স্বর্গ নরক - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

26 July, 2020

স্বর্গ নরক

মানব জীবনের সুখী অবস্থাই স্বর্গ ও দুঃখময় পরিস্থিতিই নরক। এতদ্ব্যতীত স্বর্গ নরক নামে আলাদা কোন স্থান থাকা অযৌক্তিক।

স্বর্গ নরক
এই লেখায় আমি বেশকিছু শব্দের বৈদিক ব্যুৎপত্তিগত অর্থ নিয়ে আলোচনা করব। বেদের ইংরেজি অনুবাদকগণ সাধারণত সংস্কৃত দ্যৌ বা দ্যুলোক শব্দের অর্থ করেছেন “Heaven”, যা পড়ে কেও কেও ভাবছেন বেদে স্বর্গ নামক কোনো স্থানের কথা আছে। আসুন দেখে নেই বৈদিক শব্দকোষে ‘দ্যৌ’ বা দ্যুলোক শব্দের অর্থ কি?
পণ্ডিত চন্দ্রশেখর উপাধ্যায় এবং শ্রী অনিল কুমার উপাধ্যায়(কেউই আর্য সমাজী নয়) সম্পাদিত “বৈদিক কোশ(শব্দকোষ)” এর ৭০৩ পৃষ্ঠায় লেখা আছে:
“দ্যুৎ(চমকানো) প্রকৃতির সাথে ডো প্রত্যয় যুক্ত হয়ে দ্যৌ শব্দ সিদ্ধ হয়। দ্যৌ খু = দ্যু শব্দ নিষ্পন্ন হয়। এর অর্থ প্রকাশমান অর্থাৎ যা নিজে নিজেই প্রকাশিত হয়(যেমন: সূর্যাদি নক্ষত্র যারা নিজের আলোয় স্বয়ং প্রকাশিত)।”
একই শব্দকোষের ৭৩৯ পৃষ্ঠায় লেখা আছে “দ্যৌ = সূর্য”
তাহলে বৈদিক শব্দকোষ থেকে দেখা যাচ্ছে দ্যুলোক হচ্ছে সেই স্থান যেখানে সূর্যাদি নক্ষত্রসমূহ বিচরণ করে।
দ্বিতীয়ত অনুবাদক কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘অন্তরিক্ষ’ অর্থ করেছেন “Heaven”, এবার দেখে নেই ‘অন্তরিক্ষ’ এর বৈদিক অর্থ কি?
“বৈদিক কোশ” এর ৬০ পৃষ্ঠায় বলা আছে,
‘অন্তরিক্ষ = অন্তরে ক্ষিয়তি’ অর্থাৎ মহাকাশ বা দ্যুলোক ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী যে স্থান তার নামই অন্তরিক্ষ’
অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি দ্যুলোক বা অন্তরিক্ষ কোনোটিই এমন কোন স্থানকে নির্দেশ করে না যা কিনা পুরাণ কোরানে বর্ণিত মৃত্যু পরবর্তী সময়ে প্রাপ্ত বিলাসময় কোন স্থান।
এবার দেখে নেই বৈদিক শব্দকোষে স্বর্গ নরক নামে পৃথিবী বহির্ভূত কোন বিলাসবহুল বা ভয়ার্ত কোন স্থানের কথা বলা আছে কিনা! অনেকে দ্যুলোককে স্বর্গলোক বলেন। বৈদিক কোষেও একস্থানে দ্যুলোককে স্বর্গলোক বলা হয়েছে। কিন্তু এই স্বর্গ কি? “বৈদিক কোশ” এর ১৪৭৫-৭৬ পৃষ্ঠায় স্বর্গের ব্যাখ্যা আছে-
“স্বর্গ- স্বর্ গ। (১) সুখ প্রদান করে এমন পদার্থ। (২) আনন্দময় মোক্ষ। (৩) সুখার্থ পুরুষার্থ।”
অর্থাৎ দেখতে পাচ্ছি স্বর্গ এমন কোন স্থান না যেখানে রম্ভা উর্বশী অপ্সরা বা হুর বসবাস করে না। বরং জীবনের সুখাবস্থা বা মৃত্যুর পর পরম পুরুষার্থ বা মোক্ষকেই স্বর্গ বলা হয়েছে।
🏜এবার আসি নরক এর অর্থে। ‘বৈদিক কোশ’ এর ৭৬৯ পৃষ্ঠায় ‘নরক’ এর ব্যাখ্যায় বলা আছে-
“নরক- (১) ন্যরকম্- নীচৈঃ গমনম্ অর্থাৎ নীচে বা অধঃপতিত হওয়া। (২) নীচৈঃ অস্মিন্ অর্য়তে অর্থাৎ নীচ বা দুষ্ট মানুষদের সহবাস বা অনুকরণে নরকে যায় বা অধঃপতিত হয়।”
অর্থাৎ দেখতে পাচ্ছি নরক কোন আলাদা স্থানের নাম নয়। বরং দুষ্টলোকের সাথে থেকে অধপতিত হওয়াই নরক বা যে দুর্দশা প্রাপ্ত হয় সেটাই নরক।
অর্থাৎ দেখতে পাচ্ছি যেসব শব্দের আধারে মহীধর সায়ণরা স্বর্গ নরক নামক কল্পিত স্থানের কথা তাদের বেদভাষ্যে উল্লেখ করেছেন তার কোন বৈদিক ব্যুৎপত্তিগত ভিত্তি নেই।
অষ্টচক্র নবদ্বারা দেবনাং পুরযোধ্যা।

তস্যাং হিরণ্ময় কোশঃ স্বর্গো জ্যোতিষাবৃতা।।

(অথর্ববেদ ১০।২।৩১)

সরলার্থঃ এই শরীররূপ নগরী সব সূর্য্যাদি দেবের অধিষ্ঠানভূত। আট চক্র এবং নয় ইন্দ্রীয় দ্বার বিশিষ্ট এইনগরী অজেয়। এই নগরীতে এক প্রকাশময় কোশ আছে [মনোময় কোষ ] আনন্দময় জ্যোতি দ্বারা আবৃত।

অর্থাৎ বেদে দেবপুরী বা স্বর্গলোক বলতে মূলত এই শরীরকেই বোঝানো হয়েছে।

স্বর্গলোকঃ সরস্বান্। তা০ ম০ ব্রা০ ১৬.৫.১৫।
স্বর্গেলাকঃ সামবেদঃ। ষ০ ব্রা০ ১১.৫।
১। স্বর্গ লোক হল সরস্বান্। যেখানে বহু স্বর বিদ্যমান। ষড়জ,ঋষভ,গান্ধার,মধ্যম,পঞ্চম, ধৈবব,নিষাদ এবং ইহাদের উপস্বরাদি। ঋচা স্বর প্রভাবে বর্ধিত হয়ে সূর্যাদি পদার্থের নির্মান করে। যত প্রতাশিত লোক বিদ্যমান আছে তাহা সব কিছুই বৈদিক ঋচা দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। সাম ঋচা সমূহ হল প্রকাশক বল। সূর্যের সৃষ্টির সাম ঋচার সমূহের স্বর দ্বারা তাই স্বর্গের অরেক নাম সরস্বান।
স্বর্গই সূর্যের নিউক্লিয়াস ভাগ।
২। সাম বেদ ই স্বর্গলোক। সাম বেদে যত মন্ত্র আছে তাহা পশ্যন্তি ও মধ্যমা অবস্থায় সূর্যের সৃষ্টি করে লালন পালন,পোষণ,রক্ষণ,বর্ধন করছে।
সামরশ্মি প্রকাশ আদি দর্শনীয় পদার্থের নির্মাণ করে ধারণ করেছে তাই ব্রাহ্মণ গ্রন্থে ঋষিগণ সামবেদকে স্বর্গলোক বলেছে।

অথর্বেদে স্বর্গের বর্ণনা আরো দেওয়া রয়েছেঃ—

যত্রা সুহার্দঃ সুকৃতো মদন্তি বিহায় রোগং তন্বঃ স্বায়াঃ। 
অশ্লোণা অংগৈরহ্নুতাঃ স্বর্গ তত্র পশ্যেম পিতরৌ চ পুত্রান্।।
 অথর্ববেদ ৬/১২০/৩ |

অর্থ:- যেখানে উত্তম হৃদয়ের ব্যক্তিগণ ও পরস্পর মিত্রতাকারী, শ্রেষ্ঠ কর্মকারী ব্যক্তিগণ থাকেন, যেখানে নিজের শরীর রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করে আনন্দ উপভোগ করে, আমরা যেন সেই পরিবাররূপ স্বর্গলোকে মাতা-পিতা ও সন্তানাদিসহ একত্রে বসবাস করতে পারি, তাদের সর্বদা দর্শন করতে পারি

বেদের এই মন্ত্রতে স্পষ্ট বলে দিয়েছে যে পরিবারের সকল সুখ বা আনন্দকেই স্বর্গ বলে।

ঘৃতহৃদা মধুকূলা সুরোদকঃ ক্ষীরেন পূর্ণা উদকেশ দধ্ন।

ত্রতস্তা ধারা উপয়ন্ত সর্বাঃ স্বর্গে লোকে মধুম্য

পিন্বমানাঃ উপত্বা তিষ্ঠন্ত পুষ্করিণী সমন্তাঃ।

(অথর্ববেদ ৪।৩৪।৬)

এই মন্ত্রে স্বর্গতূল্য গৃহের বর্ণনা দিয়ে বলা হচ্ছে যে, এই গৃহে যেন ঘৃত, মধু, পবিত্র জল, দুধ, দধি কম না হয়। এই স্বর্গতুল্য গৃহপ্রদেশ মাধুর্য্যুক্ত রসের সেচনকারী হয় এবং চারিদিশাই পদ্মের সরোবর হয়।
নরকঃ

(১) ন্যরকম্- নীচৈঃ গমনম্ অর্থাৎ নীচে বা অধঃপতিত হওয়া।

(২) নীচৈঃ অস্মিন্ অর্য়তে অর্থাৎ নীচ বা দুষ্ট মানুষদের সহবাস বা অনুকরণে নরকে যায় বা অধঃপতিত হয়।

অর্থাৎ দেখতে পাচ্ছি নরক কোন আলাদা স্থানের নাম নয়। বরং দুষ্টলোকের সাথে থেকে অধপতিত হওয়াই নরক বা যে দুর্দশা প্রাপ্ত হয় সেটাই নরক। অর্থাৎ দেখতে পাচ্ছি যেসব শব্দের আধারে মহীধর সায়ণরা স্বর্গ নরক নামক কল্পিত স্থানের কথা তাদের বেদভাষ্যে উল্লেখ করেছেন তার কোন বৈদিক ব্যুৎপত্তিগত ভিত্তি নেই।

নরকঃ ন্যরকম্ - নীচৈঃ গমনম্ (নিচে গমন অর্থাৎ অধঃপতন)। নি এর অর্থ হচ্ছে নিচে এর লোপ ন হওয়ার কারনে ন্যরক হয় অর্থাৎ নরক!
নিরুক্ত ১।১১ এ তে রয়েছে—
"ন জিহনায়ন্তো নরকে পতাম" অর্থাৎ কুটিল আচরন করে আমরা নরকে পতিত হই অর্থাৎ অধঃপাতিত হই।
মৃত্যুর পর আপনি স্বকর্ম অনুযায়ী পুনর্জন্ম লাভ করবেন। এবং সে অনুযায়ী কর্মফল ভোগ করবেন এটাই নিয়ম

মোক্ষ - অবিদ্যা জাত প্রকৃতি হতে বন্ধন থেকে তথা দুঃখ থেকে মুক্তি তথা ব্রহ্মে অব্যাহত গতিতে বিচরণ করা হলো মোক্ষ । (কঠ: ১/২/১৭)
জীবাত্মার কর্ম স্বার্থ অত: জীবাত্মার ফল‌ও স্বার্থ লাভ করে । মোক্ষে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করার পর জীবাত্মার পুনরাবৃত্তি হয় ।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ