মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

24 July, 2020

মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র

মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র
আমার মনের মধ্যে নবী মুহাম্মদ এর প্রতিচ্ছবি অনেকটা এরকম উজ্জ্বল চেহারার সৌম্য শুভ্র শ্মশ্রুমণ্ডিত মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ। স্বভাবে তিনি বিনয়ী দয়ালু। তিনি তার অনুসারীদের উপদেশ দেন দুখী মানুষকে দয়া করতে, ভালবাসতে, তাদের প্রতি সহনশীল হতে। তিনি ন্যায়বিচারের প্রতীক। কুসংস্কারাচ্ছন্ন আরবদের মাঝে তিনি এসেছেন সভ্যতার প্রদীপ নিয়ে, এসেছেন তাদেরকে আলোকিত করতে। তার সংস্পর্শে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম মানুষটিও বদলে যায়।
বাস্তবতার নিরিখে এই কল্পিত প্রতিচ্ছবি অনেকটাই ভুল। ইসলামিক সূত্রগুলো যদি মোটামুটি সত্যি বলে থাকে, তাহলে আমার মনের যুক্তিশীল অংশটা বলবে, নবী মুহাম্মদ পুরোপুরি এমন ছিলেন না। বরং অনেকক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এই কল্পনার সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি যতটা বিনয়ী দয়ালু ছিলেন, সম্ভবত তার চেয়ে বেশী ছিলেন নির্দয় উদ্ধত। তিনি তার সাহাবিদের হয়তো একবার দয়া করতে কিংবা ভালবাসতে কিংবা সহনশীল হতে বলেছেন, কিন্তু বিভীষিকা প্রদর্শনে কিংবা নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিতে কিংবা ঘৃণা ছড়াতে বলেছেন অন্তত দশবার।
নবী মুহাম্মদ তার নামাজের শেষে অসংখ্যবার দোয়া করেছেন যেন আরবের পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী মুদার গোত্রে ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ নেমে আসে, যেন তারা ধ্বংস হয়। বোখারির একটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, যার স্ত্রিনশট আমি কমেন্টে উল্লেখ করবো, ‘রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক মাস পর্যন্ত আরবের কয়েকটি গোত্রের প্রতি বদদোয়া করার জন্য নামাজে রুকুর পর কুনুত পাঠ করেছেন।তিনি আরো দোয়া করেছেন, মুশরিকদের ঘর কবর যেন আগুনে পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়। এছাড়া অসংখ্য হাদিসে তিনি ইহুদি কাফিরদের প্রতি লানত বা অভিশাপ বর্ষণ করেছেন। স্বয়ং কোরানেরও একাধিক আয়াতে আল্লাহ্ কর্তৃক এদেরকে অভিশাপ দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তুচ্ছ মানুষজনকে এতো অভিশাপ দিয়ে কী সুখ পেয়েছেন, কে জানে!
সূত্রঃ এক
০১) সহিহ বোখারি ৯৫২, ২৭৩১, ৩১৪৮, ৪২৪৩ ৫৭৬৭ নং হাদিস।
০২) সহিহ বোখারি ৩৭৮৯-৯০, ৩৭৯৪, ৩৭৯৬ ৬৮৪০ নং হাদিস; সহিহ মুসলিম ১৪২০-২১ নং হাদিস।
০৩) সহিহ বোখারি ২৭৩০ ৩৮১১ নং হাদিস; সহিহ মুসলিম ১৩০০-০২ নং হাদিস।
০৪) সহিহ বোখারি ৪২৩, ৪২৪, ৩২০৮, ৩২১৪ ৪২৭৮ নং হাদিস।
০৫) সুরা বাকারা ৮৮-৮৯, ১৫৯ ১৬১ নং আয়াত; সুরা নিসা ৫২ নং আয়াত; সুরা মায়েদাহ ৬০ নং আয়াত।
নবী মুহাম্মদ পারস্যের সম্রাটের প্রতি বদদোয়া করেছেন এবং হিজড়া পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদের উদ্দেশ্যে অভিশাপ দিয়েছেন। নিষেধ সত্ত্বেও একদল লোক আকাবার মরুপ্রান্তরে আগে পানি সংগ্রহে গেলে তিনি তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। এছাড়া জনৈক ব্যক্তি নামাজের সময় সামনে দিয়ে গাধায় আরোহণ করে চলে যায় বলে তিনি তাকে অভিশাপ দিয়েছেন, যার দরুন লোকটি চিরতরে পঙ্গু হয়ে পড়ে। এভাবে বারবার অভিশাপ দেয়া তথা অকল্যাণ কামনার মধ্যে মহত্ত্বের কোন পরিচয়টি পাওয়া যায়, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।
সূত্রঃ দুই
০১) সহিহ বোখারি ৬৪ ৫৪৬৫-৬৬ নং হাদিস।
০২) সহিহ মুসলিম ৬৭৮০ নং হাদিস।
০৩) সুনানে আবু দাউদ ৭০৫-০৭ নং হাদিস।
ইহুদিদের প্রতি নবী মুহাম্মদের বিদ্বেষ সর্বজনবিদিত। এই অবিশ্বাস্য গভীর বিদ্বেষের পরিচয় পাওয়া যায় বেশ কয়েকটি হাদিসে, যার একটিতে তিনি বলেছেন, “কেয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইয়াহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন ইয়াহুদি পাথরের আড়ালে আত্মগোপণ করে থাকলে পাথর বলবে, ‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইয়াহুদি রয়েছে, তাকে হত্যা করো’” চিন্তা করা যায়!
ইহুদি গোত্র কুরাইজার প্রতিটি সাবালক পুরুষকে হত্যা এবং নারী-শিশুদের ভাগবাটোয়ারায় সমর্থন করে তিনি তার কথা কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখেছেন। ইতিহাস থেকে এই নৃশংসতার ঘটনা কখনোই মুছে যাবে না।
সূত্রঃ তিন
০১) সহিহ বোখারি ২৭২৪-২৫ নং হাদিস; সহিহ মুসলিম ৭০৭১-৭৪ নং হাদিস।
০২) সহিহ বোখারি ২৮২৯, ৩৫৩২ ৩৮২১ নং হাদিস; সুনানে নাসায়ি ৩৪৩০-৩১ নং হাদিস।
অসংখ্য হত্যার সাথে নবী মুহাম্মদ নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। যারা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে, তার স্পষ্ট নির্দেশ, তাদেরকে হত্যা করতে হবে। তিনি তার অধিকাংশ সমালোচক কবিকে গুপ্তঘাতক দিয়ে নিকেশ করেছেন। এদের মধ্যে কবি আসমা বিনতে মারওয়ানকে রাতের আঁধারে নিহত করেছেন। হতভাগিনী এই মহিলাটি তখন তার সন্তানকে দুগ্ধপান করাচ্ছিলেন। এটি দেখে একটি লোকেরও দয়া হয়নি, কী আশ্চর্য!
প্রতিপক্ষের উপর ভোররাতে অতর্কিত আক্রমণ ছিল নবী মুহাম্মদের বিশেষ কৌশল। সাহাবিগণ এই কৌশল প্রসঙ্গে মন্তব্য করলেন যে, এতে করে শত্রুপক্ষের নারী শিশুগণ মারা যেতে পারে। তিনি উত্তর দিলেন, ‘তারাও তাদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভূক্ত এর দ্বারা হয়তো তিনি জিহাদিদের জন্য নারী শিশুহত্যার ক্ষেত্রে দায়মুক্তির মতো একটা ব্যবস্থা রেখেছেন।
সূত্রঃ চার
০১) সহিহ বোখারি ২৮০৮, ৬৪৫৪ ৬৬৭১ নং হাদিস; সহিহ মুসলিম ৪২২৮ ৪২৩০ নং হাদিস।
০২) সহিহ বোখারি ২৮১৯-২০, ২৯৯০ ৩৮৪৩ নং হাদিস; সুনানে আবু দাউদ ১২৪৯ নং হাদিস।
০৩) সহিহ মুসলিম ৪৩৭০, ৪৩৯৯-০১ ৪৫১৪-১৫ নং হাদিস।
না খাইয়ে মারার লক্ষ্য নিয়ে তিনি প্রতিপক্ষের অসংখ্য খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেন, শত্রুর উপাসনালয় অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ধ্বংস করে দেন। এটা ছিল তৎকালীন আরবে প্রচলিত যুদ্ধরীতির মারাত্মক বরখেলাপ। কয়েকজন বেদুইন জনৈক রাখালকে হত্যা করে নবী মুহাম্মদের উট নিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি এই কাজের জন্য অপরাধী বেদুইনদেরকে যে শাস্তি দেন, তার ভয়াবহতার কোন তুলনা হয় না। তিনি তাদের হাতপা কেটে চোখ উপড়ে মরুভূমির উপর ফেলে রাখার নির্দেশ দেন। তারা পানি চাইলেও তাদেরকে কোন পানি পান করতে দেয়া হয়নি। পিপাসার্ত হয়ে এই বেদুইনগুলো মারা যায়।
সূত্রঃ পাঁচ
০১) সহিহ বোখারি ২১৭৫ ৩৭৩৮ নং হাদিস।
০২) সহিহ বোখারি ২৮১১, ৩৫৪৯ ৪০১৬ নং হাদিস।
০৩) সহিহ বোখারি ২৩৩, ২৮০৯ ৩৮৭৮ নং হাদিস; সুনানে আবু দাউদ ৪৩১৬ নং হাদিস।
যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করার ইতিহাসও রয়েছে নবী মুহাম্মদের জীবনে। বদরের যুদ্ধে বন্দীদের মধ্যে অজ্ঞাত কারনে দুজনকে তার নির্দেশে কোনরকম বিচার ছাড়াই হত্যা করা হয়। আর যুদ্ধবন্দী নারীদেরকে ধর্ষণের অনুমতি দিয়ে তিনি নিশ্চয়ই তার কৃত সর্বোচ্চ অপরাধটি সম্পন্ন করেন।
সূত্রঃ ছয়
০১) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় খণ্ডের ৫৬৮ পৃষ্ঠা।
০২) সহিহ বোখারি ২৩৭৪, ৩৮৩২, ৪০১২ ৪৮৩০ নং হাদিস; সুনানে নাসায়ি ৩৩৩৪ নং হাদিস।
এতদসত্ত্বেও নবী মুহাম্মদকে নিয়ে আমার এই কল্পণার প্রতিচ্ছবি বিধ্বস্ত হোক, এটা আমি কখনোই চাইবো না। বরং চাইবো, তিনি আমার হ্নদয়ের একটা অংশে এমনই বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিরাজ করুন, যা আমি ছোটবেলা থেকে তার সম্পর্কে জেনে এসেছি। আমি নবী মুহাম্মদের শুধু ভালো কাজগুলোকে স্মরণ রাখবো। এসবকে স্মরণ রেখে আমি দুখী মানুষের দুঃখে সমব্যথী হবো, মানুষকে ভালোবাসবো, মানুষের প্রতি সহনশীল আচরণ করবো।
আমি জানি, আমার কথাবার্তা নিতান্তই পরস্পরবিরোধী, অযৌক্তিক হাস্যকর। প্রকৃতপক্ষে আমি সর্বক্ষণ যুক্তিনির্ভর হয়ে রোবটের জীবনযাপণ করতে আগ্রহী নই, সজ্ঞানেই। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নেলসন ম্যান্ডেলার সংগ্রাম এবং দারিদ্র দূরীকরণে অমর্ত্য সেনের গবেষণার কথা স্মরণ রাখি আমি। অতিবৃদ্ধ বয়সে ডিভোর্স শেষে তাদের পুনঃর্বিবাহের কথা স্মরণ রাখি না।
অবশ্য বৃদ্ধবয়সে পুনঃর্বিবাহ আর সুচিন্তিত গণহত্যার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। তারপরও আমি নবী মুহাম্মদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কেননা আমি প্রায়ই যুক্তির সীমাকে স্পর্শ করতে ব্যর্থ হই। এছাড়া কোন মানুষকে আমি নিখুঁত বলি না। নবী মুহাম্মদের পাপ তার পূণ্যকে ছাড়িয়ে গেছে কিনা, নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু আমি তার জীবনী ভালোভাবে পড়ে দেখেছি। এর ভিত্তিতে তাই এটুকু শুধু বলতে পারি, আরব জাতির অবিসংবাদিত নেতা হওয়ার অধিকার তার রয়েছে।
পর্যাপ্ত অর্থোপার্জনের পর আরেকটি অযৌক্তিক কাজ করবো। তা হলো, আমি নবী মুহাম্মদের রওজা জেয়ারত করতে মদিনায় এবং খালিদ বিন ওয়ালিদের কবর পরিদর্শন করতে সিরিয়ার হিমসে যাবো। মানুষ হয়ে যেহেতু জন্মেছি, মাঝে মাঝে যুক্তিহীন ভুল কাজ তো করবোই।
একদিন নবী মুহাম্মদ তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সারগিয়াস বসে মদ পান করছিলেন। এক পর্যায়ে মুহাম্মদ মদে বেহুঁশ হয়ে পড়লে কথিত আছে একজন সৈনিক নবী মুহাম্মদের বন্ধু সারগিয়ানকে তরোয়াল দিয়ে হত্যা করে তরোয়ালটি মুহাম্মদের পাশে রেখে দেয়। মুহাম্মদের হুঁশ ফিরলে সৈনিকটি দাবী করে মুহাম্মদ উন্মত্ত অবস্থায় তার বন্ধুকে খুন করেছে। কিন্তু মুহাম্মদ নেশাগ্রস্থ থাকায় তিনি স্মরণ করতে পারছিলেন না সৈনিকটির দাবী সঠিক নাকি মিথ্যে কথা বলছে ধারণা করা হয় এসব কারণেই মদকে নিষিদ্ধ করতে কুরআনে আয়াত নাযিল করা হয়েছিলো। ১৯০৮ সালে নিউওয়র্ক টাইমসে সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিলো যেখানে বলা হয়েছিলো, ‘এটি একটি দু:খিত গল্প প্রকৃতপক্ষে। মোহাম্মদ ছিলেন একজন মাতাল, তিনি এমনকি তার ভাল বন্ধুকে মেরে ফেলেছিলেন কিনা তাও জানতেন না হত্যার ইতিহাসটি নিউয়র্ক টাইমস এভাবে লেখে, ‘The famous print of the year, 1508, is an illustration of the story of the Prophet Mohammed and the Monk Sergius. Mohammed, when in company with his friend Sergius, drank too much wine and fell asleep. Before he awakened a soldier killed Sergius and placed the sword in Mohammed's hand. When the prophet wakened the soldier and his companions told him that while drunk he had slain the monk. Therefore Mohammed forbade the drinking of wine by his followers.

নিউইয়র্ক টাইমসের সেই আর্টিকেল পড়ুন এখান থেকে- https://timesmachine.nytimes.com/timesmachine/1908/11/01/104765880.pdf
১৫০৮ সনে আঁকা মুহাম্মদ সারগিয়াসের কাহিনীর চিত্রটি আমি লেখার সঙ্গে দিয়েছি। ইসলামের এই কাহিনীটি এক সময় বহুল শ্রুত ছিলো। কিন্তু কালক্রমে ইসলামের এসমস্ত গল্পগুলোকে আড়াল করা হয়েছে। আমি জানি এখনি একদল বামাতী সৈনিক আমেরিকার কোন কাগজের বিশ্বস্ততা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা শুরু করবে। তাদের ভগ্নিপতি ইসলামিস্টরাও ইহুদীনাসারাদেরলেখা কোনভাবেই বিশ্বাস করবে না্। কারণ নাসারারা ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত! তাই সহি হাদিস থেকে দেখাই নবী মুহাম্মদকে উহুদের যুদ্ধের সময়ও সাহাবীরা মদ দিয়ে তাকে আপ্যায়ন করেছিলো তার দলিল। সহি মুসলিম শরীফে আছে, ''We were with the Prophet of Allah, and He was thirsty, and a man said: O prophet of Allah, Do you want to drink wine? Prophet of Allah said: Yes.The Man went to get the wine. The Prophet of Allah said: Make it Intoxicated. And He (Muhamad) Drank (Muslim-3753).” 
মজাটা হচ্ছে এই হাদিসগুলো বাংলায় অনুবাদ করার সময় মদকে নির্জলা পানি বানিয়ে দিয়েছে। আপনারা বাংলা অনুবাদে দেখবেন সেখানে লেখা হয়েছে নবী তৃষ্ণার্ত্ব অবস্থায় পানি পান করতে চাইছেন। আরবী ‘khamra’ শব্দটিকে চাতুরীর সঙ্গে পানি অনুবাদ করলেও হাদিসে লেখা ‘khamra’ শব্দটি মদকে বুঝায়। হাদিসে ‘Nabeed’ শব্দটিও আছে যেটাকে ওয়াইন হিসেবে বুঝানো হয়। এই লুকোচুরি জোচ্চুরি কারণ ইসলামে মদ নিয়ে পরবর্তীকালে ট্যাবু সৃষ্টি হয় যার কারণে মদ নিষিদ্ধ হবার আগে যে স্বয়ং নবী মুহাম্মদ মদ পান করেছিলেন সেটাকেই এখন গোপন করতে হচ্ছে। হযরত আয়েশা বর্ণিত হাদিসে দেখা যাচ্ছে নবীকে সকালে রাত্রে আয়েশা মদ পরিবেশন করতেন। ‘There are many incidents, such as Aisha pours wine for the prophet of Allah in morning and at night (Muslim-Drinks-3745). 
Also Aisha brought wine tothe Prophet from inside the Mosque (Muslim-AlHayd-451). 
আগেই বলে রাখি প্রকাশনা ভেদে হাদিস নম্বর নাও মিলতে পারে। তাই মুসলিম শরীফে পানীয় অধ্যায়থেকে মূল হাদিসগুলো খুঁজে নেওয়াই ভালো হবে। যাই হোক, মদ নিষিদ্ধ হয়েছিলো বেশ কয়েকটি কারণে তার অন্যতম মুহাম্মদের সেই বন্ধুর কাহিনী, আলীর মসজিদে মাতলামী হযরত উমারের মদের প্রতি বিরূপতার কারণে। উমার চেয়েছিলো কুরআনে যেন মদ নিষিদ্ধের আয়াত নাযিল হয়। তাই ঘটেছিলো। পরবর্তীকালে উমারের শাসনকালে উমার মদ বিষয়ে কঠরতা অবলম্বণ করেন। নিজের পুত্র মদ পান করায় কথিত আছে তাকে পিটিয়ে নিজ হাতে হত্যা করেন। ইসলামে মদের প্রতি এইরকম ট্যাবু সৃষ্টি সূচনা সম্ভবত উমারের শাসনকাল থেকেই। যদিও ইসলামী খিলাফতে মদ কোনকালেই বন্ধ হয়নি। নিষিদ্ধ হওয়াতে সেটা গোপনে আড়ালে আবডালে চলে গেছে। মুসলিম খলিফাদের মধ্যে মদপ্য সংখ্যায় নেহাত কম নয়। তবে সবটাই পর্দার আড়ালে। আবার প্রয়োজনে জনগণের সঙ্গে ইসলাম দিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে মদের প্রতি কঠরতা প্রদর্শন তারা করেছে। জনগণের মদ পানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নিজেরাই আকন্ঠ মদ পান করে। খিলাফতে রাশেদীনের খলিফারাই কেবল নয়, পরবর্তীকালের আধুনিক যুগের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর শাসকরাই মদ নিয়ে চরম ভন্ডামীপূর্ণ রাজনীতিটা করেছেন। বাকীদের উদাহরণ না দিয়ে আমাদের উপমহাদেশের উদাহরণ দেই তাহলেই চলবে। পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্ট মাছ যেমন পানিতে থাকে তেমন করে মদে ডুবে থাকতেন। সে- তিনি পাকিস্তানে মদ নিষিদ্ধ করেছিলেন জনগণের কাছে সাচ্চা মুসলমান সাজতে। জনগণও এই মদপ্যকে সাচ্চা মুসলমান হিসেবে দেখতে চেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে মদ জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো মুসলমা্নদের জন্য। পাকিস্তান বাংলাদেশে মদ এরপর পুরোপুরি অন্ধকার জগতের হাতে চলে যায়। মদ ছাড়া বাংলাদেশের এখন কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দই হয় না। হলুদের অনুষ্ঠানে মধ্যরাতে বীয়ার পান একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। এই মদকে কিনতে হয় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। কাজটি বেআইনি তাই সব সময় গোপনে সাড়তে হয়। মদ নিষিদ্ধ হওয়াতে পুলিশ প্রশাসন এটিকে তাদের ঘুষের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছে। অবৈধ বিধায় মদ হয়ে উঠেছে চড়া মূল্যের। সমাজে মদের এই উচ্চমূল্য পুলিশের বাড়াবাড়িতে হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়ার মত মাদক তার জায়গা নিয়েছে। এগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা। গোটা মুসলিম বিশ্বই মদের উপর ভেসে থাকলেও সবখানেই মদ নিষিদ্ধ। অথচ মদকে কুরআন কোনভাবেই মন্দ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেনি। কুরআন তো মদ জুয়াকে মানুষের জন্য উপকারীও বলেছে। يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ الْعَفْوَ كَذَلِكَ يُبيِّنُ اللّهُ لَكُمُ الآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ  [তারা তোমাকে মদ জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, দুটোয় রয়েছে বড় পাপ মানুষের জন্য উপকার। আর তার পাপ তার উপকারিতার চেয়ে অধিক বড়। আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে। বল, ‘যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর (:২১৯)]
অর্থ্যাৎ, মদ জুয়া আল্লার কাছে উপকারী হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। কিন্তু এই দুটি মাধ্যমকে শয়তান কাজে লাগিয়ে মানুষের ক্ষতি করতে সক্ষম হয়। মুহাম্মদ মাতাল হয়ে জানতেই পারেননি তিনি বন্ধু সারগিয়াসকে হত্যা করেছিলেন কিনা এটা মদের দোষ নাকি ভোক্তার পরিমিতি বোধের দোষ? ইসলামে মদকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে মদের কোন মন্দ দিকই দেখাতে পারেনি। বরং বেহস্তবাসীকে সুস্বাদু মদ দিয়ে আপ্যায়িত করার কথা বলা হয়েছে। মদ খারাপ হলে বেহেস্তে কেন সেটা খেতে দিবে? একই জিনিস পৃথিবীতে খেলেই বা সমস্যা কি? অবশ্য এমন করে খাওয়া উচিত নয় যাতে করে হুঁশই ছুটে যায়!


মিশরের গোলকিপার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার মদের বোতল প্রত্যাখান করেছে। তিউনিশিয়ার খেলোয়াররা রোজা রেখে খেলে আর ইফতারের সময় আহত হবার ভান করে খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙ্গে। মুসলমানরা যদি বৃটিনে, রাশিয়া, আমেরিকা, চীন এরকম বৃহৎ দেশগুলোর মালিক হতো তাহলে অমুসলমানদের প্রতিনিয়ত এরা মনে করিয়ে দিতো, এই পৃথিবীটা তাদের নয়! ফিফা, ওলেম্পিক, আইসিসিতে মুসলমান দেশগুলো হর্তাকর্তা হলে এরা রোজার মাসে সব রকম খেলাধুলাই বন্ধ করে দিতো। আজানের সময় ব্রেক, মদ বিয়ারের স্পনন্সরশীপ বাতিলসহ সব রকমের ইসলামী বিশ্বাসকে এরা অমুসলমানদেরও মানতে বাধ্য করত। অনেক মুসলিম দেশে এই রকম প্রতিক্রিয়াশীল চর্চা অব্যাহত আছে। অধিক জন্মহার মুসলমানদের সংখ্যা ইউরোপে শীর্ষে এনে দিবে। হাদিসে অধিক জন্মদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে মুসলমানদের। নবী বলেন, ‘সেই মেয়েদের বিয়ে কর যারা প্রেমময়ী এবং উৎপাদনশীল। কারণ আমি তোমাদের দিয়ে সংখ্যায় অন্যদের পরাস্ত করব’ (সুনান আবু দাউদ, বই ১১ হাদিস ২০৪৫)
এই অধিক সংখ্যার জোরে হারাম হালালে, কাফের মুমিনে ইউরোপকে বিভক্ত করে তুলবে। এই বিশ্ব মুসলমানদের হাতে চলে গেলে কেমন হবে তা ইরান, সৌদি আরবের মত কট্টর ইসলামী শাসন দেখে অনুমান করতে পারেন। এসব দেশে কোন অমুসলমানের মুসলমানের মত সমঅধিকার মানা হয় না। তারা রাষ্টের শাসক হতে পারে না। বাংলাদেশ ইসলামিক রিপাবলিক না হলেও কোন অমুসলমান রাষ্ট্র প্রধান হতে পারবে না জনগণের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে। অথচ লন্ডনের মেয়র একজন মুসলমান! আইএস তালেবান হচ্ছে সবচেয়ে পার্ফেক্ট ইসলামী শাসন। সৌদি ইরানকে জাতিসংঘকে মান্য করতে হয়, ব্যবসা বাণিজ্য করতে গিয়ে কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্বও করতে হয়। তাই তাগুদি ব্যাপারে তাদের আপোষ করতেই হয়। আইএস তালেবান পৃথিবীবাসীকে ১৪০০ বছর আগের একটা চিত্র দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এটাই হচ্ছে ইসলাম। প্রকৃত ইসলামী শাসন কেমন সেটা সৌদি আরব ইরানকে দেখে ৮০ ভাগ বুঝা যাবে। বাংলাদেশ পাকিস্তানের মত দেশগুলো অমুসলমানদের প্রতিদিন একবেলা করে বুঝিয়ে দিয়েছে এই দেশ তোদের না, এটা মুসলমানদের দেশ
ইসলাম পৃথিবীতে দাস ব্যবস্থাকে আবার ফিরিয়ে আনবে। যুদ্ধাপরাধ ইসলাম হালাল করেছে। বিষয়টা একটু ঠান্ডা মাথায় একবার ভাবুন। মধ্যযুগের যুদ্ধাবস্থা খুব বর্বর ছিলো। পরাজিতদের দাসদাসী বানিয়ে বিক্রি করে দেয়া ছিলো স্বাভাবিক ঘটনা। পরাজিত নারীদের ধর্ষণ করা ছিলো বিজিতদের ন্যায্য পাওনা। সেযুগ পেরিয়ে এসে মানব সভ্যতা এই কাজগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্রে অপরাধ হিসেবে চিহিৃত করেছে যার বিচার করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপরাধীদের এখনো ধরে ধরে বিচার করা হয়। বাংলাদেশের মু্ক্তিযুদ্ধে ঘটা যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে। এসব অপরাধ মধ্যযুগে তেমন কোন অপরাধ বলেই ধরা হতো না। সেই মূল্যবোধটাই যখন একটা ধর্ম তাদের অনুশাসনে, তাদের রাষ্ট্রীয় নীতিতে ঐশ্বি নির্দেশ হিসেবে ঢুকানো থাকে সেটা কতখানি বিপদের কথা একবার ভাবুন। ইসলামে গণিমতের মাল হালাল। অথচ এরকম কাজগুলো আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞায় মারাত্মক অপরাধ। মানুষকে বিক্রি করে দেয়া আজকের যুগে সবচেয়ে ঘৃণ্যিত অপরাধ। অথচ ইসলামে এই ব্যবস্থা তাত্ত্বিকভাবে আজো নিষিদ্ধ নয়। যে কোন র্যা ডিক্যাল ইসলামী শাসন চাইলেই এই ব্যবস্থা চালু করলে ধর্মের নৈতিক অনুমোদন তার থাকবে। এরকম অনুমোদন অন্য কোন ধর্মে পাওয়া যাবে না। অন্য ধর্মগুলো ইসলামের মত রাজনীতি করেনি। খুবই ছোট পরিসরে আইএস দাস ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে এনেছিলো। তারা ইয়াজিদি নারীদের যৌনদাসী করেছিলো। তাদের এই কাজগুলো মানবাধিকার বিরোধী হলেও ইসলামী শাস্ত্র মতে সম্পূর্ণ হালাল। তাই ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মত ব্যক্তিগত প্রথা ব্রত পালনের ধর্ম নয়। এটি রাজনীতি, দেশ দখলের কথা বলে। অমুসলমান নারীদের যৌনদাসী করতে বলে। তাদের দাস হিসেবে মুসলমানরা বিক্রিও করে দিতে পারে। আগামী পৃথিবীতে তাই ফান্ডামেন্টালিস্ট মুসলমানদের হাত ধরে গণিমত, যৌনদাসী, জিজিয়া করসহ দাস প্রথা আবার ফিরে আসবে। বাকী মুসলমান যারা ঠিক ফান্ডামেন্টালিস্ট নয় তারা অধিক জন্মহার দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে তাদের ধর্মীয় প্রভাব অন্যদের উপর চাপাতে শুরু করবে। পৃথিবী সমস্ত বিষয়ে, আর্ট খেলাধুলা সংস্কৃতি সাহিত্যে ইসলামীকরণ করতে চাইবে। প্রবলভাবে অমুসলমানদের এরা জিন্মি করে তুলবে। প্রতিনিয়ত অমুসলমানদের মনে করিয়ে দিবে, এই পৃথিবীটা মুসলমানদের। তাই সংঘাত অনিবার্য। একদিকে র্যা ডিকেল মুসলিম অপরদিকে হালাল শপের ভোক্তা জিন্স টিশার্ট পরা মুসলিম। এই দুই- সভ্যতার সংকট। এই দুই কিসিমের মুসলিমই নতুন করে পৃথিবীকে ভাষা সংস্কৃতি জাতীয়তাবাদের সংকট ঘনিভূত করে তুলবে। আগামী পৃথিবীর জন্য তাই কোন সুসংবাদ দেখছি না।
অনেকেই ইউরোপে ডানপন্থিদের উত্থানে কিংবা ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থানে হায় হুতাশ প্রকাশ করেন। বাকী ধর্মগুলো সঙ্গে ইসলামের মৌলিক পার্থক্য কি সেটা আগে বুঝার চেষ্টা করে ইসলামী মৌলবাদের বিপদের সঙ্গে বাকীগুলোর পার্থক্য বুঝতে পারবেন। বছর ভারতের বহু মন্দিরে মুসলমানদের জন্য ইফতার আয়োজন তারাবির নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। এরকম সম্প্রীতির প্রচেষ্টা আসলে পুরোটাই বিফলে যাবে কারণ পৃথিবীতে যতদিন ধর্ম থাকবে ততদিনই সাম্প্রদায়িকতাও থাকবে। তাই ধর্মকে রেখে সম্প্রীতি কোনভাবেই সম্ভব না। তবু এরকম সম্প্রীতির চেষ্টা কি মুসলমানদের পক্ষে করা সম্ভব? আমি সমস্ত মুসলমানদের কথা বলছি যারা আদতে ধর্ম বিশ্বাসী হলেও সত্যিকারের সম্প্রীতি পছন্দ করেন এবং বিশ্বাস করেন অমুসলমানদের সঙ্গে সম্প্রীতির সম্পর্ক প্রয়োজন। কিন্তু তাদের পক্ষেও কি সম্ভব মসজিদে একটা পুজার আয়োজন করার? নিদেন পক্ষে হিন্দুদের জন্মাষ্টামী কিংবা খ্রিস্টানদের বড়দিনের একটা অনুষ্ঠান মসজিদে আয়োজন করা? কস্মিনকালেও তা সম্ভব হবে না। ইসলামের যত উদার গ্রুপই থাক তাদের মতবাদেও মুশরিকদের মূর্তি বা দেবতার কোন আয়োজন ইসলামে হারাম। তবে মুশরিকদের মন্দিরে নামাজ পড়া যাবে। এরও পিছেনেও একটা চিকন বদ মতলব আছে। মুহাম্মদ দাবী করেছেন তার সেজদার জন্য পৃথিবীর সব স্থানকে মনোনীত করা হয়েছে। আর মুসলমান যেখানে সেজদা দেয় সেটাকে পরবর্তীতে মসজিদ বানানো নবীর সময় থেকেই মুসলিম ট্রেডিশন। জেরুজালেমে এই সেজদার স্থানে মসজিদ বানিয়ে গোটা জেরুজালেমে এক চিরস্থায়ী অশান্তির ক্ষেত্র বানিয়ে রাখা হয়েছে। 
যদি আপনি ইসলাম ধর্মকে মন্দ ভেবেও এটাকে পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের মতই একটি ধর্ম মনে করেন তাহলেও আপনার পক্ষে ইসলাম মুসলিম ভীতির অন্তনিহিত কারণগুলো বুঝা সম্ভব না। ইসলামফোবিয়া’ ‘মুসলিম বিদ্বেষএরকম ঝান্ডুবাম মার্কা কানাগলিতে সমস্যাকে পেছনে রেখে সমাধান হাতড়ে মরবেন। মনে রাখতে হবে ইসলাম একমাত্র ধর্ম যা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে বলে। মুহাম্মদ একমাত্র নবী যিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রে চিঠি পাঠিয়ে তার আনুগত্যতা স্বীকার করতে হুমকি জানাতেন। বুখারী শরীফে উল্লেখ আছে মুহাম্মদ বলছেন, তাকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিজয়ী হবার অনুমতি দেয়া হয়েছে (Sahih Muslim 4:1067) আপনি আর কোন নবীকে বলতে শুনবেন না তাকে সন্ত্রাস করতে বলা হয়েছে। ইহুদীদের শত শত নবী ছিলো, সেমিটিক ধর্মের ইতিহাসে আর কোন নবী মানুষকে দাস বানায়নি। আর কোন নবী অন্যের সম্পত্তি দখল করে ভোগদখল করাকে বৈধ বলেনি। একমাত্র ইসলামের নবী বলেছেন অন্য নবীদের থেকে আমাকে ছয়টি বিষয়ে বেশী অধিকার দেয়া হয়েছে তা হলো-সুনির্দিষ্ট সংক্ষিপ্ত বাক্য ব্যবহার, ভয় সৃষ্টি দ্বারা বিজয়ী হওয়া, গণিমতের মাল বিধিসম্মত করা, দুনিয়াটকে আমার জন্য পরিস্কার, দুনিয়াটাকে প্রার্থনার স্থান করা এবং আমাকে সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে (Sahih Muslim 4:1062)
ইসলাম তার দর্শন বা আদর্শকে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করতে সংগ্রাম বা যুদ্ধ করতে বলে। কুরআন নির্দেশ দিচ্ছে, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে (9:123) মজাটা হচ্ছে, ইসলাম কাউকে মুসলমান হতে জোড়জবরদস্তি করতে বলে না কিন্তু অবশ্যই ইসলামী হুকুমত অস্ত্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে আদেশ করে। যেমন কোন হিন্দু খ্রিস্টানকে রোজা রাখতে জোর করা যাবে না কিন্তু তাদেরকে রোজার দিন অবশ্যই প্রকাশ্যে খানাপিনা করতে দিবে না। ইসলাম হিন্দু খ্রিস্টান নারীদের জন্য পর্দা ফরজ করেনি কিন্তু ইসলামী সমাজে নারীদের বেপর্দা হয়ে চলতেও দিবে না। ইসলাম যখন কোন স্থানে ক্ষমতা দখল করবে তখন সেই স্থানে অন্য ধর্মের অনুসারীদেরকেও ইসলামী বিধানকে মান্য করে চলতে হবে। আগামী ২০ বছর পর যদি লন্ডন কিংবা প্যারিসে রমজান মাসে আস্তে আস্তে খাবারের দোকানগুলো কালো কাপড়ে ঢেকে রমজানকে সন্মান প্রদর্শন করা শুরু হয় অবাক হবার কিছু নেই। ইরান সফরে ভারতের সুষমা সরাজকেও হিজাব পরে ইরানের প্রধানমন্ত্রীর সামনে বসতে হয়েছে। তাহলে কি ভারত আমেরিকা ইউরোপ সফরের সময় মুসলিম কোন নারী ভিআইপি মাথা খেকে হিজাব বাধ্যতামূলকভাবে খুলে নেয়া উচিত? এই সংঘাত তো আসন্ন! হিজাবের বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে এরকম কঠর অবস্থান ডেকে আনবে মুসলমানরাই। তাই আগামী বিশ্বযুদ্ধ মানব জাতির বিরুদ্ধে ইসলামের। এটি অপ্রত্যাশিত ছিলো না, বরং এটি অবধারিত ছিলো। যে ধর্মটি মধ্যযুগীয় যুদ্ধ রাষ্ট্র নীতি এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বুক ফুলিয়ে ধর্মীয় অধিকারের নামে প্রচারের সুযোগ পায় সে তার ছোবল দিবেই। পাঠক-
মিশরের গোলকিপার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার মদের বোতল প্রত্যাখান করেছে। তিউনিশিয়ার খেলোয়াররা রোজা রেখে খেলে আর ইফতারের সময় আহত হবার ভান করে খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙ্গে। মুসলমানরা যদি বৃটিনে, রাশিয়া, আমেরিকা, চীন এরকম বৃহৎ দেশগুলোর মালিক হতো তাহলে অমুসলমানদের প্রতিনিয়ত এরা মনে করিয়ে দিতো, এই পৃথিবীটা তাদের নয়! ফিফা, ওলেম্পিক, আইসিসিতে মুসলমান দেশগুলো হর্তাকর্তা হলে এরা রোজার মাসে সব রকম খেলাধুলাই বন্ধ করে দিতো। আজানের সময় ব্রেক, মদ বিয়ারের স্পনন্সরশীপ বাতিলসহ সব রকমের ইসলামী বিশ্বাসকে এরা অমুসলমানদেরও মানতে বাধ্য করত। অনেক মুসলিম দেশে এই রকম প্রতিক্রিয়াশীল চর্চা অব্যাহত আছে। অধিক জন্মহার মুসলমানদের সংখ্যা ইউরোপে শীর্ষে এনে দিবে। হাদিসে অধিক জন্মদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে মুসলমানদের। নবী বলেন, ‘সেই মেয়েদের বিয়ে কর যারা প্রেমময়ী এবং উৎপাদনশীল। কারণ আমি তোমাদের দিয়ে সংখ্যায় অন্যদের পরাস্ত করব’ (সুনান আবু দাউদ, বই ১১ হাদিস ২০৪৫)
এই অধিক সংখ্যার জোরে হারাম হালালে, কাফের মুমিনে ইউরোপকে বিভক্ত করে তুলবে। এই বিশ্ব মুসলমানদের হাতে চলে গেলে কেমন হবে তা ইরান, সৌদি আরবের মত কট্টর ইসলামী শাসন দেখে অনুমান করতে পারেন। এসব দেশে কোন অমুসলমানের মুসলমানের মত সমঅধিকার মানা হয় না। তারা রাষ্টের শাসক হতে পারে না। বাংলাদেশ ইসলামিক রিপাবলিক না হলেও কোন অমুসলমান রাষ্ট্র প্রধান হতে পারবে না জনগণের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে। অথচ লন্ডনের মেয়র একজন মুসলমান! আইএস তালেবান হচ্ছে সবচেয়ে পার্ফেক্ট ইসলামী শাসন। সৌদি ইরানকে জাতিসংঘকে মান্য করতে হয়, ব্যবসা বাণিজ্য করতে গিয়ে কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্বও করতে হয়। তাই তাগুদি ব্যাপারে তাদের আপোষ করতেই হয়। আইএস তালেবান পৃথিবীবাসীকে ১৪০০ বছর আগের একটা চিত্র দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এটাই হচ্ছে ইসলাম। প্রকৃত ইসলামী শাসন কেমন সেটা সৌদি আরব ইরানকে দেখে ৮০ ভাগ বুঝা যাবে। বাংলাদেশ পাকিস্তানের মত দেশগুলো অমুসলমানদের প্রতিদিন একবেলা করে বুঝিয়ে দিয়েছে এই দেশ তোদের না, এটা মুসলমানদের দেশ
ইসলাম পৃথিবীতে দাস ব্যবস্থাকে আবার ফিরিয়ে আনবে। যুদ্ধাপরাধ ইসলাম হালাল করেছে। বিষয়টা একটু ঠান্ডা মাথায় একবার ভাবুন। মধ্যযুগের যুদ্ধাবস্থা খুব বর্বর ছিলো। পরাজিতদের দাসদাসী বানিয়ে বিক্রি করে দেয়া ছিলো স্বাভাবিক ঘটনা। পরাজিত নারীদের ধর্ষণ করা ছিলো বিজিতদের ন্যায্য পাওনা। সেযুগ পেরিয়ে এসে মানব সভ্যতা এই কাজগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্রে অপরাধ হিসেবে চিহিৃত করেছে যার বিচার করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপরাধীদের এখনো ধরে ধরে বিচার করা হয়। বাংলাদেশের মু্ক্তিযুদ্ধে ঘটা যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে। এসব অপরাধ মধ্যযুগে তেমন কোন অপরাধ বলেই ধরা হতো না। সেই মূল্যবোধটাই যখন একটা ধর্ম তাদের অনুশাসনে, তাদের রাষ্ট্রীয় নীতিতে ঐশ্বি নির্দেশ হিসেবে ঢুকানো থাকে সেটা কতখানি বিপদের কথা একবার ভাবুন। ইসলামে গণিমতের মাল হালাল। অথচ এরকম কাজগুলো আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞায় মারাত্মক অপরাধ। মানুষকে বিক্রি করে দেয়া আজকের যুগে সবচেয়ে ঘৃণ্যিত অপরাধ। অথচ ইসলামে এই ব্যবস্থা তাত্ত্বিকভাবে আজো নিষিদ্ধ নয়। যে কোন র্যা ডিক্যাল ইসলামী শাসন চাইলেই এই ব্যবস্থা চালু করলে ধর্মের নৈতিক অনুমোদন তার থাকবে। এরকম অনুমোদন অন্য কোন ধর্মে পাওয়া যাবে না। অন্য ধর্মগুলো ইসলামের মত রাজনীতি করেনি। খুবই ছোট পরিসরে আইএস দাস ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে এনেছিলো। তারা ইয়াজিদি নারীদের যৌনদাসী করেছিলো। তাদের এই কাজগুলো মানবাধিকার বিরোধী হলেও ইসলামী শাস্ত্র মতে সম্পূর্ণ হালাল। তাই ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মত ব্যক্তিগত প্রথা ব্রত পালনের ধর্ম নয়। এটি রাজনীতি, দেশ দখলের কথা বলে। অমুসলমান নারীদের যৌনদাসী করতে বলে। তাদের দাস হিসেবে মুসলমানরা বিক্রিও করে দিতে পারে। আগামী পৃথিবীতে তাই ফান্ডামেন্টালিস্ট মুসলমানদের হাত ধরে গণিমত, যৌনদাসী, জিজিয়া করসহ দাস প্রথা আবার ফিরে আসবে। বাকী মুসলমান যারা ঠিক ফান্ডামেন্টালিস্ট নয় তারা অধিক জন্মহার দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে তাদের ধর্মীয় প্রভাব অন্যদের উপর চাপাতে শুরু করবে। পৃথিবী সমস্ত বিষয়ে, আর্ট খেলাধুলা সংস্কৃতি সাহিত্যে ইসলামীকরণ করতে চাইবে। প্রবলভাবে অমুসলমানদের এরা জিন্মি করে তুলবে। প্রতিনিয়ত অমুসলমানদের মনে করিয়ে দিবে, এই পৃথিবীটা মুসলমানদের। তাই সংঘাত অনিবার্য। একদিকে র্যা ডিকেল মুসলিম অপরদিকে হালাল শপের ভোক্তা জিন্স টিশার্ট পরা মুসলিম। এই দুই- সভ্যতার সংকট। এই দুই কিসিমের মুসলিমই নতুন করে পৃথিবীকে ভাষা সংস্কৃতি জাতীয়তাবাদের সংকট ঘনিভূত করে তুলবে। আগামী পৃথিবীর জন্য তাই কোন সুসংবাদ দেখছি না।
অনেকেই ইউরোপে ডানপন্থিদের উত্থানে কিংবা ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থানে হায় হুতাশ প্রকাশ করেন। বাকী ধর্মগুলো সঙ্গে ইসলামের মৌলিক পার্থক্য কি সেটা আগে বুঝার চেষ্টা করে ইসলামী মৌলবাদের বিপদের সঙ্গে বাকীগুলোর পার্থক্য বুঝতে পারবেন। বছর ভারতের বহু মন্দিরে মুসলমানদের জন্য ইফতার আয়োজন তারাবির নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। এরকম সম্প্রীতির প্রচেষ্টা আসলে পুরোটাই বিফলে যাবে কারণ পৃথিবীতে যতদিন ধর্ম থাকবে ততদিনই সাম্প্রদায়িকতাও থাকবে। তাই ধর্মকে রেখে সম্প্রীতি কোনভাবেই সম্ভব না। তবু এরকম সম্প্রীতির চেষ্টা কি মুসলমানদের পক্ষে করা সম্ভব? আমি সমস্ত মুসলমানদের কথা বলছি যারা আদতে ধর্ম বিশ্বাসী হলেও সত্যিকারের সম্প্রীতি পছন্দ করেন এবং বিশ্বাস করেন অমুসলমানদের সঙ্গে সম্প্রীতির সম্পর্ক প্রয়োজন। কিন্তু তাদের পক্ষেও কি সম্ভব মসজিদে একটা পুজার আয়োজন করার? নিদেন পক্ষে হিন্দুদের জন্মাষ্টামী কিংবা খ্রিস্টানদের বড়দিনের একটা অনুষ্ঠান মসজিদে আয়োজন করা? কস্মিনকালেও তা সম্ভব হবে না। ইসলামের যত উদার গ্রুপই থাক তাদের মতবাদেও মুশরিকদের মূর্তি বা দেবতার কোন আয়োজন ইসলামে হারাম। তবে মুশরিকদের মন্দিরে নামাজ পড়া যাবে। এরও পিছেনেও একটা চিকন বদ মতলব আছে। মুহাম্মদ দাবী করেছেন তার সেজদার জন্য পৃথিবীর সব স্থানকে মনোনীত করা হয়েছে। আর মুসলমান যেখানে সেজদা দেয় সেটাকে পরবর্তীতে মসজিদ বানানো নবীর সময় থেকেই মুসলিম ট্রেডিশন। জেরুজালেমে এই সেজদার স্থানে মসজিদ বানিয়ে গোটা জেরুজালেমে এক চিরস্থায়ী অশান্তির ক্ষেত্র বানিয়ে রাখা হয়েছে। 
যদি আপনি ইসলাম ধর্মকে মন্দ ভেবেও এটাকে পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের মতই একটি ধর্ম মনে করেন তাহলেও আপনার পক্ষে ইসলাম মুসলিম ভীতির অন্তনিহিত কারণগুলো বুঝা সম্ভব না। ইসলামফোবিয়া’ ‘মুসলিম বিদ্বেষএরকম ঝান্ডুবাম মার্কা কানাগলিতে সমস্যাকে পেছনে রেখে সমাধান হাতড়ে মরবেন। মনে রাখতে হবে ইসলাম একমাত্র ধর্ম যা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে বলে। মুহাম্মদ একমাত্র নবী যিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রে চিঠি পাঠিয়ে তার আনুগত্যতা স্বীকার করতে হুমকি জানাতেন। বুখারী শরীফে উল্লেখ আছে মুহাম্মদ বলছেন, তাকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিজয়ী হবার অনুমতি দেয়া হয়েছে (Sahih Muslim 4:1067) আপনি আর কোন নবীকে বলতে শুনবেন না তাকে সন্ত্রাস করতে বলা হয়েছে। ইহুদীদের শত শত নবী ছিলো, সেমিটিক ধর্মের ইতিহাসে আর কোন নবী মানুষকে দাস বানায়নি। আর কোন নবী অন্যের সম্পত্তি দখল করে ভোগদখল করাকে বৈধ বলেনি। একমাত্র ইসলামের নবী বলেছেন অন্য নবীদের থেকে আমাকে ছয়টি বিষয়ে বেশী অধিকার দেয়া হয়েছে তা হলো-সুনির্দিষ্ট সংক্ষিপ্ত বাক্য ব্যবহার, ভয় সৃষ্টি দ্বারা বিজয়ী হওয়া, গণিমতের মাল বিধিসম্মত করা, দুনিয়াটকে আমার জন্য পরিস্কার, দুনিয়াটাকে প্রার্থনার স্থান করা এবং আমাকে সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে (Sahih Muslim 4:1062)
ইসলাম তার দর্শন বা আদর্শকে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করতে সংগ্রাম বা যুদ্ধ করতে বলে। কুরআন নির্দেশ দিচ্ছে, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে (9:123) মজাটা হচ্ছে, ইসলাম কাউকে মুসলমান হতে জোড়জবরদস্তি করতে বলে না কিন্তু অবশ্যই ইসলামী হুকুমত অস্ত্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে আদেশ করে। যেমন কোন হিন্দু খ্রিস্টানকে রোজা রাখতে জোর করা যাবে না কিন্তু তাদেরকে রোজার দিন অবশ্যই প্রকাশ্যে খানাপিনা করতে দিবে না। ইসলাম হিন্দু খ্রিস্টান নারীদের জন্য পর্দা ফরজ করেনি কিন্তু ইসলামী সমাজে নারীদের বেপর্দা হয়ে চলতেও দিবে না। ইসলাম যখন কোন স্থানে ক্ষমতা দখল করবে তখন সেই স্থানে অন্য ধর্মের অনুসারীদেরকেও ইসলামী বিধানকে মান্য করে চলতে হবে। আগামী ২০ বছর পর যদি লন্ডন কিংবা প্যারিসে রমজান মাসে আস্তে আস্তে খাবারের দোকানগুলো কালো কাপড়ে ঢেকে রমজানকে সন্মান প্রদর্শন করা শুরু হয় অবাক হবার কিছু নেই। ইরান সফরে ভারতের সুষমা সরাজকেও হিজাব পরে ইরানের প্রধানমন্ত্রীর সামনে বসতে হয়েছে। তাহলে কি ভারত আমেরিকা ইউরোপ সফরের সময় মুসলিম কোন নারী ভিআইপি মাথা খেকে হিজাব বাধ্যতামূলকভাবে খুলে নেয়া উচিত? এই সংঘাত তো আসন্ন! হিজাবের বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে এরকম কঠর অবস্থান ডেকে আনবে মুসলমানরাই। তাই আগামী বিশ্বযুদ্ধ মানব জাতির বিরুদ্ধে ইসলামের। এটি অপ্রত্যাশিত ছিলো না, বরং এটি অবধারিত ছিলো। যে ধর্মটি মধ্যযুগীয় যুদ্ধ রাষ্ট্র নীতি এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বুক ফুলিয়ে ধর্মীয় অধিকারের নামে প্রচারের সুযোগ পায় সে তার ছোবল দিবেই।

এবারে মহানবীর জীবনের ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা, প্রেক্ষাপট এবং পরিপ্রেক্ষিত আমরা বুঝবো। আসুন আলাপের আগে একটি সহিহ হাদিস পড়ে নিই চলেন।

গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
হাদিস নম্বরঃ [3298]
অধ্যায়ঃ ১৭। বিবাহ (كتاب النكاح)
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ . কোন মহিলাকে দেখে কোন পুরুষের মনে যৌন কামনা জাগ্রত হলে সে যেন তার স্ত্রীর সাথে অথবা ক্রীতদাসীর সাথে গিয়ে মিলিত হয়
৩২৯৮-(/১৪০৩) আমর ইবনু আলী (রহঃ) ….. জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলাকে দেখলেন। তখন তিনি তার স্ত্রী যায়নাব এর নিকট আসলেন। তিনি তখন তার একটি চামড়া পাকা করায় ব্যস্ত ছিলেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের প্রয়োজন পূরণ করলেন। অতঃপর বের হয়ে সাহাবীগণের নিকট এসে তিনি বললেনঃ স্ত্রীলোক সামনে আসে শয়ত্বানের বেশে এবং ফিরে যায় শায়ত্বানের বেশে। অতএব তোমাদের কেউ কোন স্ত্রীলোক দেখতে পেলে সে যেন তার স্ত্রীর নিকট আসে। কারণ তা তার মনের ভেতর যা রয়েছে তা দূর করে দেয়।
* (
ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ৩২৭৩, ইসলামীক সেন্টার ৩২৭১)

এই হাদিসটি থেকে আমরা জানতে পারি, হযরত মুহাম্মদ মাঝে মাঝে রাস্তাঘাটে কোন কোন মহিলাকে দেখে এতটাই উত্তেজিত হয়ে যেতেন যে, দৌঁড়ে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে তার ঠাণ্ডা হওয়ার দরকার হতো। মানে তিনি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন না। তার যৌন কামনা এতটাই চাগার দিয়ে উঠতো যে, তিনি পরিমরি করে ছুটতেন বিবির কাছে। বিবি যেই অবস্থায় থাকতেন, উপরের হাদিসে দেখুন তার বিবি চামড়া পাকা করায় ব্যস্ত ছিলেন, তাকে ধরে নিয়ে প্রয়োজনপূরণ করতেন। সেটাও মানা যেতো, কিন্তু লক্ষ্য করে দেখুন, স্ত্রী অথবা ক্রিতদাসীর কাছে গমন করতে বলা হচ্ছে। এর মানে কী? ভাবতে পারেন? আমি সহিহ হাদিসের রেফারেন্স দিয়েছি। আবার বলবেন না এই হাদিস ইহুদীরা লিখেছে। আরেকটি হাদিসঃ

গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
হাদিস নম্বরঃ [3300] অধ্যায়ঃ ১৭। বিবাহ
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ . কোন মহিলাকে দেখে কোন পুরুষের মনে যৌন কামনা জাগ্রত হলে সে যেন তার স্ত্রীর সাথে অথবা ক্রীতদাসীর সাথে গিয়ে মিলিত হয়
৩৩০০-(১০/…) সালামাহ্ ইবনু শাবীব (রহঃ) ….. জাবির (রাযিঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কারো যদি কোন স্ত্রীলোক দেখে মনে কিছু উদয় হয় তখন সে যেন তার স্ত্রীর নিকট আসে এবং তার সাথে মিলিত করে। এতে তার মনে যা আছে তা দূর করে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩২৭৫, ইসলামীক সেন্টার ৩২৭৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

উম হানি ও মুহাম্মদ:

মুহাম্মদ উম হানিকে বিবাহের প্রস্তাব দেন, কিন্তু উম হানি তা গ্রহণ করলেন না, কারণ উম হানির সাথে তাঁর শিশু ছিল (খণ্ড ৯, পৃঃ ১৪০)। 
এই দুই ঘটনা কিছুটা পরস্পরবিরোধী হলেও আমরা অনুমান করতে পারি যে, নবী উম হানিকে হয়ত দু’বার বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রথমবার উম হানির পিতা আবু তালেবের কাছে। সেই সময় মুহাম্মদ নিজেকে নবী বলে ঘোষণা দেননি; অর্থাৎ মুহাম্মদের বয়স অল্প ছিল, খুব সম্ভবত কুড়ি কিংবা বাইশ। দ্বিতীয় বার উম হানিকে প্রস্তাব দেন আবু তালেবের মৃত্যুর পর, উম হানির স্বামী যখন নিখোঁজ হয়ে যান (অনেকে, যেমন ওপরে রডিন্সন, লিখেছেন মারা যান) অথবা মুহাম্মদের প্রথম স্ত্রী খাদিজার মৃত্যুর পর। মুহাম্মদ নিজেকে নবী বলে ঘোষণা দেন, যার ফলে সমগ্র কুরাইশদের বিরাগভাজন হন। এই সময় মুহাম্মদের বয়স সম্ভবত ৫০ অথবা ৫১ হবে। কারণ খাদিজা এবং আবু তালেব মারা যাবার অল্প কিছু সময়ের মাঝেই মুহাম্মদ বিধবা সওদাকে বিবাহ করেন আর আবু বকরকে প্রস্তাব দেন তাঁর কন্যা আয়েশাকে বিবাহ করার। সামান্য সময়ের ব্যবধানেই মুহাম্মদ ছয় বছরের শিশু আয়েশাকে বিবাহ করেন।
অনুমান করা যায়, মুহাম্মদের এই দুই বিবাহের ব্যাপারে উম হানি জ্ঞাত ছিলেন। তাই মুহাম্মদ উম হানিকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে উম হানি আরেক এক সতীন হতে চাইলেন না। উম হানি স্বামী-ছাড়া, এক সন্তানের মা হয়ে একা থাকা পছন্দ করলেন। কিন্তু মুহাম্মদের সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে কুণ্ঠিত হলেন না। তার প্রমাণ আমরা দেখব নিচের অংশগুলিতে।
খাদিজা মারা যাবার পর, উম হানিকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না করতে পারলেও মুহাম্মদ হাল ছেড়ে দিলেন না। আল্লাহ নবীর সাহায্যে দ্রুত এগিয়ে আসলেন। আল্লা পাঠিয়ে দিলেন আয়াত ৩৩:৫০, যে-আয়াতে নবীকে বলা হল, তিনি ইচ্ছে করলেই তাঁর যে কোনো চাচাত, ফুফাতো, মামাতো, খালাতো বোনদের সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে পারবেন বিবাহ ছাড়াই—শুধু এই হবে যে, ঐ বোনদেরকে মদিনায় হিজরত করতে হবে। কিন্তু নবী অত বোকা ছিলেন না। তিনি জানতেন, এই আয়াতের প্রতিফল কী হবে তাঁর অনুসারীদের মাঝে। তাই আল্লা তাঁকে জানিয়ে দিলেন যে, এই অতি-নিকট আত্মীয়দের সাথে বিবাহ বহির্ভূত যৌনলীলার অনুমতি শুধুমাত্র নবীর জন্যই বহাল থাকবে, অন্য মুসলিমদের জন্য নয়।
আমরা আয়াত ৩৩:৫০ পড়ে নিই।

হে নবী। আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ্‌ আপনার করায়ত্ত করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি ও খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পণ করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সে—ও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য—অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দিন খান, তাফসীর মাআরেফুল কোরআন)

এই বাংলা অনুবাদে যে কারচুপি আছে, তা পরিষ্কার হয়, যখন ইংরাজি অনুবাদ দেখা যায়। আল্লাহ তো সব মুসলিমদের জন্যই তাদের চাচাত, ফুফাতো, খালাতো, মামাতো বোনদের বিবাহ হালাল করেছেন। কাজেই এই আয়াতে নতুনত্বের কী আছে? দেখা যাক ইংরাজি অনুবাদ:
033.050

YUSUFALI: O Prophet! We have made lawful to thee thy wives to whom thou hast paid their dowers; and those whom thy right hand possesses out of the prisoners of war whom Allah has assigned to thee; and daughters of thy paternal uncles and aunts, and daughters of thy maternal uncles and aunts, who migrated (from Makka) with thee; and any believing woman who dedicates her soul to the Prophet if the Prophet wishes to wed her;- this only for thee, and not for the Believers (at large); We know what We have appointed for them as to their wives and the captives whom their right hands possess;- in order that there should be no difficulty for thee. And Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.

Hilali and Khan

33:50. O Prophet (Muhammad)! Verily, We have made lawful to you your wives, to whom you have paid their Mahr (bridal money given by the husband to his wife at the time of marriage), and those (captives or slaves) whom your right hand possesses whom Allâh has given to you, and the daughters of your ‘Amm (paternal uncles) and the daughters of your ‘Ammah (paternal aunts) and the daughters of your Khâl (maternal uncles) and the daughters of your Khâlah (maternal aunts) who migrated (from Makkah) with you, and a believing woman if she offers herself to the Prophet, and the Prophet wishes to marry her; a privilege for you only, not for the (rest of) the believers. Indeed We know what We have enjoined upon them about their wives and those (captives or slaves) whom their right hands possess, – in order that there should be no difficulty on you. And Allâh is Ever Oft¬Forgiving, Most Merciful.

আয়াত ৩৩:৫০ সম্পর্কে ইবনে কাসীর লিখেছেন:

মহান আল্লাহ বলেন: যারা তোমার সাথে দেশ ত্যাগ করেছে। হযরত উম্মে হানি (রাঃ) বলেন: “আমার কাছে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পয়গাম এলো। আমি আমার অপরাগতা প্রকাশ করলাম। তিনি তা মেনে নিলেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা এই আয়াতটি নাযিল করলেন। আমি তাঁর জন্য বৈধকৃত স্ত্রীদের মধ্যেও ছিলাম না এবং তাঁর সাথে হিজরতকারিদের অন্তর্ভূক্তও না। বরং আমি মক্কা বিজয়ের পর ঈমান এনেছিলাম। আমি ছিলাম আযাদকৃতদের অন্তর্ভূক্ত।” তাফসীর কারকগণও একথাই বলেছেন। আসল কথা হল যারা মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে হিজরত করেছেন। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর কিরআতে রয়েছে।

এরপর মহামহিমাম্বিত আল্লাহ বলেছেনঃ কোন মুমিনা নারী নবী (সঃ)-এর নিকট নিজেকে নিবেদন করলে এবং নবী (সঃ) তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও বৈধ। এ আদেশ দু’টি শর্তের উপর প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! মুমিনা নারী তোমার জন্য বৈধ যদি সে নিজেকে তোমার নিকট নিবেদন করে যে, তুমি ইচ্ছা করলে তাকে বিনা মহরে বিয়ে করতে পার। (তাফসীর ইবনে কাসীর, পঞ্চদশ খণ্ড, অনুবাদ ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত, পৃঃ ৮২৯)

এবার আমরা তিরমিজি শরীফ থেকে একটা হাদীস পড়ব:

উম হানি বিন্‌ত আবু তালেব বর্ণনা করলেন: “আল্লাহর রসুল আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু আমি তাঁর কাছে মাফ চাইলাম। তিনিও আমাকে আর পীড়াপীড়ি করলেন না। এরপর আল্লাহ (সর্ব্বোচ্চ) নাজেল করলেন (৩৩:৫০) [এইখানে পাঠকেরা উপরে উদ্ধৃত আয়াতটা পড়ে নিতে পারেন]। তিনি (উম হানি) বললেন: ‘এটা এই জন্য যে, আমি তাঁর জন্য আইনসঙ্গত ছিলাম না, কারণ আমি হিজরত করিনি। আমি তুলাকাদের মধ্যে একজন ছিলাম’।

[পাদটীকা ২) তুলাকার অর্থ হল ঐসব ব্যক্তি, যারা মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেছিল] (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ৫, হাদিস নম্বর ৩২১৪, পৃঃ ৫২২; অনুবাদ লেখকের)
এই আয়াতের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা নিম্নলিখিত ধারণা করতে পারি।
খাদিজা মারা যাবার পর উম হানিকে মুহাম্মদ বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। উম হানি তা নাকচ করে দিলেন। মুহাম্মদ বিবাহ করলেন সওদাকে আর বাগদত্ত হয়ে থাকলেন আবু বকরের ছয় বছর বয়সের শিশু কন্যা আয়েশার সাথে। এরপর মুহাম্মদ মদিনায় হিজরতের আয়োজন করলেন। চাইলেন উম হানিকে সাথে নিতে। তাই উম হানিকে আবার প্রস্তাব দিলেন বিবাহের। উম হানি রাজি হলেন না, হয়ত উম হানি চাননি সতিনদের সাথে মুহাম্মদের সংসারে ঢুকতে। আল্লাহ পাঠিয়ে দিলেন আয়াত ৩৩:৫০। মুহাম্মদ উম হানিকে জানালেন, আল্লাহ তাঁকে অনুমতি দিয়েছেন যে, চাচাত (অথবা ফুফাতো, মামাত, খালাত) বোন যে-ই তাঁর সাথে হিজরত করবে, তাকেই নবী বিবাহ করতে পারবেন। উম হানি বললেন যে, তিনি হিজরতে যাবেন না। তাই মুহাম্মদের স্ত্রী হতে পারবেন না।
মুহাম্মদ এবার আর এক কৌশল করলেন। আল্লাহ পাঠিয়ে দিলেন আয়াত ৩৩:৫০-এর বাকি অংশটুকু। মুহাম্মদ উম হানিকে জানালেন যে, হিজরত না করলেও অসুবিধা নাই, কারণ আল্লাহ্‌ বলেছেন যে, কোনো মুসলিম নারী যদি নিজের ইচ্ছায় মুহাম্মদের সঙ্গ পেতে চায়, মুহাম্মদ তাকে নিতে পারবেন। তার জন্য কোনো দেনমোহর দিতে হবে না। কিন্তু উম হানি মুসলিম হতে চাইলেন না। তাই অগত্যা মুহাম্মদকে উম হানি ছাড়াই মদিনায় হিজরত করতে হল।
এখানে স্মরণ রাখা দরকার যে, বরপক্ষ কনেকে দেনমোহর না দিলে অথবা তার প্রতিজ্ঞা না করলে কোনো বিবাহই ইসলামী আইন অনুযায়ী ন্যায়সঙ্গত নয়। তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, উম হানি যখন মুহাম্মদের কোন প্রস্তাবেই রাজি হলেন না, তখন মুহাম্মদ এই ফাঁদ পাতলেন, অর্থাৎ উম হানিকে ইসলামী বিবাহ ছাড়াই তাঁর হেরেমে নিতে পারবেন।
এই প্রসঙ্গে মুহাম্মদের ফুফাতো বোন যয়নব বিন্‌ত জাহশের কথা উল্লেখ করা যায়। যয়নবের সাথে বিবাহ হয়েছিল মুহাম্মদের পালিত পুত্র যায়েদের সাথে। কিন্তু মুহাম্মদ যয়নবের রূপ দেখে তাকে বিবাহ করতে চাইলেন। যায়েদ যয়নবকে তালাক দিয়ে দিলে মুহাম্মদ যয়নবকে বিছানায় টেনে নিলেন—আরবেরা এই সম্পর্ককে ঢি ঢি করতে শুরু করলে মুহাম্মদ প্রচার করতে লাগলেন, এই বিবাহে আল্লাহর অনুমতি আছে – আল্লাহ-পাক তাঁদের বিবাহ দিয়ে দিয়েছেন। যয়নব নবীর সাথে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। তাই দেখা যাচ্ছে, মুহাম্মদ আয়াত ৩৩:৫০ ঠিক মতই প্রয়োগ করে নিয়েছিলেন।
কিন্তু মদিনা চলে গেলেও এবং অগুনতি স্ত্রী ও যৌন দাসী থাকা সত্ত্বেও নবী তাঁর বাল্য-প্রেম ভোলেননি। উম হানির সাথে নবীর প্রেম যে তাঁর প্রথম প্রেম ছিল, তাতে আমাদের সন্দেহ থাকে না। সেই প্রথম প্রেমকে নবী কোনোদিনই তাঁর হৃদয় থেকে বিতাড়িত করতে পারলেন না।
মক্কায় অবস্থানকালে এবং খাদিজাকে বিবাহ করার আগে মুহাম্মদ কীভাবে উম হানির সাথে মিলিত হতেন? নিচের কিছু হাদিস পড়লে অনুমান করা যায় যে, উম হানির গৃহে মুহাম্মদ প্রায়ই যাতায়াত করতেন।
এ ব্যাপারে দেখা যাক কয়েকটি হাদিস।

উম হানি বর্ণনা করলেন: “আমি নবীর সান্নিধ্যে বসে ছিলাম। এই সময় কেউ পানীয় কিছু নিয়ে আসল। তিনি তা পান করলেন। তারপর আমাকে পান করতে বললেন। আমি পান করলাম। তারপর আমি বললাম: ‘আমি সত্যই পাপ করছি। আমার জন্য আপনি ক্ষমা প্রার্থনা করুন’। নবী বললেন: ‘কী হয়েছে?’ আমি বললাম, ‘আমি যে রোজা (উপবাস) ছিলাম। এখন আমি তা ভেঙ্গে ফেলেছি।’ তিনি বললেন: ‘তুমি কী এমন রোজা রেখেছ, যা ভেঙে ফেললে আবার রাখতে হবে?’ আমি বললাম: ‘না’। তিনি বললেন: ‘তাহলে তোমার কোনো ক্ষতি নেই’ (জাইফ) । (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ৭৩১, পৃঃ ১৭২; অনুবাদ লেখকের)

সিমাক বিন হার্‌ব বর্ণনা করলেন: “উম হানির এক সন্তান আমাকে বলল—আর সে ছিল সর্বাপেক্ষা ধার্মিক ব্যক্তি। তার নাম ছিল জা’দাহ্‌। উম হানি ছিলেন ঐ ব্যক্তির দাদীমা। সে তার দাদীমার কাছ থেকে শুনেছিল যে, আল্লার রসূল তাঁর (উম হানির) কাছে আসলেন এবং কিছু পানীয় চাইলেন। তিনি তা পান করলেন। তারপর তিনি সেই পানীয় উম হানিকে দিলেন। উম হানি তা পান করলেন। উম হানি বললেন: ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি যে রোজা ছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ বললেন: “নফল (ঐচ্ছিক) রোজা নির্ভর করে রোজদারের উপর। সে চাইলে রোজাটা পূর্ণ করতে পারে, চাইলে ভাঙতে পারে।” শুবাহ্‌ (আরেকজন বর্ণনাকারী) বললেন: ‘আমি তাকে (জা’দাহকে ) জিজ্ঞাসা করলাম: ‘তুমি কি এটা উম হানির কাছ থেকে শুনেছ?’ সে উত্তর দিল: ‘না। আবু সালেহ্‌ এবং আমাদের পরিবারের সদস্যরা আমাকে এই ব্যাপারটা জানিয়েছেন।’ (জাইফ) (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ৫, হাদিস নম্বর ৭৩২, পৃঃ ১৭৩; অনুবাদ লেখকের)

উম হানি বিন্‌তি আবু তালেব বর্ণনা করলেন: “আল্লার রসূল আমার ঘরে আসলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার কাছে কি কিছু আছে?’ আমি বললাম, ‘না, শুধুমাত্র এক টুকরো শক্ত রুটি আর সির্কা ছাড়া।’ তিনি উত্তর দিলেন: ‘তাই নিয়ে এস, কারণ যে গৃহে সির্কা থাকে, সেই গৃহে মসল্লার অভাব থাকে না।’ (হাসান) (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ৩, হাদিস নম্বর ১৮৪১, পৃঃ ৫৩৩; অনুবাদ লেখকের)

এই সব হাদিস থেকে অনুমান করা যেতে পারে উম হানির সাথে নবী প্রায়ই মিলিত হতেন, একান্ত নিভৃতে। এই সব ঘটনা খুব সম্ভবত: নবীর মদিনায় হিজরতের আগেই ঘটেছিল। ধরা যেতে পারে, উম হানি হয়ত নবীর কাছাকাছি কোথায় থাকতেন। এমনও হতে পারে যে, উম হানি গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। উম হানি যে নবীর খুব সান্নিধ্যে থাকতেন তাও কয়েকটা হাদিস থেকে বোঝা যায়।

ইবনে মাজা ও বায়হাকী রেওয়ায়েত করেন যে, উম্মে হানি (রাঃ) বলেছেন—নবী করীম (সাঃ) কা’বার প্রাঙ্গণে রাতে যে কেরাত পাঠ করতেন, তা আমি আপন গৃহে শুয়ে শুনতে পেতাম। (খাসায়েসুল কুবরা, খণ্ড ১, পৃঃ ১২৫)

আর এই হাদিস:

তায়ালাসী, ইবনে সা’দ তিবরানী ও ইবনে আসাকিরের রেওয়ায়েতে হযরত উম্মে হানি (রাঃ) বলেন: আমি নবী করীম (সাঃ)-এর পেটের দিকে তাকালে মনে হত যেন উপরে নীচে সাদা কাগজ জড়িয়ে আছে। (খাসায়েসুল কুবরা, খণ্ড ১, পৃঃ ১৩১)

এখানে বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, শুধু উম হানিই নয়, অন্য এক বিবাহিতা মহিলার সাথেও নবীর বেশ সখ্যতা ছিল। সেটা নিচের হাদিস থেকে জানা যায়।

যায়দ ইবনে আলী ইবনে হুসায়ন রেওয়ায়েত করেন: নবুওয়তপ্রাপ্তির পর রসূলুল্লাহ (সাঃ) হালাল নয়—এমন কোন মহিলার কোলে আপন মস্তক রাখেননি; কিন্তু আব্বাস পত্নী উম্মুল ফযলের কোলে তিনি মস্তক রেখেছেন। উম্মুল ফযল তাঁর মাথায় উকুন তালাশ করতেন এবং চোখে সুরমা লাগাতেন। একদিন তিনি যখন সুরমা লাগাচ্ছিলেন, তখন তাঁর চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু রসূলুল্লাহর (সাঃ) গণ্ডদেশে পতিত হল। হুযুর (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন: তোমার কি হল? উম্মুল ফযল বললেন: আল্লাহ তা”আলা আপনার ওফাতের খবর আমাদের দিয়েছেন। আপনার পরে কে আপনার স্থলাভিষিক্ত হবে—একথা বলে গেলে ভাল হত। হুযুর (সাঃ) বললেন: আমার পর তোমরা নিগৃহিত ও অবহেলিত বিবেচিত হবে। (খাসায়েসুল কুবরা, খণ্ড ২, পৃঃ ১৫৪)

বলা বাহুল্য, শরিয়া আইন অনুযায়ী এই ধরনের আচরণ একবারেই বেআইনী। দেখা যাচ্ছে, মুহাম্মদ নিজের রচিত আইনকে থোড়াই পাত্তা দিতেন।
মদিনায় গিয়ে নবী লুটতরাজ, ডাকাতি ও জিহাদে মনোনিবেশ করলেন। কিন্তু উম হানিকে ভুললেন না। যখন লুটের মাল ভাগ হত, নবী উম হানিকে কিছু ভাগ দিয়ে দিতেন। ওয়াকেদি লিখেছেন যে, মুহাম্মদ খায়বারের লুটের মালের কিছু অংশ উম হানিকে দিয়েছিলেন। এখানে বলা প্রয়োজন, খায়বার ছিল মদিনার ইহুদিদের এক বিশাল বাসস্থল। মদিনার শস্যভাণ্ডার এই খায়বার ইহুদিদের হাতেই ছিল। নবী অতর্কিতে খায়বার আক্রমণ করে প্রচুর খাদ্যশস্য পেয়ে যান, যা তিনি তাঁর নিকটাত্মীয়দের মাঝে বিতরণ করেন।
আল ওয়াকেদি লিখেছেন:

খায়বার লুটের পর মুহাম্মদ আশি ওয়াসাক খেজুর এবং বিশ ওয়াসাক যব দিলেন তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীকে। এ ছাড়াও নবী উম হানি বিন্‌ত আবু তালেবকে দিলেন তিরিশ ওয়াসাক যব [তিনশত কিলোগ্রামের কিছু বেশী]। (আল ওয়াকেদী, পৃঃ ৩৪২)

অনুমান করা যায়, উম হানি বেশ কষ্টের সাথে সংসার চালাতেন। তাই মুহাম্মদ প্রেরিত এই সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। উম হানির স্বামী যে তাঁর সাথে থাকতেন না, এও তার প্রমাণ হতে পারে।
উম হানি যে নবীর দেহের খুব সন্নিকটে থাকতেন, তা বোঝা যায় উম হানি যখন নবীর দেহের বর্ণনা দেন, বিশেষত্ব দেখা যায় উম হানি নবীর পেটের চামড়ার ধরন খুব ভালভাবে জানতেন। উম হানি ছাড়া নবীর এইরূপ উলঙ্গ দেহের এই বর্ণনা আর কারও কাছ থেকে পাওয়া যায় না—এমনকি নবীর অগুনতি স্ত্রীর কাছ থেকেও নয়।

উম হানি বলতেন, “আমি আল্লাহর রসুলের চাইতে সুন্দর হাসি আর কারও মুখে দেখি নাই। আর আমি যখনই আল্লাহর রসূলের পেট দেখতাম তখনই আমার মনে পড়ে যেত। [এই খানে কিতাব আল মাগহাযির ইংরাজি অনুবাদক ব্র্যাকেটে লিখেছেন: উম হানি এখানে নবীর ত্বকের ভাঁজের কথা বলছেন—অর্থাৎ নগ্ন পেটের] আমি মক্কা বিজয়ের দিনে উনার মাথায় চারটি বেণী বাঁধা দেখেছি। (আল ওয়াকেদী, পৃঃ ৪২৭)




No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ