যোগ দর্শন - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

20 July, 2020

যোগ দর্শন

ভারতীয় আধ্যাত্মদর্শনে অন্যতম প্রভাবশালী দর্শন হলো যোগ দর্শন। মহর্ষি পতঞ্জলি এই দর্শনের সূত্রকার। ‘যোগসূত্র’ বা ‘পাতঞ্জলসূত্র’ই এই দর্শনের মূল বা সূত্রগ্রন্থ। পতঞ্জলির নাম অনুসারে এই দর্শনকে পাতঞ্জল দর্শনও বলা হয়। 
যোগ মানে ব্যায়াম নয়। শরীর, মন, ও আত্মার ক্রম উন্নয়নের যে পদ্ধতি (Method) সমাধী  স্তরে পৌঁছায় তাই যোগ- YOGA।  যোগ মানে আদির সংগে প্রান্তের যোগ, বৃহতের সংগে ক্ষুদ্রের যোগ, জীবাত্মার সংগে পরমাত্মার যোগ, সৃষ্টির সংগে  স্রষ্টার যোগ। ‘যোগসূত্র’ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের দ্বিতীয় সূত্রে মহর্ষি পতঞ্জলি যোগের বর্ননা দিয়েছেন-‘চিত্তবৃত্তি নিরোধ’। চিত্ত এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত। মন, বুদ্ধি ও অহংকার এই তিনের সামূহিক অর্থে এবং এই তিনটিকে বিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে অর্থাৎ বিপথগামী হওয়া থেকে নিবৃত্ত করাই যোগ। দর্শনে যোগের প্রধান শাখাগুলি হল রাজযোগকর্মযোগজ্ঞানযোগভক্তিযোগ ও হঠযোগরাজযোগ বা অষ্টাঙ্গযোগ হল হিন্দু যোগদর্শনের একটি শাখা। এই শাখায় ধ্যানের মাধ্যমে মনঃসংযম এবং তার মাধ্যমে শেষে মোক্ষ লাভের কথা বলা হয়। রাজযোগ প্রথম আলোচিত হয়েছে পতঞ্জলির যোগসূত্র গ্রন্থে।

মহর্ষি পতঞ্জলি অন্যান্য দর্শনকারদিগের ন্যায় পদার্থ নিরূপণ করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই। ইনি সমগ্র জীবের মঙ্গল হেতু অমূল্য যোগরত্ন সকলকে দান করিয়াছেন। ইহাতে তর্ক নাই, যুক্তি নাই; কেবল সাধন ও সিদ্ধির কথা। তুমি কাজে কর তাহা হইলেই বুঝিবে; হাজার কথা বা তর্ক বিতর্ক দ্বারা এই যোগ তত্ত্বের কিছুই বুঝিতে পরিবে না।

 ইনি সাংখ্য দর্শনের মত অবলম্বন করিয়া যোগের উপদেশ দিয়াছেন। ইনি সাংখ্যোক্ত সমস্ত তত্ত্বের উপর একটি ঈশ্বর তত্ত্ব স্বীকার করেন। এই নিমিত্ত পাতঞ্জল দর্শনকে সেশ্বর সাংখ্য দর্শন কহে।

 মহর্ষি কপিলের মতে প্রকৃতিতে সৃষ্টির প্রবৃত্তি ও ভোগের উপাদান আছে; প্রকৃতি জড় ও পুরুষ চৈতন্য; এতদুভয়ের সান্নিধ্য হেতু জীব জগতের সৃষ্টি; অদৃষ্ট বশতঃই প্রকৃতি ও পুরুষের সান্নিধ্য হয়। কিন্তু মহর্ষি পতঞ্জলির মত এই যে, প্রকৃতি ও অদৃষ্ট উভয়ই জড়; জড় কখনও জড়কে চালিত করিতে পারে না; অতএব অদৃষ্ট প্রকৃতিকে চালিত করিতে পারে না; যে পুরুষ অদৃষ্টের পরিচালক তিনিই ঈশ্বর।

 যেমন স্ফটিক জবা পুষ্পের সান্নিধ্যহেতু রক্তাভাস ধারণ করে তদ্রূপ নিঃসঙ্গ পুরুষ অদৃষ্টবশতঃ প্রকৃতি সান্নিধ্যহেতু কর্ম্মী ও ভোক্তারূপে প্রতীয়মান হন। অদৃষ্ট শান্ত; ঈশ্বরই সেই অদৃষ্টের নাশ করেন এবং তদ্দ্বারা পুরুষ ও প্রকৃতি স্ব স্বরূপে বর্ত্তমান হয়। আমরা সর্ব্বদা বৃহৎ হইতে বৃহত্তর, উৎকৃষ্ট হইতে উৎকৃষ্টতর, জ্ঞানী হইতে জ্ঞানবত্তর, শক্তিমান হইতে শক্তিমত্তর ইত্যাদি দেখিতে পাই। যাঁহাতে সর্ব্বতত্ত্ব বীজ নিত্যই চরমোৎকর্ষ বা পরাকাষ্ঠা প্রাপ্ত হইয়া রহিয়াছে তাঁহাকেই পতঞ্জলি ঈশ্বর নামে অভিহিত করেন।

 “ক্লেশকর্ম্মবিপাকাশয়ৈরপরামৃষ্টঃ পুরুষ বিশেষঃ ঈশ্বরঃ” “তত্র নিরতিশয়ং সর্ব্বজ্ঞত্ববীজম্‌” “সঃ পূর্ব্বেষামপি গুরু; কালেনানবচ্ছেদাৎ” পতঞ্জলি কহেন যে প্রণব অর্থাৎ ওঁকার তাঁহার প্রকাশক।

 পতঞ্জলি চিত্তবৃত্তির নিরোধদ্বারা সমাধিসিদ্ধির নামই যোগ কহিয়া থাকেন। তিনি কহেন যে যখন জীবাত্মা ও পরমাত্মা উভয়েই নির্লেপ ও নিঃসঙ্গ তখন এতদুভয়ের যোগ হইতে পারে না।

 এক্ষণে প্রশ্ন হইতে পারে যে যখন চিত্তবৃত্তির নিরোধ হয়, তখন জ্ঞানের ও নিরোধ হয়, কারণ সমস্ত চিত্তবৃত্তিই জ্ঞান স্বরূপ; এবং যখন জ্ঞানের নিরোধ হয় তখন আত্মার নিত্যত্বের ব্যাঘাত হয়, কারণ আত্মা জ্ঞানস্বরূপ। ইহার উত্তর এই যে, চিত্ত বৃত্তির নিরোধের সহিত যে জ্ঞানের নিরোধ হয় তাহা খণ্ড জ্ঞান, প্রাকৃতিক জ্ঞান; কিন্তু আত্মার স্বরূপ যে জ্ঞান তাহা নিত্য এবং প্রকৃতিদুষ্ট নহে; চিত্তবৃত্তির নিরোধদ্বারা প্রকৃতি ও পুরুষের স্বরূপ বোধ হয়; সেই স্বরূপ জ্ঞানই আত্মা।

 যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি এই আটটি যোগের অঙ্গ স্বরূপ। ইহার মধ্যে প্রথম পাঁচটি যোগের বহিরঙ্গ ও শেষ তিনটি যোগের অন্তরঙ্গ সাধন। অহিংসা, সত্য, অচৌর্য্য, ব্রহ্মচর্য্য ও অপরিগ্রহ এই গুলিকে যম কহে। বাহ্য ও অন্তঃশৌচ, সন্তোষ, তপস্যা, স্বাধ্যায় ও ঈশ্বরোপাসনা এই গুলি নিয়ম। যে ভাবে অধিকক্ষণ স্থিরভাবে সুখে বসিয়া থাকা যায় তাহার নাম আসন। এই আসন জয়ের পর শ্বাস ও প্রশ্বাস উভয়ের গতি সংযত হইয়া যায়, ইহাকে প্রাণায়াম কহে। ইন্দ্রিয়গণ যখন বিষয় পরিত্যাগ পূর্ব্বক চিত্তের স্বরূপ গ্রহণ করে তখন তাহাকে প্রত্যাহার বলে। চিত্তকে কোন বিশেষস্থানে বদ্ধ করিয়া রাখার নাম ধারণা। সেই বস্তুবিষয়ক জ্ঞান নিরন্তর একভাবে প্রবাহিত হইলে তাহাকে ধ্যান কহে। ধ্যান যখন বাহ্যোপাধি পরিহার পূর্ব্বক কেবল মাত্র অর্থকেই প্রকাশ করে তখন তাহাকে সমাধি বলা যায়।

 সমাধি দুই প্রকার—সম্প্রজ্ঞাত ও অসম্প্রজ্ঞাত। একাগ্রচিত্তের যোগের নাম সম্প্রজ্ঞাত, কারণ ধ্যেয় বস্তু তৎকালে সম্যক্‌রূপে প্রজ্ঞাত হয়। নিরুদ্ধচিত্তের যোগের নাম অসম্প্রজ্ঞাত সমাধি, কারণ তৎকালে ধ্যেয় বিষয়ক বৃত্তিও নিরুদ্ধ হয় বলিয়া কিছুই প্রজ্ঞাত হয় না।

 বাহ্য বিষয় হইতে মনকে আকৃষ্ট করিয়া ভাবনীয় পরমার্থ বিষয়ে তাহাকে নিবেশ করিবার জন্য পুনঃ পুনঃ চেষ্টাকেই যোগাভ্যাস কহে। ভাবনীয় বস্তু দুই প্রকার, যথা ঈশ্বর ও অন্যান্য তত্ত্ব। ঈশ্বরই চৈতন্য ও অপরিণামী এবং অন্যান্য তত্ত্ব জড় ও পরিণামী। পরিণামী তত্ত্বকে অপরিণামী এবং অনাত্মাকে আত্মা মনে করাই বন্ধন। সমাধি দ্বারা যখন চিত্তের স্থৈর্য্য হয় তখনই পরিণামী ও আত্মার স্বরূপ বোধ হয়। এই স্বরূপ দৃষ্টির নাম মুক্তি বা কৈবল্য। কৈবল্যপ্রাপ্তি হইলে অদৃষ্টের নাশ হয়; অদৃষ্ট নষ্ট হইলে আর সৃষ্টিও হয় না, যেমন দগ্ধ বীজ হইতে আর বৃক্ষোৎপত্তি হয় না।

রাজযোগকে সংক্ষেপে শুধুমাত্র যোগ নামেও অভিহিত করা হয়।দর্শনের ছয়টি প্রধান শাখার অন্যতম অন্যান্য শাখাগুলি হলো কপিলের সাংখ্য, গৌতমের ন্যায়, কণাদের বৈশেষিক, জৈমিনীর পূর্ব মীমাংসা ও বদরায়ানের উত্তর মীমাংসা বা বেদান্ত।সংস্কৃত "যোগ" শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। এটি সংস্কৃত "যুজ" ধাতু থেকে ব্যুৎপন্ন, যার অর্থ "নিয়ন্ত্রণ করা", "যুক্ত করা" বা "ঐক্যবদ্ধ করা"। "যোগ" শব্দটির আক্ষরিক অর্থ তাই "যুক্ত করা", "ঐক্যবদ্ধ করা", "সংযোগ" বা "পদ্ধতি"। সম্ভবত "যুজির্সমাধৌ" শব্দটি থেকে "যোগ" শব্দটি এসেছে, যার অর্থ "চিন্তন" বা "সম্মিলন"। দ্বৈতবাদী রাজযোগের ক্ষেত্রে এই অনুবাদটি যথাযথ। কারণ উক্ত যোগে বলা হয়েছে চিন্তনের মাধ্যমে প্রকৃতি ও পুরুষের মধ্যে ভেদজ্ঞান জন্মে। জ্ঞানযোগ হল নাম ও রূপের বাইরে গিয়ে পরম সত্যকে উপলব্ধি। জ্ঞানযোগ অনুসারে, এই উপলব্ধির মাধ্যমে মোক্ষ লাভ সম্ভব। যোগ দর্শনের অন্যান্য শাখায় একটি বিশেষ নাম বা রূপকে ধ্যান করার মাধ্যমে পরম সত্যকে উপলব্ধি করার কথা বলা হয়। কিন্তু জ্ঞানযোগে তা বলা হয় না। জ্ঞানযোগের মতে, শুধুমাত্র জ্ঞানই যথেষ্ট। এই যোগের কোনো কোনো অভিমত সাংখ্য দর্শনের অনুরূপ।
যিনি যোগ অনুশীলন করেন বা দক্ষতার সহিত উচ্চমার্গের যোগ দর্শন অনুসরণ করেন, তাকে যোগী বা যোগিনী বলা হয়।
দার্শনিক তত্ত্বের দিক থেকে সাংখ্য ও যোগ দর্শনের মধ্যে প্রভেদ খুবই সামান্য। তাই এ দুটোকে পরস্পর সমানতন্ত্র দর্শন বলা হয়। মহর্ষি কপিলের সাংখ্য দর্শনে স্বীকৃত পঞ্চবিংশতি তত্ত্বে কোন ঈশ্বরকে স্বীকার করা হয় নি। সাংখ্যের পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব বা পঁচিশ প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- (১) জ্ঞ বা পুরুষ, (২) অব্যক্ত বা মূলপ্রকৃতি বা প্রধান, (৩) মহৎ বা বুদ্ধি, (৪) অহংকার, (৫) মনস্ বা মন (৬) পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক- এই পাঁচটি), (৭) পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় (বাক্, পাণি, পাদ, পায়ু, উপস্থ- এই পাঁচটি), (৮) পঞ্চতন্মাত্র বা পঞ্চসূক্ষ্মভূত (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ- এই পাঁচটি), (৯) পঞ্চস্থূলভূত বা পঞ্চমহাভূত (ক্ষিতি বা পৃথিবী, অপ্ বা জল, তেজ বা অগ্নি, মরুৎ বা বায়ু, আকাশ বা ব্যোম্- এই পাঁচটি)। অন্যদিকে পতঞ্জলির যোগ দর্শনে সাংখ্যের পঁচিশটি তত্ত্বের সাথে অতিরিক্ত একটি তত্ত্ব ঈশ্বরতত্ত্ব যুক্ত করে ঈশ্বর স্বীকৃত হয়েছে বলে নিরীশ্বর-সাংখ্যের বিপরীতে যোগ দর্শনকে ‘সেশ্বর-সাংখ্য’ও বলা হয়ে থাকে।
 .
প্রাচীন ভারতে ‘সাংখ্য’ ও ‘যোগ’ এই দুটি ভারতীয় দর্শন সম্প্রদায়ের নাম প্রায় সম অর্থে ব্যবহৃত হতো। তাই যোগ-সম্প্রদায়ের এই ঈশ্বর-স্বীকৃতির ইতিহাস ঠিক কতোটা প্রাচীন- তা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও, প্রাচীন উপনিষদ পুরাণ ইত্যাদিতে যোগ ও যোগানুষ্ঠান বিধানের উল্লেখ দেখা যায়। এছাড়া প্রাচীন সাহিত্য ও শাস্ত্র গ্রন্থগুলিতে যথা- মহাভারত, গীতা ইত্যাদিতে এই দুই সম্প্রদায়কে এক বলেই বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে-
‘সাংখ্যযোগৌ পৃথগ্ বালাঃ প্রবদন্তি ন পণ্ডিতাঃ।
একমপ্যাস্থিতঃ সম্যগুভয়োর্বিন্দতে ফলম্ ।।’- (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা : ৫/৪)
অর্থাৎ : অজ্ঞ ব্যক্তিগণ সাংখ্য ও যোগকে পরস্পরবিরুদ্ধ ও ভিন্ন-ফল-বিশিষ্ট বলে থাকেন, কিন্তু আত্মজ্ঞানীগণ তা বলেন না। কারণ উভয়ের ফল এক মোক্ষ। সেজন্য একটি সম্যক্ রূপে অনুষ্ঠিত হলে উভয়ের ফল মোক্ষ লাভ হয়।
.
‘যৎ সাংখ্যৈঃ প্রাপ্যতে স্থানং তদযোগৈরপি গম্যতে।
একং সাংখ্যং চ যোগং চ যঃ পশ্যতি স পশ্যতি।।’- (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা : ৫/৫)
অর্থাৎ : সাংখ্য যার অধিগম্য, যোগও তার অধিগম্য। সাংখ্য ও যোগের ফল একই মোক্ষ বলে উভয়কে যিনি অভিন্ন দেখেন, তিনিই যথার্থদর্শী, সম্যক্ জ্ঞানী। 
 .
তবে সেসব শাস্ত্রগ্রন্থে দুটোকে এক বলা হলেও, দর্শন-সম্প্রদায়গত আলোচিত তত্ত্বের গুরুত্ব অনুযায়ী ভারতীয় দর্শন জগতে এ দুটি পৃথক সম্প্রদায়, দুটি পৃথক প্রস্থান। কেননা দুই সম্প্রদায়ের ভিত্তি এক হলেও এদের ব্যবহারিক প্রয়োগ ভিন্ন। তাই মোক্ষশাস্ত্রেও বলা হয়-

‘নাস্তি সাংখ্যসমং জ্ঞানং নাস্তি যোগসমং বলম্’।
অর্থাৎ : সাংখ্যতত্ত্বের তুল্য জ্ঞান নেই, যোগের তুল্য বল বা শক্তি নেই।
 .
যে দর্শন কেবল তত্ত্ব-নিদিধ্যাসন এবং বৈরাগ্য-অভাসের দ্বারা আত্মসাক্ষাৎকারে বিশ্বাসী, তাকে সাংখ্য এবং যে দর্শন তপঃ, স্বাধ্যায় ও ঈশ্বর-প্রণিধানরূপ ক্রিয়ার সাহায্যে আত্মসাক্ষাৎকারে বিশ্বাসী, তাকে যোগ বলা হয়। সাংখ্য বর্ণিত পুরুষতত্ত্ব, প্রকৃতিতত্ত্ব, জগৎ পরিণাম, সৎকার্যবাদ এবং মোক্ষ এসব যোগসম্মত। তবে কৈবল্যলাভের উপায় সম্পর্কে যোগ দর্শনে সাংখ্যের অতিরিক্ত কিছু নির্দেশ আছে। সাংখ্য দর্শনে বিবেকজ্ঞানকেই ত্রিবিধ দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তি এবং কৈবল্যলাভের উপায় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যদিকে যোগ দর্শনে বিবেকজ্ঞান লাভ ও কৈবল্য প্রাপ্তির জন্য অতিরিক্ত কিছু প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। এই প্রক্রিয়াগুলিকে এককথায় ‘যোগ’ বলা হয়।
 .
যোগশাস্ত্র মতে এই যোগ-ই তত্ত্বজ্ঞান লাভ এবং দুঃখ-নিবৃত্তির প্রধান উপায়। যোগের দ্বারাই পুরুষ বা আত্মা স্ব-স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে। এই মতে ঈশ্বর-প্রণিধান পুরুষের প্রত্যক্ষলব্ধ অভিজ্ঞতা। তাই সাংখ্য দর্শনকে তত্ত্বমূলক দর্শন এবং যোগ দর্শনকে প্রয়োগমূলক দর্শন বলা বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও জগতের বিবর্তন, ভ্রমের ব্যাখ্যা, মোক্ষের স্বরূপ এবং ঈশ্বর-কর্তৃত্বের বিষয়ে সাংখ্য ও যোগের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। সাংখ্য-পরিণামবাদ হলো অচেতন উদ্দেশ্যবাদ, কিন্তু যোগ-পরিণামবাদ হলো সচেতন উদ্দেশ্যবাদ। যোগমতে ঈশ্বরই যেহেতু বিবর্তন-প্রক্রিয়ার কর্তা, তাই জগতের বিবর্তন কখনোই অচেতন হতে পারে না। মোটকথা, পতঞ্জলি তাঁর যোগসূত্রে জগৎ বহির্ভূত যে অতিরিক্ত ঈশ্বরতত্ত্ব স্বীকার করেছেন, তার ফলে জগতের অভিব্যক্তি, কল্পান্তে প্রলয় ও তার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে যোগমত, সাংখ্যমত থেকে ভিন্ন হয়ে পড়েছে।
 .
কিন্তু এই ভিন্নতা সত্ত্বেও দার্শনিক তত্ত্বের দিক থেকে সাংখ্য ও যোগ প্রায় অভিন্ন হওয়ায় সুপ্রাচীন কাল থেকে প্রকৃত বেদপন্থী দার্শনিকেরা যে বিবেচনায় নিরীশ্বরবাদী সাংখ্যকে একান্তভাবেই বেদ-বিরোধী বলে চিহ্নিত করেন, সেই একই বিবেচনায় যোগকেও তাই বেদ-পন্থী বলে স্বীকার করার খুব সুযোগ থাকে না। এবং তা যে ছিলোও না, দার্শনিক সাহিত্যে এর নমুনা বিরল নয়। ব্রহ্মবাদী দার্শনিক বাদরায়ণ তাঁর ব্রহ্মসূত্রে ব্রহ্মবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বেদ বা শ্রুতি-বিরোধী সাংখ্যমত খণ্ডনের যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় সাংখ্য-খণ্ডনের ফলে যে যোগ-দর্শনও খণ্ডিত হয় তা প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে একটি সূত্র রচনা করেছিলেন-

‘এতেন যোগঃ প্রত্যুক্তঃ।। (ব্রহ্মসূত্র : ২/১/৩)
অর্থাৎ : এর দ্বারা যোগদর্শনকেও খণ্ডন করা হলো।
 .
এই সূত্রটির ভাষ্যে প্রখ্যাত অদ্বৈতবাদী বেদান্ত দার্শনিক শংকারাচার্যের বক্তব্য প্রসঙ্গে দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের অভিমতটিও প্রাসঙ্গিক-

‘তত্রাপি শ্রুতিবিরোধেন প্রধানং স্বতন্ত্রমেব কারণং মহদাদীনি চ কার্যানি অ-লোকবেদ প্রসিদ্ধানি কল্পান্তে’। অর্থাৎ, যোগদর্শনেও শ্রুতি বিরুদ্ধ– বস্তুত লোকপ্রসিদ্ধি বিরুদ্ধ এবং বেদ-বিরুদ্ধও– প্রধান বা প্রকৃতির এবং প্রধানোৎপন্ন মহত্তত্ত্ব প্রভৃতির (সাংখ্যসম্মত) উপদেশ আছে। এই কারণেই যোগের প্রত্যাখ্যান প্রয়োজন। শংকর প্রশ্ন তুলেছেন, সাংখ্য-প্রত্যাখ্যানের ফলে যোগও যদি প্রত্যাখ্যাত হয় তা হলে এই অতিদেশ-সূত্রটির অবতারণা কেন ? উত্তরে তিনি বলছেন, প্রয়োজন এই যে শ্রুতিতে সম্যক-দর্শনের-উদ্ভব-উপায় হিসেবে– অর্থাৎ সাধনপদ্ধতি অর্থে– যোগের প্রশংসা আছে; কিন্তু তা থেকেই কেউ যেন কল্পনা না করেন যে যোগের দার্শনিক তত্ত্বও শ্রুতি-সমর্থিত। প্রসঙ্গত, যোগদর্শনের বেদ-বিরুদ্ধতা বিষয়ে শংকরের সঙ্গে বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী বেদান্ত দার্শনিক রামানুজ সম্পূর্ণ একমত। যোগ-দর্শন স্বতন্ত্রভাবে প্রত্যাখ্যান করবার প্রয়োজন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি স্পষ্টই ‘অবৈদিকত্বাৎ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন।- (ভারতীয় দর্শন, পৃষ্ঠা-২৬)।
 .
বৈদিক সংস্কৃতিতে যোগ-সাধনার অন্তর্ভুক্তি এবং একইসাথে দর্শনতত্ত্বে যোগদর্শন বেদবিরোধী হওয়ার এই স্ববিরোধী বিষয়টির একটি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় আর্যপূর্ব সিন্ধু-সভ্যতার ধ্বংসস্তুপ থেকেই অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা হিসেবে যোগসাধনার প্রাচীনতম মূর্ত নিদর্শন পাওয়ায়। প্রাচীন সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আধুনিক বিদ্বানদের ধারণা, অবধারিতভাবেই সিন্ধু-সভ্যতা বেদপূর্ব। যোগ-সাধনার আদিপর্ব থেকেই যদি তার সঙ্গে সাংখ্য-তত্ত্বের সম্পর্ক থাকে এবং সুপ্রাচীন সিন্ধু-যুগেই যদি যোগ-সাধনার অবধারিত প্রমাণ পাওয়া যায় তা হলে সেই যুগ থেকেই সাংখ্য-তত্ত্বের সূত্রপাত অনুমিত হতে পারে। আগন্তুক আর্যরা সেই সিন্ধু-অধিবাসীদের কাছ থেকেই এই সাধন-পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলো। যা পরবর্তীকালের বেদনিষ্ঠ সাধন-পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে গেছে।
 .
.
যোগ সাহিত্য
যোগ দর্শনের উপর বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। তবে মূল গ্রন্থ হচ্ছে মহর্ষি পতঞ্জলির ‘যোগসূত্র’ বা ‘পাতঞ্জলসূত্র’। মহর্ষি বেদব্যাস যোগসূত্রের উপর অনবদ্য ভাষ্যগ্রন্থ ‘যোগভাষ্য’ রচনা করেন। অনেকের মতে যোগভাষ্য হচ্ছে যোগশাস্ত্রের উপর রচিত প্রাচীনতম ভাষ্যগ্রন্থ। এটিকে ব্যাসভাষ্যও বলা হয়। ব্যাসভাষ্যের উপর রচিত দুটি প্রামাণ্যটীকা গ্রন্থ হলো বাচস্পতি মিশ্রের ‘তত্ত্ববৈশারদী’ এবং বিজ্ঞানভিক্ষুর ‘যোগবার্তিক’। যোগবার্তিক ছাড়া যোগশাস্ত্রের উপর রচিত বিজ্ঞানভিক্ষুর অন্যান্য তাৎপর্যপূর্ণ গ্রন্থ হচ্ছে ‘যোগসার সংগ্রহ’ ও ‘ভোজরাতকৃত বৃত্তি’ প্রভৃতি।
 .
ভোগরাজের ‘যোগবৃত্তি’ ও রামানন্দ সরস্বতীর ‘যোগমণিপ্রভা’ যোগ দর্শনের উপর দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এছাড়া রাঘবানন্দের ‘পাতঞ্জলরহস্য’, অনন্তের ‘যোগচন্দ্রিকা’, আনন্দশিষ্যের ‘যোগসুধাকর’, উদয়শংকরের ‘যোগবৃত্তিসংগ্রহ’, উমাপতি ত্রিপাঠীর ‘যোগসূত্রবৃত্তি’, গণেশ দীক্ষিতের ‘পাতঞ্জলবৃত্তি’, জ্ঞানানন্দের ‘যোগসূত্রবিবৃতি’, হরিহরানন্দ আরণ্য ও ধর্মমেঘ আরণ্যের ‘ভাস্বতী’ প্রভৃতি যোগ দর্শনের উপর রচিত মূল্যবান গ্রন্থরাজি।
 .
.
যোগ শাস্ত্র
যোগশাস্ত্র মতে ‘আত্মার বন্ধন বিবেকজ্ঞান দ্বারা মুক্তি সম্ভব’ এবং যোগ সাধনার দ্বারা বিবেকজ্ঞান লাভ হয়। এ জন্য যোগ দর্শন যোগ সাধনার পদ্ধতির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। বলা হয়, আত্মশুদ্ধির জন্য যোগ দর্শনের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া খুবই সহায়ক। মহর্ষির যোগসূত্র বা পাতঞ্জলসূত্রে যোগ দর্শনের উপর মোট ১৯৪টি সূত্র রয়েছে। এই সূত্রগুলিকে কোন অধ্যায়ে বিভক্ত না করে চারটি পরিচ্ছদ বা পাদে বিভক্ত করা হয়েছে। এই চারটি পাদ হলো- (১) সমাধিপাদ, (২) সাধনপাদ, (৩) বিভূতিপাদ এবং (৪) কৈবল্যপাদ। সমাধিপাদে আছে ৫১টি সূত্র, সাধনপাদে আছে ৫৫টি সূত্র, বিভূতিপাদে আছে ৫৪টি সূত্র এবং কৈবল্যপাদে আছে ৩৪টি সূত্র।
 .
যোগশাস্ত্র চারটি অঙ্গবিশিষ্ট- হেয়, হেয়হেতু, হান ও হানোপায়। হেয় হলো সংসার, হেয়-হেতু হলো সংসার হেতু। এখানে হেতু বলতে প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগ বোঝায়। হান হলো মোক্ষ বা কৈবল্য এবং হানোপায় হলো মোক্ষের বা কৈবল্যের উপায়। এ বিষয়ে পাতঞ্জলসূত্রে বলা হয়েছে-
‘হেয়ং দুঃখমনাগতম্’- (যোগসূত্র : সাধনপাদ-১৬)
অর্থাৎ : সংসার দুঃখময় বলে তা পরিত্যাজ্য।
 .
‘দ্রষ্টদৃশ্যয়োঃ সংযোগো হেয়হেতুঃ’- (যোগসূত্র : সাধনপাদ-১৭)
অর্থাৎ : পুরুষ ও প্রকৃতির সংযোগ হলো হেয়-হেতু বা দুঃখের কারণ।
 .
‘তদভাবাৎ সংযোগাভাবো হানং তদ্দৃশেঃ কৈবল্যম্’- (যোগসূত্র : সাধনপাদ-২৫)
অর্থাৎ : পুরুষ ও প্রকৃতির সংযোগাভাব হলো হান বা কৈবল্য।
 .
‘বিবেকখ্যাতিরবিপ্লবা হানোপায়ঃ’- (যোগসূত্র : সাধনপাদ-২৬)
অর্থাৎ : পুরুষ ও প্রকৃতির ভেদজ্ঞান বা বিবেকখ্যাতি হলো কৈবল্যলাভের উপায় বা হানোপায়।
 .
পাতঞ্জলসূত্রের সমাধিপাদে যোগের লক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে। এজন্য সমাধিপাদকে যোগপাদও বলা হয়। যোগের লক্ষণ, প্রকারভেদ, প্রকৃতি, উদ্দেশ্য, চিত্তভূমির প্রকারভেদ, প্রমাণের লক্ষণ ও প্রকারভেদ, ঈশ্বরের লক্ষণ, ঈশ্বরপ্রণিধানের ফল, চিত্তবৃত্তি নিরোধের উপায় প্রভৃতি এই পাদে আলোচিত হয়েছে।
সাধনপাদে প্রধানত ক্রিয়াযোগের কথা আলোচিত হয়েছে। যোগের জন্য যে সব ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় তাদের পরিচয়, আবশ্যিকতা ও ফল এবং এছাড়াও অবিদ্যার লক্ষণ, কর্মফল, দুঃখের হেতু এবং দুঃখ-নিবৃত্তির উপায় এই পাদে আলোচিত হয়েছে।
বিভূতিপাদ প্রধাণত যোগলব্ধ অলৌকিক শক্তির বর্ণনা। এর সাথে ধারণার লক্ষণ, ধ্যানের লক্ষণ, সমাধির লক্ষণ, সংযম সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এবং বিবেকজ্ঞান আলোচিত হয়েছে।
আর কৈবল্যপাদে রয়েছে মোক্ষের স্বরূপ, মোক্ষের প্রকারভেদ, পরলোক প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনা।
 .
শুধু যোগদর্শনই নয়, আত্মসাক্ষাৎকারের উপায়রূপে যোগের প্রয়োজনীয়তা চার্বাক ব্যতীত বাকি সব ভারতীয় দর্শন সম্প্রদায়ই স্বীকার করেন। বেদ, উপনিষদ, স্মৃতি এবং পুরাণেও যোগের প্রয়োজন স্বীকৃত হয়েছে। আত্মশুদ্ধির প্রশস্ত পথ হলো যোগসাধনা। এই মতে, যোগসাধনা দেহ ও মনকে শুদ্ধ করে এবং আত্মসাক্ষাৎকারের যথাযোগ্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
 .
‘যুজ্’ ধাতুর সঙ্গে ‘ঘঞ্’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘যোগ’ শব্দ নিষ্পন্ন হয়। ‘যুজ্’ ধাতুর বিবিধ অর্থ হয়, যেমন- সংযোগ, সমাধি প্রভৃতি। তাই ব্যুৎপত্তিগতভাবে ‘যোগ’ শব্দটির অর্থ করা হয় জীবাত্মা ও পরমাত্মার সংযোগ। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায়ও শ্রীকৃষ্ণ অর্জুণকে বিভিন্নভাবে যোগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এক জায়গায় তিনি যোগের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছেন-

‘বুদ্ধিযুক্তো জহাতীহ উভে সুকৃতদুষ্কৃতে।
তস্মাদ্ যোগায় যুজ্যস্ব যোগঃ কর্মসু কৌশলম্ ।।’- (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা : ২/৫০)
অর্থাৎ : নিষ্কাম কর্মযোগী ঐহিক জীবনেই পাপ ও পুণ্য উভয় হতে মুক্ত হন। সুতরাং তুমি নিষ্কাম কর্মযোগের অনুষ্ঠান করো। কর্মের কৌশলই যোগ।
 .
এখানে কর্মের কৌশলকেই যোগ বলা হচ্ছে-

‘যোগঃ কর্মসু কৌশলম্’।
অর্থাৎ : কোনও কাজে নৈপুণ্য অর্জনের নাম যোগ।
 .
অতএব, কী কৌশলের দ্বারা, কোন্ জ্ঞানার্জনের দ্বারা বা কোন্ সাধনার দ্বারা মনের বশ্যতা-জাল থেকে মুক্ত হওয়া যায়, তা-ই যোগ দর্শনের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। এক্ষেত্রে যোগসূত্রকার মহর্ষি পতঞ্জলি যোগের লক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছেন-

‘যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধঃ’।- (যোগসূত্র)
অর্থাৎ : চিত্তবৃত্তির নিরোধই যোগ।
 .
যোগের এই লক্ষণ বা সংজ্ঞা বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চিত্ত কী, তার বৃত্তিই বা কী এবং তার প্রকারভেদ, কীভাবে চিত্তবৃত্তির নিরোধ করা যায়, ইত্যাদি বিবিধ প্রশ্ন যোগশাস্ত্রে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর চিত্তবৃত্তি-নিরোধের জন্যই চিত্তশুদ্ধি, সংযম ও ধ্যানের আলোচনা এই শাস্ত্রে গুরুত্ব পেয়েছে।

১.০ : ভূমিকা…

        যোগ সাহিত্য…

        যোগ-শাস্ত্র…

২.০ : যোগ মনস্তত্ত্ব
২.১ : চিত্ত…
২.২ : চিত্তভূমি…

            ক্ষিপ্তভূমি…

            মূঢ়ভূমি…
            বিক্ষিপ্তভূমি…
            একাগ্রভূমি…
            নিরুদ্ধভূমি…
২.৩ :  চিত্তবৃত্তি…
২.৪ : পঞ্চক্লেশ…
            অবিদ্যা…
            অস্মিতা…
            রাগ…
            দ্বেষ…
            অভিনিবেশ…
২.৫ : চিত্তবৃত্তির প্রকারভেদ…
         (১) প্রমাণ…
              প্রত্যক্ষ.., অনুমান.., আগম…
         (২) বিপর্যয়…
         (৩) বিকল্প…
         (৪) নিদ্রা…
         (৫) স্মৃতি…
৩.০ : চিত্তবৃত্তি নিরোধ ও সমাধি
         (১) সম্প্রজ্ঞাত সমাধি…
         (২) অসম্প্রজ্ঞাত সমাধি… 
         যম…
             (ক) অহিংসা…
             (খ) সত্য…
             (গ) অস্তেয়…
             (ঘ) ব্রহ্মচর্য…
             (ঙ) অপরিগ্রহ…
         নিয়ম…
             (ক) শৌচ…
             (খ) সন্তোষ…
             (গ) তপঃ…
             (ঘ) স্বাধ্যায়…
             (ঙ) ঈশ্বরপ্রণিধান…
         আসন…
         প্রাণায়াম…
             (ক) রেচক বা বাহ্যবৃত্তি…
             (খ) পূরক বা আভ্যন্তরবৃত্তি…
             (গ) কুম্ভক বা স্তম্ভবৃত্তি…
         প্রত্যাহার…
         ধারণা…
              ষট্চক্র…
         ধ্যান…
         সমাধি… 
         যোগশাস্ত্রে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে প্রমাণ… 

Download patanjali yog darshan in hindi pdf
पतंजलि योग दर्शन ई—बुक करें डाउनलोड

 ebook का नाम— पतंजलि योग दर्शन
 e book लेखक का नाम— पतंजलि
 अनुवादक का नाम— रूद्रदत्त शर्मा
 प्रकाशक का नाम— शर्मा मशीन प्रिंटिंग प्रेस   

patanjali yog darshan in hindi pdf  के बारे में संक्षिप्त विवरण

आज योग पूरी दुनिया में स्वस्थ जीवन जीने का एक सशक्त माध्यम बन चुका है. महर्षि पतंजलि द्वारा बताए गए इस मार्ग पर पूरी दुनिया के करोड़ो लोग चल रहे हैं. बाबा रामदेव ने भारत में स्वस्थ रहने की इस प्रणाली का व्यापक प्रचार प्रसार किया है. इस प्रणाली को महर्षि पतंजलि ने अपने योग—सूत्र नामक पुस्तक के माध्यम से दुनिया तक पहुंचाया है. संस्कृत में लिखी गई इस पुस्तक का हिंदी, अंग्रेजी सहित कई देशी—विदेशी भाषाओं में अनुवाद हो चुका है.भारत सरकार ने भी योग को अंतरराष्ट्रीय स्तर पर पहचान दिलवाने का प्रयास किया और इन प्रयासों पर संयुक्त राष्ट्र संघ ने मोहर भी लगा दी. आज पूरी दुनिया में 21 जून को विश्व योग दिवस मनाया जाता है. महर्षि पतंजलि का योग शारीरिक के साथ—साथ मानसिक स्वास्थ्य का भी ख्याल रखता है. यहां उनके योग दर्शन पर आधारित पुस्तक आपसे साझा की जा रही है. नीचे दिए गए लिंक पर क्लिक करके आप आसानी से इस पुस्तक के हिंदी अनुवाद के पीडीएफ वर्जन को डाउनलोड कर सकते हैं. 

Brief description about Patanjali yoga darshan in hindi pdf

Today, yoga has become a powerful medium to lead a healthy life in the whole world. Millions of people around the world are walking on this route as told by Maharishi Patanjali. Baba Ramdev has spread wide publicity in this system of healthy living in India. This system has been transmitted to Maharshi Patanjali through a book called Yoga-Sutra. This book, written in Sanskrit, has been translated into many native and foreign languages, including Hindi, English. The Indian Government also tried to recognize Yoga internationally and the United Nations also stamped these efforts. Today, World Yoga Day is celebrated on June 21 in the whole world. Maharishi Patanjali's yoga takes care of physical as well as mental health. Here is a book based on their Yoga philosophy being shared with you. By clicking on the link given below, you can easily download the PDF version of the Hindi translation of this book.

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

How Long and Wide was Rama Setu?

  Why Today’s Sri Lanka is NOT Ravana’s Lanka I did not know that current Sri Lanka was not even called so until 1972 and how it is not even...

Post Top Ad

ধন্যবাদ