পিতৃযোজ্ঞ- অর্থাৎ যাহাতে দেব অর্থাৎ বিদ্বান, ঋষি অর্থাৎ যঁহারা অধ্যয়ন অধ্যাপনা করেন এবং পিতর অর্থাৎ মাতা, পিতা,বৃদ্ধ,জ্ঞানী এবং পরম যোগী-ইহাদের সেবা করা।
পিতৃযোজ্ঞ দ্বিবিধ- প্রথম শ্রাদ্ধ দ্বিতীয় তর্পণ। শ্রাদ্ধ অর্থাৎ "শ্রৎ সত্যের নাম, "শ্রীৎ সত্যং দধাতি যয়া ক্রিয়য়া সা শ্রদ্ধা, শ্রদ্ধয়া যৎ ক্রিয়তে তচ্ছ্রাদ্ধম্"।।-যে ক্রিয়া দ্বারা সত্য গ্রহণ করা যায় তাহাকে শ্রদ্ধা বলে
এবং শ্রদ্ধা পূর্ব্বক যে কর্ম্ম অনুষ্ঠিত হয়, তাহার নাম শ্রাদ্ধ। আর "তৃপ্যন্তি তর্পয়ন্তি যেন পিতৃন্ তত্তর্পণম্"-যে যে সকল কর্ম্মের দ্বারা বিদ্যমান মাতা পিতা প্রভৃতি পিতৃগণ তৃপ্ত অর্থাৎ প্রসন্ন হন, এবং যে সকল ক্রিয়ার দ্বারা তঁহাদিগকে প্রসন্ন করা যায় তাহার নাম তর্পণ। কিন্তু তাহা জীবিতদিগের জন্যই, মৃতদিগের জন্য নহে।
"বায়ুরনিলমমৃতমথেধং ভষ্মান্ত শরীরম্।
ওঁম ক্রুতো স্মর ক্লিবে স্মর কৃত স্মর।।"
(যজুর্বেদ ৪০/১৫)
পদার্থ-- (ক্রতো)হে কর্ম্মকর্তা জীব, (ওঁম) পরমাত্মার নাম, (ক্লিবে) সামর্থ্যের জন্য, (স্মর) স্বরণ কর, (কৃতম)কৃত কর্ম্মকে, (স্মর)স্বরণ কর, (বায়ুঃ) আধ্যাত্মিক প্রাণ, (অনিলম্) আধিদৈবিক প্রান, (অমৃতম)পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হও,(অপ) তৎপর, (ইদং শরীরম্)- এই ভৌতিক শরীর, (ভস্মান্তম) ভস্মে শেষ হয়।.
★বঙ্গানুবাদ- হে কর্মশীল জীব! শরীর ত্যাগের সময় পরমাত্মার নাম ওঙ্কার স্বরণ কর, আধ্যাত্মিক সামর্থ্য প্রাপ্তির জন্য স্বরণ কর।
.
★ভাবার্থ -- অন্তোষ্টি সংস্কারই শেষ সংস্কার, ইহার পর শরীরের আর কোন সংস্কারই বাকী থাকেনা। ইহারই নাম নরমেধ, পুরুষমেধ, নরযাগ আর পুরুষ যাগ। শ্মশান ভূমিতে জ্বলন্ত চিতায় সমিধা সুগন্ধি, রোগনাশক আর বুদ্ধিবর্দ্ধক ঔষধি এবং ঘৃত আহুতি দ্বারা মৃত শরীরকে ভষ্মিভূত করায় অন্ত্যেষ্টি সংস্কার, জীব তাহার নিজের কর্মের ফল নিজেই ভোগ করে, বংশধরদের কোন কার্য্যই তাহাকে সাহায্য করিতে পারেনা।
🌀মন্ত্র তে স্পষ্ট উল্লেখ আছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াই শেষ সংস্কার, এর পরে আর কোনো সংস্কারই অবশিষ্ট থাকেনা।
কেও কর্মফলের উর্দ্ধে নয়, জীব তার কৃতকর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে। এর থেকে পরিত্রাণ এর কোনো মার্গ নেই। কারন ঈশ্বর ন্যায় কর্তা, তিনি ন্যায় অবশ্যই করবেন।
কেও কর্মফলের উর্দ্ধে নয়, জীব তার কৃতকর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে। এর থেকে পরিত্রাণ এর কোনো মার্গ নেই। কারন ঈশ্বর ন্যায় কর্তা, তিনি ন্যায় অবশ্যই করবেন।
♦এছাড়াও পবিত্র গীতায় কি বলে দেখি
🌀গীতা ৫/১৫
"নাদত্তে কস্যচিৎ পাপং ন চৈব সুকৃতং বিভুঃ।
অজ্ঞানেন আবৃতং জ্ঞানং তেন মুহ্যন্তি জন্তবঃ।।
"নাদত্তে কস্যচিৎ পাপং ন চৈব সুকৃতং বিভুঃ।
অজ্ঞানেন আবৃতং জ্ঞানং তেন মুহ্যন্তি জন্তবঃ।।
অর্থাৎ পরমেশ্বর ভগবান জীবের পাপ বা পূণ্য কিছুই গ্রহণ করেন না। অজ্ঞানের দ্বারা জ্ঞান আবৃত হওয়ার ফলে জীব সমূহ মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
🌀অর্থাৎ স্তুতি, প্রার্থনা করিলেও ঈশ্বর নিজের নিয়ম ভঙ্গ করে জীবের পাপ মোচন করে দেন না, বা অধিক ফলও দেন না। কারন ঈশ্বর ন্যায়কর্তা, তিনি তার স্বীয় কার্যের নিয়ম ভঙ্গ করেন না। তিনি জীব এর পাপ-পূণ্য গ্রহণকারী নয় তিনি কর্মের ফল প্রদান কারী।
- 📌মনে করুন আপনি একজন রাজা এবং রাজার কার্য হচ্ছে প্রজাদের ন্যায় দান করা।
সেই রাজ্যেই ধর্ষণ হয়, চুরি হয়, ডাকাতি হয়, খুন হয়।
কেও যদি একজন মেয়ে কে ধর্ষণ করে বসে থাকে ফলস্বরুপ মেয়ের বাবা আপনার কাছে ন্যায় চাইতে আসে তার মেয়ের ধর্ষণ কারীর যাতে কৃত কর্মের দণ্ড পায়।
ধর্ষক বা ধর্ষকের বাবা এসে যদি আপনার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে প্রার্থনা করে এবং টাকার প্রলোভন দেখায় সেইসাথে আপনার প্রশংসা করে আর আপনি তাদের কথায় মুগ্ধ হয়ে যদি ওই ধর্ষক কে ক্ষমা করে দেন তাহলে আপনার দৃষ্টিতে আপনার বিচার ন্যায় হবে নাকি অন্যায় হবে? যদি ন্যায় বলে মনে হয় তাহলে যেই মেয়ের ধর্ষণ হয়েছিলো তার ন্যায় কিভাবে হবে?
বিচার করুন।
🌀তাই মৃত ব্যাক্তির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরে অন্যান্য ক্রিয়ানুষ্ঠান, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করা মৃত ব্যাক্তির জন্য বৃথা কার্য। এতে কোনো লাভ নেই। সবই বাহ্মনদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ধান্ধা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আপনি বড়লোক হলে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান গুলো সম্পন্ন করতে পারেন কিন্তু গরীবদের কথা একটু চিন্তা করুন। শ্রাদ্ধানুষ্ঠান গুলোতে কত টাকা ব্যয় হয় তা গরীবদের জন্য নেহাত অনেক ভারি। বিবেচনা করুন।
আর হ্যাঁ শ্রাদ্ধানুষ্ঠান গুলোতে মানুষকে খাওয়ানো নিশ্চই উত্তম কার্য এর জন্য আপনি অবশ্যই ভালো ফল পাবেন। কিন্তু মৃত ব্যাক্তির সেই ফলের কোনো অধিকার নেই।
যে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে লোক খাওয়াই সেই ফল লাভ করবে মৃত ব্যাক্তি নয়।
আপনি বড়লোক হলে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান গুলো সম্পন্ন করতে পারেন কিন্তু গরীবদের কথা একটু চিন্তা করুন। শ্রাদ্ধানুষ্ঠান গুলোতে কত টাকা ব্যয় হয় তা গরীবদের জন্য নেহাত অনেক ভারি। বিবেচনা করুন।
আর হ্যাঁ শ্রাদ্ধানুষ্ঠান গুলোতে মানুষকে খাওয়ানো নিশ্চই উত্তম কার্য এর জন্য আপনি অবশ্যই ভালো ফল পাবেন। কিন্তু মৃত ব্যাক্তির সেই ফলের কোনো অধিকার নেই।
যে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে লোক খাওয়াই সেই ফল লাভ করবে মৃত ব্যাক্তি নয়।
♦জীবিত থাকতেই সৎকর্ম করে যান, জীবত থাকতেই ঈশ্বরের ধ্যানে মগ্ন হন, সৎ উপায়ে জীবন অবলম্বন করুন। জীবিত থাকতেই মাতা-পিতার যত্ন নিন,এটাই শ্রেষ্ট শ্রাদ্ধ।
অন্যথায় মৃত্যুর পর পরমগতি লাভ করা বৃথা চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়।
অন্যথায় মৃত্যুর পর পরমগতি লাভ করা বৃথা চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ