সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

14 June, 2020

সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থা

সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থা
পদার্থঃ (ইদং) এই সব জগৎ প্রলয় কালে (সর্বতঃ) সর্ব দিকে (তমোভূতম্) অন্ধকারময় (অপ্রজ্ঞাতম্) অপ্রত্যক্ষ (অলক্ষণং) লক্ষণ রহিত (অপ্রতর্ক্য) তর্ক রহিত (অবিজ্ঞেয়ং) বিশেষ জ্ঞানের অযোগ্য (প্রসুপ্তম্) সুপ্ত অবস্থার (ইব) সমান ( আসীত্) ছিল।।৫।।অfসীদিদং তমোভূতমপ্রজ্ঞাতমলক্ষণম্।অপ্রতর্কর্যমবিজ্ঞেয়ং প্রসুপ্তমিব সর্বতঃ।। মনুস্মৃতি১/৫
ভাবার্থঃ এই জগৎ প্রলয়কালে অন্ধকার হওয়ার কারনে লক্ষন রহিত ছিল, তর্ক বুদ্ধি দ্বারা জানিববর যোগ্য ছিল না। সেই মূল প্রকৃতি সুপ্ত অবস্থায় ছিল।।৫।।
ভাষ্যঃ পণ্ডিত আর্যমুনি মহামহোপাধ্যায়
সৃষ্টির প্রথম মূলপ্রকৃতি সৃষ্টির উপাদান কারণ হয়ে বিদ্যমান ছিল কিন্তু প্রকৃতির অবস্থা অবর্নীয় ছিল। প্রকৃতি তখন পরমাত্মায় আশ্রিত ছিল।
সৃষ্টির Initial state প্রকৃতি রূপে বিদ্যমান ছিল। তরঙ্গহীন সমুদ্রের জল যেমন অবস্থা ধারণ করে তদ্রুপ প্রকৃতিরূপি অব্যক্ত matter সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল কিন্তু কোণ লক্ষণ ছিল না।
যখন ঈশ্বর তত্ব দ্বারা সৃষ্টির কামনা হল তখন ঈশ্বর তত্ব সর্বপ্রথম পরা ওম্ রশ্মিকে মুক্ত করে যাহা তাহাতে অনাদি অবস্থায় অব্যক্ত ছিল।
ওম্ রশ্মি মুক্ত হতেই লক্ষণহীণ প্রকৃতিতে সামুদ্রিক ওয়েভের ন্যায় অসংখ্য তরঙ্গের নির্মান হতে থাকে। এসব তরঙ্গই বেদ মন্ত্র।পরা ওম্ রশ্মির কম্পণ অতি সূক্ষ হয়। যাহার সামান্য ব্যাপকতায় প্রকৃতিতে বৃহৎ ওয়েভের নির্মান হতে থাকে। এভাবে আস্তে স্তে পার্টিকেল রচিত হল এবং মাদের সৃষ্টির একেকটি ধাপ পর্যাক্রমে সম্পন্ন করতে কোটি কোটি বছর সময় ব্যতিত হয়েছিল। প্রলয় হতে ও তদ্রুপ কোটি কোটি বছর সময় লাগবে।
সৃষ্টির প্রথম উৎপন্ন পদার্থঃ
প্রলয়কাল শেষ হবার সাথে সাথে পরা ওম্ রশ্মির সৃষ্টি হয়। পরা ওম্ রশ্মির অপর নাম কাল রশ্মি। পরা ওম্ প্রথম সৃষ্টি হয় বলে প্রতিটি মন্ত্রের পূর্বে পরা ওম ও বাচ্য ওম্ দেখতে পাওয়া যায়। ওম্ই শব্দস্রোত। সেই শব্দস্রোত হতে সমগ্র ব্রহ্মান্ড নির্মান হতে থাকে।

পরা ওম্> মহতত্ব> অহঙ্কারতত্ব> মনস্তত্ব> সূক্ষ প্রাণ এবং ছন্দরশ্মি > মরুত রশ্মি > পার্টিকেল ইলিমেন্টারি পার্টিকেল বা কার্ক কোয়ান্টাদির নির্মান পর্যাক্রমে হয়ে থাকে।
ও৩ম্ ভূর্বুবঃ স্বঃ। তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য
ধীমহি। ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াত্।।
ঋ০ ৩.৬২.১০; যজু০ ৬.৩৫; সাম০ উ০ ৬.৩.১০
পদার্থঃ (ভূঃ) ‘ভূঃ’ নামক ছন্দরশ্মি কিংবা অপ্রকাশিত কণা বা লোক, (ভুবঃ) ‘ভুবঃ’ নামক রশ্মি কিংবা আকাশ তত্ত্ব, (স্বঃ) ‘সুবঃ’ নামক রশ্মি কিংবা প্রকাশিত কণা, আকাশ কণা বা সূর্যাদি তারা আদিতে যুক্ত। (তত্) ওই অগোচর বা দূরস্থ সবিতা অর্থাৎ মন, ‘ওম্’ রশ্মি, সমস্ত ছন্দরশ্মি, বিদ্যুৎ সূর্যাদি আদি পদার্থকে (বরেণ্যম্ ভর্ঘঃ দেবস্য) সাধারণ-ভাবে আচ্ছাদিতকারী ব্যাপক [ভর্গঃ=অগ্নি বৈ ভর্গঃ শ০ ব্রা০ ১২.৩.৪.৮; আদিত্য বৈ ভর্গঃ জৈ০ উ০ ৪.১২.২.২; বীর্যং বৈ ভর্গহত্রর্ষ বিষ্ণুর্য়জ্ঞঃ শ০ ব্রা০ ১২.৩.৪.৭] আগ্নেয় তেজ, যে সম্পূর্ণ পদার্থকে ব্যাপ্ত করে অনেক সংযোগ সংকোচকারী বল দ্বারা যুক্ত হয়ে প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত লোকের নির্মাণ যুক্ত প্রেরিত করতে সমর্থ, (ধীমহি) প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ সে সম্পূর্ণ পদার্থ ঐ আগ্নেয় তেজ, বল আদিকে ব্যাপক রূপে ধারণ করেন। (ধিয়ঃ য়ঃ নঃ প্রচোদয়াত্) যখন সে উপযুক্ত অগ্নিতেজ ঐ পদার্থকে ব্যাপ্ত করেন, তখন বিশ্বামিত্র ঋষি জ্ঞান ভিত্তিক মন বা ‘ওম্’ রশ্মি রূপ পদার্থ [ধীঃ=কর্মনাম নিঘ০ ২.১; প্রজ্ঞানাম নিঘ০ ৩.৯; বাক্ বৈ ধীঃ ঐ০ আ০ ১.১.৪] নানা প্রকারের বাক্ রশ্মির বিবিধ দীপ্তি বা ক্রিয়া দ্বারা যুক্ত করিয়ে উত্তম প্রকার প্রেরিত বা নিয়ন্ত্রিত করতে থাকে।
ভাবার্থঃ মন এবং ‘ওম্’ রশ্মি পরিব্যাপ্ত রশ্মির দ্বারা যুক্ত হয়ে ক্রমশঃ সমস্ত মরুত, ছন্দরশ্মির অনুকূলতা থেকে সক্রিয় করিয়ে সমস্ত কণা, পরিণাম এবং আকাশ তত্ত্বকে উচিত বল বা নিয়ন্ত্রণ দ্বারা যুক্ত করেন। ইহাতে সমস্ত লোক তথা অন্তরিক্ষে বিদ্যমান পদার্থ নিয়ন্ত্রিত শক্তি দ্বারা যুক্ত হয়ে নিজে-নিজে ক্রিয়ায় উপযুক্ত রূপে সম্পাদিত করতে সমর্থ হয়। ইহাতে বিদ্যুৎ বলও উত্তমরূপে নিয়ন্ত্রিত থাকে।
।।সৃষ্টির প্রথমে দৈবী গায়ত্রী ছন্দ পরাওম্ প্রকট হয়। পরা ওম্ ২৪ অক্ষর রশ্মির গায়ত্রী ছন্দের নির্মান করে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ বলের নির্মান করেন।
উক্ত বিদ্যুৎ তথাকথিত ব্যবহার্য বিদ্যুৎ নন। প্রতিটি ২৪ টি অক্ষরই সূক্ষ সূক্ষ কম্পনরূপী ছন্দ বল যাহা অাকাশ অাদিকে অবকাশ মুক্ত করে সৃষ্টি নির্মানের জন্য গতি,বল,স্থান,প্রাণ সব কিছুই দান করে থাকে।
(বেদ বিজ্ঞানী স্বামী অগ্নিব্রত ন্যাষ্ঠীকজী কতৃক গায়ত্রী মন্ত্রের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা)
ব্রাহ্মণ বচনঃ
১. (মৈত্রীসংহিতা ২/৭৭) প্রজাপতয়ে মনবে স্বাহা। প্রজাপতিই মন।

২. (তান্ড্য ৪/১০/২) মহতত্বই প্রজাপতি।

৩. (১০/১ ও ২৬/৩ কৌষিতকি) প্রতাপতির বৈ মনঃ। মন ই প্রজাপতি।

মন এবং মহতত্ব উভয়ই প্রজাপতি। ইহাই প্রাথমিক তত্ব সমুহ যাহা পরা ওম্ বা কাল রশ্মির প্রভাবে প্রথম উৎপত্তি হয়। ইংরেজীতে কালকে টাইম বলে। ঈশ্বর ও কাল তত্বের পশ্চাৎ মহতত্ব।
মহতত্বের মাঝে সূক্ষ ওম রশ্মি কাজ করতে থাকে ফলে অহংকার এবং মনস্তত্ব আদির সৃষ্টি হতে থাকে। সককিছুর মূলে বাচ্য ওম্ এবং পরা ওম্।
এখন বেদ প্রমাণ আদি সৃষ্টি তথ্য উল্লেখ করা হচ্ছে!
য়দক্রন্দঃ প্রথমং জায়মান উদ্যন্ৎসমুদ্রাদুত বা পুরীষাত্।
শয়েনস্য পক্ষা হরিণস্য বাহু উপস্তুত্যং মহি জাতং তে অর্বন্।।১।। ঋগ্বে ১/১৬৩/১
পদার্থঃ (য়ত) যে কারণ (অক্রন্দঃ) শব্দ করে (প্রথমম্) আদিতে (জায়মানঃ) উৎপন্ন হয় (উদ্যন্) উদিত হয়ে যায় (সমুদ্রাত্) অন্তিরক্ষে (উত)(বা) পক্ষান্তরে (পুরীষাত্) পূর্ণকারণে (শয়েনস্য পক্ষা) অতি তীব্র গতিযুক্ত পঙ্গ সমান (হরিণস্য বাহু) শুভ্র হিরণের ন্যায় শ্বেত জ্যোতি [যাহাকে পরা ওম্ বা কাল রশ্মি বলা হয় যাহাকে পরমাত্মার দুই পক্ষ রূপ লাগাম বলা হয়েছে] (উপস্তুত্যম্) সমীপে প্রশংসা করিবার যোগ্য (মহি, জাতম্) মহ তত্ব জাত হইল (তে) তখন (অর্বন) বিজ্ঞান রূপ পরমাত্মা।।১।।
ভাবার্থঃ সৃষ্টির প্রথম অবস্থায় তীব্র বেগযুক্ত কাল তত্বের নির্মা ন তথা পরা ওমের সৃষ্টি করল ঈশ্বর যাহা ভাইব্রেশন বা কম্পনরূপ ছিল। বেদ বলছে ক্রন্ধন প্রথমে জাত হল। যাহা পরমাত্মার তেজ বলা হয়] তাহা প্রকৃতির মাঝে ভাইব্রেশন আরম্ব করল। ভাইব্রেশন হতে তথা পরা ওম্ রশ্মি হতে জন্ম নিল প্রজাপতি মহতত্ব। মহতত্ব মানে বুদ্ধিতত্ব।। এই মহতত্ব হতে শুরু করে পরা ওম্ রশ্মির প্রভাবে মলিকূল পর্যন্ত একে একে সব সৃষ্টি হল। এভাবে হে "অর্বন" ( জ্ঞানস্বরূপ পরমাত্মা) পূর্ব সৃষ্টিতে তিন পদার্থের কার্য দাতা আপনিই স্তুতি পাবার যোগ্য ছিলেন।।১।।
ভাষ্যঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী
নাসদাসীন্নো সদাসীত্তদানীং নাসীদ্রজো নো ব্যোমা পরো য়ত্।
কিমাবরীবঃ কুহ কস্য শর্মন্নম্ভঃ কিমাসীদগহনং গভীরম্ ।। ১।। ঋগ্বে০ ১০/১২৯/১-৭
পদার্থঃ (তদানীম্) সৃষ্টির পূর্বে সেই প্রলয় অবস্থায় (অসত্ ন আসীত্) শূন্য নিত্যান্ত অভাব ছিল না (সত্ ন উ আসীত্) সৎ প্রকট রূপে কিছুই ছিল না (রজঃ ন আসীত্) রঞ্জনাত্মক কণাময় গগণ অন্তরীক্ষও ছিল না [‘ভুজিরঞ্জিম্যাং কিত্’ উণা০ ৪/২১৭; ‘রজঃ সূক্ষ্মধূলিঃ’ দয়ানন্দঃ; ‘রজসোহন্তরিক্ষলোকস্য’ নিরু০ ১২/৭] (পরঃ ব্যোম ন উ) বিশ্বের পরবর্তী সীমারূপ বিশিষ্ট রক্ষক আবর্ত ঘেরা গোলক আকাশও ছিল না (কিম্ আবীরঃ) আবরণীয় অভাব থেকে সুন্দর আবরক কিভাবে হতে পারে? ছিল না (কুহ কস্য শর্মন্) কোথাও? না কোথাও তথা প্রদেশ ছিল; কিসের সুখ নিমিত্ত ছিল [‘শর্ম সুখনাম’ নিঘ০ ৩.৬] (গহনং গভীরম্ম্ভঃ কিম্ আসীত্) গহণ গম্ভীর সুক্ষ্মজলও কিভাবে হতে পারে? অর্থাৎ ছিল না। যাহা হতে ভোগ্য বস্তু উৎপন্ন হয় যাহার সৃষ্টির বীজ ঈশ্বর প্রদান করে থাকে [‘অপ এব সর্জাদৌ তাসু বীজমবাসৃজত্’ মনু০ ১/৮]।। ১।।
ভাবার্থঃ সৃষ্টির পূর্বে শূন্যমাত্র অত্যান্ত অভাব ছিল না পরন্তু এই প্রকট রূপ অবস্থাও ছিল না, রঞ্জনাত্মক কণাময় গগণ ছিল না পরবর্তী সীমাবর্তী আবর্ত ঘেরা ছিল!! যখন আবরণীয় পদার্থ জগৎ ছিল না তো আবর্তও কেন হবে ? তাহাও ছিল না আবার সুখের স্মরণ কিসের জন্য হয়? এবং ভোগ্য ভোক্তার বর্তমানতাও ছিল না, সূক্ষ্ম জল পরামাণু প্রবাহ যা পরামাণু সমুদ্রও ছিল না, বলিবার যোগ্য কিছুই ছিল না, সব কিছু অপ্রকাশিত ছিল।।১।।

ন মৃত্যুরাসীদমৃতং ন তর্হি ন রাত্রা অহ্ন আসীৎপ্রকেতঃ।
আনীদবাতং স্বধয়া তদেকং তস্মাদ্ধন্যত্র পরঃ কিং চনাস।। ২।।
পদার্থঃ (মৃত্যু ন আসীত্) সৃষ্টির পূর্বে মৃত্যু ছিল না; তো কি ভাবে অমৃত থাকতে পারে? (তর্হি) সেই সময় মৃত্যু না থাকায় (অমৃতং ন) অমৃতও ছিল না (রাত্রায়াঃ অহ্নাঃ) রাত্রি দিনের (প্রকেতঃ) প্রজ্ঞান পূর্বরূপ (ন আসীত্) ছিল না (তত্ একম্) তখন এই এক তত্ত্ব (আবাতম্) বায়ূর অপেক্ষা রহিত (স্বদয়া) সাধারণ শক্তি দ্বারা (আনীত্) স্ব সত্তা রূপে প্রাণবান জগৎ ব্রহ্ম তত্ত্ব ছিল (তস্মাত অন্যত্) তাহা ভিন্ন (কিম্ চন) কিছুই (পরঃ ন আস) তাহা হতে অতিরিক্ত ছিল না।। ২।।

ভাবার্থঃ সৃষ্টির পূর্বে মৃত্যু ছিল না এমন কি মরিবার যোগ্য কিছুই ছিল না; তো মৃত্যু কিভাবে হতে পারে? মৃত্যুর অভাবে অমৃতও হতে পারে না এমন কি মৃত্যু অপেক্ষা হতে অমৃতের কল্পনা হয়ে থাকে অতঃ অমৃত হবার কল্পনাও হতে পারে না, দিন রাত্রি পূর্ব রূপও ছিল না এমন কি সৃষ্টি হবার পরে দিন রাত্রির ব্যবহার হয়ে থাকে, হ্যা এক তত্ত্ব বায়ূ দ্বারা জীবন ধারণকারী ন্যায় বিদ্যমান ছিল না কিন্তু সাধারণ শক্তি দ্বারা স্ব সত্ত্বা জীবন ধারণ করা প্রাণবান জাগরিত ব্রহ্ম ছিল তাহা হতে অতিরিক্ত কোন কিছুই ছিল না।। ২।।
তম্ আসীত্তমসা গূঢ়হমগ্রেহ্প্রকেতং সলিলং সর্বমা ইদম্ ।
তুচ্ছয়েনাভ¦পিহিতং যদাসীত্তপসস্তন্মহিনাজায়তৈকম্।। ৩।।
পদার্থঃ (অগ্রে) সৃষ্টির পূর্বে (তমসা) অন্ধকারে (গূঢ়ম্) আবৃত (তমঃ-আসীত্) অন্ধকাররূপ ছিল (ইদং সর্বম্) এই সব সেই সময় (সলিলম্ আঃ) বিস্তৃত জল যে ভাবে (অপ্রকেতম্) অবিজ্ঞেয়ম্-জানিবার যোগ্য ছিল না (তুচ্ছ্য়য়েন) তুচ্ছভাবে (য়ত্ অপিহিতম্) আবৃত তথা ঢাকা (আভু) আভু নামে ব্যাপক উৎপাদান কারণ (আসীত্) ছিল যাহা হতে এই সৃষ্টি আবির্ভূত হয়েছে (তপসঃ) পরমাত্মার জ্ঞানময় তপ দ্বারা (তত্-মহিনা) মহতত্ত্ব এক রূপ উৎপন্ন হয়েছে।। ৩।।

ভাবার্থঃ সৃষ্টির পূর্বে অন্ধকারে আচ্ছাদিত অন্ধকারময় ছিল, জল সমান আয়ব রহিত না জানিবার যোগ্য [আভু] নামে পরমাত্মার সম্মূখ তুচ্ছরূপে এক দেশীয় অব্যক্ত প্রকৃতি রূপ উপাদান কারণ ছিল যাহা হতে সৃষ্টি আর্ভিূত হয়েছিল, তাঁহার জ্ঞানময় তপ দ্বারা প্রথম মহতত্ত্ব উৎপন্ন হয়।। ৩।।
গতিগুণ ই সংসারের সকল মূর্তিমান পদার্থকে নির্মান করে ধারণ করে ছে।।( ঋক বচন ১/২/১)।। এক সময় কোন হাল চাল গতি কিছুই ছিল না অব্যক্ত প্রকৃতিতে সংসার সুপ্ত ছিল কিন্তু কোন লক্ষণ ছিল না।। ( ঋক ১০/১২৯/১-২) এবং মনু (১/৫)।।
তিন গুণের সাম্য অবস্থার নাম ই প্রকৃতি ( সাংখ্য ১/২৬)।। পরমাত্মা ঐ প্রকৃতিতে বাক্ রশ্মি যোগ করে দেয়। পরা ওম্ রশ্মির নাম বাক্ রশ্মি। বাক্ বৈ ভর্গঃ।। বাক্ রশ্মি যোগ হবার সাথে সাথে প্রকৃতির সাম্য অবস্থা ভঙ্গ হয়ে সূক্ষ গতির সঞ্চার হয়ে প্রকৃতিকে ডিষ্টার্ব করে বিভিন্ন রশ্মির নির্মান হতে থাকে সর্বশেষ মলিকুলার স্টেটে গিয়ে কারবান গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি নির্মান হতে থাকে।। ( অথর্ব ৮/৯/৩) এবং শতপথ (১০/৩/৪/১০)।। অতএব গতি হল অন্ন স্বরূপ যাহার উপর জগৎ সংসার শ্রিত। ওম্ রশ্মি ই সে প্রথম গতি।।।
কামস্তদগ্রে সমবর্ততাধি মনসো রেতঃ প্রথমং য়দাসীত্। সুতো বন্ধুমসতি নিরবিন্দন্ হৃদি প্রতীষ্যা কবয়ো মনীষা।।৪।।
পাদার্থঃ (অগ্রে কামঃ) আরম্ভ সৃষ্টিতে কাম অর্থাৎ অভিলাষ-ইচ্ছাভাব (তত্-য়ত্) সে যে (মনসঃ-অধি) মনের অন্তর (সমবর্তত) বর্ত্তমান হয়ে (প্রথমং রেতঃ আসীত্) প্রথম প্রাণীর বীজ থাকে [‘রেতঃ পুরুষস্য প্রথমং সমাভবতঃ সম্ভবতি’ ঐ০ ৩/২] (কবয়ঃ) ক্রান্তদর্শী বিদ্বান (অসতি) অশরীর চেতন আত্মাতে (সতঃ) শরীরের নিমিত্ত (বন্ধুম্) বাধনকারী ওই শুক্র-মানব বীজশক্তিকে (মনীষা) বিবেচনশীল বুদ্ধি দ্বারা (প্রতীষ্য) প্রতীত করে নিশ্চিত করে (হৃদি) হৃদয়ে (নিঃ-অবিন্দন্) নির্বিণ্ণ হয়ে যায় বৈরাগ্যকে প্রাপ্ত হয়ে যায় ।।৪।।
ভাবার্থঃ আরম্ভ সৃষ্টিতে ভোগের জন্য কামভাব বর্ত্তমান হয়ে যে মানবের বীজ শক্তিরূপে প্রকট হয়, ক্রান্তদর্শী বিদ্বান আত্মার অন্তর শরীরের বাধনকারী হয় তাহার সমক্ষ করে বৈরাগ্যকে প্রাপ্ত হয়।।৪।।
তিরশ্চীনো বিততো রশিমরেষামধঃ স্বিদাসী৩দুপরি স্বিদাসী৩ত্।
রেতোধা আসন্মহিমান আসন্তস্বঘা অবস্তাৎপ্রয়তিঃ পরস্তাত্ ।। ৫।।
পদার্থঃ (রেতোধাঃ) প্রাণী সৃষ্টিতে পূর্ব শরীরের বীজশক্তির কামভাব রেত নামে বলা হয়েছে সেই রেত অর্থাৎ মানব বীজ শক্তিকে ধারণকারী আত্মা (আসন্) ছিল (মহিমানঃ আসন্) জীবাত্মা মহান অর্থাৎ অসংখ্য ছিল (এষাং রয়িম্ঃ) ইহাদের বন্ধন রশি যা লাগাম পূর্বজন্মের কৃত কর্মের সংস্কার [‘অভিশবো বৈ রশ্ময়ঃ’ শ০ ৫/৪/৩/১৪] (তিরশ্চীনঃ বিবতঃ) এই সংস্কার বিস্তৃত হয়েছে যা কি [‘তিরস্তীরো ভবতি’ নিরু০ ৩/২০] (অধঃ স্বিত্ আসীত্) নিকৃষ্ট যোনিতে জন্ম দেবার হেতু তথা (উপরিস্থিত্ আসীত্) উৎকৃষ্ট যোনিতে জন্ম দেবার হেতু (অবস্তাত্ স্বধা) শরীরের অবর ভাগে সাধারণ জন্মগ্রহণ করে (পরস্তাত্ প্রয়তিঃ) এবং শরীরের পর ভাগ মৃত্যু।। ৫।।

ভাবার্থঃ ভোগের কামনারূপ মানব শক্তিকে ধারণকারী আত্মা সৃষ্টির প্রথমে ছিল এবং এ আত্মা অসংখ্য ছিল, ইহাদের পূর্বকৃত সংস্কার বন্ধন যা লাগামের সমান শরীরকে শোষণ করে নেয়; সেই জীবাত্মা নিকৃষ্ট যোনী সম্বন্ধী এবং উৎকৃষ্ট যোনী সম্বন্ধী হয়ে থাকে, শরীরের অবর ভাগে জন্ম হয় এবং পরভাগে প্রয়াণ তথা মৃত্যু হয়।। ৫।।
কো অদ্ধা বেদ ক ইহ প্রবোচৎকুত আজাতা কুত ইয়ং বিসৃষ্টিঃ।
অর্বাগ্দেবা অস্য বিসর্জনেনাথা কো বেদ য়ত আবভূব ।। ৬।।
পদার্থঃ (কঃ) কে (অদ্ধা) তত্ত্ব দ্বারা যথার্থ (বেদ) জানে (কঃ) কে (ইহ) এই বিষয়ে (প্রবোচম্) প্রবচন করতে পারে বলতে পারে (ইয়ং বিসৃষ্টিঃ) এই বিবিধ সৃষ্টি (কুতঃ) কোন নিমত্তি কারণ দ্বারা (কুতঃ অজাতা) কোন উপাদান থেকে প্রকট হয়েছে-উৎপন্ন হয়েছে (অস্য বিসর্জনেন) উহার বিসর্জনে উপাদান কর্তৃক (অর্বাক্ দেবাঃ) পিছে উৎপন্ন হওয়া বিদ্বান (অথ কঃ) পুণঃ কে (বেদ) জেনেছে (য়তঃ আবভূব) যে উপাদান থেকে এসব আবির্ভূত হয়ে উৎপন্ন হয়েছে।।৬।।

ভাবার্থঃ এই বিবিধ সৃষ্টি কোন নিমিত্ত কারণ থেকে এবং কোন উপাদান কারণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে? এই কথাকে কোন বিরল বিদ্বানই যথার্থ রূপে জানিতে পারে এমনকি সকল বিদ্বান সৃষ্টি উৎপন্ন হবার পশ্চাৎ হয়েছে অর্থাৎ কোন তত্ত¦ বেত্ত্বা যোগী ই এই গূঢ় রহস্য বুঝিতে পারে মাত্র এবং তাহা বলিতে পারে।। ৬।।
ইয়ং বিসৃষ্টির্য়ত আবভৃব যদি বা দধে যদি বা ন।
য়ো অস্যাধ্যজ্ঞঃ পরমে ব্যোমন্তসো অঙ্গ বেদ যদি বা ন বেদ।। ৭।।
পদার্থঃ (ইয়ং বিসৃষ্টিঃ) এই বিবিধ সৃষ্টি (য়তঃ আবভূব) যে উপাদান দ্বারা উৎপন্ন হয়েছে (অস্য য়ঃ অধ্যক্ষঃ) এই উপাদানের যে অধ্যক্ষ (পরমে ব্যোমন্) মহান আকাশে বর্তমান (অঙ্গ) হে জিজ্ঞাসু! (সঃ) সেই পরমাত্মা (য়দি বা দধে) যদি চায় তো সৃষ্টিকে ধারণ করে সৃষ্টি রূপে স্থিত রাখে (য়দি বা ন) এবং যদি না চায় তো ধারণ করে না অর্থাৎ সংহার করে দেয় (য়দি বেদ) যদি উপাদান কারণকে জানে তবে নিজের বিজ্ঞানে লক্ষিত করে সৃষ্টি রূপে পরিণত করে, (য়দি বা ন বেদ) যদি না জানে স্বজ্ঞানে লক্ষিত না করে তবে সৃষ্টি রূপে করে না বরং প্রলয় করে, এই প্রকার সৃষ্টি এবং প্রলয় সেই পরমাত্মার অধীন ।।৭।।

ভাবার্থঃ এই বিবিধ সৃষ্টি যে উপাদান কারণ হতে হয়ে থাকে সেই উপাদান কারণ অব্যক্ত প্রকৃতির এই পরমাত্মা স্বামী অধ্যক্ষ, এই পরমাত্মা জগতকে উপদান কারণ প্রকৃতি থেকে উৎপন্ন করে থাকে এবং তাহার সংহারও করে থাকে, এবং পরমাত্মা প্রকৃতিকে যখন লক্ষ করে তখন সেই প্রকৃতি হতে সৃষ্টিরূপ ও কার্য নিয়ে আসে এবং সৃষ্টি হয় এবং যদি প্রকৃতিতে সংকল্প বা লক্ষ না করে তবে প্রলয় হয়ে যায়। এই প্রকার সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় পরমাত্মার অধীন।। ৭।।
ভাষ্যঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক ‘বিদ্যামার্তণ্ড’
[সর্ব প্রথম কি ছিল?]
অমৃতা হ্যাপ। শ০ ব্রা০ ৩.৯.৪.১৬। অর্থাৎ সর্বপ্রথম অমৃত ছিল অর্থাৎ যাহা অনাদি সত্ত্বা। জীব,প্রকৃতি ঈশ্বর এই তিন অমৃত কারণ ছিল। ইহার মধ্যে প্রকৃতি নামক মূল পদার্থের আলোচনা করা হইলো। অর্থাৎ সর্বপ্রথম অমৃত ছিল অর্থাৎ অনাদি তত্ব ছিল,যাহার উপর-নীচে, ডানে-বামে সর্বত্র সলিল নামক মূল পদার্থ পূর্ণ ছিল। এই কারণ অবকাশ অর্থাৎ আকাশের অভাব বলা হইয়া থাকে। এই অবস্হাকেই 'বেদে' 'স্বধা' নাম দ্বারা সম্ভোধিত করা হইয়াছে। 'স্বধা' শব্দের অর্থ হয়- 'সর্বং দধাতীতি স্বধা' অর্থাৎ যে 'স্বঃকে' ধারণ করে। এই স্ব কি? স্বরিত্যসো (দ্যু) লোকঃ। শ০ ব্রা০ ৮.৭.৪.৫। অস্তি বৈ স্বঃ।ঐ০ ব্রা০ ৫.২০।'দ্যু' কে ধারণকারী হইয়া থাকে তাহা স্বধা'। যজু০৩৩.২২ শব্দে "অমৃতানিত তস্হৌ" অর্থাৎ বিদ্যুত রূপী স্বধা' বলা হইয়াছে। সাবধান অপর নাম পিতর। মত্র্যাঃ পিতরঃ। শ০ ব্রা০ ২.১.৩.৪।যে উৎপন্ন হয় এবং নাশ প্রাপ্ত হয়, এই পদার্থ বা কাণাকে পিতর বলা হয় তথা এই পিতর স্বধার কারণই জীবত থাকে অর্থাৎ এই পদার্থ যাহার আশ্রয়ে বিনাশী কণা নির্ভর এবং ইহার অপর স্বধা' বা প্রকৃতি। সর্বপ্রথম প্রকৃতি নামক স্বধা' ছিল। "ত্রিতস্য ধারয়া" ঋ০ ৯.১০২.৩।ত্রিধাতু ঋ০ ১.১৫৪.৪।বলিয়া তিন গুণ যুক্ত প্রকৃতি। মত্ব,রজস, তথা তমাসের জ্ঞান প্রদান করিয়াছে। বেদে অনেক স্হানে প্রকৃতির তথ্যের উল্লেখ রহিয়াছে। প্রকৃতি সত্ব রজ,তম এই তিন গুণের সাম্যবস্হায় বিদ্যমান ছিল। প্রকৃতি সত্য,অমৃত এবং অনন্ত অনাদি তথ্য। এই বিষয়ে মনুর বচন দেখিয়া লইবেন।
[ প্রকৃতির বিকার কি করিয়া আসিল?]
'য়ানি, ত্রীণি বুহন্তি য়েষাং চতুর্থ বিনিযুক্ত বাচম।"অথ০৮।৯।৩।যে তিন ( সত্ব,রজ,তম) হয় তাহাতে পরমাত্মা বাক্ নিযুক্ত করিয়া দেয়। এখানে বাক্ শব্দের অর্থ সামন্য নহে বরং গূঢ় অর্থে প্রযুক্ত হইয়াছে। বাকের আপর নাম একাক্ষর 'ওম্' রশ্মি।পরমাত্মা 'ওম্' রশ্মি দ্বারা সর্বপ্রথম প্রকৃতির সাম্য অবস্হা ভঙ্গ করেন প্রকৃতির বিকার উৎপন্ন করিয়া সৃষ্টির নির্মাণ করেন । পরা 'ওম্' রশ্মির প্রভাবে প্রকৃতিতে সমায়িত অক্ষরশ্মি সক্রিয় হইবার সাথে-সাথে প্রকৃতি বিভাজিত হইয়া মহঃ তথ্যে পরিণত হইয়া থাকে। ব্যাঞ্জন অক্ষর রশ্মি এবং স্বর অক্ষর রশ্মির প্রভাবে মহঃ তথ্যের মাঝে বহু লক্ষণ সৃষ্টি হয়। এই সজল লক্ষণ অক্ষর রশ্মি জাত বলিয়া প্রসিদ্ধ হয়। এই সকল রশ্মি একত্র হইয়া বেদ মন্ত্রের সৃষ্টি হইতে থাকে। অক্ষর রশ্মির প্রভাবে মন্ত্র, মন্ত্রোক্ত ঋষি, দেবতা, স্বরঃ এবং ছন্দের সৃষ্টি হইতে থাকে। মন্ত্র, ঋষি,স্বরঃ ছন্দের প্রভাবে সকল পদার্থের সৃষ্টি হয়। ইত্যাদি-ইত্যাদি। "তমিট গর্ভ প্রথমদধ্র আপো য়ত্র দেবা সমগচ্ছন্ত। "ঋ০ ১০।৮২।৬। সেই বিরাটে স্হিত হিরণ্যগর্ভকে প্রকৃতি পরমাণু প্রথম ধারণ করিয়া থাকে যাহা হইতে সমস্ত পদার্থ সঙ্গত হইয়া থাকে। এই প্রকারে বর্তমান কথিত সর্ব তত্ত্বের পরমাণুর নির্মাণ নেবুলাতে নির্মাণ হইতে থাকে। এই সব কার্য হইতে লক্ষ বর্ষ সময় লাগে। এই বিষয়ে বর্তমান বিজ্ঞান এবং বৈদিক বিজ্ঞান অধিক ভিন্ন নহে। মহতত্বে অক্ষরের প্রভাব নিম্নানুসারে হইয়া থাকে।
অ=সব, পূর্ণ ব্যাপক, অব্যয়, এক,অখণ্ড, অভাব, শুন্য।
ই=গতি,নিকট।
এ=না গতি,গতিহীন, নিশ্চল, পূর্ণ, অব্যয়।
উ=উপর,দূর,এই,তথা দিক এবং আদি।
ও=অন্য নয়,তিনি সদৃশ না।
ঋ=সত্য,গতি,বাহির,ভীতর।
অ,ন,ঙ=০
ছ=না অভাব,শুন্য।
হ=নিশ্চয়,অন্ত,অভাব,সংকোচ,নিষেধ।
ক=বাঁধা বলবান,বড়,প্রভাবশালী, সুখ।
খ=আকাশ,পোল,খুলা,ছিদ্র।
গ=গমন,সরানো,স্হান খালি করা, পৃথক হওয়া।
ঘ=বাধা,আশ্রয় গ্রহণ,একাগ্রতা।
চ=আবার,পুনঃ,বাদ,দ্বিতীয়,অন্য,ভিন্ন,অপূর্ণ্,অঙ্গহীন,খণ্ড।
ছ=ছায়া, আচ্ছাদন,ছত্র, পরিচ্ছদ,অখণ্ড আদি।
জ=উৎপন্ন হওয়া, জন্ম নেওয়া, অঙ্কুর হওয়া, নতুনত্ত্ব,গতি।
ঝ=নাশ হওয়া।
ট=মধ্যম,সাধারণ,নির্বল,সংকোচ,ইচ্ছা বিরুদ্ধ।
ঠ=নিশ্চয়, প্রগলভতা,পূর্ণতা।
ড=করা,প্রকৃতি,অচেতন,জড়।
হ=নিশ্চিত,নিশ্চল,ধারিত,চেতন।
ত=তলভাগ,নিচে,এইদিক,আধার,এই পার কিনারা,অন্তিম স্হান।
থ=আশ্রয় নেওয়া,উপর,ওইদিক,ওইপার।
দ=গতি,দেওয়া কাজ করা।
থ=না দেওয়া, ধারণ করা, রেখে দেওয়া।
প=রক্ষা।
ফ=খোলা, খোলানো।
ব=অনুপ্রবেশ করানো, সমান,আড়াল করা।
ভ=প্রকট করা, প্রচার করা, বাহির, প্রকাশ।
য=পূর্ণ গতি,যে, ভিন্ন বস্তু।
ব=দেওয়া,রমণ করা।
ল=নেওয়া, রমণ করা।
ব=অন্য,পূর্ণ,ভিন্ন,অথবা, গতি, গণ্য।
ষ=জ্ঞান।
শ=প্রকাশ।
স=সাথে শব্দ, এই।
ক্ষ=বন্য জ্ঞান,অহানম নির্জীব,নাশ,মৃত্যু।
ত্র=নিচে পর্যন্ত যাওয়া,কুল দেওয়া, সব দেওয়া, সব কুল, সর্ব সময়।
জ্ঞ= অজন্মা, নিত্য কর্ম, জ্ঞান।
এইভাবে প্রকৃতির গুণ জাগ্রত হইয়া থাকে, সর্বপ্রথম মহতত্ব হইতে মনস্তত্ব,মনস্তত্ব হইতে সূক্ষ্ম প্রাণরশ্মি এবং মরুত রশ্মি, ইহা হইতে ছন্দরশ্মি এবং পরে ক্বার্ক, প্রোটন, নিউক্লিয়াস, এ্যাটম,মলিকূল আদি সৃষ্টি হয়। এই সকল কিভাবে সৃষ্টি হয়? ইহা বুঝিবার জন্য আপনি এমন চিন্তা করুন যে-যেমন এক শান্ত সমুদ্রে বহু তরঙ্গ উঠিয়া থাকে। তখন সেই সমুদ্রে অনেক তরঙ্গ থাকে। এই প্রকার জানিবে যে, প্রকৃতি রূপী সমুদ্রে 'ওম' রশ্মি নামক তরঙ্গ, অন্য তরঙ্গকে জন্ম দেয় এবং এইভাবে বিভিন্ন প্রকার তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। প্রকৃতির এই তরঙ্গকে রশ্মি বলা হয়। অক্ষর রশ্মির কার্য গুণ জ্ঞাত হইলে ঈশ্বরীয় ভাষা বেদকে উপলব্ধি করা সম্ভব। যে বাণীকে জ্ঞাত হন না সে বেদের জ্ঞাতা নহে।
(বেদ বিজ্ঞানী আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিকজীর ব্যাখ্যান-আখ্যান হইতে সংগৃহিত)
কাল রশ্মি কি ও তার বিজ্ঞান ক্রিয়া কি??
সৃষ্টির কনায় কনায়, স্পেসে কালই কার্য করে থাকে। কালরশ্মি প্রকৃতিতে সমাহিত থাকে। সৃষ্টির প্রথম স্টেপে কালরশ্মি(পরা ওম্ রশ্মি) প্রকৃতির গুনসমুহের সাম্যবস্থা বিনষ্ট করে দেয়। কাল রশ্মি তথা ওম্ রশ্মি অনাদি। সর্বত্র বিদ্যমান থাকে। তিন কালেই কালের কোন পরিবর্তন হয় না। কাল করশ্মি তথা ওম্ রশ্মি প্রকৃতির গর্ভে মহতত্বের সৃজন করেন। মহতত্বের মাঝে পরা ওম্ তথা কাল রশ্মি কাজ করবার ফলে মহতত্ব মনস্তত্বে কনভার্ট হয়ে যায়। কাল রশ্মি পশ্যন্তি ওম্ রশ্মিকে প্রেরণ করে পশ্যন্তি ওম্ রশ্মি সাত মহা ব্যাহৃত রশ্মিকে প্রেরনা করে থাকে। উক্ত সাত রশ্মির প্রভাবে মনস্তত্বের মধ্যে দশ প্রাণরশ্মির নির্মান হয়ে যায়। উক্ত দশ প্রকারের প্রাণরশ্মি কতৃক বিভিন্ন সকল বেদ মন্ত্রকেই মনস্তত্বের মাঝে উৎপন্ন করে।  মরুত রশ্মি,ছন্দরশ্মি,প্রাণরশ্মি প্রভৃততি ফোটন,কার্ক,কোয়ান্টা,পার্টিকেল,
ইলিমেন্টারি পার্টিকেল,আয়ন অ্যাটম, এবং মলিকূল প্রভৃতি কালরশ্মি দ্বারা নির্মিত হয়ে থাকে। কাল রশ্মির প্রভাবে আস্তে আস্তে গ্যালাক্সি,নেবুলা,সূর্য,চন্দ, এবং বহু প্রকারের বলের নির্মান হতে থাকে। ঈশ্বর কালকে প্রেরণা করে কাল প্রকৃতিকে ডিষ্টার্ব করে প্রকৃতি মহতত্ব আদি অহংতত্ব এবং মনস্তত্বকে নির্মান করে বিভিন্ন প্রকারের বেদ ঋচার জন্ম দিয়ে থাকে। ছোট বড় বেদ ঋচা দ্বারা মনস্তত্ব পূর্ন হতে থাকে। মনস্তত্বের মাঝে উৎপন্ন ঋচাই হলো ফোর্স বা বৃহৎ বল।  এই সকল বলের ও বল পরা ওম্ রশ্মি তথা কাল রশ্মি।

ঈশ্বর বিশেষ নিমিত্তকারণ।
পরাওম্ তথা কাল রশ্মি সাধারণ নিমিত্ত কারণ।বলে জানিও।

ওম্ রশ্মি নিয়ে অথর্ববেদে একটি সূক্ত আছে যেখানে কালের তথা পরা ওমের বিশদ ভাবে ৭  বিশেষন ব্যক্ত করা হয়েছে-

ঋষিঃ ভৃগু /দেবতা কাল /ছন্দ ত্রিষ্টুভ।
কালো অশ্বো বহতি সপ্তরশ্মিঃ সহস্ত্রাক্ষো অজরো ভূরিরেতাঃ। 
তমা রোহন্তি কবয়ো বিপশ্চিৎ সপ্ত চক্রা ভূবনানি।। 
(অথর্ব ১৯/৫৩/১)
মন্ত্রপদার্থের অর্থঃ
(১) সহস্রাক্ষ-কালের হাজর অক্ষ। অক্ষ শব্দের অর্থ অক্ষর। প্রকৃতি অক্ষর রূপই হয়। প্রকৃতির মাঝে শায়িত থাকে সহস্র অক্ষর। যাহা স্বর এবং ব্যঞ্জন অক্ষর রশ্মিরূপে সৃষ্টি হয়ে থাকে।
(২) সপ্তরশ্মিঃ-কাল রশ্মি জতে জন্ম নেয় সাত প্রকারের মহাব্যাহৃত রশ্মি। ভূঃ র্ভবঃ স্বঃ মহঃ জনঃ     তপঃ সত্যঃ। উহারা কাল রশ্মি তথা পরা ওম রশ্মি দ্বারা প্রেরিত হয়ে কার্য করতে থাকে।      (নিরুক্ত ৪/২৬ সপ্ত সংখ্যা মহাব্যাহৃত রশ্মি)।। প্রথমে এ সকল বানী পরা অবস্থায় উৎপন্ন                       হয়।
(৩)অশ্ব- কাল তীব্রগামী। কাল রশ্মি মহতত্বের সকল স্থানে একসাথে কার্য করতে থাকে সর্বত্র স্পন্দন করে থাকে বলে কালের আরেক নাম অশ্ব।
(৪) অজর- কাল রশ্মি অনাদি অবিনাশী। কাল দ্বারা সকল সৃষ্টির নির্মান হয় তথাপি সৃষ্টি জীর্ণ হলে ও   কাল রশ্মি জীর্ণ হয় না। তাই কাল অজর।
(৫)ভূরিরেতা- কাল রেতবান। কালের স্বভাব সৃষ্টি রচনা করা তাহা ধারণ করা এবং প্রলয় করা। কালই   স্বয় অনেক প্রকারের পদার্থ উৎপন্ন করে থাকে।  মহতত্ব হতে পৃথিবী,চন্দ্র,সূর্য পর্যন্ত কাল                      সৃষ্টি করে থাকে বলে কালের অারেক বিশেষন ভূরিরেতা।
(৬) সপ্ত চক্র- কাল পাচ প্রাণ রশ্মি এবং ধনঞ্জয় প্রাণ ও সূত্রাত্মার নির্মান করে বলে কালের বিশেষণ     সপ্ত চক্র।
(৭) সপ্তনাভি-  ভূঃ র্ভবঃ স্বঃ মহঃ জনঃ তপঃ সত্যঃ আদি সাত রশ্মিই সপ্তনাভি বিশেষনে খ্যাত। ভূ রশ্মি পৃথিবীর নাভি, ভূবঃ রশ্মি আকাশের নাভি,স্বঃ রশ্মি সূর্য আদি প্রকাশিত লোকের নাভি। মহঃ সর্বলোকের নাভি। সর্বলোকে ইহার কার্য ক্ষেত্র বিস্তার ঘটে। এভাবে সাত রশ্মি  নাভির ন্যায় কার্য করে বলে কালের আরেক বিশেষণ সপ্তনাভি।

কালাদাপ সমভবন্কারাদ্ ব্রহ্ম তপো দিশঃ।
কালেনোদেতি সূর্য়ঃ কালে নি বিশতে পুনঃ।।১।। 
(অথর্ব০ ১৯/৫৪/১)
পদার্থঃ (কালাত্) কাল দ্বারা (আপঃ) জল (সমভবন্) প্রকট হয়ে। (কালাত্) কাল দ্বারা (ব্রহ্ম) বেদ, (তপঃ) প্রতপ্ত সূর্য, আর (দিশঃ) দিমার প্রকট হয়। (কালেন) কাল দ্বারা (সূর্য়ঃ উদেতি) সূর্য উদিত উদিত হয়। (কালে) আর কালে (পুনঃ) আবার (নি বিশতে) প্রবেশ হয়ে যায়, অস্ত হয়ে যায়।।১।।
[আপঃ “তস্মাদ্বা এতস্মাদাত্মাদাত্মনঃ আকাশঃ সম্ভূতঃ। আকাশাদ্বায়ুঃ বায়োরাগ্নিরগ্নেরাপ অদভ্যঃ পৃথিবী” (উপনিষদ) এর অনুসার অগ্নি দ্বারা আপঃ প্রকট হয়ে। মন্ত্র ১৯, ৫৩, ১০ মধ্যে “তপঃ” দ্বারা অগ্নির উৎপত্তি দর্শায়, আর ১৯. ৫৪.১ মধ্যে “আপঃ” এর। এই ক্রম উপনিষদ দ্বারাও নির্দিষ্ট করে যায়। ব্রহ্ম=বেদ, দেখ (১৯.৫৩.৮)। দিশঃ=দিমার পরিজ্হান সূর্যাদয়ের দিমার দৃষ্টি দ্বারা হয়, এইজন্য তপঃ=প্রতপ্ত সূর্য।]

কাল রশ্মিই পরা ওম্ রশ্মি পরা ওম্ ই কাল রশ্মি।
ভাষ্যঃ আচার্ অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক
।।ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি।।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ