(১) শ্রীরাকৃষ্ণদেব জাতিভেদ মানতেন না এমন গল্প শোনা যায়।কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলে।জাতিভেদ না মানার প্রমাণ হিসাবে নীচ জাতি কামার বউকে ভিক্ষেমা হিসাবে দেখানো হয়।প্রতিবেশী নিঃসন্তান ধনী কামার বউ গদাধরকে ছোট থেকে স্নেহ করতেন ও কোলে পিঠে মানুষ করেছেন।তাই বালক গদাধর কামার বউয়ের স্নেহের টানে বাধা পড়েছিলেন।বালক গদাধরের জেদের জন্য বাধ্য হয়ে ক্ষুদিরাম ধনী কামার বউকে গদাধরের ভিক্ষে মা করেন।(শ্রীরামকৃষ্ণঃকিছু অজানা প্রসঙ্গ-সুনীত দে-পৃঃ৪৫)
বালক গদাধরের তখন কিন্তু জাতপাতের কোন জ্ঞান হয় নি।অর্থাৎ ধনী কামার বউকে ভিক্ষে মা প্রমাণ করে না যে শ্রীরামকৃষ্ণদেব জাতপাত মানতেন না।
(২) বাল্যাবস্থায় কামার বউকে মা বললেও পরে কিন্তু কামারের গন্ধ পেয়েছেন।
তাঁর কথায়-“আমার কামার বাড়ীর দাল খেতে ইচ্ছেছিলো;ছোট বেলা থেকে কামাররা বলতো বামুনেরা কি রাঁধতে জানে ? তাই(ধনীর বাড়ী) খেলুম,কিন্তু কামার কামার গন্ধ|”।(কথামৃতঃশ্রীম,২য় ভাগ,১১দশ সংস্করন-১৩৮৮,পৃঃ-১৩২)
আগে গন্ধ পান নি বয়স কম থাকায়।এখন জাতের গন্ধ পাচ্ছেন।
(৩)জমিদার মনি মল্লিকের বাড়ীতে খেয়ে বলেন-“মনি মল্লিকের বরানগর বাগানে ব্যঞ্জন রান্না খেলুম কিন্তু কেমন একটা ঘেন্না হল”।(ঐ পৃঃ-১৩২)
ব্রাম্ভণ্যের বাড়ীতে অন্ন গ্রহণে তাঁর কোন দ্বিধা ছিলো না।কোন গন্ধ লাগতো না বা ঘেন্না করতেন না।
(৪)দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠায় লক্ষ লক্ষ ব্রাম্ভণ ভোজন করলেও শ্রীরামকৃষ্ণ কিন্তু শূদ্রের অন্ন বলে তা স্পর্শ করেন নি।চিড়ে মুড়ি কিনে খেয়ে দাদার ঝামাপুকুরের টোলে গিয়ে শুয়ে পড়েন।
(৫)দাদা না ফেরায় তিনি আবার দক্ষিণেশ্বরে আসেন ও দাদার সাথে ঝগড়া করেন কেন দাদা শূদ্রের আশ্রয় ও অন্ন গ্রহণ করছেন তাই নিয়ে।
(৬)দাদা রামকুমারের কাছ থেকে চাল ডাল নিয়ে গঙ্গাজলে ফুটিয়ে শুদ্ধ করে খেতে থাকেন কিন্তু শূদ্রের মন্দির ও অন্ন কিছুই গ্রহণ করতে রাজি নন।দাদার চাল,ডাল কিন্তু শূদ্রের ছিলো কারণ তা রানী রাসমনির দেওয়া।
(৭)রামদত্তের বাড়ীতে অন্নগ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন কারন রামদত্ত ব্রাম্ভন নয়।
(৪-৭- লীলা প্রসঙ্গ পৃঃ ১৯০-৯১-৯২)
(৮)ভাগ্নে হৃদয়রাম বলছেন-“যতদিন দেখিয়াছি লুচি খাইতে খাইতে তাহার চক্ষে জল আসিয়াছে এবং আক্ষেপ করিয়া শ্রী শ্রী জগন্মাতাকে বলিয়াছেন “মা” আমাকে কৈবর্ত্যের অন্ন খাওয়ালি”।
(লীলা প্রসঙ্গ-পৃঃ-১৯৫)
(৯)ঘুমের মধ্যে কোনদিন বা বলে উঠতেন-“আর খাব না্,আর খাব না”। অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে তিনি কৈবর্ত্যের অন্ন গ্রহণের দুঃস্বপ্ন দেখতেন।(শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ লীলা তত্ত্বঃ শ্রী শশীভূষন সামন্ত,পৃঃ-২০)
(১০)বৃন্দাবনে গিয়ে আর ফিরতে চাইছেন না।বলেন যে আমি আর কলকাতায় ফিরবো না।কৈবর্তের ভাত আর কতদিন খাব?(কথামৃতঃ২য় ভাগ,পৃঃ-১৪৫)
(১১)স্বামী রামকষ্ণানন্দ বলেন-“শ্রীরামকৃষ্ণ সকল অহং ভাব ত্যাগ করিয়াছিলেন কিন্তু তথাতি আমি ব্রাহ্মণ এই বোধ তাহার ছিলো”।(প্রমানন্দ-ওঁকারেশ্বরানন্দ,২য় ভাগ,১ম সংস্করন ১৩৫৩ পৃঃ৯৯-১০১)
শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর বীর ভক্ত গিরিশ ঘোষের বাড়িতে অন্ন গ্রহণ অস্বীকার করেন। পরিষ্কার বলে দেন,তুমি ব্রাহ্মণ তো ,আর নও, তোমার বাড়িতে ঠাকুরের অন্নভোগও নেই।অতএব তোমার ভাতের থালায় আমি নেই।(ঐ)
বৈকুন্ঠনাথ সান্যাল “শ্রীরামকৃষ্ণ লীলামৃত”গ্রন্থের এক জায়গায় বলছেন-“আর একদিন কহেন,শূদ্র মুখে প্রণব উচ্চারণ শুনলে,কানে যেন ছুঁচ ফুটিয়ে দ্যায়; ভগবানের অসংখ্য নামের একটিতে রতি হলে সব্বার্থ সিদ্ধি হয়।তখন প্রণব উচ্চারনের কি আবশ্যক?(পৃঃ-৩৩৪)।অর্থাৎ জন্মসূত্রে যে উচ্চবর্ণ নয় তার মুখে প্রণব মন্ত্র শুনতে চান না।
(১২)শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলতেন--“ভগবানকে দেখার পর আর জাতির অভিমান থাকে না্,তখন শিশুর মতো অবস্হা হয়।শিশুর যেমন জাতের অভিমান নাই,তত্ত্ব দ্রষ্টার ও তেমনি জাতির অভিমান লোপ পায়”।(ভক্ত মনোমোহন-উদ্বোধন,পৃঃ-৪৫)
মৃত্যূর পূর্বে ও কিন্তু ঠাকুরের জাতের অভিমান প্রবল ছিলো।
দাদা রামকুমার ও ভাই শ্ররামকৃষ্ণের যদি অন্নাভাব না থাকতো তাহলে এঁরা শূদ্র রাসমনির মন্দিরে কোনদিন উঠতো না রাসমনির অন্ন খাওয়া দুরে থাক। আর শ্রীরামকৃষ্ণ যদি অন্নের সংস্হান করতে পারতেন তাহলে তিনি দক্ষিনেশ্বর থেকে দাদা রামকুমারকে ছেড়ে পালিয়ে যেতেন।রানী রাসমনির নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে থেকে না চাইতে সবকিছু পেলেও শূদ্রের অন্ন খেতে হচ্ছে বলে তিনি সর্বক্ষন কষ্ট পেতেন।এমনই ছিলো শ্রীরামকৃষ্ণের জাতিভেদ প্রীতি।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ