গীতা রহস্য
(লোকমান্য বাল-গঙ্গাধর তিলক, অনুবাদ : শ্রী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর)
|
সম্পাদকের প্রাক্-কথন
বিশ্বমনীষার শ্রেষ্ঠ সম্পদ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ভারতীয় শাশ্বত সংস্কৃতির নির্যাস । জগতের সারস্বত সমাজে ভারতের শ্রেষ্ঠ দান এই সদ্গ্রন্থ । বহুদিন পূর্বে প্রতীচ্যভূখন্ডে ইংরেজ মনীষী কার্লাইল মার্কিণ মনীষী এমারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে গীতা উপহারের মাধ্যমে সৌহৃদ্যকে সুদৃঢ় করেছেন । বিশ্বের সমুন্নত ষট্ত্রিংশৎটি ভাষায় এই গ্রন্থের প্রায় তিনি সহস্র সংস্করণ হয়েছে । বিশ্বের ইতিহাসে যথার্থ গণসাহিত্য এই গীতা । পণ্ডিত-মূর্খ, ধনী-দরিদ্র, স্ত্রী-পুরুষ, শিক্ষক-সৈনিক, কর্মী-ব্যবসায়ী, ছাত্ৰ-শ্রমিক, ত্যাগী-ভোগী সকলের কাছেই এই গ্রন্থের আবেদন । নির্জন গুহাবাসী নিষ্কিঞ্চন তপস্বী হতে রাজপ্রাসাদবাসী ধনী, সর্বকর্মত্যাগী সাধু হতে সদা কর্মনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা পর্যন্ত সকলেই জীবনের পাথেয় এই গীতা হতে পেয়ে থাকেন । গীতা মানব-সমাজে জ্ঞান-কল্পতরু । তাই যুগে যুগে গীতার উপর রচিত হয়েছে অসংখ্য ভাষ্য । মনীষী দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাকে বলেছেন ভারতের কুটীরে বিনা তৈলের প্রদীপ । মহাত্মা গান্ধীর মতে গীতা হচ্ছে শান্তি ও শক্তিপ্রদায়িনী মাতা । অধ্যাত্ম জগতে গীতার সাধনা সুবিদিত । কিন্তু, দেশের রাষ্ট্ৰীয় মুক্তি সংগ্রামের এবং আন্তর্জাতিক মৈত্রীসাধনায়ও গীতার অনন্যসাধারণ ভূমিকা অবিস্মরণীয় । গীতা নিষ্কাম কর্মযোগ, আত্মসমর্পণ যোগ, আত্মতত্ত্ব এবং স্থিতপ্ৰজ্ঞত্বের আদর্শের দ্বারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তি-যোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল । ভারতের প্রায় সকল স্বাধীনতা সংগ্রামে অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ ছিল এই গীতা । আবার অহিংস সংগ্ৰামীরাও গীতার বাণীতেই পেয়েছেন আদর্শের প্রেরণা । সহিংস এবং অহিংস ভারতে মুক্তিসংগ্রামের উভয় পথের পথিকদের পথের পার্থক্য থাকলেও লক্ষ্য ছিল এক পূর্ণ স্বাধীনতা, মন্ত্র ছিল এক “বন্দে মাতরম্", তেমনি পাথেয়ও ছিল এক - আর তা হ’ল শ্ৰীমদ্ভগবদ্গীতা ! তাই বিপ্লবী যোগী ঋষি অরবিন্দ, চরমপন্থী নেতা লোকমান্য তিলক, আবার অহিংস সংগ্রামী মহাত্মা গান্ধী ভূদান আন্দোলনের প্রবর্তক নিরীহ বিনোবাভাবে গীতাপ্রবচনে সমুৎসুক, রচনাও করেছেন স্ব স্ব আদর্শের আলোকে গীতার বিশাল ভাষ্য । আবাল্য এঁরা গীতাধ্যায়ী । মহাসংগ্রামী নেতাজী সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস নেতা হিসেবে কারাগার হতে সহকর্মী তরুণদের নিত্য গীতাপাঠের প্রবর্তনা দিচ্ছেন । আবার আজাদ হিন্দ ফৌজের মহানায়ক রূপে রণক্ষেত্রের বোমাবর্ষণের মধ্যেও বুকপকেটে রেখেছেন ছোট্ট গীতা, আলেখ্যধৃতা মাতা কালিকা এবং তুলসীমালিকা । ক্ষুদিরাম-কানাইলাল-বিনয়-বাদল-দিনেশ-প্রফুল্ল প্রভৃতি দধীচির ঘরে, দলে এবং জেলে গীতা ছিল নিত্যপাঠ্য । অবেস্তা, বাইবেল, কোরাণ, ত্রিপিটক এই রকম প্রত্যক্ষভাবে কোন দেশের রাষ্ট্ৰীয় মুক্তিসংগ্রামে । মরণপণ সৈনিকদের প্রবুদ্ধ করেছিল কিনা জানা নেই । তাই বলি গীতা শুধু ধৰ্মগ্রন্থ নয়, ধর্মাৰ্থকামমোক্ষ চতুর্বর্গের তথা সামগ্রিক জীবনপথের সময়সারণী তথা টাইমটেব্ল্; জীবনের সকল পথের যাত্রীরই অপরিহার্য গ্রন্থ । শুধু ব্যক্তির বা রাষ্ট্রবিশেষের নয়, সমগ্ৰ বিশ্বের সংকট নিরসনেও গীতা অপরিহার্য গ্রন্থ । বিশ্বশান্তি এবং বিশ্বকল্যাণের প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্ৰসংঘ বা U.N.O এর প্রতিষ্ঠা । তারও পন্থা নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের প্রাক্তন সেক্রেটারী জেনারেল স্বর্গত দ্যাগ্ হ্যামারশিলড্ বলছেন – “ফলাকাংক্ষা করে কর্ম করা অপেক্ষা ফলাশা ত্যাগ করে কর্ম করা অনেক ভাল । এই উপদেশ সকল যুগের সকল দর্শনের চুড়ান্ত কথা । রাষ্ট্রসংঘের সকল প্রচেষ্টায় আমরা যদি গীতার এই উপদেশ অনুসরণ করে চলতে পারি, তবেই আমরা সুখী হব” । - "The Bhagavad Gita echoes an experience of all ages and all Philosophies when it says - work with anxiety about results is far inferior to work without such anxiety, in calm self-surrender. These words expressed deep faith and we will be happy if we can make that faith ours in all our efforts." জার্মেণিতে আণবিক বিজ্ঞানী ওপেনহাইমার গীতার শ্লোক পাঠ করে লব্ধ আণবিক গবেষণার ফল ঘোষণা করেন । নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক অলডাস্ হ্যাক্সলী গীতার অনুবাদ করেন, স্বদেশেও গণিতজ্ঞ নারলিকার কন্ঠস্থ করেন গীতা । প্রতিটি মানুষই জীবনসংগ্রামে রণক্লান্ত সৈনিক, অর্জুনের ন্যায় বিষাদগ্ৰস্ত । বিষাদ হতে মুক্তি সবারই কাম্য । অর্জুনকে উপলক্ষ্য ক’রে শাশ্বতকালের নিখিল মানবের বিষাদ হতে মুক্তি তথা মোক্ষের যোগমার্গ ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ গীতায় প্রদর্শন করেছেন ।
এহেন গ্রন্থের বিবিধ ভাষায় বহুবিধ ভাষ্যের মধ্যে লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলকের “গীতারহস্য” বা কর্মযোগশাস্ত্র স্বকীয় মহিমায় প্রোজ্জ্বল । মূল গ্রন্থ মারাঠী ভাষায় রচিত হলেও রবীন্দ্রনাথের দাদা মনীষী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর তার বঙ্গানুবাদ করেন বহুদিন পূর্বে । গ্রন্থটি বৰ্তমানে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছিল বলে বহতা নদীর ন্যায় বহতা সাধনার ধারাধারক, শ্ৰীসুদর্শন-সম্পাদক, পরম পূজ্যপাদ মনীষী, শ্ৰীমদ্ ব্ৰহ্মচারী শিশির কুমার গ্রন্থটি পুনঃ প্রকাশের জন্য কল্যাণীর সন্ত আশ্রমে দুচারবার অধমকে বলেন । আমার প্রতি অতি প্রীতিমান্, সংস্কৃতিমুর্তি, নিষ্কাম জননেতা, মনীষী স্বর্গত সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরও আমায় এ নিয়ে তাগাদা দিয়েছিলেন । বিশিষ্ট বিজ্ঞানাচার্য ডঃ প্রিয়দারঞ্জন রায়েরও অনুরাগ স্মরণ করি । সাত বৎসর বয়স থেকে নিত্য গীতাপাঠে প্রবত্ত হই কী এক দুর্নিবার আকর্ষণে । বাল্যকাল হতেই গীতাপাঠে অভ্যস্ত থাকায় যৌবনের চৌমাথায় এসে গীতাসংক্রান্ত নানাগ্রন্থ এবং ভাষ্যপাঠে কৌতুহলী হই । সমসাময়িক কালে পূজনীয় ডঃ মহানামব্রত ব্ৰহ্মচারীজী, স্বামী জগদীশ্বরানন্দ, মহাত্মা রামদয়াল মজুমদার, জগদীশচন্দ্র ঘোষ এবং আরো বহু মনীষীর গীতা-আলোচনা পাঠে উদ্দীপ্ত হই । আলোকিত হই মদীর গুরুদেব শ্ৰীমৎ সীতারামদাস ওঙ্কারনাথদেবের দিব্য সাধনালব্ধ গীতার “প্রণব পীযুয” ভাষ্যে । বৎসরকাল পূর্বে লোকমান্য তিলকের পৌত্ৰ কেশরীর বর্তমান সম্পাদক, প্রাক্তন সংসদ সদস্য শ্ৰীযুক্ত জে. এস. তিলক লণ্ডন হতে প্রকাশিত তিলক মহারাজের সুবিস্তৃত প্রামাণ্য জীবনী স্বতঃ প্রবৃত্ত হয়ে আমাকে উপহার দিয়ে কৃতাৰ্থ করেন । তখন হতেই বঙ্গভাষী জনগণের কাছে ঐ মহাত্মার জীবনী এবং তাঁর শ্রেষ্ঠ কৃতি গীতারহস্য তুলে ধরার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করতে থাকি । অসংখ্য কর্মের তাড়নায় এবং গীতারহস্যের মূল গ্রন্থের অভাবে সংকল্প সত্য হয়ে উঠ্ছেনা দেখে বিষন্ন হয়ে পড়ি । এমন সময়ে আমার একান্ত প্রীতিভাজন সারস্বতকল্প গ্রন্থপ্রকাশক পুরুষোত্তম শ্ৰীশ্ৰীঠাকুর অনুকুলচন্দ্রের আশ্রিত ভক্ত শ্ৰীনিতাই চন্দ্ৰ ভক্ত একটি দুর্লভ গ্রন্থ তাঁকে প্রকাশের জন্য দিতে অনুরোধ করেন । ফলে লোকমান্যের আকর্ষণীয় জীবনী এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পরিচয় সহ গীতাভাষ্য সম্পাদনায় প্রবৃত্ত হই ।
____________________________________
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ গীতারহস্যের উপক্রমণিকার কিয়দংশ অনুবাদ করে মাসিক পত্রে প্রকাশ করেন । সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে গ্রন্থখানি অনুবাদ করতে অনুরোধ করেন এবং লোকমান্য তিলককে অনুবাদ প্রকাশের অনুমতি প্রার্থনা করে পত্র দেন । ভারতবর্ষে এই গ্রন্থের বহুল প্রচারের জন্য তিলক স্বয়ং প্রভূত অর্থ ব্যয়ে হিন্দী, গুজরাটী, তামিল, তেলেগু ও কর্ণাটি সংস্করণ প্রকাশ করেন । তাঁর ইচ্ছা ছিল যে উপযুক্ত ব্যক্তি দ্বারা বঙ্গভাষাতেও এর অনুবাদ প্রকাশ করাবেন । তাই তিনি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে লিখলেন –
বোম্বাই
২০শে অক্টবর ১৯১৭
মহাশয়,
ইহার বহুপূর্বে আপনার পত্রের উত্তর দিতে পারি নাই, তজ্জন্য আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি । উহার কারণ এই যে, আমি গত দেড় মাস এখানে ওখানে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলাম এবং আপনার পত্রের উত্তর দিতে সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হইয়াছিলাম । এ ওজর কিছুই নহে তাহা জানি, কিন্তু ইহাই যথাৰ্থ কারণ ।
বাঙ্গালা ভাষায় আমার গীতা সম্বন্ধীয় গ্রন্থের অনুবাদ করাইবার নিমিত্ত আমি ব্যগ্র । কিন্তু বাঙ্গালা ও মহারাষ্ট্ৰীয় উভয়বিধ ভাষাতে ব্যুৎপত্তি আছে এতাবৎকাল এরূপ কোনও পণ্ডিতের সন্ধান পাই নাই । গত এপ্রিল মাসে কলিকাতায় গিয়াছিলাম এবং তখন শুনিয়াছিলাম যে আপনার এক ভ্রাতা গীতারহস্যের উপক্ৰমণিকার একটি বঙ্গানুবাদ মাসিক পত্রে প্রকাশ করিয়াছেন । কিন্তু আমি তখন শুনিয়াছিলাম যে তিনি সমগ্ৰ গ্ৰন্থখানি অনুবাদ করিবেন কিনা তাহার স্থিরতা নাই ৷ সুতরাং আমি আর ঐ বিষয়ে কোনো অনুসন্ধান করি নাই; আমি মনে করিতেছিলাম আর কাহাকেও এই কার্যের ভার প্রদান করিব । এখন দেখিতেছি, আপনি এ বিষয়ে মনোযোগ দিতেছেন । এখন আমার আর কোনও ভাবনা নাই, এবং অনুবাদ যে ঠিক মূলানুযায়ী হইবে তৎসম্বন্ধে আমি নিশ্চিত ।
আমি যে অনুবাদককে তিন হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিব এ সংবাদ সত্য নহে । তবে প্রয়োজন হইলে অনুবাদের জন্য দুই হাজার টাকা ব্যয় করিতে এবং অনুবাদের স্বত্ব ক্রয় করিয়া নিজ ব্যয়ে প্রকাশ করিতে আমি প্রস্তুত আছি । হিন্দী ও গুজরাটী সংস্করণ যাহা প্রকাশিত হইয়াছে তাহার সম্বন্ধেও আমি ইহাই করিয়াছি, এবং অধুনা যন্ত্ৰস্থ তামিল, তেলেগু, ও কর্ণাটী সংস্করণের জন্যও ঐরূপ ব্যবস্থা করিতেছি ।
আমার অভিপ্রায় এই যে অনুবাদটি মূল মহারাষ্ট্ৰীয়ের ন্যায় বিষয়ের প্রকৃতির সহিত সামঞ্জস্য রাখিয়া যতদূর সম্ভব সরল ভাষায় লিখিত হয় । আমি যতদূর সম্ভব সরল ভাষায় বিষয়টির আলোচনা করিতে চেষ্টা করিয়াছি, যাহাতে আমাদের মেয়েরাও অনায়াসে সরল কথা বুঝিতে পারেন । অনুবাদটিও এইরূপ হওয়া অবশ্যক ।
দ্বিতীয়তঃ, আমার ইচ্ছা অনুবাদের ছাপাই বাঁধাই ঠিক মূলের অনুরূপ হয়, এবং উহার মূল্য তিন টাকা মাত্র ধার্য হয় ।
এই সকল শর্তে কার্য করিলে আমি অনুবাদ হইতে কিছই লাভ করিতে চাই না । বরঞ্চ অনুবাদককে সমস্ত ছাড়িয়া দিতে প্রস্তুত । যদি তিনি অনুবাদ নিজ ব্যয়ে প্রকাশ না করেন, আমি অনুবাদককে, উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান করিয়া নিজে অনুবাদ প্রকাশের সমস্ত ভার বহন করিতে প্রস্তুত আছি । এ পর্যন্ত যতগুলি অনুবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে এই শেষোক্ত ব্যবস্থাই করা হইয়াছে ।
এ বিষয়ে সমস্ত কথাবার্তা স্থির করিবার পূর্বে উপরি লিখিত প্রস্তাবগুলির সম্বন্ধে আপনার অভিমত জানিতে ইচ্ছা করি । আগামী সপ্তাহে আমি পুণায় যাইব । পত্রাদি পুণার ঠিকানায় (কেশরী অফিস, পুণা সিটি) পাঠাইবেন ।
পত্রোত্তর প্রদানের বিলম্বের জন্য পুনরায় ক্ষমা প্ৰার্থনা করি ।
ভবদীয়
বালগঙ্গাধর তিলক
বালগঙ্গাধর তিলকের আর একটি পত্র
পুণা
২০শে ডিসেম্বর ১৯১৭
মহাশয়,
আগামী কংগ্রেসের জন্য আগামী ২৬শে হইতে ৩০শে পর্যন্ত কলিকাতায় থাকিব । তখন আপনার কোনও প্রতিনিধির সহিত গীতারহস্যের বঙ্গানুবাদ সম্বন্ধে কথাবার্তা হইতে পারে । দাক্ষিণাত্যের প্রতিনিধিবর্গের জন্য নির্দিষ্ট বাসস্থানে আমি অবস্থান করিব । কংগ্রেস অনুসন্ধান কার্যালয়ে কিংবা অমৃতবাজার পত্রিকা কার্যালয়ে অনুসন্ধান করিলে আমার ঠিকানা অবগত হুইতে পারবেন । আপনার কোনও প্রতিনিধি বা বন্ধুকে আমার সহিত কলিকাতায় সাক্ষাৎ করিতে বলিয়া বাধিত করিবেন ।
ভবদীয়
বালগঙ্গাধর তিলক
(মন্মথনাথ ঘোষ লিখিত ‘জ্যোতিরিন্দ্রনাথ’ নামক গ্রন্থ থেকে পত্রগুলি সংকলিত ।)
এই গ্রন্থ তিলক ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উভয়েরই প্রতিভার উজ্জ্বল নিদর্শন । শক্তিশালী লেখকের দ্বারা ভাষান্তরেও যে মূলের বক্তব্য সরল ও আকর্ষণীয় করা যায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তা দেখিয়ে গেলেন । বিশ্বের অনুবাদ সাহিত্যে এ এক দুর্লভ সংযোজন । বঙ্গ এবং মহারাষ্ট্রের চৈতন্যশক্তির সংযোজক এই সদ্গ্রন্থ ।
____________________________________
আদর্শ শিক্ষাবিদ্ শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ দত্ত মূল গ্রন্থটি দিয়ে এবং ব্রহ্মনিষ্ঠ গৃহী শ্ৰীযুক্ত শচীন্দ্রনাথ ঘোষ নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে আমায় সচেতন রেখেছেন ৷ "জিজ্ঞাসা” হতে প্রকাশিত শ্রদ্ধেয় সারস্বতাগ্রজ ডঃ সুশীল রায় রচিত গবেষণাগ্রন্থ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ওপর আলোকপাতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে । রবীন্দ্রভারতী প্রদর্শশালার অধ্যক্ষ, শিল্পী, সুহৃদ্ শ্ৰীযুক্ত সমর ভৌমিক-এর আনুকুল্যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পরিণত জীবনের আলেখ্যটি পেয়েছি । সংস্কৃত ও ভারতীয় সংস্কৃতির বর্তমান সংকটলগ্নে নিরন্তর সংগ্রাম, পরিজনবর্গের দীর্ঘ অসুস্থতা, এবং নানা প্রতিকূলতায় বিব্রত থাকার মধ্যেও শ্ৰীভগবানের অপার করুণায় এই দুর্লভ গ্রন্থ প্রকাশিত হল । পূর্বতন ভাষ্যের সঙ্গে কোথাও কোথাও বৰ্তমান সম্পাদকের ব্যাখ্যা সংযোজিত হয়েছে । তিলক ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনীও সংক্ষেপে আলোচনা করেছি । পূজনীয় পিতৃদেব, ঋষিকল্প মনীষী, কবিশেখর শ্ৰীযুক্ত বিশ্বেশ্বর বিদ্যাভূষণ কাব্যতীৰ্থ এবং করুণাময়ী মাতৃদেবী শ্ৰীযুক্ত মহামায়া দেবীর নিরন্তর উৎসাহ স্মরণীয় । সহধর্মিণী শ্ৰীমতী উষাদেবী চক্ৰবর্তী এম-এ, বি, টি রোগশয্যা হতে এবং পুত্র শ্ৰীমান্য নির্মাল্য নারায়ণ এই সম্পাদনায় নানাভাবে সাহায্য করেছে ।
সর্বোপরি গুরুদেব শ্ৰীভগবন্মূর্তি অনন্ত শ্ৰীবিভূষিত সীতারাম দাস ওঙ্কারনাথ দেবের অকৃপণ আশিষ্ নেপথ্যে নিয়তই অনুভব করে ধন্য । এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের সম্পাদনা অত্যন্ত দুরুহ কার্য । তদুপরি বর্তমানে অভূতপূর্ব বন্যা এবং কাগজের দুষ্প্রাপ্যতায় পদে পদে প্রকাশকর্ম ব্যাহত হয়েছে । ভুলত্রুটির জন্য সহৃদয় পাঠকের নিকটে পূর্বেই মার্জনা প্ৰার্থনা করি । সংস্কৃত বিশুদ্ধ বানান রাখার চেষ্টা করেছি । সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভগবান পার্থসারথির উদ্দেশ্যেই বলি - ওঁ শ্ৰীকৃষ্ণার্পণমস্তু । ইতি -
বিনীত –
শ্ৰীধ্যানেশ নারায়ণ চক্রবর্তী
অধ্যাপক - রবীন্দ্ৰ ভারতী বিশ্বববিদ্যালয়, কলিকাতা-৫০
শুভ মহালয়া — ১৩৮৫ বঙ্গাব্দ (1978)
ঋষিধাম, পোঃ-দত্তপুকুর
জিলা-২৪ পরগণা
(ii) অনুবাদকের ভূমিকা
লোকমান্য মহাত্মা তিলক তাঁহার প্রণীত “গীতারহস্য” বঙ্গভাষায় অনুবাদ করিবার ভার আমার প্রতি অৰ্পণ করিয়া আমাকে গৌরবান্বিত করিয়াছেন । তাঁহার অনুরোধক্রমে, বঙ্গবাসীর কল্যাণ-কামনায়, বঙ্গসাহিত্যের উন্নতিকল্পে, - অতীব দুরূহ ও শ্রমসাধ্য হইলেও - আমি এই গুরুভার স্বেচ্ছাপূর্বক গ্ৰহণ করিয়াছিলাম । আমি অনুবাদ শেষ করিয়া উহা তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ক্ৰমশঃ প্ৰকাশ করিতেছিলাম । ভগবানের কৃপায়, এতদিনের পর উহা গ্ৰন্থাকারে প্ৰকাশ করিয়া, আমার এই কঠিন ব্ৰত উদযাপন করিতে সমর্থ হইয়াছি । কেবল একটা আক্ষেপ রহিয়া গেল - এই অনুবাদ গ্ৰন্থখানি মহাত্মা তিলকের করকমলে স্বহস্তে সমর্পণ করিতে পারিলাম না । তাহার পূর্বেই তিনি ভারতবাসীকে শোকসাগরে ভাসাইয়া দিব্য ধামে চলিয়া গেলেন ।
ভগবদগীতার মাহাত্ম্য কীর্তন করা বাহুল্য । এমন উদার ধর্মগ্রন্থ পৃথিবীতে আর একখানিও নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না। ইহা এত উদার যে, সকল ধর্মসম্প্রদায়ই এই অমূল্য গ্ৰন্থখানিকে আপনার করিয়া লইয়াছে । কতটা উদার, নিম্নলিখিত শ্লোকেই তাহার পরিচয় পাওয়া যায় :-
“যে যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্ৰদ্ধয়ার্চ্চিতুমিচ্ছতি ৷অর্থাৎ - “যে কোন ভক্ত শ্ৰদ্ধাসহকারে যে কোন দেবতার অর্চনা করিতে ইচ্ছা করে, আমি তাহাকে সেই অচলা শ্ৰদ্ধা বিধান করি ।”
তস্য তস্যাচলাং শ্ৰদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম্ ৷৷”
এমন গ্রন্থের ভাষ্যকার হওয়াও গৌরবের বিষয় । এইরূপ গ্রন্থের যে বহুতর ভাষ্য হইবে তাহাতে আশ্চৰ্য নাই । কিন্তু এ কথা বলিলে বোধ হয় অত্যুক্তি হইবে না যে, কালিদাসের ভাষ্যকার যেরূপ মল্লিনাথ, মহাত্মা তিলকও সেইরূপ শ্ৰীমদ্ভগবদগীতার অপ্ৰতিদ্বন্দ্বী ভাষ্যকার । ভাষ্যকারদিগের মধ্যে কেহ বা জ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়াছেন, কেহ বা ভক্তিতে প্ৰাধান্য দিয়াছেন, কেহ বা সন্ন্যাসকে প্রাধান্য দিয়াছেন । ভগবদগীতা এই সমস্তের সমন্বয় বলিলে অত্যুক্তি হয় না । কিন্তু এই সমন্বয় সাধনের মুখ্য তাৎপৰ্যটা কি, তাহারই তিলক তাঁহার গীতারহস্যে আভাস দিয়াছেন । তাঁহার মতে, কর্মই গীতার মধ্য-বিন্দু - মুখ্য উদ্দেশ্য । ভগবান অর্জুনকে সর্বতোভাবে বুঝাইয়াছেন যে, জ্ঞান ও ভক্তি, কর্মের পরিপন্থী নহে, পরন্তু কর্মের পরিপোষক ও সহায়; জ্ঞান ও ভক্তি কর্মে গিয়া পরিসমাপ্ত হয় ও পরিণতি লাভ করে । এইভাবেই গীতাকার জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ ও কর্মযোগের সমন্বয় করিয়াছেন । কর্মই যে গীতার প্রধান কথা তাহাতে সন্দেহ নাই, - কেননা, অর্জুনকে যুদ্ধকাৰ্যে প্ৰবৃত্ত করাই শ্ৰীকৃষ্ণের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল । শুধু “কর্ম করিবে” বলিলে ঠিক সমন্বয় হইত না; ভগবান বলিয়াছেন, যাহা স্বধর্ম-অনুমোদিত সেই কাজই অবশ্য কর্তব্য এবং ঈশ্বরের হস্তে কর্মের ফলাফল সমৰ্পণ করিয়া, নিষ্কামভাবে যে কর্ম করা হয়, সেই কর্মই শ্ৰেয় । এইরূপ কথা বলাতেই জ্ঞান, ভক্তি ও কর্মের সমন্বয় সম্যক রূপে সাধিত হইয়াছে । জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগের মাহাত্ম্য পৃথকভাবে কীর্তিত হইলেও, জ্ঞান ভক্তিসমন্বিত কর্মযোগের প্রাধান্যই যে “গূঢ়ভাবে গীতাতে সূচিত হইয়াছে, ইহাই মহাত্মা তিলক গীতার সমস্ত উক্তি হইতে দেখাইয়াছেন এবং এই মতের পোষকতায় সমস্ত শাস্ত্ৰসিন্ধু মন্থন করিয়াছেন, এমন কি এই উদ্দেশ্যে বিদেশী শাস্ত্রকেও বাদ দেন নাই । হিন্দুশাস্ত্রের এত কথা আনুসঙ্গিকক্রমে তাঁহার গ্রন্থের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছে যে, একজন যদি মনোযোগসহকারে এই গ্ৰন্থ পাঠ করে, তাহার বেশ একটু শাস্ত্ৰজ্ঞান জন্মে এবং সে হিন্দুধর্মের প্রকৃত মর্মগ্রহণ করিতে পারে । এই গ্রন্থ রচনায় মহাত্মা তিলকের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, অধ্যবসায় ও কর্মশক্তি দেখিয়া বিস্ময়াস্তম্ভিত না হইয়া থাকা যায় না । আরও আশ্চর্যের বিষয় এই, তিনি কারাগারে থাকিয়া যখন এই গ্ৰন্থ লিখিয়াছিলেন তখন তাঁহার হাতের কাছে স্মৃতিসাহায্যকারী কোন গ্ৰন্থই ছিল না - তিনি ইহার সমস্ত উপকরণই স্বকীয় পূর্বসঞ্চিত স্মৃতিভাণ্ডার হইতে গ্ৰহণ করিয়া রচনাকাৰ্য সমাধা করিয়াছিলেন । ধন্য তাঁহার স্মৃতিশক্তি ! ধন্য তাঁহার প্রতিভা !
এই অনুবাদগ্ৰন্থ মুদ্রিত হইতে বিলম্ব হওয়ায়, আমরা জানি, অনেকের ধৈর্য্যচ্যুতি হইয়াছিল । নানা অনিবাৰ্য কারণে বিলম্ব হুইয়া গিয়াছে, তজ্জন্য তাহাদের নিকট বিনীতভাবে ক্ষমা ভিক্ষা করিতেছি ।
আর একটা কথা এখানে বলা আবশ্যক । আমার স্নেহভাজন, ভ্রাতুষ্পপুত্র তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক শ্ৰীমান ক্ষিতীন্দ্ৰনাথের সাহায্য না পাইলে - তিনি “গীতারহস্যের” পরিশিষ্টাংশ টীকাসমেত মূল ভগবদগীতার অনুবাদ না করিয়া দিলে এবং যত্নসহকারে সমস্ত মুদ্রাঙ্কনকাৰ্যের তত্ত্বাবধান না করিলে, এই অনুবাদ-গ্ৰন্থ প্ৰকাশ করা অসম্ভব হইত । এইজন্য শ্ৰীমানকে অন্তরের সহিত আশীর্বাদ করিতেছি । গ্রন্থের প্রুফ সংশোধনে আদিব্ৰাহ্মসমাজের পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত সুরেশচন্দ্র সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ বিশেষ সাহায্য করিয়াছেন । এই অবসরে তাঁহার নিকট কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ করিতেছি ।
পরিশেষে বক্তব্য, “গীতারহস্যের” এই বঙ্গানুবাদ পাঠ করিয়া, এই রাষ্ট্রনৈতিক চাঞ্চল্যের দিনে, যদি কাহারও স্থিরপ্রজ্ঞা লাভ হয়, যদি কাহারও অন্তরে অচলা ধর্মবুদ্ধি নিষ্কাম কর্তব্যবুদ্ধি জাগৃত হয় তাহা হইলে আমাদের শ্রম সার্থক হইবে ।
শ্ৰীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
৭ই পৌষ, ১৩৩০ (1923)
রাঁচি, শান্তিধাম
৭ই পৌষ, ১৩৩০ (1923)
রাঁচি, শান্তিধাম
সাধুদের উচ্ছিষ্ট উক্তি আমার বাণী ।
জানি উহার ভেদ সত্য কি, আমি অজ্ঞানী !
- [সাধু তুকারামের এক অভঙ্গের ভাব]
I am only repeating the stale words uttered by Saints !
How can an insignificant man like me know this ? – [Tukarama]
শ্ৰীমদ্ভগবদ্গীতার উপর অনেক সংস্কৃত ভাষ্য, টীকা এবং দেশী ভাষায় সর্বমান্য ব্যাখ্যা আছে । এইরূপ অবস্থায় এই গ্ৰন্থ কেন প্ৰকাশ করিলাম ? যদিও ইহার কারণ গ্রন্থের আরম্ভেই বলা হইয়াছে, তথাপি এমন কতকগুলি বিষয় রহিয়া গিয়াছে, যেগুলির, গ্ৰন্থ প্ৰতিপাদ্য বিষয়ের বিচারে, উল্লেখ হইতে পারে নাই । ঐ বিষয়গুলি প্ৰকট করিবার জন্য প্ৰস্তাবনা ব্যতীত দ্বিতীয় স্থান নাই । ইহার মধ্যে সর্বপ্রথম বিষয় স্বয়ং গ্রন্থকারসম্বন্ধীয় ।
Although in the beginning of this book, I have explained my reasons for publishing it, in spite of the fact that there are in existence many Sanskrit 'commentaries, or criticisms, or Prakrit translations, or exhaustive and universally accepted expositions of the Srimad Bhagavadgita, yet, there is no better place than an Introduction for explaining all such things as cannot be included in the discussion of the subject-matter of the book itself. The first of these things is about the author himself.
প্রায় তেতাল্লিস বৎসর হইল, আমার ভগবদ্গীতার সহিত প্রথম পরিচয় হইয়াছিল । সন ১৮৭২ খৃষ্টাব্দে আমার পূজনীয় পিতৃদেব অন্তিম রোগে আক্রান্ত হইয়া শয্যাগত ছিলেন । সেই সময়ে তাঁহাকে ভগবদ্গীতার “ভাষাবিবৃতি” নামক মহারাষ্ট্রীয় টীকা শুনাইবার কার্য আমি পাইয়াছিলাম । তখন, অর্থাৎ আমার ষোল বংসের বয়সে, গীতার ভাবাৰ্থ সম্পূর্ণ বুঝতে পারি নাই । আরও, অল্প বয়সে মনে যে সংস্কার হয়, তাহা দৃঢ় হইয়া যায়, এই কারণে সেই সময়ে ভগবদ্গীতা সম্বন্ধে যে অনুরাগ উৎপন্ন হইয়াছিল, তাহা স্থায়ী হইয়াছিল । যখন সংস্কৃত ও ইংরাজী অধিক অভ্যস্ত হইল, তখন আমি গীতার সংস্কৃত ভাষ্য, অন্যান্য টীকা এবং মারাঠী ও ইংরাজীতে লিখিত অনেক পণ্ডিতের আলোচনা সময়ে সময়ে পড়ি ।
It is now nearly forty-three years since I made my first acquaintance with the Bhagavadgita. In the year 1872, during the last illness of my father, the task of reading out to him a Prakrit commentary on the Bhagavadgita called Bhasa-vivrtti fell to my lot. At that date, that is, when I was only 16 years old, it was not possible for me to fully understand the import of the Giti. Still, as the impressions made on the mind in young age are lasting, the liking for the Bhagavadgita which then came into existence did not die out; and when I had later on made further studies in Sanskrit and English, I had occasion to read from time to time the Sanskrit commentaries and other criticisms, as also the expositions by many learned scholars in English and in Marathi on the Gita.
কিন্তু এখন, মনে এক সংশয় উৎপন্ন হইল, এবং তাই দিন দিন বাড়িতেই লাগিল । সেই সংশয় এই যে, যে অর্জুন নিজের স্বজনগণের সঙ্গে যুদ্ধ করা অত্যন্ত গুরুতর কুকর্ম বুঝিয়া খিন্ন হইয়া গিয়াছিলেন, সেই অর্জুনকে যুদ্ধে প্ৰবৃত্ত করিবার জন্য যে গীতা বলা হইয়াছিল, সেই গীতাতে ব্ৰহ্মজ্ঞানের দ্বারা বা ভক্তি দ্বারা মোক্ষপ্রাপ্তির বিধির — শুধু মোক্ষীমার্গের - বিচার কেন করা হইল ? গীতার কোনও টীকাতে এই বিষয়ের যোগ্য উত্তর সন্ধান করিয়া পাওয়া গেল না, এইজন্য এই সংশয় আরও দৃঢ় হইতে চলিল । কে জানে যে আমারই মত অপর লোকদেরও এই সংশয়ই হয় নাই । কিন্তু টীকাগুলির উপরেই নির্ভর করিলে, টীকাকারদিগের প্রদত্ত উত্তর সমাধানকারক মনে না করিলেও উহাকে ছাড়িয়া দ্বিতীয় উত্তর মনেই আসে না ।
I was then faced by the doubt as to why the Gita, which was expounded in order to induce to fight that Arjuna, who was dejected by the idea that it was a sin to war with one's own relatives, should contain an Exposition of the, manner in which Release could be obtained by Knowledge (Jnana) or by Devotion (Bhakti), that is to say, only of the ‘moksa-marga’; and that doubt gradually gained ground, because, I could not find a satisfactory answer to that question in any commentary on the Gita. It is quite possible that others too might have felt the same doubt. One cannot say no to that. When a person is engulfed in commentaries, he cannot find a different solution, though he may feel that the solution given in the commentary is not satisfactory.
এই জন্যই আমি গীতার সমস্ত টীকা ও ভাষ্য সরাইয়া দূরে রাখিয়া দিয়াছি; এবং কেবল গীতারই স্বতন্ত্র বিচার পূর্বক অনেকবার পাঠ করিয়াছি । এইরূপ করিলে পর টীকাকারদিগের ব্যাখ্যা হহঁতে মুক্ত হইলাম এবং এই জ্ঞান হইল যে গীতা নিবৃত্তিপ্রধান নহে; উহা কর্মপ্রধানই । অধিক আর বলিব কি, গীতাতে এক ‘যোগ’ শব্দই ‘কর্মযোগ’ অর্থে প্ৰযুক্ত হইয়াছে । মহাভারত, বেদান্তসূত্র, উপনিষৎ এবং বেদান্তশাস্ত্ৰবিষয়ক অন্যান্য সংস্কৃত ও ইংরাজী গ্রন্থ অধ্যয়ন করিয়াও এই মতই দৃঢ় হইতে চলিয়া ছিল; এবং সাধারণ্যে এই বিষয় প্ৰকাশ করিলে অধিক চৰ্চা হইবে এবং সত্য তত্ত্ব নির্ণয়ে আরও সুবিধা হইবে, এই অভিপ্ৰায়ে চারপাঁচ স্থানে এই বিষয়েরই উপর ব্যাখ্যান দিয়াছি । তন্মধ্যে প্ৰথম ব্যাখ্যান নাগপুরে জানুয়ারি সন ১৯০২তে হয় এবং দ্বিতীয় সন ১৯০৪ খৃষ্টাব্দে আগষ্ট মাসে, করবীর ও সঙ্কেশ্বর মঠের জগদগুরু শ্ৰীশঙ্করাচার্যের আজ্ঞাতে, তাঁহারই উপস্থিতিতে, সঙ্কেশ্বর মঠে হইয়াছিল । সে সময়ে নাগপুরের ব্যাখ্যানের বিবরণও সংবাদপত্রসমূহে প্রকাশিত হইয়াছিল ।
I therefore, put aside all criticisms and commentaries, and independently and thoughtfully read the Gita over several times. I then got out of the clutches of the commentators, and was convinced that the original Gita did not preach the Philosophy of Renunciation (nivrtti), but of Energism (Karma-Yoga); and that possibly, the single word ‘yoga’ used in the Gita had been used to mean Karma-Yoga. That conviction was strengthened by the study of the Mahabharata, the Vedanta-Sutras, the Upanisads and other Sanskrit and English treatises on Vedanta; and believing that by publishing that opinion, there would be a fuller discussion on the subject, and that it would be easier to arrive at the truth, I delivered public lectures on the subject on four or five occasions at different times. One of these was delivered at Nagpur in January 1902, and the other one at the Sankesvara Matha in August 1904, in the presence of Jagadguru Sri Samkaracarya of the Karavira and Sankesvara Matha, and at his request. The summary of the lecture delivered at Nagpur was published in the newspapers at the time.
ইহা ব্যতীত, এই বিবেচনাতেই, যখন যখন সময় পাইতাম, তখন তখন কোন কোন বিদ্বান বন্ধুর সঙ্গে সময়ে সময়ে বাদ-বিবাদও করিয়াছি । এই বন্ধুগণের মধ্যে স্বৰ্গীয় শ্ৰীপতি বুবা ভিঙ্গারকর ছিলেন । ইঁহার সহবাসে ভাগবত সম্প্রদায়ের কোন কোন প্ৰাকৃত গ্ৰন্থ দৃষ্টিগোচর হইয়াছিল । এবং গীতারহস্যে বর্ণিত কোন কোন বিষয় তো তাঁহার ও আমার বাদ-বিবাদেই পূর্বে নিশ্চিত হইয়া গিয়াছিল । অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, তিনি এই গ্ৰন্থ দেখিতে পাইলেন না । থাক্; এই প্রকারে এই মত স্থির হইয়াছে যে গীতার প্রতিপাদ্য বিষয় প্রবৃত্তিপ্রধান, এবং ইহা লিখিয়া গ্ৰন্থারকারে প্ৰকাশ করিবার বিচার করিতেও অনেক বৎসর কাটিয়া গিয়াছে । বর্তমান সময়ে যে সমস্ত ভাষ্য, টীকা ও অনুবাদ পাওয়া যায়, তাহাতে যে গীতাতাৎপৰ্য স্বীকৃত হয় নাই, কেবল তাহাই যদি পুস্তকাকারে প্রকাশিত করি, এবং প্রাচীন টীকাকারদিগের স্থিরীকৃত তাৎপৰ্য কেন আমার গ্রাহ্য নহে, তাহার কারণ না বলি, তাহা হইলে খুবই সম্ভব ছিল যে লোকেরা যাহা একটা কিছু বুঝিতে থাকিবে - উহাদের ভ্ৰম হইবে । এবং সমস্ত টীকাকারদিগের মত সংগ্ৰহ করিয়া তাঁহাদের কারণসহ অপূর্ণতা দেখাইয়া দেওয়া, এবং অন্য ধর্ম ও তত্ত্বজ্ঞানের সঙ্গে গীতাধর্মের তুলনা করা এরূপ কোন সাধারণ কাৰ্য ছিল না যে, শীঘ্র শীঘ্ৰ চটপট হইতে পারে । অতএব যদিও আমার বন্ধু শ্ৰীযুত দাজী সাহেব খরে এবং দাদাসাহেব খাপর্ডে কিছু পূর্বেই ইহা প্ৰকাশ করিয়া দিয়াছিলেন যে, আমি গীতার উপর এক নূতন গ্ৰন্থ শীঘ্রই প্ৰকাশ করিব তথাপি গ্ৰন্থ লিখিবার কার্য এই মনে করিয়া বিলম্ব করিয়াছিলাম যে, আমার নিকট যে সামগ্ৰী আছে, তাহা এখনও অসম্পূৰ্ণ ।
With the same object, I also discussed the matter from time to time privately, whenever, I had leisure, with some of my learned friends. One of these was the late Mr. Shripati Buva Bhingarkar. In his company, I had occasion to see some Prakrit treatises pertaining to the Bhagavata cult, and some of the ideas explained in the Gita-Rahasya were first fixed in the discussions between myself and the Buva. It is a matter of deep regret that he is not alive to see this work. Though my opinion that the creed preached in the Gits was one of Action, had, in this way, become quite definite, and though I had decided to reduce it,to writing, many years went by. But I thought that a considerable amount of misunderstanding would arise if I merely published in a book form, this moral of the Gita, which had not been accepted in the commentaries, criticisms, or translations now commonly available, without assigning any reasons as to why I was unable to accept the conclusions arrived at by the former commentators. At the same time, as the work of dealing with the opinions of all the commentators, and exposing their incompleteness with reasons, and of comparing the religion expounded in the Gita with other religions or philosophies was one entailing great labour, it was not possible for me to satisfactorily complete it, within a short period of time. Therefore, although my friends Daji Saheb Kharay and Dada Saheb Khaparday had, in anticipation and somewhat hastily, announced that I was shortly going to publish a treatise on the Gita, yet, seeing that the material in hand was not sufficient, I went on putting off the work of writing the book.
যম-সেনা কী বিমল ধ্বজা অব জরা দৃষ্টিমে আতী হৈ ।
করতী হুঈ যুদ্ধ রোগোঁ সে দেহ হারতী জাতী হৈ ।।
যম-সেনার বিমল ধ্বজা এখন ‘জরা’ দৃষ্টিতে আসিছে ।
করিতে করিতে যুদ্ধ রোগেতে দেহ হারিতে চলিছে ।।
এবং আমার সাংসারিক সহচরীও (সমসাময়িক ব্যক্তিরাও ?) পূর্বে চলিয়া গিয়াছেন । অতএব এখন এই গ্ৰন্থ ইহা মনে করিয়া প্ৰকাশ করিলাম যে, আমার যে বিষয় উপলব্ধ হইয়াছে, এবং যে বিচারসকল আমি করিয়াছি সেই সমস্ত লোকদিগেরও জ্ঞাত হইয়া যাউক; আবার কোন-না-কোন ‘সমানধর্মা” এখন বা পরে উৎপন্ন হইয়া উহা পূৰ্ণ করিয়াই লইবে ।
And later on, when in the year 1908, I was convicted and sent to Mandalay, in Burma, the chance of this book being written came practically to an end. But, when after sometime, Government was pleased to grant permission to take the books and other things essential for writing this book from Poona to Mandalay, the draft of this book was first made in the Mandalay Jail in the Winter of 1910-1911 (between Kartik Shuddha 1st and Falgun Vadya 30th of the Saka Year 1832); and thereafter, the draft was improved upon from time to time, as things suggested themselves to me; and those portions which had remained incomplete as the necessary books had not been available, were completed after my release from jail. Nevertheless, I cannot even now say that this work is complete in every respect; because, the elementary principles of Release (moksa) and Moral Philosophy are very recondite, and they have been so exhaustively expounded by ancient and modern scholars, that it is very often difficult to correctly decide which portion of such expositions ought to be incorporated in this small book, without including too much. But, my physical condition is now becoming weak, as described by the great Maharashtra poet Moropanta in the following arya stanza :-
আরম্ভেই বলা আবশ্যক যে, যদিও আমার এই মত মান্য নহে যে, সাংসারিক কর্মকে গৌণ অথবা ত্যাজ্য ধরিয়া ব্ৰহ্মজ্ঞান ও ভক্তি প্ৰভৃতি শুধু নিবৃত্তিপ্রধান মোক্ষমার্গেরই নিরূপণ গীতাতে আছে; তথাপি আমি এমন বলি না যে, মোক্ষপ্ৰাপ্তির মার্গের আলোচনা ভগবদ্গীতাতে মোটেই নাই । আমিও এই গ্রন্থে স্পষ্ট দেখাইয়াছি যে, গীতাশাস্ত্ৰ অনুসারে এই জগতে প্ৰত্যেক মনুষ্যের প্রথম কর্তব্যই এই যে, সে পরমেশ্বরের শুদ্ধস্বরূপের জ্ঞান প্ৰাপ্ত হইয়া, উহা দ্বারা নিজের বুদ্ধিকে যতদূর পারে ততদূর, নির্মল ও পবিত্ৰ করিয়া লইবে । কিন্তু ইহা কিছু গীতার মুখ্য বিষয় নহে । যুদ্ধের আরম্ভে অর্জুন এই কর্তব্যমোহে বাঁধা পড়িয়াছিলেন যে যুদ্ধ করা ক্ষত্ৰিয়ের ধর্ম হইলই বা, কিন্তু কুলক্ষয় আদি ঘোর পাতক হইলে যে যুদ্ধ মোক্ষ প্ৰাপ্তিরূপ আত্মকল্যাণের নাশ করিবে, সেই যুদ্ধ করা উচিত বা অনুচিত । অতএব আমার এই অভিপ্ৰায় যে ঐ মোহ দূর করিবার জন্য শুদ্ধ বেদান্তের ভিত্তিতে কর্ম-অকর্মের এবং সঙ্গে সঙ্গেই মোক্ষের উপায়সমূহেরও পূর্ণ বিচার করিয়া এই প্রকার স্থির করা হইয়াছে যে, এক তো কর্ম কখনও দূরই হয় না এবং দ্বিতীয় উহা ছাড়াও উচিত নহে, এবং যাহা দ্বারা কর্ম করিলেও কোনও পাপ লাগে না এবং অন্তে উহা দ্বারাই মোক্ষও লাভ হয়, গীতাতে সেই যুক্তিরই - জ্ঞানমূলক, ভক্তিপ্রধান কর্মযোগেরই - প্ৰতিপাদন করা হইয়াছে । কর্ম-অকর্মের বা ধর্ম-অধর্মের এই বিচারকেই আধুনিক নিছক আধিভৌতিক পণ্ডিত নীতিশাস্ত্র বলেন । সাধারণ পদ্ধতি অনুসারে গীতার শ্লোকসমূহের যথাক্রমে টীকা লিখিয়াও দেখানো যায় যে, এই বিচার গীতাতে কি প্রকার করা হইয়াছে । কিন্তু বেদান্ত, মীমাংসা, সাংখ্য, কর্মবিপাক, অথবা ভক্তি প্ৰভৃতি শাস্ত্রের যে অনেক বাদ অথবা প্ৰমেয়ের ভিত্তিতে গীতার কর্মযোগের প্ৰতিপাদন করা হইয়াছে, এবং যাহার উল্লেখ কখনও কখনও খুবই সংক্ষিপ্তভাবে পাওয়া যায়, সেই শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তসমূহের পূর্বাবধিই জ্ঞান হওয়া ব্যতীত গীতার বিচারের সম্পূৰ্ণ মর্ম সহসা ধ্যানে জন্মে না । এই জন্যই গীতাতে যে যে বিষয় অথবা সিদ্ধান্ত আসিয়াছে, সেগুলির শাস্ত্রীয় রীতিতে প্ৰকরণে বিভক্ত করিয়া, প্রধান প্ৰধান যুক্তিগুলির সহিত গীতারহস্যে উহাদের প্রথমে সংক্ষেপে নিরূপণ করা হইয়াছে; আবার বর্তমান যুগের আলোচনাত্মক পদ্ধতি অনুসারে গীতার মুখ্য সিদ্ধান্তসমূহের তুলনা অন্যান্য ধর্মের ও তত্ত্বজ্ঞানের সিদ্ধান্তসমূহের সঙ্গে প্ৰসঙ্গানুসারে সংক্ষেপে করিয়া দেখানো হইয়াছে । এই পুস্তকের পূর্বার্ধে গীতারহস্য নামক যে নিবন্ধ আছে, তাহা এই রীতিতে কর্মযোগবিষয়ক একক্ষুদ্র কিন্তু স্বতন্ত্র গ্ৰন্থই বলা যাইতে পারে । যাহা হৌক; এই প্ৰকার সাধারণ নিরূপণে গীতার প্রত্যেক শ্লোকের সম্পূর্ণ বিচার হইতে পারে নাই । অতএব শেষে, গীতার প্রত্যেক শ্লোকের অনুবাদ দিয়াছি; এবং ইহারই সঙ্গে সঙ্গে স্থানে স্থানে যথেষ্ট টিপ্পনীও জুড়িয়া দিয়াছি, যাহাতে পূর্বাপর সন্দর্ভ পাঠকের বুদ্ধিতে ভালরূপ আসিয়া যায় অথবা প্ৰাচীন টীকাকারগণ নিজ সম্প্রদায়ের সিদ্ধির জন্য গীতার শ্লোকগুলির যে টানাবুনা করিয়াছেন, তাহা পাঠক বুঝিতে পারেন (গী|৩|১৭-১৯; ৬|৩; ১৮|২); বা গীতারহস্যে যে সিদ্ধান্ত বলা হইয়াছে, তাহা সহজেই জ্ঞাত হইয়া যায়; এবং ইহাও জ্ঞাত হইয়া যায় যে ইহাদের মধ্যে কোন্ কোন্ সিদ্ধান্ত গীতার সম্বাদাত্মক প্ৰণালী অনুসারে কোথায় কোথায় কি প্রকারে আসিয়াছে ।
Though I am not prepared to accept the opinion that the Gita gives only an exposition of the paths of Release based on Renunciation, such as the ‘Knowledge of the Brahman’ or ‘Devotion’, after proving worldly Action to be inferior and negligible, I must, at the outset, make it clear that I do not also say that there is no exposition at all in the Bhagavadgita of the paths of obtaining Release. Nay; I too have shown in this book, that according to the philosophy of the Gita, it is the primary duty of every human being in this world, to acquire the Knowledge of the pure form of the Paramesvara, and thereby to cleanse out and purify his own Reason as far as possible. But, that is not the principal subject-matter of the Gita. At the commencement of the war, Arjuna was engulfed in a perplexity about what his duty was, namely, whether he should or should not take part in a war, which would ruin the welfare of his Atman, in the shape of Release, as a result of his committing heinous sins like the destruction of his own clan, etc., though it was the duty of every Ksatriya to fight. And I am of opinion that in order to clear this doubt, the Gita has propounded the device of performing Action in such a way that one ultimately attains Release without committing sin, namely, the Karma-Yoga founded on Knowledge, in which Devotion is the principal factor, after it had fully expounded the Philosophy of Action and Non-Action, and also the various paths of attaining Release according to pure Vedanta Philosophy, and had established that no man is free from Action, and that Action should never be given up. This exposition of Action and Non-Action, or of Morality and Immorality is called ‘Ethics’ by modern purely Materialistic philosophers. It is not that I could not have made this exposition by following the usual procedure, and explained how this principle has been established by the Gita, by commenting on the Gita stanza by stanza. But, unless one is thoroughly conversant with the various philosophical doctrines, arguments and deductions pertaining to Vedanta, Mimamsa, Samkhya, the Doctrine of Causality (karma-vipaka) and Devotion, on the authority of which the doctrine of Karma-Yoga has been established in the Gita, and the reference to which is sometimes very succinct, the full purport of the exposition made in the Gita is not easily understood. I have, therefore, scientifically divided all the various subjects or doctrines, which one comes across in the Gita, into chapters, and briefly expounded them, together with the most important logical arguments relating to them; and I have, at the same time, consistently with the critical methods of the present day, compared in brief and as occasion arose, the most important doctrines propounded in the Gita, with the doctrines propounded in other religions and philosophies. It may thus be said that the essay ‘Gita-Rahasya’ (the Esoteric Import of the Gita), which is published in the beginning of this book, is by itself an independent, though a small, book on the doctrine of Proper Action (Karma-Yoga). But, in any case, it was not possible to consider fully each individual stanza of the Gita in a general exposition of this kind. I have, therefore, at the end of the book, translated the Gita, stanza by stanza, and added exhaustive commentaries to the translations in different places, in order to explain the anterior and posterior context; or, in order to show how former commentators have stretched the meaning of some of the stanzas of the Gita in order to support their own doctrines (See Gita 3.17-19; 6.3; and 18.2); or, in order to show which of the various doctrines enunciated in the Gits-Rahasya appear how and where in the Gita, according to the catechismal method of the Gita.
ইহা নিঃসন্দেহ যে, এরূপ করিবার ফলে কোন কোন বিচার অবশ্য পুনরুক্ত হইয়াছে; কিন্তু গীতারহস্যের বিচার গীতার অনুবাদ হইতে পৃথক, এইজন্য রাখিতে হইয়াছে যে গীতারহস্যের তাৎপর্যের বিষয়ে সাধারণ পাঠকদের যে ভ্ৰম আসিয়াছে, সেই ভ্ৰম অন্য রীতিতে সম্পূর্ণ দূর হইতে পারিত না । এই পদ্ধতিতে পূর্ব ইতিহাস ও ভিত্তিসহ ইহা দেখাইবার সুবিধা হইয়া গিয়াছে যে, বেদান্ত, মীমাংসা ও ভক্তি প্ৰভৃতি বিষয়ক গীতার সিদ্ধান্ত ভারত, সাংখ্যশাস্ত্ৰ, বেদান্তসূত্র, উপনিষদ, এবং মীমাংসা প্রভৃতি মূলগ্রন্থে কিরূপে এবং কোথায় আসিয়াছে । ইহা হইতে বলা সহজ হইয়াছে যে, সন্ন্যাসমার্গ ও কর্মযোগমার্গে কি কি প্রভেদ আছে; এবং অন্যান্য ধর্মমত ও তত্ত্বজ্ঞানের সঙ্গে গীতার তুলনা করিয়া ব্যবহারিক কর্মদৃষ্টিতে গীতার মহত্বের উপযুক্ত নিরূপণ করা সরল হইয়া গিয়াছে । যদি গীতার উপর অনেক প্রকার টীকা না লিখিত হইত, এবং নানা ব্যক্তি নানাপ্রকারে গীতার নানা তাৎপর্যের প্রতিপাদন না করিতেন, তবে আমার নিজের গ্রন্থের সিদ্ধান্তের পোষক ও ভিত্তিভূত মূল সংস্কৃত ব্যাখ্যা স্থানে স্থানে উদ্ধৃত করিবার কোন প্রয়োজনই ছিল না; কিন্তু বর্তমান সময় অন্য হইতেছে; লোকদের মনে এই সংশয় হইতে পারিত যে আমি গীতাৰ্থ অথবা সিদ্ধান্ত যাহা বলিয়াছি, তাহা ঠিক বা ঠিক নহে । এইজন্যই আমি সর্বত্র স্থলনির্দেশপুর্বক বলিয়া দিয়াছি যে, আমার প্রমাণ কি; এবং প্রধান প্রধান স্থলে তো মূল সংস্কৃত বচনই অনুবাদ সহ উদ্ধৃত করিয়া দিয়াছি । এতদ্ব্যতীত সংস্কৃত বচন উদ্ধৃত করিবার আরও এক প্রয়োজন আছে । তাহা এই যে, ইহাদের মধ্যে অনেক বচন, বেদান্তগ্রন্থে সাধারণভাবে প্ৰমাণাৰ্থ লওয়া হয়, অতএব এখানে পাঠকদের ঐগুলির সহজেই জ্ঞান হইয়া যাইবে এবং ইহা দ্বারা পাঠক সিদ্ধান্তগুলিও ভালরূপ বুঝিতে পরিবেন । কিন্তু ইহা কি সম্ভব যে সকল পাঠকই সংস্কৃতজ্ঞ হইবে । এইজন্য সমস্ত গ্ৰন্থ এই ধরণে রচিত হইয়াছে যে, যদি সংস্কৃতে অজ্ঞ পাঠক সংস্কৃত শ্লোক ছাড়িয়া, কেবল ভাষাই পড়িয়া যায়, তবু অর্থে কোনও গোলমাল হইবে না । এই কারণে সংস্কৃত শ্লোকগুলির শব্দশ অনুবাদ না লিখিয়া অনেক স্থলে উহাদের কেবল সারাংশ দিয়াই চালাইতে হইয়াছে । কিন্তু মূল শ্লোক সর্বদাই উপরে রাখা হইয়াছে, এই কারণে এই প্ৰণালীতে ভ্ৰম হইবার কোনও আশঙ্কা নাই ।
It is true that by following this method, some subject-matter has been repeated; but, as I felt convinced;that I could not in any other way fully dissipate the misunderstanding, which now exists in the mind of the common reader as regards the import of the Gita, I have separated the exposition of the Gita-Rahasya (Esoteric Import of the Gita) from the translation itself; and thereby, it has become easy for me (i) to show with authorities and with former history, where and in what manner, the doctrines of the Gita with reference to Vedanta, Mimamsa, Devotion etc., have appeared in the Bharata, the Samkhya system, the Vedanta-Sutras, the Upanisads, the Mimamsa, and other original texts, (ii) to explain in a lucid way the difference between Renunciation (Samnyasa) and Action (Karma-Yoga), as also (iii) to expound in a proper way the importance of the Gita from the point of view of practical Action, by comparing the Gita with other religious opinions or philosophies. If there had not been all sorts of commentaries on the Gita, and if various persons had not interpreted the import of the Gita, each in a different way, it would have been totally unnecessary for me to quote the original Sanskrit authorities which go to support the propositions laid down by me in my book. But such a thing cannot be done in the present times; and it is likely that many may doubt the correctness of the import of the Gita or of the propositions, laid down by me. I have, therefore, everywhere pointed out the authorities which support what I say, and in important places, I have given the original Sanskrit text of the authorities with translations. As many of these dicta are usually accepted as proved truths in books on Vedanta, my secondary object in quoting them has been, that my readers should get acquainted with them in the course of reading, and find it easier on that account to remember the doctrines embodied in those statements. But, as it is not likely that all readers will be knowing Sanskrit, I have arranged my book on the whole in such a way that, if any reader who does not understand Sanskrit, reads the book, omitting the Sanskrit stanzas, there will not be any interruption anywhere in the sense; on this account, it has became necessary in many places, to remain satisfied with giving a mere summary of the Sanskrit stanza, instead of giving a literal translation of it. But as the original stanza is given in each case, there is no risk of any misunderstanding arising as a result of this procedure having been followed.
বলা হয় যে, কোহিনূর হীরা যখন ভারতবর্ষ হইতে বিলাতে পৌঁছিল, তখন উহাতে নূতন “পলকাটার” উহা জন্য পুনরায় পালিস করা হইয়াছিল; এবং দুইবার পালিস হইবার পর উহা আরও উজ্জল হইয়া গেল । হীরার পক্ষে উপযুক্ত এই ন্যায় সত্যরূপ রত্নের পক্ষেও প্ৰযুক্ত হইতে পারে । গীতার ধর্ম সত্য ও অভয় বটে; কিন্তু উহা যে সময়ে এবং যে স্বরূপে বলা হইয়াছিল, সেই দেশ-কাল প্রভৃতি পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমানের অনেক পার্থক্য হইয়া গিয়াছে; এই কারণে এখন উহার তেজ পূর্বের ন্যায় অনেকেরই দৃষ্টিতে প্ৰকাশ পায় না । কোনও কর্মের ভালমন্দ মানিবার পূর্বে, যে সময়ে ‘কর্ম করা চাই, অথবা না করা চাই” এই সাধারণ প্রশ্নই গুরুত্বপূর্ণ মনে হইয়াছিল, সেই সময়ে গীতা বলা হইয়াছে; এই কারণে উহার অনেক অংশ এখন কোন কোন লোকের নিকট অনাবশ্যক প্রতীত হয় । এবং ইহার উপরেও নিবৃত্তিমার্গীয় টীকাকারদিগের প্ৰলেপ গীতার কর্মযোগের বিচারকে আজকাল অনেকের পক্ষে দুর্বোধ্য করিয়া তুলিয়াছে । ইহা ব্যতীত কোন কোন নবীন বিদ্ধান ব্যক্তি ইহা বুঝিয়া গিয়াছেন যে, আধুনিক কালে আধিভৌতিক জ্ঞানের পাশ্চাত্যদেশে যেরূপ কিছু বুদ্ধি হইয়াছে, সেই বুদ্ধির কারণে অধ্যাত্মশাস্ত্রের ভিত্তিতে রচিত প্ৰাচীন কর্মযোগের বিচার বর্তমান কালের পক্ষে সম্পূর্ণ উপযুক্ত হইতে পারে না । কিন্তু ইহা মনে করা ঠিক নহে; এই বুদ্ধির শূন্যগর্ভতা দেখাইবার জনা গীতারহস্যের বিচার, গীতার সিদ্ধান্তসমূহের অনুরূপই পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের সিদ্ধান্তও স্থানে স্থানে সংক্ষেপে দিয়াছি । বস্তুত গীতার ধর্ম-অধর্ম বিচার এই তুলনা দ্বারা কিছু বেশী সুদৃঢ় হয় না; তথাপি আধুনিক আধিভৌতিক শাস্ত্রের অশ্রুতপূর্ব বৃদ্ধি দ্বারা যাহার দৃষ্টি ঝলসিয়া পড়িয়া গিয়াছে; অথবা আজকালকার একদেশীয় শিক্ষাপদ্ধতির কারণে আধিভৌতিক অর্থাৎ বাহ্য দৃষ্টিতেই নীতিশাস্ত্রের বিচার করা যাহাদের অভ্যাস পড়িয়া গিয়াছে, তাহারা এই তুলনা দ্বারা এটুকু তো স্পষ্ট জ্ঞাত হইবেন যে মোক্ষধর্ম ও নীতি দুই বিষয় আধিভৌতিক জ্ঞান হইতে শ্ৰেষ্ঠ; এবং তাঁহারা ইহাও জানিতে পারিবেন যে, এই কারণেই প্রাচীন কালে আমাদের শাস্ত্রকারগণ এই বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত স্থির করিয়াছেন, তাহার পরে মানবের জ্ঞানের গতি এখন পর্যন্ত পৌঁছিতে পারে নাই; কেবল ইহাই নহে, কিন্তু পাশ্চাত্য দেশেও অধ্যাত্ম দৃষ্টিতে এই প্রশ্নের বিচার এখন পৰ্যন্ত চলিয়াছে এবং এই আধ্যাত্মিক গ্ৰন্থকারদের বিচার গীতাশাস্ত্রের সিদ্ধান্তসমূহ হইতে বেশী ভিন্ন নহে । গীতারহস্যের ভিন্ন ভিন্ন প্ৰকরণে যে তুলনাত্মক বিচার আছে, তাহা হইতে এই বিষয় সুস্পষ্ট হইয়া যাইবে ।
There is a story told about the Kohinoor diamond that after it had been taken from India to England, it was again cut there, and on that account, it began to look more brilliant. This law, which is true in the case of a diamond, also applies to a jewel in the shape of truth. It is true that the religion propounded by the Gita is true and unshakeable. But, as the time at which and the form in which it was propounded, and the other attendant circumstances have considerably changed, it does not strike may as as brilliant as before. As the Gita was propounded at a time, when ‘whether to act or renounce’ was considered a question of great importance, to be determined before arriving at a decision as to which act was good and which bad, many people look upon a considerable portion of it as now unnecessary; and, as that position has been further made worse by commentaries supporting the Path of Renunciation, the exposition of Karma-Yoga contained in the Gita has become very difficult to understand for many in the present age. Besides, some of our new scholars are of opinion that as a result of the present growth of the Material sciences in the West, the deductions laid down in ancient times with reference to the Karma-Yoga, on the basis of the Philosophy of the Absolute Self, cannot possibly be fully applicable to modern conditions. In order to prove that this idea is wrong, I have briefly mentioned in various places in my exposition of the Gita-Rahasya (Esoteric Import of the Gita) the doctrines of Western philosophers, which are similar to those in the Gita. Really speaking, the exposition of Ethics in the Glta is in no way fortified by such a comparison. Yet, those people whose eyes are dazzled by the present unheard of growth of the Material sciences or who have learnt to consider the Science of Ethics, only externally, that is to say, only in its Material aspect, as a result of the present one-sided methods of education, will be made to see clearly by means of this comparison that, not only has human knowledge not yet gone beyond the doctrines laid down on this subject by our philosophers, for the simple reason that Ethics and the science of Release are both beyond Material Knowledge, but, deliberations are still going on on these questions in the West, from the Metaphysical point of view, and the opinions of these Meta-physicians are not materially different from the doctrines laid down in the Gita. This fact will be clearly borne out by the comparative exposition appearing in the different chapters of the Gita-Rahasya.
প্ৰস্তাবনা সমাপ্ত হইল । এখন যে বিষয়ের বিচারে অনেক বৎসর কাটিয়া গিয়াছে, এবং যাহার নিত্য সহবাস ও চিন্তনে মনের সমাধান হইয়া আনন্দ হইত, সেই বিষয় আজ গ্রন্থরূপে হাত-ছাড়া হইবে – ইহা মনে করিয়া যদিও খারাপ লাগিতেছে, তথাপি এইটুকুই সন্তোষ যে, এই বিচার – শোধ হয় তো ব্যাজ সহিত, অন্যথা যেমনটি তেমনি - পরবর্তী বংশের (প্রজন্মের ?) লোকদিগকে দিবার জন্যই আমি পাইয়াছিলাম । অতএব বৈদিক ধর্মের, রাজগুহ্যের এই পরশপাথর কঠোপনিষদের “উত্তিষ্ঠত ! জাগ্ৰত ! প্ৰাপ্য বরান্ নিবোধত !” [ক|৩|১৮] – ওঠো ! জাগ ! এবং (ভগবৎপ্রদত্ত) এই বর বুঝিয়া লও – এই মন্ত্র দ্বারা আশাস্থল পাঠকদিগকে প্রেম পূর্বক সমর্পণ করিতেছি । প্রত্যক্ষ ভগবানেরই ইহা সুনিশ্চিত আশ্বাস বাক্য যে, ইহাতেই কর্ম-অকর্মের সমস্ত বীজ আছে; এবং এই ধর্মের স্বল্প আচরণও বড় বড় সঙ্কট হইতে বাঁচায় । ইহার অধিক আর কি চাই ? সৃষ্টির “না করিলে কিছু হয় না”, এই নিয়মের উপর দৃষ্টি দিয়া, তোমার নিষ্কাম বুদ্ধিতে কর্মকর্তা হওয়া চাই, বস্ আর যাহা কিছু সমস্ত হইয়া গেল ।
The preface is over. Now, though I feel unhappy at the idea that that subject, in thinking on which I have spent many years, and the constant company of and meditation over which has brought so much satisfaction to my mind, and happiness into my heart, is now going to leave my hands in the shape of a book, yet, as these thoughts have come into my mind for the sole purpose of being handed down to coming generations - with interest, or at any rate, just as they are - I am placing this philosopher's stone, in the shape of a raja-guhya (the king of mysticism) of the Vedic religion into the hands of my promising readers: uttering the canon (mantra) : “Arise, awake, and understand these blessings (conferred by the Blessed Lord)”, and with feelings of affection. In this (mysticism) lies the entire essence of Right and Wrong Action, and the Blessed Lord Himself has confidently given us the assurance, that the observance of this Religion, even to a small extent, delivers a person from great difficulties. What more can anybody want ? Keep in mind the universal rule that. "Nothing happens, unless something is done", and devote yourselves to Desireless Action; that is all.
জানি উহার ভেদ সত্য কি, আমি অজ্ঞানী !
- [সাধু তুকারামের এক অভঙ্গের ভাব]
I am only repeating the stale words uttered by Saints !
How can an insignificant man like me know this ? – [Tukarama]
শ্ৰীমদ্ভগবদ্গীতার উপর অনেক সংস্কৃত ভাষ্য, টীকা এবং দেশী ভাষায় সর্বমান্য ব্যাখ্যা আছে । এইরূপ অবস্থায় এই গ্ৰন্থ কেন প্ৰকাশ করিলাম ? যদিও ইহার কারণ গ্রন্থের আরম্ভেই বলা হইয়াছে, তথাপি এমন কতকগুলি বিষয় রহিয়া গিয়াছে, যেগুলির, গ্ৰন্থ প্ৰতিপাদ্য বিষয়ের বিচারে, উল্লেখ হইতে পারে নাই । ঐ বিষয়গুলি প্ৰকট করিবার জন্য প্ৰস্তাবনা ব্যতীত দ্বিতীয় স্থান নাই । ইহার মধ্যে সর্বপ্রথম বিষয় স্বয়ং গ্রন্থকারসম্বন্ধীয় ।
Although in the beginning of this book, I have explained my reasons for publishing it, in spite of the fact that there are in existence many Sanskrit 'commentaries, or criticisms, or Prakrit translations, or exhaustive and universally accepted expositions of the Srimad Bhagavadgita, yet, there is no better place than an Introduction for explaining all such things as cannot be included in the discussion of the subject-matter of the book itself. The first of these things is about the author himself.
প্রায় তেতাল্লিস বৎসর হইল, আমার ভগবদ্গীতার সহিত প্রথম পরিচয় হইয়াছিল । সন ১৮৭২ খৃষ্টাব্দে আমার পূজনীয় পিতৃদেব অন্তিম রোগে আক্রান্ত হইয়া শয্যাগত ছিলেন । সেই সময়ে তাঁহাকে ভগবদ্গীতার “ভাষাবিবৃতি” নামক মহারাষ্ট্রীয় টীকা শুনাইবার কার্য আমি পাইয়াছিলাম । তখন, অর্থাৎ আমার ষোল বংসের বয়সে, গীতার ভাবাৰ্থ সম্পূর্ণ বুঝতে পারি নাই । আরও, অল্প বয়সে মনে যে সংস্কার হয়, তাহা দৃঢ় হইয়া যায়, এই কারণে সেই সময়ে ভগবদ্গীতা সম্বন্ধে যে অনুরাগ উৎপন্ন হইয়াছিল, তাহা স্থায়ী হইয়াছিল । যখন সংস্কৃত ও ইংরাজী অধিক অভ্যস্ত হইল, তখন আমি গীতার সংস্কৃত ভাষ্য, অন্যান্য টীকা এবং মারাঠী ও ইংরাজীতে লিখিত অনেক পণ্ডিতের আলোচনা সময়ে সময়ে পড়ি ।
It is now nearly forty-three years since I made my first acquaintance with the Bhagavadgita. In the year 1872, during the last illness of my father, the task of reading out to him a Prakrit commentary on the Bhagavadgita called Bhasa-vivrtti fell to my lot. At that date, that is, when I was only 16 years old, it was not possible for me to fully understand the import of the Giti. Still, as the impressions made on the mind in young age are lasting, the liking for the Bhagavadgita which then came into existence did not die out; and when I had later on made further studies in Sanskrit and English, I had occasion to read from time to time the Sanskrit commentaries and other criticisms, as also the expositions by many learned scholars in English and in Marathi on the Gita.
কিন্তু এখন, মনে এক সংশয় উৎপন্ন হইল, এবং তাই দিন দিন বাড়িতেই লাগিল । সেই সংশয় এই যে, যে অর্জুন নিজের স্বজনগণের সঙ্গে যুদ্ধ করা অত্যন্ত গুরুতর কুকর্ম বুঝিয়া খিন্ন হইয়া গিয়াছিলেন, সেই অর্জুনকে যুদ্ধে প্ৰবৃত্ত করিবার জন্য যে গীতা বলা হইয়াছিল, সেই গীতাতে ব্ৰহ্মজ্ঞানের দ্বারা বা ভক্তি দ্বারা মোক্ষপ্রাপ্তির বিধির — শুধু মোক্ষীমার্গের - বিচার কেন করা হইল ? গীতার কোনও টীকাতে এই বিষয়ের যোগ্য উত্তর সন্ধান করিয়া পাওয়া গেল না, এইজন্য এই সংশয় আরও দৃঢ় হইতে চলিল । কে জানে যে আমারই মত অপর লোকদেরও এই সংশয়ই হয় নাই । কিন্তু টীকাগুলির উপরেই নির্ভর করিলে, টীকাকারদিগের প্রদত্ত উত্তর সমাধানকারক মনে না করিলেও উহাকে ছাড়িয়া দ্বিতীয় উত্তর মনেই আসে না ।
I was then faced by the doubt as to why the Gita, which was expounded in order to induce to fight that Arjuna, who was dejected by the idea that it was a sin to war with one's own relatives, should contain an Exposition of the, manner in which Release could be obtained by Knowledge (Jnana) or by Devotion (Bhakti), that is to say, only of the ‘moksa-marga’; and that doubt gradually gained ground, because, I could not find a satisfactory answer to that question in any commentary on the Gita. It is quite possible that others too might have felt the same doubt. One cannot say no to that. When a person is engulfed in commentaries, he cannot find a different solution, though he may feel that the solution given in the commentary is not satisfactory.
এই জন্যই আমি গীতার সমস্ত টীকা ও ভাষ্য সরাইয়া দূরে রাখিয়া দিয়াছি; এবং কেবল গীতারই স্বতন্ত্র বিচার পূর্বক অনেকবার পাঠ করিয়াছি । এইরূপ করিলে পর টীকাকারদিগের ব্যাখ্যা হহঁতে মুক্ত হইলাম এবং এই জ্ঞান হইল যে গীতা নিবৃত্তিপ্রধান নহে; উহা কর্মপ্রধানই । অধিক আর বলিব কি, গীতাতে এক ‘যোগ’ শব্দই ‘কর্মযোগ’ অর্থে প্ৰযুক্ত হইয়াছে । মহাভারত, বেদান্তসূত্র, উপনিষৎ এবং বেদান্তশাস্ত্ৰবিষয়ক অন্যান্য সংস্কৃত ও ইংরাজী গ্রন্থ অধ্যয়ন করিয়াও এই মতই দৃঢ় হইতে চলিয়া ছিল; এবং সাধারণ্যে এই বিষয় প্ৰকাশ করিলে অধিক চৰ্চা হইবে এবং সত্য তত্ত্ব নির্ণয়ে আরও সুবিধা হইবে, এই অভিপ্ৰায়ে চারপাঁচ স্থানে এই বিষয়েরই উপর ব্যাখ্যান দিয়াছি । তন্মধ্যে প্ৰথম ব্যাখ্যান নাগপুরে জানুয়ারি সন ১৯০২তে হয় এবং দ্বিতীয় সন ১৯০৪ খৃষ্টাব্দে আগষ্ট মাসে, করবীর ও সঙ্কেশ্বর মঠের জগদগুরু শ্ৰীশঙ্করাচার্যের আজ্ঞাতে, তাঁহারই উপস্থিতিতে, সঙ্কেশ্বর মঠে হইয়াছিল । সে সময়ে নাগপুরের ব্যাখ্যানের বিবরণও সংবাদপত্রসমূহে প্রকাশিত হইয়াছিল ।
I therefore, put aside all criticisms and commentaries, and independently and thoughtfully read the Gita over several times. I then got out of the clutches of the commentators, and was convinced that the original Gita did not preach the Philosophy of Renunciation (nivrtti), but of Energism (Karma-Yoga); and that possibly, the single word ‘yoga’ used in the Gita had been used to mean Karma-Yoga. That conviction was strengthened by the study of the Mahabharata, the Vedanta-Sutras, the Upanisads and other Sanskrit and English treatises on Vedanta; and believing that by publishing that opinion, there would be a fuller discussion on the subject, and that it would be easier to arrive at the truth, I delivered public lectures on the subject on four or five occasions at different times. One of these was delivered at Nagpur in January 1902, and the other one at the Sankesvara Matha in August 1904, in the presence of Jagadguru Sri Samkaracarya of the Karavira and Sankesvara Matha, and at his request. The summary of the lecture delivered at Nagpur was published in the newspapers at the time.
ইহা ব্যতীত, এই বিবেচনাতেই, যখন যখন সময় পাইতাম, তখন তখন কোন কোন বিদ্বান বন্ধুর সঙ্গে সময়ে সময়ে বাদ-বিবাদও করিয়াছি । এই বন্ধুগণের মধ্যে স্বৰ্গীয় শ্ৰীপতি বুবা ভিঙ্গারকর ছিলেন । ইঁহার সহবাসে ভাগবত সম্প্রদায়ের কোন কোন প্ৰাকৃত গ্ৰন্থ দৃষ্টিগোচর হইয়াছিল । এবং গীতারহস্যে বর্ণিত কোন কোন বিষয় তো তাঁহার ও আমার বাদ-বিবাদেই পূর্বে নিশ্চিত হইয়া গিয়াছিল । অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, তিনি এই গ্ৰন্থ দেখিতে পাইলেন না । থাক্; এই প্রকারে এই মত স্থির হইয়াছে যে গীতার প্রতিপাদ্য বিষয় প্রবৃত্তিপ্রধান, এবং ইহা লিখিয়া গ্ৰন্থারকারে প্ৰকাশ করিবার বিচার করিতেও অনেক বৎসর কাটিয়া গিয়াছে । বর্তমান সময়ে যে সমস্ত ভাষ্য, টীকা ও অনুবাদ পাওয়া যায়, তাহাতে যে গীতাতাৎপৰ্য স্বীকৃত হয় নাই, কেবল তাহাই যদি পুস্তকাকারে প্রকাশিত করি, এবং প্রাচীন টীকাকারদিগের স্থিরীকৃত তাৎপৰ্য কেন আমার গ্রাহ্য নহে, তাহার কারণ না বলি, তাহা হইলে খুবই সম্ভব ছিল যে লোকেরা যাহা একটা কিছু বুঝিতে থাকিবে - উহাদের ভ্ৰম হইবে । এবং সমস্ত টীকাকারদিগের মত সংগ্ৰহ করিয়া তাঁহাদের কারণসহ অপূর্ণতা দেখাইয়া দেওয়া, এবং অন্য ধর্ম ও তত্ত্বজ্ঞানের সঙ্গে গীতাধর্মের তুলনা করা এরূপ কোন সাধারণ কাৰ্য ছিল না যে, শীঘ্র শীঘ্ৰ চটপট হইতে পারে । অতএব যদিও আমার বন্ধু শ্ৰীযুত দাজী সাহেব খরে এবং দাদাসাহেব খাপর্ডে কিছু পূর্বেই ইহা প্ৰকাশ করিয়া দিয়াছিলেন যে, আমি গীতার উপর এক নূতন গ্ৰন্থ শীঘ্রই প্ৰকাশ করিব তথাপি গ্ৰন্থ লিখিবার কার্য এই মনে করিয়া বিলম্ব করিয়াছিলাম যে, আমার নিকট যে সামগ্ৰী আছে, তাহা এখনও অসম্পূৰ্ণ ।
With the same object, I also discussed the matter from time to time privately, whenever, I had leisure, with some of my learned friends. One of these was the late Mr. Shripati Buva Bhingarkar. In his company, I had occasion to see some Prakrit treatises pertaining to the Bhagavata cult, and some of the ideas explained in the Gita-Rahasya were first fixed in the discussions between myself and the Buva. It is a matter of deep regret that he is not alive to see this work. Though my opinion that the creed preached in the Gits was one of Action, had, in this way, become quite definite, and though I had decided to reduce it,to writing, many years went by. But I thought that a considerable amount of misunderstanding would arise if I merely published in a book form, this moral of the Gita, which had not been accepted in the commentaries, criticisms, or translations now commonly available, without assigning any reasons as to why I was unable to accept the conclusions arrived at by the former commentators. At the same time, as the work of dealing with the opinions of all the commentators, and exposing their incompleteness with reasons, and of comparing the religion expounded in the Gita with other religions or philosophies was one entailing great labour, it was not possible for me to satisfactorily complete it, within a short period of time. Therefore, although my friends Daji Saheb Kharay and Dada Saheb Khaparday had, in anticipation and somewhat hastily, announced that I was shortly going to publish a treatise on the Gita, yet, seeing that the material in hand was not sufficient, I went on putting off the work of writing the book.
যখন সন ১৯০৮ খৃষ্টাব্দে শাস্তি দিয়া আমাকে মাণ্ডালেতে (বার্মা) পাঠাইয়া দিয়াছিল, তখন এই গ্ৰন্থ লিখিবার আশা অনেক দূরে পড়িয়া গিয়াছিল । কিন্তু কিছুকাল বাদে গ্ৰন্থ লিখিবার জন্য আবশ্যক পুস্তক প্রভৃতি সামগ্ৰী পুনা হইতে আনাইবার অনুমতি যখন গবর্ণমেণ্টের অনুকম্পায় পাওয়া গেল তখন সন ১৯১০-১১র শীতকালে (সংবৎ ১৯৬৭ কার্তিক শুক্ল ১ হইতে চৈত্র কৃষ্ণ ৩০শের ভিতরে) এই গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি (মুসবিদা) মাণ্ডালের জেলখানায় সর্বপ্রথম লিখিত হইয়াছিল । আবার সময়ানুসারে যেমন যেমন বিচার করিতে লাগিলাম তেমনি তেমনি উহাতে কাটছাঁট হইতে লাগিল । সেই সময়ে, সমগ্ৰ পুস্তক সেখানে না থাকিবার কারণে, কয়েক স্থানে অপূর্ণতা থাকিয়া গিয়াছিল । এই অপূর্ণতা সেখান হইতে মুক্তিলাভের পর পূর্ণ তো করিয়া লইয়াছিই, পরন্তু এখনও বলা যায় না যে এই গ্ৰন্থ সর্বাংশে পূর্ণ হইয়া গিয়াছে । কারণ মোক্ষ ও নীতিধর্মের তত্ত্ব গহন তো আছেই; তৎসঙ্গেই উহার সম্বন্ধে অনেক প্ৰাচীন ও নবীন, পণ্ডিত এত বিস্তৃত আলোচনা করিয়াছেন যে, ব্যর্থ বিস্তার হইতে বাঁচিয়া, ইহা নির্ণয় করা অনেকবার কঠিন হইয়৷ উঠে যে, এই ছোট গ্রন্থে কোন কোন বিষয়ের সমাবেশ করা যায় । কিন্তু এখন আমার অবস্থা কবির এই উক্তির অনুযায়ী হইয়া গিয়াছে – (মহারাষ্ট্র কবিবর্য মোরোপন্তের আর্যার ভাব)
যম-সেনা কী বিমল ধ্বজা অব জরা দৃষ্টিমে আতী হৈ ।
করতী হুঈ যুদ্ধ রোগোঁ সে দেহ হারতী জাতী হৈ ।।
যম-সেনার বিমল ধ্বজা এখন ‘জরা’ দৃষ্টিতে আসিছে ।
করিতে করিতে যুদ্ধ রোগেতে দেহ হারিতে চলিছে ।।
এবং আমার সাংসারিক সহচরীও (সমসাময়িক ব্যক্তিরাও ?) পূর্বে চলিয়া গিয়াছেন । অতএব এখন এই গ্ৰন্থ ইহা মনে করিয়া প্ৰকাশ করিলাম যে, আমার যে বিষয় উপলব্ধ হইয়াছে, এবং যে বিচারসকল আমি করিয়াছি সেই সমস্ত লোকদিগেরও জ্ঞাত হইয়া যাউক; আবার কোন-না-কোন ‘সমানধর্মা” এখন বা পরে উৎপন্ন হইয়া উহা পূৰ্ণ করিয়াই লইবে ।
And later on, when in the year 1908, I was convicted and sent to Mandalay, in Burma, the chance of this book being written came practically to an end. But, when after sometime, Government was pleased to grant permission to take the books and other things essential for writing this book from Poona to Mandalay, the draft of this book was first made in the Mandalay Jail in the Winter of 1910-1911 (between Kartik Shuddha 1st and Falgun Vadya 30th of the Saka Year 1832); and thereafter, the draft was improved upon from time to time, as things suggested themselves to me; and those portions which had remained incomplete as the necessary books had not been available, were completed after my release from jail. Nevertheless, I cannot even now say that this work is complete in every respect; because, the elementary principles of Release (moksa) and Moral Philosophy are very recondite, and they have been so exhaustively expounded by ancient and modern scholars, that it is very often difficult to correctly decide which portion of such expositions ought to be incorporated in this small book, without including too much. But, my physical condition is now becoming weak, as described by the great Maharashtra poet Moropanta in the following arya stanza :-
Old age, which is the spotless white banner carried by the army of attendants of Death, is already in sight.
And my body is exhausted in the struggle with diseases, which are the advance-guard of that army.and my contemporaries in life have passed on. So, having come to the conclusion that I should place before the public the information which I have gathered, and the ideas which have occurred to me, and that someone else possessed by the same inspiration (samanadharma), will come to birth in the immediate or distant future, and develop and work them out, I have published this book.
Though I am not prepared to accept the opinion that the Gita gives only an exposition of the paths of Release based on Renunciation, such as the ‘Knowledge of the Brahman’ or ‘Devotion’, after proving worldly Action to be inferior and negligible, I must, at the outset, make it clear that I do not also say that there is no exposition at all in the Bhagavadgita of the paths of obtaining Release. Nay; I too have shown in this book, that according to the philosophy of the Gita, it is the primary duty of every human being in this world, to acquire the Knowledge of the pure form of the Paramesvara, and thereby to cleanse out and purify his own Reason as far as possible. But, that is not the principal subject-matter of the Gita. At the commencement of the war, Arjuna was engulfed in a perplexity about what his duty was, namely, whether he should or should not take part in a war, which would ruin the welfare of his Atman, in the shape of Release, as a result of his committing heinous sins like the destruction of his own clan, etc., though it was the duty of every Ksatriya to fight. And I am of opinion that in order to clear this doubt, the Gita has propounded the device of performing Action in such a way that one ultimately attains Release without committing sin, namely, the Karma-Yoga founded on Knowledge, in which Devotion is the principal factor, after it had fully expounded the Philosophy of Action and Non-Action, and also the various paths of attaining Release according to pure Vedanta Philosophy, and had established that no man is free from Action, and that Action should never be given up. This exposition of Action and Non-Action, or of Morality and Immorality is called ‘Ethics’ by modern purely Materialistic philosophers. It is not that I could not have made this exposition by following the usual procedure, and explained how this principle has been established by the Gita, by commenting on the Gita stanza by stanza. But, unless one is thoroughly conversant with the various philosophical doctrines, arguments and deductions pertaining to Vedanta, Mimamsa, Samkhya, the Doctrine of Causality (karma-vipaka) and Devotion, on the authority of which the doctrine of Karma-Yoga has been established in the Gita, and the reference to which is sometimes very succinct, the full purport of the exposition made in the Gita is not easily understood. I have, therefore, scientifically divided all the various subjects or doctrines, which one comes across in the Gita, into chapters, and briefly expounded them, together with the most important logical arguments relating to them; and I have, at the same time, consistently with the critical methods of the present day, compared in brief and as occasion arose, the most important doctrines propounded in the Gita, with the doctrines propounded in other religions and philosophies. It may thus be said that the essay ‘Gita-Rahasya’ (the Esoteric Import of the Gita), which is published in the beginning of this book, is by itself an independent, though a small, book on the doctrine of Proper Action (Karma-Yoga). But, in any case, it was not possible to consider fully each individual stanza of the Gita in a general exposition of this kind. I have, therefore, at the end of the book, translated the Gita, stanza by stanza, and added exhaustive commentaries to the translations in different places, in order to explain the anterior and posterior context; or, in order to show how former commentators have stretched the meaning of some of the stanzas of the Gita in order to support their own doctrines (See Gita 3.17-19; 6.3; and 18.2); or, in order to show which of the various doctrines enunciated in the Gits-Rahasya appear how and where in the Gita, according to the catechismal method of the Gita.
ইহা নিঃসন্দেহ যে, এরূপ করিবার ফলে কোন কোন বিচার অবশ্য পুনরুক্ত হইয়াছে; কিন্তু গীতারহস্যের বিচার গীতার অনুবাদ হইতে পৃথক, এইজন্য রাখিতে হইয়াছে যে গীতারহস্যের তাৎপর্যের বিষয়ে সাধারণ পাঠকদের যে ভ্ৰম আসিয়াছে, সেই ভ্ৰম অন্য রীতিতে সম্পূর্ণ দূর হইতে পারিত না । এই পদ্ধতিতে পূর্ব ইতিহাস ও ভিত্তিসহ ইহা দেখাইবার সুবিধা হইয়া গিয়াছে যে, বেদান্ত, মীমাংসা ও ভক্তি প্ৰভৃতি বিষয়ক গীতার সিদ্ধান্ত ভারত, সাংখ্যশাস্ত্ৰ, বেদান্তসূত্র, উপনিষদ, এবং মীমাংসা প্রভৃতি মূলগ্রন্থে কিরূপে এবং কোথায় আসিয়াছে । ইহা হইতে বলা সহজ হইয়াছে যে, সন্ন্যাসমার্গ ও কর্মযোগমার্গে কি কি প্রভেদ আছে; এবং অন্যান্য ধর্মমত ও তত্ত্বজ্ঞানের সঙ্গে গীতার তুলনা করিয়া ব্যবহারিক কর্মদৃষ্টিতে গীতার মহত্বের উপযুক্ত নিরূপণ করা সরল হইয়া গিয়াছে । যদি গীতার উপর অনেক প্রকার টীকা না লিখিত হইত, এবং নানা ব্যক্তি নানাপ্রকারে গীতার নানা তাৎপর্যের প্রতিপাদন না করিতেন, তবে আমার নিজের গ্রন্থের সিদ্ধান্তের পোষক ও ভিত্তিভূত মূল সংস্কৃত ব্যাখ্যা স্থানে স্থানে উদ্ধৃত করিবার কোন প্রয়োজনই ছিল না; কিন্তু বর্তমান সময় অন্য হইতেছে; লোকদের মনে এই সংশয় হইতে পারিত যে আমি গীতাৰ্থ অথবা সিদ্ধান্ত যাহা বলিয়াছি, তাহা ঠিক বা ঠিক নহে । এইজন্যই আমি সর্বত্র স্থলনির্দেশপুর্বক বলিয়া দিয়াছি যে, আমার প্রমাণ কি; এবং প্রধান প্রধান স্থলে তো মূল সংস্কৃত বচনই অনুবাদ সহ উদ্ধৃত করিয়া দিয়াছি । এতদ্ব্যতীত সংস্কৃত বচন উদ্ধৃত করিবার আরও এক প্রয়োজন আছে । তাহা এই যে, ইহাদের মধ্যে অনেক বচন, বেদান্তগ্রন্থে সাধারণভাবে প্ৰমাণাৰ্থ লওয়া হয়, অতএব এখানে পাঠকদের ঐগুলির সহজেই জ্ঞান হইয়া যাইবে এবং ইহা দ্বারা পাঠক সিদ্ধান্তগুলিও ভালরূপ বুঝিতে পরিবেন । কিন্তু ইহা কি সম্ভব যে সকল পাঠকই সংস্কৃতজ্ঞ হইবে । এইজন্য সমস্ত গ্ৰন্থ এই ধরণে রচিত হইয়াছে যে, যদি সংস্কৃতে অজ্ঞ পাঠক সংস্কৃত শ্লোক ছাড়িয়া, কেবল ভাষাই পড়িয়া যায়, তবু অর্থে কোনও গোলমাল হইবে না । এই কারণে সংস্কৃত শ্লোকগুলির শব্দশ অনুবাদ না লিখিয়া অনেক স্থলে উহাদের কেবল সারাংশ দিয়াই চালাইতে হইয়াছে । কিন্তু মূল শ্লোক সর্বদাই উপরে রাখা হইয়াছে, এই কারণে এই প্ৰণালীতে ভ্ৰম হইবার কোনও আশঙ্কা নাই ।
It is true that by following this method, some subject-matter has been repeated; but, as I felt convinced;that I could not in any other way fully dissipate the misunderstanding, which now exists in the mind of the common reader as regards the import of the Gita, I have separated the exposition of the Gita-Rahasya (Esoteric Import of the Gita) from the translation itself; and thereby, it has become easy for me (i) to show with authorities and with former history, where and in what manner, the doctrines of the Gita with reference to Vedanta, Mimamsa, Devotion etc., have appeared in the Bharata, the Samkhya system, the Vedanta-Sutras, the Upanisads, the Mimamsa, and other original texts, (ii) to explain in a lucid way the difference between Renunciation (Samnyasa) and Action (Karma-Yoga), as also (iii) to expound in a proper way the importance of the Gita from the point of view of practical Action, by comparing the Gita with other religious opinions or philosophies. If there had not been all sorts of commentaries on the Gita, and if various persons had not interpreted the import of the Gita, each in a different way, it would have been totally unnecessary for me to quote the original Sanskrit authorities which go to support the propositions laid down by me in my book. But such a thing cannot be done in the present times; and it is likely that many may doubt the correctness of the import of the Gita or of the propositions, laid down by me. I have, therefore, everywhere pointed out the authorities which support what I say, and in important places, I have given the original Sanskrit text of the authorities with translations. As many of these dicta are usually accepted as proved truths in books on Vedanta, my secondary object in quoting them has been, that my readers should get acquainted with them in the course of reading, and find it easier on that account to remember the doctrines embodied in those statements. But, as it is not likely that all readers will be knowing Sanskrit, I have arranged my book on the whole in such a way that, if any reader who does not understand Sanskrit, reads the book, omitting the Sanskrit stanzas, there will not be any interruption anywhere in the sense; on this account, it has became necessary in many places, to remain satisfied with giving a mere summary of the Sanskrit stanza, instead of giving a literal translation of it. But as the original stanza is given in each case, there is no risk of any misunderstanding arising as a result of this procedure having been followed.
বলা হয় যে, কোহিনূর হীরা যখন ভারতবর্ষ হইতে বিলাতে পৌঁছিল, তখন উহাতে নূতন “পলকাটার” উহা জন্য পুনরায় পালিস করা হইয়াছিল; এবং দুইবার পালিস হইবার পর উহা আরও উজ্জল হইয়া গেল । হীরার পক্ষে উপযুক্ত এই ন্যায় সত্যরূপ রত্নের পক্ষেও প্ৰযুক্ত হইতে পারে । গীতার ধর্ম সত্য ও অভয় বটে; কিন্তু উহা যে সময়ে এবং যে স্বরূপে বলা হইয়াছিল, সেই দেশ-কাল প্রভৃতি পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমানের অনেক পার্থক্য হইয়া গিয়াছে; এই কারণে এখন উহার তেজ পূর্বের ন্যায় অনেকেরই দৃষ্টিতে প্ৰকাশ পায় না । কোনও কর্মের ভালমন্দ মানিবার পূর্বে, যে সময়ে ‘কর্ম করা চাই, অথবা না করা চাই” এই সাধারণ প্রশ্নই গুরুত্বপূর্ণ মনে হইয়াছিল, সেই সময়ে গীতা বলা হইয়াছে; এই কারণে উহার অনেক অংশ এখন কোন কোন লোকের নিকট অনাবশ্যক প্রতীত হয় । এবং ইহার উপরেও নিবৃত্তিমার্গীয় টীকাকারদিগের প্ৰলেপ গীতার কর্মযোগের বিচারকে আজকাল অনেকের পক্ষে দুর্বোধ্য করিয়া তুলিয়াছে । ইহা ব্যতীত কোন কোন নবীন বিদ্ধান ব্যক্তি ইহা বুঝিয়া গিয়াছেন যে, আধুনিক কালে আধিভৌতিক জ্ঞানের পাশ্চাত্যদেশে যেরূপ কিছু বুদ্ধি হইয়াছে, সেই বুদ্ধির কারণে অধ্যাত্মশাস্ত্রের ভিত্তিতে রচিত প্ৰাচীন কর্মযোগের বিচার বর্তমান কালের পক্ষে সম্পূর্ণ উপযুক্ত হইতে পারে না । কিন্তু ইহা মনে করা ঠিক নহে; এই বুদ্ধির শূন্যগর্ভতা দেখাইবার জনা গীতারহস্যের বিচার, গীতার সিদ্ধান্তসমূহের অনুরূপই পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের সিদ্ধান্তও স্থানে স্থানে সংক্ষেপে দিয়াছি । বস্তুত গীতার ধর্ম-অধর্ম বিচার এই তুলনা দ্বারা কিছু বেশী সুদৃঢ় হয় না; তথাপি আধুনিক আধিভৌতিক শাস্ত্রের অশ্রুতপূর্ব বৃদ্ধি দ্বারা যাহার দৃষ্টি ঝলসিয়া পড়িয়া গিয়াছে; অথবা আজকালকার একদেশীয় শিক্ষাপদ্ধতির কারণে আধিভৌতিক অর্থাৎ বাহ্য দৃষ্টিতেই নীতিশাস্ত্রের বিচার করা যাহাদের অভ্যাস পড়িয়া গিয়াছে, তাহারা এই তুলনা দ্বারা এটুকু তো স্পষ্ট জ্ঞাত হইবেন যে মোক্ষধর্ম ও নীতি দুই বিষয় আধিভৌতিক জ্ঞান হইতে শ্ৰেষ্ঠ; এবং তাঁহারা ইহাও জানিতে পারিবেন যে, এই কারণেই প্রাচীন কালে আমাদের শাস্ত্রকারগণ এই বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত স্থির করিয়াছেন, তাহার পরে মানবের জ্ঞানের গতি এখন পর্যন্ত পৌঁছিতে পারে নাই; কেবল ইহাই নহে, কিন্তু পাশ্চাত্য দেশেও অধ্যাত্ম দৃষ্টিতে এই প্রশ্নের বিচার এখন পৰ্যন্ত চলিয়াছে এবং এই আধ্যাত্মিক গ্ৰন্থকারদের বিচার গীতাশাস্ত্রের সিদ্ধান্তসমূহ হইতে বেশী ভিন্ন নহে । গীতারহস্যের ভিন্ন ভিন্ন প্ৰকরণে যে তুলনাত্মক বিচার আছে, তাহা হইতে এই বিষয় সুস্পষ্ট হইয়া যাইবে ।
There is a story told about the Kohinoor diamond that after it had been taken from India to England, it was again cut there, and on that account, it began to look more brilliant. This law, which is true in the case of a diamond, also applies to a jewel in the shape of truth. It is true that the religion propounded by the Gita is true and unshakeable. But, as the time at which and the form in which it was propounded, and the other attendant circumstances have considerably changed, it does not strike may as as brilliant as before. As the Gita was propounded at a time, when ‘whether to act or renounce’ was considered a question of great importance, to be determined before arriving at a decision as to which act was good and which bad, many people look upon a considerable portion of it as now unnecessary; and, as that position has been further made worse by commentaries supporting the Path of Renunciation, the exposition of Karma-Yoga contained in the Gita has become very difficult to understand for many in the present age. Besides, some of our new scholars are of opinion that as a result of the present growth of the Material sciences in the West, the deductions laid down in ancient times with reference to the Karma-Yoga, on the basis of the Philosophy of the Absolute Self, cannot possibly be fully applicable to modern conditions. In order to prove that this idea is wrong, I have briefly mentioned in various places in my exposition of the Gita-Rahasya (Esoteric Import of the Gita) the doctrines of Western philosophers, which are similar to those in the Gita. Really speaking, the exposition of Ethics in the Glta is in no way fortified by such a comparison. Yet, those people whose eyes are dazzled by the present unheard of growth of the Material sciences or who have learnt to consider the Science of Ethics, only externally, that is to say, only in its Material aspect, as a result of the present one-sided methods of education, will be made to see clearly by means of this comparison that, not only has human knowledge not yet gone beyond the doctrines laid down on this subject by our philosophers, for the simple reason that Ethics and the science of Release are both beyond Material Knowledge, but, deliberations are still going on on these questions in the West, from the Metaphysical point of view, and the opinions of these Meta-physicians are not materially different from the doctrines laid down in the Gita. This fact will be clearly borne out by the comparative exposition appearing in the different chapters of the Gita-Rahasya.
কিন্তু এই বিষয় অত্যন্ত ব্যাপক হইতেছে, এই কারণে পাশ্চাত্য পণ্ডিতদিগের মতের যে সারাংশ বিভিন্ন স্থলে আমি দিয়াছি, তাহার সম্বন্ধে এখানে এটুকু বলা আবশ্যক যে, গীতাৰ্থ প্ৰতিপাদন করাই আমার মুখ্য কাজ, অতএব গীতার সিদ্ধান্তসমূহকে প্রমাণ মানিয়া পাশ্চাত্য মতগুলির উল্লেখ আমি কেবল ইহাই দেখাইবার জন্য করিয়াছি যে, এই সিদ্ধান্তসমূহের সঙ্গে পাশ্চাত্য নীতিশাস্ত্ৰজ্ঞদিগের অথবা পণ্ডিতদিগের সিদ্ধান্তের কোন পৰ্যন্ত মিল আছে । এবং, এই কাজ আমি এই প্ৰণালীতে করিয়াছি যে, সাধারণ মারাঠী পাঠকদিগের নিকট উহার অর্থ বুঝিতে কোনও কষ্ট হইবে না । এখন ইহা নির্বিবাদ যে, এই দুইয়ের মধ্যে যে সূক্ষ্ম ভেদ আছে, -এবং আছেও অনেক - অথবা এই সিদ্ধান্তগুলির যে পূর্ণ উপপাদন বা বিস্তার আছে, তাহা জানিবার জন্য মূল পাশ্চাত্য গ্ৰন্থই দেখিতে হইবে । পাশ্চাত্য বিদ্বান বলেন যে, কর্ম-অকর্ম-বিবেক অথবা নীতিশাস্ত্রের উপর নিয়মবদ্ধ গ্ৰন্থ সর্বপ্রথমে গ্ৰীক তত্ত্ববেত্তা অরিষ্টাট্ল্ লিখিয়াছেন । কিন্তু আমার মত এই যে, অরিষ্টাট্লেরও পূর্বে, তাঁহার গ্ৰন্থ অপেক্ষা অধিক ব্যাপক ও তাত্ত্বিক দৃষ্টিতে, এই সকল প্রশ্নের বিচার মহাভারত ও গীতায় হইয়া গিয়াছিল; এবং অধ্যাত্ম দৃষ্টিতে গীতায় যে নীতিতত্ত্ব প্ৰতিপন্ন করা হইয়াছে, তদ্ব্যতীত কোনও নীতিতত্ত্ব এপৰ্যন্ত বাহির হয় নাই । ‘সন্ন্যাসীদিগের ন্যায় থাকিয়া তত্ত্বজ্ঞানের আলোচনায় শান্তিতে দিন কাটানো ভাল, অথবা নানাবিধ রাজকীয় জল্পনা-কল্পনা করা ভাল” - এই বিষয়ের যে স্পষ্ট ব্যাখ্যা অরিষ্টাট্ল্ করিয়াছেন, তাহা গীতাতে আছে; এবং সক্রেটিসের এই মতেরও গীতায় একপ্রকার সমাবেশ হইয়া গিয়াছে যে, “মনুষ্য যাহা কিছু পাপ করে, তাহা অজ্ঞান হইতেই করে” । কারণ গীতার তো ইহাই সিদ্ধান্ত যে, ব্ৰহ্মজ্ঞানের দ্বারা বুদ্ধি সম হইলে পর, মনুষ্যের দ্বারা কোনও পাপ হইতে পারে না । এপিক্যুরিয়ন এবং ষ্টোয়িক পন্থার গ্রীক পণ্ডিতদিগের এই কথাও গীতায় গ্ৰাহ্য যে, পূর্ণ অবস্থায় উপনীত জ্ঞানী পুরুষের ব্যবহারই নীতিদৃষ্টিতে সকলের পক্ষে আদর্শস্বরূপে প্ৰমাণ; এবং এই পন্থাবলম্বীগণ পরম জ্ঞানী পুরুষের যে বৰ্ণনা করিয়াছেন তাহা গীতার স্থিতপ্ৰজ্ঞ অবস্থার বর্ণনায় অনুরূপ । মিল, স্পেন্সর এবং কোঁৎ প্রভৃতি আধিভৌতিকবাদীরা বলেন যে, নীতির পরাকাষ্ঠা অথবা কষ্টি ইহাই যে, প্রত্যেক মনুষ্যকে সমগ্র মানবজাতির হিতার্থ উদ্যোগ করিতে হইবে; গীতায় বৰ্ণিত স্থিতপ্রজ্ঞের ‘সর্বভুতহিতে রতাঃ’ এই বাহ্য লক্ষণে উক্ত কষ্টিরও সমাবেশ হইয়া গিয়াছে । কান্ট এবং গ্রীনের নীতিশাস্ত্রের উপপত্তিবিষয়ক এবং ইচ্ছা-স্বাতন্ত্র্য সম্বন্ধীয় সিদ্ধান্তও, উপনিষদের জ্ঞানের ভিত্তিতে গীতাতে আসিয়াছে ।
But, as this subject is very extensive, I must explain here, with reference to the summaries of the opinions of Western philosophers which I have given in various places, that, as my principal object has been only to expound the import of the Gita, I have accepted as authoritative the doctrines laid down in the Gita, and have mentioned the Western opinions only so far as was necessary in order to show to what extent the doctrines of Western moral philosophers or scholars tally with the doctrines in the Gita; and this too has been done by me only to such an extent that the ordinary Marathi reader should experience no difficulty in grasping their import. It cannot, therefore, be disputed that those who wish to ascertain the minute differences between the two - and these differences are many - or to see the full argumentative exposition or developing-out of these theorems, must examine the original Western books themselves. Western scholars say that the first systematic treatise on the discrimination between Right and Wrong Action or on Morality was written by the Great philosopher Aristotle. But in my opinion, these questions had been examined long before Aristotle in a more exhaustive and scientific manner in the Mahabharata and in the Gita; and no moral doctrine has yet been evolved, which is different from the doctrines metaphysically expounded in the Gita. The solution given by Aristotle of the question whether it is better to spend one's life peacefully, in philosophical meditation, and living like a hermit, or to spend it in all sorts of political activities, is to be found in the Gita; and the opinion of Socrates that whatever sin is committed by man, is committed by him only as a result of ignorance, is also to be found to a certain extent in the Gita, because it is a doctrine of the Gita that it is not possible for a man to commit any sin, after his Reason has become equable as a result of the Knowledge of the Brahman. The doctrine of the Epicureans and the Stoics that the conduct of the perfect Jnanin (knowledgeable person) is a standard for everybody, from the moral point of view, is to be found in the Gita; and the description of the perfect Jnanin, given by the philosophers belonging to these sects, tallies with the description of the Sthitaprajna (Steady-in-Mind) given in the Gita. Similarly, the dictum of Mill, Spencer, Kant, and other Materialistic philosophers, that the highest peak or test of Morality consists in everybody acting so as to promote the welfare, of the whole of mankind, is included in the external characteristic of a Sthitaprajna described in the Gita in the words “sarvabhutahite-ratah” (i.e., “one busy promoting the welfare of all created beings” - Trans.); and the arguments relating to Ethics, and the doctrines regarding Freedom of Will, enunciated by Kant and Green, are to be found mentioned in the Gita, on the authority of the Knowledge contained in the Upanisads.
ইহা অপেক্ষা যদি গীতাতে আর বেশী কিছু না থাকিত, তাহা হইলেও উহা সর্বমান্য হইয়া যাইত । কিন্তু গীতা এইটুকুতেই সন্তুষ্ট হন নাই; প্রত্যুত গীতা দেখাইয়াছেন যে, মোক্ষ, ভক্তি ও নীতিধর্মের মধ্যে আধিভৌতিক গ্ৰন্থকারদের নিকট যে বিরোধের আভাস প্রতীত হয়, সে বিরোধ প্ৰকৃত নহে; এবং ইহাও দেখাইয়াছেন যে জ্ঞান ও কর্মে সন্ন্যাসমার্গীদের বুদ্ধিতে যে বিরোধ প্রতিকুলে আসে, তাহাও ঠিক নহে । গীতা দেখাইয়াছেন যে, ব্ৰহ্মবিদ্যার এবং ভক্তির যাহা মূল তত্ত্ব তাহাই নীতির ও সৎকর্মেরও ভিত্তি; এবং এই বিষয়েরও নির্ণয় করিয়া দিয়াছেন যে, জ্ঞান, সন্ন্যাস, কর্ম ও ভক্তির যথাযথ মিলনে, ইহলোকে জীবনযাপনের কোন্ মাৰ্গ মনুষ্য স্বীকার করিবে । এই প্রকারে গীতা গ্ৰন্থ প্ৰধানত কর্মযোগবিষয়ক হইতেছে, এবং এই জন্যই “ব্রহ্মবিদ্যান্তৰ্গত (কর্ম-) যোগশাস্ত্ৰ” এই নামে সমস্ত বৈদিক গ্ৰন্থ মধ্যে উহা অগ্ৰস্থান প্ৰাপ্ত হইয়াছে । গীতার বিষয়ে বলা হয় যে, “গীতা সুগীতা কর্তব্যা কিমন্যৈঃ শাস্ত্ৰবিস্তরৈঃ” - এক গীতারই সম্পূর্ণ অধ্যয়ন করাই যথেষ্ট; অবশিষ্ট শাস্ত্রসমূহের বৃথা আলোচনায় ফল কি ? এ কথা কিছু মিথ্যা নহে । অতএব যে লোকের হিন্দুধর্ম ও নীতিশাস্ত্রের মূল তত্ত্বের সহিত পরিচয় করিয়া লইতে হইবে, তাঁহাদের প্রতি আমি সবিনয় কিন্তু, আগ্রহসহ বলিতেছি যে, সর্বপ্রথম আপনি এই অপুর্ব গ্ৰন্থ অধ্যয়ন করুন । ইহার কারণ এই যে, ক্ষর-অক্ষর সৃষ্টির এবং ক্ষেত্ৰ-ক্ষেত্রজ্ঞের বিচারকারী ন্যায়, মীমাংসা, উপনিষদ ও বেদান্ত প্ৰভৃতি প্রাচীন শাস্ত্র সে সময়ে, যতদূর সম্ভব ততটা, পূর্ণ অবস্থায় আসিয়াছিল; এবং ইহার পরেই বৈদিক ধর্ম জ্ঞানমূলক ভক্তিপ্রধান এবং কর্মযোগবিষয়ক চরম স্বরূপ প্ৰাপ্ত হয়; এবং বর্তমান কালে প্রচলিত বৈদিক ধর্মের মূলই গীতাতে প্ৰতিপাদিত হইবার কারণে আমি বলিতে পারি যে, সংক্ষেপে কিন্তু নিঃসন্দিগ্ধরূপে আধুনিক হিন্দুধর্মের তত্ত্ব বুঝাইবার জন্য গীতার তুল্য দ্বিতীয় গ্ৰন্থ, সংস্কৃত সাহিত্যেই নাই ।
If the Gita had not contained anything more than this, it would still have commanded universal respect. But the Gita does not stop there. After showing that the conflict between Release (moksha), Devotion, (bhakti), and Ethics (niti-dharma) imagined by Materialistic philosophers, as also the conflict between Knowledge (jnana) and Right Action (karma) imagined by the followers of the School of Renunciation (samnyasa) were groundless, and also showing that the fundamental element in the brahmvidya (science of the Brahman), and in bhakti (the Path of Devotion) is the foundation of Ethics and good behaviour, the Gita has shown what path of life should be adopted by a man by properly harmonising Knowledge (jnana), Renunciation (samnyasa), Right Action (karma) and Devotion (bhakti). The Gita is thus essentially a treatise on Right or Proper Action (Karma-Yoga); and that is why it has been given a position of supreme importance in all Vedic treatises, which refer to it as ‘brahmavidyantargata (karma-) yoga-sastra (i.e., “the Science of Right Action included in the Science of the Brahman” - Trans.) The saying " gita sugita kartavyaa kim anyaih sastra vistaraia”, i.e., “it is quite enough if one thoroughly, studies the Gita; what is the use of dabbling in the other Sastras ?” is indeed correct; and, therefore, it is my earnest and respectful request to everyone, who wishes to become acquainted with the basic principles of the Hindu Religion and Morality, that he should first study this wonderful and unprecedented book; because, as the Gita expounds the root principles of the present Vedic Religion, as also its final aspect, based on Knowledge and giving primary importance to Devotion, and preaching the Karma-Yoga (Right Action), which (aspect) it had assumed after Samkhya, Nyaya, Mimamsa, Upanisads, Vedanta and other ancient Sastras, which dealt with the Perishable and the Imperishable (ksaraksara) and the Body and the Atman (ksetra-ksetrajna) had come to as perfect a state as possible, it may well be said that there is no other work in the whole of Sanskrit literature, which explains the principles of the present Hindu Religion in as succinct and yet as clear and unambiguous a manner as the Gita.
উল্লিখিত বক্তব্য হইতে পাঠক সাধারণতঃ বুঝিতে পরিবেন যে, গীতারহস্যের বিচারের কি প্রকারের কোন ধরণ হইতেছে । গীতার উপর যে শাঙ্করভাষ্য আছে, তাহার তৃতীয় অধ্যায়ের আরম্ভে পুরাতন টীকাকারদের অভিপ্ৰায়ের উল্লেখ আছে; এই উল্লেখ হইতে জানা যায় যে, গীতার উপর পূর্বে সম্ভবতঃ কর্মযোগ প্রধান টীকা ছিল । কিন্তু এ সময়ে এই টীকা উপলব্ধ নাই; অতএব ইহা বলিতে কোনই ক্ষতি নাই যে, গীতার কর্মযোগপ্রধান ও তুলনাত্মক বিচার ইহাই প্ৰথম । ইহাতে কতকগুলি শ্লোকের অর্থ আজকালকার, টীকাতে প্ৰাপ্ত অর্থ হইতে ভিন্ন; এবং এমন অনেক বিষয়ও বলা হইয়াছে যে, যাহা এ পর্যন্ত প্ৰাকৃত টীকাতে সবিস্তার কোথাও ছিল না । এই সকল বিষয় এবং ইহাদের উপপত্তি সকল যদিও আমি সংক্ষেপেই বলিয়াছি, তথাপি যথাশক্তি সুস্পষ্ট ও সুবোধ্য রীতিতে বলিবার উদ্যোগে আমি কোনও বিষয় উঠাইয়া রাখি নাই । এরূপ করিতে গিয়া যদিও কোথাও কোথাও দ্বিরুক্তি হইয়া গিয়াছে, তথাপি আমি উহার কোনই পরোয়া করি নাই; এবং যে সকল শব্দের অর্থ এ পর্যন্ত ভাষাতে প্ৰচলিত পাই নাই, তাহাদের পর্য্যায় শব্দ উহাদের সঙ্গে সঙ্গেই অনেক স্থলে দিয়াছি । ইহা ব্যতীত, এই বিষয়ে প্রধান প্রধান সিদ্ধান্ত সারাংশরূপে স্থানে স্থানে, উপপাদন হইতে পৃথক করিয়া দেখানো হইয়াছে । আরও, শাস্ত্রীয় ও গহনবিষয়সমূহের বিচার, অল্প শব্দে, করা সর্বদাই কঠিন এবং এ বিষয়ের ভাষাও এখনও স্থির হয় নাই । অতএব আমি জানি যে, ভ্রমবশতঃ, দৃষ্টিদোষে অথবা অন্যান্য কারণে আমার এই নূতন ধরণের আলোচনায় কাঠিন্য, দুৰ্বোধ্যতা, অপূর্ণতা এবং অন্য কোন দোষ হয়তো থাকিয়া গিয়াছে । পরন্তু ভগবদ্গীতা পাঠকদের কিছু অপরিচিত নহে - উহা হিন্দুদের নিকট সম্পূর্ণ নুতন বস্তু নহে, যাহা উহারা কখনও দেখে নাই শুনে নাই । এমন অনেক লোক আছেন, যাঁহারা নিত্য নিয়মপূর্বক ভগবদ্গীতা পাঠ করেন, এবং এরূপ ব্যক্তিও অল্প নাই, যাঁহারা ইহা শাস্ত্রীয় দৃষ্টিতে অধ্যয়ন করিয়াছেন অথবা করিবেন । এইরূপ অধিকারী ব্যক্তিদের নিকট আমার এক প্ৰাৰ্থনা এই যে, যখন তাঁহাদের হাতে এই গ্রন্থ পৌঁছিবে এবং যদি তাঁহারা এই প্রকার কোন দোষ দেখেন, তবে তাঁহা্রা কৃপা করিয়া আমাকে তাহা জানাইবেন । এইরূপ করিলে আমি উহার বিচার করিব, এবং যদি দ্বিতীয় সংস্করণ প্ৰকাশ করিবার অবসর আসে, তবে তাহাতে যথাযোগ্য সংশোধন করা যাইবে । সম্ভবতঃ কেহ কেহ মনে করেন যে, আমার কোন বিশেষ সম্প্রদায় আছে এবং সেই সম্প্রদায়ের সিদ্ধির জন্যই আমি গীতার, এক প্রকার বিশেষ অর্থ করিতেছি । এই জন্য এস্থলে এইটুকু বলা আবশ্যক যে, এই গীতারহস্য গ্রন্থ কোনও বাক্তিবিশেষ অথবা সম্প্রদায়ের উদ্দেশে লেখা হয় নাই । আমার বিবেচনায় গীতার মূল সংস্কৃত শ্লোকের যাহা সরল অর্থ হয়, তাহাই লিখিয়াছি । এই রূপ সরল অর্থ করিয়া দিলে - এবং আজকাল সংস্কৃতের কিছু বহুল প্রচার হইবার কারণে অনেকে বুঝিতে পারিবেন যে, অর্থ সরল কি না - যদি ইহাতে কোন সাম্প্রদায়িক গন্ধ আসিয়া যায়, তবে তাহা গীতার, আমার নহে । অর্জুন ভগবানকে বলিয়াছিলেন যে “আমাকে দুই চার মার্গ বলিয়া ধাঁধায় ফেলিও না, নিশ্চয়পূর্বক এমন একই মার্গ বল যাহা শ্রেয়স্কর” [গী|৩|২; ৫|১]; ইহা হইতে সুস্পষ্ট যে, গীতাতে কোন-না-কোন একই বিশেষ মত প্ৰতিপন্ন হয়া চাই । মূল গীতারই অর্থ করিয়া, নিরপেক্ষ বুদ্ধিতে আমার দেখিতে হইবে যে, ঐ একই বিশেষ মত কি প্রকার; প্রথমাবধিই কোনও মত স্থির করিয়া আমার সেই মতের সঙ্গে গীতার মিল হয় না, এইজন্য আমাকে গীতার অর্থের টানাবুনা করিতে হয় নাই । সার কথা, গীতার প্রকৃত রহস্যের – চাই সেই রহস্য কোনও সম্প্রদায়ের অথবা পন্থার হউক – গীতাভক্তদের মধ্যে প্রসার করিয়া, ভগবানেরই উক্তি অনুসারে এই জ্ঞানযজ্ঞ করিবার জন্য আমি প্ৰবৃত্ত হইয়াছি । আমার আশা এই যে, এই জ্ঞানযজ্ঞের পূর্ণ সিদ্ধির জন্য, উপরে যে জ্ঞানভিক্ষা প্রার্থনা করা হইয়াছে, আমার দেশবন্ধু ও ধর্মবন্ধু খুব আনন্দের সহিত সেই ভিক্ষা দিবেন ।
From what has been stated above, my readers will get an idea as to the general trend of the exposition contained in the Gita-Rahasya. From the reference to the opinions of the earlier commentators on the Gita, made in the beginning of the third chapter of the Samkarabhasya on the Gita, it would appear that these commentaries were in favour of Karma-Yoga (Right Action). These commentaries are not now available; therefore, there is no reason why this book of mine should not be called the first comparative exposition of the Gita, in support of Right Action. The meanings of some stanzas given in this book are different from those given in the present commentaries, and I have also had to deal with many other subjects, which have nowhere been fully explained in the Marathi language. I have attempted to explain these subjects and the arguments in support of such explanation succinctly, but in as clear and easily intelligible a manner as possible; and notwithstanding repetition, I have purposely given, in many places, synonyms for various words, of which the meanings have not yet become current or commonly known in the Marathi language, side by side with those words; and I have also clearly shown in different places the most salient theorems in these subjects, by separating them from the exposition itself. Yet, it is always difficult to discuss scientific and difficult subjects in a few words; and the Marathi, terminology of these subjects is also not yet definite. I am, therefore, alive to the fact that in this my new way of exposition, there may possibly creep in difficulty, unintelligibleness, or incompleteness, as a result of mental confusion, inadvertence, or for some other reasons. But the Bhagavadgita is not something unknown to my readers. The Gita is a book which is daily recited by many, and there are also many who have studied, or who are studying it scientifically. I have, therefore, to request such authoritative persons, that if this book comes to their hands, and they come across any flaws in it of the nature mentioned above, they will please draw my attention to them, so that, I will consider the suggestions, and will also make the necessary corrections, if there is any occasion to bring out a second edition of this book. Some persons are likely to gather the impression that I have a particular system (sampradaya) of mine own, and that I have explained the Gita in a special way, in support of that system. I must, therefore, make it clear here that the Gita-Rahasya has not been written with reference to any particular person, or any partioular system. I have put forward the clear meaning of the Sanskrit stanzas in the Gita, according to my understanding. If, as a result of this straight-forward translation and as Sanskrit is now widely understood, may people will easily see whether or not my translation is straight-forward – my exposition assumes a doctrine-supporting character, then such character is of the Gita and not mine. As the clear request of Arjuna to the Blessed Lord was: “Do not confuse me by placing before me several courses of conduct, but point out to me definitely only one course, which is the proper course” (Gi. 3.2; 5.17), it is clear that the Gita must be in support of one particular opinion (Gi. 3.31); and I have set out to explain what that opinion is, by impartially interpreting the original Gita. I have not preconceived a doctrine first, and then attempted to stretch the meaning of the Gita, because the Gita will not fit in with that doctrine. In short, my attempt is to popularise the true inner import of the Gits with the devotees of the Gita - to whatever doctrine such import may pertain - and I have come forward to make, so to say, such a Sacrifice of Knowledge (Jnana-yajna) as is referred to by the Blessed Lord at the end of the Gita; and I am sanguine that my countrymen, and co-religionists, will willingly give me this charitable offering of information in order to make my attempt flawless.
প্রাচীন টীকাকারেরা গীতার যে তাৎপর্য বাহির করিয়াছেন, তাহাতে এবং আমার মতানুযায়ী গীতারহস্যে ভেদ কেন হয় ? এই ভেদের কারণ গীতারহস্যে সবিস্তারে বলা হইয়াছে । কিন্তু গীতার তাৎপর্য সম্বন্ধে যদিও এই প্রকার মতভেদ হয়, তথাপি গীতার উপর যে নানা ভাষ্য ও টীকা আছে এবং পূর্বে ও বর্তমানকালে গীতার যে ভাষানুবাদ হইয়াছে, সেই সকল হইতে আমি এই গ্ৰন্থ লিখিবার সময়ে অন্যান্য বিষয়ে সর্বদাই প্রসঙ্গানুসারে ন্যূনাধিক সহায়তা পাইয়াছি; এই জন্য আমি সে সকলের নিকট অত্যন্ত ঋণী । এই প্রকারই যে সকল পাশ্চাত্য পণ্ডিতদিগের গ্রন্থের সিদ্ধান্ত আমি স্থানে স্থানে উল্লেখ করিয়াছি তাঁহাদেরও উপকার স্বীকার করা চাই । অধিক কি, যদি এই সকল গ্রন্থের সাহায্য না পাইতাম, তবে এই গ্রন্থ লেখা যাইত কি না – তাহাতে সন্দেহ আছে । এই জন্যই আমি প্ৰস্তাবনার আরম্ভেই সাধু তুকারামের এই বাক্য লিখিয়া দিয়াছি “সাধুদের উচ্ছিষ্ট উক্তি হইতেছে আমার বাণী ।” সদাসর্বদা একভাবের উপযোগী অর্থাৎ ত্রিকাল-অবাধিত যে জ্ঞান, তাহার নির্ণয়কারী গীতার ন্যায় গ্ৰন্থ হইতে কালভেদে মনুষ্য যে নুতন নূতন স্ফুর্তি প্ৰাপ্ত হইবে, তাহা কিছুই আশ্চৰ্য নহে । কারণ এইরূপ ব্যাপক গ্রন্থের তো ইহাই ধর্ম । কিন্তু প্রাচীন পণ্ডিতগণ ঐ গ্রন্থের উপর এতটা যে পরিশ্রম করিয়াছেন, তাহা কিছু ব্যর্থ হয় নাই । পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ গীতার যে অনুবাদ ইংরাজী এবং জর্মন প্রভৃতি য়ুরোপীয় ভাষায় করিয়াছেন, তৎসম্বন্ধেও এই ন্যায়ই উপযোগী হইতেছে । এই অনুবাদ গীতার প্রায় প্রাচীন টীকাসমূহের ভিত্তিতেই করা হয় । আবার কোন কোন পাশ্চাত্য পণ্ডিত স্বতন্ত্র রীতিতে গীতার অর্থ করিবার উদ্যোগ আরম্ভ করিয়া দিয়াছেন । পরন্তু খাঁটি (কর্ম-) যোগের তত্ত্ব অথবা বৈদিক ধর্মসম্প্রদায়ের ইতিহাস ভালরূপ বুঝিতে না পারিবার কারণে বা বহিরঙ্গপরীক্ষার উপরই ইঁহাদের বিশেষ রুচি থাকিবার কারণে অথবা এই প্রকারই অন্য কোন কারণে এই পাশ্চাত্য পণ্ডিতদিগের এই বিচার অধিকতর অপূর্ণ এবং কোন কোন স্থানে সম্পূর্ণ ভ্ৰান্ত পথপ্রদর্শক ও ভ্ৰমে পরিপূর্ণ । এখানে পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের গীতাবিষয়ক গ্ৰন্থসমূহের বিস্তৃত বিচার করিবার অথবা তাহাদের যাচাই করিবার কোনও প্রয়োজন নাই । তাঁহারা যে মুখ্য প্রশ্ন উপস্থিত করিয়াছেন, তাহার সম্বন্ধে আমার যাহা বক্তব্য তাহা এই গ্রন্থের পরিশিষ্টপ্রকরণে আছে ।
I have explained at length in the Gita-Rahasya the reasons for the difference between the Esoteric Import of the Gita according to me, and that propounded by ancient commentators. But, though there may be such a difference of opinion as to the teaching of the Gita,yet, as I have always made use more or less, of the various commentaries or criticisms on the Gita, as also of the former or modern Prakrit translations of the Gita, as occasion arose in writing the present book, I must here say that I am deeply indebted to them. I must likewise express my gratitude towards those Western philosophers, to the theorems mentioned in whose works I have now and then referred. As it is doubtful whether it would have been possible for me to write this book without the help of all those works, I have quoted in the beginning of this introduction the following words of Tukarama: “I am only repeating the stale words uttered by saints”. That a work like the Gita, which propounds Knowledge, untouched by Time, that is, equally true at all times, should, according to changing times, give fresh inspiration to human beings, is not a matter of surprise ; because, that is the characteristic feature of such universal works. But, the labour spent on such works by ancient scholars is not, on that account, wasted. This same argument applies to the translations of the Gita into English, German, and other languages made by Western scholars. Though these translations are based primarily on the ancient commentaries on the Gita, some Western scholars have also started interpreting the Gita independently. But, these expositions of the Western scholars are to a certain extent incomplete, and in some places undoubtedly misleading and wrong, whether because, they have not properly understood the principle of the true (Karma-) Yoga or the history of the Vedic religious systems, or because, they have principally inclined towards the external examination of the matter only, or, for some other similar reason. There is no occasion to consider or examine here in detail those works of Western scholars on the Gita. In the Appendices to this book, I have stated what I have to say regarding the important questions raised by them.
কিন্তু এখানে গীতবিষয়ক যে সকল ইংরাজী লেখা ইদানীং আমার দৃষ্টিতে আসিয়াছে তাহার উল্লেখ করা উচিত মনে হয় । প্রথম লেখা মিঃ ব্রুক্সের । ব্ৰুক্স থিয়াসাফিষ্টপন্থী, ইনি নিজের গীতাবিষয়ক গ্রন্থে সিদ্ধ করিয়াছেন যে, ভগবদ্গীতা কর্মযোগ প্ৰধান - এবং ইনি নিজের ব্যাখ্যানেও এই মতই প্ৰতিপন্ন করিয়াছেন । দ্বিতীয় লেখা মাদ্রাজের মিঃ এম, রাধাকৃষ্ণম্'এর; ইহা ক্ষুদ্র নিবন্ধরূপে আমেরিকার ‘সার্বরাষ্ট্রীয় নীতিশাস্ত্ৰসম্বন্ধীয় ত্রৈমাসিকে’ প্ৰকাশিত হয় (জুলাই ১৯১১) । ইহাতে আত্মস্বাতন্ত্র্য ও নীতিধর্ম, এই দুই বিষয়সম্বন্ধে গীতা ও ক্যাণ্টের সাম্য দেখানো হইয়াছে । আমার মতে এই সাম্য ইহা অপেক্ষাও কোথাও অধিক ব্যাপক; এবং ক্যাণ্ট অপেক্ষা গ্রীনের নৈতিক উপপত্তি গীতার সহিত কোথাও অধিক মিলে-জুলে । পরন্তু এই দুই প্রশ্নের মীমাংসা যখন এই গ্রন্থে করাই হইয়াছে, তখন এখানে সেগুলির পুনরুক্তি আবশ্যক নাই। এই প্রকারই পণ্ডিত সীতানাথ তত্ত্বভূষণ কর্তৃক ‘কৃষ্ণ ও গীতা’ নামক এক ইংরাজী গ্ৰন্থও ইদানীং প্ৰকাশিত হইয়াছে । ইহাতে উক্ত পণ্ডিতজীর গীতার উপর প্রদত্ত বারো ব্যাখ্যান আছে । কিন্তু উক্ত গ্ৰন্থ পড়িলে যে কেহ জানিবে যে, তত্ত্বভূষণজীর অথবা মিঃ ব্রুক্সের প্রতিপাদনে এবং আমা্র প্রতিপাদনে অনেক প্ৰভেদ আছে । আরও এই সকল লেখা হইতে জ্ঞাত হয় যে, গীতাবিষয়ক আমার বিচার কিছু অপূর্ব নহে; এবং এই সুচিহ্নেরও জ্ঞান হয় যে, গীতার কর্মযোগের দিকে লোকদের দৃষ্টি অধিকাধিক আকৃষ্ট হইতেছে । অতএব এখানে আমি এই সকল আধুনিক লেখকদিগকে অভিনন্দন করতেছি ।
Nevertheless, I must in this Preface refer to some writings in English on the Gita, which I have recently come across. One such writing is that of Mr. Brooks. Mr. Brooks is a Theosophist and he has maintained in his book on the Gita, that the Bhagavadgita is in favour of Action (Karma-Yoga); and he has expressed the same opinion in his lectures. The second thesis is by Mr. S. Radhakrishnam of Madras, which has appeared in the form of a small essay in the International Ethical Quarterly (July 1911) published in America. In this work, the similarity between the Gita and Kant on questions of Ethics and Freedom of Will has been shown. In my opinion, this similarity is even more comprehensive than has been shown in this essay; and the arguments of Green on the question of Ethics are even more consistent with the Gita than those of Kanb. But as both these questions have been dealt with by me in this book, i shall not repeat the same matter here. Pandit Sitanath Tatvabhushana has also recently published a book in English called Krsna and the Gita, which contains the twelve lectures delivered by that scholar on the Gita. But, any one who reads those books will be sure to notice, that there is a great deal of difference between the arguments contained in these books or in the book of Brooks and those advanced in mine. But, these writings show that my ideas about the Gita are not new-fangled; and, as these works are a propitious sign that people are paying more and more attention to the doctrine of Right Action (karma-yoga) in the Gita, I am taking this opportunity of congratulating these modern writers.
এই গ্ৰন্থ মাণ্ডালেতে লিখিয়া তো লওয়া হইয়াছিল, কিন্তু পেন্সিলে লেখা হইয়াছিল; এবং কাটা ছাঁটা ব্যতীত ইহাতে আরও অনেক নূতন সংশোধন করা হইয়াছিল । এইজন্য সরকারের এখান হইতে ইহা ফিরিয়া আসিলে প্রেসে দিবার জন্য শুদ্ধ নকল করিবার প্রয়োজন হয় । এবং যদি এই কাজ আমারই উপর নির্ভর করিয়া ছাড়িয়া দেওয়া হইত, তবে ইহার প্রকাশে আরও না জানি কত সময় লাগিয়া যাইত । পরন্তু শ্ৰীযুক্ত বামনগোপাল জোশী, নারায়ণকৃষ্ণ গোগটে, রামকৃষ্ণ দত্তাত্ৰেয় পরাড়কর, রামকৃষ্ণ সদাশিব পিস্পুটকর, অপ্পাজী বিষ্ণু কুলকর্ণী প্রভৃতি সজ্জনগণ এই কাৰ্যে খুব উৎসাহের সহিত সহায়তা করেন; এইজন্য ইঁহাদের উপকার স্বীকার করা চাই । এইরূপই শ্ৰীযুত কৃষ্ণাজী প্রভাকর খাড়িলকর, এবং বিশেষতঃ বেদশাস্ত্ৰসম্পন্ন দীক্ষিত কাশীনাথ শাস্ত্রী লেলে বোম্বাই হইতে এখানে আসিয়া, গ্রন্থের হস্তলিখিত পুঁথি পড়িবার কষ্ট স্বীকার করেন এবং অনেক উপযুক্ত ও মর্মার্থসূচক ইঙ্গিত দেন যাহার জন্য আমি ইঁহাদের নিকট ঋণী । আরও স্মরণ থাকে যেন, এই গ্রন্থে প্ৰতিপাদিত মত সম্বন্ধে দায়িত্ব আমারই । এই প্রকারে গ্ৰন্থ ছাপিবার যোগ্য তো হইয়া গেল, কিন্তু যুদ্ধের কারণে কাগজের অভাবের সম্ভাবনা হইল; বোম্বাইয়ের স্বদেশী কাগজের কারখানার মালিক মেসার্স ‘ডি, পদমজী এণ্ড সন্’, আমার অভিপ্ৰায় অনুযায়ী ভাল কাগজ যথাসময়ে প্রস্তুত করিয়া, এই অভাব দূর করিলেন । এই কারণে গীতাগ্রন্থ ছাপিবার জন্য ভাল স্বদেশী কাগজ পাওয়া গিয়াছিল । কিন্তু গ্ৰন্থ আন্দাজ অপেক্ষা অনেক বাড়িয়া গেল, এইজন্য আবার কাগজের অভাব পড়িল । এই অভাব পুনার পেপার মিলের মালিকগণ যদি দূর না করিতেন তবু আরও কয়েক মাস পর্যন্ত পাঠকদিগের গ্ৰন্থপ্রকাশের জন্য প্রতীক্ষা করিতে হইত । অতএব উক্ত দুই কারখানার মালিকাদিগকে কেবল আমি নহে পাঠকও ধন্যবাদ দিবেন । এখন শেষে প্রুফ সংশোধনের কাজ বাকী রহিল; ইহা শ্ৰীযুত রামকৃষ্ণ দত্তাত্ৰেয় পরাড়কর, রামকৃষ্ণ সদাশিব পিস্পুটকর এবং শ্ৰীযুত হরি রঘুনাথ ভাগবত স্বীকার করেন । ইহাতেও, স্থানে স্থানে অন্যান্য গ্রন্থের যে উল্লেখ করা হইয়াছে, মূল গ্রন্থের সহিত সে সকল ঠিক ঠিক মিল করা এবং যদি কোন অসম্পূর্ণতা রহিয়া গেল, তাহা দেখাইবার কাজ শ্ৰীযুত রঘুনাথ ভাগবত একাকীই গ্ৰহণ করেন ।. ইঁহাদের সহায়তা ভিন্ন এই গ্ৰন্থ আমি এত শীঘ্ৰ প্ৰকাশ করিতে পারিতাম না । অতএব আমি ইঁহাদের সকলকে হৃদয় হইতে ধন্যবাদ দিতেছি । এখন রহিল ছাপানো, যাহা চিত্রশালা ছাপাখানার স্বত্বধিকারী সাবধানে সত্বর ছাপিতে স্বীকার করিয়া তদনুসারে এই কাৰ্য পূৰ্ণ করিয়া দিয়াছেন; এই নিমিত্ত শেষে ইঁহারও উপকার স্বীকার করা আবশ্যক । ক্ষেত্রে ফসল হইয়া গেলেও ফসল হইতে আনাজ প্ৰস্তুত করা, এবং ভোজনাৰ্থীর মুখে পৌঁছানো পর্যন্ত, যে প্ৰকার অনেক লোকের সহায়তা অপেক্ষা করে, সেইরূপই কতক অংশে গ্রন্থকারের – অন্তত আমার অবস্থা । অতএব উক্ত প্রকারে যাঁহারা আমার সহায়তা করিয়াছেন – চাই তাঁহাদের নাম এখানে আসুক, অথবা নাই আসুক – তাঁহাদিগকে আর একবার ধন্যবাদ দিয়া আমি এই প্রস্তাবনা সমাপ্ত করিতেছি ।
It is true that this work was completed in the Mandalay Jail; but it had been written with a lead pencil, and it contained corrections and deletions in many places; so, when it had been returned to me after inspection by Government, it was necessary to make a fair copy of it for printing; and if I myself had to do that work, who knows how many months more would have passed before the work was published ! But Messrs. Waman Gopal Joshi, Narayan Krishna Gogte, Ramkrishna Dattatraya Paradkar, Ramkrishna Sadashiva Pimputkar, Appaji Vishnu Kulkarni and other gentlemen, have willingly rendered assistance in this matter and quickly finished the work, for which I am grateful to them. Similarly Mr. Krishnaji Prabhakar Khadilkar, and especially Vedasastrasampanna Diksit Kasinath Sastri Lele, specially came here from Bombay, and took the trouble of reading the manuscript, and made many useful and critical suggestions, for which I am grateful to them. The reader, however, must not forget that the responsibility of the opinions expressed in this book is mine. In this way, the book was got ready for printing, but there was the risk of shortage of paper on account of the War. This difficulty was overcome by the timely supply of paper, which was good in my opinion, by Messrs D. Padamji & Son, proprietors of the Swadeshi Paper Mills in Bombay; and it became possible to publish a book on the Gita on good Indian paper. Yet, as the book was found to be larger than estimated, while the printing was in progress, there was again shortage of paper; and, if that deficit had not been met by the proprietor of the Reay Paper Mills, Poona, my readers would have had to wait for a few months more for the publication of the book. Therefore, not only I, but also my readers, must feel grateful to the proprietors of these two mills. The task of correcting proofs still remained. This was undertaken by Messrs Ramkrishna Dattatraya Paradkar, Ramkrishna Sadashiva Pimputkar and Hari Raghunath Bhagvat. But of these, Mr. Hari Raghunath Bhagvat was alone attending to the work of verifying the references to other books made in different places, and of pointing out to me such defects as had remained. Needless to say, without the assistance of all these people, it would have been impossible for me to publish this book so soon. I, therefore, take this opportunity of sincerely thanking all these people. Finally, I must express my thanks to the owner of the Chitra-Shala Press, who undertook to publish this .book carefully and as early as possible, and who has carried out his undertaking. Just as the assistance of many persons is necessary before the grain is turned into food for the eater, though there may be a harvest in the field, so also I may safely say, is the case with writers - at any rate, that was the case with me. And therefore, I once more sincerely thank all those persons who have helped me – whether or not I have specifically mentioned their names in the above list - and I end this preface.
The preface is over. Now, though I feel unhappy at the idea that that subject, in thinking on which I have spent many years, and the constant company of and meditation over which has brought so much satisfaction to my mind, and happiness into my heart, is now going to leave my hands in the shape of a book, yet, as these thoughts have come into my mind for the sole purpose of being handed down to coming generations - with interest, or at any rate, just as they are - I am placing this philosopher's stone, in the shape of a raja-guhya (the king of mysticism) of the Vedic religion into the hands of my promising readers: uttering the canon (mantra) : “Arise, awake, and understand these blessings (conferred by the Blessed Lord)”, and with feelings of affection. In this (mysticism) lies the entire essence of Right and Wrong Action, and the Blessed Lord Himself has confidently given us the assurance, that the observance of this Religion, even to a small extent, delivers a person from great difficulties. What more can anybody want ? Keep in mind the universal rule that. "Nothing happens, unless something is done", and devote yourselves to Desireless Action; that is all.
কেবল স্বার্থপর বুদ্ধিতে যে গৃহস্থ চলিতে চলিতে হারিয়া দাঁড়াইয়া গিয়াছে, তাহার সময় কাটাইবার জন্য, অথবা সংসারত্যাগী প্ৰস্তুত করিবার জন্য গীতা বলা হয় নাই । মোক্ষদৃষ্টিতে সংসার-কর্ম কি প্রকারে করিবে তাহারই বিধান দিবার জন্য, সংসারে মনুষ্যমাত্রের প্ৰকৃত কর্তব্য কি, তাত্ত্বিক দৃষ্টিতে সেই বিষয়ের উপদেশ দিবার জন্যই তো গীতাশাস্ত্ৰ প্ৰবর্তিত হইয়াছে । অতএব আমার এইটুকুই মিনতি যে, পূর্ব অবস্থাতেই – উঠ্তি বয়সেই - প্ৰত্যেক মনুষ্য গৃহস্থাশ্রমের অথবা সংসারের এই প্ৰাচীনশাস্ত্র যত শীঘ্ৰ সম্ভব, না বুঝিয়া যেন নীরব না থাকেন ।
The Gita was not preached either as a pastime for persons tired out after living a worldly life in the pursuit of selfish motives, nor as a preparatory lesson for living such worldly life, but in order to give philosophical advice as to how one should live his worldly life with an eye to Release (Moksha), and as to the true duty of human beings in worldly life. My last prayer to everyone, therefore, is, that one should not fail to thoroughly understand this ancient science of the life of a householder, or of worldly life, as early as possible in one's life.
বাল গঙ্গাধর তিলক
সংবৎ ১৯৭২ বিং (1915)
পুনা, অধিক বৈশাখ
সংবৎ ১৯৭২ বিং (1915)
পুনা, অধিক বৈশাখ
প্রথম ভাগ : গীতারহস্য অথবা কর্মযোগশাস্ত্র
1)বিষয়প্রবেশ (Introductory)
7)কাপিলসাংখ্যশাস্ত্র কিংবা ক্ষরাক্ষরবিচার বিচার (Kapila-Samkhya Philosophy or Consideration of Mutable & Immutable)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ