ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ নয় কেন - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

11 June, 2020

ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ নয় কেন

ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ নয় কেন
                                         অনেক পন্ডিতের মতানুসারে ব্রাহ্মণ এবং সংহিতা উভয় মিলেই বেদ। কিন্তু বেদোৎপত্তির বিষয়ে আমরা যেসব তথ্য পাই সেক্ষেত্রে বেদ কে অপৌরুষেয় এবং নিত্য বলা হয়েছে। যেমনঃ

তস্মাৎ যজ্ঞাত্ সর্বহুত ঋচঃ সামানি জজ্ঞিরে।
ছন্দাংসি জজ্ঞিরে তস্মাৎ যজুস্তস্মাদজায়ত।।
(ঋঃ ১০।৯০।৯, যজুঃ ৩১।৭, অথর্বঃ ১৯।৬।১৩)
পদার্থ- (তস্মাৎ) সেই ( যজ্ঞাৎ) ঈশ্বর হইতে,[ য়জ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ শ০ ব্রা০-১/১/২/১৩] য়জ্ঞঃ বিষ্ণু,ব্যাপক ঈশ্বর হইতে ( সর্বহুতঃ) সর্ব পূজিত ( ঋচঃ) ঋগ্বেদ ( সাসানি) সামবেদ ( জজ্ঞিরে) উৎপন্ন হয় ( ছন্দাংসি) অর্থবেদ ( জজ্ঞিরে) উৎপন্ন হয় ( তস্মাৎ) তাহা হইতে ( যজুঃ) যজুর্বেদ ( তস্মাৎ) তাহা হইতে ( অজায়ত) উৎপন্ন হয়।

টীকা-
ছন্দ=গোপথ ব্রাহ্মণের পূর্বভাগ ১/২৯ এ বলা হয়েছে-"অথর্বণা চন্দ্রমা দৈবতং তদেব জ্যোতিঃ সর্বাণি ছন্দাংসি আপস্থানম্" অর্থাৎ অর্থব্বেদের চন্দ্রমা দেবতা, তিনি জ্যোতি,সমস্ত প্রকারের ছন্দ এবং জলের স্থান। এখানে সমস্ত প্রকারের ছন্দ স্পষ্ট করে দেয় যে,অথর্ব্বেদ ছন্দময়। অথর্ব্বেদের ভাষ্যকার ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী তাঁর অথর্ব্বেদভাষ্যভূমিকা'য় বলছেন-অথর্ব্বেদের আরেক নাম "ছন্দ" এর অর্থ আনন্দদায়ক,অর্থাৎ তাহার মধ্যে আনন্দদায়ক পদার্থের বর্ণনা রয়েছে। চান্দেরাদেশ্চ ছঃ [ উঃ ৪/১৯]। ইতি চদু আহ্লাদে-আসুন, চস্য ছঃ। চন্দয়তি আহ্লাদয়তীতে ছন্দঃ]। পাণিনীর অষ্টাধ্যায়ীর অনেক মূত্রে "ছন্দ" কে বেদের অর্থে গ্রহণ করা হয়েছে,যথাঃ "ছন্দাংসি লুঙলঙলিট" [ পা০ ৩/৪/৬] অর্থাৎ বেদে ধাতু সম্বধীয় অর্থে ধাতুর সাথে লুঙ, লঙ লিট প্রত্যয় হয়। অনেকে বলে যে, পাণিনি মুনির অথর্ব্বেদের জ্ঞান চিলো না এজন্য অথর্ব্বেদ অর্বাচীন। এটাও তাদের ভ্রম, কেননা যেই প্রকার শাকলাদি শাখার নামে ঋগ্বেদ প্রসিদ্ধ সেই প্রকার শৌকনাদি সংহিতার নামে অথর্ব্বেদ প্রসিদ্ধ। পাণিনি মুনি "শাকলাব্ধ" [ পা০ ৪/৩/১২৮] এবং "শৌনকাদিভ্যচ্ছন্দসি" [ পা০ ৪/৩/১০৬] এই দুই সূত্রে ঋগ্বেদ এবং অথর্ব্বেদের দুটি শাখার উল্লেখ করেছেন। এ থেকে স্পষ্ট যে পাণিনি মুনির অথর্ব্বেদের জ্ঞান ছিলো।।

অর্থাৎ, সেই পূজনীয় এবং সবার গ্রহনযোগ্য পরমেশ্বর হতে ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ উৎপন্ন হয়েছে।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বলতে কি বলেছেন দেখুন👉 ब्राह्मण ग्रंथ

শিবপুরাণাদির নাম ইতিহাস ও পুরাণ নহে, কিন্তু—

ব্রাহ্মণানীতিহাসান পুরাণানি কল্পানু গাথানারাশংসীরিতি ॥

ইহা ব্রাহ্মণ এবং সূত্রগ্রস্থের বচম। ঐতরেয়, শতপথ, সাম এবং গোপথ ব্রাহ্মণেরই ইতিহাস, পুরাণ, কল্প, গাথা এবং নারাশংসী — এই পাঁচ নাম। (ইতিহাস) – যেমন জনক-যাজ্ঞবন্ধ্য সংবাদ; (পুরাণ) - জগতের উৎপত্তি প্রভৃতির বর্ণনা ; (কল্প ) —বৈদিক শব্দ সমূহের সামর্থ্য-বর্ণন এবং অর্থ-নিরূপণ ; ( গাথা )—কাহারও দৃষ্টান্ত-দার্টন্তিরূপ কথাপ্রসঙ্গ এবং (নারাশংসী)—মনুষ্যদিগের প্রশংসনীয় অথবা অপ্রশংসনীয় কর্ম্মের বর্ণন। এই সকলের দ্বারাই বেদার্থ প্রতীতি হইয়া থাকে। 

"ব্রাহ্মণ নাম কর্মাস্তমনমন্ত্রণাং ব্রহ্মনগ্রন্থঃ"
"‘ब्राह्मणं नाम कर्मणस्तन्मन्त्राणां व्याख्यानग्रन्थः’[তৈতরীয় সংহিতা ১।৫।১]-
ব্রাহ্মণ গ্রন্থের অতিরিক্ত নাম হল ইতিহাস, পুরাণ, কল্প, গাথা এবং নরাশাংসী।
এই ব্রাহ্মণ গ্রন্থে দেবসুর অর্থাৎ দেবতা (পণ্ডিত) অসুর (মূর্খ) উভয়েই যুদ্ধের জন্য বর্ণনা- ইত্যাদি গল্পের অংশ পাওয়া যায়, এর ইতিহাস নামকরণ করা হয়েছে..

আর একটি মন্ত্রে স্পষ্ট বেদ কে নিত্য বলা হয়েছে
" তস্মৈ নূনমভিদ্যবে বাচা বিরূপ নিত্যয়া; ঋগবেদ ৮।৭৫।৬"
  এর সমর্থন বেদান্তসূত্রে বলা হয়েছে
" অতএব চ নিত্যম; ১।৩।২৯"
 অর্থাৎ বেদ অপৌরুষেয় হেতু নিত্য। সেহেতু কল্পান্তরে বেদ বাণীর কোনরূপ পরিবর্তন হয় না।
তো এটা স্বাভাবিক যে, অপৌরুষেয় নিত্য বাণীতে কোন মনুষ্যের জীবনকাহিনী বা ইতিহাস থাকবে না। কারণ ইতিহাস তো কোন ব্যক্তির জন্মের পর তার জীবনের কৃত কর্মের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়ে থাকে। আর কল্পান্তরে ইতিহাস কখনো এক থাকে না এজন্য ইতিহাস সর্বদা অনিত্য। যেহেতু  বেদ সর্বদা নিত্য , তাই অনিত্যাদি ইতিহাস যুক্তগ্রন্থ বেদ হতে পারে না।


 ম্যাক্সমুলার তো এক জায়গায় পশ্চিমী প্রবাহের বিরুদ্ধ, ঋষি দয়ানন্দের অনুকরণ করে বলেছেন যে, প্রত্যেক শব্দ নিজ ধাতবিক অর্থে কিছু না কিছু প্রকাশ করে -

Every word re-terms something of its radical meaning, everything epithet trills, ever thought it, if we once disentangle it true correct and complete.
(sanskrit Literature by Maxmuller p. 285)



বেদের মধ্যে ইতিহাসাদির উল্লেখ সায়নভাষ্যে লক্ষ্য করা যায়।  এ সমন্ধ্যে ঋষি অরবিন্দ সায়ন ভাষ্য সমন্ধ্যে বলেছেন যে,

"সায়ন ঋক মন্ত্র মন্ত্রগুলির কর্ম কান্ডীয় ব্যাখ্যা উপস্থাপিত করেছেন,  প্রয়োজনবোধে কোথাও পৌরাণিকী আখ্যায়িকাত্মক বা ঐতিহাসিক অর্থের আভাস দিয়েছেন যেন পরীক্ষাচ্ছলে। কোনও রূপ উদাত্ত বা ভাবগম্ভীর অর্থের নিরুপন সায়নের টীকাই সুদুর্লভ।  বহু আয়াসেও যে মন্ত্রগুলির যাজ্ঞিকী বা পৌরাণিকী ব্যাখ্যা সম্ভব হয় নি সেখানে বিকল্প হিসাবে উচ্চাঙ্গ অর্থের ক্ষীণ আভাস দিতে বাধ্য হয়েছেন হতাশ হয়েই যেন।  তথাপি আধ্যাত্মিক অর্থে বেদের প্রমাণ্য সায়ন নিরাকরন করেন নি,  ঋক মন্ত্রগুলিতে উচ্চতর কোন পরমার্থ সত্য নিহিত এ কথা তিনি অস্বীকার করেন নি।  সেই অন্তিমাকার্যটির সেই অস্বীকৃতির ভার এই যুগের উপর ন্যস্ত হল, পাশ্চাত্য পন্ডিতদের প্রভাবে তাহা লোকপ্রিয়ও হয়ে উঠল।"
          

        
অর্থাৎ ঋষি অরবিন্দের মতেও  এটা স্পষ্ট যে, বেদ মন্ত্র কোন ইতিহাসাদির বর্ণনা করে নি।  বরং  মন্ত্রগুলোর একটা উচ্চ আধ্যাত্মিক অর্থ রয়েছে এটাই তিনি স্বীকার করেছেন। 
অপরদিকে ব্রাহ্মণাদি গ্রন্থ যে ইতিহাসাদির গ্রন্থ তার প্রমাণস্বরূপ ন্যায়ভাষ্যে বলা হয়েছে-

"বাক্য বিভাগস্য চার্থগ্রহণাৎ "
(অঃ ২। আ ১। সূ ৬০)
"বিধ্যর্থবাদানিবাদবচনবিনিয়োগাৎ "
(অ ২। আ ১। সূ ৬১)
" স্তুতির্নন্দা পরকৃতিঃ পুরাকল্প ইত্যর্থবাদঃ"
(অঃ ২। আ ১।৬৩)

অর্থাৎ লৌকিক ব্যবহারে যেরূপ বিধি, অর্থবাদ ও অনুবাদ তিনপ্রকার বচন ব্যবহার হয়, সেরূপ ব্রাহ্মণগ্রন্থেও হয়ে থাকে। তার মধ্যে ১ম বিধিবাক্য,  যেমন (দেবদত্তো গ্রামং গচ্ছেৎ সুখার্থম্) অর্থাৎ সুখের জন্য দেবদত্ত গ্রামে যায়।
উপরোক্ত বাক্য যেমন লৌকিক বিধিবাক্য ব্যবহৃত হয়েছে,  সেরূপ ব্রাহ্মণগ্রন্থেও লেখা রয়েছে। যেমন (অগ্নিহোত্রং জুহুয়াৎ স্বর্গকামঃ) অর্থাৎ যার সুখপ্রাপ্তির ইচ্ছা আছে,  সে অগ্নিহোত্র করে থাকে।

২য় অর্থবাদ - এই অর্থবাদ চার প্রকার।  যথাঃ

(i) স্তুতিঃ অর্থাৎ গুণের প্রকাশ করা। যা দ্বারা মানুষের উত্তম কর্ম করতে এবং গুণগ্রহন করতে শ্রদ্ধ জন্মে।

(ii) নিন্দাঃ অর্থাৎ কর্মে দোষ ধরে দেওয়া, যাতে কেউ মন্দ কর্ম না করে।

(iii) পরাকৃতিঃ যেমনঃ এই চোর মন্দ করেছে বলে শাস্তি পেলো, এবং এই সাধু ভালো কাজ করেছে বলে প্রতিষ্ঠা পেলো  ইত্যাদিকে পরাকৃতি বলে।

(iv) পুরাকল্পঃ অর্থাৎ যে ঘটনা পূর্বে ঘটেছে,  যেমনঃ (রাজর্ষি জনকের সভায় যাজ্ঞবল্ক, গার্গী, শাকল্য আদি একত্র হয়ে পরস্পর প্রশ্নোত্তর রীতিতে সংবাদ করেছিলেন, ইত্যাদি ইতিহাসকে "পুরাকল্প" বলে।

পাণিনীর অষ্টাধ্যায়ীতে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে,

" চতুর্থ্যর্থে বহুলং ছন্দসি "
(অঃ২। পা ৩।সূ ৬২)

অর্থাৎ ব্রাহ্মণ শব্দ দ্বারা ঐতরেয় আদি ব্যাখ্যান গ্রহন হয়,  এবং ছন্দস শব্দ দ্বারা মন্ত্র মূল বেদের গ্রহন হয়ে থাকে। এই জন্য এই সূত্রে ছন্দঃ গ্রহন করা হয়েছে [ছন্দাংসি] বেদ বিষয়ে [চতুর্থ্যয়ে] চতুর্থ বিভক্তির অর্থে ষষ্ঠী বিভক্তি হয় [বহুলং] বহুল করে। 




                        
ব্রাহ্মণগ্রন্থ যে বেদ সঙ্গা প্রাপ্ত হতে পারে না,  তার অন্যতম কারন এই যে, " ইষে ত্বোজে ত্বেতি " শতপথঃ কাং ১।অঃ ৭। " ইত্যাদি বেদ মন্ত্রসকলের "প্রতীক" ধরে ব্রাহ্মণগ্রন্থে বেদের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু  মন্ত্র সংহিতাই ব্রাহ্মণগ্রন্থের একটিও প্রতীক কোন স্থানে দেখা যায় না।  অতএব ঈশ্বরোক্ত  রূপ যে, মূল মন্ত্র অর্থাৎ চারটিই সংহিতা আছে তাই বেদ, ব্রাহ্মণগ্রন্থ বেদ নয়।
               
এখন জিজ্ঞাসা যে, ব্রাহ্মণগ্রন্থ সকলকে বেদের সমতূল্য প্রমাণীয় গ্রন্থ বলে স্বীকার করা কর্তব্য কি না?

উত্তর এই যে, ব্রাহ্মণগ্রন্থ প্রমাণ কদাপি বেদের সমতূল্য হতে পারে না।  কারন তাহা ঈশ্বরোক্ত নয়,  কিন্তু এগুলো [ব্রাহ্মণ সকল] বেদানুকুল বশতঃ প্রমাণ যোগ্য হয়ে থাকে।  এদের মধ্যে প্রভেদ এই যে, যদি কোন স্থানে ব্রাহ্মণগ্রন্থের রচনা বেদ প্রতিকূল দৃষ্ট হয়,  তবে তা প্রামাণ্য নয়, কিন্তু বেদে যদি ব্রাহ্মণগ্রন্থের বিরোধ দৃষ্ট হয়,  তবুও তা সর্বদা প্রামাণ্য।  অর্থাৎ বেদ স্বতঃ প্রমাণ ও ব্রাহ্মণগ্রন্থ সকল বেদানুকুল বশতঃ পরতঃ প্রমাণ স্বরূপ।

[সন্দর্ভঃ ঋগবেদভাষ্যভূমিকা [মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী], বেদ রহস্য [মহাত্মা নারায়ন স্বামী], secret of the vedas [ ঋষি অরবিন্দ],  অষ্টাধ্যায়ী [পাণিনী]

মন্ত্র সংহিতা বেদ। ছন্দ থেকে ব্রাহ্মণ পৃথক পাণিনি অষ্টধ্যায়ী ৪।২।৬৬ [ देखिये-छन्दोब्राह्मणानि च तद्विषयाणि ]
জৈমিনিকৃত পূর্বমিমাংসা ১।২।৩২ [ तच्चोदकेषु मंत्राख्या ] ২।১।৩৩ [ शेषे ब्राह्मणशब्दः ] যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে বেদের যে অংশটি অবশিষ্ট আছে তা ব্রাহ্মণ।

"ब्रह्मणां वेदानामिमानि व्याख्यानानि ब्राह्मणानि अर्थात् शेषभूतानि सन्तीति"-ঈশ্বর বেদস্থ বাক্য অর্থাৎ ছন্দ মন্ত্রাদি দ্বারা ঋষিদের বেদ জ্ঞাত করেছেন, বাকি অর্থ শিক্ষা, শ্রবণ, আবৃত্তি, ব্যখ্যা ইত্যাদি..যা কিছু। ব্রহ্মা থেকে জৈমিনি মুনি মহাশয়রা করে গেছেন, যার কারনে ঐতরেয় প্রভৃতি গ্রন্থগুলি ব্রহ্মাদির ব্যাখ্যান গ্রন্থ.. তাই এসকলের নাম ব্রাহ্মণ গ্রন্থ হয়েছে, অর্থাৎ "ব্রাহ্মণম বেদনামিমানি ব্যাখ্যানানি ব্রাহ্মণানি অর্থাৎ শেষভূতানি সন্তীতি"।

ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ নয় কেন
গোপথ ব্রাহ্মণ পূর্বভাগ ২।১৬
" চত্বারো বৈ ইমে বেদা ঋগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদো ব্রহ্মবেদ ইতি "- এখানে ব্রাহ্মণ নিজে বলেছেন ব্রাহ্মণ গ্রন্থে বেদ চার ।
ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ নয় কেন


ব্যাকরন ও স্মৃতি গ্রন্থগুলির এটাই কথন যে, বেদ মন্ত্র পাঠের সময় উদাত্ত, অনুদাত্ত, স্বরিত= ত্রৈস্বর্য় পাঠ করা হয়। কেবল যজ্ঞে একশ্রুতি পাঠ হয়; তাও ন্যোঙ্খ ও সাম-গান মকে ছেড়ে। অষ্টাধ্যায়ী(১/২/৩৪), কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্র(১/৭/১৮-১৯), যজুঃপ্রাতিশাখ্য তথা মীমাংসা(৯/২/৭)-তে এই পক্ষটিকে স্থাপিত করা হয়েছে। কিন্তু মীমাংসা দর্শনের(১২/৩/১৭)-তে ঋষি জৈমিনি ভাষিক স্বর মেনেছেন। এই সম্বন্ধে মীমাংসা দর্শনের সর্বমান্য ভাষ্যকার শবরস্বামী বলেছেন --- "ভাষাস্বরো ব্রাহ্মণে প্রবৃত্তঃ"-- এই স্বরভেদ দ্বারা বেদ ও ব্রাহ্মণের পার্থক্য স্বয়ং সিদ্ধ হয়।

বেদগুলির প্রত্যেক মন্ত্রের ঋষি, দেবতা, ছন্দ, স্বর নিয়ত আছে। ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলির জন্য এইভাবে কোনো বিধান নেই। যদি ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলোর বেদে সমাবেশ হতো তবে, বেদমন্ত্রগুলির সমান তাদেরও ঋষি, দেবতা আদি নিয়ত করা হতো। এইভাবে যেমন বেদগুলোর উপবেদ ব্রাহ্মণ আদি হয়, তেমনি ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলোকে বেদ মানলে তাদেরও উপবেদ ও ব্রাহ্মণ আদি হতো। এরকম না হওয়ায় বেদ ও ব্রাহ্মণের মধ্যে ভেদ স্পষ্টতই।

অষ্টাধ্যায়ীর "পুরানপ্রোক্তেষু ব্রাহ্মণকল্পেষু"(৪/৩/১০৫)- এই সূত্রে কল্প ও ব্রাহ্মণ দুটি আলাদা গ্রন্থের নাম বলা আছে। যজ্ঞে প্রযোজ্য মন্ত্র গুলোর বিবরণ- অর্থবাদ- বিনিয়োগের বর্ণনাকারী গ্রন্থ হল ব্রাহ্মণ এবং শুধু বিনিয়োগবিধির বিশদরূপে বর্ণনকারি গ্রন্থ হল কল্প। নিরুক্তে (১৩/৭) বলা হয়েছে "মন্ত্রব্রাহ্মণকল্পেঃ"-- মন্ত্র, ব্রাহ্মণ, কল্পের দ্বারা যজ্ঞ সম্পন্ন হয়। যজ্ঞে মন্ত্র পড়া হয়, ব্রাহ্মণের দ্বারা মন্ত্রগুলোর বিবরণ, অর্থবাদ, বিনিয়োগ করা হয় এবং কল্প দ্বারা বিনিয়োগবিধি বিশদরূপে বলা হয়। এইভাবে অষ্টাধ্যায়ী গ্রন্থে মন্ত্র, ব্রাহ্মণ ও কল্প -- তিনটি শব্দের স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। অষ্টাধ্যায়ীর "ছন্দোব্রাহ্মণানি চ তদবিষয়ানি" ( ৪/২/৬৬)-তে ছন্দ(বেদ), ব্রাহ্মণ-- এই দুটি গ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে ছন্দ আলাদা বিষয় এবং ব্রাহ্মণ আলাদা বিষয় হয়। এই সূত্রের ভাষ্য করতে গিয়ে নাগেশ ও কৈয়ট "গোবলিবর্দন্যায়ের" বাহানা করে ছন্দ ও ব্রাহ্মণ দুটি আলাদা বিষয়কে এক করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্যাকরণের প্রকাণ্ড পন্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসক তার খন্ডন করে লিখেছেন----

"বস্তুতো গায়ত্র্যাদিছন্দোবদ্ধেষু মন্ত্রেষ্বেব ছন্দস্তমিতি বোধয়িতুং তত্র ব্রাহ্মণগ্রহণম্"---  

অর্থাৎ বস্তুতঃ গায়ত্র্যাদি ছন্দোবদ্ধ মন্ত্রগুলিতেই ছন্দ পদের প্রবৃত্তিকে বলার জন্যই এই সূত্রে ব্রাহ্মণ পদের গ্রহণ করা হয়েছে।---(মহাভাষ্য ১/৩/১০)

 "ব্রহ্ম" বেদের পর্যায়বাচি শব্দ। ব্রহ্মনো বেদস্য ব্যাখ্যানানি। তস্য ব্যাখ্যান ইতি চ ব্যাখ্যাতব্যনাম্নঃ"(অষ্টা ৪/৩/৬৬) দ্বারা "অন্" প্রত্যয়। মহাভাষ্যকার পতঞ্জলির স্পষ্ট ঘোষণা----
ব্রাহ্মণৈর্মহর্ষিভিঃ প্রোক্তানি বেদব্যাখ্যানানি ব্রাহ্মণানি"--- 

 অর্থাৎ ব্রাহ্মণ তথা মহর্ষিগণ বেদের ব্যাখ্যানরূপ ব্রাহ্মণগ্রন্থের রচনা করলেন। 'ব্যাখ্যেয়' এবং 'ব্যাখ্যান'--- এদের মধ্যে সাহচর্য হওয়ার পরেও দুটি এক হতে পারেনা। ব্যাখ্যেয় বেদ হলো সাধ্য এবং ব্যাখ্যানরূপ ব্রাহ্মণ হল সাধন। সাধ্য এক হলেও সাধন অনেক হতে পারে। মূলকে বুঝে নিলে টিকার দরকার থাকে না। মনুষ্যোক্ত ব্রাহ্মণগ্রন্থগুলোকে ঈশ্বরোক্ত বেদ মানা যেতে পারে না। 

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ