বেদ পাঠ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

18 July, 2021

বেদ পাঠ

বেদ পাঠ
বেদকে বিশুদ্ধ ও মনে রাখার জন্য প্রাচীন কালে ঋষিগণ ১১ প্রকার পাঠ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। এই ১১ প্রকার পাঠ পদ্ধতি বা রীতি গুলো হলো: সংহিতা পাঠ, পদ পাঠ, ক্রম পাঠ, জটা পাঠ, মালা পাঠ, শিখা পাঠ, লেখা পাঠ, ধ্বজ পাঠ, দণ্ড পাঠ, রথ পাঠ এবং ঘন পাঠ।

এদের মধ্যে মৌলিক পাঠ ৩ টি। সংহিতা, পদ ও ক্রম পাঠ এই তিনটি পাঠ হচ্ছে প্রকৃত পাঠ। আর বাকী ৮ টি পাঠ হচ্ছে বিকৃতি পাঠ অর্থাৎ যৌগিক পাঠ৷ এগুলো সব ক্রম পাঠের বর্ধিত রূপ৷ এজন্য এসব পাঠের নামের আগে ক্রম শব্দটি ব্যবহার করা হতো। যেমন: ক্রমজটা পাঠ, ক্রমমালা পাঠ ইত্যাদি। তবে সংক্ষেপে এদের জটা পাঠ, মালা পাঠ ইত্যাদি বলা হতো৷

প্রতিটি প্রনালীকে পাঠ পদ্ধতি বলা হয় এবং এদের আয়ত্তকারীদের পাঠিন বলা হয়।এদের মধ্যে ঘনপাঠ পদ্ধতি সবচেয়ে জটিলতম ও বিজ্ঞানসম্মত এবং আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীদের কাছে এক বিস্ময়।একজনরে দেখে নেয়া যাক কিছু নির্বাচিত পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত বিবরন।
“অগ্নিমীলে পুরোহিতম্ যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্” এই মন্ত্রটিকে ‘অগ্নি মীডে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবং ঋত্বিজম্‌’ ঠিক এইরূপ অবিকৃতভাবে পাঠ করিলেই তাহাকে ‘নির্ভুজ’ সংহিতা বলে। ‘প্রতৃণ’ সংহিতার বহু ভেদ আছে। যেমন পদপাঠ, ক্রমপাঠ, জটাপাঠ, ধনপাঠ ইত্যাদি। সন্ধি ও বিরাম আদি বিচার করিয়া পাঠ করিলে তাহার নাম ‘পদপাঠ’, যেমন- ‘অগ্নিম, ঈডে, পুরোহিতম, যজ্ঞস্য, দেবম্‌, ঋত্বিজম্‌’। ‘ক্রমপাঠ’ এইরূপ, যেমন –‘অগ্নিং ঈডে, ঈডে পুরোহিতম্‌, পুরোহিতং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য দেবম্‌, দেবং ঋত্বিজম্‌। ‘জটাপাঠ’ এইরূপ যেমন –অগ্নিং ঈডে, ঈডে অগ্নিম্‌। অগ্নিং ঈডে, ঈডে পুরোহিতম্‌, পুরোহিতং ঈডে, ঈডে পুরোহিতম্‌। পুরোহিতং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য পুরোহিতম্‌, পুরোহিতং যজ্ঞস দেবম্‌, দেবং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য দেবম্‌, দেবং ঋত্বিজম্‌, ঋত্বিজং দেবম্‌, দেবং ঋত্ত্বিজম্‌। ‘ধনপাঠ’ এইরূপ যেমন – অগ্নিং ঈডে, ঈডে অগ্নিম, অগ্নিং ঈডে পুরোহিতম্‌; পুরোহিতং ঈডে অগ্নিম্‌; অগ্নিং ঈডে পুরোহিতম্‌; ঈডে পুরোহিতম্‌, পুরোহিতং ঈডে, ঈডে পূরোহিতং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য পুরোহিতং ঈডে, ঈডে পুরোহিতম্‌ যজ্ঞস্য, পুরোহিতং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য পুরোহিতং পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবম্‌, যজ্ঞস্য পুরোহিতম্‌, পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবম্‌, যজ্ঞস্য দেবম্‌। দেবং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য দেবং ঋত্বিজম্‌, ঋত্বিজং দেবং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য দেবং ঋত্বিজম্‌ ইত্যাদি।

বেদে মন্ত্রকৃত ঋষিঃ
ঋষি হঃ স্নমন্ত্রকৃত [জৈ০ উ০ ব্রা০ ২।২৬৬]
-মন্ত্র হল ঋষিকৃত, ঋষির দ্বারা মন্ত্র উৎপন্ন হইয়া থাকে-প্রাণরশ্মিই ঋষি

পদপাঠঃ
বেদ মন্ত্রগুলোর প্রতিটি পদকে সন্ধি বিচ্ছেদ করে বা সমাসবদ্ধ পদকে বিশ্লেষণ করে পড়া হয় যে পাঠে, তাকে পদ পাঠ। পদ পাঠে প্রতিটি পদ স্পষ্ট হয় বলে পদ পাঠ অপেক্ষাকৃত সহজ। ঋষি শাকল্য ঋগ্বেদের শাকল্য শাখার স্রষ্টা এবং তিনিই প্রথম শাকল্য সংহিতায় পদ পাঠ ব্যবহার করেন। পদ পাঠ অনুসারে উক্ত মন্ত্রটি হবে:

অগ্নিমীলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্।
 হোতারং রত্নধাতমং।।-ঋগ্বেদo মন্ডল ১ সূক্ত ১ মন্ত্র ১

এখানে পুরোহিতম্ ও রত্নাধাতমম্ সমাস দুটিকে বিশ্লেষণ করে–পুরঃSহিতম্ ও রত্নSধাতমম্ পাওয়া যায়৷ এই পদ দুটির মাঝখানে যে ব্যাসসূচক ইংরেজি S এর মতো চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে, এটাকে অবগ্রহ বলে।
এ পদ্ধতিতে প্রতিটি পদকে আলাদা করে ক্রমপদ্ধতিতে উচ্চারন করে মুখস্ত করা হয়।ঠিক নিম্নলিখিত রীতিতে
কখ খগ গঘ...
এটি বেদ উচ্চারন এর দুটি মুল নিয়ম এর মধ্যে একটি(অপরটি হল সংহিতা বা বাক্যপাঠ)।
পদপাঠিনদের অধিকাংশ ই দক্ষিন ভারতের অধিবাসী।
সংহিতা বা বাক্যপাঠ পদ্ধতি
একক অর্থের একাধিক পদকে সন্ধির মাধ্যমে উচ্চারন এবং মুখস্ত করা হয়।যেমন যত্ ইদম উপাস্যতে(যাকে লোকউপাসনা করে) এর সংহিতা বা বাক্য রুপ হল যদিদমুপাসতে।এটা বেদ উচ্চারনের দুটি সঠিক নিয়মের একটি।সংহিতা পাঠ হচ্ছে বর্তমানে প্রচলিত বেদের পাঠ। অর্থাৎ আমরা বর্তমান বেদ মন্ত্রগুলোকে যেভাবে দেখতে পারি সেগুলো সংহিতা পাঠে লিপিবদ্ধ। সংহিতা পাঠে বেদ মন্ত্র যেভাবে লেখা থাকে, তাকে সেভাবেই পাঠ করা হয়৷ যেমন:
অগ্নিমীলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্।
 হোতারং রত্নধাতমং।।
জটাপাঠঃ
জটা পাঠকে তাঁতিদের কাপড় বোনার সাথে তুলনা করা যায়। তাঁতিদের কাপড় বুনতে যেমন টানাপোড়েন ব্যবহার হয়, এই পাঠ অনেকাংশে তেমন। এই পাঠ পদ্ধতিতে মন্ত্রের প্রথম ও শেষ পদটি তিনবার করে এবং মধ্যবর্তী পদগুলো ছয়বার করে পঠিত হয়। যেমন:

অগ্নিম ঈড়ে। ঈড়ে অগ্নিম। অগ্নিম ঈড়ে৷
ঈড়ে পুরোহিতং। পুরোহিতম্ ঈড়ে৷ ঈড়ে পুরোহিতম্।
পুরোহিতম্ যজ্ঞস্য। যজ্ঞস্য পুরোহিতম্। পুরোহিতং যজ্ঞস্য।
যজ্ঞস্য দেবং। দেবং যজ্ঞস্য। যজ্ঞস্য দেবম।
........এভাবে চলতে থাকবে।
এক্ষেত্রে প্রথম পদ পরের পদের সাথে আবার পরের পদ পুনরায় প্রথম পদের সাথে যুক্ত করে মুখস্ত করা হয়।ঠিক এভাবে-
কখ খক কখ খগ গখ খগ।
ক্রম পাঠ: একটি মন্ত্রের বা ঋকের দুটি করে পদ এক একবারে গ্রহণ করা হয়। প্রথম পদ ও শেষের পদ ছাড়া মধ্যের সব পদই এই পাঠে দুবার করে পঠিত হয়। যেমন:
অগ্নিম ঈড়ে। ঈড়ে পুরোহিতম্৷
পুরোহিতং যজ্ঞস্য।
যজ্ঞস্য দেবম। দেবম ঋত্বিজম।
ঋত্বিজং হোতারম্।
হোতারং রত্নাধাতমম্।

এই পাঠে অগ্নিম এবং রত্নাধাতমম্ এই দুটি পদ ছাড়া মধ্যবর্তী সকল পদ দুই বার করে রয়েছে। আক্ষরিক প্রতীকের মাধ্যমে ক্রম পাঠকে এভাবে বুঝানো যায়– ১-২, ২-৩, ৩-৪, ৪-৫, ৫-৬ ইত্যাদি

ধ্বজা পাঠ: ধ্বজ পাঠ ক্রম পাঠের অনুরূপ। ঠিক ক্রম পাঠের মতো এখানেও ছয়টি পদ উচ্চারণ করে তারপর বিপরীত ক্রমের দিক থেকে সেই ছয়টি পদের পাঠ করতে হয়। যেমন:

অগ্নিম্ ঈড়ে৷ ঈড়ে পুরোহিতম্।
পুরোহিতম্ যজ্ঞস্য।
পুরোহিতং যজ্ঞস্য। ঈড়ে পুরোহিতম্।
অগ্নিম্ ঈড়ে।
যজ্ঞস্য দেবম্। দেবম্ ঋত্বিজম্।
ঋত্বিজং হোতারম্।
ঋত্বিজং হোতারম্।
দেবম্ ঋত্বিজম্। যজ্ঞস্য দেবম্।

এতে প্রথম চরণ ঠিক ক্রম পাঠ অনুযায়ী। দ্বিতীয় চরণ তার ঠিক উল্টো। তৃতীয় চরণ ক্রম পাঠ অনুযায়ী এবং চতুর্থ পাঠ উল্টো ক্রমে।

ধ্বজা পাঠের অক্ষর প্রতীক:
১-২, ২-৩, ৩-৪, ২-৩, ২-১, ৪-৫, ৫-৬, ৬-৭, ৫-৬, ৪-৫ ইত্যাদি।
দণ্ড পাঠ: এর সঙ্গে ক্রম পাঠের আংশিক মিল রয়েছে। ক্রম পাঠের মতো এখানেও দুটো দুটো করে পদ তিন তিনবার করে উচ্চারিত হয়। কেবল দ্বিতীয়বার বিপরীত ক্রমে পাঠ করতে হয়। যেমন:

অগ্নিম্ ঈড়ে। ঈড়ে অগ্নিম্।
অগ্নিম্ ঈড়ে।
ঈড়ে পুরোহিতম্। পুরোহিতম্ ঈড়ে অগ্নিম্৷
এর আক্ষরিক প্রতীক:
১-২, ২-১, ১-২,
২-৩, ৩-২-১

রথ পাঠ: এটি একটি মিশ্র প্রক্রিয়া৷ ক্রম পাঠের ধারা ও এর বিপরীতমুখী ধারাকে একত্রে সংমিশ্রণ করে এই পাঠের সৃষ্টি হয়েছে।

রথ পাঠ আবার দুই প্রকার। এদের মধ্যে এক প্রকার পাঠের উদাহরণ হলো:

অগ্নিম্ ঈড়ে যজ্ঞস্য দেবম্।
ঈড়ে অগ্নিম্ দেবং যজ্ঞস্য।
অগ্নিম্ ঈড়ে ঈড়ে পুরোহিতম্।
যজ্ঞস্য দেবং দেবম্ ঋত্বিজম্।

এর আক্ষরিক প্রতীক হচ্ছে:
১-২-৩-৫।
২-১-৫-৪।
১-২-২-৩।
৪-৫-৫-৬।

মালা পাঠ: এই পাঠ বেশ কঠিন। এই পাঠের ক্ষেত্রে প্রথম এবং দ্বিতীয় পদ পাঠ করার পরে, সেই পদ থেকে ষষ্ঠ ও পঞ্চম পদ পাঠ করতে হয়। এভাবে পদ ক্রম ধীরে ধীরে কমে আসে। যেমন:

অগ্নিম ঈড়ে। ঋত্বিজং দেবম্।
ঈড়ে পুরোহিতং। দেবং যজ্ঞস্য।
পুরোহিতং যজ্ঞস্য। যজ্ঞস্য পুরোহিতম্।
যজ্ঞস্য দেবং। পুরোহিতম্ ঈড়ে। দেবম্ ঋত্বিজম। ঈড়ে অগ্নিম্।

মালা পাঠের আক্ষরিক রূপ: ১-২-৬-৫, ২-৩-৫-৪, ৩-৪-৪-৩, ৪-৫-৩-২, ৫-৬-২-১।
লেখা পাঠ: লেখা পাঠ অনেকটা ক্রম পাঠের মতো৷ এটিকে লেখা পাঠও বলে। এই পদ্ধতিতে পাঠ করার সময় কখনও দুটি পদ, কখনও তিনটি পদ একত্রে পাঠ করা হয়। এটি হয় যথাক্রমে এবং বিপরীত ক্রমে উভয়ভাবে। যেমন:

অগ্নিম ঈড়ে। ঈড়ে অগ্নিম্৷ অগ্নিম্ ঈড়ে।
ঈড়ে পুরোহিতং যজ্ঞস্য।
যজ্ঞস্য পুরোহিতম্ ঈড়ে।
ঈড়ে পুরোহিতম্। পুরোহিতং যজ্ঞস্য।
..................এভাবে চলতে থাকবে।

এর আক্ষরিক প্রতীক:
১-২, ২-১, ১-২।।
২-৩-৪, ৪-৩-২।।
২-৩, ৩-৪ ইত্যাদি।
শিখা পাঠ: শিখা পাঠ বেশ কঠিন। এর গঠন অনেকটা জটা পাঠের মতো। এই পঠন পদ্ধতিতে তৃতীয়, ষষ্ঠ, নবম চরণে তিনটি করে পদ থাকে৷ বাকী চরণ গুলোতে দুটি করে পদ থাকে। যেমন:।

অগ্নিম্ ঈড়ে৷ ঈড়ে অগ্নিম্।
অগ্নিম্ ঈড়ে পুরোহিতন্।
ঈড়ে পুরোহিতম্৷ পুরোহিতম্ ঈড়ে।
ঈড়ে পুরোহিতং যজ্ঞস্য।
পুরোহিতং যজ্ঞস্য। যজ্ঞস্য পুরোহিতম্।
পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবম্।
যজ্ঞস্য দেবম্। দেবং যজ্ঞস্য।
যজ্ঞস্য দেবম্ ঋত্বিজম।

.......এভাবে পাঠ চলতে থাকবে৷

এর আক্ষরিক প্রতীক :
১-২, ২-১, ১-২-৩
২-৩, ৩-২, ২-৩-৪
৩-৪, ৪-৩, ৩-৪-৫ ইত্যাদি।
ঘনপাঠঃ
ঘন পাঠের চারটি পদ দুটি দুটি করে ঠিক জটা পাঠ অনুযায়ী পাঠ করতে হয়। তারপর তিনটি করে পদ যথাক্রমে বিপরীতক্রমে এবং বিপর্যস্ত ভাবে উচ্চারণ করতে হয় । যেমন:

অগ্নিম্ ঈড়ে। ঈড়ে অগ্নিম।
অগ্নিম্ ঈড়ে পুরোহিতম্
পুরোহিতম্ ঈড়ে অগ্নিম।
অগ্নিম্ ঈড়ে পুরোহিতম্৷
ঈড়ে পুরোহিতম্। পুরোহিতম্ ঈড়ে।
ঈড়ে পুরোহিতম্ যজ্ঞস্য।
যজ্ঞস্য পুরোহিতম্ ঈড়ে ।
ঈড়ে পুরোহিতম্ যজ্ঞস্য।
..........এভাবে চলবে।

এই পাঠের আক্ষরিক প্রতীক হবে:
১-২, ২-১, ১-২-৩, ৩-২-১, ১-২-৩
২-৩, ৩-২, ২-৩-৪, ৪-৩-২, ২-৩-৪
৩-৪, ৪-৩, ৩-৪-৫, ৫-৪-৩, ৩-৪-৫ ইত্যাদি
ঘনপাঠ হল সবচেয়ে জটিল পাঠ পদ্ধতি।বিশেষজ্ঞদের মতে এইপাঠ পদ্ধতি বেদে পরিবর্তন হওয়া তো দুরের কথাবেদ এর প্রতিটি শব্দের উচ্চারন ও স্বরগ্রাম পর্যন্ত অবিকৃত।এই পদ্ধতিতে একবার মন্ত্রটি পড়লে প্রকারান্তরে সেটি ১৩ বার পড়া হয়ে যেত।তাই একজন ঘনপাঠিন কমপক্ষে ১৩ বার বেদ পড়ে থাকেন!

এই অভুতপূর্ব সংরক্ষন এর কারনেই ২০০৩ সালের ৭ ই নভেম্বর UNESCO বেদ সংরক্ষন এর এই পদ্ধতিকে"Master piece of theoral and intangible heritage of humanity"হিসেবে ঘোষনা করে।
Macdonell এ সম্বন্ধে তার History of sanskrit literature(page no 50) তে বলেন-
"এ রকম পরিবর্তিত হবার ক্ষীনতম সম্ভাবনা পর্যন্ত না থাকাটা পৃথিবীর ইতিহাসের একমাত্র উদাহরন"
Keigi তার ঋগ্বেদভাষ্যের (Page 22) তে বলেন
"এই পর্যন্ত বেদ এত যত্নের সাথে সংরক্ষিত হয়েছে যার সাথে আর কোন বইয়ের ই তুলনা দেয়া যায়না।"
বেদ পাঠ
অথ পঠন পাঠন বিধিঃ 
যাহা প্রথমতঃ পাণিনি মুনি কৃত শিক্ষা' সূত্ররূপ আছে, উহার রীতি শিক্ষা করিবে। অর্থাৎ এই অক্ষরের এই স্থান, এই প্রযত্ন, এই কারণ। যথা ‘প’ উচ্চারণের স্থান ওষ্ঠ, প্রযত্ন সৃষ্ট এবং প্রাণ ও জিহ্বার ক্রিয়াকে 'করণ’ বলে। এইভাবে মাতা, পিতা এবং আচাৰ্য যথােযােগ্যভাবে সকল অক্ষরের উচ্চারণ বিধি পূর্বক শিক্ষা দিবেন।
তদনন্তর ব্যাকরণ অর্থাৎ প্রথমে অষ্টাধ্যায়ীর সুত্রগুলি পাঠ, যথা বৃদ্ধিরাদৈ’। (অষ্টাধ্যায়ী অ0 ১। পা১ সূ১) পরে পদচ্ছেদ, যথা বৃদ্ধিঃ, আং, ঐচ বা আদৈ ইহার পর 'সমাসআচ্চ ঐচ্চ আদৈ এবং অর্থ যথা ‘আদৈচাং বুদ্ধি-সংজ্ঞা ক্রিয়তে' অর্থাৎ আ, ঐ, ঔ ইহার বৃদ্ধি সংজ্ঞা (করা হয়), 'তঃ পরাে য়স্মাৎ স পরস্তাদপি পরস্তপরঃ’ ‘ত' কার যাহার পরে থাকে এবং যাহা ‘ত’ কার হইতেও পরে থাকে তাহাকে “তপর” বলে। ইহাতে সিদ্ধ হইল যে, ‘আকারের পর এবং ‘'য়ের পরে “ঐ” উভয়ই “তপর”। ত’পরের প্রয়ােজন এই যে হ্রস্ব ও প্লুতের বৃদ্ধি। সংজ্ঞা হইল না।
উদাহরণ- (ভাগঃ) এস্থলে ‘ভজ’ ধাতুর উত্তর ‘ঘ’ প্রত্যয়ের পর ‘ঘ’ ‘এ’ এর ‘ই’ৎ সংজ্ঞা হইয়া লােপ হইল। অতঃপর ‘ভজ+ অ, এস্থলে জ’ করের পূর্ববর্তী “ভ” কারােত্তর “অ” কারের বৃদ্ধি সংজ্ঞক “আ” কার হইল। সুতরাং “ভাজ” হইল। পুনরায় জ’ স্থানে ‘গ’ হইয়া অ’কারের সহিত মিলিয়া “ভাগঃ” এইরূপ প্রয়ােগ হইল।
অধ্যায়ঃ”, এস্থলে অধিপূর্বক ইঙ’ ধাতুর হ্রস্ব ‘ই’ স্থানে ‘ঘ’ প্রত্যয়ের পর ঐ’ বৃদ্ধি এবং তৎস্থলে আয় মিলিত হইয়া অধ্যায়ঃ হইল।
‘নায়ক’ এস্থলে নী’ ধাতুর দীর্ঘ ঈকারের স্থানে ‘ল’ প্রত্যয়ের পরে ঐ’বৃদ্ধি (এবং) পরে উহা ‘আয়’ হইবার পর মিলিত হইয়া ‘নায়ক’ হইল।
পুনঃ স্তাবকঃ”, এস্থলে ‘স্তু’ ধাতুর উত্তর ণুল' প্রত্যয় হইয়া হ্রস্ব উকারের স্থানে ঔ’ বৃদ্ধি (এবং) ‘আব’ আদেশ হইয়া আকারের সহিত মিলিত হইয়া 'স্তাবকঃ হইল।
(কারকঃ) কৃঞ' ধাতুর উত্তর ‘গুল' প্রত্যয়, তাহার ণ, ল এর ইৎ সংজ্ঞা হইয়া লােপ, 'বু’ এর স্থানে ‘অক’ আদেশ এবং ঋকারের স্থানে ‘আর বুদ্ধি হইয়া 'কারকঃ’ সিদ্ধ হইল।
যে যে সূত্র পূর্বাপর প্রযুক্ত হয়, সেইগুলির কাৰ্য্য প্রভৃতি বলিয়া দিতে হইবে এবং শ্লেট অথবা কাষ্ঠ ফলকে দেখাইয়া মূলরূপ লিখিয়া; যথা—‘ভজ+ঘঞ+সু' এইরূপে রাখিয়া প্রথমে ধাতুর অকারের লােপ, পরে ঘৃ কারের লােপ পরে ‘ঞ’- র লােপ হইয়া-ভজ + অ + সু' এইরূপ রহিল। পুনরায় (অকারের আ বৃদ্ধি এবং) ‘জ’ এর স্থানে ‘গ’ হওয়াতে ‘ভাগ্‌+অ+সু' পুনঃ অকারের সহিত মিলিয়া যাওয়াতে ‘ভাগ+সু’ রহিল। এবার উকারের ‘ই’ সংজ্ঞা, 'স' এর স্থানে ‘রু ' হইয়া পুনঃ উকারের ইৎ সংজ্ঞা লােপ পাওয়াতে ‘ভাগর’ হইল। এইবার রেফের স্থানে (ঃ) বিসর্জনীয় হইয়া ‘ভাগঃএই রূপ সিদ্ধ হইল।
যে যে সুত্রানুসারে যে যে কাৰ্য্য হয় সেই সেই সুত্রের বারংবার পাঠ করাইয়া এবং বারংবার লিখাইয়া অভ্যাস করাইতে থাকিবে। এইরূপ পঠন পাঠন দ্বারা অতি শীঘ্র দৃঢ় বােধ হয়। একবার এইরূপে অষ্টাধ্যায়ী পড়াইয়া অর্থ সহিত ধাতুপাঠ এবং দশ ‘ল’ কারের রূপ তথা প্রক্রিয়া সহিত সূত্রগুলি উৎসর্গ অর্থাৎ সামান্যসূত্র শিক্ষা দিতে হইবে। যথা–কর্মণ্য’ (অষ্টা ৩।২।১) কর্ম-উপপদ যুক্ত থাকিলে ধাতু মাত্রেই অণ্ প্রত্যয় হয়। যথা—“কুম্ভকারঃ"। তাহার পর অপবাদ সূত্র শিক্ষা করাইতে হইবে। যথা—“আতোংনুপসর্গে কঃ’ (অষ্টা০ ৩। ২। ৩।) উপসর্গ ভিন্ন কর্ম উপপদ যুক্ত থাকিলে আকারান্ত ধাতুর উত্তর ‘ক’ প্রত্যয় হইবে। অর্থাৎ যাহা বহুব্যাপক যথা, কর্ম উপপদবিশিষ্ট হইলে ধাতুর উত্তর “অণ” প্রাপ্ত হয়। তদপেক্ষা বিশেষ অর্থাৎ অল্পবিষয় সেই পূর্ব সূত্রের বিষয় হইতে আকারন্ত ধাতুর ‘ক’ প্রত্যয় গ্রহণ করিল। উৎসর্গ বিষয়ে যেরূপ অপবাদ সুত্রের প্রবৃত্তি হয়, সেইরূপ অপবাদ সূত্র বিষয়ে উৎসর্গ সুত্রের প্রবৃত্তি হয় না। যথা, চক্রবর্তী রাজার রাজ্যাধীন মালিক এবং ভূস্বামী থাকে, কিন্তু মাগুলিক রাজার অধীনে চক্রবর্ত্তী রাজা থাকে না। 
 এইরূপেই মহর্ষি পাণিনি সহস্র শ্লোকের মধ্যে অখিল শব্দ, অর্থ ও সম্বন্ধ বিষয়ক বিদ্যা প্রতিপাদন করিয়াছেন। ধাতু পাঠের পর উণাদিগণ পাঠের সময় সমস্ত সুৰন্ত বিষয় উত্তমরূপে পড়াইয়া, পুনরায় দ্বিতীয়বার সংশয়, সমাধান, বাৰ্ত্তিক, কারিকা এবং পরিভাষার প্রয়ােগ সহকারে অষ্টাধ্যায়ীর দ্বিতীয়ানুবৃত্তি পড়াইবে। তদনন্তর মহাভাষ্য পড়াইবে। যদি কোন বুদ্ধিমাণ, পুরুষকার-সম্পন্ন, অকপট, ও বিদ্যোতিকামী ব্যক্তি নিত্য পঠন-পাঠন করে, তবে সে দেড় বৎসরে অষ্টাধ্যায়ী এবং দেড় বৎসরে মহাভাষ্য অধ্যয়ন করিয়া তিন বৎসরে পূর্ণ বৈয়াকরণ হইয়া বৈদিক ও লৌকিক শব্দাবলীর ব্যাকরণজ্ঞানের সাহায্যে অন্য শাস্ত্রগুলির শীঘ্র সহজে পড়িতে ও পড়াইতে সক্ষম হইবে।
কিন্তু, ব্যাকরণে যেমন কঠিন পরিশ্রম করিতে হয়, অন্য শাস্ত্রে সেরূপ পরিশ্রমের প্রয়ােজন হয় না। এইগুলি অধ্যয়ন করিলে তিন বৎসরে যে পরিমাণ জ্ঞান জন্মিবে, কুগ্রন্থ অর্থাৎ সারস্বত, চন্দ্রিকা, কৌমুদী এবং মনােরমাদি অধ্যয়ন করিলে পঞ্চাশ বৎসরেও সে পরিমাণ জ্ঞান জন্মিতে পারিবে না। কারণ, মহাশয় মহর্ষিগণ যেরূপে গম্ভীর বিষয় গুলি সরল ভাবে স্ব স্ব গ্রন্থে প্রকাশ করিয়াছেন, ক্ষুদ্রাশয় মনুষ্যগণের কল্পিত গ্ৰন্থে সেইরূপ প্রকাশ করা কীরূপে সম্ভব হইতে পারে? মহর্ষিদের ভাব যথাসম্ভব সুগম এবং অল্প সময়ে আয়ত্ত করা যায়। কিন্তু ক্ষুদ্রাশয় ব্যক্তিগণের ইচ্ছা এই যে, যতদূর সম্ভব রচনাকে কঠিন করা, যাহাতে বহু পরিশ্রমের সহিত পাঠ করিয়া অল্প লাভ হয়। ইহা যেন পাহাড় কাটিয়া কপর্দক লাভ। আর আর্য গ্রন্থ পাঠ করা কীরূপ— উহা যেন একটি বার ডুব দিয়াই মূল্যবান মণি-মুক্তা লাভ করা।
ব্যাকরণ পাঠ করিয়া ছয় বা আট মাসে যাস্কমুনি কৃত ‘নিঘটু’ ও ‘নিরুক্ত অর্থ সহিত পড়িবে ও পড়াইবে। অন্য নাস্তিক কৃত অমরকোষাদি অন্যান্য গ্রন্থে বহু বৎসর বৃথা নষ্ট করিবে না। তাহার পর পিঙ্গলাচার্যকৃত ছন্দো গ্রন্থ' সাহায্যে বৈদিক ও লৌকিক ছন্দের পরিজ্ঞান, আধুনিক নবীন রচনা এবং শ্লোক রচনার প্রণালীও যথােচিত ভাবে শিখিবে। এইরূপে গ্রন্থ, শ্লোক রচনা এবং বিস্তার চার মাসে শিক্ষা করিয়া পঠন পাঠনে সমর্থ হইবে। বৃত্তরত্নাকর প্রভৃতি অল্পবুদ্ধি প্রকল্পিত সমূহে বহু বৎসর নষ্ট করিবে না। | অতঃপর মনুস্মৃতি, বাল্মিকী রামায়ণ এবং মহাভারতের উদ্যোগ পর্বান্তগত বিদুরনীতি প্রভৃতি উৎকৃষ্ট প্রকরণগুলি পাঠ করিবে। ইহাতে দুষ্ট ব্যসন দূর হইবে এবং উৎকর্য ও সভ্যতা লাভ হইবে। অধ্যাপকগণ কাব্যরীতি অনুসারে অর্থাৎ পদচ্ছেদ, পদার্থোক্তি, অন্বয়, বিশেষ্য, বিশেষণ ও ভাবার্থ বুঝাইতে থাকিবেন এবং বিদ্যার্থীগণ এই সকল শিক্ষা করিতে থাকিবে। এক বৎসরের মধ্যে এইগুলি অধ্যয়ন শেষ করিবে। | তাহার পর পূর্ব মীমাংসা, বৈশেষিক, ন্যায়, যােগ, সাংখ্যও বেদান্ত—অর্থাৎ যতদূর সম্ভব ততদূর ঋষিকৃত ব্যাখ্যা অথবা শ্রেষ্ঠ বিদ্বাদিগের সরল ব্যাখ্যা সহ পঠন পাঠন করিবে। কিন্তু বেদান্তসূত্র অধ্যয়নের পূর্বে ঈশ, কেন, কঠ, প্রশ্ন, মণ্ডুক, মাগুক, ঐতরেয়, তৈত্তিরী , ছান্দোগ্য এবং বৃহদারণ্যক—এই দশ উপনিষদ্ অধ্যয়ন করিবে। ছয় শাস্ত্রের সূত্র সমূহের ভাষ্য ও বৃত্তিসহ সূত্র দুই বৎসরের মধ্যে পড়াইবে এবং পড়িবে। ইহার পর ছয় বৎসরের মধ্যে চারি ব্রাহ্মণ, অর্থাৎ ঐতরেয়, শতপথ, সাম, গােপথ ব্রাহ্মণ, চর্তুবেদ, স্বর, শব্দ সহিত অর্থ, সম্বন্ধ এবং ক্রিয়াজ্ঞান সহিত অধ্যয়ন করিবে। এ বিষয়ে প্রমাণ।
স্থাণুরয়ং ভারাহারঃ কিলাভূদীত্য বেদংন বিজানাতি য়োংর্থম। 
য়োংর্থজ্ঞইৎসকলং ভদ্রমশ্নুতে নাকমেতি নবিধূতপাপমা।। 
নিরুক্ত ১/১৮
অর্থ :- এই মন্ত্রটি নিরুক্তে আছে। যিনি বেদের স্বর ও পাঠমাত্র পড়িয়া অর্থ জানিতে অক্ষম, তিনি শাখা, পত্র এবং ফল পুষ্পের ভার বহনকারী বৃক্ষ ও ধান্যাদির ভার বহনকারী পশুর ন্যায় ভারবাহ অর্থাৎ ভার বহনকারী। আর যিনি বেদপাঠ করেন এবং বেদার্থ সম্যকরূপে জানেন, তিনিই সম্পূর্ণ আনন্দ প্রাপ্ত হইয়া দেহান্তের পর ডানবলে পাপমুক্ত হইয়া পবিত্র ধর্মাচরণ প্রতাপে সর্বানন্দ প্রাপ্ত হইয়া থাকেন।
উত ত্বঃ পশ্যন্ন দদর্শ বাচমুত ত্বঃ শৃন্বন্ন শৃণােত্যেনাম্। উতাে ত্বষ্মৈ তন্বং১ বিসস্রে জায়েব পত্য উশতী সুবাসা। ঋ০১০।৭১ |৪||
অর্থঃ- যে অবিদ্বান্ ব্যক্তি সে শুনিয়াও শুনেনা, দেখিয়াও দেখে না, বলিয়াও বলেনা, অর্থাৎ অবিদ্বান ব্যক্তিরা এই বিদ্যাবাণীর রহস্য জানিতে পারে না। কিন্তু, যেমন সুন্দর বস্ত্রালঙ্কার পরিধান করিয়া স্বীয় পতিকে কামনা করিয়া স্ত্রী স্বীয় পতির নিকট নিজ শরীর ও স্বরূপ প্রকাশ করিয়া থাকে, তাপ বিদ্যাও শব্দ, অর্থ এবং সম্বন্ধ জ্ঞাত বিদ্বানের নিকট স্বীয় স্বরূপ প্রকাশ করিয়া থাকে, কিন্তু বিদ্যাহীন ব্যক্তির নিকট করে না।
ঋচো অক্ষরে পরমে বােমান্যস্মিন্‌দেবা অধি বিশ্বে নিযেদুঃ।। য়স্তন্ন বেদ কিমৃচা করিষ্যতি য় ইদ্ধিদুস্ত ইমে সমাসতে৷ ঋ০ ১। ১৬৪/৩৯ ।
অর্থঃ- যে ব্যাপক, অবিনাশী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পরমেশ্বর সমস্ত বিদ্বান ব্যক্তি এবংপৃথিবী সুৰ্য্যাদি সব লােক অবস্থিত, যাহাতে সকল বেদের মুখ্য তাৎপৰ্য, যিনি সেই ব্রহ্মকে জানেন না, তিনি কি ঋগ্বেদাদি হইতে কোন আনন্দ প্রাপ্ত হইতে পারেন? না, না। কিন্তু যাঁহারা বেদাধ্যয়ন পূর্বক ধম্মত্মাি ও যােগী হইয়া সেই ব্রহ্মাকে জানেন, তাহারা সকলে পরমেশ্বরে স্থিতি লাভ করিয়া মুক্তিরূপী পরমানন্দ লাভ করেন। এই জন্যে অর্থজ্ঞান সহকারেই পঠন পাঠন হওয়া আবশ্যক।
এইরূপে সকল বেদ অধ্যয়নের পর আয়ুর্বেদ অর্থাৎ চরক এবং সুশ্রত প্রভৃতি ঋষি প্রণীত চিকিৎসা শাস্ত্রের অর্থ, ক্রিয়া, শস্ত্র, ছেদন, ভেদন, লেপ, চিকিৎসা, নিদান, ঔষধ, পথ্য, শরীর, দেশ, কাল এবং বস্তুর গুণ, জ্ঞানপূর্বক জানিয়া ৪ (চার) বৎসরের মধ্যে পঠন পাঠ করিবে। অনন্তর ধনুর্বেদ অর্থাৎ রাষ্ট্র সম্বন্ধীয় কাৰ্য। ইহা দ্বিবিধ, প্রথম—নিজ রাজপুরুষ সম্বন্ধীয়, দ্বিতীয়—প্রজা সম্বন্ধীয়। রাজকার্যে সভা, সৈন্যাধ্যক্ষ শস্ত্ৰাস্ত্রবিদ্যা সম্বন্ধে জানিবে এবং নানাপ্রকার ব্যুহ রচনা অভ্যাস অর্থাৎ আজকাল যাহাকে কায়দ’ বলে, শত্রুর সহিত যুদ্ধকালে যাহা করিতে হয় তাহা সম্যকরূপে শিক্ষা করিবে। প্রজাপালন, প্রজাবৃদ্ধি প্রণালী শিক্ষা করিয়া ন্যায়ানুসারে প্রজাদিগকে সন্তুষ্ট রাখিবে। দুষ্টদিগের সমুচিত দণ্ডদান এবং শ্রেষ্ঠদিগের পালন সম্বন্ধে সর্ববিধ ব্যবস্থা শিক্ষা করিবে। | এই রাষ্ট্রবিজ্ঞান দুই বৎসরে শিক্ষা করিয়া গান্ধর্ববেদ যাহাকে ‘গানবিদ্যা’ বলে উহা এবং তৎসংক্রান্ত স্বর, রাগ, রাগিণী, সময়, তাল, গ্রাম, তান, বাদিত্র, নৃত্য এবং গীত আদি সম্যক্ররূপে শিক্ষা করিবে। কিন্তু প্রধানরূপে সামবেদের গান বাদ্যযন্ত্র সহকারে শিক্ষা করিবে এবং নারদ সংহিতা প্রভূতি আর্যগ্রস্থ অধ্যয়ন করিবে। কিন্তু লম্পট, বেশ্যা, বৈরাগীদিগের বিষয়াসক্তি উৎপন্নকারী গর্দভ শব্দবৎ ব্যর্থ-সঙ্গীতালাপ কখনও করিবে না।
অর্থবেদ যাহাকে 'শিল্পবিদ্যা’ বলে তাহার দ্বারা পদার্থসমূহের গুণ, বিজ্ঞান, ক্রিয়া, কৌশল, বিবিধ বস্তুনির্মাণ এবং পৃথিবী হইতে আকাশ পর্যন্ত যাবতীয় পদার্থবিষয়ক বিদ্যা অর্থাৎ ঐশ্বৰ্য্য বৰ্ধক সেই বিদ্যা শিক্ষা করিয়া এবং দুই বৎসরের মধ্যে জ্যোতিষ শাস্ত্র সূৰ্য্যসিদ্ধান্ত প্রভৃতি তদন্তৰ্গত বীজগণিত, অঙ্ক, ভূগােল, খগােল এবং ভূগর্ভ বিদ্যা সম্যক্রপে শিক্ষা করিবে। তাহার পর সর্ববিধ হস্তশিল্প ও যন্ত্রকলা প্রভৃতি শিক্ষা করিবে; কিন্তু গ্রহনক্ষত্র, জন্মপত্র, রাশি এবং মুহূর্ত প্রভৃতির ফল বিধায়ক যে সব গ্রন্থ আছে সেগুলিকে মিথ্যা জানিয়া কখনও পঠন পাঠন করিবে না, করাইবেও না।
 বিদ্যার্থী এবং অধ্যাপকগণ এইরূপ চেষ্টা করিবেন যাহাতে বিংশ বা একবিংশ বৎসরের মধ্যে সর্ব প্রকার এবং উত্তম শিক্ষা লাভ করিয়া মনুষ্যগণ কৃতকৃত্য হইয়া সর্বদা আনন্দে থাকে। এই রীতি অনুসারে বিংশ বা একবিংশ বর্ষে যে পরিমাণ বিদ্যালাভ হইতে পারিবে অন্যরীতি অনুসারে একশত বৎসরেও সে পরিমাণে বিদ্যালাভ করিতে পারিবে না।
 ঋষিপ্রণীত গ্রন্থ এই জন্য পাঠ করিবে যেহেতু তাহারা পরম বিদ্বান, সর্ব শাস্ত্রবিদ এবং ধর্মাত্মা ছিলেন। আর যাঁহারা অনৃষি অর্থাৎ অল্পশাস্ত্র পড়িয়াছেন ও যাহাদের আত্মা পক্ষপাতদুষ্ট তাহাদের রচিত গ্রন্থও সেইরূপ হইবে।
পূর্ব মীমাংসার ব্যাস মুনিকৃত ব্যাখ্যা, বৈশিষিকের গৌতম মুনিকৃত প্রশশুপাদ ভাষ্য, ন্যায় সূত্রের বাৎসায়ন মুনিকৃত ভাষ্য, পতজ্ঞলি মুনিকৃত সূত্রের ব্যাস মুনিকৃত ভাষ্য, কপিল মুনিকৃত সাংখ্য সূত্রের ভাণ্ডরিমুনিকৃত ভাষ্য, ব্যাস মুনিকৃত বেদান্ত সূত্রের বাৎস্যায়ন মুনিকৃত ভাষ্য, অথবা বৌধায়ন মুনিকৃত ভাষ্যবৃত্তি সহিত পড়িবে ও পড়াইবে। এই সকল সূত্রকে কল্প এবং অঙ্গের মধ্যেও গণনা করিবে। যেরূপ ঋক, যজুঃ, সাম এবং অথর্ব—এই চারি বেদ ঈশ্বরকৃত, তদ্রুপ ঐতরেয় শতপথ, সাম এবং গোপথ—এই চারি ব্রাহ্মণ; শিক্ষা, কন্স, ব্যাকরণ নিঘন্টু, নিরুক্ত, ছন্দ এবং জ্যোতিষ—এই ছয়টি বেদাঙ্গ। মীমাংসাদি ছয় শাস্ত্র বেদের উপাঙ্গ। আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ববেদ এবং অর্থবেদ এই চারিটি বেদের উপবেদ। এইগুলি ঋষি মুনিকৃত গ্রন্থ, এ সকলের মধ্যেও যেগুলি বেদ বিরুদ্ধ প্রতীত হইবে সেগুলিকে পরিত্যাগ করিবে। কারণ, বেদ ঈশ্বরকৃত বলিয়া অভ্রান্ত ও স্বতঃপ্রমাণ অর্থাৎ বেদের প্রমাণ বেদ হইতেই হইয়া থাকে। ব্রাহ্মণ প্রভৃতি সমস্ত গ্রন্থ পরতঃ প্রমাণ বেদাধীন। বেদের বিশেষ ব্যাখ্যা ‘ঋগ্বেদাদি ভাষ্য ভূমিকায় দ্রষ্টব্য। এই গ্রন্থেও উহা পরে লিখিত হইবে। | এখন পরিত্যাজ্য গ্রন্থগুলির পরিগণনা সংক্ষেপে করা যাইতেছে। নিম্নে অর্থাৎ নিম্নলিখিত যে সমস্ত গ্রন্থ লিখিত হইবে সেগুলিকে জাল গ্রন্থ বলিয়া জানিবে—
ব্যাকরণের মধ্যে কাতন্ত্র’, ‘সারস্বত’, ‘চন্দ্রিকা', 'মুগ্ধবােধ’, ‘কৌমুদী’, ‘শেখর’এবং ‘মনােরমা ইত্যাদি। অভিধানের মধ্যে 'অমরকোষ প্রভৃতি। ছন্দোগ্রন্থের মধ্যে 'বৃত্তরত্নাকর' প্রভৃতি। শিক্ষার মধ্যে ‘অথ শিক্ষাং প্রবক্ষ্যামি পাণিনীয়ং মতং যথা ইত্যাদি জ্যোতিষের মধ্যে শীঘ্নবােধ’, ‘মুহূর্তচিন্তামণি” আদি। কাব্যের মধ্যে 'নায়িকা ভেদ কুবলয়ানন্দ', 'রঘুবংশ’, ‘মাঘ’, ‘কিরাতাৰ্জ্জুন প্রভৃতি। মীমাংসার মধ্যে ধর্মসিন্ধু', 'ব্ৰতাৰ্ক প্রভৃতি। বৈশেষিকের মধ্যে তর্কসংগ্রহ প্রভৃতি। ন্যায়ের মধ্যে জাগদীশী প্রভৃতি। যােগের মধ্যে হঠপ্রদীপিকা” প্রভৃতি। সাংখ্যের মধ্যে 'সাংখ্যতত্ত্ব-কৌমুদী আদি। বেদান্তের মধ্যে ‘যােগবাশিষ্ঠ’, ‘পঞ্চদশী' ইত্যাদি বৈদ্যক মধ্যে শার্গধর প্রভৃতি। স্মৃতি মধ্যে মনুস্মৃতির প্রক্ষিপ্ত শ্লোক সমূহ ও অন্য সমস্ত স্মৃতি, সৰ তলুগ্রন্থ, সব পুরাণ, সব উপপুরাণ এবং তুলসীদাস কৃত রামায়ণ, রুক্মিণীমঙ্গল' প্রভৃতি ভাষায় লিখিত যাবতীয় গ্রন্থ। এইগুলি কপােলকল্পিত ও মিথ্যা গ্রন্থ।
প্রশ্ন—এই সকল গ্রন্থে কি কোন সত্য নাই?
উত্তর -- অল্প সত্য আছে। কিন্তু তৎসঙ্গে বহু অসত্যও আছে, অতএব ‘বিষসম্পৃক্তাবত্যাজ্যাঃ। যেরূপ অত্যুত্তম অন্ন বিষ-মিশ্রিত হইলে তাহা ত্যাজ্য সেইরূপ এইসকল গ্রন্থও ত্যাজ্য।
                                                                   ওম্ শম্

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ