বেদাঙ্গ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

15 July, 2021

বেদাঙ্গ

‘বেদ’ বা ‘শ্রুতি’ বলতে ‘সংহিতা’, ‘ব্রাহ্মণ’, ‘আরণ্যক’ ও ‘উপনিষদ’ বোঝায়। কিন্তু এই বেদ-পাঠের সহায়ক হিসেবে আরও কয়েক-রকম রচনা সৃষ্টি হয়েছিলো। সামগ্রিকভাবে সেগুলিকে বলা হয় ‘বেদাঙ্গ’। এদের প্রয়োজন ব্যবহারিক। বেদ-পাঠ ও যজ্ঞ অনুষ্ঠানে সাহায্য করতো বলে এদের নাম বেদের-অঙ্গ বা বেদাঙ্গ। মূলত পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য বেদাঙ্গ সাহিত্য রচিত হয়েছিলো।

বেদাঙ্গ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে পাওয়া যাবে বেদ+অঙ্গ, অঙ্গ মানে যেহেতু অংশ বা পার্ট, সেহেতু বেদাঙ্গ মানে মনে হতে পারে বেদের অঙ্গ বা অংশ আসলে ব্যাপারটি সেরকম নয়, বেদাঙ্গ বলতে আসলে বেদের অঙ্গ বা অংশকে বোঝায় না, এগুলোর দ্বারা এমন কিছু বোঝায়, যা বেদ পড়ে বুঝতে সহায়ক। এককথায় বেদ পড়ে বুঝতে এবং বেদের জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে বেদাঙ্গ আবশ্যক ছয় ধরনের বিষয়বস্তুতে বিভক্ত ছিলো এই বেদাঙ্গ সাহিত্য। যেমন– শিক্ষা, ব্যাকরণ, ছন্দ, নিরুক্ত, জ্যোতিষ ও কল্প।
শিক্ষা অর্থাৎ- উচ্চারণ করিবার প্রণালী
কল্প অর্থাৎ- যজ্ঞ করিবার প্রণালী
ব্যাকরণ অর্থাৎ-শব্দের উৎপত্তি
নিরুক্ত অর্থাৎ- শব্দের অর্থ
ছন্দঃ অর্থাৎ- অক্ষরে সংখ্যা অনুসারে বেদবাক্য সজ্জিত করা
জ্যোতিষ অর্থাৎ- নক্ষত্রদের সংস্থান
বেদাঙ্গ ছ’টিঃ
শিক্ষা কল্পো ব্যাকরণং নিরুক্তং ছন্দসাং চয়ঃ।
জ্যোতিষাময়নং চৈব ষড়ঙ্গো বেদ উচ্যতে।।-[মুন্ডকোপনিষদ ১।১।৫]
বিশাল বেদপুরুষের পাদস্বরূপ ছন্দ, হস্তস্বরূপ কল্প, জ্যোতিষ নেত্রস্বরূপ, নিরুক্ত কর্ণ, ঘ্রাণেন্দ্রিয় হচ্ছে শিক্ষা এবং ব্যাকরণ হল মুখস্বরূপ। অঙ্গ ছাড়া যেমন অঙ্গী অসম্ভব, তেমনি বেদাঙ্গ ছাড়া বেদও অকল্পনীয়।
(১) শিক্ষা (নীতিবিদ্যা)।
‘শিক্ষা’ হলো প্রথম বেদাঙ্গ। এ-জাতীয় সাহিত্যের আলোচ্য বিষয় হলো নির্ভুলভাবে বৈদিক শব্দ উচ্চারণের পদ্ধতি। সেকালে বেদ-অধ্যয়ন নিত্য কর্তব্য ছিলো। যজ্ঞেও বেদ পাঠের প্রয়োজন হতো। দৈনিক পাঠকে স্বাধ্যায় বলা হতো। শিক্ষা-গুরু বেদের শব্দরাশির নির্ভুল উচ্চারণ শিক্ষা দিতেন। গুরুর কাছ থেকে শিষ্য তা গ্রহণ করতো। বেদের সংহিতা অংশই প্রধানত শিক্ষার আলোচনার বিষয়।

সংহিতা দুভাবে পাঠ করা হতো। তার পাঠকে পদপাঠ বলা হতো। এই দু’রকম পদপাঠ হলো– অব্যাকৃত পদপাঠ এবং ব্যাকৃত পদপাঠ। সংহিতায় পরস্পর সন্নিবদ্ধ অবস্থায় পদগুলি যেভাবে আছে তেমনভাবে রেখে পাঠ করাকে বলা হয় অব্যাকৃত পদপাঠ। আর ব্যাকৃত পদপাঠে প্রতি পদকে সন্নিবদ্ধ রূপ হতে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে পৃথকভাবে উচ্চারণ করা হয়। স্বভাবতই বেদের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে এই জাতীয় উচ্চারণ-পদ্ধতির আলোচনা সংযুক্ত ছিলো। সংহিতা পাঠের সঙ্গে পদপাঠের সম্পর্ক নির্দেশ করতে প্রাতিশাখ্য গ্রন্থের উদ্ভব হয়। তাই প্রাচীনতম ‘শিক্ষা’-গ্রন্থের নাম ‘প্রাতিশাখ্য’।
বেদাঙ্গ

প্রত্যেক বেদের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাতিশাখ্য সূত্র আছে। ঋগ্বেদের প্রাতিশাখ্য গ্রন্থ হলো ‘ঋগ্বেদ-প্রাতিশাখ্য’ বা ‘শাকল-প্রাতিশাখ্য’। সামবেদের প্রাতিশাখ্য গ্রন্থ অনেকগুলি, যেমন– ‘সাম-প্রাতিশাখ্য’, ‘পুষ্পসূত্র’, ‘পঞ্চবিধান-সূত্র’ ও ‘ঋকতন্দ্র ব্যাকরণ’। কৃষ্ণ-যজুর্বেদের ‘তৈত্তিরীয়-প্রাতিশাখ্য-সূত্র’ এবং শুক্ল-যজুর্বেদের ‘বাজসনেয়-প্রাতিশাখ্য-সূত্র’। অথর্ববেদের দুটি প্রাতিশাখ্য সূত্র– ‘অথর্ববেদ-প্রাতিশাখ্য-সূত্র’ ও ‘শৌনকীয়-চতুরধ্যায়িকা’।

প্রাতিশাখ্য গ্রন্থগুলি ছাড়াও ছন্দে রচিত কিছু শিক্ষাগ্রন্থ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে প্রধান হলো ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদের পাণিনীয় শিক্ষা, সামবেদের নারদীয় শিক্ষা, কৃষ্ণ-যজুর্বেদের ব্যাস শিক্ষা, শুক্ল-যজুর্বেদের যাজ্ঞবল্ক্য শিক্ষা এবং অথর্ববেদের মাণ্ডুক্য শিক্ষা।

(২) ব্যাকরণ (ভাষার পদ বিশ্লেষণ-সংকলন)।
দ্বিতীয় বেদাঙ্গ হচ্ছে ‘ব্যাকরণ’। ব্যাকরণের সঙ্গে শিক্ষার খানিকটা যোগ আছে। সংহিতার অব্যাকৃত পাঠকে সন্ধিবিচ্ছেদ করে ব্যাকৃতরূপে অর্থাৎ পদপাঠে পরিণত করতে সন্ধি বা সংশ্লিষ্ট নিয়মগুলি জানা দরকার। সেগুলি ব্যাকরণের বিষয়। তাছাড়াও বেদপাঠে বা যজ্ঞে তার আরও প্রয়োগ আছে। মন্ত্রকে যজ্ঞে প্রয়োগ করবার সময় কোনও কোনও ক্ষেত্রে পদের লিঙ্গ বিভক্তি প্রভৃতির পরিবর্তন ঘটে। ব্যাকরণ না জানলে পদের অর্থগ্রহণ করা সহজ হয় না, ভাষাকে বিশুদ্ধ রাখাও প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে ব্যাকরণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

তবে প্রকৃত বেদাঙ্গ বলতে যে প্রাচীন ব্যাকরণ তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে। ভারতীয় সাহিত্যে প্রাচীনতম ব্যাকরণ-গ্রন্থ বলতে যা পাওয়া যায় তা হলো পাণিনির ‘অষ্টাধ্যায়ী’ বা ‘পাণিনি-সূত্র’। পাণিনি তাঁর অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণে চৌষট্টি জন পূর্বাচার্যের নাম করেছেন বলে জানা যায়। কিন্তু পাণিনির ব্যাকরণকে বেদাঙ্গ বলা যায় না, কেননা বৈদিক ভাষা উপলক্ষ্য করেই এবং বেদ পাঠের সহায়ক হিসেবেই এ-ব্যাকরণ রচিত হয়নি। বস্তুত পাণিনির প্রধানতম আলোচ্য বিষয় হলো বেদ-পরবর্তী সংস্কৃত ভাষাই। এখানে স্মর্তব্য যে, বেদের ভাষা এই সংস্কৃতের চেয়ে অনেক প্রাচীন।

(৩) ছন্দ (পংক্তির পঠনছন্দ বিষয়ক)।
‘ছন্দ’ হলো তৃতীয় বেদাঙ্গ। এটি স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। ঋক্-সংহিতার এবং সাম-সংহিতার সব মন্ত্রই ছন্দোবদ্ধ। অবশ্য সাম-সংহিতার মন্ত্র গাওয়া হতো। অথর্ব সংহিতারও বেশিরভাগ মন্ত্রই ছন্দোবদ্ধ। প্রধানত সামবেদের ‘ব্রাহ্মণ’ এবং ‘উপনিষদে’ই বৈদিক ছন্দ সংক্রান্ত নানা আলোচনা পাওয়া যায়। আরও পরবর্তী কালে বেদাঙ্গ হিসেবে বৈদিক ছন্দ সংক্রান্ত আরও নানা আলোচনা-গ্রন্থ রচিত হয়েছিলো।
সকল প্রাতিশাখ্যের শেষে, সামবেদের নিদানসূত্রে, শাংখ্যায়ন শ্রৌতসূত্রে এবং বিভিন্ন অনুক্রমণিকাতে ছন্দ সম্বন্ধে উল্লেখ আছে। পিঙ্গলের ‘ছন্দঃসূত্র’কেই বেদাঙ্গ বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এটিকে বিশুদ্ধভাবে বেদাঙ্গ গণ্য করা যায় না। তার প্রথম চার অধ্যায়ে বৈদিক ছন্দের আলোচনা আছে। তারপর অতিরিক্তভাবে লৌকিক ছন্দেরও বিবরণ রয়েছে। অনুমান হয় এ-জাতীয় আরও কয়েকটি ছন্দ-আলোচনা বিলুপ্ত হয়েছে। ছন্দ জ্ঞানের অভাবে বেদ পাঠ সম্পূর্ণ হয় না, বেদের রস উপলব্ধি হয় না এবং উচ্চারিত শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারিত না হওয়ায় তা হৃদয়াঙ্গম হয় না; এজন্য বেদ পাঠ করতে গেলে ছন্দজ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। গায়ত্রী, উষ্ণীক, অনুষ্টুপ, বৃহতী, পঙক্তি, ত্রিষ্টুপ ও জগতী- এই সাতটি হলো বৈদিক ছন্দ, এই সাত ছন্দের মাধ্যমেই বৈদিক মন্ত্রগুলো লিখিত হয়েছে; তাই বেদের মন্ত্রগুলো সঠিক উচ্চারণে পাঠ ক'রে তা শ্রুতিমধুর করতে এবং হৃদয়াঙ্গম করতে ছন্দজ্ঞান খাকা অত্যাবশ্যক, এই বিষয়টিই হলো বেদাঙ্গের ছন্দ। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে- বেদ ই পৃথিবীকে প্রথম ছন্দের শিক্ষা দিয়েছে এবং বেদের উপর্যুক্ত সাতটি ছন্দ থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন ছন্দের উৎপত্তি হয়েছে।
ছন্দ শব্দটি তে লোক এটি বোঝে যে বেদে যে সব মন্ত্র আছে, উহার কোনো বাক্যকে ছন্দ বলা হয়। যেমন গায়ত্রী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ আদি এ সবই ছন্দ । এ কথা নিশ্চিত সত্য । কিন্তু বেশির ভাগ লোকই জানেনা যে ছন্দ কেই বেদ বলা হয়। বেদই ছন্দ রূপ। বেদে আসা শব্দের সমূহ কেই ছন্দ বলা হয় অর্থাৎ বেদ হচ্ছে ছন্দ রূপ। বেদে অনেক ছন্দ আছে। সরল শব্দে যদি বলা হয় তো বেদের কোনো মন্ত্রে যতো শব্দ আছে, তার মধ্যে কিছু নির্ধারিত শব্দের সমূহকেই ছন্দ বলা হয় অর্থাৎ এক মন্ত্রে একের অধিক অথবা বহু ছন্দ হতে পারে।
(ক) ছন্দের বেদ হওয়ার প্রমাণ
বেদঃ বেদাংশ্ ছন্দাংসি ।।( গোপথ ব্রাহ্মণ ১|৩২)
অর্থাৎ ছন্দ কেই বেদ বলা হয়।
ছন্দ কেবল মন্ত্র অথবা শব্দকেই নয়। ছন্দ একটি পদার্থ অর্থাৎ বেদ মন্ত্রে যতোগুলি ছন্দ আছে, উহা সকল ছন্দ কে পদার্থ বলা হয়।
(খ) ছন্দের পদার্থ হওয়ার প্রমাণ :-
মহর্ষি পিঙ্গল রচিত ছন্দ শাস্ত্র যাকে ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী আপ্ত পাঠ বিধির অন্তর্গত এটিকে সম্মিলিত করেছে ও ছন্দ শাস্ত্র , যাকে এক বেদাঙ্গ মানা হয় । মহর্ষি পিঙ্গল ছন্দ শাস্ত্রের তৃতীয় অধ্যায়ে বিভিন্ন ছন্দ কে বিভিন্ন রঙ( Colour) বলেছেন ।
"সিতসারঙ্গপিশঙ্গকৃষ্ণনীললোহিতগৌরা বর্ণা:" ( পিঙ্গলছন্দ সূত্রম্ ৩|৬৫)
অর্থাৎ গায়ত্রী ছন্দের রঙ - শ্বেত ( সিত)
উষ্ণিক ছন্দের রঙ- রঙিন, রঙ- বিরঙ( সারঙ্গ )
অনুষ্টুপ ছন্দের রঙ- লাল মিশ্রিত বাদামি ( পিশাঙ্গ)
বৃহতী ছন্দের রঙ - কালো (কৃষ্ণ)
পংক্তি ছন্দের রঙ- নীল ( নীলা)
ত্রিষ্টুপ ছন্দের রঙ- লাল ( লোহিত)
জগতি ছন্দের রঙ- গৌর( গৌরা)
যদি ছন্দ কেবল শব্দ রূপ হয় তো উহায় প্রকাশ কোথা থেকে আসবে? এটি দ্বারা কি প্রমাণিত হয়? এটির দ্বারা এটাই সিদ্ধ হয় যে ছন্দ কে "পদার্থ" বলে। যদি তা না হয় তবে সেখান থেকে আলাদা রঙ(প্রকাশ) আসতে পারে না।
এবার পদার্থ বিজ্ঞানে অনভিজ্ঞ লোক এটি কদাপি বুঝতে পারে না যে ছন্দে রঙ বা বিভিন্ন প্রকাশ হওয়ার জন্যই ছন্দ পদার্থ হওয়ার প্রমাণ যা মহর্ষি পিঙ্গল দ্বারা রচিত ছন্দ শাস্ত্রের দ্বারা সিদ্ধ হইল ।
ছন্দ বিষয়ে অন্যান্য ঋষি গণের প্রমাণ:-
১| ছন্দাংসি অচ্ছাদনাত্ ( নিরুক্ত ৭|১২)
অর্থাৎ ছন্দ কোনো কন কে, কোনো পদার্থ কে, কোনো কিরন কে লোক- লোকান্তরে আচ্ছাদিত করে , এজন্য ছন্দ কে পদার্থ বলা হয়।
২| ছন্দ উহা যা সবাইকে আচ্ছদন করে । ( দৈবত ব্রাহ্মণ ৩|১৯)
এবার ,
প্রাণা কম্পনাত্ ( ব্রহ্ম সূত্র ১|৩|৩৯)
অর্থাৎ কম্পন করবার জন্য প্রাণ বলা হয়।
প্রাণা রশ্ম্যঃ ( তৈতরীয় ব্রাহ্মণ ৩|২|৫|২)
অর্থাৎ রশ্মি কে প্রাণ বলা হয়।
প্রাণ বৈ ছন্দাংসি ( কৌশিক ব্রাহ্মণে ১৭|২)
অর্থাৎ ছন্দ প্রাণ রশ্মি রূপে হয় , তাই তাকে প্রাণ রশ্মি বলা হয় । ( যেমন উপরে রেফারেন্স দেখানো হয়েছে প্রাণ কে রশ্মি হওয়ার )

বেদ মন্ত্র ছন্দে রচিত কারণ ছন্দ ছাড়া পদ্যের অস্তিত্ব নেই ।। বৈদিক মন্ত্রের এক এক পাদে পরিমিত অক্ষর সন্নিবেশ থেকে ছন্দের উৎপত্তি । বেদের সাতটি ছন্দ । যথা – গায়ত্রী (২৪ অক্ষর) , উষ্ণিক (২৮ অক্ষর) , অনুষ্টুপ (৩২ অক্ষর) , বৃহতী (৩৬ অক্ষর) , পঙ্ক্তি (৪০ অক্ষর) , ত্রিষ্টুপ (৪৪ অক্ষর) , জগতী (৪৮ অক্ষর) ।। সংহিতা, ব্রাহ্মণ, উপনিষদ, প্রাতিশাখ্যের শেষে , সামবেদের নিদান সূত্রে , সাংখ্যায়ন শ্রৌতসূত্রে , বিভিন্ন অনুক্রণিকাতে ছন্দের উল্লেখ আছে ।। ছন্দসূত্রের রচয়িতা হলেন পিঙ্গল মুনি ।। ৬. জ্যোতিষ ➮ ইহাতে ভূত, ভবিষ্যত, বর্তমানের জ্ঞান রয়েছে, ইহাতে অঙ্ক, বীজ, রেখা গণিত বিদ্যা সত্য এবং ফলবিদ্যা মিথ্যা। এই গ্ৰন্থ বসিষ্ঠমুনি আদি কৃত জ্যোতিষ, সূর্যসিদ্ধান্ত আদি আছে.বৈদিক যজ্ঞের প্রয়োজনে তিথি নক্ষত্রের সেই বিশেষ অবস্থান বিচার যে শাস্ত্রে বর্ণিত তাকে “জ্যোতিষ” বলে । অহোরাত্র পক্ষ, মাস , ঋতু , অয়ন , সংবৎসর , গণনা এবং রাশি-নক্ষত্র , অমাবস্যা , পূর্ণিমা, সংক্রান্তি প্রভৃতির বিস্তারিত আলোচনা জ্যোতিষ এর বিষয় ।। লগধের বেদাঙ্গ জ্যোতিষ, পরবর্তীতে গর্গ্য মুনির গ্রন্থ গুলি এই জ্যোতিষ এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

(৪) নিরুক্ত (সূক্তের শব্দার্থ কোষ)।
বেদে ব্যবহৃত শব্দাবলীর উৎপত্তি, অর্থ এবং অর্থান্তর প্রভৃতির আলোচনা-গ্রন্থ হলো চতুর্থ বেদাঙ্গ ‘নিরুক্ত’। নিরুক্তের সঙ্গে নিঘণ্টুর ঘনিষ্ঠ সংযোগ আছে। প্রাচীনতম বৈদিক শব্দকোষ হিসেবে যে-গ্রন্থটি পাওয়া গেছে তার নাম ‘নিঘণ্টু’। নিঘণ্টুর মতো তখন আরও অনেক বৈদিক শব্দ-সংগ্রহ ছিলো, সেগুলি লুপ্ত হয়ে গেছে। যাস্ক এই ‘নিঘণ্টু’র ভাষ্য রচনা করেছিলেন, তারই নাম ‘নিরুক্ত’। ‘নিঘণ্টু’তে তালিকাবদ্ধ শব্দগুলি কোন্ ঋকে ঠিক কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ‘নিরুক্তে’ তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
খ্রিস্টপূর্ব ৭০০-৫০০ অব্দের মধ্যে যাস্কের কাল-নির্ণয় করা হয়েছে। স্পষ্টতই বোঝা যায়, ওই সুপ্রাচীন যুগেই ঋগ্বেদের প্রকৃত অর্থ নিয়ে নানা রকম মতভেদ দেখা দিয়েছিলো; কেননা যাস্ক এ-জাতীয় নানা মতভেদের উল্লেখ করেছেন। স্বভাবতই ‘নিঘণ্টু’র রচনাকাল ‘নিরুক্ত’র চেয়ে আরও অনেক পুরনো।

‘নিঘণ্টু’তে তিনটি কাণ্ডে পাঁচটি অধ্যায় আছে। প্রথম তিনটি অধ্যায় নিয়ে ‘নৈঘণ্টুক কাণ্ড’। তাতে একার্থবাচক শব্দের সংগ্রহ তাছে। চতুর্থ অধ্যায় হলো ‘ঐকপদিক’ বা ‘নৈগস কাণ্ড’। তাতে একটি অর্থ সূচিত করে এমন শব্দের সংগ্রহ আছে। পঞ্চম অধ্যায় ‘দৈবত কাণ্ড’। তাতে বেদের দেবতাদের নামের সংগ্রহ আছে।
‘নিরুক্তে’র দুটি ষট্-কে বারোটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম ষট্-কে নিরুক্তের প্রথম দুটি কাণ্ডের ব্যাখ্যা আছে। দ্বিতীয় ষট্-কে দৈবত কাণ্ডের ব্যাখ্যা রয়েছে। 

‘নিরুক্ত’র ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো ভেঙে বলা। এই অর্থে তা ব্যাকরণের পরিপূরক। ব্যাকরণ শব্দগুলিকে ভেঙে পৃথক করে দেয়। নিরুক্ত পদকে ভেঙে তার ব্যাখ্যা করে। ব্যাকরণের সম্বন্ধ শব্দের সাথে, নিরুক্তের সম্বন্ধ অর্থের সাথে। পদকে ভাঙলে তবেই তার অর্থ গ্রহণ করা সহজ হয়। সুতরাং ব্যাকরণ ও নিরুক্ত পরস্পরের পরিপূরক।

(৫) জ্যোতিষ (যজ্ঞাদির জ্যোতির্জ্ঞাননির্ভর কাল (সময়) পরিমাপন)।
পঞ্চম বেদাঙ্গ হলো ‘জ্যোতিষ’। বিভিন্ন তিথি-নক্ষত্রে বিভিন্ন বৈদিক যজ্ঞ সম্পাদনের ব্যবস্থা ছিলো। যিনি যজ্ঞের অনুষ্ঠাতা তাঁকে ঋত্বিক বলে। যজ্ঞের কাল নিরূপিত হতো দিনের বেলায় শুক্লপক্ষ ও উত্তরায়ণকে লক্ষ্য করে। এই প্রসঙ্গে অহোরাত্র, পক্ষ, মাস, ঋতু, অয়ন, সংবৎসর গণনা করা ঋত্বিকের বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়তো। স্বভাবতই এজন্যে বেদাঙ্গ হিসেবে জ্যোতিষ-শাস্ত্রের উদ্ভব হয়।
লগধের ‘বেদাঙ্গ-জ্যোতিষ’ নামে একটি প্রাচীন গ্রন্থ পাওয়া যায়। গ্রন্থটি ছোট এবং এখনও অনেকাংশ দুর্বোধ্য বলে জানা যায়। যাজুষ এবং আর্চভেদে তার দুটি শাখা আছে।

(৬) কল্প (গৃহ্য(গার্হস্থ্য)-শ্রৌত (যজ্ঞের পরশোধণ)-শূল্ব্য (পরিমিতি ও জ্যামিতি)-সূত্রাদি)।
ষষ্ঠ বেদাঙ্গ হলো ‘কল্প’। কল্পগুলি সূত্র আকারে গ্রথিত। এ-জাতীয় সাহিত্যের আলোচ্য বিষয় হলো নির্ভুলভাবে বৈদিক যাগযজ্ঞ ও ক্রিয়াকাণ্ড অনুষ্ঠানের পদ্ধতি। অবশ্যই ‘ব্রাহ্মণ’-গ্রন্থগুলিতে এই আলোচনাই বিস্তৃতভাবে করা হয়েছিলো; কিন্তু পরবর্তী কালের পুরোহিতদের পক্ষে এই সুবিশাল ‘ব্রাহ্মণ’-সাহিত্যের সমস্ত আলোচনা মুখস্থ রাখা নিশ্চয়ই সহজ হয়নি। তাই সংক্ষিপ্ত সূত্রাকারে যজ্ঞানুষ্ঠানমূলক আলোচনা মনে রাখবার সুবিধার জন্য ‘কল্প-সূত্র’ রচিত হয়েছিলো। তাতে যেমন যজ্ঞের প্রয়োগবিধি বর্ণিত হয়েছে, তেমনি গার্হস্থ্য জীবনের সংস্কার প্রভৃতির আলোচনাও রয়েছে। যেহেতু বৈদিক যাগযজ্ঞ বলতে নানা রকম এবং সে-বিষয়ে আলোচনাও নানা ধরনের, তাই ‘কল্প-সূত্র’ও এক-রকমের নয়। ‘কল্প-সূত্রে’র চারটি শ্রেণী রয়েছে, যেমন– (ক) শ্রৌতসূত্র, (খ) গৃহ্যসূত্র, (গ) ধর্মসূত্র ও (ঘ) শূল্বসূত্র।

ক। ‘শ্রৌত-সূত্র’– শ্রৌত-যজ্ঞের আলোচনা। ‘ব্রাহ্মণ’-সাহিত্যে যে সমস্ত যজ্ঞের উল্লেখ আছে তাদের বলা হয় শ্রৌত-যজ্ঞ, কারণ ব্রাহ্মণ শ্রুতির অঙ্গ। এই যজ্ঞগুলির সংখ্যা চৌদ্দটি– সাতটি হবির্যজ্ঞ অর্থাৎ ঘৃতাহুতি দিয়ে নিষ্পন্ন করতে হয়, এবং সাতটি সোম-যজ্ঞ অর্থাৎ সোমরস আহুতি দিতে হয়। শ্রৌত-সূত্রে এই চৌদ্দটি যজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এর জন্য তিনটি অগ্নির আধান করতে হয়– গার্হপত্য, আহবনীয় ও দক্ষিণ। এদের বিষয়েও আলোচনা রয়েছে। শ্রৌত সূত্র গুলিকে প্রচলিত ভাবে এক একটি বেদের সাথে যুক্ত করা হয়। যেমন ঋগ্বেদ শ্রৌতসূত্রের নাম আশ্বলায়ন ও শাঙ্খায়ন। এছাড়াও বিভিন্ন বেদের সংযুক্ত বৌধায়ন, বাধুল, ভারদ্বাজ, আপস্তম্ব, হিরণ্যেকেশী ও বৈখান্‌স, কাত্যায়ন, লাট্যায়ন, দ্রাহ্যায়ণ, জৈমিনীয়, মৈত্রায়ন বা মানব ইত্যাদি নামের শ্রৌতসূত্রে খোঁজ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে বৌধায়নের শ্রৌতসূত্র প্রাচীনতম ও বৈখান্‌স নবীনতম মনে করা হয়। অধিকাংশ শ্রৌতসূত্রগুলির বিভিন্ন অধ্যায়কে প্রশ্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে, যার থেকে বোঝা যায় যে এদের বিষয়বস্তু পুরোহিত/ঋষি ও ছাত্রের মধ্যে প্রশ্নোত্তরের ছলে ব্যাখ্যা করা। সামবেদীয় শ্রৌতসূত্র গুলিতে সামগানের প্রণালী ব্যাখ্যা করা আছে।

খ। ‘গৃহ্য-সূত্র’— গৃহ্য-যজ্ঞের আলোচনা। চৌদ্দটি শ্রৌত-যজ্ঞ ছাড়া আরও অতিরিক্ত যজ্ঞ আছে। তাদের ‘স্মার্ত-যাগ’ বলা হয়। তাতে ঔপাসন, হোম, বৈশ্বদেব প্রভৃতি সাতটি যজ্ঞের বিধান আছে। এদের আলোচনা রয়েছে গৃহ্য-সূত্রে। স্মার্ত-কর্মগুলি স্মার্ত-অগ্নিতে করা নিয়ম। স্মার্ত-অগ্নির অন্য নাম বৈবাহিক, গৃহ্য, অবিসথ্য ও ঔপাসন অগ্নি। কতকগুলি যজ্ঞের শ্রৌত এবং গৃহ্য উভয় রূপই আছে, যেমন– অগ্নিহোত্র, দশপূর্ণমাস, পশুযাগ, পিতৃযাগ।
এছাড়া হিন্দু-সংস্কৃতিতে জন্ম হতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত যে দশটি সংস্কার ব্যক্তির জীবনে পালন করতে হয়; কারণ বৈদিক যুগ হতে এগুলি পালিত হয়ে আসছে। যেমন– জাতকর্ম, নামকরণ, অন্নপ্রাশন, চূড়াকরণ, কর্ণবেধ, উপনয়ন, সমাবর্তন, বিবাহ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। এগুলি কিভাবে সম্পাদিত হবে তার বিধি গৃহ্য-সূত্রে রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই সংস্কারগুলি হাজার হাজার বছর ধরে অপরিবর্তিতরূপে এখনও বর্তমান আছে। পারস্কর গৃহসূত্র

শ্রৌতসূত্রগুলিতে যেমন প্রধান কোনো গোষ্ঠীর মঙ্গলের জন্য যজ্ঞানুষ্ঠান, তেমনি গৃহ্যসূত্রগুলিতে একক গৃহস্থ্যের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিশদ প্রণালী ব্যাখ্যা করা আছে। শিশুর জন্ম থেকে মৃত্যুর পর পারলৌকিক ক্রিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পদ্ধতির দীর্ঘ তালিকা আছে গৃহ্যসূত্রগুলিতে। যেমন নবজাত শিশুর জাতকর্ম, আদিত্যদর্শন, নামকরণ, অন্নপ্রাশন, চূড়াকরণ, উপনয়ন। তারপর গুরুগৃহে বেদাধ্যয়ন, অনধ্যায় ও শেষে সমাবর্তন। তারপর গৃহস্থ আশ্রমে বিবাহ অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পদ্ধতি, পাণিগ্রহণ, অগ্নিপরিগ্রহণ, সপ্তপদী, লাজহোম, ইত্যাদি। নারীদের গর্ভাবস্থার বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন পুংসবন, সীমন্তোন্নয়ন, ইত্যাদি। এছাড়াও গৃহ্যসূত্রগুলিতে গার্হপত্য অগ্নি প্রজ্বলন বিধি, প্রায়শ্চিত্ত, কূপ ও দীঘি খনন,  হলকর্ষণ, ইত্যাদি লোকাচারের নির্দেশ আছে। আশ্চর্যের ব্যাপার, যে এই তালিকার প্রচুর আচার এখনো হিন্দু সমাজে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

শ্রৌত সূত্রের মত গৃহ্য সূত্রেরও বিভিন্ন শাখা আছে যাদের চার বেদের সাথে যুক্ত করা হয়। ঋগ্বেদের আশ্বলায়ন ও শাঙ্খায়ন, শুক্লযজুর্বেদের বাজসেনয় ও পারস্কর, কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় সংহিতার বৌধায়ন, ভারদ্বাজ, আপস্তম্ব, প্রভৃতি, সামবেদের গোভিল, জৈমিনীয়, খাদিল ইত্যাদি। অথর্ববেদের কৌশিক সূত্র, যা শ্রৌতসূত্র ও গৃহ্যসূত্রের মিশ্রণ।  এদের মধ্যে রচনাকাল হিসেবে আশ্বলায়ন, বৌধায়ন, গোভিল প্রাচীনতম এবং জৈমিনীয়, খাদিল নবীনতম।


গ। ‘ধর্ম-সূত্র’— ন্যায়-অন্যায়, কর্তব্য-অকর্তব্য, দেশাচার-লোকাচার প্রভৃতির আলোচনা। ‘ধর্ম-সূত্র’ পরিবারকে ছাড়িয়ে সমাজে পরিব্যাপ্ত। এর আর এক নাম হলো ‘সাময়াচারিক-সূত্র’। এখানে সময় অর্থে সর্বসম্মত অনুশাসন বোঝানো হয়েছে। সুতরাং তাতে রয়েছে সর্বসম্মত অনুশাসন এবং আচরণ সম্বন্ধে উপদেশ। এগুলি ‘গৃহ্য-সূত্রে’র সঙ্গে সংযুক্ত এবং বলা বাহুল্য, ন্যায়-অন্যায় বা কর্তব্য-অকর্তব্য সংক্রান্ত প্রাচীন বৈদিক ধারণা যাগযজ্ঞ-অনুষ্ঠান নিরপেক্ষ নয়। তবুও এই ‘ধর্ম-সূত্র’গুলিই ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে প্রাচীনতম আইন-গ্রন্থের নিদর্শন বলে মনে করা হয়।

ঘ। ‘শূল্ব-সূত্র’— বৈদিক যজ্ঞের যজ্ঞবেদি প্রভৃতির মাপজোক কী রকম হবে তারই আলোচনা এই ‘শূল্ব-সূত্রে’। ‘শূল্ব’ মানে জমি মাপবার দড়ি বা সুতো, গজফিতে ধরনের। তাতে নানা ধরনের যজ্ঞবেদির পরিমাণ, আকার, আয়তন ইত্যাদি ঠিক করবার নিয়ম দেওয়া আছে। এগুলি ‘শ্রৌত-সূত্রে’র সঙ্গে সংযুক্ত এবং ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে জ্যামিতি-বিদ্যার প্রাচীনতম নিদর্শন বলা যায়।

বেদের বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন ‘শ্রৌত-সূত্র’, ‘গৃহ্য-সূত্র’ প্রভৃতি ‘কল্প-সূত্র’ ছিলো; অনেকগুলি বর্তমান আছে, অনেকগুলি বিলুপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন ‘কল্প-সূত্রে’র সঙ্গে বিভিন্ন প্রাচীন বেদ-বিদ্ বা বিদ্বানের নাম সংযুক্ত। প্রতিটি বেদের সঙ্গে সংযুক্ত নানা শ্রেণীর যেসব ‘কল্প-সূত্র’ পাওয়া যায়, তার একটি তালিকা নিম্নরূপ–

ঋগ্বেদ :
শ্রৌত-সূত্র : শাংখ্যায়ন-ব্রাহ্মণের সাথে সংযুক্ত ‘শাংখ্যায়ন-শ্রৌতসূত্র’ ও ঐতরেয়-ব্রাহ্মণের সঙ্গে সংযুক্ত ‘আশ্বলায়ন-শ্রৌতসূত্র’।
গৃহ্য-সূত্র : ‘শাংখ্যায়ন-গৃহ্যসূত্র’, ‘আশ্বলায়ন-গৃহ্যসূত্র’, ‘শম্বিবৎ-গৃহ্যসূত্র’।
তবে ঋগ্বেদে ধর্ম-সূত্র বা শূল্ব-সূত্র নেই।

সামবেদ :
শ্রৌত-সূত্র : পঞ্চবিংশ-ব্রাহ্মণের সাথে যুক্ত ‘মশক-শ্রৌতসূত্র’ ও ‘লাট্টায়ন-শ্রৌতসূত্র’, এবং রাণায়নীয় শাখার ‘দ্রাহ্যায়ণ-শ্রৌতসূত্র’।
গৃহ্য-সূত্র : ‘গোভিল-গৃহ্যসূত্র’, রাণায়নীয় শাখার ‘খাদির-গৃহ্যসূত্র’ এবং জৈমিনীয় শাখার ‘জৈমিনীয়-গৃহ্যসূত্র’।
ধর্ম-সূত্র : রাণায়নীয় শাখার ‘গৌতম-ধর্মসূত্র’।
তবে সামবেদের কোন শূল্ব-সূত্র নেই।

কৃষ্ণ-যজুর্বেদ :
শ্রৌত-সূত্র : তৈত্তিরীয় শাখায়– ‘বৌধায়ন-শ্রৌতসূত্র’, ‘বাধূল-শ্রৌতসূত্র’, ‘ভারদ্বাজ-শ্রৌতসূত্র’, ‘আপস্তম্ব-শ্রৌতসূত্র’, ‘হিরণ্যকেশি-শ্রৌতসূত্র’, ‘বৈখানস-শ্রৌতসূত্র। কাঠক শাখায় ‘কাঠক-শ্রৌতসূত্র’, মৈত্রায়ণীয় শাখার ‘মানব-শ্রৌতসূত্র’ এবং ‘বারাহ-শ্রৌতসূত্র’।
গৃহ্য-সূত্র : তৈত্তিরীয় শাখার– ‘বৌধায়ন, বাধূল, ভারদ্বাজ, আপস্তম্ব, হিরণ্যকেশি ও বৈখানস– গৃহ্যসূত্র।
কাঠক শাখায় ‘কাঠক-গৃহ্যসূত্র’। মৈত্রায়ণীয় শাখার– মানব এবং বারাহ– গৃহ্যসূত্র।
ধর্ম-সূত্র : তৈত্তিরীয় শাখায়– বৌধায়ন, আপস্তম্ব, হিরণ্যকেশি এবং বৈখানস– ধর্মসূত্র।
শূল্ব-সূত্র : তৈত্তিরীয় শাখায়– বৌধায়ন, আপস্তম্ব ও হিরণ্যকেশি– শূল্বসূত্র। কাঠক শাখার ‘কাঠক-শূল্বসূত্র’। মৈত্রায়ণীয় শাখার– মানব এবং বারাহ– শূল্বসূত্র।

শুক্ল-যজুর্বেদ :
শ্রৌত-সূত্র : ‘কাত্যায়ন-শ্রৌতসূত্র’।
গৃহ্য-সূত্র : ‘পারষ্কর-গৃহ্যসূত্র’।
শূল্ব-সূত্র : ‘কাত্যায়ন-শূল্বসূত্র’।
তবে শুক্ল-যজুর্বেদে ধর্ম-সূত্র নেই।

অথর্ববেদ :
শ্রৌত-সূত্র : ‘বৈতান-শ্রৌতসূত্র’।
গৃহ্য-সূত্র : ‘কৌশিক-গৃহ্যসূত্র’।
তবে এগুলি অন্য বেদের সূত্রের মতো নয়। কৌশিক-সূত্রে অনেক তুকতাকের কথা রয়েছে।
অথর্ববেদে ধর্ম-সূত্র বা শূল্ব-সূত্র নেই।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

জাতিবাদ ও ভগবান মনু

  সম্পাদকীয় বর্তমান সময়ে দেশ অনেক গম্ভীর সমস্যায় গ্রস্ত আছে, তারমধ্যে একটা হল - জাতিবাদ। এই জাতিবাদের কারণে আমাদের দেশের অনেক বড় হানি হ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ