বিশ্বব্যাপক এবং বিশ্বপ্রবেশক অর্থে বিষ্ণু।চর এবং অচর (স্থাবর ও জঙ্গম) জগতে ব্যাপ্ত হইয়া রহিয়াছেন বলিয়া পরমেশ্বরের নাম বিষ্ণু হইয়াছে।
বিষ্ণুর(ঈশ্বরের) শরীর নেই তিনি বৈকুন্ঠেশ্বর। যখন তোমার মনের এরুপ অবস্থা হইবে
ইহ জগতে আর কিছুতেই কুন্ঠিত হইবে না- যখন চিত্ত বশীভূত ইন্দ্রিয় দমিত, ঈশ্বরে ভক্তি, মনুষ্যে প্রীতি হৃদয়ে শান্তি উপস্থিত হইবে, যখন সকলেই বৈরাগ্য, সকলেই সমান সুখ-তখন তুমি বৈকুন্ঠে। "বিবিধা কুন্ঠা মায়া যস্য স বৈকুন্ঠঃ"।
ঈশ্বরের অর্থাৎ বিষ্ণুর প্রতিমা একপ্রকার রূপক(বোঝানোর সুবিধার্থে)। সৃষ্টির মূলভুত এই জগৎ কেন্দ্রকে বিষ্ণুর নাভিপদ্ম বলা হয়। জগৎ বিষ্ণুর শরীর, তিনি আত্মা ধারনাটা এইরূপ। বিষ্ণুর হাতে যে পদ্ম তাহা সৃষ্টিক্রিয়ার প্রতিমা। বিষ্ণুর গদা লয় ক্রিয়ার প্রতিমা। শঙ্খ ও চক্র স্থিতি ক্রিয়ার প্রতিমা। জগতের স্থিতি স্থানে ও কালে। স্থান,আকাশ শব্দ বহ,শব্দময়,তাই শব্দময় শঙ্খ আকাশের প্রতিমা স্বরূপ বিষ্ণুর হস্তে স্থাপিত হইয়াছে।
বিষ্ণু-চক্র হলো কাল-চক্র। কল্পে কল্পে, যুগে যুগে কাল বিবর্ত্তনশীল, তাই কাল ঈশ্বরের (বিষ্ণুর) হস্তে চক্রাকারে আছে- ইহা রূপক। আকাশ, কাল, শক্তি ও সৃষ্টি জগদীশ্বর চারি হস্তে ধারন করে আছে (বুঝাইবার সুবিধার্থে প্রতিমা) বিষ্ণু বেকুন্ঠেরনাথ অর্থাৎঃ কুন্ঠাশূণ্য বৈরাগী ঈশ্বরকে অনুক্ষণ হৃদয়ে ধ্যান করেন।
দেবতার শক্তিঃ
মহাদেব (ঈশ্বর) আপন ক্ষমতা দ্বারা আপনার করনীয় কাজ নির্ব্বাহ করেন, সেই ক্ষমতার নাম শক্তি। অগ্নির দাহ করিবার ক্ষমতাই তার শক্তি, তাহার নাম স্বাহা। ইন্দ্রের বৃষ্টিকারিনী শক্তির না ইন্দ্রানী। পবন বায়ু দেবতা, বহন শক্তির নাম পবনানী। রুদ্র সংহারকারী তাহার সংহার শক্তির নাম রুদ্রানী।
শরীরী ও অশরীরী, উভয়ের শক্তি নিরাকার। অগ্নি তে যে কখন হাত দেয় নাই, সে অগ্নি দেখিলেই বুঝিতে পারে না যে, অগ্নিতে হাত পুড়িয়া যাইবে। পাঁজা পুড়িতেছে দেখিয়া, যে তার কখন অগ্নি দেখে নাই সে বুঝিতে পারে না যে, আগুনের আলো করিবার শক্তি আছে।
অতএব শক্তি এবং শক্তির আলোচনা পৃথক্ করিয়া না করিলে শক্তি কে বুঝিতে পারিবেনা। রুদ্রও নিরাকার, রুদ্রের শক্তি ও নিরাকার। যে অজ্ঞান এবং নিরাকারের চিন্তায় অক্ষম, তাহাকে উপসনার্থ উভয়ের কল্পনা করানো হয়।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু,ইন্দ্র ও মহেশ্বরাদি কোন পৃথক পৃথক সত্ত্বা নয়। যিনি ব্রহ্মা তিনিই বিষ্ণু,ইন্দ্র,মহেদেব,গনেশ ইত্যাদি চিতি ও কার্যের বিভাগে নানা নাম-যেমন আমাদের বুঝইবার সৌকর্য্যার্থ এক জলকে কোথাও নদী বলি, কোথাও সমুদ্র, কোথাও বিল,ডোবা পুকুর ইত্যাদি বলি তেমন উপাসনার্থ তাঁকেই নানা নাম দিই।
দেবতার শক্তিঃ
মহাদেব (ঈশ্বর) আপন ক্ষমতা দ্বারা আপনার করনীয় কাজ নির্ব্বাহ করেন, সেই ক্ষমতার নাম শক্তি। অগ্নির দাহ করিবার ক্ষমতাই তার শক্তি, তাহার নাম স্বাহা। ইন্দ্রের বৃষ্টিকারিনী শক্তির না ইন্দ্রানী। পবন বায়ু দেবতা, বহন শক্তির নাম পবনানী। রুদ্র সংহারকারী তাহার সংহার শক্তির নাম রুদ্রানী।
শরীরী ও অশরীরী, উভয়ের শক্তি নিরাকার। অগ্নি তে যে কখন হাত দেয় নাই, সে অগ্নি দেখিলেই বুঝিতে পারে না যে, অগ্নিতে হাত পুড়িয়া যাইবে। পাঁজা পুড়িতেছে দেখিয়া, যে তার কখন অগ্নি দেখে নাই সে বুঝিতে পারে না যে, আগুনের আলো করিবার শক্তি আছে।
অতএব শক্তি এবং শক্তির আলোচনা পৃথক্ করিয়া না করিলে শক্তি কে বুঝিতে পারিবেনা। রুদ্রও নিরাকার, রুদ্রের শক্তি ও নিরাকার। যে অজ্ঞান এবং নিরাকারের চিন্তায় অক্ষম, তাহাকে উপসনার্থ উভয়ের কল্পনা করানো হয়।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু,ইন্দ্র ও মহেশ্বরাদি কোন পৃথক পৃথক সত্ত্বা নয়। যিনি ব্রহ্মা তিনিই বিষ্ণু,ইন্দ্র,মহেদেব,গনেশ ইত্যাদি চিতি ও কার্যের বিভাগে নানা নাম-যেমন আমাদের বুঝইবার সৌকর্য্যার্থ এক জলকে কোথাও নদী বলি, কোথাও সমুদ্র, কোথাও বিল,ডোবা পুকুর ইত্যাদি বলি তেমন উপাসনার্থ তাঁকেই নানা নাম দিই।
বিষ্ণুঃ সর্বা দেবতাঃ।ঐ০ ব্রা০ ১/১ সমস্ত প্রকাশক পাদার্থই বিষ্ণুঃ।অগ্নির্বৈ দেবানামবমো বিষ্ণুঃ পরম্ঃ। ঐ০ ব্রা০ ১/১ সর্বব্যাপক বিদ্যুৎ অগ্নিই বিষ্ণু। বীর্য়ং বিষ্ণু। বজ্র বিদ্যুৎই বিষ্ণু। য়জুংষি বিষ্ণুঃ। শ০ ব্রা০ ৪/৬/৭/৩ য়জুষী ছন্দরশ্মিই বিষ্ণু। য়ো বৈ বিষ্ণুঃ সোম সঃ শ০ ব্রা০ ৩/৩/৪/২১ সোমেই বিষ্ণু।
রূপং রূপং প্রতিরূপে বভূব তদস্য রূপম প্রতিচক্ষণায়।
ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে যুক্তাহস্য হরয়াঃ শতাদশ।।
(ঋকবেদ ৬/৪৭/১৮)
এই মন্ত্রে ডাঃ সেনগুপ্ত অবতার বাদ প্রমাণ করার জন্য একটু কষ্ট কল্পনা করেছেন। তিনি মন্ত্রটির এরূপ অর্থ করেছেন-
"ইন্দ্র মায়াশক্তির বলে বহূরূপ ধারন করেন এবং ইহার জীব দুঃখহর বহুশত অসংখ্য মুর্তি বিশেষত দশ মূর্তি (দশ অবতার) যুক্তিযুক্ত"
সমীক্ষাঃ এই মন্ত্রে হরয়া বলতে শ্রী হরি বোঝায় নি এবং শতাদশ বলতেও দশ অবতার নয়। বরং (১০★১০০) একহাজার রশ্নিকে বোঝানো হচ্ছে। জীবাত্মার জন্মান্তরের শরীর গ্রহনই এই মন্ত্রের মূল সারাংশ। কিন্তু ডাঃ সেনগুপ্ত শ্রীহরির অবতার গ্রহন ধরে নিয়ে বড়ই লীলাবিষ্ট হয়ে পড়েছেন।
অতএব আসুন মন্ত্রটির যথার্থ ভাবার্থ দেখে নেই-
" বৈদুতিক শক্তি যে বস্তুতে যায় তারই রূপ গ্রহন করে। সেই রূপ জীবাত্মা কর্মের প্রবাহে জন্মজন্মান্তরে যেমন শরীর লাভ করুক না কেন, তখন তদাকার বৃত্তিলাভ করে। এবং যেমন যেমন বাহ্যবস্তুর সংস্পর্শে যায় তার থেকে তদাকার জ্ঞানলাভ হয়। বিদ্যুৎশক্তি যেমন অসংখ্য তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তেমনি আমাদের শরীরস্থ অসংখ্য নাড়ীতে যে চিৎশক্তি প্রবাহিত হচ্ছে তার কেন্দ্রস্থল অন্তঃকরন। জীবাত্মা কেন্দ্রে বসেই শরীরস্থ নাড়ীর মধ্য দিয়ে যেমন চিৎশক্তির প্রবাহে জীবনীশক্তি ক্রিয়াশীল থাকে, তেমনি প্রবাহের যে অসংখ্য প্রবাহে ধারা বা রশ্নি আছে তারই সহায়তাই সমস্ত জ্ঞান লাভ করে। জীবাত্মা চিদবিন্দুর যে কেন্দ্রে থাকে সেইখান থেকেই উৎক্রমনের পথ।
জীবাত্মা যতক্ষন না ঐ উৎক্রমনের পথে গিয়ে পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হয়, ততক্ষন কর্মের প্রবাহে যতবার যত জন্ম তাকে শরীর ধারন করতে হয়। সেই সেই শরীরের অন্তঃকরনে ঘটে বসেই জীবাত্মা দেশকাল পাত্রানুয়ায়ী তদাকার বৃত্তি, সংস্কার ও জ্ঞান লাভ করে সেই সেই শরীরের কার্য্যনির্বাহ করে থাকে।
(মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)
ত্বষ্টুর্হ বৈ পুত্র।ত্রিশীর্ষা ষডক্ষ আস ত্রীণ্যেব মুখান্যসুস্তদ্যদেবংরূপ আস তস্মাদ্বিশ্বরূপো নাম।
-শ০ ব্রা০ ১/৭/৩/১/ তস্য ( বিশ্বরূপস্য) সোমপানমেবৈকং মুখমাস।
ইদং বিষ্ণ বিচক্রমে ত্রেধা নি দধে পদম।
সমৃঢমস্য পাংসুয়ে।। ( ঋকবেদ ১/২২/১৭)
সমীক্ষাঃ বেদ হলো সমস্ত আধাত্ম শাস্ত্র। সমাধিবান মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিবান বেদমন্ত্র সাক্ষাৎ করে সমাধির ভাষায় তা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বেদের সেই মহত্তম আধ্যাত্মিক এবং যৌগিক অর্থ না করে পাশ্চাত্য পন্ডিতগন বেদোক্ত, পরমাত্ম বাচক ঐ বিষ্ণু শব্দে বিষ্ণুনামা লোক কল্পনা করে গেছেন।
আসুন এই মন্ত্রের যথার্থ ভাবার্থ বোঝার চেষ্টা করি-
বিষ্ণু শব্দে সর্বব্যাপক পরমেশ্বর। বিচক্রমে (বিশিষ্টভাবে ব্যাপ্ত), ত্রেধা অর্থে তিন কাল বোঝায়। পদং শব্দে পা নয়। (পরমং পদম মানে কি তাহলে মোটা পা?) পদং অর্থে অধিপত্য, ঐশ্বর্য, জ্যোতি প্রভূতি বোঝায়। নিধতে অর্থে ক্ষেপন নয়, নি নিতিরাং দধে, ধৃতবান। চিরধৃত অর্থাৎ চির অক্ষুন্ন ভাবের দ্যোতক। পাংসুরে শব্দে ধুলি নয়(সুক্ষভাব)
সমুঢং শব্দও এই জগৎ তাতেই সম্যকরূপে অবস্থিত এই ভাব প্রকাশ করেছেস বেদের প্রসিদ্ধ পন্ডিত দূর্গাদাশ লাহিড়ি মশাই এই রূপ অর্থ করাই অভিমত।
কাজেই এই ঋকটির ভাবার্থ দাড়ায়-
"পরমাত্মা এই সমগ্র জগৎকে বিশেষভাবে ব্যাপিয়া আছে। অতিত, অনগত,বর্তমান তিনকালেই তাহার ঐশ্বর্য মহিমা, জ্যোতির্ম্ময় প্রকাশ নিরন্তর ধৃত রহিয়াছে। কিংবা স্থুল সুক্ষ কারন জগৎ তাহার জ্যোতির্ম্ময় মহিমায় বিধৃত নিখিল জগৎ সম্যকভাবে তাহাতেই অবস্থিত।"
মন্তব্যঃ সৃষ্টির পর থেকে শুরু করে বেদ আজ পর্যন্ত অবিকৃত রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কিছু লৌকিক পন্ডিত বেদের যথার্থ ভাবার্থ না বুঝে নিজ স্বার্থে মন্ত্রার্থের বিকৃতি ঘটাচ্ছে। এবং সাধারনেরা সেসব অর্থ গ্রহন করে ভূলটাই বুঝছে
বিষ্ণুর অর্থাৎ মধ্যাহ্ন সূর্যের এই ত্রিপাদ বিহার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে যাস্ক তাঁর পূর্বের আচার্য শাকপূণি, উর্ণনাভ, প্রভৃতির মতের উল্লেখ করেছিলেন। উর্ননাভ সূর্যের তিনপদক্ষেপ এই ভাবে ব্যাক্ষা করিয়াছেন; প্রথম পদক্ষেপ উদয়নকালে উদয়াচলে দ্বিতীয় পদক্ষেপ মধ্যানহ্নে গগনের মধ্যভাগে যখন সূর্য বিরাজ করেন; তৃতীয় পদক্ষেপ অস্তাচলে; তৎপর পুনরায় প্রভাতে প্রথম পদক্ষেপ। এই ভাবে তিনটি পদক্ষেপে সূর্য সমগ্র ভুবন আয়ত্ত করেন। নিরুক্তের টীকাকার দূর্গাচার্য্য বিষ্ণুকে সূর্য বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বিষ্ণুর ত্রিবিক্রম রূপে তিনপদ বিক্ষেপ কে "ত্রেধা নিধদে পদম" সূর্যের উদয়গিরিতে আরোহন, আকাশে বিচরন ও অস্তাচলে গমন বলে সিদ্ধান্ত করেছেন। পরে ইহা বামন অবতারের গল্পে পরিনত হইয়াছে।
হুম লেখাটা ভালো হয়েছে
ReplyDeleteআরও একটু ভালো করো দাদা 🙏