অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

29 June, 2020

অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া

অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া
শাস্ত্রীয় ভাষায় এটা ‘অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া’।অন্ত+ইষ্টি=অন্ত্যেষ্টি। ইষ্টি মানে যজ্ঞ। অন্ত্যেষ্টি হলো জীবনের শেষ যজ্ঞ।

আমরা জানি, আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষদের বৈদিক সমাজ ছিল যজ্ঞপ্রধান। জীবনের শুরু ‘গর্ভাধান’ থেকে জীবনের শেষ ‘দেহত্যাগ’ সবই হতো ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে। জীবৎকালে প্রতিদিনই পঞ্চমহাযজ্ঞ করতে হতো (এখনও করার বিধান)। এছাড়া অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মতো বিবিধ যজ্ঞে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ‘হবি’ (বর্তমানে পূজায় অর্ঘ্য নিবেদনের মতো) উৎসর্গ করা হতো।
এ হলো ঈশ্বরের দেয়া জীবন ও দেহ দ্বারা ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রকৃতির উপাদানসমূহ ভোগ করার প্রেক্ষিতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতাপূর্বক তাঁর উপাসনা করা। তাই অন্ত্যেষ্টি তথা জীবনের শেষ যজ্ঞে ঈশ্বরপ্রদত্ত এই দেহখানি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেই ‘হবি’ বা অর্ঘ্যরূপে উৎসর্গ করা হয়। এটা সত্যিই চমৎকার একটা ব্যাপার!
অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া
বায়ুরনিলমম্রতামথেদম ভস্মান্তঃ শরীরম।
(যজুর্বেদ ৪০.১৫)
ভাষ্য-মৃত্যুর পর শাস্ত্র সম্মত ভাবে পবিত্র বেদমন্ত্রে দাহ করাই প্রধান ধর্ম।

 প্রাচীন দর্শন অনুযায়ী বিশ্বচরাচর তথা আমাদের দেহও পাঁচটি ভূত বা উপাদান দ্বারা তৈরি। একে ‘পঞ্চভূত’ বলে। এগুলো হলো- ক্ষিতি (মাটি), অপ (জল), তেজ (আগুন), মরুৎ (বাতাস), ব্যোম (আকাশ বা শূন্যস্থান)। যারা বলেন ‘মাটির দেহ’ বা দেহ শুধু মাটি দিয়ে তৈরি, তাই একে মাটির সাথেই মিশিয়ে দেয়া উচিৎ, তারা অবশ্যই ভুল বলেন। বাস্তবে দেহ এই পাঁচটি উপাদানের সমষ্টি। শবদাহ করার মাধ্যমে দেহকে এই ৫টি উপাদানেই মিশিয়ে দেয়া হয় প্রত্যক্ষভাবে। দাহ শেষে অবশিষ্টাংশ জলে বিসর্জন দেয়া হয়। এজন্য শ্মশান সর্বদাই জলাশয়ের পাশে হয়ে থাকে।

অপরদিকে সমাধি বা কবর দিলে দেহ পঞ্চভূতে লীন হয় বটে, তবে পরোক্ষ ও ধাপে ধাপে। কারণ দেহ মাটির সাথে মেশে পঁচন প্রক্রিয়ায়। কোটি কোটি অনুজীব, পোকা-মাকড়ের খাবারে পরিণত হয় দেহ। এভাবে পঁচে গলে মাটিতে মেশানোই বরং দাহ করার চেয়ে বেশি অমানবিক মনে হয়।

একটা মজার তথ্য দিই। অনেক সময় আমরা বলি, লোকটা তো মরে ভূত হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে সে প্রকৃতিতে (পঞ্চভূতে) লীন হয়েছে -এটাই বুঝতে হবে।

 মৃত্যু হয় দেহের; আত্মার নয়। অবিনাশী আত্মা অজর, অমর, অক্ষয়, অব্যয়। এটা জগদীশ্বর পরমাত্মার অংশ। (‘বিদ্রোহী’ কবিতার কয়েক লাইন মনে পড়ে কি?) জড় প্রকৃতির পঞ্চভূতে গড়া দেহ ফিরে যায় পঞ্চভূতে, আর জীবাত্মা ফিরে যায় পরমাত্মাতে। (মৃত্যুর পরে অবশ্যই আর কখনোই আপনি পুরনো দেহে ফিরে আসবেন না, বা কোন প্রকার শাস্তি/আজাব ভোগ করবেন না। শবদাহ করার পরে/মাটিতে মিশে যাওয়ার পরে নিশ্চয়ই লীন হওয়া দেহকে শাস্তি/আজাব যৌক্তিকভাবে সম্ভব নয়।)

মৃত্যু প্রকৃতপক্ষে শোকের কোন ব্যাপার নয়। তীর্থস্থান বেনারস বা কাশীতে মৃত্যুও একটা উৎসবের ব্যাপার।

“জাতস্য হি ধ্রুবর্মৃত্যো ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ”-গীতা।
যে জন্মেছে তার মৃত্যু নিশ্চিত, যে মরেছে তার জন্মও নিশ্চিত।
মৃতদেহের অগ্নিসংস্কার বস্তুত একটি মহাযজ্ঞস্বরুপ।সারা জীবন ব্যাপী আমরা অগ্নিতে যজ্ঞাহুতি দিয়ে এসেছি।অন্তিম এই যজ্ঞটি বা পূর্ণাহুতি নিজেকে নিঃশেষে অগ্নিতে আহুতি দিয়েই উদযাপন করতে হয়।তখন আমাদের হয়ে অন্যেরা যজ্ঞের বিবিধ ক্রিয়া করেন এবং পরিশেষে চিতার হোমাগ্নিতে আমাদের সমর্পণ করেন।জীবসত্তার বিভিন্ন গতির কথা,তার উৎসমূলের বিলয়ের কথা,অজ আত্মার কথা বেদমন্ত্রে আমরা উল্লেখ পাই।”মৈনমগ্নে বি দহো মাভি শোচঃ মাস্য ত্বচং চিক্ষিপো মা শরীরম।যদা শৃতং কৃণবো জাতবেদঃ অথেমেনং প্রহিণুতাৎ পিতৃভ্যঃ।মৃতদেহের অগ্নিসরংস্কার কালে বৈদিক ঋষিরা এই মন্ত্র পাঠ কোরতেন অর্থাৎ হে সর্বজ্ঞ অগ্নি এই মৃতের সবকিছু ভস্ম করনা,একে সন্তাপযুক্ত করনা,এর ত্বক ছিন্নভিন্ন করনা এবং সূক্ষ্ম ও কারণ শরীর বিনষ্ট করনা।এরপর যখন এই মৃতকে তুমি কর্মফল দেবে তখন একে মাতাপিতার নিকট নিশ্চিত রুপে প্রেরণ কর।
★অগ্নি শুধুমাত্র স্থুল শরীরকেই ভস্মীভূত করতে পারে,ব্যক্তির সমগ্র অস্ত্বিত্ব বা সত্তাকে নয়। ব্যক্তি সত্তা যে ব্যক্তি শরীর থেকে সম্পূর্ণ পৃথক অগ্নি মৃত পচনশীল দেহ ভস্ম করে ব্যক্তি সত্তাকে সন্তাপিত করেনা বরঞ্চ তাকে ক্লেদমুক্ত করে।জন্মজন্মান্তর ব্যাপী কর্মশেষে আমাদের সেই আদি উৎসমূলে মিলিত করে।অগ্নিসংস্কারের পর আত্মা নিজ উৎসমূলে প্রত্যাবর্তন করে।আত্মা মানে প্রাণবায়ু, শেষ নিঃশ্বাসের পর এই প্রাণবায়ু মহাবায়ুতে বিলীন হন।মৃত্যুর পর জীব নিজ কর্মানুসারে হয় পৃথিবীতে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে নতুবা সৎকর্ম প্রভাবে জ্যোতির্ময় দ্যুলোকে অবস্থান করে।আমরা জানি,মানব দেহের তিনভাগ জল অগ্নিসংস্কারের প্রভাবে সেই জল বাষ্প হয়ে মেঘলোকে মিশে যায় এবং পুনরায় বারিবর্ষণ রুপে পৃথিবীর বুকে নেমে এসে ওষধীসমূহে রসসঞ্চার করে । ওষধী আমাদের আহারের ফসল প্রদান করে এই অন্ত্যেষ্টি হোমাগ্নি দ্বারা আমাদের দেহ নতুন সৃষ্টির জন্মদেয়।
★অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সমাপ্তি অনুষ্টানে পরিশেষে বৈদিক মন্ত্রে উল্লেখ আছে যে:-
“যং ত্বমগ্নে সমদহঃ তমূ নির্বাপয়া পুনঃ।কিয়াম্বু অত্র রোহতু পাকদুর্বা ব্যল্কশা।।
অর্থাৎ হে অগ্নি, দাহকার্য্যের জন্য যে শিখা প্রজ্জ্বলিত হল তা পুনরায় নিভিয়ে দাও।জলসিঞ্চন অন্তে দাহস্থলে দুর্বা ও শাখাসমন্বিত বিবিধ উদ্ভিদ গজিয়ে উঠুক।
*অগ্নি সংস্কারের পর চিতাগ্নি জল দিয়ে নিভিয়ে ফেলা একান্ত প্রয়োজন। যাতে নিঃশেষে ও সন্দেহাতীত ভাবে আগুন নিভে যায়,তার জন্য শ্মশানবন্ধু সকলে মিলে ১০৮ কলসি জল দেওয়ার প্রথা অনেকে অনুসরণ করেন। মাটির যে অংশে দাহকার্য্য হয় সে অংশটি প্রচণ্ড অগ্নিতাপে পুড়ে যায়।প্রচুর জল দিয়ে সে জায়গাটি ধুয়ে দিলে, তা মৃত্তিকার সেই ক্ষতস্থানটিতে প্রলেপের ও কাজ করে।কালক্রমে মৃত্তিকা নিজ উর্বরতা ফিরে পায় এবং নতুন প্রানের সঞ্চার করে।
মৃত্যুর সময় করনীয়ঃ- কোন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে ঐ ব্যক্তিকে প্রান ত্যগের স্থান থেকে সরানো যাবে না। শান্ত ও স্থিরভাবে প্রানত্যগ করবে। মৃত্যুর সময় কানে কোন পৌরানিক নাম প্রদান, টানা হেচড়া করা, বুকের উপর কোন ধর্ম বই রাখা, চিত্কার করা, ঢোল, করতাল বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো, নোংরা বিছানায় রাখা, কপালে বা শরীরে তিলক মাখানো কর্তব্য নহে। মৃত্যুর পর মৃত শরীরকে যত্নের সাথে একটি পরিস্কার স্থানে উত্তর দিকে মাথা ও দক্ষিন দিকে পদদ্বয় রেখে শুদ্ধ বিছানায় চিত করে শোয়াতে হবে। দুই চোখ, মুখ খোলা থাকলে বন্ধ করে দিতে হয়। দুই কান এবং দুই নাকের ছিদ্র তুলার সঙ্গে কর্পুর মিশিয়ে গুজে দিতে হয়। মৃত পুরুষকে পুরুষগন শুদ্ধ জলে স্নান করতে হয়। এবং মৃত মহিলাকে মহিলাগন স্নান করতে হয়। শুদ্ধ জলে নিম পাতা অথবা কুলপাতা মিশিয়ে জল ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল কুসুম কুসুম গরম হলে সেই জল দ্বারা মৃতকের শরীর সাবান সহযোগে স্নান করাতে হয়। স্নান শেষে নতুন পরিস্কার বস্ত্র পড়াতে হয়। শশ্মানে নেয়ার আগে পরিবারের সবাই মৃত ব্যক্তির নিকট দাড়াবে এবং ঈশ্বরের উদ্দ্যেশ্যে প্রার্থনা করে বেদ মন্ত্রের শান্তি পাঠে করতে হয় এবং শান্তভাবে পবিত্র বেদের গায়ত্রী মন্ত্র অর্থসহ পড়তে পড়তে নীরবে মৃতকসহ চিতা এলাকায় যেতে হয়।
গ্রহনযোগ্য নয়ঃ-
শশ্মানে নেয়ার সময় ঢোল বাজানো, লম্ফ-ঝম্প, নিশান পোতা, খই বা পয়সা ছড়ানো, চিত্কার করা মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়। চিতা এলাকায় বিড়ি, সিগারেট, গাজা, ভাং, মদ্যপান, মাদক গ্রহন, চিত্কার, কোলাহল, জোরেশোরে গান বাজনো করা যাবে না।
প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিঃ- বেল, আম, ডুমুর, তেতুঁল, শমী, পলাশ প্রভৃতি মোটা শুকনা কাঠ যা মৃত ব্যক্তির ওজনের অন্তত ৭গুন। বেশিও দেয়া যেতে পারে। এছাড়া হোমযজ্ঞের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য যথা দুটি মাটির কলসি, একটি কোদাল, একটি কুড়াল, একটি দা, একটি প্রদীপ এবং সত্কার্যে চিতায় অগ্নি প্রবেশ করানোর জন্য পলতা, কর্পুর এবং পাঁচ থেকে পনের কেজি পর্যন্ত ধুপ বা ধুনা।
চিতায় অগ্নি প্রদান-
অগ্নিপ্রদান করার সময় নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করা হয়-
“ওতম্ কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্মং জানতা বাপ্য জানতা ।
মৃত্যুকাল বশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগতম্
ধর্মাধর্ম সমাযুক্তং লোভ মোহ সমাবৃতম্
দহেয়ং সর্বগাত্রানি দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু”
অনুবাদঃ তিনি জেনে বা না জেনে অনেক দুষ্কর্ম করে থাকতে পারেন। কালবশে মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ দেহ ধর্ম, অধর্ম, লোভ, মোহ প্রভৃতি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। হে অগ্নিদেব, আপনি তার সকল দেহ দগ্ধ করে দিব্যলোকে নিয়ে যান। ( ক্রিয়াকাণ্ড বারিধি)

অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার আত্মার কল্যাণ কামনায় "দিব্যান্ লোকান্ স গচ্চতু" বলা উচিৎ।
দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু”( পুরুষের ক্ষেত্রে). “দিব্যান্ লোকান্ সা গচ্ছতু”( নারীর ক্ষেত্রে)
অর্থ, তিনি (পুরুষ অর্থে "স") যেন স্বর্গে গমন করেন। দিব্যান্ লোকান্ সা গচ্ছতু। অর্থ, তিনি (নারী অর্থে "সা") যেন স্বর্গে গমন করেন।
বিঃদ্রঃ সংস্কৃত ব্যাকরনে " স " হলো উভয়লিঙ্গ। তাই মৃত ব্যাক্তিকে স্ত্রী পুরুষ ভেদাভেদ না করে বলা উচিত
প্রজ্জ্বলনের আগে মৃতদেহকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে মুখাগ্নি করা হয়।
কার্পাস তুলা অথবা নতুন কাপড় দ্বারা পলতা তৈরী করে অথবা মশাল তৈরী করে ঘি এবং কর্পুর মিশিয়ে ঘৃতের প্রদীপ হতে অগ্নি গ্রহন করে মৃত ব্যক্তির মাথায় নিম্নভাগ হতে পদদ্বয়ের নিম্নভাগে নিম্নের মন্ত্রে আহুতি প্রদান করবে। সন্তান না থাকলে স্ত্রী, ভাই, বোন, নিজের বংশের লোক, শ্বশুরের বংশের লোক অথবা অন্য আত্মীয় চিতায় অগ্নি প্রদান করতে পারবে। যে কোন ভাবে মৃত ব্যক্তির (স্বাভাবিক মূত্যু, আত্মহত্যা, জলেডোবা, আগুনেপোড়া, দুর্ঘটনায় মৃত) অবশ্যই দাহ্য কার্য বা সত্কার হয়। একমাত্র গর্ভপাতকৃত সন্তান এবং ৩ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানকে মাটিতে প্রথিত করতে হবে। এর পর বেদমন্ত্রে আহুতি দেয়া শুরু করতে হয়। সত্কার বা দাহকার্যে অংশগ্রহনকারী ব্যক্তিগন স্নান করে শুদ্ধবস্ত্র পরে প্রয়োজনে আচমন করে পবিত্র ভাবে দাহ কার্যে অংশগ্রহন করবেন। দাহকার্য শেষে যদি শরীরে ময়লা লাগে তবে স্নান করতে হয় তবে অবশ্যই অশৌচ হয়েছে মনে করে স্নান করা যাবেনা। প্রানত্যগের স্থানে স্বস্তিবাচন, শান্তিপ্রকরন এবং হোমযজ্ঞ করতে হয়। মুখে অগ্নি প্রদান, উলঙ্গ করে দাহ করা। প্রতি মৃত্যুবার্ষীকিতে হোমযজ্ঞ, ধর্মানুষ্ঠান, অনাথ আশ্রমে দান, বিদ্যালয় বা ধর্মচর্চা কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি করা যেতে পারে। সবসময় মনে রাখতে হবে যে মহাশত্রু হলেও মৃত ব্যক্তির সত্কারে সাহায্য করা উচিত। একজন মানুষ মারা গেলে কোনো অশৌচ হয়না এজন্য ন্যায়দর্শন প্রণেতা মহর্ষি গৌতম লিখেছেন, শরীরদাহে পাতকাভাবাৎ (৩/১/৪) অর্থাৎ মৃত দেহকে দাহ করলে পাতকাদি দোষ লাগে না বরং ইহা পূর্ণ্য কর্ম।
বৃহদারন্যক উপনিষদ এ বলা হয়েছে-
এতদ বৈ পরমং তপো যত্
প্রেতমপ্লবভ্যা দধতি
(বৃহদারন্যক উপ. ৫.১১.১)

অর্থাৎ মৃতদেহ কাঁধে বহন করা এবং তা দাহ করা সর্বোচ্চ তপস্যা। এজন্য ইহার নাম সৎকার।

অতএব, দেহান্তরের নিছক সাধারণ ঘটনায় শোক কেন? বরং জরাজীর্ণ রোগশোকে আক্রান্ত দেহ ছেড়ে জীবাত্মার নতুন সুস্থ-সুন্দর দেহে জীবন আরম্ভের প্রাক্কালে মৃতকে হাসিমুখে শুভেচ্ছা জানানোই উচিত।
মানুষ মারা গেলে সুন্দর ভাবে তার সৎকার করা উচিত এবং তিন দিনের মধ্যে হোম যজ্ঞের মাধ্যমে তার জীবনের সর্ব শেষ কার্য সম্পূর্ণ করা উচিত ।
আবার একজন শিশু জন্ম নিলে শাস্ত্র অনুযায়ী কোনো কার্য না করে বামনের কথা মতো ষষ্ঠীতে ব্রাহ্মণ পূজা করে অশৌচ কাটায় ।
অথচ শিশুর জন্ম হলে নাড়ী ছেদন করিয়া পরিষ্কার করে কাপড় পড়িয়ে শিশুর জিহ্বায় ঘি ও সোনার শলাকা দিয়ে ওম্ লিখতে হয় এবং শিশুর কানে কানে ৩ বার ওম্ বলতে হয়। তারপর শাস্ত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে শিশুর নামকরন করা উচিত।
জন্ম এবং মৃত্যু হলে কোনো অশৌচ হয়না বরং জন্ম, মৃত্যু এই দুই অবস্থায় মানুষ পবিত্র হয়।
আমাদের এই কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে বৈদিক শাস্ত্র অনুযায়ী সকল কর্ম করা উচিত।

ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ