একাদশী - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

11 June, 2020

একাদশী



একাদশী পালনের নিয়মাবলী(বৈষ্ণব মত)

ভোরে শয্যা ত্যাগ করে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, “হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।”  একাদশীতে গায়ে তেল মাখা, সাবান মাখা, পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যাভাষণ, ক্রোধ, দিবানিদ্রা, সাংসারিক আলাপাদি বর্জনীয়। এই দিন গঙ্গা আদি তীর্থে স্নান করতে হয়। মন্দির মার্জন, শ্রীহরির পূজার্চনা, স্তবস্তুতি, গীতা-ভাগবত পাঠ আলোচনায় বেশি করে সময় অতিবাহিত করতে হয়।

এই তিথিতে গোবিন্দের লীলা স্মরণ এবং তাঁর দিব্য নাম শ্রবণ করাই হচ্ছে সর্বোত্তম। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের একাদশীতে পঁশিচ মালা বা যথেষ্ট সময় পেলে আরো বেশি জপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।  একাদশীর দিন ক্ষৌরকর্মাদি নিষিদ্ধ। একাদশী ব্রত পালনে ধর্ম অর্থ, কাম, মোক্ষ আদি বহু অনিত্য ফলের উল্লেখ শাস্ত্রে থাকলেও শ্রীহরিভক্তি বা কৃষ্ণপ্রেম লাভই এই ব্রত পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ভক্তগণ শ্রীহরির সন্তোষ বিধানের জন্যই এই ব্রত পালন করেন। পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, বরাহপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও বৈষ্ণবস্মৃতিরাজ শ্রীহরিভক্তিবিলাস আদি গ্রন্থে এ সকল কথা বর্ণিত আছে।


বছরে ছাব্বিশটি একাদশী আসে। সাধারণত বার মাসে চব্বিশটি একাদশী। এইগুলি হচ্ছে-

১. উৎপন্না একাদশী  -     ২. মোক্ষদা একাদশী 
৩. সফলা একাদশী ,  -     ৪. পুত্রদা একাদশী 
৫. ষটতিলা একাদশী -     ৬. জয় একাদশী 
৭. বিজয়া একাদশী   -      ৮. আমলকী একাদশী
৯. পাপমোচনী একাদশী - ১০. কামদা একাদশী 
১১. বরুথিনী একাদশী    - ১২. মোহিনী একাদশী 
১৩. অপরা একাদশী      - ১৪. নির্জলা একাদশী 
১৫. যোগিনী একাদশী    - ১৬. শয়ন একাদশী 
১৭. কামিকা একাদশী     - ১৮. পবিত্রা একাদশী
১৯. অন্নদা একাদশী        - ২০. পরিবর্তিনী বা পার্শ্ব একাদশী 
২১. ইন্দিরা একাদশী       -  ২২. পাশাঙ্কুশা একাদশী 
২৩. রমা একাদশী           - ২৪. উত্থান একাদশী 

কিন্তু  যে বৎসর পুরুষোত্তমাস, অধিমাস বা মলমাস থাকে, সেই বৎসর পদ্মিনী ও পরমা নামে আরও দুটি একাদশীর আবির্ভাব হয়। যারা যথাবিধি একাদশী উপবাসে অসমর্থ অথবা ব্রতদিনে সাধুসঙ্গে হরিকথা শ্রবণে অসমর্থ, তারা এই একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ বা শ্রবণ করলে অসীম সৌভাগ্যের অধিকারী হবেন।


একাদশীর আবির্ভাব


পদ্মপুরাণে একাদশী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। একসময় জৈমিনি ঋষি তাঁর গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গুরুদেব! একাদশী কি? একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয়? একাদশী ব্রত করলে কি লাভ? একাদশী ব্রত না করলে কি ক্ষতি? এ সব বিষয়ে আপনি দয়া করে বলুন।


 মহর্ষি ব্যাসদেব তখন বলতে লাগলেন-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় সংসারে স্থাবর জঙ্গম সৃষ্টি করলেন। মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেন। সেই পাপপুরুষের অঙ্গগুলি বিভিন্ন পাপ দিয়েই নির্মিত হল। পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষুদুটি মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ, দুই কর্ণ-গুরুপত্নী গমন, দুই নাসিকা-স্ত্রীহত্যা, দুই বাহু-গোহত্যা পাপ, গ্রীবা-ধন অপহরণ, গলদেশ-ভ্রুণহত্যা, বক্ষ-পরস্ত্রী-গমন,উদর-আত্মীয়স্বজন বধ, নাভি-শরণাগত বধ, কোমর-আত্মশ্লাঘা, দুই উরু-গুরুনিন্দা, শিশ্ন-কন্যা বিক্রি, মলদ্বার-গুপ্তকথা প্রকাশ পাপ, দুই পা-পিতৃহত্যা, শরীরের রোম-সমস্ত উপপাতক।

 এভাবে বিভিন্ন সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ নির্মিত হল। পাপপুরুষের ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু মর্ত্যের মানব জাতির দুঃখমোচন করবার কথা চিন্তা করতে লাগলেন। একদিন গরুড়ের পিঠে চড়ে ভগবান চললেন যমরাজের মন্দিরে। ভগবানকে যমরাজ উপযুক্ত স্বর্ণ সিংহাসনে বসিয়ে পাদ্য অর্ঘ্য দিয়ে যথাবিধি তাঁর পূজা করলেন। যমরাজের সঙ্গে কথোপকথনকালে ভগবান শুনতে পেলেন দক্ষিণ দিক থেকে অসংখ্য জিবের আর্তক্রন্দন ধ্বনি। প্রশ্ন করলেন-এ আর্তক্রন্দন কেন?

যমরাজ বললেন, হে প্রভু, মর্ত্যের পাপী মানুষেরা নিজ কর্মদোষে নরকযাতনা ভোগ করছে। সেই যাতনার আর্ত চীৎকার শোনা যাচ্ছে। যন্ত্রণাকাতর পাপাচারী জীবদের দর্শন করে করুণাময় ভগবান চিন্তা করলেন-আমিই সমস্ত প্রজা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই ওরা কর্মদোষে দুষ্ট হয়ে নরক যাতনা ভোগ করছে, এখন আমিই এদের সদগতির ব্যবস্থা করব। ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথি রূপে এক দেবীমুর্তিতে প্রকাশিত হলেন। সেই পাপীদেরকে একাদশী ব্রত আচরণ করালেন। একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৈকুন্ঠ ধামে গমন করল।

শ্রীব্যাসদেব বললেন, হে জৈমিনি! শ্রীহরির প্রকাশ এই একাদশী সমস্ত সুকর্মের মধ্যে শ্রেষ্ট এবং সমস্ত ব্রতের মধ্যে উত্তম ব্রত। কিছুদিন পরে ভগবানের সৃষ্ট পাপপুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে করজোড়ে কাতর প্রার্থনা জানাতে লাগল-হে ভগবান! আমি আপনার প্রজা! আমাকে যারা আশ্রয় করে থাকে, তাদের কর্ম অনুযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি একাদশীর প্রভাবে আমি কিছুই করতে পারছি না, বরং ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছি। কেননা একাদশী ব্রতের ফলে প্রায় সব পাপাচারীরা বৈকুন্ঠের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে।

 হে ভগবান, এখন আমার কি হবে? আমি কাকে আশ্রয় করে থাকব? সবাই যদি বৈকুন্ঠে চলে যায়, তবে এই মর্ত্য জগতের কি হবে? আপনি বা কার সঙ্গে এই মর্ত্যে ক্রীড়া করবেন? পাপপুরুষ প্রার্থনা করতে লাগল- হে ভগবান, যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে, আমার দুঃখ দুর করুন। একাদশী তিথির ভয় থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হে কৈটভনাশন, আমি একমাত্র একাদশীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছি। মানুষ, পশুপাখী, কীট-পতঙ্গ, জল-স্থল, বন-প্রান্তর, পর্বত-সমুদ্র, বৃক্ষ, নদী, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্রই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু একাদশীর প্রভাবে কোথাও নির্ভয় স্থান পাচ্ছি না দেখে আজ আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।


হে ভগবান, এখন দেখছি, আপনার সৃষ্ট অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডের মধ্যে একাদশীই প্রাধান্য লাভ করেছে, সেইজন্য আমি কোথাও আশ্রয় পেতে পারছি না। আপনি কৃপা করে আমাকে একটি নির্ভয় স্থান প্রদান করুন। পাপপুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বলতে লাগলেন- হে পাপপুরুষ! তুমি দুঃখ করো না। যখন একাদশী তিথি এই ত্রিভুবনকে পবিত্র করতে আবির্ভুত হবে, তখন তুমি অন্ন ও রবিশস্য মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তা হলে আমার মূর্তি একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না।

 

একাদশী উপবাস দিন নির্ণয় 

 

একাদশীর উপবাস দিন নির্ণয় প্রসঙ্গে হরিভক্তিবিলাস গ্রন্থে (১২/১৯৯) দুই প্রকার একাদশীর কথা বলা হয়েছে-
            ১. সম্পূর্ণা বা শুদ্ধা একাদশী ও
            ২. বিদ্ধা একাদশী
এছাড়াও অষ্টমহাদ্বাদশী ব্রতের কথাও শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। বিদ্ধা একাদশী কি এবং এরূপ একাদশী করা উচিত কি উচিত নয়, সে সম্পর্কে তিনটি মত আমরা দেখতে পাই। (ক) গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মত, (খ) নিম্বাক সম্প্রদায়ী বৈষ্ণব মত এবং (গ) স্মার্ত মত। একাদশী ব্রত উদযাপন প্রসঙ্গে প্রখানে কেবল ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের দর্শন তুলে ধরা হলো।


গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতে একাদশীঃ ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ে বৈষ্ণবগণ অরুণোদয় বিদ্ধা অর্থাৎ দশমী বিদ্ধা একাদশী তে ব্রত করেন না। এ বিষয়ে শ্রীহরিভক্তিবিলাস গ্রন্থসগ বিভিন্ন পুরাণ শাস্ত্র এবং ঋষিবাক্য উদ্ধৃত করা যায়ঃ। তার আগে আমাদের অরুণোদয় সময় বলতে কী বুঝায় তা বুঝতে হবে।
১ মুহুর্ত বলতে ৪৮ মিনিট বুঝায়। আর এক দন্ড বলতে ২৪ মিনিট। সুতরাং ৪ দন্ড=২ মুহুর্ত বা ৯৬ মিনিট বা ১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট। শ্রীহরিভক্তিবিলাসধৃত স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে-
উদয়াৎ প্রাক চতস্রন্থ ঘটিকা অরুণোদয়ঃ। 
তত্র স্নানাং প্রশন্ত স্যাৎ স বৈ পুন্যতমঃ স্মাচতঃ।।(হ.ভ.বি. ১২/৩৪২) অর্থাৎ “সূর্যোদয়ের পূর্বের চার দন্ড সময়কে (দুই মুহুর্ত) অরুণোদয় বলে। ঐ কাল অতি পুন্যতম। প্রাতস্নায়ী ব্যক্তির ঐ সময় স্নান করা প্রশস্ত।” পাঠকের সুবিধার্থে নীচে উদাহরণ দিয়ে অরুণোদয় সময়কাল বুঝানো হলোঃ 


সূর্যোদয়ের ১.৩৭ মি: পূর্ব পর্যন্ত সময়কে বলা হয় অরুণোদয়। ধরুন, ৫.৩৭ মি. সূর্যোদয়; এর ১.৩৬মি. পূর্বের সময় হলো ৪.০০টা, সুতরাং ৪.০০-৫.৩৭ মি.- পর্যন্ত সময় হলো অরুণোদয়। এই সময়ের মধ্যে যদি দশমী তিথি স্পর্শ করে, তবে তাকে বলা হয় দশমী বিদ্ধা একাদশী। 

য়ুঞ্জতে মনऽউত যুঞ্জতে ধিয়ো বিপ্ৰা বিপ্ৰস্য বৃহতো বিপশ্চিতঃ।
বি হোত্রা দখে বয়ুনাবিদেऽইন্সহী দেবস্য সবিতুঃ পরিষ্টুতিঃ ॥ যজুর্বেদ (১১) অধ্যায় ।। ৪॥ পদার্থ ঃ- যে (হোত্রঃ) দান দেওয়া-নেওয়ার স্বভাবযুক্ত (বিপ্রাঃ) বুদ্ধিমান্ পুরুষ যে (বৃহতঃ) বৃহৎ (বিপশ্চিতঃ) সম্পূর্ণ বিদ্যাযুক্ত আপ্ত পুরুষের সমান বৰ্ত্তমান (বিপ্রস্য) সব শাস্ত্রজ্ঞাতা বুদ্ধিমান্ পুরুষ হইতে বিদ্যা প্রাপ্ত বিদ্বান্ দিগের হইতে বিজ্ঞানযুক্ত ব্যক্তি (সবিতুঃ) সর্ব জগতের উৎপন্নকারী এবং (দেবস্য) সকলের
প্রকাশক জগদীশ্বরের (মহী) মহতী (পরিষ্টুতিঃ) সর্ব প্রকারের স্তুতি, সেই তত্ত্বজ্ঞান বিষয়ে যেমন (মনঃ) স্বীয় চিত্তকে (য়ুঞ্জতে) সমাধান করে (উত) এবং (ধিয়ঃ) স্বীয় বুদ্ধিসকলকে (য়ুঞ্জতে) যুক্ত করে সেইরূপ (বয়ুনাবিৎ) প্রকৃষ্ট জ্ঞানযুক্ত (একঃ) অন্যের সাহায্যের অপেক্ষা হইতে রহিত (ইৎ) ই আমি (বিদধে) বিধান করি ॥৪॥
ভাবার্থ :- এই মন্ত্রে বাচকলুপ্তোপমালঙ্কার আছে। যে নিয়মপূর্বক আহার বিহারকারী জিতেন্দ্রিয় পুরুষগণ নিভৃত স্থানে পরমাত্মা সহ নিজ আত্মাকে যুক্ত করেন, তাঁহারাই তত্ত্বজ্ঞান প্রাপ্ত হইয়া নিত্যই সুখভোগ করে ॥৪॥

ঊর্ধ্বামা রোহ পঙ্ক্তিস্ত্বাবতু শাঙ্কররৈবতে সামনী ত্রিণবত্রয়স্ত্রিংশৌ স্তোমৌ হেমন্তশিশিরাবৃত্ব বৰ্চো দ্রবিণং প্রত্যন্তং নমুচ্ঃে শিরঃ ৷৷ যজুর্বেদ দশম অধ্যায়।। ১৪ ৷৷
পদার্থ :- হে রাজন্ ! আপনি (ঊর্ধ্বাম্) উপরের দিকে (আরোহ) প্রসিদ্ধি লাভ করুন। (ত্বা) আপনাকে (পঙ্ক্তি) পঙ্ক্তি নামক পঠিত ছন্দ (শাঙ্কররৈবতে) শঙ্করী ও রেবতী ছন্দ দ্বারা যুক্ত (সামনী) সামবেদের পূর্ব উত্তর দুটি অবয়ব (ত্রিণবক্রয় স্প্রিংশৌ) তিন কাল, নয় অঙ্কের বিদ্যা এবং তেত্রিশ বসু ইত্যাদি পদার্থ যে দুইটি দ্বারা ব্যাখ্যান করা হইয়াছে তাহাদের পূর্ণ করিবার (স্তোমৌ) স্তোত্রদের দুইটি ভেদ (হেমন্তশিশিরৌ) (ঋতু) হেমন্ত ও শিশির ঋতু (বর্চঃ) ব্রহ্মচর্য্য সহ বিদ্যা পাঠ এবং (দ্রবিণম্) ঐশ্বর্য্য (অবতু) তৃপ্ত করুক এবং (নমুচেঃ) দুষ্ট চোরের (শিরঃ) শির (প্রত্যস্তম্) নষ্ট-ভ্রষ্ট হউক ॥১৪ ৷৷
ভাবার্থ :- যে মনুষ্য সকল ঋতুতে সময়ানুসার আহার-বিহারযুক্ত হইয়া বিদ্যা যোগাভ্যাস ও সৎসঙ্গের উত্তম প্রকার সেবন করে, সে সকল ঋতুতে সুখ ভোগ করে এবং তাহাকে কোন চোরাদিও পীড়া দিতে সক্ষম হয় না ৷৷১৪ ৷৷

অসাবি দেবং গোঝজীকমস্কো নাশ্মিরিদ্রো জনুষেমুবোচ।
বোধামসি ত্বা হয়শ য়জ্ঞৈবোধা ন স্তোমমসো মদেষু ॥সামবেদ ৩১৩॥
পদার্থঃ প্রথম অধ্যাত্ম পক্ষে।
আমাদের দ্বারা (দেবম্) দীপ্তিযুক্ত, তেজস্বী (গোর্খাজীকম্ ) ইন্দ্রিয়রূপ গো সমূহের সরলপথে চলার জন্য (অঃ) (অসাবি) তৈরি করা হয়েছে। (অস্মিন্) এর মধ্যে (ইন্দ্রঃ) পরমেশ্বর (জনুষা ঈম্) স্বভাবতই (নি উবাচ) নিত্য সম্বন্ধযুক্ত আছেন। হে (হয়শ) সমস্ত পদার্থের অধিপতি পরমাত্মা! আমরা (য়জ্ঞৈঃ) যোগাভ্যাসরূপ যজ্ঞ দ্বারা (ত্বা) তোমাকে (বোধামাস) জানতে পারি, [ইদন্তো মসি' অষ্টার ৭১ ৪৬] তুমি (অন্ধসঃ) আনন্দ রসের (মদেষু) তৃপ্তি দ্বারা (নঃ) আমাদের (স্তোমম্) স্তুতি সমূহকে (নো) জানো ["দাচোংতস্তিঙঃ'। অষ্টা০ ৬ ৩ ১৩৫] ॥ 8
সরলার্থঃ আমাদের দ্বারা দীপ্তিযুক্ত, তেজস্বী ইন্দ্রিয়রূপ গো সমূহের সরলপথে চলার জন্য শ্রদ্ধারস তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে পরমেশ্বর স্বভাবতই নিত্য সম্বন্ধযুক্ত আছেন। হে সমস্ত পদার্থের অধিপতি পরমাত্মা! আমরা যোগাভ্যাসরূপ ফ তোমাকে জানতে পারি, তুমি আনন্দ রসের তৃপ্তি দ্বারা আমাদের স্তুতি সমূহকে জানো ॥ পদার্থঃ দ্বিতীয়—জীবাত্মা পক্ষে।
(অন্ধঃ") আহার* সেটিই উত্তম যা কিনা ['অন্ধ ইত্যন্ননামসু পঠিতম্' নিঘ০ ২ ৭, 'অন্ন বা অন্ধ' জৈ০ ১৩:৩, 'অন্ধ্যাসি অন্নানি' নিরু০ ৯।৩৪] (অসাবি) উৎপাদন করা হয়েছে [সু= রোপণ করা (to sow)]। আহার ভূমিমাতা থেকে উৎপন্ন শস্যাদিরই করা উচিত। এই কথন-শৈলীতে স্পষ্ট যে মাংসাহার হেয়, কিন্তু এই চিন্তা করতে দুগ্ধও অগ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে, তাই বলা হচ্ছে (ঋজীকম্‌=mixed up, ঋজ গতৌ)। অন্যত্র একেই বেদে 'পয়ঃ পশুনাম্' [অথর্ব০ ১৯।৩১।৫] এই বাক্যাংশ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে যে পশুদের প্রাণদায়ক দুগ্ধই' ভোজনাথে গ্রহণীয়, মাংসাদি নয় এবং পৃথিবী থেকে উৎপন্ন ব্রীহি, যব, মাষ, তিল, ফল-মূল-কন্দ বা গাভীর দুধই মানবজাতির ভোজন [ব্রীহিমত্তং য়মত্তমথো মাষমথো তিলম্। এষ বাং ভাগো নিহিতো রত্নধেয়ায় দন্তৌ মা হিংসিষ্টং পিতরং মাতরং চ ॥ - অথর্ব ৬।১৪০।২]। এই আহারই সাত্ত্বিক ও (দেবম্) দৈবী সম্পত্তির জন্মদাতা। (অস্মিন্) এই সাত্ত্বিক ভোজনে (ঈম) নিশ্চিতভাবেই (জনুষা) স্বভাবতই (ইন্দ্রঃ) ইন্দ্রিয়সমূহের শাসক হওয়া যায়, দাস নয়। অর্থাৎ সাত্ত্বিক ভোজন দ্বারা ইন্দ্রিয়সমূহকে বশীভূত করা যায়। পক্ষান্তরে রাজসিক ও তামসিক আহার ইন্দ্রিয়ের দাসত্বের কারণ। প্রভু উপদেশ দিচ্ছেন (হয়শ্ব) শীঘ্রতাযুক্ত ইন্দ্রিয়রূপ অশ্বযুক্ত মানব ! (ত্বা) তোমাকে (য়জ্ঞৈঃ) যজ্ঞসমূহ দ্বারা (বোধামসি) জ্ঞানযুক্ত করি। এই মন্ত্রাংশে বস্তুতঃ ক্রিয়াশীলতা, যজ্ঞে প্রবৃত্তি ও জ্ঞান - এই তিন লাভ সাত্ত্বিক আহারীর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। যেভাবে এক ভক্ত 'আমার মা নিজ সন্তানকে স্বর্ণপাত্রে আহার করতে দেখুক' এই বাক্যে মাতার দৃষ্টিক্ষম চোখ, সন্তান ও ধন এই তিনটিই একত্রে কামনা করা হয়েছে সেভাবেই এখানে একই মন্ত্রে প্রকৃতপক্ষে সাত্ত্বিক আহারের ত্রিবিধ লাভের সংকেত দেয়া হয়েছে এবং (অন্ধসঃ মদেষু) সাত্ত্বিক আহারের আনন্দে বিহ্বলিত (নঃ স্তোমং বোধ) আমাদের স্তুতি সমূহকেও জ্ঞাত হও। অর্থাৎ, সাত্ত্বিক আহারী মানব প্রভুকে বিস্মৃত হয় না। বরং সর্বদা স্মরণ করে ॥১ ৷৷
সরলার্থঃ আহার সেটিই উত্তম যা কিনা উৎপাদন করা হয়েছে। আহার ভূমিমাতা থেকে উৎপন্ন শস্যাদিরই করা উচিত, সাথে গোদুগ্ধ। এই আহারই সাত্ত্বিক ও দৈবী সম্পত্তির জন্মদাতা। এই সাত্ত্বিক ভোজনে নিশ্চিতভাবেই, স্বভাবতই ইন্দ্রিয়সমূহের শাসক হওয়া যায়, দাস নয়। অর্থাৎ সাত্ত্বিক ভোজন দ্বারা ইন্দ্রিয়সমূহকে বশীভূত করা যায়। পক্ষান্তরে রাজসিক ও তামসিক আহার ইন্দ্রিয়ের দাসত্বের কারণ। প্রভু উপদেশ দিচ্ছেন শীঘ্রতাযুক্ত ইন্দ্রিয়রূপ অশ্বযুক্ত মানব ! তোমাকে যজ্ঞসমূহ দ্বারা জ্ঞানযুক্ত করি। ভক্ত বলছেন, সাত্ত্বিক আহারের আনন্দে বিহ্বলিত আমাদের স্তুতি সমূহকেও জ্ঞাত হও। অর্থাৎ, সাত্ত্বিক আহারী মানব প্রভুকে বিস্মৃত হয় না। বরং সর্বদা স্মরণ করে ॥১॥ এই মন্ত্রে অন্যান্য অলঙ্কার" রয়েছে ॥
ভাবার্থঃ পরমেশ্বরের উপাসনা দ্বারা যোগাভ্যাসী মানুষ নিজের ইন্দ্রিয়কে সরলপথে চালিত করতে পারে। এই জন্য সকলের শ্রদ্ধাপূর্বক পরমেশ্বরের উপাসনা করা উচিত। সাত্ত্বিক আহারের সুফলসমূহ - ১. জিতেন্দ্রিয় হওয়া ২. ক্রিয়াশীলতা ৩. যজ্ঞশীল হওয়া ৪. জ্ঞানী হওয়া ৫. সদা সর্বদা প্রভুর স্তুতি করার চেতনা লাভ ॥১॥

আহার বিষয়ে গীতায় শ্রী কৃষ্ণ কি বলেছেন-
যুক্তাহারবিহারস্য যুক্তচেষ্টাস্য কর্মসু।
যুক্তস্বপ্নাববোধস্য যোগো ভবতি দুঃখহা।।
[গীতা ৬/১৭]
অর্থাৎ: আহার, বিহার, কর্ম, নিদ্রা ও জাগরণে যিনি সমতা রাখিয়া চলেন, তাহার যোগ দুঃখনাশী হয়।
এছাড়াও গীতা তে বলা হয়েছে - [গীতা ১৭/৫-৬] ll
অর্থাৎ: যে সকল লোক অশাস্ত্রীয় কঠোর তপস্যা করে, দম্ভ ও অহংকারের বলে কাম ও আসক্তিপরায়ণ হয় এবং বলশালী হইয়া শরীরের ভূতগুলিকে কষ্ট দেয় আর শরীরের মধ্যস্থ আমাকে কষ্ট দেয়; এইসব লোকেরা অসুরের ন্যায়, ইহা তুমি জানিও।
• গীতার শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন:-
যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ।
ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্।।
[গীতা ১৬/২৩]
অনুবাদঃ যে শাস্ত্রবিধি ( বেদ)পরিত্যাগ করে কামাচারে বর্তমান থাকে, সে সিদ্ধি, সুখ অথবা পরাগতি লাভ করতে পারে না।
[ অর্থাৎ এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বা বুঝতে পারি যে, গীতায় কোথাও, অতি অনাহারে থেকে একাদশী ব্রত পালন করার কথা বলা হয়নি। অতি অনাহার তামসিক বলেছে ]
●গীতা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ নিষ্কাম কর্ম করতে বলেছে। কোন কিছু ফলের আশায় একাদশী ব্রত পালন করে, সকাম কর্ম করতে বলে নাই,। গীতায় নিষ্কাম কর্ম করতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যা এটি শাস্ত্র সম্মত না।
■ পদ্ম পুরান, স্মৃতি শাস্ত্র-অত্রিসংহিতায়, নারীদের একাদশী ব্রত পালনের অধিকার দেই নাই, নারিরা একাদশী ব্রত পালন করলেন নরকে যাবে।
● পদ্মপুরাণ কি বলছে দেখুন
পতৌজীবতি যা নারী উপবাসং ব্রতং আরেৎ।
আয়ুষ্বংহরতেভর্তুর্মৃতানরকামিচ্ছতি।।
(পদ্মপুরাণম্ সৃষ্টিখণ্ডের ৩৪/৭৪)
অনুবাদঃ পতির জীবিত অবস্তায় যে নারী উপবাস ব্রত পালন করে, সে নারী পতির আয়ু হরন করে এবং মৃত্যুর পর নরক কামনা করে।
● অত্রিসংহিতা
জীবদ্ভর্ত্তরি যা নারী উপোষ্য ব্রতচারিণী।
আয়ুষ্যং হরতে ভর্ত্তুঃ সা নারী নরকং ব্রজেৎ।।
(অত্রিসংহিতা ১৩৬নং শ্লোক।)
অনুবাদ: যে নারী স্বামী জীবিত থাকিতে উপবাস করিয়া ব্রত করে,সে নারী স্বামীর আয়ু হরণ করে ও নরকে গমন করেন।।
এই বচন অনুসারে কোন সধবা নারী, একাদশী হলো উপবাস ব্রত,তাই তা পালন করে স্বর্গে যাওয়া ত দূরের কথা, সাথে স্বামীর আয়ু হরণ কারিনী হন।
● বিষ্ণুসংহিতায়
পত্যৌ জীবতি যা যোষিদুপবাসব্রতং চরেৎ।
আয়ুঃ সা হরতে ভর্ত্তুর্নরকঞ্চৈব গচ্ছতি।।
(বিষ্ণুসংহিতা ২৫তম অধ্যায় ১৬নং শ্লোক)
অনুবাদঃ যে স্ত্রী পতি জীবিত থাকিতে উপবাস ব্রত আচরণ করে, সে নারী স্বামীর আয়ু হরণ ও নরকে গমন করে।।
●এ প্রসঙ্গে ভগবান ব্যাসদেব বলেছেন-
সধবানাং হি নারীণাংনেপবাসাদিকংব্রতম।
(বৃহদ্ধর্ম্মপুরাণ, উত্তরখণ্ডম ৮ম অধ্যায় ৭নং শ্লোকে)
অর্থাৎঃ- সধবা স্ত্রীলোকের উপবাসাদি ব্রত নাই।
তাহলে সধবা স্ত্রীলোক একাদশী উপবাস ব্রত পালন করেন তবে কি হবে?

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ