যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

28 June, 2019

যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত

গীতা-একাদশ-অধ্যায়-বিশ্বরূপ-দর্শন ...
"যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্॥
পরিত্রাণায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে॥"
গীতা জ্ঞানযোগের চতুর্থ অধ্যায় (গীতা ৪/৭-৮)
  • যদা যদা হি (যখন যখনই)- ধর্মস্য (ধর্মের)- গ্লানিঃ (গ্লানি)- ভবতি (হয়); অভ্যুত্থানম্ (অভ্যুত্থান ঘটে)- অধর্মস্য (অধর্মের); [ তখনি] ভারত (হে ভরতবংশী অর্জুন)- অহং ( আমি) তত্ (সেই/ স্বীয়)- আত্মানং ( আত্মাকে)- সৃজামি ( সৃজন করি)।

  • সাধুনাং (সাধুদের)- পরিত্রাণায় (পরিত্রাণ হেতু), চ (এবং) দুষ্কৃতাং (দুষ্কৃতীকারীদের) বিনাশায় (বিনাশ নিমিত্ত); ধর্মসংস্থাপনার্থায় (ধর্ম সংস্থাপনের জন্য)- যুগে যুগে (যুগে যুগে) সম্ভবামি (অবতীর্ণ হই~ লীলা শরীর বিগ্রহ করি এই তাত্পর্য)॥
--হে ভারত (অর্জুন), যদা যদা হি (যে যে সময়ে) ধর্মস্য গ্লানিঃ (ধর্মের হানি, ক্ষীণতা), অধর্মস্য অভ্যুত্থানম্ (অধর্মের উদ্ভব) ভবতি (হয়), তদা (তখন) অহম্ (আমি, অর্থাৎ পুন্য-আত্মা / জীবাত্মা) আত্মানং সৃজামি (আপনাকে সৃজন করি, অর্থাৎ শরীর ধারণ পূর্বক অবতীর্ণ হই)।[৭]
সাধুনাং পরিত্রাণায় (সাধুদিগের রক্ষার জন্য), দুস্কৃতাং বিনাশায় (দুষ্টদিগের বিনাশের জন্য) ধর্মসংস্থাপনার্তায় চ (এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য) [আমি / জীবাত্মা] যুগে যুগে সম্ভবামি (যুগে যুগে অবতীর্ণ হই)।[৮]

সরলার্থঃ হে ভারত (অর্জুন), যখনই ধর্মের গ্লানি এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, আমি (জীবাত্মা) সেই সময়ে দেহ ধারণপূর্বক অবতীর্ণ হই।
অর্থাৎঃ "যখনই ধর্মের গ্লানি হয়, অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটে তখনই হে ভরতবংশী (অর্জুন), পাপীদের পরিত্রাণ এবং দুষ্কৃতীদের বিনাশ করে ধর্মসংস্থাপন করার জন্য আমি [স্বীয় পরমাত্মাকে মায়া দ্বারা সৃজন করি] যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।" ইহা ঈশ্বরাবতার নয়, এমন ধরা উচিৎ ইহা জীবাবতার
হে ভারত, যদা যদা হি (যে যে সময়ে) ধর্মস্য গ্লানিঃ (ধর্মের হানি, ক্ষীণতা), অধর্মস্য অভ্যুত্থানম্ (অধর্মের উদ্ভব) ভবতি (হয়), তদা (তখন) অহম্ (আমি, অর্থাৎ পুন্য-আত্মা / জীবাত্মা) আত্মানং সৃজামি (আপনাকে সৃজন করি, অর্থাৎ শরীর ধারণ পূর্বক অবতীর্ণ হই)। সাধুনাং পরিত্রাণায় (সাধুদিগের রক্ষার জন্য), দুস্কৃতাং বিনাশায় (দুষ্টদিগের বিনাশের জন্য) ধর্মসংস্থাপনার্তায় চ (এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য) [আমি/জীবাত্মা] যুগে যুগে সম্ভবামি (যুগে যুগে অবতীর্ণ হই)। সরলার্থঃ হে ভারত (অর্জুন), যখনই ধর্মের গ্লানি এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, আমি (জীবাত্মা) সেই সময়ে দেহ ধারণপূর্বক অবতীর্ণ হই। বিঃদ্রঃ এখানে ঈশ্বরের অবতার মিথ্যা কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। এখানে জীবাবতার
মুক্ত জীবাত্মারা বিষয়ে উপনিষদের বচনঃ
"ভাবং জৈমিনিঃ, বিকল্পামননাৎ"
বেদান্তসূত্র ৪।৪।১১.
অর্থাৎ মুক্ত আত্মার দেহ ও ইন্দ্রিয়াদি থাকে, ইহা জৈমিনি মুনির মত। কারণ শাস্ত্রে বলা আছে যে, তারা নানা রূপ দেহধারণ করার ক্ষমতা আছে।
.
"...তিনি(মুক্ত জীবাত্মা) এক প্রকার থাকেন, তিন প্রকার হন, পঞ্চ প্রকার, সপ্ত প্রকার এবং নব প্রকার হন...।"
ছান্দোগ্যোপনিষদ্৭।২৬।২.
.
এছাড়াও তিনি যে যা ইচ্চা তাই পেয়ে থাকেন তথা করতে পারেন তার প্রমাণ আরো দেখুন-
"তিনি যদি পিতৃলোক কামনা করেন, তবে তাহার সঙ্কল্পমাত্রই পিতৃগণ তাঁহা সহিত মিলিত হন...। মাতৃলোক
কামনা করলে মাতৃগনের সহিত মিলিত হন... ভাতৃলোক কামনা করলে তাদের সহিতও মিলিত হতে পারেন... ।
ভগিনীলোক কামনা করলে, বন্ধুলোক কামনা কললে তাদের সহিতও মিলিত হন। এক কথায় যাহা
চান তাহাই প্রাপ্ত হন।"-ছান্দোগ্য_উপনিষদ ৮।২।১-১০.
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত
“আমি জম্মরহিত, অক্ষয় আত্মা, জীবসমূহের ঈশ্বর হয়েও নিজের অন্তরঙ্গ শক্তিকে বা স্বভাবকে আশ্রয় করে মায়ার দ্বারা দেহ ধারণ করি।”
গীতা ৪।৬.
ব্যাখ্যা- পূর্বের শ্লোকে মানে গীতা ৪।৫ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে-
“আমার ও তোমার বহু জম্ম অতীত হয়েছে।…।”
অথচ গীতার ৪।৬ নং শ্লোকে বলা হয়েছে তিনি জম্মরহিত।
তাহলে কি এই দুই শ্লোকের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান? প্রকৃত পক্ষে তা নয়, কারণ ৫নং শ্লোকে মোক্ষ বা মুক্তি প্রাপ্ত জীবাত্মা শ্রীকৃষ্ণ যে পূর্বে পাপ পূর্ণ রূপ কর্মফলে আবদ্ধ হয়ে দেহধারণ হয়েছিল অর্থাৎ জম্মগ্রহণ করেছিলেন তা স্বীকার করেছেন। আর ৬নং শ্লোকে তিনি নিজের ইচ্ছায় অবতরণের কথা বলেছেন। কেননা সকল মুক্ত আত্মারা নিজের ইচ্ছা শক্তি দ্বারা দেহ ধারণ করতে পারেন। আর এই ভাবে দেহধারণকেই অবতরণ বলে (কিন্তু জম্ম নয়) ও জ্ঞানীরা ঐ মুক্ত জীবাত্মাকে বলে অবতার। আর তিনি এটাও বলেছেন যে তিনি অক্ষয় আত্মা(জীবাত্মা), আমরা সকলেই জানি কোন জীবাত্মারই ক্ষয় নেই।
গীতার ৪।৬নং শ্লোকে তিনি বলেছেন আত্মমায়ায় দেহধারণ করেন, আর মোক্ষ প্রাপ্ত আত্মারা তা পারেন। তার প্রমাণ বেদান্ত সূত্র থেকে দেখুন-
“সংকল্পাদেব তু তচ্ছ্রুতেঃ
বেদান্ত সূত্র
৪।৪।৮.
অর্থাৎ ইচ্ছামাত্র মুক্ত আত্মারা তাদের সঙ্কল্প সিদ্ধ করতে পারেন।”
গীতা ৪।৬নং শ্লোকে তিনি নিজেকে জীবসমূহের ঈশ্বর বলেছেন। ইহারও একটা কারণ আছে, বেদান্ত সূত্র থেকে দেখুন-

শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর ?
“অত এব চানন্যাধিপতিঃ
বেদান্ত সূত্র ৪।৪।৯.
অর্থাৎ সেই স্থানে মুক্ত আত্মার কোন অধিপতি নাই। কারণ তখন তিনি স্বাধীন ও সতন্ত্র থাকেন।”
সংসার জগতে যেমন প্রধান অপ্রধান থাকে, মুক্তিতে সেইরূপ থাকে না বলেই তিনি নিজেকে সংসারে আবদ্ধ সকল জীবের ঈশ্বর বলেছেন। কারণ ঐ সময় তিনি সংসারে আবদ্ধ সকল জীবের চেয়ে উন্নত ছিলেন, কারণ তিনি মুক্ত ছিলেন। তবে এটাও জেনে রাখা উচিত মুক্ত জীবাত্মা সর্বশক্তির অধীশ্বর নয়, বেদান্ত সূত্রে ইহা স্পষ্ট বলা আছে। প্রমাণ দেখুন-

যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত

ভোগমাত্রসাম্যলিঙ্গাচ্চ।।
বেদান্ত সূত্র ৪।৪।২১.
অর্থাৎ শুধুমাত্র ভোগ্য ব্যাপারে পরমেশ্বর ও মুক্ত জীবাত্মার মধ্য সাম্যভাব আছে। সর্বশক্তিমত্তা বিষয়ে নয়।”
আরো জেনে রাখা উচিত যে ব্রহ্মলোক প্রাপ্ত মুক্ত আত্মা সৃষ্ট্যাদি ব্যাপার ব্যতীত অপর সর্ববিধ শক্তির অধিকারী হন। প্রমাণ দেখুন-
“জগদ্ব্যাপারবর্জম্ প্রকরণাৎ অসন্নিহিতত্বাচ্চ।।
বেদান্ত সূত্র ৪।৪।১৭
অর্থাৎ মুক্ত আত্মা সৃষ্ট্যাদি শক্তি ব্যাপার ব্যতীত অন্য ক্ষমতার অধিকারী হন।”
যোগী, ধর্মাত্মা, পূর্ণ আত্মা তথা মুক্ত আত্মাদের শরীরে পরমাত্মা কিভাবে প্রকটিত হয় সেই সম্পর্কিত বেদেরও একটি মন্ত্র দেখুন-

“য়েনেদং ভূতং ভুবনং ভবিষ্যৎপরিগৃহীতমমৃতেন সর্বম্।
য়েন য়জ্ঞস্তায়তে সপ্তহোতা তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমস্তু।।”
যজুর্বেদ ৩৪।৪
অনুবাদ- “হে জগদীশ্বর! যদদ্বারা যোগীগণ ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান কার্য জানিতে পারেন, যাহা অবিনাশী জীবাত্মাকে পরমাত্মার সহিত মিলিত করিয়া সর্বপ্রকারে ত্রিকালজ্ঞ করে, যাহাতে জ্ঞান ও ক্রিয়া আছে, যাহা পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়, বুদ্ধি ও আত্মার সহিত সংযুক্ত এবং যা দ্বারা যোগীগণ যোগরূপে যজ্ঞের বৃদ্ধি সাধন করেন, আমার মন সেই যোগবিজ্ঞান সম্পন্ন হইয়া অবিদ্যাদি ক্লেশ হতে দূরে থাকুক।”

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ