ফোটন হচ্ছে আলোর কণা বা একক।
আধুনিক বিজ্ঞান
প্লাঙ্কের তত্ত্ব অনুসারে - আলোকরশ্মি যখন কোন শক্তি হতে অনবরত বের না হয়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন প্যাকেট বা শক্তি বের হয়। প্রত্যেক বর্ণের আলোর জন্য এক একটি বিচ্ছিন্ন প্যাকেটের শক্তির নির্দিষ্ট মান রয়েছে। এই এক একটি বিচ্ছিন্ন প্যাকেটকে কোয়ান্টাম বা photon বলে।
ফোটনের কিছু ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য দেয়া হল:-
১. পদার্থের ক্ষুদ্র অংশ কে যেমন পরমাণু বলে, তেমনি কোন বিকিরণের ক্ষুদ্র অংশকে ফোটন বলে।
২. photon আলোর বেগে প্রভাহিত হয়।
৩. ফোটনের স্থিতি ভর শূন্য।
৪. প্রতি ফোটনের নির্দিষ্ট শক্তি এবং নির্দিষ্ট রৈখিক ভরবেগ আছে।
৫. ফোটন তড়িৎ নিরপেক্ষ। এর কোন চার্জ নেই।
৬. ফোটন এর কণা তরঙ্গ দ্বৈত রুপ আছে।
৭. E= ফোটনের শক্তি, h= প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক, v= ফোটনের কম্পাঙ্ক ও হলে তার শক্তি E=hv
১৯০০ সালে ম্যাক্স প্ল্যাংক কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের ওপর কাজ করছিলেন। তিনি ধারণা প্রকাশ করলেন যে তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ কেবল শক্তির প্যাকেট আকারে নির্গত হতে পারে। ১৯০১ সালে এনালেন ডার ফিজিক পত্রিকায় তিনি এক নিবন্ধে এই প্যাকেট এর নাম দিলেন শক্তিকণা।
পদার্থবিদ্যায়, ফোটনকে সচরাচর প্রকাশ করা হয় γ চিহ্ন দ্বারা (গ্রীক বর্ণ "গামা")। ফোটনের জন্য এই গামা চিহ্ন এসেছে খুব সম্ভবত গামা রশ্মি থেকে যা ১৯০০ সালে পল ভিলার্ড আবিস্কার করেন, ১৯০৩ সালে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড নামকরণ করেন এবং ১৯১৪ সালে এডওয়ার্ড আন্দ্রেদ এবং রাদারফোর্ড এটিকে তড়িৎচৌম্বকীয় বিকিরণ রূপে উপস্থাপন করেন। রসায়নশাস্ত্র এবং দৃষ্টিপ্রকৌশলবিদ্যায়, ফোটনকে সাধারণত প্রকাশ করা হয় hv দ্বারা, যেখানে h হলো প্লাংকের ধ্রুবক ও v (গ্রীক বর্ণ nu) ফোটনের তীব্রতা। এছাড়াও ফোটনকে hf এর মাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়ে থাকে, যেখানে এর কম্পাঙ্ককে f দ্বারা নির্দেশ করা হয়, যদিও এটি খুব প্রচলিত নয়।
ফোটনের ভরবেগ
ছবি সূত্র: Tech Explorist
বিজ্ঞানচিন্তার দপ্তরে অনেক চিঠি আসে, একটা প্রশ্নের উত্তর চেয়ে। মেসেজ আসে বিজ্ঞানচিন্তা গ্রুপ কিংবা ফেসবুক পেজে, একই প্রশ্ন। একটুখানি ফিজিকস গ্রুপের দেয়ালে আছড়ে পড়ে প্রশ্নের ঢেউ- ফোটনের ভর নেই কিন্তু ভরবেগ আছে কেন?
এখানেই আসলে ভরশক্তির সমীকরণের কারিশমা। ধরা যাক, একটা ইলেকট্রন। এর গতি নির্দিষ্ট নয়। কিন্তু একেবারে থেমে থাকা ইলেকট্রনের দেখাও আপনি পাবেন না। তাই যেকোনো ছুটন্ত ইলেকট্রনের ভরবেগ আপনি পাবেন। আলোর তো আর নিশ্চল ভর নেই, তাহলে এর ভরবেগ আসে কোত্থেকে?
এখানেই আসলে আলোর বিচিত্র চরিত্রের খেলা। আলো এক ধরনের শক্তি, সে আমরা সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে পড়ে আসছি। আবার শক্তির সঙ্গে ভরবেগের সম্পর্ক আছে।
বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে জানা দরকার, ভরবেগ নিয়ে বাংলা ভাষায় জটিলতা আছে। আমরা যেটাকে বাংলায় ‘ভরবেগ’ বলি, এই শব্দটা দেখলেই বোঝা যায়, ভর আর বেগ দুটোই যেন ডট গুননের নিয়মে পাশাপাশি বসে গেছে। কিন্তু ইংরেজি শব্দটা হলো মোমেন্টাম (momentum)। এখানে ভর অর্থাৎ ম্যাস (mass) কিংবা বেগ, ইংরেজিতে যাকে বলে ভেলোসিটি (Velocity)- এই দুইয়ের নামগন্ধই নেই এই ‘মোমেন্টাম’ শব্দটির মধ্যে। তাই বাংলা ভরবেগ শব্দটা দেখলে আমরা সরলীকরণ করে ফেলি, বস্তুর মোমেন্টাম থাকতে হলে ভর থাকতেই হবে। ঝামেলাটা তৈরি হয়েছে চিরায়ত গতিবিদ্যায় মোমেন্টামের যে সংজ্ঞা আছে সেখান থেকেই।
চিরায়ত গতিবিদ্যায় মোমেন্টামের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, বস্তুর ভর আর বেগকে গুন করে ফলাফল হিসেবে পদার্থবিদ্যার যে রাশিটি পাওয়া যাবে, তাকেই বলে মোমেন্টাম। সুতরাং বাংলা বৈজ্ঞানিক পরিভাষাবিদরা সেটা ‘ভরবেগ’ বানিয়ে ফেলছেন। চিরায়ত বলবিদ্যায় এটাতে সমস্যা থাকারও কথা নয়। সমস্যা হয় তখন, যখন খুদে কণিকাদের হিসাব এসে পড়ে। বিশেষ করে কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় মোমেন্টামের হিসাব মোটেও ভর আর বেগের গুনফল দিয়ে করলে চলে না। কারণ কণাদের ভর থাকতেও পারে নাও পারে। কিন্তু শক্তি আছে। আবার একই সঙ্গে কণা আর তরঙ্গ চরিত্রও রয়েছে এদের। সুতরাং মোমেন্টামের ভেতর কোয়ান্টামের ব্যাপার-স্যাপার না এলে হিসাব মিলবে কী করে?
আবার কণাদের ভর না থাকলেও তারা অন্যবস্তুকে মোমেন্টাম অর্থাৎ ভরবেগ দিতে পারে, ঠিক যেমন গতিশীল এক বড় গাড়ি একটা সিএনজি অটোরিক্সাকে ধাক্কা দিয়ে সেটাকে গতিশীল করে দিতে পারে। অর্থাৎ থেমে থাকা একটা অটোরিক্সাকে যদি কোনো প্রাইভেট কার এসে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়, তাহলে অটোরিক্সাটি গাড়ির কাছ থেকে ভরবেগ লাভ করে এবং সামনের দিকে গতিশীল হয়। অন্যদিকে ধাক্কার ফলে প্রাইভেট কারটির গতি কিছুটা কমে যায়, সুতরাং ভরবেগও কমে যায়। আর গাড়ির ভরবেগ ততটুকুই কমবে, যতটুকু ভরবেগ সিএনজি অটোরিক্সাটি লাভ করবে। ঠিক একই ঘটনা ঘটে আলোকতড়িৎক্রিয়ার ক্ষেত্রেই।
আলোকতড়িৎক্রিয়া প্রথম পর্যবেক্ষণ করেণ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হেনরিখ হার্জ, ১৮৮৭ সালে। একই বছর একই ব্যাপার লক্ষ্য করেন জার্মান বিজ্ঞানী ভিলহেম হলকওয়াস। এসময় বিশ্বজড়ে বিজ্ঞানীরা ক্যাথোড রশ্মি নিয়ে ব্যস্ত। ক্যাথোড রশ্মি আসলে কণাদের স্রোত না আলোর রশ্মির প্রবাহ, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত গোটা দুনিয়ার বিজ্ঞানীরা। ক্যাথোড রশ্মির পরীক্ষাগুলো চলে বায়ুশূন্য ক্যাথোড টিউবের ভেতর। এই টিউবে যে ক্যাথোড দণ্ড ব্যবহৃত হয়, সেগুলো ধাতুরই তৈরি। হার্জ ক্যাথোড দণ্ডকে অতিবেগুনি রশ্মি দিয়ে আঘাত করেন। এর ফলে সেটা থেকে নির্গত হয় ক্যাথোড রশ্মি। হার্জের বিশ্বাস ছিল ক্যাথোড রশ্মিও এক ধরণের আলোর কণা, তাই ফটোতড়িৎ ক্রিয়ার মাহত্ম্য বোঝা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। পরে অবশ্য হলকওয়াসকেও ভাবিয়েছিল এই ঘটনা। তিনি আরও পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালান। আরেকটু স্পষ্ট হয় ব্যাপারটা। কিন্তু, ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। হার্জ-হলকয়াকেরও দেড় দশক আগে একটু অন্যভাবে ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করেন এক ব্রিটিশ তড়িৎপ্রকৌশলী উলাফবি স্মিথ। কিন্তু তিনি মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝেননি। এরপর ১৮৯৯ সালে আলোকতড়িৎক্রিয়া নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে জে টমসন। আসলে এই ঘটনা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই তিনি নিশ্চিত হন ক্যাথোড রশ্মি আসলে আলোক রশ্মি নয়, ইলেকট্রন কণার স্রোত। অর্থাৎ ইলেকট্রন কণাটাই টমসন আবিষ্কার করে বসেন ক্যাথোড রশ্মি নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে। কিন্তু কেন ক্যাথোড দণ্ডে আলো ফেললে সেখান থেকে ইলেকট্রন কণা নির্গত হবে, সে বিষয়টা নিশ্চিত হতে পারেননি টমসন।
কাছাকাছি সময় এই ঘটনা নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করেন ফিলিপ লেনার্ড। কিন্তু ব্যাখ্যা মেলেনি। ব্যাপারটা ছিল এমন-- ধাতব ক্যাথোড পাত ওপর পাত থেকে ক্যাথোড রশ্মির আকারে আসলে ইলেকট্রন কণাই বেরিয়ে আসছে। সমস্যা আলোকে তখন সবাই তরঙ্গ মনে করত, নিউটনের কণা তত্ত্ব বাতিল করেছিলেন জার্মান বিজ্ঞানী হেনরিখ হাইগেনস শ দেড়েক বছর আগেই। যে জিনিস নিজে তরঙ্গ, তারপক্ষে কীভাবে সম্ভব একটা ধাতব পাত থেকে রীতিমত ভরযুক্ত একটা কণাকে মুক্ত করা?
পাঠক, এখন আবার আমাদের ফিরে যেতে হবে অটোরিক্সা আর প্রাইভেট কারের কাছে। ভাবুন তো একটা স্থির অটোরিক্সার ওরর লক্ষ-কোটি ওয়াটের এক টর্চের আলো ফেলে সেটাকে নড়াতে পারবেন? আপাতদৃষ্টিতে সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু আলোর বদলে যদি বাতাস প্রবাহিত করেন? খুব কম বাতাস হলে চলবে না। কিন্তু বাতাসের বেগ যদি খুব বেশি হয়, ধরা যাক সেটা বিশাল এক ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে এলো, তাহলে? শুধু অটোরিক্সা কেন, প্রাইভেট কারকেও উড়িয়ে নিতে পারে। তবে সেটা বাতাস বলেই সম্ভব। কারণ বাতাস বস্তু, ভর আছে, মোমেন্টাম আছে। কিন্তু তরঙ্গ? সেই যুগে তরঙ্গের শক্তির কথা জানত সবাই, কিন্তু তার যে মোমেন্টাম থাকতে পারে একথা ভাবার সাহসই ছিল না। কিন্তু একজন জার্মান, যিনি কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে দেখালেন দুঃসাহস। বললেন, বিকিরণ, যাকে আমরা শক্তি বলে জানি, সেই শক্তি নির্গত হয় গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে। অর্থাৎ যাবতীয় বিকিরণ শক্তি যাকে আমরা এতদিন নিরবিচ্ছিন্ন শক্তি প্রবাহ বলে ভাবতাম, তা আসলে নিরবিচ্ছিন্ন প্রবাহ নয়। যাঁরা রাইচমিলে ধান ভাঙানো দেখেছেন, তাদের জন্য ব্যাপারটা বোঝা সহজ হবে।
রাইচ মিলের হলার থেকে যখন প্রচণ্ডবেগে চাল বেরিয়ে আসে, তখন মনে হয় ঝর্নার ধারার মতো একটা চালের ধারা বেরিয়ে আসছে। এগুলো যে অসংখ্য চালের সমষ্টি, তখন তা বোঝা যায় না। মনে হয় ধূসর রঙের একটা নিরবিচ্ছিন্ন ধারা হলার থেকে নিচে নেমে আসছে। কিন্তু সেখন থেকে একমুঠো চাল হাতে নিয়ে দেখুন, প্রতিটা চাল তখন আলাদা করে চিনতে পারবেন। ঝর্নার পানির ক্ষেত্রেও একই ব্যপার। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, ঝর্নার ধারা নিরবিচ্ছিন্ন। কিন্তু একথা তো সত্যি, এই পানির ধারাগুলো ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন পানির অণু দিয়ে তৈরি। কষ্টসাধ্য হলেও পানির ধারা থেকে পানির অণুগুলো আলাদা করা যায়।
প্ল্যাঙ্কও বললেন, পানির অণুর মতো কিংবা রাইচ মিলের প্রতিটা চালের মতো বিকিরণ বা আলোরও এমন খুদে কণা জাতীয় কিছু আছে। ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন বললেন আক্ষরিক অর্থেই বললেন, আলোক রশ্মিগুলো রীতিমতো অসংখ্য কণা দিয়ে তৈরি। ২১ বছর পর ১৯২৬ সালে সেই কণার নাম দেওয়া হয় ফোটন। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক বিকিরণ শক্তি তথা গুচ্ছের তত্ত্ব দিয়েছিলেন কৃষ্ণবস্তির বিকিরণ শক্তির সমাধান করার জন্য, আইনস্টাইন আলোর কণাতত্ত্ব ব্যাবহার করলেন আলোকতড়িৎক্রিয়ার ধর্ম ব্যাখ্যা করতে।
ওপরে যে প্রশ্নটার কথা বলেছিলাম, সেটাতে আবার ফিরে আসি, ভরহীন তরঙ্গের পক্ষে কি ধাতু থেকে ইলেকট্রন মুক্ত করা সম্ভব? আইনস্টাইন বললেন সম্ভব, কারণ আলো শুধু তরঙ্গই নয়, একই সঙ্গে কণাও। আলোর কণাদের যদি বস্তু কণার মতো যদি যথেষ্ট শক্তি থাকে, তাহলে সে ধাতব পাতকে আঘাত করে সেখান থেকে ইলেকট্রনকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারে। সেই মুক্ত ইলেকট্রন যেহেতু ধাতু থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়, সুতরাং সে ভরবেগ লাভ করে। আর এই ভরবেগের জোগান দেয় আঘাতকারী আলোর কণা, যার পোশাকি নাম পরে হয়েছিল ফোটন। তাহলে নিশ্চয় ফোটনেরও মোমেন্টাম অর্থাৎ ভরবেগ আছে?
আইনস্টাইন বললেন, আসলেই ভরবেগ আছে ফোটন কণাদের।
সে বছরই আইনস্টাইন তাঁর বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রকাশ করেছিলে। সেখানে আবার বলেছিলেন, আলোর কণার ভর নেই। তাহলে কি স্ববিরোধী হয়ে গেল কথাটা?
না, কারণ আইনস্টাইন স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটির সাহায্যেই দেখিয়েছিলেন, ভর না থালকলেও কীভাবে আলোর কণাদের ভরবেগ বা মোমেন্টাম থাকে। সেটা আলোচনা করেই আমরা এই লেখার সমাপ্তি টানব। তার আগে আরেকটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার।
অনেকেই বলেন, ফোটনের নিশ্চল ভর শূন্য হলেও এর আপেক্ষিক ভর আছে। কারণ ফোটন গতিশীল কণা। আর গতিশীল কণাদের ভর বৃদ্ধি পায় সে কথা থিওরি অব রিলেটিভিটিতেই বলা হয়েছে। এই ধারণা কিন্তু ঠিক নয়। দুটো কারণে ঠিক নয়। প্রথম কারণ থিওরি অব রিলেটিভিটিতে ভর বৃদ্ধির যে সমীকরণ দেওয়া হয়েছে, সেখানে কিন্তু ভরশূন্য বস্তুর ভর বাড়বে এমন কথা বলা হয়নি। বরং যেসব বস্তুর খুব সামান্য হলেও ভর আছে, তাদের ক্ষেত্রেই ভর বাড়বে। প্রয়োজনে আপনি ভর বৃদ্ধির সমীকরণে ফোটনের ভর বসিয়ে দেখতে পারেন। এটা যদি করতে যান, তাহলে আপনার বস্তুর বেগের মানের জায়গায় ফোটনের বেগের মান (
) বসাতে হবে। আর তখন পুরো সমীকরণেই প্যাঁচ লেগে যাবে। সুতরাং ভর শূন্য থেকে বেড়ে যাবে, এ হিসাব আপনি কখনোই মিলাতে পারবেন না।
এবার আসা যাক দ্বিতীয় কারণে। আর এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের সমীকরণগুলো গড়েই উঠেছে আলোর বেগ পরম বা ধ্রুবক ধরে। স্থির বা গতিশীল কোনো কাঠামোতেই এর কোনো নড়চড় হবে না। তার মানে ফোটনের কোনো আপেক্ষিক বেগ থাকে না। আর আপেক্ষিক বেগ না থাকলে এর ভর বৃদ্ধিও সম্ভব নয়। সুতরাং গতির কারণে ফোটনের ভর বাড়ছে, তার কারণে ফোটন লাভ করছে ভরবেগ একথার কোনো যুক্তিই নেই।
তাহলে মোমেন্টামটা আসছে কোথা থেকে? এই সমস্যার সমাধানও দিয়েছিলেন আইনস্টাইন আপেক্ষিকতা থেকেই, ভরশক্তির সমীকরণের মাধ্যেম। আইনস্টাইন বলেছিলেন ফোটনের মোমেন্টাম আসে এর গতিশক্তি থেকে। ভরশক্তির সমীকরণ থেকেই পাওয়া যায় ভরকে শক্তিতে রূপান্তর মন্ত্র। আবার ভরযুক্ত বস্তুকে গতিশীল করতে পারলে বস্তটি ভরবেগ লাভ করে। তাহলে শক্তি আছে এমন যেকোনো বস্তুর পক্ষেই মোমেন্টাম বা ভরবেগ লাভ করা সম্ভব, যদি বস্তুটির গতি থাকে। ফোটনের তো চিরগতিশীল কণা, কখনো থামে না। তাহলে এই কণার গতিশক্তি থাকবে, তাই এর মোমেন্টামও থাকবে।
যার নিশ্চল ভর শূন্য তার ভরবেগ কীভাবে থাকে? ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যায়, আইনস্টাইনের ভরশক্তির সমীকরণ থেকে। চাইলে কোয়ান্টাম তত্ত্বও যোগ করা যেতে পারে। আসুন আমরা দেখে নিই ভরশক্তির সমীকরণ কী বলে?
আইনস্টিইনের ভরশক্তির সমীকরণের আরেকটি রূপ হলো,
এখানে
হলো বস্তুটির শক্তি, হলো ভরবেগ, আলোর বেগ এবং বস্তুটির নিশ্চল অবস্থার ভর।
এখন এই সূত্র আমারা ফোটন কণার জন্যও প্রয়োগ করতে পারি। তাহলে ফোটনের নিশ্চল অবস্থার ভর
হবে। ফোটনের জন্য ওপরের সমীকরণটি দাঁড়ায়-
বা,
এখানে ২ নং সমীকরণটিই হলো ফোটনের ভরবেগের সমীকরণ। অর্থাৎ ফোটনের শক্তিকে এর বেগ দিয়ে ভাগ করলেই মোমেন্টাম অর্থাৎ ভরবেগ পেয়ে যাব।
এখানে বিশেষ আপেক্ষিতা দিয়ে দেখানো হয়েছে ভরশূন্য ফোটনের ভরবেগ নির্ণয়ের সূত্রটি। তবে এখানে কিন্তু ফোটনকে কণা হিসেবেই দেখিয়েই ভরবেগ বের করা হয়েছে। কিন্তু ফোটন তো শুধু কণা নয়। একই সঙ্গে তরঙ্গও। তরঙ্গই যদি হয় এর ভরবেগ তাহলে কী হবে?
সেক্ষেত্রে আমাদের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের সেই কোয়ান্টাম তত্ত্বের সমীকরণটিতেই ফিরে যেতে হবে। প্ল্যাঙ্কের সমীকরণ থেকে আমরা জানি, কোনো তরঙ্গ গুচ্ছের শক্তি,
এখানে h হলো প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক, v (এটা গ্রিক বর্ণ নিউ ইংরেজি ভি নয় কিন্তু) হলো তরঙ্গের কম্পাঙ্ক। এখনা থেকে E এর মান ২ নং সমীকরণে বসিয়ে পাই-
এই তিন নম্বর সমীকরণটিই দেখায়, একটা ভরহীন আলোক তরঙ্গের ভরবেগ কী হবে। অর্থাৎ ফোটনের কম্পাঙ্ককে প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের সঙ্গে গুন করলের যে গুনফল পাব, তাকে আলোর বেগ দিয়ে ভাগ করলেই পেয়ে যাব ফোটনের ভরবেগ। এর জন্য ফোটনের ভর থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তাহলে, এখন নিশ্চতভাবেই বলতে পারেন, কেন ফোটনের ভর না থাকলেও কেন ভরবেগ আছে।
১৯২৪ সালে, স্যার ডি ব্রগলী বলেছিলেন যে, আলো এবং ইলেক্ট্রনের মধ্যে নীচের দুটো ধর্মই বিদ্যমান,
- তরঙ্গের ধর্ম, অর্থাৎ এদের কম্পাঙ্ক থাকে, তরঙ্গ দৈর্ঘ্য থাকে।
- কণা ধর্ম, অর্থাৎ এদের মধ্যে ভর থাকে।
স্যার ডি ব্রগলীর মতে,
λ=h/p [ λ =তরঙ্গ দৈর্ঘ্য,h=Planck constant=6.62607015×10
−34,p=ভরবেগ ]
p=h/λ
এর পর E = mc^2 থেকে পায়, m=E/c2
p= ভর(m) * বেগ(c)
ভর(m)= p/বেগ(c)=h/λ/c=h/λc
অর্থাৎ, E/c2=h/λc এটাও যেমন হতে পারে, ঠিক অন্য দিকে, m=h/λc এটাও হতে পারে।
এটাকেই তরঙ্গ – কণা দ্বৈততা বলা হয়ে থাকে।
কিভাবে একটা ফোটন কোটি কোটি বছরের জন্য সফর করতে পারে? এটার কি সময়ের সাথে সাথে শক্তি হারানো উচিৎ নয়?
এখানে যেটা ধরে নেওয়া হয়েছে যে ফোটন একটি পদার্থকণা ও তার মধ্যে শক্তি রয়েছে যেটা ক্রমশ ক্ষয় হবে। কিন্তু ফোটন আদতেই তা নয়।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে, শক্তি খণ্ডীভূত (Quantized)। এটা অনেকটা সিঁড়ীর ধাপের মত। সিঁড়ীর সবসময় ১, ২, ৩…১০ টি ধাপ হয় কিন্তু ১.৫, ৩.৭- এইরূপ কোনও ধাপ হতে পারে না অর্থাৎ সিঁড়ীতে কতটুকু ওঠা বা নামা হবে তা খণ্ডীভূত, একটানা (Continuous) নয়।
যখন কোনও পদার্থকণা শক্তি গ্রহণ বা বর্জন করে তখন তা হয় খণ্ডের আকারে। এমনকি পদার্থকণা দ্বারা বর্জন ও গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়ে যখন শক্তি স্থানের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয় (propagate), তখনও তার এই খণ্ডীভূত রূপ বজায় থাকে। এই একেকটি খণ্ড (বা অনেকসময় ‘প্যাকেট’ বলা হয়)-ই হল ‘ফোটন’। অর্থাৎ ফোটন নিজেই শক্তি। কেউ শক্তি হারাচ্ছে মানে সে ফোটন হারাচ্ছে।
তবে হ্যাঁ, ফোটন-এরও শক্তির তারতম্য ঘটতে পারে (যেমন সিঁড়ীর ধাপগুলির উচ্চতার তারতম্য হতে পারে)। এক্ষেত্রে তার কম্পাঙ্কের পরিবর্তন ঘটে। একটি ফোটনের শক্তির পরিমাণের সূত্র হলঃ
এখানে ‘নিউ’ (v এর মত চিহ্নটি) ও ‘ল্যাম্বডা’ (লাউঞ্জারের মত চিহ্নটি) যথাক্রমে কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য বোঝায়। এদের পরিবর্তন হলে ফোটনটির শক্তির তারতম্য ঘটে। ‘ডপলার অভিক্রিয়া’য় এরূপ ঘটে থাকে।
প্রশ্ন আসতে পারে, ফোটন-এর মধ্যে কম্পাঙ্ক বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মত তরঙ্গের ধর্মাবলী আসছে কিভাবে? এর উত্তর এত ছোট পরিসরে দেওয়া কঠিন কারণ এটি পদার্থবিদ্যার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শুধু বলি, সময়/পরীক্ষাবিশেষে সমস্ত পদার্থই আসলে তরঙ্গ ও কণা- উভয়ের মতই আচরণ করতে পারে!
কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব অনুযায়ী, ফোটন হল তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের বাহক কণা। ইলেকট্রন হল একইভাবে ইলেকট্রন ক্ষেত্রের উদ্দীপনা/কণা। অর্থাৎ ফোটন আসলে নিজেই তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ (অর্থাৎ পরিবর্তনশীল ও প্রসারণশীল তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র)-এর খণ্ডীভবন বা কণারূপ, আবার বিশেষ পরীক্ষায় দেখা যায় ইলেকট্রন পদার্থকণা হলেও তরঙ্গধর্ম দেখাতে পারে। এভাবে সকল পদার্থ ও শক্তিকণাই সংশ্লিষ্ট কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের উদ্দীপনা/কণা এবং এরা তরঙ্গ ও কণা উভয় ধর্মই ধারণ করে।
কোন ফোটন কণা কি অন্যান্য বিভিন্ন কণিকা তথা আরো অনেক ফোটন কণার সাথে বিক্রিয়া করতে পারে?
কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব বিভিন্ন মূলগত কণাদের মধ্যেকার মিথষ্ক্রিয়া ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে। এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে রসায়নের পর্যায়সারণীর মত কণা পদার্থবিদ্যার জন্যও একটি মডেল তৈরি করা হয়েছে। একে ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’ বলে।
এতে দেখা যাচ্ছে, ৪ প্রকার কণা রয়েছেঃ
কোয়ার্ক (৬ প্রকার),
লেপটন (৬ প্রকার),
গেজ বোসন [৪ প্রকার (যার মধ্যে গ্লুয়ন আবার ৮ রকমের হয় এবং W দুরকম হয়)] এবং স্কেলার বোসন (১ প্রকার)।
কোয়ার্ক (৬ প্রকার),
লেপটন (৬ প্রকার),
গেজ বোসন [৪ প্রকার (যার মধ্যে গ্লুয়ন আবার ৮ রকমের হয় এবং W দুরকম হয়)] এবং স্কেলার বোসন (১ প্রকার)।
এর মধ্যে কোয়ার্ক ও লেপটন হল পদার্থকণা (বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি-র নামানুসারে এদের বলে ‘ফার্মিয়ন’)। আমাদের জানা সমস্ত পদার্থ এই দুই প্রকার কণা দিয়ে তৈরি। এই কণারা ৩ টি মূলগত বল দ্বারা পরস্পরের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া করেঃ
তড়িৎচুম্বকীয়,
দুর্বল বল ও
সবল বল
তড়িৎচুম্বকীয়,
দুর্বল বল ও
সবল বল
(মহাকর্ষকে স্ট্যান্ডার্ড মডেলে রাখা হয়নি বিশেষ কারণেঃ স্ট্যান্ডার্ড মডেল থেকে মহাকর্ষকে বাদ দেওয়া সম্পর্কে আপনার মতামত কী? এ তীর্থ চক্রবর্তী (Tirtha Chakrabarti) এর উত্তর)
গেজ বোসনগুলি হল মূলগত বলগুলির বাহক কণা বা শক্তিকণা (বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোস-এর নামানুসারে এদের ‘বোসন’ বলে)। ফার্মিয়নরা গেজ বোসন বিনিময়ের মাধ্যমে পরস্পর মিথষ্ক্রিয়া করে। স্কেলার বোসনও একধরণের বোসন তবে তার কাজ আলাদা। এটি অন্যান্য কণাকে ভর প্রদান করে।
এখন, গেজ বোসনদের মধ্যে আছেঃ ফোটন, W+-, Z_0, গ্লুয়ন। এরা একেকজন উল্লিখিত একেক বলের মিথষ্ক্রিয়ায় অংশ নেয়।
দেখুন, তড়িৎচুম্বকীয় (Electromagnetic) মিথষ্ক্রিয়ায় অংশ নেয় যে বাহককণা সে-ই হল ফোটন।
এখন, গেজতত্ত্ব অনুসারে প্রত্যেক বলের জন্য একেক ধরণের আধান উৎস হিসেবে কাজ করে। তড়িৎচুম্বকীয় বলের সাথে সংশ্লিষ্ট যে আধান তাকে বলে ‘তড়িৎআধান’। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, যেসব কণা তড়িৎআধান বহন করে তারাই তড়িৎচুম্বকীয় বলের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া করতে পারবে। এরকম কণা হলঃ ইলেকট্রন, মিউয়ন, টাও, কোয়ার্কসমূহ। এদের বিপরীত কণা (Anti-particles) রাও তড়িৎআধানযুক্ত।
অর্থাৎ, ফার্মিয়নদের মধ্যে ইলেকট্রন, মিউয়ন, টাও এবং কোয়ার্কসমূহ (এবং তাদের বিপরীত কণাসমূহ) ফোটন-বিনিময়ের মাধ্যমে তড়িৎচুম্বকীয় মিথষ্ক্রিয়া ঘটাতে পারে। এই সকল মিথষ্ক্রিয়াসমূহ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার জন্য কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্বের অন্তর্গত যে শাখা আছে তাকে বলে ‘কোয়ান্টাম তড়িৎগতিবিদ্যা’ (Quantum Electrodynamics)। এটা আসলে ম্যাক্সওয়েলীয় সনাতন তড়িৎগতিবিদ্যার কোয়ান্টাম রূপ যা ফাইনম্যান, শুইঙ্গার ও তোমোনাগা আবিষ্কার করেন ও নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
ফাইনম্যান চিত্রের সাহায্যে একটি ইলেকট্রন-ফোটন মিথষ্ক্রিয়া (এখানে দুটি ইলেকট্রন পরস্পরকে বিকর্ষণ করছে অর্থাৎ কুলম্ব বিকর্ষণ চিত্রিত হয়েছে)
এরকম বহুধরণের তড়িৎচুম্বকীয় মিথষ্ক্রিয়া হতে পারে তবে সবেরই মূলে তড়িৎআধানযুক্ত কণাদের পরস্পর ফোটন গ্রহণ-বর্জন বা বিনিময়।
তবে, ফোটন নিজেদের মধ্যে (অর্থাৎ অন্য ফোটনের সাথে) মিথষ্ক্রিয়া করতে পারে না। এর কারণ হল, গাণিতিকভাবে তড়িৎগতিবিদ্যার সমীকরণগুলি রৈখিক (Linear)।
ফোটন যদি ভরহীন হয়, তবে এর ভরবেগ শূন্য নয় কেন?
কারণ ভরবেগের জন্য ভর থাকাটা বাধ্যতামূলক নয়, শক্তি থাকলেই যথেষ্ট |
প্রথমেই যেটা বলা দরকার, momentum বোঝাতে 'ভরবেগ' শব্দটির ব্যবহার যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর ; নিউটনীয় বলবিদ্যার আওতায় থাকলে কোনো সমস্যা হয় না কারণ সেখানে momentum
তাই ভর ও বেগ এর কারণে 'ভরবেগ' এরকম একটা সোজাসাপ্টা ব্যাখ্যা দিয়ে দেওয়া যায় |
কিন্তু আপেক্ষিক বলবিদ্যার আওতায় প্রবেশ করলে এই ইনটুইশন আর খাটে না কারণ সেখানে যে সমীকরণটি যথার্থ সেটি হলো:
যেখানে
দিয়ে বস্তুর নিশ্চল ভরকে ( যেটাকে আমরা সবাই 'ভর' বলে থাকি ) বোঝানো হয়েছে | এবার ফোটনের ক্ষেত্রে এই সমীকরণ প্রয়োগ করতে হলে এর মান শূন্য বসিয়ে দিতে হবে, তাহলে সমীকরণটি দাঁড়াবে:
বা
দেখাই যাচ্ছে যে ফোটনের ক্ষেত্রে নিশ্চল ভর শূন্য হলেও তাঁর ভরবেগ শূন্য হওয়ার কোনো কারণ নেই কেননা ফোটনের শক্তি এর মান শূন্য নয় |
এই জায়গায় কোথাও কোথাও ফোটনের 'আপেক্ষিক ভর'এর একটা সংজ্ঞা টেনে আনা হয় কিন্তু এটা নিষ্প্রয়োজন; একটি ফোটনের ক্ষেত্রে তাঁর ভরবেগকেই একটা 'ডিগ্রী অফ ফ্রিডম' হিসেবে ধরা হয়, তাঁর 'আপেক্ষিক ভর' কে নয় | এছাড়া, 'আপেক্ষিক ভর'এর সংজ্ঞা বিজ্ঞান পঠনকারীদের মধ্যেও অনেক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে, যেমন নিচের সমীকরণটি
যেখানে
দিয়ে আপেক্ষিক ভর বোঝানো হয়েছে, দেখে এরকম একটা ধারণা হয় যে বস্তুর গতিবেগ যত বাড়বে তাঁর আপেক্ষিক ভরও তত বাড়তে থাকবে এবং ফোটনের গতিবেগের সমান হয়ে গেলে বস্তুর আপেক্ষিক ভর অসীম হয়ে যাবে! সেখানে ফোটনের ভর কি করে সসীম হলো, কেন অসীম নয় এই ধরণের প্রশ্ন প্রায়ই উঠে আসতে দেখি |
তাই যেটা বুঝতে হবে সেটা হলো ভরবেগের অর্থ ভর আর বেগের গুণফল নয়, নিশ্চল ভর না থাকলেও শুধুমাত্র শক্তির অধিকারী হলেই ভরবেগের অধিকারীও হওয়া যায় |
আরেকটা উদাহরণ যেটা মাথায় আসছে সেটা হল তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের জন্যও একটা ভরবেগের সংজ্ঞা আছে যেটাকে 'field momentum' বলা হয় | এখানেও ভরের কোনো গল্প নেই, কিন্তু ভরবেগের সংজ্ঞা কাজ করে কারণ তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রে শক্তি সঞ্চিত থাকে |
• ফোটন আধান নিরপেক্ষ।
•ফোটন আলোর বেগে ধাবিত হয়।
• ফোটনের কোনো ভর নেই কিন্তু শক্তি রয়েছে৷
আমরা ম্যাক্স প্লাঙ্কের সূত্র দিয়ে ফোটনের শক্তি নির্ণয় করতে পারি।
প্লাঙ্কের সূত্রটি হল,
এখানে,
এখানে,
আর এর মাণ আমাদের জানা আছে। এগুলো ধ্রুবক৷
উপরোল্লিখিত, ১ নং সূত্রে
এবং এর মাণ বসালেই আমরা ফোটনের শক্তি পেয়ে যাবো। কিন্তু, বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের জন্য ফোটনের মাণ ভিন্ন। আমি নীল আলোর জন্য ফোটনের শক্তি হিসেব করে দেখাচ্ছি।
আমরা জানি,
{ }
নীল আলোর জন্য, { }
তাহলে আমরা নীল আলোর জন্য ফোটনের শক্তি পেয়ে গেলাম। এভাবে আমরা প্রত্যেক আলোর জন্য ফোটনের শক্তি হিসেব করতে পারবো।
উপরোক্ত চিত্র থেকে বিভিন্ন আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বসিয়ে আমরা ফোটনের শক্তি সহজেই নির্ণয় করতে পারবো৷
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ