বলি প্রথা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

31 July, 2020

বলি প্রথা


অহিংসাই পরম ধর্ম। জীব হত্যা মহা পাপ। নিরীহ জীব হত্যা আরো মহাপাপ (মহাঃ আদিঃ অঃ ১১, শ্লোঃ ১৩) এবং "হিংসা অধর্মস্তথহিত" (মহাঃ শান্তিঃ ২৭২, শ্লোক ১৮) হিংসা অধর্ম এবং অহিতকর। "প্রাণিনামবধস্তাত সর্বজায়ান্" (মহাঃ কর্ণ পর্ব, অঃ ২৬৯, শ্লোক ২৩) অর্থাৎ প্রাণীদের বধ না করাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
জীবিতুং যঃ স্বযং চেচ্ছেত্ কথং সোন্যং প্রঘাতয়েত।
যদ যদাৎমসি চেচ্ছেত তত পরস্যাপি চিন্তয়েত।।
(মহাঃ শান্তি পর্ব, অঃ ২৫৯, শ্লোক ২২)
উপরিউক্ত মন্ত্রগুলি দ্বারা এটা স্পষ্ট যে, বেদের কোনো নির্দোষ পশুকে হত্যার উপদেশ করেনি। বরং উপদেশ করেছে, পশুস্ত্রাঁয়েথাঙ (যজুর্বেদ ৬।১১) অর্থাৎ পশুদের রক্ষা করো এবং তাদের বর্ধিত করো। কারন বেদ সর্বদাই কল্যাণময়।
এবার আপনারাই বিবেচনা করুন যে কোনো অবস্থাতেই বলি বা পশু হত্যা করা উচিত কি না।
বৈদিক মান্যতানুসারে ও মহারাজা মনুর বিচার অনুযায়ী যা বেদানুরুপ তাই ধর্ম্ম এবং যা ধারণকরার যোগ্য এবং সকলের হিতকর তাহাই ধর্ম্ম তদ অনুরূপ অধর্ম, তাতে বিচার যোগ্য বলিপ্রথা বা যোগ্যে পশু বলি দেওয়া উচৎ না অনুচিত।
আপনাদের কাছে কি ঈশ্বরকে অবিবেচক মনে হয়?
ঋগ্বেদের প্রাচীন হারামী ভাষ্যকার হিসেবে সায়না চার্যের নাম বিখ্যাত। তাঁর আগেও বিভিন্ন ভাষ্যকার, যেমন হারামী স্কন্দস্বামী,
বাল নারায়ণ, প্রমুখ ঋগ্বেদের ভাষ্য করেছেন।
ভাষ্যকর আচার্য সায়ন লিখেছেন তার অনুবাদে, "You (O Indra), eat the cattle offered as oblations belonging to the worshippers who cook them for you. (Atharvaveda 9/4/1)"
"হে ইন্দ্র গ্রহন কর সেসব গরুর মাংস যা তোমাকে তোমার ভক্তরা রন্ধন করে উৎসর্গ করেছে।"
ঋগ্বেদ ১০/৮৬/১৩ তে গরু রান্না করার কথা পাওয়া যায়।
ঋগ্বেদ ১০/৮৬/১৪ তে ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে।
Rig Veda 10.86.১৪ [Indra speaks The worshippers dress for me fifteen (and) twenty bulls : I eat them and (become) fat, they fill both sides of my belly ;Indra is above all (the world).

দুটো মন্ত্রের ব্রহ্মমুনি ভায্যে কি লেখা আছে দেখুনঃ

वृषा॑कपायि॒ रेव॑ति॒ सुपु॑त्र॒ आदु॒ सुस्नु॑षे । घस॑त्त॒ इन्द्र॑ उ॒क्षण॑: प्रि॒यं का॑चित्क॒रं ह॒विर्विश्व॑स्मा॒दिन्द्र॒ उत्त॑रः ॥ पद पाठ वृषा॑कपायि । रेव॑ति । सुऽपु॑त्रे । आत् । ऊँ॒ इति॑ । सुऽस्नु॑षे । घस॑त् । ते॒ । इन्द्रः॑ । उ॒क्षणः॑ । प्रि॒यम् । का॒चि॒त्ऽक॒रम् । ह॒विः । विश्व॑स्मात् । इन्द्रः॑ । उत्ऽत॑रः ॥ पदार्थान्वयभाषाः -(वृषाकपायि रेवति) हे वृषाकपि-सूर्य की पत्नी रेवती तारा नक्षत्र ! (सुपुत्रे-आत् सुस्नुषे) अच्छे पुत्रोंवाली तथा अच्छी सुपुत्रवधू (ते-उक्षणः) तेरे वीर्यसेचक सूर्य आदियों को (प्रियं काचित्करं हविः) प्रिय सुखकर हवि-ग्रहण करने योग्य भेंट को (इन्द्रः-घसत्) उत्तरध्रुव ग्रहण कर लेता है-मैं उत्तर ध्रुव खगोलरूप पार्श्व में धारण कर लेता हूँ, तू चिन्ता मत कर (मे हि पञ्चदश साकं विंशतिम्) मेरे लिये ही पन्द्रह और साथ बीस अर्थात् पैंतीस (उक्ष्णः पचन्ति) ग्रहों को प्रकृतिक नियम सम्पन्न करते हैं (उत-अहम्-अद्मि) हाँ, मैं उन्हें खगोल में ग्रहण करता हूँ (पीवः) इसलिये मैं प्रवृद्ध हो गया हूँ (मे-उभा कुक्षी-इत् पृणन्ति) मेरे दोनों पार्श्व अर्थात् उत्तर गोलार्ध दक्षिण गोलार्धों को उन ग्रह-उपग्रहों से प्राकृतिक नियम भर देते हैं ॥[13-14]
भावार्थभाषाः -आकाश में जिन ग्रहों-उपग्रहों की गति नष्ट होती देखी जाती है, वे पैंतीस हैं। आरम्भ सृष्टि में सारे ग्रह-उपग्रह रेवती तारा के अन्तिम भाग पर अवलम्बित थे, वे ईश्वरीय नियम से गति करने लगे, रेवती तारे से पृथक् होते चले गये। विश्व के उत्तर गोलार्ध और दक्षिण गोलार्ध में फैल गये, यह स्थिति सृष्टि के उत्पत्तिकाल की वेद में वर्णित है ॥
[aakaash mein jin grahon-upagrahon kee gati nasht hotee dekhee jaatee hai, ve paintees hain. aarambh srshti mein saare grah-upagrah revatee taara ke antim bhaag par avalambit the, ve eeshvareey niyam se gati karane lage, revatee taare se prthak hote chale gaye. vishv ke uttar golaardh aur dakshin golaardh mein phail gaye, yah sthiti srshti ke utpattikaal kee ved mein varnit hai]
उ॒क्ष्णो हि मे॒ पञ्च॑दश सा॒कं पच॑न्ति विंश॒तिम् । उ॒ताहम॑द्मि॒ पीव॒ इदु॒भा कु॒क्षी पृ॑णन्ति मे॒ विश्व॑स्मा॒दिन्द्र॒ उत्त॑रः ॥ पद पाठ उ॒क्ष्णः । हि । मे॒ । पञ्च॑ऽदश । सा॒कम् । पच॑न्ति । विं॒श॒तिम् । उ॒त । अ॒हम् । अ॒द्मि॒ । पीवः॑ । इत् । उ॒भा । कु॒क्षी इति॑ । पृ॒ण॒न्ति॒ । मे॒ । विश्व॑स्मात् । इन्द्रः॑ । पदार्थान्वयभाषाः -(वृषाकपायि रेवति) हे वृषाकपि-सूर्य की पत्नी रेवती तारा नक्षत्र ! (सुपुत्रे-आत् सुस्नुषे) अच्छे पुत्रोंवाली तथा अच्छी सुपुत्रवधू (ते-उक्षणः) तेरे वीर्यसेचक सूर्य आदियों को (प्रियं काचित्करं हविः) प्रिय सुखकर हवि-ग्रहण करने योग्य भेंट को (इन्द्रः-घसत्) उत्तरध्रुव ग्रहण कर लेता है-मैं उत्तर ध्रुव खगोलरूप पार्श्व में धारण कर लेता हूँ, तू चिन्ता मत कर (मे हि पञ्चदश साकं विंशतिम्) मेरे लिये ही पन्द्रह और साथ बीस अर्थात् पैंतीस (उक्ष्णः पचन्ति) ग्रहों को प्रकृतिक नियम सम्पन्न करते हैं (उत-अहम्-अद्मि) हाँ, मैं उन्हें खगोल में ग्रहण करता हूँ (पीवः) इसलिये मैं प्रवृद्ध हो गया हूँ (मे-उभा कुक्षी-इत् पृणन्ति) मेरे दोनों पार्श्व अर्थात् उत्तर गोलार्ध दक्षिण गोलार्धों को उन ग्रह-उपग्रहों से प्राकृतिक नियम भर देते हैं ॥13-14॥
भावार्थभाषाः -आकाश में जिन ग्रहों-उपग्रहों की गति नष्ट होती देखी जाती है, वे पैंतीस हैं। आरम्भ सृष्टि में सारे ग्रह-उपग्रह रेवती तारा के अन्तिम भाग पर अवलम्बित थे, वे ईश्वरीय नियम से गति करने लगे, रेवती तारे से पृथक् होते चले गये। विश्व के उत्तर गोलार्ध और दक्षिण गोलार्ध में फैल गये, यह स्थिति सृष्टि के उत्पत्तिकाल की वेद में वर्णित है ॥[ब्रह्ममुनि]

উপনিসদে ও গরু খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভালো সন্তান পাবার জন্য ষাঁড়ের মাংস খাওয়া উচিত।
Brihadaranyak Upanishad 6/4/18 suggests a ‘super-scientific’ way of giving birth to a super intelligent child.

আক্ষেপকারিগন বলেন এ ব্যাপারে আরো স্পষ্ট বিধান দিয়েছে মনুসংহিতা। মনুসংহিতা ৫/৪৪ বলা হয়েছে, "শ্রুতিবিহিত যে পশুহত্যা, তাহাকে অহিংসাই বলিতে হইবে, যেহেতু বেদ ইহা বলিতেছে।" [কিন্তু মুনুস্মৃতি এটা প্রক্ষিপ্ত শ্লোক]
বেদে যেসব স্থানে শাস্তির বিধান রয়েছে, সেখানে হিংসার ভয়ে দূরে সরে যাওয়া উচিত নয়, অন্যথায় বিরাট ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যায়কারীকে শাস্তি না দিলে সে নষ্ট হয়ে যাবে। হিংসার ভয়ে রাজা চোরকে শাস্তি না দিলে চুরি বাড়বে। তাই জীবের উপকারের জন্য বেদ যে সমস্ত স্থানে কাউকে কষ্ট দেওয়ার বিধান দিয়েছে সেগুলিকে হিংসার শ্রেণীতে রাখা উচিত নয়। এটি পরবর্তী শ্লোকে তা পরিস্কার বলা হয়েছে..
অগ্নির কাছে নিবেদনে বলদ, ষাঁড় এবং দুগ্ধহীনা গাভী বলিদানের উল্লেখ আছে। (ঋগবেদ সংহিতা, ১/১৬২/১১-১৩, ৬/১৭/১১,১০/৯১/১৪)।
মহাভারতেও গরু খাওয়ার কথা আছে, মহাভারত বন পর্ব, খন্ড ২০৭, অনুবাদে কিশোরী মোহন গাংগুলি।

বিষ্ণুপুরাণ বলছে,ব্রাহ্মণদের গো-মাংস খাইয়ে হবিষ্য করালে পিতৃগণ ১১ মাস পর্যন্ত তৃপ্ত থাকেন। আর এ স্থায়িত্ব কালই সবচেয়ে দীর্ঘ (বিষ্ণুপুরাণ ৩/১৬)। বৃষের মাংস [বেদ:১/১৬৪/৪৩],মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮( কোন বেদ )], অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হত। আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [বেদ:৪/১/৬]। আর এজন্যই হয়তোবা স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,
"You will be astonished ifI tell you that, according to the old ceremonials, he is not a good Hindu who does not eat beef. On certain occasions he must sacrifice a bull and eat it. [The complete works of Swami Vivekananda, Volume 3, Pg 536]"
১. Ghrtam duhaanaamaditim janaayaagne maa himsiheeh
Yajurveda 13.49
Do not kill cows and bulls who always deserve to be protected.
২. Aare gohaa nrhaa vadho vo astu
Rigveda 7.56.১৭
ঋগবেদে গোহত্যা কে মানুষ হত্যার সমকক্ষ বলা হয়েছে ও এর সাথে জড়িতদের শাস্তি দিতে বলা হয়েছে ।
৩. Sooyavasaad bhagavatee hi bhooyaa atho vayam bhagvantah syaama
Addhi trnamaghnye vishwadaaneem piba shuddhamudakamaacharantee
Rigveda 1.164.40 or Atharv 7.73.11 or Atharv 9.10.২০
The Aghnya cows – which are not to be killed under any circumstances– may keep themselves healthy by use of pure water and green grass, so that we may be endowed with virtues, knowledge and wealth.
বেদে আঘ্ন্যা . অহি , ও অদিতি হচ্ছে গরুর সমপদ।
আঘ্ন্যা মানে যাকে হত্যা করা উচিত নয় ।
অহি মানে যার গলা কাটা / জবাই করা উচিত নয় ।
অদিতি মানে যাকে টুকরো টুকরো করা উচিত নয় ।
(Source: Yaska the commentator on Nighantu )
৪. Aghnyeyam saa vardhataam mahate soubhagaaya
Rigveda 1.164.27
আঘ্ন্যা গরু আমাদের সুসাস্থ্য ও উন্নতি আনে ।
৫. Suprapaanam Bhavatvaghnyaayaah
Rigveda 5.83.৮
আঘ্ন্যা গরুর জন্য সুপেয় জলের উন্নত ব্যবস্থা থাকা উচিত ।
৬.
Yah paurusheyena kravishaa samankte yo ashwena pashunaa yaatudhaanah
Yo aghnyaayaa bharati ksheeramagne teshaam sheershaani harasaapi vrishcha
Rigveda 10.87.16
Those who feed on human, horse or animal flesh and those who destroy milk-giving Aghnya cows should be severely punished.
এখানে মানুষ,ঘোড়া ও গোমাংস আহারকারিদের শাস্তির কথা বলা আছে ।
৭. Vimucchyadhvamaghnyaa devayaanaa aganma
Yajurveda 12.73
The Aghnya cows and bulls bring you prosperity.
৮. Maa gaamanaagaamaditim vadhishta
Rigveda 8.101.15
Do not kill the cow. Cow is innocent and aditi – that ought not to be cut into pieces .
৯. Antakaaya goghaatam
Yajurveda 30.18
Destroy those who kill cows .
১০.
Yadi no gaam hansi yadyashwam yadi poorusham
Tam tvaa seesena vidhyaamo yatha no so aveeraha
Atharvaveda 1.16.4
If someone destroys our cows, horses or people, kill him with a bullet of lead.
১১. Vatsam jaatamivaaghnyaa
Atharvaveda 3.30.1
Love each other as the Aghnya – non-killable cow – loves its calf.
কিছু কি আর বলা লাগবে বেদ গো হত্যার পক্ষে নাকি বিপক্ষে ?
১২. Dhenu sadanam rayeenaam
Atharvaveda 11.1.34
Cow is fountainhead of all bounties .
ঋগ্বেদের ৬ মন্ডলের ২৮ সুক্ত গরুর প্রশংসা করেছে।
Aa gaavo agnamannuta bhadramakrantseedantu
Bhooyobhooyo rayimidasya vardhayannabhinne
Na taa nashanti na dabhaati taskaro naasaamamitro vyathiraa dadharshati
Na taa arvaa renukakaato ashnute na samskritramupa yanti taa abhi
Gaavo bhago gaava indro me achhaan
Yooyam gaavo medayathaa
Maa vah stena eeshata maaghanshasah
1. Everyone should ensure that cows are free from miseries and kept healthy.
2. God blesses those who take care of cows.
3. Even the enemies should not use any weapon on cows
4. No one should slaughter the cow
5. Cow brings prosperity and strength
6. If cows keep healthy and happy, men and women shall also keep disease free and prosperous
7. May the cow eat green grass and pure water. May they not be killed and bring prosperity to us.
তারপরও কিছু স্বঘোষিত Scholar হিন্দু বিরোধী Site থেকে copypaste করে যাচ্ছে। এদের উদ্দেশ্যে বলব “অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী “।
বেদে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ এটা কমুনিস্ট এবং মিশনারীরা মানতে পারে না। আমাদের বৈদিক সমাজ ব্যবস্থা তাদের সমাজ এর চেয়ে আদর্শিক ভাবে উন্নত। এদের সাথে যোগ হয়েছে একদল ধর্ম ব্যবসায়ী। তারা বেদ ও মনুসংহিতা থেকে গরুর মাংস খাওয়ার Reference খুঁজে বের করতে চায় একটি এদের সহজ Trick হচ্ছে ‘মানসা‘ কে meat / মাংস হিসেবে অনুবাদ করা । ‘মানসা‘ মানে ডাল জাতীয় খাবার ।
আজ বেদ হতে কিছু অপপ্রচার এর জবাব দিব।
১. অপপ্রচার:
Rigveda (10/85/13) declares, “On the occasion of a girl’s marriage oxen and cows are slaughtered.”
জবাব: প্রকৃতঅর্থে মন্ত্র টি বলে সূর্যের আলো শীতকালে ম্লান হয়ে যায় এবং বসন্ত কালে শক্তি ফিরে পায় । (the rays of sun get weakened and then get strong again in spring.)
The word used for sun-rays in ‘Go’ which also means cow and hence the mantra can also be translated by making ‘cow’ and not ‘sun-rays’ as the subject. The word used for ‘weakened’ is ‘Hanyate’ which can also mean killing. But if that be so, why would the mantra go further and state in next line (which is deliberately not translated) that in spring, they start regaining their original form.How can a cow killed in winter regain its health in spring? This amply proves how ignorant and biased communists malign Vedas.
সমপদ জিনিস তা এরা বুজে না।
২. অপপ্রচার: Rigveda (6/17/1) states that “Indra used to eat the meat of cow, calf, horse and buffalo.”
জবাব: মন্ত্র টি বলছে মেধাবী পন্ডিতরা বিশ্ব কে আলোকিত করেন যেমন কাঠ যোগ্গের এর আগুন এর আলো বাড়ায় ।
৩. অপপ্রচার: ব্লগ এ ম জ বাসার নামে এক পন্ডিত বলছে(লিঙ্ক),”বৃষের মাংশ [বেদ:১/১৬৪/৪৩], মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮], অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হতো।- আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [ বেদ:৪/১/৬]।- গো হত্যা স্থানে গাভীগণ হত্যা হতো [বেদ:১০/৮৯/১৪]। ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে। [ঋকবেদ:১০:৮৬:১৪]। এমনকি উপনিষদ বলছে: ‘বেদজ্ঞান লাভ করতে হলে, স্বাস্থ্যবাদ সন্তান লাভ করতে হলে ষাঁড়ের মাংস খাওয়া জরুরী।”
জবাব: সমপদের অর্থ আর প্রয়োগ না জানলে এ রকম ই হবে ।
যেমন:
�keshavaM patitaM dr^shtvA pandavAH harshsha nirbharAH
rudanti kauravAssarve hA keshava hA keshava.�
সোজা কথায় মন্ত্রের অর্থ হবে কেশব/কৃষ্ণ কে পরে যেতে দেখে পান্ডবরা উল্লসিত হলো আর কৌরবরা ও কৃষ্ণ, ও কৃষ্ণ বলে অর্থনাদ করে উঠলো।
এখন এটার কোনো মানে হয় না । কারণ কৃষ্ণ ছিলেন পান্ডবদের পক্ষে।
একই শব্দের নানা অর্থ থাকে।
দেখুন:
১. কেশব= জল
২. পান্ডব= সারস পাখি
৩. কৌরব= কাক
৪. শব= মৃত দেহ
এবার অর্থ দেখুন:
�keshavaM patitaM dr^shtvA pandavAH harshsha nirbharAH
rudanti kauravAssarve hA keshava hA keshava.�
মৃত দেহটিকে জলে পড়ে যেতে দেখে সারস পাখি খুশি হলো এবং কাক আর্তনাদ করে উঠলো- মৃত দেহটি
জলে পড়ে গেছে, মৃত দেহটি জলে পড়ে গেছে।
এখন আমাদের পন্ডিতরাকি বলবেন ‘ কৃষ্ণকে পান্ডবরা ঘৃনা করতেন?’

অপপ্রচার: ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে। [ঋকবেদ:১০:৮৬:১৪]
জবাব:
�ghastta indra ukshshaNaH priyam…..� _RigVeda 10.86.13
�ukshshaNo hi me panchadasha sAkaM pachanti vimshatiM…� _RigVeda 10.86.14
অর্থ :
rik 10.86.13, IndrANi tells Indra, �please receive your favorite soma quickly..�
In rik 10.86.14 Indra replies, �they are preparing soma for offering fifteen and twenty times..�
এখানে ukshshNa মানে সোম, বৃষ নয়।
অপপ্রচার:
মহিষের মাংস [বেদ: ঋঃ৫/২৯/৮] খাওয়ার কথা রয়েছে ।
জবাব:
�trI yachChatA mahishshANAmag
ho mastrI….� _ RigVeda 5.29.8
সঠিক অর্থ:
oh Indra, when
you have recieved three hundred offerings of soma, you will be powerful to kill vr^tra.
त्री यच्छ॒ता म॑हि॒षाणा॒मघो॒ मास्त्री सरां॑सि म॒घवा॑ सो॒म्यापाः॑। का॒रं न विश्वे॑ अह्वन्त दे॒वा भर॒मिन्द्रा॑य॒ यदहिं॑ ज॒घान॑ ॥ -पदार्थान्वयभाषाः -हे राजन् ! (यत्) जो आप (अघः) नहीं मारने योग्य होते हुए (महिषाणाम्) बड़े पदार्थों के (त्री) तीन (शता) सैकड़ों को (माः) रचिये और हे (सोम्या) चन्द्रमा के गुणों से सम्पन्न ! (मघवा) बहुत धनवान् होते हुए (त्री) तीन (सरांसि) मेघमण्डल, भूमि और अन्तरिक्ष में स्थित पदार्थों को सूर्य के सदृश प्रजाओं का (अपाः) पालन कीजिये और सूर्य्य (यत्) जैसे (अहिम्) मेघ का (जघान) नाश करता है और जैसे (विश्वे) सम्पूर्ण (देवाः) सम्पूर्ण (देवाः) विद्वान् जन (इन्द्राय) ऐश्वर्य्य के लिये (कारम्) कर्त्ता के (न) सदृश (भरम्) पालन को (अह्वन्त) कहते हैं, वैसे ऐश्वर्य्य के लिये प्रयत्न कीजिये ॥[ঋঃ৫/২৯/৮]
भावार्थभाषाः -इस मन्त्र में उपमालङ्कार है। जैसे पुरुषार्थी जन को सब स्वीकार करते हैं, वैसे ही सूर्य ईश्वरीय नियमों से नियत जलरस का ग्रहण करता है, जैसे जन बड़े पदार्थों की उत्तेजना से सैकड़ों काम सिद्ध करते हैं, वैसे ही राजा प्रजाजनों से बड़े राजकार्य्य को सिद्ध करे ॥[स्वामी दयानन्द सरस्वती]
অপপ্রচার: অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হতো।
জবাব:
�eshshachChAgaH puro ashvena vAjinA…� _RigVeda 1.162.3
সঠিক অর্থ:
�the morning fire is lit before, thew sun, the giver of food rises�
এখানে ছাগ মানে shr^ngarahita ajA / সিন্হীন ছাগল নয় বরং উষালোক।
ए॒ष च्छाग॑: पु॒रो अश्वे॑न वा॒जिना॑ पू॒ष्णो भा॒गो नी॑यते वि॒श्वदे॑व्यः। अ॒भि॒प्रियं॒ यत्पु॑रो॒ळाश॒मर्व॑ता॒ त्वष्टेदे॑नं सौश्रव॒साय॑ जिन्वति ॥-१.१६२.३
पदार्थान्वयभाषाः -हे विद्वान् ! जिस पुरुष ने (वाजिना) वेगवान् (अश्वेन) घोड़ा के साथ (एषः) यह प्रत्यक्ष (विश्वदेव्यः) समस्त दिव्य गुणों में उत्तम (पूष्णः) पुष्टि का (भागः) भाग (छागः) छाग (पुरः) पहिले (नीयते) पहुँचाया वा (यत्) जो (त्वष्टा) उत्तम रूप सिद्ध करनेवाला जन (सौश्रवसाय) सुन्दर अन्नों में प्रसिद्ध अन्न के लिये (अर्वता) विशेष ज्ञान के साथ (एनम्) इस (अभिप्रियम्) सब ओर से प्रिय (पुरोडाशम्) सुन्दर बनाये हुए अन्न को (इत्) ही (जिन्वति) प्राप्त होता है, वह सुखी होता है ॥
भावार्थभाषाः -जो मनुष्य घोड़ों की पुष्टि के लिये छेरी का दूध उनको पिलाते और अच्छे बनाये हुए अन्न को खाते हैं, वे निरन्तर सुखी होते हैं ॥
অপপ্রচার: বৃষের মাংশ [বেদ:১/১৬৪/৪৩] খাওয়া হতো।
জবাব:
�…ukshANaM pRshnimapachanta vIrAH…….�…_ RigVeda 1.164.43
সঠিক অর্থ: I saw from far away the smoke of fuel with spires that rose on high o’er that beneath it.
The Mighty Men have dressed the spotted bullock. These were the customs in the days aforetime,
অপপ্রচার: পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [ বেদ:৪/১/৬]।
জবাব:
Excellent is the glance, of brightest splendour, which the auspicious God bestows on mortals-
The God’s glance, longed-for even as the butter, pure, heated, of the cow, the milch-cow’s bounty.
কোথাও বলা নেই গরু কে জবাই কর ।
অপপ্রচার: – গো হত্যা স্থানে গাভীগণ হত্যা হতো [বেদ:১০/৮৯/১৪]।
জবাব:
এখানে Grifith সাহেবের Translation করলে হবে না । Grifith হিন্দুদের খ্রিস্টিয়ান ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে সেই Translation করেসিলেন এটা প্রমানিত । এখানে এই ধরনের কোনো কথা বলা হয় নি । এটি একটি প্রার্থনা সঙ্গীত ।
Indra- O glorious warrior!
Te- Your
Aghasya- destroyer of evil
Chetya- power
Kahrrisvit- when
Asat- will appear
Yat- with which you
Rakshah- monsters
Bhinadah- kill
Mitrkruvo- those who are cruel to our dear ones
Eshat- cast terror in them
Yat- so that
Shasne- in the battlefield
Na- just like
Aaryak- after death
Gaavah- animals
Prathivyah- on the field
Shayante- lay or sleep
O glorious soldier! Where is your valor with which you kill the devils and cast terror in the hearts of wrong-doer cruel criminals and due to which they will be lying dead just like animals lay on ground while sleeping.(Rig Veda 10.89.14)
রাজসুয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্তদধ্বরঃ। অকাশ্বমেধাবৃচ্ছিষ্টে জীব বর্হিমমন্দিতমঃ।। (অথর্ববেদ ১১।৭।৭) . রাজসূয়, বাজপেয়,অগ্নিষ্টোম, অশ্বমেধ আদি সব যজ্ঞ অধ্বরঃ অর্থাৎ হিংসা রহিত যজ্ঞ। যাহা প্রাণীমাত্রকে বৃদ্ধি এবং সুখ শান্তি দাতা। . এই মন্ত্রে রাজসূয় আদি সব যজ্ঞকে অধ্বরঃ বলে গিয়েছেন। যার একমাত্র সর্ব্বসম্মত অর্থ হিংসা রহিত যজ্ঞ। . তাহলে ইহা স্পষ্ট যে, বেদের মধ্যে কোন যজ্ঞে পশুবধের আজ্ঞা নেই। যা বেদবিহিতা হিংসা নিয়তাস্মিংশ্চরাচরে। অহিংসামেব তাং বিদ্যাদ্বেদাদ ধর্মো হি নির্ব্বভৌ।। যো হিংসকানি ভুতানি হিনস্ত্যান্তসুখেচ্ছয়া। স জীবংশ্চ মৃতশ্চৈব, নকশ্চিক সুখমেধতে।। (মনুস্মৃতি ৫।৪৪- ৪৫) . অর্থাৎ বেদে বিশ্ব সংসার মধ্যে দুষ্ট আততায়ী, ক্রুর পাপীকে দন্ড দান রূপ হিংসা বিহিত আছে তাহা অহিংসাই জানবে। কারন বেদ দ্বারাই যথার্থ ধর্মের প্রকাশ হয়। দুষ্টকে দন্ড প্রদান করা হিংসা নয় পরন্ত অহিংসারূপ পূণ্য তাহা মনুস্মৃতি ৮।৩৫১ এ স্পষ্ট আছে- . " নাততায়িবধে দোষো হন্তুর্ভবতি কশ্চন" অর্থাৎ আততায়ি ( যে ব্যক্তি বধ উদ্যত) তাহাকে বধ করিলে কোন দোষ নেই। . তাহলে উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে যজ্ঞে পশু বধ নিষিদ্ধ। যে বেদ পশু পালনের সুস্পষ্ট নির্দেশ দেয়। সে বেদ পশু হত্যার বিধান কি করে দিতে পারে?
আমি সকল কে বলব বেদ থেকে একটি মন্ত্র দেখান যেটাতে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া বৈধতা দেয়া হয়েছে তাহলে আমি আপনার কথা মত বিশ্বের যেকোনো ধর্ম গ্রহণ করব আর আপনি যদি না পারেন তবে আপনাকে হিন্দু ধর্মে ফিরে আসতে হবে ।
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের আচার-পদ্ধতির অন্যতম অঙ্গ বলিদান এবং নৈবেদ্য নিবেদন।নেপালে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর গাধীমাই উৎসব নামে গাধীমাই  দেবীর প্রতি লক্ষ লক্ষ পশু বলি দেওয়া হয়। প্রায় ৯০০ বছর আগে ভগবান চৌধুরী নামক বারিয়াপুরের এক বাসিন্দাকে স্বপ্নযোগে গাধীমাই দেবী ৫ টি নরবলির নির্দেশ দেন, তিনি এতে অপারগ হয়ে প্রতি ৫ বছর অন্তর একটি ইঁদুর, একটি শুকর, একটি মোরগ, একটি ছাগল এবং একটি মহিষ বলি দেওয়া শুরু করেন। সেই থেকে এই প্রথা চলে আসছে।আব্রাহামিক ধর্মে উৎসর্গ:ইহুদি, খৃষ্টান ও ইসলাম, আব্রাহামিক এই তিনটি ধর্মের ইতিহাস মূলত একই হলেও কুরবানির নিয়মে পার্থক্য রয়েছে। মহাপ্লাবনের পর নোয়া (নূহ নবী) নৌকা থেকে নেমে কুরবানি করেন। মোজেস (মুসা নবী) এর কুরবানিরও একাধিক বর্ণনা রয়েছে হিব্রু বাইবেলে। তাদের সবার কুরবানির নিয়ম ছিল কুরবানি করা পশু আগুনে পুড়িয়ে ফেলা। ইহুদিরা বর্তমানে সেই প্রথা পালন করে থাকে। মোজেস এর নিয়ম অনুসারে জেসাস (ঈসা নবী) এর কুরবানির কথা বাইবেলের নতুন নিয়মে দেখা যায়।ইসলাম ধর্ম মতে, আল্লাহ তার প্রিয় বান্দা নবী ইব্রাহিমের কাছে তার প্রিয় ছেলেকে কুরবানি করতে ইঙ্গিত করলেন।আল্লাহকে খুশি করতে আল্লাহর প্রিয় ধার্মিক বান্দা ইব্রাহিম নিজের ছেলেকে হত্যা করতে উদ্যত হন।আল্লাহ খুশি হয়ে পুত্রকে জীবন দান করে। তার পরিবর্তে একটি পশু (দুম্বা) কুরবানি করেন নবী ইব্রাহিম।তার অনুসারীরা বছরে একটি দিন (ঈদুল আজহা) পশু কুড়বানি করে থাকে। বিভিন্ন মহাদেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের নরবলির কিছু উপলক্ষ:
  • নতুন মন্দির বা সেতু উদ্বোধনের সময় নরবলি দেওয়া হতো।
  • রাজা, প্রধান পুরোহিত বা বড় নেতার মৃত্যু হলে নরবলি দেওয়া হতো। বিশ্বাস করা হতো উৎসর্গীকৃত ব্যক্তিটি মৃত পরবর্তী জীবনে মৃত নেতাকে সেবা করবে।
  • প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময়ে নরবলি দেওয়া হয়। খরা, অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প ইত্যাদিকে দেবতার রাগ বা বিরক্তির লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ঐশ্বরিক ক্রোধ প্রশমিত করার জন্য নরবলি দেওয়া হতো।
মেসোআমেরিকার অনেক প্রাক কলম্বিয় সভ্যতা নরবলির চর্চা করতো। আজটেকরা বড়সড় আকারে নরবলি প্রথা পালন করতো। প্রতিদিন সূর্য উদয়ের জন্য তারা একজন করে মানুষ বলি দিতো। জনশ্রুতি আছে তেনোচতিৎলান হাজার হাজার নরবলি দেওয়া এবং মেক্সিকোয় স্প্যানিশ আক্রমন ও যুদ্ধের সময়ে একাধিক বন্দীকে বলি দেওয়া হয়।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ার পুরানো স্ক্যান্ডিনেভিয় ধর্মে নরবলির বিধান ছিলো এবং নর্স সাগা এবং জার্মান ঐতিহাসিকগণ উভয়েই এর সংগে সম্পর্ক উল্লেখ করেছেন।
প্রাক হেলেনিয় মিনোয়ান সভ্যতায় নরবলির প্রমাণ আছে। ক্রিটের ক্নসসের সিটাডেলে উৎসর্গীকৃত নরদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে। ক্নসসের উত্তর বাড়িতে শিশুদের হাড় পাওয়া গেছে যাদেরকে জবাই করা হয়েছিলো। সম্ভবত প্রাক হেলেনিয় যুগে নরবলির পাশাপাশি নরমাংস ভোজন ঐতিহ্য ছিলো। থেসেউস এবং মিনোতাউর (ক্নসসের গোঁলকধাধা) পৌরাণিক কাহিনী নরবলির প্রমাণ দেয়। পুরাণ অনুসারে এথেন্স নরবলির জন্য মিনোতাউরের উদ্দেশ্যে সাতজন পুরুষ ও সাতজন স্ত্রীলোককে ক্রিটে প্রেরণ করে। পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায় নরবলির অধিকাংশ ছিলো তরুন প্রাপ্তবয়স্ক অথবা শিশু।
কার্থেজের ফিনিশীয়গণ শিশুবলির প্রথা পালন করতো। রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় কারণে প্রাচীন কর্তৃপক্ষ শিশুবলির আয়োজন করতো। প্রত্নতত্ত্বীয় অনুসন্ধানে উৎসর্গীকৃত পশুর হাড়ের সংগে বিপুল সংখ্যক শিশুর হাড় পাওয়া গেছে। প্লুতার্ক (৪৬-১২০খ্রিষ্টাব্দ) বলি প্রথার প্রচলন করেন, যেমনটি হতো তার্তুলিয়ান, ওরোসিয়াস, ডিয়োডোরাস সিকুলাস এবং ফিলোর ক্ষেত্রে। তারা বর্ণনা করেন শিশুকে আগুনে ঝলসে মেরে ফেলতো।
আজকের দিনেও অনেক ঐতিহ্যবাহী ধর্মে গোপনীয়ভাবে নরবলি প্রথা পালন করা হয়।[৭] পৃথিবীর কোন দেশ নরবলি সমর্থন করে না। বর্তমান পৃথিবীতে এটা অপরাধ বলে গণ্য হয়।
ভার্জিল তার আয়েনিড এ সিনন চরিত্র দাবি (মিথ্যাভাবে) করে যে তিনি সাগরকে শান্ত করতে পসেইডনকে উৎসর্গ করতে যাচ্ছেন।ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টান ধর্মে ইশ্বর যীশুর দেহধারী, স্রষ্টা এবং মানপবের পুনর্মিলনের জন্য পুত্রকে উৎসর্গ করেন, যা নিজেকে পাপের মাধ্যমে নিজেকে ইশ্বর থেকে আলাদা করে। ২য় সহস্রাব্দের সূচনালগ্ন থেকে পশ্চিমা ধর্মতত্ত্বে একটা মত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে মানবতার পাপ প্রায়শ্চিত্ত করতে ইশ্বরের ন্যায়বিচার প্রয়োজন, যাতে মানুষ স্বর্গে তাদের স্থান পুনরুদ্ধার করতে এবং অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারে। পশু জবাইকে আরবিতে বলা হয় দাবিহা (ذَبِيْحَة) বা কুরবান (قُرْبَان)। শব্দটির মূল সম্ভবত ইহুদি শব্দ কোরবান। কিছু জায়গা যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতে কুরবানী বলা হয়ে থাকে। ইসলামী প্রেক্ষাপটে পশু বলিদানকে দাবিহা বলা হয় যার অর্থ ধর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমে পশু জবাই। শুধু মাত্র ঈদ-উল-উল-আযহায় পশু উৎসর্গ করা হয়। উৎসর্গীকৃত পশুটি একটি ভেড়া, একটি ছাগল, একটি উট অথবা একটি গাভী হতে পারে। তবে পশুটিকে অবশ্যই সুস্থ এবং জীবিত হতে হবে। ... অতএব আল্লাহ নামাজ এবং কুরবানীর আদেশ দিলেন। (সূরা আল-কাউসার) কুরআন ১৯৮.২ ইসলামী প্রেক্ষাপটে কুরবানী হচ্ছে সমৃদ্ধশালীদের দরিদ্রদের সংগে সৌভাগ্য শেয়ারের বিধান দেওয়া হয়েছে।
ঈদ উল আজহা (উৎসর্গের উৎসব) উপলক্ষে বিশ্বের সব সামর্থ্যবান মুসলমান নবী ইব্রাহিম (আব্রাহাম) এর সুন্নাহ পালন করতে একটি গরু বা ভেড়া জবাই করে। জবাইকৃত পশুর মাংস তিনটি সমান অংশে ভাগ করা হয়। প্রথম অংশ কুরবানী দাতার নিজের, দ্বিতীয় অংশ তার আত্মীয় পরিজনকে এবং তৃতীয় অংশ গরীব দু:খীর মাঝে বণ্টন করে দেওয়া হয়।
আল কোরআনে বর্ণিত আছে, কুরবানির সংগে পশুর রক্ত মাংসের কোন সম্পর্ক নেই। (কুরআন ২২:৩৭: "এটা তাদের মাংস নয় কিংবা তাদের রক্ত নয় যা আল্লাহর কাছে পৌঁছায়। তার কাছে শুধু তোমাদের ভক্তিই পৌঁছায়...)। এর মাধ্যমে দরিদ্রকে সাহায্য করা হয় এবং ইব্রাহিম তার পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর আদেশে কুরবানি দিয়েছিলেন তা স্মরণ করা হয়।
বাংলা, উর্দু এবং ফার্সি শব্দ "কোরবানী" এসেছে আরবি শব্দ 'কুরবান' থেকে। বলা হয়ে থাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর নৈকট্য এবং সহানুভূতি লাভের জন্য এই ধর্মানুষ্ঠান পালন করা হয়। উৎসগতভাবে কুরবান শব্দের অর্থ হচ্ছে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য দাতব্য সেবা, অন্য কিছুর জন্য নয়। কিন্তু পরবর্তীতে ইদ উল আজহার দিন আল্লাহর জন্য পশু জবাইকে শুধুমাত্র কুরবানী বলা চালু হয়ে যায়।
মুসলমানগণ এরকম আরো একটি প্রতিকী অনুষ্ঠান পালন করে তা হচ্ছে হজ্বের সময়ে শয়তানের উদ্দেশ্যে ইব্রাহীম এবং ইসমাইলের মত শয়তানকে উদ্দেশ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা।
প্রাচীন ইজরায়েলে বলিদান অনুষ্ঠানের রেওয়াজ ছিলো। লেভিক্টাস বইয়ের শুরুর অধ্যায়ে উৎসর্গ করার সঠিক পদ্ধতির উল্লেখ আছে। যদিও রক্তহীন উৎসর্গ (শস্য এবং মদ) উল্লেখ আছে তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী উৎসর্গ করা। রক্তের বলি কয়েকভাগে বিভক্ত। হোমবলি (হিব্রু: עלה קרבנות) তে সমগ্র প্রাণীটিকে পুড়িয়ে ফেলা হয়, অপরাধবোধ অর্ঘ এ কিছু অংশ পোড়ানো হয় এবং কিছু অংশ যাজকের জন্য রেখে দেওয়া হয়, শান্তি অর্ঘ্য তে অক্ষত প্রাণীর কিছু অংশ পোড়ানো হয় এবং বাকিটা বিশুদ্ধ অবস্থায় খাওয়া হয়।
দ্বিতীয় মন্দির ধংসের পরে, সামারিতীয় ব্যতীত অন্যদের ধর্মীয় উৎসর্গ নিষিদ্ধ করা হয়। একজন মধ্যযুগীয় ইহুদি যুক্তিবাদী মেইমোনাইডস যুক্তি দেখান যে, স্রষ্টার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ প্রার্থনা এবং দার্শনিক ধ্যানের তুলনায় নিকৃষ্ট। যাইহোক স্রষ্টা বোঝেন যে ইজরাইলিরা পশুবলি করে কারণ পার্শ্ববর্তী প্যাগান গোত্রগুলি প্রাথমিকভাবে স্রষ্টার সাথে যোগাযোগের জন্য পশুবলি করে থাকে। মেইমোনাইডের মতে ইজরায়েলিরা যে বিশ্বাস করে স্রষ্টা ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্কের প্রয়োজনীয় অংশ উৎসর্গ তা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। মেইমোনাইডস উপসংহারে আসেন যে ইশ্বর উৎসর্গ গ্রহণ করেন এই বিশ্বাস একটি মানুষের মানসিক সীমাবদ্ধতা। এটা আশা করা যায় যে ইজরাইলিরা লাফ দিয়ে প্যাগান পূজা থেকে এক ধাপে প্রার্থনা ও ধ্যানে চলে আসবে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় দের জন্য নির্দেশনায় তিনি লিখেছেন:
"সেই সময়কার পুরুষদের মধ্যে সাধারণ প্রথা ছিলো এবং উপাসনার সাধারণ রীতি ছিলো যে ইজরায়েলিরা উৎসর্গের জন্য পশু নিয়ে আসবে... যা প্রজ্ঞা অনুযায়ী এবং ইশ্বরের পরিকল্পনা... এই যে স্রষ্টা আমাদের ছেড়ে দিতে আদেশ দেননি এবং এসব সেবার রীতি পরিত্যাগ করতে। এরকম আদেশ মান্য করা নর প্রকৃতির বিপরীত, যারা সাধারণত নিজেদের ব্যবহারিকের সংগে ঝুলে থাকে; এটা সেই সময়ে সেই ছাঁপ রাখতো যা বর্তমানে একজন নবী রাখে (১২ শতক), তিনি যদি আমাদেরকে ইশ্বরের নামে ইশ্বরের পথে আহবান করেন যে আমাদের ইশ্বরের প্রার্থণা করা উচিত নয়, খুব দ্রুত নয়, বিপদে তার সাহায্য প্রার্থনা না করা, আমাদেরকে তাকে কর্মে।নয় ভাবনার দ্বারা তাকে সেবা করতে হবে।" (বুক থ্রি, চ্যাপ্টার ৩২। অনুবাদ করেছেন এম. ফ্রাইডল্যান্ডার, ১৯০৪, দ্যা গাইড ফর দ্যা পারপ্লেক্সেড, ডোভার পাবলিকেশন্স, ১৯৫৬ সংস্করণ)।
তবে অনেকেই যেমন ন্যাখাম্যানাইডস (লেভিকটাস ১:৯ এ তাওরাতের পাদটীকায়) ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা বলেন উৎসর্গ ইহুদী ধর্মে আদর্শ এবং মূলের সংগে জড়িত।
তওরাত এবং তনখের শিক্ষা নরবলির সাথে ইজরায়েলিদের পরিচিতি প্রকাশ করে, উদাহরণ হিসেবে আইজ্যাককে তার পিতা আব্রাহাম প্রায় বলি দিয়েছিলেন (আদিপুস্তক ২২:১-২৪) এবং অনেকে বিশ্বাস করে জেফাথার কন্য (জাজেস ১১:৩১-৪০) সারাজীবনের জন্য নারীমঠে সারাজীবনের সেবা করেন এবং চিরকুমারী, পুরুষের সংসর্গবিহীন জীবন কাটান (v৩৭)। রাজা মোয়াব তার প্রথম পুত্র এবং উত্তরাধিকারীকে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে পৌত্তলিক দেবতা চেমশকে উৎসর্গ করেন। বুক অফ মিকায় আছে, একজন জিজ্ঞেস করছে, আমার পাপের জন্য কি আমার প্রথম জাত সন্তান দান করবো, আমার আত্মার পাপের জন্য আমার শরীরের ফল? (Micah 6:7) এবং জবাবে বলা হয়, এটা তো তোমাকে বলা হয়েছে হে মানুষ, কি ভালো এবং প্রভু তোমায় কোন পথ দেখাবেন তার জন্য প্রয়োজন: শুধুমাত্র ন্যায়ত কাজ করো এবং করুণা ভালোবাসো এবং বিনীতভাবে ইশ্বরের সাথে হাঁটো।': (Micah 6:8) জেরেমিয় শিশুবলির ন্যক্কারজনক চর্চাকে উৎসাহ দিয়েছে। দেখুন জেরেমিয় ৭:৩০-৩২।
তথ্যসূত্র:ক. বিজ্ঞানের দর্শন – প্রথম খণ্ড – শহিদুল ইসলামখ. বাইবেল, কোরান ও হাদিস গ্রন্থসমূহগ. উইকিপিডিয়াঘ. ইন্টারনেট 

কালিকা পুরাণে নরবলি, গরুবলি ও পশুবলি

বর্তমান যুগে নরবলির নাম শুনলেই বেশিরভাগ লোকেরা আঁতকে ওঠেন। নরবলির প্রথাটি পৃথিবীর অনেক আদিম সভ্যতাতেই প্রচলিত ছিল। হিন্দু ধর্মের নানা গ্রন্থে নরবলির বিধান রয়েছে, তবে আজকের আলোচনা কালিকা পুরাণে বর্ণিত নরবলি নিয়ে।
কালিকা পুরাণের ৫৫ ও ৬৭ এই দুই অধ্যায়ে পশুবলি ও নরবলির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এখানে দেবী
‘কালরাত্রিস্বরূপ, উগ্র মূর্তি,রক্তাস্য, রক্তনয়ন, রক্তমাল্যানুলেপনা, রক্তবস্ত্রধর,পাশহস্ত, সকুটুম্ব,রুধিরপায়ী, মাংসভোজী, কৃষ্ণ বর্ণ’। [৫৫/১৪-১৫]

পশুবলি

কালিকা পুরাণের ৫৫ তম অধ্যায়ের শুরুতে শিব বলছেন-
  • “ ভগবান বলিলেন, তাহার পর দেবীর প্রমোদজনক বলি প্রদান করিবে, কেননা শাস্ত্রে উক্ত হইয়াছে মোদক দ্বারা গণপতিকে, ঘৃত দ্বারা হরিকে, নিয়মিত গীত বাদ্য দ্বারা শঙ্করকে, এবং বলিদান দ্বারা চণ্ডিকাকে নিয়মিত সন্তুষ্ট করিবে।“ [৫৫/১-২]
    দেবী চণ্ডিকা যেহেতু বলি দ্বারাই সন্তুষ্ট হন, তাই এরপরেই বিভিন্ন রকমের বলির পশুর তালিকা দেওয়া হয়েছে-
    “১/ পক্ষী, ২/কচ্ছপ,৩/ কুম্ভীর, ৪/ নবপ্রকার মৃগ যথা- বরাহ, ছাগল, মহিষ, গোধা, শশক, বায়স, চমর, কৃষ্ণসার, শশ, ৫/ এবং সিংহ, মৎস্য, ৬/ স্বগাত্র রুধির, ৭/ এবং ইহাদিগের অভাবে হয় এবং ৮/ হস্তি এই আটপ্রকার বলি শাস্ত্রে নির্দিষ্ট হইয়াছে।“[৫৫/৩-৪]
    এছাড়াও কালিকা পুরাণের নানা স্থলে উপরোক্ত পশু ভিন্ন বিভিন্ন পশুর বলিপ্রদান করার কথাও রয়েছে। পশুবলি বিষয়ক শ্লোকগুলির পরপর উল্লেখ করা হল-
  • সাধক বলিকে বলেন, “তুমি শ্রেষ্ঠ জীব, আমার ভাগ্যে বলিরূপে উপস্থিত হইয়াছ, অতএব সর্ব স্বরূপ বলিরূপী তোমাকে আমি ভক্তিপূর্বক প্রণাম করি। [৫৫/৮]
  • বলিপ্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “ শর্করা, লবলী, নারংগক, ছাগল, মহিষ, মেষ, নিজের শোণিত, পক্ষী আদি পশু, নয় প্রকার মৃগ- এইসকল উপকরণ দ্বারা নিখিল জগতের ধাত্রী মহামায়ার পূজা করিবে, যাহাতে মাংস ও শোণিতের কর্দম হয়।“ [৫৫/৪৭-৫০]
    কালিকা পুরাণে শিব তার পুত্রদের বলির বিধানে বলছেন-
  • “ভগবান বলিলেন- হে পুত্রদ্বয়! বলিদানের ক্রম এবং স্বরূপ অর্থাৎ যে প্রকার রুধিরাদি দ্বারা দেবীর সম্পূর্ণ প্রীতি হয়,তোমাদিগের নিকট কীর্তন করিতেছি।“ [৬৭/১]
  • “মৎস্য ও কচ্ছপের রুধির দ্বারা শিবা দেবী নিয়ত এক মাস তৃপ্তি লাভ করেন এবং গ্রাহ্যদিগের রুধিরাদি দ্বারা তিন মাস তৃপ্তি লাভ করেন।“ [৬৭/৭]
  • “দেবী মৃগ ও মনুষ্য শোণিত দ্বারা আটমাস তৃপ্তি লাভ করেন এবং সর্বদা কল্যাণ প্রদান করেন।“ [৬৭/৮]
  • “গো এবং গোধিকার রুধিরে দেবীর সাংবাৎসরিক তৃপ্তি হয়।“ [৬৭/৯]
  • “কৃষ্ণসার এবং শূকরের রুধিরে দেবী দ্বাদশ বার্ষিকী তৃপ্তি লাভ করেন। “[৬৭/১০]
  • “অজ ও আবিক রুধিরে দেবীর পঞ্চবিংশতি বার্ষিকী এবং মহিষ শার্দূল এবং খড়গ রুধিরে দেবীর শতবার্ষিকী তৃপ্তি লাভ হয়।“ [৬৭/১১]
  • “সিংহ, শরভ এবং স্বীয় গাত্রের রুধিরে দেবী সহস্র বৎসর ব্যাপীয়া তৃপ্তি লাভ করেন।“ [৬৭/১২]
  • “যাহার রুধিরে যাবতকাল তৃপ্তির কথা হইয়াছে, মাংস দ্বারাও ততকাল তৃপ্তি লাভ হয়।“ [৬৭/১৩]
  • “কৃষ্ণসার মৃগ, গণ্ডার, রোহিত মৎস্য, যুগল বারধ্রীণস এই সকল বলি দানের পৃথক পৃথক ফল শ্রবণ কর।“ [৬৭/১৪]
  • “কৃষ্ণসার ও গণ্ডারের মাংসে চণ্ডিকা দেবী পঞ্চশত বর্ষ নিয়ত তৃপ্তি লাভ করেন।“ [৬৭/১৫]
  • “আমার পত্নী দুর্গা, রোহিত মৎস্যের মাংসে এবং বারধ্রিণসের মাংসে তিন শত বৎসর তৃপ্তি লাভ করেন।“ [৬৭/১৬]
  • “কৃষ্ণসারের বলিদান সময়ে বক্ষ্যমান মন্ত্রের পাঠ করিবে। হে কৃষ্ণ সার ! তুমি ব্রহ্ম মূর্তি এবং ব্রহ্মতেজের পরিবর্ধনকারী।“[৬৭/৬৩]
  • “যে পূজায় গণ্ডার বলি প্রদত্ত হইবে, সেই স্থলে জল দ্বারা অভ্যুক্ষণ করিয়া গুহা হইয়াছে এইরূপ চিন্তা করত একটি মণ্ডল করিবে।“[৬৭/৬১]

গো-মহিষ বলি

কালিকা পুরাণে একটি বিষয় লক্ষ করা যায়, বিভিন্ন প্রকার বলির বিবরণে গোরু-মহিষও পড়ছে-
  • “ পক্ষী সকল, কচ্ছপ, গ্রাহ, মৎস্য, নয় প্রকার মৃগ, মহিষ, অজ, আবিক, গো, ছাগ, রুরু, শূকর,খড়গ, কৃষ্ণ সার, গোধিকা, শরভ, সিংহ, শার্দূল, মনুষ্য এবং স্বীয় গাত্রের রুধির , ইহারা চণ্ডিকা দেবী ও ভৈরবাদির বলিরূপে কীর্তিত হইয়াছে। [৬৭/৩-৫]
  • “যখন ভৈরবী দেবী অথবা ভৈরবীকে মহিষ বলি প্রদান করিবে তখন সেই বক্ষ্যমাণ মন্ত্র দ্বারা পূজা করিবে।“ [৬৭/৫৮]
  • “গো এবং গোধিকার রুধিরে দেবীর সাংবাৎসরিক তৃপ্তি হয়।“[৬৭/৯]
  • “অর্চনা দ্বারা অপরাপর মহিষ প্রভৃতির বলির শরীর বিশুদ্ধিলাভ করে, এই নিমিত্ত দেবী তাহা হইতে রক্ত গ্রহণ করেন।“ [৬৭/৯৬]
  • “সাধক মহিষ এবং মনুষ্যের রক্তের কিঞ্চিত অংশ মধ্যমা এবং অনামিকা দ্বারা উদ্ধৃত করিয়া মহাকৌশিক মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক পূর্ব হইতে নৈঋত কোণে পুতনাদি দেবতার উদ্দেশ্যে মৃত্তিকার উপর বলি প্রদান করিবে।“ [৬৭/১৪৬-১৪৭]
  • বলিপ্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “ শর্করা, লবলী, নারংগক, ছাগল, মহিষ, মেষ, নিজের শোণিত, পক্ষী আদি পশু, নয় প্রকার মৃগ- এইসকল উপকরণ দ্বারা নিখিল জগতের ধাত্রী মহামায়ার পূজা করিবে, যাহাতে মাংস ও শোণিতের কর্দম হয়।“ [৫৫/৪৭-৫০]
  • হে পুত্রদ্বয়! চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বিশেষ চতুর্দশী তিথিতে ছাগ মহিষ প্রভৃতি বলি মধু ও মৎস্য দ্বারা ভৈরবীরূপী আমাকে তুষ্ট করিবে; আমি ইহাতেই সন্তুষ্ট হইব। (৬৭/২০৩)

নরবলি

পশুবলির পাশাপাশি কালিকা পুরাণে নরবলিও দেখা যায়। নিচে নরবলি সংক্রান্ত শ্লোকগুলি উদ্ধৃত করা হল-
  • “ছাগল, শরভ এবং মনুষ্য ইহারা যথাক্রমে বলি, মহাবলি এবং অতিবলি নামে প্রসিদ্ধ।“ [৬৭/৫]
  • যথাবিধি প্রদত্ত একটি নরবলিতে দেবী সহস্র বৎসর তৃপ্তি লাভ করেন, আর তিনটি নরবলিতে লক্ষ বছর তৃপ্তি লাভ করেন। [৬৭/১৯]
  • মনুষ্য মাংস দ্বারা কামাখ্যা দেবী এবং আমার রূপধারী ভৈরব তিন হাজার বৎসর তৃপ্তি লাভ করেন। [৬৭/২০]
  • যেহেতু বলির মস্তক এবং মাংস দেবতার অত্যন্ত অভিষ্ট, এই হেতু পূজার সময় বলির শির এবং শোণিত দেবীকে দান করিবে। [৬৭/২১-২২]
  • বিচক্ষণ সাধক ভোজদ্রব্যের সহিত লোমশূণ্য মাংস দান করিবে এবং কখন কখন পূজাপকরণের সহিতও মাংস দান করিবে। [৬৭/২৩]
  • রক্তশূণ্য মস্তক অমৃত তুল্য পরিগণিত হয়।[৬৭/২৪]
  • নরপতি মনুষ্যের রক্ত মৃন্ময় অথবা তৈজস পাত্রে রাখিয়া সর্বদা উৎসর্গ করিয়া দিবে, পত্র নির্মিত দ্রোণাদিতে কখনোই দিবে না।[৬৭/৪৭]
  • এইরূপে পূজা করিয়া পূর্ব তন্ত্র দ্বারা বিধিপূরবক পূজা করিবে। নরবলি পূজিত হইয়া আমার স্বরূপ দিকপালগণ কর্তৃক অধিষ্ঠিত হয়। [৬৭/৯১]
  • এবং ব্রহ্মা প্রভৃতি অন্যান্য সকল দেবগণ কর্তৃক অধিষ্ঠিত হইয়া সেই বলিরূপ নর, পূর্বে পাপাচারী হইলেও নিষ্পাপ হইয়া যায়।[৬৭/৯২]
  • সেই পাপশুণ্য বলিরূপ নরের শোণিত অমৃত তুল্য হয়, উহাদ্বারা জগন্ময়ী জগন্মায়া মহাদেবী প্রীতিলাভ করেন। [৬৭/৯৩]
  • সেই বলিরূপী নর মনুষ্যদেহ পরিত্যাগ করিয়া মরিতে মরিতেই গণদিগের অধিপতি হইয়া আমার অধিক সৎকারের পাত্র হয়।[৬৭/৯৪]
  • এতদ্ব্যতীত অন্যপ্রকার পাপযুক্ত মলমূত্র ও বসাযুক্ত বলি কামাখ্যা দেবী নামমাত্রেও গ্রহণ করেন না। [৬৭/৯৫]
  • পশু-স্ত্রী, পক্ষিণী বিশেষত মনুষ্য স্ত্রীকে কখনোই বলিপ্রদান করিবে না। স্ত্রীকে বলিদান করিলে কর্তা নরকপ্রাপ্ত হয়। [৬৭/১০১]
    গণহারে নরবলির উল্লেখ আমরা নিচের শ্লোকে পাই-
  • যেখানে বিশেষ গণনা না করিয়া একেবারে দলে দলে বলি প্রদান করা হয় সেইস্থলে সমুদয় দল একেবারে অর্চিত করিয়া ভক্তি পূর্বক পশু পক্ষীর স্ত্রী এবং মানুষীকে বলি দিতে পারে। [৬৭/১০২]
  • “শত্রু ভূপতির পুত্র যদি যুদ্ধে বিজিত হয় , তাহা হইলে তাঁহাকে বলি দিতে পারে।“ [৬৭/১০৬-১০৭]
  • ‘মনুষ্যের মস্তকের রুধির দেবীর দক্ষিণদিকে নিবেদন করিবে, ছাগের শিরোরুধির বামদিকে এবং মহিষের শিরোরুধির সম্মুখে নিবেদন করিবে এবং পক্ষীগণের শিরোরুধির বামদিকে নিবেদন করিবে এবং শরীরের শোনিত সম্মুখে নিবেদন করিবে। ’ এরূপ বলা হয়েছে। [৬৭/১১২]
  • রাজপুত্র, অমাত্য, সচিব এবং সৌপ্তিকগণ রাজার সম্পত্তি ও বিভবের নিমিত্ত নরবলি প্রদান করিবে। [৬৭/১২২]
  • কোনোরূপ উপদ্রব উপস্থিত হইলে অথবা যুদ্ধকালে কোনো রাজসম্পর্কীয় পুরুষ ইচ্ছানুসারে মনুষ্যবলি প্রদান করিবে। [৬৭/১২৩]
  • সাধক মহিষ এবং মনুষ্যের রক্তের কিঞ্চিত অংশ মধ্যমা এবং অনামিকা দ্বারা উদ্ধৃত করিয়া মহাকৌশিক মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক পূর্ব হইতে নৈঋত কোণে পুতনাদি দেবতার উদ্দেশ্যে মৃত্তিকার উপর বলি প্রদান করিবে। [৬৭/১৪৬-১৪৭]
  • গণ্ড,ললাট,ভ্রুত মধ্যে করণাগ্র,বাহুদ্বয়,স্তনদ্বয়,উদর,কন্ঠের অধঃ ও নাভির ঊরধস্থিত যাবতীয় হৃদয় ভাগ এবং পার্শ্ব- এই সকল অঙ্গের রুধির দেবিকে দান করিবে। [৬৭/১৬৪-১৬৫]
  • মনুষ্য শ্রদ্ধাযুক্ত হইয়া ঐ রুধির নির্গত করিবার নিমিত্তেই অক্ষুব্ধ চিত্তে আপনার অঙ্গে স্বয়ং আঘাত করিয়া রুধির নির্গত করিয়া পদ্মপুষ্পের পাত্রে , কিংবা সৌবর্ণ পাত্রে অথবা কাংস্যপাত্রে সেই রুধির রাখিয়া পূর্বোক্ত মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক উহা দেবীকে দান করিবে। [৬৭/১৬৭-১৬৮]
  • ক্ষুর, ছুরিকা,খড়গ এবং শংকুল প্রভৃতি যতগুলি অস্ত্র আছে, ইহাদের মধ্যে যত বড় অস্ত্র দ্বারা শরীরে আঘাত করিবে ততই ফলপ্রাপ্ত হইবে।[৬৭/১৬৯]
  • একটি পদ্মফুলের পাপড়িতে যতটুকু রক্ত ধরিতে পারে, সাধক তাহার চারিভাগের অধিক রক্ত কখনোই দান করিবে না এবং একেবারে কোনো অঙ্গের ছেদ করিবে না।[৬৭/১৭০]
  • যে ব্যক্তি শ্রদ্ধাবশত আপন হৃদয় জাত মাষ প্রমাণ অথবা তিল মুদগ প্রমাণ মাংস দেবীকে অর্পণ করে তাহার ছয় মাসের মধ্যে সমুদয় কামনা সিদ্ধ হয়। [৬৭/১৭১-১৭২]
  • যে সাধক স্নেহপাত্র না লইয়া বাহুদ্বয়, স্কন্ধদ্বয় এবং হৃদয়ে দ্বীপ বর্তী (সলিতা জ্বালিয়া) দেবীকে দান করে , ক্ষণমাত্র তাদৃশ দ্বীপদানের ফল শ্রবণ কর। [৬৭/১৭৩-১৭৪]
  • সে দেবী গৃহে কল্পত্রয় যথেচ্ছাক্রমে বিপুল ভোগ করিয়া পরে সার্বভৌম রাজা হইয়া জন্মগ্রহণ করিবে।[৬৭/ ১৭৫]
  • মহিষের ছিন্ন মস্তকে দ্বীপ জ্বালাইয়া , যে ব্যক্তি উহা হস্ত দ্বারা গ্রহণ করিয়া দেবীর সম্মুখে একটি সমস্ত দিন ও রাত্রি অবস্থান করে।[৬৭/১৭৬]
  • সে ইহলোকে চিরায়ু ও পবিত্রমূরতি হইয়া অখিল মনোরম বস্তু উপভোগ করিয়া অন্তে আমার গৃহে যাইয়া গণাধিপতি প্রাপ্ত হয়।[৬৭/ ১৭৭]
  • যদি সাধক দক্ষিণহস্তে মনুষ্যের মস্তক এবং বামহস্তে রুধিরপাত্র গ্রহণ করিয়া রাত্রিজাগরন করে।[৬৭/১৭৮]
  • তাহা হইলে সে ইহলোকে রাজা হয় এবং অন্তে আমার লোকে গমণ করত গণদিগের অধিপতি হয়।[৬৭/ ১৭৯]
  • যে সাধক বলিদিগের শিরোরক্ত করদ্বয়ে মাখাইয়া দেবীর সম্মুখে ধ্যানস্থ হইয়া অবস্থান করে।[৬৭/১৮০]
  • সে ব্যক্তি ইহলোকে সকল কামনার বস্তু লাভ করিয়া অন্তে দেবীলোকে সম্মানিত হয়।[৬৭/১৮১]
  • হে মহামায়ে ,আপনি জগতের কর্ত্রী এবং সর্ব কামারথ দায়িনী , আপনাকে এই নিজদেহের রুধির দান করিতেছি , আপনি আমার উপর প্রসন্ন হইয়া বর প্রদান করুন।[৬৭/১৮২]
  • এই কথা বলিয়া সিদ্ধ সান্নিভ বিচক্ষণ মানব প্রণাম পূর্বক স্বীয় গাত্রের রুধির প্রদান করিবে।[৬৭ /১৮৩]
  • ঈশ্বর-ভূতিলাভের নিমিত্ত যে সত্য রক্ষা করিয়া আমি আত্মমাংস দান করিতেছি, হে দেবী, সেই সত্য রক্ষা করিয়া তুমি আমাকে নির্বাণ দান কর। হূঁ হূঁ নমঃ নমঃ পণ্ডিত সাধক এই মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া আপনার মাংস দান করিবে।[৬৭/১৮৪-১৮৫]

কামাখ্যায় নরবলি

কামরূপ কামাখ্যায় নরবলি সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় কালিকা পুরাণ থেকে-
  • পীঠ প্রসঙ্গে বলা হইয়াছে যে, নিত্য শ্মশ্মানে বলি প্রদান করিবে। ঐ শ্মশ্মান শব্দে হেরুকনামক শ্মশান, উহা কামাখ্যা দেবীর আবাস শৈলে অবস্থিত। ইহা পূর্বে তন্ত্রের আদিতে বিধিবত প্রতিপাদিত হইয়াছে। [৬৭/৭২-৭৩]
  • ঐ শ্মশান আমার স্বরূপ। উহা ভৈরব নামেও অভিহিত হয়। ঐ শ্মশান তপঃসিদ্ধির নিমিত্ত ত্রিভাগে কল্পিত হইয়াছে।[৬৭/ ৭৪]
  • উহার পূরবাংগ ভৈরব নামে প্রসিদ্ধ, তাহাতে তপস্যা করিলে সদ্য সিদ্ধি লাভ হয়, সে বিষয়য়ে কোনো সন্দেহ নাই। উহার দক্ষিণাংগে
  • ভৈরবীদেবীকে মুণ্ডমালার সহিত মস্তক প্রদান করিবে এবং হেরুক নামক পশ্চিমাংগে রুধির প্রদান করিবে। [৬৭/ ৭৫-৭৬]
  • মনুষ্য বলিকে অর্চন ,দান এবং আগমন ক্রমে পীঠস্থানের শ্মশান ভূমিতে বিসর্জন করিয়া বলদীপক প্রজ্বলিত করিবে। [৬৭/৭৭]
  • এইরূপে যেইখানে মহাবলি প্রদত্ত হইবে, সেইস্থলেই সাধক একস্থানে উৎসর্গ ,একস্থানে ছেদন করিবে এবং অন্যস্থলে মস্তক এবং অন্যস্থলে রুধির প্রদান করিবে। [৬৭/৭৮]
  • আর একবার বিসর্জন করিয়া পুণরায় আর তাহার দিকে অবলোকন করিবে না। [৬৭/৭৯]
  • সুস্নাত,দীপ্ত, পূর্ব দিনে হবিষ্যাশী, মাংস , মৈথুন এবং ভোগ বর্জিত, মালা এবং চন্দন দ্বারা অলঙ্কৃত মনুষ্যকে উত্তরমুখ করিয়া তাহার অবয়ব নিচয়ে দেবতাসকলের পূজা করিবে এবং তাঁহাকে দেবতার সহিত অভিন্ন জ্ঞান করিয়া তাহার পূজা করিবে।[৬৭/ ৮০-৮১]
  • ব্রহ্মরন্ধ্রে ব্রহ্মার পূজা করিবে, নাসিকায় পৃথিবীর পূজা করিবে, কর্ণ দ্বয়ে শক্তি এবং আকাশের পূজা করিবে, জিহবাতে অগ্নির,নেত্রে জ্যোতির, বদনে বিষ্ণুর,ললাটে আমার, দক্ষিণ গণ্ডে ইন্দ্রের, বাম গণ্ডে বহ্নির, গ্রীবায় সমবর্তীর , কেশাগ্রে নিঋতির , ভ্রুদ্বয়ের মধ্যে বরুণের, নাসিকামূলে পবনের,
  • স্কন্দে ধনেশ্বরের এবং হৃদয়ে সর্প রাজের পূজা করিয়া বক্ষ্যমান মন্ত্র পাঠ করিবে। [৬৭/৮২-৮৫]
  • হে মহাভাগ নরশ্রেষ্ট! তুমি সর্ব দেবময় এবং উত্তম, তুমি পুত্র, পশু ও বান্ধবের সহিত শরণাপন্ন আমাকে রক্ষা কর। [৬৭/৮৬]
  • মৃত্যু যখন অপরিহার্য তখন তুমি প্রাণত্যাগ কর, এবং পুত্র, অমাত্য ও বন্ধু বর্গের সহিত আমাকে রক্ষা কর।[৬৭/৮৭]
  • তোমার প্রসাদে রাক্ষস, পিশাচ, বেতালগণ,সরিসৃপগণ , নৃপগণ, রিপুগণ এবং অন্যান্য হিংস্রগণ যেন আমাকে বিনাশ করিতে অক্ষম হয়। [৬৭/৮৯]
  • মরণ যখন অপরিহার্য তখন তুমি পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইয়া স্বীয় কণ্ঠনাল হইতে গলিত এবং অঙ্গ লগ্ন শোণিতধারা দ্বারা তৃপ্তি লাভ কর।[৬৭/ ৯০]

রক্ত উৎসর্গ

বলির রক্ত যেভাবে দেবীকে উৎসর্গ করা হত-
  • আপনার বিভব অনুসারে রুধির দানের নিমিত্ত সৌবর্ণ, রাজত, তাম্র, বেত্রপাত্রের দোনা, মৃন্ময় খর্পর, কাংস্য অথবা যজ্ঞীয় কাষ্ঠ নির্মিত একটি পাত্র করিবে। [৬৭/৪৪]
  • লৌহপাত্রে, বল্কলে, পিত্তলপাত্রে, রংগের পাত্রে অথবা কাচ পাত্রে কিংবা স্রুক বা স্রুবে বলিদিগের রুধির দান করিবে না। [৬৭/৪৫]
  • ঐশ্বর্যবিলশী মনুষ্য ঘটে, মাটির উপর,ক্ষুদ্র পান পাত্রে রুধির দান করিবে না। [৬৭/৪৬]
  • অর্চনা দ্বারা অপরাপর মহিষ প্রভৃতির বলির শরীর বিশুদ্ধিলাভ করে, এই নিমিত্ত দেবী তাহা হইতে রক্ত গ্রহণ করেন।[৬৭/৯৬]
  • নরপতি মনুষ্যের রক্ত মৃন্ময় অথবা তৈজস পাত্রে রাখিয়া সর্বদা উৎসর্গ করিয়া দিবে, পত্র নির্মিত দ্রোণাদিতে কখনোই দিবে না। [৬৭/৪৭]
  • মাংসভূক পশু ও পক্ষীগণের এবং সর্ব প্রকার জলজ জীবগণের মস্তক ও রুধির বাম পার্শে রাখিয়া নিবেদন করিবে। [৬৭/১১৩]
  • কৃষ্ণসার, কূর্ম, গণ্ডার, শশক, কুম্ভীর এবং মৎস্য ইহাদিগের রুধির সম্মুখে রাখিয়াই নিবেদন করিবে।[৬৭/ ১১৪]
  • সিংহের রুধির এবং গণ্ডারের রুধির দক্ষিণের রাখিয়া নিবেদন করিবে। দেবতার প্রিষ্ট দেশে কোনো বলির শিরোরুধির দান করিবে না। নৈবদ্য দক্ষিণে, বামে,অথবা সম্মুখে রাখিয়া নিবেদন করিতে পার, কিন্তু কখনো প্রিষ্টদেশে নৈবদ্য রাখিবে না। [৬৭/১১৫]
  • ঐশ্বর্য বিলাশী মনুষ্য ঘটে,মাটির উপর, ক্ষুদ্র পানপাত্রে রুধির দান করিবে না। [৬৭/৫৯]

বলির মুণ্ডু কোনোদিকে পড়লে যে ফল হয়

পশুবলি বা নরবলি দেওয়ারসময় বলির ছিন্ন মস্তক কোনোদিকে পড়লে যেরূপ ফল লাভ হয় সে সম্বন্ধে বলা হয়েছে-
  • ছিন্ন মনুষ্য এবং পশু প্রভৃতির মস্তক যে যে স্থানে পতিত হইয়া শুভ বা অশুভ হয় তা শ্রবণ কর। [৬৭/১৩০]
    মনুষ্যের ছিন্নশির ইশানকোণে বা নৈঋত কোণে পতিত হইলে রাজ্যহানি এবং রাজার বিনাশ সাধন করে। [৬৭/১৩১]
    হে ভৈরব! পূর্ব ,আগ্নেয়, দক্ষিণ, পশ্চিম এবং বায়ুকোণে ঐ ছিন্ন মস্তক পতিত হইলে যথাক্রমে লক্ষ্মী, পুষ্টি,ভর, লাভ, পুত্র লাভ এবং ধন উৎপাদন করে। [৬৭/১৩২]
  • হে ভৈরব! ছিন্ন মহিষের মস্তক উত্তরদিক হইতে এক এক করিয়া বায়ুকোণ অবধি পতিত হইলে যথাক্রমে যে যে ফল লাভ হয় তাহা শ্রবণ কর। ভোগ্য, হানি , ঐশ্বর্য , বিত্ত, রিপুজয়, ভয়, রাজ্যলাভ এবং শ্রী । [৬৭/১৩৩-১৩৪]
  • জলজ এবং অণ্ডজ ভিন্ন ছাগ আদি নিখিল পশুর মস্তক পতনে দিক অনুসারে ঐরূপ ফল লাভ হয় জানিবে। [৬৭/১৩৫]
  • জলজ এবং পক্ষীদিগের ছিন্ন মস্তক দক্ষিণে ও অগ্নিকোণে পতিত হইলে ভয় এবং অন্যদিকে পতিত হইলে শ্রীলাভ হয়। [৬৭/১৩৬]
  • মনুষ্য,পশু, পক্ষী ও কুম্ভিরাদির মস্তক ছিন্ন হইলে যদি দাঁতের কট কট শব্দ হয় তাহা হইলে রোগ উৎপন্ন হয়। [৬৭/১৩৭]
  • যদি মস্তক ছেদ হইবার পর চক্ষু হইতে মল নির্গত হয় , তাহা হইলে যে রাজ্যে এই ঘটনা হয় ঐ রাজ্যের হানি হয়। [৬৭/১৩৮]
  • মহিষের মস্তক ছিন্ন এবং পতিত হইলে যদি নেত্র হইলে লোতক নির্গত হয় , তাহা হইলে প্রতিদ্বন্দি রাজার মৃত্যু হয়। [৬৭/১৩৯]
  • অপরাপর বলি পশু প্রভৃতির মস্তক হইতে নির্গত লোতক অতিশয় ভয় এবং পীড়ার সূচনা করে। [৬৭/১৪০]
  • যদি নরবলির ছিন্নশির হাস্য করে , তাহা হইলে শত্রুর বিনাশ হয় এবং বলিদাতার সর্বদা লক্ষ্মী ও পরমায়ু বৃদ্ধি হয়, সেই বিষয়ে কোনো সংশয় নাই। [৬৭/১৪১]
  • নরবলির ছিন্ন মস্তক যে যে বাক্য উচ্চারণ করে, তাহা অচিরকালেই সফল হয় এবং হুঙ্কার করিলে রাজ্যের হানি হয় এবং শ্লেষ্মস্রাব করিলে কর্তার পঞ্চত্ব প্রাপ্তি হয়। [৬৭/১৪২]
  • যদি ছিন্ন মস্তক দেবতাদিগের নাম কীর্তন করে, তাহা হইলে বলিদাতা ছয়মাসের মধ্যেই অতুল বিস্তৃতি লাভ করে। [৬৭/১৪৩]
  • রুধির দানকালে যদি ছিন্ন শরীরের উরধ বা অধোভাগ হইতে বিষ্ঠা বা মূত্র নির্গত হয় তাহা হইলে বলিদাতার নিশ্চয় মৃত্যু হয়। [৬৭/১৪৪]
  • ছিন্নদেহ বামপাদের আক্ষেপ করিলে মহারোগ উৎপন্ন হয় এবং অপর চরণের আক্ষেপে কল্যাণ লাভ হয়। [৬৭/১৪৫]

বলির পদ্ধতি

বলির পদ্ধতি সম্বন্ধে বলা হয়েছে-
  • বলি দেয়ার আগে “হে খরগ তোমার নাম অসি, বিশসন, তীক্ষ্ণধার, দুরাসন, শ্রীগরভ, বিজয় এবং ধর্ম পাল, তোমাকে নমস্কার করি।“ (৫৫/১৬) এরূপ বলে তারপরে ‘আ, হ্রিং, ফট এইমন্ত্র দ্বারা খরগকে পূজা করিয়া সেই বিমল খরগ গ্রহণ করিয়া বলিচ্ছেদ’ করা হত। (৫৫/১৭)
    তারপরে “ছিন্ন বলির রুধির জল, সৈন্ধব, সুস্বাদু ফল,মধু, গন্ধ ও পুষ্পের দ্বারা সুবাসিত করিয়া ওঁ, ঐঁ, হ্রীঁ, শ্রীঁ কৌশিকি এই রুধির দ্বারা প্রীতিলাভ কর, এই মন্ত্র বলিয়া যথাস্থানে রুধির নিক্ষেপ করিয়া ছিন্ন মস্তকের উপর প্রদীপ জ্বালাইয়া” রাখতে হত এবং , ‘এইরূপে সাধক বলির পূর্ণ ফল প্রাপ্ত’ হত। (৫৫/১৮-২০)
  • চন্দ্রহাস বা কর্ত্রী দ্বারা বলিচ্ছেদ করাই প্রশস্ত বলিয়া গণ্য হইয়াছে, দাত্র, অসি, ধেনু, করাত বা শংকুল দ্বারা বলিচ্ছেদ মধ্যম এবং ক্ষুর, ক্ষুরপ্র এবং ভল্ল দ্বারা বলিচ্ছেদ অধম বলিয়া কথিত হইয়াছে। [৬৬/২৬]
  • এতদ্ভিন্ন শক্তি বা বাণ প্রভৃতির দ্বারা কখনোই বলিচ্ছেদ কর্তব্য নয়। বলিদানে যেসকল অস্ত্র উক্ত হইয়াছে , তদ্ভিন্ন অস্ত্র দ্বারা বলিচ্ছেদ করিলে দেবী উহা ভোজন করেন না এবং বলিদানকরতা শীঘ্রই মৃত্যু প্রাপ্ত হয়।[৬৭/২৭]
  • যে সাধক প্রোক্ষিত পশু বা পক্ষীকে হস্ত দ্বারা ছেদ করে, সে অতি দুঃসহ ব্রহ্মহত্যা প্রাপ্ত হয়। [৬৭/২৮]
  • বিচক্ষণ সাধক খড়গকে মন্ত্র দ্বারা আমন্ত্রিত না করিয়া কখনোই বলিযোগ করিবেন না। [৬৭/২৯]

বলিতে অথবা যজ্ঞে বধ, বধ নয়

হিন্দুদের বিভিন্ন শাস্ত্রেই উক্ত হয়েছে যজ্ঞে প্রাণী হত্যা কোনো হত্যা নয় অর্থাৎ এটা কোনোপ্রকার হিংসাই নয়। এইজন্য যজ্ঞকে অহিংস বলা হত। বলা হত ঈশ্বর বলির জন্যই পশুদের সৃষ্টি করেছেন। কালিকা পুরাণেও এমনই বলা আছে-
  • ব্রহ্মা স্বয়ং যজ্ঞের নিমিত্ত সকল প্রকার বলির সৃষ্টি করিয়াছেন, এই নিমিত্ত আমি তোমাকে বধ করি, এই জন্যে যজ্ঞে পশুবধ হিংসার মধ্যে গণ্য নয়। [৫৫/১০]
  • স্বয়ম্ভূ স্বয়ং যজ্ঞের নিমিত্ত পশুসকল সৃজন করিয়াছেন, এই নিমিত্ত অদ্য তোমার বধ করি। কারণ যজ্ঞে বধ অবধের সমান। [৬৭/৪১]

বলির উদ্দেশ্য

বিভিন্ন ধরণের বিপদ হতে মুক্তি, ভয়ানক জীবজন্তু হতে আত্মরক্ষা, ধন, যশ, রাজ্যলাভ,রোগমুক্তি,ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা কারণে পশুবলি ও নরবলি অনুষ্ঠিত হত, কালিকা পুরাণ থেকে এমনটাই জানা যায়। এই বলির বর্ণনায় কোথাও কোথায় জাদু বিশ্বাসের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। নিচে কালিকা পুরাণে উল্লেখিত বলির উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হল-
  • “বলি দ্বারা মুক্তি সাধিত হয়, বলি দ্বারা স্বর্গ সাধিত হয় এবং বলিদান দ্বারা নৃপতি গণ শত্রু নৃপতি গণকে পরাজয় করিয়া থাকেন।“ [৬৭/৬]
  • “তোমার প্রসাদে রাক্ষস, পিশাচ, বেতালগণ,সরিসৃপগণ , নৃপগণ, রিপুগণ এবং অন্যান্য হিংস্রগণ যেন আমাকে বিনাশ করিতে অক্ষম হয়।“ [৬৭/৮৯]
  • “ঐশ্বর্য বিলাশী মনুষ্য ঘটে,মাটির উপর, ক্ষুদ্র পানপাত্রে রুধির দান করিবে না।“ [৬৭/৫৯]
  • যে সাধক বলিদিগের শিরোরক্ত করদ্বয়ে মাখাইয়া দেবীর সম্মুখে ধ্যানস্থ হইয়া অবস্থান করে।[৬৭/১৮০]
  • সে ব্যক্তি ইহলোকে সকল কামনার বস্তু লাভ করিয়া অন্তে দেবীলোকে সম্মানিত হয়।[৬৭/১৮১]
  • যে সাধক স্নেহপাত্র না লইয়া বাহুদ্বয়, স্কন্ধদ্বয় এবং হৃদয়ে দ্বীপ বর্তী (সলিতা জ্বালিয়া) দেবীকে দান করে , ক্ষণমাত্র তাদৃশ দ্বীপদানের ফল শ্রবণ কর। [৬৭/১৭৩-১৭৪]
  • সে দেবী গৃহে কল্পত্রয় যথেচ্ছাক্রমে বিপুল ভোগ করিয়া পরে সার্বভৌম রাজা হইয়া জন্মগ্রহণ করিবে।[৬৭/ ১৭৫]
  • মহিষের ছিন্ন মস্তকে দ্বীপ জ্বালাইয়া , যে ব্যক্তি উহা হস্ত দ্বারা গ্রহণ করিয়া দেবীর সম্মুখে একটি সমস্ত দিন ও রাত্রি অবস্থান করে।[৬৭/১৭৬]
  • সে ইহলোকে চিরায়ু ও পবিত্রমূরতি হইয়া অখিল মনোরম বস্তু উপভোগ করিয়া অন্তে আমার গৃহে যাইয়া গণাধিপতি প্রাপ্ত হয়।[৬৭/ ১৭৭]
  • যদি সাধক দক্ষিণহস্তে মনুষ্যের মস্তক এবং বামহস্তে রুধিরপাত্র গ্রহণ করিয়া রাত্রিজাগরন করে।[৬৭/১৭৮]
  • তাহা হইলে সে ইহলোকে রাজা হয় এবং অন্তে আমার লোকে গমণ করত গণদিগের অধিপতি হয়।[৬৭/ ১৭৯]
  • যে সাধক বলিদিগের শিরোরক্ত করদ্বয়ে মাখাইয়া দেবীর সম্মুখে ধ্যানস্থ হইয়া অবস্থান করে।[৬৭/১৮০]
  • সে ব্যক্তি ইহলোকে সকল কামনার বস্তু লাভ করিয়া অন্তে দেবীলোকে সম্মানিত হয়।[৬৭/১৮১]
এই বলির পিছনে যে একপ্রকার জাদুবিশ্বাস কাজ করতো, তা নিম্নোক্ত শ্লোক সমূহ থেকে সহজেই বোঝা যায়-
  • যখন যখন শত্রুর বৃদ্ধি দেখিবে, তখন তখন তাহার ক্ষয় কামনা করিয়া অপরের শিরচ্ছেদ করিয়া বলিপ্রদান করিবে। [৬৭/১৫৪]
    ঐ বলিরূপ পশুতে শত্রুর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করিবে, ঐ বলির ক্ষয় হইলে শত্রুর বিপদ হয়। [৬৭/১৫৫]
  • ‘বিরুদ্ধ রূপিনী চণ্ডিকে। বৈরিণং ত্বং খাদয়স্ব স্বাহা!” এই মন্ত্রের নাম খড়গ মন্ত্র। এই সেই আমার বৈরি যে সর্বদা আমার উপর দ্বেষ করে; হে মহামারি এক্ষণে পশুরূপধারী উহাকে বিনাশ কর। [৬৭/১৫৬-১৫৭]
  • ‘স্ফে স্ফে খাদয় খাদয়’ এই মন্ত্র পাঠ করিয়া সেই বলির মস্তকে পুষ্পদান করিবে। তদনন্তর তাহার রুধির দ্ব্যক্ষর মন্ত্র দ্বারা উৎসর্গ করিয়া দিবে। [৬৭/১৫৮]
  • যব চূর্ণ ময় অথবা মৃন্ময় শত্রুর প্রতিক্রিতি করিয়া যথোক্ত মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক তাহার শিরচ্ছেদন করিয়া বলিপ্রদান করিবে।[৬৭/১৮৭-১৮৮]
  • ……………… রাজা প্রথমে খরগকে আমন্ত্রিত করিয়া শত্রুকে বলি প্রদান করিবে অথবা মহিষ বা ছাগকে শত্রু নামে আমন্ত্রিত করিয়া বলি প্রদান করিবে। [৬৭/১৪৯-১৫২]

বিশদ জানতে কালিকা পুরাণের রুধিরঽধ্যায় বা বলি দান অধ্যায় পড়তে পাড়েন।

যাকিছুই হোক বলির কাজটা রয়েই যায়। শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও তার কিছু করেন নি। তিনি নিজেও দক্ষিণেশ্বরে দেবী ভবতারিণীর সম্মুখে বলি দিয়েছেন। এমনকি স্বামী বিবেকানন্দ যিনি বলেছিলেন —জীবে প্রেম করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর। তিনি নিজেও দুর্গা পূজায় বেলুরমঠে সাত্ত্বিক মতে বলি দিয়েছে। এটা শুনে চমকে যেতে পারেন যে, পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গণে অবস্থিত অন্যতম প্রধান শক্তিপীঠ দেবী বিমলার মন্দিরেও বলি হয়। কিন্তু কেন?

কারণটা এমন, প্রত্যেক পূজার যেমন বিধি আছে তেমনি তার পূজা বা মন্দিরের কিছু প্রয়োজন আছে। প্রতিটি পূণ্য ভূমির কিছু প্রয়োজন হয়। নাহয় তার শক্তি বা প্রভাব থাকে না। দেবীর মন্দিরে তেমনি প্রাণের আহুতি দেওয়া প্রয়োজন। তা সেই স্থানের শক্তি ক্ষেত্রকে সক্রিয় করে তোলে। যদিও এটা সমুদ্র এক কলস জল দিয়ে উপকার করা স্বরূপ তাও এটা শক্তি পূজার অঙ্গ। বলি না দিলে কিছু হবে তা কোনভাবেই বলছি না। আমি স্থানের ঊর্জার কথা বলছি।

রক্ত পিপাসু ভ্রান্তি —

দেবী রক্ত পিপাসু এটা অনেকেই বলে থাকেন। তা সম্পূর্ণ ভুল। আমি আগেই বলেছি দেবতা কিছু খায় না, কিছু পানও করে না। তারা কেবল দেখে তার প্রতি কে কতটা নিবেদিত প্রাণ। আর যেই রক্ত খাওয়ার কথা বলা হয়েছে তা কেবল চণ্ডীর রক্তবীজ বধ অধ্যায়ে। সেখানে দেবীর এই কাজ করতে হয় রক্তবীজের রক্ত হতে জন্ম নেওয়া বন্ধ করার জন্য। এখানে অসুর তথা রক্তবীজের রক্ত তিনি যেভাবে ভয়ংকরী রূপে খেয়েছিলেন তাতে ঋষিগণ এববগ দেবগণ মনে করে ছিলেন তিনি বোধহয় রক্ত পিপাসু। কিন্তু তা মোটেও না।

মুণ্ডমালা ভ্রান্তি —

দেবী মুণ্ডমালিনীর মুণ্ডমালা তার শৌর্য প্রকাশ করে। তাতে সাধারণ মানুষের ভয়ের কিছু নেই। তিনি কেবল কত খারাপ শক্তি নাশ করেছে তা দেখানোর জন্যই মুণ্ডমালা ধারণ করেন। মূলতঃ, বিপথগামীদের ভয় দেখানোর জন্য এবং তাদের পরিণতির জন্যই এটি।

নগ্নতা ভ্রান্তি —

সব ভ্রান্তির যেহেতু সমাধান করার চেষ্টা করেছি তাহলে এটা আর বাদ যাবে কেন? আগেই বলে দেই, এটা ভারতীয় উপমহাদেশ। এখানে অনেক ধরনের মানুষ থাকে এবং চিন্তাচেতনাও অনেক ভিন্ন। কিন্তু নীতির দিকে এটা এক। আমাদের এই দেশে মা শব্দটার অনেক মহত্ব আছে। এটা বললেই মনে একটা সম্মানের ভাব চলে আসে। এখানে বিদেশী চিন্তা চেতনা দিয়ে বিচার করা হয় না। মায়ের বস্ত্র বা তার কি আছে কি নেই এই সব ত্রুটি কেউ বিচার করে না এখানে। হাজার হাজার বছর ধরে মায়ের পূজা এই রূপেই হয়ে আসছে। তার রূপ বা অন্যকিছুর গুরুত্ব আমাদের কম, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা মাকে কতটা ভালোবাসি। তাই এই বেকার প্রশ্নটা বোকার মতো না আনাই ভালো। কালো বা লোলজিহ্বা বা নগ্ন নারীমূর্তি এগুলা কোন বিষয় না। সবার উপর তিনি জগদম্বা (জগতের মাতা), যার অঙ্গ ঢাকতে পারে এমন বস্ত্র নেই।

কিছু উদ্ভট ধর্ম প্রচারক যারা অন্যধর্মের বিশ্বাসী হয়ে হিন্দুদের বিশ্বাস নিয়ে কথা বলছেন, সেই ভ্রান্তি —

কোন এক বিশেষজ্ঞ অন্য ধর্ম বিশ্বাসের ধর্মবিদ বলেছেন, হিন্দু শাস্ত্রে নাকি বলা হয়েছে — তুমি সেই সকল প্রাণীকে খাও এবং বলি দাও যা খাওয়া বা বলি দেওয়ার জন্য বানানো হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি কথা। এমন কোন উক্তি হিন্দ শাস্ত্রের কোথাও নেই। বলি দেওয়ার কথা থাকলেও কোথাও বলা হয় নি যে কোন নির্দিষ্ট প্রাণীর জীবনের উদ্দেশ্য মৃত্যু বা অন্যের খাওয়ায় পরিণত হওয়া। সকল প্রাণীর জীবনের উদ্দেশ্য একমাত্র মোক্ষপ্রাপ্তি।

বেদের কিছু মন্ত্র বিচার করলে দেখা যায়, বেদ অহিংসার কথায় বলেছেন
(i) যঃ পৌরষেযেণ ক্রবিষাং সমঙ্কতে যো অশ্বয়েন পশুনাং যতুধান। যো অঘ্ন্যায় ভরতি ক্ষীরমগ্নে তেষাং শীর্ষাণি হরসাপি বৃশ্চ।। (অথর্ববেদ ৮।৩।১৫) - যে দুঃখদায়ী জীব পুরুষ বধ দ্বারা প্রাপ্ত মাংস দ্বারা যে ঘোড়ার মাংস এবং পশু দ্বারা নিজেকে পুষ্ট করে এবং যে হত্যার অযোগ্য গাভীর দুধকে নষ্ট করে হে অগ্নি তাহার শির কে নিজের বল দ্বারা ছিন্ন করো। . (ii) ইমং মা হিংসীরেকশফং পশুং কনিকদং বাজিনং বাজিনেষু।। (যজুর্বেদ ১৩।৪৮) - হে পুরুষ এই হর্ষ ধ্বনিকারক এক ক্ষুর বিশিষ্ট বেগবান অশ্বকে মেরো না। . ( iii) " একশফো বা এষ পশুর্যদশ্চ; তং মা হিংসীরিতি" (শতপথঃ ৭।৫।২।৩৩) - ইহার অভিপ্রায় এই যে, একশফ শব্দ দ্বারা অশ্বের গ্রহন হয়ে থাকে। এইজন্য একশফ পশু অশ্বকে তুমি হিংসা করো না। . (iv) যে অর্বন্ত জিঘাংসতি তমজ্যসীতি বরুণঃ পরো মর্তঃ পরঃশ্ব।। (যজুর্বেদ ২২।৫) -যে মনুষ্য অশ্বকে হত্যার ইচ্ছা করে হে বরুণ তাকে শাস্তি প্রদান করো। . (v) যদি নো গাং হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম।তং ত্বা সীসেন বিধ্যামো যথা নোহসো অবীরহা।। (অথর্বেদ ১।১৬।৪) - যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব যাহাতে আমাদের মধ্যে বীরদের বিনাশক কেহ না থাকে। . (vi) "অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গাম অশ্বম পুরুষং বধী" (অথর্ববেদ ১০।১।২৯) - নির্দোষের হত্যা অবশ্যই ভয়ানক। আমাদের গাভী, অশ্ব, পুরুষকে মেরো না। . ( vii) রাজসূয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্তদধ্বরঃ। অর্কাশ্বমেধাবুচ্ছিষ্ট জীবর্বহিভমদিন্তম।। (অথর্ববেদ ১১।৭।৭) - রাজসূয়, বাজপেয়, অগ্নিষ্টোম এইসব যজ্ঞ অধ্বর অর্থাৎ হিংসারহিত। অর্ক এবং অশ্বমেধ যজ্ঞ প্রভূর মধ্যে স্থিত, যাহা জীবের বৃদ্ধিকারী এবং অতন্ত্য হর্ষদায়ক। . বেদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইহা স্পষ্ট যে, অশ্ব কে বধ করা সর্বদা নিষিদ্ধ এবং কেউ যদি বধের চেষ্টা করে তবে তাকে শাস্তির বিধান পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। রাজসুয়, বাজপেয়, অশ্বমেধ যজ্ঞ আদিকে অধ্বর বলা হয়েছে অর্থাৎ যাতে হিংসা না হয়। অতএব সায়ন এবং রমেশের ভাষ্য বেদের সাংঘর্ষিক তথা অসংগত। উক্ত মন্ত্রের সুনির্মল অর্থ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী বের করেছেন। পাঠকদের জন্য তারই উপস্থাপন করা হলো - . যত্তে গাত্রাদগ্নিনা পচ্যমানদভি শূলং নিহতস্যাবধাবতি। মা তদ্ভূম্যামাশ্রিষন্মা তৃণেষু দেবেভ্যস্তদুশদভ্যো রাতমস্তু।। (ঋগবেদ ১।১৬২।১১) . পদার্থঃ হে বিদ্বান! (নিহতস্য)নিরন্তর চলময়মান [নি পূর্বক হন ধাতুর অর্থে, হন= গতি ] (তে) তোমার (অগ্নিনা) ক্রোধাগ্নি দ্বারা (পচ্যয়মানাত্) তপ্ত হয়ে (গাত্রাত্) শরীর থেকে বা হাত থেকে (যত্) যে অস্ত্র (অভিশূলম) লক্ষ্যে শুলের সমান [পীড়াকারক শত্রুর সম্মুখে] (অবধাবতি) ধাবিত হয় (তত্) ইহা (ভূম্যাম) ভূমির মধ্যে ( মা, আ, শ্রিষত) পড়ে না থাকে (তৃণেষু) ঘাসআদির মধ্যে থাকে।( উশদম্ভঃ) আমাদের সম্পদকে ইচ্ছাকারী (দেবেভ্য) গুণবান দের জন্য (রাতম অস্ত) অর্পনকৃত হোক। . সরলার্থঃ হে বিদ্বান! নিরন্তর চলময়মান তোমার ক্রোধাগ্নি দ্বারা তপ্ত হয়ে শরীর থেকে বা হাত থেকে যে অস্ত্র লক্ষ্যে শুলের সমান [পীড়াকারক শত্রুর সম্মুখে] ধাবিত হয় ইহা ভূমির মধ্যে পড়ে না থাকে ঘাসআদির মধ্যে না থাকে। আমাদের সম্পদকে ইচ্ছাকারী গুণবান দের জন্য অর্পনকৃত হোক।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ