আপনি আমি ইসলামের মধ্যে যে ভালো ভালো কথাগুলো শুনি তার কোনটাই ইসলামের অংশ নয়। মূলত সুফিরা নবীর নামে ভালো ভালো কথা বানিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করত। কাজেই আমি দু:খিত, ইসলামের কোন প্রশংসা করতে পারছি না। নিচে জনপ্রিয় কিছু ইসলামের ভালো ও মহৎ কথাবার্তা দেয়া হলো যার সবটাই বানোয়াট, মিথ্যা, জাল…।
>কিছু সময়ের চিন্তা হাজার বছরের ইবাদাতের চেয়ে উত্তম: পুরোটাই ভুয়া।
কুরআন ও হাদিসসহ ইসলামের কোন সোর্স থেকেই এটা পাওয়া যায় না। অথচ কথাটা কিন্তু ধর্ম হিসেবে ইসলামকে বেশ প্রগতিশীল করে তোলে। মানে হচ্ছে, ইসলাম এখানে ঈশ্বরের প্রার্থনার চাইতে একজন চিন্তক বা ভাবুকের গুরুত্ব অনেক বেশি দিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে ইসলাম কখনই চিন্তকদের প্রশংসা করেনি। বরং যারা বেশি চিন্তা করেছে তাদের সাবধান করে বলা হয়েছে ‘তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না…’। কারণ সীমালঙ্ঘন করে চিন্তা ভাবনা করলে তো থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে। ধর্ম হচ্ছে অন্ধ বিশ্বাস যা কেবলই মূর্খতার জন্ম দেয়।
>শহীদের রক্তের চেয়ে জ্ঞানের কালি উত্তম: ডাঁহা মিথ্যা কথা। ইসলামের কোথাও এটা বলা নেই- কুরআন হাদিস কোথাও নেই। উল্টো কুরআনে বলেছে তার কাছে যে অস্ত্র হাতে জিহাদ করে তার কাজের চেয়ে অন্যদের কাজের মূল্য সমান নয়। শহীদের চেয়ে কেউ বেশি মর্যাদা পাবে না। দেখুন কুরআন কি বলছে- ‘শারীরিকভাবে অক্ষম ছাড়া যে সব বিশ্বাসীরা ঘরে বসে থাকে, তারা কোনোভাবেই তাদের সমান নয়, যারা নিজেদের জান এবং সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। যারা ঘরে বসে থাকে, তাদের থেকে মুজাহিদদের পদমর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও তিনি সকল বিশ্বাসীদেরকেই সুন্দর প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু যারা ঘরে বসে থাকে তাদের থেকে মুজাহিদদেরকে আল্লাহ অকল্পনীয় বেশি প্রতিদান দেন। (৪:৯৫)। কুরআন ছাড়াও হাদিস থেকে আমরা পাই- কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে মহৎ কাজ, এবং শুধু তাই না, এটি মানবজাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। (ইবন তাইমিয়্যাহ, আল ফুরকান, পৃষ্ঠা-৪৪-৪৫)। দেখা যাচ্ছে একজন মূর্খ জিহাদীর চেয়ে সমাজে শিক্ষিত জ্ঞানী লোকের মর্যাদা অনেক নিচুতে। অথচ এতদিন ধরে বলা হয়েছে শহীদের রক্তের চেয়ে জ্ঞানীর কালি অনেক মহান! এরকম কথা আর যাই হোক ইসলামের পক্ষে বলা সম্ভব নয় তাই এটা ইসলামের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না…।
>দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ: আরেকটা জনপ্রিয় মিথ্যাচার। দেশটেশ নিয়ে ইসলামের কোন মাথা ব্যাথা নেই। আপনি দেশপ্রেমী হতে পারবেন না। আপনি কেবলমাত্র ইসলাম প্রেমি হতে পারবেন। দেশপ্রেম হচ্ছে ইসলামের চোখে কুফরি। এগুলো দ্বিন কায়েম থেকে মানুষকে দূরে রাখে। মক্কা-মদিনা হচ্ছে ইসলামের কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকে যদি নিজের দেশের প্রতি পক্ষপাত থাকে বা প্রথম চয়েজ থাকে তাহলে ইসলামের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাবে। এসব কারণেই ইসলামে কখনই দেশপ্রেমটা আসেনি। যে কারণেই ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’ এটা হাদিস কুরআন কোথাও নেই। সবটাই জাল।
>জ্ঞানী তথা আলেমের চেহারার দিকে চাইলেও নেকি হয়: জাল।
হাদিস কুরআন কোথাও জ্ঞানীকে এতখানি বড় করে দেখানো হয়নি। বরং নির্ভেজাল অন্ধবিশ্বাসকে প্রশংসা করা হয়েছে। যেমন আবু বকর অন্ধ বিশ্বাসের চরমমাত্রা দেখানোর কারণে তাকে ‘সিদ্দিক’ উপাধি দেয়া হয়েছে।
>জ্ঞান অর্জনের জন্য চীন দেশে যাও: ইসলাম এতখানি ভালো কথা বলা ধর্ম না। যে কারণে এটাও ইসলামে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং ইসলাম কুরআনের শিক্ষার বাইরে সবটাকেই কুফরি বলেছে। জাহেলি যুগের সব রকম চিন্তা ভাবনা জ্ঞানকেই নিরুৎসাহি করা হয়েছে। চীন দেশে গিয়ে জ্ঞান অর্জন কেন করতে বলবেন নবী? তাহলে তার উপর কিভাবে ঈমান আনবে লোকজন? হযরত উমার আলেকজান্দিয়া লাইব্রেরি পুড়িয়ে দিয়েছিলেন কারণ সেখানে কুরআন বাদে সমস্ত কুফরি জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা হতো। বখতিয়ার খিলজি নালন্দ বিশ্ববিদ্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। যদি ইসলামে সামন্যতম জ্ঞান চর্চাকে উৎসাহিত করত তাহলে কখনই এরকম নাশকতা উমার বা খিলজি করত না।
>রাত জেগে জ্ঞান অর্জন ইবাদাতের চেয়ে উত্তম: ভুয়া। কুরআন হাদিসে কোথাও নেই।
>যে নিজেকে জেনেছে সে আল্লাহকেও জেনেছে:
সেক্রেটিসের ‘নিজেকে জানো’- ভূবণ বিখ্যাত উক্তির মত তৈরি করে এটা নবীর কথা হিসেবে চালানো হয়েছে। এতখানি অর্থবহন কথা ইসলাম বা তার নবীর পক্ষে বলা সম্ভব না। সক্রেটিস আর মুহাম্মদ জ্ঞান মননে সমান নয়। সক্রেটিস সত্যিকারের মহান!
>বিয়ে কর, আর কখনও তালাক দিয়ো না, কারণ তালাক দিলে আল্লাহর আরশ কাঁপে: একদম অসত্য।
ইসলাম এরকম কথা বলেছে তার প্রমাণ কোথাও নেই। বরং ইসলাম পুরুষদের বলেছে তারা চাইলে যখন খুশি তখন তাদের স্ত্রীদের তালাক দিতে পারবে। এর জন্য কোন কারণ প্রয়োজন নেই। তালাক দিলে আল্লার আরশ কাঁপে এটা যারা বনিয়েছিলো তারা ইসলামের বহু বিবাহ ও পুরুষের ইচ্ছাধিন তালাকের কুদিকটিকে ঢেকে দিতে বানিয়েছিলো। যে কারণে কুরআন-হাদিসে কোথাও এটা পাওয়া যায় না।
ইসলাম হচ্ছে দলিল ভিত্তিক ধর্ম। কুরআন হাদিসের বাইরে কারোর ব্যক্তিগত মতামত এখানে গ্রহণযোগ্য নয়। এমনিতে ধর্মে ভালো কিছু খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন সেখানে ইসলামে ভালো কিছু খুঁজে পাওয়া আরো বেশ দুস্কর। আমাদের অঞ্চলে নবীর নামে অনেক ভালো ভালো কথা চালানো হয়েছে যা আসলে ইসলামের কোথাও নেই। যেমন ইহুদী বুড়ির কাঁটা পুতে রাখা নবী পথে এবং সেই বুড়ি অসুস্থ হলে নবী তার সেবা করেন। না, নবী এতখানি সদয় ছিলেন না ইহুদীদের প্রতি। এরকম কোন ঘটনা তাই ইসলামী সোর্স থেকে জানা যায় না। বরং নবীর ইহুদীদের প্রতি নৃশংসতার কারণে খয়বার হামলার পর এক ইহুদী বুড়ি বিষ মাখানো মাংস তাকে খাইয়ে ছিলো হত্যা করতে। সেই বিষের প্রতিক্রিয়াতে নবী মুহাম্মদ আস্তে আস্তে অুসস্থ হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। সহি হাদিসে আছে নবী আয়েশাকে মৃত্যুর আগে তীব্র যন্ত্রণায় বলছিলেন, আয়েশা খয়বারে যে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিলো আমি তার যন্ত্রণা ভোগ করছি…। আসলে ইসলামই কেবল নয়, পৃথিবীর সব ধর্মকে জানতে শুরু করলে মানুষ এক সময় ধর্মের আসল চেহারা দেখতে পাবে। তখন আর ধর্মের প্রতি বিন্দু পরিমাণ শ্রদ্ধা থাকবে না…।