রামচন্দ্র কি মাংস খেতেন ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

24 June, 2020

রামচন্দ্র কি মাংস খেতেন ?

 অনেকে বলে থাকে রাম শিকার করে মাংস খেতেন । সাথে মাতা সীতাও । তাই সীতার কথায় তিনি মৃগ শিকার করতে গেলেন । এইসব কথা কোথা থেকে পায় এবং কতটুকু সত্য তা আজকে বোঝা যাবে । আজ বাল্মীকি রামায়ণ থেকে দেখাবো সেদিন কী ঘটেছিল ।

রামচন্দ্র কি মাংস খেতেন ?

এই আর্টিকেলটি পড়ে আজ যে যে প্রশ্নের উত্তর জানতে পারবো-
১/ রাম কি মাংস খাওয়ার জন্য শিকার করেছে ?
২/ মাতা সীতার উদ্দেশ্য কী ছিল?
৩/ রাম-লক্ষ্মণ কী জানতো মৃগটি মারীচ ছিল?
৪/ রাম যদি জেনে থাকতো মৃগটি মারীচ ছিল তারপরও কেন তাঁকে হত্যা করতে গেল ? তাঁকে তো ছেড়ে দেওয়া যেত ।
প্রথমে দেখা যাক সেদিন কী হয়েছিল?
মাতা সীতা কুসুমচয়নকালে (ফুল তোলার সময়) সুবর্ণ ও রজত বর্ণাভ পার্শ্বদ্বয়বিশিষ্ট মৃগটিকে দেখে উল্লসিতা হয়ে স্বামী শ্রীরামচন্দ্র এবং দেবর লক্ষ্মণকে উচ্চৈঃস্বরে আহ্বান করলেন । “আর্যপুত্র! ভাই-এর সঙ্গে শীঘ্র আসুন ! আসুন!” এই বলে সীতা তাদের বারবার আহ্বান করে, সেই মৃগটিকে আবার ভালো করে দেখতে লাগলেন । রাম-লক্ষ্মণ সেখানে এসে চারিদিকে দৃষ্টিপাত করতে করতে সেই মৃগটিকে দেখতে পেলেন ।
মৃগটি দেখে লক্ষ্মণের উক্তি কী ছিল দেখুন-
शंकमानः तु तम् दृष्ट्वा लक्ष्मणो रामम् अब्रवीत् |
तम् एव एनम् अहम् मन्ये मारीचम् राक्षसम् मृगम् || ३-४३-५
মৃগটিকে দেখে সন্দেহান্বিত লক্ষ্মণ বললেন – 'এই মৃগটিকে আমি সেই রাক্ষস মারীচ বলেই মনে করি ।' (৩/৪৩/৫)
चरन्तो मृगयाम् हृष्टाः पापेन उपाधिना वने |
अनेन निहता राम राजानः काम रूपिणा || ३-४३-६
“শ্রীরাম! স্বেচ্ছারূপধারী, কপটাচারী এই পাপী, অরণ্যে মৃগয়ার জন্য আগত অনেক হৃষ্টচিত্ত রাজাকে হত্যা করেছে ।” (৩/৪৩/৬)
अस्य मायाविदो माया मृग रूपम् इदम् कृतम् |
भानुमत् पुरुषव्याघ्र गन्धर्व पुर संनिभम् || ३-४३-७
“হে পুরুষসিংহ ! এই মায়াবী, গন্ধর্বনগর তুল্য দীপ্তিমান অলীক মায়ামূগের রূপ ধারণ করেছে ।” (৩/৪৩/৭)
मृगो हि एवम् विधो रत्न विचित्रो न अस्ति राघव |
जगत्याम् जगतीनाथ माया एषा हि न संशयः || ३-४३-८
“হে জগৎপতি রঘুনন্দন ! জগতে এরূপ রত্নময় বিচিত্র মৃগ হয় না । এ ছলনা, তাতে কোনও সংশয় নেই” (৩/৪৩/৮)
এই শ্লোক গুলো থেকে পরিস্কার বোঝায় যাচ্ছে লক্ষ্মণ এই বিষয়ে অবগত ছিল যে , মৃগটি ছিল মারীচ । সাথে রামও এই বিষয়ে অবগত ছিলেন । লক্ষ্মণ এই তথ্য উপস্থাপন করে তার দায়িত্ব পালন করেছেন । কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে রাম এই বিষয়ে তার যুক্তি দিয়েছেন।
ঘটনায় আবার ফিরে যাওয়া যাক -
মারীচের ছলনায় জ্ঞানাত্মিকা বুদ্ধি হারিয়ে পবিত্র হাস্যময়ী সীতা সানন্দে বললেন-
आर्यपुत्र अभिरामो असौ मृगो हरति मे मनः |
आनय एनम् महाबाहो क्रीडार्थम् नः भविष्यति || ३-४३-१०
“আর্যপুত্র! ঐ মনোরম মৃগটি আমার মন হরণ করেছে । হে মহাবাহু ! ওকে নিয়ে আসুন ; ও আমাদের খেলার সাথী হবে ।” (৩/৪৩/১০)
দেখুন এই শ্লোকেই মাতা সীতার উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে । তিনি চেয়েছেন ঐ মৃগটি তাঁর যেন খেলা সাথী হউক ।
সাথে আরো বলেন- “রাজন্ ! আমাদের এই পবিত্র আশ্রমে চমরমৃগ, সৃমর (কৃষ্ণসার মৃগ) এবং তাদের সঙ্গে অনেক পুণ্যদর্শন মৃগ পশু বিচরণ করে । হে বীরশ্রেষ্ঠ ! এখানে মহাবলবান শ্রেষ্ঠ রূপবান ভল্লুক, চিত্রিত মৃগ, বানর এবং কিন্নরগণ (এক বিশেষ ধরনের মৃগ) বিহার (আনন্দে বিচরণ) করে । কিন্তু তেজ এবং সামর্থ্যে এই মৃগশ্রেষ্টটি যেমন, তদ্রূপ এর সমান অন্য মৃগ আমি পূর্বে দেখিনি । নানা বর্ণে চিত্রিত রত্নময় শান্ত মৃগটি বনভূমিকে উজ্জ্বল করে আমার সম্মুখে চন্দ্রের ন্যায় শোভমান । আহা কী রূপ ! কী সৌন্দর্য ! কী মধুর স্বরলহরী ! বিচিত্রাঙ্গ অদ্ভুত মৃগটি আমার হৃদয় হরণ করে নিয়েছে । যদি এই মৃগটিকে আপনি জীবিত ধরতে পারেন, ভাহলে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হবে এবং জনসাধারণের বিস্ময় উৎপাদন করবে । আমাদের বনবাসের অবসানে পুনরায় রাজ্যে অবস্থানকালে এই মৃগটি রাজান্তঃপুরের শোভা বৃদ্ধি করবে। প্রভু! এই মৃগটির দিব্যরূপ ভরতের, আর্যপুত্রের (আপনার), শ্বশ্রূমাতাদের এবং আমার বিস্ময় উৎপাদন করবে ।” (৩/৪৩/১১-১৮)
মাতা সীতার এইসব উক্তি দেখে কি মনে হয় , মাতা সীতার মৃগটির মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল ?
কিছুক্ষণ আগে দেখলাম লক্ষ্মণ তার সন্দেহ প্রকাশ করে এবার আসা যাক রাম এই বিষয়ে কি বলে ,
“লক্ষ্মণ! আমাকে যা বললে , যদিও বা এ তদ্রূপ রাক্ষসের মায়া (ছলনা) হয় , তবে একে হত্যা করা আমার কর্তব্য । এই নৃশংস মারীচ পূর্বে এই দন্ডকারণ্যে স্বেচ্ছায় বিচরণকালে অনেকানেক মুনিশ্রেষ্ঠদের হত্যা করেছে । মৃগয়ায় আগত অনেক মহাধনুর্ধর নৃপতিকে এই মৃগরূপী মারীচ প্রকটিত হয়ে হত্যা করেছে , সেইজন্য এই মৃগ আমার বধ্য ।” (৩/৪৩/৩৮-৪০)
রামের এইসব উক্তির মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে , লক্ষ্মের মতোই রামও মারীচের বিষয়ে অবগত ছিলেন । তিনি মাংস খাওয়ার জন্য কখনোই মৃগটিকে শিকার করতে যাননি ।
আবার কিছু বামমার্গী প্রশ্ন করে, রাম যদি জেনে থাকতো মৃগটি মারীচ ছিল তারপরও কেন তাঁকে হত্যা করতে গেল ? তাঁকে তো ছেড়ে দেওয়া যেত ।
মারীচকে কেন রাম হত্যা করেছিল তা কিছুক্ষণ আগেই জানলাম । শ্রী রাম নিজের মুখেই বলেছেন তিনি কেন মারীচকে হত্যা করবে (৩/৪৩/৩৮-৪০) । তারপরেও মারীচ কেমন ছিল সে বিষয়ে আরো কিছু রেফারেন্স বাল্মীকি রামায়ণ থেকে দিলাম ।
মারীচ যে কি পরিমাণ পাপী তা মারীচ নিজের মুখেই রাবণকে বলেছেন -
कदाचित् अपि अहम् वीर्यात् पर्यटन् पृथिवीम् इमाम् |
बलम् नाग सहस्रस्य धारयन् पर्वतोपमः || ३-३८-१
नील जीमूत संकाशः तप्त कांचन कुण्डलः |
भयम् लोकस्य जनयन् किरीटी परिघ आयुधः || ३-३८-२
व्यचरम् दण्डक अरण्यम् ऋषि मांसानि भक्षयन् |
“একসময় বিরাট পর্বতের ন্যায় দেহধারী আমিও সহস্র হস্তীর বলে বলীয়ান হয়ে এই পৃথিবীতে বিচরণ করতাম । মেঘসদৃশ দেহে, কর্ণে উজ্জ্বল কাঞ্চনের কুন্ডল এবং মস্তকে কিরীট ধারণ করে, পরিঘ নামক অস্ত্র দিয়ে মানুষের অন্তরে ভয় উৎপাদন ,আর ঋষি মাংস ভক্ষণ করে দন্ডকারণে বিচরণ করতাম ।” (৩/৩৮/১-২)
अग्निहोत्रेषु तीर्थेषु चैत्य वृक्षेषु रावण |
अत्यन्त घोरो व्यचरन् तापसान् संप्रधर्षयन् || ३-३९-४
निहत्य दँडकारण्ये तापसान् धर्मचरिणः |
रुधिराणि पिबन्तः तेषाम् तन् मांसानि च भक्षयन् || ३-३९-५
ऋषि माअंस अशनः क्रूरः त्रासयन् वनगोचरान् |
तदा रुधिर मत्तो अहम् व्यचरन् दँडका वनम् || ३-३९-६
“রাবণ! আমি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে, যজ্ঞশালা গুলিতে, তীর্থে তীর্থে এবং পবিত্র দেববৃক্ষগুলিতে বিচরণ করতে করতে তপস্বীদের উপর অত্যাচার করতে লাগলাম । দন্ডকারণ্যে ধর্মচারী তপস্বীদের হত্যা করে, তাঁদের রক্তপান এবং মাংস ভক্ষণ করতে লাগলাম । নিষ্ঠুরভাবে ঋষিমাংস ভক্ষণ এবং বনবাসীদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করে আমি রুধিমত্ত হয়ে দন্ডকবনে বিচরণ করতে লাগলাম ।” (৩/৩৯/৪-৬)
सः अहम् वन गतम् रामम् परिभूय महाबलम् |
तापसो अयम् इति ज्ञात्वा पूर्व वैरम् अनुस्मरन् || ३-३९-९
अभ्यधावम् सुसंक्रुद्धः तीक्ष्ण शृंगो मृग आकृतिः |
जिघांसुः अकृतप्रज्ञः तम् प्रहारम् अनुस्मरन् || ३-३९-१०
“সূচালো শিংওয়ালা পশুর আকৃতিবিশিষ্ট নিবুদ্ধি সেই আমি মহাবলবান বনবাসী রামকে তপস্বী মনে করে তাঁর প্রতি অবজ্ঞাপূর্বক পূর্বপ্রহার ও পূর্বশত্রুতা স্মরণ করে হননেচ্ছাপরায়ণ হয়ে তাঁর প্রতি ধাবিত হলাম ।” (৩/৩৯/৯-১০)
এই শ্লোকে দেখা যাচ্ছে মারীচ এর আগেও রাম-লক্ষ্মণের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিল ।
অতএব সিদ্ধ হয় যে , রাম এবং লক্ষ্মণ আগে থেকেই জানতো মৃগটি মারীচ ছিল । তাই রাম মারীচকে হত্যা করেছিল (মারীচের পাপের বর্ণনা উপরে দেয়া হয়েছ ) । রাম মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে শিকার করে নি । এমনকি মাতা সীতার উদ্দেশ্য ছিল যে ঐ মৃগটিকে তাঁর খেলার সাথী হিসেবে বানানো এবং নানা বর্ণে চিত্রিত রত্নময় মৃগটিকে মানুষদের দেখিয়ে অবাক করানো ।
শ্রীরামচন্দ্র বনবাসে যাবার জন্য যখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত তখন বিলাপ করা তো দূরে থাক বরং মাতা কৌশল্যাকে বললেন-
চতুর্দশ হি বর্ষাণি বৎস্যামি বিজনে বনে।
কন্তমূলফলৈজীবনে হিত্বা মুনিবদমিষম্।।
(বাল্মীকি রামায়ণ, ২.২০.২৯)
অর্থাৎ আমি চতুর্দশ বর্ষ পর্যন্ত বষ্কল পরিধান করে ফল মূল ভক্ষণপূর্বক জীবনধারণ করত বনে বাস করব।
স ষট্ চাষ্টৌবর্ষাণি বৎস্যামি বিজনে বনে ।
আসেবমানো বন্যানি ফলমূলৈশ্চ বর্তয়ন্ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.২০.৩১)
অনুবাদ- আমি চৌদ্দ বৎসর কাল নির্জন বনে[বিচরণ এবং] ফলমূল আহার করে অবস্থান করব ।
মাতা কৌশল্যা শ্রীরামচন্দ্রকে বনে গমনের পূর্বে আশীর্বাদ করে বলেন -
আগমাস্তে শিবাঃ সন্তুঃ সিদ্ধ্যন্তু চ পরাক্রমাঃ ।
সর্বসম্পত্তয়ো রাম স্বস্তিমান্ গচ্ছ পুত্রক ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ, ২.২৫ ২১)
অনুবাদ- বৎস রাম ! তোমার যাত্রা মঙ্গলময় হোক,পরাক্রম সার্থক হোক , বনে ফলমূলাদি আহার্যসমূহ সুলভ হোক , তুমি কল্যাণ মণ্ডিত হও ।
পিতা দশরথকেও শ্রীরামচন্দ্র একই কথা বলেন -
ফলানি মূলানি চ ভক্ষয়ন্ বনে গিরীংশ্চ পশ্যন্ সরিতঃ সরাংসি চ ।
বনং প্রবিশ্যৈব বিচিত্রপাদপং সুখী ভবিষয়ামি তবাস্তু নির্বৃতিঃ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৩৪.৫৯)
অনুবাদ- বনে প্রবেশ করে ফলমূল ভক্ষণ করব ; বনের পর্বত , নদী ,সরোবর এবং বিচিত্র সব বৃক্ষ দেখে সুখে থাকব । আপনার মনে শান্তি বিরাজ করুক ।
ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে গিয়ে শ্রীরাম তাঁকে নিজের বনবাসের কারণ সম্পর্কে বললেন -
পিত্রা নিযুক্তা ভগবন্ প্রবেক্ষ্যামস্ত পোবনম্ ।
ধর্মমেবাচরিষ্যামস্তত্র মূলফলাশনাঃ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ, ২.৫৪.১৬)
অনুবাদ- হে ভগবন্ ! পিতা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আমরা তপোবনে প্রবেশ করব এবং সেখানে ফলমূলাহারী হয়ে ধর্মাচারণ করব ।
তস্য তদ্বচনং শ্রুত্বা রাজপুত্রস্য ধীমতঃ৷
উপানযত ধর্মাত্মা গামর্ঘ্যমুদকং ততঃ৷৷
(বাল্মীকি রামায়ণ, ২.৫৪.১৭)
এই কথা শুনে ঋষি ভরদ্বাজ তাদের জল দিলেন শুদ্ধ হবার জন্য ও অর্ঘ্য হিসেবে দই,ঘি,মধু, দুধ দিয়ে তৈরী মধুপর্ক দিলেন।
নানাবিধানন্নরসান্ বন্যমূলফলাশ্রযান্৷
তেভ্যো দদৌ তপ্ততপা বাসং চৈবাভ্যকল্পযত্৷৷
(বাল্মীকি রামায়ণ, ২.৫৪.১৮)
তপস্বী ঋষি খাবার জন্য তাঁদের দিলেন ফলমূল থেকে তৈরী নানা খাদ্য এবং তাঁদের থাকার জন্যও ব্যবস্থা করে দিলেন।

শ্রীরামচন্দ্র তাঁর মিত্র নিষাদরাজ গুহকে বলেন-
কুশচীরাজিনধরং ফলমূলাশনং চ মাম্ ।
বিদ্ধি প্রণিহিতং ধর্মে তাপসং বনগোচরম্ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ, ২.৫০.৪৪)
অনুবাদ- আমি এখন আমি এখন কুশ-বল্কল-মৃগচর্মধারী ও ফলমূলাহারী বনবাসী তপস্বী ।
জাবালির সাথে কথোপকথনকালে তিনি বলেন-
বনবাসং বসন্নেব শুচির্নিয়তভোজনঃ ।
মূলপুষ্পফলৈঃ পূণ্যৈঃ পিতৃন্ দেবাংশ্চ তর্পয়ন ।।
সন্তুষ্টপঞ্চবর্গোহহং লোকযাত্রাং প্রবাহয়ে ।
অকুহঃ শ্রদ্দধানঃ সন্ কার্যাকার্যবিচক্ষণঃ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ, ২.১০৯.২৭)
অনুবাদ- বনবাসে থেকে নিয়ত পবিত্র-মূল-পুষ্প আহার ও পিতৃদেবদের তৃপ্তি বিধান এবং পঞ্চেন্দ্রিয়ের তৃপ্তি বিধান করে লোকযাত্রা নির্বাহ করব এবং অকপট শ্রদ্ধাশীল ও কর্তব্যাকর্তব্য বিচক্ষণ হব ।
অর্থাৎ স্পষ্ট যে শ্রীরামচন্দ্র বারবার বলেছেন তিনি ফলমূলাদী উদ্ভিজ্জ খাদ্য ব্যতিত কিছুই খাননা। আবার এটাও স্পষ্ট যে জাগতিক ভোগ নিয়ে শ্রীরামচন্দ্রের কোন আগ্রহই ছিলনা, তিনি ছিলেন মুনিঋষিদের মতোই সকল কামনার উর্ধ্বে একজন ব্যক্তি। কৈকেয়ীর কথা শুনে রামচন্দ্র নিজেই বলেছিলেন-
নাহমর্থপরো দেবি! লোকমাবস্তুমুত্সহে৷
বিদ্ধিমামৃষিভিস্তুল্যং কেবলং ধর্মমাস্থিতম্৷৷
(বাল্মিকী রামায়ণ, ২.১৯.২০)
অনুবাদ- হে দেবী! কোন বৈষয়িক ভোগবিলাসের জন্য এ জগতে বাঁচার কোন ইচ্ছেই আমার নেই, আমি মুনিঋষিদের ন্যায় কেবল ধর্মেই স্থিত।
✍️✍️ তন্ময় শর্মা
তথ্য সূত্রঃ
১। বাল্মীকি রামায়ণ (গীতা প্রেস)
২। The Valmiki Ramayan ( Bibek Debroy )

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ