সংহিতা দুভাবে পাঠ করা হতো। তার পাঠকে পদপাঠ বলা হতো। এই দু’রকম পদপাঠ হলো– অব্যাকৃত পদপাঠ এবং ব্যাকৃত পদপাঠ। সংহিতায় পরস্পর সন্নিবদ্ধ অবস্থায় পদগুলি যেভাবে আছে তেমনভাবে রেখে পাঠ করাকে বলা হয় অব্যাকৃত পদপাঠ। আর ব্যাকৃত পদপাঠে প্রতি পদকে সন্নিবদ্ধ রূপ হতে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে পৃথকভাবে উচ্চারণ করা হয়। স্বভাবতই বেদের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে এই জাতীয় উচ্চারণ-পদ্ধতির আলোচনা সংযুক্ত ছিলো। সংহিতা পাঠের সঙ্গে পদপাঠের সম্পর্ক নির্দেশ করতে প্রাতিশাখ্য গ্রন্থের উদ্ভব হয়। তাই প্রাচীনতম ‘শিক্ষা’-গ্রন্থের নাম ‘প্রাতিশাখ্য’।
প্রত্যেক বেদের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাতিশাখ্য সূত্র আছে। ঋগ্বেদের প্রাতিশাখ্য গ্রন্থ হলো ‘ঋগ্বেদ-প্রাতিশাখ্য’ বা ‘শাকল-প্রাতিশাখ্য’। সামবেদের প্রাতিশাখ্য গ্রন্থ অনেকগুলি, যেমন– ‘সাম-প্রাতিশাখ্য’, ‘পুষ্পসূত্র’, ‘পঞ্চবিধান-সূত্র’ ও ‘ঋকতন্দ্র ব্যাকরণ’। কৃষ্ণ-যজুর্বেদের ‘তৈত্তিরীয়-প্রাতিশাখ্য-সূত্র’ এবং শুক্ল-যজুর্বেদের ‘বাজসনেয়-প্রাতিশাখ্য-সূত্র’। অথর্ববেদের দুটি প্রাতিশাখ্য সূত্র– ‘অথর্ববেদ-প্রাতিশাখ্য-সূত্র’ ও ‘শৌনকীয়-চতুরধ্যায়িকা’।
প্রাতিশাখ্য গ্রন্থগুলি ছাড়াও ছন্দে রচিত কিছু শিক্ষাগ্রন্থ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে প্রধান হলো ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদের পাণিনীয় শিক্ষা, সামবেদের নারদীয় শিক্ষা, কৃষ্ণ-যজুর্বেদের ব্যাস শিক্ষা, শুক্ল-যজুর্বেদের যাজ্ঞবল্ক্য শিক্ষা এবং অথর্ববেদের মাণ্ডুক্য শিক্ষা।
(২) ব্যাকরণ (ভাষার পদ বিশ্লেষণ-সংকলন)।
তবে প্রকৃত বেদাঙ্গ বলতে যে প্রাচীন ব্যাকরণ তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে। ভারতীয় সাহিত্যে প্রাচীনতম ব্যাকরণ-গ্রন্থ বলতে যা পাওয়া যায় তা হলো পাণিনির ‘অষ্টাধ্যায়ী’ বা ‘পাণিনি-সূত্র’। পাণিনি তাঁর অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণে চৌষট্টি জন পূর্বাচার্যের নাম করেছেন বলে জানা যায়। কিন্তু পাণিনির ব্যাকরণকে বেদাঙ্গ বলা যায় না, কেননা বৈদিক ভাষা উপলক্ষ্য করেই এবং বেদ পাঠের সহায়ক হিসেবেই এ-ব্যাকরণ রচিত হয়নি। বস্তুত পাণিনির প্রধানতম আলোচ্য বিষয় হলো বেদ-পরবর্তী সংস্কৃত ভাষাই। এখানে স্মর্তব্য যে, বেদের ভাষা এই সংস্কৃতের চেয়ে অনেক প্রাচীন।
(৩) ছন্দ (পংক্তির পঠনছন্দ বিষয়ক)।
সকল প্রাতিশাখ্যের শেষে, সামবেদের নিদানসূত্রে, শাংখ্যায়ন শ্রৌতসূত্রে এবং বিভিন্ন অনুক্রমণিকাতে ছন্দ সম্বন্ধে উল্লেখ আছে। পিঙ্গলের ‘ছন্দঃসূত্র’কেই বেদাঙ্গ বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এটিকে বিশুদ্ধভাবে বেদাঙ্গ গণ্য করা যায় না। তার প্রথম চার অধ্যায়ে বৈদিক ছন্দের আলোচনা আছে। তারপর অতিরিক্তভাবে লৌকিক ছন্দেরও বিবরণ রয়েছে। অনুমান হয় এ-জাতীয় আরও কয়েকটি ছন্দ-আলোচনা বিলুপ্ত হয়েছে। ছন্দ জ্ঞানের অভাবে বেদ পাঠ সম্পূর্ণ হয় না, বেদের রস উপলব্ধি হয় না এবং উচ্চারিত শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারিত না হওয়ায় তা হৃদয়াঙ্গম হয় না; এজন্য বেদ পাঠ করতে গেলে ছন্দজ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। গায়ত্রী, উষ্ণীক, অনুষ্টুপ, বৃহতী, পঙক্তি, ত্রিষ্টুপ ও জগতী- এই সাতটি হলো বৈদিক ছন্দ, এই সাত ছন্দের মাধ্যমেই বৈদিক মন্ত্রগুলো লিখিত হয়েছে; তাই বেদের মন্ত্রগুলো সঠিক উচ্চারণে পাঠ ক'রে তা শ্রুতিমধুর করতে এবং হৃদয়াঙ্গম করতে ছন্দজ্ঞান খাকা অত্যাবশ্যক, এই বিষয়টিই হলো বেদাঙ্গের ছন্দ। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে- বেদ ই পৃথিবীকে প্রথম ছন্দের শিক্ষা দিয়েছে এবং বেদের উপর্যুক্ত সাতটি ছন্দ থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন ছন্দের উৎপত্তি হয়েছে।
(৪) নিরুক্ত (সূক্তের শব্দার্থ কোষ)।
খ্রিস্টপূর্ব ৭০০-৫০০ অব্দের মধ্যে যাস্কের কাল-নির্ণয় করা হয়েছে। স্পষ্টতই বোঝা যায়, ওই সুপ্রাচীন যুগেই ঋগ্বেদের প্রকৃত অর্থ নিয়ে নানা রকম মতভেদ দেখা দিয়েছিলো; কেননা যাস্ক এ-জাতীয় নানা মতভেদের উল্লেখ করেছেন। স্বভাবতই ‘নিঘণ্টু’র রচনাকাল ‘নিরুক্ত’র চেয়ে আরও অনেক পুরনো।
‘নিঘণ্টু’তে তিনটি কাণ্ডে পাঁচটি অধ্যায় আছে। প্রথম তিনটি অধ্যায় নিয়ে ‘নৈঘণ্টুক কাণ্ড’। তাতে একার্থবাচক শব্দের সংগ্রহ তাছে। চতুর্থ অধ্যায় হলো ‘ঐকপদিক’ বা ‘নৈগস কাণ্ড’। তাতে একটি অর্থ সূচিত করে এমন শব্দের সংগ্রহ আছে। পঞ্চম অধ্যায় ‘দৈবত কাণ্ড’। তাতে বেদের দেবতাদের নামের সংগ্রহ আছে।
‘নিরুক্তে’র দুটি ষট্-কে বারোটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম ষট্-কে নিরুক্তের প্রথম দুটি কাণ্ডের ব্যাখ্যা আছে। দ্বিতীয় ষট্-কে দৈবত কাণ্ডের ব্যাখ্যা রয়েছে।
‘নিরুক্ত’র ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো ভেঙে বলা। এই অর্থে তা ব্যাকরণের পরিপূরক। ব্যাকরণ শব্দগুলিকে ভেঙে পৃথক করে দেয়। নিরুক্ত পদকে ভেঙে তার ব্যাখ্যা করে। ব্যাকরণের সম্বন্ধ শব্দের সাথে, নিরুক্তের সম্বন্ধ অর্থের সাথে। পদকে ভাঙলে তবেই তার অর্থ গ্রহণ করা সহজ হয়। সুতরাং ব্যাকরণ ও নিরুক্ত পরস্পরের পরিপূরক।
(৫) জ্যোতিষ (যজ্ঞাদির জ্যোতির্জ্ঞাননির্ভর কাল (সময়) পরিমাপন)।
লগধের ‘বেদাঙ্গ-জ্যোতিষ’ নামে একটি প্রাচীন গ্রন্থ পাওয়া যায়। গ্রন্থটি ছোট এবং এখনও অনেকাংশ দুর্বোধ্য বলে জানা যায়। যাজুষ এবং আর্চভেদে তার দুটি শাখা আছে।
(৬) কল্প (গৃহ্য(গার্হস্থ্য)-শ্রৌত (যজ্ঞের পরশোধণ)-শূল্ব্য (পরিমিতি ও জ্যামিতি)-সূত্রাদি)।
ক। ‘শ্রৌত-সূত্র’– শ্রৌত-যজ্ঞের আলোচনা। ‘ব্রাহ্মণ’-সাহিত্যে যে সমস্ত যজ্ঞের উল্লেখ আছে তাদের বলা হয় শ্রৌত-যজ্ঞ, কারণ ব্রাহ্মণ শ্রুতির অঙ্গ। এই যজ্ঞগুলির সংখ্যা চৌদ্দটি– সাতটি হবির্যজ্ঞ অর্থাৎ ঘৃতাহুতি দিয়ে নিষ্পন্ন করতে হয়, এবং সাতটি সোম-যজ্ঞ অর্থাৎ সোমরস আহুতি দিতে হয়। শ্রৌত-সূত্রে এই চৌদ্দটি যজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এর জন্য তিনটি অগ্নির আধান করতে হয়– গার্হপত্য, আহবনীয় ও দক্ষিণ। এদের বিষয়েও আলোচনা রয়েছে। শ্রৌত সূত্র গুলিকে প্রচলিত ভাবে এক একটি বেদের সাথে যুক্ত করা হয়। যেমন ঋগ্বেদ শ্রৌতসূত্রের নাম আশ্বলায়ন ও শাঙ্খায়ন। এছাড়াও বিভিন্ন বেদের সংযুক্ত বৌধায়ন, বাধুল, ভারদ্বাজ, আপস্তম্ব, হিরণ্যেকেশী ও বৈখান্স, কাত্যায়ন, লাট্যায়ন, দ্রাহ্যায়ণ, জৈমিনীয়, মৈত্রায়ন বা মানব ইত্যাদি নামের শ্রৌতসূত্রে খোঁজ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে বৌধায়নের শ্রৌতসূত্র প্রাচীনতম ও বৈখান্স নবীনতম মনে করা হয়। অধিকাংশ শ্রৌতসূত্রগুলির বিভিন্ন অধ্যায়কে প্রশ্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে, যার থেকে বোঝা যায় যে এদের বিষয়বস্তু পুরোহিত/ঋষি ও ছাত্রের মধ্যে প্রশ্নোত্তরের ছলে ব্যাখ্যা করা। সামবেদীয় শ্রৌতসূত্র গুলিতে সামগানের প্রণালী ব্যাখ্যা করা আছে।
খ। ‘গৃহ্য-সূত্র’— গৃহ্য-যজ্ঞের আলোচনা। চৌদ্দটি শ্রৌত-যজ্ঞ ছাড়া আরও অতিরিক্ত যজ্ঞ আছে। তাদের ‘স্মার্ত-যাগ’ বলা হয়। তাতে ঔপাসন, হোম, বৈশ্বদেব প্রভৃতি সাতটি যজ্ঞের বিধান আছে। এদের আলোচনা রয়েছে গৃহ্য-সূত্রে। স্মার্ত-কর্মগুলি স্মার্ত-অগ্নিতে করা নিয়ম। স্মার্ত-অগ্নির অন্য নাম বৈবাহিক, গৃহ্য, অবিসথ্য ও ঔপাসন অগ্নি। কতকগুলি যজ্ঞের শ্রৌত এবং গৃহ্য উভয় রূপই আছে, যেমন– অগ্নিহোত্র, দশপূর্ণমাস, পশুযাগ, পিতৃযাগ।
এছাড়া হিন্দু-সংস্কৃতিতে জন্ম হতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত যে দশটি সংস্কার ব্যক্তির জীবনে পালন করতে হয়; কারণ বৈদিক যুগ হতে এগুলি পালিত হয়ে আসছে। যেমন– জাতকর্ম, নামকরণ, অন্নপ্রাশন, চূড়াকরণ, কর্ণবেধ, উপনয়ন, সমাবর্তন, বিবাহ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। এগুলি কিভাবে সম্পাদিত হবে তার বিধি গৃহ্য-সূত্রে রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই সংস্কারগুলি হাজার হাজার বছর ধরে অপরিবর্তিতরূপে এখনও বর্তমান আছে। পারস্কর গৃহসূত্র
শ্রৌতসূত্রগুলিতে যেমন প্রধান কোনো গোষ্ঠীর মঙ্গলের জন্য যজ্ঞানুষ্ঠান, তেমনি গৃহ্যসূত্রগুলিতে একক গৃহস্থ্যের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিশদ প্রণালী ব্যাখ্যা করা আছে। শিশুর জন্ম থেকে মৃত্যুর পর পারলৌকিক ক্রিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পদ্ধতির দীর্ঘ তালিকা আছে গৃহ্যসূত্রগুলিতে। যেমন নবজাত শিশুর জাতকর্ম, আদিত্যদর্শন, নামকরণ, অন্নপ্রাশন, চূড়াকরণ, উপনয়ন। তারপর গুরুগৃহে বেদাধ্যয়ন, অনধ্যায় ও শেষে সমাবর্তন। তারপর গৃহস্থ আশ্রমে বিবাহ অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পদ্ধতি, পাণিগ্রহণ, অগ্নিপরিগ্রহণ, সপ্তপদী, লাজহোম, ইত্যাদি। নারীদের গর্ভাবস্থার বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন পুংসবন, সীমন্তোন্নয়ন, ইত্যাদি। এছাড়াও গৃহ্যসূত্রগুলিতে গার্হপত্য অগ্নি প্রজ্বলন বিধি, প্রায়শ্চিত্ত, কূপ ও দীঘি খনন, হলকর্ষণ, ইত্যাদি লোকাচারের নির্দেশ আছে। আশ্চর্যের ব্যাপার, যে এই তালিকার প্রচুর আচার এখনো হিন্দু সমাজে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
শ্রৌত সূত্রের মত গৃহ্য সূত্রেরও বিভিন্ন শাখা আছে যাদের চার বেদের সাথে যুক্ত করা হয়। ঋগ্বেদের আশ্বলায়ন ও শাঙ্খায়ন, শুক্লযজুর্বেদের বাজসেনয় ও পারস্কর, কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় সংহিতার বৌধায়ন, ভারদ্বাজ, আপস্তম্ব, প্রভৃতি, সামবেদের গোভিল, জৈমিনীয়, খাদিল ইত্যাদি। অথর্ববেদের কৌশিক সূত্র, যা শ্রৌতসূত্র ও গৃহ্যসূত্রের মিশ্রণ। এদের মধ্যে রচনাকাল হিসেবে আশ্বলায়ন, বৌধায়ন, গোভিল প্রাচীনতম এবং জৈমিনীয়, খাদিল নবীনতম।
গ। ‘ধর্ম-সূত্র’— ন্যায়-অন্যায়, কর্তব্য-অকর্তব্য, দেশাচার-লোকাচার প্রভৃতির আলোচনা। ‘ধর্ম-সূত্র’ পরিবারকে ছাড়িয়ে সমাজে পরিব্যাপ্ত। এর আর এক নাম হলো ‘সাময়াচারিক-সূত্র’। এখানে সময় অর্থে সর্বসম্মত অনুশাসন বোঝানো হয়েছে। সুতরাং তাতে রয়েছে সর্বসম্মত অনুশাসন এবং আচরণ সম্বন্ধে উপদেশ। এগুলি ‘গৃহ্য-সূত্রে’র সঙ্গে সংযুক্ত এবং বলা বাহুল্য, ন্যায়-অন্যায় বা কর্তব্য-অকর্তব্য সংক্রান্ত প্রাচীন বৈদিক ধারণা যাগযজ্ঞ-অনুষ্ঠান নিরপেক্ষ নয়। তবুও এই ‘ধর্ম-সূত্র’গুলিই ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে প্রাচীনতম আইন-গ্রন্থের নিদর্শন বলে মনে করা হয়।
ঘ। ‘শূল্ব-সূত্র’— বৈদিক যজ্ঞের যজ্ঞবেদি প্রভৃতির মাপজোক কী রকম হবে তারই আলোচনা এই ‘শূল্ব-সূত্রে’। ‘শূল্ব’ মানে জমি মাপবার দড়ি বা সুতো, গজফিতে ধরনের। তাতে নানা ধরনের যজ্ঞবেদির পরিমাণ, আকার, আয়তন ইত্যাদি ঠিক করবার নিয়ম দেওয়া আছে। এগুলি ‘শ্রৌত-সূত্রে’র সঙ্গে সংযুক্ত এবং ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে জ্যামিতি-বিদ্যার প্রাচীনতম নিদর্শন বলা যায়।
বেদের বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন ‘শ্রৌত-সূত্র’, ‘গৃহ্য-সূত্র’ প্রভৃতি ‘কল্প-সূত্র’ ছিলো; অনেকগুলি বর্তমান আছে, অনেকগুলি বিলুপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন ‘কল্প-সূত্রে’র সঙ্গে বিভিন্ন প্রাচীন বেদ-বিদ্ বা বিদ্বানের নাম সংযুক্ত। প্রতিটি বেদের সঙ্গে সংযুক্ত নানা শ্রেণীর যেসব ‘কল্প-সূত্র’ পাওয়া যায়, তার একটি তালিকা নিম্নরূপ–
ঋগ্বেদ :
শ্রৌত-সূত্র : শাংখ্যায়ন-ব্রাহ্মণের সাথে সংযুক্ত ‘শাংখ্যায়ন-শ্রৌতসূত্র’ ও ঐতরেয়-ব্রাহ্মণের সঙ্গে সংযুক্ত ‘আশ্বলায়ন-শ্রৌতসূত্র’।
গৃহ্য-সূত্র : ‘শাংখ্যায়ন-গৃহ্যসূত্র’, ‘আশ্বলায়ন-গৃহ্যসূত্র’, ‘শম্বিবৎ-গৃহ্যসূত্র’।
তবে ঋগ্বেদে ধর্ম-সূত্র বা শূল্ব-সূত্র নেই।
সামবেদ :
শ্রৌত-সূত্র : পঞ্চবিংশ-ব্রাহ্মণের সাথে যুক্ত ‘মশক-শ্রৌতসূত্র’ ও ‘লাট্টায়ন-শ্রৌতসূত্র’, এবং রাণায়নীয় শাখার ‘দ্রাহ্যায়ণ-শ্রৌতসূত্র’।
গৃহ্য-সূত্র : ‘গোভিল-গৃহ্যসূত্র’, রাণায়নীয় শাখার ‘খাদির-গৃহ্যসূত্র’ এবং জৈমিনীয় শাখার ‘জৈমিনীয়-গৃহ্যসূত্র’।
ধর্ম-সূত্র : রাণায়নীয় শাখার ‘গৌতম-ধর্মসূত্র’।
তবে সামবেদের কোন শূল্ব-সূত্র নেই।
কৃষ্ণ-যজুর্বেদ :
শ্রৌত-সূত্র : তৈত্তিরীয় শাখায়– ‘বৌধায়ন-শ্রৌতসূত্র’, ‘বাধূল-শ্রৌতসূত্র’, ‘ভারদ্বাজ-শ্রৌতসূত্র’, ‘আপস্তম্ব-শ্রৌতসূত্র’, ‘হিরণ্যকেশি-শ্রৌতসূত্র’, ‘বৈখানস-শ্রৌতসূত্র। কাঠক শাখায় ‘কাঠক-শ্রৌতসূত্র’, মৈত্রায়ণীয় শাখার ‘মানব-শ্রৌতসূত্র’ এবং ‘বারাহ-শ্রৌতসূত্র’।
গৃহ্য-সূত্র : তৈত্তিরীয় শাখার– ‘বৌধায়ন, বাধূল, ভারদ্বাজ, আপস্তম্ব, হিরণ্যকেশি ও বৈখানস– গৃহ্যসূত্র।
কাঠক শাখায় ‘কাঠক-গৃহ্যসূত্র’। মৈত্রায়ণীয় শাখার– মানব এবং বারাহ– গৃহ্যসূত্র।
ধর্ম-সূত্র : তৈত্তিরীয় শাখায়– বৌধায়ন, আপস্তম্ব, হিরণ্যকেশি এবং বৈখানস– ধর্মসূত্র।
শূল্ব-সূত্র : তৈত্তিরীয় শাখায়– বৌধায়ন, আপস্তম্ব ও হিরণ্যকেশি– শূল্বসূত্র। কাঠক শাখার ‘কাঠক-শূল্বসূত্র’। মৈত্রায়ণীয় শাখার– মানব এবং বারাহ– শূল্বসূত্র।
শুক্ল-যজুর্বেদ :
শ্রৌত-সূত্র : ‘কাত্যায়ন-শ্রৌতসূত্র’।
গৃহ্য-সূত্র : ‘পারষ্কর-গৃহ্যসূত্র’।
শূল্ব-সূত্র : ‘কাত্যায়ন-শূল্বসূত্র’।
তবে শুক্ল-যজুর্বেদে ধর্ম-সূত্র নেই।
অথর্ববেদ :
শ্রৌত-সূত্র : ‘বৈতান-শ্রৌতসূত্র’।
গৃহ্য-সূত্র : ‘কৌশিক-গৃহ্যসূত্র’।
তবে এগুলি অন্য বেদের সূত্রের মতো নয়। কৌশিক-সূত্রে অনেক তুকতাকের কথা রয়েছে।
অথর্ববেদে ধর্ম-সূত্র বা শূল্ব-সূত্র নেই।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ