কুরআন কি আল্লাহর বাণী নয় - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

26 June, 2020

কুরআন কি আল্লাহর বাণী নয়



মুসলমানরা দাবি করে তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল কুরআন আল্লাহর তরফ থেকে নাজিল হয়েছে l অর্থাত কুরআনের সমস্ত বাণী স্বয়ং আল্লাহর l এবং তাদের দ্বাবি কুরআনে যেহেতু আয়াতগুলো উত্তম পুরুষে বর্ণিত হয়েছে অর্থাত আমি বা আমি আল্লাহ এই সব সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে তাই কুরআন অবশ্যই আল্লাহর বাণী বা ঐশী বাণী l

যারা কুরআনকে কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী বলে স্বীকার করে না তারা বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে প্রমান করে দেয় যে কুরআন আল্লাহর বা সৃষ্টিকর্তার বাণী নয় l
আসুন দেখি কুরআন কি সত্যিই কোন সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে নাকি কোন মানুষ কুরআন তৈরী করেছে !

আমরা জানি আল্লাহ কুরআনকে গ্রন্থ আকারে মুহাম্মদের কাছে পাঠায়নি l বরং এটি বিভিন্ন সময়ে জিব্রাইলের মাধ্যমে মুহাম্মদের কাছে পাঠানো হয়েছে l জিব্রাইলকে মুহাম্মদ ছাড়া অন্য কেউই দেখেনি ! আর তাই কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী কিনা অথবা এটি কোন ঐশী বাণী কিনা সে সম্পর্কে কোন প্রমান নেই l
যদি কুরআন সত্যিই আল্লাহর বাণী হয়ে থাকে তবে এতে উল্লেখিত সব বাণী উত্তম পুরুষে অর্থাত আমি বা আমি আল্লাহ প্রভৃতি সর্বনাম ব্যবহৃত হবে l
কুরআনের প্রথম সুরা "সুরা ফাতেহা"-এর প্রতি লক্ষ করে দেখি কি বলা হয়েছে !
১. আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যিনি পরম করুনাময় ও অতি দয়ালু l
২. আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক l
৩. যিনি পরম করুনাময়, অতিশয় দয়ালু l
৪. যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক l 
৫. আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি l
৬. আমাদেরকে সরল সঠিক পথ-প্রদর্শন করুন l
৭. তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের নয় যাদের প্রতি আপনার গযব বর্ষিত হয়েছে, এবং তাদেরও নয় যারা পথভ্রষ্ট l



লক্ষ করুন এই সুরাতে উত্তম পুরুষে বর্ণনা করা হয়নি l এই সুরা পড়লে মনে হয় এটা মানুষের বাণী, আল্লাহর বাণী নয় ! তাহলে কুরআনের সব সুরা কি আল্লাহর বাণী ? সুরা ফাতেহা দেখে বুঝা যাচ্ছে এই সুরটি আল্লাহর বাণী নয় বরং মুহাম্মদ বা মানুষের বাণী !
যদি এটা আল্লাহর বাণী হতো তবে সুরার প্রথমে লেখা থাকত "বলো" তারপরে সুরটি লেখা হতো, তবে এটাকে আল্লাহর বাণী বলে দাবি করা যেত l যেমন -
১. বলো - "আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যিনি পরম করুনাময় ও অতি দয়ালু l
২. আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক l
৩. যিনি পরম করুনাময়, অতিশয় দয়ালু l
৪. যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক l 
৫. আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি l
৬. আমাদেরকে সরল সঠিক পথ-প্রদর্শন করুন l
৭. তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের নয় যাদের প্রতি আপনার গযব বর্ষিত হয়েছে, এবং তাদেরও নয় যারা পথভ্রষ্ট l "

কিন্তু কুরআনের সুরা ফাতেহার প্রথমে "বলো" কথাটি লেখা নেই l আর তাই এটি আল্লাহর বাণী নয় ! যদি এটা সত্যিই আল্লাহর বাণী হতো তবে সুরার প্রথমে "বলো" কথাটি লেখা থাকত l অথবা সুরটি হতো এই রকম :
১. শুরু কর আমার নামে, আমি পরম করুনাময় ও অতি দয়ালু l
২. সমস্ত প্রসংসা আমার জন্য, আমি জগতসমূহের প্রতিপালক l
৩. আমি পরম করুনাময়, অতিশয় দয়ালু l
৪. আমিই প্রতিফল দিবসের মালিক l
৫. সুতরাং তোমরা শুধু আমারই ইবাদত করো এবং আমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো l
৬. কারণ আমিই তোমাদের সরল সঠিক পথ-প্রদর্শন করি l
৭. তাদের পথ যাদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছি; তাদের নয় যাদের প্রতি আমার গযব বর্ষিত হয়েছে, এবং তাদেরও নয় যারা পথভ্রষ্ট l
সুরা ফাতিহা যদি এরকম হতো তবে এটাকে আল্লাহর বাণী বলে দাবি করা যেত l অথবা যদি সুরার প্রথমে "বলো" কথাটি লেখা থাকতো তবুও এটাকে আল্লাহর বাণী বলে দাবি করা যেত l
কিন্তু সুরা ফাতেহা ঠিক ওরকম নয় l বরং এটি কোন মানুষের বাণী এভাবেই লেখা হয়েছে l
আর তাই সুরা ফাতেহা আল্লাহর বাণী নয় l

আবার কুরআনের কিছু কিছু আয়াত পড়লে মনে হয় এটি আল্লাহর বাণী নয় l বরং এটি কোন মানুষের বাণী; অথবা এটি অন্য কারো বাণী l যেমন :-
সুরা নামল, আয়াত ৮৬ :
"তারা কি অনুধাবন করে না যে, আমি রাত্রি সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্যে এবং দিবসকে করেছি আলোকপ্রদ?এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্যে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে l "
এই আয়াতটি পড়লে খুব সহজেই বুঝা যায় এটা সরাসরি আল্লাহর বাণী l অর্থাত আল্লাহ এই আয়াতে সরাসরি বলেছে যে সে নিজেই রাত সৃষ্টি করেছে মানুষের বিশ্রামের জন্য এবং দিবসকে করেছে আলোকপ্রদ l এবং মানুষের কাছে নিজেই সরাসরি প্রশ্ন করেছে, মানুষকি এসব দেখে না ?

আবার সুরা নাহল-এর ১২ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে;
"তিনিই তোমাদের কল্যানে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে; আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তারই হুকুমে; অবশ্যই এতে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে রয়েছে নিদর্শন l "
লক্ষ করুন এই আয়াতে কিন্তু উত্তম পুরুষ বা আমি সর্বনাম ব্যবহৃত হয়নি ! বরং এই আয়াত পড়ে মনে হচ্ছে এটি অন্য কেউ বলেছে l এখানে বলা হয়েছে তিনিই (আল্লাহই) তোমাদের (মানুষের) কল্যানে নিয়োজিত করেছেন .... l অর্থাত এই আয়াতটি সরাসরি আল্লাহর নয়; এমনকি কোন মানুষেরও নয় l এই আয়াতটি অন্য কারো l যেহেতু জিব্রাইল (গ্যাব্রিয়েল) ফেরেশতা মুহাম্মদের কাছে আল্লাহর বাণী নিয়ে আসতো সুতরাং এই কথাটি জিব্রাইলের l অর্থাত এটি আল্লাহর বাণী নয় বরং জিব্রাইলের বাণী l আর তাই জিব্রাইল বলছে তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের জন্যে কল্যানে নিয়োজিত করেছেন .... l
যদি এটি আল্লাহর বাণী হয় তবে আল্লাহ কেন বলবে -"তিনিই তোমাদের কল্যানে নিয়োজিত করেছেন .... "? এই তিনিটা তাহলে কে ? আল্লাহ নাকি আল্লাহর সৃষ্টিকর্তা ?
সুতরাং এই আয়াতটি স্বয়ং আল্লাহর নয়; এটি জিব্রাইলের বাণী l

যদি কুরআনের বাণী স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার হয়ে থাকে তাহলে কুরআনের এই আয়াতগুলো কেন উত্তম পুরুষে লেখা হয়নি ? কেন কিছু কিছু আয়াত আল্লাহর উদৃতি দেয়া, কিছু কিছু আয়াত জিব্রায়লেব্র উদৃতি দেয়া আবার কিছু কিছু আয়াত মুহম্মদের উদৃতি দেয়া ? এটা কি সন্দেহের কারণ নয় যে কুরআন আল্লাহর বাণী নয় ? যদি সর্বজ্ঞানী আল্লাহ এই কুরআন লিখতো তবে কুরআনের এই ভুল গুলো থাকতো না l শুধুমাত্র তখনি এই ভুল গুলো থাকা সম্ভব যখন কুরআন মুহাম্মদ নামের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বঞ্চিত কোন স্বাধারণ মানুষের লেখা হবে l
মুহাম্মদ ছিল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বঞ্চিত, মতান্তরে নিরক্ষর l আর তাই মুহাম্মদ কুরআন তৈরী করার সময় এই ভুলগুলো করেছে নিজের অজান্তে l কিন্তু একবার লেখা হয়ে যাবার পড়ে সেটা পরিবর্তন করার মত সুযোগ বা প্রয়োজনীয়তা ছিলনা মুহাম্মদের l আর তাই এই ভুল গুলো থেকে গেছে !

তাই বলা যায় কুরআন আল্লাহ লিখে পাঠায়নি বরং মুহাম্মদ নিজে কুরআনের বাণী তৈরী করেছে l অর্থাত কুরআন আল্লাহর বাণী নয় এটি মুহাম্মদের বাণী l

বিশেষ দ্রষ্টব্য : পোস্টে উল্লেখিত কুরআনের আয়াতগুলো প্রফেসর ড: মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান-এর অনুবাদ থেকে নেয়া হয়েছে l সুতরাং অনুবাদ জনিত ভুলের জন্য লেখক দ্বায়ী থাকবে না !



পৃথিবীর আর দশটা ধর্মের মতই মুসলমানরা দাবী করে তাদের ধর্মগ্রন্থ কুরআন একটি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বা রচিত গ্রন্থ। মুসলমানরা দাবী করে তাদের আরবীয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কুরআন রচনা করে সেই রচনাগুলোকে পর্যায়ক্রমে মুসলমানদের নবী মুহাম্মদের কাছে ফেরেশতা মারফত পাঠিয়েছে। পৃথিবীর আর দশটা ধর্মের মতই মুসলমানরা প্রমাণ দিতে পারে না যে কুরআন আসলেই কোন সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত গ্রন্থ কিনা। যেমন মুসলমানরা প্রমাণ দিতে পারে না কুরআন আসলেই কোন দৈব শক্তিতে মুহাম্মদের কাছে এসেছে কিনা। বরং ইতিহাস সাক্ষি দেয় মুহাম্মদ যা কিছুই সৃষ্টিকর্তার নামে নিজের মুখে বলতো সাহাবাগণ তাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে সেগুলোকে সৃষ্টিকর্তার বাণী বলে মেনে নিত।

কিন্তু মুহাম্মদ বাদে একজনও ছিল না যে মুহাম্মদের দাবীকৃত ফেরেশতা জিব্রাইলকে দেখেছে। কেউ জিব্রাইলকে দেখেনি, কেউ জিব্রাইল নামের অদৃশ্য কারো কথা শুনেনি এমন কি মুহাম্মদ বাদে অন্য কেউ জিব্রাইলের অস্তিত্বের কোন প্রমাণই প্রত্যক্ষ করেনি। শুধু মুহাম্মদ দাবী করেছে তার কাছে এক অদৃশ্য ফেরেশতা আসে এবং কোন শব্দ না করে তার কানে কানে কিছু বানী দিয়ে যায়। সেই বাণীগুলোই মুহাম্মদ তার সাহাবাদের বলে দেয়। সম্পূর্ণ কুরআনই প্রমাণহীন কোন কিছুর নাম করে মুহাম্মদ ব্যক্ত করেছে, আল্লাহর বাণী বলে প্রচার করেছে। অর্থাৎ কুরআন যে কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী এটার প্রমাণ হলো একমাত্র প্রমাণহীন অন্ধবিশ্বাস। মুহাম্মদের প্রতি তার অন্ধ অনুসারীদের অন্ধবিশ্বাস এবং সেসব অনুসারীদের প্রতি পরবর্তী প্রজন্মের মানুষের অন্ধবিশ্বাস। অর্থাৎ কুরআন আল্লাহর বাণী এটার একমাত্র প্রমাণ হলো যুগ যুগ ধরে চলে আসা কিছু মানুষের অন্ধবিশ্বাস। পুরো প্রক্রিয়াটিই দাড়িয়ে আছে প্রমাণহীন অন্ধবিশ্বাসের উপর।



কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী কিনা তার প্রমান যেমন মুহাম্মদ দিতে পারেনি মোটেও ঠিক একই ভাবে মুসলমানরাও আজ পর্যন্ত একটা প্রমাণও হাজির করতে পারেনি কুরআন ঐশী বাণী তার পক্ষে। কোন প্রকারের প্রমাণ না দিতে পেরে মুসলমানরা কিছু অপকৌশল অবলম্বন করে কুরআনকে আল্লাহ নামের আরবীয় সৃষ্টিকর্তার বাণী বলে দাবী করে। তারা কুরআনের নানা রকমের ভূল ভ্রান্তিপূর্ণ আয়াতগুলোকে বিজ্ঞানময় বলে দাবী করে। এভাবে প্রাচীন আরবের এক সাধারণ মানুষের লেখা গ্রন্থকে বিজ্ঞানময় কিতাব বানাতে মুসলমানরা এমন কোন অপকৌশল নেই যা তারা করে না। তবুও তারা তাদের ভূলে ভরা মুহাম্মদের অজ্ঞতা সম্পন্ন গ্রন্থকে বিজ্ঞানময় বানাতে পারেনি। বরং কুরআনের নানা রকমের ভূল ভ্রান্তি মানুষের সম্মুখে আরো বেশি করে উন্মুক্ত হয়েছে। মুসলমানরা যত কুরআনের অর্থকেই বদলে দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাক না কেন, আজ পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই জেনে গেছে কুরআনের নানা প্রকারের ভূল ভ্রান্তি সম্পর্কে। এজন্য মুসলমানরা বিজ্ঞানকে ভূল ভাবে উপস্থাপন করে, কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থ বদলে বিজ্ঞানের অনুকুলে কুরআনের নতুন এবং ভিন্ন অর্থ এনে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানিয়ে প্রচার করে কুরআন বিজ্ঞানময় গ্রন্থ। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো ভূলে ভরা কুরআনের অর্থকে বদলে দিয়ে কুরআনের ভূলকে সংশোধনের মাধ্যমে যে বিজ্ঞানময় কিতাব বানানো হয় সেটি মুহাম্মদ রচিত কুরআন থাকে না। সেটি হয়ে যায় আধুনিক বিজ্ঞান জানা মুসলমানদের দ্বারা সংশোধিত কুরআন। কুরআনের ভূলকে সংশোধন করে এর অর্থকে বদলে দিয়ে একে বিজ্ঞানময় বানানোর কারণেই বরং প্রমাণ হয় যে কুরআন আসলে এক প্রাচীণ আরবের ভ্রান্ত ধারণাগ্রস্থ মানুষের লেখা বই। এজন্যই এর ভূলকে সংশোধন করতে ভিন্ন অর্থ আনতে হয় এবং নতুন নতুন ব্যাখ্যার আমদানী করতে হয়। যদি কুরআন সত্যিই কোন সৃষ্টিকর্তার গ্রন্থ হতো তবে কুরআনের অর্থের পরিবর্তন করতে হতো না। তাও এমন ভাবে অর্থের পরিবর্তন করে যেন সেই নতুন অর্থটি বিজ্ঞানের সাথে হুবহু মিলে যায়। বিজ্ঞানের সাথে মিলিয়ে কুরআনের নতুন অর্থ করায় এটাই প্রমানিত হয় কুরআন আসলে মুহাম্মদের লেখা একটি প্রাচীণ ভ্রান্তির গ্রন্থ। কারণ সৃষ্টিকর্তার গ্রন্থকে অর্থের পরিবর্তনের মাধ্যমে সংশোধন করে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর প্রয়োজন পরে না; যা মুসলমানরা করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানায়।



কুরআন কোন অতিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত গ্রন্থ নয়। বরং কুরআন এক প্রাচীণ আরবের বুকে দাড়িয়ে থাকা অজ্ঞ মানুষের লেখা বই সেটা পৃথিবীর বহু বিখ্যাত জ্ঞানী মানুষেরা প্রমান করে দিয়েছে। আমিও গত সবকটি পর্বে নিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করে দিয়েছি যে কুরআন কোন অতিক্ষমতাবান সৃষ্টিকর্তার রচিত গ্রন্থ নয়। বরং কুরআন মুহাম্মদের মতো এক অজ্ঞ আরবের লেখা বই।

কুরআন মুসলমানদের কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কোন ঐশী গ্রন্থ নয় সেটার আরো একটি প্রমাণ এই পর্বে উপস্থাপন করবো।



প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে বিমোহিত হয়ে যেতো। রাতের কালো আকাশের বুকে ভেসে থাকা মিটি মিটি তারাগুলো আকাশের সুন্দর্য্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে হাজার গুন। ঝিকিমিকি তাঁরাগুলো যেন একেকটি মুক্তা। আর আকাশের বুকে ফুটে উঠা তাঁরাগুলো যেন টিপের মতো সাজ্বিয়ে দেওয়া হয়েছে স্বযত্নে। আকাশের সুন্দর্য যেমন প্রাচীণকালের মানুষদেরকে মুগ্ধ করতো ঠিক সেভাবে আকাশের ঝিকিমিকি তাঁরাগুলোর রহস্য তাদের কাছে ছিল অজানা। তারা চিন্তা করে পেতো না আকাশের বুকে এতো সুন্দর মুক্তগুলো কিভাবে সাজানো হযেছে? তারা এসবের উত্তর জানতো না। তাদের জানার সাধ্যও ছিল না। কিন্তু তাদের অনুসন্ধিগ্ন মন তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজে নিজে কল্পনা করে নিতো। তারা ভাবতো আকাশের তাঁরাগুলোকে কেউ একজন অতি যত্নে টিপের মতো করে লাগিয়ে দিয়েছে। আর ছোট ছোট তাঁরকাগুলো লাগানো হয়েছে ছাদের মতো আকাশের গায়ে। আকাশকে যেমন ছাদ বা তাবুর মতো মনে হয় ঠিক একই ভাবে তারকাগুলোকেও মুক্তার মতো মনে হয়। প্রাচীণ কালের মানুষ কল্পনা করে নিয়েছিলো তারকাগুলো এক একটি মুক্তার মতো। তারকাগুলো ছাদ বা তাবুর মতো আকাশের গায়ে লাগিয়ে আকাশের সুন্দর্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এমনটাই বিশ্বাস করতো প্রাচীণকালের মানুষগুলো।

প্রাচীণ আরবের মানুষগুলোও আকাশ এবং তারকাগুলো সম্পর্কে এমনটাই বিশ্বাস করতো। কুরআনের প্রবর্তক (বা রচয়িতা) মুহাম্মদের আকাশ ও তারকাগুলো সম্পর্কে ধারণাগুলোও প্রাচীণ মানুষের মতই ছিল। মুহাম্মদও মনে করতো আকাশ হলো ছাদের মতো বা তাবুর মতো কোন কিছু। আসলে আকাশকে খালি চোখে দেখলে সবার কাছেই ছাদ বা তাবুর মতই দেখায়। আর মুহাম্মদও প্রাচীণ মানুষদের মতই বিশ্বাস করতো তারকাগুলো এক একটি ঝিকিমিকি মুক্তার মতো কিছু একটা। মুহাম্মদ তারকাগুলো সম্পর্কে তার ধারণাগুলোকে কুরআনে বর্ণনা করেছে নানা ভাবে। কুরআনে আকাশ ও তারকা সম্পর্কিত আয়াতগুলো দেখলে বুঝা যায় আকাশ বা তারকাগুলো সম্পর্কে মুহাম্মদ কেমন ধারণা রাখতো। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মুহাম্মদের চিন্তা ধারা বর্ণিত হয়েছে স্পষ্ট করে।

কুরআনে বর্ণিত মুহাম্মদের তারকা সম্পর্কিত ধারণাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখবো মুহাম্মদের বর্ণিত ধারণাগুলো কি সত্যি নাকি মুহাম্মদ তার প্রাচীণ অজ্ঞতাগুলোকেই কুরআনে লিপিবদ্ধ করে রেখেছে?



কুরআনের সূরা আত্ব তারিক-এর ১-৩ নং আয়াতে বর্ণিত আছে,

"শপথ আকাশের এবং রাত্রিতে যা প্রকাশ পায়;

তুমি কি জান রাত্রিতে যা প্রকাশ পায় তা কি ?

ওটা দীপ্তিমান নক্ষত্র!" (অনুবাদ - প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

এই আয়াতগুলোতে তারকাগুলো সম্পর্কে মুহাম্মদের ধারণার প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে। কুরআনে আল্লাহ আকাশ ও রাতে প্রকাশিত তারকাগুলোর কসম কেটেছে। পক্ষান্তরে বলা যায় মুহাম্মদ তারকার কসম কাটছে। কারণ কসম কাটা মানুষের স্বভাব। কোন সৃষ্টিকর্তা কসম কাটবে তাও আবার তুচ্ছ তারকার সেটা মেনে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

এই আয়াতটিতে একটি বিষয় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে মুহাম্মদ তারকাগুলোকে চাঁদের মতো দীপ্তিমান বলেছে। অর্থাৎ মুহাম্মদ বুঝতে পেরেছিল যে তারকাগুলো আসলে আলো প্রদান করে। তবে কি এটি কোন বৈজ্ঞানিক দাবী ছিল? আসলে প্রাচীণ কাল থেকেই মানুষ দেখে এসেছে রাতের আকাশের তারকাগুলো দীপ্তিমান। সুতরাং এটা একটি সাধারণ মানুষের কথা ছাড়া আর কিছুই নয়।



সূরা ফুরকানের ৬১ নং আয়াতে আছে,

"কত মহান তিনি যিনি আকাশে সৃষ্টি করেছেন বড় বড় তারকাপুঞ্জ এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ (সূর্য) ও জ্যোতির্ময় চন্দ্র! (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

এই আয়াতে আকাশে তারকা, সূর্য ও চন্দ্রের জন্য আল্লাহকে মহান বলা হয়েছে। সাথে এও বলা হয়েছে  চন্দ্র আলো প্রদান করে তথা চাঁদের নিজের আলো রয়েছে।



উপরের আয়াত দুটো দিয়ে বুঝা গেলো মুহাম্মদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আকাশে তারকাগুলোকে স্থাপন করেছে। কিন্তু কি উদ্দেশ্য আকাশে তারকাগুলোকে সৃষ্টি করার ? সূর্যকে না হয় দিনের আলোর জন্য এবং চাঁদকে না হয় রাতের আলোর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু তারকাগুলোকে সৃষ্টি করার কারণটি কি ?



এর উত্তর স্বয়ং কুরআন লেখক কুরআনে দিয়ে দিয়েছে। সূরা ক্বাফ-এর ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

"তারা কি তবে তাদের উপরকার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না - আমরা কেমন করে তা তৈরি করেছি এবং তাকে সুশোভিত করেছি, আর তাতে কোনো ফাটলও নেই ?" (অনুবাদ - ডঃ জহুরুল হক)



বুঝা গেলো আকাশকে সুশোভিত করার জন্য অর্থাৎ সাজানোর জন্য তারকাগুলোকে সৃষ্টি করা হযেছে। বড় কথা হলো যে আকাশে তারকাগুলোকে স্থাপন করা হয়েছে সেই আকাশের গায়ে একটি ফাটলও নেই। অবাক করা কান্ড, আকাশ যে একটি কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি এবং তাতে একটি ফাটল পর্যন্ত নেই তা কুরআন না পড়লে আমরা জানতেই পারতাম না! সত্যি মুহাম্মদের আকাশ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে এই আয়াতটিতে। মুহাম্মদও বিশ্বাস করতো আকাশ ঘরের ছাদের মতো এবং তাতে কোন ফাটল নেই।



তারকাগুলোকে সৃষ্টি করা হযেছে আকাশের সুন্দর্যের জন্য এই তথ্যটি আরো বর্ণিত রয়েছে সূরা হা মীম আস সাজদা-এর ১২ নং আয়াতে;

"(এই) একই সময়ে তিনি দুদিনের ভেতর এ (ধূম্রকুঞ্জ)-কে সাত আসমানে পরিণত করলেন এবং প্রতিটি আকাশে তার (উপযোগী) আদেশনামা পাঠালেন; পরিশেষে আমি নিকটবর্তী আসমানকে তারকারাজি দ্বারা সাজিয়ে দিলাম এবং (তাকে শয়তান থেকে) সংরক্ষিত করে দিলাম, এসব (পরিকল্পনা) অবশ্যই পরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক (আগে থেকেই) সুবিন্যস্ত করে রাখা হয়েছিল।" (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)

এই আয়াতে যেমন বলা হয়েছে তারকাগুলোকে আকাশকে সাজিয়ে দেবার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু তাই নয় বরং আরো বর্ণিত হয়েছে আকাশ আসলে সাতটা। মুসলমানদের আরবীয় সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ দাবী করছে আকাশ একটা নয় বরং আকাশ হলো সাতটা অর্থাৎ সাতটা কঠিন পদার্থের ছাদের মতো শক্ত আকাশ। এই সাতটা আকাশের মধ্যে তারকাগুলোকে সব চেয়ে নিচের আকাশে স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় আকাশকে শয়তানদের থেকে সংরক্ষিত করেও দেওয়া হয়েছে। মোট কথা আকাশ হলো সাতটা যা আসলে বাস্তবতা বহির্ভূত ভ্রান্ত দাবী এবং তারকাগুলো সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হলো আকাশের সুন্দর্য্য বৃদ্ধি করা।



তাঁরাগুলোকে যে আকাশের সুন্দর্য্য রক্ষার্থেই সৃষ্টি করা হয়েছে তার প্রমাণ আরো একটি আয়াতে রয়েছে। কুরআনের সূরা আস-সাফফাত-এর ৬ নং আয়াতে আছে;

"নিঃসন্দেহে আমরা নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির শোভা দিয়ে সুশোভিত করেছি," (অনুবাদ - ডঃ জহুরুল হক)

অর্থাৎ নিশ্চিত ভাবেই তারকাগুলো সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য আকাশের সুন্দর্য বৃদ্ধি করা। অর্থাৎ আকাশকে সুন্দর করে সাজাতেই তারকাগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে।



এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারকাগুলোকে কি শুধুমাত্র আকাশের সুন্দর্য বাড়াতেই সৃষ্টি করা হয়েছে, নাকি এদের অন্য কোন উদ্দেশ্য রয়েছে ? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা পাবো সূরা নাহলের ১৬ নং আয়াতে;

"আর পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও; এবং ওরা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়।" (অনুবাদ - প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

এই আয়াত অনুযায়ী তারকাগুলোকে শুধু আকাশের সুন্দর্য বাড়াতেই সৃষ্টি করা হয়নি বরং তারাকাগুলো দেখে যেন মানুষ পথের দিক নির্ণয় করতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্যই তারকাগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে।



তারকাগুলোকে যে পথ নির্ধারক চিহ্ন হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় সূরা আন আম-এর ৯৭ নং আয়াতে;

"আর তিনিই তোমাদের জন্যে নক্ষত্ররাজিকে সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা এগুলোর সাহায্যে অন্ধকারে পথের সন্ধান পেতে পার, স্থলভাগেও এবং সমুদ্রেও; নিশ্চয়ই আমি প্রমাণসমূহ খুব বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি ঐসব লোকের জন্যে যারা জ্ঞান রাখে।" (অনুবাদ – প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

এই আয়াতে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে নক্ষত্রগুলোকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হলো এগুলোর সাহায্যে যাতে রাতের অন্ধকারে মানুষ পথের সন্ধান পায়। স্থলের এবং জলের সব জায়গাতেই যেন মানুষ অন্ধকারে পথের দিক নির্দেশ পায় সেজন্যই তারকাগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাৎ তারকাগুলোকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হলো তারকাগুলো আকাশে স্থাপন করে আকাশের সুন্দর্য বৃদ্ধি করা এবং এগুলোর সাহায্যে যাতে মানুষ পথের সন্ধান পায় সেই ব্যবস্থা করা।



এখন প্রশ্ন হলো, তারকাগুলো সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য কি শুধু আকাশের সুন্দর্য বৃদ্ধি করা এবং পথ নির্দেশ পাওয়াই; নাকি এগুলো সৃষ্টি করার অন্য কোন উদ্দেশ্য রয়েছে ? এর উত্তর রয়েছে সূরা আল মুলক-এর ৫ নং আয়াতে,

"নিকটবর্তী আকাশটিকে (তুমি দেখো, তাকে কিভাবে) প্রদীপমালা দিয়ে আমি সাজিয়ে রেখেছি, (উর্ধ্বলোকের দিকে গমনকারী) শয়তানদের তাড়িয়ে বেড়ানোর জন্যে এ (প্রদীপগুলো)-কে আমি (ক্ষেপনাস্ত্র হিসেবে) সংস্থাপন করে রেখেছি, (চুড়ান্ত বিচারের দিন) এদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডলীর ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থাও আমি (যথাযথভাবে) প্রস্তুত করে রেখেছি।" (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)

এই আয়াত অনুযায়ী আমরা জানতে পারছি, তারকাগুলোকে শুধু আকাশের সুন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়নি বরং এগুলো সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হলো শয়তানদেরকে তাড়িয়ে বেড়ানো এবং এগুলোকে শয়তানদের তাড়াতে ক্ষেপনাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে। অর্থাৎ তারকাগুলো হলো এক একটি আগুনের গোলা। এই আগুনের গোলাগুলো দিয়ে শয়তানদের তাড়িয়ে বেড়ানো হয় এবং ক্ষেপনাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।



তারকাগুলোকে আগুনের গোলা হিসেবে শয়তানদের শাস্তি দেবার জন্য বানানো হয়েছে এটার প্রমাণ পাওয়া যায় কুরআনের আরেকটি আয়াতে। কুরআনের সূরা হিজর-এর ১৬-১৮ নং আয়াতে বর্ণিত আছে,

"আকাশে আমি গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং ওকে করেছি সুশোভিত দর্শকদের জন্যে।

প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হতে আমি ওকে রক্ষা করে থাকি।

আর কেউ চুরি করে সংবাদ শুনতে চাইলে ওর পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা।" (অনুবাদ-প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

এই আয়াতে বলা হয়েছে তারকাগুলোকে আকাশকে সুশোভিত করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এগুলোকে শয়তানদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বা চুরি করে শয়তানরা কোন কথা শুনতে চাইলেই তারকাগুলো আগুনের গোলা হয়ে তাদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়।



এই আয়াতটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত আকাশ ও তারকাগুলো সম্পর্কে মুহাম্মদের ধারণা প্রমাণ করার জন্য। মুহাম্মদ মনে করতো আকাশ হলো ঘরের ছাদের মতো শক্ত কঠিন পদার্থের তৈরি। এবং এই আকাশের গায়ে আগুনের গোলার মতো তারকাগুলোকে স্থাপন করা হয়েছে। যখন কোন শয়তান ছাদ আকৃতির আকাশের উপরের কোন খবর শুনার চেষ্টা করে তখন এই তারকাগুলোকে নিক্ষেপ করা হয়। এই আগুনের গোলা তারকাগুলো শয়তানকে তাড়িয়ে বেড়ায় এবং তাদের হাত থেকে আকাশের উপরের বিষয়গুলোকে রক্ষা করে। শয়তানরা শক্ত কঠিন আকাশের উপরের খবর শুনতে পারে না। কিন্তু তারা আকাশের উপরের খবরগুলো শুনার জন্য চেষ্টা করে যেতে থাকে। যখনই তারা কোন খবর শোনার চেষ্টা করে সাথে সাথে তারকাগুলো তাদের পিছনে ধাওয়া করে আগুনের গোলার মতো ক্ষেপনাস্ত্র হিসেবে।



মুহাম্মদের আকাশ, তারকা সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয় কুরআনের সুরা সাফফাতের ৬ থেকে ১০ নং আয়াতগুলো পড়লে।

""আমি পৃথিবীর আকাশকে নক্ষত্ররাজির শোভা দ্বারা সুশোভিত করেছি । এবং রক্ষা করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান হতে । ফলে, তারা ঊর্ধ্ব জগতের কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং তাদের প্রতি (জলন্ত তারকা) নিক্ষিপ্ত হয় সকল দিক হতে, বিতাড়নের জন্যে এবং তাদের জন্যে আছে অবিরাম শাস্তি । তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তাদের পশ্চাদ্বাবন করে ।" (অনুবাদ-প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)



এই আয়াতটিতে স্পষ্ট করেই বুঝানো হচ্ছে আকাশ হলো কঠিন পদার্থের তৈরি একটি ছাদ বিশেষ। এজন্যই আকাশের উপরের কোন কিছু শুনা যায় না। শয়তান আকাশের উপরের কথা বার্তা শুনার জন্য প্রায়ই চেষ্টা চালায়। কিন্তু যখন তারা কিছু শুনতে যায় তখন আগুনের গোলার মতো তারকাগুলো তাদেরকে তাড়া করে সেখান থেকে বের করে দেবার জন্য। এমনিতেই শয়তান কিছু শুনার সুযোগ পায় না কিন্তু কখনও যদি চুরি করে কিছু শুনে ফেলে সাথে সাথে তাদেরকে পিছু ধাওয়া করে জ্বলত্ব উল্কাপিন্ড তথা খসে পড়ে তারকা।



উপরের আয়াতগুলো থেকে মুহাম্মদের আকাশ ও তারকাপুঞ্জ সম্পর্কে ধ্যাণ ধারণা স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। আসলে মুহাম্মদ আকাশ ও তারকাগুলো সম্পর্কে প্রাচীণকালের মানুষের ভ্রান্ত ধারণাগুলোকেই সত্য বলে মনে করতো। আর তাই সে এসব ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে সত্য মনে করে কুরআনে লিখে দিয়েছে। যা প্রমাণ করে কুরআন আসলে মুহাম্মদের নিজের রচিত গ্রন্থ।



আকাশে মাঝে মাঝে দেখা যায় তারকার মতো আগুনের গোলা ছুটে যায়। দেখে মনে হয় তাঁরাগুলো যেন মাঝে মাঝে খসে পড়ে যায়! এটা মুহাম্মদও দেখেছিল জীবনে অসংখ্যবার। আর খসে পড়া তাঁরাগুলোকে দেখে মুহাম্মদ ভেবেছে এই খসে পড়া তাঁরাগুলো বুঝি আকাশে মিটিমিটি করে জ্বলা তারকাগুলোই। আসলে তারকাগুলো যে আমাদের সূর্যের মতোই একেকটি বিশাল আকৃতির নক্ষত্র এই তথ্যটি মুহাম্মদের মতো এক প্রাচীণ অজ্ঞ মানুষের জানার কথা নয়। অথচ মুহাম্মদের অনেক আগেই গ্রীক দার্শনিকদের অনেকেই জানতে পেরেছিল যে তারকাগুলো আসলে বিশাল আকৃতির এক একটি সূর্য। কিন্তু মুহাম্মদ আরবের এক সাধারণ অজ্ঞ মানুষ হওয়ায় এসব তথ্য জানতো না। তাই সে উল্কা পিন্ড থেকে বিচ্ছুরিত আলো দেখে সেগুলোকে তারকা ভেবেছে। আর মনে করেছে তারকাগুলো ছোট ছোট মুক্তার মতো আগুনের গোলা। মুক্তার মতো এই আগুনের গোলাগুলোকে আকাশের সুন্দর্য রক্ষার্থে আকাশে স্থাপন করা হয়েছে। যা দেখে মানুষ পথের দিক নির্দেশনা পায়। এসব মুক্তার মতো আগুনের গোলাগুলো শয়তানদের তাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয় এবং শয়তানরা যখন আকাশের উপরে ফেরেশতাদের বলা কথা চুরি করে শুনতে যায় তখন এই আগুনের গোলাগুলো আকাশ থেকে খসে পড়ে এবং শয়তানদের তাড়া করে বেড়ায়। এসময়ই মানুষ খসে পড়া তাঁরাগুলো দেখতে পায়।

অথচ মুহাম্মদ জানতো না যে খসে পড়া তারকাগুলো প্রকৃতপক্ষে কোন তারকা নয়। আর তারকাগুলোর আকৃতি এতো বিশাল যে এগুলো দিয়ে শয়তানদের পিছু ধাওয়া করার কথা কল্পনা করাটাও হাস্যকর।

আকাশ কোন কঠিন পদার্থের তৈরি ছাদ নয়। কুরআনে যেভাবে আকাশের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যে কেউ আকাশের সীমানার বাইরে যেতে পারে না, ছাদের মতো আকাশের উপরের সংবাদ শুনার ধারণা করা, এবং শয়তানদের পিছনে তারকাগুলোর পিছু ধাওয়া করা, এসবগুলোই অজ্ঞ মুহাম্মদের ভ্রান্ত ধারণা। এর সাথে বাস্তবতার কোনই মিল নেই। শয়তান এবং ফেরেশতা বলতে বাস্তব জগতে যেমন কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই ঠিক একই ভাবে শয়তান ছাদের মতো আকাশের উপরের কোন কথা চুরি করে শুনার ধারণাগুলো আসলে রুপকথার গল্পকথার মতো। এর অস্তিত্ব বাস্তব জগতে নেই। আসলে মুহাম্মদ এসব ফেরেশতা ও শয়তানের ভ্রান্ত বিশ্বাস গুলো মানুষের মুখে শুনে শুনে বিশ্বাস করেছে। তাই তার ধারণা হয়েছে শয়তান কঠিন আকাশের উপরের খবরগুলো যখন শুনার চেষ্টা করে তখনই তারকাগুলো তাদের পিছু ধাওয়া করে। মোট কথা মুহাম্মদ যেসব ভ্রান্ত ধারণা সেসময়ের মানুষের কাছ থেকে পেয়েছে এবং আকাশ ও তারকাগুলোকে যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছে ঠিক সেভাবেই সে আকাশ ও তারকার ধারণাগুলো তৈরি করেছে সম্পূর্ণ নিজের মতো করে। আর সেসব ভ্রান্ত বিশ্বাসগুলোই কুরআনে লিখে দিয়েছে।



এর প্রমান পাওয়া যায় যখন মুহাম্মদ বর্ণিত কুরআনে আকাশ, তারকা এবং শয়তানের এমন উদ্ভট গল্প কথার উল্লেখ থাকে। তারকাগুলো খসে পড়া তাঁরা নয়। আকাশ শক্ত কঠিন পদার্থের তৈরি ছাদ নয় তাই এর কোন ফাটল থাকারও কথা নয়। শয়তান বলে কেউ নেই তাই এর পিছনে আগুনের গোলার পিছু ধাওয়ার ধারণাটি পুরোপুরিই অবাস্তব এবং হাস্যকর। এসব ভ্রান্ত ধারণাগুলোর অস্তিত্ব থাকায় প্রমাণ হয় কুরআন কোন অতিক্ষমতাবাণ সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে না। বরং কুরআন মুহাম্মদের মতো প্রাচীণ আরবীয় অজ্ঞ মানুষের লেখা প্রাচীণ ধ্যান ধারণার গ্রন্থ, এটাই প্রমাণিত হয়।



মুহাম্মদের মেরাজের গল্পে আমরা দেখতে পাই আকাশের সীমানা পার হবার জন্য প্রত্যেক আকাশে প্রহরী ফেরেশতা থাকে। তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আকাশের উপরে উঠতে হয়। কুরআনেও বলা হয়েছে কেউ আকাশের বাইরে যেতে পারবে না অনুমতি ব্যতীত (সুরা আর রাহমান- আয়াত ৩৩)। এভাবে কুরআনের শয়তানও আকাশের উপরের কোন কথা শুনতে পারে না। কারন শুনতে গেলেই তারকাগুলো আগুনের গোলোর মতো নিক্ষিপ্ত হয় শয়তানদের তাড়িয়ে দেবার জন্য।

এসব ভ্রান্ত ধারণাগুরো মুহাম্মদ মনে প্রাণে বিশ্বাস করতো বলেই কুরআনে এসব ভ্রান্ত ধারণাগুলো লিখে দিয়েছে। যা প্রমান করে কুরআন আসলে মুহাম্মদের নিজের লেখা বই।



আকাশ ও নক্ষত্র সম্পর্কিত কুরআনের ভ্রান্ত ধারণাগুলো যেমন প্রমাণ দেয় কুরআন আল্লাহ নামের কোন সৃষ্টিকর্তার গ্রন্থ নয় ঠিক তেমনি নক্ষত্রে সম্পর্কিত আরো কিছু আয়াত আছে যা প্রমাণ দেয় কুরআন আসলে মুহাম্মদের লেখা গ্রন্থ।

কুরআনের সূরা আন নাহল-এর ১২ নং আয়াতে আছে;

"আর তিনি তোমাদের জন্য সেবারত করেছেন রাত ও দিনকে, আর সূর্য ও চন্দ্রকে। আর গ্রহনক্ষত্রও অধীন হয়েছে তাঁর বিধানে। নিঃসন্দেহ এতে নিশ্চয়ই নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা জ্ঞানবুদ্ধি রাখে।" (অনুবাদ - ডঃ জহুরুল হক)

এই আয়াত অনুযায়ী সূর্য, চন্দ্রের মতো নক্ষত্রের জন্যও কিছু বিধান বা নিয়ম কানুন রেখেছে। কি সেই বিধান সেটা জানতে পারা যায় কুরআনের অন্য কিছু আয়াতে।



কুরআনের সূরা নাজমের ১ নং আয়াতে বর্ণিত আছে;

"নক্ষত্রের শপথ যখন তা ডুবে যায়," (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ) 

এই আয়াত থেকে আমরা জানতে পারছি তারকাগুলোও সূর্য ও চন্দ্রের মতো ডুবে যায় বা অস্ত যায়। অর্থাৎ কুরআন বলছে সূর্য ও চাঁদ যেভাবে প্রতিদিন উদিত হয় এবং অস্ত যায় ঠিক একই ভাবে তারকাগুলোও অস্ত যায়।



এর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় কুরআনের সূরা আত্ব-তূর-এর ৪৯ নং আয়াতে;

"রাতের একাংশেও তুমি তাঁর তাসবীহ পাঠ করো, আবার (রাতের শেষে) তারাগুলো অস্তমিত হবার পরও (তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করো)। (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)  

এই আয়াতটি স্পষ্ট বলছে রাতের শেষে তারকাগুলো অস্ত যায়। সূর্য যেমন সন্ধায় অস্ত যায় এবং চাঁদ যেমন সকালে অস্ত যায় ঠিক একই ভাবে তারকাগুলোও সকাল বেলায় বা ভোর বেলায় অস্ত যায়।



 একই কথা আছে কুরআনের সূরা ওয়াকি'আহ্ (ওয়াক্বিয়া), আয়াত ৭৫ নাম্বারে;

"আমি শপথ করছি নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের," (অনুবাদ-প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান) 

অর্থাৎ তারকাদের একটি অস্তাচল আছে; যেভাবে সূর্য ও চন্দ্রের অস্তাচলের কথা কুরআন দাবী করেছে। কুরআনের এই আয়াত অনুযায়ী তারকাদেরও সুর্য় ও চন্দ্রের মতো একটি অস্তাচল রয়েছে এবং তারকাগুলো সূর্য চাঁদের মতোই অস্ত যায়।

আমরা বর্তমানে জানি যে নক্ষত্রগুলো একেকটি সূর্যের মত এবং সূর্যের চেয়েও বড় আকৃতির সূর্য। আমাদের সূর্যটিও একটি নক্ষত্র। কিন্তু কুরআন দাবী করেছে তারকাগুলো হলো আকাশের সুন্দর্য বাড়ানোর জন্য ও পথের নির্দেশ পাবার জন্য স্থাপিত মুক্তার মতো আলোর গোলা। যা আকাশে মিটিমিটি জ্বলতে থাকে এবং শয়তানদের পিছনে ধাওয়া করে মাঝে মাঝে। অর্থাৎ আকাশের তারাগুলোও যে এক একটি বিশাল আকৃতির সূর্যের মতো নক্ষত্র এটি কুরআন লেখক জানতো না। এজন্যই এসব অর্থহীন ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে কুরআনকে ভরিয়ে তুলেছে। যদি কুরআন লেখক জানতো যে তারকাগুলো কোন আগুনের গোলা নয় এবং এগুলোকে সুন্দর্য বাড়ানোর জন্য বা পথের নির্দেশক বানানো হয়নি তাহলে এসব অর্থহীন ভ্রান্ত ধারণার কথা কুরআনে লিখে দিতো না। নক্ষত্রগুলো কখনও অস্ত যায় না। সূর্যের আলোর তীব্রতায় নক্ষত্রগুলোকে শুধুমাত্র দেখা যায় না। এসব বৈজ্ঞানিক তত্বকথা মুহাম্মদের মতো প্রাচীণ মানুষের জানা সম্ভব ছিল না। এজন্যই সে তারকাগুলো সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা রাখতো; যা সেসময়ের সাধারণ অজ্ঞ মানুষগুলো বিশ্বাস করতো; সেগুলো মুহাম্মদও সত্য বলে বিশ্বাস করতো্। এজন্যই সে এসব ভ্রান্ত ধারণা কুরআনে লিখে দিয়েছে। যা প্রমাণ হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে যে কুরআন আসলে অতিক্ষমতাবাণ কোন সৃষ্টিকর্তা রচিত গ্রন্থ নয় বরং কুরআন হলো মুহাম্মদের নিজের রচিত একটি প্রাচীণ ভ্রান্তিপূর্ণ গ্রন্থ। তাই সে নক্ষত্রের অস্ত যাবার কথা কুরআনে উল্লেখ করেছে যেভাবে সে নক্ষত্রকে আগুনের গোলা মনে করেছে সেরকম ভাবে।



মুহাম্মদ যে উল্কাপিন্ডকে মনে করতো তারকা বা নক্ষত্র তার প্রমান পাওয়া যায় নিচের আয়াতে।

সূরা আত্ তাকভীর, আয়াত ১৫-১৬,

"শপথ সেসব তারকাপুঞ্জের যা (চলতে চলতে) গা ঢাকা দেয়,

(আবার) যা (মাঝে মাঝে) অদৃশ্য হয়ে যায়, (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)  

এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে তারকাকে চলতে চলতে গা ঢাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা মাঝে মাঝে অদৃশ্য হয়ে যায়। অর্থাৎ কুরআন লেখক উল্কাপিন্ডকে তারকা ভাবতো।

আমরা জানি তারকা কখনই আলো দেওয়া বন্ধ করে না। কুরআন যেভাবে দাবী করেছে কিছু কিছু তারকা চলতে থাকে এবং অদৃশ্য হয়ে যায় এরকম কোন তারকার অস্তিত্ব বাস্তব জগতে নেই। বরং কুরআন লেখক উল্কাপিন্ডকে তারকা ভেবেছে। কারণ উল্কাপিন্ডই একবার জ্বলে এবং একবার অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনকি উল্কাপিন্ডই চলতে থাকে। কোন তারকাই উল্কাপিন্ডের মতো চলতে থাকে না এবং মাঝে মাঝে অদৃশ্যও হয় না। স্পষ্টতই কুরআন লেখক জানতো না যে উল্কাপিন্ড আসলে তারকা নয়। অর্থাৎ স্পষ্ট ভাবেই এই আয়াতটি প্রমান দিচ্ছে কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী নয়।



কুরআন যে কোন সৃষ্টিকর্তার বানী নয় তার আরো কিছু প্রমাণ-

কুরআনের সূরা আরাফের ৫৪ নং আয়াতে আছে;

"... সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজী সবই তাঁর হুকুমের অনুগত, ..." (অনুবাদ - প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্রের মতো তারকাগুলোও আল্লাহর হুকুমে চলে।



কুরআনের সূরা ইনফিতার-এর ১ ও ২ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

"যখন আকাশ ফেটে যাবে,

যখন তারকারাজী বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে, " (অনুবাদ-প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান) 

এই আয়াতে কিয়ামতের কথা বলা হয়েছে। যখন কেয়ামত আসবে তখন তারকাগুলো আকাশ থেকে ঝরে পরবে। অর্থাৎ কুরআন লেখক ভেবেছে তারকাগুলো ছাদের মতো আকাশের গায়ে টিপের মতো স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু যেদিন কেয়ামত আসবে সেদিন আকাশ ভেঙ্গে যাবে এবং এরফলে তারকাগুলো ঝরে পড়বে। আসলে কুরআন লেখকের কোন ধারণাই ছিল না যে বিশাল আকৃতির নক্ষত্রগুলোর পক্ষে পৃথিবীর উপর ঝরে পড়া কখনই সম্ভব নয়। আমরা যেমন ঘরের ছাদে কাগজের তারকা লাগিয়ে দেই এবং সেগুলো ঝরে পড়ে ঠিক একই ভাবে কিয়ামতের দিন তারকাগুলোও আকাশের গা থেকে ঝরে পড়বে। কুরআন লেখক যে কত বড় অজ্ঞ একজন ব্যক্তি এটা এই আয়াতটি দ্বারাই স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে। কুরআনের লেখকের কোন ধারণাই ছিল না তারকাগুলো সম্পর্কে।



কুরআনের সূরা আল মোরসালাত-এর ৮-৯ নং আয়াতে আছে;

"যখন আকাশের তারাগুলোকে জ্যোতিহীন করে দেয়া হবে,

যখন আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে," (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ) 

অর্থাৎ কেয়ামতের দিন আকাশ ভেঙ্গে যাবে এবং তখন তারকাগুলো নিভে যাবে।

কুরআন লেখক তারকাগুলো সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখতো না। পৃথিবী ও আমাদের সূর্য যদি ধ্বংসও হয় তবুও সমস্ত তারকাগুলো ধ্বংস হবে না। কারণ তারকাগুলো একেকটি সূর্যের মতো নক্ষত্র। বিশ্বজগতের অনেক তারকাই ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে কিন্তু পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে যায়নি। আবার সূর্য ও পৃথিবী যদি ধ্বংস হয়েও যায় তখনও বাকী তারকাগুলো অক্ষত থাকবে এবং আলো দিতে থাকবে। কারণ সেসমস্ত তারকাগুলো পৃথিবীর ধ্বংসের সাথে সম্পর্কিত নয়।



কুরআন লেখক এসব বিষয় সম্পর্কে ছিল সম্পূর্ণই অজ্ঞ। তার তারকা সম্পর্কিত ধারণাগুলো ছিল প্রাচীণ আরবের সাধারণ মানুষের ভ্রান্ত ধারণার মতো। কুরআন লেখকও ততকালীন আরবের অজ্ঞ মানুষদের মতোই বিশ্বাস করতো আকাশ হলো ছাদ এবং তারকাগুলোকে তার গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে আকাশের সুন্দর্যের জন্য এবং মানুষ যাতে অন্ধকারে পথের দিক নির্দেশ পায় সেজন্য। কুরআন লেখক এসব ভ্রান্ত প্রাচীণ ধ্যান ধারণা রাখতো বলেই কুরআনে এমন অবৈজ্ঞানিক ও অবাস্তব ধারণাগুলো লিখে দিয়েছে।

কুরআন লেখক আকাশ ও তারকাগুলো সম্পর্কে কোন বাস্তব ধারণাই রাখতো না বলে সে জানতো না যে তারকাগুলো একেকটি সূর্য বা সূর্যের মতো নক্ষত্র। তাই সে দাবী করেছে নক্ষত্রগুলো আকাশের সুন্দর্য বৃদ্ধি এবং পথ নির্দেশের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং নক্ষত্রগুলোকে আগুনের গোলার মতো কিছু বলে দাবী করেছে কুরআন লেখক যা বিজ্ঞান ও বাস্তবতা বিরোধী ধারণা। কারণ নক্ষত্রগুলো কোন আগুনের গোলা নয় যে সেগুলো দিয়ে শয়তানকে তাড়া করা যায়। আসলে কুরআন লেখক ছিল প্রাচীণ ভ্রান্ত ধারণার একজন অজ্ঞ মানুষ। এজন্য সে সেসময়ের ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করে কুরআনে লিখে দিয়েছিল। যদি কুরআন লেখক জানতোই যে নক্ষত্রগুলো একেকটি সূর্যের চেয়েও বড় কিছু তবে এসব ভ্রান্ত ধারণার কথাগুলো কুরআনে লিখে দিতো না। একটি বিশাল আকৃতির নক্ষত্র একটি ক্ষুদ্র আকৃতির শয়তানের পিছনে ধাওয়া করছে তাও আবার পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের কাছে সেটি কল্পনা করতেই হাস্যকম মনে হয়। অথচ কুরআনের লেখক এরকম একটি হাসকর কথা বলে নিজেকে সর্বজ্ঞানী বলে দাবী করেছে।



নক্ষত্রগুলো কখনও নিভে যায় না বা অস্ত যায় না যেমনটা কুরআন লেখক দাবী করেছে। বরং সব সময়ই এগুলো একই রকমে আকাশে অবস্থান করে। কিন্তু কুরআন লেখক ভেবেছে সে যেভাবে সূর্য ও চন্দ্রকে প্রতিদিন উদিত হতে দেখে এবং অস্ত যেতে দেখে সেভাবেই বুঝি সূর্য ও চন্দ্র প্রতিদিন অস্ত যায়। এবং সে সেটা দেখে ধারণা করেছে সূর্য ও চন্দ্রের মতো তারকাগুলোই বুঝি অস্ত যায়। প্রাচীণ আরবের মরুভূমির বুকে দাড়িয়ে একজন মানুষের সূর্য ও চন্দ্রের অস্ত যাওয়া পর্যবেক্ষন করা এবং তা থেকে নক্ষত্রগুলোর অস্ত যাবার ধারণা করাটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। ফলে কুরআনের লেখকও এরকমটিই ধারণা করেছিল এবং সেটাই কুরআনে লিখে দিয়েছিল। ফলে এসব প্রাচীণ ধ্যাণ ধারণার তারকা সম্পর্কিত বাণীগুলো কুরআনে লিখিত থাকায় এটা নিশ্চিত ভাবেই প্রমাণিত হয় যে কুরআন একজন প্রাচীণ আরবের মরুভূমিতে দাড়িয়ে থাকা মানুষের লেখা বই। কুরআনে এসব ভ্রান্তিকর ধারণা লেখা থাকায় প্রমাণিত হয় কুরআন কোন অতিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার লেখা গ্রন্থ নয়।

যেহেতু কুরআনের প্রতিটি বাণীই মুহাম্মদের মুখ নিঃসৃত বাণী তাই প্রমানিত হয় কুরআন হলো মুহাম্মদ নামের এক প্রাচীণ আরবীয় অজ্ঞ মানুষের রচিত গ্রন্থ।

অর্থাৎ কুরআন আল্লাহর বাণী নয় বরং কুরআন মুহাম্মদের বাণী। (প্রমানিত)



বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ভূলে ভরা প্রাচীণ ভ্রান্ত ধারণার গ্রন্থ কুরআনের ভূলগুলো দেখে যখন মানুষ বুঝতে পেরেছে কুরআন হলো মুহাম্মদের নিজের লেখা বই তখন একদল ধর্মব্যবসায়ী দিন রাত পরিশ্রম করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে প্রাণাতিপাত করে ফেলছে। কিন্তু তাতে কুরআন বিজ্ঞানময় গ্রন্থ হয়ে উঠছে না। কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে এমন কোন অপপদ্ধতি নেই যা তারা অবলম্বন করছে না। তারা কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধনের জন্য কুরআনে ব্যবহৃত শব্দের অর্থকে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন নতুন অর্থ করার মাধ্যমে কুরআনের ভূলকে সংশোধন করছে এবং একই সাথে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বলে দাবী করছে। কিন্তু এসব মুসলমানরা বুঝতে চাইছে না যে, ভূলে ভরা কুরআনের অর্থকে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করে কুরআনকে সংশোধন করার পরে সেটিকে বিজ্ঞানময় বানানোতে কুরআনের কোন কৃতিত্ব থাকছে না। বরং যারা কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থ পরিবর্তন করে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাচ্ছে তারাই হলো নতুন অর্থের কুরআনের বিজ্ঞানময় বানানোর জন্য দায়ী। মুহাম্মদের লিখিত কুরআনের মধ্যে ভূল ভ্রান্তি ছিল বলেই কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থ বদলে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করে কুরআনকে সংশোধন করতে হয় এবং সাথে সাথে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে হয়। যদি কুরআন সত্যিই কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী হতো তবে কুরআনের অর্থকে বদলে দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে হতো না। (তাও আবার কুরআনের নতুন অর্থ বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখেই করা হয়।) তখন পূর্বের কুরআনের অর্থকে অপরিবর্তনীয় রেখেও কুরআন বিজ্ঞানময় গ্রন্থ হতো। কিন্তু যেহেতু কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তা প্রবর্তিত গ্রন্থ নয় তাই এর ভূলগুলোকে সংশোধন করে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে এর অর্থকে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে পরিবর্তন করতে হয়।

বরং কুরআনের অর্থকে বদলে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করে কুরআনের ভূল সংশোধন ও বিজ্ঞানময় করার মহোৎসবগুলো এটাই প্রমাণ করে যে কুরআন হলো মুহাম্মদের মতো প্রাচীণ অজ্ঞ মানুষের লেখা বই। এজন্যই মুহাম্মদের লেখা কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থকে বদলে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করা হয় এবং এভাবে কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধনের মাধ্যমে  কুরআনকে বিজ্ঞানময় বলে দাবী করা হয়।

এতে ভূলে ভরা কুরআন বিজ্ঞানময় হয়ে উঠে না বরং মুসলমানদের মিথ্যাচার, প্রতারনা ও ভন্ডামী প্রমাণিত হয়।





PART-5

কুরআন-এর বানী সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন করা হয় । কুরানের কোন ভূল ধরা পড়লে ধর্মের স্বার্থ রক্ষার্থে কিছু চতুর ধার্মিক কুরানের অর্থ পরিবর্তন করে নিজেদের সুবিধানুযায়ী নতুন অর্থ করে । মোট কথা আল্লাহ কুরআনে কথা দিয়েছিল কুরআনের বানীকে রক্ষা করবে আল্লাহ সেই কথাটি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সম্পুর্নরুপে অথবা কথাটি সম্পুর্ন মিথ্যে । তার মানে কুরআনে বর্নিত আল্লাহ কোন সর্বশক্তিমান কেউ নয় । কোন স্বাধারন মানুষ ।

এই পর্বেও এরকম কয়েকটি আয়াতের উল্লেখ করবো যেগুলো সম্পুর্ন বিজ্ঞান বিরোধী কথা বলায় এদের অর্থ পরিবর্তন করা হয়েছে এবং সুবিধামত এদের নতুন অর্থ করা হয়েছে । অর্থাত আল্লাহর কথা পরিবর্তন করে আয়াতগুলোর সম্পুর্ন নতুন অর্থ করা হয়েছে ।



মুসলমানদের সৃষ্টির জনক আল্লাহ কুরাআনে বলেছে,

সুরা ইউনুস, আয়াত ৩ :

"নিশ্চয় তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি তৈরি করেছেন আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন ।"



ঠিক এই কথাটি কুরআনে বলা হয়েছে সুরা আরাফ-এর ৫৪ নাম্বার আয়াতে, সুরা সেজদাহ্-এর ৪ নাম্বার আয়াতে, সুরা ফুরকান-এর ৫৯ নাম্বার আয়াতে এবং সুরা হাদীদ-এর ৪ নাম্বার আয়াতে ।



দেখা যাচ্ছে কুরআনের বানী মতে আল্লাহ বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছে ছয় দিনে ।



আবার সুরা ক্বাফ-এর ৩৮ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,

"আমি আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবী ও এগুলোর মধ্যস্থিত সব কিছু সৃষ্টি করেছি

ছয় দিনে; আমাকে কোন ক্লান্তি স্পর্শ করেনি ।"

এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছে মাত্র ছয় দিনে কিন্তু কোনরুপ ক্লান্তি তাকে স্পর্শ করেনি । অর্থাত আল্লাহ এত শক্তিশালী যে মাত্র ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টি করার পরেও তাকে কোন প্রকার ক্লান্তিই স্পর্শ করেনি ।



আবার আরেকটি আয়াত দেখলে ছয় দিনের ব্যপারটি আরও স্পষ্ট হবে ।

সুরা হা-মীম আসসাজদাহ্, আয়াত ০৯ ও ১০

"বলঃ তোমরা কি তাকে অস্বীকার করবেই যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুই দিনে এবং তোমরা তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাতে চাও ? তিনি তো জগতসমুহের প্রতিপালক ।"



"তিনি স্থাপন করেছেন (অটল) পর্বতমালা ভূ-পৃষ্টে এবং তাতে রেখেছেন বরকত এবং চার দিনের মধ্যে এতে ব্যবস্থা করেছেন থাদ্যের, সমভাবে (এতে উত্তর) রয়েছে জিজ্ঞাসুদের জন্যে । “



০৯ নাম্বার আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ প্রথম ২ দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছে । ১০ নাম্বার আয়াত অনুযায়ী  এতে পাহাড় স্থাপন করেছে এবং খাদ্যের ব্যবস্থা করেছে বাকী ৪ দিনে । অর্থাত মোট ৬ দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে বিশ্বজগত । ( কুরান অনুযায়ী আকাশ তৈরিতে আরও ২ দিন লেগেছে । যেহেতু এটি বিতর্কিত বিষয় তাই ধরে নিলাম প্রথম ২ দিনে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পরের ৪ দিনে পৃথিবীতে পাহাড় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে । অর্থাত মোট ৬ দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টি করা হয়েছে ।)



এখন অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারে যে, বিশ্বজগত সৃষ্টির পুর্বে আল্লাহ কোথায় ছিল ?

এর উত্তর আছে নিচের আয়াতে,

সুরা হুদ, আয়াত ০৭

"আর তিনিই আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন ছ'দিনে এবং সেই সময় তাঁর আরশ পানির উপরে ছিল যেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করে নেন যে, তোমাদের মধ্যে উত্তম আমলকারী কে ? "



উপরিউক্ত আয়াতগুলো থেকে একথা স্পষ্ট যে আল্লাহ বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছে ৬ দিনে (মোট ৬ দিনে) । এখানে উল্লেখ্য যে, ৬ দিন হচ্ছে বিশ্বজগত সৃষ্টি সহ পৃথিবীতে প্রাণী বসবাসের উপযোগী করা পর্যন্ত মোট সময় (সুরা হা-মীম আসসাজদাহ্, আয়াত ০৯ ও ১০ অনুযায়ী) ।  



কিন্তু আমরা জানি যে পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি হয়নি । বিজ্ঞান বলে বিশ্বজগত সৃষ্টি হতে লক্ষ লক্ষ বছর লেগেছে । বিশ্বজগত তৈরী হয়েছে আজ থেকে ১৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে । এবং পৃথিবীতে জীবের আবির্ভাব হয়েছে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে (আসলে তারও লক্ষ লক্ষ বছর পরে) । তাহলে দেখা যাচ্ছে ৯ বিলিয়ন বছর লেগেছে বিশ্বজগত ও পৃথিবী তৈরী হতে এবং এতে প্রাণীর বসবাসের উপযোগী(খাদ্য তৈরী) হতে ( আসলে আরও বেশী সময় লেগেছে) । কিন্তু কুরআন মতে বিশ্বজগত সৃষ্টি ও পৃথিবীতে খাদ্যের ব্যবস্থা করতে অর্থাত পৃথিবী মানুষের বসবাসের উপযোগী হতে সময় লেগেছে মাত্র ছয় দিন । কিন্তু সত্য হচ্ছে, বিশ্বজগত সৃষ্টির শুরু থেকে পৃথিবী তৈরী হতেই সময় লেগেছে প্রায় ৯ বিলিয়ন বছর । তাহলে এতে খাদ্যের ব্যবস্থা হতে লেগেছে আরও লক্ষ লক্ষ বছর ।

তাহলে কুরআনে কেন বলা হয়েছে বিশ্বজগত মাত্র ৬ দিনে সৃষ্টি হয়েছে ? এটিতো কখনই কোন সৃষ্টিকর্তার কথা হতে পারে না । তাহলে নিশ্চয় কুরআন কোন সুষ্টিকর্তার বাণী নয় !

তবে এই ৬ দিন আসলে কত দিন এটি নিয়ে মুসলমান আস্তিকরা তর্ক করতে পারে; তারা দাবী করতে পারে এই ৬ দিন আসলে মানুষের গণনায় ছয় দিন নয় এটি সৃষ্টি কর্তার ছয় দিন । তাহলে এখন দেখতে হবে সৃষ্টিকর্তার এক দিন মানুষের হিসেবে আসলে কয়দিন !



সুরা হাজ্জ-এর ৪৭ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,

".....তোমার প্রতিপালকের একদিন তোমাদের গণনায় সহস্র বছরের সমান ।"



এই আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে আল্লাহর ১ দিন সমান মানুষের ১০০০ বছর ।

আল্লাহর একদিন সমান ১০০০ বছর নিলে ছয় দিনে হয় ৬০০০ বছর । কিন্তু তবুও বিশ্বজগত সৃষ্টির প্রকৃত সময়ের সাথে কুরানের ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির ব্যপারটা পুরোই হাস্যকর থেকে যাচ্ছে । অর্থাত ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির করা হয়েছে এটা সম্পুর্ন মিথ্যে বা ভূল কথা ।

ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির এই ধারনাটা নেওয়া হয়েছে বাইবেল থেকে । বাইবেল অনুযায়ী বিশ্বজগত সৃষ্টি করা হয়েছে ৬ দিনে অর্থাত ৬টি ২৪ ঘন্টার দিনে । আর কুরাআনেও বাইবেলের ধারনাটাই ধার করা হয়েছে । এই ধারনাটি ২০০০-২৫০০ বছর আগের প্রাচীন মানুষের ধারনা । আর এই ধারনাটাই বাইবেলে বলা হয়েছে এবং কুরআনের লেখক বাইবেল থেকে নিয়ে কুরআনে ঢুকিয়ে দিয়েছে । 

এখানে উল্লেখ্য সুরা সাজদাহ-এর  ০৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে বিশ্বজগতের সবকিছু আল্লাহর কাছে যাবে যে দিনে সেটার পরিমান মানুষের হিসেবে ১ হাজার বছর । আবার সুরা মাআরিজ-এর ০৪ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ফেরেশতা এবং রুহ্(আত্বা) আল্লাহর দিকে যায় যে দিনে  তার পরিমান মানুষের হিসেবে ৫০ হাজার বছর । এই হিসেব যদি ধরি তবুও কুরআন মতে বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে ৬×৫০০০০= ৩০০০০০ বছর । অর্থাত নতুন হিসেব অনুযায়ী বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে ৩ লক্ষ বছরে । কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হলো না । কোরআন মানুষের তৈরী সেটা গোপন করা গেল না । কারণ বিজ্ঞান মতে বিশ্বজগত তৈরী হয়েছে ৯ বিলিয়ন বছরেরও বেশী সময়ে । অর্থাত কুরআন মিথ্যে বা ভূল কথা বলছে । এটি বাইবেলের ভূল তথ্য নিয়ে প্রমান করে দিয়েছে যে কুরআন কোন মানুষ লিখেছে ।



তাহলে প্রমানিত হয়ে যাচ্ছে কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী নয় বরং এটি মুহাম্মদের বাণী । ঠিক এই সময় কিছু ইসলামিক পন্ডিত দেখলো আর ধর্মকে রক্ষা করা গেলনা ! আর তাই তারা ধর্মকে বাঁচাতে ওই আয়াতগুলোর নতুন অর্থ করা শুরু করে দিলো । তারা দাবী করলো ও আয়াতগুলোতে দিন বোঝাতে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো ‘ইয়াওম’’ যার অর্থ ‘দিন’ বা ‘একটা লম্বা সময়’ । তাহলে কুরআনের ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির আয়াতগুলোর নতুন অর্থ হলো ৬টা লম্বা সময়ে বিশ্বজগত সৃষ্টি করা হয়েছে । অর্থাত আল্লাহ মুহাম্মদের কাছে নাজিল করেছিল ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির কথা (যেটা বাইবেল থেকে আল্লাহ নকল করেছিল) সেটা পরিবর্তিত হয়ে গেল ! অর্থাত কুরআনে আল্লাহ কথা দিয়েছিল কুরআনের বাণীকে রক্ষা করবে সেটা আর সত্য থাকলো না । কিছু সুবিধাবাদী চতুর মুসলমানরা আল্লার বানী পরিবর্তন করে সম্পুর্ন নতুন অর্থ করে ফেললো আর আল্লাহ কিছুই করতে পারলো না । আল্লাহ কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলো না যেটা সর্বশক্তিমান কারো প্রমান বহন করে না । অর্থাত কুরান আসলে কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী নয় । বরং এটি কোন মানুষের অর্থাত মুহাম্মদের বাণী বলেই এর বাণী পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে । যদি কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী হতো এবং সেই সৃষ্টিকর্তা কুরআনের বাণী রক্ষা করার অঙ্গীকার করতো তবে কখনই সেই বাণী পরিবর্তন করা সম্ভব হতো না ।



আসলেই কী কুরআনে ছয় দিন না বুঝিয়ে ইয়াওম বলতে ৬টা লম্বা সময় বুঝানো হয়েছে ?

কুরআনে ২৫:৫৯, ৫৭:০৪, ৫০:৩৮, ৩২:০৪, ১০:০৩, ১১:০৭, ০৭:৫৪ এবং ৪১:৯-১০ নাম্বার আয়াতগুলোতে ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে । কিন্তু কোন আয়াতেই এই ছয় দিন বা ছয়টি ইয়াওম-এর অর্থ স্পষ্ট করে দেয়নি । আবার সবগুলো আয়াতে ইয়াওম বা দিন শব্দটিই ব্যবহার করা হয়েছে । যদি আল্লাহ (সৃষ্টিকর্তা) ছয়টি লম্বা সময়কেই বুঝাতো তবে কেন অন্য কোন শব্দ দিয়ে বুঝালো না ? কেন দিন (ইয়াওম) শব্দটিই ব্যবহার করলো বারবার ?

এর একটাই উত্তর, কুরআনে আসলে বাইবেল-এর ২৪ ঘন্টার ৬টি দিনের কথাই বলা হয়েছে । আর তাই সবগুলো আয়াতে বারবার দিন (ইয়াওম) শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে । যদি এখানে ইয়াওম বলতে লম্বা সময় বুঝানো হত তবে অবশ্যই অন্য কোন এক আয়াতে অন্য কোন শব্দ দিয়ে লম্বা সময় বুঝানো হত । (কারণ আল্লাহ যদি সর্বশক্তিমান কেউ হয়ে থাকতো তবে তার শব্দের অভাব হত না । অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করে অবশ্যই বুঝাতে সক্ষম হত যে এখানে লম্বা সময় বুঝানো হয়েছে ।) কিন্তু কুরআনে বারবার ইয়াওম বা দিন শব্দটি ব্যবহার করায় এটাই প্রমানিত হয় যে, এখানে বাইবেলের ছয় দিনের (৬টি ২৪ ঘন্টার দিন) কথা বলা হয়েছে ।



অর্থাত কুরআনের আল্লাহ আসলে জানেই না বিশ্বজগত আসলে কয় দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে । উপরন্তু সে বাইবেলের ছয় দিনের বিশ্বজগত সৃষ্টি করার তত্ব কপি (নকল) করেছে । আর এর মধ্য দিয়ে কুরআনের লেখক প্রমান করে দিয়েছে কুরআন আসলে আল্লাহ নামের কোন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা লেখেনি (বা তৈরী করেনি) বরং কোন এক স্বাধারণ মানুষ লিখেছে (বা তৈরী করেছে) ।

অর্থাত কুরআন আল্লাহর বাণী নয়, কুরআন মুহাম্মদের বাণী ।



মুসলমানরা দাবি করে তাদের ধর্মগ্রন্থ কুরআন হলো পৃথিবীর একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যা তাদের আরবীয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ নিজের হাতে রচনা করেছে এবং সে নিজেই এর রক্ষনা বেক্ষনের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। তাদের ধর্মগ্রন্থটিই অবিকৃত অবস্থায় আছে। তাই তাদের ধর্মগ্রন্থটিই পৃথিবীর একমাত্র সত্য ধর্মগ্রন্থ। মুসলমানরা আরো বলে তাদের ধর্মগ্রন্থটি অবশ্যই (আরবীয়) সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছ থেকে আসা ঔষী গ্রন্থ। তাদের দাবী কুরআনে বহু বৈজ্ঞানীক তথ্য দেওয়া আছে। মুসলমানদের যে দাবীটা সব চেয়ে বেশী বার আসে সেটা হলো তাদের ধর্মগ্রন্থ কুরআনে একটা ভূলও নেই। আর তাই এটা অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর লেখা বই।

একটা বইতে কোন ভূল না থাকলেই সেটা কিভাবে সৃষ্টিকর্তার বই হয় সেটা ভেবে পাই না। পৃথিবীতে অনেক বই আছে যা সত্য এবং প্রমাণিত বাস্তবতার কথা বলে। কিন্তু কেউই সেটাকে সৃষ্টিকর্তার বই বলে দাবী করে না।





সত্যিই কি কুরআনে কোন ভূল নেই? মুসলমানরা চোখ বন্ধ করে দাবী করে, অবশ্যই কুরআনে কোনই ভূল নেই।  কিন্তু অন্ধবিশ্বাসী মুসলমানরা বাদে পৃথিবীর সব যুক্তিবাদী, বিধর্মী এবং জ্ঞানী মানুষ আছে তারা সবাই কুরআন পড়ে বুঝতে পারে এতে প্রচুত ভূল এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়া আছে। যেহেতু কুরআনে সাধারণ বিষয়গুলোর বর্ণনাতেই নানাবিধ ভূল ভ্রান্তি এবং প্রাচীণ আরবের ধ্যাণ ধারণা রয়েছে, তাই কুরআন কখনও কোন সৃষ্টিকর্তার রচিত গ্রন্থ হতে পারে না।

আমরা সবাই জানি কুরআন কিভাবে রচিত হয়েছে। মুহাম্মদ নামের এক প্রাচীণ আরবীয় লোক কুরআনের কথাগুলোকে বর্ণনা করেছে এবং তার অনুসারীরা সেগুলোকে নানা যায়গায় লিখে রেখেছে। মুহাম্মদের মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে লিখিত কুরআনের কথাগুলোকে একসাথে করে সেগুলোকে গ্রন্থাকারে লিখে রাখা হয়। উসমানের সময়ে গ্রন্থাকারে সংকলিত মুহাম্মদ বর্ণিত কথামালাগুলোই আজকের কুরআন।

তাহলে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর কোন মানুষই কুরআনকে আকাশ থেকে পড়তে দেখেনি, কোন মানুষই দেখেনি মুহাম্মদের বলা কুরআনের সেই কথাগুলো আল্লাহ বলেছে; কোন মানুষই ওইসব কথাগুলোকে মুহাম্মদের কাছে অন্য কারো কাছে থেকে আসতে দেখেনি। তারা কোন ফেরেশতা বা আল্লাহর কথা শুনেনি আর কুরআন আকাশ থেকেও পড়েনি। তাহলে মুসলমানরা কেন দাবী করে যে এটা আল্লাহর রচিত গ্রন্থ? মুহাম্মদের বলা কথাগুলো কোন ভাবেই কোন সৃষ্টিকর্তার বই হতে পারে না।

আবার কুরআনের যত ভূলভ্রান্তিযুক্ত কথা আছে যা ততকালীন আরবের সাধারণ মানুষের ধ্যান ধারণার সমষ্টি সেই কথাগুলোই প্রমাণ করে কুরআন কোন অতিক্ষমতাবাণ বা সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার বাণী নয়। বরং সে সময়ের কোন সাধারণ আরবীয় মানুষের নিজের বানী। কুরআন যেহেতু মুহাম্মদ লিখেছে বা বর্ণনা করেছে তাই কুরআন হলো মুহাম্মদের নিজের বাণী।



কুরআন আল্লাহর বাণী নয় এটা প্রমাণ করেছে পৃথিবীর বহু মানুষ। কিন্তু তারপরেও মুসলমানরা ত্যাঁড়ামো করে বলতে থাকে না কুরআন অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার বাণী। তারা তাদের দাবীর পক্ষে নানা কুযুক্তি তুলে ধরে। কুরআনের নতুন অর্থ এবং ব্যাখ্যা দাড় করে। এবং বলতে থাকে কুরআন সত্য, কুরআনে কোন ভূল নেই, কুরআনে বিজ্ঞানের কথা বলা হয়েছে। এসব অবশ্য কুরআনে নেই তবে তারা কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধন করে কুরআনের নতুন ও সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ করে এবং ভিন্ন ব্যাখ্যা হাজির করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বলে দাবী করে।

কিন্তু একথা প্রমাণিত যে কুরআন আসলে মুহাম্মদের লেখা বা রচিত বাণী বা কথার সংকলন। এজন্যই কুরআনে নানা ভূল ভ্রান্তি রয়েছে। এজন্য আধুনিক কালের মুসলমানগুলো এই কুরআনের  অর্থের পরিবর্তন করে এবং নতুন ও ভিন্ন ব্যাখ্যা হাজির করে কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধন করে নেয় এবং কুরআনকে বিজ্ঞানময় বলে দাবি করে। এটা পক্ষান্তরে কুরআন যে কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী নয় সেটাই প্রমাণ করে। কারণ যদি কুরআন সত্যিই কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী হতো তবে এর অর্থ পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ এনে কুরআনকে ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করে একে সৃষ্টিকর্তার বাণী বানানোর অপচেষ্টা করতে হতো না। এটা তখন এমনিতেই সৃষ্টিকর্তার বাণী হতো এবং এর মধ্যে কোনই ভূল, মিথ্যা ও অবৈজ্ঞানীক কথা থাকতো না। আর এর অর্থ পরিবর্তন করে একে সংশোধন করতেও হতো না।



কুরআন যে সৃষ্টিকর্তার বাণী নয় এটা পৃথিবীর অনেক জ্ঞানী মানুষই প্রমাণ করেছে এবং অতি নগন্য মানুষ হয়েও আমিই এই সিরিজের আগের পর্বগুলোতে প্রমাণ করে দিয়েছি। যেহেতু অন্ধবিশ্বাসী মুসলমানরা এতো প্রমাণ দেখেও তারা খুব সহজে তাদের কুসংস্কার থেকে বের হবে না তাই তাদের সুবিধার জন্য এই পর্বেও একটি প্রমাণ উপস্থাপন করবো যাতে তারা কুরআনের ভূলকে বুঝতে পারে এবং কুসংস্কার থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে (যেভাবে আমি বেড়িয়ে এসেছি)।



মুহাম্মদের সময়ের আরবের মানুষগুলো নানা রকম ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বসবাস করতো। তারা কাবা শরীফের পাথরকে কেন্দ্র করে একটি মন্দির তৈরী করেছিল যা বংশ পরম্পরায় আরবদের নানা গোষ্ঠির মানুষের তীর্থস্থানে পরিনত হয়েছিল। সেখানে পৌত্তলিক ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন ধর্মী অনুসারীরা পরস্পরের সাথে মিলে মিশে ধর্মচর্চা করতো। কেউ মানাতের পুঁজা করতো কেউ লাতের পুজা করতো, কেউ বা উজ্জ্বার পুঁজা করতো। তবে তাদের মোটামুটি প্রত্যেকে কাবা শরীফের প্রধান দেবতা আল্লাহকে মান্য করতো। অনেকে আল্লাহকে প্রধান দেবতা হিসেবে মানতো না।

সেসময়ের মানুষ মনে করতো আকাশ হলো সাতটা, পৃথিবী সমতল এবং দেখতে ঘরের ছাদের মতো আকাশটা আসলেই ঘরের ছাদের মতই সমতল পৃথিবীর উপর স্থাপন করা হয়েছে। তারা ভাবতো পৃথিবী সমতল হওয়ায় এটি কোন এক দিকে কাঁত হয়ে পড়ে যেতে পারে। তাই পাহাড় পর্বতগুলো স্থাপন করা হয়েছে। পৃথিবীতে পাহাড় পর্বতগুলো স্থাপন করার জন্যই পৃথিবী কোন এক দিকে কাঁত হয়ে ঢলে পরে না।

সেই প্রাচীণ আরবের মানুষগুলো এরকমের ভ্রান্তিযুক্ত মিথ্যা ধারণাগুলোকেই সত্য বলে বিশ্বাস করতো। তারা আরও বিশ্বাস করতো পৃথিবীতে স্থাপিত সমুদ্রগুলো পরস্পরের সাথে মিশে থাকে কিন্তু পাশাপাশি মিশে থাকা সমুদ্রগুলোর পানি একে অপরের সাথে মিশে না। মুলত আরবদের এই ভ্রান্ত ধারণাটি নিয়েই আজকের পর্বটিতে আলোচনা করা হবে।

সেসময় আরবের মানুষগুলো খুব বেশী দেশ ভ্রমণ করতে পারেনি। তারা মুলত ব্যবসার জন্য পার্শবর্তী দেশগুলোতে ভ্রমণ করতো। মিশর হল আরবের পাশের দেশ। কিন্তু তবুও আরবের মানুষ সে সময় খুব বেশী মিশরে যেতো না। তারা মুলত সিরিয়াতে যেতো ব্যবসার উদ্দেশ্যে। দুর্গম আরবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জ্ঞান বিজ্ঞানের খবর খুব কমই আসতো। যদিও সেসময় গ্রীকরা জ্ঞানে অনেক এগিয়ে ছিল কিন্তু আরবরা ততটা উন্নতি সাধন করেনি। তবে তাদের কাছে গ্রীকদের জ্ঞানের ছোয়া কিছুটা লাগতো। যেহেতু গ্রীকদের দর্শন আরবে আসতো বিভিন্ন হাত ঘুরে তাই তারা গ্রীকদের প্রকৃত জ্ঞান পেতো না। যা পেতো তা অনেকটাই ভ্রান্ত। ফলে মুহাম্মদের সময়ের আরবরা আসলে পানির গুনাগুন সম্পর্কে ছিল পুরোপুরিই অজ্ঞ বা বিভ্রান্ত। তারা জানতো না পানি কিভাবে পরস্পরের সাথে মিশে যায়। কোন প্রক্রিয়াতে পানি মিশ্রিত হয় সেটা যেমন তারা জানতো না ঠিক একই ভাবে তারা জানতো না কিভাবে এবং কেন পানির ভিন্ন ভিন্ন মিশ্রনগুলো ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে। যদিও বা নানা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হতে হতে এসব ধারণা আরবে প্রবেশ করতো তবুও এই ধারণাগুলো পরিবর্তিত বা বিকৃত হয়ে যেতে। ফলে আরবের মানুষের পক্ষে সম্ভব হতো না গ্রীকদের অভ্রান্ত দর্শন বা জ্ঞান সম্পর্কে পরিশুদ্ধ ধারণা করা। ফলে তারা নানা ভাবেই হতো বিভ্রান্ত।

কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞান সম্পর্কে ভাসা ভাসা এবং অবশ্যই বিকৃত তথ্য আরবদের জানা ছিল। একারণেই মুহাম্মদ এবং তার সময়ের মানুষগুলো নানা ভ্রান্তিকর তথ্যগুলোকেই সত্য বলে বিশ্বাস করতো। আর এর প্রভাব কুরআনে প্রকট।

আরব মরুভূমির দেশ হলেও আরবের পাশেই সমুদ্র ছিল। যেমন মিশর এবং সৌদি আরবের মাঝামাঝি লাল সাগর বা রেড সি অবস্থিত। এই সাগরটি মক্কা থেকে খুব বেশী দুরে নয়। ফলে তারা সমুদ্রের পানি সম্পর্কে নানা রকম ধারণা রাখতো যার বেশীর ভাগই ভূল ছিল।

মিশরের নীদ নদ সে সময়ে আরবদের কাছে খুব বিখ্যাত ছিল। মুসা নবী এবং ফেরাউন বা রাজার কাহিনী সে সময় মিশর এবং আরবের অনেক দেশেই প্রচলিত ছিল। যে অংশটিতে নীল নদের পানি ভূমধ্য সাগরে পড়তো সেখানে পানির ভিন্ন মিশ্রনের আচরণগত পার্থক্যগুলো স্পষ্ট করে বুঝা যায়। সেসময়ের মানুষও এটা পর্যবেক্ষন করেছিল। তারা যেহেতু সমুদ্রের পানি কেন পাশাপাশি প্রবাহিত হওয়ার ফলেও পরস্পরের সাথে মিশে না সেটা দেখে অবাক হয়ে যেতো। যেহেতু সে সময়ের আরবের মানুষ জানতো না পানি কিভাবে পরস্পরের সাথে মিশে বা কেন দু রকমের পানি (যেমন গরম পানি ও শীতল পানি) মিশলেও কিছু সময় তারা ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে। ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসা পানি কেন পরস্পরের থেকে ভিন্ন থাকে কিছু সময় সেটা তৎকালীর আরবের মানুষের পক্ষে জানা প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু তারা এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতো। অর্থাৎ তারা জানতো যে সমুদ্রে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসা পানির মধ্যে একটি পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু কেন এই পার্থক্য বিরাজ করে কিছু জায়গা বা কিছু সময় জুড়ে সেটা আরবদের জন্য ছিল এক রহস্য। কিন্তু তৎকালীন গ্রীকরা পানির বৈশিষ্ট সম্পর্কে যথেষ্ট ভালো ধারণা রাখতো। তাই তারা বুঝতো কেন ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসা সমুদ্রের পানির বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হয় এবং তা কিভাবে ঘটে। ফলে তাদের কাছে এটি কোন রহস্যময় ব্যপার ছিল না।

পানির এই ভিন্নতার ব্যাপারটিও মিশর ছাড়িয়ে আরবের মক্কাতে এসে পৌঁছে ছিল। কিন্তু যেহেতু এই বিষয়টি নানা মানুষের মুখে মুখে ঘুরে ঘুরে মক্কায় এসেছিল তাই কথাটার একটু বিকৃতি বা পরিবর্তন ঘটে। যদিও মিশর বা আরবের অনেক মানুষ জানতো যে সমুদ্রের পানির বৈশিষ্ট্যের এই পার্থক্যটা কিছু নির্দিষ্ট সময় এবং নির্দিষ্ট স্থানের মধ্যেই স্বীমাবদ্ধ থাকে। সেই নির্দিষ্ট সময় এবং নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করার পরে পানির বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা দুর হয়ে যায় এবং ভিন্ন ভিন্ন পানি পরস্পরের সাথে মিশে যায়। কিন্তু যখন এই বিষয়টি আরবে তথা মক্কায় আসে তখন কথাটা দাড়ায় পানি কখনই মিশে না। অর্থাৎ আরবরা জেনেছে সমুদ্রের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসা পানি কখনই মিশে না।

এই ভ্রান্ত ধারণাটি আরবের মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হতো। মুহাম্মদও এই ভ্রান্ত ধারণটি রাখতো। আর তার কাছেও ব্যাপারটি রহস্যময় ছিল। এজন্যই সে কুরআনে অলৌকিকতার নিদর্শন স্বরুপ এই উদাহরণটি দিয়েছিল। যেহেতু সমুদ্রের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসা পানির বিষয়টি মুহাম্মদ জানতো ভ্রান্তভাবে তাই সে কুরআনে এই কথাটি ভ্রান্তভাবেই বর্ণনা করেছে।  



কুরআনের সূরা ফুরকান-এর ৫৩ নং আয়াতে বলা আছে,

তিনিই দুই সমুদ্রকে মিলিত ভাবে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্টি, মজাদার এবং অপরটি লবণাক্ত, বিস্বাদ; উভয়ের মধ্যে রেখেছেন এক অন্তরায়, এক শক্ত ব্যবধান। (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)

মুহাম্মদ জানতো সমুদ্রে যখন নদীর পানি প্রবেশ করে এবং প্রবাহিত হয় তখন ওই পানিটা তখনও মিষ্টি ও সুপেয় থাকে। অপর দিকে সমুদ্রের পানি হল লবনাক্ত এবং অপেয়। অর্থাৎ নদীর পানি সমুদ্রে গেলেও এটি সমুদ্রের পানির সাথে মিশে না। তাই সে ভেবেছিল নদীর মিষ্টি পানি সমুদ্রে যায় ঠিকই কিন্তু সমুদ্রের পানির সাথে মিশতে পারে না কারণ নদীর পানি এবং সমুদ্রের পানির মাঝখানে একটি অন্তরায় বা প্রতিবন্ধক রয়েছে। এই প্রতিবন্ধকটিই সমুদ্রের পানির সাথে নদীর পানিকে মিশতে দেয় না। তৎকালীন আরবের সাধারণ মানুষের মত মুহাম্মদেরও এই ভ্রান্ত ধারনাটি ছিল। আর সে তার ভ্রান্ত ধারণটিই কুরআনে লিখে রেখেছে এবং তখনকার আরবদের জন্য নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করেছে (কারণ তখনকার আরবদেরও এ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণ ছিল)।

এই আয়াতটির অন্য আরেকটি অনুবাদ দেখা যাক,

"It is He Who has let free the two bodies of flowing water: One palatable and sweet, and the other salt and bitter; yet has He made a barrier between them, a partition that is forbidden to be passed." (অনুবাদ- Abdullah Yusuf Ali)



স্পষ্টতই এই আয়াতটিতে বলা হয়েছে দুই ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসা পানি পরস্পের সাথে মিলিত ভাবে প্রবাহিত হলেও সেই ভিন্ন রকমের পানি একটার সাথে আরেকটা মিশে না। কারণ এদের মধ্যে একটি প্রতিবন্ধক বা অন্তরাল থাকে। আর এই প্রতিবন্ধক বা অন্তরালকে দুই সমুদ্রের পানি অতিক্রম করতে পারে না। এজন্যই মুজিবুর রহমান একে শক্ত দেয়াল বলে অবিহীত করেছেন। একই কথা ইউসুফ আলিও বলেছেন।



একই কথা বলা আছে সূরা রহমান-এর ১৯-২০ নং আয়াতে,

"তিনিই দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন যারা পরস্পর মিলিত হয়,

এ দুয়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যা ওরা অতিক্রম করতে পারে না।" (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান)

দেখাই যাচ্ছে এখানে বলা হচ্ছে, দুই সমুদ্রের পানি প্রবাহিত হয় মিলিত ভাবে কিন্তু তারপরেও একটার পানি আরেকটার পানির সাথে মিশে না। কারণ এদের মধ্যে একটি অন্তরাল আছে যা এই দুই পানি অতিক্রম করতেই পারে না।



প্রাচীন মিশর, আরব এবং সিরিয়ার মানুষরা দেখেছে সমুদ্রের দুই ধরণের পানি প্রবাহিত হতে। এই ভিন্ন ধরণের পানি পাশাপাশি প্রবাহিত হওয়া এবং কিছু সময় ও স্থানব্যপী বিস্তৃত হওয়া দেখে তারা বুঝতে পারেনি কেন এমনটা ঘটে। তাই তারা এটাকে অলৌকিক ব্যাপার বলে মনে করেছে। আর এই কথাটা যখন সিরিয়া ও মিশর হয়ে যখন আরবের মক্কায় আসে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পরার মাধ্যমে তখন এই কথাটার কিছুটা বিকৃতি ঘটে। আর এর সাথে যুক্ত হয় যে এই দুই ভিন্ন পানি পাশাপাশি প্রবাহিত হয় কিন্তু মিশে না এর কারণ হলো এদের মধ্যে একটি অন্তরাল বা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আর এই প্রতিবন্ধক বা অন্তরালটা উপন্থিত থাকার কারণে এই দুই রকমের পানি মিশতে পারে না। কারণ দুই রকমের পানি এই অন্তরালটা অতিক্রম করতে পারে না।

এই ধারণাটা তৎকালীন অন্যান্য আরবীয়দের মত মুহাম্মদের জানা ছিল। তাই সে এই ভ্রান্ত ধারণাটুকু কুরআনে যুক্ত করে দেয়। আর দাবী করে দুই রকমের পানি পাশাপাশি প্রবাহিত হলেও একে অন্যের সাথে মিশে না কারণ আল্লাহ এদের মধ্যে একটি অদৃশ্য দেয়াল তৈরী করে রেখেছে যা পানি অতিক্রম করতে পারে না।



এখন প্রশ্ন হলো যদি কুরআন কোন অতিক্ষমতাবাণ সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তাই লিখে থাকে তবে কুরআনে প্রাচীণ আরবের মানুষদের ভ্রান্ত ধারণা কেন লেখা রয়েছে? এর উত্তর একটাই, মুহাম্মদের মতো প্রাচীণ আরবের দ্বারা কুরআন রচিত বলেই মুহাম্মদের প্রাচীণ ভ্রান্ত ধারণাগুলো কুরআনে সত্য বলে উপস্থাপন করা আছে। অর্থাৎ কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বানী নয় বরং কুরআন হলো মুহাম্মদের লেখা একটা প্রাচীণ ধ্যাণ ধারণার বই।  



সত্যিই কি কুরআনের করা দাবির মতো দুই সমুদ্রের পানি পাশাপাশি প্রবাহিত হয় কিন্তু তারা পরস্পরের সাথে মিলিত হয় না? নাকি মিলিত হয়?



এ সম্পর্কে বুঝতে হলে আগে বুঝতে হবে পানির মিশ্রন কাকে বলে? পানি কিভাবে মিশ্রিত হয় অর্থাৎ পানি মিশ্রিত হওয়ার প্রক্রিয়া কি?



মিশ্রনঃ সাধারণত কোন একটি পদার্থের সাথে অন্য কোন পদার্থকে মিশিয়ে দেওয়াকেই মিশ্রন প্রক্রিয়া বলে। যেমন বালুকে যদি চিনির সাথে মেশানো হয় তবে সেটা হবে একটি মিশ্রন। আবার চিনিকে যদি পানির সাথে মেশানো হয় তবে সেটাও হবে মিশ্রন।

পানির সাথে মিশ্রন ক্রিয়ায় দুটি ব্যাপার ঘটে; একঃ কিছু পদার্থ পানির সাথে সমসত্ব মিশ্রনে মিশে যায়। যেমন চিনি, লবন ইত্যাদি। প্রক্ষান্তরে বালু পানির সাথে সমসত্বভাবে মিশ্রিত হয় না। সমসত্ব মিশ্রণ হলো যে মিশ্রনে মিশ্রিত অনুগুলোর অনুপাত সমভাবে থাকে। যেমন পানি আর চিনির সরবতে পানি এবং চিনির অনুপাত সব জায়গায় সমান থাকে। সমুদ্রে পানির সাথে লবণের সমসত্ব মিশ্রন ঘটে বলে সমুদ্রের পানি লবনাক্ত এবং বিস্বাদ লাগে। আবার সমুদ্রের পানির সাথে বালুর সমসত্ব মিশ্রন ঘটে না বলে পানিকে বালু বালু লাগে না (যদি না খাবার পানিতে বালু ঘুরাফেরা করে)।



পানিকে তাপ দিলে ওই তাপ পানির সব জায়গায় সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও তাপ আর পানি সমসত্ব মিশ্রনের মতো কাজ করে তবুও তাপ আর পানির মিশ্রনকে মিশ্রন বলা হয় না। কারণ তাপ কোন পদার্থ নয়। তবে তাপের একটি ধর্ম হলো তাপ নিজেই উচ্চ তাপমাত্রা থেকে নিম্ন তাপমাত্রার দিকে প্রবাহিত হয় যে পর্যন্ত না তাপমাত্রা সমান হয়। যদি শীতল পানিতে গরম পানি ছেড়ে দেওয়া হয় তবে তাপ সাথে সাথে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে না। বরং তাপ ধীরে ধীরে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এবং তাপমাত্রা সর্বত্র সমান না হওয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।

আবার যদি লবণহীন পানির সাথে লবণযুক্ত পানি যোগ করা হয় তবে লবণ সাথে সাথেই সমস্ত লবণহীন পানিতে মিশে যায় না। এটি সমসত্ব মিশ্রনে যেতে কিছুটা সময় নেয়। উভয় ক্ষেত্রে (তাপ এবং লবণাক্ততা) যদি আলোড়ন বা নাড়াচাড়া করা হয় তবে অপেক্ষাকৃত অনেক কম সময়ের মধ্যেই তাপমাত্রা এবং লবনাক্ততা চারদিকে সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে বা সমসত্ব মিশ্রনে চলে যায়।



এই বিষয়ে আলোচনা করতে হলে ব্যাপন সম্পর্কে একটু জেনে নিতেই হবে।

ব্যাপন হচ্ছে এমন এক প্রক্রিয়া যাতে কোন পদার্থ (সাধারণত তরল এবং বায়বীয় পদার্থ) অপেক্ষাকৃত কম ঘনত্ব থেকে বেশী ঘনত্বের দিকে ধাবিত হয়। যেমন পানিতে যদি এক চামচ চিনি ঢেলে দেওয়া হয় তবে এই চিনি প্রথমে দ্রবিভূত হবে এবং চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। যে স্থানটিতে চিনি  থাকবে সেই স্থানে চিনির পরিমান (ঘনত্ব) বেশী থাকবে পক্ষান্তরে তার চারদিকে চিনির পরিমাণ কম থাকবে। এজন্য চিনি পানির অভ্যন্তরিন চিনিহীন জায়গাতে চলে আসতে থাকবে। এভাবে যতক্ষন চিনি সম্পূর্ণ পানিতে সমভাবে ছড়িয়ে না পড়বে ততক্ষন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।

আবার যদি বাতাসে কোন সুগন্ধি ছেড়ে দেওয়া হয় তবে সেই সুগন্ধি বাতাসের চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। সুগন্ধির অনুগুলো বাতাসের সুগন্ধিহীন জায়গাগুলোতে যেতে থাকে এবং ঘনত্ব একই রকম না হওয়া পর্যন্ত ব্যাপন প্রক্রিয়া চলে।

যখন স্বাদুপানি সমুদ্রের লোনা পানির সাথে মিশে তখন সাথে সাথে লোনা পানিতে দ্রবীভূত লবণের অনু চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে না। বরং ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সমস্ত পানির সমসত্ব মিশ্রণে পরিণত হতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু সমুদ্রে পানির পচন্ড স্রোত থাকায় লোনা পানি আর স্বাদু পানি সমসত্ব মিশ্রন সম্পন্ন হবার আগেই পানি অনেক দুরে চলে যায়। এভাবে পানির স্রোতের তীব্রতার দরুণ একটা নির্দিষ্ট দুরত্ব পর্যন্ত পানি পুরোপুরো সমসত্ব মিশ্রণে মিশ্রিত হতে পারে না। কিন্তু সমস্ত জায়গা জুড়েই মিশ্রণ প্রক্রিয়া চলতে থাকে।  

কুরআন যেভাবে দাবী করেছে, দুই সমুদ্রের পানি মিশে চললেও তারা পরস্পরের সাথে মিলিত হয় না বা তাদের মধ্যে মিশ্রন ঘটে না বা দুই পানি মিশতে পারে না কথাটি সম্পূর্ণই মিথ্যা। প্রকৃত সত্য হলো নদীর পানি সমুদ্রের পানির সাথে মেশার সাথে সাথেই তাদের মধ্যে লবণ জনীত মিশ্রন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং স্রোতের কারণে এই প্রক্রিয়া শেষ হতে হতে পানি অনেক দুরে চলে আসে। এজন্যই একটা নির্দিষ্ট জায়গা জুড়ে একটা অস্থায়ী এলাকা তৈরী হয় যেখানে আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হয় এখানে বুঝি দুই পানি মিলিত হচ্ছে না। সাধারণ চোখে দেখলে এমনটিই মনে হয়। কিন্তু অনুসন্ধিত চোখে দেখলে খুব স্পষ্ট করেই বোঝা যায় যে ওই অঞ্চলটিতেও প্রতিনীয়ত মিশ্রন ঘটছে। যেটা কোন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না। ফলে কোন মানুষ যখন ওই জায়গাটিতে যায় এবং দেখে দুই পাশে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের পানি প্রবাহিত হচ্ছে কিন্তু তারা মিশ্রিত হচ্ছে না। তখন সে ধরে নেয় সেখানে কোনই মিশ্রন ঘটছে না। প্রকৃতপক্ষে আসলে সমস্ত জায়গা জুড়েই স্বাদুপানি আর লোনা পানির মধ্যে প্রতিনীয়ত মিশ্রন ঘটে চলে যা খালি চোখে মানুষ দেখে না। বিশেষ করে সেই মানুষটি যদি হয় জ্ঞান বিজ্ঞানে অজ্ঞ কোন প্রাচীণ আরবীয় ব্যাক্তি। ফলে তার ভ্রান্তি ঘটা সাভাবিক যে দুই সমুদ্রের পানি পরস্পরের সাথে মিশছে না। এ থেকে সে ধারণা করতেই পারে যে এই অঞ্চলটিতে একটি অদৃশ্য অন্তরাল বা প্রতিবন্ধক রয়েছে যা পানিকে পরস্পরের সাথে মিশতে দেয় না। আর সেই কথা মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে কোন এক মরু বাসির কাছে পৌঁছে যে নিজেও জ্ঞান বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্পূর্ণই অজ্ঞ, সেই ব্যাক্তি ধরেই নিবে এবং মনে প্রাণে বিশ্বাস করবে যে দুই সমুদ্রের দুই রকমের পানি পরস্পরের সাথে মিশে না। কারণ এদের মাঝে এক অদৃশ্য অন্তরায় বা দেয়াল আছে।  আর যদি সে সেটা কোন গ্রন্থে লিখে রাখে তবে যুগ যুগ ধরে অজ্ঞ মানুষেরা বিশ্বাস করতে থাকবে যে আসলেই দুই সমুদ্রের পানি পরস্পরের সাথে মিশে না। কারণ তাদের মধ্যে একটি অন্তরায় বা প্রতিবন্ধক বা দেয়াল আছে।

যেহেতু কুরআনে এই ভ্রান্তিকর তথ্যটি রয়েছে তাই ধারণা করা যায় কুরআন লেখক এক ভ্রান্তিকর তথ্যে বিশ্বাস করেছে সত্য বলে এবং সেটাকেই সত্য বলে ধরে নিয়ে কুরআনে লিখে দিয়েছে। এ থেকে প্রমানিত হয় কুরআন হল কোন আরবীয় অজ্ঞ মানুষের লেখা অজ্ঞতাসম্পন্ন বই।



মানুষের শরীরের অভ্যন্তরে অক্সিজেন বা গ্লুকোজ রক্তের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে কোষে পৌঁছে। রক্তনালীর বাইরে থেকে অক্সিজেন বা গ্লুকোজ কোষের মধ্যে প্রবেশ করে ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কোষের বাইরে (রক্তে) অক্সিজেন ও গ্লুকোজের পরিমাণ বেশী কিন্তু কোষের ভিতরে কম। ফলে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ ব্যাপনের মাধ্যমে রক্তনালী থেকে কোষের ভিতর প্রবেশ করে। এখানে লক্ষনিয় ব্যাপার হচ্ছে অক্সিজেন, গ্লুকোজ বা অন্যান্য উপাদানের ঘনত্ব যখন বেশী থাকে কোষের অভ্যন্তরের তুলনায় শুধুমাত্র তখনই এগুলো কোষের ভিতর ঘুকে। আবার যখন অক্সিজেন ও গ্লুকোজের মধ্যে বিক্রিয়া ঘটে কোষের ভিতর তখন কার্বনডাইঅক্সাইড তৈরী হয়। এ পর্যায়ে কোষের ভিতরে কার্বনডাইঅক্সাইডের ঘনত্ব থাকে বেশী আর বাইরে ঘনত্ব থাকে কম। ফলে কার্বনডাইঅক্সাইড বিপরীত প্রক্রিয়ায় ব্যাপন ঘটিয়ে কোষের বাইরে চলে আসে। একই ঘটনা ঘটে ফুসফুসে। 

পানির মধ্যে ব্যাপন আর কোষের অভ্যন্তরের ব্যাপনের কিছু পার্থক্য রয়েছে। পানির মধ্যে ভিন্ন পদার্থের মিশ্রন এবং ব্যাপন ঘটে কোন বাধা বা প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই। অর্থাৎ পানির মধ্যে কোন বাধাদানকারী উপাদান (দেয়াল বা পর্দা) নেই। কিন্তু কোষের বাইরে এবং ভিতরে প্রবেশের জন্য বাধাদানকারী উপাদান (দেয়াল বা পর্দা) আছে। এই বাধাদানকারী উপাদানটি হলো কোষপ্রাচীর বা কোষঝিল্লী। এটি অর্ধপরিবাহকের মতো কাজ করে। অর্থাৎ এই কোষপ্রাচীর বা কোষঝিল্লীটির ভিতর দিয়ে পদার্থ ঢুকতে পারে।  



তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রাণী দেহের অভ্যন্তরে প্রতিবন্ধক বা অন্তরায় থাকার পরেও সেখানে দুই প্রকারের পদার্থ মিলিত হচ্ছে। কোষে দুই প্রকারের পানি মিলিত হয় (কোষের বাইরের পানি কোষের অভ্যন্তরিন কোষরসের সাথে মিলিত হয়। অপর দিকে সমুদ্রের দুই প্রকার পানির মাঝে কোন ধরণের প্রতিবন্ধকতা বা অন্তরাল নেই। সুতরাং সমুদ্রের মধ্যে প্রবাহিত দুই রকমের পানি মিলিত হতে পারে না বলে কুরআন যে ভ্রান্ত দাবীটি করেছে সেটি পুরোপুরিই মিথ্যা এবং অবৈজ্ঞানিক।



নদী দিয়ে আসা স্বাদু পানি যখন সমুদ্রে মিলিত হয় তখন এটি সমুদ্রে ঢুকা মাত্রই সমুদ্রের লবনাক্ত পানির সাথে মিশতে শুরু করে। যেহেতু এই মিশ্রনে কোন আড়লন বা নাড়াচাড়া কাজ করে না (শুধু পানির চাপ কাজ করে) তাই এই পানিদুটোর মিশ্রনে অনেক সময় লাগে। কিন্তু নদীর পানির স্রোতের কারণে পানি অনেক দুরে চলে আসে সম্পুর্ন মিশ্রনের আগেই। এই স্রোত প্রতিনিয়ত চলতেই থাকে এবং সমুদ্রের কিনারে প্রতিনিয়ত নতুন পানি আসতে থাকে এবং এই পানি সমুদ্রের ভিতরের দিকে চলে যেতে থাকে। ফলে সমুদ্রের পাড়ের কাছে নদীর পানি এবং সমুদ্রের পানির যে মিশ্রন প্রক্রিয়া শুরু হয় সেটা শেষ হতে পারে না। এই মিশ্রন প্রক্রিয়া শেষ হতে হতে নদীর পানি সমুদ্রের অনেক ভিতরে চলে আসে এবং এখানে মিশ্রন প্রক্রিয়া শেষ হয়। ফলে একটি অস্থায়ী স্থান বা অঞ্চলের সৃষ্টি হয় যা স্বাদু পানি আর লোনা পানির একটি আলাদা আলাদা সীমানা তৈরী হয়। যদিও এই সীমানা দেখে মনে হয় এখানে স্বাদু পানি এবং লোনা পানি মিশছে না কিন্তু আসলে এই অঞ্চলটিতে প্রতিনিয়ত মিশ্রন প্রক্রিয়া চলতে থাকে যা খালি চোখে দেখা যায় না।



ফলে কোন সাধারণ মানুষের কাছে মনে হতে পানে যে এদের মধ্যে কোন মিশ্রন ঘটছে না। প্রকৃতপক্ষে মিশ্রন প্রক্রিয়া প্রতিনিয়ত ক্রিয়াশীল থাকে। এই দুই রকমের পানির মধ্যে অস্থায়ী অঞ্চলটি তৈরী হবার কারণ অমিশ্রনশীলতা নয়। এর কারণ পানির স্রোত, (এবং বিপরীত দিক থেকে আসা পানির চাপ)। স্রোতের কারণেই এই আপাত অমিশ্রনশীল মনে হওয়া অঞ্চলটি তৈরী হয়। আসলে সমস্ত এলাকা জুরেই ভিন্ন রকমের পানির মধ্যে মিশ্রন প্রক্রিয়া চলতে থাকে যে পর্যন্ত না সমুদ্রের পানি এবং নদীর পানির মধ্যে সমসত্ব মিশ্রন সম্পন্ন হয়।



Description: https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiR9h8BSC-4PKdXjAE_xv2hDAKpXCjPOFLczk7CbY-NZ-jAokxVPyJbecxV7setwazOZ_Jd0lFbbKaGcFcyXODCSABqpRnvHW-0xdvxtMGQdbBcv-tiL_ADg2K5pWUEfkMObLvJ1lalsOg/s320/d.jpg

চিত্রঃ খুব ভালো করে তাকিয়ে দেখলেই বুঝা যায় দুই রকমের পানি খুব ধীরে ধীরে পরস্পরের সাথে মিশে যাচ্ছে।



সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে কুরআন লেখক যেভাবে দাবী করেছে সমুদ্রের দুই রকমের পানি পরস্পরের সাথে মিশতে পারে না এদের মধ্যে একটি অদৃশ্য প্রতিবন্ধক বা অন্তরাল থাকার কারণে সেই দাবীটা সম্পূর্ণরুপেই মিথ্যা এবং অবৈজ্ঞানিক।



প্রাচীণ আরববাসীরা সমুদ্রের স্বাদু পানি আর লোনা পানির ব্যবধানের বিষয়টি জানতো। কিন্তু তারা জানতো না এই ব্যবধানটা কেন হয়। তাই তারা ধরে নেয় এদের মধ্যে একটি অন্তরাল বা প্রতিবন্ধক আছে যা লোনা পানি এবং স্বাদু পানিকে এক হতে দেয় না। তারা কল্পনা করেছিল সমুদ্রের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের পানিগুলো এই দুর্বেধ্য অন্তরাল বা দেয়াল ভেদ করে যেতে পারে না বলে দুই পাশে দুই রকমের পানি বিরাজ করে। তাদের জানা ছিল না যে নদীর পানি সমুদ্রে যাবার পরেই এগুলো মিশতে শুরু করে। কিন্তু সমুদ্রের স্রোতের কারণে এগুলোর মিশ্রন সম্পন্ন হতে হতে অনেক সময় লাগে যে সময়ের মধ্যে এগুলো অনেক দুর চলে যায়। এই দুরত্বটুকুকেই মনে হয় ভিন্ন রকম পানি মিশছে না। প্রাচীণ আরবের সাধারন মানুষের পক্ষে এটা জানা অসম্ভব ছিল যে, এই পানি আসলে মিশে। ফলে সেই সময়ের মানুষেরা বিশ্বাস করতো সমুদ্রের ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের পানি পরস্পর মিশে না।



কুরআনের রচয়িতা যদি কোন সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা হতো তবে তার এই কথাটি জানা থাকার কথা। এবং কোন সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তাই এই অজ্ঞতামুলক কথাটি বলবে না যে, "দুই সমুদ্রের পানির মধ্যে একটি অন্তরাল রয়েছে যা দুই পানি অতিক্রম করে পরস্পরের সাথে মিশে না"। প্রকৃতপক্ষে কুরআন লেখক কোন প্রাচীণ আরবের সাধারণ মানুষ ছিল বলেই সে এই ভ্রান্ত ধারণাটি বিশ্বাস করেছে সত্য বলে এবং এই ভ্রান্ত ধারণাটিই কুরআনে লিখে দিয়েছে।



এই একটি আয়াতই যথেষ্ট প্রমাণ করার জন্য যে, কুরআন কোন অতিক্ষমতাবাণ, সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার বাণী নয়। বরং কুরআন একজন প্রাচীণ ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাসকারী সাধারণ মানুষের লেখা এক সাধারণ মানের প্রাচীণ বই।



যেহেতু কুরআনের বাণী বা কথাগুলো মুহাম্মদের নিজের মুখ থেকে এসেছে তাই একথা স্পষ্ট ভাবেই বুঝা যায় কুরআন মুহাম্মদের বাণী।

অর্থাৎ কুরআন আল্লাহর বাণী নয় বরং কুরআন হলো মুহাম্মদের বাণী। (প্রমাণিত)



বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কুরআনের নানাবিধ ভুল প্রমাণিত হবার পরে একদল অন্ধবিশ্বাসে বিশ্বাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলমান প্রানপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধন করতে এবং ভূলে ভরা কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে। এটা করতে যেয়ে তারা নানা রকমের মুখরোচক মিথ্যা কথার আমদানী করছে এবং কুরআনের অর্থ সম্পূর্ণরুটে বদলে দিয়ে এবং নানা কৌশলমূলক ব্যাখ্যা আমদানী করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে জ্ঞানবাণ এবং শিক্ষিত মানুষদের বোঁকা বানানো না গেলেও কিছু অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুদেরকে খুব সহজেই বোঁকা বানাতে সক্ষম হচ্ছে। তারা এটা বুঝতে চাচ্ছে না যদি কুরআনের মূল অর্থকে পরিবর্তন করে আয়াতের শব্দের অর্থকে পরিবর্তন করে বা ভিন্ন অর্থ এনে কুরআনের নতুন অর্থ এনে কুরআনের যে অর্থ তারা দাড় করাচ্ছে সেটা মুহাম্মদ প্রদত্ত কুরআন থাকছে না। কারণ যদি মুহাম্মদের বর্ণিত কুরআনের কোন একটি শব্দের ভিন্ন অর্থ এনে কুরআনের নতুন অর্থ করা হয় তবে সেই আয়াতটির সম্পূর্ণ অর্থটিই বদলে যাবে। এবং এভাবে কুরআনকে সংশোধন করে বিজ্ঞানময় গ্রন্থও বানানো সম্ভব হবে। তবে সেটি কুরআনের কৃতিত্ব হবে না; সম্পুর্ণ কৃতিত্ব হবে যারা কুরআনের অর্থকে পরিবর্তন করে কুরআনকে সংশোধনকারী এবং বিজ্ঞানময় বানানো ব্যক্তিদের। এই সজহ সত্যটি যদি কারো মাথায় না আসে তবে তার জন্য দুঃখ করা ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না। কুরআনের কোন একটি শব্দকে বেছে নিয়ে সেই শব্দটির এমন একটি অর্থকে বেছে নেওয়া হয় যাতে একই সাথে কুরআনের ভূলকে সংশোধন করা যায় এবং কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানো যায়। এই অসততা আর যাই হোক কোন ধর্ম হতে পারে না। যারা জেনে বুঝে এমনটা করে তাদের মতো খারাপ, মিথ্যাবাদী, প্রতারক এবং ভন্ড মানুষ এই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই।

কুরআনের নানা ভূল থেকে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় কুরআন আসলে কোন অতিবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সৃষ্টিকর্তা লেখেনি বরং কুরআন কোন এক স্বাধারন মানুষ লিখেছে । কুরআন আল্লাহর বাণী নাকি মুহাম্মদের বাণী সেটা আগের পর্বগুলোতে প্রমান করা হয়েছে । এই পর্বেও দেখানো হবে কুরআন আসলে কার বাণী !



কুরআনে আল্লাহ মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে উদ্ভট কিছু তথ্য দিয়েছে যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই ।



কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

সুরা সোয়াদ, আয়াত ৭১

"(স্মরন কর) যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেনঃ আমি মানুষ সৃষ্টি করছি মাটি হতে,"



সুরা আল-ইমরান, আয়াত ৫৯

"নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরুপ; তিনি তাঁকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করলেন, তৎপর বললেন, হও, ফলতঃ তাতেই হয়ে গেল ।“



সুরা আন'আম, আয়াত ০২

"অথচ তিনিই তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন,"



সুরা রুম, আয়াত ২০

"তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন । এখন তোমরা মানুষ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছো ।"



সুরা সোয়াদ, আয়াত ৭৬

"......এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে ।"



উক্ত আয়াতগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ মানুষকে মাটি থেকে বা মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছে । এ সম্পর্কিত আরও আয়াত হচ্ছে -

সুরা মুমিনুন, আয়াত ১২

"আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার মূল উপাদান হতে ।"

অর্থাত আল্লাহ মাটি দিয়ে বা মাটির মুল উপাদান দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করেছে ।



এখন কেউ একজন প্রশ্ন করতে পারে, কই আমরাতো কাউকে মাটি হতে বা মাটি দিয়ে তৈরী হতে দেখি না । তাহলে কুরআনে কেন এই কথা বলা হয়েছে ? এই প্রশ্নের উত্তর কুরআনেই দেওয়া আছে ।



সুরা কাহফ, আয়াত ৩৭

 "তদুত্তরে তাকে তার বন্ধু বললোঃ তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছো যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা ও পরে শুক্র হতে এবং তারপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মনুষ্য আকৃতিতে ?"



সুরা ফাতির, আয়াত ১১

"আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা হতে; অতঃপর শুক্রবিন্দু হতে, অতঃপর তোমাদেরকে করেছেন জোড়া জোড়া !...."



সুরা মুমিন, আয়াত ৬৭

"তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে, পরে শুক্রবিন্দু হতে, তারপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরুপে; ...."



সুরা হাজ্জ, আয়াত ০৫

"হে মানষ! পুনরুত্থান সম্বন্ধে যদি তোমরা সন্দিহান হও তবে (অনুধাবন কর) আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকা হতে, তারপর শুক্র হতে, তারপর রক্তপিন্ড হতে, তারপর পূর্ণাকৃতি বা অপূর্ণাকৃতি মাংসপিন্ড হতে;...."



উপরিউক্ত আয়াতগুলো থেকে জানা যাচ্ছে, আল্লাহ প্রথমে মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছে, এবং তারপর থেকে মানুষকে শুক্রবিন্দু (বীর্য) থেকে তৈরী করেছে । আমরা জানি মানুষ জন্ম নেয় শুক্রবিন্দু অর্থাত বীর্য থেকে । আর কুরআন বলছে আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছে প্রথমে মাটি থেকে পরে শুক্রানু বা বীর্য থেকে ।

এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, মানুষকে কি ধরণের মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ? এই প্রশ্নের উত্তরও কুরআনে দেওয়া হয়েছে ।



সুরা হিজর, আয়াত ২৬

"আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি ছাঁচে ঢালা শুষ্ক ঠনঠনে মৃত্তিকা হতে ।"

এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছে কালো পঁচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি থেকে ।



আবার সুরা সাফফাত-এর ১১ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,

".... তাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি আঠাল মাটি হতে ।"

এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ মানুষকে আঠাল বা এঁটেল মাটি থেকে সৃষ্টি করেছে ।



সুরা রহমান, আয়াত ১৪

"মানুষকে (আদমকে) তিনি সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত শুকনা মাটি হতে,"

অর্থাৎ আল্লাহ মানুষকে পোড়া মাটির মত শুকনা মাটি দিয়ে তৈরী করেছে ।



সুরা সাজদাহ, আয়াত ৭ এবং ৮

"যিনি তাঁর সকল কিছু সৃজন করেছেন উত্তমরুপে এবং কাঁদা মাটি হতে মানব সৃষ্টির সুচনা করেছেন ।"

"অতঃপর তার বংশ উৎপন্ন করেছেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস থেকে ।"

এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ প্রথমে মানুষকে কাদা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছে এবং তার পরে তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস থেকে । এখানে তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হচ্ছে শুক্রানু বা বীর্য । অর্থাত আল্লাহ মানুষকে প্রথমে কাদামাটি হতে সৃষ্টি করেছে এবং পরে বীর্য হতে বংশধর সৃষ্টি করেছে ।



উপরিউক্ত আয়াতগুলো অনুযায়ী মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুষ্ক বা শুকনো মাটি দিয়ে আবার কাদা মাটি বা আঠাল মাটি দিয়ে । কথাটা একটু বিদঘুটে মনে হলেও কুরআনের অন্য আয়াতে মানুষ সৃষ্টির অন্য উপাদান কি সেটা জানার পর এর ব্যাখ্যা পাওয়া সহজ হবে ।

কুরআনে বর্ণিত আছে,

সুরা নুর, আয়াত ৪৫

"আল্লাহ সমস্ত জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, ....."



সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৩০

"....এবং প্রানবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে,....."



সুরা ফুরকান, আয়াত ৫৪

"এবং তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন ।"



সুতরাং বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ মানুষকে শুধু মাটি দিয়ে তৈরী করেননি বরং পানিও ব্যবহার করেছে । অর্থাত আল্লাহ মানুষ তৈরী করেছে মাটি এবং পানি দিয়ে ।



আবার বাইবেল ও কুরআনে আদম তৈরীর কাহিনী অনুযায়ী, আল্লাহ ফেরেশতা পাঠিয়ে পৃথিবী থেকে মাটি নিয়ে যায় । সেই মাটি দিয়ে আদমের দেহ কাঠামো (মাটির মূর্তি) তৈরী করে । এবং শেষে তাতে রূহ্ (আত্মা) দিয়ে জীবন্ত করে । মানুষ প্রজাতির যাত্রা শুরূ হয় এভাবে ।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে আল্লাহ মাটি দিয়ে কিভাবে আদমের কাঠামো অর্থাৎ মূর্তি তৈরী করেছিল । কুরআন অনুযায়ী আল্লাহ সুরা হিজর-এর ২৬ নাম্বার এবং সুরা রহমান-এর ১৪ নাম্বার আয়াতে বলেছে, আল্লাহ মানুষকে শুকনো মাটি থেকে তৈরী করেছে । আবার সুরা সাফফাত-এর ১১ নাম্বার এবং সুরা সাজদাহ-এর ৭ নাম্বার আয়াতে বলেছে মানুষকে কাঁদা মাটি বা আঠালো মাটি থেকে তৈরী করা হয়েছে । অর্থাৎ আল্লাহ একবার বলেছে মানুষকে শুকনা মাটি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে আবার বলেছে কাঁদা মাটি থেকে তৈরী করা হয়েছে । এবং আরও বলেছে মানুষকে পানি দ্বারা তৈরীর কথা । তাহলে এগুলো থেকে বোঝা যায় আল্লাহ পৃথিবী থেকে শুকনো মাটি এনে সেটাকে পানি দিয়ে আঠালো মাটি বা কাঁদা মাটি বানিয়েছে এবং পরে আদমের আকৃতি দিয়েছে অর্থাৎ আদমের মূর্তি তৈরী করেছে ।

সুতরাং কুরানের আয়াত এবং আদম তৈরীর কাহিনী থেকে পাওয়া যায় আল্লাহ মানুষকে শুকনো মাটি আর পানি মিশিয়ে কাঁদা মাটি বানিয়ে আদমকে তৈরী করেছে । এবং পরে আদম-হাওয়ার পর থেকে শুক্রানুর মাধ্যমে বংশধর সৃষ্টি করেছে ।



তাহলে আমরা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে জানতে পারলাম যে আল্লাহ মানুষকে সুষ্টি করেছে মাটি ও পানি দিয়ে । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কি মানুষ মাটি আর পানি দিয়ে তৈরী হয়েছে ? অর্থাৎ মানুষের গঠন প্রনালী বা মানব দেহ কী সত্যিই মাটি দিয়ে তৈরী নাকি অন্য কোন পদার্থ দিয়ে তৈরী ?

আসুন আমরা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমান দিয়ে দেখি আসলেই মানুষ মাটির তৈরী ? নাকি পানির তৈরী ?  নাকি অন্য কোন পদার্থের তৈরী ?

 মাটির মুল উপাদান হচ্ছে কিছু অজৈব পদার্থ । মাটির প্রধান উপাদানগুলো হলো- কোয়ার্টজ্ (SiO2), ক্যালসাইট (CaCO3), ফেল্ডসপার (KAlSi3O8)  এবং মিকা (K(Mg,Fe)3AlSi3O10(OH)2) ।

এছাড়াও মাটির মুল উপাদানগুলো হচ্ছে - P2O5, K2O, CaO, MgO, SiO2, Al2O3, Fe2O3, Na2O, TiO2 এবং MnO2  ।



মুল উপাদানগুলো ছাড়াও মাটিতে কিছু জৈব পদার্থ(৫%), বায়ু(২৫%) এবং কিছু পরিমান পানি(২৫%) থাকে । মাটির মুল উপাদানগুলো থাকে সবচেয়ে বেশী পরিমানে (৪৫%) । এগুলোই মাটির মুল উপাদান । বাকি উপাদানগুলো আসে বাইরে থেকে । যেমন- জৈব উপাদানগুলো আসে উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মৃত অংশ থেকে; বায়ু আসে বায়ুমন্ডল থেকে এবং পানি আসে বৃষ্টির মাধ্যমে । এছাড়াও মাটিতে কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুজীব থাকে যেগুলো আসলে মাটির মুল উপাদান নয় । কিন্তু মাটির মূল উপাদানগুলোই মাটি গঠনের প্রাচীন উপাদান যেগুলো পৃথিবীর উপরিভাগে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই ছিল ।



এখন প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ কি মাটি দিয়ে তৈরী ?

মানুষের দেহ গঠিত হয়েছে কোটি কোটি কোষ দিয়ে । আর এই কোষগুলো গঠিত হয় প্রধান দুই উপাদান নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম-এর সমন্নয়ে । সাইটোপ্লাজমে থাকে পানি এবং বিভিন্ন জৈবিক অংশ যেমন- মাইট্রোকনডিয়া, গলজি বস্তু, লাইসোসোম প্রভৃতি । এগুলো গঠিত হয়েছে প্রোটিনের সমন্বয়ে । প্রােটিন গঠিত হয় অ্যামাইনো এসিডের সমন্বয়ে । আবার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়েছে নিউক্লিক এসিডের সমন্বয়ে । নিউক্লিইক এসিড গঠিত হয় একপ্রকার সুগার, ফসফেট এবং নাইট্রোজেন বেজ দ্বারা । অর্থাৎ জীবদেহ গঠিত হয় প্রোটিন তথা অ্যামাইনো এসিড এবং নিউক্লিইক এসিডের সমন্বয়ে ।



Description: https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgveNCh4r5-4z6q_AO6dSZd5DGF53iUULI-MyqZOVgk3LFNynQ6g5RxBoPLIxtOKEYSg_MkBnXIc7sf5wLzUkbLx-Sfh9qb_vHT7eSfMh9jiWfyu105GJrBj2P8mGmvTfJQ0P65qtZbTE0/s1600/DNA-Nucleobases.svg.png



অ্যামাইনো এসিড (H2NCHRCOOH) এবং নিউক্লিক এসিড (চিত্র) কখনই মাটি দিয়ে গঠিত হয়নি ।  

কারণ মাটির উপাদান আর অ্যামাইনো এসিডের উপাদান সম্পুর্নই আলাদা ।

আবার সাইটোপ্লাজমে পানি থাকলেও জীব গঠনের মূল উপাদান অ্যামাইনো এসিড ও নিউক্লিক এসিড তৈরীতে পানির কোন ভূমিকা নেই । অর্থাৎ জীব গঠনের মূল উপাদান মাটি বা পানি দিয়ে তৈরী হয়নি । 

কিন্তু কুরআনে আল্লাহ বলেছে, মানুষকে মাটির মূল উপাদান দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে ।



সুরা মুমিনুন, আয়াত ১২

"আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার মূল উপাদান হতে ।"



মাটির মূল উপাদান (যেমন- (SiO2), ক্যালসাইট (CaCO3), ফেল্ডসপার (KAlSi3O8)  এবং মিকা (K(Mg,Fe)3AlSi3O10(OH)2)  )

এবং পানি (H2O), অ্যামাইনো এসিড ((H2NCHRCOOH) ও নিউক্লিক এসিডের মূল উপাদান থেকে সম্পুর্ন আলাদা । আর তাই মানুষ তৈরী হয়েছে মাটি থেকে কথাটি সম্পূর্ন ভূল ।

এই মাটি দিয়ে মানুষ তৈরীর কাহিণী বাইবেল থেকে নেওয়া । এমনকি মুহাম্মদের সময়ে মানুষ সৃষ্টির এই গল্প মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করেছে পৃথিবীর মাটি দিয়ে । আর তাই কুরআনের লেখক এই গল্প থেকে মানুষ মাটি থেকে সৃষ্টি হয়েছে এই ধারনাটি নিয়েছে । এবং কুরআনে লিখেছে মানুষ মাটির তৈরী । কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে মানুষ মোটেও মাটির তৈরী নয় ।

কুরআন কোন অতিবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সৃষ্টিকর্তা লেখেনি । কুরআন কোন এক স্বাধারণ মানুষ লিখেছে বলে কুরআনে মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে সম্পুর্ন ভূল তথ্য দেওয়া আছে ।

বিজ্ঞানীরা মানুষের সৃষ্টি প্রণালী বের করে ফেলেছে । সারা পৃথিবীর মানুষ এখন জানে মানুষকে কোন সুষ্টিকর্তা সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠায়নি বরং মানুষ পৃথিবীতেই এককোষী প্রাচীন জীব থেকে পর্যায়ক্রমে বিবর্তনের মাধ্যমে আজকের আধুনিক মানুষে পরিণত হয়েছে ।

মুহাম্মদের সময়ে কেউ জানতো না বিবর্তন সম্পর্কে । আর তাই মানুষের সৃষ্টির প্রাচীন কাল্পনিক সৃষ্টিতত্ব কুরআনে বর্নিত হয়েছে ।

যদি কুরআন কোন অতিবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কেউ লিখতো তবে মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে এই ভূল কখনই করতো না । যেহেতু কুরআনের লেখক মানুষ সৃষ্টির কাল্পনিক উপকথা বা মিথ্যে ধারনা কুরআনে লিখেছে তাই এটা স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে কোন অতিবুদ্ধমত্তা-সম্পন্ন সৃষ্টিকর্তা নয় বরং কোন এক স্বাধারণ মানুষ কুরআন রচনা করেছে ।

যেহেতু মুহাম্মদ কুরআনের আয়াত সবার কাছে বর্ননা করেছে তাই কুরআন মুহাম্মদ নিজে তৈরী করেছে । আর এজন্যই কুরআনে মানুষের সৃষ্টিতত্ব সম্পর্কে ভুল ধারনা ব্যক্ত করেছে ।

অর্থাৎ কুরআন আল্লাহর বাণী নয় কুরআন মুহাম্মদের নিজের বাণী ।



কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী কিনা তার প্রমান যেমন মুহাম্মদ দিতে পারেনি মোটেও ঠিক একই ভাবে মুসলমানরাও আজ পর্যন্ত একটা প্রমাণও হাজির করতে পারেনি কুরআন ঐশী বাণী তার পক্ষে। কোন প্রকারের প্রমাণ না দিতে পেরে মুসলমানরা কিছু অপকৌশল অবলম্বন করে কুরআনকে আল্লাহ নামের আরবীয় সৃষ্টিকর্তার বাণী বলে দাবী করে। তারা কুরআনের নানা রকমের ভূল ভ্রান্তিপূর্ণ আয়াতগুলোকে বিজ্ঞানময় বলে দাবী করে। এভাবে প্রাচীন আরবের এক সাধারণ মানুষের লেখা গ্রন্থকে বিজ্ঞানময় কিতাব বানাতে মুসলমানরা এমন কোন অপকৌশল নেই যা তারা করে না। তবুও তারা তাদের ভূলে ভরা মুহাম্মদের অজ্ঞতা সম্পন্ন গ্রন্থকে বিজ্ঞানময় বানাতে পারেনি। বরং কুরআনের নানা রকমের ভূল ভ্রান্তি মানুষের সম্মুখে আরো বেশি করে উন্মুক্ত হয়েছে। মুসলমানরা যত কুরআনের অর্থকেই বদলে দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাক না কেন, আজ পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই জেনে গেছে কুরআনের নানা প্রকারের ভূল ভ্রান্তি সম্পর্কে। এজন্য মুসলমানরা বিজ্ঞানকে ভূল ভাবে উপস্থাপন করে, কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থ বদলে বিজ্ঞানের অনুকুলে কুরআনের নতুন এবং ভিন্ন অর্থ এনে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানিয়ে প্রচার করে কুরআন বিজ্ঞানময় গ্রন্থ। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো ভূলে ভরা কুরআনের অর্থকে বদলে দিয়ে কুরআনের ভূলকে সংশোধনের মাধ্যমে যে বিজ্ঞানময় কিতাব বানানো হয় সেটি মুহাম্মদ রচিত কুরআন থাকে না। সেটি হয়ে যায় আধুনিক বিজ্ঞান জানা মুসলমানদের দ্বারা সংশোধিত কুরআন। কুরআনের ভূলকে সংশোধন করে এর অর্থকে বদলে দিয়ে একে বিজ্ঞানময় বানানোর কারণেই বরং প্রমাণ হয় যে কুরআন আসলে এক প্রাচীণ আরবের ভ্রান্ত ধারণাগ্রস্থ মানুষের লেখা বই। এজন্যই এর ভূলকে সংশোধন করতে ভিন্ন অর্থ আনতে হয় এবং নতুন নতুন ব্যাখ্যার আমদানী করতে হয়। যদি কুরআন সত্যিই কোন সৃষ্টিকর্তার গ্রন্থ হতো তবে কুরআনের অর্থের পরিবর্তন করতে হতো না। তাও এমন ভাবে অর্থের পরিবর্তন করে যেন সেই নতুন অর্থটি বিজ্ঞানের সাথে হুবহু মিলে যায়। বিজ্ঞানের সাথে মিলিয়ে কুরআনের নতুন অর্থ করায় এটাই প্রমানিত হয় কুরআন আসলে মুহাম্মদের লেখা একটি প্রাচীণ ভ্রান্তির গ্রন্থ। কারণ সৃষ্টিকর্তার গ্রন্থকে অর্থের পরিবর্তনের মাধ্যমে সংশোধন করে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানানোর প্রয়োজন পরে না; যা মুসলমানরা করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানায়।



কুরআন কোন অতিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত গ্রন্থ নয়। বরং কুরআন এক প্রাচীণ আরবের বুকে দাড়িয়ে থাকা অজ্ঞ মানুষের লেখা বই সেটা পৃথিবীর বহু বিখ্যাত জ্ঞানী মানুষেরা প্রমান করে দিয়েছে। আমিও গত সবকটি পর্বে নিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করে দিয়েছি যে কুরআন কোন অতিক্ষমতাবান সৃষ্টিকর্তার রচিত গ্রন্থ নয়। বরং কুরআন মুহাম্মদের মতো এক অজ্ঞ আরবের লেখা বই।

কুরআন মুসলমানদের কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কোন ঐশী গ্রন্থ নয় সেটার আরো একটি প্রমাণ এই পর্বে উপস্থাপন করবো।



প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে বিমোহিত হয়ে যেতো। রাতের কালো আকাশের বুকে ভেসে থাকা মিটি মিটি তারাগুলো আকাশের সুন্দর্য্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে হাজার গুন। ঝিকিমিকি তাঁরাগুলো যেন একেকটি মুক্তা। আর আকাশের বুকে ফুটে উঠা তাঁরাগুলো যেন টিপের মতো সাজ্বিয়ে দেওয়া হয়েছে স্বযত্নে। আকাশের সুন্দর্য যেমন প্রাচীণকালের মানুষদেরকে মুগ্ধ করতো ঠিক সেভাবে আকাশের ঝিকিমিকি তাঁরাগুলোর রহস্য তাদের কাছে ছিল অজানা। তারা চিন্তা করে পেতো না আকাশের বুকে এতো সুন্দর মুক্তগুলো কিভাবে সাজানো হযেছে? তারা এসবের উত্তর জানতো না। তাদের জানার সাধ্যও ছিল না। কিন্তু তাদের অনুসন্ধিগ্ন মন তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজে নিজে কল্পনা করে নিতো। তারা ভাবতো আকাশের তাঁরাগুলোকে কেউ একজন অতি যত্নে টিপের মতো করে লাগিয়ে দিয়েছে। আর ছোট ছোট তাঁরকাগুলো লাগানো হয়েছে ছাদের মতো আকাশের গায়ে। আকাশকে যেমন ছাদ বা তাবুর মতো মনে হয় ঠিক একই ভাবে তারকাগুলোকেও মুক্তার মতো মনে হয়। প্রাচীণ কালের মানুষ কল্পনা করে নিয়েছিলো তারকাগুলো এক একটি মুক্তার মতো। তারকাগুলো ছাদ বা তাবুর মতো আকাশের গায়ে লাগিয়ে আকাশের সুন্দর্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এমনটাই বিশ্বাস করতো প্রাচীণকালের মানুষগুলো।

প্রাচীণ আরবের মানুষগুলোও আকাশ এবং তারকাগুলো সম্পর্কে এমনটাই বিশ্বাস করতো। কুরআনের প্রবর্তক (বা রচয়িতা) মুহাম্মদের আকাশ ও তারকাগুলো সম্পর্কে ধারণাগুলোও প্রাচীণ মানুষের মতই ছিল। মুহাম্মদও মনে করতো আকাশ হলো ছাদের মতো বা তাবুর মতো কোন কিছু। আসলে আকাশকে খালি চোখে দেখলে সবার কাছেই ছাদ বা তাবুর মতই দেখায়। আর মুহাম্মদও প্রাচীণ মানুষদের মতই বিশ্বাস করতো তারকাগুলো এক একটি ঝিকিমিকি মুক্তার মতো কিছু একটা। মুহাম্মদ তারকাগুলো সম্পর্কে তার ধারণাগুলোকে কুরআনে বর্ণনা করেছে নানা ভাবে। কুরআনে আকাশ ও তারকা সম্পর্কিত আয়াতগুলো দেখলে বুঝা যায় আকাশ বা তারকাগুলো সম্পর্কে মুহাম্মদ কেমন ধারণা রাখতো। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মুহাম্মদের চিন্তা ধারা বর্ণিত হয়েছে স্পষ্ট করে।

কুরআনে বর্ণিত মুহাম্মদের তারকা সম্পর্কিত ধারণাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখবো মুহাম্মদের বর্ণিত ধারণাগুলো কি সত্যি নাকি মুহাম্মদ তার প্রাচীণ অজ্ঞতাগুলোকেই কুরআনে লিপিবদ্ধ করে রেখেছে?



কুরআনের সূরা আত্ব তারিক-এর ১-৩ নং আয়াতে বর্ণিত আছে,

"শপথ আকাশের এবং রাত্রিতে যা প্রকাশ পায়;

তুমি কি জান রাত্রিতে যা প্রকাশ পায় তা কি ?

ওটা দীপ্তিমান নক্ষত্র!" (অনুবাদ - প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

এই আয়াতগুলোতে তারকাগুলো সম্পর্কে মুহাম্মদের ধারণার প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে। কুরআনে আল্লাহ আকাশ ও রাতে প্রকাশিত তারকাগুলোর কসম কেটেছে। পক্ষান্তরে বলা যায় মুহাম্মদ তারকার কসম কাটছে। কারণ কসম কাটা মানুষের স্বভাব। কোন সৃষ্টিকর্তা কসম কাটবে তাও আবার তুচ্ছ তারকার সেটা মেনে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

এই আয়াতটিতে একটি বিষয় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে মুহাম্মদ তারকাগুলোকে চাঁদের মতো দীপ্তিমান বলেছে। অর্থাৎ মুহাম্মদ বুঝতে পেরেছিল যে তারকাগুলো আসলে আলো প্রদান করে। তবে কি এটি কোন বৈজ্ঞানিক দাবী ছিল? আসলে প্রাচীণ কাল থেকেই মানুষ দেখে এসেছে রাতের আকাশের তারকাগুলো দীপ্তিমান। সুতরাং এটা একটি সাধারণ মানুষের কথা ছাড়া আর কিছুই নয়।



সূরা ফুরকানের ৬১ নং আয়াতে আছে,

"কত মহান তিনি যিনি আকাশে সৃষ্টি করেছেন বড় বড় তারকাপুঞ্জ এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ (সূর্য) ও জ্যোতির্ময় চন্দ্র! (অনুবাদ- প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

এই আয়াতে আকাশে তারকা, সূর্য ও চন্দ্রের জন্য আল্লাহকে মহান বলা হয়েছে। সাথে এও বলা হয়েছে  চন্দ্র আলো প্রদান করে তথা চাঁদের নিজের আলো রয়েছে।



উপরের আয়াত দুটো দিয়ে বুঝা গেলো মুহাম্মদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আকাশে তারকাগুলোকে স্থাপন করেছে। কিন্তু কি উদ্দেশ্য আকাশে তারকাগুলোকে সৃষ্টি করার ? সূর্যকে না হয় দিনের আলোর জন্য এবং চাঁদকে না হয় রাতের আলোর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু তারকাগুলোকে সৃষ্টি করার কারণটি কি ?



এর উত্তর স্বয়ং কুরআন লেখক কুরআনে দিয়ে দিয়েছে। সূরা ক্বাফ-এর ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

"তারা কি তবে তাদের উপরকার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না - আমরা কেমন করে তা তৈরি করেছি এবং তাকে সুশোভিত করেছি, আর তাতে কোনো ফাটলও নেই ?" (অনুবাদ - ডঃ জহুরুল হক)



বুঝা গেলো আকাশকে সুশোভিত করার জন্য অর্থাৎ সাজানোর জন্য তারকাগুলোকে সৃষ্টি করা হযেছে। বড় কথা হলো যে আকাশে তারকাগুলোকে স্থাপন করা হয়েছে সেই আকাশের গায়ে একটি ফাটলও নেই। অবাক করা কান্ড, আকাশ যে একটি কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি এবং তাতে একটি ফাটল পর্যন্ত নেই তা কুরআন না পড়লে আমরা জানতেই পারতাম না! সত্যি মুহাম্মদের আকাশ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে এই আয়াতটিতে। মুহাম্মদও বিশ্বাস করতো আকাশ ঘরের ছাদের মতো এবং তাতে কোন ফাটল নেই।



তারকাগুলোকে সৃষ্টি করা হযেছে আকাশের সুন্দর্যের জন্য এই তথ্যটি আরো বর্ণিত রয়েছে সূরা হা মীম আস সাজদা-এর ১২ নং আয়াতে;

"(এই) একই সময়ে তিনি দুদিনের ভেতর এ (ধূম্রকুঞ্জ)-কে সাত আসমানে পরিণত করলেন এবং প্রতিটি আকাশে তার (উপযোগী) আদেশনামা পাঠালেন; পরিশেষে আমি নিকটবর্তী আসমানকে তারকারাজি দ্বারা সাজিয়ে দিলাম এবং (তাকে শয়তান থেকে) সংরক্ষিত করে দিলাম, এসব (পরিকল্পনা) অবশ্যই পরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক (আগে থেকেই) সুবিন্যস্ত করে রাখা হয়েছিল।" (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)

এই আয়াতে যেমন বলা হয়েছে তারকাগুলোকে আকাশকে সাজিয়ে দেবার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু তাই নয় বরং আরো বর্ণিত হয়েছে আকাশ আসলে সাতটা। মুসলমানদের আরবীয় সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ দাবী করছে আকাশ একটা নয় বরং আকাশ হলো সাতটা অর্থাৎ সাতটা কঠিন পদার্থের ছাদের মতো শক্ত আকাশ। এই সাতটা আকাশের মধ্যে তারকাগুলোকে সব চেয়ে নিচের আকাশে স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় আকাশকে শয়তানদের থেকে সংরক্ষিত করেও দেওয়া হয়েছে। মোট কথা আকাশ হলো সাতটা যা আসলে বাস্তবতা বহির্ভূত ভ্রান্ত দাবী এবং তারকাগুলো সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হলো আকাশের সুন্দর্য্য বৃদ্ধি করা।



তাঁরাগুলোকে যে আকাশের সুন্দর্য্য রক্ষার্থেই সৃষ্টি করা হয়েছে তার প্রমাণ আরো একটি আয়াতে রয়েছে। কুরআনের সূরা আস-সাফফাত-এর ৬ নং আয়াতে আছে;

"নিঃসন্দেহে আমরা নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির শোভা দিয়ে সুশোভিত করেছি," (অনুবাদ - ডঃ জহুরুল হক)

অর্থাৎ নিশ্চিত ভাবেই তারকাগুলো সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য আকাশের সুন্দর্য বৃদ্ধি করা। অর্থাৎ আকাশকে সুন্দর করে সাজাতেই তারকাগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে।



এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারকাগুলোকে কি শুধুমাত্র আকাশের সুন্দর্য বাড়াতেই সৃষ্টি করা হয়েছে, নাকি এদের অন্য কোন উদ্দেশ্য রয়েছে ? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা পাবো সূরা নাহলের ১৬ নং আয়াতে;

"আর পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও; এবং ওরা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়।" (অনুবাদ - প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

এই আয়াত অনুযায়ী তারকাগুলোকে শুধু আকাশের সুন্দর্য বাড়াতেই সৃষ্টি করা হয়নি বরং তারাকাগুলো দেখে যেন মানুষ পথের দিক নির্ণয় করতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্যই তারকাগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে।



তারকাগুলোকে যে পথ নির্ধারক চিহ্ন হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় সূরা আন আম-এর ৯৭ নং আয়াতে;

"আর তিনিই তোমাদের জন্যে নক্ষত্ররাজিকে সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা এগুলোর সাহায্যে অন্ধকারে পথের সন্ধান পেতে পার, স্থলভাগেও এবং সমুদ্রেও; নিশ্চয়ই আমি প্রমাণসমূহ খুব বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি ঐসব লোকের জন্যে যারা জ্ঞান রাখে।" (অনুবাদ – প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

এই আয়াতে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে নক্ষত্রগুলোকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হলো এগুলোর সাহায্যে যাতে রাতের অন্ধকারে মানুষ পথের সন্ধান পায়। স্থলের এবং জলের সব জায়গাতেই যেন মানুষ অন্ধকারে পথের দিক নির্দেশ পায় সেজন্যই তারকাগুলোকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাৎ তারকাগুলোকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হলো তারকাগুলো আকাশে স্থাপন করে আকাশের সুন্দর্য বৃদ্ধি করা এবং এগুলোর সাহায্যে যাতে মানুষ পথের সন্ধান পায় সেই ব্যবস্থা করা।



এখন প্রশ্ন হলো, তারকাগুলো সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য কি শুধু আকাশের সুন্দর্য বৃদ্ধি করা এবং পথ নির্দেশ পাওয়াই; নাকি এগুলো সৃষ্টি করার অন্য কোন উদ্দেশ্য রয়েছে ? এর উত্তর রয়েছে সূরা আল মুলক-এর ৫ নং আয়াতে,

"নিকটবর্তী আকাশটিকে (তুমি দেখো, তাকে কিভাবে) প্রদীপমালা দিয়ে আমি সাজিয়ে রেখেছি, (উর্ধ্বলোকের দিকে গমনকারী) শয়তানদের তাড়িয়ে বেড়ানোর জন্যে এ (প্রদীপগুলো)-কে আমি (ক্ষেপনাস্ত্র হিসেবে) সংস্থাপন করে রেখেছি, (চুড়ান্ত বিচারের দিন) এদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডলীর ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থাও আমি (যথাযথভাবে) প্রস্তুত করে রেখেছি।" (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)

এই আয়াত অনুযায়ী আমরা জানতে পারছি, তারকাগুলোকে শুধু আকাশের সুন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়নি বরং এগুলো সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হলো শয়তানদেরকে তাড়িয়ে বেড়ানো এবং এগুলোকে শয়তানদের তাড়াতে ক্ষেপনাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে। অর্থাৎ তারকাগুলো হলো এক একটি আগুনের গোলা। এই আগুনের গোলাগুলো দিয়ে শয়তানদের তাড়িয়ে বেড়ানো হয় এবং ক্ষেপনাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।



তারকাগুলোকে আগুনের গোলা হিসেবে শয়তানদের শাস্তি দেবার জন্য বানানো হয়েছে এটার প্রমাণ পাওয়া যায় কুরআনের আরেকটি আয়াতে। কুরআনের সূরা হিজর-এর ১৬-১৮ নং আয়াতে বর্ণিত আছে,

"আকাশে আমি গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং ওকে করেছি সুশোভিত দর্শকদের জন্যে।

প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হতে আমি ওকে রক্ষা করে থাকি।

আর কেউ চুরি করে সংবাদ শুনতে চাইলে ওর পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা।" (অনুবাদ-প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

এই আয়াতে বলা হয়েছে তারকাগুলোকে আকাশকে সুশোভিত করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এগুলোকে শয়তানদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বা চুরি করে শয়তানরা কোন কথা শুনতে চাইলেই তারকাগুলো আগুনের গোলা হয়ে তাদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়।



এই আয়াতটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত আকাশ ও তারকাগুলো সম্পর্কে মুহাম্মদের ধারণা প্রমাণ করার জন্য। মুহাম্মদ মনে করতো আকাশ হলো ঘরের ছাদের মতো শক্ত কঠিন পদার্থের তৈরি। এবং এই আকাশের গায়ে আগুনের গোলার মতো তারকাগুলোকে স্থাপন করা হয়েছে। যখন কোন শয়তান ছাদ আকৃতির আকাশের উপরের কোন খবর শুনার চেষ্টা করে তখন এই তারকাগুলোকে নিক্ষেপ করা হয়। এই আগুনের গোলা তারকাগুলো শয়তানকে তাড়িয়ে বেড়ায় এবং তাদের হাত থেকে আকাশের উপরের বিষয়গুলোকে রক্ষা করে। শয়তানরা শক্ত কঠিন আকাশের উপরের খবর শুনতে পারে না। কিন্তু তারা আকাশের উপরের খবরগুলো শুনার জন্য চেষ্টা করে যেতে থাকে। যখনই তারা কোন খবর শোনার চেষ্টা করে সাথে সাথে তারকাগুলো তাদের পিছনে ধাওয়া করে আগুনের গোলার মতো ক্ষেপনাস্ত্র হিসেবে।



মুহাম্মদের আকাশ, তারকা সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয় কুরআনের সুরা সাফফাতের ৬ থেকে ১০ নং আয়াতগুলো পড়লে।

""আমি পৃথিবীর আকাশকে নক্ষত্ররাজির শোভা দ্বারা সুশোভিত করেছি । এবং রক্ষা করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান হতে । ফলে, তারা ঊর্ধ্ব জগতের কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং তাদের প্রতি (জলন্ত তারকা) নিক্ষিপ্ত হয় সকল দিক হতে, বিতাড়নের জন্যে এবং তাদের জন্যে আছে অবিরাম শাস্তি । তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তাদের পশ্চাদ্বাবন করে ।" (অনুবাদ-প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)



এই আয়াতটিতে স্পষ্ট করেই বুঝানো হচ্ছে আকাশ হলো কঠিন পদার্থের তৈরি একটি ছাদ বিশেষ। এজন্যই আকাশের উপরের কোন কিছু শুনা যায় না। শয়তান আকাশের উপরের কথা বার্তা শুনার জন্য প্রায়ই চেষ্টা চালায়। কিন্তু যখন তারা কিছু শুনতে যায় তখন আগুনের গোলার মতো তারকাগুলো তাদেরকে তাড়া করে সেখান থেকে বের করে দেবার জন্য। এমনিতেই শয়তান কিছু শুনার সুযোগ পায় না কিন্তু কখনও যদি চুরি করে কিছু শুনে ফেলে সাথে সাথে তাদেরকে পিছু ধাওয়া করে জ্বলত্ব উল্কাপিন্ড তথা খসে পড়ে তারকা।



উপরের আয়াতগুলো থেকে মুহাম্মদের আকাশ ও তারকাপুঞ্জ সম্পর্কে ধ্যাণ ধারণা স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। আসলে মুহাম্মদ আকাশ ও তারকাগুলো সম্পর্কে প্রাচীণকালের মানুষের ভ্রান্ত ধারণাগুলোকেই সত্য বলে মনে করতো। আর তাই সে এসব ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে সত্য মনে করে কুরআনে লিখে দিয়েছে। যা প্রমাণ করে কুরআন আসলে মুহাম্মদের নিজের রচিত গ্রন্থ।



আকাশে মাঝে মাঝে দেখা যায় তারকার মতো আগুনের গোলা ছুটে যায়। দেখে মনে হয় তাঁরাগুলো যেন মাঝে মাঝে খসে পড়ে যায়! এটা মুহাম্মদও দেখেছিল জীবনে অসংখ্যবার। আর খসে পড়া তাঁরাগুলোকে দেখে মুহাম্মদ ভেবেছে এই খসে পড়া তাঁরাগুলো বুঝি আকাশে মিটিমিটি করে জ্বলা তারকাগুলোই। আসলে তারকাগুলো যে আমাদের সূর্যের মতোই একেকটি বিশাল আকৃতির নক্ষত্র এই তথ্যটি মুহাম্মদের মতো এক প্রাচীণ অজ্ঞ মানুষের জানার কথা নয়। অথচ মুহাম্মদের অনেক আগেই গ্রীক দার্শনিকদের অনেকেই জানতে পেরেছিল যে তারকাগুলো আসলে বিশাল আকৃতির এক একটি সূর্য। কিন্তু মুহাম্মদ আরবের এক সাধারণ অজ্ঞ মানুষ হওয়ায় এসব তথ্য জানতো না। তাই সে উল্কা পিন্ড থেকে বিচ্ছুরিত আলো দেখে সেগুলোকে তারকা ভেবেছে। আর মনে করেছে তারকাগুলো ছোট ছোট মুক্তার মতো আগুনের গোলা। মুক্তার মতো এই আগুনের গোলাগুলোকে আকাশের সুন্দর্য রক্ষার্থে আকাশে স্থাপন করা হয়েছে। যা দেখে মানুষ পথের দিক নির্দেশনা পায়। এসব মুক্তার মতো আগুনের গোলাগুলো শয়তানদের তাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয় এবং শয়তানরা যখন আকাশের উপরে ফেরেশতাদের বলা কথা চুরি করে শুনতে যায় তখন এই আগুনের গোলাগুলো আকাশ থেকে খসে পড়ে এবং শয়তানদের তাড়া করে বেড়ায়। এসময়ই মানুষ খসে পড়া তাঁরাগুলো দেখতে পায়।

অথচ মুহাম্মদ জানতো না যে খসে পড়া তারকাগুলো প্রকৃতপক্ষে কোন তারকা নয়। আর তারকাগুলোর আকৃতি এতো বিশাল যে এগুলো দিয়ে শয়তানদের পিছু ধাওয়া করার কথা কল্পনা করাটাও হাস্যকর।

আকাশ কোন কঠিন পদার্থের তৈরি ছাদ নয়। কুরআনে যেভাবে আকাশের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যে কেউ আকাশের সীমানার বাইরে যেতে পারে না, ছাদের মতো আকাশের উপরের সংবাদ শুনার ধারণা করা, এবং শয়তানদের পিছনে তারকাগুলোর পিছু ধাওয়া করা, এসবগুলোই অজ্ঞ মুহাম্মদের ভ্রান্ত ধারণা। এর সাথে বাস্তবতার কোনই মিল নেই। শয়তান এবং ফেরেশতা বলতে বাস্তব জগতে যেমন কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই ঠিক একই ভাবে শয়তান ছাদের মতো আকাশের উপরের কোন কথা চুরি করে শুনার ধারণাগুলো আসলে রুপকথার গল্পকথার মতো। এর অস্তিত্ব বাস্তব জগতে নেই। আসলে মুহাম্মদ এসব ফেরেশতা ও শয়তানের ভ্রান্ত বিশ্বাস গুলো মানুষের মুখে শুনে শুনে বিশ্বাস করেছে। তাই তার ধারণা হয়েছে শয়তান কঠিন আকাশের উপরের খবরগুলো যখন শুনার চেষ্টা করে তখনই তারকাগুলো তাদের পিছু ধাওয়া করে। মোট কথা মুহাম্মদ যেসব ভ্রান্ত ধারণা সেসময়ের মানুষের কাছ থেকে পেয়েছে এবং আকাশ ও তারকাগুলোকে যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছে ঠিক সেভাবেই সে আকাশ ও তারকার ধারণাগুলো তৈরি করেছে সম্পূর্ণ নিজের মতো করে। আর সেসব ভ্রান্ত বিশ্বাসগুলোই কুরআনে লিখে দিয়েছে।



এর প্রমান পাওয়া যায় যখন মুহাম্মদ বর্ণিত কুরআনে আকাশ, তারকা এবং শয়তানের এমন উদ্ভট গল্প কথার উল্লেখ থাকে। তারকাগুলো খসে পড়া তাঁরা নয়। আকাশ শক্ত কঠিন পদার্থের তৈরি ছাদ নয় তাই এর কোন ফাটল থাকারও কথা নয়। শয়তান বলে কেউ নেই তাই এর পিছনে আগুনের গোলার পিছু ধাওয়ার ধারণাটি পুরোপুরিই অবাস্তব এবং হাস্যকর। এসব ভ্রান্ত ধারণাগুলোর অস্তিত্ব থাকায় প্রমাণ হয় কুরআন কোন অতিক্ষমতাবাণ সৃষ্টিকর্তার বাণী হতে পারে না। বরং কুরআন মুহাম্মদের মতো প্রাচীণ আরবীয় অজ্ঞ মানুষের লেখা প্রাচীণ ধ্যান ধারণার গ্রন্থ, এটাই প্রমাণিত হয়।



মুহাম্মদের মেরাজের গল্পে আমরা দেখতে পাই আকাশের সীমানা পার হবার জন্য প্রত্যেক আকাশে প্রহরী ফেরেশতা থাকে। তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আকাশের উপরে উঠতে হয়। কুরআনেও বলা হয়েছে কেউ আকাশের বাইরে যেতে পারবে না অনুমতি ব্যতীত (সুরা আর রাহমান- আয়াত ৩৩)। এভাবে কুরআনের শয়তানও আকাশের উপরের কোন কথা শুনতে পারে না। কারন শুনতে গেলেই তারকাগুলো আগুনের গোলোর মতো নিক্ষিপ্ত হয় শয়তানদের তাড়িয়ে দেবার জন্য।

এসব ভ্রান্ত ধারণাগুরো মুহাম্মদ মনে প্রাণে বিশ্বাস করতো বলেই কুরআনে এসব ভ্রান্ত ধারণাগুলো লিখে দিয়েছে। যা প্রমান করে কুরআন আসলে মুহাম্মদের নিজের লেখা বই।



আকাশ ও নক্ষত্র সম্পর্কিত কুরআনের ভ্রান্ত ধারণাগুলো যেমন প্রমাণ দেয় কুরআন আল্লাহ নামের কোন সৃষ্টিকর্তার গ্রন্থ নয় ঠিক তেমনি নক্ষত্রে সম্পর্কিত আরো কিছু আয়াত আছে যা প্রমাণ দেয় কুরআন আসলে মুহাম্মদের লেখা গ্রন্থ।

কুরআনের সূরা আন নাহল-এর ১২ নং আয়াতে আছে;

"আর তিনি তোমাদের জন্য সেবারত করেছেন রাত ও দিনকে, আর সূর্য ও চন্দ্রকে। আর গ্রহনক্ষত্রও অধীন হয়েছে তাঁর বিধানে। নিঃসন্দেহ এতে নিশ্চয়ই নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা জ্ঞানবুদ্ধি রাখে।" (অনুবাদ - ডঃ জহুরুল হক)

এই আয়াত অনুযায়ী সূর্য, চন্দ্রের মতো নক্ষত্রের জন্যও কিছু বিধান বা নিয়ম কানুন রেখেছে। কি সেই বিধান সেটা জানতে পারা যায় কুরআনের অন্য কিছু আয়াতে।



কুরআনের সূরা নাজমের ১ নং আয়াতে বর্ণিত আছে;

"নক্ষত্রের শপথ যখন তা ডুবে যায়," (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ) 

এই আয়াত থেকে আমরা জানতে পারছি তারকাগুলোও সূর্য ও চন্দ্রের মতো ডুবে যায় বা অস্ত যায়। অর্থাৎ কুরআন বলছে সূর্য ও চাঁদ যেভাবে প্রতিদিন উদিত হয় এবং অস্ত যায় ঠিক একই ভাবে তারকাগুলোও অস্ত যায়।



এর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় কুরআনের সূরা আত্ব-তূর-এর ৪৯ নং আয়াতে;

"রাতের একাংশেও তুমি তাঁর তাসবীহ পাঠ করো, আবার (রাতের শেষে) তারাগুলো অস্তমিত হবার পরও (তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করো)। (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)  

এই আয়াতটি স্পষ্ট বলছে রাতের শেষে তারকাগুলো অস্ত যায়। সূর্য যেমন সন্ধায় অস্ত যায় এবং চাঁদ যেমন সকালে অস্ত যায় ঠিক একই ভাবে তারকাগুলোও সকাল বেলায় বা ভোর বেলায় অস্ত যায়।



 একই কথা আছে কুরআনের সূরা ওয়াকি'আহ্ (ওয়াক্বিয়া), আয়াত ৭৫ নাম্বারে;

"আমি শপথ করছি নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের," (অনুবাদ-প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান) 

অর্থাৎ তারকাদের একটি অস্তাচল আছে; যেভাবে সূর্য ও চন্দ্রের অস্তাচলের কথা কুরআন দাবী করেছে। কুরআনের এই আয়াত অনুযায়ী তারকাদেরও সুর্য় ও চন্দ্রের মতো একটি অস্তাচল রয়েছে এবং তারকাগুলো সূর্য চাঁদের মতোই অস্ত যায়।

আমরা বর্তমানে জানি যে নক্ষত্রগুলো একেকটি সূর্যের মত এবং সূর্যের চেয়েও বড় আকৃতির সূর্য। আমাদের সূর্যটিও একটি নক্ষত্র। কিন্তু কুরআন দাবী করেছে তারকাগুলো হলো আকাশের সুন্দর্য বাড়ানোর জন্য ও পথের নির্দেশ পাবার জন্য স্থাপিত মুক্তার মতো আলোর গোলা। যা আকাশে মিটিমিটি জ্বলতে থাকে এবং শয়তানদের পিছনে ধাওয়া করে মাঝে মাঝে। অর্থাৎ আকাশের তারাগুলোও যে এক একটি বিশাল আকৃতির সূর্যের মতো নক্ষত্র এটি কুরআন লেখক জানতো না। এজন্যই এসব অর্থহীন ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে কুরআনকে ভরিয়ে তুলেছে। যদি কুরআন লেখক জানতো যে তারকাগুলো কোন আগুনের গোলা নয় এবং এগুলোকে সুন্দর্য বাড়ানোর জন্য বা পথের নির্দেশক বানানো হয়নি তাহলে এসব অর্থহীন ভ্রান্ত ধারণার কথা কুরআনে লিখে দিতো না। নক্ষত্রগুলো কখনও অস্ত যায় না। সূর্যের আলোর তীব্রতায় নক্ষত্রগুলোকে শুধুমাত্র দেখা যায় না। এসব বৈজ্ঞানিক তত্বকথা মুহাম্মদের মতো প্রাচীণ মানুষের জানা সম্ভব ছিল না। এজন্যই সে তারকাগুলো সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা রাখতো; যা সেসময়ের সাধারণ অজ্ঞ মানুষগুলো বিশ্বাস করতো; সেগুলো মুহাম্মদও সত্য বলে বিশ্বাস করতো্। এজন্যই সে এসব ভ্রান্ত ধারণা কুরআনে লিখে দিয়েছে। যা প্রমাণ হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে যে কুরআন আসলে অতিক্ষমতাবাণ কোন সৃষ্টিকর্তা রচিত গ্রন্থ নয় বরং কুরআন হলো মুহাম্মদের নিজের রচিত একটি প্রাচীণ ভ্রান্তিপূর্ণ গ্রন্থ। তাই সে নক্ষত্রের অস্ত যাবার কথা কুরআনে উল্লেখ করেছে যেভাবে সে নক্ষত্রকে আগুনের গোলা মনে করেছে সেরকম ভাবে।



মুহাম্মদ যে উল্কাপিন্ডকে মনে করতো তারকা বা নক্ষত্র তার প্রমান পাওয়া যায় নিচের আয়াতে।

সূরা আত্ তাকভীর, আয়াত ১৫-১৬,

"শপথ সেসব তারকাপুঞ্জের যা (চলতে চলতে) গা ঢাকা দেয়,

(আবার) যা (মাঝে মাঝে) অদৃশ্য হয়ে যায়, (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)  

এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে তারকাকে চলতে চলতে গা ঢাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা মাঝে মাঝে অদৃশ্য হয়ে যায়। অর্থাৎ কুরআন লেখক উল্কাপিন্ডকে তারকা ভাবতো।

আমরা জানি তারকা কখনই আলো দেওয়া বন্ধ করে না। কুরআন যেভাবে দাবী করেছে কিছু কিছু তারকা চলতে থাকে এবং অদৃশ্য হয়ে যায় এরকম কোন তারকার অস্তিত্ব বাস্তব জগতে নেই। বরং কুরআন লেখক উল্কাপিন্ডকে তারকা ভেবেছে। কারণ উল্কাপিন্ডই একবার জ্বলে এবং একবার অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনকি উল্কাপিন্ডই চলতে থাকে। কোন তারকাই উল্কাপিন্ডের মতো চলতে থাকে না এবং মাঝে মাঝে অদৃশ্যও হয় না। স্পষ্টতই কুরআন লেখক জানতো না যে উল্কাপিন্ড আসলে তারকা নয়। অর্থাৎ স্পষ্ট ভাবেই এই আয়াতটি প্রমান দিচ্ছে কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী নয়।



কুরআন যে কোন সৃষ্টিকর্তার বানী নয় তার আরো কিছু প্রমাণ-

কুরআনের সূরা আরাফের ৫৪ নং আয়াতে আছে;

"... সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজী সবই তাঁর হুকুমের অনুগত, ..." (অনুবাদ - প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান)

অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্রের মতো তারকাগুলোও আল্লাহর হুকুমে চলে।



কুরআনের সূরা ইনফিতার-এর ১ ও ২ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

"যখন আকাশ ফেটে যাবে,

যখন তারকারাজী বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে, " (অনুবাদ-প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবর রহমান) 

এই আয়াতে কিয়ামতের কথা বলা হয়েছে। যখন কেয়ামত আসবে তখন তারকাগুলো আকাশ থেকে ঝরে পরবে। অর্থাৎ কুরআন লেখক ভেবেছে তারকাগুলো ছাদের মতো আকাশের গায়ে টিপের মতো স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু যেদিন কেয়ামত আসবে সেদিন আকাশ ভেঙ্গে যাবে এবং এরফলে তারকাগুলো ঝরে পড়বে। আসলে কুরআন লেখকের কোন ধারণাই ছিল না যে বিশাল আকৃতির নক্ষত্রগুলোর পক্ষে পৃথিবীর উপর ঝরে পড়া কখনই সম্ভব নয়। আমরা যেমন ঘরের ছাদে কাগজের তারকা লাগিয়ে দেই এবং সেগুলো ঝরে পড়ে ঠিক একই ভাবে কিয়ামতের দিন তারকাগুলোও আকাশের গা থেকে ঝরে পড়বে। কুরআন লেখক যে কত বড় অজ্ঞ একজন ব্যক্তি এটা এই আয়াতটি দ্বারাই স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে। কুরআনের লেখকের কোন ধারণাই ছিল না তারকাগুলো সম্পর্কে।



কুরআনের সূরা আল মোরসালাত-এর ৮-৯ নং আয়াতে আছে;

"যখন আকাশের তারাগুলোকে জ্যোতিহীন করে দেয়া হবে,

যখন আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে," (অনুবাদ - হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ) 

অর্থাৎ কেয়ামতের দিন আকাশ ভেঙ্গে যাবে এবং তখন তারকাগুলো নিভে যাবে।

কুরআন লেখক তারকাগুলো সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখতো না। পৃথিবী ও আমাদের সূর্য যদি ধ্বংসও হয় তবুও সমস্ত তারকাগুলো ধ্বংস হবে না। কারণ তারকাগুলো একেকটি সূর্যের মতো নক্ষত্র। বিশ্বজগতের অনেক তারকাই ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে কিন্তু পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে যায়নি। আবার সূর্য ও পৃথিবী যদি ধ্বংস হয়েও যায় তখনও বাকী তারকাগুলো অক্ষত থাকবে এবং আলো দিতে থাকবে। কারণ সেসমস্ত তারকাগুলো পৃথিবীর ধ্বংসের সাথে সম্পর্কিত নয়।



কুরআন লেখক এসব বিষয় সম্পর্কে ছিল সম্পূর্ণই অজ্ঞ। তার তারকা সম্পর্কিত ধারণাগুলো ছিল প্রাচীণ আরবের সাধারণ মানুষের ভ্রান্ত ধারণার মতো। কুরআন লেখকও ততকালীন আরবের অজ্ঞ মানুষদের মতোই বিশ্বাস করতো আকাশ হলো ছাদ এবং তারকাগুলোকে তার গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে আকাশের সুন্দর্যের জন্য এবং মানুষ যাতে অন্ধকারে পথের দিক নির্দেশ পায় সেজন্য। কুরআন লেখক এসব ভ্রান্ত প্রাচীণ ধ্যান ধারণা রাখতো বলেই কুরআনে এমন অবৈজ্ঞানিক ও অবাস্তব ধারণাগুলো লিখে দিয়েছে।

কুরআন লেখক আকাশ ও তারকাগুলো সম্পর্কে কোন বাস্তব ধারণাই রাখতো না বলে সে জানতো না যে তারকাগুলো একেকটি সূর্য বা সূর্যের মতো নক্ষত্র। তাই সে দাবী করেছে নক্ষত্রগুলো আকাশের সুন্দর্য বৃদ্ধি এবং পথ নির্দেশের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং নক্ষত্রগুলোকে আগুনের গোলার মতো কিছু বলে দাবী করেছে কুরআন লেখক যা বিজ্ঞান ও বাস্তবতা বিরোধী ধারণা। কারণ নক্ষত্রগুলো কোন আগুনের গোলা নয় যে সেগুলো দিয়ে শয়তানকে তাড়া করা যায়। আসলে কুরআন লেখক ছিল প্রাচীণ ভ্রান্ত ধারণার একজন অজ্ঞ মানুষ। এজন্য সে সেসময়ের ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করে কুরআনে লিখে দিয়েছিল। যদি কুরআন লেখক জানতোই যে নক্ষত্রগুলো একেকটি সূর্যের চেয়েও বড় কিছু তবে এসব ভ্রান্ত ধারণার কথাগুলো কুরআনে লিখে দিতো না। একটি বিশাল আকৃতির নক্ষত্র একটি ক্ষুদ্র আকৃতির শয়তানের পিছনে ধাওয়া করছে তাও আবার পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের কাছে সেটি কল্পনা করতেই হাস্যকম মনে হয়। অথচ কুরআনের লেখক এরকম একটি হাসকর কথা বলে নিজেকে সর্বজ্ঞানী বলে দাবী করেছে।



নক্ষত্রগুলো কখনও নিভে যায় না বা অস্ত যায় না যেমনটা কুরআন লেখক দাবী করেছে। বরং সব সময়ই এগুলো একই রকমে আকাশে অবস্থান করে। কিন্তু কুরআন লেখক ভেবেছে সে যেভাবে সূর্য ও চন্দ্রকে প্রতিদিন উদিত হতে দেখে এবং অস্ত যেতে দেখে সেভাবেই বুঝি সূর্য ও চন্দ্র প্রতিদিন অস্ত যায়। এবং সে সেটা দেখে ধারণা করেছে সূর্য ও চন্দ্রের মতো তারকাগুলোই বুঝি অস্ত যায়। প্রাচীণ আরবের মরুভূমির বুকে দাড়িয়ে একজন মানুষের সূর্য ও চন্দ্রের অস্ত যাওয়া পর্যবেক্ষন করা এবং তা থেকে নক্ষত্রগুলোর অস্ত যাবার ধারণা করাটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। ফলে কুরআনের লেখকও এরকমটিই ধারণা করেছিল এবং সেটাই কুরআনে লিখে দিয়েছিল। ফলে এসব প্রাচীণ ধ্যাণ ধারণার তারকা সম্পর্কিত বাণীগুলো কুরআনে লিখিত থাকায় এটা নিশ্চিত ভাবেই প্রমাণিত হয় যে কুরআন একজন প্রাচীণ আরবের মরুভূমিতে দাড়িয়ে থাকা মানুষের লেখা বই। কুরআনে এসব ভ্রান্তিকর ধারণা লেখা থাকায় প্রমাণিত হয় কুরআন কোন অতিজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার লেখা গ্রন্থ নয়।

যেহেতু কুরআনের প্রতিটি বাণীই মুহাম্মদের মুখ নিঃসৃত বাণী তাই প্রমানিত হয় কুরআন হলো মুহাম্মদ নামের এক প্রাচীণ আরবীয় অজ্ঞ মানুষের রচিত গ্রন্থ।

অর্থাৎ কুরআন আল্লাহর বাণী নয় বরং কুরআন মুহাম্মদের বাণী। (প্রমানিত)



বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ভূলে ভরা প্রাচীণ ভ্রান্ত ধারণার গ্রন্থ কুরআনের ভূলগুলো দেখে যখন মানুষ বুঝতে পেরেছে কুরআন হলো মুহাম্মদের নিজের লেখা বই তখন একদল ধর্মব্যবসায়ী দিন রাত পরিশ্রম করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে প্রাণাতিপাত করে ফেলছে। কিন্তু তাতে কুরআন বিজ্ঞানময় গ্রন্থ হয়ে উঠছে না। কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে এমন কোন অপপদ্ধতি নেই যা তারা অবলম্বন করছে না। তারা কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধনের জন্য কুরআনে ব্যবহৃত শব্দের অর্থকে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন নতুন অর্থ করার মাধ্যমে কুরআনের ভূলকে সংশোধন করছে এবং একই সাথে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বলে দাবী করছে। কিন্তু এসব মুসলমানরা বুঝতে চাইছে না যে, ভূলে ভরা কুরআনের অর্থকে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করে কুরআনকে সংশোধন করার পরে সেটিকে বিজ্ঞানময় বানানোতে কুরআনের কোন কৃতিত্ব থাকছে না। বরং যারা কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থ পরিবর্তন করে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাচ্ছে তারাই হলো নতুন অর্থের কুরআনের বিজ্ঞানময় বানানোর জন্য দায়ী। মুহাম্মদের লিখিত কুরআনের মধ্যে ভূল ভ্রান্তি ছিল বলেই কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থ বদলে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করে কুরআনকে সংশোধন করতে হয় এবং সাথে সাথে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে হয়। যদি কুরআন সত্যিই কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী হতো তবে কুরআনের অর্থকে বদলে দিয়ে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে হতো না। (তাও আবার কুরআনের নতুন অর্থ বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখেই করা হয়।) তখন পূর্বের কুরআনের অর্থকে অপরিবর্তনীয় রেখেও কুরআন বিজ্ঞানময় গ্রন্থ হতো। কিন্তু যেহেতু কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তা প্রবর্তিত গ্রন্থ নয় তাই এর ভূলগুলোকে সংশোধন করে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ বানাতে এর অর্থকে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে পরিবর্তন করতে হয়।

বরং কুরআনের অর্থকে বদলে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করে কুরআনের ভূল সংশোধন ও বিজ্ঞানময় করার মহোৎসবগুলো এটাই প্রমাণ করে যে কুরআন হলো মুহাম্মদের মতো প্রাচীণ অজ্ঞ মানুষের লেখা বই। এজন্যই মুহাম্মদের লেখা কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থকে বদলে বিজ্ঞানের সাথে মিল রেখে নতুন অর্থ করা হয় এবং এভাবে কুরআনের ভূলগুলোকে সংশোধনের মাধ্যমে  কুরআনকে বিজ্ঞানময় বলে দাবী করা হয়।

এতে ভূলে ভরা কুরআন বিজ্ঞানময় হয়ে উঠে না বরং মুসলমানদের মিথ্যাচার, প্রতারনা ও ভন্ডামী প্রমাণিত হয়।



এর আগের পর্বে দেখিয়েছি কুরআন-এর বানী সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন করা হয় । কুরানের কোন ভূল ধরা পড়লে ধর্মের স্বার্থ রক্ষার্থে কিছু চতুর ধার্মিক কুরানের অর্থ পরিবর্তন করে নিজেদের সুবিধানুযায়ী নতুন অর্থ করে । মোট কথা আল্লাহ কুরআনে কথা দিয়েছিল কুরআনের বানীকে রক্ষা করবে আল্লাহ সেই কথাটি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সম্পুর্নরুপে অথবা কথাটি সম্পুর্ন মিথ্যে । তার মানে কুরআনে বর্নিত আল্লাহ কোন সর্বশক্তিমান কেউ নয় । কোন স্বাধারন মানুষ ।

এই পর্বেও এরকম কয়েকটি আয়াতের উল্লেখ করবো যেগুলো সম্পুর্ন বিজ্ঞান বিরোধী কথা বলায় এদের অর্থ পরিবর্তন করা হয়েছে এবং সুবিধামত এদের নতুন অর্থ করা হয়েছে । অর্থাত আল্লাহর কথা পরিবর্তন করে আয়াতগুলোর সম্পুর্ন নতুন অর্থ করা হয়েছে ।



মুসলমানদের সৃষ্টির জনক আল্লাহ কুরাআনে বলেছে,

সুরা ইউনুস, আয়াত ৩ :

"নিশ্চয় তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি তৈরি করেছেন আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন ।"



ঠিক এই কথাটি কুরআনে বলা হয়েছে সুরা আরাফ-এর ৫৪ নাম্বার আয়াতে, সুরা সেজদাহ্-এর ৪ নাম্বার আয়াতে, সুরা ফুরকান-এর ৫৯ নাম্বার আয়াতে এবং সুরা হাদীদ-এর ৪ নাম্বার আয়াতে ।



দেখা যাচ্ছে কুরআনের বানী মতে আল্লাহ বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছে ছয় দিনে ।



আবার সুরা ক্বাফ-এর ৩৮ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,

"আমি আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবী ও এগুলোর মধ্যস্থিত সব কিছু সৃষ্টি করেছি

ছয় দিনে; আমাকে কোন ক্লান্তি স্পর্শ করেনি ।"

এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছে মাত্র ছয় দিনে কিন্তু কোনরুপ ক্লান্তি তাকে স্পর্শ করেনি । অর্থাত আল্লাহ এত শক্তিশালী যে মাত্র ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টি করার পরেও তাকে কোন প্রকার ক্লান্তিই স্পর্শ করেনি ।



আবার আরেকটি আয়াত দেখলে ছয় দিনের ব্যপারটি আরও স্পষ্ট হবে ।

সুরা হা-মীম আসসাজদাহ্, আয়াত ০৯ ও ১০

"বলঃ তোমরা কি তাকে অস্বীকার করবেই যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুই দিনে এবং তোমরা তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাতে চাও ? তিনি তো জগতসমুহের প্রতিপালক ।"



"তিনি স্থাপন করেছেন (অটল) পর্বতমালা ভূ-পৃষ্টে এবং তাতে রেখেছেন বরকত এবং চার দিনের মধ্যে এতে ব্যবস্থা করেছেন থাদ্যের, সমভাবে (এতে উত্তর) রয়েছে জিজ্ঞাসুদের জন্যে । “



০৯ নাম্বার আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ প্রথম ২ দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছে । ১০ নাম্বার আয়াত অনুযায়ী  এতে পাহাড় স্থাপন করেছে এবং খাদ্যের ব্যবস্থা করেছে বাকী ৪ দিনে । অর্থাত মোট ৬ দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে বিশ্বজগত । ( কুরান অনুযায়ী আকাশ তৈরিতে আরও ২ দিন লেগেছে । যেহেতু এটি বিতর্কিত বিষয় তাই ধরে নিলাম প্রথম ২ দিনে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পরের ৪ দিনে পৃথিবীতে পাহাড় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে । অর্থাত মোট ৬ দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টি করা হয়েছে ।)



এখন অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারে যে, বিশ্বজগত সৃষ্টির পুর্বে আল্লাহ কোথায় ছিল ?

এর উত্তর আছে নিচের আয়াতে,

সুরা হুদ, আয়াত ০৭

"আর তিনিই আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন ছ'দিনে এবং সেই সময় তাঁর আরশ পানির উপরে ছিল যেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করে নেন যে, তোমাদের মধ্যে উত্তম আমলকারী কে ? "



উপরিউক্ত আয়াতগুলো থেকে একথা স্পষ্ট যে আল্লাহ বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছে ৬ দিনে (মোট ৬ দিনে) । এখানে উল্লেখ্য যে, ৬ দিন হচ্ছে বিশ্বজগত সৃষ্টি সহ পৃথিবীতে প্রাণী বসবাসের উপযোগী করা পর্যন্ত মোট সময় (সুরা হা-মীম আসসাজদাহ্, আয়াত ০৯ ও ১০ অনুযায়ী) ।  



কিন্তু আমরা জানি যে পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি হয়নি । বিজ্ঞান বলে বিশ্বজগত সৃষ্টি হতে লক্ষ লক্ষ বছর লেগেছে । বিশ্বজগত তৈরী হয়েছে আজ থেকে ১৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে । এবং পৃথিবীতে জীবের আবির্ভাব হয়েছে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে (আসলে তারও লক্ষ লক্ষ বছর পরে) । তাহলে দেখা যাচ্ছে ৯ বিলিয়ন বছর লেগেছে বিশ্বজগত ও পৃথিবী তৈরী হতে এবং এতে প্রাণীর বসবাসের উপযোগী(খাদ্য তৈরী) হতে ( আসলে আরও বেশী সময় লেগেছে) । কিন্তু কুরআন মতে বিশ্বজগত সৃষ্টি ও পৃথিবীতে খাদ্যের ব্যবস্থা করতে অর্থাত পৃথিবী মানুষের বসবাসের উপযোগী হতে সময় লেগেছে মাত্র ছয় দিন । কিন্তু সত্য হচ্ছে, বিশ্বজগত সৃষ্টির শুরু থেকে পৃথিবী তৈরী হতেই সময় লেগেছে প্রায় ৯ বিলিয়ন বছর । তাহলে এতে খাদ্যের ব্যবস্থা হতে লেগেছে আরও লক্ষ লক্ষ বছর ।

তাহলে কুরআনে কেন বলা হয়েছে বিশ্বজগত মাত্র ৬ দিনে সৃষ্টি হয়েছে ? এটিতো কখনই কোন সৃষ্টিকর্তার কথা হতে পারে না । তাহলে নিশ্চয় কুরআন কোন সুষ্টিকর্তার বাণী নয় !

তবে এই ৬ দিন আসলে কত দিন এটি নিয়ে মুসলমান আস্তিকরা তর্ক করতে পারে; তারা দাবী করতে পারে এই ৬ দিন আসলে মানুষের গণনায় ছয় দিন নয় এটি সৃষ্টি কর্তার ছয় দিন । তাহলে এখন দেখতে হবে সৃষ্টিকর্তার এক দিন মানুষের হিসেবে আসলে কয়দিন !



সুরা হাজ্জ-এর ৪৭ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,

".....তোমার প্রতিপালকের একদিন তোমাদের গণনায় সহস্র বছরের সমান ।"



এই আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে আল্লাহর ১ দিন সমান মানুষের ১০০০ বছর ।

আল্লাহর একদিন সমান ১০০০ বছর নিলে ছয় দিনে হয় ৬০০০ বছর । কিন্তু তবুও বিশ্বজগত সৃষ্টির প্রকৃত সময়ের সাথে কুরানের ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির ব্যপারটা পুরোই হাস্যকর থেকে যাচ্ছে । অর্থাত ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির করা হয়েছে এটা সম্পুর্ন মিথ্যে বা ভূল কথা ।

ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির এই ধারনাটা নেওয়া হয়েছে বাইবেল থেকে । বাইবেল অনুযায়ী বিশ্বজগত সৃষ্টি করা হয়েছে ৬ দিনে অর্থাত ৬টি ২৪ ঘন্টার দিনে । আর কুরাআনেও বাইবেলের ধারনাটাই ধার করা হয়েছে । এই ধারনাটি ২০০০-২৫০০ বছর আগের প্রাচীন মানুষের ধারনা । আর এই ধারনাটাই বাইবেলে বলা হয়েছে এবং কুরআনের লেখক বাইবেল থেকে নিয়ে কুরআনে ঢুকিয়ে দিয়েছে । 

এখানে উল্লেখ্য সুরা সাজদাহ-এর  ০৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে বিশ্বজগতের সবকিছু আল্লাহর কাছে যাবে যে দিনে সেটার পরিমান মানুষের হিসেবে ১ হাজার বছর । আবার সুরা মাআরিজ-এর ০৪ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ফেরেশতা এবং রুহ্(আত্বা) আল্লাহর দিকে যায় যে দিনে  তার পরিমান মানুষের হিসেবে ৫০ হাজার বছর । এই হিসেব যদি ধরি তবুও কুরআন মতে বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে ৬×৫০০০০= ৩০০০০০ বছর । অর্থাত নতুন হিসেব অনুযায়ী বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে ৩ লক্ষ বছরে । কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হলো না । কোরআন মানুষের তৈরী সেটা গোপন করা গেল না । কারণ বিজ্ঞান মতে বিশ্বজগত তৈরী হয়েছে ৯ বিলিয়ন বছরেরও বেশী সময়ে । অর্থাত কুরআন মিথ্যে বা ভূল কথা বলছে । এটি বাইবেলের ভূল তথ্য নিয়ে প্রমান করে দিয়েছে যে কুরআন কোন মানুষ লিখেছে ।



তাহলে প্রমানিত হয়ে যাচ্ছে কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী নয় বরং এটি মুহাম্মদের বাণী । ঠিক এই সময় কিছু ইসলামিক পন্ডিত দেখলো আর ধর্মকে রক্ষা করা গেলনা ! আর তাই তারা ধর্মকে বাঁচাতে ওই আয়াতগুলোর নতুন অর্থ করা শুরু করে দিলো । তারা দাবী করলো ও আয়াতগুলোতে দিন বোঝাতে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো ‘ইয়াওম’’ যার অর্থ ‘দিন’ বা ‘একটা লম্বা সময়’ । তাহলে কুরআনের ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির আয়াতগুলোর নতুন অর্থ হলো ৬টা লম্বা সময়ে বিশ্বজগত সৃষ্টি করা হয়েছে । অর্থাত আল্লাহ মুহাম্মদের কাছে নাজিল করেছিল ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির কথা (যেটা বাইবেল থেকে আল্লাহ নকল করেছিল) সেটা পরিবর্তিত হয়ে গেল ! অর্থাত কুরআনে আল্লাহ কথা দিয়েছিল কুরআনের বাণীকে রক্ষা করবে সেটা আর সত্য থাকলো না । কিছু সুবিধাবাদী চতুর মুসলমানরা আল্লার বানী পরিবর্তন করে সম্পুর্ন নতুন অর্থ করে ফেললো আর আল্লাহ কিছুই করতে পারলো না । আল্লাহ কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলো না যেটা সর্বশক্তিমান কারো প্রমান বহন করে না । অর্থাত কুরান আসলে কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী নয় । বরং এটি কোন মানুষের অর্থাত মুহাম্মদের বাণী বলেই এর বাণী পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে । যদি কুরআন কোন সৃষ্টিকর্তার বাণী হতো এবং সেই সৃষ্টিকর্তা কুরআনের বাণী রক্ষা করার অঙ্গীকার করতো তবে কখনই সেই বাণী পরিবর্তন করা সম্ভব হতো না ।



আসলেই কী কুরআনে ছয় দিন না বুঝিয়ে ইয়াওম বলতে ৬টা লম্বা সময় বুঝানো হয়েছে ?

কুরআনে ২৫:৫৯, ৫৭:০৪, ৫০:৩৮, ৩২:০৪, ১০:০৩, ১১:০৭, ০৭:৫৪ এবং ৪১:৯-১০ নাম্বার আয়াতগুলোতে ছয় দিনে বিশ্বজগত সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে । কিন্তু কোন আয়াতেই এই ছয় দিন বা ছয়টি ইয়াওম-এর অর্থ স্পষ্ট করে দেয়নি । আবার সবগুলো আয়াতে ইয়াওম বা দিন শব্দটিই ব্যবহার করা হয়েছে । যদি আল্লাহ (সৃষ্টিকর্তা) ছয়টি লম্বা সময়কেই বুঝাতো তবে কেন অন্য কোন শব্দ দিয়ে বুঝালো না ? কেন দিন (ইয়াওম) শব্দটিই ব্যবহার করলো বারবার ?

এর একটাই উত্তর, কুরআনে আসলে বাইবেল-এর ২৪ ঘন্টার ৬টি দিনের কথাই বলা হয়েছে । আর তাই সবগুলো আয়াতে বারবার দিন (ইয়াওম) শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে । যদি এখানে ইয়াওম বলতে লম্বা সময় বুঝানো হত তবে অবশ্যই অন্য কোন এক আয়াতে অন্য কোন শব্দ দিয়ে লম্বা সময় বুঝানো হত । (কারণ আল্লাহ যদি সর্বশক্তিমান কেউ হয়ে থাকতো তবে তার শব্দের অভাব হত না । অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করে অবশ্যই বুঝাতে সক্ষম হত যে এখানে লম্বা সময় বুঝানো হয়েছে ।) কিন্তু কুরআনে বারবার ইয়াওম বা দিন শব্দটি ব্যবহার করায় এটাই প্রমানিত হয় যে, এখানে বাইবেলের ছয় দিনের (৬টি ২৪ ঘন্টার দিন) কথা বলা হয়েছে ।



অর্থাত কুরআনের আল্লাহ আসলে জানেই না বিশ্বজগত আসলে কয় দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে । উপরন্তু সে বাইবেলের ছয় দিনের বিশ্বজগত সৃষ্টি করার তত্ব কপি (নকল) করেছে । আর এর মধ্য দিয়ে কুরআনের লেখক প্রমান করে দিয়েছে কুরআন আসলে আল্লাহ নামের কোন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা লেখেনি (বা তৈরী করেনি) বরং কোন এক স্বাধারণ মানুষ লিখেছে (বা তৈরী করেছে) ।

অর্থাত কুরআন আল্লাহর বাণী নয়, কুরআন মুহাম্মদের বাণী ।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ