<<আগের পর্ব
আলোর কচড়া
ফরাসি জ্যোতির্বিদ জিওভ্যানি ক্যাসিনি। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে লক্ষ করলেন এক আশ্চর্য ঘটনা। আমরা জানি, সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। প্রত্যেকের একটা নির্দিষ্ট কক্ষপথ আছে। কক্ষপথগুলো গোলাকার নয়। উপবৃত্তাকার। সুতরাং এর গ্রহগুলো সব সময় পরস্পর থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করে না। পৃথিবী আর বৃহস্পতির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে।
ক্যাসিনি বৃহস্পতিগ্রহের উপগ্রহগুলোতে যে গ্রহণ লাগে, সেগুলো পর্যবেক্ষণ করছিলেন। বৃহস্পতির উপগ্রহের গ্রহণকাল আগে থেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় এবং সেটা খুব সহজেই।
ক্যাসিনি দেখালেন, বছরের যে সময়ে বৃহস্পতি পৃথিবীর খুব কাছে থাকে, তখন আগে অনুমান করা সময়ের কয়েক মিনিট আগেই গ্রহণ দেখা যায়। আবার বছরের যে সময়ে বৃহস্পতি সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে, সেই সময়ে গ্রহণ দেখা যায় অনুমিত সময়ের কয়েক মিনিট পরে।
এর মানে কী?
এর ব্যাখ্যা ছিল না ক্যাসিনির কাছে। তখনই এগিয়ে এলেন ডেনিশ জ্যোতির্বিদ ওলে ক্রিস্টেনসন রোমার। কোনো উৎস থেকে আলো এসে যখন আমাদের চোখের রেটিনায় আঘাত করে, তখনই সেই বস্তুটা আমরা দেখতে পাই। বৃহস্পতির দুটি গ্রহণের সময়ের যে পার্থক্য ঘটে, তার কারণ দুই স্থান থেকে আলো আসতে দুই রকম সময় লাগছে।
বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক ও গণিতবিদ ইউক্লিড মনে করতেন, মানুষের চোখ থেকে আলো বের হয়। সেই আলো গিয়ে পড়ে বস্তুর ওপর। তারপরই সেই বস্তুকে দেখতে পায় মানুষ। ইউক্লিডের এই ধারণা ভুল, এখনকার স্কুলের বাচ্চারাও সেটা বোঝে। কিন্তু দশম শতাব্দীতে সেটা বোঝা অত সহজ ছিল না। বিশ্ব বিজ্ঞানে গ্রিক পতিদের তখন দেবতার আসন।
দ্বিতীয় শতাব্দীতে টলেমি একের পর এক ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অ্যারিস্টোটলের বেশির ভাগ মতকেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আলোর ব্যাপারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ইউক্লিডের ভুল ধারণার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে টলেমি সেটাকে আগলে রেখেছিলেন যুগ যুগ ধরে।
সেই ধারণাতেই কুঠারাঘাত করলেন আল হাজেন। ইরাকি পণ্ডিত আল হাসান ইবনে আল-হাইসামের। লাতিন আর ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা যাঁকে চেনেন আল হাজেন নামে। বললেন, মানুষের চোখ থেকে নয়, বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে এসে যখন আমাদের চোখের ওপর পড়ে, তখনই আমরা বস্তুটাকে দেখি।
অনেকেই তখন রে-রে করে তেড়ে এলেন, জাত গেল জাত গেল বলে চিৎকার-চেঁচামেচি করলেন–কোথাকার কোন আল-হাসানের ধৃষ্টতা কেমন করে হলো ইউক্লিড-টলেমির তত্ত্ব ছুড়ে ফেলার! তখন হাজেন সমর্থন পেলেন আরবের দুই বিখ্যাত পণ্ডিত ইবনে সিনা আর আলবেরুনির।
মিসর হলো নীল নদের দান। সেই নীল নদই প্রতিবছর বন্যায় ভাসিয়ে দিত মিসরকে। যুগ যুগ ধরে সেই ধারা চলছে। দশম শতাব্দীর মিসরের খলিফা চাইলেন সেই বন্যা থেকে চিরস্থায়ী মুক্তি। এ জন্য তিনি শরণাপন্ন হলেন আল-হাজেনের।
হাজেন এলেন কায়রোয়। বন্যাপরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে হাতে নিলেন বাঁধ নির্মাণের একটা প্রকল্প। হাজেন অনেক যাচাই-বাছাই করে দেখলেন, বাঁধ নির্মাণ সম্ভব নয়। কিন্তু সে কথা বললেন না খলিফাকে। বরং সময় চাইতে থাকলেন দিনের পর দিন। রাজপণ্ডিত হওয়ার সুবিধা অনেক। ইচ্ছেমতো গবেষণা করা যায়, অর্থকড়ির ভাঁড়ারেও টান পড়ে না।
বাঁধ নির্মাণ সম্ভব নয়, তাই সেই টাকা আর রাজসুবিধা ভোগ করে আল হাজেন শুরু করলেন বৈজ্ঞানিক গবেষণা। আলোর ওপর করলেন মৌলিক কিছু কাজ।
আল হাজেন বাঁধ নির্মাণ করতে পারেননি। তাই খলিফা খেপে গিয়েছিলেন একসময়। শোনা যায়, তখন পাগলের ভান ধরেই হাজেন রয়ে গিয়েছিলেন মিসরে। গোপনে আলো নিয়ে গবেষণা করেছেন, লিখেছেন সাত খণ্ডের ঢাউস এক বই–কিতাব আল-মানাজির। ইংরেজি অনুবাদে যার নাম হয় বুক অব অপটিকস। এই বইয়ে হাজেন বলেন, আলো ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে গেলে এর গতি কমে যায়। আগে মানুষ মনে করত, আলোর গতি অসীম।
পরে হাজেনের সেই ধারণা অনুপ্রাণিত করে ত্রয়োদশ শতাব্দীর বিখ্যাত ফরাসি পণ্ডিত রজার বেকনকে। তিনি আল হাজেনের সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, আলোর গতি অনেক বেশি। শব্দের চেয়েও বেশি, কিন্তু গতি অসীম নয়।
তখন আরেকটা মতবাদ ছিল আলোর গতির ব্যাপারে। পণ্ডিতেরা মনে করতেন, শূন্য মাধ্যমে আলোর গতি অসীম, কিন্তু বায়ুমাধ্যমের ভেতর দিয়ে চলতে গিয়ে ধীর হয়ে যায় আলো।
সপ্তদশ শতাব্দীতে এসে বিখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানী জোহান কেপলারকেও অনুপ্রাণিত করে আল হাজেনের তত্ত্ব। তিনিও অপটিকস নামে আলোকতত্ত্বের ওপর বিখ্যাত একটা বই লেখেন। যে বইটি নিউটনের আলোক গবেষণার খোরাক জোগায়। সেই বইয়ে কেপলার লেখেন, শূন্য মাধ্যমে আলোর চলাচলের জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।
১৬২৯ সাল। ডাচ দার্শনিক আইজ্যাক বিকম্যান একটা পরীক্ষার প্রস্তাব করলেন। কামান থেকে বেরোনো একটা আলোকরশ্মি, সেটাকে প্রতিফলিত করতে হবে এক মাইল দূরের কোনো আয়নায়। যদি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসতে সময় নেয়, তাহলে নিশ্চিত হওয়া যাবে, আলোর গতির সীমা আছে। কিন্তু সেই পরীক্ষা কেউ করে দেখেননি।
কাছাকাছি সময়ে ইতালিয়ান পদার্থবিদ গ্যালিলিও গ্যালিলি করলেন এমনই এক পরীক্ষা। তবে বিকম্যানের প্রস্তাবের খবর জানতেন না গ্যালিলিও। গ্যালিলিও দেখলেন, আলো দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় নেয় না। সেটা গ্যালিলিওর ভুল ছিল। আলোর গতি খুব বেশি। সেকেন্ডে এক লাখ ছিয়াশি হাজার মাইল। তাই এক মাইল দূরে রাখা আয়না থেকে প্রতিফলিত হয়ে আসতে আলোর সময় লাগবে এক সেকেন্ডের এক লাখ ছিয়াশি হাজার ভাগের মাত্র এক ভাগ। এত ক্ষুদ্র সময় মাপতে পারে এমন প্রযুক্তি তখন গ্যালিলিওর কাছে ছিল না। তাই তিনি বুঝতে পারলেন না আলো চলতে সময় নেয়। এর পরেই ক্যাসিনির আবির্ভাব।
বৃহস্পতির উপগ্রহের গ্রহণকাল সমস্যা, যেটার কটথা অধ্যায়ের শুরুতেই বলেছি–সেটা নিয়ে রোমার ভাবলেন, এর অর্থ একটাই। আলোকক্রিয়া কোনো তাৎক্ষণিক ঘটনা নয়। অর্থাৎ আলোর একটা নির্দিষ্ট গতি আছে। তবে আলোর গতিটা খুব বেশি। বৃহস্পতির সঙ্গে পৃথিবীর দূরত্ব অনেক। বছরের দুটি আলাদা সময়ে দূরত্বের যে পার্থক্য হয়, সেটাও কম নয়। তাই বৃহস্পতির উপগ্রহের গ্রহণের ঘটনা প্রমাণ করে দেয় আলোর গতিবেগ নির্দিষ্ট।
রোমার আলোর গতি মাপেন সেকেন্ডে এক লাখ চুয়াল্লিশ হাজার মাইল। এটা আধুনিক পরিমাপের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু সেই কালে আলোর গতি মাপার এত সূক্ষ্ম যন্ত্র ছিল না। সুতরাং রোমারের মাপা এই মানটার গুরুত্ব অনেক।
সপ্তদশ শতাব্দীতে ক্রিশ্চিয়ান হাই আলোর রগতি মাপেন সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার । তবে তিনি বললেন, শব্দের মতো আলোও তরঙ্গাকারে চলে। মার্কিন বিজ্ঞানী তাঁর থমাস ইয়াং বিখ্যাত ‘ডাবল স্লিট’ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করে দিলেন, হাইগেনসই ঠিক, আলো চলে তরঙ্গাকারে।
এর আগে নিউটন বলেছিলেন, আলো আসলে গতিশীল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি। তরঙ্গাকারে চলতে গেলে মাধ্যমের দরকার হয়। শব্দের কথাই ধরা যাক। শব্দ বাতাসের বুকে ঢেউ তোলে। তারপর বাতাস কাঁপিয়ে সে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। আলোর তরঙ্গ কিসের ওপর ঢেউ তোলে? বাতাসে ঢেউ তোলার প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে আলো চলাচলের মাধ্যমটা কী?
তখন বিজ্ঞানীরা কল্পনা করলেন এক অদৃশ্য মাধ্যমের। নাম তার ইথার। ধরে নেওয়া হলো, শূন্যস্থানেও ইথারের অস্তিত্ব আছে।
কিন্তু সমস্যা একটা রয়েই গেল।
আলো যদি ইথারের মধ্য দিয়ে চলে, সেই ইথার কি সব জায়গায়ই আছে? বহুদূরের নক্ষত্র থেকে আসা আলোকরশ্মিও ইথার মাধ্যম পাড়ি দিয়ে আসে? নাকি গোটা মহাবিশ্বই ইথারে নিমজ্জিত?
১৮৬৫ সালে স্কটিশ পদার্থবিদ জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল তাঁর বিখ্যাত বিদ্যুৎচুম্বকীয় সমীকরণগুলো প্রতিষ্ঠা করলেন। এই সমীকরণ বলে, আলোও একপ্রকার তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ। ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ থেকেই বেরিয়ে এল, চলার জন্যআলোক তরঙ্গের কোনো মাধ্যমের দরকার হয় না। সেখান থেকেই ইথারের ধারণার বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। কারণ, ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ থেকে বেরিয়ে এসেছে আলোর বেগের নির্দিষ্ট মান। আর সেটা সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার। আর সেটা হাইগেনেসের মাপা মানের সাথে মিলে যায়।
ঝামেলা হলো ইথার নিয়ে। ইথারের ব্যাপারটা ম্যাক্সওয়েলই মানতে পারেননি। বাতাসে শব্দ তরঙ্গাকারে চলে। যতক্ষণ শব্দ তরঙ্গন্যূনতম শক্তি ধরে রাখতে পারে, ততক্ষণ চলে। আমরা দেখি শব্দ তরঙ্গ একটানা চলতে পারে না। একসময় তা বাতাসের বাধার কারণেই থেমে যেতে বাধ্য হয়। ইথার যদি আলোর এমন মাধ্যম হয়, তাহলে একসময় আলোকেও থামিয়ে দিতে সক্ষম!
ম্যাক্সওয়েল বললেন, যদি ইথার বলে কিছু থাকে, তবে আলোর ক্ষেত্রের এমন ঘটনা ঘটা উচিত। অর্থাৎ যখন ইথারের ভেতর দিয়ে আলোর দিকে ছোটা হবে তখন আরও দ্রুত আলোর কাছাকাছি চলে আসা উচিৎ। অর্থাৎ আলোর বেগ তখন বেশি হবে। আবার খুব দ্রুত গতিতে ইথারের ভেতর দিয়ে আলো যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে ছুটলে আলো পিছিয়ে পড়ার কথা। ম্যাক্সওয়েল ভাবলেন ইথার যদি থেকেই থাকে তবে পৃথিবীও ইথারের মধ্যে নিমজ্জিত পৃথিবী সূর্যের চারপাশে বৃত্তাকারে (আসলে উপবৃত্তাকারে) ঘুরছে। তাই জানুয়ারি মাসে পৃথিবীর অভিমুখ সেদিকে জুলাই মাসে তার ঠিক উল্টো দিকে। তেমনি অক্টোবর মাসের পৃথিবীর অভিমুখ এপ্রিল মাসের অভিমুখের উল্টো দিকে হবে। নিচের চিত্রের মতো।
ইথারের অস্তিত্ব থাকলে জানুয়ারি ও জুলাই মাসে পৃথিবীতে আলোর বেগের ভেতর পার্থক্য দেখা যাবার কথা। ম্যাক্সওয়েল তার ধারণার কথা রয়ল সোসাইটির জার্নাল ‘প্রসিডিং অব রয়্যাল সোসাইটি’র সম্পাদককে জানান।
কিন্তু আলোকে কখনো থামানো যায় না।ম্যাক্সওয়েল তাঁর ধারণার কথা রয়্যাল সোসাইটির জার্নাল প্রসিডিং অব রয়্যাল সোসাইটির সম্পাদককে জানান। কিন্তু সম্পাদক ম্যাক্সওয়েলের ধারণাকে যুক্তিযুক্ত মনে করেননি। তবে ম্যাক্সওয়েলের ধারণায় অনুপ্রাণিত হলেন আমেরিকান পদার্থবিদ আলবার্ট মাইকেলসন।
১৮৮৭ সালে তাঁরা একটা পরীক্ষা করলেন। মাইকেলসন-মর্লির পরীক্ষা নামে সেটা পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। মাইকেলসন-মর্লি পৃথিবীর সাপেক্ষে দুবার আলোর গতির পরীক্ষাটি চালালেন। একবার আলোর গতি নির্ণয় করা হলো পৃথিবীর গতির অভিমুখে। আরেকবার নির্ণয় করা হলো পৃথিবীর গতির সমকোণে। এজন্য তারা ব্যবহার করলেন দুটি আয়না। একটা আয়না রাখা হলো পৃথিবীর গতির অভিমুখে। আরেকটা পৃথিবীর সমোকোণে। এভাবে যে যন্ত্রটা তৈরি হলো, তার নাম ইন্টারফেরোমিটার।
দুই আয়না থেকে সমান দূরত্বে, তাদের সমকোণো অর্ধরৌপায়িত একটা আয়না রাখা হলো। পৃথিবীর গতির অভিমুখে রাখা আয়না থেকে প্রতিফলিত রশ্মির কিছু অংশ অর্ধরৌপায়িত আয়নায় প্রতিফলিত পর্যবেক্ষণ স্থলে পৌঁছবে। আর পৃথিবীর সমোকোণে রাখা আয়না থেকে প্রতিফলিত আলোর কিছু অংশ অর্ধরৌপায়িত আয়নার ভেতর দিয়ে এসে পর্যবেক্ষণ স্থলে পৌঁছবে। একটা আলোক উৎস থেকে মাইকেলসন ও মর্লি দুবার দুই আয়নায় দুটি আলোক রশ্মি পাঠালেন। দুবরাই তারা আলোর গতির মান নির্ভুলভাবে একই পেলেন।
দেখা যাক ইথার নামে কোনো বস্তু থাকলে আলোর বেগের ভিন্নতা কেমন হতো। ধরা যাক, একটা সমূদ্রে জাহাজ চলছে। ধরা যাক সমুদ্র শান্ত। জাহাজ যখন পানির স্রোত কেটে সামনে এগিয়ে যায়, তখন জাহাজের বিপরীতে পানির একটা স্রোত প্রবাহিত হয়। জাহাজের গতি কিছুটা হলেও শ্লথ করে দেয় পানির সেই স্রোত। বিজ্ঞানীরা মনে করতেন পৃথিবী ইথার সমুদ্রে ভাসমান এটা জাহাজের মতো। পৃথিবী ইথারের স্রোত ঠেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। যেেিদকে চলছে ইথারকেও সেদিকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তুপৃথিবীর গতির অভিমুখে ইথারের একটা স্রোত তৈরি হবে। পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। তাই পূর্ব-পশ্চিম বরাবর স্রোতের অভিমুখ হবে। উত্তর-দক্ষিণ বরাবর পৃথিবীর গতির কোনও অভিমুখ নেই। তাই উত্তর দক্ষিণে স্রোতের কোনও অভিমুখ থাকবে না। যখন আলোক রশ্মিকে পৃথিবীর গতির অভিমুখে পাঠানো হবে, আলোকে তখন ইথারের গতির বিপরীতে যেতে হয়। আলো ইথারের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়। ঠিক পানির স্রোত যেমন জাহাজের গতিকে শ্লথ করে দেয়। ইথারও তেমন আলোর গতিকে শ্লথ করে দেবে। ইথার তরঙ্গ যদি সত্যিই থেকে থাকে তাহলে পশ্চিম-পুর্ব বরাবর যে রশ্মি পাঠানো হয়েছিল তা উত্তর-দক্ষিণ বরাবর পাঠানো রশ্মির চেয়ে ধীরে চলবে। তাই ফিরে আসতেও সময় লাগবে। কিন্তু মাইকেলসন-মর্লি পরীক্ষার ফলফল বলছে, দুইদিকে আলোকরশ্মিই ফিরে আসে একই সময়ে।
ইথার তরঙ্গ যদি থাকত, তাহলে দুবার দুরকম ফল পাওয়া যেত। কিন্তু মাইকেলসন-মর্লি একই ফল পেলেন। তাহলে কি ইথারের বাধা ছিল না? মাইকেলসন-মর্লির পরীক্ষা থেকেই আসলে প্রমাণ হলো ইথার বলে কিছু নেই। পরীক্ষা হলো, প্রমাণ হলো। কিন্তুব্যাখ্যা হলো না। তবে একদিন ইথারের অস্তিত্ব ভেঙে পড়ল। এর জন্য অপেক্ষা করতে হলো বহুদিন।
ইথারের অস্তিত্ব ভেঙে পড়ল। কিন্তু অনেক বিজ্ঞানী সেটা মানতে পারলেন না। তাঁরা উঠেপড়ে লাগলেন বিভিন্ন প্রকল্প দাঁড় করিয়ে ইথার সংক্রান্ত জটিলতা দূর করার জন্য। বিশেষ করে কিছু বিজ্ঞানী ইথারকে বাদ দিতে একেবারে নারাজ ছিলেন। তাই তাঁরা ইথারকে ধরে রাখতে ভিন্ন পথ অবলম্বন করলেন।
এর মধ্যে আইরিশ বিজ্ঞানী ফিট জেরাল্ডের প্রকল্পটা ছিল অন্যতম। তিনি বললেন, গতির অভিমুখে পাঠানো আলো ফিরে আসতে বেশি সময় লাগত, কিন্তু গতির কারণে ইন্টারফেরোমিটারের দৈর্ঘ্য সংকুচিত হয়েছে। অর্থাৎ আলোর গতিপথ কমে গেছে। এই গতিপথ ততটুকুই কমেছে, যতটুকু কমলে পৃথিবীর লম্ব বরাবর পাঠানো আলোকরশ্মি যে সময়ে ফিরে আসে, সেই সময়ে ফিরতে পারে। সংকোচনের পরিমাণ কতটুকু হবে, তা নির্ভর করবে বস্তুর বেগের ওপর। এখানে ইন্টারফেরোমিটার চলছে পৃথিবীর গতিতে। তিনি হিসাব করে দেখালেন, ১ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটা বস্তু যদি আলোর বেগের অর্ধেক গতিতে চলে, তাহলে তার দৈর্ঘ্য কমে দাঁড়াবে ০.৮৬৬ মিটারে।
তাঁর প্রকল্পের সূত্রধরে ডাচ বিজ্ঞানী হেনড্রিক অ্যান্টন লরেনৎস আরেকটি প্রকল্প হাতে নেন। ফিটজেরাল্ড আর লরেনৎস মিলে দাঁড় করালেন ফিটজেরাল্ড-লরেনৎস প্রকল্প। এই প্রকল্পে তাঁরা কতগুলো সমীকরণ ব্যবহার করেন। ম্যাক্সওয়েলের তড়িচ্চুম্বকীয় সমীকরণগুলোকে ফিটজেরাল্ড-লরেনৎস প্রকল্পের মাধ্যমে দুটি ভিন্ন প্রসঙ্গ কাঠামোতে ব্যবহার করা যায়। মাইকেলসন-মর্লির পরীক্ষা থেকে ইথার অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু তাঁরা ইথারের ধোঁয়াশা সমাধান করতে পারেননি।
১৯০৫ সালে এল সমাধান, আলবার্ট আইনস্টাইনের হাত ধরে। আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্বে ব্যবহার করলেন এই সূত্রগুলো। কিন্তু ফিটজেরাল্ড আর লরেনৎস সমীকরণগুলো ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন ইথারকে বাঁচাতে আর আলোর বেগ ধ্রুব নয়, এটা প্রমাণ করতে। আইনস্টাইন ওইগুলো ব্যবহার করে আলোর বেগের ধ্রুবতা প্রমাণ করলেন।
আইনস্টাইন আপেক্ষিক তত্ত্বে গ্যালিলিওর রূপান্তর সমীকরণগুলোকে লরেনৎস রূপান্তর সমীকরণ দিয়েপ্রতিস্থাপিত করলে। বেরিয়েএল আলোর বেগের ধ্রুবতা। আইনস্টাইন আরও বললেন, আলোর গতির চেয়ে বেশি গতি আর কোনো বস্তুর হতে পারে না। আইনস্টাইনের সেই তত্ত্ব এখনো বুক ফুলিয়ে রাজত্ব করছে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে।
আপেক্ষিকতা ও আধুনিক মহাকর্ষ
ফিরে যেতে হবে একশ বছর আগে। পদার্থবিজ্ঞান তখন দুটি চিরায়ত তত্ত্বের ওপর দাঁড়িয়ে। একটা হলো নিউটনের গতি তত্ত্ব। আরেকটা ম্যাক্সওয়েলের তড়িচ্চুম্বকীয় তত্ত্ব। নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বও প্রকৃতিবিজ্ঞানের অন্যতম ভিত্তি। তবে মহকর্ষ তত্ত্ব নিউটনের গতিতত্ত্বের বাইরে নয়।
আপেক্ষিকতা প্রকাশের আগে বিজ্ঞানীরা স্থান ও কালকে আলাদা করে দেখতেন। আইনস্টাইন বললেন, স্থান ও কাল আলাদা কোনও বিষয় নয়। স্থানকালে এক করে দেখতে হবে। আগে জড় বস্তুর তিনটে মাত্রা ছিল। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা। এই তিনটিই স্থানের মাত্রা। স্থানকাল যেহেতু অভিন্ন সত্তা সুতরাং জড়বস্তুর মাত্রা একটা বেড়ে গেল। সেটা কালের বা সময়ের মাত্রা।’স্থানকাল’ শব্দটা বিশেষ মর্যাদা লাভ করল পদার্থবিজ্ঞানে।
আইনস্টাইন বললেন, গোটা মহাবিশ্বই দাঁড়িয়ে আছে এই স্থাকালের ওপর। ব্যাপারটা একটু খোলসা করা যাক। মহাবিশ্বের গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সিগুলো কোথায় দাঁড়িয়ে?
অনেকে বলেনর, মহাশূন্যে বা মহাবিশ্বে। এই মহাবিশ্ব বা মহাশূন্যটা কী?
আগে ওটাকেই বিজ্ঞানীরা বলতেন স্পেস বা স্থান। আইনস্টাইন বললেন, শুধু স্পেস বললে ভূল হবে। ওটা আসলে স্পেসটাইম বা স্থানকাল।
বিশেষ আপেক্ষিকতা থেকে আরেকটি বিখ্যাত সূত্র বেরিয়ে এসেছিল। সেটা হলো ভরশক্তির সমীকরণ। এই সমীকরণ থেকে বেরিয়ে এলো, ভর ও শক্তির অভিন্ন স্বত্ত্বা নয়। ভরকে শক্তিতে রূপন্তরিত করা যায়। তেমনি শক্তিকেও ভরে পরিণত করা সম্ভব।
বিশেষ আপেক্ষিকতা প্রকাশ করেই বসে থাকলেন না আইনস্টাইন। বুঝতে পারলেন এই তত্ত্বও পদার্থবিজ্ঞানকে সম্পূর্ণ করতে পারেনি। মহাকর্ষ বল নিয়ে কোনও কথাই বলা হয়নি এই তত্ত্বে। নিউটনের মহকর্ষের কথা আগেই বলা হয়েছে। নিউটনের তত্ত্ব দিয়ে গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ, পৃথিবীর ঘূর্ণন, বলবিদ্যা ইত্যাদি ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল। তবে কিছু ত্রুটি রয়ে গিয়েছিল মহাকর্ষ সূত্রে। এতে সময়ের কথা বলা হয়নি। একটা বস্তুর ওপর আরেকটা বস্তুর মহাকর্ষ বলের ক্রিয়া সংঘটিত হতে কত সময় লাগবে? মানে দুটোর কোনো একটা বস্তুর যদি ভরের পরিবর্তন হয় তাহলে তাদের মহাকর্ষ বলের পরিবর্তন হবে, সেই পরিবর্তনটা হতে কত সময় লাগবে?
পৃথিবী আর সূর্যের কথাই ধরা যাক। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব মোটামুটি ১৫ কোটি কিলোমিটার। ধরা যাক, মহাকাশের আরেকটি বিরাট নক্ষত্র কক্ষচ্যুত হয়ে সূর্যের ওপর এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। তাল সামলাতে না পা পেরে সূর্য তার অবস্থান থেকে খানিকটা সরে গেল। ফলে পৃথিবীর সাথে তার দূরত্বের হেরফের হলো। ফলে মহাকর্ষ বলের মানেরও পরির্তন ঘটবে।
কিন্তু পৃথিবী ঠিক কখন টের পাবে মহাকর্ষ বলের পরিবর্তন হয়েছে? তা কি সূর্যের অবস্থানচ্যূত হওয়ার সাথে সাথে?
নাকি পরে?
কত পরে?
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র বলছে দূরত্বের হেরফের হলে বস্তুদুটোর আকর্ষণ বলেরও হেরফের হবে। তাই সূর্যের অবস্থানচ্যূত হলে সাথেই সাথেই পৃথিবী তা টের পেয়ে যাওয়ার কথা।
তাহলে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ কি দূরক্রিয়া?
মানে কালক্ষেপন না করেই কোনো বার্তা কোটি কোটি কিলোমিটার দূরে ছড়িয়ে দেয়া?
তা কি সম্ভব?
এখানেই আসলে মূল সমস্যা। কিন্তু নিউটনের সময়ে এই ক্রটির কথা কেউ ভাবেনি।
আরও কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল আইনস্টাইনের মাথায়। মহাকর্ষ বলের উৎস কী? বস্তুর ভেতরের কোন ধর্মের কারণে মহাকর্ষ বল ক্রিয়া করে। বিদ্যুৎ ও চুম্বকেরও আকর্ষণ ধর্ম আছে। কিন্তু ওই দুই বলের বিকর্ষণী ক্ষমতাও আছে। অথচ মহাকর্ষ বল শুধু আকর্ষণই করে। এর কোনো বিকর্ষণী ক্ষমতা নেই।
কিন্তু কেন?
১৯০৭ সাল। আইনস্টাইন তখন সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে বাস করেন। সেখানকার পেটেন্ট অফিসের সামান্য কেরানি। একদিন অফিসে বসেই তার মাথায় এলো একটা চিন্তা । যেটাকে তিনি বলেছেন, তার জীবনের সবচেয়ে সুখের চিন্তা।
ধরা যাক, একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে লিফটের ভেতরে। লিফটটা আছে মাটি থেকে কয়েকশো ফুট থেকে বেশ ওপরে। হঠাৎ যদি লিফটের দড়ি ছিঁড়ে যায়। তাহলে লিফট আর ভেতরের লোকটা মুক্তভাবে নিচে পড়তে থাকবে। উয়েরই ত্বরণ হবে মহাকর্ষ ত্বরণের সমান। লোকটা তখন ওজন অনুভব করবে না। ওপর থেকে মুক্তভাবে পড়া যেকোন বস্তুই আসলে মাটি ছোঁয়ার আগ পর্যন্ত নিজেকে ওজনহীন মনে করে।
একই উচ্চতা থেকে ভিন্ন দুটি বস্তু মুক্ত যখন নিচে পড়ে তখন তাদের ত্বরণ সমান হয়। তারা একইসাথে মাটি স্পর্শ করে।
পড়ন্ত বস্তুর এই সূত্রগুলো আবিষ্কার করেছিলেন গ্যালিলিও। এগুলো গাণিতিকভাবে প্রমাণ করে দেখান নিউটন। অর্থাৎ পড়ন্ত বস্তুর গতি কিংবা ত্বরণের ওপর ভরের কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ পড়ন্ত বস্তুর পতনের জন্য দায়ী পৃথিবীর মহাকর্ষ বল। মহাকর্ষ সূত্রেই আবার দাবি করা হয়েছে, মহাকর্ষ বল ভরের ওপর নির্ভরশীল।
আইনস্টাইন পড়ন্ত বস্তুর ওপর পৃথবীর আকর্ষণ আর মহাকর্ষ বলকে এক সূতোই বাঁধার চেষ্টা করলেন। নিউটন দেখিয়েছিলেন পড়ন্ত বস্তুর ত্বরণের জন্য পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্র দায়ী। আইনস্টাইন একটু উল্টোভাবে চিন্তা করলেন। মহাকর্ষ বলের কারণে বস্তু ত্বরিত হয়।
যেখানে মহাকর্ষ বল অনুপস্থিত, সেখানে যদি কোনও বস্তু ত্বরিত কর হয় তাহলে কি মহাকর্ষ বলের সৃষ্টি হবে। আইনস্টাইন হিসেব করে দেখলেন, মহাকর্ষ বল যেখানে নেই সেখানে কোনও লিফটকে যদি যান্ত্রিক উপায়ে ত্বরিত করা যায় তাহলে সেই লিফটের ভেতর কৃত্রিম মকাকর্ষ ক্ষেত্র তৈরি হয়।
এরপর আইনস্টাইন লেগে পড়লেন মহাকর্ষ বলের সবরকম রহস্য অনুসন্ধানে। ১৯১৫ সালে তিনি আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব প্রকাশ করলেন। তাতে বলা হল, মহাকর্ষ বলের জন্য বস্তুর ভর দায়ি নয়। মহাকর্ষ বল স্থানকাল জ্যামিতির খেলা মাত্র। তিনি হিসাব করে দেখিয়েছিলেন ভারি কোনো উপস্থিতি স্থানকালকে বাঁকিয়ে দেয়।
ধরা যাক, একটা চাদর। সেটা চারটে খুঁটির মাথায় টানটান করে বাঁধা। সেক্ষেত্রে চাদরটাও সমতল পৃষ্টের মতো টানটান হয়ে থাকবে। তারওপর একটা লোহার বল রাখা হলো। তাহলে চাদরটার মাঝখানের জায়গাটা নিচের দিকে ঝুলে যাবে ওই বলটার কারণে। এখন একটা কাচের গুলি চাদরের একপাশে গড়িয়ে দেওয়া হোক। সেটা ধীরে ধীরে চাদরের মাঝখানের দিকে এগিয়ে যাবে। যেখানে লোহার গোলকটা আছে সেদিকে। তারপর গোলটার কাছাকাছি গিয়ে কয়েকপাক ঘুরবে। ঘুরতে ঘুরতে একসময় লোহার গোলকের সাথে ধাক্কা খাবে।
এটা কেন হচ্ছে?
কারণ লোহার গোলক চাদরের মাঝখানটা বাকিয়ে দিয়েছে। তাই গুলিটা চাদরের ওপর গড়িয়ে দিলে সেটা চলার জন্য আর সমতল পথ পাচ্ছে না। তার চলার পথ বেঁকে গেছে। তেই সে বাঁকা পথেই চলে গেছে গোলকটার দিকে।
স্থানকালকেও এমন চাদরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। পৃথিবী, সূর্য, নক্ষত্র, ব্ল্যাকহোল ইত্যাদি ভারী বস্তুর উপস্থিতি স্থানকালকে বাঁকিয়ে দেয়। তখন ভারী বস্তুর কাছে আরেকটা হালকা বস্তু এলে মনে হবে ভারী বস্তুটা হালকা বস্তুকে আকর্ষণ করছে। ঠিক চাদরের ওপর যেভাবে লোহার গোলক কাচের গুলিকে আকর্ষণ করেছিল। তবে চাদরের সাথে স্থানকালের পার্থক্য আছে। স্থানকাল চারমাত্রিক। আর চাদরে তর হলো দ্বিমাত্রিক। তাই স্থানকালকে ভারি বস্তু চারমাত্রায় বাঁকিয়ে দেবে।
স্থানকালের এই বক্রতাই হলো মহাকর্ষ বলের উৎস। কিন্তু আমাদের সাধারণ ইউক্লিডিও জ্যামিতি দিয়ে এটা ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না। আইনস্টাইন তখন তাঁর গণিতবিদ বন্ধু মার্সেল গ্রসম্যানের শরণাপন্ন হন। গ্রসম্যন তাকে কার্ল গাউস ও তার ছাত্র র্বানাড রীম্যানের প্রতিষ্ঠিত করা বক্র জ্যামিতির সন্ধান দেন।
সেই জামিতির সাহায্যে আইনস্টাইন সাধারণ আপেক্ষিত তত্ত্বের সমাধান করেন। সেইসাথে মহাকর্ষীয় বলেরও সমাধান হয়। ১৯১৯ সালে জ্যোতির্বিদ আর্থার এডিংটনের একদল গবেষক সর্বপ্রথম সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের প্রমাণ দেন।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ