আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেঃ
ডার্ক এনার্জি একটি শক্তির অনুমানমূলক রূপ যা একটি নেতিবাচক এবং বিদ্বেষপূর্ণ চাপ প্রয়োগ করে। ডার্ক এনার্জি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যায় না, তবে জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বস্তুর মধ্যে মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়তার কারণে অন্যের কাছে দৃশ্যমান হয়।
ডার্ক এনার্জি মহাবিশ্বের ভর-শক্তি ঘনত্বের 72%। অন্যান্য প্রভাবশালী অবদানকারী হ'ল ডার্ক ম্যাটার এবং অল্প পরিমাণে পারমাণবিক বা বেরোনিক পদার্থের কারণে।
অন্ধকার শক্তির জন্য প্রমাণ পরোক্ষ কিন্তু তিনটি স্বাধীন উত্স থেকে আসে:
- দূরত্বের পরিমাপ এবং রেডশিফটের সাথে তাদের সম্পর্ক, যা বিশ্বব্যাপী তার জীবনের শেষার্ধে আরও বিস্তৃত হয়েছে বলে বোঝায়।
- পর্যবেক্ষণমূলক সমতল মহাবিশ্ব গঠনের জন্য কোনও ধরণের অতিরিক্ত শক্তির তাত্ত্বিক প্রয়োজন যা অন্ধকার বিষয় নয় (কোনও সনাক্তকারী বৈশ্বিক বক্ররেখার অনুপস্থিতি)।
- মহাবিশ্বে ভর ঘনত্বের বৃহত আকারের তরঙ্গ-নিদর্শনগুলির পরিমাপ।
১৯২৯ সালে একটি ব্যাপার ধরা পড়ে যে ছায়াপথ গুলো ক্রমশ পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অনেক দুরের কিছু কিছু সুপারনোভা গুলো, অনেক দিন পূর্বে যেমন ছিল, আজ আর ঠিক আগের জায়গায় নেই।অনেকটা দূরে সরে গেছে, তার মানে দাঁড়ালো যে মহাবিশ্ব ক্রমশঃ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
আরও দেখা গেলো ধিরে ধিরে এর গতি ও বাড়ছে, যেমন টা আগে হয় নি। মহাশূন্যের এই দ্রুত সম্প্রসারন কিন্তু অভিকর্ষের প্রভাবে কমে যায় নি, যেমন টা সবাই ধারনা করেছিলো, বরং তা বেড়েছে। কেউ ই এমনটা প্রত্যাশা করে নি। কেউ জানতো নে কেন এমন টি ঘটছে, কিন্তু এটা নিশ্চিত যে- কিছু একটা এর পেছনে আছে।
পরিশেষে তিন ধরনের থিওরি বা উপাথ্য আসলো এর ব্যাখ্যায়। এর ব্যাখ্যা হতে পারে "আইনস্টাইন" এর মাধ্যাকর্ষণ থিয়োরির প্রথ্যাখ্যাত একটি অংশে, যার একটি তে "Cosmological constant বা মহাকর্ষীয় ধ্রুবক" বলে কিছু একটা ছিল। হয় তো সেখানে এমন কিছু বিস্ময়কর এনার্জি- ফ্লুয়িড বা শক্তি মহাশুন্যে বিরাজমান। হয় তো আইনস্টাইন এর থিওরি তে কিছু একটা ভুল আছে এবং একটি নতুন থিওরি প্রয়োজন যা আইনস্টাইন এর থিওরির সীমাবদ্ধতা সমাধান করবে যা এই মহাকর্ষীয় ত্বরণ সৃষ্টি করছে। কোন গবেষক ই এখন পর্যন্ত এই সম্প্রসারন এর সঠিক ব্যাখ্যা জানেন না, কিন্তু তারা এই সমাধান এর একটি নাম দিয়েছেন। যা কে বলা হয় "ডার্ক এনার্জি Dark energy"
মহাশুন্যের সম্প্রসারন ব্যাখ্যা থেকে আমরা জানি যে সেখানে কতো টুকু ডার্ক এনার্জি রয়েছে। অন্য যে কোন কিছু থেকে এটা এক বিরাট বিস্ময়। মহাবিশ্বে ৭০ ভাগ এর ও বেশি ডার্ক এনার্জির অস্তিত্ব এই বিস্ময় কে আরও প্রকট করে তুলে। আর ডার্ক ম্যাটার আছে ২৫ ভাগ, বাকি সব কিছু পৃথিবীতে। এই পর্যন্ত যত কিছু পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে আমাদের যন্ত্রপাতি দিয়ে তা ৫ ভাগ এর ও কম সাধারন বস্তু- যুক্ত করেন গবেষকরা। আসলে একে মোটেও "নরমাল ম্যাটার" বা সাধারন বস্তু বলা বলা ঠিক নয়, কারন সেই কবে থেকেই এটা কিন্তু মহাবিশ্বের এক বিতর্কিত বস্তু হিসেবে ধরা হয়।
ডার্ক এনার্জি নিয়ে আমার ব্যাখ্যা এই বলে যে- ডার্ক এনার্জি কিন্তু আমাদের মহাশুন্যের একটি সম্পদ। "আলবার্ট আইনস্টাইন" ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, জিনি সর্ব প্রথম অনুধাবন করেন যে মহাশুন্য কিন্তু মোটেও শুন্য নয়। মহাশুন্যে আছে অদ্ভুত আর চমকপ্রদ সব বস্তু, যার অনেক গুলো সম্পরকে আমাদের খুব সামান্যই ধারনা আছে। স্যার আইনস্টাইন প্রথম যেটি আবিষ্কার করেন তা হলো- অনেক গুলো স্পেস অর্থাৎ মহাশুন্যের অস্তিত্ব কিন্তু বিদ্যমান। তার পরে আসে, তাঁর মাধ্যাকর্ষণ তথ্য- যে অংশে তিনি "মহাকর্ষীয় ধ্রুবক" কে অস্তিত্ব দান করেছেন, যা দ্বিতীয় ভবিষৎবাণী করে যে- মহাশুন্যের "Empty space" নিজে শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম। কেননা, এই শক্তি ও যে মহাশুন্যের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, ইহা মহাশুন্যের সম্প্রসারন এর সাতে মিস্রিত হতে পারে না। যত বেশি মহাশুন্যের অস্তিত্ব বিদ্যমান হবে, তত বেশিই এই শক্তির আবির্ভাব ঘটবে। ফলশ্রুতিতে, এই শক্তিই মহাবিশ্ব দ্রুত থেকে দ্রুততর সম্প্রসারনের কারন। দুর্ভাগ্যবশতঃ কেউ ই এই সিদ্ধান্তে আজ পর্যন্ত আসতে পারে নি যে, এই মহাকর্ষীয় ধ্রুবক এখানে কেন আসলো, মহাবিশ্বের ত্বরণ পর্যবেক্ষণে কেন কম বেশি এর পরিমাপ কেই সথিক ধরতে হয়।
স্পেস কিভাবে শক্তি সংগ্রহ করে, তার আরেকটি ব্যাখ্যা আসে বস্তু বা পদার্থের "কোয়ান্টাম থিওরি" থেকে। এই থিওরি তে, " শুন্য স্তান বা স্পেস" আসলে সাময়িক বা কাল্পনিক ভাবে পরমাণু দ্বারা পরিপূর্ণ যা একাধারে সৃষ্টি হচ্ছে আবার অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যখন পদার্থবিদ গন চেষ্টা করলেন এর পরিমান গননা করতে, উত্তর আসলো ভুল- এক দুই জনের না, অনেকেরই। হিসেবে যে সংখ্যা টি বের হয়ে আসলো তা হলো -10^120 অর্থাৎ, ১ এর পরে ১২০ টা শুন্য বসালে যা হয় আর কি। অনেক কঠিন হয়ে গেলো এই উত্তর ভুল হওয়া তে। তাই রহস্য অজানাই থেকে গেলো।
সর্ব শেষ একটি সম্ভাব্যতা দেখা দিলো যে- আইনস্টাইন এর মাধ্যাকর্ষণ তথ্য সঠিক নয়। এটা শুধু মহাবিশ্বের সম্প্রসারনের উপরই প্রভাব ফেলে না, বরং তা প্রভাবিত করে যে ভাবে ছায়াপথে নরমাল ম্যাটার আচরন করে এবং যেভাবে ক্লাস্টার বা গুচ্ছ ছায়াপথ রুপেও আচরন করে। আর এই তথ্য এমন একটি রাস্তা দেখাতে পারে যদি সমাধান হয় যে ডার্ক এনার্জি সমস্যা নতুন কোন অভিকর্ষীয় থিওরি কি নাঃ আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি কিভাবে গ্যালাক্সি গুলোএক গুছছ রুপে একত্রে আসে। কিন্তু যদি তা এমন ভাবে দেখা দেয় যে- অভিকর্ষের একটি নতুন সুত্র বা থিওরির প্রয়োজন, তবে তা কি রকম থিওরি হতে পারে? কিভাবে তা সৌরজগতের গতির সঠিক ব্যাখ্যা দিবে? যেমন তা দিতে পারে আইনস্টাইন এর থিওরি, এবং যা এখন পর্যন্ত আমাদের কে মহাবিশ্বের পৃথক ভবিষৎবাণী দিচ্ছে যা দরকার। যদিও সেখানে অনেক থিওরি আছে, কিন্তু কোন টা ই তত টা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এই রহস্য থেকেই যাচ্ছে।
ডার্ক ম্যাটার কি?
ডার্ক ম্যাটার এর অস্তিত্ব সম্পর্কে যতটা না আমারা নিশ্চিত, ঠিক ততটা ই অনিশ্চিত এর পরিচয় আর গঠন সম্পর্কে। প্রথমত, ইহা ডার্ক অর্থাৎ অন্ধকার বা কালো, মানে হলো এটা কোন তারকা বা গ্রহের আকৃতির নয় যা আমরা দেখতে পারি। গবেষণায় দেখা যায় যে। সেখানে অনেক ব্যবধান যা দিয়ে মহাবিশ্বের গঠনে ২৫% দরকার হয়। দ্বিতীয়ত, এটা নরমাল ম্যাটার এর কোন অন্ধকার মেঘ এর মতোও নয়। পরমান্য দিয়ে তৈরি এমনি এক বস্তু- Baryons ও নয়। শুধু মাত্র আমরা একে জানি এই জন্যে যে আমরা Baryonic মেঘ কে সনাক্ত করতে পারি এর মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করা তেজস্ক্রিয় বিকিরন এর শোষণ নির্ণয় করে। তৃতীয়ত- ডার্ক ম্যাটার কোন
অ্যান্টিম্যাটার ও নয়। কারন আমরা সেই বিস্ময়কর গামা রশ্মি দেখতে পাই না যখন অ্যান্টিমেটার ম্যাটার দ্বারা ধ্বংস করার সময় উৎপন্ন হয়। ফলশ্রুতিতে- আমরা ওদেরই পৃথক করতে পারি সে সব বিশাল ব্ল্যাক হোল আকারের গ্যালাক্সি গুলো অভিকর্ষীয় লেন্সে ধরা পড়ে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ম্যাটার আলোকে বেকে দিতে পারে যখন আলো তার অনেকটা কাছাকাছি হয়ে চলে, কিন্তু আমরা তখনও পর্যাপ্ত দৃশ্যমান আচরন দেখতে পাই না যে ধরে নিতে পারি অবজেক্ট এর বাকি ২৫% তৈরি হতে তা প্রয়োজন হয়।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ