শাকাহার না মাংসাহার - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

09 June, 2020

শাকাহার না মাংসাহার


🐥☘️বিশুদ্ধ শাকাহার না মাংসাহার🐥☘️
পরিবেশ দূষণ রোধে গবাদি পশু পালন এবং মাংস উৎপাদনের শ্রম শিল্পগুলো পরিবেশের ভয়ানক ক্ষতি সাধন করে থাকে। আমরা যেসব পরিবেশগত সমস্যার/ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি তার অনেকটা দায় সন্দেহাতীত ভাবে এসব শিল্পকারখানারই উপর বর্তায়। মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং বিশ্বের পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধের লড়াইয়ে গ্রিনহাউস গ্যাস কমাতে নিরামিষ ভোজনকে কার্যকরী পন্থা বলেই মানছেন গবেষকরা।
পরিবেশ সচেতন নানা পদক্ষেপের মধ্যে অনেক দেশই আজ কাল বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে কম কার্বন নির্গমণের জন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করেছে। এতে কিছু উপকার হলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিরামিষাশী হওয়ার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত কার্যকরভাবে বিশ্বউষ্ণায়নরোধ করা যেতে পারে। সাম্প্রতিক এক জাতিসংঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কু-প্রভাব মোকাবেলায় নিরামিষখাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৬ সালের এক জাতিসংঘ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ ঘটে মাংস ভক্ষণের কারণে। আর ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ডওয়াচ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ হার প্রায় ৫০শতাংশ । কিন্তু বিশ্বে বিশেষকরে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিরদেশগুলোতে মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ অথচ পরিবেশের জন্য এর পরিণাম ভয়াবহ৷ বিস্তৃত খামারে যে পশুপালন করা হয় সেই পশুদের জন্য খাবার হিসাবে বিপুল পরিমাণ শস্য কণা এবং পানির ব্যবহার থেকে শুরু করে পশু হত্যা এবং তাদের মাংস বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ, প্রক্রিয়াজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপই জ্বালানি- নিবিড় হওয়ায় তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।পশুর জন্য চারণভূমির তৈরির জন্য বন পোড়ানোয় প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমণ বেড়ে যায়। খামারের পশুদের জন্য শস্য উৎপাদন করতে একরের পর একর বন পোড়ানোর কারণে গাছে সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। তাছাড়া, পশুর বিষ্ঠা থেকেও বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়।
বিস্তাতিত জানতে----
http://www.fao.org/docrep/010/a0701e/a0701e00.htm
মাংসাহার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কারণঃ মাংসাহার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ। আমি নিজেকে কখনো ক্ষুধার্ত ও পুষ্টিহীন করতে চাই না। ঠিক তো? অবশ্যই ঠিক। আর আমি এটাও চাই না যে, এই পৃথিবীতে আমার অন্যান্য সকল ভাই-বোনেরা এর শিকার হউক। আমরা শাকাহারী(ভেজিটেরিয়ান) হলে এবং মাংসাহার বর্জন করলে একই শক্তি ব্যয় করে অন্তত দশগুন লোক খেতে পারবে। এনার্জি পিরামিড (Energy pyramid)এর ওপর ভিত্তি করে এ কথা বলা যায় যে, ১ একক মাংসের খরচ= ১০ একক শাক-সবজির খরচ। অর্থাৎ এক একক শক্তিতে (মাংসের পেছনে) যে খরচ হয় তা দিয়ে ১০ গুণ বেশী উদ্ভিজ্জ শক্তি পাওয়া যায়= ১০ জনকে খাওয়ানো যায়। তাই একজন মানুষ যিনি ভেজিটেরিয়ান তিনি প্রকারন্তরে ৯ জন মানুষকে দারিদ্র্যতা ও পুষ্টিহীনতার হাত থেকে রক্ষা করছেন। আমি যেহেতু মানবতার জয়গান গাই এবং সেই পৃথিবীটাকে নিজ পরিবারের মত মনে করি, তাই আমি আমার ভাই-বোনদের এবং নিষ্পাপ শিশুদের দারিদ্র্যতা ও অপুষ্টির শিকার হয়ে মরতে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি না।
বর্তমান যুগে কেউ সিংহের মত আফ্রিকার জঙ্গলে শিকার করে বেঁচে থাকে না। মাংস একটি অনাবশ্যকীয় আসক্তি। মাংস দিয়ে তৈরী সব ধরনের খাবারের বিকল্প একজন আদর্শ ভেজিটেরিয়ান এর আছে এবং তা নিঃসন্দেহে পুষ্টিগুণ দিয়েও অধিকতর সমৃদ্ধ। অথচ এমন হাজারটা শাক-সবজি জাতীয় পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার আছে যার বিকল্প হিসেবে কখনোই মাংস জাতীয় খাবার সমীচীন না।
মাংস নবায়ন যোগ্য নয়(Non renewable):
একটি প্রাণীকে হত্যা করলে তার পুনঃউৎপাদন ক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু একটি উদ্ভিদকে সমুলে উৎপাটন করলেও এর কান্ড, বীজ, মুল ইত্যাদি অংশ থেকে নতুন চারার জন্ম হয় এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। তাছাড়া একটি উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ ভোজ্য হিসেবে ব্যবহার করলেও তা অতিদ্রুত গজিয়ে যায়।
জীবন অনেক সুন্দর!(Life is so beautiful):
জীবন আমার কাছে অনেক সুন্দর, সবচেয়ে প্রিয় এবং সবচেয়ে মুল্যবান।প্রত্যেকটা মানুষ এভাবেই তার জীবনকে ভাবে এবং ভালবাসে।আমি যদি অপর কোন একজন মানুষকে খুন করি তাহলে আমি একজন খুনি হিসেবে পরিগনিত হব। ক্লারণ আমি তার মহা মূল্যবান জীবনটাকে ছিনিয়ে নিয়েছি। ঠিক তো????? হ্যা, ঠিক। তাহলে আমি কিভাবে একই অপরাধ অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীর ক্ষেত্রে করতে পারি যাদের আমাদের মত মস্তিষ্ক আছে, যাদের আমাদের মত জীবোণ আছে,যারা আমদের মত মরতে ভয় পায় এবং যারা আমাদের মত সুখ-দুঃখের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে???!!!!! শুধু কি এই কারনে যে,আমরা তাদে ভাষা বুঝি না এবং তারা আমাদের থেকে অনুর্বর মস্তিষ্ক সম্পন্ন??!! তাহলে তো মানসিক রোগীদের খুন করাও বৈধ হওয়া উচিৎ, কোমা রোগীদেরও খুন করাও বৈধ হওয়া উচিৎ?? অনাথ শিশুদেরকেও হত্যা করা উচিৎ??? আর তাই সঙ্গত কারনে প্রাণীদেরও হত্যা করা উচিৎ না। বরং তাদের ভালবেসে রক্ষা করা উচিৎ।
🌻🌷 প্রশ্নঃ তাহলে আপনারা উদ্ভিজ্জ খাবার (ফল-ফলাদি,শাক-সবজি ইত্যাদি) খাওয়া বন্ধ করেন না কেন? কেননা তাদেরও তো প্রাণ আছে এবং এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
🌷 উত্তরঃ গবেষণা এটা প্রমাণ করেছে যে, উদ্ভিদের প্রাণীদের মত প্রায় একই রকম প্রক্রিয়া এবং কোষীয় গঠন(processes and cellular structures) রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান এটা বলে নি যে, উদ্ভিদসমুহের প্রাণীকূলের মত ব্যাক্তিত্ব আছে, সৃজনশীলতা আছে। এটার কোন প্রমাণ নেই যে, উদ্ভিদ প্রাণীদের মত সুখ,দুঃখের অনুভূতি প্রকাশ করে। তাছাড়া উদ্ভিদ এবং প্রাণীর উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর তাদের মাঝে, সুস্পষ্টরূপে পার্থক্য আছে বলেই উদ্ভিদবিদ্যা (বোটানি) এবং প্রাণীবিদ্যা ( জুলুজি) আলাদা এবং স্বতন্ত্র। আমরা জানি যে, উদ্ভিদ দুঃখও পায় বটে। কিন্তু সে কখনোই উপলব্ধি করতে পারে না যে, “আমি একটি আত্মা,আমি একটি আম গাছ।’’ আর আমরা প্রাণীজ আমিষ বা মাংস না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি কিন্তু উদ্ভিজ্জ খাবার ছাড়া একদিনও সাবলীলব ভাবে টিকতে পারি না। তাই মানবতাবোধে উজ্জীবিত হয়ে আমাদের এটা ভাবা উচিৎ যে, আমরা বিনা রক্তপাত করেই খুব সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারি। আর পাশবিকভাবে ভাবলে, নরখাদক/মানুষ খাওয়াকেও সাপোর্ট করেও যুক্তি দেওয়া যায়।তাই নয় কি??
🌻🌷 প্রশ্নঃ সিংহ, বাঘ ইত্যাদি প্রাণীসমূহ তো মাংস খায়। তাহলে মানুষের খেলে ক্ষতি কি??
🌷 উত্তরঃ সিংহ এবং বাঘ মাংসাশী এবং তারা প্রাণীজ আমিষ খায় কারণ তারা প্রকৃতিগতভাবে এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। আর তারা এমন অবস্থায় থাকে না যে, তারা চিন্তা করবে, বিশ্লেষণ করবে কি খাবে,কিভাবে খাবে? তারা এটাও ভাবে না যে কাঁচা মাংস খাবে না রান্না করা মাংস খাবে?? ৫ প্রকারের মাংস মিক্স করে খাবে কি না এটাও তাদের মনে কখনো চিন্তার উদ্রেক করে না। অথচ একজন মানুষ চিন্তা করতে পারে যে, সে কি খাবে, কিভাবে খাবে।আর যেহেতু এটা ১০০% প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রাণী হত্যা করে মাংস খাওয়া দারিদ্র্য এবং ক্ষুধার সৃষ্টি করে এবং ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণ করে তাই একজন চেতন বোধ সম্পন্ন মানুষ কখনোই প্রাণী হত্যা করবে না। আর যেহেতু মানুষ প্রাণী হত্যা না করে শুধুমাত্র উদ্ভিজ্জ খাবার খেয়ে সাবলীলভাবে বেঁচে থাকতে পারে তাহলে এমন অপরাধ না করাটা নিশ্চয়ই মঙ্গলজনক।
🌻🌷 প্রশ্নঃ কিন্তু আমি একজন নাস্তিক। আমি আত্মা বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। তাই প্রাণী এবং উদ্ভিদ উভয়ই আমার কাছে রাসায়নিক ক্রিয়ালব্ধ ফল। তাহলে কেন আমি কেন প্রানীজ মাংস খাব না?
🌷 উত্তরঃ আপনি নাস্তিক/অজ্ঞেয়বাদী যাই হন, অনেক কারণ আছে যেসব কারণে আপনি মাংসাহারকে বাদ দিয়ে শাকাহারী হবেন। আমি মনে করি আপনি একজন মানুষ এবং আপনিও একমত হবেন যে, একজন মানুষের অপর একজন মানুষকে আঘাত করা, দুঃখে রাখা ঠিক না। আমি মনে করি, আপনি আপনার বন্ধুদের জন্য, এককথায় মানব জাতির জন্য ভালবাসা অনুভব করেন। তাই বলা যায়, আপনি নিশ্চয়ই নিজে খেয়ে অন্য ৯ জন মানুষকে ক্ষুধার্ত রাখতে পছন্দ করবেন না। পৃথিবীকে রক্ষাকারী পরিবেশকে আপনি নিশ্চয়ই রক্ষা করতে সচেষ্ট হবেন। তদুপরি,আপনি নিশ্চয়ই চাবেন না যে, আপনার ভবিষ্যত প্রজন্ম দারিদ্র্য,অপুষ্টি এবং নিষ্ঠুর স্বার্থপরতার শিকার হউক!! সেক্ষেত্রে আপনাকে “মাংসাহারকে না বলুন” প্রচারে যোগ দেওয়া উচিৎ।(( কারণসমুহ পূর্বে উল্লেখিত))।
🌻🌷 প্রশ্নঃ ধরুণ,আমি এমন একটা জায়গায় আছি যেখানে শুধু মাংস পাওয়া যায়(এন্টার্কটিকার একটি নির্জন দ্বীপে)। তখন কি আমি মাংস খাবো না?
🌷 উত্তরঃ এটা একটা মজার প্রশ্ন। আপনি জীবনের কতটুকু সময় তদ্রুপ অবস্থায় থাকেন??? ভালো কথা হচ্ছে যে, আপনি নিজেই স্বীকার করলেন যে, সেইসব পরিস্থিতি ব্যতীত প্রাণীর মাংস খাওয়া ঠিক না। আর আপনি যেহেতু একটি মানব সমাজে বসবাস করছেন সেক্ষেত্রে আপনার এমন অবস্থা না আসার সম্ভাবনাই বেশী (৯৯.৯৯%) যদি না আপনি রবিনসন ক্রুসো হতে চান। আর একটা বিষয় , প্রায় সব প্রাণীই উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল এবং উদ্ভিদের জন্যই বেঁচে থাকতে পারে। সব ধরনের খাদ্য শৃঙ্খল উদ্ভিদ দিয়েই শুরু হয়। এমন কোন প্রাণী নেই যারা সূর্য শক্তিকে জীবনী শক্তিতে রুপান্তরিত করতে পারে। এটা শুধু উদ্ভিদেরাই পারে।
🌻🌷 প্রশ্নঃ আমরা যদি প্রাণীজ মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেই তাহলে কি সেসব প্রাণী দিয়ে সম্পুর্ন পৃথিবী ভরপুর হয়ে যাবে না??আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে অবশ্যি প্রাণী হত্যা করে খাওয়া উচিৎ। তাই নয় কি??
🌷 উত্তরঃ খাদ্য শৃঙ্খল তার নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী চলতে থাকবে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখবে। এটআ একটা মৌলিক জ্ঞান। আর মানুষ তো কখনো সর্বভুক প্রাণীদের( সিংহ, বাঘ, শকুন) হত্যা করে খায় না। আপনার কথা অনুযায়ী তাহলে তো সমগ্র পৃথিবী বাঘময় অথবা সিংহময় হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তা আজ অবধি হয় নি। আর মানুষ অধিকাংশ প্রাণীকে প্রতিপালন করে থাকে ফার্মে এবং পরবরতীতে তাদের হত্যা করে খায়। এতে করে পরিবেশের উপকার না হলেও ক্ষতি অনেক বেশী হয়। তাই এটি একটি অযৌক্তিক প্রশ্ন। পক্ষান্তরে, সর্বভুকসহ অন্যান্য প্রাণীরা ফারম হাউস তৈরী করতে পারে না এবং খোয়ার জন্য অন্যান্য প্রাণীদের লালন-পালন করতে পারে না। তাই প্রাণী হত্যা বন্ধ করলে সহজেই তারা তাদের আহার্য পাবে।
🌻🌷 প্রশ্নঃ আমি যদি বলি, প্রাণি হত্যা করা একটা natural phenomena( প্রাকৃতিক প্রপঞ্চ/কারণ)। সব শক্তিশালি প্রানীরাই তো মাংস খায়। তাহলে মানুষ মাংস খেলে সমস্যা কোথায়??
🌷 উত্তরঃ প্রথমত বলা হয়েছে যে, প্রাণীজ় আমিষ নবায়নযোগ্য নয়। প্রাণী হত্যা করলে তাদের পুনঃ উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। আর প্রাণীরা খাবারের জন্য মানুষের মত ফার্ম তৈরী করতে পারে না। শিকার করে ক্ষুধা নিবৃত্ত করা তাদের প্রকৃতিজাত সহজাত প্রবৃত্তি। দ্বিতীয়ত, মোটামুটি সব শক্তিশালী প্রাণীরা তৃণভোজী। যেমনঃ হাতি, ঘোড়া, জলহস্তি, বুনো মোষ, গরিলা, গন্ডার, জ়েব্রা ইত্যাদি। তৃতীয়ত, প্রাণীরা নগ্ন হয়ে ঘোরা-ফেরা করে, তার কবিতা পড়ে না, তারা রান্না করে খায় না ইত্যাদি। তাই মাংস খাওয়া যসি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হত তাহলে মানুষ সবসময় কাঁচা মাংস খেত আর চামচ/কাটা কিছুই ব্যবহার করতো না। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এবং সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। আমাদের বিচার বুদ্ধির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। আমরা করুণা করতে পারি, বিস্বস্ত হতে পারি। তাই মানুষ যদি তার প্রকৃতিপ্রদত্ত সহজাত বৈশিষ্ট্যগুলোকে সমুন্নত রাখতে চায় তাহলে তাদের অবশ্যই প্রাণী হত্যা বন্ধ করে তাদের রক্ষা করতে হবে এবং প্রাণী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। আর শক্তির অপব্যবহার করা নিশ্চয়ই উচিৎ নয়। যদি সঠিক হয় তাহলে তো, শক্তিশালী মানুষগুলোরও উচিৎ দুর্বল মানুষগুলোকে পদদলিত করে প্রভাব বিস্তার করা। এটা কি আদৌ মানবিকতা সম্পন্ন কোন মানুষের কাজ হতে পারে?? তাই চলো সবাই মানুষ হই। দুর্বলদের রক্ষা করি। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার নিশ্চয়ই মনুষ্যত্বের বৈশিষ্ট্য না।
🌻🌷 প্রশ্নঃ বায়োলজিকালি কিন্তু মানুষ সহজাতভাবে প্রানীর মাংস খেতে পারে। আমাদের ইন্টেস্টাইন দাঁতের দিকে তাকাও?আমাদের কিন্তু তৃণভোজ়ী প্রাণীদের মত সেলুলোজ হজম করার মত অঙ্গ নেই। আমরা তো তাহলে নিঃসন্দেহে প্রাণীর মাংস খেতে পারি, তাই নয় কি?
🌷 উত্তরঃ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি সর্বভুক এবং তৃণভোজ়ি উভয়ের থেকে আলাদা এবং স্বতন্ত্র। তৃণভোজীর মত মানুষ ঘাস খায় না আর সর্বভুকদের মতোও কাঁচা মাংস খায় না। বাঘ,সিংহের মত আমাদের ইয়া বড় বড় ক্যানাইন দাঁতও নেই। বরং, মানুষের ক্যানাইন দাঁতসমুহ প্রামাণিকভাবে ইক্ষুর আচ্ছাদন ছিঁড়ার জন্য সবচেয়ে উত্তম (ডেন্টিস্টকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন)। দৌড় দিয়ে, চেস করে সর্বভুক প্রাণীরা তাদের শিকার ধরে এবং তার পরেই তাদের বড় বড় দাঁত, নখ দিয়ে তাদের আহার কারয সম্পাদন করে। মানুষ তাহলে কেন এভাবে শিকার করে না?মানুষকে এক্ষেত্রে প্রাণীদের বাঁধতে হয়/ বন্দি করতে হয় এবং বিশেষ যন্ত্রপাতি দিয়ে কাটতে হয়।একটু বুঝে ভাবুন তো? বিপরীতে ফল-মুল,শাক-সবজি কিন্তু রান্না না করেও খাওয়া যেতে পারে। তাই আমাদের জীব বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান থাকলে আমরা অবশ্যই শাকাহারী হব এবং শরীর, মন ও মস্তিষ্ককে সুস্থ, স্বাভাবিক রাখবো।
🌻🌷 প্রশ্নঃ কিন্তু আমি এমন এক সমাজে থাকি, এমন এক পরিবেশে থাকি, এমন এক পরিবারে থাকি যেখানে মাংস না খেলে চলেই না। তাহলে আমি কিভাবে আমার মাংসাহার বন্ধ করবো?? আর আমি বন্ধ করলে তো আমার গ্রুপের সবাই আমাকে Crazy বলবে।
🌷 উত্তরঃ হুম। এটা একটা honest প্রশ্ন। অনেক ভাল লোক তাদের সঙ্গীদের পাল্লায় পরে মাংস খেয়ে থাকে। কিন্তু তুমি একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা কর!!! ভাবো, তুমি একদল নরখাদক ( মানুষখেকো) লোকের সাথে আছো। তারা তোমার পরিবারকে খেতে চাইবে, তোমার বাবা-মার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছেদ করে খাবে,তোমার ভাই-বোনকে খেতে চাইবে। তুমি কি এতে আনন্দিত হবে????? একজন যুক্তিবোধ সম্পন্ন মানুষ ভাবে যে, সব জীবই তার পরিবারের সদস্যের মত। আর তুমিও এমনটা ভাবলে প্রাণী হত্যা করে মাংস খেতে পারবে না। তোমার বিবেককে তা প্রশ্নবিদ্ধ করবে! আর মনে রেখ, ১ একক প্রাণীর মাংসে খরচ (১ জনের খাবার)= ১০ একক উদ্ভিজ্জ খাবারের খরচ (১০ জ়নের খাবার)।
🌻🌷 প্রশ্নঃ তাহলে কি আমরা মাংস আহারকারীদের ঘৃণা করবো?
🌷 উত্তরঃ যারা প্রানী হত্যা করে প্রাণীজ মাংস খায় তার অবশ্যই দোষী। কিন্তু তাদের ঘৃণা করাটা উচিৎ না। মাংস খাওয়া বর্তমানে একটি সাংস্কৃতিক ইস্যু এবং প্রথা হয়ে দাড়িয়েছে। তাই এমন অযৌক্তিক, ভ্রান্ত। কু-প্রথাকে দূর করতে হবে সচেতনতা আর সহানুভূতির দ্বারা, সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে না। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলছি যে, মাংস খাওয়াকে ব্যাপকহারে নিরুৎসাহিত করুন এবং পরিবেশবান্ধব, সর্বোত্তম খাবার শাক-সবজি খেতে সবাইকে উৎসাহিত করুন।
🌻🌷 প্রশ্নঃ তাহলে মাংস উৎপাদনকারী ফার্মগুলোর কি হবে? আর যেসব লোক সেসব ফার্মে কাজ করে তার কি বেকার হয়ে যাবে না?
🌷 উত্তরঃ না। ফার্মগুলো মাংসের পরিবির্তে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ উপাদান দিয়ে বিভিন্ন খাদ্য তৈরী করতে পারবে। এতে করে, কর্মসংস্থানের সুযোগ আরো বেড়ে যাবে। কেননা, প্রকৃতি উদ্ভিজ্জ উপাদান দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ। আর পরিবেশকেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না।
🌻🌷 প্রশ্নঃ যদি মাংসাহারের প্রকৃতি প্রদত্ত প্রবৃত্তি মানুষের না থাকে তাহলে প্রথম দিকে মানুষ কেন মাংস খাওয়া শুরু করে?
🌷 উত্তরঃ ধর্ষণ, খুন, লুণ্ঠন, লিঙ্গ বৈষম্যভেদ, সন্ত্রাসবাদ কি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি?!অবশ্যই না। কিন্তু তবুও মানুষ কেন তা করছে?! এসব জঘন্য কাজশুদ্ধ-পবিত্র জ্ঞান এর অভাবের ফলে ঘটে থাকে। আর শুরুর দিকে মানষেরা কিন্তু বন-জঙ্গলের ফল-ফলাদিও ব্যাপকহারে খেতো। তাছাড়া বাইবেল বলছে, উৎপত্তিগতভাবে সকল মানুষই নিরামিশাষী( ভেজিটেরিয়ান ছিলো)।[Genesis 1.29 For Example] আর পবিত্র বেদ এবং গীতা তো সব-সময়ই অনেক আগে থেকেই এসব ঘোষণা করে আসছে। এমনকি পবিত্র যজুর্বেদের প্রথম মন্ত্রই নিরামিশাষী হবার নির্দেশ প্রদান করে। শিক্ষা,জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মনুষ্যত্বের অভাবের ফলে এসব কু-আচার আমাদের সামাজিক প্রথায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
তাই আসুন। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে প্রজ্ঞাবান হই, মনুষ্যত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে প্রকৃত মানুষ হই। পৃথিবীকে সমৃদ্ধিময় করে তুলি। পরিবেশকে সুন্দর রাখি। আসুন আমরা সবাই “ ভেজিটেরিয়ান( নিরামিশাষি) হই, হবার চেষ্টা করি” এবং মাংসাহারকে নিরুৎসাহিত করে একে নির্মুল করি।
👏 লেখার মাধ্যমে যদি কোন ভূল হয় সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

বেদে মাংসাহার খাবারের ভ্রম -
এতদ্বা উ স্বাদীয়ো য়দধিগবং ক্ষীরং বা ।
মাংসং বা তদেব নাশ্নীয়াত্ ।।৯।। (অথর্ববেদ ৯.৩.৬.৯)
এই মন্ত্রে আচার্য সায়ণ ভাষ্য করেনি।
পণ্ডিত শ্রীপাদ দামোদর সাতবলেকর ভাষ্য -
পদার্থঃ (এতত্ বৈ উ স্বাদীয়ঃ) সে যে স্বাদযুক্ত আছে (য়ত্ অধিগবং ক্ষীরং বা মাংসং বা) যে গাভী থেকে প্রাপ্তকারী দুধ অথবা অন্য মাংসাদি পদার্থ আছে (তত্ এব ন আশ্নীয়াত্) তাহার মধ্যে থেকে কোন পদার্থ অতিথির পূর্বেও খাবে না ।।৯।।
এই মন্ত্রের উপর আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর মত -
ইনাদের ভাষ্যতে আর বিদ্বান প্রো০ বিশ্বনাথ বিদ্যালংকারই এই মাংসের অর্থ পনীর করেছেন, তবে পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদীই মনন সাধক (বুদ্ধিবর্ক) পদার্থকে মাংস বলেছেন । সবাই এই মন্ত্র তথা সূক্তের অন্য মন্ত্রের বিষয় অতিথি সৎকার বলেছেন । এই মন্ত্রের দেবতা পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদীর দৃষ্টিতে অতিথি বা অতিথিপতি, যখন পণ্ডিত সাতবলেকরই অতিথি বিদ্যা মেনেছেন । পণ্ডিত সাতবলেকরই ইহার ঋষি ব্রহ্মা মেনেছেন । ছন্দ পিপীলিকা মধ্যা গায়ত্রী । {ব্রহ্মা=মনো বৈ য়জ্ঞস্য ব্রহ্মা (শ০ ১৪/৬/১/৭); প্রজাপতিবৈ ব্রহ্মা (গো০ উ০ ৫/৮)। অতিথিঃ=য়ো বৈ ভবতি য়ঃ শ্রেষ্ঠতামশ্নুতে স বা অতিথির্ভবতি (ঐ০ আ০ ১/১/১)। অতিথিঃ= অতিথিপতির্বাবাতিথেরীশে (ক০ ৪৬/৪-ব্রা০ উ০ কো০ থেকে উদ্ধৃত)। পিপীলিকা=পিপীলিকা পেলতের্তিকর্ণঃ (দৈ০ ৩.৯)। স্বাদু=প্রজা স্বাদু (ঐ০আ০ ১.৩.৪); প্রজা বৈ স্বাদুঃ (জৈ০ ব্রা০ ২/১৪৪); মিথুনং বৈ স্বাদু (ঐ০ আ০ ১/৩/৪)। ক্ষীরম্=য়দত্যক্ষরত্ তত্ ক্ষীরস্য ক্ষীরত্বম্ (জৈ০ ব্রা০ ২/২২৮)। মাংসম্=মাংসং বৈ পুরীষম্ (শ০ ৮/৬/২/১৪); মাংসং বা মানসং বা মনোহস্মিন্ সীদতীতি বা (নি০ ৪/৩); মাংসং সাদনম্ (শ০৮/১/৪/৫)}
অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর আধিদৈবিক ভাষ্য -
পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) যে অতিথি অর্থাৎ সতত গমনশীলা প্রাণ, ব্যান রশ্মির এবং অতিথিপতি অর্থাৎ প্রাণোপান রশ্মির নিয়ন্ত্রক সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির স্বাদুযুক্ত হয়ে অর্থাৎ বিভিন্ন ছন্দাদি রশ্মিকে মিথুন বানিয়ে নানা পদার্থের উৎপন্ন করাতে সহায়ক হয় । (য়ত্) যে প্রাণব্যান বা সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির (অধিগবং ক্ষীরং বা মাংসং বা) গমনকারী অর্থাৎ ‘ও৩ম্’ ছন্দ রশ্মি রূপী সূক্ষ্মতম বাক্ তত্বে আশ্রিত হয়, সাথেই নিজের পুরীষ=পূর্ণ সংযোজন বল {পুরীষম্=পূর্ণং বলম্ (ম০ দ০ য়০ ভা০ ১২/৪৬); ঐন্দ্রং হি পুরীষম্ (শ০ ৮/৭/৩.৭); অন্নং পুরীষম্ (শ০ ৮/১/৪/৫)} এর সাথে নিরন্তর নানা রশ্মি বা পরমাণু আদি পদার্থের উপর ঝড়তে থাকে। এই ‘ও৩ম্’ রশ্মির ঝড়নাই ক্ষীরত্ব তথা পূর্ণ সংযোতাই মাংসত্ব বলা হয় । এখানে ‘মাংস’ শব্দ এই সংকেত দেয়, যে এই ‘ও৩ম্’ রশ্মির মনস্তত্ব এখানে সর্বাধিক মাত্রাতে বসে থাকেন । এই ‘ও৩ম্’ রশ্মির প্রাণব্যান এবং সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির উপর ঝড়ে অন্য স্থুল পদার্থের উপর পড়তে থাকে । (তত্ এব ন অশ্নুয়াত্) এই কারণ দ্বারা বিভিন্ন রশ্মি বা পরমাণু আদি পদার্থের মিথুন বানানোর প্রক্রিয়া নষ্ট হয় না । ইহা প্রক্রিয়া অতিথিরূপ প্রাণব্যানকে মিথুন বানানো কিংবা ইহার দ্বারা বিভিন্ন মরুদাদি রশ্মির আকৃষ্ট করার প্রক্রিয়া শান্ত হওয়াতে পূর্বে নষ্ট হয় না, বরং তাহার পশ্চাৎ অর্থাৎ দুই কণের সংযুক্ত হওয়ার পশ্চাৎ আর মিথুন বানানোর প্রক্রিয়া নষ্ট বা বন্ধ হয়ে যায়, ইহা জানা উচিত ।।৯।।
এই ঋচার সৃষ্টির উপর প্রভাব -
আর্ষ বা দৈবত প্রভাব- ইহার ঋষি ব্রহ্মা হওয়াতে সংকেত পাওয়া যায় যে ইহার উৎপত্তি মন এবং ‘ও৩ম্’ রশ্মির মিথুন দ্বারাই হয় । এই মিথুন এই ছন্দ রশ্মির নিরন্তর বা নিকটতা থেকে প্রেরিত করতে থাকে । ইহাকে দৈবত প্রভাব দ্বারা প্রাণ, ব্যান তথা সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির বিশেষ সক্রিয় হয়ে নানা সংযোগ কর্মের সমৃদ্ধ করেন ।
ছান্দস প্রভাব - ইহার ছন্দ পিপীলিকা মধ্যা গায়ত্রী হওয়াতে এই ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন পদার্থের সংযোগের সময় তাহার মধ্যে তীব্র তেজ বা বলের সাথে সতত সঞ্চারিত হয় । ইহা থেকে ঐ পদার্থের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থ তেজ এবং বলের প্রাপ্ত হতে থাকে ।
ঋচার প্রভাব - যখন কণার সংযোগ হয়, তখন তাহার মধ্যে প্রাণ, ব্যান বা সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির বিশেষ যোগদান হতে থাকে । এই রশ্মির বিভিন্ন মরুদ্ রশ্মির দ্বারা আকুঞ্চিত আকাশ তত্বকে ব্যাপ্ত করে নেয় । ইহা সময় এই রশ্মির উপর সূক্ষ্ম ‘ও৩ম্’ রশ্মির নিজের সেচন করে ইহাতে অধিক বল দ্বার যুক্ত করেন। ইহা থেকে উভয় কণার মধ্যে ফীল্ড নিরন্তর প্রভাবী হয়ে ঐ উভয় কনার পরস্পর সংযুক্ত করে দেয় ।
আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর আধিভৌতিক ভাষ্য -
পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) এই যে স্বাদিষ্ট ভোজ্য পদার্থ আছে। (য়দধিগবং ক্ষীরং বা) যে গাভী দ্বারা প্রাপ্তকারী দুধ, ঘৃত, মাখন, দই আদি পদার্থ আছে অথবা (মাংসম্ বা) মনন, চিন্তন আদি কার্যে উপযোগী ফল, শুকনো ফল আদি পদার্থ। (তদেব ন অশ্নীয়াত্) ঐ পদার্থকে অতিথির খাওয়ানোর পূর্বে খাবে না অর্থাৎ অতিথির খাওয়ানোর পশ্চাৎই খাওয়া উচিত । এখানে অতিথি থেকে পূর্বে না খাওয়ার প্রসংগত ইহার পূর্ব মন্ত্র থেকে সিদ্ধ হয়, যেখানে লেখা আছে - “অশিতাবত্যতিথাবশ্নীয়াত্”= অশিতাবতি অতিথৌ অশ্নীয়াত্ । এই প্রকরণের পূর্ব আধিদৈবিক ভাষ্যেও উপলব্দি করবেন।

‘মাংসম্’ পদের বিবেচনাঃ- এই বিষয়ে সর্বপ্রথম আর্য বিদ্বান পণ্ডিত রঘুনন্দন শর্মা কৃত “বৈদিক সম্পত্তি” নামক গ্রন্থতে আয়ুর্বেদের কিছু গ্রন্থের উদ্ধৃত করে বলেন -
''সুশ্রুতে'' আমের ফলের বর্ণন করে লিখেছেন -
অপক্বে চূতফলে স্নায়্যস্থিমজ্জানঃ সূক্ষ্মত্বান্নোপলভ্যন্তে পক্বে ত্বাহবির্ভূতা উপলভ্যন্তে।
অর্থাৎ আমের কাচা ফলের আশে, হাড্ডির আর মজ্জা আদি প্রতীত হয় না, কিন্তু পাকার পরে সব আবির্ভূত হয়ে যায় ।
এখানে আটির তন্তু সর্বাঙ্গে, আটি হাড্ডির, আশে আর চিকন ভাগ মজ্জা বলা হয়েছে । এই প্রকারে বর্ণন ভাবপ্রকাশেও এসেছে। সেখানে লেখা আছে যে -
आम्रास्यानुफले भवन्ति युगपन्मांसास्थिमज्जादयो लक्ष्यन्ते न पृथक् पृथक् तनुतया पुष्टास्त एव स्फुटाः।
एवं गर्भसमु˜वे त्ववयवाः सर्वे भवन्त्येकदा लक्ष्याः सूक्ष्मतया न ते प्र्रकटतामायान्ति वृद्धिग्ताः।
অর্থাৎ যে প্রকার কাচা আমের ফলে মাংস, অস্থি আর মজ্জাদি পৃথক-পৃথক দেখা যায় না, কিন্তু পাকার পরেই জ্ঞাত হয় ওই প্রকার গর্ভের আরম্ভে মনুষ্যের অঙ্গ জ্ঞাতহয় না, কিন্তু যখন তাহার বৃদ্ধি হয়, তখন স্পষ্ট হয়ে যায়।
এই দুই প্রমাণের দ্বারা প্রকট হয়ে থাকে যে ফলের মধ্যেও মাংস, অস্তি, নাড়ী আর মজ্জা আদি ইহা প্রকার বলা হয়েছে, যে প্রকার প্রাণির শরীরে ।

বৈদ্যকের এক গ্রন্থে লেখা আছে যে -
प्रस्थं कुमारिकामांसम् ।
অর্থাৎ- এক কিলো কুমারিকার মাংস। এখানে ঘীকুমারকে কুমারিকা আর তাহার মজ্জাকে মাংস বলা হয়েছে।
বলার তাৎপর্য এই যে, যে প্রকার ঔষধির আর পশুদের নাম একই শব্দ দ্বারা রাখা হয়েছে ওই প্রকার ঔষধির আর পশুদের শরীরাবয়বও একই শব্দ দ্বারা বলা হয়েছে । এই ধরনের বর্ণনা আয়ুর্বেদের গ্রন্থে ভরা আছে ।
শ্রীবেনকটেশ্বর প্রেস, বুম্বাইতে ছাপানো ‘ঔষধিকোষ’ এ নীচে লেখা সমস্ত পশুসংজ্ঞক নাম আর অবয়ব বনস্পতির জন্যও এসেছে দেখে নিন। আমরা উদাহরণের জন্য কিছু শব্দ উদ্ধৃত করেছি -
বৃষভ - ঋষভকন্দ
সিংহী - কটেলী, বাসা
হস্তি - হস্তিকন্দ
শ্বান - কৃত্তাঘাস, গ্রন্থিপর্ণ
খর - খরপর্ণিনী
বপা - ঝিল্লী=বক্কল ওষুধ ব্যবহারের জালা
মার্জার - বল্লীঘাস, চিত্ত
কাক - কাকমাচী অস্থি-গুঠলী
ময়ুর - ময়ুরশিখা
বারাহ - বারাহীকন্দ
মাংস - গুদা, জটাংমাসী
বীছূ - বীছূবূটী
মহিষ - মহিষাক্ষ, গুগ্গুল
চর্ম - বক্কল
সর্প - মর্পিণীবূটী
শ্যেন - শ্যেনঘন্টী (দন্তী)
স্নায়ু - রেশা
অশ্ব - অশ্বগন্ধা, অজমোদা
মেষ - জীবনাশক
নখ - নখবূটী
নকুল - নাকুলীবূটী
কুক্কুট (টী) - শালামলীবৃক্ষ
মেদ - মেদা
হংস - হংসপদী
নর - সৌগন্থিক তৃণ
লোম (শা) - জটামাসী
মৎস্য - ঘমরা
হৃদ - দারচীনী
মূষক - মূষাকর্ণী
মৃগ - সহদেবী, ইন্দ্রায়ণ, জটামসী, কপুর
পেশী - জটামসী
গো - গৌলোমী পশু-অম্বাড়া, মোথা
রুধির - কেসর
মহাজ - বড়ী অজবায়ন
কুমারী - ঘীকুমার
আলম্ভন - স্পর্শ
এই সূচীতে সমস্ত পশু পক্ষীর আর তাহার অঙ্গের নাম তথা সমস্ত বনস্পতির আর তাহার অঙ্গের নাম একই শব্দ দ্বারা সূচিত করা হয়েছে । এরূপ অবস্থায় কিছু শব্দ দ্বারা পশু আর তাহার অঙ্গকেই গ্রহণ করা উচিত নয় ।
বিজ্ঞ পাঠক এখানে বিচার করুন ঐরূপ স্থিতিতে এখানে ‘মাংসম্’ পদ দ্বারা গৌ আদি পশুর বা পক্ষির মাংস গ্রহণ করা কি মুর্খতা নয় ? এখানে কোন পাশ্চাত্য শিক্ষা দ্বারা অভিভূত তথা বৈদিক বা ভারতীয় সংস্কৃতি বা ইতিহাসের উপহাসকর্তা কথিত প্রবুদ্ধ কিংবা মাংসাহারের পোষক সংস্কৃত ভাষার ঐরূপ নামের উপর ব্যঙ্গ্য যেন না করেন, এই কারণে আমরা তাহাদের ইংরেজি ভাষারও কিছু উদাহরণ দিচ্ছি -
1. Lady Finger ভেণ্ডী বলা হয়। যদি ভোজন বিষয়ে কেউ ইহার অর্থ কোন মহিলার আঙ্গুল করে, তখন কি তাহার অপরাধ হবে না ?
2. Vegetable কোন শাক বা বনস্পতিকে বলা হয়। এদিকে Chamber dictonary মধ্যে ইহার অর্থ dull understanding person ও দেওয়া আছে । যদি Vegetable খেতে বসা কোন ব্যক্তিকে দেখে কেউ তাহাকে মন্দবুদ্ধি মানুষের খাদ্য পদার্থ বলে, তখন কি ইহা মূর্খতা হবে না ?
3. আয়ুর্বেদে একটি চারা গাছ আছে - গোবিষ, যাহাকে হিন্দীতে কাকমারী তথা ইংরেজিতে Fish berry বলা হয় । যদি কেউ ইহার অর্থ মাছের রস লাগায়, তখন তাহাকে কি বলবেন?
4. potato আলুকে বলা হয়, এদিকে ইহার অর্থ A mentally handicaped person ও হয়, তখন কি আলু খাওয়া ব্যক্তিকে মানসিক রোগী মনুষ্যকে ভক্ষণকারী মানা হয় ?
5. Hag ইহা এক প্রকারের ফল আছে, এদিকে An ugly old woman কেও hag বলা হয়, তখন কি এটাও কোন hag ফলের অর্থ উল্টো লাগানোর প্রয়াস করবেন ?
এখন আমরা ইহার উপর বিচার করি দেখি যে ফলের মজ্জাকে মাংস কেন বলা হয় ? যেমনটি আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিকজীর আধিদৈবিক ভাষ্যে জেনে এসেছি যে পূর্ণবলযুক্ত বা পূর্ণবলপ্রদ পদার্থকে মাংস বলা হয়। সংসারে সব মনুষ্য ফলের মজ্জাকেই প্রয়োগ করেন, অন্য ভাগকে নয়, কেননা ফলের সার ভাগ সেই হয়। সেই ভাগ বল-বীর্যের ভাণ্ডার অর্থাৎ তাহার ভক্ষণ দ্বারা বল-বীর্য-বুদ্ধি আদির বুদ্ধি হয়। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে প্রাণিদের শরীরের মাংসকে মাংস বলে? ইহার উত্তর এই যে কোন প্রাণির শরীরের বল তাহার মাংসপেশীর অন্তর্গতই নিহিত থাকে, ইহার কারণে ইহাও মাংস বলা হয়। যেরূপ শাকাহারী প্রাণী ফলের মজ্জাকেই বিশেষ ভক্ষণ করেন, ঐরূই সিংহাদি মাংসাহারী প্রাণী, প্রাণীর মাংস ভাগকেই বিশেষ রূপে খেয়ে থাকে। এই উভয়ের মধ্যে সমানতা আছে। যে স্থান ফলের মধ্যে মজ্জার হয়, সেই স্থান প্রাণিদের শরীরে মাংস হয় । মনুষ্য হচ্ছে প্রাকৃতিক রূপে কেবল শাকাহারী বা দুগ্ধাহারী প্রাণী, এই কারণে বেদাদি শাস্ত্রে প্রাণিদের মাংস খাওয়ার চর্চা বেদাদি শাস্ত্রের ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞতার লক্ষণ । এরূপ চর্চাকারী কথিত বেদজ্ঞ, তা সে বিদেশী হোক বা স্বদেশী, আমাদের দৃষ্টিতে তাহারা বেদাদি শাস্ত্রের বর্ণমালাও জানে না, যদিও বা তাহারা ব্যাকারণাদি শাস্ত্রের যত বড় অধ্যেতা- অধ্যাপক হোন না কেন । মাংসাহারের বিষয়ে আমরা অন্য কোনো এক সময় একটি পৃথক গ্রন্থ লেখার বিবেচনা করব, যার মধ্যে সারা বিশ্বের মাংসাহার ভোগীদের সমস্ত সংশয় দূর হবে।
ত্রিষ্টুপ মাংসম্ প্রাণস্য (ঐ০ আ০ ২/১/৬) ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মিই মাংস।
সাধারন বাংলায় পশু Animal বোঝালেও বৈদিক সংস্কৃততে তা অন্যকিছুও বোঝায়। নিরুক্ত তে পাওয়া যায় পশু অর্থ কণাজাতীয় জিনিস। এটা ' পশ্ ' মুল থেকে এসেছে যার অর্থ হল যা দেখা সম্ভব । পশু শব্দের ধাতু হলো √পশ্ আর এই ধাতুগত অর্থ অনুসারে যাকে পশ্য অর্থাৎ দেখা হয় তাই পশু ।
প্রশ্ন - বেদে ‘মাংসম’ পদের অর্থ প্রাণিদের মাংস কখনো হয় না, ইহা আপনার পূর্বাগ্রহও তো ধরে নেওয়া যেতে পারে, যা শুধুমাত্র শাকাহারের আগ্রহবশেই করেছেন ?
উত্তর - যে সংস্কারেতে সামান্য যোগসাধকের জন্য অহিংসাকে প্রথম সোপান বলা হয়, যেখানে মন, বচন, কর্ম দ্বারা কোথাও কখনো সমস্ত প্রাণীর প্রতি ঘৃণা ত্যাগ অর্থাৎ প্রীতির সন্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে সিদ্ধ পুরুষ যোগিদের এবং সেই ক্রমে নিজের যোগসাধনা দ্বারা ঈশ্বর বা মন্ত্রের সাক্ষাৎকৃতধর্মা মহর্ষিরা, তাহার গ্রন্থে এবং বেদরূপ ঈশ্বরীয় গ্রন্থের দ্বারা হিংসার সন্দেশ দেওয়া মূর্খতা বা দুষ্টতা নয়, তো কি? যে বিদ্বান বৈদিক অহিংসার স্বরূপ দেখতে চান, তিনি পতঞ্জল যোগদর্শনের ব্যাসভাষ্য স্বয়ং পড়ে দেখুন । ইহা ঐতরেয় ব্রাহ্মণে যাহা প্রায়ঃ সব ভাষ্যকারই পশুর নৃশংস বধ এবং তাহার অঙ্গকে ভক্ষণের বিধান করেছেন, সেখানে আমরা তাহার কেমন গূঢ় বিজ্ঞান প্রকাশিত করেছি, ইহা পাঠক এই বেদ-বিজ্ঞান আলোক গ্রন্থের সম্পূর্ণ অধ্যয়ন দ্বারা জেনে যাবে। পাঠকদের জানার জন্য আমরা বেদের কিছু প্রমাণ দিচ্ছি -
য়দি নো গাং হংসি য়দ্যশ্চং য়দি পূরুষম।
তং ত্বা সীসেন বিধ্যামঃ।। অথর্ব০ ১/১৬/৪
অর্থাৎ - তুমি যদি আমাদের গাভী, ঘোড়া বা মনুষ্যকে হত্যা করো, তবে আমরা তোমাকে সীসা দিয়ে ছেদ করে দেবো ।
মা নো হিংসিষ্ট দ্বিপদো মা চতুষ্পদঃ ।। (অথর্বঃ ১১/২/১)
অর্থাৎ আমাদের মনুষ্য আর পশুদের নষ্ট করো না । অন্যত্র বেদে দেখুন -
ইমং মা হিংসীদ্রবিপাদ পশুম্ । (যজুঃ ১৩/৪৭)
অর্থাৎ এই দুই খুরবান পশুকে হিংসা করো না ।
ইমং মা হিংসীরেকশফং পশুম্ । (যজুঃ ১৩/৪৮)
অর্থাৎ এই এক খুরবান পশুদের হিংসা করো না ।
য়জমানস্য পশুন্ পাহি । (যজুঃ ১/১)
অর্থাৎ যজমানের পশুদের রক্ষা করো ।
আপনারা বলতে পারেন যে এই কথা যজমান বা কোন মনুষ্য বিশেষের পালিত পশুর কথাই বলেছে নাকি সমস্ত প্রাণির ? এই ভ্রমের নিবারণার্থ অন্য প্রমাণ -
মিত্রস্যাহং চক্ষুসা সর্বাণি ভূতানি সমীক্ষে । (যজুঃ ৩৬/১৮)
অর্থাৎ আমি সব প্রাণিদের মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি ।
মা হিংসীস্তন্বা প্রজাঃ । (যজুঃ ১২/৩২)
অর্থাৎ এই শরীর দ্বারা প্রাণিদের মেরো না ।
মা স্রেধত । (ঋ০৭/৩২/৯) অর্থাৎ হিংসা করো না ।
মহর্ষি জৈমিনীর পশ্চাৎ সব থেকে মহান বেদবেত্তা মহর্ষি দয়ানন্দের মাংসাহারের বিষয়ে বিচারও পাঠক পড়ুন -
“মদ্যমাংসাহারী অনার্য জাতির যাহার শরীর মদ্যমাংসে পরমাণুর দ্বারাই পরিপূর্ণ আছে, তাহার হাতে খাবে না ।”
“এই পশুদের হত্যাকারীরা সব মানুষ্যের হত্যাকারী জানবে ।”
“যখন থেকে বিদেশী মাংসাহারী এই দেশে এসে গরু আদি পশুদের হত্যাকারী মদ্যপায়ী রাজ্যাধিকারী হয়, তখন থেকে ক্রমশঃ আর্যের দুঃখের সীমা বাড়তে থাকে ।”
- সত্যার্থ প্রকাশ; দশম সমুল্লাস
দেখুন দয়ার সাগর ঋষি দয়ানন্দজী কি বলছেন -
“যাহারা পশুর গলা কেটে নিজেদের পেট ভরে তাহারা সারা পৃথিবীর ক্ষতি করে । সংসারে তাহাদের থেকেও অধিক কোন বিশ্বাসঘাতক, অনুপকারী, দুঃখ দানকারী পাপীজন আর আছে কি”?
“হে মাংসহারীরা ! যখন তোমরা কিছু সময় পর পশু পাবে না তখন মনুষ্যের মাংসকেও ছাড়বে কি ?”
“হে ধার্মিক লোকেরা ! আপনারা এই পশুদের রক্ষা তন, মন আর ধন দ্বারা কেন করেন না?” (গোকরুণানিধি)
আশা করি বুদ্ধিমান এবং নিষ্পক্ষ পাঠকদের মাংসাহারের ভ্রান্তি নির্মুল হয়ে গিয়েছে ।
....................................................................................
আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিকজীর আধ্যাত্মিক ভাষ্য -
{মাংসম্=মন্যতে জ্ঞয়তেহনেন তত্ মাংসম্ (উ০ কো০ ৩/৬৪); মাংসং পুরীষম্ (শ০ ৮/৭/৪/১৯); (পুরীষম্=পুরীষং পুণাতেঃ পূরয়তের্বা-নিরু০ ২/২২); সর্বত্রাহভিব্যাপ্তম্-ম০ দ০ য়০ ভা০ ৩৮/২১; য়ত্ পুরীষং স ইন্দ্রঃ-শ০১০/৪/১/৭; স এষ প্রাণ এব য়ত্ পুরীষম্-শ০৮/৭/৩/৬)}
পদার্থঃ (এতত্ বা উ স্বাদীয়ঃ) যোগী পুরুষের সামনে পরমানন্দের আস্বাদনকারী এই পদার্থ বিদ্যমান থাকে, যাহার কারণে জীব পরমাত্মার সাথে সহযোগে থাকে, (য়দধিগবং ক্ষীরং বা মাংসং বা) সেই পদার্থ যোগীর মন আদি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় । ঐ পদার্থ কি, ইহার উত্তর এই যে সর্বব্যাপী পরমৈশ্বর্য সম্পন্ন ইন্দ্ররূপ পরমাত্মা থেকে ঝড়তে থাকা ‘ও৩ম্’ বা গায়ত্রী আদি বেদের ঋচাই হলো সেই পদার্থ, যা যোগীর ইন্দ্রিয় বা অন্তঃকরণে নিরন্তর স্রবিত হতে থাকে । যোগী ঐ আনন্দময়ী ঋচার রসস্বাদন করতে থাকে, তখন সে পরমাত্মার অনুভব করতে থাকে। (তদেব ন অশ্নীয়াত্) যোগী ঐ ঋচার আনন্দকে ওই সময় পর্যন্ত অনুভব করতে পারে না, যতক্ষন পর্যন্ত না অতিথিরূপ প্রাণ তত্ব, তা যোগীর মস্তিক্য বা শরীরে সতত সঞ্চরিত না হয়, ওই ঋচার সাথে সংগত হয় না । এখানে অতিথি দ্বারা পূর্বের প্রকরণ পূর্ববৎ অভিপ্রায় হবে ।।৯।।
ভাবার্থঃ যখন কোন যোগী যোগসাধনা করেন আর এই অর্থে প্রণব বা গায়ত্রী আদির যথাবিধ জপ করেন, তখন সর্বত্র অভিব্যাপ্ত পরমৈশ্বর্যবান ইন্দ্ররূপ ঈশ্বর থেকে নিরন্তর প্রবাহিত ‘ও৩ম্’ রশ্মি ওই যোগীর অন্তঃকরণ তথা প্রাণের অন্তর স্রবিত হতে থাকে । ইহা থেকে সে যোগী ওই রশ্মির রসস্বাদন করে আনন্দে নিমগ্ন হয়ে যায় ।।৯।।
বেদবিজ্ঞান-আলোকঃ দ্বারা উদ্ধৃত
(পূর্বপীঠিকা-বেদের যথার্থ স্বরূপ, নবমোধ্যায়)
বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৬।৪।১৮ কন্ডিকা নিয়ে একটা শঙ্কা আমাদের সামনে প্রায়শই উঠে। শঙ্কটা এরূপ যে, বিদ্বান পূত্র লাভের জন্য স্বামী স্ত্রী উভয়ে বৃষের মাংস দ্বারা পাককৃত অন্ন আহার করবে । প্রায় সব অনুবাদক এমনটাই অনুবাদ করেছে ।
অর্থাৎ ইহা দ্বারা সনাতন ধর্মে গোমাংস খাওয়ার বিধান সিদ্ধ এমনটা দাবী করে অপপ্রচারকারীরা। মূলত আমাদের ধর্মের মূল স্রোত হলো বেদ।
বেদের জ্ঞান দ্বারাই পরবর্তিতে অনেক শাস্ত্র রচিত হয়েছে । সেই বেদে আমরা গোহত্যার বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ পাই ।
গো হত্যা সমন্ধ্যে বেদ বলছে যে -
"মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট"
(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
অর্থাৎ নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না ।
শুধু তাই নয় গোহত্যাকারীকে দন্ডের বিধান দিয়ে বেদ বলছে যে -
যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব । (অথর্ববেদ ১।১৬।৪)
উপনিষদ বেদেরই ব্যাখ্যা হওয়ার হেতু উপনিষদে গোমাংস আহারের নির্দেশ কদাপি থাকতে পারে না । আমাদের স্থুল বিচার বিবেচনার জন্যই মূলত এরূপ শঙ্কার উদ্ভব হয়েছে । আসুন বিষয়টি নিয়ে একটু বিস্তারিত বিশ্লেষন করা যাক -
অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পন্ডিতো বিজিগীতঃ সমিতিঙ্গমঃ শুশ্রুষিতাং বাচং ভাষিতা জায়েত সর্বাণ বেদাননুব্রুবিত সর্বমায়ুরিয়াদিতি মাষৌদনং পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্নীয়াতামীশ্বরৌ জনয়িতবা ঔক্ষেণ বাSSর্ষভেণ বা ।। (বৃহঃ উপঃ ৬।৪।১৮)
শব্দার্থঃ (অথ যঃ ইচ্ছেত্ পুত্রঃ মে) এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র (পন্ডিতঃ) বিদ্বান (বিজিগীথঃ) প্রসিদ্ধ (সমিতিয় গমঃ) সভায় গমন যোগ্য (শুশ্রুষিতাম বাচম্ ভাষিতা) আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী (জায়েত) হবে (সর্বাণ বেদাননুববীত সর্বম্ আয়ু ইয়াত্ ইতি) সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো (মাষৌদনম্) [পাঠভেদ - মাংসৌদম্] মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল (পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তম্ অশ্নীয়াতাম্ ইশ্বরী জনয়িতবৈঃ) পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো (অপেক্ষেত পুত্র) পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে (ঔক্ষেণ বা আর্ষভেণ) ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা ।
সরলার্থঃ এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র বিদ্বান প্রসিদ্ধ সভায় গমন যোগ্য আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী হবে, সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা ।
তাৎপর্যঃ এই কন্ডিকার মধ্যে বর্ণিত পুত্র প্রাপ্তির জন্য বলা হয়েছে যে, মাষের সাথে পাককৃত চাউল বিধির সাথে আহার করা উচিৎ । এই পুত্র এবং পুত্রি উৎপন্ন করার জন্য অপেক্ষিত সাধনের কাজে নেবার শিক্ষাকে সমাপ্ত করে ইহা বলা হয়েছে যে, সব প্রকারে পুত্র কে উৎপন্ন করা আদির কৃত্য ঔক্ষ এবং আর্ষভ বিধি দ্বারা করা উচিৎ ।
ঔক্ষ বিধি - ঔক্ষ শব্দ উক্ষ (সেচনে) ধাতু হতে এসেছে । উক্ষ দ্বারা উক্ষণ এবং উক্ষণের বিশেষন ঔক্ষ। ঔক্ষ বিধি বর্ণনাকারী শাস্ত্রকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলে । কোন মিশ্রিত ঔষধি পাক আদি তৈরীতে কোন কোন ঔষধি কি কি মাত্রায় পড়া উচিৎ তাহা বর্ণনাকারী শাস্ত্রের নাম ঔক্ষ শাস্ত্র। অভিপ্রায় এই যে, উপরিউক্ত মাষের অথবা তিলৌদন আদির প্রস্তুতে এই (ঔক্ষ শাস্ত্র) র মর্যাদা কে লক্ষ্য রেখে কাজ করা উচিৎ ।
আর্ষভ বিধি - আর্ষভ - ঋষভ শব্দের বিশেষন। ঋষভ এবং ঋষি শব্দ পর্যায়বাচক। আর্ষভের অর্থ ঋষিকৃত অথবা ঋষিদের বানানো কিছু । ঔক্ষ শাস্ত্রের সাথে এই আর্ষভ শব্দের ভাব এই যে, ঋষিদের বানানো বিধি (পদ্ধতি) র নামই ঔক্ষ শাস্ত্র । অর্থাৎ কোন অনভিজ্ঞর বানানো বিধিকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলা হয় না । ঋষিকৃত পদ্ধতিই ঔক্ষ শাস্ত্র ।
মাষৌদন - নিরুক্তেও মাংস শব্দের অর্থে মনন, সাধক, বুদ্ধিবর্ধক মনকে রুচি দানকারী বস্তুকে বলা হয়েছে যা ফলের রসালো অংশ, ঘী, মাখন, ক্ষীর আদি পদার্থ (মাংস মাননং বা মানসং বা মনোস্মিনৎসীদতীতি ; নিরুক্ত ৪।৩)। বলা হয়েছিল যে মাষৌদনের পাঠভেদ অনেক গ্রন্থে মাংসৌদন আছে। কেবল এই অর্থে যদি ধরে নেওয়া হয় (মনঃ সীদত্যাস্মিন্ স মাংস:) যাহাতে মন প্রসন্ন থাকে তাহাই মাংস এবং এই দৃষ্টি দ্বারা মাষৌদন কে মাংসৌদন বলা যায় । এই জন্য কোন প্রকরণে গো মাংস অর্থে মাংসের প্রয়োগ যা এই প্রকরনে নেই। এইজন্য যে দশ ঔষধিকে দ্বারা মাষ এবং ঔদন বর্ননার বিধান রয়েছে তাহার নাম স্বয়ং উপনিষদই উল্লেখ করেছে-
(১)ধান্য (২)যব (৩)তিল (৪)মাষ (৫)বাজরা (৬)প্রিয়জু (৭)গোধূম (৮)মসুর (৯)খল্ব (১০) থলকুল ।
(বৃহঃ উপঃ ৬।৩।১৩)
এখানে একটা বিষয়ে গভীর ভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ যে, এই ঔষধির গণনা করে দেখা যাচ্ছে তিলের পরেই মাষের উল্লেখ রয়েছে । এইজন্য সতেরো কন্ডিকায় তিলৌদন এবং তাহার পরে আঠারো কন্ডিকায় মাষৌদনের উল্লেখ রয়েছে । অন্যথা মাংসের তো এখানে যেমন বলা হলো তার কোন প্রকরনই নেই ।
"য আমং মাংস মদন্তি পৌরুষেয়ং চ যে করিঃ ।
গর্ভান্ খাদন্তি কেশবাস্তানিতো নাশয়ামসি।" - অথর্ববেদে (৮।৬।২৩)
যে কাঁচা বা রন্ধন করা মাংস খায়, যে গর্ভনাশ করে, এখানে আমি তাদের বিনাশ করি ।
[य आ॒मं मां॒समदन्ति॒ पौरु॑षेयं च॒ ये क्र॒विः। गर्भा॒न्खाद॑न्ति केश॒वास्तानि॒तो ना॑शयामसि ॥ टिप्पणी - २३−(ये) क्रमयः (आमम्) अपक्वम् (मांसम्) आमिषम् (अदन्ति) (पौरुषेयम्) अ० ७।१२५।१। पुरुषस्य सम्बन्धि (च) (ये) (क्रविः) अ० ८।३।१५। मांसम् (गर्भान्) उदरस्थबालकान् (खादन्ति) भक्षयन्ति। नाशयन्ति (केशवाः) क्लिशेरन् लो लोपश्च। उ० ५।३३। क्लिशू विबाधने अन्, ललोपः+वह प्रापणे-ड। क्लेशस्य वाहकाः प्रापकाः क्रमयो रोगा वा (तान्) सर्वान् (इतः) अस्मात् (नाशयामसि) ॥]
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী সত্যার্থ প্রকাশে বলেছেন যে, মাংসাহার করলে মানুষের স্বভাব হিংস্র হয়ে যায় ।। যারা মাংসাহার করে বা মদ্য পান করে, তাদের শরীর ও বীর্য দূষিত হয় ।।
সহৃদয়ং সাংসন স্যমবিদ্বেষং কৃণোমি বঃ অন্যে অন্যমভি হর্যত বৎসং জাতমিবাঘ্ন্যা ।। - অথর্ববেদ ৩/৩০/১ মন্ত্র
ভাবার্থ : (হে মনুষ্যগন) আমি তোমাদের সম মনষ্ক ও অবিদ্বিষ্ট করছি । যেমন - অবধ্য গাভী (অঘ্ন্যা) তার জাত বৎসকে নিজের অভিমুখে কামনা করে,তেমনি তোমরা পরস্পরকে কামনা কর।
যঃ পৌরুষেয়েন ক্রবিষা সং মংক্তে যো অশ্ব্যেন পশুনা যাতুধানঃ যো অঘ্ন্যায়া ভরতি ক্ষীরমগ্নে তেষাং শীর্ষানি হরসাপি বৃশ্চ ।। - ঋগ্বেদ ১০/৮৭/১৬ মন্ত্র
ভাবার্থ : যে রাক্ষস নরমাংস সংগ্রহ করে অথবা অশ্ব প্রভৃতি পশুদিগের মাংস সংগ্রহ করে, যে হত্যা করিবার অযোগ্য গাভীর দুগ্ধ হরন করে, হে অগ্নি ! নিজ বলে তাহাদিকের মস্তক ছেদন করিয়া দাও ।
অথর্ববেদ ১৯/১/২৯ মন্ত্রে বলা হয়েছে -
অনা গোহত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গামশ্বং পুরুষং বধীঃ।
যত্র যত্রাসি নিহিতা ততসত্বোতথাপ যামসি পর্ণাল্লঘীযসী ভব।।
ভাবার্থ : নির্দোষদের হত্যা করা জঘন্যতম অপরাধ । কখনো মানুষ, গো, অশ্বাদিদের হত্যা করো না ।
রাজসুয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্তদধ্বরঃ।
অকাশ্বমেধাবৃচ্ছিষ্টে জীব বর্হিমমন্দিতমঃ ।। (অথর্ববেদ ১১।৭।৭)
রাজসূয়, বাজপেয়,অগ্নিষ্টোম, অশ্বমেধ আদি সব যজ্ঞ অধ্বরঃ অর্থাৎ হিংসা রহিত যজ্ঞ । যাহা প্রাণীমাত্রকে বৃদ্ধি এবং সুখ শান্তি দাতা ।
এই মন্ত্রে রাজসূয় আদি সব যজ্ঞকে অধ্বরঃ বলে গিয়েছেন । যার একমাত্র সর্ব্বসম্মত অর্থ হিংসা রহিত যজ্ঞ । তাহলে ইহা স্পষ্ট যে, বেদের মধ্যে কোন যজ্ঞে পশুবধের আজ্ঞা নেই ।

University of Missouri, Columbia র এই research paper টি পড়ুন ।
উদ্ভিদ এর structure ও ক্রিয়া সম্পূর্ণ অন্য । যার নিজস্ব কোনো সাধন নাই । যখন আপনি ঘুমিয়ে আছেন তার সাথেও এর কোনো তুলনা হয় না। আপনার ঘুম অবস্থায় হার্ট, digestive system, Nervous System , ব্রেন সব কিছুই কাজ করছে। এটি পড়লে উদ্ভিদ বিষয়ে ব্যাপার টি আপনার কাছে পরিষ্কার হবে।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ