ঈশ্বরের স্বরূপ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

23 July, 2020

ঈশ্বরের স্বরূপ

ঈশ্বরের স্বরূপ

ও৩ম্  শং নো মিত্রঃ শং বরুণঃ শং নো ভবত্বন্ত্বর্য্যামা।

শং নো ইন্দ্রো বৃহস্পতিঃ শং নো বিষ্ণুরুরুক্রমঃ। [ঋগ্বেদ০ ১।৯০।৯]


নমো ব্রহ্মণে নমোস্তে বায়ো ত্বমেব প্রত্যক্ষং ব্রহ্মাসি।
ত্বমেব প্রত্যক্ষং ব্রহ্ম বদিষ্যামি।
[ঋতং বদিষ্যামি। সত্যং বদিষ্যামি। তন্মামবতু। তদ্ বক্তারমবতু। অবতু মাম্। অবতু বক্তারম।।-তৈঃউঃ১।১]

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।।

-হে সচ্চিদানন্দাননত্তস্বরূপ, হে নিত্যশুদ্ধবুদ্ধমুক্ত স্বভাব হে অদ্বিতীয়ানুপমজগতাদি কারণ, হে অজ, নিরাকার, সর্বশক্তিমান,ন্যায়কারিন্ , হে জগদিশ্বর, সর্বজগদুৎপাদকাধার, হে সনাতন ,সর্বমঙ্গলময়, সর্বস্বামিন, হে করুণাকরাস্মৎ পিতঃ, পরম সহায়ক, হে সর্বনন্দপ্রদ, সকল দুঃখবিনাশক, হে অবিদ্যান্ধকারনির্মূলক, বিদ্যার্কপ্রকাশক, হে পরমৈশ্বর্যদায়ক, সাম্রাজ্যপ্রসারক, হে অধমোদ্ধারক, পতিতপাবন, মান্যপ্রদ, হে বিশ্ববিনোদক, বিনয়বিধিপ্রদ, হে বিশ্বাস বিলাসক, হে নিরঞ্জন, নায়ক, শর্মদ নরেশ, হে সর্বান্তর্যামিন, সদুপদেশক, মোক্ষপ্রদ, হে সত্যগুণাকর, নির্মল, নিরীহ নিরাময়, নিদুপদ্রব দীনদয়াকর, পরমসুখদায়ক, হে দারিদ্র-বিনাশক, নির্বৈরবিধায়ক, সুনীতিবর্ধক, হে প্রীতিসাধক, রাজ্যবিধায়ক, হে সর্ববলদায়ক, নির্বলপালক, হে সুধর্মসুপ্রাসক, হে অর্থসুধাক, সুকামবর্ধক, জ্ঞানপ্রদ,হে সন্ততিপালক, ধর্মসুশিক্ষক, রোগ বিনাশক, পুরুষার্থ প্রাপক, দুর্গুণনাশক, সিদ্ধিপ্রদ, হে সজ্জনসুখদ, দুষ্টসুতাড়ন, গর্বকুক্রোধ-কুলোভবিদারক, হে পরমেশ, পরেশ পরমাত্নন, পরব্রহ্মন্। হে জগদানন্দক,পরমেশ্বর,ব্যাপড, সূক্ষ্মাচ্ছেদ্য, হে অজরামৃতাভয়নির্বন্ধনাদে ! হে অপ্রতিম প্রভাব, নির্গুণাতুল, বিশ্বাদ্য,বিশ্ববন্দ্য, বিদ্বদ্বিলাসক, ইত্যাদ্যনন্তবিশেষণ বাচ্য, হে মঙ্গলপ্রদেশ্বর! আপনি সর্বতোভাবে সকলের নিশ্চিত মিত্র ও সর্বদা আমাদের সত্য সুখদান করেন। হে সর্ব্বোৎকৃষ্ট স্বীকারযোগ্য বরেশ্বর ! আপনি বরুণ, অর্থাৎ সর্বাপেক্ষা পরমোত্তম,সেই জন্য আপনি আমাদের পরম সুখদায়ক। হে পক্ষপাতরহিত ধর্বন্যাকারিন্। আপনি অর্যমা(যমরাজ),ন্যায়কারী ও সুখদাতা, হে পরমৈশ্বর্যবান্ ইন্দ্রেশ্বর! আপনি অতি শীঘ্র আমাদের পরম ঐশ্বর্যযুক্ত স্থায়ী সুখ প্রাদান করুন। হে মহাবিদ্যাবাচোধিপতে, বৃহস্পতে, পরমাত্মন্! আপনি আমাদের(বৃহৎ) সুমহান্ সুখদাতা। হে সর্বব্যাপক! অনন্ত পরাক্রমেশ্বর বিষ্ণো! আপনি আমাদের অনন্ত সুখ দান করুন। যাহা কিছু চাহিব, আপনার নিকটই চাহিব। আপনি ব্যাতীত সর্বপ্রকার সুখদানকারী আর কেহ নাই। আপনি আমাদের সর্ব কালের আশ্রয়, আপনার ন্যায় সর্বশক্তিমান্ ন্যায়কারী, দয়াময়, সর্বাপেক্ষা মহান্ পিতাকে ত্যাগ করিয়া আমরা কদাপি ক্ষুদ্রের আশ্রয় লইব না। আপনি অঙ্গীকৃত জনে কদাপি ত্যাগ করেন না, ইহা আপনার  স্বভাব। সেই কারণেই আমদের দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনি আমাদের সর্বকালে সুখ দান করিবেন। পরমেশ্বর হইতে সমস্ত জগৎ সৃষ্ট হইয়াছে এবং এখন হইতেছে এবং পরে হইবে তিনি সর্বশক্তিমান তাঁহা ভিন্ন জগতে সৃষ্টি কর্তা কেহ নাই এবং মোক্ষদাতা দ্বিতীয় কেহ নাই একমাত্র তিনিই আছেন। সেই পরমেশ্বর (অন্যঃ) অর্থাৎ তিনি পৃথিব্যাদি জগতে ব্যাপক হইয়াও ইহা হইতে পৃথক কারণ তাঁহার জন্ম হইথে পারে না তিনি নিজ সামর্থ্যের দ্বারা সমস্ত জগৎকে উৎপন্ন করিয়া নিজে অজন্মা হইয়া রহিয়াছেন।

 ঈশ্বর সচ্চিদানন্দস্বরূপ [যজুর্বেদ ৩২/৮ , ঋগ্বেদ ১/৭২/১, যজুর্বেদ ৩৬।৫] , নিরাকার, সর্বশক্তিমান, ন্যায়কারী, দয়ালু, অজন্মা, অনন্ত, নির্বিকার, অনাদি, অণুপম, সর্বাধার, সর্বেশ্বর সর্বব্যাপক [ অথর্ববেদ-১৯/৪৪/৪, যজু ৩২।৮ ], সর্বান্তর্যামী, অজর, অমর [য়জু০ ২৩।৬৩], অভয়, নিত্য, পবিত্র ও তিনিই সৃষ্টিকর্তা [যজুঃ৩০।৩]। সব সত্যবিদ্যা [আধ্য়াত্বিক] এবং যা পদার্থবিদ্যা [ভৌতিক] দ্বারা জানা যায় সেসবের আদিমূল পরমেশ্বর [ঋগ্বেদ ২।১২।৯]। ঈশ্বর কে মাতা পিতা গুরু বলাহয়। পরমেশ্বর যাঁতে আকাশাদি সকল ভূত প্রবেশ করছে অথবা যিনি সকলের মধ্যে ব্যাপ্ত হয়ে প্রবিষ্ট থাকেন তিনিই ও৩ম্। ও৩ম্ পরমেশ্বরের মূখ্য নাম কঠোপনিষদ ১/২/১৫। যাঁহাতে সূর্য্যাদি তেজস্বান্ লোকসমূহ উৎপন্ন হয়ে যাঁহার আধারে অবস্থিতি করে, অথবা যিনি সূর্য্যাদি তেজঃস্বরূপ পদার্থ সমূহের গর্ভ অর্থাৎ উৎপত্তি ও নিবাস স্থান, সেই পরমেশ্বরের নাম হিরনণ্যগর্ভ [যজু ১৩।৪] তাঁকে ছাড়া কোন অন্যকে উপাস্য জানিবে না [যজু০ ৩২।৮]॥

বিঃদ্রঃ ঈশ্বর সর্ব্বশক্তিমান শব্দের অর্থ এই যে, ঈশ্বর স্বীয় কার্য্যে অর্থাৎ সৃষ্টি-স্থিতি প্রলয়াদি এবং সর্ব্বজীবের পাপপুণ্যের যথায়োগ্য ব্যবস্থা করিতে কাহারও কিছুমাত্র সহায়তা লন না, অর্থাৎ তিনি তাঁহার অনন্ত সামর্থ্য দ্বারা স্বকার্য্য সাধন করিয়া থাকেন। ঈশ্বর তাঁহার গুণ কর্ম্ম স্বভাব বিরূদ্ধ কর্ম্ম করতে পারেন না, ঈশ্বর যাহা ইচ্ছা তাহাই করেন না। ঈশ্বরের গুণের অভাব অর্থাৎ নির্গুণ। এরূপ পরমেশ্বরে যে সকল গুণ বিদ্যমান তাঁহাকে সে সকল গুণবিশিষ্ট এবং যে সকল গুণের অভাব, সেকল গুণরহিত জানিয়া প্রশংসা করাকে যথাক্রমে সগুণ ও নির্গুণ স্তুতি বলে। তদ্রূপ শুভগুণ গ্রহণ এবং দেষবর্জ্জনার্থ সহায়তা প্রার্থনা করেকে যথাক্রমে সগুণ ও নির্গুণ প্রার্থনা বলে এবং পরমেশ্বর সর্ব্বগুণময় এবং সর্ব্বদোষরহিত জানিয়া নিজ আত্মাকে তাঁহাতে এবং তাঁহার আজ্ঞায় সমর্পণ করাকে সগুণএবংনির্গুণউপাসনা বলে।

ইদ্ৰং মিত্রং বরুণ মগ্নি মাহু, রথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান।
একং সদ্বিপ্ৰা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ ॥(ঋগ্বেদ ১/১৬৪/৪৬)
পদার্থ :- (ইন্দ্রম্) পরমৈশ্বর্য যুক্ত (মিত্রম্) মিত্র (বরুণম্) শ্রেষ্ঠ (অগ্নিম্) অগ্নি (আহঃ) বলেন (অথ) তারপর (দিব্যঃ) দ্যুলোকস্থিত (সঃ) সেই (সুপর্ণ) সুপালক (গরুত্মান্) মহান্ আত্মাযুক্ত (একম্) এক (সৎ) সত্যকে (বিঃ) মেধাবী পুরুষেরা (বহুধা) বহু প্রকারে (বদন্তি) অভিহিত করেন (অগ্নি) সর্ব্বব্যাপক পরমাত্মাকে (যমম) নিয়ন্তা (মাতারিশ্বনম্) বায়ু (আহঃ) বলেন।
বঙ্গানুবাদ :- এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুৎন, যম, মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন।
ভাবার্থ :- ইন্দতি পরমৈশ্বর্যবান্ ভবতীন্দ্রঃ; যিনি পরমৈশ্বর্যবান্ তিনি ইন্দ্র। মেদ্যতি স্নিহাতি স্নিহাতে বা স মিত্রঃ; যিনি সর্ব্বাপেক্ষা অধিক স্নেহ করেন ও প্রীতির পাত্র তিনি মিত্র। বৃণোতি ব্ৰিয়তে বাহসৌ বরুনঃ; যিনি বরণ করেন বা বরণ যোগ্য তিনি বরুণ। যোহঞ্চতি অচ্যতেহ গত্যঙ্গত্যেতি বা সোহয়মগ্নিঃ; যিনি জ্ঞান স্বরূপ, সর্ব্বজ্ঞ, জ্ঞাতব্য, প্রাপ্তব্য ও পূজ্য তিনি অগ্নি। দিবি ভবঃ ইতি দিব্যঃ, যিনি জ্যোতিঃস্বরূপ তিনি দিব্য। শোভনানি পর্ণানি পালনানি যস্য সঃ সুপর্ণ; যিনি উত্তমরূপে পালন করেন তিনি সুপর্ণ। গুর্বাত্মা গরুৎমান্; মহান্ আত্মা যাঁহার তিনি গরুৎমান৷ নিয়ন্তা যমঃ; যিনি নিয়ন্তা তিনি যম। মাতরিশ্বা বায়ুঃ; বাতি, গচ্ছতি, জানাতি বেতি বায়ুঃ; যিনি বেগবান বা জ্ঞান দাতা তিনি বায়ু বা মাতরিশ্বা। এই রূপ অসংখ্য নামে একই পরমাত্মার অসংখ্য গুণ, ক্রিয়া ও স্বভাবের বর্ণনা করা হয়।
ও৩ম্
৩ হল প্লুতস্বরের প্রতীক। সংস্কৃত স্বর তিন প্রকার, হ্রস্ব স্বর, দীর্ঘ স্বর ও প্লুত স্বর ( যা আরো দীর্ঘতর এবং প্লুত স্বরের প্রতীক হিসেবে ৩ দেওয়া হয়।)
পাণিনীয় অষ্টাধ্যায়ীর ৮/২/৮৭ এর মূল সূত্র হল "ওমভ্যাদানে"
পাণিনির অষ্টাধ্যায়ীর উপর সবচেয়ে বিখ্যাত কাশিকাবৃত্তি যদি আমরা দেখি, তাতে এইস্থলে বলা, "অভ্যাদানং প্রারম্ভঃ, তত্র য়ঃ ওম্ শব্দঃ তস্য প্লুতো ভবতি।"
অর্থাৎ ওম্ শব্দ প্লুত উদাত্ত উচ্চারিত হয়।
উদাহরণ হিসেবে প্রথম ঋগঃ "ও৩ম্ অগ্নিমীলে পুরোহিতম্" ও উদ্ধৃত রয়েছে।
ওঙ্কার পরমেশ্বরের শ্রেষ্ঠ নাম কারণ "অ", "উ" এবং "ম" এই তিন অক্ষর মিলিত হইয়া সমস্তে "ওঁ" হইয়াছে। এই নাম হইতে পরমেশ্বরের অনেক নাম আইসে।"অ" হইতে বিরাট অগ্নি এবং বিশ্বাদি; "উ" হইতে হিরণ্যগর্ভ, বায়ু এবং তৈজসাদি ও "ম" হইতে ঈশ্বর,আদিত্য এবং প্রাজ্ঞাদি নাম সূচিত এবং গৃহীত হয়,এই সমস্ত নামই পরমেশ্বরবাচক।"য ঈষ্টে সর্ব্বৈশ্বর্য্যবান্ বত্ততে স ঈশ্বরঃ"- পরমেশ্বরের সত্য বিচারশীল জ্ঞান থাকায় এবং তাহার অনন্ত ঐশ্বর্ষ্য আছে বলিয়া তাহার নাম ঈশ্বর।"ন বিদ্যতে বিনাশো ষস্য সোহয়মদিতিঃ অদতিরেব "আদিত্যঃ" অর্থাৎ যাঁহার কখন বিনাশ নাই,তাদৃশ ঈশ্বরের নাম "আদিত্য"।(শন্নোমিত্রঃ শং বং)এই মন্ত্রে যে মিত্রাদি নাম আছে, উহাও পরমেশ্বরের নাম। কারন স্তুতি, প্রার্থনা ও উপাসনা শ্রেষ্ঠরই করা হয়। শ্রেষ্ঠ তাঁকেই বলা যায় যিনি গুন,কর্ম্ম,স্বভাব এবং সত্য ব্যবহারে সর্ব্বপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হয়েন।

ঈশ্বরের স্বরূপ
हि॒र॒ण्मये॑न॒ पात्रे॑ण स॒त्यस्यापि॑हितं॒ मुखम्।
 यो॒ऽसावा॑दि॒त्ये पु॑रुषः॒ सो᳕ऽसाव॒हम्।
 ओ३म् खं ब्रह्म॑ ॥१७ ॥
- যজুর্বেদ অধ্যায় ৪০ মন্ত্র ১৭

ওঁ খং ব্রহ্ম- "অবতীত্যোম্ আকাশমিব ব্যাপকত্বাৎ খম্ সর্ব্বেভ্যো বৃহত্বাৎ ব্রহ্ম"
-রক্ষা করেন বলিয়া(ওঁ),আকাশের ন্যায় ব্যাপক বলিয়া (খং) এবং সর্ব্বাপেক্ষা বৃহৎ বলিয়া(ব্রহ্ম)। ঈশ্বরের নাম (ওঁ) যাঁহার নাম ওঁ এবং যাঁহার নাশ নাই,তাঁহাকেই উপাসনা করা উচিত অন্যকে নহে(ওমিত্যেতদক্ষরমুদ্ গীথমূপাসীৎ-ছান্দোগ্য উপনিষদ্ মং -১)। সমগ্র বেদাদি শাস্ত্রে পরমেশ্বরের প্রধান এবং স্বকীয় নাম(ওঁ) বলিয়া কথিত আছে। অন্য সকল নাম গৌণিক নাম। যিনি সকলের শিক্ষাদাতা,সূক্ষ্ম হইতে সূক্ষ্ম, স্বপ্রকাশ স্বরূপ এবং সমাধিস্থ(যোগীর)বুদ্ধিগম্য, তিনিই পরম পুরুষ। স্বপ্রকাশ বলিয়া তিনি "অগ্নি", বিজ্ঞান স্বরুপ বলিয়া "মনু" সকলের পালনকর্ত্তা এবং পরমৈশ্বর্ষ্যবান্ বলিয়া "ইন্দ্র", সকলের জীবনমূল বলিয়া "প্রাণ" এবং নিরন্তর ব্যাপক বলিয়া পরমেশ্বরের নাম "ব্রহ্ম"। সর্ব্ব জগতের স্রষ্টা বলিয়া "ব্রহ্মা",সর্ব্বব্যাপক বলিয়া "বিষ্ণু", দুষ্টকে দন্ড দিয়া রোদন করান বলিয়া "রুদ্র",মঙ্গল এবং সর্ব্বকল্যাণের কর্ত্তা বলিয়া "শিব"। প্রলয়কালে সকলের কাল এবং কালেরও কাল বলিয়া পরমেশ্বরের নাম কালাগ্নি।

इन्द्रं मित्रं वरुणमग्निमाहुरथो दिव्यः स सुपर्णो गरुत्मान्।
 एकं सद्विप्रा बहुधा वदन्त्यग्निं यमं मातरिश्वानमाहुः ॥
ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নিমাহুরথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান্।
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বান-মাহুঃ।।--ঋগ্বেদ মন্ডল ১ সূক্ত ১৬৪ মন্ত্র ৪৬

(ইন্দ্রং মিত্রং) যে এক অদ্বিতীয় সত্য ব্রহ্ম বস্তু আছেন,তাঁহারই ইন্দ্রাদি সকল নাম।
"দ্যুষু শুদ্ধেষু পদার্থেষু ভবো দিব্যঃ" "শোভনানি পর্ণানি পালনানি পূণানি কর্ম্মাণি বা যস্য সঃ"  "যো গুর্ব্বাত্মা স গরুত্মান্" " যো মাতরিশ্বা বায়ুরিব বলবান্ স মাতরিশ্বা"।।- যিনি প্রকৃত্যাদি দিব্য পদার্থে ব্যাপ্ত,(পর্ণ) যাঁহার পালন এবং কর্ম্ম সকল পূর্ণ,যাহার আত্মা অর্থাৎ স্বরুপ মহৎ, যিনি বায়ুতুল্য অনন্ত এবং বলবান হয়েন,এবং পরমাত্মা তজ্জন্য দিব্য,সুপর্ণ,গরুত্মান্ এবং মাতরিশ্বা নামে কথিত হয়েন।

"ভূমিরসিঃ(ভবতি ভূতানি ষস্যাং সা ভূমিঃ)"-ইশ্বর হতে সমস্ত ভূত ও প্রাণী উৎপন্ন হয় বলিয়া তাহার নাম "ভূমি"।


ভাবার্থভাষ্যঃ-যেমন অগ্নিআদি পদার্থে ইন্দ্র আদি নাম তেমন পরমাত্মার আগ্নিআদি সহস্র নাম আছে। পরমেশ্বরের যেমন অনন্ত গুণ-কর্ম্ম-স্বভাব তেমন তাঁর নামও জানা উচিত।। 

"ন দ্বিতীয়া ন তৃতীয় শ্চতুর্থ না পু্চ্যতে
ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠ ন সপ্তমো না পুচ্যতে
নাষ্টমো ন নবমো দশমো না পুচ্যতে
য এতং দেবমেক বৃতং দেব"

-অথর্ব্ববেদ - কান্ড ১৩ সূক্ত ৪ মন্ত্র ২


-পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ পঞ্চম ষষ্ট সপ্তম অষ্টম নবম বা দশম ঈশ্বর বলিয়া অবিহিত নহে ।

প্রণায় নমো যস্য সর্ব্বমিদং বশে। 
যো ভুতঃ সর্ব্বস্যেশ্বরো যস্মিন্ৎ সর্ব্বং প্রতিষঠিতং।।
-অথর্ব্ববেদ কান্ড ১১ অং ২ সূক্ত ৪ মন্ত্র ১


"প্রাণায়" যেরূপ সমস্ত শরীর ও ইন্দ্রিয় সকল প্রাণের অধীন হইয়া থাকে তদ্রুপ, সমস্ত জগৎ পরমেশ্বরের অধীন হইয়া আছে। ব্যাকরণ,নিরুক্ত,ব্রাহ্মণ ও সূত্রাদির ঋষি ও মুণিগনকৃত ব্যাখ্যানে পরমেশ্বরের যা নাম গ্রহন দৃষ্ট হয় ,তদ্রুপ গ্রহন করা সকলেরই উচিত। পরন্তু "ওঁ" ইহা কেবল পরমাত্মারই নাম। সৃষ্টি কে সম্পূর্ণ ভাবে না জানলে শ্রষ্ঠা কে জানা সম্ভব নয়। 

যে যে স্থলে স্তুতি,প্রার্থনা এবং উপাসনা প্রভৃতি প্রকরণ হইবে এবং সর্ব্বজ্ঞ, ব্যাপক, শুদ্ধ, সনাতন ও সৃষ্টিকর্ত্তা প্রভৃতি বিশেষণ লিখিত হইবে সেই সেই স্থলে উক্ত নাম পরমেশ্বরের অর্থ গৃহীত হইবে। যে যে স্থলে উৎপত্তি,স্থিতি, প্রলয়,অল্পজ্ঞ,জড়,দৃশ্য আদি বিশেষণ লিখিত হয়, সেই সেই স্থলে পরমেশ্বরের গ্রহণ হয় না।- "তস্মাদ্বা এতস্মাৎ আত্মন আকাশঃ সম্ভূতঃ। তাকাশাদ্বায়ুঃ।বায়োরগ্নিঃ।অগ্নেরাপঃ।অদ্ভ্যঃ পৃথিবী।পৃথিব্যা ওষধয়ঃ। ওষধিভ্যোহন্নম্। অন্নাদ্রেতঃ। রেতসঃ পুরুষঃ। স বা এষ পুরুষোহন্নরসময়ঃ।। ইহা তৈত্তিরীয় উপনিষদের(১) বচন।

বেদের উৎপত্তি
অগ্নের্ঋগবেদো বায়োর্যজুর্ব্বেদঃ সূর্য্যাৎ সামবেদঃ
।।শতপথঃ১১।।৪।২।৩।।



ঈশ্বর আনন্দস্বরুপ (অথর্ব: ১০/৭/১), নিরাকার (যজু: ৪০/৪), সর্বশক্তিমান (যজু: ৪/৪০), অজন্মা (যজু: ৩৪/৫৩), অনন্ত (অথর্ব: ১০/৮/১২), অনাদি (অথর্ব: ১০/৮/২২), সর্বব্যাপক (যজু: ৩২/৮), সর্বজ্ঞ (সাংখ্য: ৩/৫৬ ), অমর (অথর্ব: ১০/৮/৪৪), অভয় (অথর্ব:১০/২১/১), পবিত্র (অথর্ব: ১০/৮/৪০), সর্বেশ্বর (অথর্ব:১০/৪/১), সৃষ্টিকর্তা ধর্ত্তা সংহর্ত্তা (বেদান্ত ১/১/২), তাঁর কোনো মুর্তি নাই (যজু: ৩২/৩) সহস্ত্রবীর্যহ सहस्त्रवीर्यः' (अथर्व. 2.4.2) सहस्त्र पराक्रम वाला है तो स्त्री 'सहस्त्रवीर्याः' (यजु. 13.26) कही गई है। ওজস্বান ओजस्वान्' (अथर्व. 8.5.4) ओज वाला कहता है तो स्त्री को 'ओजस्वती' (यजु. 10.3) कहता है। সহীয়ান্ सहीयान्' (ऋ. 1.61.7) अत्यन्त बल वाला है, तो स्त्री 'सहीयसी' (अथर्व. 10.5.43) बताई गई। सम्राट' (ऋ. 2.28.6) शासक कहा, तो स्त्री को 'सम्राज्ञी' (ऋ. 1.85.64) कहा गया। पुरुष यदि 'मनीषी' (ऋ. 9.96.8) मन वशीकरण करने वाला है तो स्त्री 'मनीषा' (ऋ. 1.101.7) है।

পরমেশ্বর উৎপত্তি প্রভৃতি ব্যবহার হইতে পৃথক, যে যে স্থলে সর্ব্বজ্ঞাদি বিশেষণ প্রযুক্ত থাকে সেই সেই স্থলে পরমাত্মার এবং যে যে স্থলে ইচ্ছা,দ্বেষ,প্রযত্ন,সুখ,দুঃখ এবং অল্পজ্ঞাদি বিশেষণ প্রযুক্ত থাকে, সেই সেই স্থলে জীবের গ্রহণ হইয়া থাকে এইরূপ সর্ব্বত্র বুঝিতে হইবে। কারণ পরমেশ্বরের জন্ম মরণ কখন হয় না। এই জন্য বিরাট্ আদি নাম হইতে এবং জন্ম আদি বিশেষণ হইতে জগতের জড় এবং জীবাদি পদার্থের গ্রহণ করা উচিত পরমেশ্বরের নহে।
ঈশ্বর হলেন সৃষ্টির উৎপত্তি কর্তা , তিনি স্বয়ং কার্য নয় । সৃষ্টি উৎপত্তির তিনটি কারণ , এবং সেই তিনটি কারণই অনাদি । "ঈশ্বর" , "জীবআত্মা" ও "প্রকৃতি" এই তিনটি পদার্থ অনাদি । ঈশ্বর সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ , ‘প্রকৃতি’ উপাদান কারণ এবং কাল ও দিশা প্রভৃতি সাধারণ কারণ । কেননা সৃষ্টির সমস্ত কার্যে এগুলি সামান্য কারণ ।
যার দ্বারা তৈরী করলে কিছু তৈরী হয় এবং তৈরী না করলে তৈরী হয় না , তাকে নিমিত্ত কারণ বলে । যথা —স্বর্ণকার অলংকার তৈরী করেছে । এখানে স্বর্ণকার হলেন কর্তা অর্থাৎ নিমিত্ত কারণ । আর সােনা হল উপাদান কারণ । স্বর্ণকারের তৈরী করার দরুণ অলংকার তৈরী হয়েছে , আর স্বর্ণকার তৈরী না করলে অলঙ্কার তৈরী হতাে না । অনুরূপ ভাবে যদি ঈশ্বর হতে আকাশ সৃষ্টি হয় , তাহলে শব্দ আকাশের গুণ হওয়ায় শব্দ ঈশ্বরের গুণ হবে । কিন্তু ঈশ্বরের গুণ তাে শব্দ নয় !
তাহলে আকাশে শব্দ এলাে কোথা থেকে ?
কারণের গুণ কার্যে অবশ্যই থাকে । যদি সােনা হতে অলংকার তৈরী হয় , তাহলে সােনার গুণ অলংকারে থাকা উচিত । আর এক কথা , ঈশ্বরেই যদি শব্দের অভাব হয় , তাহলে আকাশে শব্দ আসবে কোথা হতে ?
অভাব হতে কোন কালেও ভাবের উৎপত্তি হয় না কখনও হওয়া সম্ভবও নয় । অতএব প্রমাণিত হয় যে - ঈশ্বর হতে আকাশ হয়নি । এইভাবে আকাশ হতে বায়ুও সৃষ্টি হয়নি । কেননা বায়ুর ধর্ম স্পর্শ গুণ কোথা হতে এল ? বায়ু হতে অগ্নি হয়নি , কেননা অগ্নির গুণ রূপ । বায়ুতে রূপ নেই , তাহলে অগ্নিতে রূপ এলাে কোথায় থেকে ? এইভাবে সমস্ত তত্ত্বকে জানা এবং বোঝা উচিত ।
এই সব তত্ত্ব - 'সত্ব' , 'রজঃ' ও 'তম' মূল প্রকৃতি হতেই সৃষ্টি । আর তাদের নিমিত্ত কারণে পরমাত্মা , তিনি এই সমগ্র বিশ্ব সংসারের স্রষ্টা ।

ব্রহ্ম [যজুর্বেদ ৪০।১৭]-সকলের রক্ষাকর্ত্তা ও ব্যাপক। ঈশ্বর [অথর্ব ১১।৪।১]-ঐশ্বর্যময় জগতের সকল পদার্থের স্বামী। বিষ্ণু [ঋগ্বেদ ১।২২।২০]-সর্ব্বব্যাপী হরি [ঋগ্বেদ ৯।৫৭।২]- দুঃক্ষ বিনাশকারী ব্রহ্মা [অথর্ব ১৯।২২।২১]-সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর শিব [অথর্ব ১০।৬।৩০]-সর্বকল্যাণময় ঈশ্বর শঙ্কর [যজুর্বেদ ১৬।৪১]-যিনি সর্বদা ধার্মিক কর্মের অনুপ্রেরণা দেন গণেশ / গণপতি [যজুর্বেদ ২৩।১৯]-সকলের প্রভু অর্যমা [অথর্ব ১৩।৪।৪]-পরম পিতা মহাদেব [অথর্ব ১৩।৪।৪]-দেবতাদের ঈশ্বর বরুন [অথর্ব ১৩।৪।৪]-সেরা রুদ্র [অথর্ব ১৩।৪।৪]-যিনি রোদন করান মহেন্দ্র [অথর্ব ১৩।৪।৪]-সর্বশ্রেষ্ঠ যম [অথর্ব ১৩।৪।৪]-বিশ্ব নিয়ন্ত্রণকারী ন্যায় বিচারক

"যো বিবিধ নাম চরাহচর জগৎ রাজয়তি প্রকাশয়তি স বিরাট"- বিবিধ অর্থাৎ বহুপ্রাকার জগৎকে প্রকাশিত করেন বলিয়া বিরাট নামে পর্মেশ্বরের গ্রহণ হইয়া থাকে!
"যোহঞ্চেতি অচ্যতেহগত্যঙ্গত্যেতি সোহয়মগ্নিঃ"-পরমেশ্বর জ্ঞানস্বরূপ ও সর্ব্বজ্ঞ এবং জানিবার প্রাপ্ত হইবার এবং পূজা করিবার যোগ্য হয়েন বলিয়া তাঁহার নাম অগ্নি!
"বিশন্তি প্রবিষ্টানি সর্ব্বণ্যাকাশাদীনি ভূতানি যস্মিন্ যো বাহ্হকাশাদিষু সর্ব্বেষু ভূতেষু প্রবিষ্টঃ স "বিশ্বঃ" ঈশ্বরঃ"- যাঁহাতে আকাশাদি সমগ্র ভূত প্রবেশ করিয়া থাকে অথবা যিনি উহাতে ব্যাপ্ত হইয়া রহিয়াছেন সেই পরমেশ্বরের নাম "বিশ্ব"। এই সকল নাম "-কার" মাত্রা হইতে গৃহীত হয়।

"যো হিরণ্যানাং সূর্য্যাদীনাং তেজসাং গর্ভ উৎপত্তি নিমিত্তমধিকরণঃ স হিরণ্যগর্ভঃ"-যাহা হইতে তেজঃসস্পন্ন লোক উৎপন্ন হইয়া যাঁহার আধারে রহিয়াছে অথবা যিনি সূর্য্যাদি তেজঃস্বরূপ পদার্থের গর্ভ,নাম উৎপত্তি এবং নিবাসস্থান হয়েন সেই পরমেশ্বরের নাম হিরন্যগর্ভ হইয়া থাকে।
"যো বাতি চরাহচর জগদ্ধরতি বলিনাং বলিষ্ঠঃ স বায়ু"- ঈশ্বর চরাচর জগতের ধারণ জীবন ও প্রলয় করেন বলিয়া এবং সমগ্র বলবান অপেক্ষা বলিষ্ঠ বলিয়া তাহার নাম "বায়ু" হইয়া থাকে। যিনি স্বয়ং প্রকাশস্বরূপ এবং সূর্য্যাদি তেজস্বী লোকের প্রকাশকারক সেই ঈশ্বরের নাম "তৈজস" হইয়াছে।
এই সকল নাম "-কার" মাত্রা হইতে গৃহীত হয়।
"য ঈষ্টে সর্ব্বৈশ্বর্য্যবান্ বত্ততে স ঈশ্বরঃ"- পরমেশ্বরের সত্য বিচারনশীল জ্ঞান থাকায় এবং তাঁহার অনন্ত ঐশ্বর্য্য আছে বলিয়াই তাঁহার নাম ঈশ্বর।
"ন বিদ্যতে বিনাশো যস্য সোহয়মদিতিঃ অদিতিরেব "আদিত্যঃ"-যাঁহার কখন বিনাশ নাই তাদৃশ ঈশ্বরের নাম "আদিত্য"।
ঈশ্বরের স্বরূপ
"যঃ প্রকৃষ্টতয়া চরাচরস্য জগতো ব্যাবহারং জানাতি স প্রজ্ঞা+প্রজ্ঞ এব প্রাজ্ঞঃ"। ঈশ্বর নিভ্রান্ত জ্ঞানয়ুক্ত হইয়া সমগ্র চরাচর জগতের ব্যবহার যথাবৎ জানিয়া থাকেন বলিয়া তাঁহরা নাম "প্রাজ্ঞ"। এই সকল নামার্থ ম-কার হইতে গৃহীত হইয়া থাকে। যেরূপ এস্থলে এক এক মাত্রা হইতে তিন তিন অর্থ ব্যাখ্যাত হইয়াছে তদ্রুপ অন্য নামার্থও ওঙ্কার হইতে জানা যায় তাই ওঙ্কার ঈশ্বরের মুখ্য নাম
(শন্নোমিত্রঃ শং বং)-এই মন্ত্রে যে মিত্রাদি নাম আছে উহাও পরমেশ্বরের নাম। কারণ স্তুতি,প্রার্থনা ও ঐপাসনা শ্রেষ্ঠেরই করা হয়।শ্রেষ্ঠ তাঁকেই বলা যায় যিনি গুন,কর্ম্ম,স্বভাব এবং সত্য ব্যবহারে সর্ব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হয়েন। সমগ্র শ্রেষ্ঠ বস্তু ও জীব হইতে যিনি অত্যন্ত শ্রেষ্ঠ তাঁকেই পরমেশ্বর বলা যায়। তঁহার তুল্য কখন কেঃ নাই,ছিল না এবং হইবে না। যখন তাঁহার তুল্য কেহ নাই,তকন কেহ তাঁহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কিরূপে হইতে পারে ?
যেরূপ পরমেশ্বরের সত্য,ন্যায়,দয়া,সর্ব্বশক্তিমত্তা এবং সর্ব্বজ্ঞাত্বাদি অনন্ত গুণ আছে,তদ্রূপ অন্য কোন জড় পদার্থের বা জীবের নাই। যে পদার্থ সত্য,তাহার গুণ,কর্ম্ম এবং স্বভাব সত্য হইয়া থাকে, এজন্য পরমেশ্বরেরই স্তুতি,প্রার্থনা এবং উপাসনা করা মনুষ্যের উচিত এবং তদ্ভিন্ন অন্য কাহারও উপাসনাদি করা উতিত নহে। একারন যেরূপ ব্রহ্মা,বিষ্ণু ও মহাদেব নামক পূর্ব্বকালীন বিদ্বান্ মহাশয়গণ তথা দৈত্য দানবাদি নিকৃষ্ট মনুষ্য এবং অন্য সাধারণ মনুষ্যগণও কেবল পরমেশ্বরে বিশ্বাস করতঃ তাহারই স্তুতি,প্রারর্থনা এবং উপাসনা করিয়াছিলেন এবং তদ্ভিন্ন অন্য কাহারও উপাসনাদি করেন নাই;সেরূপ আমাদিগের সকলের করা উচিত।
মিত্রাদি নাম হইতে সখা এবং ইন্দ্রাদি দেবতা প্রভ,তি প্রসিদ্ধ অর্থ থাকালেও ঈশ্বরে উহা উক্ত অর্থে গ্রহন করা উতিৎ নহে।যেহেতু মনুষ্য মাত্রেই কাহারও মিত্র কাহার বা শত্রু এবং অপরের পক্ষে উদাসিন এইরূপ দেখিতে পাওয়া যায়। এই জন্য মুখ্যার্থে মিত্র শব্দে সখা আদি গ্রহণ হইতে পারে না। পরমেশ্বর সমস্ত জগতের নিশ্চিত মিত্র, তিনি কাহারও শত্রু নহেন এবং কাহারও পক্ষে উদাসীন নহেন। তিনি ভিন্ন কেহই যখন এরূপ হইতে পারে না, এই জন্য এস্থলে কেবল পরমেশ্বরেরই গ্রহন হইতেছে। অবশ্য গৌন অর্থানুসারে মিত্রাদি শব্দ দ্বারা সুহ্রদাদি মনুষ্যেরও গ্রহণ করা হইয়া থাকে। " মেদ্যতি স্নিহ্যতি স্নিহ্যতে বঃ স "মিত্রঃ"- পরমেশ্বর সর্ব্বাপেক্ষা স্নেহ ও প্রীতি করবার যোগ্য বলিয়া,তাঁহার নাম "মিত্র" হইয়াছে।
"যঃ সর্ব্বান্ শিষ্টান্ মুমুক্ষূন ধর্ম্মাত্মনো বৃণোত্যথবা যঃ শিষ্টৈমুর্মুক্ষু ভিধর্ম্মাত্মভিব্রিয়তে বর্য্যতে বা স বরুণঃ পরমেশ্বরঃ"-যিনি আত্মযোগী,বিদ্যান্,মুমুক্ষু এবং ধর্ম্মাত্মাদিগকে স্বীকার করেন অথবা শিষ্ট,মুমুক্ষু এবং ধর্ম্মাত্মাদিগকে গ্রহনীয় হয়েন তাদৃশ ঈশ্বরের নাম "বরুণ"। অথবা "বরুণো নাম বরঃ শ্রেষ্ঠঃ"-পরমেশ্বর সর্ব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলিয়া তাঁহার নাম "বরুণ"
"যোহর্য্যান্ স্বামিনো ন্যায়াধীশান্ মিমীতে মান্যান্ করোতি সোহর্য্যমা"-যিনি সত্য ও ন্যায়কারী লোকদিগের মান বৃদ্ধি করেন এবং পাপী ও পুণ্যবান্ লোকদিগের পাপ ও পুণ্যের ফলের যথাবৎ বিধান করেন সেই পরমেশ্বরের নাম "অর্য্যমা"।
"য ইন্দতি পরমৈশ্বর্য্যবান্ ভবতি স ইন্দ্রঃ পরমেশ্বরঃ"-পরমেশ্বর অখিল ঐশ্বর্য্যয়ুক্ত বলিয়া তাঁহার নাম ইন্দ্র হইয়াছে। (ইদি পরমৈশ্বর্য্যে)- এই ধাতুর উপর "রন" প্রত্যয় করিয়া "ইন্দ্র" শব্দ সিদ্ধ হয়।
"যো বৃহতাং আকাশাদীনাং পতিঃ স্বামী পালয়িতা স বৃহস্পতিঃ"-যিনি বৃহৎ হইতেও বৃহৎ ও আকাশাদি ব্রহ্মান্ডের স্বামী তাদৃশ পরমেশ্বরের নাম বৃহস্পতি
"বেবেষ্টি ব্যাপ্নোতি চরাচরং জগৎ সঃ বিষ্ণুঃ"। চর এবং অচর(স্থাবর ও জঙ্গম) জগতে ব্যাপ্ত হইয়া রহিয়াছেন বলিয়া পরমাত্মার নাম "বিষ্ণু" হইয়াছে [ঋগ্বেদ ১।২২।১৬]। অনন্ত পরাক্রমযুক্ত হওয়াতে পরমাত্মার নাম "উরুক্রম" হইয়াছে। বিষ্ণুঃ সর্বা দেবতাঃ।ঐ০ ব্রা০ ১/১ সমস্ত প্রকাশক পাদার্থই বিষ্ণুঃ।অগ্নির্বৈ দেবানামবমো বিষ্ণুঃ পরম্ঃ। ঐ০ ব্রা০ ১/১ সর্বব্যাপক বিদ্যুৎ অগ্নিই বিষ্ণু। বীর্য়ং বিষ্ণু। বজ্র বিদ্যুৎই বিষ্ণু। য়জুংষি বিষ্ণুঃ। শ০ ব্রা০ ৪/৬/৭/৩ য়জুষী ছন্দরশ্মিই বিষ্ণু। য়ো বৈ বিষ্ণুঃ সোম সঃ শ০ ব্রা০ ৩/৩/৪/২১ সোমেই বিষ্ণু।
ঈশ্বরের স্বরূপ
যে পরমাত্মা(উরুক্রম) মহা-পরাক্রমযুক্ত (মিত্র)সকলের সুহৃদ্ এবং অবিরোধী হয়েন, উক্ত(শম্)সুখকারক, (বরুণঃ)সর্ব্বশ্রেষ্ঠ (শম্) সুকস্বরুপ (অয্যমা) ন্যায়াধীশ (শম্) সুখপ্রাচারক,(ইন্দ্রঃ)সর্ব্বশ্বর্য্যবান্ এবং (শম্) সর্ব্বৈশ্বর্য্যদাতা,(বৃহস্পতিঃ)সর্ব্বাধিষ্ঠাতা,(শম্) বিদ্যাপ্রদ এবং (বিষ্ণু)সর্ব্বব্যাপক পরমেশ্বর(নঃ) আমাদিগের কল্যাণকারক (ভবতু) হউন্।
(বায়োতে ব্রহ্মণে নমোস্ত) যিনি সকলের উপরে বিরাজমান,সর্ব্বপেক্ষা বৃহৎ ও অনন্তবলযুক্ত পরমাত্মা হন,তাদৃশ ব্রহ্মকে আমি নমস্কার করিতেছি। হে পরমেশ্বর! (ত্বমেব প্রত্যক্ষস্বহ্মাসি) আপনিই অন্তর্য্যামিরূপে প্রত্যক্ষ ব্রহ্ম। (ত্বামেব প্রত্যক্ষং ব্রহ্মবদিষ্যামি) আমি আপনাকে প্রত্যক্ষ ব্রহ্ম বলিব। কারন আপনি সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত হইয়া সকলকে নিত্য প্রাপ্ত হইতেছেন। (ঋতং বদষ্যামি) আপনার যে যথার্থ বেদস্থ আজ্ঞা, আমি সকলের জন্য উহারই উপদেশ এবং আচরণ করিব। (সত্যং বদিষ্যামি) আমি সত্য বলিব,সত্য মানিব এবং সত্যেরই অনুষ্ঠান করিব। (তন্মাবতু) অতএব আপনি আমার রক্ষাসাধন করুন। (তদ্বক্তারমবতু) আমাকে আপ্ত ও সত্যবক্তাস্বরূপে আপনি আমার রক্ষাসাধন করুন; আপনার আজ্ঞাতে যেন আমার বুদ্ধি স্থির হইয়া কখন বিরুদ্ধ না হয়। কারণ আপনার আজ্ঞাই ধর্ম্ম এবং যাহা উহার বিরুদ্ধ তাহা অধর্ম্ম। (অবতু মা ম বতু বক্তারং) এ স্থলে দ্বিরুক্তি পাঠ অধিকার্থ অর্থাৎ গুরুত্বভাব প্রকাশার্থ বুঝিতে হইবে। যে রূপ "কশ্চিৎ কশ্চিৎ প্রতিবদতি ত্বং গ্রামং গচ্ছ গচ্ছ"-এ স্থলে দ্বিরুক্তি ক্রিয়ার উচ্চারণ দ্বারা "তুমি শীঘ্র গ্রামে যাও" ইহা সিদ্ধ হইয়া থাকে। এস্থলেও আপনি আমার অবশ্য রক্ষা সাধন করুন অর্থাৎ যাহাতে আমি ধর্ম্মে স্থিরতা লাভ করিতে পাই এবং অধর্ম্মে ঘৃণা করতে সমর্থ হই তজ্জন্য আমার উপর আপনি কৃপা করুন, তাহা হইলে আমি অতিশয় উপকৃত মনে করিব।-(ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ) এখানে শান্তি পাঠ প্রয়োজন। তিন বার শান্তি পাঠ প্রয়োজন তার কারন- এই সংসারে ত্রিবিধ তাপ অর্থাৎ তিন প্রকার দুঃখ আছেপ্রথমতঃ "আধ্যাত্মিক দুখঃ"- যাহা নিজ শরীরে হইয়া হইয়া থাকে; যথা- অবিদ্যা, রাগ, দ্বেষ, মূর্খতা ও জ্বর পীড়াদি। দ্বিতীয়ঃ "আধিভৌতিক দুঃখ" অর্থাৎ যে দুঃখ শত্রু,ব্যাঘ্র ও সর্পাদি ভূত বা প্রাণী হইতে প্রাপ্ত হওয়া যায়। তৃতীয়ঃ "আধিদৈবিক দুঃখ"-যে দুঃখ অতিবৃষ্টি,অতিশীত, অত্যুষ্ণতা এবং মন ও ইন্দ্রিয়ের অশান্তি জন্য উৎপন্ন হয়। এই জন্য প্রার্থনা হে পরমাত্মান্ আপনি এই তিন প্রকার দুঃখ বা তাপ হইতে পৃথক রাখিয়া আমাদিগকে সর্ব্বদা কল্যাণকর কর্ম্মে প্রবৃত্ত রাখুন। কারন আপনি কল্যাণস্বরূপ হইয়া সমস্ত সংসারের কল্যাণকর্ত্তা এবং ধার্ম্মিক ও মুমুক্ষু লোকদিগের কল্যাণদাতা। এই নিমিত্ত আপনি নিজ করুণা প্রকাশ পূর্ব্বক সকল জীবের হৃদয়ে প্রকাশিত হউন,যাহাতে সমস্ত জীব ধর্ম্মাচরণে প্রবৃত্ত ও অধর্ম্মাচরণ ত্যাগ করতঃ পরমানন্দ প্রাপ্ত হইয়া তাপত্রয় হইতে পৃথক থাকে।   
"সূর্য্য আত্মা জগতস্তস্থযশ্চ"-এই যজুর্ব্বেদীয় বচন অনুসারে "জগতঃ" অর্থাৎ চেতন প্রাণী ও জঙ্গম বা চলনশীল পদার্থের এবং "তস্থযঃ" অর্থাৎ অপ্রাণীর অর্থাৎ পৃথিবী আদি স্থাবর জড় পদার্থের আত্মা স্বরূপ হওয়াতে এবং স্বপ্রকাশ স্বরূপ হইয়া সকলের প্রকাশকারক বিধায় পরমেশ্বরের নাম "সূর্য্য" হইয়াছে।
ঈশ্বরের স্বরূপ

"যোহততি ব্যাপ্নোতি স আত্মা", "পরশ্চাসাবাত্মা চ য আত্মভ্যো জীবেভ্যঃ সূক্ষেভ্য পরোহতিসূক্ষঃ স পরমাত্মা"-অর্থাৎঃ যিনি সমস্ত জীবাদি জগতে নিরন্তর ব্যাপক হইয়া রহিয়াছেন; যিনি সমস্ত জীবাদি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং জীব, প্রকৃতি ও আকাশ অপেক্ষাও অতিসূক্ষ বা সূক্ষতম এবং সমস্ত জীবের অন্তর্য্যামী আত্মা, এজন্য সেই ঈশ্বরের নাম "পরমাত্মা"। সামর্থ্য বিশিষ্টের (নিজের কাজের জন্য অন্য কারো সহায্যের প্রয়োজন হয় না) নাম ঈশ্বর।" য ঈশ্বরেষ সমর্থেয় পরমঃ শ্রেষ্ঠঃ স পরমেশ্বরঃ"-যিনি ঈশ্বর অর্থাৎ সামর্থ্যবিশিষ্টের মধ্যে সামর্থ-তম, যাঁহার তুল্য কেহই নাই, তাঁহার নাম পরমেশ্বর।
"অভিষবঃ প্রাণিগর্ভবিমোচনং চোৎপাদনম্। যশ্চরাচরং জগৎ সুনোতি সূতে বোৎপ্নাদয়তি স সাবিতা পরমেশ্বরঃ"-পরমেশ্বর সমস্ত জগতের উৎপত্তি করেন বলিয়া তাঁহার নাম "সবিতা" হইয়াছে। অর্যমাউরুক্রম, ত্বষ্টা, ধাতা, পূষা, বরুণ, বিধাতা, বিবস্বান, ভগ, মিত্র, শত্রু ও সবিতা। সর্যের দ্বাদশ নাম এই অর্থে সূর্যের অপরনাম দ্বাদশাত্মা
"দিবু ক্রীড়াবিজিগীষা ব্যবহার দ্যুতিস্ত তিমোদ মদস্বপ্ন কান্তিগতিষু"-(ক্রীড়া) যিনি শুদ্ধ জগতপর ক্রীড়া করাইতে ইচ্ছা করেন।(বিজিগীষা) যিনি ধার্ম্মিক লোকদিগকে জয়যুক্ত করিতে ইচ্ছা করেন।(ব্যবহার) যিনি সমস্ত চেষ্টার সাধন এবং উপসাধন দান করেন।(দ্যুতি) যিনি স্বয়ংপ্রলাশ স্বরূপ হইয়া সকলকে প্রকাশ করেন। (স্তুতি) যিনি প্রশংসার যোগ্য। (মোদ) যিনি স্বয়ং আনন্দস্বরূপ হইয়া অপরকে আনন্দ প্রদান করেন;(মদ) যিনি মদন্মত্ত দিগের তাড়না করেন;(স্বপ্ন) যিনি সকলের শয়নার্থ রাত্রি এবং প্রলয় বিধান করেন;(কান্তি) যিনি কামনা যোগ্য; (গতি) যিনি জ্ঞান স্বরূপ, এরূপ পরমেশ্বরের নাম "দেব" হইয়াছে। অথবা "যো দীব্যতি ক্রীড়তি স দেবঃ"- যিনি নিজ স্বরূপে আনন্দ সহকারে স্বয়ং ক্রীড়া করেন অথবা অন্যের সাহায্য ব্যতিরেকে  ক্রীড়াবান সহজস্বভাব দ্বারা সমস্ত জগতের সৃষ্টি করেন, কিম্বা যিনি সমস্ত ক্রীড়ার আধারস্বরূপ বিরাজিত রহিয়াছেন।
"বিজিগীষতে স দেবঃ"- যিনি সকলের বিজিতা এবং স্বয়ং অজেয় অর্থাৎ যাঁহাকে কেহ জয় করিতে পারে না।
"ব্যবহারয়তি স দেবঃ"- যিনি ন্যায় এবং অন্যায় ব্য়বহারের জ্ঞাতা এবং উপদেষ্টা।
"যশ্চরাচরং জগৎ দ্যোতয়তি"- যিনি সকলের প্রকাশক "ষঃ স্তূয়তেস দেব"। যিনি সকল মনুষ্যের প্রশংসার যোগ্য এবং নিন্দার অযোগ্য। 
"যো মোদয়তি স দেবঃ"- যিনি স্বয়ং আনন্দস্বরূপ হইয়া অপরের আনন্দোৎপাদন করেন ও যাঁহার দুঃখের লেশমাত্র নাই।
"যো মাদ্যতি স দেবঃ"-যিনি স্বয়ং হর্ষবিশিষ্ট এবং অপরকে দুঃখ হইতে পৃথক করেন।

"যঃ স্বাপয়তি স দেবঃ"-যিনি প্রলয়কালে অবক্ত (প্রকৃতি) মধ্যে জীব সকলকে নিদ্রিত(সুষুপ্তি) অবস্থায় রাখেন। " যঃ কাময়তে কাম্যতেবা স দেবঃ"-যাঁহার কামনা সত্য এবং যাঁহার প্রাপ্তিকামনা শিষ্টলোক সকল করিয়া থাকেন; "যো গচ্ছতি গম্যতে বা স দেবঃ"- যিনি সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত এবং যিনি জানিবার যোগ্য ইত্যাদি গুণযুক্ত পরমেশ্বরের নাম "দেব" হইয়া থাকে। "যঃ সর্ব্ব কুবতি স্বব্যাপ্ত্যাচ্ছাদয়তি স কুবেরো জগদীশ্বরঃ"- পরমেশ্বর স্বব্যাপ্তি দ্বারা সকলকে আচ্ছাদন করেন বলিয়া তাঁহার নাম "কুবের" হইয়াছে।"যঃ প্রথতে সর্ব্বজগদ্বিস্তৃণাতি স পৃথিবী"- পরমেশ্বর সমস্ত বিস্তৃত জগতের বিস্তারকর্ত্তা বলিয়া তাঁহার নাম "পৃথিবী"। "জলতি ঘাতয়তি দুষ্টান,সংঘাতয়তি অব্যক্ত পরমাণ্বাদীন্ তদ্ ব্রহ্ম জলম"- যিনি দুষ্টদিগকে তাড়ন করেন অব্যক্ত ও পরমাণু দিগকে পরস্পর সংযুক্ত ও বিযুক্ত করেন সেই পরমাত্মাকে "জল" বলা যায়। " যঃ সর্ব্বতঃ সর্ব্বং জগৎ প্রকাশয়তি স আকাশঃ"- পরমাত্মা সর্ব্বদিকে জগতের প্রকাশ বলিয়া তাঁহার নাম "আকাশ" হইয়াছে।


ঈশ্বরের স্বরূপ
অর্থঃ যিনি সকলকে অন্তে রাখিবার এবং সকলকে গ্রহন করবার যোগ্য। যিনি চরাচর জগৎকে গ্রহণ করিয়া থাকেন এরূপ ঈশ্বরের "অন্ন", "অন্নাদ", "অত্তা" নাম হইয়াছে। এস্থানে কেবল আদরার্থ জানিবেন। ডুমুরের ফলের মধ্যে যেরূপ কৃমি উৎপন্ন হইয়া উহারই ভিতর অবস্থান করে এবং সময়ে নষ্ট হইয়া যায় তদ্রুপ, পরমেশ্বরের মধ্যে সমগ্র জগতের অবস্থান ও লয়াদি হইয়া থাকে।
"বসন্তি ভূতানি যস্মিন্নথবা যঃ সর্ব্বেষ্ বসতি স বসুরীশ্বরঃ"- যঁহাতে সমগ্র আকাশাদি ভূত বাস(অবস্থান) করে এবং যিনি এই সকলের মধ্যে বাস করেন সেই পরমেশ্বরের নাম "বসু" হইয়াছে। "যো রোদযতান্যয়কারিণো জনান্ স রুদ্রঃ"- পরমেশ্বর দুস্কর্ম্মকারিদিগকে রোদন করান এজন্য তাঁহার নাম " রুদ্র" হইয়াছে।
"আপোনারা ইতি প্রোক্তা আপো বৈ নরসূনবঃ।
তা যদস্যায়নং পূর্ব্বং তেন নারায়ণঃ স্মৃতঃ।।"- মনু।। অধ্যায় ১।। শ্লোক ১০।।
জল এবং জীবদিগের নাম "নারা"। এই "নারা" অর্থাৎ জল ও জীব যাঁহার নিবাস্থান সেই সর্ব্বজীবব্যাপক পরমাত্মার নাম "নারায়ণ" হইয়াছে।
"যশ্চন্দতি চন্দয়তি বা চন্দ্রঃ"- যিনি আনন্দস্বরূপ এবং সকলকে আনন্দিত করেন এরূপ ঈশ্বরের নাম "চন্দ্র" হইয়াছে।"যো মঙ্গতি মঙ্গয়তি বা স মঙ্গলঃ"- যিনি স্বয়ং মঙ্গল স্বরূপ এবং সমগ্র জীবের মঙ্গলের কারণ সেই পরমেশ্বরের নাম "মঙ্গল" হইয়াছে।
"যো বুধ্যতে বোধয়তি বা স বুধঃ"- যিনি স্বয়ং বোধস্বরূপ এবং সমগ্র জীবের বোধের কারণ সেই পরমেশ্বরের নাম "বুধ" হইয়াছে।
"যঃ শুচাতি শোচয়তি বা স শুক্রঃ"- যিনি স্বয়ং অত্যন্ত পবিত্র এবং যাঁহার সংসর্গ বশতঃ জীবও পবিত্র হইয়া যায় সেই ঈশ্বরের নাম "শুক্র" হইয়াছে।
"যঃ শনৈশ্চরতি স শনৈশ্চরঃ"- যিনি সকলকে সহজে প্রাপ্ত হইয়া ধৈর্য্যবান্ হইয়া আছেন, সেই পরমেশ্বরের নাম "শনৈশ্চর" হইয়াছে।
" যো রহতি পরিত্যজতি দুষ্টান্ রাহয়তি পরিত্যাজয়তি বা স রাহুরীশ্বরঃ"- একান্ত স্বরূপ হওয়া যায় যাঁহার স্বরূপে অন্য কোন পদার্থ সংযুক্ত নহে এবং যিনি দুষ্টকে স্বয়ং পরিত্যাগ করেন এবং অন্যকেও পরিত্যাগ করান এরূপপরমেশ্বরের নাম "রাহু" হইয়াছে।
"যঃ কেতয়তি চিকিৎসয়তি চিকিৎসতি বা স কেতুরীশ্বরঃ"ঈশ্বর"।- (কিত নিবাসে রোগ পনয়নে চ) এই ধাতু হইতে "কেতু" শব্দ সিদ্ধ হয়;সমস্ত জগতের নিবাসস্থান এবং সমস্ত রোগ রহিত এবং মুমুক্ষুদিগকে মুক্তি সময়ে সর্ব্বপ্রকার রোগ হইতে নির্ম্মুক্ত করেন বলিয়া পরমাত্মার নাম "কেতু" হইয়াছে"যজ্ঞ বৈ বিষ্ণুঃ"-ইহা ব্রাহ্মণ গ্রন্থের বচন(শতপথ ব্রাহ্মণ কান্ড ১ অধ্যায় ২ কান্ডিক ১৩)
"যো ষজতি বিদ্বদ্ভিরিজ্যতে বা স যজ্ঞঃ"- পরমেশ্বর সমগ্র জাগতিক পদার্থের সংযোগ করেন ও সকল বিদ্বান্ লোকের পূজ্য এবং ব্রহ্মা হইতে সমস্ত ঋষি ও মুনিদিগের পূজ‌্য ছিলেন এবং পরেও সকলের পূজ্য থাকিবেন বলিয়া তাঁহার নাম "যজ্ঞ" হইয়াছে। কারণ তিনি সর্ব্বত্র ব্যাপক হইয়া আছেন।
"যো জুহোতি স হোতা"- পরমেশ্বর জীবদিগের সত্বন্ধে দেয় পদার্থের দাতা এবং গ্রহণীয় পদার্থের গ্রহীতা বলিয়া তাঁহার নাম "হোতা" হইয়াছে।
"যঃ স্বস্মিন্ চরাচরং জগদ্ বধ্নাতি, বন্ধুবদ্ ধর্ম্মাত্মানাং সুখায় সহাযো বা বর্ত্ততে স বন্ধুঃ"- ঈশ্বর আপনা হইতে সমস্ত লোক লোকান্তরকে নিয়মে বদ্ধ করিয়া রাখেন এবং সহোদরের তুল্য স্বহায় হইয়া থাকেন, এজন্য উহারা নিজ নিজ পরিধি অথবা নিয়ম উল্লঙঘন করিতে সমর্থ হয় না। ভ্রাতা যেরূপ অপর ভ্রাতার সাহায্যকারী হইয়া থাকে, তদ্রুপ পরমেশ্বরও পৃথিব্যাদি লোকদিগকে ধারণ,রক্ষণ এবং সুখদান করেন।এই জন্য পরমেশ্বর "বন্ধু" সংজ্ঞক হইয়াছেন। " যঃ পাতি সর্ব্বান্ স পিতা"-ঈশ্বর সকলের রক্ষক অর্থাৎ পিতা যেরূপ নিজ সন্তানদিগের উপর কৃপালু হইয়া তাহাদিগের রক্ষাও উন্নতির অভিলাষ করেন, তদ্রুপ পরমেশ্বরও সকল জীবের রক্ষা ও উন্নতি ইচ্ছা করেন, এই জন্য তাহার নাম "পিতা" হইয়াছে।
 "যঃ পিতামহানাং পিতা স প্রপিতামহ"-যিনি পিতামহের (অর্থাৎ পিতারও পিতার)ওপিতা, তাহার নাম "প্রপিতামহ" হইয়াছে। "যো মিমীতে মানযতি সর্ব্বান্ জীবান্ স মাতা"- যেরূপ পূর্ণকৃপাযুক্ত জননী নিজ সন্তানগণের সুখ ও উন্নতির অভিলাষ করেন তদ্রুপ পরমেশ্বরও সমগ্র জীবের উন্নতি ও বৃদ্ধি ইচ্ছা করেন এই জন্য পরমেশ্বরের নাম "মাতা" হইয়াছে।

" য আচারং গ্রহয়তি সর্ব্বা বিদ্যা বা বোধয়তি স আচার্য্য ঈশ্বরঃ"- যিনি অপরকে সত্য আচার গ্রহণ করান্ এবং সকল বিদ্যার প্রাপ্তিহেতু হইয়া সকল  বিদ্যা লাভ করান, সেই পরমেশ্বরের নাম "আচার্য্য" হইয়াছে।" যো ধর্ম্মান্ শব্দান্ গৃণাত্যুপদিশতি স গুরু"- যিনি সত্য ধর্ম্ম প্রতিপাদক এবং সকল বিদ্যাযুক্ত বেদের উপদেশক। ও যিনি সৃষ্টির আদিতে অগ্নি, বায়ু ,আদিত্য,অঙ্গিরা এবং ব্রহ্মাদি গুরুগণেরও গুরু,যাহার কখন বিনাশ হয় না সেই পরমেশ্বরের নাম "গুরু" হইয়াছে।"যহজতি সৃষ্টিং প্রতি সর্ব্বান্ প্রকৃত্যাদীন্ পদার্থান্ প্রক্ষিপতি জানাতি বা কদাচিৎ ন জয়তে সোহজঃ"- যিনি প্রকৃতির অবয়ব স্বরূপ আকাশাদি ভূত সন্বন্ধ উৎপাদন করতঃ জন্মদান করান এবং যিনি স্বয়ং কখনো জন্মগ্রহণ করেন না, সেই পরমেশ্বরের নাম "অজ" হইয়াছে। "যোহখিলং জগন্নির্ম্মাণেন বৃংহতি বর্দ্ধয়তি স ব্রহ্মা"-(বৃহি বৃদ্ধৌ) এই ধাতু হইতে "ব্রহ্মা" শব্দ সিদ্ধ হইয়াছে। যিনি সম্পূর্ণ জগতের নির্ম্মাণ করতঃ উহার বৃদ্ধি করেন সেই পরমেশ্বরের নাম "ব্রহ্মা" হইয়াছে।"সত্যং জ্ঞানমনস্তং ব্রহ্ম"- ইহা তৈত্তিরীয়োপনিষদের বচন। আবার ব্রহ্মা দেবানাং পদবী। সাম০ ৩।৩।১
ব্রহ্মা বিদ্বানদের পদবী।
 ঈশ্বর সমগ্র জগতের জ্ঞাতা বলিয়া তাঁহার নাম "জ্ঞান" হইয়াছে। যে সকল পদার্থ, অস্তিত্ব বিশিষ্ট তাহাকে "সৎ" বলা হয়। ঈশ্বর উহাদিগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলিয় তাঁহার নাম "সত্য" হইয়াছে। যাঁহার অন্ত অবধি অথবা মর্য্যাদা অর্থাৎ এতাদৃশ্য দীর্ঘ,এতাদৃশ্য বিস্তৃত, এতাদৃশ্য ক্ষুদ্র অথবা এতাদৃশ্য বৃহৎ এরূপ, পরিমাণ নাই, এজন্য পরমেশ্বরের নাম "অনন্ত" হইয়াছে। "যস্মাৎ পূর্ব্বং নাস্তি পরং চাস্তি স আদিরিত্যুচ্যতে ন বিদ্যতে আদিঃ কারণ যস্য সোহনাদিরীশ্বরঃ"-যাঁহার পূর্বে কিছু ছিল না এবং যাহার পশ্চাৎ সমস্ত হইয়াছে, তাহাকে "আদি" বলা হয় এবং যাহার আদি কারণ কেহই নাই সেই পরমেশ্বরের নাম "অনাদি" হইয়াছে।"আনন্দন্তি সর্ব্বে মুক্তা যস্মিন্ যদ্বা যঃ সর্ব্বঞ্জীবানানন্দয়তি স আনন্দঃ"- যিনি স্বয়ং আনন্দস্বরূপ, যাঁহাতে সমস্ত মুক্তজীব আনন্দ লাভ করেন, যিনি সমস্ত ধর্ম্মাত্মা জীবদিগকে আনন্দযুক্ত করেন সেরূপ ঈশ্বরের নাম "আনন্দ" হইয়াছে। "যদস্তি ত্রিস্ কালেষু  ন বাধাতে তৎ সদ্ ব্রহ্ম"-যিনি সদা বর্তমান আছেন, অর্থাৎ ভূত,ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান এই ত্রিকালেই যাঁহার বাধা(অভাব) নাই, সেই পরমেশ্বর কে "সৎ" কহা যায়। "যশ্চেততি চেতয়তি সংজ্ঞাপয়তি বা সর্ব্বান্ সজ্জানন্ যোগিনস্তচ্চিৎ পরংব্রহ্ম"- যিনি স্বয়ং চেতনস্বরূপ হইয়া সকল জীবকে চেতনবিশিষ্ট ও সত্যাসত্য বিজ্ঞাপিত করেন, সেই পরমাত্মার নাম "চিৎ" হইয়াছে। এই তিনটী শব্দ উপযুক্ত,ইহা একত্র বিশষণ ভাবে প্রযুক্ত হইলে পরমেশ্বরকে "সচ্চিদনন্দস্বরূপ" কহা যায়।"যো নিত্যধ্রুবোহচলোহবিনাশী স নিত্যঃ"- যিনি নিত্য,নিশ্চল এবং অবিনাশী, তিনিই নিত্যশব্দবাচ্য ঈশ্বর

"যঃ শুদ্ধতি সর্ব্বান্ শোধয়তি বা স ঈশ্বর"- যিনি স্বয়ং পবিত্র এবং অশুদ্ধি হইতে পৃথক হইয়া সকলকে শুদ্ধ করিয়া থাকেন এরূপ, পরবেশ্বরকে "শুদ্ধ" বলা যায়।"যো বুদ্ধবান্ সদৈব জ্ঞাহয়হন্তি স বুদ্ধো জগদীশ্বরঃ।- ঈশ্বর সর্ব্বদা সকলকে জানেন বলিয়া তাঁহার নাম "বুদ্ধ" হইয়াছে। "যে মুঞ্চতি মোচয়তি বা মুমুক্ষূন্ স মুক্তো জগদীশ্বরঃ"- যিনি স্বয়ং সর্ব্বদা অশুদ্ধি হইতে এবং সমস্ত মুমুক্ষুদিগকে ক্লেশ হইতে মুক্ত করেন সেই, পরমাত্মার নাম "মুক্ত"। অতএব "নিত্যশুদ্ধবুদ্ধমুক্তস্বভাবো জগদীশ্বরঃ"-(এই জন্যই জগদীশ্বরের স্বভাবকে নিত্য,শুদ্ধ,বুদ্ধ এবং মুক্ত কহা যায়)। "নির্গতঃ আকারাৎ স নিরাকারঃ"- পরমেশ্বরের কোন আকার নাই এবং কখন শরীর ধারণ করেন না বলিয়া তাঁহার নাম "নিরাকার" হইয়াছে। "অঞ্জনং ব্যাক্তিভ্রক্ষণং কুকাম ইন্দ্রিয়ৈঃ প্রাপ্তিশ্চেনস্মদ্যো নির্গতঃ পৃথগ্ভূতঃ স নিরঞ্জনঃ"- ঈশ্বর ব্যক্তি অর্থাৎ আকৃতি,ম্লেচ্ছাচার,দুষ্টকামনা, এবং চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়বিষয়ক ব্যাপার হইতে পৃথক বলিয়া তঁহার নাম "নিরঞ্জন" হইয়াছে।" যে প্রকৃত্যাদয়ো জড় জীবাশ্চ গণ্যন্তে সংখ্যায়ন্তে তেষামীশঃ স্বামী পতিঃ পালকো বা"-যিনি প্রকৃত্যাদি জড় এবং সমস্ত জীবখ্যাত পদার্থের স্বামী এবং সমস্ত জীবখ্যাত পদার্থের স্বামী এবং পালক,তাদৃশ পরমেশ্বরের নাম "গনেশ" বা "গনপতি"। "যো বিশ্বমীষ্টে স বিশ্বেশ্বরঃ"। সংসারের অধিষ্ঠাতা বলিয়া পরমেশ্বরের নাম "বিশ্বশ্বর" হইয়াছে।"যঃ কুটেহনেকবিধ ব্যবহারে স্বস্বরূপণৈব তিষ্ঠতি স কূটস্থঃ পরমেশ্বরঃ"-যিনি সকল প্রকার ব্যবহারে ব্যাপ্ত এবং সমস্ত ব্যবহারের আধার হইয়াও কোন ব্য়বহারে স্বস্বরূপের পরিবর্ত্তন করেন না সেই,পরমেশ্বরের নাম "কূটস্থ" হইয়াছে। যাবতীয় দেব শব্দের অর্থ পূর্বে যা লিখিত হয়েছে তাহাতেই দেবী শব্দেরও অর্থ বুঝিতে হইবে। পরমেশ্বরের নাম তিন লিঙ্গেই প্রযুক্ত হয়। যথা "ব্রহ্ম চিতিরীশ্বরশ্চেতি"- যখন ঈশ্বরের বিশেষণ হইবে তখন "দেব" যখন "চিতির" বিশেষণ হইবে তখন "দেবী" বুঝিতে হইবে। বিশেষণ একটি পদ যা বাক্যের অন্য কোন পদের (বিশেষ্যসর্বনাম ও ক্রিয়াপদের) দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে।বাংলা ব্যাকরণ মতে– বাক্যে ব্যবহৃত যে প্রকার পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে, তাকেই বিশেষণ বলে।
বিশেষ্যের বিশেষণ - লাল রক্ত;
সর্বনামের বিশেষণ - করুণাময় তুমি;
ক্রিয়ার বিশেষণ - আস্তে যাও।
এইজন্য ঈশ্বরের নাম "দেবী" হইয়াছে। " যঃ সর্ব্বং জগৎ কর্ত্তং শক্নোতি স শক্তিঃ"- সমস্ত জগৎ সৃষ্টি করিতে সমর্থ বলিয়া,পরমেশ্বরের নাম "শক্তি" হইয়াছে। "যঃ শ্রীয়তে সেব্যতে সর্ব্বণ জগতা বিদ্বদ্ভির্যোগিভিশ্চ স শ্রীরীশ্বরঃ"- সমস্ত জগৎ,বিদ্বান লোক,এবং যোগীগন যাঁহার সেবা করেন,সেই পরমাত্মার নাম "শ্রী" হইয়াছে। "যো লক্ষয়তি পশ্যত্যকতে চিহ্নয়তি চরাচরং জগদথবা বেদৈরাপ্তৈর্য্যোগিভিশ্চ যো লক্ষ্যতে স লক্ষীঃ সর্ব্বপ্রিয়েশ্বরঃ"- যিনি চরাচর জগতের দ্রষ্টা এবং জগৎকে চিহ্নিত অর্থাৎ দৃশ্য বা দৃষ্টির উপযোগী করেন, যেরূপ শরীরস্থ নেত্র নাসিকাদি, বৃক্ষস্থ পত্র, পুস্প, ফল এবং মূল,পৃথিবী ও জলাদির কৃষ্ণতা, রক্ততা এবং শ্বেততা,(সম্পাদন) তথা মৃত্তিকা পাষাণ এবং চন্দ্রসূর্ষ্যাদি চিহ্ন রচনা করেন এবং সমস্ত দর্শন করেন; যিনি স্বয়ং সকল শোভার শ্রেষ্ঠ শোভা,এবং যিনি বেদাদি শাস্ত্রের এবং ধার্ম্মিক বিদ্বান্ যোগীদিগের লক্ষ্য অর্থাৎ দৃষ্টিযোগ্য,তাদৃশ্য পরমেশ্বরের নাম "লক্ষী" হইয়াছে। "সরো বিবিধং জ্ঞানং বিদ্যতে যস্যাং চিতৌ সা সরস্বতী"- যাঁহার বিবিধ বিজ্ঞান অর্থাৎ শব্দার্থ প্রয়োগের যথাবৎ জ্ঞান হইয়া থাকে,সেই পরমেশ্বরের নাম "সরস্বতী" হইয়াছে।

"সর্ব্বাঃ শক্তয়ো বিদ্যন্তে যস্মিন্ স সর্ব্বয়ক্তিমানীশ্বরঃ"। ঈশ্বর স্বকার্য্য সাধনের জন্য অন্যের সহায়তা গ্রহণ করেন না, এবং নিজ সামর্থ্য দ্বারা স্বকামনা পুরণ করিতে সমর্থ বলিয়াই ত।আহার নাম "সর্ব্বশক্তিমান্" হইয়াছে।
"পক্ষপাতরাহিত্যাচরণং ন্যায়ঃ যাহা প্রত্যক্ষাদি প্রমাণের পরীক্ষা দ্বারা সত্য বলিয়া সিদ্ধ হয়,এবং যাহা পক্ষপাত রহিত ধর্ম্মাচরণ তাহাকে "ন্যায়" বলা যায়। "প্রমাণৈরর্থপরীক্ষণং ন্যায়ঃ" ইহা বাৎস্যায়ন মুনি কৃত ন্যায়সূত্রের বচন। "ন্যায়কর্ত্তুং শীলমস্য স ন্যায়কারীশ্বরঃ"- ন্যায় অর্থাৎ পক্ষপাতরহিত ধর্ম্মানুষ্ঠান করা যাঁহার স্বভাবসেই পরমেস্বরের নাম "ন্যায়কারী"। "দয়তে দদাদি জানাতি তচ্চতি রক্ষতি হিনস্তি যয়া সা দয়া বহ্বী দয়া বিদ্যতে যস্য স দয়ালুঃ পরমেশ্বরঃ।যিনি অভয়দাতা,যিনি সর্ব্ববিদ্যার সত্যাসত্যবিজ্ঞাতা,যিনি সজ্জনের রক্ষাকর্ত্তা এবং সুষ্টদিগের যথাযোগ্য দন্ডবিধাতা,সেই পরমেশ্বরের নাম "দয়ালু"।
"দ্বয়ভাব (দুই হওয়া) অথবা দ্বিত্বযুক্ত হওয়াকে দ্বিতা,দ্বীত কহে। ঈশ্বর ঈদৃশ দ্বৈতরহিত অর্থাৎ সজাতীয় যেরূপ মনুষ্যপক্ষে মনুষ্যের সজাতীয় দ্বিতীয় মনুষ্য; বিজাতীয় অর্থাৎ মনুষ্যপক্ষে মনুষ্য ভিন্ন অন্য জাতীয় পদার্থ যেরূপ বৃক্ষ পাষাণাদি, স্বগত অর্থাৎ মনুষ্যের নিজ শরীরে যেরূপ চক্ষু,কর্ণ নাসিকাদি অবয়ব ভেদ হইয়া থাকে তাদৃশ, দ্বিতীয় সজাতীয় ঈশ্বর, বিজাতীয় ঈশ্বর, এবং স্বস্বরূপে তত্ত্বান্তর ইত্যাদি রহিত্ একই পরমেশ্বর বিদ্যান আছেন। এইজন্য পরমাত্মার নাম "অদ্বৈত" হইয়াছে।
"গণ্যন্তে যে তে গুণাঃ বা যৈর্গণয়ন্তি তে গুণাঃ,যো গুনেভ্যো নির্গতঃ স নির্গুণ ঈশ্বরঃ"-ঈশ্বর জড়পদার্থের সত্ত্ব,রজঃ,তমঃ এবং রূপ রস স্পর্শ গন্ধাদিগুণ এবং অবিদ্যা,অল্পজ্ঞতা,রাগ,দ্বেষ ও অবিদ্যদি ক্লেশ যাহা জীবপর গুণ তাহা হইতে পৃথক হন। এতৎ সম্বন্ধে উপনিষদে বচন আছে " অশব্দমস্পর্শমরূপমব্যয়ম" ইত্যাদি। যিনি শব্দ,স্পর্শ এবং রূপদি গুণরহিত, তাদৃশ পরমাত্মার নাম "নির্গুণ" হইয়াছে। "যো গুণৈঃ সহ বর্ত্ততে স সগুণঃ"-যিনি সর্ব্বপ্রকার জ্ঞান,সর্ব্বসুখ, পবিত্রতা ও অনন্তবলাদি গুণযুক্ত,সেই পরমেশ্বরের নাম "সগুণ" হইয়াছে। যেরূপ পৃথিবী গন্ধাদি গুণযুক্ত হওয়াতে সগুণ, এবং ইচ্ছাদি গুণরহিত হওয়াতে নির্গুণ বলা যায়, তদ্রুপ পরমেশ্বর কে জগৎ ও জীবগুণ হইতে পৃথক বলিয়া "নির্গুণ" এবং সর্ব্বজ্ঞত্বাদিগুণযুক্ত বলিয়া "সগুণ" বলা যায়। অর্থাৎ একবারে সগুণতা এবং নির্গুণতা রহিত এরূপ কোন পদার্থরই ও সদ্ভাব হইতে পারে না। যেরূপ চেতনগুণ হইতে পৃথক বলিয়া জড়পদার্থ নির্গুণ, এবং নিজ জড় গুণবিশিষ্ট হওয়াতে সগুণ হইয়া থাকে তদ্রূপ,জীব জড় গুণ হইতে পৃথক বলিয়া নির্গুণ এবং ইচ্ছাদি স্বগুণযুক্ত বলিয়া "সগুণ" হইয়া থাকে। পরমেশ্বর সম্বন্ধেও এইরূপ বুঝিতে হইবে।
"অন্তয্যন্তুং নিয়ন্তং শীলং যস্য সেহিয়মন্তর্য্যামী"-যিনি সমস্ত প্রানী ও অপ্রাণীরূপ জগতের মধ্যে ব্যাপক হইয়া সকলের নিয়ামক হইয়া থাকেন, সেই পরমেশ্বরকে "অন্তর্য্যামী" বলা যায়। "যো ধর্ম্মে রাজতে স ধর্ম্মরাজঃ"-যিনি ধর্ম্মেরই মধ্যে প্রকাশমান হয়েন এবং অধর্ম্ম হইয়ে রহিত হইয়া ধর্ম্মেরই প্রকাশ করেন এরূপ পরমেশ্বরের নাম "ধর্ম্মরাজ" হইয়াছে। "সঃ সর্ব্বান্ প্রাণিনো নিযচ্ছতি স যমঃ"-যিনি সকল প্রাণিগণের কর্ম্মফলের ব্যবস্থা করেন, এবং স্বয়ং সমগ্র অন্যায় কার্য্য হইতে পৃথক্ থাকেন এরূপ, পরমাত্মার নাম "যম" হইয়াছে। "ভজ সেবায়ম"- এই ধাতু হইতে "ভগ" শব্দ এবং ইহার উওর "মতুপ" প্রত্যয় করিলে " ভগবান্" পদ সিদ্ধ হয়।"ভগঃ সকলৈশ্বর্য্যং সেবনং বা বিদ্যতে যস্য স ভগবান্"-যিনি সর্ব্বৈশ্বর্য্য বিশিষ্ট এবং ভজনযোগ্য সেই পরমেশ্বরের নাম "ভগবান্" হইয়াছে।   

"যো মন্যতে স মনুঃ"- মনু অর্থাৎ মনন ও বিজ্ঞানশীল এবং মাননীয় বলিয়া ঈশ্বরকে "মনু" বলা যায়। "যঃ স্বব্যাপ্ত্যা চরাহচরং জগৎ পৃণাতি পূবয়তি বা স পুরুষঃ"-যিনি সমগ্র জগতে পূর্ণ হইয়া আছেন এরূপ পরমেশ্বরের নাম "পুরুষ" হইয়াছে। "যো বিশ্বং বিভির্ত্তি ধরতি পুষ্ণাতি বা স বিশ্বম্ভরো জগদীশ্বরঃ"-যিনি জগতের ধরাণ এবং পোষণ করেন, সেই পরমেশ্বরের নাম "বিশ্বম্ভর" হইয়া থাকে।"কলষ্বতি সংখ্যাতি সর্ব্বান্ পদার্থান্ স কালঃ"- ঈশ্বর জগতের সকল পদার্থের এবং জীবগণের সংখ্যা করেন বলিয়া তাঁহার নাম "কাল" হইয়াছে।"যঃ শিষ্যতে স শেষঃ"- যিনি উৎপত্তি এবং প্রলয়ের অবসানেও অবস্থান করেন,সেই পরমাত্মার নাম "শেষ" হইয়াছে।"যঃ সর্ব্বান্ ধর্ম্মাত্মন আপ্নোতি বা সর্ব্বৈধর্ম্মত্মভিরাপ্যতে ছলাদি রহিতঃ স আপ্তঃ"-যিনি সত্যোপদেশক, সর্ব্ববিদ্যাযুক্ত ধর্ম্মাত্মাদিগকে প্রাপ্ত হয়েন, এবং যিনি ধর্ম্মাত্মাদিগের প্রাপ্তিযোগ্য ও ছলকপটাদি রহিত, এরূপ পরমাত্মা কে "আপ্ত" বলা যায়। "যঃ শং কল্যাণং সুখং করোতি স শঙ্করঃ"- যিনি কল্যান অর্থাৎ সুখ প্রদান করেন,সেই ঈশ্বরকে "শঙ্কর" বলে।
"যো মহতাং দেবঃ স মহাদেবঃ"-যিনি মহতি দেবতাদিগেরও দেবতা এবং বিদ্যানদিগের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ বিদ্যান,এবং সূর্য্যাদি পদার্থেরও প্রকাশক সেই পরমাত্মার নাম "মহাদেব"।"যঃ প্রীণাতি প্রীয়তে বা স প্রিয়ঃ"-যিনি সকল ধর্ম্মাত্মা,মুমুক্ষু এবং শিষ্টলোকদিগকে প্রসন্ন করেন এবং অখিল কামনার যোগ্য,সেই পরমেশ্বরের নাম "প্রিয়"।"যঃ স্বয়ং ভবতি সঃ স্বয়ম্ভূরীশ্বরঃ"-যিনি স্বয়ংই অবস্থান করিতেছেন এবং কখনো অন্য কিছু হইতে উৎপন্ন হন না এরূপ পরমাত্মার নাম "স্বয়ম্ভূ" হইয়া থাকে।

"যঃ কৌতি শব্দয়তি সর্ব্বা বিদ্যাঃ স কবিরীশ্বরঃ"-ঈশ্বর বেদদ্বারা সর্ব্ববিদ্যার উপদেশক এবং জ্ঞাতা বলিয়া তাঁহার নাম "কবি" হইয়াছে। "শিবু কল্যানে"- এই ধাতু হইতে 'শিব" শব্দ সিদ্ধ হয়।"বহুল-মেতন্নিদর্শনম্" এই প্রমাণ হইতে "শিবু" ধাতু মানা যায়। যিনি কল্যাণস্বরূপ এবং কল্যাণকর্ত্তা এরূপ পরমেশ্বরের নাম "শিব" হইয়াছে। পরমেশ্বরের এই শত প্রকার নাম লিখিত হইল,পরমেশ্বরের এতদ্ভিন্ন অসংখ্য নাম আছে।
যেরূপ পরমেশ্বরের অনন্ত গুণ,কর্ম্ম এবং স্বভাব বিদ্যমান আছে,তদ্রূপ তাঁহার অনন্ত নামও আছে। উহার মধ্যে প্রত্যেক গুণ,কর্ম্ম এবং স্বভাবের জন্য তাঁহার স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র এক এক নাম আছে। এখানে লিখিত এই নাম সমূহকে সমুদ্র মধ্যে জলবিন্দুবৎ জানিবে,কারণ বেদাদি শাস্ত্রসমূহে পরমাত্মার অসংখ্য গুণ কর্ম্ম ও স্বভাব ব্যাখ্যাত হইয়াছে,যাহার অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনে এবিষয়ে বোধ জন্মিতে পারে। যিনি বেদাদি শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন,তাঁহারই পক্ষে সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভ হইতে থাকে।   
ঈশ্বর ত্রিকালদর্শী বলা মূর্খতা। কারণ, যাহা হইয়া তাকে তাহাকে অতীত, আর যাহা হয় নাই অথচ হইবে তাহাকে ভবিষ্যৎকাল বলে। পরমেশ্বরের কি কোন জ্ঞান উৎপন্ন হইয়া বিদ্যমান থাকে না, অথবা কোন জ্ঞান হয় নাই, কিন্তু পরে হইবে..? পরমেশ্বরের জ্ঞান সর্ব্বদা একরস ও অখন্ডিত ভাবে বর্ত্তমান তাকে। অতীত ও ভবিষ্যৎকাল জীবের জন্য। জীবের কর্ম্মসাপেক্ষ ত্রিকালজ্ঞতা ঈশ্বরে আছে ভাবে বটে কিন্তু স্বতঃ নাই। জীব স্বতন্ত্রভাবে যেমন কর্ম্ম করে, ঈশ্বর সর্ব্বজ্ঞতা দ্বারা সেইরূপ জানেন। আর ঈশ্বর যেমন জানেন, জীব সেইরূপ করে। অর্থাৎ ভূত, ভবিষ্যত এবং বর্ত্তমানের জ্ঞান ও ফলদান বিষয়ে ঈশ্বর স্বতন্ত্র। জীব কিঞ্চিৎ বর্ত্তমান কর্ম্ম করিতে স্বতন্ত্র। ঈশ্বরের জ্ঞান অনাদি। সুতরাং তাঁহার কর্ম্মজ্ঞানের ন্যায় দন্ডজ্ঞানও অনাদি। তাঁহার উভয় জ্ঞানই সত্য। কর্ম্মজ্ঞান সত্য, কিন্তু দন্ডজ্ঞান মিথ্যা, এইরূপ কি কখনও হিতে পারে ?                                                                                                                                                                                          अजो न क्षां दाधार पृथिवीं तस्तम्भ द्यां मन्त्रेभिः सत्यैः।
                                                    प्रिया पदानि पश्वो निपाहि विश्वायुरग्ने गुहा गुहं गाः ।।--(ऋ० 1/67/3)
অর্থঃ-অজ অর্থাৎ জন্মরহিত। অজন্মা পরমেশ্বর অলঙ্ঘনীয় বিচার দ্বারা পৃথিবীআদি কে ধারণ করেন, বিশাল অন্তরিক্ষ তথা অনন্ত ব্রহ্মান্ডকে ধারণ করে আছেন, তিনি প্রতিকারক পদার্থ তিনি সম্পূর্ণ আয়ু ও বন্ধন থেকে মুক্তি দেন তিনি বুদ্ধিতে স্থিত সকল কিছু বিষয়ে জ্ঞাতা।


प्रजापतिश्चरति गर्भे अन्तरजायमानो बहुधा विजायते ।
तस्य योनि परिपश्यन्ति धीरास्तस्मिन् ह तस्थुर्भुवनानि विश्वा ।।-(यजु० ३१/१९)

অর্থ:-
নিজ স্বরূপ থেকে উৎপন্ন তিনি হন না তিনি অজাত পরমেশ্বর, তিনি সকল জীবাত্মার হৃদয়ে ও সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে থেকে সকল কিছুর সাক্ষী হন তাঁর ভেতর সমস্ত লোক লোকান্তর স্থিত।।

 ব্রহ্ম বা অজঃ।-শতপথ ব্রাহ্মণ ৬।৪।৪।১৫
-ব্রহ্ম অজন্মা।।

উপনিষদের বিভিন্ন অংশে পরমাত্মা অজন্মা বলা হয়েছে।।

वेदाहमेतमजरं पुराणं सर्वात्मानं सर्वगतं विभुत्वात् ।
जन्मनिरोधं प्रवदन्ति यस्य ब्रह्मवादिनो प्रवदन्ति नित्यम् ।।-(শ্বেতা० ৩।২১)


ঈশ্বর সর্বদা নিরাকার তিনি তিনকালে নিরাকরই থাকেন।।
                                       
মহাভারত শান্তি পর্ব ২১৮/৯০
স পর্য়্যগাচ্ছুকমকায়মব্রণমস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্। 
কবির্মণীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্য়াথাতথ্যতোঽর্থান্
 ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।।-(যজু০ ৪০/৮)

পদার্থঃ হে মনুষ্য! যে ব্রহ্ম (শুক্রম্) শীঘ্রগামী, সর্বশক্তিমান (অকায়ম্) স্থুল, সূক্ষ্ম আর কারণ শরীর থেকে রহিত, (অব্রণম্) ছিদ্র রহিত এবং যাহার দুই টুকরো হয় না, (অস্নাবিরম্) নাড়ী আদির বন্ধন থেকে রহিত, (শুদ্ধম্) অবিদ্যা আদি দোষের হইতে রহিত হয়ে সদা পবিত্র, (অপাপবিদ্ধম্) যে কখনো পাপ হইতে যুক্ত, পাপকারী আর পাপ দ্বারা প্রেমকারী হয় না, সে (পরি+অগাত্) সর্বত্র ব্যাপক; যে (কবিঃ) সর্বজ্ঞ, (মনীষী) সব জীবের মনোবৃত্তিকে জানে, (পরিভূঃ) দুষ্ট পাপিদের তিরস্কারকারী, (স্বয়ম্ভূঃ) অনাদিস্বরূপ, যাহার সংযোগ থেকে উৎপত্তি আর বিয়োগ হইতে বিনাশ হয় না, যাহার মাতা-পিতা কেউ নেই আর যাহার গর্ভবাস, জন্ম, বৃদ্ধি আর ক্ষয় হয় না, সে পরমাত্মা (শাশ্বতীভ্যঃ) সনাতন, অনাদি স্বরূপ, নিজের স্বরূপের দৃষ্টি থেকে উৎপত্তি আর বিনাশ হইতে রহিত (সমাভ্যঃ) প্রজার জন্য (য়াথাতভ্যতঃ) যথার্থ হইতে (অর্থান্) বেদের দ্বারা সব পদার্থের (ব্যদধাত্) উত্তম প্রকারে উপদেশ করে। (সঃ) সে পরমাত্মাই তোমাদের জন্য উপাসনা করার যোগ্য।। 

ভাবার্থঃ 
--হে মনুষ্য ! পরমেশ্বর অনন্ত শক্তিযুক্ত, অজন্মা, নিরন্তর, সর্বদা মুক্ত, ন্যায়কারী, নির্মল, সর্বজ্ঞ, সমস্ত কিছুর সাক্ষী, নিয়ন্তা, সমস্ত জগতের রচয়িতা, অনাদিস্বরূপ। পরমপিতা পরমেশ্বর কল্পের আরম্ভে জীবকে বেদ সম্বন্ধে জ্ঞান প্রদান করায় বিদ্যা প্রাপ্ত হয়েই বিদ্যান হন, ধর্ম্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষের ফল ভোগে সমর্থ হবেন- তাই ব্রহ্মেরই সর্বদা উপাসনা করো

ন দ্বিতীয়ো ন তৃতীয় শ্চতুর্থো নাপ্যুচ্যতে।
ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠঃ সপ্তমো নাপ্যুচ্যতে।
নাষ্টমো ন নবমো দশমো নাপ্যুচ্যতে।
য এতং দেবমেক বৃতং বেদ।। (অথর্ববেদ-১৩/৪/১৬,১৭,১৮,১৫)
পদার্থ : (ন) নহে (দ্বিতীয়ঃ) দ্বিতীয় (ন) নহে (তৃতীয়ঃ) তৃতীয় (চতুর্থ) চতুর্থ (ন) না (অপি) ও (উচ্যতে) কথিত হয়। (ন) নহে (পঞ্চমঃ) পঞ্চম (ন) নহে (ষষ্ঠঃ) ষষ্ঠ (সপ্তমঃ) সপ্তমঃ (ন) না ( অপি) ও (উচ্যতে) কথিত হয়। (ন) নহে (অষ্টমঃ) অষ্টম (ন) নহে (নবমঃ) নবম (দশমঃ) দশম (ন) না (অপি) ও (উচ্যতে) কথিত হয়। (যঃ) যিনি (এতঃ) এই (দেবং) দেবকে (একবৃতং) শুধু একা বর্তমান বলিয়া (বেদ) জানেন।
বঙ্গানুবাদ :- পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ সপ্তম, অষ্টম, নবম বা দশম ঈশ্বর বলিয়া অভিহিত হয় না। যিনি তাঁহাকে শুধু এক বলিয়া জানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন। এক ঈশ্বর চিন্তন জ্ঞানীর, বহু ঈশ্বরের ধারণা মূর্খের।

ন তস্য প্রতিমা অস্তি য়স্য নাম মহদ্যশঃ।
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেব মা মা হিংসীদিত্যেবা য়স্মান্ন জাত ইত্যের্ষঃ।। (যজু০ ৩২/৩)
পদার্থঃ (য়স্য) যাহার (মহত্) মহান (নাম) প্রসিদ্ধ (য়শঃ) যশ আছে, (তস্য) ওই পরমাত্মার কোন (প্রতি-মা) প্রতিমা অথবা উপমা (ন অস্তি) নেই। (হিরণ্য-গর্ভ ইতি এবঃ) 'হিরণ্যগর্ভ' আদি মন্ত্রের দ্বারা তথা, (মা মা হিংসীত্ ইতি এষা) 'মা মা হিসীত্' এই মন্ত্রদ্বারা, আর (য়স্মাত্ ন জাতঃ ইতি এষঃ) 'য়স্মান্ন জাত' এই মন্ত্রদ্বারা তাহার বর্ণন হয়।।
 ভাবার্থঃ উক্ত মন্ত্রের দ্বারা যাহার মহান প্রসিদ্ধ যশের গায়ন হয় ওই আত্মার কোন প্রতিমা অথবা উপমা হয় না।।- ভাষ্যঃ পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর

বেদানুকূল শাস্ত্রে অনেক সময় ঈশ্বরকে পুরুষ বলা হয়‌।
পুরুষ শব্দের প্রকৃত অর্থ, নিরুক্ত থেকে দেখুন------
पुरुषः पुरिषादः पुरिशयः पूरयतेर्वा पूरयत्यन्तरित्यन्तरपुरुषमभिप्रेत्य ॥
পুরুষঃ পুরিষাদঃ পুরিশয়ঃ পুরয়তের্বা পূরয়ত্যন্তরিত্যন্তরপুরুষমভিপ্রেত্য।।২।৩।।
••নিরুক্ত_দ্বিতীয় অধ্যায়_তৃতীয় পরিচ্ছেদ
শব্দার্থ : পুরুষঃ (পুরুষ) পুরিষাদঃ (পুরে অধিষ্ঠানকারী) বা (অথবা) পুরিশয়ঃ (পুরে শয়নকারী) বা (অথবা) পূরয়তেঃ (পুর্' ধাতু থেকে নিষ্পন্ন)।
[এর অর্থ ] অন্তঃ (অন্ত প্রদেশ) পূরয়তি (পূরণ করেন) ইতি (এই নির্বচন) অন্তরপুরুষম্ (অন্তরে অবস্থিত পুরুষ বা পরমাত্মাকে বা ব্রহ্মাকে) অভিপ্রেত্য (লক্ষ্য করে ব্যবহৃত হয়েছে)।
অনুবাদ : পুরুষ = পুরিষাদ বা পুরে অধিষ্ঠিত, অথবা হৃদয়পুরে শয়নকারী অথবা ‘পূর্’ ধাতু থেকে গঠিত।
পরমাত্মা বা ব্রহ্ম সকলের অন্তঃপ্রদেশ পূর্ণ করেন বলে তিনি পুরুষ।
••টীকা : পূঃ শরীরং বুদ্ধির্বা তয়োরসৌ বিষয়োপলব্ধ্যর্থ সীদতীতি পুরিসীদনাত্ পুরিষাদঃ।
স এবাতিপরোক্ষবৃত্তিতামাপাদিতঃ পুরুষঃ। যদ্বা তয়োরসৌ শেতে বিশেষেণাস্ত ইতি পুরিশয়ঃ সন্ পুরুষ ইত্যুচ্যতে। পূরয়ত্যর্থকস্য পৃ ধাতোঃ (জু.প) ‘পুরঃ ক্তৃষন’ (উ. 4/74) ইতি কুষন্ প্রত্যয়ে ‘উদোষ্ঠ্যপূর্বস্যে—' (পা–7/12/102) ত্যুত্যমৃকারস্য তস্য (উকারস্য) চ রপরত্ব ‘উরণরপর (পা 1/1/51) ইতি। পূর্ণমনেন পুরুষেণ সর্বগতত্বাজ্জগদিদমিতি পুরুষঃ। তদেতদর্থতোঽনুবদতি—অন্তরিত্যে বমন্তরপুরুষস্য ব্রহ্মণোহভিপ্রায়েণ প্রাসঙ্গিকমুচ্যতে। অত্র (বাক্যদ্বয়েনোক্তেহর্থে) নিগমং প্রমাণয়তি—
পুরিষদ = পুরি + সদ্। পুরিষদ্ থেকে পুরিষাদ্ শব্দ গঠিত। এর অর্থ—বিষয়ের উপলব্ধির জন্য বুদ্ধিতে বা দেহে যে জীবাত্মা অবস্থান করেন,তিনিই পুরুষ।
পুরিশয়, শব্দ থেকেও পুরুষ শব্দটি আসতে পারে, এক্ষেত্রে পুরি + শী ধাতু আছে। বিষয়ের উপলব্ধির জন্য বুদ্ধিতে বা দেহে শয়ান করে আছেন যে জীবাত্মা। দুটি ক্ষেত্রেই বর্ণবিপত্তি ও বর্ণবিকারের দ্বারা পুরুষ শব্দটি গঠিত। ণিজন্ত পৃ ধাতু থেকে ‘পুর্' ধাতু গঠিত। পুর্ + উণাদি কুষন্ প্রত্যয় করে পুরুষ হয়।

বৈদিক শব্দ কোষে প্রতিমা শব্দ 
 (প্রতিমা) শব্দের অর্থ (অমরকোষে ২/১০/৩৫)    
প্রতিমানং প্রতিবিম্বং প্রতিমাপ্রতিয়াতনা প্রতিচ্ছায়া।।৩৫।। 

প্রতিকৃতিরর্চা পুংসি প্রতিনিধি-প্রতিমা অর্থাৎ ছবির নাম।।
১. প্রতিমান। ২. প্রতিবিম্ব। ৩. প্রতিমা। ৪. প্রতিছবি। ৫. প্রতিছায়া।।৩৫।।

৬. প্রতিকৃতি। ৭. অর্চা। ৮. প্রতিনিধি।


 আর (বৈদিককোষ; পৃষ্টাঃ ৬৪১) 👇

প্রতিমা প্রতিমীয়নোত পরিমীয়ন্তে সর্ব পদার্থা য়য়া সা


ভা০-পরিমাণসাধন পদার্থতোলনার্থম্ (বস্তু) ১৫ ৬৫


প্রতিমীয়তে য়য়া তৎপরিমাপক সদৃশ তোলনসাধন প্রতিকৃতিরাকৃতির্বা ৩২ ৩


প্রতিগোয়তে য়য়া ক্রিয়ায়া সা ১৪ ১৮


পরিমাণ, সাদৃস্য বা মূর্তি স০ প্র০ ৪৩২, ৩২ ৩ 


প্রতিনিধি প্রতিকৃতি, প্রতিমান তোলনসাধন, পরিমাণ, মূর্ত্যাদিকল্পনম্


ঋ০ ভূ০ ৩০০, ৩২ ৩, প্রতিমীয়তেহনয়া সা (য়য়া পরিমাণ ক্রিয়তো) 


ঋ০ ভূ০ ১৪৭, ঋ০ ৮ ৭ ১৮০ ৩

অনেক নামের দ্বারা এক ঈশ্বরের বোধ হয়-
ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নিমাহুরথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান্।
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং য়মং মাতরিশ্বানমাহুঃ।।
(ঋ০ ১।১৬৪।৪৬; অথর্ব০ ৯।১০।২৮; নিরু০ ৭।১৮, ১৪।১; ঋগ্বেধা০ ১।২৫।৭; বৃহদেবতা ৪।৪২)
'একই সৎ স্বরূপ পরমাত্মাকে জ্ঞানীলোক অনেক প্রকারে ডেকে থাকেন। ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, উরুত্মান, সৎ, যম, মাতরিশ্বা আদি নামের দ্বারা  একই পরমাত্মার বর্ণন করেন।'
অথর্ববেদে ঈশ্বরের একত্বার নিশ্চয়তা-
'সে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চাম,  ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম আদি অনন্ত সংখ্যা দ্বারা বলা হয়নি। এই সম্পূর্ণ জগত তাহাতে নিঃশেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ তাহার মধ্যে। সে সহন শক্তিদ্বারা যুক্ত অর্থাৎ অত্যন্ত বলবান। সে একই। কেবল একই। নিশ্চয়ই একই। সব তেজস্বী পদার্থ ইহাতে কেবল এক বানিয়ে রাখে।' (অথর্ব০ ১৩।৪।১৬-২১)


বৈ-মানরস্য প্রতিমোপরি দ্যোর্য়াবদ্রোদসী বিবাদে অগ্নিঃ। (অথর্বঃ ৮।৯।৬)
'(বৈশ্বা-নরস্য) বিশ্বের নেতা ঈশ্বরের (প্রতিমা) প্রতিমা এমনই হয়, যে (য়াবত্ দ্যোঃ) তেমন দ্যুলোকে উপরে থাকে, যেমন (রোদসী) উপরে নিয়ে আর নিম্নস্থ আকাশে (অগ্নিঃ) অগ্নিই (বি-ববাধে) অন্তর বানায়।' যথা-
য়স্মান্ন ঋতে বিজয়ন্তে জনাসো য়ং য়ুদ্ধয়মানা অবসে হবন্তে।।
য়ো বিশ্বস্য প্রতিমানং বভূব য়ো অচ্যুতচ্যুত্ স জনাস ইন্দ্রঃ।।
(ঋ০ ২।১২।৯; অথর্ব০ ২০।৩৪।৯)

'হে (জনাসঃ) মনুষ্য ! (য়স্মাত্ ঋতে) যাহাকে ছেড়ে (জনাসঃ) মনুষ্য (ন বিজয়ন্তে) বিজয়কে প্রাপ্ত হতে পারে না, আর (য়ুদ্ধমানাঃ) লড়াইকারী (অবসে) রক্ষণের জন্য (য়ং হবন্তে) যাহার প্রার্থনা করতে হয়। আর যে (প্রতিমানম্) বিশ্বের প্রতিমা (বভূব) হয় আর যে (অচ্যুত-চ্যুত্) স্বয়ং না নড়াচড়া করে আর অন্যকে নাড়ায় (স ইন্দ্রঃ) সে ইন্দ্র অর্থাৎ সব জগতের এক রাজা।' ভাষ্যঃ পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর

এই দুই মন্ত্রে জগতের বরাবর ওই পরমাত্মার প্রতিমা, এরূপ বলেছে।
এই আকাশ অনন্ত। যে প্রকার আকাশের কোন সীমা নেই ওই প্রকার পরমেশ্বরেরও কোন অন্ত নেই। এই কথা উক্ত দুই মন্ত্রে বলা হয়েছে।


এখন আসি যজুর্বেদের নিম্ন মন্ত্র-
ও৩ম্ খং ব্রহ্ম।। (যজু০ ৪০। ১৭)
'(ও৩ম্ ব্রহ্ম) সবার রক্ষাকারী ব্রহ্ম (খং) আকাশের সমান ব্যাপ্ত।'
এই মন্ত্রের ভাব উক্ত অর্থের দুই মন্ত্রের সমান।


তাই আরো দেখুন-


ত্বং ভুবঃ প্রতিমানং পৃথিব্যাঃ।। (ঋ০ ১।৫২।১৩) 
'তুমি পৃথিবী থেকে উল্টো প্রমাণ রাখেন।' অর্থাৎ পৃথিবী ছোট আর তুমি মহান। যথা-


সূ ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বাহত্যতিষ্ঠদ্দশাংগুলম্।
(ঋ০ ১০।৯০।১; আরণ্য স০ ৪।২; অথর্ব০ ১৯।৬।১; যজু০ ৩১।১; তৈ০ আরণ্য০ ৩।১২।১)
'সে পরমাত্মা পৃথিবীকে (বিশ্বতঃ) চারিদিক থেকে (বৃত্বা) ঘিরে (দশাংগুলং) দশ আঙ্গুলের সমান ছোট বিশ্বকে (অতি অতিষ্ঠত্) বিশ্বের বাহিরেও আছে অথবা বিশ্বের উপর শাসন করেন।' 


এই মন্ত্রে উক্ত আশায় অনেক স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। 
তথা আরো মন্ত্র দেখুন-
ন হীন্বমস্য প্রতিমানস্যত্যন্তর্জাতেষূত য়ে জনিত্বাঃ। (ঋ০ ৪।১৮।৪)
'(অস্য ন) নিশ্চয়ই ইহার (জাতেষু অন্তঃ) বানানো পদার্থের অন্তর (উত) আর (য়ে জনিত্বাঃ) যে বানানোকারী হয় তাহার মধ্যে কোন (প্রতিমানম্) তুলনা, প্রতিমা (ন অস্তি) হয় না।, যথা-


এই প্রকার প্রতিমা আর প্রতিমান শব্দের প্রয়োগ বেদ মন্ত্রে এসেছে, ইহার নিম্ন লিখিত অর্থ-'প্রতি-মা' র অর্থ-বানানোকারী প্রতিমা, সাদৃশ্য, উপমা, প্রতিবিম্ব, মাপ, তোলা, বিস্তার, বরাবর, 'প্রতি-মান' এর অর্থ-নমুনা সাদৃশ্য, তোলা, ওজন, মাপ, প্রতিবিম্ব, বিপরীত, শত্রু এই বিবিধ অর্থ দেখে তথা মন্ত্রের সংবন্ধ দেখে, উক্ত মন্ত্রের অর্থ বিচার করা উচিত।


কিং সময় ঋধক্ কৃণবদ্ য়ংসহপ্রে মাসো জভার শরদশ্চ পূর্বীঃ।
নহী ধ্বস্ত প্রতিমানমত্ত্য ন্তর্জাতেষূতে য়ে জনিত্বা।।৪।।


প্র তুবিদ্যুম্নস্য স্থবিরস্য ঘৃষ্বের্দিবো ররপ্শে মহিমা পৃথিব্যাঃ।
নাস্য শত্রুর্ন  প্রতিমাননস্তি ন প্রতিষ্ঠিঃ পুরুমায়স্য সহ্যোঃ।।১২।।
(ঋ০ ৪/১৮/৪; ৬।১৮।১২)


পদার্থঃ (য়) যাহার (সহস্রং মাসঃ পূর্বী শরদঃ চ) হাজার মাসের আর অনেক বর্ষ পর্যন্ত (জভার) ভরণপোষণ করেন, (সঃ) সে (ঋধক্ কিং কৃণবত্) বিরুদ্ধ কর্ম কে করবে? (য়ে জনিত্বাঃ) যে উৎপন্নকারী তাহার আর (গাতেষু) উৎপন্ন হওয়ার (অন্তঃ) মাধ্যমে (অস্য প্রতিমানম্ নহি) এই ইন্দ্রের কোন উপমা নেই।।৪।।


ভাবার্থঃ যাহার অনেক মাসের আর বর্ষ পর্যন্ত ভরণপোষণ করেন, সে নিজের পোষণকরীর কোন কার্য কে করবে? অর্থাৎ কেউ করবে না। উৎপন্নকারী আর উৎপন্ন হওয়ার মধ্যে এই ইন্দ্রের সমান কেউ নেই।।৪।।


পদার্থঃ (তুবি-দ্যু-ম্নস্য) অত্যন্ত তেজস্বী (স্থবিরস্যা) স্থির আর (ঘৃষ্বেঃ) দুষ্টতাকে চূর্ণকারী ঈশ্বরের (মহিমা) মহত্তা দ্যুলোক আর পৃথিবীর মর্যাদার থেকেও বাহিরে (ররশ্পে) বিস্তার। (ন অস্য শত্রুঃ) এই ঈশ্বরের কোন শত্রু নেই (ন অস্য প্রতিমানম্) না ইহার কোন প্রতিমা আছে। (পুরু-মায়স্য) অনন্ত জ্ঞানবান (সহ্যোঃ) আর সহন শক্তিবান বলবান ঈশ্বরকে ছেড়ে আর (প্রতিষ্ঠিঃ) আশ্রয় হয় না। অর্থাৎ সেই এক সবার আশ্রয়।।১২।।




ভাবার্থঃ তেজস্বী শ্রেষ্ঠ শত্রুনাশক বীরের মহিমা পৃথিবী থেকে আর দ্যুলোক থেকেও মহান। অনেক প্রজ্ঞাবান আর শত্রুনাশক বীরের কোন শত্রু হয় না। অধিক কুশল আর শান্তি, সুখ, দানকারী বীরের জন্য তুলনা হয় না।।১২।।-  ভাষ্যঃ পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর




 প্রতিমানম্ শব্দের অর্থ  বৈদিককোষেঃ-
বৈদিককোষ প্রতিমানম্; পৃষ্টা ৬৪১।


পরিমাণসাধনানম্ ৪ ১৮ ৪ সাদৃশ্য পরিগান বা ১ ৩২ ৩ রামন্তাত্ প্রতিমীয়তে


পরিণীয়তে প্রতিক্রিয়তে গেন তত্ (স্ব-সুখমন্তরিক্ষ বা) ১ ৫২ ১২


প্রতিমীয়তে য়ত্ (জগত্) ১ ১০২ ৮ অতিসমর্থানামুপমা ১ ১০২ ৬


পরিমাণসাধক (ইন্দ্র=পরমেশ্বরী বিদ্যুদ্বা) ২ ১২.৯ 


পরিমাণসাধকম্ (জ্ঞানম্) ৩ ৩১ ৮  প্রতিমান অর্থাৎ পরিমাণের কর্তা (ঈশ্বর) আর্যাভি০ ১ ১৩, 


ঋ০ ১ ৪.১৪ ১২, [প্রতি+মাঙ্মানে (জু০) ধাতো করণে ল্যুট্]

তাই সামবেদও ঘোষণা করছেন-
মা চিদন্যদ্ বি শংসত সখায়ো মা রিষণ্যত।
ইন্দ্রমিত্স্তোতা বৃষণং সাচ সুতে মুহুরুক্থা চ শংসত।।১০।।
 সামবেদ ২৪২
পদার্থঃ হে (সখায়ঃ) মিত্র! তুমি (অন্যত্) দ্বিতীয় কোন বস্তু পাথরের মূর্তি, নদী, পর্বত ইদিকে  (মা চিত্) না কখনো (বি শংসত) উপাস্য রূপে পূজা করো, (মা রিষণ্যত) যে উপাসনীয় নয় তাহার উপাসনা করে হানি প্রাপ্ত করো না। (সুতে) জ্ঞান, কর্ম আর ভক্তির রস নিষ্পাদিত হয়ে (সচা) সাথে মিলে (বৃষণম্) সুখবর্ধক  (ইন্দ্রম্ ইত্) পরমেশ্বরেরই (স্তোত) স্তুতি-উপাসনা করো আর (শংসত) গান করো।।১০।।
ভাবার্থঃ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র আর জগতে যে সম্মানের যোগ্য তাহাকে সম্মান তো করাই উচিত, কিন্তু তাহাদের মধ্য থেকে কাউকে পরমেশ্বরের রূপে পূজা করা উচিত নয়, না নদী, বৃক্ষ, পর্বত আদি জড় পদার্থকে পূজা করা উচিত নয়। ইন্দ্র আদি নামের দ্বারা বেদের মধ্যে প্রসিদ্ধ সুখবর্ষী এক জগদীশ্বরই পুনঃ-পুনঃ স্তুতি, প্রার্থনা, অর্চনা আর উপাসনা করার যোগ্য।।১০।।

ভাষ্যঃ আচার্য ড. রামনাথ বেদালঙ্কার বিদ্যামার্তণ্ড

ঈশ্বরের স্বরূপ


ঈশ্বর শরীর ধারণ করেন না।।
করণবচ্চেন্ন ভোগাদিভ্যঃ।। (বেদান্তদর্শন-২/২/৪০)
ভাষ্যঃ- জীববৎ করণকলেবরকল্পনাপি ন সম্ভবতি ভোগাদি-প্রসক্তে।
ব্যাখ্যাঃ- জীব যেমন অশরীরী হইয়াও ইন্দ্রিয়াদিকলেবর দ্বারা দেহের সহিত সম্বন্ধবিশিষ্ট হয়েন, তদরূপ ঈশ্বরও ইন্দ্রিয়াদিকলেবর দ্বারা জগতের সহিত সম্বন্ধবিশিষ্ট হয়েন; এইরূপ কল্পনারও সম্ভাবনা হয় না ; কারণ তাহা হইলে, জীবের ন্যায় ঈশ্বরেরও সুখদুঃখাদিভোগ প্রসঙ্গ হয়, এবং তাঁহার ঈশ্বরত্ব আর কিছু থাকে না।
অন্তবত্ত্বমসর্ব্বজ্ঞতা বা।। (বেদান্তদর্শন- ২/২/৪১)
ভাষ্যঃ- তস্য পুণ্যাদিরূপাদৃষ্টযোগেহন্তবত্ত্বমজ্ঞত্বং চ স্যাৎ।
ব্যাখ্যাঃ- (ঈশ্বরের ভোগাদি স্বীকার করিলেও কোন দোষ হয় না; অতিসামান্য হিমকণিকা যেমন বৃহৎ অগ্নিকুণ্ডের উত্তাপ খর্ব্ব করিতে পারে না, তদ্রূপ উক্ত ভোগও ঈশ্বরকে খর্ব্ব করিতে পারে না। যদি এইরূপ আপত্তি হয়, তদুত্তরে বলা হইতেছে, যে এইরূপ বলিলে) পুণ্যপুণ্যাদি অদৃষ্টযোগে ঈশ্বরও জীবের ন্যায় অন্তবিশিষ্ট ও অসর্ব্বজ্ঞ হইয়া পড়েন; কারণ ইন্দ্রিয়াদিবিশিষ্ট সুখদুঃখাদিভোগ সম্পন্ন কেহই জন্মমরণাদিবিহীন এবং পূর্ণজ্ঞ বলিয়া দৃষ্ট হয় না ; লৌকিক দৃষ্টান্তে ঈশ্বরও যুগবৎ অন্তবিশিষ্ট ও অজ্ঞ হইয়া পড়েন। পরন্তু এইরূপ ঈশ্বর পাশুপতদিগেরও সম্মত নহে।
ভাষ্যানুবাদক – পণ্ডিত শ্রীনলিনীনাথ রায়।

প্রকৃতি, জীব এবং পরমাত্মা-এই তিন অজ অর্থাৎ যাহার কখনও জন্ম হয় না এবং ইহারা কখনও জন্মগ্রহণ করেন না। এই তিন সমগ্র জগতের কারণ। ইহাদের কোন কারণ নাই..
[শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ ৪।৫]
অজামেকাং লোহিতশুক্লকৃষ্ণাং বহ্বীঃ প্রজাঃ সৃজমানাং স্বরূপাঃ।
অজো হ্যেকো জুযমাণোহনুশেতে জহাত্যেনাং ভুক্তভোগামজোহন্যেঃ।।

-যিনি প্রাণদ্বারা চালিত হন না কিন্তু যাঁহার দ্বারা প্রাণ গতিশীল হয়, সেই ব্রহ্মকেই জান এবং তাঁহারই উপাসনা কর; তাঁহা হইতে ভিন্ন বায়ুর উপাসনা করিও না।
যৎ প্রাণেন ন প্রাণিতি যেন প্রাণঃ প্রণীয়তে।
তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে।।-[কেনোপনিষদ্ ১।৮]

চক্ষু দ্বারা দৃষ্ট পদার্থ ঈশ্বর নয় (কেনোপনিষদ ১।৬)

পরমাত্মার কোনও ইন্দ্রিয়াদি নেই [বেদান্তসূত্র ২।২।৪০]
লোকদৃষ্টি অনুসারে পরমাত্মার ইন্দ্রিয় অধিষ্ঠান শরীর স্বীকার করা যায় না। কারণ, তাঁর শরীর ও ইন্দ্রিয় কল্পনা করলে সংসারী জীবের ন্যায় তাঁকেও সুখ দুঃখের ভোক্তা বলে মানতে হবে আর এইরকম মানলে ঈশ্বর অনীশ্বর হয়ে যাবেন, ঈশ্বরত্বের হানি হবে। [শংকরাচার্য্য টীকা বেদান্তসূত্র ২।২ "করণবচ্চেন্ন ভোগাদিভ্যঃ"]

মান্ডূক্যোপনিষদ্ [৩।১।৮]
-ঈশ্বরকে চক্ষু বা কোন ইন্দ্রিয় দ্বারা দেখা সম্ভব নয়।।

[মান্ডূক্যোপনিষদ্ ১।১।৬]
ঈশ্বর নিরাকার, সর্বব্যপী, অদৃশ্য, অগ্রাহ্য, নিত্য এবং সর্বভূতের কারন

“ন পৌরুষেয়ত্বং তত্কর্তুঃ পুরুষস্যাভাবাত্।”
সাংখ্যদর্শন ৫।৪৬
অর্থাৎ- বেদের কর্তা কোন মনুষ্য না। বেদ ঈশ্বরীয় অভ্রান্ত জ্ঞান। জীব অভ্রান্ত না বলে জীবের বেদ প্রনয়ণ শক্তির অভাবই দেখিতে পাওয়া যায়।

অস্থাদ্ দ্যৌরস্থাত্ পৃথিব্যস্থাদ্ বিশ্বমিদং জগত্।
আস্থানে পর্বতা অস্থু স্থাম্ন্যশ্বাং অতিষ্ঠপম্।। (অথর্ববেদ-৬/৭৭/১)
পদার্থঃ- সর্বনিয়ন্তা ঈশ্বরের শক্তি দ্বারা (দ্যৌঃ অস্থাত্) এই দ্যৌঃ, আকাশ সমস্ত তারাসহিত [ঈশ্বরের নিয়ম রেখার মধ্যে] স্থিত বা স্থির রয়েছে (পৃথিবী অস্থাত্) পৃথিবীও নিজ স্থানে [কক্ষপথে] স্থিত বা স্থির রয়েছে (ইদম্) এই (বিশ্বম্) সমস্ত (জগত্) জগৎও (অস্থাত্) [নিয়মের মধ্যে] স্থির, ব্যবস্থিত রয়েছে। নিজ নিজ (আ-স্থানে) স্থানে (পর্বতাঃ অস্থু) পর্বতও স্থির রয়েছে, এইপ্রকারে আমি নিজ (অশ্বান্) অশ্বের ন্যায় গমনশীল ব্যাপক, বিষয়কে প্রাপ্তকারী প্রাণকেও (স্থাম্নি) এই স্থির দেহে (অতিষ্ঠপম্) ব্যবস্থিত করি।। [পণ্ডিত জয়দেব শর্মা বিদ্যালঙ্কারকৃত ভাষ্যানুবাদ]
ভাবার্থঃ- মনুষ্য যেরূপ ঘোড়া আদি ভিবিন্ন পশুকে রশি দ্বারা বেঁধে রাখে, সেরূপ সূর্যাদিলোককে পরমেশ্বরের নিয়মের মধ্যে পরস্পরের আকর্ষণ দ্বারা স্থিত রয়েছে, তেমনই মনুষ্যের উচিত্ ধার্মিক কর্মের জন্য সদা কটিবদ্ধ হয়ে থাকা। [ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী ]

তৎ সন্নিধানাদধিষ্ঠাতৃত্বং মনিবৎ।। সাংখ্য সূত্র-১।৯৬ পদঃ-তৎসন্নিধানাৎ। অধিষ্ঠাতৃত্বং।মনিবৎ।।
সরলার্থ- যেমন চুম্বক প্রস্তরের সন্নিধানে লৌহের ক্রিয়া হইয়া থাকে চুম্বকের কোন ক্রিয়া বা বিকার হয় না সেই ভাবে সর্বব্যাপক, একরস ও জ্ঞানস্বরূপ পরমাত্মার সন্নিধানে জীবের ও প্রকৃতির স্বরূপ ও সামর্থ্য অনুযায়ী সৃষ্টিরূপ ক্রিয়া সাধিত হইয়া থাকে এবং জীবের ও প্রকৃতির কর্ম ও গুণ অনুসারে নিয়তকালে স্হিতি ও প্রলয় একরস পরমাত্মা হইতে সাধিত হইলেও এই বিচিত্র ক্রিয়া জনিত তাঁহার কর্ত্তৃত্বরূপ কোন বিকার হয় না।

পরমাত্মার কোনও ইন্দ্রিয়াদি নেই [বেদান্তসূত্র ২।২।৪০]
লোকদৃষ্টি অনুসারে পরমাত্মার ইন্দ্রিয় অধিষ্ঠান শরীর স্বীকার করা যায় না। কারণ, তাঁর শরীর ও ইন্দ্রিয় কল্পনা করলে সংসারী জীবের ন্যায় তাঁকেও সুখ দুঃখের ভোক্তা বলে মানতে হবে আর এইরকম মানলে ঈশ্বর অনীশ্বর হয়ে যাবেন, ঈশ্বরত্বের হানি হবে। [শংকরাচার্য্য টীকা বেদান্তসূত্র ২।২ "করণবচ্চেন্ন ভোগাদিভ্যঃ"]

উৎপত্য সংভবাৎ [বেদান্ত সূত্র ২।২।৩৯]
-ঈশ্বরে জন্ম অসম্ভব বলে তাঁর কোন কর্ত্তা নেই।।

ঈশ্বর জন্মগ্রহণ করেন না-
ন্তাপ্তধ্বনামধ্বপতে প্র মা তির স্বস্তি মেহস্মিন্ পথি দেবযানে ভুষাৎ।।" -[যজু০ ৫।৩৩]

 
ঈশ্বরের স্বরূপ
বিশ্বকর্মা অর্থাৎ পরমপিতা পরমেশ্বর যিনি জগতের সমস্ত শুভ কার্য ও পৃথিবী আদি ধারণ করে আছেন.. [যজর্বেদ ১৭।৩২]

ন সন্দৃশে তিষ্ঠতি রূপমস্য ন চক্ষুষা পশ্যতি কশ্চনৈনম্।
হৃদা মনীষা মনসাভিক্লৃপ্তো য এতদ্ বিদুরমৃতান্তে ভবন্তি।।[কঠোপনিষদ্ ২।৩।৯]
-ঈশ্বরকে চক্ষু দিয়ে দেখা যায় না

'তদেজতি তন্নৈজতি তদ্ দূরে তদ্বন্তিকে।
তদন্তরস্য সর্ব্বস্য তদু সর্ব্বস্যাস্য বাহ্যতঃ।।'-যজুর্বেদ ৪০। ৫

-অর্থাৎ ঈশ্বর গতিশূন্য প্রকৃতিতে গতি উৎপন্ন করে কিন্তু স্বয়ং গতিতে আসে না, সেই গতিদাতা পরমেশ্বর অজ্ঞানীর নিকট দূরে বিভিন্ন মঠ মন্দিরে কিন্তু জ্ঞানীর নিকট্ থেকে নিকটে, তিনি ব্রহ্মান্ডের সমস্ত জীব ও জগতের ভিতর ও বাইরে বিদ্যমান। আমাদের সেই সর্বব্যাপক পরমাত্মার উপাসনা করা উচিত..
  
জীবাত্মা চেতন তাহাকে সৃষ্টিকর্তা ও অধিষ্ঠাতা মানিলে ক্ষতি কি? বিশেষকার্য্যেস্বপি জীবানাম্।। সাংখ্য সূত্র-১।৯৭ পদঃ-বিশেষকার্য্যেষু।অপি। জীবানাম্।। সরলার্থ- জীবাত্মা চেতন বলিয়া তাহার সন্নিধানস্হিত অন্তঃকরণের অধিষ্ঠাতা হইয়া থাকে। জীবের জ্ঞান সপেক্ষ, জীব একদেশী, পরতঃ প্রকাশ ও অল্প সামর্থ্য বিশিষ্ট বলিয়া সৃষ্টিকর্তা হইতে পারে না। জীবাত্মা যাহাদের সাহায্যে কার্য্য করিবে সেই সমস্ত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি, অহঙ্কার এমন কি স্হূল শরীর পর্যন্ত গঠন করিবার সামর্থ্য তাহার নাই। বুদ্ধি, ইন্দ্রিয় শরীর লাভ করিয়াও এই সূক্ষ্ম শরীর, সূক্ষ্ম ভূত, সূর্য্য, বায়ু, সমুদ্র, পর্বত, পৃথিবী ও পৃথিবী গর্ভস্হ সূবর্ণাদি ধাতু সৃষ্টি করাতে দূরের কথা ইহার সম্বন্ধে যথাযথ জ্ঞান লাভ করিতে হইলেও যোগজ সামর্থ্যের প্রয়োজন। জীব নির্গুণ, চৈতন্যস্বরূপ ও সহোজা অর্থাৎ অপরের সাহায্যে তাহার প্রকাশ ও প্রয়োজন সিদ্ধ হইয়া থাকে। বুদ্ধির সাহায্যে আদি গুরু পরমাত্মা হইতে ক্রম পূর্বক বিদ্যালাভ করিয়া সামর্থ্য অনুযায়ী স্হূল ভূতের উপর কিয়ৎ পরিমাণে কর্তৃত্ব করিতে সমর্থ হইয়া থাকে মাত্র।।

ঈশ্বরের স্বরূপ
ঈশ্বরের জগৎ নির্মান প্রক্রিয়া

মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থায় ছিল শূন্য তাপমাত্রা। জিরো ডেনসিটি নো ফোর্স জিরো নয়েস বা ফ্রিকোয়েন্সি। সুপ্ত অবস্থায় একটি মহাবিশ্ব। পদার্থের সমস্ত বৈশিষ্ট্য ভর সহ নিষ্ক্রিয় ছিল কারণ পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি নিজেই নিষ্ক্রিয় ছিল সুতরাং মহাবিশ্বের সেই অবস্থাটি সনাক্ত করা অসম্ভব, পদার্থের সমস্ত বৈশিষ্ট্য স্লিপিং মোডে ছিল। মহাবিশ্বের শুরুতে পদার্থের প্রাথমিক অবস্থাঃ
১) It had zero temperature.
২) Zero density
৩) Zero Force
৪) Zero Noise or frequencies
৫) The matter had zero motion.
৬) Time was not there.
৭) There was no space.
৮) There were no dimensions.
৯) it was in latent (সুপ্ত) state.
১০) All properties of matter were inactive including mass.

মহাবিশ্বের মূল বিষয় [মূল প্রকৃতি] বা বস্তুগত কারণের ৩ টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে সত্ত্ব ( Force ) রজঃ ( Matter / mass ) তমঃ (Motion), এই তিনটি বৈশিষ্ট্য যা মহাবিশ্বের শুরু হওয়ার সময় নিষ্ক্রিয় থাকে। সত্ত্বঃ,রজঃ,তমঃ এই তিন গুণের সাম্য অবস্থার নাম ই প্রকৃতি ( সাংখ্য ১/২৬)।। পরমাত্মা ঐ প্রকৃতিতে বাক্ রশ্মি যোগ করে দেয়। পরা ওম্ রশ্মির নাম বাক্ রশ্মি। বাক্ বৈ ভর্গঃ।। বাক্ রশ্মি যোগ হবার সাথে সাথে প্রকৃতির সাম্য অবস্থা ভঙ্গ হয়ে সূক্ষ গতির সঞ্চার হয়ে প্রকৃতিকে ডিষ্টার্ব করে বিভিন্ন রশ্মির নির্মান হতে থাকে সর্বশেষ মলিকুলার স্টেটে গিয়ে আকারবান গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি নির্মান হতে থাকে।। ( অথর্ব ৮/৯/৩) এবং শতপথ (১০/৩/৪/১০)।।

আমরা সকলেই জানি নিউটনের গতির প্রথম আইনটি বলে যে: কোনো নিট বল প্রযুক্ত না হলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় বা সরল পথে চলতে থাকে। গাণিতিকভাবে বলা যায় যে কোনও বস্তুর উপর প্রযুক্ত নিট বল যদি শূন্য হয় তবে বস্তুর গতিবেগ ধ্রুব থাকে। কোনও বাহ্যিক শক্তি প্রয়োগ না করা অবধি একটি বস্তু বিশ্রামেই থাকবে। প্রাথমিকভাবে, এ জাতীয় শক্তি কখনই প্রাকৃতিক ভাবে ঘটতে পারে না। এই ধরনের শক্তি কেবল একটি সচেতন সত্ত্বা দ্বারা প্রয়োগ করা যেতে পারে, সচেতন সত্ত্বা ব্যতীত মহাবিশ্ব নিজেকে তৈরি করতে পারে না। সুতরাং এটি পদার্থবিদ্যার মাধ্যমেই ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ। আমরা বলতে পারি ঈশ্বর ওম্ রশ্মির মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থার সূত্রপাত করেছে। 'য়ানি, ত্রীণি বুহন্তি য়েষাং চতুর্থ বিনিযুক্ত বাচম।"-অথ০৮।৯।৩

"সত্ত্বরজস্তমসাংসাম্যাবস্থা প্রকৃতিঃ"- সত্বঃ,রজঃ, ও তমঃ স্বরূপ তিন প্রকারের অনাদি নিত্য কারণ সমান সংখ্যক ও সমান শক্তি বিশিষ্ট থাকায় পরস্পর মুক্ত হইতে না পারিয়া পৃথক্ পৃথক্ থাকা অবস্থায় নাম প্রকৃতি যাহা এই সমস্ত সৃষ্ট পদার্থের মূল কারণ। উহা জড় ও ত্রিগুণাত্মক বলিয়া সংযোগ বিয়োগের উপযোগী। যদি কোন জ্ঞাতা নিজ শক্তি দ্বারা সৃষ্টি ও প্রলয় না করিতেন, তবে এই সমস্ত প্রকৃতি বা মূল কারণ নিজ নিজ কারণ বা স্বরূপ অবস্থায় চিরকাল পড়িয়া থাকিত।
সত্বঃ, রজঃ, তমঃ তত্ত্বে পরমাত্মা বাক্ নিযুক্ত করিয়া দেন। বাকের আপর নাম একাক্ষর 'ওম্' রশ্মি। পরমাত্মা 'ওম্' রশ্মি দ্বারা সর্বপ্রথম প্রকৃতির সাম্য অবস্থা ভঙ্গ করে সৃষ্টির নির্মাণ করেন । ওম রশ্মি হ'ল সূক্ষ্মতম স্পন্দিত সত্ত্বা, এটি স্ট্রিংয়ের মতো। স্ট্রিং তত্ত্বটি বলে যে পদার্থের সূক্ষ্ম রূপটি স্ট্রিং আকারে বিদ্যমান। আধুনিক বিজ্ঞানী এই স্ট্রিং তত্ত্বটিকে সন্দেহজনক উপায়ে দেখেন তবে বেদ বিজ্ঞান এই বিষয়টিকে স্বীকার করে যে বিষয়টি স্পন্দিত সত্তার আকারে বিদ্যমান, যদিও বেদে স্বীকৃতি দেয় না সম্পূর্ণ স্ট্রিং তত্ত্বটিকে। এই বিভিন্ন ধরণের স্পন্দিত সত্ত্বা কম্পিউটার প্রোগ্রামের কোডগুলির মতো, যেখানে প্রতিটি কোডের নিজস্ব ভূমিকা থাকে। প্রলয়কাল শেষ হবার সাথে সাথে পরা ওম্ রশ্মির সৃষ্টি হয়। পরা ওম্ রশ্মির অপর নাম কাল রশ্মি। পরা 'ওম্' রশ্মির প্রভাবে প্রকৃতিতে সমায়িত অক্ষরশ্মি সক্রিয় হইবার সাথে-সাথে প্রকৃতি বিভাজিত হইয়া মহত্তত্বে পরিণত হইয়া থাকে। ব্যাঞ্জন অক্ষর রশ্মি এবং স্বর অক্ষর রশ্মির প্রভাবে মহঃ তথ্যের মাঝে বহু লক্ষণ সৃষ্টি হয়। এই সজল লক্ষণ অক্ষর রশ্মি জাত বলিয়া প্রসিদ্ধ হয়। এই সকল রশ্মি একত্র হইয়া বেদ মন্ত্রের সৃষ্টি হইতে থাকে। অক্ষর রশ্মির প্রভাবে মন্ত্র, মন্ত্রোক্ত ঋষি, দেবতা, স্বরঃ এবং ছন্দের সৃষ্টি হইতে থাকে। মন্ত্র, ঋষি,স্বরঃ ছন্দের প্রভাবে সকল পদার্থের সৃষ্টি হয়। মহতত্বে অক্ষরের প্রভাবে প্রকৃতির গুণ জাগ্রত হইয়া থাকে, সর্বপ্রথম মহত্তত্ত্ব হইতে মনস্তত্ব,মনস্তত্ব হইতে সূক্ষ্ম প্রাণরশ্মি এবং মরুত রশ্মি, পরে ইহা হইতে ছন্দরশ্মি এবং কোয়ার্ক> প্রোটন> নিউক্লিয়াস> অ্যাটম> মলিকুল আদির সৃষ্টি হয়।

ওম্ রশ্মি সহ এই রশ্মিগুলি বুঝতে আমরা সমুদ্রের তরঙ্গের উদাহরণ ও নিতে পারি। একটি মহাসাগর তরঙ্গে হাজার হাজার তরঙ্গ বিদ্যমান, কিছু বড় তরঙ্গ এবং কিছু ক্ষুদ্রতম বা সূক্ষ্ম তরঙ্গ রয়েছে।
সমুদ্রের তরঙ্গগুলির ধরণটি সাবধানতার সাথে বিশ্লেষণ করা দরকার যে আমরা বৃহত্তম তরঙ্গগুলির মধ্যে কিছু ক্ষুদ্রতম তরঙ্গ দেখতে পাই। এই পদ্ধতিতে একটি ম্যাক্রো তরঙ্গের ভিতরে প্রচুর তরঙ্গ বিদ্যমান। একটি মহাসাগর তরঙ্গে ম্যাক্রো তরঙ্গকে সূক্ষ্ম করার একটি প্যাটার্ন বিদ্যমান। একইভাবে, ওম রশ্মি প্রতিটি ম্যাক্রো রশ্মিতে থাকে এবং এটি প্রতিটি রশ্মিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সমস্ত রশ্মির নিয়ন্ত্রকের মতো। এই প্রকার, প্রকৃতি রূপী সমুদ্রে 'ওম' রশ্মি নামক তরঙ্গ, অন্য তরঙ্গকে জন্ম দেয় এবং এইভাবে বিভিন্ন প্রকার তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। প্রকৃতির এই তরঙ্গকে রশ্মি বলা হয়।

একটি প্রশ্ন উঠতে পারে যে যদি সবকিছু সুপ্ত অবস্থায় থাকত তবে এই ওম্ রশ্মি কোথায় ছিল?
এই রশ্মি কোনও পৃথক সত্ত্বা নয় বরং প্রাথমিক অবস্থারই একটি অংশ।

উদাহরণস্বরূপ এটি বুঝতে আপনি একটি শান্ত পুকুরে পাথর ফেলে দেওয়ার কল্পনা করতে পারেন, পাথরটি পুকুরের বেশ কয়েকটি জলকে আঘাত করে। এটি যেখানে আঘাত করে সেখানে কিছু তরঙ্গ তৈরি করে। শীঘ্রই পুকুরে জলের পুরো তরঙ্গে ভরে যাবে। সুতরাং, এখানে যা ঘটে তা হ'ল পাথরটি জল-পৃষ্ঠের এক বিন্দুতে আঘাত করে এবং এটি সেই সময়ে তরঙ্গ তৈরি করে তবে এই প্রথম তরঙ্গ জলের পরবর্তী চলমান তরঙ্গের কারণ হয়ে ওঠে। কারণ প্রথম তরঙ্গ অন্যান্য সমস্ত তরঙ্গকে সক্রিয় করে। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে অন্যান্য সমস্ত তরঙ্গগুলি এই প্রথম তরঙ্গগুলির দ্বারা উৎপন্ন হয়।

একইভাবে, সর্বব্যাপী ঈশ্বর মহাবিশ্বের শুরুতে পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি সক্রিয় করে বিষয়টি কে কিছুটা ঝাপটান (slight flutter) দেন। এই সামান্য ঝাপটান একই মুহূর্তে অসীম মহাবিশ্বের প্রতিটি জায়গায় তৈরি হয়েছিল। সুতরাং Subtlest কম্পনের মতো প্রথম তরঙ্গ পুরো অসীম মহাবিশ্বে তৈরি হয়েছিল।

"সংহতপরার্থত্বাৎ পুরুষস্য"-সাংখ্য দর্শন ১।৬৬
প্রকৃতি জড় বলিয়া সৃষ্টিকর্ত্তা কিংবা ভোক্তা হইতে পারে না এবং তাহার নিজেরও কোন ভোগের প্রয়োজন থাকিতে পারে না। ভোগ্য ও ভোক্তা এক পদার্থ হইতে পারে না। এই বিচিত্র পদার্থ পরার্থে রচিত হইয়াছে, তাহাতেই ভোক্তাপুরুষের অর্থাৎ জীবাত্মার অনুমান হইতেছে এবং ভোক্তা পুরুষের ভোগের উপযোগী বুদ্ধি ও ইন্দ্রয়াদি করণ, এবং ভোগ্য পদার্থ সমূহের রচনা ও কর্ম্মফলের বিধান দেখিয়া সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্ত্তা পরম পুরুষের অনুমান হইয়া থাকে।
"মূলেমূলাভাবাদমূলং মূলম্"-মূল কারণের কোন কারণ থাকিতে পারে না। কারণ রহিত না হইলে তাহাকে মূল কারণ বলা যায় না মূল কারণ অকারণ অর্থাৎ কারণ রহিত হইয়া থাকে এবং তাহা অনাদি। প্রকৃতি অর্থে যে উপাদান হইতে সমস্ত সৃষ্টি উৎপন্ন হইয়াছে যাহা নিত্য সত্য তাহাই প্রকৃতি।

'তদেজতি তন্নৈজতি তদ্ দূরে তদ্বন্তিকে।
তদন্তরস্য সর্ব্বস্য তদু সর্ব্বস্যাস্য বাহ্যতঃ।।'-যজুর্বেদ ৪০। ৫
-অর্থাৎ ঈশ্বর গতিশূন্য প্রকৃতিতে গতি উৎপন্ন করে কিন্তু স্বয়ং গতিতে আসে না, সেই গতিদাতা পরমেশ্বর অজ্ঞানীর নিকট দূরে বিভিন্ন মঠ মন্দিরে কিন্তু জ্ঞানীর নিকট্ থেকে নিকটে, তিনি ব্রহ্মান্ডের সমস্ত জীব ও জগতের ভিতর ও বাইরে বিদ্যমান। আমাদের সেই সর্বব্যাপক পরমাত্মার উপাসনা করা উচিত।

তথ্যঃ
ঋগ্বেদ ১০।১২৯।১
সাংখ্য দর্শন ১।৬১,১।৬৬
বেদ বিজ্ঞান আলোক পুস্তক


ঈশ্বরের স্বরূপ





ওম্ শম্

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ