শ্রী কৃষ্ণ কি ঈশ্বর - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

30 June, 2020

শ্রী কৃষ্ণ কি ঈশ্বর

শ্রী কৃষ্ণ কি ঈশ্বর

ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য এ ছয়টি ভগ বা গুণ। এই ছয় গুণের অধিকারীই ভগবান।
ঈশ্বর বিষয় জানতে ঈশ্বরের স্বরূপ লেখা পডুন।
গীতায় "আমি" রহস্য

গীতায় (ধৃতরাষ্ট+ সঞ্জয়+শ্রীকৃষ্ণ+অর্জুন) এই চার ব্যক্তির বানীর মোট ১৮ অধ্যায়ে ৭০০ টি শ্লোক রয়েছে। ৭০০ শ্লোক থাকার কারনে গীতাকে সপ্তশতী শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতা বলা হয়।
আমরা সকলেই গীতা পাঠ করি। গীতা পাঠ করতে গিয়ে অনেক সময় অামরা অনেকই দো-টানার মধ্যে পড়ি। যেমনঃ-

[গীতার কোথাও শ্রীকৃষ্ণ বলেছে- হে মহাবীর অর্জুন! আমার এবং তোমার বহুবার জন্ম হইয়া গিয়েছে। আমি সে সবই জানি কিন্তু তুমি তাহার কিছুই জান না। গীতা ৪/৫

(এই শ্লোক থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে অর্জুন এবং শ্রীকৃষ্ণের বহুবার জন্ম হয়েছে।)

এবার পরের শ্লোকে দেখি কি বলা হয়েছে-
আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই। আমি সকলের ঈশ্বর। আমি নিজ প্রকৃতিতে আশ্রয় করিয়া নিজ মায়াবলে নিজেকে সৃষ্টি করিয়া থাকি। গীতা ৪/৬

(উপরক্ত গীতার ৪/৫ নং শ্লোকের সাথে ৪/৬ নং শ্লোকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলেছে। পূর্বের শ্লোকে সাথে কোন মিল নেই)]

গীতায় আবার দেখুন শ্রীকৃষ্ণ বলেছে-
আমি তোমাকে অত্যান্ত ভালবাসি বা তুমি আমার অতি প্রিয়; সে কারণে তোমার কল্যাণের জন্য সর্বাপেক্ষা গোপনীয় কথা বলিতেছি শোন। গীতা ১৮/৬৪

(এখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে তার প্রিয় বলেছে)

আবার কোথাও বলেছে-
আমি সর্বভূতে সমান; অতএব আমার দ্বেষ্য বা প্রিয় নাই। ভাবার্থ- সকলকে আমি সমান দেখি, বিশেষ কাহারও প্রতি আমার বিদ্বেষ নাই, আমার প্রিয় বা অপ্রিয় কেহ নাই। যাঁহারা ভক্তির সহিত আমার অর্চনা করেন, আমি তাঁহার সহিত থাকি এবং তাঁহারাও আমার সহিত থাকে। গীতা-৯/২৯

(এখানে সবাই তাঁর কাছে সমান, কেহ তাঁর প্রিয় বা অপ্রিয় নেই। সবাইকে তিনি সমান দেখেন।)]

[এরকম আরো বলেছে-
তুমি সর্বধর্ম পরিত্যাগ করিয়া একমাত্র আমারই আশ্রয় লও; আমি তোমাকে সর্বপাপ হইতে মুক্তি করিবো। গীতাঃ ১৮/৬৬

(এখানে "আমি" শব্দ উচ্চারিত করিয়া তাঁহার শরণ নিতে বলেছেন।)

আবার কোথাও বলেছেন-
হে অর্জুন! তুমি তাঁহার শরণ লও। তবেই তাঁহার দয়ায় তুমি পরম শান্তি ও শাশ্বত স্থান লাভ করিবে। গীতাঃ ১৮/৬২

(এখানে শ্রীকৃষ্ণ "তাঁহার" শব্দ উচ্চরণ করিয়া- তাঁহার (পরমব্রহ্মের) শরণ নিতে বলেছে, এবং তবেই অর্জুন শান্তি ও শাশ্বত স্থান লাভ করিবে।)]

»»» গীতায় অর্জুনের সাথে শ্রীকৃষ্ণের এরুপ দু'ই-রকম কথোপকথন দেখে অনেকের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ারি কথা যে, শ্রীকৃষ্ণ কে ছিলেন? কেনই বা তিনি দু'ই রকম কথা বলিতেছেন?
»» গীতায় কখনো বলিতেছেন- শ্রীকৃষ্ণের বহুবার জন্মগ্রহন করেছেন! আবার বলিতেছেন তার জন্ম ও মৃত্যু নেই?
»» আবার কখনো বলিতেছেন- হে অর্জুন! তুমি আমার প্রিয়! আবার বলিতেছেন- তাঁহার কেহ প্রিয় নাই আবার অপ্রিয় নাই! সকলকেই তিনি সমান দেখন?
»» আবার কোথাও বলিতেছেন- হে অর্জুন! তুমি আমার শরণ লও! আবার কোথাও বলিতেছেন- তুমি তাঁহার (পরমব্রহ্মের) সরণ নেওয়ার কথা বলিতেছেন?

»»» আসুন, গীতা থেকে এর সমাধান খুঁজি!

»» গীতায় অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে বলিতেছেন-
হে প্রভু! যদি তুমি মনে কর যে সেই অদ্ভুত রূপ দেখিতে আমি সমর্থ, তাহা হইলে তুমি আমাকে তোমার নিত্যরূপ দেখাও, কারণ তুমি যোগেশ্বর। গীতাঃ ১১/৪

»» শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলিতেছে-
হে অর্জুন! তোমার এই সামান্য চক্ষু দ্বারা তুমি আমায় দেখিতে পারিবে না; তাই তোমাকে দিব্য চক্ষু প্রদান করিতেছি, তদদ্বারা তুমি আমার যোগৈশ্বর্য রুপ দেখ। গীতাঃ ১১/৮

»» সঞ্জয় ধৃতরাষ্টকে বলিতেছে-
ব্যাসদেবের প্রসাদে যোগরূপ পরম গুহ্য জ্ঞান সাক্ষাৎ যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাক্য আমি নিজ কর্ণে শ্রবন করিয়াছি। গীতাঃ ১৮/৭৫

যেখানে শ্রেষ্ঠ যোগী শ্রীকৃষ্ণের ন্যায় উপদেষ্টা আছেন, আর মহাবীর অর্জুন আছেন, সেখানে শ্রী,বিজয়, ঐশ্বর্য, নীকি বিরাজ করিতেছে। ইহাই আমার মত। গীতাঃ ১৮/৭৮

(এখান থেকে বুঝা যায় যে- অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে যোগেশ্বর বললো আর শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং যোগেশ্বর বলে স্বীকার করলো এবং সঞ্জয় শ্রীকৃষ্ণকে যোগেশ্বর বলে সম্মধন করলেন।

এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় শ্রীকৃষ্ণ একজন যোগেশ্বর বা যোগী পুরুষ ছিলেন)

»»» এখন তাহলে এবার দেখি গীতায় "আমি" কে ছিলেন!
»»আমরা মহাভারতের অশ্বমেধিক পর্বের ১৬ অধ্যায় ১৩ নং শ্লোক পড়ে জানতে পারি যে-

"পরম হি ব্রহ্ম কথিতং যোগ যুক্তেন তন্ময়,
ইতিহাসং তু বক্ষামি তস্নবন্নথৈ পুরাতনম"।।
(মহাঃ অশ্বঃ পর্ব- ১৬/১৩)

বঙ্গানুবাদঃ- সে সময় আমি যোগযুক্ত হয়ে পরমাত্মাতত্ত্বের বর্ননা বিবর্তন করেছিলাম। এখন সেই বিষয় এর জ্ঞান করানোর জন্য আমি এক প্রাচিন ইতিহাস বর্ণনা করছি।

(এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত হয়ে অর্জুনকে গীতা দান করেছেন। কারন, শ্রীকৃষ্ণ একজন যোগেশ্বর ছিলেন।)


»»» কিন্তু গীতা পাঠ কালে আমারা দেখতে পারি যে, শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা যোগযুক্ত অবস্থায় গীতা দান করে নাই। শ্রীকৃষ্ণ কখনো যোগযুক্ত অবস্থায় গীতা দান করেছেন আবার যোগ মুক্ত অবস্থায় গীতা দান করেন। যখন শ্রীকৃষ্ণ যোগমুক্ত ছিলেন তখন সেটা শ্রীকৃষ্ণের বানী ছিল। আর যখন শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত ছিল, তখন সেটা শ্রীকৃষ্ণের মাধ্যমে পরমব্রহ্মের বানী ছিল। (মনে রাখতে হবে শ্রীকৃষ্ণ যোগেশ্বর ছিলেন)।

»»» দেখুন, এ বিষয়ে শ্রীকৃষ্ণ গীতায় কি বলেছে-

তিনি সর্ব জীবের অন্তরে আছেন এবং বাহিরে আছেন। তিনি স্থাবর ও জঙ্গম রুপে আছেন। তিনি সূক্ষ হইতেও সূক্ষতর, তিনি কাছে থাকিয়াও দূরে বলে মনে হয়। গীতাঃ ১৩/১৬

হে অর্জুন! ঈশ্বর সকলের দেহে অবস্থান করিয়া যন্ত্রের ন্যায় তাঁহার কার্য চালাইতেছেন।
গীতাঃ ১৮/৬১

»»» এই যোগযুক্ত অবস্থা বলতে শ্রীকৃষ্ণ গীতায় কি বলেছে দেখুন-
হে ধনঞ্জয়, ইন্দ্রিয়-সঙ্গ ত্যাগ করিয়া সিদ্ধি ও অসিদ্ধিতে সমভাপন্ন হইয়া, যোগে ("আমি" "আমার" ইত্যাদি বোধ রহিত অবস্থায়) অবস্থিত হইয়া কর্ম কর; সমত্বই যোগ বলিয়া উক্ত হয়।
গীতাঃ ২/৪৮
[ব্যখাঃ তুমি যোগস্থ হইয়া কর্ম কর,
যোগস্থ— যোগে অবস্থিত; যোগ অর্থাৎ মিলন!
“যোগশ্চিত্তবৃত্তি-নিরোধঃ” চিৎ- আত্মা, তদবৃত্তি অর্থাৎ প্রাণের গতি; এই গতির নিরোধাবস্থাই স্থিরাবস্থারূপ যোগ; অথাৎ প্রাণপানের গতিরূপ চিত্তের বৃত্তি স্বতঃ নিবৃত্ত হইয়া আত্মা (শ্রীকৃষ্ণ) পরমাত্মার (পরমব্রহ্ম) মিলনরূপ স্থিতির অবস্থাই যোগ। এ অবস্থায় "আমি" "আমার" বোধ থাকে না; এই অহংজ্ঞানরহিত স্থির সাম্যাবস্থারূপ সমত্বই যোগ বলিয়া উক্ত হয়।]

(যোগ অবস্থায় "আমি" "আমার" ইত্যাদি বোধ রহিত অবস্থা সম্পর্কে জানতে নিচের ৩ ও ৪ নং ছবিতে ব্যখা দেখুন )

»»এই সম্পর্কে পবিত্র বেদ মন্ত্রে কি বলা হয়েছে দেখুন-
"যদগ্নে স্যামহং ত্বং বা ঘাস্যা অহমৃ। স্যুষ্টে সত্যা ইহাশিষঃ"।।
(ঋগ্বেদঃ- ৮।৪৪।২৩।)

বঙ্গানুবাদঃ- হে প্রকাশ স্বরুপ পরমাত্মা্। যখন আমি তুমি হইয়া যাই বা তুমি আমি হইয়া যাও, তখনই এ সংসারে তোমার সব করুণা সার্থক হয়।

এখান থেকে বুঝতে পারি যে, যোগযুক্ত অবস্থায় "আমি" "আমার" অহম্ বোধ রহিত অবস্থা তা পরমাত্মার বানী! (গীতায় ৮/৩ বলা আছে, পরমাত্মাকেই ব্রহ্ম বলে ) । মোটেও প্রকাশকারীর বানী নয়।
(প্রমান স্বরুপ গীতার ১৮ অধ্যায় ৬১ নং শ্লোক দৃষ্টান্ত)

এরুপ অহং ভাবে গীতায় শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত অবস্থায় "আমি" "আমার" "আমাকে" শব্দের উচ্চারণ করেছে। কারন শ্রীকৃষ্ণ একজন যোগেশ্বর ছিলেন।

অনুরুপ ভাবে "অহম্' বোধে" যোগযুক্ত অবস্থায় আরো অনেকেই "আমি" "আমাকে" শব্দ উচ্চারণ করেছে।

উদাহরন স্বরুপ বলা যায় যে-
(১) লোকনাথ ব্রহ্মচারীও "আমি" "আমাকে" শব্দের উচ্চারণ করেছেন।

রণে বনে জলে জঙ্গলে, যেখানেই বিপদে পরিবে, "আমাকে" স্বরণ করিবে, "আমিই" রক্ষা করিবো।

(২) ছান্দোগ্য উপনিষদে আমরা তেখতে পাই যে, গুরু শিষ্যকে অহংভাবে "আমি" "আমার" বোধে উপদেশ দেয়ার প্রমাণ পেয়ে থাকি।
'অহম্' দৃষ্টিতে উপদেশ- আমিই অর্ধভাগে, আমিই ঊর্ধ্বে, আমি পশ্চাতে, আমি সম্মুখে, আমি দক্ষণে, আমিই বামে- আমিই এই সমস্ত।
(ছান্দোগ্য উপঃ ৭।২৫।১)

(৩) শ্রীরামকৃষ্ণ পরমাহংসদেব "আমি" শব্দের উচ্চারন করেছেন-
"সত্যে নারায়ন, ত্রেতাতে রাম, দ্বাপরে কৃষ্ণ, কলিতে আমিই রামকৃষ্ণ"

(৪) অনুরুপ ভাবে আর্চার্য শংকরও নাকি (অহম্ বোধে) "আমি" শব্দের উচ্চারণ করেছেন।

তাহলে কি - শ্রীকৃষ্ণ, লোকনাথ ব্রহ্মচারী, শ্রীরামকৃষ্ণ, শংকরাচার্য এরা সকলেই পরমেশ্বর???

দেখি বহু ঈশ্বর সম্পর্কে পবিত্র বেদে কি বলেছে-
"ন দ্বিতীয় ন তৃতীয় শ্চতুর্থো নাপ্যুচ্যতে।
ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠ সপ্তমো নাপ্যুচ্যতে।
নাষ্টমো ন নবমো দশমো নাপ্যুচ্যতে।
য এতং দেবমেক বৃতং বেদ"।।
(অথর্ব্ববেদঃ ১৩।৪।২।) ও (১৬।১৭।১৮।)
বঙ্গানুবাদঃ পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম্, নবম বা দশম ঈশ্বর বলিয়া অভিহিত হয় না। যিনি তাঁহাকে শুধু এক বলিয়া জানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন।


»»শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন-
"অক্ষরং ব্রহ্ম পরমং"
অর্থাৎ পরমাত্মাকেই ব্রহ্ম বলে। (গীতা ৮/৩)

»« তাহলে এখান থেকে এটা স্পষ্ট যে, যোগযুক্ত অবস্থায় যোগীপুরুষগণ (অহম্ বোধে) "আমি" "আমাকে" ইত্যাদি শব্দের উচ্চরণ করে। প্রকৃত পক্ষে এটা ("আমি" "আমার") শব্দ ঈশ্বরের বাণী!!! যোগীদের বানী নয়।

পরিশেষে সকলের কাছে অনুরোধ করিতেছি, আপনারা যারা অামার এই পোষ্টি পড়ে বিন্দুমাত্র যদি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে SHARE করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিবেন।
গীতা ৪ অধ্যায়, ৫-৬ শ্লোক
ভগবান বললেন -হে পরন্তপ অর্জুন আমার এবং তোমার বহুজনম অতিত হয়েছে, আমি সে সমস্ত জন্মের কথা মনে করতে পারি তুমি তা পার না।৫।
যদিও আমি জন্ম রহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্ব ভূতের ঈশ্বর তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি স্বীয় মায়ার দ্বারা অবতির্ন হই।৬।
ওপরের দুটি শ্লোক স্ববিরোধী কারণ ওপরের শ্লোকে কৃষ্ণ বলেছে তার অনেক বার জন্ম হয়েছে , কিন্তু দেখুন পরের শ্লোকে কৃষ্ণ বলছে যে আমি জন্ম রহিত অর্থাৎ তার জন্ম হয়না।
গীতা ৯ অধ্যায়, ২৯ শ্লোক
আমি সর্বভূতে সমান ভাবে বিরাজ করি, কেউ আমার প্রিয় নয় ও অপ্রিয়ও নয়।২৯।
গীতা ১৮ অধ্যায়, ৬৫-৬৯ শ্লোক
তুমি আমাতে চিত্ত স্থির কর এবং আমার ভক্ত হও। আমার পুজা কর এবং আমাকে নমস্কার কর। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। এই জন্য আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে এই ভাবে তুমি আমাকে প্রাপ্ত হবে।৬৫।
পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে তার থেকে অধিক প্রিয়কারি এবং আমার প্রিয় আর কেউ নেই এবং ভবিষ্যতে কখন হবেও না।৬৯।
ওপরের শ্লোকে কৃষ্ণ বলছে তার কাছে কেও প্রিয়ও নয় এবং অপ্রিয়ও নয়। কিন্তু নিম্নের শ্লোকে কৃষ্ণজী অর্জুন কে প্রিয় বলছে এমন কেন ? কৃষ্ণ দুই ধরনের স্ববিরোধী কথা কেন বলছে গীতায় ? আবার নিচের শ্লোকে বলছে তার মতো প্রিয় কেও হবেনা, উত্তর আছে কি কোনো কৃষ্ণভক্তদের ? এখানেই শেষ নয় আরও আছে আসুন_____
গীতা ৭ অধ্যায়, ৬ শ্লোক
হে অর্জুন! সর্বভূত(জড় ও চেতন) এই উভয় প্রকৃতি হতেই উৎপন্ন বলে জানবে এবং আমি সমস্ত জগতের উৎপত্তি এবং প্রলয়রূপ অর্থাৎ সমগ্র জগতের মূল কারণ।৬।
গীতা ১৮ অধ্যায়, ৪৬ শ্লোক
যে পরমেশ্বর হতে সমস্ত প্রাণীর উৎপত্তি হয়েছে, যিনি এই সমগ্র জগৎ পরিব্যাপ্ত আছেন, সেই পরমেশ্বর কে নিজের স্বাভাবিক কর্মের দ্বারা অর্চনা করে মানুষ সিদ্ধি লাভ করে।৪৬।
ওপরের শ্লোকে কৃষ্ণ বলছে যে কৃষ্ণই সমগ্র জগতের মূল কারণ, কিন্তু পরের শ্লোকে কৃষ্ণ স্বয়ং বলছে যে 'যে পরমেশ্বর হতে সমস্ত প্রাণীর উৎপত্তি হয়েছে, যিনি এই সমগ্র জগৎ পরিব্যাপ্ত আছেন'। বলছি গীতায় ঈশ্বর সংখ্যা কয়টা ? আর কৃষ্ণ একবার নিজেই নিজেকে ঈশ্বর বলছে আবার কৃষ্ণ নিজেই ঈশ্বরকে 'যিনি, সেই' বলে কথন করছে, বলছি গীতার শ্লোক এমন উল্টো পাল্টা স্ববিরোধী কেন ?
গীতা ৯ অধ্যায়, ২৮ শ্লোক
এই ভাবে, আমাতে সমস্ত কর্ম অর্পণ দ্বারা সন্ন্যাসযোগে যুক্ত হয়ে তুমি শুভাশুভ ফলরূপ দ্বারা কর্মবন্ধন হতে মুক্ত হবে এবং এ থেকে মুক্ত হয়ে আমাকেই প্রাপ্ত হবে।
গীতা ১৮ অধ্যায়, ৬২ শ্লোক
হে ভারত! তুমি সর্বত্রভাবে সেই পরমেশ্বরই শরনাগত হও। তার কৃপায় তুমি পরমশক্তি এবং সনাতন পরমধাম প্রাপ্ত হয়।৬২।
ওপরের শ্লোকে কৃষ্ণজী বলছে যে 'আমাকেই প্রাপ্ত হবে'। কিন্তু নিচের শ্লোকটি দেখুন এখানে কৃষ্ণজী বলছে 'তুমি সর্বত্রভাবে সেই পরমেশ্বরই শরনাগত হও। তার কৃপায় তুমি পরমশক্তি এবং সনাতন পরমধাম প্রাপ্ত হয়'। এখানে কৃষ্ণজী 'সেই, তার' বলেছে ঈশ্বরকে অর্থাৎ কৃষ্ণজী এখানে ঈশ্বর কে নিজের থেকে ভিন্ন বলছে, কারণ কি ? উত্তর আছে কোনো ইসকন পাদ ভক্ত ? গীতার মধ্যে কৃষ্ণ এমন স্ববিরোধী কথন করছে কেন ? আসুন আরও দেখি_____
গীতা ১৩ অধ্যায়, ১৩, ১৪, ১৫ শ্লোক
তার সর্বদিকে হস্ত, পদ, চক্ষু, মস্তক, কান ও মুখ, কারণ তিনি সমগ্র জগতকে ব্যাপ্ত করে আবৃত বিরাজিত আছেন।১৩।
তিনি সমস্ত ইন্দ্রিয়ের বিষয় সমূহের জ্ঞাতা হয়েও প্রকৃত পক্ষে ইন্দ্রিয় রহিত এবং অনাসক্ত হয়েও সকলের ধারক ও পোষক, নির্গুণ হয়েও সমস্ত গুণের ভোক্তা।১৪।
চর, অচর অর্থাৎ জঙ্গম ও স্থাবর সর্বভূতের ভেতর ও বাইরে এবং স্থাবর-জঙ্গম রূপেও তিনি বিরাজিত। অতি সূক্ষ্ম হওয়া সত্ত্বেও অবিজ্ঞেয়, তিনি জ্ঞানীর অতি নিকটে এবং অজ্ঞানীর অত্যন্ত দূরে।১৫।
এখানে কৃষ্ণজী নিজেই ঈশ্বরকে 'তার' বলছে কৃষ্ণজী বলছে যে 'তার সর্বদিকে হস্ত, পদ, চক্ষু, মস্তক, কান ও মুখ, কারণ তিনি সমগ্র জগতকে ব্যাপ্ত করে আবৃত বিরাজিত আছেন'
অর্থাৎ ঈশ্বর সমস্ত দিকেই ব্যাপক আছে বলে কৃষ্ণজী এমন বলছে, পৌরানিকরা এই সমস্ত শ্লোক দেখে তো ঈশ্বর যে সাকার বানিয়ে দেবে কিন্তু দেখুন কৃষ্ণ ওপরের শ্লোকে বলেছে যে 'তিনি সমস্ত ইন্দ্রিয়ের বিষয় সমূহের জ্ঞাতা হয়েও প্রকৃত পক্ষে ইন্দ্রিয় রহিত ' এখানে কৃষ্ণজী বলছে যে ঈশ্বর প্রকৃত পক্ষে ইন্দ্রিয় রহিত অর্থাৎ ঈশ্বরের কোনো ইন্দ্রিয় নেই তিনি নিরাকার। তা কৃষ্ণ ভক্তরা উত্তর দিতে পারবে যে কৃষ্ণ যখন নিজেই ঈশ্বর তাহলে এখানে কৃষ্ণ কাকে 'তিনি' বলছে ? গীতা এমন কেন স্ববিরোধী উল্টো পাল্টা ?
পৌরানিকরা গীতার ওই শ্লোক গুলো ধরে টানে যে যেখানে কৃষ্ণ বলেছে যে আমিই ব্যাসদেব, আমিই কপিলমুনি, আমিই নারদ, আমিই সামবেদ, আমিই ওঙ্কার, আমিই ইন্দ্র আদি আমিই জগতের ঈশ্বর। গীতার এই সমস্ত বাণী গুলোকে প্রয়োগ করে কৃষ্ণভক্তরা কৃষ্ণকেই ঈশ্বর বানিয়ে দেয়।
কৃষ্ণজী 'আমি' শব্দ দ্বারা বলেছে যে 'আমিই ঈশ্বর, আমিই জগতের মূল কারণ' অর্থাৎ কৃষ্ণই ঈশ্বর, এমন যুক্তি দ্বারা যদি কৃষ্ণকে ঈশ্বর ভাবা হয় তাহলে আমি এদেরই এই যুক্তিতেই ফেঁসে দেবো, দেখুন গীতা ১০/৩৭ শ্লোকে কৃষ্ণ বলেছে যে 'বৃঞ্চীনাম্‌ বাসুদেব অস্মি পাণ্ডবানাম্‌ ধনঞ্জয়ঃ' কৃষ্ণ বলেছেন যে 'পাণ্ডবের মধ্যে আমিই ধনঞ্জয়'। এই শ্লোকে কৃষ্ণ স্পষ্ট ভাবে বলেছে যে কৃষ্ণ নিজেই ধনঞ্জয় অর্থাৎ অর্জুন, তাহলে কৃষ্ণ যদি নিজেই অর্জুন হয় তাহলে ফালতু ফালতু যুদ্ধে সময় নষ্ট করে গীতার এতগুলো বাণী অর্জুন বলার কি দরকার কি ছিল ? এখানে তো অবশ্যই বলা যায় যে কৃষ্ণ নিজেই অর্জুন হওয়া সত্ত্বেও গীতার জ্ঞান দেওয়ার নাটক কেন করলো যুদ্ধের মাঠে ? যদি কেউ বলে যে 'কৃষ্ণ মানব জাতিকে জ্ঞান দেওয়ার জন্য এমন করেছিল'। এই কথা বলাও ভুল হবে কারণ কৃষ্ণ যখন নিজেই অর্জুন তাহলে যুদ্ধের মাঠে গীতার জ্ঞান দিয়ে যুদ্ধের সময় নষ্ট করার কোনো মানেই ছিলনা, এই জ্ঞান তো কৃষ্ণজী তাদের বাড়িতে এসেই দিতে পারতো, আর এই (গীতা ১০/৩৭) শ্লোক অনুযায়ী গীতার ওই বিশ্বরূপ দর্শন অধ্যায়টি পুরোই একটা নাটকের অধ্যায় তা প্রমাণ হয় কারণ কৃষ্ণ যখন নিজেই অর্জুন তাহলে ফালতু কেন কৃষ্ণজী অর্জুন কে বিশ্বরূপ দেখাতে গেল ? বলুন কৃষ্ণভক্তরা কৃষ্ণকে ঈশ্বর ভাবলে তো গীতা একটা স্ববিরোধী এবং নাটক পূর্ণ গ্রন্থ হবে তাই না ? আবার দেখুন কৃষ্ণই যখন অর্জুন তাহলে গীতা ২/২ শ্লোকে কৃষ্ণ নিজেই অর্জুনকে অনার্য অর্থাৎ অসভ্য, মূর্খ বলেছে। তাহলে যুক্তিটি তো এই দাঁড়ায় যে কৃষ্ণ নিজেই নিজেকে অনার্য অর্থাৎ মূর্খ, অসভ্য বলেছে ? এমন উল্টো পাল্টা কেন গীতা ? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর কি ১০০০০ বছরে খুঁজে পাবেন কৃষ্ণভক্তরা ? বৈদিক শাস্ত্র সম্পর্কে যতদিন অজ্ঞ থাকবে কৃষ্ণভক্তরা ততদিন এই সমস্ত গীতার শ্লোকের যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা হবেনা।
লেখকঃ- বেদপ্রিয় আর্য পরিতোষ ও বিক্রম

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ