শান্তি মন্ত্র - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 July, 2020

শান্তি মন্ত্র

বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও ক্রিয়াকর্মাদিতে শান্তিমন্ত্র পাঠ করা হয় এবং শেষে তিনবার ওঁ শান্তিঃ, ওঁ শান্তিঃ ,ওঁ শান্তিঃ বলা হয় ইহার অর্থঃ ওঁ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক।মনুষ্যের যে সমস্ত দুঃখ আছে তাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন- আধিদৈবিক বিঘ্নআধিভৌতিক বিঘ্ন  এবং আধ্যাত্মিক বিঘ্ন:। 
যে দুঃখ বর্ষা, গরম, শীত, হিমপাত, ভূকম্প আদি জড় পদার্থের দ্বারা উৎপন্ন হয়, সেই দুঃখ কে আধিদৈবিক বলে অর্থাৎ আধিদৈবিক বিঘ্ন: প্লাবন, মহামারী, খরা ইত্যাদি
 যে দুঃখ নানান প্রাণীর দ্বারা উৎপন্ন হয় যেমন সাপ, পোকা, মাকড়, বিচ্ছু আদির কামড়ে এবং নানান হিংস্র প্রাণী আদির দ্বারা পাই সেই সমস্ত দুঃখকে আধিভৌতিক বলা হয়। অর্থাৎআধিভৌতিক বিঘ্ন: সাপে কামড়ানো, বাঘে ধরা ইত্যাদি। 
 কাম, ক্রোধ, ঈর্ষা, রাগ আদি মন বিকার দ্বারা যে সমস্ত দুঃখ উৎপন্ন হয় তাকে আধ্যাত্মিক বলে।অর্থাৎআধ্যাত্মিক বিঘ্ন: শারীরিক ব্যাধি, মানসিক অস্থিরতা, অঙ্গহানি ইত্যাদি। 
ওঁ তচ্ছং যোরাবৃণীমহে। গাতুং যজ্ঞায়।
গাতুং যজ্ঞপতয়ে। দৈবীঃ স্বস্তিরস্তু নঃ।
স্বস্তির্মানুষেভ্যঃ। ঊধ্বং জিগাতু ভেষজম।
শং নো অস্তু দ্বিপদে। শং চতুষ্পদে।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।
অর্থাৎ,
  • মঙ্গলময় ব্রহ্মকে আমরা বরণ করি। তাকে যজ্ঞে স্তুতি করার জন্য যজ্ঞপতি বিষ্ণুকে আমরা বরণ করি। আমাদের আধিদৈবিক বিষয়ে শান্তি হোক। মানুষের সঙ্গে সকল সম্পর্ক শুভ হোক। ঊর্ধলোক সম্বন্ধে হিতকর গান হোক। মানুষপক্ষী ও গবাদি পশুসকলের মঙ্গল হোক। ওঁ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক।
ওঁ অসতো মা সদ্গময়।
তমসো মা জ্যোতির্গময়।
মৃত্যোর্মামৃতং গময়। ( - বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ১।৩।২৮)
আবিরাবীর্ম এধি।। ( - ঐতরেয় উপনিষদ্‌, শান্তিপাঠ)
রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং,
তেন মাং পাহি নিত্যম্।
অর্থাৎ,
  • অসত্য থেকে আমাকে সত্যে নিয়ে যাও, অন্ধকার থেকে আমাকে জ্যোতিতে/আলোতে নিয়ে যাও, মৃত্যু থেকে আমাকে অমৃতে নিয়ে যাও। হে স্বপ্রকাশ, আমার নিকটে প্রকাশিত হও। রুদ্র, তোমার যে প্রসন্নমুখ তার দ্বারা আমাকে সর্বদাই রক্ষা করো।
ওঁ বাঙ্মে মনসি প্রতিষ্ঠাতা
মনো মে বাচি প্রতিষ্ঠিতম্, আবিরাবীর্ম এধি।
বেদস্য ম আণীস্থঃ, শ্রুতং মে মা প্রহাসীঃ, অনেন অধীতেন অহোরাত্রান্
সংদধামি, ঋতং বদিষ্যামি, সত্যং বদিষ্যামি, তৎ মাম্ অবতু
তৎবক্তারম্ অবতু, অবতু মাম্, অবতু বক্তারম্ অবতু বক্তারম্।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।।
( - ঐতরেয় উপনিষদ্‌)
অর্থাৎ,
  • আমার বাক্য মনে প্রতিষ্ঠিত হোক, আমার মন বাক্যে প্রতিষ্ঠিত হোন। হে স্বপ্রকাশ ব্রহ্ম, (আপনি) আমার নিকট প্রকাশিত হোন। (হে বাক্য ও মন তোমরা) আমার নিকট বেদার্থ আনয়নে সমর্থ হও। শ্রুত বিষয় যেন আমাকে ত্যাগ না করে। এই অধ্যয়ন অবলম্বনে আমি দিনরাতকে সংযোজিত করব। আমি মানসিক সত্য বলব, বাচনিক সত্য বলব। ব্রহ্ম আমায় রক্ষা করুন, আচার্যকে রক্ষা করুন; আমায় রক্ষা করুন, আচার্যকে রক্ষা করুন। আচার্যকে রক্ষা করুন। ওঁ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক।
ওঁ শং নো মিত্রঃ শং বরুণঃ।
শং নো ভবত্বর্যমা।
শং নো ইন্দ্রো বৃহস্পতিঃ।
শং নো বিষ্ণুরুরুক্রমঃ।
নমো ব্রহ্মণে।
নমোস্তে বায়ো।
ত্বমেব প্রত্যক্ষং ব্রহ্মাসি।।
ত্বমেব প্রত্যক্ষং ব্রহ্ম বদিষ্যামি।
ঋতং বদিষ্যামি।
সত্যং বদিষ্যামি। তন্মামবতু।
তদ্বক্তারমবতু।
অবতু মাম।
অবতু বক্তারম।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।।

( - তৈত্তিরীয় উপনিষদ্‌ ১।১) 
অর্থাৎ,
  • ভক্তের প্রতি স্নেহশীল মিত্রদেব আমাদের প্রতি সুখদায়ক হোন, বরুণদেব সুখপ্রদ হোন, অর্যমা সুখদায়ক হোন, ইন্দ্র ও বৃহস্পতি আমাদের আনন্দ দান করুন, জগদ্ব্যাপক উরুক্রম বিষ্ণু আমাদের সুখ দান করুন। ব্রহ্মরূপী বায়ুকে নমস্কার।হে বায়ু, আপনিই প্রত্যক্ষ ব্রহ্ম, আপনাকে নমস্কার। আপনি ঋতস্বরূপ বলে আপনাকে ঋত বলব। আপনি সত্যস্বরূপ। হে সর্বাত্মা ব্রহ্ম, আপনি আমাকে রক্ষা করুন; ব্রহ্ম-বক্তাকে রক্ষা করুন। আমাকে রক্ষা করুন; ব্রহ্ম-বক্তাকে রক্ষা করুন। ওঁ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক।
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
   পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।।
       ওঁ শান্তিঃ , ওঁ শান্তিঃ , ওঁ শান্তিঃ।। ( - ঈশোপনিষদ, শান্তিপাঠ)
অর্থাৎ,
  • পরব্রহ্ম পূর্ণ, নামরূপ ব্রহ্মও পূর্ণ ;পূর্ণ থেকে পূর্ণ উদ্গত হন; পূর্ণের পূর্ণত্ব বিদ্যা সহায়ে গ্রহণ করলে পূর্ণই (পরব্রহ্মই) অবশিষ্ট থাকেন। ওঁ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক।
ওঁ আপ্যায়ন্তু মমাঙ্গানি বাক্-প্রাণশ্চক্ষুঃ
শোত্রমথবলমিন্দ্রিয়ানি চ সর্বাণি।
সর্বং ব্রহ্মৌপনিষদং। মা অহং ব্রহ্ম
নিরাকুর্যাং, মা মা নিরাকরোৎ অনিরাকরণম্ অস্তু অনিরাকরণং মে অস্তু
তদাত্মনি নিরতে য উপনিষৎসু ধর্মাস্তে
ময়ি সন্তু তে ময়ি সন্তু।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।।

( - কেন উপনিষদ্‌ ও ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌, শান্তিপাঠ)
অর্থাৎ,
  • আমার অঙ্গসমূহবাক, প্রাণ, চক্ষুকর্ণ ও বল এবং ইন্দ্রিয়সকল পুষ্টিলাভ করুক। সমস্ত পদার্থ স্বরূপতঃ উপনিষৎপ্রতিপাদ্য ব্রহ্মই। আমি যেন ব্রহ্মকে অস্বীকার না করি, ব্রহ্ম যেন আমাকে প্রত্যাখ্যান না করেন; তার সঙ্গে আমার এবং আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক নিত্যসম্বন্ধযুক্ত হোক, অবিচ্ছেদ্য হোক, সেই পরমাত্মায় সততনিষ্ঠ আমার মধ্যে উপনিষদের বাক্যসমূহ মূর্ত হয়ে উঠুক। ওঁ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক।
ওঁ সহনাববতু , সহনৌ ভুনক্তু , সহ বীর্যং করবাবহৈ।         তেজস্বীনাবধীতমস্তু , মা বিদ্বিষাবহৈ ।।
                   ওঁ শান্তিঃ , ওঁ শান্তিঃ , ওঁ শান্তিঃ।।
( - তৈত্তিরীয় উপনিষদ্‌ ৩।১)
অর্থাৎ,
  • (পরমাত্মা) আমাদের উভয়কে (আচার্য ও বিদ্যার্থী) সমভাবে রক্ষা করুন এবং উভয়কে তুল্যভাবে বিদ্যাফল দান করুন; আমরা যেন সমভাবে সামর্থ্য অর্জন করতে পারি; আমাদের উভয়েরই লব্ধবিদ্যা সফল হোক; আমরা যেন পরস্পরকে বিদ্বেষ না করি। ওঁ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক - এই ত্রিবিধ বিঘ্নের বিনাশ হোক।
" ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভূঞ্জীথা। মা গৃধঃ কস্যস্বিদ ধনম"। ।
ঈশা-- ঈশ্বর
বাস্যম্‌-- ঈশ্বরের বাসের জন্য অথবা ঈশ্বর দ্বারা আচ্ছাদিত।
জগত্যাম্‌-- এই গতিশীল বিশ্বে
যৎ কিঞ্চ জগৎ-- যা কিছু চলমান
ত্যক্তেন-- ত্যাগের সহিত
তেন ভূঞ্জিথাঃ-- তা ভোগ করবে
কস্যস্বিদ ধনম-- কাহারও ধনে
মা গৃধঃ-- লোভ করিও না

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ