বাল নারায়ণ, প্রমুখ ঋগ্বেদের ভাষ্য করেছেন।
ভাষ্যকর আচার্য সায়ন লিখেছেন তার অনুবাদে, "You (O Indra), eat the cattle offered as oblations belonging to the worshippers who cook them for you. (Atharvaveda 9/4/1)"
"হে ইন্দ্র গ্রহন কর সেসব গরুর মাংস যা তোমাকে তোমার ভক্তরা রন্ধন করে উৎসর্গ করেছে।"
ঋগ্বেদ ১০/৮৬/১৩ তে গরু রান্না করার কথা পাওয়া যায়।
ঋগ্বেদ ১০/৮৬/১৪ তে ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে।
Rig Veda 10.86.১৪ [Indra speaks The worshippers dress for me fifteen (and) twenty bulls : I eat them and (become) fat, they fill both sides of my belly ;Indra is above all (the world).
উপনিসদে ও গরু খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভালো সন্তান পাবার জন্য ষাঁড়ের মাংস খাওয়া উচিত।
Brihadaranyak Upanishad 6/4/18 suggests a ‘super-scientific’ way of giving birth to a super intelligent child.
আক্ষেপকারিগন বলেন এ ব্যাপারে আরো স্পষ্ট বিধান দিয়েছে মনুসংহিতা। মনুসংহিতা ৫/৪৪ বলা হয়েছে, "শ্রুতিবিহিত যে পশুহত্যা, তাহাকে অহিংসাই বলিতে হইবে, যেহেতু বেদ ইহা বলিতেছে।" [কিন্তু মুনুস্মৃতি এটা প্রক্ষিপ্ত শ্লোক]
অগ্নির কাছে নিবেদনে বলদ, ষাঁড় এবং দুগ্ধহীনা গাভী বলিদানের উল্লেখ আছে। (ঋগবেদ সংহিতা, ১/১৬২/১১-১৩, ৬/১৭/১১,১০/৯১/১৪)।
মহাভারতেও গরু খাওয়ার কথা আছে, মহাভারত বন পর্ব, খন্ড ২০৭, অনুবাদে কিশোরী মোহন গাংগুলি।
বিষ্ণুপুরাণ বলছে,ব্রাহ্মণদের গো-মাংস খাইয়ে হবিষ্য করালে পিতৃগণ ১১ মাস পর্যন্ত তৃপ্ত থাকেন। আর এ স্থায়িত্ব কালই সবচেয়ে দীর্ঘ (বিষ্ণুপুরাণ ৩/১৬)। বৃষের মাংস [বেদ:১/১৬৪/৪৩],মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮( কোন বেদ )], অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হত। আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [বেদ:৪/১/৬]। আর এজন্যই হয়তোবা স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,
"You will be astonished ifI tell you that, according to the old ceremonials, he is not a good Hindu who does not eat beef. On certain occasions he must sacrifice a bull and eat it. [The complete works of Swami Vivekananda, Volume 3, Pg 536]"
- নতুন মন্দির বা সেতু উদ্বোধনের সময় নরবলি দেওয়া হতো।
- রাজা, প্রধান পুরোহিত বা বড় নেতার মৃত্যু হলে নরবলি দেওয়া হতো। বিশ্বাস করা হতো উৎসর্গীকৃত ব্যক্তিটি মৃত পরবর্তী জীবনে মৃত নেতাকে সেবা করবে।
- প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময়ে নরবলি দেওয়া হয়। খরা, অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প ইত্যাদিকে দেবতার রাগ বা বিরক্তির লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ঐশ্বরিক ক্রোধ প্রশমিত করার জন্য নরবলি দেওয়া হতো।
- "সেই সময়কার পুরুষদের মধ্যে সাধারণ প্রথা ছিলো এবং উপাসনার সাধারণ রীতি ছিলো যে ইজরায়েলিরা উৎসর্গের জন্য পশু নিয়ে আসবে... যা প্রজ্ঞা অনুযায়ী এবং ইশ্বরের পরিকল্পনা... এই যে স্রষ্টা আমাদের ছেড়ে দিতে আদেশ দেননি এবং এসব সেবার রীতি পরিত্যাগ করতে। এরকম আদেশ মান্য করা নর প্রকৃতির বিপরীত, যারা সাধারণত নিজেদের ব্যবহারিকের সংগে ঝুলে থাকে; এটা সেই সময়ে সেই ছাঁপ রাখতো যা বর্তমানে একজন নবী রাখে (১২ শতক), তিনি যদি আমাদেরকে ইশ্বরের নামে ইশ্বরের পথে আহবান করেন যে আমাদের ইশ্বরের প্রার্থণা করা উচিত নয়, খুব দ্রুত নয়, বিপদে তার সাহায্য প্রার্থনা না করা, আমাদেরকে তাকে কর্মে।নয় ভাবনার দ্বারা তাকে সেবা করতে হবে।" (বুক থ্রি, চ্যাপ্টার ৩২। অনুবাদ করেছেন এম. ফ্রাইডল্যান্ডার, ১৯০৪, দ্যা গাইড ফর দ্যা পারপ্লেক্সেড, ডোভার পাবলিকেশন্স, ১৯৫৬ সংস্করণ)।
কালিকা পুরাণে নরবলি, গরুবলি ও পশুবলি
‘কালরাত্রিস্বরূপ, উগ্র মূর্তি,রক্তাস্য, রক্তনয়ন, রক্তমাল্যানুলেপনা, রক্তবস্ত্রধর,পাশহস্ত, সকুটুম্ব,রুধিরপায়ী, মাংসভোজী, কৃষ্ণ বর্ণ’। [৫৫/১৪-১৫]
পশুবলি
- “ ভগবান বলিলেন, তাহার পর দেবীর প্রমোদজনক বলি প্রদান করিবে, কেননা শাস্ত্রে উক্ত হইয়াছে মোদক দ্বারা গণপতিকে, ঘৃত দ্বারা হরিকে, নিয়মিত গীত বাদ্য দ্বারা শঙ্করকে, এবং বলিদান দ্বারা চণ্ডিকাকে নিয়মিত সন্তুষ্ট করিবে।“ [৫৫/১-২]
দেবী চণ্ডিকা যেহেতু বলি দ্বারাই সন্তুষ্ট হন, তাই এরপরেই বিভিন্ন রকমের বলির পশুর তালিকা দেওয়া হয়েছে-
“১/ পক্ষী, ২/কচ্ছপ,৩/ কুম্ভীর, ৪/ নবপ্রকার মৃগ যথা- বরাহ, ছাগল, মহিষ, গোধা, শশক, বায়স, চমর, কৃষ্ণসার, শশ, ৫/ এবং সিংহ, মৎস্য, ৬/ স্বগাত্র রুধির, ৭/ এবং ইহাদিগের অভাবে হয় এবং ৮/ হস্তি এই আটপ্রকার বলি শাস্ত্রে নির্দিষ্ট হইয়াছে।“[৫৫/৩-৪]
এছাড়াও কালিকা পুরাণের নানা স্থলে উপরোক্ত পশু ভিন্ন বিভিন্ন পশুর বলিপ্রদান করার কথাও রয়েছে। পশুবলি বিষয়ক শ্লোকগুলির পরপর উল্লেখ করা হল- - সাধক বলিকে বলেন, “তুমি শ্রেষ্ঠ জীব, আমার ভাগ্যে বলিরূপে উপস্থিত হইয়াছ, অতএব সর্ব স্বরূপ বলিরূপী তোমাকে আমি ভক্তিপূর্বক প্রণাম করি। [৫৫/৮]
- বলিপ্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “ শর্করা, লবলী, নারংগক, ছাগল, মহিষ, মেষ, নিজের শোণিত, পক্ষী আদি পশু, নয় প্রকার মৃগ- এইসকল উপকরণ দ্বারা নিখিল জগতের ধাত্রী মহামায়ার পূজা করিবে, যাহাতে মাংস ও শোণিতের কর্দম হয়।“ [৫৫/৪৭-৫০]
কালিকা পুরাণে শিব তার পুত্রদের বলির বিধানে বলছেন- - “ভগবান বলিলেন- হে পুত্রদ্বয়! বলিদানের ক্রম এবং স্বরূপ অর্থাৎ যে প্রকার রুধিরাদি দ্বারা দেবীর সম্পূর্ণ প্রীতি হয়,তোমাদিগের নিকট কীর্তন করিতেছি।“ [৬৭/১]
- “মৎস্য ও কচ্ছপের রুধির দ্বারা শিবা দেবী নিয়ত এক মাস তৃপ্তি লাভ করেন এবং গ্রাহ্যদিগের রুধিরাদি দ্বারা তিন মাস তৃপ্তি লাভ করেন।“ [৬৭/৭]
- “দেবী মৃগ ও মনুষ্য শোণিত দ্বারা আটমাস তৃপ্তি লাভ করেন এবং সর্বদা কল্যাণ প্রদান করেন।“ [৬৭/৮]
- “গো এবং গোধিকার রুধিরে দেবীর সাংবাৎসরিক তৃপ্তি হয়।“ [৬৭/৯]
- “কৃষ্ণসার এবং শূকরের রুধিরে দেবী দ্বাদশ বার্ষিকী তৃপ্তি লাভ করেন। “[৬৭/১০]
- “অজ ও আবিক রুধিরে দেবীর পঞ্চবিংশতি বার্ষিকী এবং মহিষ শার্দূল এবং খড়গ রুধিরে দেবীর শতবার্ষিকী তৃপ্তি লাভ হয়।“ [৬৭/১১]
- “সিংহ, শরভ এবং স্বীয় গাত্রের রুধিরে দেবী সহস্র বৎসর ব্যাপীয়া তৃপ্তি লাভ করেন।“ [৬৭/১২]
- “যাহার রুধিরে যাবতকাল তৃপ্তির কথা হইয়াছে, মাংস দ্বারাও ততকাল তৃপ্তি লাভ হয়।“ [৬৭/১৩]
- “কৃষ্ণসার মৃগ, গণ্ডার, রোহিত মৎস্য, যুগল বারধ্রীণস এই সকল বলি দানের পৃথক পৃথক ফল শ্রবণ কর।“ [৬৭/১৪]
- “কৃষ্ণসার ও গণ্ডারের মাংসে চণ্ডিকা দেবী পঞ্চশত বর্ষ নিয়ত তৃপ্তি লাভ করেন।“ [৬৭/১৫]
- “আমার পত্নী দুর্গা, রোহিত মৎস্যের মাংসে এবং বারধ্রিণসের মাংসে তিন শত বৎসর তৃপ্তি লাভ করেন।“ [৬৭/১৬]
- “কৃষ্ণসারের বলিদান সময়ে বক্ষ্যমান মন্ত্রের পাঠ করিবে। হে কৃষ্ণ সার ! তুমি ব্রহ্ম মূর্তি এবং ব্রহ্মতেজের পরিবর্ধনকারী।“[৬৭/৬৩]
- “যে পূজায় গণ্ডার বলি প্রদত্ত হইবে, সেই স্থলে জল দ্বারা অভ্যুক্ষণ করিয়া গুহা হইয়াছে এইরূপ চিন্তা করত একটি মণ্ডল করিবে।“[৬৭/৬১]
গো-মহিষ বলি
- “ পক্ষী সকল, কচ্ছপ, গ্রাহ, মৎস্য, নয় প্রকার মৃগ, মহিষ, অজ, আবিক, গো, ছাগ, রুরু, শূকর,খড়গ, কৃষ্ণ সার, গোধিকা, শরভ, সিংহ, শার্দূল, মনুষ্য এবং স্বীয় গাত্রের রুধির , ইহারা চণ্ডিকা দেবী ও ভৈরবাদির বলিরূপে কীর্তিত হইয়াছে। [৬৭/৩-৫]
- “যখন ভৈরবী দেবী অথবা ভৈরবীকে মহিষ বলি প্রদান করিবে তখন সেই বক্ষ্যমাণ মন্ত্র দ্বারা পূজা করিবে।“ [৬৭/৫৮]
- “গো এবং গোধিকার রুধিরে দেবীর সাংবাৎসরিক তৃপ্তি হয়।“[৬৭/৯]
- “অর্চনা দ্বারা অপরাপর মহিষ প্রভৃতির বলির শরীর বিশুদ্ধিলাভ করে, এই নিমিত্ত দেবী তাহা হইতে রক্ত গ্রহণ করেন।“ [৬৭/৯৬]
- “সাধক মহিষ এবং মনুষ্যের রক্তের কিঞ্চিত অংশ মধ্যমা এবং অনামিকা দ্বারা উদ্ধৃত করিয়া মহাকৌশিক মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক পূর্ব হইতে নৈঋত কোণে পুতনাদি দেবতার উদ্দেশ্যে মৃত্তিকার উপর বলি প্রদান করিবে।“ [৬৭/১৪৬-১৪৭]
- বলিপ্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “ শর্করা, লবলী, নারংগক, ছাগল, মহিষ, মেষ, নিজের শোণিত, পক্ষী আদি পশু, নয় প্রকার মৃগ- এইসকল উপকরণ দ্বারা নিখিল জগতের ধাত্রী মহামায়ার পূজা করিবে, যাহাতে মাংস ও শোণিতের কর্দম হয়।“ [৫৫/৪৭-৫০]
- হে পুত্রদ্বয়! চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বিশেষ চতুর্দশী তিথিতে ছাগ মহিষ প্রভৃতি বলি মধু ও মৎস্য দ্বারা ভৈরবীরূপী আমাকে তুষ্ট করিবে; আমি ইহাতেই সন্তুষ্ট হইব। (৬৭/২০৩)
নরবলি
- “ছাগল, শরভ এবং মনুষ্য ইহারা যথাক্রমে বলি, মহাবলি এবং অতিবলি নামে প্রসিদ্ধ।“ [৬৭/৫]
- যথাবিধি প্রদত্ত একটি নরবলিতে দেবী সহস্র বৎসর তৃপ্তি লাভ করেন, আর তিনটি নরবলিতে লক্ষ বছর তৃপ্তি লাভ করেন। [৬৭/১৯]
- মনুষ্য মাংস দ্বারা কামাখ্যা দেবী এবং আমার রূপধারী ভৈরব তিন হাজার বৎসর তৃপ্তি লাভ করেন। [৬৭/২০]
- যেহেতু বলির মস্তক এবং মাংস দেবতার অত্যন্ত অভিষ্ট, এই হেতু পূজার সময় বলির শির এবং শোণিত দেবীকে দান করিবে। [৬৭/২১-২২]
- বিচক্ষণ সাধক ভোজদ্রব্যের সহিত লোমশূণ্য মাংস দান করিবে এবং কখন কখন পূজাপকরণের সহিতও মাংস দান করিবে। [৬৭/২৩]
- রক্তশূণ্য মস্তক অমৃত তুল্য পরিগণিত হয়।[৬৭/২৪]
- নরপতি মনুষ্যের রক্ত মৃন্ময় অথবা তৈজস পাত্রে রাখিয়া সর্বদা উৎসর্গ করিয়া দিবে, পত্র নির্মিত দ্রোণাদিতে কখনোই দিবে না।[৬৭/৪৭]
- এইরূপে পূজা করিয়া পূর্ব তন্ত্র দ্বারা বিধিপূরবক পূজা করিবে। নরবলি পূজিত হইয়া আমার স্বরূপ দিকপালগণ কর্তৃক অধিষ্ঠিত হয়। [৬৭/৯১]
- এবং ব্রহ্মা প্রভৃতি অন্যান্য সকল দেবগণ কর্তৃক অধিষ্ঠিত হইয়া সেই বলিরূপ নর, পূর্বে পাপাচারী হইলেও নিষ্পাপ হইয়া যায়।[৬৭/৯২]
- সেই পাপশুণ্য বলিরূপ নরের শোণিত অমৃত তুল্য হয়, উহাদ্বারা জগন্ময়ী জগন্মায়া মহাদেবী প্রীতিলাভ করেন। [৬৭/৯৩]
- সেই বলিরূপী নর মনুষ্যদেহ পরিত্যাগ করিয়া মরিতে মরিতেই গণদিগের অধিপতি হইয়া আমার অধিক সৎকারের পাত্র হয়।[৬৭/৯৪]
- এতদ্ব্যতীত অন্যপ্রকার পাপযুক্ত মলমূত্র ও বসাযুক্ত বলি কামাখ্যা দেবী নামমাত্রেও গ্রহণ করেন না। [৬৭/৯৫]
- পশু-স্ত্রী, পক্ষিণী বিশেষত মনুষ্য স্ত্রীকে কখনোই বলিপ্রদান করিবে না। স্ত্রীকে বলিদান করিলে কর্তা নরকপ্রাপ্ত হয়। [৬৭/১০১]
গণহারে নরবলির উল্লেখ আমরা নিচের শ্লোকে পাই- - যেখানে বিশেষ গণনা না করিয়া একেবারে দলে দলে বলি প্রদান করা হয় সেইস্থলে সমুদয় দল একেবারে অর্চিত করিয়া ভক্তি পূর্বক পশু পক্ষীর স্ত্রী এবং মানুষীকে বলি দিতে পারে। [৬৭/১০২]
- “শত্রু ভূপতির পুত্র যদি যুদ্ধে বিজিত হয় , তাহা হইলে তাঁহাকে বলি দিতে পারে।“ [৬৭/১০৬-১০৭]
- ‘মনুষ্যের মস্তকের রুধির দেবীর দক্ষিণদিকে নিবেদন করিবে, ছাগের শিরোরুধির বামদিকে এবং মহিষের শিরোরুধির সম্মুখে নিবেদন করিবে এবং পক্ষীগণের শিরোরুধির বামদিকে নিবেদন করিবে এবং শরীরের শোনিত সম্মুখে নিবেদন করিবে। ’ এরূপ বলা হয়েছে। [৬৭/১১২]
- রাজপুত্র, অমাত্য, সচিব এবং সৌপ্তিকগণ রাজার সম্পত্তি ও বিভবের নিমিত্ত নরবলি প্রদান করিবে। [৬৭/১২২]
- কোনোরূপ উপদ্রব উপস্থিত হইলে অথবা যুদ্ধকালে কোনো রাজসম্পর্কীয় পুরুষ ইচ্ছানুসারে মনুষ্যবলি প্রদান করিবে। [৬৭/১২৩]
- সাধক মহিষ এবং মনুষ্যের রক্তের কিঞ্চিত অংশ মধ্যমা এবং অনামিকা দ্বারা উদ্ধৃত করিয়া মহাকৌশিক মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক পূর্ব হইতে নৈঋত কোণে পুতনাদি দেবতার উদ্দেশ্যে মৃত্তিকার উপর বলি প্রদান করিবে। [৬৭/১৪৬-১৪৭]
- গণ্ড,ললাট,ভ্রুত মধ্যে করণাগ্র,বাহুদ্বয়,স্তনদ্বয়,উদর,কন্ঠের অধঃ ও নাভির ঊরধস্থিত যাবতীয় হৃদয় ভাগ এবং পার্শ্ব- এই সকল অঙ্গের রুধির দেবিকে দান করিবে। [৬৭/১৬৪-১৬৫]
- মনুষ্য শ্রদ্ধাযুক্ত হইয়া ঐ রুধির নির্গত করিবার নিমিত্তেই অক্ষুব্ধ চিত্তে আপনার অঙ্গে স্বয়ং আঘাত করিয়া রুধির নির্গত করিয়া পদ্মপুষ্পের পাত্রে , কিংবা সৌবর্ণ পাত্রে অথবা কাংস্যপাত্রে সেই রুধির রাখিয়া পূর্বোক্ত মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক উহা দেবীকে দান করিবে। [৬৭/১৬৭-১৬৮]
- ক্ষুর, ছুরিকা,খড়গ এবং শংকুল প্রভৃতি যতগুলি অস্ত্র আছে, ইহাদের মধ্যে যত বড় অস্ত্র দ্বারা শরীরে আঘাত করিবে ততই ফলপ্রাপ্ত হইবে।[৬৭/১৬৯]
- একটি পদ্মফুলের পাপড়িতে যতটুকু রক্ত ধরিতে পারে, সাধক তাহার চারিভাগের অধিক রক্ত কখনোই দান করিবে না এবং একেবারে কোনো অঙ্গের ছেদ করিবে না।[৬৭/১৭০]
- যে ব্যক্তি শ্রদ্ধাবশত আপন হৃদয় জাত মাষ প্রমাণ অথবা তিল মুদগ প্রমাণ মাংস দেবীকে অর্পণ করে তাহার ছয় মাসের মধ্যে সমুদয় কামনা সিদ্ধ হয়। [৬৭/১৭১-১৭২]
- যে সাধক স্নেহপাত্র না লইয়া বাহুদ্বয়, স্কন্ধদ্বয় এবং হৃদয়ে দ্বীপ বর্তী (সলিতা জ্বালিয়া) দেবীকে দান করে , ক্ষণমাত্র তাদৃশ দ্বীপদানের ফল শ্রবণ কর। [৬৭/১৭৩-১৭৪]
- সে দেবী গৃহে কল্পত্রয় যথেচ্ছাক্রমে বিপুল ভোগ করিয়া পরে সার্বভৌম রাজা হইয়া জন্মগ্রহণ করিবে।[৬৭/ ১৭৫]
- মহিষের ছিন্ন মস্তকে দ্বীপ জ্বালাইয়া , যে ব্যক্তি উহা হস্ত দ্বারা গ্রহণ করিয়া দেবীর সম্মুখে একটি সমস্ত দিন ও রাত্রি অবস্থান করে।[৬৭/১৭৬]
- সে ইহলোকে চিরায়ু ও পবিত্রমূরতি হইয়া অখিল মনোরম বস্তু উপভোগ করিয়া অন্তে আমার গৃহে যাইয়া গণাধিপতি প্রাপ্ত হয়।[৬৭/ ১৭৭]
- যদি সাধক দক্ষিণহস্তে মনুষ্যের মস্তক এবং বামহস্তে রুধিরপাত্র গ্রহণ করিয়া রাত্রিজাগরন করে।[৬৭/১৭৮]
- তাহা হইলে সে ইহলোকে রাজা হয় এবং অন্তে আমার লোকে গমণ করত গণদিগের অধিপতি হয়।[৬৭/ ১৭৯]
- যে সাধক বলিদিগের শিরোরক্ত করদ্বয়ে মাখাইয়া দেবীর সম্মুখে ধ্যানস্থ হইয়া অবস্থান করে।[৬৭/১৮০]
- সে ব্যক্তি ইহলোকে সকল কামনার বস্তু লাভ করিয়া অন্তে দেবীলোকে সম্মানিত হয়।[৬৭/১৮১]
- হে মহামায়ে ,আপনি জগতের কর্ত্রী এবং সর্ব কামারথ দায়িনী , আপনাকে এই নিজদেহের রুধির দান করিতেছি , আপনি আমার উপর প্রসন্ন হইয়া বর প্রদান করুন।[৬৭/১৮২]
- এই কথা বলিয়া সিদ্ধ সান্নিভ বিচক্ষণ মানব প্রণাম পূর্বক স্বীয় গাত্রের রুধির প্রদান করিবে।[৬৭ /১৮৩]
- ঈশ্বর-ভূতিলাভের নিমিত্ত যে সত্য রক্ষা করিয়া আমি আত্মমাংস দান করিতেছি, হে দেবী, সেই সত্য রক্ষা করিয়া তুমি আমাকে নির্বাণ দান কর। হূঁ হূঁ নমঃ নমঃ পণ্ডিত সাধক এই মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া আপনার মাংস দান করিবে।[৬৭/১৮৪-১৮৫]
কামাখ্যায় নরবলি
- পীঠ প্রসঙ্গে বলা হইয়াছে যে, নিত্য শ্মশ্মানে বলি প্রদান করিবে। ঐ শ্মশ্মান শব্দে হেরুকনামক শ্মশান, উহা কামাখ্যা দেবীর আবাস শৈলে অবস্থিত। ইহা পূর্বে তন্ত্রের আদিতে বিধিবত প্রতিপাদিত হইয়াছে। [৬৭/৭২-৭৩]
- ঐ শ্মশান আমার স্বরূপ। উহা ভৈরব নামেও অভিহিত হয়। ঐ শ্মশান তপঃসিদ্ধির নিমিত্ত ত্রিভাগে কল্পিত হইয়াছে।[৬৭/ ৭৪]
- উহার পূরবাংগ ভৈরব নামে প্রসিদ্ধ, তাহাতে তপস্যা করিলে সদ্য সিদ্ধি লাভ হয়, সে বিষয়য়ে কোনো সন্দেহ নাই। উহার দক্ষিণাংগে
- ভৈরবীদেবীকে মুণ্ডমালার সহিত মস্তক প্রদান করিবে এবং হেরুক নামক পশ্চিমাংগে রুধির প্রদান করিবে। [৬৭/ ৭৫-৭৬]
- মনুষ্য বলিকে অর্চন ,দান এবং আগমন ক্রমে পীঠস্থানের শ্মশান ভূমিতে বিসর্জন করিয়া বলদীপক প্রজ্বলিত করিবে। [৬৭/৭৭]
- এইরূপে যেইখানে মহাবলি প্রদত্ত হইবে, সেইস্থলেই সাধক একস্থানে উৎসর্গ ,একস্থানে ছেদন করিবে এবং অন্যস্থলে মস্তক এবং অন্যস্থলে রুধির প্রদান করিবে। [৬৭/৭৮]
- আর একবার বিসর্জন করিয়া পুণরায় আর তাহার দিকে অবলোকন করিবে না। [৬৭/৭৯]
- সুস্নাত,দীপ্ত, পূর্ব দিনে হবিষ্যাশী, মাংস , মৈথুন এবং ভোগ বর্জিত, মালা এবং চন্দন দ্বারা অলঙ্কৃত মনুষ্যকে উত্তরমুখ করিয়া তাহার অবয়ব নিচয়ে দেবতাসকলের পূজা করিবে এবং তাঁহাকে দেবতার সহিত অভিন্ন জ্ঞান করিয়া তাহার পূজা করিবে।[৬৭/ ৮০-৮১]
- ব্রহ্মরন্ধ্রে ব্রহ্মার পূজা করিবে, নাসিকায় পৃথিবীর পূজা করিবে, কর্ণ দ্বয়ে শক্তি এবং আকাশের পূজা করিবে, জিহবাতে অগ্নির,নেত্রে জ্যোতির, বদনে বিষ্ণুর,ললাটে আমার, দক্ষিণ গণ্ডে ইন্দ্রের, বাম গণ্ডে বহ্নির, গ্রীবায় সমবর্তীর , কেশাগ্রে নিঋতির , ভ্রুদ্বয়ের মধ্যে বরুণের, নাসিকামূলে পবনের,
- স্কন্দে ধনেশ্বরের এবং হৃদয়ে সর্প রাজের পূজা করিয়া বক্ষ্যমান মন্ত্র পাঠ করিবে। [৬৭/৮২-৮৫]
- হে মহাভাগ নরশ্রেষ্ট! তুমি সর্ব দেবময় এবং উত্তম, তুমি পুত্র, পশু ও বান্ধবের সহিত শরণাপন্ন আমাকে রক্ষা কর। [৬৭/৮৬]
- মৃত্যু যখন অপরিহার্য তখন তুমি প্রাণত্যাগ কর, এবং পুত্র, অমাত্য ও বন্ধু বর্গের সহিত আমাকে রক্ষা কর।[৬৭/৮৭]
- তোমার প্রসাদে রাক্ষস, পিশাচ, বেতালগণ,সরিসৃপগণ , নৃপগণ, রিপুগণ এবং অন্যান্য হিংস্রগণ যেন আমাকে বিনাশ করিতে অক্ষম হয়। [৬৭/৮৯]
- মরণ যখন অপরিহার্য তখন তুমি পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইয়া স্বীয় কণ্ঠনাল হইতে গলিত এবং অঙ্গ লগ্ন শোণিতধারা দ্বারা তৃপ্তি লাভ কর।[৬৭/ ৯০]
রক্ত উৎসর্গ
- আপনার বিভব অনুসারে রুধির দানের নিমিত্ত সৌবর্ণ, রাজত, তাম্র, বেত্রপাত্রের দোনা, মৃন্ময় খর্পর, কাংস্য অথবা যজ্ঞীয় কাষ্ঠ নির্মিত একটি পাত্র করিবে। [৬৭/৪৪]
- লৌহপাত্রে, বল্কলে, পিত্তলপাত্রে, রংগের পাত্রে অথবা কাচ পাত্রে কিংবা স্রুক বা স্রুবে বলিদিগের রুধির দান করিবে না। [৬৭/৪৫]
- ঐশ্বর্যবিলশী মনুষ্য ঘটে, মাটির উপর,ক্ষুদ্র পান পাত্রে রুধির দান করিবে না। [৬৭/৪৬]
- অর্চনা দ্বারা অপরাপর মহিষ প্রভৃতির বলির শরীর বিশুদ্ধিলাভ করে, এই নিমিত্ত দেবী তাহা হইতে রক্ত গ্রহণ করেন।[৬৭/৯৬]
- নরপতি মনুষ্যের রক্ত মৃন্ময় অথবা তৈজস পাত্রে রাখিয়া সর্বদা উৎসর্গ করিয়া দিবে, পত্র নির্মিত দ্রোণাদিতে কখনোই দিবে না। [৬৭/৪৭]
- মাংসভূক পশু ও পক্ষীগণের এবং সর্ব প্রকার জলজ জীবগণের মস্তক ও রুধির বাম পার্শে রাখিয়া নিবেদন করিবে। [৬৭/১১৩]
- কৃষ্ণসার, কূর্ম, গণ্ডার, শশক, কুম্ভীর এবং মৎস্য ইহাদিগের রুধির সম্মুখে রাখিয়াই নিবেদন করিবে।[৬৭/ ১১৪]
- সিংহের রুধির এবং গণ্ডারের রুধির দক্ষিণের রাখিয়া নিবেদন করিবে। দেবতার প্রিষ্ট দেশে কোনো বলির শিরোরুধির দান করিবে না। নৈবদ্য দক্ষিণে, বামে,অথবা সম্মুখে রাখিয়া নিবেদন করিতে পার, কিন্তু কখনো প্রিষ্টদেশে নৈবদ্য রাখিবে না। [৬৭/১১৫]
- ঐশ্বর্য বিলাশী মনুষ্য ঘটে,মাটির উপর, ক্ষুদ্র পানপাত্রে রুধির দান করিবে না। [৬৭/৫৯]
বলির মুণ্ডু কোনোদিকে পড়লে যে ফল হয়
- ছিন্ন মনুষ্য এবং পশু প্রভৃতির মস্তক যে যে স্থানে পতিত হইয়া শুভ বা অশুভ হয় তা শ্রবণ কর। [৬৭/১৩০]
মনুষ্যের ছিন্নশির ইশানকোণে বা নৈঋত কোণে পতিত হইলে রাজ্যহানি এবং রাজার বিনাশ সাধন করে। [৬৭/১৩১]
হে ভৈরব! পূর্ব ,আগ্নেয়, দক্ষিণ, পশ্চিম এবং বায়ুকোণে ঐ ছিন্ন মস্তক পতিত হইলে যথাক্রমে লক্ষ্মী, পুষ্টি,ভর, লাভ, পুত্র লাভ এবং ধন উৎপাদন করে। [৬৭/১৩২] - হে ভৈরব! ছিন্ন মহিষের মস্তক উত্তরদিক হইতে এক এক করিয়া বায়ুকোণ অবধি পতিত হইলে যথাক্রমে যে যে ফল লাভ হয় তাহা শ্রবণ কর। ভোগ্য, হানি , ঐশ্বর্য , বিত্ত, রিপুজয়, ভয়, রাজ্যলাভ এবং শ্রী । [৬৭/১৩৩-১৩৪]
- জলজ এবং অণ্ডজ ভিন্ন ছাগ আদি নিখিল পশুর মস্তক পতনে দিক অনুসারে ঐরূপ ফল লাভ হয় জানিবে। [৬৭/১৩৫]
- জলজ এবং পক্ষীদিগের ছিন্ন মস্তক দক্ষিণে ও অগ্নিকোণে পতিত হইলে ভয় এবং অন্যদিকে পতিত হইলে শ্রীলাভ হয়। [৬৭/১৩৬]
- মনুষ্য,পশু, পক্ষী ও কুম্ভিরাদির মস্তক ছিন্ন হইলে যদি দাঁতের কট কট শব্দ হয় তাহা হইলে রোগ উৎপন্ন হয়। [৬৭/১৩৭]
- যদি মস্তক ছেদ হইবার পর চক্ষু হইতে মল নির্গত হয় , তাহা হইলে যে রাজ্যে এই ঘটনা হয় ঐ রাজ্যের হানি হয়। [৬৭/১৩৮]
- মহিষের মস্তক ছিন্ন এবং পতিত হইলে যদি নেত্র হইলে লোতক নির্গত হয় , তাহা হইলে প্রতিদ্বন্দি রাজার মৃত্যু হয়। [৬৭/১৩৯]
- অপরাপর বলি পশু প্রভৃতির মস্তক হইতে নির্গত লোতক অতিশয় ভয় এবং পীড়ার সূচনা করে। [৬৭/১৪০]
- যদি নরবলির ছিন্নশির হাস্য করে , তাহা হইলে শত্রুর বিনাশ হয় এবং বলিদাতার সর্বদা লক্ষ্মী ও পরমায়ু বৃদ্ধি হয়, সেই বিষয়ে কোনো সংশয় নাই। [৬৭/১৪১]
- নরবলির ছিন্ন মস্তক যে যে বাক্য উচ্চারণ করে, তাহা অচিরকালেই সফল হয় এবং হুঙ্কার করিলে রাজ্যের হানি হয় এবং শ্লেষ্মস্রাব করিলে কর্তার পঞ্চত্ব প্রাপ্তি হয়। [৬৭/১৪২]
- যদি ছিন্ন মস্তক দেবতাদিগের নাম কীর্তন করে, তাহা হইলে বলিদাতা ছয়মাসের মধ্যেই অতুল বিস্তৃতি লাভ করে। [৬৭/১৪৩]
- রুধির দানকালে যদি ছিন্ন শরীরের উরধ বা অধোভাগ হইতে বিষ্ঠা বা মূত্র নির্গত হয় তাহা হইলে বলিদাতার নিশ্চয় মৃত্যু হয়। [৬৭/১৪৪]
- ছিন্নদেহ বামপাদের আক্ষেপ করিলে মহারোগ উৎপন্ন হয় এবং অপর চরণের আক্ষেপে কল্যাণ লাভ হয়। [৬৭/১৪৫]
বলির পদ্ধতি
- বলি দেয়ার আগে “হে খরগ তোমার নাম অসি, বিশসন, তীক্ষ্ণধার, দুরাসন, শ্রীগরভ, বিজয় এবং ধর্ম পাল, তোমাকে নমস্কার করি।“ (৫৫/১৬) এরূপ বলে তারপরে ‘আ, হ্রিং, ফট এইমন্ত্র দ্বারা খরগকে পূজা করিয়া সেই বিমল খরগ গ্রহণ করিয়া বলিচ্ছেদ’ করা হত। (৫৫/১৭)
তারপরে “ছিন্ন বলির রুধির জল, সৈন্ধব, সুস্বাদু ফল,মধু, গন্ধ ও পুষ্পের দ্বারা সুবাসিত করিয়া ওঁ, ঐঁ, হ্রীঁ, শ্রীঁ কৌশিকি এই রুধির দ্বারা প্রীতিলাভ কর, এই মন্ত্র বলিয়া যথাস্থানে রুধির নিক্ষেপ করিয়া ছিন্ন মস্তকের উপর প্রদীপ জ্বালাইয়া” রাখতে হত এবং , ‘এইরূপে সাধক বলির পূর্ণ ফল প্রাপ্ত’ হত। (৫৫/১৮-২০) - চন্দ্রহাস বা কর্ত্রী দ্বারা বলিচ্ছেদ করাই প্রশস্ত বলিয়া গণ্য হইয়াছে, দাত্র, অসি, ধেনু, করাত বা শংকুল দ্বারা বলিচ্ছেদ মধ্যম এবং ক্ষুর, ক্ষুরপ্র এবং ভল্ল দ্বারা বলিচ্ছেদ অধম বলিয়া কথিত হইয়াছে। [৬৬/২৬]
- এতদ্ভিন্ন শক্তি বা বাণ প্রভৃতির দ্বারা কখনোই বলিচ্ছেদ কর্তব্য নয়। বলিদানে যেসকল অস্ত্র উক্ত হইয়াছে , তদ্ভিন্ন অস্ত্র দ্বারা বলিচ্ছেদ করিলে দেবী উহা ভোজন করেন না এবং বলিদানকরতা শীঘ্রই মৃত্যু প্রাপ্ত হয়।[৬৭/২৭]
- যে সাধক প্রোক্ষিত পশু বা পক্ষীকে হস্ত দ্বারা ছেদ করে, সে অতি দুঃসহ ব্রহ্মহত্যা প্রাপ্ত হয়। [৬৭/২৮]
- বিচক্ষণ সাধক খড়গকে মন্ত্র দ্বারা আমন্ত্রিত না করিয়া কখনোই বলিযোগ করিবেন না। [৬৭/২৯]
বলিতে অথবা যজ্ঞে বধ, বধ নয়
- ব্রহ্মা স্বয়ং যজ্ঞের নিমিত্ত সকল প্রকার বলির সৃষ্টি করিয়াছেন, এই নিমিত্ত আমি তোমাকে বধ করি, এই জন্যে যজ্ঞে পশুবধ হিংসার মধ্যে গণ্য নয়। [৫৫/১০]
- স্বয়ম্ভূ স্বয়ং যজ্ঞের নিমিত্ত পশুসকল সৃজন করিয়াছেন, এই নিমিত্ত অদ্য তোমার বধ করি। কারণ যজ্ঞে বধ অবধের সমান। [৬৭/৪১]
বলির উদ্দেশ্য
- “বলি দ্বারা মুক্তি সাধিত হয়, বলি দ্বারা স্বর্গ সাধিত হয় এবং বলিদান দ্বারা নৃপতি গণ শত্রু নৃপতি গণকে পরাজয় করিয়া থাকেন।“ [৬৭/৬]
- “তোমার প্রসাদে রাক্ষস, পিশাচ, বেতালগণ,সরিসৃপগণ , নৃপগণ, রিপুগণ এবং অন্যান্য হিংস্রগণ যেন আমাকে বিনাশ করিতে অক্ষম হয়।“ [৬৭/৮৯]
- “ঐশ্বর্য বিলাশী মনুষ্য ঘটে,মাটির উপর, ক্ষুদ্র পানপাত্রে রুধির দান করিবে না।“ [৬৭/৫৯]
- যে সাধক বলিদিগের শিরোরক্ত করদ্বয়ে মাখাইয়া দেবীর সম্মুখে ধ্যানস্থ হইয়া অবস্থান করে।[৬৭/১৮০]
- সে ব্যক্তি ইহলোকে সকল কামনার বস্তু লাভ করিয়া অন্তে দেবীলোকে সম্মানিত হয়।[৬৭/১৮১]
- যে সাধক স্নেহপাত্র না লইয়া বাহুদ্বয়, স্কন্ধদ্বয় এবং হৃদয়ে দ্বীপ বর্তী (সলিতা জ্বালিয়া) দেবীকে দান করে , ক্ষণমাত্র তাদৃশ দ্বীপদানের ফল শ্রবণ কর। [৬৭/১৭৩-১৭৪]
- সে দেবী গৃহে কল্পত্রয় যথেচ্ছাক্রমে বিপুল ভোগ করিয়া পরে সার্বভৌম রাজা হইয়া জন্মগ্রহণ করিবে।[৬৭/ ১৭৫]
- মহিষের ছিন্ন মস্তকে দ্বীপ জ্বালাইয়া , যে ব্যক্তি উহা হস্ত দ্বারা গ্রহণ করিয়া দেবীর সম্মুখে একটি সমস্ত দিন ও রাত্রি অবস্থান করে।[৬৭/১৭৬]
- সে ইহলোকে চিরায়ু ও পবিত্রমূরতি হইয়া অখিল মনোরম বস্তু উপভোগ করিয়া অন্তে আমার গৃহে যাইয়া গণাধিপতি প্রাপ্ত হয়।[৬৭/ ১৭৭]
- যদি সাধক দক্ষিণহস্তে মনুষ্যের মস্তক এবং বামহস্তে রুধিরপাত্র গ্রহণ করিয়া রাত্রিজাগরন করে।[৬৭/১৭৮]
- তাহা হইলে সে ইহলোকে রাজা হয় এবং অন্তে আমার লোকে গমণ করত গণদিগের অধিপতি হয়।[৬৭/ ১৭৯]
- যে সাধক বলিদিগের শিরোরক্ত করদ্বয়ে মাখাইয়া দেবীর সম্মুখে ধ্যানস্থ হইয়া অবস্থান করে।[৬৭/১৮০]
- সে ব্যক্তি ইহলোকে সকল কামনার বস্তু লাভ করিয়া অন্তে দেবীলোকে সম্মানিত হয়।[৬৭/১৮১]
- যখন যখন শত্রুর বৃদ্ধি দেখিবে, তখন তখন তাহার ক্ষয় কামনা করিয়া অপরের শিরচ্ছেদ করিয়া বলিপ্রদান করিবে। [৬৭/১৫৪]
ঐ বলিরূপ পশুতে শত্রুর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করিবে, ঐ বলির ক্ষয় হইলে শত্রুর বিপদ হয়। [৬৭/১৫৫] - ‘বিরুদ্ধ রূপিনী চণ্ডিকে। বৈরিণং ত্বং খাদয়স্ব স্বাহা!” এই মন্ত্রের নাম খড়গ মন্ত্র। এই সেই আমার বৈরি যে সর্বদা আমার উপর দ্বেষ করে; হে মহামারি এক্ষণে পশুরূপধারী উহাকে বিনাশ কর। [৬৭/১৫৬-১৫৭]
- ‘স্ফে স্ফে খাদয় খাদয়’ এই মন্ত্র পাঠ করিয়া সেই বলির মস্তকে পুষ্পদান করিবে। তদনন্তর তাহার রুধির দ্ব্যক্ষর মন্ত্র দ্বারা উৎসর্গ করিয়া দিবে। [৬৭/১৫৮]
- যব চূর্ণ ময় অথবা মৃন্ময় শত্রুর প্রতিক্রিতি করিয়া যথোক্ত মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক তাহার শিরচ্ছেদন করিয়া বলিপ্রদান করিবে।[৬৭/১৮৭-১৮৮]
- ……………… রাজা প্রথমে খরগকে আমন্ত্রিত করিয়া শত্রুকে বলি প্রদান করিবে অথবা মহিষ বা ছাগকে শত্রু নামে আমন্ত্রিত করিয়া বলি প্রদান করিবে। [৬৭/১৪৯-১৫২]
বিশদ জানতে কালিকা পুরাণের রুধিরঽধ্যায় বা বলি দান অধ্যায় পড়তে পাড়েন।
যাকিছুই হোক বলির কাজটা রয়েই যায়। শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও তার কিছু করেন নি। তিনি নিজেও দক্ষিণেশ্বরে দেবী ভবতারিণীর সম্মুখে বলি দিয়েছেন। এমনকি স্বামী বিবেকানন্দ যিনি বলেছিলেন —জীবে প্রেম করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর। তিনি নিজেও দুর্গা পূজায় বেলুরমঠে সাত্ত্বিক মতে বলি দিয়েছে। এটা শুনে চমকে যেতে পারেন যে, পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গণে অবস্থিত অন্যতম প্রধান শক্তিপীঠ দেবী বিমলার মন্দিরেও বলি হয়। কিন্তু কেন?
কারণটা এমন, প্রত্যেক পূজার যেমন বিধি আছে তেমনি তার পূজা বা মন্দিরের কিছু প্রয়োজন আছে। প্রতিটি পূণ্য ভূমির কিছু প্রয়োজন হয়। নাহয় তার শক্তি বা প্রভাব থাকে না। দেবীর মন্দিরে তেমনি প্রাণের আহুতি দেওয়া প্রয়োজন। তা সেই স্থানের শক্তি ক্ষেত্রকে সক্রিয় করে তোলে। যদিও এটা সমুদ্র এক কলস জল দিয়ে উপকার করা স্বরূপ তাও এটা শক্তি পূজার অঙ্গ। বলি না দিলে কিছু হবে তা কোনভাবেই বলছি না। আমি স্থানের ঊর্জার কথা বলছি।
রক্ত পিপাসু ভ্রান্তি —
দেবী রক্ত পিপাসু এটা অনেকেই বলে থাকেন। তা সম্পূর্ণ ভুল। আমি আগেই বলেছি দেবতা কিছু খায় না, কিছু পানও করে না। তারা কেবল দেখে তার প্রতি কে কতটা নিবেদিত প্রাণ। আর যেই রক্ত খাওয়ার কথা বলা হয়েছে তা কেবল চণ্ডীর রক্তবীজ বধ অধ্যায়ে। সেখানে দেবীর এই কাজ করতে হয় রক্তবীজের রক্ত হতে জন্ম নেওয়া বন্ধ করার জন্য। এখানে অসুর তথা রক্তবীজের রক্ত তিনি যেভাবে ভয়ংকরী রূপে খেয়েছিলেন তাতে ঋষিগণ এববগ দেবগণ মনে করে ছিলেন তিনি বোধহয় রক্ত পিপাসু। কিন্তু তা মোটেও না।
মুণ্ডমালা ভ্রান্তি —
দেবী মুণ্ডমালিনীর মুণ্ডমালা তার শৌর্য প্রকাশ করে। তাতে সাধারণ মানুষের ভয়ের কিছু নেই। তিনি কেবল কত খারাপ শক্তি নাশ করেছে তা দেখানোর জন্যই মুণ্ডমালা ধারণ করেন। মূলতঃ, বিপথগামীদের ভয় দেখানোর জন্য এবং তাদের পরিণতির জন্যই এটি।
নগ্নতা ভ্রান্তি —
সব ভ্রান্তির যেহেতু সমাধান করার চেষ্টা করেছি তাহলে এটা আর বাদ যাবে কেন? আগেই বলে দেই, এটা ভারতীয় উপমহাদেশ। এখানে অনেক ধরনের মানুষ থাকে এবং চিন্তাচেতনাও অনেক ভিন্ন। কিন্তু নীতির দিকে এটা এক। আমাদের এই দেশে মা শব্দটার অনেক মহত্ব আছে। এটা বললেই মনে একটা সম্মানের ভাব চলে আসে। এখানে বিদেশী চিন্তা চেতনা দিয়ে বিচার করা হয় না। মায়ের বস্ত্র বা তার কি আছে কি নেই এই সব ত্রুটি কেউ বিচার করে না এখানে। হাজার হাজার বছর ধরে মায়ের পূজা এই রূপেই হয়ে আসছে। তার রূপ বা অন্যকিছুর গুরুত্ব আমাদের কম, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা মাকে কতটা ভালোবাসি। তাই এই বেকার প্রশ্নটা বোকার মতো না আনাই ভালো। কালো বা লোলজিহ্বা বা নগ্ন নারীমূর্তি এগুলা কোন বিষয় না। সবার উপর তিনি জগদম্বা (জগতের মাতা), যার অঙ্গ ঢাকতে পারে এমন বস্ত্র নেই।
কিছু উদ্ভট ধর্ম প্রচারক যারা অন্যধর্মের বিশ্বাসী হয়ে হিন্দুদের বিশ্বাস নিয়ে কথা বলছেন, সেই ভ্রান্তি —
কোন এক বিশেষজ্ঞ অন্য ধর্ম বিশ্বাসের ধর্মবিদ বলেছেন, হিন্দু শাস্ত্রে নাকি বলা হয়েছে — তুমি সেই সকল প্রাণীকে খাও এবং বলি দাও যা খাওয়া বা বলি দেওয়ার জন্য বানানো হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি কথা। এমন কোন উক্তি হিন্দ শাস্ত্রের কোথাও নেই। বলি দেওয়ার কথা থাকলেও কোথাও বলা হয় নি যে কোন নির্দিষ্ট প্রাণীর জীবনের উদ্দেশ্য মৃত্যু বা অন্যের খাওয়ায় পরিণত হওয়া। সকল প্রাণীর জীবনের উদ্দেশ্য একমাত্র মোক্ষপ্রাপ্তি।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ