ভারতীয় জননেতা স্বর্গীয় মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী তার বিখ্যাত ‘রামধনু’ সঙ্গীতে লিখেছেন, “রঘুপতি রাঘব রাজা রাম/পতিত পাবন সীতারাম/ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম/সবকে সুমতি দে ভগবান?”এখানে একাধারে ‘রঘুপতি রাঘব রাজা রাম’ ও ‘পতিত পাবন সীতারাম’ কখনও এক হতে পারেন না। কারণ, রঘু বংশের ছেলে ‘রাজা রাম’ এবং পতিত উদ্ধারকারী সীতারাম, যাকে পরে আবার ‘ঈশ্বর আল্লাহ’ বলা হয়েছে; এক ব্যক্তি কিভাবে হতে পারে?
রামায়ণ নিয়ে হিন্দু সমাজে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত, আর এই ভ্রান্ত ধারণার মূল কারণ বাংলায় রামায়ণের মোটামুটি সফল অনুবাদকারী কৃত্তিবাস ওঝা। কারণ, তিনি যখন রামায়ণ অনুবাদ করেছিলেন, তখন সংস্কৃত মূল রামায়ণ থেকে বহুদূরে সরে গিয়ে ইচ্ছামতো যা খুশি তা লিখে গিয়েছেন, যা পড়ে এবং বিশ্বাস ক’রে হিন্দু সমাজ হয়েছে বিভ্রান্ত এবং কখনো কখনো বিব্রত।
উদাহরণ হিসেবে প্রথমেই বলা যায়, রাবন বধের পূর্বে রাম কর্তৃক দুর্গা পূজা করার কথা, যার ফলে সমগ্র বাংলায়- দুর্গা পূজা, সময় থেকে অসময়ে এসে অকালবোধন নামে চৈত্র মাসের পরিবর্তে আশ্বিন মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু সংস্কৃত রামায়ণে রাম কর্তৃক দুর্গা পূজা করার কোনো কথা ই নেই। কিন্তু যেহেতু কালিকাপুরাণ ও বৃহদ্ধর্মপুরাণে রামের দুর্গা পূজার কথা উল্লেখ ছিলো, তাই কৃত্তিবাস তার রামায়ণে রামকে দিয়ে দুর্গা পূজা করিয়ে তা বাঙ্গালিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
রামায়ণ সম্পর্কে আরও একটামিথ্যাচার হলো- বলা হয় রামের জন্মের ৬ হাজার বা ৬০ হাজার বছর পূর্বে বাল্মীকি মুনি রামায়ণ রচনা করেছেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে- বাল্মীকি মুনি, রামের সমসাময়িক এবং লংকার যুদ্ধ শেষে রাম অযোধ্যায় ফিরে আসার পর রামায়ণ লেখা শুরু হয়। বাল্মীকি মুনি যে রামের সমসাময়িক তার প্রমান হলো- রাম যুদ্ধ শেষ করে অযোধ্যায় ফিরে পরে যখন সীতাকে আবার বনবাস দেয়, তখন সীতা বাল্মীকি মুনির আশ্রমে ছিলো, সেখানেই তার দুই পুত্রের জন্ম হয় এবং বাল্যকাল কাটে। বাল্মীকি মুনি যদি রামের তথাকথিত ৬ হাজার বা ৬০ হাজার বছর পূর্বে রামায়ণ লিখে থাকেন, তাহলে রামের সময় তিনি জীবিত থাকলেন কিভাবে ? বাল্মীকি মুনি একজন মানুষ, মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়ে কেউ কি পৃথিবীত এতদিন জীবিত থাকে ?
বাল্মীকি মুনি, কিভাবে বাল্মীকি মুনি হলো, সেই গল্প বলতে গিয়ে রত্নাকর দস্যুর কাহিনী প্রসঙ্গে বলা হয়, রত্নাকর দুস্যুই পরবর্তী বা শেষ জীবনে হয় উঠেন বাল্মীকি মুনি এবং তিনি নাকি রাম নাম করেই এই মুক্তি লাভ করেন। কিন্তু বাল্মীকি মুনি ছিলেন বয়সে রামের চেয়ে কিছুটা সিনিয়র। তার মানে রামের যখন জন্মই হয় নি, তখন বাল্মীকি মুনি ছিলেন, তাহলে যার জন্মই হয় নি, তার নাম সেই সময় কোথা থেকে আসবে এবং রত্নাকর দস্যু কিভাবে রাম নাম জপ করে বাল্মীকি মুনিতে পরিণত হবেন ? রাম নামের মহিমার কথা সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে বাল্মীকি মুনির রামায়ণ গ্রন্থের কারণেই।
ভগবান রাম এবং মা সীতার বিয়ের সময় আসল বয়স কত ছিলো??
(বিশেষ করে মোল্লারা এই বিষয়ে বেশী মাত্রায় উত্সাহী থাকে কারন তাদের নবীর ০৬ বৎসরের আয়েশাকে বিবাহ এবং তদুপরি অপর্কমকে ঢাকতে)
সহজ উত্তর - বিয়ের সময় ভগবান রামের ছিলো ২৫ বৎসর এবং মা সীতার ছিলো ১৬ বৎসর।
এখন ব্যাখ্যায় আসি-
মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম চন্দ্র এবং মাতা সীতার বিবাহের সময় বয়স নিয়ে একটা শঙ্কা প্রায়শই উঠে।
বিবাহের সময় না কি শ্রীরাম এবং মাতা সীতার বয়স যথাক্রমে ১৩ এবং ৬ বছর ছিলো। এবং যা প্রচীনকালে বাল্যকালে বিবাহের সবচেয়ে বড় প্রমাণ বলে অপপ্রচারকারীরা উপস্থাপন করে।
আমাদের এই লেখার উদ্যেশ্য এই শঙ্কার সমাধান করা। বাস্তবে বিবাহের সময় তাদের বয়স কত ছিলো...?
এই শঙ্কার মূল উৎপত্তি হলো রামায়নের অরণ্যকান্ড ৪৭।৪-১০ মধ্যে সীতা রাবনকে নিজ পরিচয় দেবার সময় বলেছিলো যে, আমার বয়স এই সময় আঠারো এবং আমার স্বামীর বয়স ২৫।
বারো বছর শশুড়ালয়ে থেকে সমস্ত ভোগ কে উপভোগ করে রাম লক্ষণের সাথে বনে এসেছি। অর্থাৎ বিবাহের সময় সীতার বয়স কেবল ১৮-১২= ৬ এবং শ্রীরামচন্দ্রের বয়স ২৫ -১২ =১৩ বছর ছিলো।
এই শ্লোক কে বিচার করার পূর্বে আমরা রামায়নের মধ্যে থেকে বেশ কিছু শ্লোক সমীক্ষা করে দেখবো -
মাতা সীতার স্বয়ংম্বরে বিশ্বামিত্র রাম ও লক্ষণকে নিয়ে জনকপুরীতে উপস্থিত হলে রাজা জনক তাদের দেখে একথা বলেন-
" হে মুনিবর! হস্তি এবং সিংহের সমান চলনশীল, দেবতার সমান পরাক্রমি তথা অশ্বিনী কুমারের মতো সমান সুন্দর এবং যৌবন কে প্রাপ্ত এই দুই কুমার কে?
গজসিংহগতী বীরৌ মার্ভূল বৃষভৌপমৌ।
যদমপত্রবিশালাক্ষী খঙ্গাতুণীর্ধনুর্ধারী।।
অশ্বিনাবিব রূপেন সমুপস্থিতযৌবনৌ।
যদৃচ্ছেবর্ণা প্রাপ্তৌ দেবলোকদিবামরৌ।।
(বাল্মিকী রামায়নঃ বাল কান্ড ৫০।১৮-১৯)
(বিশেষ করে মোল্লারা এই বিষয়ে বেশী মাত্রায় উত্সাহী থাকে কারন তাদের নবীর ০৬ বৎসরের আয়েশাকে বিবাহ এবং তদুপরি অপর্কমকে ঢাকতে)
সহজ উত্তর - বিয়ের সময় ভগবান রামের ছিলো ২৫ বৎসর এবং মা সীতার ছিলো ১৬ বৎসর।
এখন ব্যাখ্যায় আসি-
মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম চন্দ্র এবং মাতা সীতার বিবাহের সময় বয়স নিয়ে একটা শঙ্কা প্রায়শই উঠে।
বিবাহের সময় না কি শ্রীরাম এবং মাতা সীতার বয়স যথাক্রমে ১৩ এবং ৬ বছর ছিলো। এবং যা প্রচীনকালে বাল্যকালে বিবাহের সবচেয়ে বড় প্রমাণ বলে অপপ্রচারকারীরা উপস্থাপন করে।
আমাদের এই লেখার উদ্যেশ্য এই শঙ্কার সমাধান করা। বাস্তবে বিবাহের সময় তাদের বয়স কত ছিলো...?
এই শঙ্কার মূল উৎপত্তি হলো রামায়নের অরণ্যকান্ড ৪৭।৪-১০ মধ্যে সীতা রাবনকে নিজ পরিচয় দেবার সময় বলেছিলো যে, আমার বয়স এই সময় আঠারো এবং আমার স্বামীর বয়স ২৫।
বারো বছর শশুড়ালয়ে থেকে সমস্ত ভোগ কে উপভোগ করে রাম লক্ষণের সাথে বনে এসেছি। অর্থাৎ বিবাহের সময় সীতার বয়স কেবল ১৮-১২= ৬ এবং শ্রীরামচন্দ্রের বয়স ২৫ -১২ =১৩ বছর ছিলো।
এই শ্লোক কে বিচার করার পূর্বে আমরা রামায়নের মধ্যে থেকে বেশ কিছু শ্লোক সমীক্ষা করে দেখবো -
মাতা সীতার স্বয়ংম্বরে বিশ্বামিত্র রাম ও লক্ষণকে নিয়ে জনকপুরীতে উপস্থিত হলে রাজা জনক তাদের দেখে একথা বলেন-
" হে মুনিবর! হস্তি এবং সিংহের সমান চলনশীল, দেবতার সমান পরাক্রমি তথা অশ্বিনী কুমারের মতো সমান সুন্দর এবং যৌবন কে প্রাপ্ত এই দুই কুমার কে?
গজসিংহগতী বীরৌ মার্ভূল বৃষভৌপমৌ।
যদমপত্রবিশালাক্ষী খঙ্গাতুণীর্ধনুর্ধারী।।
অশ্বিনাবিব রূপেন সমুপস্থিতযৌবনৌ।
যদৃচ্ছেবর্ণা প্রাপ্তৌ দেবলোকদিবামরৌ।।
(বাল্মিকী রামায়নঃ বাল কান্ড ৫০।১৮-১৯)
এখানে "সমুপস্থিতযৌবনৌ" শব্দটি বিশেষ রূপে দ্রষ্টব্য। কারন ইহাতে স্পষ্ট হয় যে, সেই সময় রাম ও লক্ষণ দুজনেই যুবাবস্থায় প্রবেশ করেছিলো। এবং জনক পুরী প্রবেশের পূর্বে অনেক রাক্ষস সংহার করেছিলো। তারপর সয়ম্বরে অনেক শূরবীর শিব ধনুক কে উত্তোলন করতে অসমর্থ হলে রামচন্দ্র সেটা সহজেই উত্তোলন করেন। ইহাতে রামচন্দ্রের অতুল বলশালী হবার সাথে সাথে যৌবন প্রাপ্ত হবার প্রমাণ মেলে।
.
যখন বিশ্বামিত্র রাজকুমারীর ধনুক দেখতে ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। তখন রাজা জনক সীতার বিবাহের সন্দর্ভে ধনুক ভঙ্গের চর্চা করে বললেন -
.
ভূতত্ত্নাদুত্থিতাং তাং তু বর্দ্বমানাং মমাত্মজাম্।
বরয়া মসুরাগত্য রাজানো সুনিপুঙ্গতা।।
(বাল কান্ড ৬৬।১৫)
.
যখন আমার কন্যা সীতা বর্দ্ধমানা = প্রাপ্তযৌবনা হয় তখন বহু রাজা তাহার পাণিগ্রহনের জন্য আসে। পরে (ধনুক উঠানোর অসমর্থতার কারনে) সবাই অসফল হন।
.
মূল শ্লোকে বর্দ্ধমানা শব্দ এসেছে । টীকাকার এর অর্থ যৌবন সম্পন্ন করেছে। আবার অনেকে প্রাপ্তযৌবনা করেছে। ইহাতে স্পষ্ট জানা যায় যে, "শ্রী রাম চন্দ্রের সাথে মাতা সীতার বিবাহের পূর্বে তাদের শরীরে যৌবনের সূত্রপাত হয়েছিলো। আর একটি শ্লোক দ্বারা ইহা আরো স্পষ্ট হয় -
.
পতিসংযোগসুলভা বয়োবেক্ষ্য পিতা মম।
চিন্তামজ্যগমদ্দীনো বিত্তনাশদি বা ধন।।
(অযোধ্যাকান্ড ১১৮।৩৪)
.
সীতা অনুসূয়াকে বলছেন - পিতা যখন আমাকে পতি সংযোগ সূলভ দেখন তো বড় চিন্তিত হতেন। আমার পিতার ঐরূপ দুঃখ হতো যেমন কোন দরিদ্রের ধন নাশ হয়েছে।
.
শ্লোকটিতে সীতাকে পতিসংযোগ সূলভ বয়স বলা হয়েছে। এর সহজ অর্থ বিবাহ যোগ্য বয়স অর্থাৎ পতির সাথে সংযোগ বা গর্ভাধানে সমর্থ হওয়ার বয়স। এই বিষয়ে শুশ্রুত সংহিতাই লেখা আছে -
"পঞ্চবিংশো ততো বর্ষ পুমাণ নারী তো ষোড়শে"
অর্থাৎ পুরুষের জন্য এই অবস্থা ২৫ বর্ষ হবার পর এবং স্ত্রীর জন্য ১৬ বর্ষ হবার পর আসে।
অর্থাৎ ইহাতে স্পষ্ট হয় যে মাতা সীতা তখন যৌবন সম্পন্না ছিলেন।
.
এবার আসি আরোপকৃত শ্লোকটির সত্যতা নিয়ে যেখানে রামচন্দ্র ও মাতা সীতার বয়স বিবাহের সময যথাক্রমে ১৩ ও ৬ বলা হয়েছিলো। রামায়নের কোন কোন সংস্করনে পঞ্চবিংশক স্থলে সপ্তবিংশক পাঠও দেখতে পাওয়া যায়।
শ্রীরামচন্দ্রের বনগমনের সময় কৌশল্যা রাম কে বলেন - "দশসপ্ত চ বর্ষাণি তব জাতস্য রাঘব ; অযোধ্যাঃ ২০।৪৫"। অর্থাৎ তোমার জন্ম (দ্বিজের মাধ্যমে দ্বিতীয় জন্ম) হয়ে ১০+৭ = ১৭ হয়েছে। একাদ্দশোরাজন্যম (রঘুকুলের মান্য পরম্পরা অনুসারে) ক্ষত্রিযের উপনয়ন সংস্কার ১১ বছরে হয়। এই প্রকার রামায়ন অনুসারে রামের বনগমনের সময় ১১+১৭= ২৮ বর্ষ ছিলো।
অপরদিকে মাতা সীতার বিবাহের সময় বয়স ৬ বছর ছিলো তা উপরোক্ত বিবরন থেকে অশুদ্ধ প্রমাণিত হয়। কারন ৬ বছরের কোন বালিকাকে "পতি সংযোগ সুলভ বয়স" হিসেবে ধরা হয় না।
এটা ঠিক ১৬ বছর বয়সকেই ধরা হয়ে থাকে। আরো একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, মাতা সীতারা চার বোন ছিলো এবং সীতা সবার জ্যেষ্ঠ এবং শ্রূতকীর্তি সবার কনিষ্ঠ ছিলো। এবং চার বোনের বিবাহ একসাথে সম্পন্ন হয়।
একটা সাধারন হিসেব মতে যদি বিবাহের সময় সীতার বয়স ৬ বছর ধরা হয় তবে শ্রুতকীর্তির বিবাহের বয়স আনুমানিক ছিলো ৩-৪ বছর। একটি ৩-৪ বছরের বালিকার বিবাহ কি আদৌ সম্ভবপর হতে পারে?
রামায়ণ সম্পর্কে আর একটা কথা বহুলভাবে প্রচলিত যে, সাতকাণ্ড রামায়ণ। কিন্তু রামায়ণ কি প্রকৃতপক্ষে সাতকাণ্ড ? মূল রামায়ন ৫ কান্ডের।
যে সাত কাণ্ডের কথা বলা হয়, সেই নামগুলো হলো-
১। বালকাণ্ড
২। অযোধ্যাকাণ্ড
৩। অরণ্যকাণ্ড
৪। কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড
৫। সুন্দরকাণ্ড
৬। যুদ্ধকাণ্ড এবং
৭। উত্তরকাণ্ড।
এ প্রসঙ্গে রাজশেখর বসু, যিনি বাল্মীকির সংস্কৃত রামায়ণকে বাংলায় গদ্যে অনুবাদ করেছেন, তিনিতার গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন,
“বর্তমান বাল্মীকি রামায়ণের কতক অংশ পরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যেমন উত্তরকাণ্ড। যুদ্ধকাণ্ডের শেষে রামায়ণ মাহাত্ম্য আছে, তাতেই প্রমান হয় যে মূল গ্রন্থ সেখানেই সমাপ্ত।”
এই উত্তরকাণ্ডেই আছে সীতার বনবাস এবং পরে যখন রাম আবার সীতাকে নিতে চায় তখন সবার প্রতি অভিমানে সীতার ভূগর্ভে প্রবেশ; এই বিষয়গুলোকে সত্য বলে মনে হয় না এই কারণে যে, একবার সীতার অগ্নিপরীক্ষা নিয়ে রাম তাকে গ্রহন করেছিলেন, তাহলে পরে আবার কেনো রাম, সীতাকে বনবাস দেবেন ? রাম চরিত্রের এই দ্বিচারিতাই প্রমান করে, রামায়ণের উত্তরকাণ্ড, বাল্মীকি কর্তৃক রচিত নয়, পরে এগুলো কেউ রচনা করে বাল্মীকির মূল রামায়ণের সাথে জুড়ে দিয়েছে এবং তখন থেকে চলছে বাল্মীকির নামে সাত কাণ্ড রামায়ণ। উত্তরকাণ্ড যে পরে রচিত, এমন কি সেটা মহাভারতেরও পরে, তার প্রমান আছে মহাভারতেই; কারণ, মহাভারতে যে রাম উপাখ্যান আছে, তারও কাহিনী, রামের সীতা উদ্ধার পর্যন্তই শেষ। সুতরাং যুদ্ধ শেষে অযোধ্যায় ফেরার পর সীতার প্রতি রামের সন্দেহ এবং সীতার বনবাস পরবর্তী কাহিনী, যার জন্য রামকে অনেকেইঅভিযুক্ত করে এবং তার সমালোচনা করে, সেটা সত্য নয় বলেই প্রমাণিত হয়।
যা হোক, সংস্কৃত থেকে বাংলা গদ্যে অনুবাদ করা সময় কৃত্তিবাস ওঝা, রামায়ণের কী কী সর্বনাশ করেছেন এবার সেদিকে নজর দেওয়া যাক :
কৃত্তিবাস, রামায়ণ অনুবাদ করার সময় মূল রামায়ণ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে যা খুশি তাই রামায়নের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে হিন্দু সমাজের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেছে। অহিরাবণ মহীরাবনের পাতালের ঘটনা, বীরবাহুর বীরত্ব ও যুদ্ধ, তরণীসেনের কাহিনী, রামের অকাল বোধন, হনুমান কর্তৃক রাবণের মৃত্যুবাণ হরণ, সীতার রাবণমূর্তি অঙ্কন, মৃত্যুপথযাত্রী রাবণের কাছে রামের শিক্ষা, লব ও কুশের যুদ্ধ সব কৃত্তিবাসের বানানো, এগুলোর একটিও সংস্কৃত রামায়ণে নেই। এভাবে কৃত্তিবাসের রাম, ত্রেতাযুগের কোনো ত্রাতা নয়, বিষ্ণুর কোনো অবতার নয়, এক পিতৃপরায়ণ সন্তান ও স্নেহপরায়ণ পিতা এবং একই সঙ্গে দ্বিধাগ্রস্ত ও সন্দেহে পর্যুদস্ত এক স্বামী । এ থেকে খুব সহজেই উপলবব্ধি করা যায় যে, কৃত্তিবাস- রামায়ণ অনুবাদ কালে বাল্মীকির প্রধান প্রধান কয়েকটি আখ্যান ও উপাখ্যান গ্রহণ করলেও সেগুলোকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রচনার শুরু থেকেই অগাধ স্বাধীনতা নিয়েছে এবং নিজের প্রয়োজনে বাল্মীকি থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে নিজের ইচ্ছা মতো যা খুশি তাই লিখেছেন। কৃত্তিবাসের এই স্বেচ্ছাচারী মনোভাবকে বুঝতে পেরেই মনে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন,
‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি, ঘটে যাহা তাহা সব সত্য নহে।
কবি, তব মনোভূমি, রামের জন্মস্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।’
যদিও এই কথাটি বলেছিলেন, নারদ, বাল্মীকিকে; কারণ, রাম-রাবনের যুদ্ধ শেষ হলে নারদ এই ইতিহাসটি বাল্মীকিকে রচনা করার জন্য অনুরোধ জানালে, বাল্মীকি বলেছিলেন, আমি তো সবটা জানি না, যদিও তার নাম এবং তার কীর্তিকাহিনী শুনেছি, কিন্তু সবটা না জেনে লিখে যদি সত্যভ্রষ্ট হই ? সেই ভয় আমার আছে, তখন নারদ বাল্মীকিকে বলেছিলেন,
‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি,….’
এই একই কথা কৃত্তিবাস সম্পর্কেও সত্য।
এর মাধ্যমে এখানে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, রত্নাকর দস্যুর বাল্মীকি হয়ে উঠার কাহিনী সম্পূর্ণ মিথ্যা; কারণ, বাল্মীকিকে নারদ যখন রামের ইতিহাস লিখতে বলেন, তখন বাল্মীকি বলেন, “আমি রামের নাম এবং তার কীর্তিকথা শুনেছি, কিন্তু সবটা জানি না”, রত্নাকর দস্যু যদি রাম নাম জপ করে বাল্মীকি মুনিতে পরিণত হতেন, তাহলে কি তিনি এই কথা বলতে পারতেন ?
কৃত্তিবাস তো নিজের ইচ্ছামতো রামায়ণকে অনুবাদ করে যা তা কাহিনী ঢুকিয়েছেই, কিন্তু কৃত্তিবাস যেখানে মূল রামায়ণের কাহিনীকেই অনুসরণ করেছেন, সেখানেও তিনি কিভাবে রামায়ণকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছেন, তার একটি উদাহরণ দেখুন নিচে-
সংস্কৃত রামায়ণে, সীতাকে যখন রাবন ধরে নিয়ে যায়; তখন সীতা, রাবনের সাথে ভয়ংকরভাবে সাহসের সাথে তর্ক বিতর্ক করে। কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণে ঐ সময়ে সীতা একজন ভীরু ও দুর্বল মহিলা। কৃত্তিবাসী রামায়ণে রামের চরিত্রও দুর্বল করে দেখানো হয়েছে এবং তাকে নপুংসক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কেননা, কৃত্তিবাসী রামায়ণে, রামের চরিত্র নিয়ে এই প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে যে, রাম-সীতা বনে ১২ বছর এক সাথে থাকার পরেও কেনো সীতা গর্ভবতী হলো না ? কিন্তু সংস্কৃত রামায়ণের এই তথ্যকে সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে যে, বনবাসে যাওয়ার আগেই রাম সীতা প্রতিজ্ঞা করেছিলো, বনে গিয়ে তারা কোনো ভোগ-বিলাসে মত্ত হবে না; তারা বনবাসকালীন ব্রহ্মচর্য পালন করবে। তো যারা ব্রহ্মচর্য পালন করবে, তাদের সন্তান হবে কিভাবে ?
মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ‘মেঘনাদবধ’ কাব্য লিখে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। কিন্তু তিনি এই কাব্য লিখেছিলেন হিন্দু সমাজ ও রামের প্রতি ভালোবাসা থেকে নয়, রাবন ও মেঘনাদের প্রতি ভালোবাসা থেকে; কারণ, তার কাছে রাবন ও মেঘনাদ ছিলো হিরো এবং রাম-লক্ষ্মণ ছিলেন ভিলেন; তাই রাম লক্ষ্মণের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিনি রচনা করেন মেঘনাদবধ কাব্য।মাইকেলের এই যে ভুল বুঝে ভিলেন কে নায়ক আর নায়ককে ভিলেন ভাবা বা বানানো, এর কারণও কৃত্তিবাস।
ঘটনাটি এরকম : মাইকেল তখন হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহন করে বাড়ি তথা কোলকাতা থেকে বিতাড়িত, খ্রিষ্টান পাদ্রীদের প্রতারণায় তখন তার ইংল্যান্ড যাওয়াও হয় নি; এখানে উল্লেখ্য যে, মাইকেলের খ্রিষ্টান হওয়ার মূল কারণই ছিলো ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়া বা পাঠানোর শর্ত। কারণ, মাইকেলের বাপের সামর্থ্য থাকলেও, মাইকেল বিদেশে গেলেই কোনো ইংরেজ মেয়েকে বিয়ে করবে, এই ভয়ে তার বাপ তাকে বিদেশ পাঠাতে রাজী ছিলো না; কিন্তু মাইকেলের আজীবনের লালিত স্বপ্ন সে ইংল্যান্ড যাবে এবং ইংরেজিতে কাব্য চর্চা করে সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হবে; এই জন্যই মাইকেল খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে, যার মূল শর্তই ছিলো তাকে ইংল্যাল্ড পাঠাতে হবে; কিন্তু খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষা দেওয়ার পর পাদ্রীদের সেই ব্যাপারে আর কোনো আগ্রহ ছিলো না; শেষ পর্যন্ত মাইকেল গিয়ে স্থিতু হয় গুজরাটে এবং সেখানে অন্য এক পাদ্রীর মেয়েকে বিয়ে করে সংসার করার এবং ইংরেজিতে সাহিত্য চর্চার চেষ্টা করে।
এই চেষ্টারই ফল স্বরূপ মাইকেল ইংরেজিতে রচনা করে ‘দ্য ক্যাপটিভ লেডি’ এবং আরো কিছু সনেট। কিন্তু সেগুলোর সমালোচনা করতে গিয়ে ইংরেজরা যখন বলে, মাইকেলের মতো লোকেদের উচিত মাতৃভাষায় কাব্য রচনা করা, তখন ইংরেজিতে কাব্য চর্চা করে কিছু করা যাবে না মনে করে মাইকেল বাংলার দিকে মন দেয় এবং কোলকাতায় থাকা তার এক বন্ধুকে চিঠি লিখে কিছু বাংলা বই পাঠাতে বলে; তখন বাংলা সাহিত্যের তেমন বইও ছিলো না; কারণ, তখন না ছিলো রবীন্দ্রনাথ, না ছিলো বঙ্কিম; তাই বই বলতে মধ্যযুগে অনুবাদ করা কিছু বই এবং মঙ্গলকাব্য। সেজন্য কোলকাতার সেই বন্ধু যেসব বই তাকে পাঠিয়েছিলো, তার মধ্যে একটি ছিলো এই কৃত্তিবাসী রামায়ণ এবং এই কৃত্তিবাসী রামায়ণের সকল কথা বিশ্বাস ক’রে অন্য সকল হিন্দুর মতো মাইকেলও হয়েছিলো বিভ্রান্ত; তাই বই পাঠানোর পরে, সেই বন্ধুকে মাইকেল চিঠি লিখে জানিয়েছিলো, লক্ষ্মণ যেভাবে কাপুরুষের মতো বিভীষণের সহায়তায় আড়াল থেক তীর মেরে মেঘনাদকে হত্যা করেছে, এর প্রতিশোধ আমি নেবো; আমি এই ঘটনা নিয়ে একটি মহাকাব্য লিখবো।
সেই মহাকাব্যই হলো মেঘনাদবধ কাব্য, এটা এক দিকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহাকাব্য এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র সার্থক মহাকাব্য; এছাড়াও এটির মাধ্যমে রাম লক্ষ্মণের চরিত্রকে খাটো করে হিন্দু সমাজকে দমন করা যায় ব’লে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে বাংলা বিভাগে পড়ানোর জন্য মুসলমানদের কাছে এটি একটি পছন্দের কাব্য, যেমন পছন্দের কাব্য বড়ুচণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য; কারণ, এর মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের প্রধা্ন পুরুষ কৃষ্ণকে লম্পট হিসেবে প্রমান করা যায়।
যা হোক, মাইকেলের কেনো এত রাগ ছিলো লক্ষ্মণের উপর, যে কারণে ভিলেন রাবন এবং তার ছেলে মেঘনাদ তথা ইন্দ্রজিৎ তার কাছে হয়ে উঠলো হিরো এবং রাম লক্ষ্মণ তার কাছে হয়ে গেলোভিলেন ?
কৃত্তিবাসের রামায়ণ পড়ে, বাংলাদেশের নাস্তিকজগতের একটি বিখ্যাত নাম এবং নাস্তিকদের গুরু আরজ আলী মাতুব্বর, তার একটি লেখা ‘রাবনের প্রতিভা’য় এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, রাম ছিলো সন্তান জন্ম দানে অক্ষম, কারণ বনবাসে এক সাথে ১২ বছর থাকলেও সীতার গর্ভে রাম কোনো সন্তানের জন্ম দিতে পারে নি; কিন্তু সীতাকে উদ্ধার করে আনার পর অগ্নিপরীক্ষা, যাকে আরজ আলী বিবেচনা করেছে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ হিসেবে, যাতে সীতা কিছুতেই স্বীকার করে নি যে রাবন তার সাথে কী করেছে, সেই অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে সীতা নিজেকে নিষ্কলঙ্ক প্রমান করলেও পরে যখন সীতার গর্ভলক্ষণ প্রকাশ পায়, তখন রাম প্রকৃত সত্য অর্থাৎ সীতার গর্ভের সন্তান যে রাবনের ই এটা বুঝতে পেরে সীতাকে আবার বনবাসে পাঠায়।
কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, সীতাকে উদ্ধার করে আনার পর প্রায় বছর খানেক কেটে গেছে, রাম এই ফাঁকে রাজ্যটাকে গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করছে, কিন্তু তখনও সীতার গর্ভের লক্ষ্মণের কোনো খবর নেই, রাবন যদি সীতার সন্তানের পিতা হতো, তাহলে অযোধ্যায় ফেরার পর পরই তা অবশ্যই প্রকাশ পেয়ে যেতো। কিন্তু রাম, জনরবকে পাত্তা দিয়ে সীতাকে বনবাসে পাঠিয়ে দিলে বাল্মীকি মুনির আশ্রমে পৌঁছার পর সীতা যখন বুঝতে পারে যে তাকে বনবাস দেওয়া হয়েছে, তখন সীতা লক্ষ্মণকে বলে, তোমার ভাই আমাকে মিথ্যা সন্দেহে ত্যাগ করলেও তুমি জেনে যাও যে আমি সবে মাত্র গর্ভ ধারণ করেছি। কিনতু কৃত্তিবাসী রামায়ণে এই ছোটখাটো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয় নি, যাতে সূক্ষ্ম ঘটনাগুলো ধরা পরে; যেমন- উল্লেখ করা হয় নি, প্রথম বার বনবাসের পূর্বেই রাম সীতা প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে, তারা বনবাসে গিয়ে ভোগ বিলাসে মত্ত হবে না, আর ভোগ বিলাসে মত্ত না হলে সন্তান হবে কিভাবে ? যে কথা উপরে একবার উল্লেখ করেছি। এই ভাবে কৃত্তিবাসী রামায়ণ যে কাউকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম, এই ভাবেই বিভ্রান্ত হয়েছিলো মাইকেল এবং সম্ভবত নিচের এই ঘটনাটা না জেনে-
কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রভাবে অনেকেই মনে করে লক্ষ্মণ, মেঘনাদকে বিনা যুদ্ধে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। অর্থাৎ এটাকে তারা ছলনা বলেই মনে করে। কিন্তু তারও আগে মেঘনাদ যে ছলনা করে রাম-লক্ষ্মণকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলো, এটা অনেকেই জানে না বা বলা যায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ তাদেরকে তা জানতে দেয় নি।
ঘটনাটি এরকম: মেঘনাদ বা ইন্দ্রজিৎ স্বয়ং যুদ্ধে নেমেও যখন কিছুতেই রাম লক্ষ্মণকে পরাস্ত করতে পারছিলো না, তখন সে একটি ছল করে; একদিন একটি মায়াসীতা তৈরি করে তার রথের উপর নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে আসে এবং এবং রাম লক্ষ্মণকে বলে, এই সীতাকে উদ্ধারের জন্যই তো তোমরা লংকায় যুদ্ধ করতে এসেছো ? এখন দেখো, একে আমি কিভাবে হত্যা করি? বলেই সে নির্মম প্রহারে সীতাকে হত্যা করে, এটা দেখেই রাম লক্ষ্মণ মূর্ছিত হয়ে পড়ে যায়। তারপর কোনোরকমে হনুমান, সুগ্রীব তাদেরকে সেভ করে শিবিরে নিয়ে আসে। পরে শিবিরে এসে বিভীষণ যখন রাম লক্ষ্মণের মূর্ছিত হওয়ার কারণ জানতে পারে, তখন তাদেরকে বলে যে, মেঘনাদ যাকে হত্যা করেছে সেটা আসল সীতা নয়, একটা নকল সীতা; কারণ, রাবন কিছুতেই মেঘনাদকে এই কাজ করতে দিতে পারে না।
ইন্দ্রজিতের এই ছলের বিপরীতেই বিভীষণ এবং লক্ষ্মণ আরেক ছলের পরিকল্পনা করে এবং তাতেই ইন্দ্রজিৎ মারা যায়। তো এখানে দোষ কী ? ছলের ফল তো ছল ই হয়।
কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণের এই সব ভুল ভাল তথ্যের বিরুদ্ধ সেই সময় কথা বলার কোনো লোক ছিলো না, কারণ সংস্কৃত জ্ঞানের অভাবে কেউ আসল সত্য সম্পর্কে অবগত ছিলো না। একই ঘটনা ঘটেছে মাইকেলের মেঘনাদবধ কাব্য প্রকাশের পরেও, সঠিক জ্ঞানের অভাবে কেউ এর প্রতিবাদ করতে পারে নি।
কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রভাবে, আরজ আলী এটা মনে করতো যে, রামের চেয়ে রাবনের প্রতিভা বেশি, কেননা রাবন সেই সময় তার চলাচলের জন্য পুষ্পক রথ বানিয়েছিলেন, যাতে করে সে সীতাকে অপহরণ ক’রে সমুদ্র পারি দিয়ে তাকে লংকায় নিয়ে গিয়েছিললো; কিন্তু আরজ আলীর মতে, রামের এমন কোন বিমান ছিলো না, তাই তাকে সকলের সহায়তায় সমুদ্রের উপর সেতু নির্মান করে লংকায় যেতে হয়। কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণ এই তথ্য দেয় নি যে, রাবন যে পুষ্পক রথ ব্যবহার করতো, সেটা তার নিজের বানানো ছিলো না, ব্রহ্মা এই রথটি দিয়েছিলো কুবেরকে, কুবেরের কাছ থেকে রাবন তা ছিনতাই করে, যদিও কুবের ছিলো রাবনের সৎ ভাই।
এই ভাবে কৃত্তিবাস, রামায়ণের বহু সত্যকে চেপে গিয়ে বা কোথাও বিকৃত করে এক রামায়ণের মাধ্যমে হিন্দু সমাজের ১২টা বাজিয়ে দিয়ে গেছে।
রামায়ণের পুষ্পক রথ অর্থাৎ বিমান থেকে কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে, হিন্দুরাই প্রথম বিমান আবিষ্কার করেছিলো বা হিন্দু ধর্মের তত্ত্ব বা প্রযুক্তিরই বাস্তব রূপায়ন আজকের বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা।
যা হোক, কৃত্তিবাস- রামায়ণ নিয়ে যে ছেলে খেলা খেলেছে, এটার পেছনে মধ্যযুগের মুসলিম শাসকদের ছিলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন। কারণ, মধ্যযুগের মুসলিম শাসকরা চায় নি যে, হিন্দুধর্ম, হিন্দুদের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপিত হোক। তাই মধ্যযুগে শুধু অনুবাদ করা কাব্যেরই বিকৃতি নয়, নতুন নতুন পুরাণ এবং উপনিষদও লেখা হয়েছে এবং করা হয়েছিলো বেদেরও বিকৃতি। এসবই ছিলো হিন্দুধর্মকে হিন্দুদের কাছে বিকৃতভাবে উপস্থাপন ক’রে, প্রকৃত হিন্দুত্বের রূপ হিন্দুদেরকে বুঝতে না দিয়ে, হিন্দুধর্ম ও কালচারকে ধ্বংস করার মধ্যযুগীয় ষড়যন্ত্র। কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হলো, সেই ষড়যন্ত্র এখনও চলমান এবং তা হিন্দুদের মাধ্যমেই।
প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে ছিলো এবং এখনও আছে- বহু জাতি এবং তাদের বহু ভাষা, কিন্তু তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি ছিলো এক এবং তা ছিলো সনাতন এবং সনাতন ধর্মের মূল গ্রন্থগুলো লিখিত ছিলো এবং আছে সংস্কৃত ভাষায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন জন, তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় সনাতন ধর্মের এই গ্রন্থগুলোকে অনুবাদ করে; এভাবে অনুবাদ করার সময় সবার হাতেই প্রত্যেকটা গ্রন্থ কিছু না কিছু বিকৃত হয়েছেই, তাই ধর্ম এক হলেও ভারতের বিভিন্ন এলাকার কালচারে কিছু না কিছু ভিন্নতা আছেই; যেমন- কৃত্তিবাস, তার বাংলা রামায়ণে দুর্গা পূজার কথা উল্লেখ করেছিলো বলেই বাংলায় দুর্গা পূজা প্রচলিত হয়েছে, কিন্তু ভারতের আর অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রামায়ণ প্রচলিত থাকলেও দুর্গা পূজা প্রচলিত নেই, কারন আর কিছুই নয়, সেই সব এলাকায় যে বা যারা রামায়ণ অনুবাদ করেছে, তারা তার মধ্যে দুর্গা পূজার উল্লেখ করে নি বা হয়তো অন্য কোনো পূজার উল্লেখ করেছে, যার মাধ্যমে ঐ এলাকায় সেই ধরণের উৎসব চালু হয়ে গেছে। একারণেই সম্ভবত ভারতের একেক এলাকায়, একেক ধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রাধান্য।
মধ্যযুগে যারা সংস্কৃত থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ অনুবাদ করেছে তারা যে তাদের ইচ্ছামতো যা খুশি তা অনুবাদ করেছে, সেটা তো কৃত্তিবাসের কীর্তি দেখে কিছুটা অনুমান করতে পেরেছেন। কিন্তু এই সময়ে এসেও কেউ যদি প্রকৃত সত্যকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে, তাদের উদ্দেশ্যকে আপনি কীবলবেন ? নিশ্চয়, হিন্দু ধর্মকে ধ্বংস করার নতুন ষড়যন্ত্র ? হ্যাঁ, এই কাজটিই করা শুরু করেছে ভারতের উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস।
গীতা প্রেস শুধু গীতা ই ছাপায় না, এরা প্রায় সব হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ, ভারতের প্রায় সব প্রধান ভাষায় ছাপিয়ে বিজনেস করে। এভাবে এরা বাংলা রামায়ণও সংস্কৃত থেকে অনুবাদ করে ছাপিয়ে বিক্রি করছে, কিন্তু সর্বনাশটা যেখানে করছে, তা হলো, তাদের ছাপানো গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে তারা তাদের নিজস্ব বিশ্বাসকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার অপচেষ্টা করছে।
আমি যদি মাছ মাংস অর্থাৎ আমিষ খাই, সেটা যেমন আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার; তেমনি আমি যদি নিরামিষ খাই, সেটাও আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমি যখনশাস্ত্রের কথা বলবো, তখন শাস্ত্রে যেটা লিখা আছে, সেটাই আমাকে বলতে হবে; সেখানে আমি যদি আমার মতামত বা ইচ্ছাকে কৌশলে শাস্ত্রের মধ্যে দিয় প্রকাশ বা প্রমান করার চেষ্টা করি, সেটাকে আপনার কী বলবেন ? নিশ্চয় অপরাধ ? সেই অপরাধই করে চলেছে গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস।
অনেকে প্রমান করার চেষ্টা করে যে
বাল্মীকি রামায়ণ ৩.৪৭.২২-২৩ অনুসারে মাতা সীতা ব্রাহ্মণ বেশে ছদ্মবেশী রাবণ কে বলছেন -
"আপনি এখানে বিশ্রাম করুন, আমার স্বামী বন থেকে বিভিন্ন রকমের হরিণ, গোধাঃ, বন্য শূকর শিকার করে নিয়ে আসবেন"
শ্লোকে মূলত "আমিষ" শব্দটি নিয়ে ভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ শঙ্কানুযায়ী বন্য হরিণ শূকর, হত্যা করে আমিষ অর্থাৎ তাদের মাংস আনার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু বৈদিক কোষ অনুযায়ী "আমিষ" অর্থ হচ্ছে ফল।
ঋগবেদ ১০।৯৪।৩ মন্ত্রে আমিষ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। মন্ত্রের পদার্থের অন্বয় অনুযায়ী " বৃক্ষস্য পক্বে আমিষি" অর্থাৎ বৃক্ষের পক্ব ফল কে আমিষ বলা হয়েছে। অর্থাৎ আমিষ অর্থে শুধু মাংস নয় বরং এর ফল মূল।
অতএব রামায়ন এর শ্লোকের অর্থ এরূপ -
সমাশ্বস মুহূর্তং আগমিষ্যতি মে ভর্তা বন্যমাদায় পুষ্কলম্ ।
রুরূন্ গোধান্ বরাহাংশ্চ হত্বহহদায়ামিষং বহু ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ৩.৪৭.২৩) |
কয়েক মুহূর্তকাল বিশ্রাম করুন ; আপনি এখানে থাকতে (চাইলে) পারবেন । আমার স্বামী রুরু, গোহ ও বন্য শূকর আদি হিংসক পশু কে বধ করে তপস্বী জনের উপভোগ্য যোগ্য বহু ফল মূল নিয়ে আসবে।
রামায়ণ (প্রক্ষিপ্ত করা হয়েছে শ্লোকের ভুল অনুবাদে) ২.৫৬.২২-২৮ শ্লোক অনুসারে নিবেদনের উদ্দেশ্যে লক্ষ্মণ দ্বারা কৃষ্ণসার শিকার ও সেগুলোর মাংস রান্না করে যাগ করেছিলেন-
প্রথমতঃ ৫৬ তম সর্গে বাস্তুশান্তির যজ্ঞের কথা আছে | কিন্তু তাতে মাংস প্রকরণ আনা অনুচিত | কারণ এর পরেও শ্রীরামচন্দ্রের নির্দেশে লক্ষণ কর্তৃক বাস্তুপুজো করার কথা রয়েছে তাতে এই পশু হত্যার কোন কথাই নেই বরং ফল ও পুষ্পের কথাই রয়েছে - যথাঃ
স গত্বা লক্ষণঃ শ্রীমান্ নদীং গোদাবরীং তদা ।
স্নাত্বা পদ্মানি চাদায় সফলঃ পুনরাগতঃ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ৩.১৫.২৪)
অতঃপর শ্রীমান লক্ষণ গোদাবরী নদীর তীরে গিয়ে [নদীজলে] স্নানান্তে পদ্মপুষ্প ও ফল সংগ্রহ করে পুনরায় প্রত্যাবর্তন করলেন ।
ততঃ পুষ্পবলিং কৃত্বা শান্তিং চ স যথাবিধি ।
দর্শায়ামাস রামায় তদাশ্রমপদং কৃতম্ ।।
বাল্মিকী রামায়ণ ৩.১৫.২৫
অতঃপর তিনি[লক্ষণ] যথাবিধি [দেবোদ্দেশে] পুষ্পাঞ্জলি প্রদান এবং বাস্তুশান্তিক্রিয়া [সমাপন] করে স্বয়ংকৃত পুণ্যাশ্রমটি রামকে দেখালেন ।
মূলত "মৃগ" শব্দটি নিয়ে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। মদনপালাদিসহ অন্যাদি আয়ুর্বেদিক নিঘণ্টু অনুসারে মৃগ অর্থ ঔষধি মূল মৃগনাশিনী / বিডঙ্গ (তুঁতে )/মৃগলিণ্ডিক প্রভৃতি করা হয়েছে -
শুণ্ঠ্যাদিবর্গ
বিডঙ্গ
विडङ्गं जन्तुहननं कृमिघ्नं क्षुद्रतण्डुलः |
भूतघ्नी तण्डुला घोषा कराल मृगनाशिनी ||४२||
विडङ्गं कटु तिक्तोष्णं रूक्षं वह्निकरं लघु |
गुल्माध्मानोदरश्लेष्मकृमिवातविबन्धनुत् ||४३||
(নৃপমদনপালবিরচিত||মদনপালনিঘণ্টু)
(মদনবিনোদ)
মৃগলিণ্ডিক গাঙ্গেরূকং কর্করকং কর্কটং মৃগলিণ্ডিকম্ |
মৃগবিট্সদৃশং চাথ তোদনং ক্রন্দনং তথা ||৪৯১||
(শ্রীবৈদ্যকৈযদেবপণ্ডিতবিরচিত,কৈযদেবনিঘণ্টু,ওষধিবর্গ )
বাতঘ্নং পিত্তকফকৃন্মিশ্রেযা গিরিপাদিকা ||১৫||
ফলং তু কপিকচ্ছূরুমাণবেত্রকরঞ্জকম্ |
বাতামাভিষুকাক্ষোডমুকূলকনিকোচকম্ ||১৬||
অম্লং লকুচমেলানমারুকং মৃগলেণ্ডিকম্ |
দ্রাক্ষাবৃক্ষাম্লকোশাম্রনীপাম্রাতকরাম্লকম্ ||১৭||
||শ্রীকেশববিরচিত||
||সিদ্ধমন্ত্র||
১. বাতঘ্নবর্গ ||বোপদেবকৃতসিদ্ধমন্ত্রপ্রকাশব্যাখ্যাসহিত|
অতএব, এখানে মৃগ অর্থ হরিণ করা অনুচিত । কারণ আমরা পূর্বেই দেখেছি শ্রীরাম চন্দ্র ফলমূলাদি ভক্ষণ করবেন বলেছেন এবং কৌশল্যার কাছে বনবাসে মাংস ভক্ষণ করবেন না বলে শপথ করেছেন । যিনি পিতৃপ্রতিজ্ঞা পালনার্থে রাজ্যত্যাগে বিচ্যুত হন না তিনি মাতার কাছে কৃত তুচ্ছ খাদ্যবিধির প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন না তা ভাবা বিচক্ষণের কর্ম নয়।
২২নং শ্লোকে ঐণেয় মাংসম্ বলতে তাই মৃগলিণ্ডিক /গজকন্দের সারভাগ বুঝতে হবে । নিরুক্তেও মাংস শব্দের অর্থ Meat করা হয়নি ।
মাংসং মানং বা মানসং বা মনোস্মিন সীদতীতি বা।।
(নিরুক্ত ৪.৩)
অর্থাৎ মাংস বলতে কোন মাননীয়,বুদ্ধিবর্ধক মানপছন্দ বস্তু যেমন ক্ষীর,রাবড়ি,ছানা,ফলের শাস ইত্যাদিকে নির্দেশ করে।
মদন পাল নিঘণ্টুতে বীজ বা ফলের শাঁসের জন্য মাংস শব্দের স্পষ্ট ব্যবহার রয়েছে --
রক্তপিত্তকরং কণ্ঠ্যং জিহ্বাহৃচ্ছোধনং পরম্ |
তন্মাংসং বৃংহণং শীতং গুরু পিত্তসমীরজিত্ ||৭৬||
[মদনপালনিঘণ্টু, ফলাদিবর্গ ( দ্রাক্ষাদিবর্গ )]
সুতরাং বর্ণিত সর্গের যথাসম্ভব অনুবাদ এইরকম -
ঐণেয় মাংসমাহৃত্য হালাং যক্ষ্যামহে বয়ম্ ।
কর্তব্যং বাস্তুশমনং সৌমিত্রে চিরজীবিভিঃ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২২)
ভ্রাতা সৌমিত্রি ! গজকন্দের সারভাগ সংগ্রহ করে আমরা বাস্তুপূজা করব ; কারণ , দীর্ঘজীবনাকাঙ্খীদের বাস্তুশান্তি অবশ্য কর্তব্য ।
মৃগ্য হত্বাহহনয় ক্ষিপ্রং লক্ষ্মণেহ শুভেক্ষণ ।
কর্তব্যঃ শাস্ত্রদৃষ্টো হি বিধিধর্মমনুস্মর ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৩)
শুভদর্শন লক্ষ্মণ ! শীঘ্র একটি গজকন্দ তুলে এখানে নিয়ে এসো । শাস্ত্রীয় বিধিই অনুসরণ করা উচিত ; তাই ধর্মকে স্মরণ করো ।
ভ্রাতুর্বচনামাজ্ঞায় লক্ষ্মণঃ পরবীরহা ।
চকার চ যথোক্তং হি তং রামঃ পুনরব্রবীৎ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৪)
=>>বীর শত্রুহন্তা লক্ষ্মণ ভ্রাতার আদেশ মেনে নিয়ে তাঁর নির্দেশ অনুসারে কাজ করলে ; তাকে রামচন্দ্র আবার বললেন-
ঐণেয়ং শ্রপয়স্বৈতচ্ছালাং যক্ষ্যামহে বয়ম্ ।
ত্বর সৌম্যমুহূর্তোহয়ং ধ্রুবশ্চ দিবসো হ্যয়ম্ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৫)
এই গজকন্দ সেদ্ধ করো , আমরা বাস্তুপূজাকরব । আজকের এই দিনটি "ধ্রুব"নক্ষত্রযুক্ত শুভ মুহূর্তো ;অতএব তাড়াতাড়ি করো ।
স লক্ষ্মণঃ কৃষ্ণ মৃগং হত্বা মেধ্যং প্রতাপবান্।
অথ চিক্ষেপ সৌমিত্রিঃ সমিদ্ধে জাতবেদসি ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৬)
তখন সুমিত্রানন্দন প্রতাপশালী লক্ষ্মণ , কৃষ্ণবর্ণ গজকন্দ জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করলেন ।
তৎ তু পক্কং সমাজ্ঞায় নিষ্টপ্তং ছিন্নশোণিতম্ ।
লক্ষ্মণঃ পুরুষব্যাঘ্রমথ রাঘবমব্রবীৎ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৭)
অতঃপর,গজকন্দ সেদ্ধ হয়েছে বুঝে , লক্ষণ নরসিঃহ রঘুনন্দন রামকে বললেন-
অয়ং সর্বঃ সমস্তাঙ্গঃ শৃতঃ কৃষ্ণমৃগো ময়া ।
দেবতা দেবসংকাশ যজস্ব কুশলো হ্যসি ।।
( বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৮)
সর্বাঙ্গসুন্দর এই কৃষ্ণবর্ণ গজকন্দ আমি সম্পূর্ণ সেদ্ধ করেছি ; দেবযজ্ঞে দক্ষ দেবতুল্য আপনি দেবযজ্ঞ করুন ।
কৃত্তিবাসী রামায়ণের কিছু মজার গল্প আপনাদের শোনাই :
“রামের লঙ্কা অভিযানের সময়, রাবনের মানসপুত্র অহিরাবনছিলো পাতাল পতি এবং অহিরাবনের পুত্রের নাম মহীরাবন। রাম যখন রাবনের সৈন্যদের মেরে ছারখার করছিলো, তখন উপায় না দেখে রাবন তার অনুগত, অহিরাবন ও মহীরাবনকে তলব ক’রে রাম লক্ষ্মনকে হত্যার নির্দেশ দেয়। অহিরাবন তার মন্ত্রের শক্তি দ্বারা পাতাল থেকে রামের শিবিরে রামের ঘর পর্যন্ত সুড়ঙ্গ তৈরি করে এবং মন্ত্রের শক্তিতে রাম লক্ষ্মণ ক’রে অজ্ঞান করে পাতালে নিয়ে যায়। হনুমান যখন বুঝতে পারে যে রাম লক্ষ্মণকে অপহরণ করা হয়েছে, তখন সেই সুড়ঙ্গ পথেই হনুমান পাতালে নেমে মহিরাবনের মন্দিরে চলে যায় এবং সেখানে রাম লক্ষ্মণকে বন্দী অবস্থায় দেখতে পেয়ে দেবী পাতাল ভৈরবীর মূর্তির পেছনে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। এরপর মহিরাবন সেখানে আসে এবং রাম লক্ষ্মণকে দেবীর কাছে বলি হওয়ার আদেশ দিয়ে প্রণাম করার ভঙ্গিতে হাড়িকাঠে মাথা রাখতে বললে- রাম বলে,
“আমরা তো রাজপুত্র, কোনোদিন কাউকে প্রণাম করি নি, সবাই আমাদেরকেই প্রণাম করতো, তাই কিভাবে প্রণাম করতে হয় সেটা আমরা জানি না, তুমি শিখিয়ে দাও।”
শুনে মহিরাবন বলে, “এই কথা, দাঁড়াও শিখিয়ে দিচ্ছি,” এই ব’লে মহিরাবন যেই প্রণামের ভঙ্গিতে হাড়িকাঠে মাথা রেখেছে, অমনি হনুমান মূর্তির পেছন থেকে বেরিয়ে এসে হাড়িকাঠের শিক আটকে দিয়ে এক কোপে মহিরাবনের গলা কেটে ফেলেছে। মহিরাবন শেষ।
এরপর অহিরাবন সহ অন্যান্যরা এলে তাদেরকেও রাম, লক্ষ্মণ ও হনুমান মেরে সাফ করে দেয়। এরপর কৃত্তিবাস মৎস্য কন্যা বলে হনুমানের এক স্ত্রীর এবং মকরধ্বজ নামে এক পুত্রের আবির্ভাব ঘটায়, যে পুত্রের হাতে পাতাল শাসনের ভার দিয়ে রাম-লক্ষ্মন-হনুমান ফিরে আসে; এখানে রামের মুখে বলানো-“আমরা তো রাজপুত্র, কোনোদিন কাউকে প্রণাম করি নি, সবাই আমাদেরকেই প্রণাম করতো, তাই কিভাবে প্রণাম করতে হয় সেটা আমরা জানি না, তুমি শিখিয়ে দাও”- এটা পড়ার পর আমার মনে হলো, এ্যাডাল্ট সিনেমাগুলোতে যেমন সতর্কবাণী থাকে যে প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচের কারো দেখা নিষেধ, তেমনি কৃত্তিবাসের রামায়ণের উপর লিখে দেওয়া দরকার যে,
“ছোটদের রামায়ণ, ১০ বছরের উর্ধ্বের কেউ পড়বেন না।”
কারণ, কেচ্ছার মতো ঐ গল্প বড়দের জন্য নয়, শিশুদের জন্যই মানায় ভালো। বিয়ে শাদী করা প্রাপ্ত বয়স্ক একজন লোক বলছে যে, ‘প্রণাম কিভাবে করতে হয় আমরা জানি না’, আর সেটা আরেক প্রাপ্ত বয়স্ক রাজা বিশ্বাস করছে; কৃত্তিবাস এখন বেঁচে থাকলে এসব লেখার জন্য পাবলিকের মার খেয়ে হাত পা ভেঙ্গে ওকে হসপিটালে ভর্তি হতে হতো।
যা হোক, রামায়ণ নিয়ে আরো কিছু কথা না বললেই নয়- রামায়ণ, মহাভারতের মতো নির্ভুল গ্রন্থ নয়। এখানে সংখ্যাতত্ত্বের বেশ কিছু ভুল ভ্রান্তি আছে। যেমন- যুদ্ধকাণ্ডের ৪ নং উপাখ্যানে বলা আছে,
“সমুদ্রের উপর সীমন্তরেখার ন্যায় শোভমান এই সেতুপথে সহস্র কোটি বানর লাফাতে লাফাতে সগর্জনে পার হতে লাগলো।”
এই বানররা যে বানর ছিলো না, ছিলো মানুষ, সেটা একটু পরেই আপনার বুঝতে পারবেন, এখানে শুধু সংখ্যাটা খেয়াল রাখুন, সহস্র কোটি মানে হাজার কোটি; এখনও সারা পৃথিবীর মানুষের সংখ্যা ১ হাজার কোটি নয়, অথচ এই হাজার কোটি বানর সমুদ্র পার হয়ে লংকার মতো একটি ছোট দ্বীপে থাকতে পারছে! শুধু তাই নয়, রাবন যখন রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসে, তখন সে কী কী নিয়ে যুদ্ধ করতে আসে দেখুন- এক নিযুত(১০ লক্ষ) রথ, তিন নিযুত (৩০ লক্ষ) হস্তী, ষাট কোটি অশ্ব, ও অসংখ্য পদাতিক সৈন্য (পৃষ্ঠা-৩৬৯)। ১০ লক্ষ রথে কমপক্ষে ২০ লক্ষ মানুষ ছিলো; কারণ, একজন রথ চালায় এবং অন্যজন যুদ্ধ করে; একইভাবে ৩০ লক্ষ হাতিতেও কমপক্ষে ৬০ লক্ষ মানুষ ছিলো, তারপর ষাট কোটি ঘোড়ায় ৬০ কোটি মানুষ; এভাবে রাবনের বাহিনীতে ছিলো প্রায় ৬১ কোটি মানুষ এবং তাদের রথ, হাতি ও ঘোড়া। খেয়াল করবেন, রাম ও রাবনের এই সমগ্র বাহিনী কিন্তু যুদ্ধ করছে লংকার মতো একটি ছোট্ট দ্বীপে, এটা কি সম্ভব ?
রাজশেখর বসুর অনুবাদের সত্যতা নিয়ে যাদের সন্দেহ আছে, তাদের জন্য এখানে আছে একটা সুস্পষ্ট ইঙ্গিত, অনুবাদ হয় এইরকমই, যেখানে ব্যক্তিগত লাভালাভ বা উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সত্যকে বিকৃতি বা চাপা দেওয়া হয় না। বসু মহাশয় চাইলেই এই সংখ্যাগুলোকে কম করে লিখে একটা বাস্তব রূপ দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেই চেষ্টা করেন নি, যা পেয়েছেন তাই লিখেছেন। এই একই কারণে কোরানের বাংলা অনুবাদ যদি আপনারা গিরিশের টা না পড়েন, প্রকৃত সত্যের নাগাল কখনো পাবেন না। কারণ, গিরিশ, কোরান অনুবাদ করেছিলেন নিজের লাভালাভের কথা চিন্তা না করে; কিন্তু পরে যে সব মুসলমান কোরান অনুবাদ করেছে, তাদের সবার মাথায় ছিলো বেহেশতের ৭২ হুরের চিন্তা।
এছাড়াও, রামায়ণ পড়লে, রামের বনবাস এবং যুদ্ধকালীন, শুধু রাম-সীতা এবং লক্ষ্মণকেই আপনি মানুষ হিসেবে পাবেন, আর তাদের আশে পাশে যাদেরকে পাবেন, তারা সবাই বানর, রাক্ষস ইত্যাদি। রাক্ষস বলতে প্রকৃতপক্ষে কিছু নেই, আছে রাক্ষস স্বভাবের মানুষ; সেই হিসেবে রাবনের পক্ষের সবাই রাক্ষস স্বভাবের মানুষ। কিন্তু বিভীষণ সেই রাক্ষস স্বভাবের উর্ধ্বে ছিলো বলেই তাকে আমরা সুসংস্কৃত মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি, যদিও তিনি রাক্ষসকূলজাত। বিভীষণ যদি প্রকৃতই রাক্ষস হতো বা রাক্ষস বলে যদি আলা্দা প্রজাতির কোনো প্রাণী থাকতো, তাহলে বিভীষণ মানুষের মতো বিচার বুদ্ধি বা আচরণ করে কিভাবে ?
এরপর বালী- সুগ্রীবের কাহিনী যখন আপনি পড়বেন, তখন আপনার মনেই হবে না যে, তারা বানর; কারণ, তাদের রাজ্য আছে, রাজত্ব আছে, তারা মানুষের মতো কথা বলে, তাদের স্ত্রী সন্তান আছে, তাদের বসবাস করার জন্য নগর, দালান- ইমারত আছে। যদি তারা প্রকৃতপক্ষে বানর হতো, তাহলে তারা কি এসব নির্মান করতে পারতো, না তাদের জীবনে এসবের প্রয়োজন হতো ? আর বানর হিসেবে এইরকম বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষই বা কিভাবে সম্ভব ? এই প্রশ্নের উত্তর কখনোই বুঝতে পারবেন না যতক্ষণ না আপনি, প্রাচীন যুগের মানুষের গোত্র বিভাগ কিভাবে হয়েছিলো, সেই ইতিহাস না জানবেন।
আমরা অনেক হিন্দুরই নামের শেষে পদবী হিসেবে লাগানো দেখি সিংহ (Lion), কারো নামের সাথে নাগ (সাপ) বা কারো সাথে সেন (শ্যেন, বাজ পাখি)। কিন্তু এগুলো কেনো ? যাদের নামের সাথে সিংহ লাগানো আছে তারা কি প্রকৃত পক্ষেই সিংহ, বা যাদের নামের সাথে নাগ আছে, তারা সাপ ? আসলে তারা প্রকৃত সিংহ, সাপ বা বাজপাখি নয়। প্রাচীন কালে এক গোত্রের মানুষের থেকে অন্য গোত্রের মানুষকে আলাদা করার জন্য পশু পাখিদের নামে তাদের নামকরণ করা হয়েছিলো, শুধু কোন গোত্রের মানুষ, তা আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্য। বানর রাজ সুগ্রীব বা বালি বলতে বানরদের রাজাকে বোঝায় না, এরা আসলে বানর গোত্রের মানুষদের রাজা। তাই রামায়ণে বানর, রাক্ষস বলতে যাদেরকে বোঝানো হয়, আসলে এরা কেউ প্রকৃত অর্থে বানর বা রাক্ষস নয়, সবাই মানুষ, তবে ভিন্ন গোত্র বা ভিন্ন ধরণের।
রামায়ণের অনেকে রাম সীতার মাংস ভোজনের কথা সংযোগ করে তা বিকৃত করেছেন।
এক আক্ষেপ এই যে, প্রাচীন ভারত মধ্যে নাকি অতিথী সৎকার মাংস দ্বারা করা হতো।এই দাবীর সত্যতা এবং খন্ডন স্বয়ং বাল্মীকি রামায়ন মধ্যে রয়েছে। যখন ঋষি বিশ্বামিত্র ঋষি বশিষ্ঠের আশ্রম মধ্যে পদাচারন করেন। তখন ঋষি বশিষ্ঠ ঋষি বিশ্বামিত্রকে মাংস দ্বার নয় বরং মিষ্টান্ন পদার্থ ক্ষীর দধি সৎকার করেছিলেন।
( বাল কান্ড সর্গ ৫২ শ্লোক ১-৬)
শ্রীরামচন্দ্র জীর মাংসাহারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বলা হয়েছে অযোধ্যা কান্ড সর্গ ২০শ্লোক ২৯ মধ্যে রয়েছে। যখন শ্রীরাম জী বনমধ্যে যাবার জন্য প্রস্তুত তখন মাতা কৌশল্যাকে রাম জী বললেন যে,
চতুর্দষ হি বর্ষাণি বৎস্যামি বিজনে বনে।
কন্তমূলফলৈজীবনে হিত্বা মুনিবদমিষম্।। ২৯
অর্থাৎ আমি চতুর্দশ বর্ষ পর্যন্ত বষ্কল পরিধান করিয়া ফল মূল ভক্ষন পূর্বক জীবন ধারন করত বনে বাস করবো। এর থেকে মাংস বিরুদ্ধ সাক্ষী আর কি হতে
পারে?
শ্রীরাম জী দ্বারা সীতা মাতার কথা অনুসারে স্বর্ণ হরিণ শিকার এক শঙ্কা। যেখানে রাম জী না কি স্বর্ণ হরিন শিকার করেছে তার মাংস খাবার জন্য।
এই শঙ্কার সমাধান রামায়ন অরণ্য কান্ড মধ্যে রয়েছে-
মাতা সীতা শ্রীরাম জী কে স্বর্ণ হরিণ ধরার জন্য এইরূপ বলছে-
যদি আপনি জীবিত ধরতে পারেন তো আশ্চার্যপ্রদ রূপে আশ্রমে বিচরন করে বিষ্ময় করবে।
আর যদি মারা যায় তবে তার সোনালী চামড়া চাটাইয়ের উপরে বিছিয়ে উপবেশন করা যাবে।
ইহা দ্বারা নিশ্চিতরূপে সিদ্ধ হয় যে, স্বর্ণ হরিণ শিকার মাংস খাওয়ার জন্য করা হয় নি।
বীর হনুমান যখন অনেক বাধা অতিক্রম করে অশোক বাটিকা মধ্যে পৌছে তখন সীতা মাতা রাম জীর কুশল জীজ্ঞাসা করেন। অর্থাৎ তিনি কি শোকে ব্যাকুল হয়ে অবৈদিক পথে চলছে? তখন হনুমান জী বলেন
ন মাংস রাঘবো ভূঙ্ক্তে ন চাপি মধুসেবতে।
(সুন্দর কান্ড ৩৬।৪১)
রাম জী না মাংস খান, না মদ্য পান করেন। বাল্মিকী রামায়ন সুন্দর কান্ড ৩৬ /৪১ সীতা মাতার এই জিজ্ঞাসা এটা দর্শায় যে, যদি রামচন্দ্র জীর মাংস ভক্ষন তার নিয়মিত আহার হতো তবে সীতা মাতার এই রূপ জিজ্ঞাসার কোন আবশ্যকতা থাকতো না।
অতএব বাল্মিকী রামায়নে মাংস ভক্ষনের অনুমোদন যেসব শ্লোকে রয়েছে তা নিশ্চিতভাবে প্রক্ষীপ্ত। করান আমরা জানি অথর্ববেদ ৮।৩।১৫ তে বলা হয়েছে
" যঃ পৌরুষেয়েণ ক্রবিষা সমঙ্কতে য অশ্বয়েন পশুনাং...... তেষাম শীর্ষাণি হরসাষি বৃশ্চ"
অর্থাৎ যে পুরুষ বধ করে ঘোড়া, পশু আদির মাংস দ্বারা নিজেকে পুষ্ট করে। হে অগ্নি তার শির ছেদন করো।
যজুর্বেদ ১।১ তে পশু সমূহ (অঘ্না) হত্যা করার অযোগ্য। সর্বদা (পশুন্ পাহি) পশুদের রক্ষা করো বলা হয়েছে। এরূপ অথর্ববেদ ১০।১।২৯ তে নির্দেশ হয়েছে
"অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গাম অশ্বম পুরুষং বধী"
নির্দোষের হত্যা অবশ্যই ভয়ানক। আমাদের গাভী, অশ্ব, পুরুষকে মেরো না।
যজুর্বেদ ৩০।১৮ " গোঘাতম্ ক্ষেধে যঃ গাম্ বিকৃন্তন্তম"
গাভীর ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী যে, ক্ষুধার জন্য গাভীকে হত্যা করে। তাকে ছেদন করি।
যজুর্বেদ ১৩। ৪৯
" অদিতিম মা হিংসী" হত্যার অযোগ্য গাভীকে কখনো মেরো না।
ঋগবেদ ৮।১০১।১৫
" মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট"
নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না।
অথর্ববেদ ৩।৩০।১
" অঘ্না ইব" গাভী সমূহ বধের অযোগ্য। সর্বদা ( পশুন ত্রায়েথাম, যজুঃ ৬।১১) পশুদের রক্ষা করো তাদের পালন করো। ইত্যাদি বলা হয়েছে।
যদিও প্রচলিত মনুস্মৃতিতে অনেক প্রক্ষীপ্ত রয়েছে। মনুস্মৃতি মধ্যেও মাংস বিরুদ্ধ অনেক প্রমাণ মেলে। এর মধ্যে বেদানুকুল শ্লোকগুলো গ্রহন করা উচিৎ। এবং বেদ বিরুদ্ধ যা তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
মনুস্মৃতি ৫।৪৩ তে ভগবান মনু বলেছেন
কি গৃহাশ্রমে, কি ব্রহ্মচর্যাশ্রমে, কি বানপ্রস্থশ্রমে সকল অবস্থাতেভ শুদ্ধাত্মারা বিপদেও কখনো বেদ নিষিদ্ধ হিংসা করবে না।
যে ব্যক্তি হিংসাশূন্য হরিণাদি পশুকে নিজ সুখের জন্য বিনাশ করে সে কি জীবিত অবস্থা কি পরলোকে উভয়ত্রই সুখ প্রাপ্ত হয় না। (মনুস্মৃতি ৫।৪৫ )
আবার মনুস্মৃতি ৫।৫১ তে বলা আছে
"যাহার অনুমতিতে পশু হনন করা হয়, যে অস্ত্র দ্বারা পশুর অঙ্গ প্রতঙ্গ খন্ড করা হয়, যে পশু বধ করে, যে মাংসের ক্রয় বিক্রয় করে, যে মাংস পাক করে, যে মাংস পরিবেশন করে, যে ব্যক্তি ভোজন করে ইহাদিগকে ঘাতক বলা যায়।"
"ইহ লোকে আমি যাহার মাংস ভোজন করিতেছি পরলোকে সে আমাকে ভোজন করবে। পন্ডিতরা মাংস শব্দের অর্থ (মাং আমাকে সঃ ভোজন করবে) এইরূপ প্রতিপন্ন করেছে। "-মনুস্মৃতি ৫।৫৫
এইসব প্রমাণ দ্বারা ইহা সিদ্ধ হয় যে, রামচন্দ্র জী কখনো মাংস খেতেন না। কারন তিনি নিজেই বড় বেদের জ্ঞাতা ছিলেন। একজন বেদজ্ঞ হয়ে তিনি কখনো বেদ বিরুদ্ধ আচরন করবেন না।
তথ্যসূত্র
- Arya, Ravi Prakash (ed.). Ramayana of Valmiki: Sanskrit Text and English Translation. (English translation according to M. N. Dutt, introduction by Dr. Ramashraya Sharma, 4-volume set) Parimal Publications: Delhi, 1998 আইএসবিএন ৮১-৭১১০-১৫৬-৯
- Bhattacharji, Sukumari (১৯৯৮)। Legends of Devi। Orient Blackswan। পৃষ্ঠা 111। আইএসবিএন 9788125014386।
- Brockington, John (২০০৩), "The Sanskrit Epics", Flood, Gavin, Blackwell companion to Hinduism, Blackwell Publishing, পৃষ্ঠা 116–128, আইএসবিএন 0-631-21535-2
- Buck, William (২০০০)। Ramayana। University of California Press। পৃষ্ঠা 432। আইএসবিএন 9780520227033। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - Dutt, Romesh C. (২০০৪)। Ramayana। Kessinger Publishing। পৃষ্ঠা 208। আইএসবিএন 9781419143878।
- Dutt, Romesh Chunder (২০০২)। The Ramayana and Mahabharata condensed into English verse। Courier Dover Publications। পৃষ্ঠা 352। আইএসবিএন 9780486425061।
- Fallon, Oliver (২০০৯)। Bhatti’s Poem: The Death of Rávana (Bhaṭṭikāvya)। New York: New York University Press, Clay Sanskrit Library। আইএসবিএন 978-0-8147-2778-2।
- Keshavadas, Sadguru Sant (১৯৮৮)। Ramayana at a Glance। Motilal Banarsidass Publ.,। পৃষ্ঠা 211। আইএসবিএন 9788120805453।
- Goldman, Robert P. (১৯৯০)। The Ramayana of Valmiki: An Epic of Ancient India: Balakanda। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 456। আইএসবিএন 9780691014852।
- Goldman, Robert P. (১৯৯৪)। The Ramayana of Valmiki: An Epic of Ancient India: Kiskindhakanda। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 416। আইএসবিএন 9780691066615।
- Goldman, Robert P. (১৯৯৬)। The Ramayana of Valmiki: Sundarakanda। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 576। আইএসবিএন 9780691066622।
- Mahulikar, Dr. Gauri. Effect Of Ramayana On Various Cultures And Civilisations, Ramayan Institute
- Rabb, Kate Milner, National Epics, 1896 - See eText Project Gutenburg
- Murthy, S. S. N. (২০০৩)। "A note on the Ramayana" (PDF)। Electronic Journal of Vedic Studies। New Delhi। 10 (6): 1–18। আইএসএসএন 1084-7561। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - Prabhavananda, Swami (১৯৭৯)। Spiritual Heritage of India। Vedanta Press। পৃষ্ঠা 374। আইএসবিএন 9780874810356।
- Raghunathan, N. (transl.), Srimad Valmiki Ramayanam, Vighneswara Publishing House, Madras (1981)
- Sattar, Arshia (transl.) (১৯৯৬)। The Rāmāyaṇa by Vālmīki। Viking। পৃষ্ঠা 696। আইএসবিএন 9780140298666।
- Sundararajan, K.R. (১৯৮৯)। "The Ideal of Perfect Life : The Ramayana"। Krishna Sivaraman, Bithika Mukerji। Hindu spirituality: Vedas through Vedanta। The Crossroad Publishing Co.। পৃষ্ঠা 106–126। আইএসবিএন 9780824507558।
- A different Song - Article from "The Hindu" August 12, 2005 - [১]
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ