বামন অবতার
বেদে বামন অবতার নির্দেশ করতে পৌরাণিকরা প্রায়শই একটি মন্ত্র নির্দেশ করে যা নিম্নলিখিত রূপ
ইদং বিষ্ণুর্বিচক্রমে ত্রেধা নি দধে পদম্।
স মূঢ়মস্য পাংসুরে।।
পদার্থ :- (ইদম্) এই (বিষ্ণুঃ) ব্যাপক পরমাত্মা (বি) বিবিধ
ভাবে (চক্রমে) গঠন করেন (ত্রেধা) তিন
প্রকারের (নিদধে) ধারণ করিয়াছেন (পদম্)
জগৎকে (সম্) সম্যক প্রকারে (উঢ়ম্) তর্কদ্বারা
জ্ঞাতব্য (অস্য) ইহার (পাংসুরে) সূক্ষ্ম রেণু পূর্ণ
আকাশে। ঋগ্বেদ ১।২২।১৭
বঙ্গানুবাদ :- সর্ব্বব্যাপক পরমাত্মা এই প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ জগৎকে বিশেষ ক্রমপূর্ব্বক রচনা করিয়াছেন। স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ এই তিন প্রকারের এবং সূক্ষ্মরেণুপূ্র্ণ আকাশে সুব্যবস্থিত জগৎকে তিনি ধারণ করিয়াছেন।
নিরুক্তকার যাস্ক বলেছেন
" যদিদং কিং চ তদ্ধিক্রমতে বিষ্ণু ত্রিধা নিধত্তে পদং ত্রেধাভাবায় পৃথিব্যামন্তরিক্ষে দিবীতি শাকপুণিঃ। সমারোহণে বিষ্ণুপদে *মগয়াশিরসীতৌর্ণবাভঃ। সমূঢমস্য পাংসুরে প্যায়নেহন্তরিক্ষে পদং নদৃশ্যতে। অপি বোপমার্থে স্যাত্যমূঢমস্য পাংসুল ইব পদং ন দৃশ্যত ইতি। পাংসবঃ পাদৈঃ সুয়ন্ত ইতি বা, পন্নাঃ শেরত ইতি বা পংসনীয়া ভবন্তীতি বা "
নিরুক্ত ১২.১৯
=>>
বিষ্ণু এই (জগতের) উপর তার পা রাখেন । তিনি তিন প্রকারে পা রাখেন। ধূলিসমৃদ্ধ (অন্তরিক্ষে) যে পা রয়েছে তা লুকানো (১/২২/১৭) যাকিছু যেখানে আছে তার উপর বিষ্ণু তার পা রাখেন (অর্থাৎ সকল কিছুর অধিষ্ঠাতা), তিন প্রকারে পা রাখেন। তিন প্রকার হওয়ার দরুণ পৃথিবীতে (অগ্নিরূপে) অন্তরীক্ষে (বিদ্যুৎ রূপে) এবং দৌ -এ (সূর্যরূপে) যেটা শাকপূণী মান্য করেন। আরোহণে (এক পদ), মধ্যাকাশে (দ্বিতীয় পদ) এবং অস্তাচলের রেখায় তৃতীয় পদ (এই তিন পদ) ঔর্ণবাভ মান্য করেন। 'সমূঢমস্য পাংসুরে'= বর্ষা দ্বারা সবকিছুকে বৃদ্ধিকারী অন্তরীক্ষে ইহার পদ দেখা যায় না। অথবা (পাংসুরে) উপমা অর্থেও হতে পারে ধূলিযুক্ত (স্থানে রাখা পা) ধূলিতে ভরে যাওয়ার দরুণ তার পদ দেখা যায় না। পাংসবঃ= ধূলিকণা। পা হতে উৎপন্ন হয় (পাদ+সূ হতে)। অথবা অবয়ব তৈরীর যোগ্য ( যা হলে স্থূল বস্তু উৎপন্ন হতে পারে , যার ইহা অবয়ব) (১২-) বিশ্বানরঃ, ব্যখ্যা করা হয়েছে (৭/২১ এ) (এখানে দ্যুস্থানী) তার ইহা নিপাতিত 'এন্দ্রী ঋচা'তে(বেদের যে মন্ত্রে ইন্দ্রের বর্ণন করা হয়েছে)।।২০।।
দুর্গাচরণ এর ব্যাখ্যায় রূপক বলে নিম্নলিখিত রূপ ব্যাখ্যা করেছেন -
*গয়শির এর ব্যাখ্যা
গয়শিরসীত্যত্র গয় ইত্যপত্যনামসু পঠিতম্ -নিঘণ্টু ২.২
গয় ইতি ধননামসু চ-নিঘণ্টু ২.১০
=>>গয় ধনের নাম
প্রাণা বৈ গয়া -শতপথ ১৪.৭.১.৭
=>> প্রাণকে গয়া বলে
সায়নাচার্য্য পুরাণ বর্ণিত কিংবদন্তীতে প্রভাবান্বিত হয়ে ঐরকম অর্থ বিপর্যয় করেছেন।আর সায়নাচার্য্যের ঐরূপ কষ্টকল্পনা ও পুরাণের রোচক গল্পের উপর ভিত্তি করে অনুবাদ, ব্যাখ্যাদি করায় ঐ মন্ত্রটির উপর পাশ্চাত্য পন্ডিতগণও বড়ই অবিচার করেছেন।ঐ ঋকে 'ত্রেধা বিচক্রমে,' 'পদং নিদধে,' 'পাংসুরে সমূঢং - এই বাক্যত্রয়ের প্রকৃত মর্ম্মোপলব্ধির বিভ্রাট বিভিন্ন লোকে বিভিন্ন অর্থ গ্রহণ করে অনর্থ ঘটিয়েছেন।'ত্রেধা' শব্দে 'তিনবার',''বিচক্রমে" শব্দে 'ভ্রমণ করেছিলেন' 'পদং শব্দে 'পা', 'নিদধে' পদে 'ধারণ বা রক্ষা করেছিলেন, ' ' পাংসুরে' শব্দে 'ধুলিকণায়' এবং 'সমূঢং' পদে সমাবৃত হইয়াছিল,-এইরূপ অর্থ করার ফলে পরমাত্মা বাচক বেদোক্ত ঐ 'বিষ্ণু' শব্দকে Max Muller প্রভূতি পাশ্চাত্য পন্ডিত মানুষ্য বলে ধারণা করেছেন [vide:-"The Sacred books of the East,Vol-xxxii,vedic hymns translated by max muller",]।
তার ফলে ঐ ঋকের অর্থ দাঁড়িয়েছে - "বিষ্ণু যখন মধ্য এশিয়া হইতে দলবল সহ এ দেশে আসিতেছিলেন, তখন পথে তিন স্থানে বিশ্রাম করিয়াছিলেন এবং তাঁহার চরণধূলিতে জগৎ পরিব্যাপ্ত হইয়াছিল"।বেদ হল মহান অধ্যাত্ম শাস্ত্র;সমাধিবান্ মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিগণ বেদমন্ত্র সাক্ষাৎ করে সমাধির ভাষায় তা প্রকাশ করেছেন।বেদের সেই মহত্তম আধ্যাত্নিক এবং যৌগিক অর্থ না ধারণা করতে পেরে, সায়নাচার্য্যেরর কদর্থকে আশ্রয় করে - পাশ্চাত্য পন্ডিতগণ বেদোক্ত পরমাত্মা বাচক ঐ বিষ্ণু শব্দে জনৈক বিষ্ণুনামা লোক কল্পনা করে গেছেন।বাংলাদেশে ঐ মতের প্রথম ও প্রধান পোষক ছিলেন রেভাঃ কৃষ্ণেমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রামনাথ সরস্বতী। "Arian Witness " গ্রন্থে রেভাঃ কৃষ্ণমোহন লিখেছেন - The 'three strides' of Vishnu are noticed in the Rig-Veda,in language which clearly points the place where the Arians commenced their migratory march to india,perhaps under the guidance of vishnu himself."
কিমাশ্চর্য্য অতঃ পরম্! এইরূপ স্থুল অর্থের পরিপোষক, সমর্থনকারী দল, যাতে বেদের গৌরবহানি হয়- হিন্দু ধর্ম্মের মহান্ ভাবসস্পদের দীপ্তি হীনপ্রভ হয় - তাঁরা তাই করুন,আসুন আমরা সংস্কারমুক্ত মন নিয়ে বেদের আশয় বুঝবার চেষ্টা করি।
'বিষ্ণুঃ শব্দে সর্বব্যাপক পরমেশ্বর। 'বিচক্রমে (বিশিষ্টভাবেন ব্যাপ্ত সর্বত্রগ ইত্যর্থঃ) 'ত্রেধা'- অতীত, অনাগত,বর্তমান - এই তিনকালকে বোঝায় অর্থাৎ তিনকালে তাঁর বিদ্যামানতা সমানভাবে প্রকাশ পায়;স্থুল সূক্ষ কারণ-প্রকাশরহিত পৃথিবীরূপ,অন্তরীক্ষে সূক্ষ পরমাণুরূপ এবং প্রকাশময় সূর্যরূপ-জগতের এই তিনরূপ বোঝাচ্ছে। 'পদং শব্দে অবতারপ্রিয় সায়নাচার্য্য এবং তদীয় অনুগত ধারণা অনুযায়ী 'পা' নয় (পরমপদ অর্থে তাহলে কি মোটা পা?)! 'পদং অর্থে অাধিপত্য, ঐশ্বর্য্য,জ্যোতিঃ প্রভৃতি বোঝায়।'নিদধে' অর্থে ক্ষেপণ নয়, 'নি' নিতিরাং 'দধে' ধৃতবান্ , নিয়ত ধারণ করিয়াছিলেন,'চিরধৃত' অর্থাৎ চির অক্ষুণ্ণ ভাবের দ্যোতক। 'পাঁসুরে' শব্দে 'ধুলি' নয়- 'সূক্ষভাব' অর্থাৎ অণু পরমাণুময় জ্ঞান স্বরূপে (জ্ঞানস্বরূপে অনুপ্রবিষ্ট হয়ে) তিনি চির বিদ্যমান রয়েছেন।'সমূঢ়ম্' শব্দও এই জগৎ তাঁতেই সম্যকরূপে অবস্থিত '-এই ভাবই প্রকাশ করেছে।বেদের প্রসিদ্ধ পন্ডিত দূঁর্গাদাস লাহিড়ী মশাই এরও এইরূপ অর্থ করাই অভিমত।কাজেই এই ঋকটির ভাবার্থ দাঁড়াল -"পরমাত্মা বিষ্ণু এই সমগ্র জগৎকে বিশেষ ভাবে ব্যাপিয়া আছেন। অতীত, অনাগত, বর্তমান -তিনকালেই তাঁহার ঐশ্বর্য্য মহিমা, জ্যোতির্ম্ময় প্রকাশ নিরন্তর ধৃত রহিয়াছে ; কিংবা স্থুল সূক্ষ কারণ জগৎ তাঁহারই জ্যোতির্ম্ময় মহিমায় বিধৃত, নিখিল জগৎ সম্যকভাবে তাঁহাতেই অবস্থিত"।
আচার্য্য দূর্গাদাস লাহিড়ী এই ঋকটিতে আর একটি নিগূঢ় ভাব লক্ষ্য করেছেনঃ-
"সেই সর্বব্যাপক বিষ্ণু সমগ্র ব্রহ্মান্ড ব্যাপিয়া রহিয়াছেন।কিন্তু আমার হৃদ্দেশে তাঁহাকে লক্ষ্য করিতে পারিতেছি না কেন? এইরূপ আত্মগ্লানি উপস্থিত হইলে মানুষ ঈশ্বরের নিকট স্বতঃই প্রার্থনা করাতে পারে হে পরমেশ্বর! কৃপাপুরঃসর আমাতে আপনার স্বত্তা বিস্তার করুন।আমি যেন জ্ঞানচক্ষুর প্রভাবে সমগ্র জগতে এবং আমাতে আপনার সত্ত্বা সর্বদা প্রত্যক্ষ করাতে সমর্থ হই"
[ঋগ্বেদ সংহিতা - দূর্গাদাস লাহিড়ী শর্ম্মাণা ব্যাখ্যাতা সম্পাদিতা চ।[ঋক ১/২২/১৭]
अथ विष्णुक्रमान् क्रमते । देवान्वा एष प्रीणाति यो
यजत एतेन यज्ञेनऽर्ग्भिरिव त्वद्यजुर्भिरिव त्वदाहुतिभिरिव
त्वत्स देवान्प्रीत्वा तेष्वपित्वी भवति
तेष्वपित्वी भूत्वा तानेवाभिप्रक्रामति - १/९/३/८
অতঃপর তিনি (যজমান) [তিনবার] বিষ্ণুক্রম নামক পদবিক্ষেপ করেন । তিনি যাগ করেন তিনি দেবগণকে প্রতীত করেন । তিনি এই যজ্ঞের দ্বারা-অর্থাৎ কিছুটা ঋকসমূহের দ্বারা,কিছুটা যজুঃ সমূহের দ্বারা ও কিছুটা আহুতি সমূহের দ্বারা দেবগণকে প্রীত করে তাঁদের মধ্যে ভাগ প্রাপ্ত হন এবং ভাগ প্রাপ্ত হয়ে তাঁদের নিকটে গমন করে থাকেন ।।৮।।
यद्वेव विष्णुक्रमान् क्रमते । यज्ञो वै विष्णुः स देवेभ्य इमां
विक्रान्तिं विचक्रमे यैषामियं विक्रान्तिरिदमेव प्रथमेन पदेन
पस्पाराथेदमन्तरिक्षं द्वितीयेन दिवमुत्तमेनैताम्वेवैष
एतस्मै विष्णुर्यज्ञो विक्रान्तिं विक्रमते तस्माद्विष्णुक्रमान्
क्रमते तद्वा इत एव पराचीनं भूयिष्ठा इव क्रमन्ते -
१/९/३/९
তিনি যে বিষ্ণুক্রম নামক পদবিক্ষেপ করেন [তাঁর আর একটি কারণ এই যে] যজ্ঞই বিষ্ণু; তিনি দেবগণের এখন যে সর্বব্যাপক শক্তি তার জন্য এই পদবিক্ষেপ করেছিলেন । তিনি এই ভূলোককে প্রথম পদের দ্বারা,এই অন্তরীক্ষকে দ্বিতীয় পদের দ্বারা এবং দ্যৌ[দ্যুলোক]কে তৃতীয় পদের দ্বারা অধিগ্রহণ করেছিলেন । এই যজ্ঞ [রূপ]বিষ্ণু এঁর যজমানের এই শক্তির উদ্দেশ্যেই পদবিক্ষেপ করে থাকেন । তিনি[যজমান] সেইজন্যই বিষ্ণুক্রম নামক পদবিক্ষেপ করেন । কারণ এইস্থান[পৃথিবীলোক] থেকেই অধিকাংশ ঊর্দ্ধ[লোক]অভিমুখে গমন করে থাকে ।।৯।।
শতপথ ১.৯.৩.৮-৯
যজ্ঞের অনুষ্ঠান সমাপ্তিতে যজমান মনে করেন তাঁর আত্মা বিষ্ণুপদবী লাভ করেছে । তখন তিনি নিজের আসন থেকে উঠে বেদির দক্ষিণদিক থেকে আহবনীয় অগ্নি পর্যন্ত মন্ত্রপাঠ করতে করতে যে পদক্ষেপণ করেন তার নাম "বিষ্ণুক্রম" । টীকাকারঃ অধ্যাপিকা শান্তি ব্যানার্জী
সুতরাং বিষ্ণুর বামনাবতার মূলত রূপক বৈ কিছুই নয়
শ্রী যোগেশ চন্দ্র বিদ্যানিধি এই কাহিনীর একটি জ্যোতিষ পূরক ব্যাখ্যা করেছেন তা নিম্নলিখিত রূপঃ
সূর্যের স্বগতি সহজে প্রত্যক্ষ হয়। দেখা যায়,মধ্যাহ্ন কালে সূর্য (পঞ্জাবে) কখনও মাথার নিকটে আসেন, কখনও বহুদূরে থাকেন। ১০|১৫ দিন অন্তর দূরস্থ দিকচক্রে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখিতে থাকিলে তাহাকে উত্তর হইতে দক্ষিণে এবং দক্ষিণ হইতে উত্তরে গমনাগমন করিতে দেখা যায়।।উত্তর-দক্ষিণে গমনের সীমা আছে,যেন সেখানে দুই কীলক প্রোথিত আছে, সূর্য অতিক্রম করিতে পারেন না। দোলায় শিশু যেমন দোল খায়, সূর্যেরও সেইরূপ দোলন দেখা যায়। উত্তর ও দক্ষিণ কাষ্ঠায়(সীমায়) সূর্যকে দিন কয়েক নিশ্চল বোধ হয়। সূর্য গতির দিক পরিবর্তন করেন। সূর্য উত্তর কাষ্ঠায় আসিলে, ইন্দ্র বৃষ্টি দান করেন, তখন বরুণের অধিকার আরম্ভ হয়। ঋগ্বেদে আছে, ইন্দ্র সূর্যের রথ-চক্র হরণ করিয়াছিলেন( ১|১৭৫|৪ ; ৪|৩০|৪ ) এবং বরুণ সূর্যকে হিরণ্ময় দোলা করিয়াছিলেন( ৭|৮৭|৫ )। বৃষ্টি ব্যতীত কৃষিকর্ম হয় না। বর্তমান কালে যেমন ঋগ্বেদের কালেও তেমন, পাঞ্জাব নিবাসী আর্যেরা বৃষ্টির অভাব ভোগ করিতেন। তাঁহারা ইন্দ্রদেবের নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করিতেন। বিষ্ণু দক্ষিণায়নাদিতে আসিলে বৃষ্টি হইত, না আসিলে হইত না। এই কারণে বেদে বিষ্ণু ইন্দ্রের সখা। ঋষিগণ দেখিয়াছিলেন, বিষ্ণু উত্তর কাষ্ঠায় আসিলে বর্ষা আরম্ভ হয়। বিষ্ণু দক্ষিণ কাষ্ঠায় আসিলে হিম (শীত) ঋতুর আরম্ভ হয়। সবিতার অধিকার আরম্ভ হয়। সবিতা জলশোষক (১|২২|৫) । পূর্বের দক্ষিণ কাষ্ঠা হইতে উত্তর কাষ্ঠায় যাইতে ১৮০ দিন লাগে, উত্তর কাষ্ঠা হইতে দক্ষিণ কাষ্ঠায় যাইতেও ১৮০দিন লাগে,বৎসরে ৩৬০দিন। উত্তর ও দক্ষিণ কাষ্ঠায় মধ্যস্থলে পূর্ববিন্দু।এক ঋষি বলিতেছেন (৭/৯৯/২), "হে বিষ্ণু ! তুমি পৃথিবীর পূর্বদিক ধারণ করিয়া আছ"।'পূর্বদিক ' বিশেষ করিয়া পূর্ববিন্দু বুঝাইতেছে।পূর্ববিন্দু হইতে উত্তর ও দক্ষিণ কাষ্ঠায় যাইতে আসিতে ৯০+৯০+৯০+৯০=৩৬০দিন লাগে।
অতএব বিষ্ণুর তিনটি পদ (স্থান) দিকচক্রে প্রত্যক্ষ হয়।ঋ,১/১৫৫/৬ মন্ত্রে ইহা স্পষ্ট উক্ত হইয়াছে।যথা-চতুভি: সাকংনবতিং চ নামভিশ্চক্রং ন বৃত্তং ব্যতীঁ রবীবিপৎ। [ব্যতীন্ বিবিদান্ স্বাভাবান্ অবীবিপৎ কম্পয়তি ব্রময়তি-সায়ণ]বিষ্ণু গতি-বিশেষ দ্বারা বিবিধ স্বভাববিশিষ্ট চারি নামের নবতিকে(নব্বই দিবসকে)চক্রের ন্যায় বৃত্তাকারে চালিত করিয়াছেন,অর্থাৎ চারি নব্বই দিবসে বিভক্ত বর্ষচক্রকে ভ্রমণ করাইয়াছেন
ঋষিগণ বৎসরকে চক্রের সহিত তুলনা করিতেন,সে চক্রে৩৬০অর [অকারাস্ত] আছে।চারি নামে,অর্থাৎ চারি ঋতু নামে,শীত গ্রীষ্ম বর্ষা হেমন্ত নামে,বৎসর বিভক্ত করিতে পারা যায়।(সায়ণ ৪+৯০=৯৪ কাল অবয়ব গণিয়াছেন।সে গণনার প্রমাণ দেন নাই)।আকাশে বিষ্ণুর সে চারি পদ (স্থান)কোথায়? দিবাভাগে নভোমণ্ডলে সূর্য ব্যতীত আর কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না,কিন্তু রাত্রিকালে অগণ্য নক্ষত্র দ্বারা আকাশ আচ্ছন্ন দেখায়।সূর্য ও নক্ষত্র একত্রে দৃষ্টিগোচর হইতে পারে না, কিন্তু উষার পূর্বে কিংবা সন্ধ্যার পরে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত স্থানে অথবা সরিকটে যে যে নক্ষত্রের উদয় ও অস্ত হয়, তদ্দ্বারা সূর্যের পথ চিহ্নত করিতে পারা যায়।নিরীক্ষণ করিবার অভ্যাস হইলে বলিতে পারা যায়,কোন্ দিন সূর্য কোন্ নক্ষত্রের নিকট ছিল।এই রুপে ঋষিগণ সূর্যের পথ চিনিয়াছিলেন এবং নক্ষত্রদ্বারা চারি বিষ্ণুপদ যুক্ত করিয়াছিলেন।প্রাচিন মিশরবাসী ও ব্যাবিলনবাসী এই ক্রমেই বৎসরের
দিন সংখ্যা ও ঋতু নিরূপণ করিত।
ঋষিগণও এইরুপে
বৎসরে ৩৬০ দিন ও চারি বিষ্ণুপদ নির্ণয় করিয়াছিলেন।
যেদিন সূর্য উত্তর কাষ্ঠায়, সেদিন সূর্যোদয়ের
অব্যবহিত পূর্বে তৎ সন্নিকটে কোন্ নক্ষত্রের
উদয় হইল, যেদিন মধ্য বিন্দুতে এবং যদিন দক্ষিণ
কাষ্ঠায়, সে সে দিন কোন্ কোন্ নক্ষত্রের
উদয় হইল, তাহা সহজে নিরূপণ করিতে পারা যায়। যে
রাত্রে মধ্য কাষ্ঠার নক্ষত্র মধ্য আকাশে সে
রাত্রে উত্তর কাষ্ঠার নক্ষত্র পূর্ব দিকচক্রের
নিকটে এবং দক্ষিণ কাষ্ঠার নক্ষত্র পশ্চিম
দিকচক্রের নিকটে দেখিতে পাওয়া যায়। তিনটি পদে
দুইবার পদক্ষেপ হয়, তিনবার হয়না, চারি পদ না পাইলে
তিন পদক্ষেপ হইতে পারেনা। রবিপথ মাথার দক্ষিণে
থাকে। সেখানে বিষ্ণুকে বামাবর্তে পাদক্ষেপ
করিতে দেখা যায়।
ঋগবেদে কোন্ কালের কথা লিখিত হইয়াছে, তাহা
সহজে বলিতে পারা যায়। কারন সেকালে মৃগ
নক্ষত্রে বাসন্ত বিষুবপাত হইতে পারিত, অন্য দুই পাত
থাকিতে পারিত না।ইহা গণিত দ্বারা জানিতেছি। অানুষঙ্গিক
প্রমানও পাইতেছি।তদবধি মৃগ নক্ষত্রের মস্তকস্থিত
তারা হইতে বাসন্ত বিষুবপাত প্রায় ৮৩° অংশ (ডিগ্রি)
পশ্চিম দিকে সরিয়া গিয়াছে।এক অংশ সরিতে ৭২/৭৩
বৎসর লাগে। পুর্বকালে ৭৩ ১/২ বৎসর লাগিত।অতএব
৮৩×৭৩ ১/২=৬১০০ বৎসর পূর্বের, অর্থাৎ
৬১০০-১৯৫০=৪১৫০ খিস্ট-পূর্বাব্দের ঘটনা। স্থুলঃ
বলিতে পারা যায় , খিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে বিষ্ণুর
ত্রিবিক্রম লক্ষিত হইয়াছিল।তৎকালে কোন্ নক্ষত্রে সুর্যের দক্ষিণায়ন,
তোন্ নক্ষত্রেই বা উত্তরায়ণ অারম্ভ হইত, তাহাও
অক্লেশে বলিতে পারা যায়। কারণ বাসন্ত বিষুবপাত
হইতে ৯০° পূর্ব দিকে অাসিলে দক্ষিণায়নাদি ও ৯০°
পশ্চিম দিকে অাসিলে উত্তরায়ণাদি অবস্থিত।এরূপ জানা
যায় ফল্গুনি ক্ষেত্রে দক্ষিণায়ন এবং ভদ্রপদা
নক্ষত্রে উত্তরায়ন অারম্ভ হইত। এই দুই নক্ষত্রে
মধ্যেস্ধলে জ্যেষ্ঠা মূলা নক্ষত্র শারদ বিষুব ঘটিত।
পাঁজি দেখিলেও মৃগশিরা হইতে সপ্তম নক্ষত্রে
পূর্বদিকে ফল্গুনী, পশ্চিম দিকেভদ্রপদা এবং
চতুর্দশ নক্ষত্রে মূলা জানা যায়।অাশ্বিন মাসের মাঝামাঝি
ভোর ৫টার সময় এবং ফাল্গুন মাসের মাঝমাঝি সন্ধ্যা
৭টায় মধ্যরেখায় বহু দক্ষিণে বৃশ্চিকের পুচ্ছ দেখা
যায়। (বৃশ্চিক কাঁকড়া বিছা, বৃশ্চিকের পুচ্ছ মুলা নক্ষত্র।) অামরা যাহাকে মৃগ নক্ষত্র বলিতেছি তাঁহার
নাম দক্ষ ছিল। ফল্ড়ুনীর নাম অর্জুনী ছিল, কিন্তু
ইহার অাকার জানি না। গিরিষ্ঠ শব্দে যাহা গিরিতে
জন্মে,এমন শ্বেত বৃক্ষ মনে হয়ভ অর্জুন
বৃক্ষের বল্ক শাদা,ইহার শাখা তেমন হয় না।
ফল্গুনীকে যমল অর্জুন বৃক্ষ মনে করা চলে।
মূলার নাম নিঋতি ছিল। ইহা এক অসুর। ঋগবেদে এই
অসুর নমুচি নামে নিহত হইয়াছিল।ইন্দ্র বধ
করিয়াছিলেন। তাহাহের পুরী ছায়াপথে সমুদ্রে।
পূরাণে নিঋতি, রাক্ষস, রাক্ষসেরা নদী কিংবা
সমুদ্রের নিকটে নিকটে বাস করিত। রাবণ বিখ্যাত
রাক্ষস। ইহার পুরী সমুদ্রবেষ্টিত। বস্তুতঃ নিঋতিই
দশমুন্ড রাবণ।বলি দৈত্যও সেই। নিঋতি শব্দ হইতে নৈঋত কোণ নাম হইয়াছে
বিষ্ণু ত্রিবিক্রমের এই অর্থ স্মৃতি ও পুরাণের
স্বীকৃত হইয়াছে। আমরা বিষ্ণু দোল-যাত্রা জানি। ইহা
ফাল্গুনী পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত হয়। সে দিন সন্ধ্যার সময়
বিষ্ণুমূর্তিকে দক্ষিণ মুখে রাখিয়া দোলনায় স্থাপন
করিয়া কয়েকবার দোলাইয়া দেওয়া হয়। অর্থাৎ
সেদিন রবি দোলনায় আরোহণ, দক্ষিণায়নয়ন গতে
উত্তরায়ণ আরম্ভ করিতেন। (এখন সেদিন করেন না,
৭ই পৌষ করেন। ইহাকে পৌষ শুক্ল সপ্তমী মনে
করা যাইতে পারে।) সন্ধ্যাবেলা লোকে বহ্ন্যুৎসব
(চাঁচর) করে। কোথাও মনুষ্য মূর্তি, কোথাও
মেণ্ঢা (মেড়া) মূর্তি ভস্মীভূত হয়। লোকে
বলে মেণ্ঢাসুর। প্রকৃত কথা মেণ্ঢা নয়, ছাগ।
পূর্ণিমার দিন চন্দ্রের বিপরীত দিকে সূর্য থাকে।
চন্দ্র ফল্গুনীতে, অতএব সূর্য ভদ্রপদায় থাকে।
ইহারই ছাগ মূর্তি দগ্ধ হয়, রবি ভদ্রপদা অতিক্রম করিয়া
উত্তরমুখী হয়।
প্রসঙ্গতঃ ভদ্রপদার ছাগ কোথা হইতে আসিল? আমরা ইহার
নিকটস্থ এক ছাগ জানি, সেটি গ্রীক জ্যোতিষীরর
শৃঙ্গবান্ ছাগ, ইংরেজী নাম Capricorn. ইহার আকার
অদ্ভুত। শৃঙ্গবান্ ছাগ কিন্তু দ্বিপদ। পশ্চাতের দুইপদ
মৎস্য-পুচ্ছ। ইহাই আমাদের জ্যোতিষে মকর নাম
পাইয়াছে। বরাহ লিখিয়াছেন, মকর মৃগাস্ত্য। বামনপুরাণ
(অঃ৫) লিখিয়াছেন, মকর মৃগাস্য বৃক্ষস্কন্ধ গজ-
নেত্র। কিন্তু মকরের চিত্রে ছাগের অবয়ব কিছুই
নাই। যদি মকরকে ছাগই মনে করি, সে ছাগ
অহির্বুধ্স্য হইতে পশ্চিম দূরে অবস্থিত। ৬০০০
বৎসর পূর্বে সেখানে উত্তরায়ণ হইতে পারিত না,
অনেক পরবর্তীকালে (খ্রীঃ-পূর্ব ৬ষ্ঠ
শতাব্দে) হইত। ঋগ্বেদে 'অজ-একপাদ' নামে এক
দেবতা আছেন
অহিবুর্ধ্স্যের সহিত
একত্র স্তত হইয়াছেন। পুরাণে একাদশ রুদ্রের দুই
রুদ্র। অজ-একপাদ, এক-পদবিশিষ্ট ছাগ। এক এক
নক্ষত্রের এক এক অধিপতি আছেন। পূর্ব
তদ্রপাদর অধিপতি অজ-একপাদ, উত্তর ভদ্রপদার
অধিপতি অহির্বুর্ধ্স্য। ইহা হইতে মনে হয়,
অহির্বুধ্স্যের নিকটে পশ্চিম অজ-এক-পাদ আছে।
ইংরেজী তারা-পটে অহির্বুধ্স্য Cetus, অর্থ তিমি।
ইহার পশ্চিম শতভিষা নক্ষত্র। ইহারই কয়েকটি তারা লইয়া
অজ-একপাদ কল্পিত হইয়া থাকিবে। শীতারম্ভে
ভোররাত্রে প্রথম অজ-একপাদ পরে অহির্বুধ্স্য
এবং ৫/৬ মাস পরে বর্ষাকালে সন্ধ্যা রাত্রে উদিত হইত বর্ষাকালে ইহাদের সহিত
অপামনপাৎ (জলের পুত্র) দেখা যাইত। ইংরেজী
তারাপটে ইহা Fomalhaut. ভদ্রপদা নামের অর্থ, ভদ্র
সুন্দর পদ যাহার, কিন্তু ভদ্রপদ একটি। পদহীন সর্প,
অপরটি একপদ। এই অর্থ স্পষ্ট রাখিবার নিমিত্ত ভাদ্রপদা
নাম না লিখিয়া ভদ্রপদা লিখিয়াছি।
ঋগ্বেদেরর কালে ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিন শীত
ঋতুর আরম্ভ হইত। এইরূপ, ভাদ্র পূর্ণিমায় রবি আবার
দোলায় আরোহণ করিতেন, উত্তর হইতে
দক্ষিণে গমন করিতেন, বর্ষাঋতু র, বর্ষাঋতুর
আরম্ভ হইত। ভাদ্র পূর্ণিমার পরিবর্তে পাঁজিতে শ্রাবণ
পূর্ণিমায় ঝুলন-যাত্রা লিখিত হইতেছে। ফাল্গুনী
পূর্ণিমার দোলনযাত্রা খ্রীষ্টপূর্ব ৪৫০০-২৫০০
অব্দের স্মৃতি এবং শ্রাবণ পূর্ণিমায় ঝুলন-যাত্রা
পরবর্তী কালের স্মৃতি। ঋতু দুই সহস্র বৎসরে
এক মাস পিছাইয়া গেল। পরবর্তী কালে ফাল্গুনী
পূর্ণিমা বসন্ত ঋতুর আরম্ভ হইত। এইরূপে ফাল্গুনী
পূর্ণিমায় দোলন-যাত্রা ও বসন্তোৎসব মিশিয়া গিয়াছে।
পাঁজিতে চারিটি বিষ্ণুপদ সংক্রান্তি লিখিত থাকে। জৈষ্ঠ,
ভাদ্র, অগ্রহায়ণ ও ফাল্গুন মাস-প্রবেশের সংক্রান্তি
অর্থাৎ জ্যেষ্ঠা, ভদ্রপদা, মৃগশিরা ও ফল্গুনী, এই
চারিটি নক্ষত্রে বিষ্ণুপদ থাকিত। জ্যেষ্ঠার পর মূলা
নক্ষত্র, জ্যেষ্ঠ মাস। এতদ্বারাও পূর্বোক্ত ব্যাখ্যা
সমর্থিত হইতেছে। এই বিষ্ণু পদচক্র বা বর্ষচক্র
বিষ্ণু মন্দিরের শিরোদেশে স্থাপিত হয়। তদ্বারা
আমরা বিষ্ণু স্মরণ করি। ইহা বিষ্ণুর বিখ্যাত সুদর্শন চক্র
নহে। সুদর্শন চক্র সূর্যবিম্ব, যদ্দ্বারা বিষ্ণু বর্ষচক্র
চালিত করিতেছেন
বিষ্ণুর বামনাবতার সকলেই জানেন । একদা বলি নামক দৈত্য বিক্রান্ত
হইয়া ইন্দ্রাদি দেবগণকে স্বর্গচ্যুত করিয়াছিল । বলি এক যজ্ঞ করিতেছিল ৷
বিষ্ণু বামন মূৰ্ত্তি ধরিয়া বলির নিকটে ত্রিপাদভূমি যাঞ্ছা করিয়াছিলেন ৷ বলি দানে স্বীকৃত হইলে বিষ্ণু একপদে স্বর্গ, দ্বিতীয়পদে মর্ত্য ও তৃতীয়পদে পাতাল ব্যাপিয়া বলিকে পদতলে বন্ধ করিলেন ৷ ইহার অর্থ পাইয়াছি ৷ বিষ্ণু রুদ্রস্থানে অর্থাৎ মৃগ নক্ষত্রে বামন মূর্ত্তি ধরিয়াছিলেন । ঋগবেদে রুদ্রকে শিশু বলা হইয়াছে ৷ এই উপাখ্যানে বিষ্ণু রুদ্র স্থানীয় হইয়াছেন । তাহার পদের নিয়ে
মূলা নক্ষত্র ।
এই নক্ষত্রই বলি ৷ রবিপথের সর্বদক্ষিণ অংশে মূলা নক্ষত্র অবস্থিত। রবিপথের বাহিরের দক্ষিণ ভাগের নাম পাতাল ছিল ৷ পাঞ্জাব হইতে দেখিলে মূলাকে বহু দক্ষিণে দেখা যায় ৷
বামনপুরাণ (৯২/৪০) লিখিয়াছেন, বলি যেদিন ভূমি দান করে, সেদিন
চন্দ্র জ্যেষ্ঠা-মূল নক্ষত্রে ছিলেন, অর্থাৎ সেদিন জৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা ৷ অতএব
সেদিন সূর্য মৃগ কিম্বা রোহিণীতে ছিলেন ৷ ভাবে বোধ হয়, জৈষ্ঠ পূর্ণিমায় বাসস্ত বিষ্ণুব দিন হইত । বামনপুরাণ (৯২/৫৬) আরও লিখিয়াছেন, ইন্দ্রোৎসবের দিনে বলির নামে এক মহোৎসব প্রবর্তিত আছে ৷ এই উৎসব দীপ-দান নামে বিখ্যাত ৷ বর্তমানে আমাদের পাঁজিতে ইন্দ্রোৎসবের দিনে বলির নামে দীপদানপূর্বক কোন উৎসব লিখিত নাই ৷ ভাদ্র শুক্ল দ্বাদশী দিনে ইন্দ্রোৎসব হইয়া থাকে এখনও বাঁকুড়া জেলায় হয় । ইহার নাম ইন্দ্রোধ্বজোত্তোলন।) সেদিন বামন দ্বাদশীও বটে । এক কালে এইদিনে দক্ষিণায়ন আরম্ভ হইত। ইহার তিন মাস তিনদিঽ পর অগ্রহায়ণ পুর্ণিমায় শারদ বিষুব দিন আসিত । দক্ষিণায়ন হইয়াছে কিনা তা জানিবার নিমিত্ত এক দীর্ঘ ধ্বজ টানিত হইত । ভদ্রপদা নক্ষত্র দক্ষিণায়ন হইত এতদ্বারাও ত্রিবিক্রম পাওয়া যাইতেছে । এই তিন স্থান মৃগ, জ্যৈষ্ঠা, মুলা ও ভদ্রপদা নক্ষত্রে ।
স্বস্তিক চিহ্নের সৃষ্টিও হয়তো এই বিষ্ণুপদ চক্র হইতে পাঞ্জাবে রবিপথ দর্শকের মস্তকের দক্ষিণে থাকে একারণে স্বস্তিক বামাবর্ত দক্ষিনায়ন হইলে দক্ষিণাবর্ত হইত ।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ