রীতিনীতি তিনি শ্রদ্ধার সাথেই মেনে চলার চেষ্টা করেন। অবশ্যই নাস্তিকতা প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি লেখাটি লিখেননি। লেখাটি তার অনুমতি সাপেক্ষে তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। একজন মুসলিম হয়েও অন্যান্য মুসলিমদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছেন, তার এই সততায় মুগ্ধ হয়ে আমরা তাকে শ্রদ্ধা জানাই।)
সূত্র সমূহঃ
কানাডা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ (রাশিয়া বৃহত্তম) এবং সেখানে ৬টি ভিন্ন টাইম জোন রয়েছে। এর অর্থ এই যে, সূর্য সমগ্র দেশ জুড়ে একই সময়ে উদয় হয় না। এটি আমাদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার মনে হলেও, আব্রাহামিক ধর্মগুলি সমতল পৃথিবীর তত্ত্বের উপর বিশ্বাস অনুমোদন করে। পৃথিবীর আকার যে একটি oblate spheroid তা আমরা এখন জানি। যার ফলে, সারা পৃথিবীর সব এলাকা প্রতিদিন একই পরিমাণ সূর্যরশ্মি উপভোগ করে না। সূর্য প্রতিনিয়ত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তকে আলোকিত করে যায় এবং আরশের নিচে গিয়ে সেজদা দেবার সময় সুযোগ পায় না। এই বছর দক্ষিণ গোলার্ধে বসবাসরত মুসলিমরা তুলনামূলক-ভাবে সহজ রমজান উপভোগ করবে, উত্তর মেরুর কাছাকাছি বসবাসরত মুসলমানদের হবে ঠিক তার উল্টো। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসকারী একজন ব্যক্তিকে দৈনিক ১২ ঘণ্টার জন্য রোজা রাখতে হবে এবং নরওয়েতে বসবাসরত একজন ব্যক্তির ২০ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে। কিছু মুসলমান সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত মেনে রোজা রাখে এবং অন্যেরা মক্কার সময় মেনে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় নরওয়েতে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য নির্ধারিত কোনও নিয়মের বিধান না থাকায় এই সমস্যাটি কীভাবে মোকাবেলা করা যায়, তার বিষয়ে মুসলমানরা একমত নন। আবার গ্রীষ্মকালের বদলে, শীতকালে রমযান মাস পড়লে ঠিক তার উল্টোটা ঘটত। ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা কি অঞ্চলভেদে সময়ের পার্থক্য সম্পর্কে জানতেন? তিনি কি জানতেন যে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশাল স্থলভূমি রয়েছে যেখানে একদিন সুবিশাল জনগোষ্ঠী গড়ে উঠবে?
রমজানের রোজা ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়টি। মুসলমানদের কাছ থেকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ এবং (স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে) যৌনসংগম বিরত থাকার অভ্যাস অনুশীলন করা এবং পাপপূর্ণ আচরণ এড়ানোর আশা করা হয়। রমজানের শেষ হয় ঈদের চাঁদ দেখার মধ্যে দিয়ে। যদিও চাঁদের অবস্থান আগে থেকেই নির্ণয় করা যেতে পারে, তবু চাঁদকে মুসলমানদের নিজেদের খালি চোখে দেখেই ঈদের দিন ঠিক করতে হবে। হয়ত, দেখা গেল যেদিন চাঁদ দেখার কথা সেদিন আকাশ মেঘলা এবং খালি চোখে চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। পরিশীলিত টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বা চাঁদের অবস্থান নির্ণয় করে ঈদের দিন ধার্য করা কি তখন সমুচিত? আরও বলা হয় যে শয়তানকে এক মাসের জন্য শৃঙ্খলবদ্ধ করা হয় এই পবিত্র রমজানের মাসে। রমজান মাসে তাই বলে কি অপরাধ এবং দুর্নীতি ঘটছে না? রমজান মাসে সংগঠিত অপকর্মের দায়ভার কে নেবে? আবার প্রতি বছর রমজানের শেষে শয়তানকে মুক্ত বিহঙ্গের মত ছেড়ে দিয়ে মহান আল্লাহ্‌ কি আমাদের সঙ্গে “ব্যাটম্যান আর জোকার” খেলছেন?
অতঃপর, রোজা পালনের এই অনুশীলন থেকে সবচেয়ে উপকৃত কে হন? লাভবানদের বেশির ভাগই দোকান অথবা ব্যবসার মালিক, যাদের ব্যবসা রমজানের ফলে বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে, হিন্দু হোটেলের জন্য এটি বছরের সবচেয়ে ব্যস্ততম সময়। ছাত্রদের মূল্যবান ক্লাস সময় থেকে ছুটি দেয়ার কারণে শিক্ষকরা পরিবারের সাথে দীর্ঘ একটা ছুটি কাটানোর সুযোগ পায়। দানের অর্থে কিছু বড় মসজিদের ইমামদের কপাল খুলে যায় ঈদের। দরিদ্র মানুষদের জাকাতের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য প্রদানের মধ্য দিয়ে আর রোজা রেখে গরীবদের কষ্ট অনুভব করে বিত্তবান মুসলমানরা। গরীব লোকরা কেন বাকি ১১ মাস অবহেলার শিকার হন?
রোজার উপকারিতা
রোজার উপকারিতা

কিছু রোজা পালনকারী মুসলমান রমজান মাসে দিনের বেলা অন্যদের খেতে দেখলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শরিয়ত বিরোধী এই সকল ব্যক্তিদের বাড়ির বাইরে প্রকাশ্যে খাবার খাওয়া বা পান করার অপরাধের বিরুদ্ধে দলগত ভাবে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন এই মুসলিম সমাজকর্মীরা। এ ছাড়া, কিছু মুসলিম দেশেও, পবিত্র মাস চলাকালীন রেস্তোরাঁগুলি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়। আমার কিছু মুসলিম দেশে গরম আর নরমের নিয়মের মিশ্রণে এক ধরনের বৈজ্ঞানিক যুক্তিসঙ্গত অনুশাসন তৈরি করা হয় যেমনটা দেখা যায় বাংলাদেশে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না এড়াতে বুরকার মত কালো আচ্ছাদন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয় রেস্তোরাঁগুলি। এতে করে “খারাপ” মুসলমানরা বাইরে খেতে পারেন এবং সেই সঙ্গে সমাজের অবক্ষয় ঘটে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা মুসলিম দেশে থাকলে কেন অন্যের খাদ্য খাওয়ার কারণে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পান? আবার তারাই আবার পশ্চিমা দেশে গিয়ে কীভাবে সুন্দর করে রমজানকে ব্যক্তিগতভাবে উদযাপন করেন?
ইকনমিক্সের চাহিদা আর যোগানের নিয়ম মেনে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এই মাসে লোকজনের ক্রয় কমিয়ে দেবার কথা। কিন্তু অধিকাংশ মধ্যম এবং উচ্চ-শ্রেণীর পরিবারের মধ্যে প্রায়ই বিপরীত প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী আরও বেশি পরিমাণে কিনতে দেখা যায় তাদের অনেককেই এবং অপচয় ও অপব্যয়ে মেতে ওঠেন। অনেকেই দাবি করেন যে রোজার মাসে তাদের শরীরের ওজন বেড়ে গেছে। ফ্রিজগুলি স্টক করে স্বেচ্ছায় সারাদিন অনাহারে থেকে পরে প্রচুর খাবার খেয়ে রোজা ভাঙ্গাতে কি ক্ষুধার্ত ও গৃহহীনদের উপহাস করা হয়না?
যখনই আমি রমজানের কথা মনে করি, আমার মনে দুটি স্মৃতি চলে আসে। প্রথমত, সুস্বাদু খাবারের বিশাল আয়োজন যার বেশিরভাগ তেলেভাজা ছিল। পাল্প ফিকশন থেকে জুলস যদি কখনও বাংলাদেশে আসেন, তবে তিনিও ভাজা খাবারের প্রেমে আটকে পড়তে বাধ্য। কিন্তু যতই সুস্বাদু, হোক না কেন ১২ ঘণ্টার বেশি রোজা পালনের পরে ভাজা খাবারের এই সমারোহ কারো স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়। পানিশূন্যতা দূর করতে তখন শরীরের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। কিন্তু ইদানীং অনেক মুসলমানদের দেখা যায় বিভিন্ন সন্দেহভাজন ও ছদ্ম-বিজ্ঞানের উৎস হতে রমজানের রোজা রাখার উপকারিতা সম্পর্কে সক্রিয়ভাবে প্রচার করছে। অনেক সময় পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক দর্শনকে ভুল এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে ধর্মপ্রাণ সরল মুসলমানদের কাছে। এই ধরনের ব্যাখ্যা আসলে বৈজ্ঞানিক হচ্ছে না বৈজ্ঞানিক উপস্থিত করতে চান কারণ বিজ্ঞানের গ্রহণযোগ্যতা সবার কাছে আছে। অনেক সময় অসুস্থ লোকেরাও বাধ্য হয় রোজা রাখতে সমাজ ও পরিবারের চাপে যা তাদের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণ হতে পারে। ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে ২0 লাখেরও বেশি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ৮ লাখেরও বেশি নিয়মিত ডায়ালিসিস প্রয়োজন (২০১৭)। খাবারের দোকান বন্ধ করে আর মানসিক চাপ প্রয়োগ করে অসুস্থ লোকের স্বাস্থ্য বিপন্ন করাটা কি গ্রহণযোগ্য?
রমজান থেকে আমার উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলা দ্বিতীয় জিনিস হল সাইরেনের বধির করা শব্দ যা প্রতিদিন ভোর এবং সন্ধ্যায় শুনতে বাধ্য হয়েছিলাম। মসজিদ থেকে ভেসে আসা সে উচ্চস্বরের শব্দে হাসপাতালের রোগীদের ও মানুষের জন্য কোনও সমবেদনা নেই। একজন মানুষ যিনি নিজেকে সারাদিন ক্ষুধার্ত রেখেছেন, সাইরেনের তীব্র শব্দ কানে না গেলে কি তিনি সময়মত খাবার খেতে বসবেন না?
সবশেষে আরেকটি প্রশ্ন বিবেচনা করা উচিত যে, মানুষ যদি মঙ্গলে বা অন্য দূরবর্তী গ্রহের উপর বসতি স্থাপন করে তাহলে কেমন হবে? প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলস্বরূপ, যদি মানুষ মঙ্গলে স্থাপনে সক্ষম হয় তবে তা রোজা পালনকারীদের জন্য খুব একটা অসুবিধের সৃষ্টি করবে না কারণ মঙ্গল গ্রহটি তার নিজ অক্ষে পৃথিবীর চেয়ে মাত্র ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ঘুরে। যেহেতু মঙ্গল গ্রহ থেকে খালি চোখে পৃথিবীর চাঁদ দেখা যায় না, তাহলে কি মঙ্গলে মাইগ্রেট করা মুসলমানরা রোজা-ঈদ উৎসব পালন করবে না? আবার মঙ্গল পার হয়ে আমরা যদি কোনও সুপার আর্থে বসতি স্থাপন করতে পারি আর সেটা যদি ২৪ ঘণ্টার বদলে ৪৮ কিংবা আরও বেশি সময় নিয়ে নিজের অক্ষের উপর ঘুরে আর যেখানে আমাদের সূর্যের আলো পৌঁছায় না তখন কি আরও বেশিক্ষণ রোজা রাখতে হবে?
আজকের দিনে যে ফ্যানফেয়ারের সাথে ইসলামের অনুসরণ করা হয় তা কি চিরটা কাল চলবে সেটা অন্য দিনের বিতর্কের জন্য তুলে রাখছি। পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় এবং পৃথিবী সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে এই সত্যের সাথে বেশিরভাগ ধার্মিক পরিচিত এবং ধর্মগুরুরাও এটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে, বিবর্তনের তত্ত্ব সত্ত্বেও, ধর্ম এখনও পদচারণ অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস যদি আমাদের কিছু শেখায়, বাস্তবতা থেকে পালানো যায় না। একসময়কার পরাক্রমশালী, গ্রীক, রোমান ও মিশরীয় দেবদেবীরা কালের অবর্তমানে হারিয়ে গেছে।

১ম প্রশ্নঃ নোবেল পুরস্কার আসলে কোন বিষয়ে পেয়েছেন ইওশিনোরি?

☞ ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে ইওশিনোরিকে অটোফ্যাগির মেকানিজম আবিষ্কারের জন্য। নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী [1] তিনি অটোফ্যাগির মেকানিজম আবিষ্কার করেছেন। কোথায়? বলা বাহুল্য, তিনি ইস্ট কোষে সেই মেকানিজম আবিষ্কার করেছেন। ইস্ট হল সেই ছত্রাক, যা আমরা পাউরুটি তৈরীতে ব্যবহার করি। তিনি প্রথম দেখেছিলেন ল্যাবরেটরীতে মিডিয়াতে (অর্থাৎ, পেট্রিডিশে যে গ্রোথের জন্য মিডিয়া ব্যবহৃত হয়) সেখানে নিউট্রিয়েন্ট কনটেন্ট কিছুটা কমিয়ে দিলে ইস্টে কিছু অতিরিক্ত কোষ গহবরের মত তৈরী হয়। তিনি বলেছিলেন এই গহবরগুলো সাধারণ কোষ গহবর নয়, এগুলো অটোফ্যাগোসোম, অর্থাৎ ইস্ট কোষ নিজের অপ্রয়োজনীয় অঙ্গানুগুলো ভেঙ্গে ওই গহবরে নিয়ে রিসাইকেল করে এমিনো এসিডে ভেঙ্গে আবার কোষে নিচ্ছে নতুন কাজে ব্যবহার করতে।
তিনি এই প্রক্রিয়ার উপরে গবেষণা করে, ইস্টের কোন জিন দায়ী এবং কোন সিগন্যালে কোন জিন কিরকম প্রোটিন তৈরী করে এই কাজটি করে সেগুলো আবিষ্কার করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
ইস্ট কোষ রোযা করেনা। কাজেই রোযার উপর গবেষণা করে ২০১৬ তে ওশুমি নোবেল পেয়েছেন, ব্যাপারটি চরমতম মিথ্যা।

২য় প্রশ্ন ও দাবীঃ ২০১৬ এর কাজে নোবেল হয়েছে কাজেই এর আগের কোনো পেপার বিশ্বাস করা যাবেনা।

☞ নোবেল কমিটির সারসংক্ষেপ অনুযায়ী ওশুমির চারটি পেপারে চারটি কাজের উপর মূলত নোবেল দেয়া হয়েছে। এই চারটি পেপার হলঃ
1. Takeshige, K., Baba, M., Tsuboi, S., Noda, T. and Ohsumi, Y. (1992). Autophagy in yeast demonstrated with proteinase-deficient mutants and conditions for its induction. Journal of Cell Biology 119, 301-311
2. Tsukada, M. and Ohsumi, Y. (1993). Isolation and characterization of autophagy-defective mutants of Saccharomyces cervisiae. FEBS Letters 333, 169-174
3. Mizushima, N., Noda, T., Yoshimori, T., Tanaka, Y., Ishii, T., George, M.D., Klionsky, D.J., Ohsumi, M. and Ohsumi, Y. (1998). A protein conjugation system essential for autophagy. Nature 395, 395-398
4. Ichimura, Y., Kirisako T., Takao, T., Satomi, Y., Shimonishi, Y., Ishihara, N., Mizushima, N., Tanida, I., Kominami, E., Ohsumi, M., Noda, T. and Ohsumi, Y. (2000). A ubiquitin-like system mediates protein lipidation. Nature, 408, 488-492
এই চারটি কাজই ইস্ট কোষের উপরে করা, এবং সর্বশেষ পাবলিকেশন ২০০০ সালে করা। খেয়াল করুন প্রথম পাবলিকেশন ১৯৯২তে, শেষটি ২০০০ এ। সাধারণত একজন বিজ্ঞানীর অনেকবছর ধরে করা অনেক আগের কাজকে নোবেল দিয়ে সম্মানিত করা হয়। এমন না যে যেই বছরে করেছেন সেই বছরে নোবেল দিয়ে দিল। এত সহজ না ব্যাপারটা।

তৃতীয় প্রশ্নঃ তাহলে আমরা কেন জানি যে রোযার ওপর গবেষণা করে ওশুমি নোবেল পেয়েছেন?

☞ এই গুজবের শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে, প্রখ্যাত ফেসবুক সেলিব্রিটি আরিফ আর হোসাইন একটি ভ্রান্ত স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে যে রোযাকে মডার্ন সায়েন্স বলে অটোফ্যাগি। সেই থেকেই চলছে। আরিফ আর হোসাইনও কতগুলো অসমর্থিত ওয়েবসাইট থেকে বানিয়ে লেখাটা লিখেছেন কিছু লাইক পাবার আশায়। কোনো রিসার্চ আর্টিকেলের উপর ভিত্তি করে লিখেননি। আর বাংলাদেশের কিছু আলতু ফালতু অনলাইন পোর্টালও এটি কপি করে দিয়েছে হিট পাবার আশায়। অথচ রোযার সাথে অটোফ্যাগির এখন পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক নেই। অটোফ্যাগি শরীরে হয় চারটি কারণেঃ
১। নিউট্রিয়েন্ট ডেপ্রাইভেশন (অর্থাৎ পুষ্টি উপাদান কম হলে)
২। হাইপোক্সিয়া (অর্থাৎ শরীরে অক্সিজেন কম হলে)
৩। ইনফেকশন (শরীরে ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে
৪। শরীরে গ্রোথ ফ্যাক্টর কম হলে (অর্থাৎ ধরেন বিভিন্ন ধরনের গ্রোথ প্রোটিন/হরমোন কম হলে)
বলতে গেলে শরীরে স্ট্রেস থাকলে। এখন এর জন্য সব জার্নাল আর্টিকেলেই বলা আছে, ক্যালরিক রেস্ট্রিকশন/নিউট্রিয়েন্ট রেস্ট্রিকশনের কথা। আপনি কম খাবেন অথবা খাওয়া বন্ধ রাখবেন, আর্টিফিসিয়ালি বডিতে স্ট্রেস দিবেন, অটোফ্যাগি হবে। কিন্তু এর সিস্টেম আছে। পানি ছাড়া সেটা হবে কি হবেনা তা নিশ্চিত নয়। স্বীকৃত সব মাউস মডেলে পানি খেতে দেয়।
আর অটোফ্যাগির ফলে কী সুবিধা-অসুবিধা হল না হল তা হোস্ট বডির উপর নির্ভর করে। এখন ধরেন আপনি সুস্থ আমি অসুস্থ। আপনার উপর অটোফ্যাগির প্রভাব আর আমার উপর অটোফ্যাগির প্রভাব এক নাও হতে পারে।
আর সব রোগেই অটোফ্যাগি যে ভালো প্রভাব ফেলে তাও না।

চতুর্থ দাবীঃ রমযানে ওয়েট লস হয় তাই রোযা করি। আপনি কী উদ্দেশ্যে এসে পোস্ট দেন এসব?

☞ গত কিছুদিন বিভিন্ন গ্রুপে আমি দেখেছি অনেকে ওজন কমাতে রোযা করছেন। আমি তাই দেখেই মনে করলাম এটি আসলেই সঠিক কিনা দেখি। পেপার ঘেঁটে দেখলাম রমযানে কমলেও রমযান শেষে ২-৫ সপ্তাহের মধ্যে আবার শরীর যে কি সেই আগের মত হয়। 
☞ আসলেই কি রোজার উপকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত ও প্রমাণিত?
ফেসবুকে তর্ক বিতর্ক করতে গেলে আমার নিজেরও অনেক কিছু শেখা হয়। এই যেমন গতকাল রোযা আর অটোফ্যাগি যে এক জিনিস নয় এ বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দেশ বিদেশের বিভিন্ন জার্নাল পড়ে লেটেস্ট বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো জানা ও লেখা হয়েছে। গতকাল অটোফ্যাগি আর রোযা যে এক জিনিস নয় এ বিষয়ে দুইটি পোস্ট দেবার পরে অনেকে আমাকে মেসেজ দিয়েছেন আমি যেন রোযার উপকারিতা আছে কিনা তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নিয়ে লিখি।
এখানে কিছু বিষয় প্রথমে বলে নেয়া ভাল। বর্তমানে যেকোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা ভ্যালিড কিনা তা বলা যায় সেই গবেষণা যে জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তার ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর কত (অর্থাৎ সহজ ভাষায় এক ধরনের র‍্যাঙ্কিংই ধরে নেন) এবং পিয়ার রিভিউড কিনা (অর্থাৎ একটি গবেষণা একটি জার্নালে প্রকাশিত হবার আগে একই ধরনের গবেষণারত অন্য গবেষকদের কাছে আর্টিকেলটি পুনরায় পড়বার জন্য পাঠানো হয়। একে বলে পিয়ার রিভিউ প্রসেস। এই রিভিউ পার করতে পারলেই জার্নালটি প্রকাশিত হয়)
তো রোযার উপকারিতা বিষয়ে সারা পৃথিবীতে গবেষণা হয়েছে খুবই কম। যেকোনো গবেষণাই গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ সায়েন্টিফিক্যালি ভ্যালিড হতে গেলে তার স্যাম্পল সাইজ বড় থাকতে হবে। স্টাডি ডিজাইন এমনভাবে হতে হবে যেন বায়াস না থাকে। স্ট্যাটিস্টিক্যাল প্যারামিটারগুলো সঠিক থাকতে হবে। সাধারণত এধরনের কোয়ান্টিটেটিভ গবেষণা (যা স্ট্যাটিস্টিক্স/পরিসংখ্যান দিয়ে পরিমাপ করা হবে) সেগুলোকে রিভিউ করবার একটি বিশেষ পদ্ধতি আছে। তার নাম হল সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা এনালাইসিস। আমি অক্সফোর্ডে এসে পৌঁছাবার পর থেকে প্রথম ক্লাস থেকেই আমাদের এই সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা এনালাইসিস এর উপরে ক্লাস নেয়া হয় যেন আমরা যেকোনো বিষয়ে সর্বশেষ গবেষণা রিসার্চে যোগ করে, সব গবেষণার কিউমুলেটিভ ইফেক্ট নিয়ে এরপরে একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারি। সবচেয়ে বেশী স্বীকৃত হল ককরেন রিভিউ। মেটা এনালাইসিস হল সিস্টেমেটিক রিভিউ এর একটি অংশ। এই মেটা এনালাইসিস সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য কারণ যেসব গবেষণাপত্রে সব কিছু ঠিক আছে, এই যেমন স্টাডি ডিজাইন, পপুলেশন সাইজ, রেলিভেন্স, অন্য আর সব প্যারামিটার, সেগুলোকে এক করে নির্দিষ্ট weightage দিয়ে এরপর কিউমুলেটিভ ইফেক্ট দিয়ে হিসাব করা হয়। আমরা এখন চারিদিকে evidence based medicine অথবা evidence based healthcare নিয়ে কথা বলি, এর মূলভিত্তি হল Systematic Review এবং Meta Analysis.
যাই হোক, রোযার মানুষের উপরে গবেষণা নিয়ে একটিই সিস্টেমেটিক রিভিউ পাওয়া গেছে, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন জার্নালে। অতীতে বিভিন্ন গবেষণায় রোযার ভালো প্রভাব এবং মন্দ প্রভাব দুটোই দেখা গেলেও, এই মেটা এনালাইসিস এর মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছে অতীতের আরও ৩০টি স্টাডির কিউমুলেটিভ ইফেক্ট তেমন নয়, অর্থাৎ শরীরের উপর রোযার ভালো ও মন্দ কোনো প্রভাবই নেই, সম্পূর্ণ নিউট্রাল। রোযার সময় ওজন কিছুটা কমলেও রোযা শেষে আবার সব আগের মত হয়ে যায়। শুধুমাত্র পূর্ব এশিয়ানদের প্রচুর ওয়েট লস হয় এবং পশ্চিম এশিয়ান ও আফ্রিকানদের সামান্য ওয়েট লস হয়। ইউরোপিয়ানদের তেমন হয়ইনা রোযার সময়। এই ওয়েট লস রোযার মাসে কেন হয়ে থাকে সেই কারণগুলোকে কয়েকভাবে বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছেন।
১। রোযা কত ঘন্টা করা হচ্ছে এবং তাপমাত্রা
২। কয়বার খাওয়া হচ্ছে
৩। খাদ্যাভ্যাস, খাবারের মান ও পরিমাণ
৪। পানি কতটুকু খাওয়া হচ্ছে
৫। ঘুমানোর সময় এবং ধরন
৬। শারীরিক পরিশ্রম
৭। বয়স
রোযার মাস শেষে মানুষের ঘুমের প্যাটার্ন পরিবর্তিত হয়ে যায়, যার ফলে শরীরে সিরাম লেপটিন, ইনসুলিন, কর্টিসল ইত্যাদির মাত্রা পরিবর্তিত হয়, তাই খাদ্যাভাস আবার পরিবর্তিত হয়ে যায় এমনটাই বলেছেন বিজ্ঞানীরা।
কাজেই রোযার মাধ্যমে শারীরিক বেনিফিট পাবার চেয়ে কনসিস্টেন্ট লাইফস্টাইল মেইন্টেইন করাটা বেশী জরুরী। রোযা রাখতে কেউ নিষেধ করছেনা, তবে রোযার সময় যে রুটিন নিয়ম তা যদি সারা বছর মেইন্টেন করা যায়, তাহলেও ওজন কম রাখা সম্ভব এবং বেশী ওজনের ফলে শরীরের যত খারাপ অসুখ আছে যেমন কোলেস্টেরল, ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেসার, হার্টের অসুখ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শুধু এক মাস রোযা করে শরীরের তেমন সিগনিফক্যান্ট বেনিফিট নেই।
তবে আমি এও স্বীকার করছি, এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। শরীরে রোযার উপকারিতা নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি।
ধন্যবাদ।

(এই লেখার লেখিকা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী, নাস্তিক নন, ইসলামের রীতিনীতি তিনি শ্রদ্ধার সাথেই মেনে চলার চেষ্টা করেন। অবশ্যই নাস্তিকতা প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি লেখাটি লিখেননি। লেখাটি তার অনুমতি সাপেক্ষে তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। একজন মুসলিম হয়েও অন্যান্য মুসলিমদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছেন, তার এই সততায় মুগ্ধ হয়ে আমরা তাকে শ্রদ্ধা জানাই।)
সূত্রসমূহঃ
১। https://www.cambridge.org/…/3791BAE2A6C52218994B3BEF291BF6EE [সম্পূর্ণ পেপারটি যারা দেখতে চান তারা লেখিকাকে ইমেইল করতে পারেন]
২। Effect of Ramadan Fasting on Weight and Body Composition in Healthy Non-Athlete Adults: A Systematic Review and Meta-Analysis [এটি ২০১৯ সালের সিস্টেমেটিক রিভিউ। এখানেও একই কথা বলা আছে। রমযানে ওজন কিছু কমলেও ২-৫ সপ্তাহের মধ্যে শরীর আবার আগের মত হয়ে যায়। এই গবেষণাপত্রে কনফাউন্ডিং ফ্যাক্টর এডজাস্ট করা হয়নি যেকারণে জাতিভেদে কতটুকু সুফল-কুফল তাও বোঝা কঠিন]

(এই লেখার লেখিকা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী, নাস্তিক নন, ইসলামের রীতিনীতি তিনি শ্রদ্ধার সাথেই মেনে চলার চেষ্টা করেন। অবশ্যই নাস্তিকতা প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি লেখাটি লিখেননি। লেখাটি তার অনুমতি সাপেক্ষে তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। একজন মুসলিম হয়েও অন্যান্য মুসলিমদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছেন, তার এই সততায় মুগ্ধ হয়ে আমরা তাকে শ্রদ্ধা জানাই।)

তথ্যসূত্র


No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ