ঈশ্বর নিরাকার তার কোন আকার নাই - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

26 June, 2020

ঈশ্বর নিরাকার তার কোন আকার নাই

শ্বর নিরাকার তার কোন আকার নাইকারবান বস্তুই প্রকৃতি, সকারবান বস্তুই বিকৃতিযুক্ত, ঈশ্বরের স্বরূপ ই সৎ চিৎ নন্দ স্বরূপ। তাহাতে কোন বিকার নাই প্রকৃতি সত্তা হতে ভিন্ন।
বেদজ্ঞানহীন মনুষ্য তাকে সকার বলে জাহির করে। প্রমান হিসাবে নিচে দেখুন।
অপপ্রচারকারীঃ-
জগতের স্রষ্টা বলে কি কেউ আদৌ আছেন? যদি থাকেন, তবে সেই জগদীশ্বর শ্রীভগবানকে কি দর্শন করা যায়? কেউ কি তাঁকে প্রত্যক্ষ করেছে? নতুবা এ কেবলই অন্ধবিশ্বাস?
বৈদিক সনাতন ধর্ম অন্ধবিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, বেদদ্রষ্টা ঋষিগণ পরমেশ্বরের
সাক্ষাৎ প্রাপ্ত হয়েছিলেন ৷ ভগবদ্ভক্ত সাধক ভগবানের দর্শন প্রাপ্ত হন, ইহা নিত্য সত্য ব্যাপার ৷ ইহার দৃষ্টান্ত তাই বেদে দেখতে পাই —
“নেম ঋষি বলেন, ইন্দ্র নামে কেউ নেই! কে তাকে দেখেছে? আমরা কাকে স্তুতি করব?” (ঋঃ ৮৷১০০৷৩)
পরমৈশ্বর্যবান ভগবান (ইন্দ্র) তার সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে বলছেন— “হে স্তোতা, এ আমি তোমার নিকট এসেছি, আমাকে দর্শণ কর ৷ সমস্ত ভুবনকে আমি মহিমা দ্বারা অভিভূত করি ৷ যজ্ঞের প্রদেষ্টৃগণ আমাকে বর্ধিত করে, আমি বিদারণশীল ভূমি বিদীর্ণ করি ৷” (ঋঃ ৮৷১০০৷৪)

মহর্ষি শৌণক (৮৷১০০) এই সূক্ত প্রসঙ্গে বলেছেন যে- ‘ভৃগুপুত্র নেম বলেছিলেন ইন্দ্র বলতে কেউ নাই ৷ একথা শুনে ইন্দ্র তার সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে তাকে দর্শন দেন এবং ৪ ও ৫ নং মন্ত্র স্বয়ং ইন্দ্রের বাক্য ৷ নেম ঋষি ইদ্রদেবকে দর্শন করে যার পর নাই আনন্দিত হন ৷’ (বৃহদ্দেবতা ৬/১১৭-১১৯)

ভগবদ্দর্শনের আরো একটি স্পষ্ট স্বীকারোক্তি পাই ৷—
ঋগ্বেদ সংহিতা
মন্ডল-১ ৷ সূক্ত-২৫ ৷ মন্ত্র-১৮
দেবতা- বরুণ ৷ ঋষি- শুণঃশেপ
দর্শং নু বিশ্বদর্শতং দর্শং রথমধি ক্ষমি ৷
এতা জুষত মে গিরঃ ৷৷
সায়ণভাষ্যঃ (বিশ্বদর্শতং) সর্ব্বজন-দর্শনীয়, এবং আমাদিগের প্রতি কেবল অনুগ্রহের নিমিত্ত আবির্ভূত বরুণদেবকে (দর্শং নু) আমি নিশ্চিতভাবে দেখিয়াছি ; এবং (দর্শং রথমধি ক্ষমি) এই ভূমি তথা পৃথিবীতে বরুণদেবের রথকে প্রকাশ্যভাবে দেখিয়াছি, (এতা মে গিরঃ) আর আমি যেসমস্ত স্তুতি উচ্চারণ করিতেছি, সেই বরুণদেব আমার সেই সমস্ত স্তুতি (জুষত) সেবা অর্থাৎ গ্রহণ করিয়াছেন ৷
শ্রীদূর্গাদাস লাহিড়ী শর্ম্মন এইরুপ অনুবাদ করেছেন :—
“সেই সর্ব্বদর্শী ভগবানকে আমি নিশ্চয় দেখিয়াছি ; পৃথিবীতে তাঁহার গতিবিধি সম্যকরূপে আমার দৃষ্টিগোচর হইয়াছে ৷ আমার উচ্চারিত স্তোত্রসমুদায় তাঁহার নিকট পৌছয়াছে (তিনি আমার স্তোত্রসমুদায় প্রাপ্ত হইয়াছেন)৷”
স্বামী সত্য প্রকাশ সরস্বতী কৃত অনুবাদ :—
“ I have seen Him whom all may see. I am feeling the presence of His divine chariot above the earth—His activity around us—I am sure that He has accepted my devotional songs. ”

মি
ঈশ্বর ইন্দ্রীয় অতীত সত্বা তাকে কোন ইন্দ্রিয় দ্বারা দর্শন করা যায় না। তাকে দর্শন হয় জ্ঞান দ্বার ধ্যান দ্বারা। উক্ত মন্ত্রগুলোতে ঈশ্বর মনুষ্যকে জ্ঞান জন্মানোর পর আত্ম দর্শন দেন সেই কথা বলা হয়ে।
অপপ্রচারকারীগন ওতাদের অনুবাদকেরা ঈশ্বরকে সাকার বানিয়ে চোখে দেখিবার ন্যায় অাত্ম দর্শনের কথা বলেছেন।
ওই সব অনুবাদকের বেদের উপর কোন দক্ষতাই নাই কারন তারা জানে না যে ঈশ্বর কখন ও সকার হন না। প্রমান হিসাবে অামি মন্ত্রগুলো দিচ্ছি।
।।ঋক ৮/১০০/৩।।
প্র সু স্তোমং ভরত বাজযন্ত ইন্দ্রায় স্বয়ং যদি সত্যমস্তি। নেন্দ্রো অস্তীতি নেম উ ত্ব অাহ ক ই দদর্শ কমভিষ্টবাম্।
পদার্থঃ ( বাজযন্তুঃ) শক্তিকে কামনা করে তুমি( ইন্দ্রায়) সেই পরম ঐশ্বর্যশালী প্রভুর জন্য( স্তোম্) স্তুুতিকে ( প্রসু ভরত) প্রকর্ষণ সম্পাদিত করো ( সত্য অস্তি) যদি প্রভু সত্য হয় তো তাহার জন্য ( সত্যম্) সত্যই স্তোমকে সম্পাদান করো, হৃদয়ে প্রভু সত্বার বিশ্বাস করেই তুমি প্রভুকে হৃদয় দ্বারা সত্যই স্তবন করো।
( নেমঃ উ ত্বঃ) অধুরে কোন জ্ঞানবান ব্যক্তি ( ইতি অাহ) এরূপ বলেছে যে, ( ইন্দ্র ন অস্তি) পরম ঐশ্বর্যশালী প্রভু নাই ( কঃ ই দদর্শ) কে এই প্রভুকে দর্শন করেছে?
( কং অভিষ্টবাম্) কার স্তবন অামরা করব?
ভাবার্থ - প্রভুর জন্য হৃদয়ের সমুচ্চয় স্তবন করো, প্রভু সত্বায় পূর্ণ বিশ্বাস রাখ। জ্ঞানের অপরিপক্বতার কারনে প্রভু সত্বার উপর সন্দেহ জাগে।

এই মন্ত্রের প্রশ্নের জবাব পরের মন্ত্রে দেওয়া হয়েছে ( ঋক ৮/১০০/৪)।।
#তারপরে দেখুনঃ
ওম্। অয়মস্নি জরিতঃ পশ্য মেহ বিশ্বা জাতান্যভ্যস্মি মহ্না। ক্ষতস্য মা প্রদিশো বর্ধায়ন্ত্যাদর্দিরো ভুবনা দর্দরীমি।।
পদার্থঃ সাধকের উক্তি এই যে, ( জরিতঃ) স্তোতঃ! ( অয়ং অস্তি) মি তোমার(ঈশ্বরের) সমীপেই ছি ( মা) মাকে ( ইহ) এই (পশ্য) দেখ। এই জগতের প্রত্যেক পদার্থে মি তোমার সত্বাকে দেখছি ( বিশ্বা জাতানি) সব উৎপন্ন পদার্থকে ( মহ্না) পনার মহিমা দ্বারা ( অভ্যাস্মি) অভিভূত করে রেখেছ ( ঋতস্য প্রদিশঃ) সত্যের উপদেষ্টা মনুষ্যকে ( মা বর্ধয়ন্তি) অামরা বর্ধন করি ( দর্দিরঃ) সমান্ত সব লোকের বিদারনকারী তুমি।প্রলয়ের সময় পনিই( ভুবনা) সব ভূবনকে ( দর্দরীমি) বিদির্নী করে থাক এবং অাপনার বিদ্বেষকারীকেও বিদির্ন করে থাক।
ভাবার্থঃ মনুষ্যের জ্ঞান হবার পরে সব পদার্থেই প্রভুর মহিমাকে দর্শন করতে থাকে। পদার্থের প্রলয়ের সময় পনি পনার অনন্ত শক্তিকে দেখিয়ে থাক। বাসনারূপী অপ শক্তিকে মার পক্ষে ধ্বংস করা বড় কঠিন কিন্তু এ সবের বিদির্নকারী শক্তি একমাত্র প্রভু তুমিই ছ।
★ এই মন্ত্রে কোথাও ঈশ্বরের সাকারত্ব প্রকাশিত হয় না। কিন্তু সাকারবাদীরা সকার বলে থাকেন। অাপনারাই এখন বিচার করে দেখুন। কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা!! "
২।।ঋক ৩/৫১/১২।। সাকারবাদের খন্ডন মন্ডন করা হলো।
।।ওম্।। প্রতেঅশনোতু প্রেন্দ্র ব্রহ্মনা শিরঃ। প্রবাহুশুররাধসে।। ১২।।
পদার্থঃ হে ( ইন্দ্র) রাজাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যিনি ( তে) পনাকে ( কুক্ষয়োঃ) পেটের শপাশ ভাগে ( ব্রহ্মনা) ধনের সাথে রস কে( প্রঅশনেতু) প্রাপ্ত হয়ে থাকেএবং হে ( শুর) বীর পুরুষ! ( তে) পনাকে ( শিরঃ) শ্রেষ্ঠ অঙ্গ মস্তককে ( বাহু) হাত দিয়ে ( রাধসে) ধনের জন্য প্রাপ্ত হয়েছে, ঐটিকে তুমি পালন করিও।

স পর্য়্যগাচ্ছুকমকায়মব্রণমস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্। কবির্মণীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্য়াথাতথ্যতোঽর্থান্
ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।। ৮।। (যজু০ ৪০/৮)
পদার্থঃ হে মনুষ্য! যে ব্রহ্ম (শুক্রম্) শীঘ্রগামী, সর্বশক্তিমান (অকায়ম্) স্থুল, সূক্ষ্ম আর কারণ শরীর থেকে রহিত, (অব্রণম্) ছিদ্র রহিত এবং যাহার দুই টুকরো হয় না, (অস্নাবিরম্) নাড়ী আদির বন্ধন থেকে রহিত, (শুদ্ধম্) অবিদ্যা আদি দোষের হইতে রহিত হয়ে সদা পবিত্র, (অপাপবিদ্ধম্) যে কখনো পাপ হইতে যুক্ত, পাপকারী আর পাপ দ্বারা প্রেমকারী হয় না, সে (পরি+অগাত্) সর্বত্র ব্যাপক; যে (কবিঃ) সর্বজ্ঞ, (মনীষী) সব জীবের মনোবৃত্তিকে জানে, (পরিভূঃ) দুষ্ট পাপিদের তিরস্কারকারী, (স্বয়ম্ভূঃ) অনাদিস্বরূপ, যাহার সংযোগ থেকে উৎপত্তি আর বিয়োগ হইতে বিনাশ হয় না, যাহার মাতা-পিতা কেউ নেই আর যাহার গর্ভবাস, জন্ম, বৃদ্ধি আর ক্ষয় হয় না, সে পরমাত্মা (শাশ্বতীভ্যঃ) সনাতন, অনাদি স্বরূপ, নিজের স্বরূপের দৃষ্টি থেকে উৎপত্তি আর বিনাশ হইতে রহিত (সমাভ্যঃ) প্রজার জন্য (য়াথাতভ্যতঃ) যথার্থ হইতে (অর্থান্) বেদের দ্বারা সব পদার্থের (ব্যদধাত্) উত্তম প্রকারে উপদেশ করে। (সঃ) সে পরমাত্মাই তোমাদের জন্য উপাসনা করার যোগ্য।। ৮।।
ভাবার্থঃ হে মনুষ্য! যদি অনন্ত শক্তিশালী, অজন্মা, অখ-, সদাই মুক্ত, ন্যায়কারী, পাপরহিত, সর্বজ্ঞ, সবার দ্রষ্টা, নিয়ন্তা আর অনাদি স্বরূপ ব্রহ্ম সৃষ্টির আদিতে স্বয়ং প্রোক্ত বেদের শব্দ দ্বারা অর্থ আর সম্বন্ধকে বুঝানোকারী বিদ্যার উপদেশ না করে তো কোন বিদ্বান হয় না; আর না ধর্ম, অর্থ কাম, মোক্ষ রূপ ফলকে প্রাপ্ত করে। এইজন্য এই ব্রহ্মকে সদা উপাসনা করো।। ৮।।
ভাষ্যঃ আচার্য রাজবীর শাস্ত্রী
ন তস্য প্রতিমা অস্তি য়স্য নাম মহদ্যশঃ।
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেব মা মা হিংসীদিত্যেবা য়স্মান্ন জাত ইত্যের্ষঃ।। (যজু০ ৩২/৩)
পদার্থঃ (য়স্য) যাহার (মহত্) মহান (নাম) প্রসিদ্ধ (য়শঃ) যশ আছে, (তস্য) ওই পরমাত্মার কোন (প্রতি-মা) প্রতিমা অথবা উপমা (ন অস্তি) নেই। (হিরণ্য-গর্ভ ইতি এবঃ) 'হিরণ্যগর্ভ' আদি মন্ত্রের দ্বারা তথা, (মা মা হিংসীত্ ইতি এষা)
'মা মা হিসীত্' এই মন্ত্রদ্বারা, আর
(য়স্মাত্ ন জাতঃ ইতি এষঃ) 'য়স্মান্ন জাত' এই মন্ত্রদ্বারা তাহার বর্ণন হয়।।৩।।
ভাবার্থঃ উক্ত মন্ত্রের দ্বারা যাহার মহান প্রসিদ্ধ যশের গায়ন হয় ওই আত্মার কোন প্রতিমা অথবা উপমা হয় না।।৩।।
ভাষ্যঃ পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর
আসুন অমরকোষ আর বৈদিককোষ প্রতিমা শব্দ নিয়ে কি বলে-
তাই আসুন (প্রতিমা) শব্দের অর্থ
(অমরকোষে ২/১০/৩৫)
প্রতিমানং প্রতিবিম্বং প্রতিমাপ্রতিয়াতনা প্রতিচ্ছায়া।।৩৫।।
প্রতিকৃতিরর্চা পুংসি প্রতিনিধি-
প্রতিমা অর্থাৎ ছবির নাম।।৮।।
১. প্রতিমান। ২. প্রতিবিম্ব। ৩. প্রতিমা। ৪. প্রতিছবি। ৫. প্রতিছায়া।।৩৫।।
৬. প্রতিকৃতি। ৭. অর্চা। ৮. প্রতিনিধি।
.................................................................................
আর ( বৈদিককোষ; পৃষ্টাঃ ৬৪১) দেখে আসি-
প্রতিমা প্রতিমীয়নোত পরিমীয়ন্তে সর্ব পদার্থা য়য়া সা
ভা০-পরিমাণসাধন পদার্থতোলনার্থম্ (বস্তু) ১৫ ৬৫
প্রতিমীয়তে য়য়া তৎপরিমাপক সদৃশ তোলনসাধন প্রতিকৃতিরাকৃতির্বা ৩২ ৩
প্রতিগোয়তে য়য়া ক্রিয়ায়া সা ১৪ ১৮
পরিমাণ, সাদৃস্য বা মূর্তি স০ প্র০ ৪৩২, ৩২ ৩
প্রতিনিধি প্রতিকৃতি, প্রতিমান তোলনসাধন, পরিমাণ, মূর্ত্যাদিকল্পনম্
ঋ০ ভূ০ ৩০০, ৩২ ৩, প্রতিমীয়তেহনয়া সা (য়য়া পরিমাণ ক্রিয়তো)
ঋ০ ভূ০ ১৪৭, ঋ০ ৮ ৭ ১৮০ ৩
................................................................................
অনেক নামের দ্বারা এক ঈশ্বরের বোধ হয়-
ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নিমাহুরথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান্।
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং য়মং মাতরিশ্বানমাহুঃ।।
(ঋ০ ১।১৬৪।৪৬; অথর্ব০ ৯।১০।২৮; নিরু০ ৭।১৮, ১৪।১; ঋগ্বেধা০ ১।২৫।৭; বৃহদেবতা ৪।৪২)
'একই সৎ স্বরূপ পরমাত্মাকে জ্ঞানীলোক অনেক প্রকারে ডেকে থাকেন। ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, উরুত্মান, সৎ, যম, মাতরিশ্বা আদি নামের দ্বারা একই পরমাত্মার বর্ণন করেন।'
অথর্ববেদে ঈশ্বরের একত্বার নিশ্চয়তা-
'সে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চাম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম আদি অনন্ত সংখ্যা দ্বারা বলা হয়নি। এই সম্পূর্ণ জগত তাহাতে নিঃশেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ তাহার মধ্যে। সে সহন শক্তিদ্বারা যুক্ত অর্থাৎ অত্যন্ত বলবান। সে একই। কেবল একই। নিশ্চয়ই একই। সব তেজস্বী পদার্থ ইহাতে কেবল এক বানিয়ে রাখে।' (অথর্ব০ ১৩।৪।১৬-২১)
বৈ-মানরস্য প্রতিমোপরি দ্যোর্য়াবদ্রোদসী বিবাদে অগ্নিঃ।
(অথর্বঃ ৮।৯।৬)
' (বৈশ্বা-নরস্য) বিশ্বের নেতা ঈশ্বরের
(প্রতিমা) প্রতিমা এমনই হয়, যে (য়াবত্ দ্যোঃ) তেমন দ্যুলোকে উপরে থাকে, যেমন (রোদসী) উপরে নিয়ে আর নিম্নস্থ আকাশে (অগ্নিঃ) অগ্নিই (বি-ববাধে) অন্তর বানায়।' যথা-
য়স্মান্ন ঋতে বিজয়ন্তে জনাসো য়ং য়ুদ্ধয়মানা অবসে হবন্তে।।
য়ো বিশ্বস্য প্রতিমানং বভূব য়ো অচ্যুতচ্যুত্ স জনাস ইন্দ্রঃ।।
(ঋ০ ২।১২।৯; অথর্ব০ ২০।৩৪।৯)
'হে (জনাসঃ) মনুষ্য ! (য়স্মাত্ ঋতে) যাহাকে ছেড়ে (জনাসঃ) মনুষ্য (ন বিজয়ন্তে) বিজয়কে প্রাপ্ত হতে পারে না, আর (য়ুদ্ধমানাঃ) লড়াইকারী (অবসে)
রক্ষণের জন্য (য়ং হবন্তে) যাহার প্রার্থনা করতে হয়। আর যে (প্রতিমানম্) বিশ্বের প্রতিমা (বভূব) হয় আর যে (অচ্যুত-চ্যুত্) স্বয়ং না নড়াচড়া করে আর অন্যকে নাড়ায় (স ইন্দ্রঃ) সে ইন্দ্র অর্থাৎ সব জগতের এক রাজা।' ভাষ্যঃ পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর
এই দুই মন্ত্রে জগতের বরাবর ওই পরমাত্মার প্রতিমা, এরূপ বলেছে।
এই আকাশ অনন্ত। যে প্রকার আকাশের কোন সীমা নেই ওই প্রকার পরমেশ্বরেরও কোন অন্ত নেই। এই কথা উক্ত দুই মন্ত্রে বলা হয়েছে।
এখন আসি যজুর্বেদের নিম্ন মন্ত্র-
ও৩ম্ খং ব্রহ্ম।। (যজু০ ৪০। ১৭)
' (ও৩ম্ ব্রহ্ম) সবার রক্ষাকারী ব্রহ্ম (খং) আকাশের সমান ব্যাপ্ত।'
এই মন্ত্রের ভাব উক্ত অর্থের দুই মন্ত্রের সমান।
তাই আরো দেখুন-
ত্বং ভুবঃ প্রতিমানং পৃথিব্যাঃ।। (ঋ০ ১।৫২।১৩)
'তুমি পৃথিবী থেকে উল্টো প্রমাণ রাখেন।' অর্থাৎ পৃথিবী ছোট আর তুমি মহান। যথা-
সূ ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বাহত্যতিষ্ঠদ্দশাংগুলম্।
( ঋ০ ১০।৯০।১; আরণ্য স০ ৪।২; অথর্ব০ ১৯।৬।১; যজু০ ৩১।১; তৈ০ আরণ্য০ ৩।১২।১)
'সে পরমাত্মা পৃথিবীকে (বিশ্বতঃ) চারিদিক থেকে (বৃত্বা) ঘিরে
(দশাংগুলং) দশ আঙ্গুলের সমান ছোট বিশ্বকে (অতি অতিষ্ঠত্) বিশ্বের বাহিরেও আছে অথবা বিশ্বের উপর শাসন করেন।'
এই মন্ত্রে উক্ত আশায় অনেক স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তথা আরো মন্ত্র দেখুন-
ন হীন্বমস্য প্রতিমানস্যত্যন্তর্জাতেষূত য়ে জনিত্বাঃ। (ঋ০ ৪।১৮।৪)
' (অস্য ন) নিশ্চয়ই ইহার (জাতেষু অন্তঃ) বানানো পদার্থের অন্তর (উত) আর (য়ে জনিত্বাঃ) যে বানানোকারী হয় তাহার মধ্যে কোন (প্রতিমানম্) তুলনা, প্রতিমা
(ন অস্তি) হয় না।, যথা-
এই প্রকার প্রতিমা আর প্রতিমান শব্দের প্রয়োগ বেদ মন্ত্রে এসেছে, ইহার নিম্ন লিখিত অর্থ-'প্রতি-মা' র অর্থ-বানানোকারী প্রতিমা, সাদৃশ্য, উপমা, প্রতিবিম্ব, মাপ, তোলা, বিস্তার, বরাবর, 'প্রতি-মান' এর অর্থ-নমুনা সাদৃশ্য, তোলা, ওজন, মাপ, প্রতিবিম্ব, বিপরীত, শত্রু এই বিবিধ অর্থ দেখে তথা মন্ত্রের সংবন্ধ দেখে, উক্ত মন্ত্রের অর্থ বিচার করা উচিত।
কিং সময় ঋধক্ কৃণবদ্ য়ংসহপ্রে মাসো জভার শরদশ্চ পূর্বীঃ।
নহী ধ্বস্ত প্রতিমানমত্ত্য ন্তর্জাতেষূতে য়ে জনিত্বা।।৪।।
প্র তুবিদ্যুম্নস্য স্থবিরস্য ঘৃষ্বের্দিবো ররপ্শে মহিমা পৃথিব্যাঃ।
নাস্য শত্রুর্ন প্রতিমাননস্তি ন প্রতিষ্ঠিঃ পুরুমায়স্য সহ্যোঃ।।১২।।
(ঋ০ ৪/১৮/৪; ৬।১৮।১২)
পদার্থঃ (য়) যাহার (সহস্রং মাসঃ পূর্বী শরদঃ চ) হাজার মাসের আর অনেক বর্ষ পর্যন্ত (জভার) ভরণপোষণ করেন, (সঃ) সে
(ঋধক্ কিং কৃণবত্) বিরুদ্ধ কর্ম কে করবে?
(য়ে জনিত্বাঃ) যে উৎপন্নকারী তাহার আর (গাতেষু) উৎপন্ন হওয়ার (অন্তঃ) মাধ্যমে (অস্য প্রতিমানম্ নহি) এই ইন্দ্রের কোন উপমা নেই।।৪।।
ভাবার্থঃ যাহার অনেক মাসের আর বর্ষ পর্যন্ত ভরণপোষণ করেন, সে নিজের পোষণকরীর কোন কার্য কে করবে? অর্থাৎ কেউ করবে না। উৎপন্নকারী আর উৎপন্ন হওয়ার মধ্যে এই ইন্দ্রের সমান কেউ নেই।।৪।।
পদার্থঃ (তুবি-দ্যু-ম্নস্য) অত্যন্ত তেজস্বী (স্থবিরস্যা) স্থির আর (ঘৃষ্বেঃ) দুষ্টতাকে চূর্ণকারী ঈশ্বরের (মহিমা)
মহত্তা দ্যুলোক আর পৃথিবীর মর্যাদার থেকেও বাহিরে (ররশ্পে) বিস্তার। (ন অস্য শত্রুঃ) এই ঈশ্বরের কোন শত্রু নেই (ন অস্য প্রতিমানম্) না ইহার কোন প্রতিমা আছে। (পুরু-মায়স্য) অনন্ত জ্ঞানবান
(সহ্যোঃ) আর সহন শক্তিবান বলবান ঈশ্বরকে ছেড়ে আর (প্রতিষ্ঠিঃ) আশ্রয় হয় না। অর্থাৎ সেই এক সবার আশ্রয়।।১২।।
ভাবার্থঃ তেজস্বী শ্রেষ্ঠ শত্রুনাশক বীরের মহিমা পৃথিবী থেকে আর দ্যুলোক থেকেও মহান। অনেক প্রজ্ঞাবান আর শত্রুনাশক বীরের কোন শত্রু হয় না। অধিক কুশল আর শান্তি, সুখ, দানকারী বীরের জন্য তুলনা হয় না।।১২।।
ভাষ্যঃ পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর
এখন আসি প্রতিমানম্ শব্দের কি অর্থ করেছেন বৈদিককোষ
বৈদিককোষ প্রতিমানম্; পৃষ্টা ৬৪১।
পরিমাণসাধনানম্ ৪ ১৮ ৪ সাদৃশ্য পরিগান বা ১ ৩২ ৩ রামন্তাত্ প্রতিমীয়তে
পরিণীয়তে প্রতিক্রিয়তে গেন তত্ (স্ব-সুখমন্তরিক্ষ বা) ১ ৫২ ১২
প্রতিমীয়তে য়ত্ (জগত্) ১ ১০২ ৮ অতিসমর্থানামুপমা ১ ১০২ ৬
পরিমাণসাধক (ইন্দ্র=পরমেশ্বরী বিদ্যুদ্বা) ২ ১২.৯
পরিমাণসাধকম্ (জ্ঞানম্) ৩ ৩১ ৮ প্রতিমান অর্থাৎ পরিমাণের কর্তা (ঈশ্বর) আর্যাভি০ ১ ১৩,
ঋ০ ১ ৪.১৪ ১২, [প্রতি+মাঙ্মানে (জু০) ধাতো করণে ল্যুট্]
তাই সামবেদও ঘোষণা করছেন-
মা চিদন্যদ্ বি শংসত সখায়ো মা রিষণ্যত।
ইন্দ্রমিত্স্তোতা বৃষণং সাচ সুতে মুহুরুক্থা চ শংসত।।১০।।
সামবেদ ২৪২
পদার্থঃ হে (সখায়ঃ) মিত্র! তুমি (অন্যত্) দ্বিতীয় কোন বস্তু পাথরের মূর্তি, নদী, পর্বত ইদিকে (মা চিত্) না কখনো (বি শংসত) উপাস্য রূপে পূজা করো, (মা রিষণ্যত) যে উপাসনীয় নয় তাহার উপাসনা করে হানি প্রাপ্ত করো না। (সুতে) জ্ঞান, কর্ম আর ভক্তির রস নিষ্পাদিত হয়ে (সচা) সাথে মিলে (বৃষণম্) সুখবর্ধক (ইন্দ্রম্ ইত্) পরমেশ্বরেরই (স্তোত) স্তুতি-উপাসনা করো আর (শংসত) গান করো।।১০।।
ভাবার্থঃ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র আর জগতে যে সম্মানের যোগ্য তাহাকে সম্মান তো করাই উচিত, কিন্তু তাহাদের মধ্য থেকে কাউকে পরমেশ্বরের রূপে পূজা করা উচিত নয়, না নদী, বৃক্ষ, পর্বত আদি জড় পদার্থকে পূজা করা উচিত নয়। ইন্দ্র আদি নামের দ্বারা বেদের মধ্যে প্রসিদ্ধ সুখবর্ষী এক জগদীশ্বরই পুনঃ-পুনঃ স্তুতি, প্রার্থনা, অর্চনা আর উপাসনা করার যোগ্য।।১০।।
ভাষ্যঃ আচার্য ড. রামনাথ বেদালঙ্কার বিদ্যামার্তণ্ড

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ