সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সমস্ত জীব জগত এবং সমস্ত জীবের প্রতিপালক একটি সত্তা পরম পবিত্র মহান ঈশ্বর যার মুখ্য নাম ওম, পরমাত্মা।পরম পবিত্র বেদ অনুযায়ী তিনি জগতের প্রতিপালক সৃষ্টিকর্তা তিনি নিরাকার কারো সৃষ্টিকর্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি নিরাকার অজন্মা অমর অজর অনন্ত আনন্দ স্বরূপ সর্বশক্তিমান দয়ালু নির্বিকার অমর অভয় সর্বে ব্যাপক সগুন নির্গুণ অন্তর্যামী সুখদায়ক প্রতিপালক সৃষ্টির রচনাকার প্রলয় কার অনুপম সর্ব আধার।
রূপ হীন প্রতিমা যজুর্বেদ ৮/৪০। ন তস্য প্রতিমা অস্তি অর্থাৎ ঈশ্বরের কোন প্রতিরূপ প্রতিমূর্তি নেই তিনি নিরাকার। যজুর্বেদ 13/41 অর্থাৎ ঈশ্বরের কোনরূপ প্রতিমূর্তি নেই কারণ তাকে বিশাল বলা হয়েছে আর বিশাল এর মূর্তি কি করে হবে। ঋকবেদ 6 /47/18 অর্থাৎ তার কোন শরীর হয় না তার কোন জন্ম হয় না তার কোন মৃত্যু হয় না তার কোন রূপ হয় না তার কোন রূপ হয় না। যজুর্বেদ ১০/ ৮ 22 অর্থাৎ তিনি সনাতন তিনি চিরস্থায়ী তিনি সর্ব ব্যাপক তার কোন প্রতিমূর্তি হয় না। যজুর্বেদ 40 নং শুক্র 8 নং মন্ত্র অর্থাৎ ঈশ্বর মায়ের গর্ভে আসেন না ঈশ্বরের কোন শরীর হয়না রোগ হয় না যার জন্য ঈশ্বরের কোন নাভি হয় না। নাভির সাথে সংযুক্ত থাকে মায়ের গর্ভ এবং মায়ের গর্ভে সাথে সংযুক্ত থাকে মানুষের তাই মানুষের নাভি হয় ঈশ্বরের নাভি হয় না যাদের নাভি আছে তারা ঈশ্বর নয় তারা মানুষ আর ঈশ্বর তিনি যার নাভির সাথে কোন সংযুক্ত থাকে না। পরম পবিত্র বেদ অনুযায়ী ঈশ্বর প্রকৃতি এবং জীব এই তিনটি হচ্ছে আনাদি এবং এই তিনটি সৃষ্টির আদি হতে আছে এই তিনটি ছাড়া সমস্ত পৃথিবী অচল এই তিনটির থেকে যদি একটিকে বাদ দেওয়া হয় তাহলে সৃষ্টির কোন উৎপত্তি হবে না তাই ঈশ্বর প্রকৃতি এবং জীব এই তিনটি অচেয়ান আদি।
এমন এক সময় ছিল যখন সাধারণ হিন্দুদের কাছে তাদের শাস্ত্র (বেদ) ছিল অস্পৃশ্য। ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের যদিও বেদ শোনার অধিকার ছিল, শুদ্র বেদ শুনলে তার কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়ার কুপ্রথা ছিল প্রচলিত। ভাগবাদি ১৮ পুরাণ বেদ বিরুদ্ধ মানব রচিত স্মৃতির এমনই ছিল আইন। এছাড়াও নানা কুসংস্কার, কুপ্রথায় জর্জরিত ছিল এই অভাগা (বেদিক সনাতন) হিন্দু সমাজ।
এসব কুপ্রথা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যেসব মহাত্মারা লড়াই করেছেন তাদের মধ্যে রাজা রাম মোহন রায় ও মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ছিলেন অগ্রগণ্য। বেদ ও বৈদিক শাস্ত্র বিরুদ্ধ এসব অন্যায় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁরা আঘাত হেনেছিল বেদ, উপনিষদ ও অন্যান্য বৈদিক গ্রন্থের আলোকে। উল্লেখ্য এই দুই মহাত্মার কর্মে আমরা বেশ কিছু সাদৃশ্য দেখতে পাই। তাঁরা যেমন ছিলেন কুসংস্কারের বিরোধী, তেমনি তাঁরা অভাগা (বৈদিক সনাতন) হিন্দুদের অধঃপতন থেকে মুক্তির পাথ হিসেবে খুঁজে নিয়েছিলেন বেদ-উপনিষদের আলোকবর্তিকা।.......................................
তাই স্বার্থন্বেষী জন্মগত ব্রাহ্মনরা [বেদ থেকে বিচ্যুত] হয়ে! সৃষ্টির মনুষ্য উৎপন্নের পর থেকেই মনুষ্যের সংবিধান (বেদ) আজ বেদে হাজারও অপূর্ণ নকল ঈশ্বর তৈরী করে হাস্যকার ব্যবস্যা তৈরী করেছেন! তাই আজ আলোচনা করব ঈশ্বরের কি প্রতিমা, উপমা, উপমান, সাদৃশ্য, তুলনা এই পৃথিবীতে হয় কিনা এবং সেই পরমপিতা পরমাত্মার স্বরূপ কেমন-
স পর্য়্যগাচ্ছুকমকায়মব্রণমস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্।
কবির্মণীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্য়াথাতথ্যতোঽর্থান্
ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।। ৮।।(যজু০ ৪০/৮)
পদার্থঃ হে মনুষ্য! যে ব্রহ্ম (শুক্রম্) শীঘ্রগামী, সর্বশক্তিমান (অকায়ম্) স্থুল, সূক্ষ্ম আর কারণ শরীর থেকে রহিত, (অব্রণম্) ছিদ্র রহিত এবং যাহার দুই টুকরো হয় না, (অস্নাবিরম্) নাড়ী আদির বন্ধন থেকে রহিত, (শুদ্ধম্) অবিদ্যা আদি দোষের হইতে রহিত হয়ে সদা পবিত্র, (অপাপবিদ্ধম্) যে কখনো পাপ হইতে যুক্ত, পাপকারী আর পাপ দ্বারা প্রেমকারী হয় না, সে (পরি+অগাত্) সর্বত্র ব্যাপক; যে (কবিঃ) সর্বজ্ঞ, (মনীষী) সব জীবের মনোবৃত্তিকে জানে, (পরিভূঃ) দুষ্ট পাপিদের তিরস্কারকারী, (স্বয়ম্ভূঃ) অনাদিস্বরূপ, যাহার সংযোগ থেকে উৎপত্তি আর বিয়োগ হইতে বিনাশ হয় না, যাহার মাতা-পিতা কেউ নেই আর যাহার গর্ভবাস, জন্ম, বৃদ্ধি আর ক্ষয় হয় না, সে পরমাত্মা (শাশ্বতীভ্যঃ) সনাতন, অনাদি স্বরূপ, নিজের স্বরূপের দৃষ্টি থেকে উৎপত্তি আর বিনাশ হইতে রহিত (সমাভ্যঃ) প্রজার জন্য (য়াথাতভ্যতঃ) যথার্থ হইতে (অর্থান্) বেদের দ্বারা সব পদার্থের (ব্যদধাত্) উত্তম প্রকারে উপদেশ করে। (সঃ) সে পরমাত্মাই তোমাদের জন্য উপাসনা করার যোগ্য।। ৮।।
ভাবার্থঃ হে মনুষ্য! যদি অনন্ত শক্তিশালী, অজন্মা, অখ-, সদাই মুক্ত, ন্যায়কারী, পাপরহিত, সর্বজ্ঞ, সবার দ্রষ্টা, নিয়ন্তা আর অনাদি স্বরূপ ব্রহ্ম সৃষ্টির আদিতে স্বয়ং প্রোক্ত বেদের শব্দ দ্বারা অর্থ আর সম্বন্ধকে বুঝানোকারী বিদ্যার উপদেশ না করে তো কোন বিদ্বান হয় না; আর না ধর্ম, অর্থ কাম, মোক্ষ রূপ ফলকে প্রাপ্ত করে। এইজন্য এই ব্রহ্মকে সদা উপাসনা করো।। ৮।।
ভাষ্যঃ আচার্য রাজবীর শাস্ত্রী
ন তস্য প্রতিমা অস্তি য়স্য নাম মহদ্যশঃ।
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেব মা মা হিংসীদিত্যেবা য়স্মান্ন জাত ইত্যের্ষঃ।। (যজু০ ৩২/৩)
পদার্থঃ (য়স্য) যাহার (মহত্) মহান (নাম) প্রসিদ্ধ (য়শঃ) যশ আছে, (তস্য) ওই পরমাত্মার কোন (প্রতি-মা) প্রতিমা অথবা উপমা (ন অস্তি) নেই। (হিরণ্য-গর্ভ ইতি এবঃ) 'হিরণ্যগর্ভ' আদি মন্ত্রের দ্বারা তথা, (মা মা হিংসীত্ ইতি এষা) 'মা মা হিসীত্' এই মন্ত্রদ্বারা, আর (য়স্মাত্ ন জাতঃ ইতি এষঃ) 'য়স্মান্ন জাত' এই মন্ত্রদ্বারা তাহার বর্ণন হয়।।৩।।
ভাবার্থঃ উক্ত মন্ত্রের দ্বারা যাহার মহান প্রসিদ্ধ যশের গায়ন হয় ওই আত্মার কোন প্রতিমা অথবা উপমা হয় না।।৩।।
ভাষ্যঃ পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর
আসুন অমরকোষ আর বৈদিককোষ প্রতিমা শব্দ নিয়ে কি বলে-
তাই আসুন (প্রতিমা) শব্দের অর্থ (অমরকোষে ২/১০/৩৫)
প্রতিমানং প্রতিবিম্বং প্রতিমাপ্রতিয়াতনা প্রতিচ্ছায়া।।৩৫।। প্রতিকৃতিরর্চা পুংসি প্রতিনিধি-
প্রতিমা অর্থাৎ ছবির নাম।।৮।।
১. প্রতিমান। ২. প্রতিবিম্ব। ৩. প্রতিমা। ৪. প্রতিছবি। ৫. প্রতিছায়া।।৩৫।।
৬. প্রতিকৃতি। ৭. অর্চা। ৮. প্রতিনিধি।
.................................................................................
আর (বৈদিককোষ; পৃষ্টাঃ ৬৪১) দেখে আসি-
প্রতিমা প্রতিমীয়নোত পরিমীয়ন্তে সর্ব পদার্থা য়য়া সা
ভা০-পরিমাণসাধন পদার্থতোলনার্থম্ (বস্তু) ১৫ ৬৫
প্রতিমীয়তে য়য়া তৎপরিমাপক সদৃশ তোলনসাধন প্রতিকৃতিরাকৃতির্বা ৩২ ৩
প্রতিগোয়তে য়য়া ক্রিয়ায়া সা ১৪ ১৮
পরিমাণ, সাদৃস্য বা মূর্তি স০ প্র০ ৪৩২, ৩২ ৩
প্রতিনিধি প্রতিকৃতি, প্রতিমান তোলনসাধন, পরিমাণ, মূর্ত্যাদিকল্পনম্
ঋ০ ভূ০ ৩০০, ৩২ ৩, প্রতিমীয়তেহনয়া সা (য়য়া পরিমাণ ক্রিয়তো)
ঋ০ ভূ০ ১৪৭, ঋ০ ৮ ৭ ১৮০ ৩
................................................................................
অনেক নামের দ্বারা এক ঈশ্বরের বোধ হয়-
ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নিমাহুরথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান্।
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং য়মং মাতরিশ্বানমাহুঃ।।
(ঋ০ ১।১৬৪।৪৬; অথর্ব০ ৯।১০।২৮; নিরু০ ৭।১৮, ১৪।১; ঋগ্বেধা০ ১।২৫।৭; বৃহদেবতা ৪।৪২)
'একই সৎ স্বরূপ পরমাত্মাকে জ্ঞানীলোক অনেক প্রকারে ডেকে থাকেন। ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, উরুত্মান, সৎ, যম, মাতরিশ্বা আদি নামের দ্বারা একই পরমাত্মার বর্ণন করেন।'
অথর্ববেদে ঈশ্বরের একত্বার নিশ্চয়তা-
'সে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চাম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম আদি অনন্ত সংখ্যা দ্বারা বলা হয়নি। এই সম্পূর্ণ জগত তাহাতে নিঃশেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ তাহার মধ্যে। সে সহন শক্তিদ্বারা যুক্ত অর্থাৎ অত্যন্ত বলবান। সে একই। কেবল একই। নিশ্চয়ই একই। সব তেজস্বী পদার্থ ইহাতে কেবল এক বানিয়ে রাখে।' (অথর্ব০ ১৩।৪।১৬-২১)
বৈ-মানরস্য প্রতিমোপরি দ্যোর্য়াবদ্রোদসী বিবাদে অগ্নিঃ। (অথর্বঃ ৮।৯।৬)
'(বৈশ্বা-নরস্য) বিশ্বের নেতা ঈশ্বরের (প্রতিমা) প্রতিমা এমনই হয়, যে (য়াবত্ দ্যোঃ) তেমন দ্যুলোকে উপরে থাকে, যেমন (রোদসী) উপরে নিয়ে আর নিম্নস্থ আকাশে (অগ্নিঃ) অগ্নিই (বি-ববাধে) অন্তর বানায়।' যথা-
য়স্মান্ন ঋতে বিজয়ন্তে জনাসো য়ং য়ুদ্ধয়মানা অবসে হবন্তে।।
য়ো বিশ্বস্য প্রতিমানং বভূব য়ো অচ্যুতচ্যুত্ স জনাস ইন্দ্রঃ।।
(ঋ০ ২।১২।৯; অথর্ব০ ২০।৩৪।৯)
'হে (জনাসঃ) মনুষ্য ! (য়স্মাত্ ঋতে) যাহাকে ছেড়ে (জনাসঃ) মনুষ্য (ন বিজয়ন্তে) বিজয়কে প্রাপ্ত হতে পারে না, আর (য়ুদ্ধমানাঃ) লড়াইকারী (অবসে) রক্ষণের জন্য (য়ং হবন্তে) যাহার প্রার্থনা করতে হয়। আর যে (প্রতিমানম্) বিশ্বের প্রতিমা (বভূব) হয় আর যে (অচ্যুত-চ্যুত্) স্বয়ং না নড়াচড়া করে আর অন্যকে নাড়ায় (স ইন্দ্রঃ) সে ইন্দ্র অর্থাৎ সব জগতের এক রাজা।' ভাষ্যঃ পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর
এই দুই মন্ত্রে জগতের বরাবর ওই পরমাত্মার প্রতিমা, এরূপ বলেছে। এই আকাশ অনন্ত। যে প্রকার আকাশের কোন সীমা নেই ওই প্রকার পরমেশ্বরেরও কোন অন্ত নেই। এই কথা উক্ত দুই মন্ত্রে বলা হয়েছে।
এই দুই মন্ত্রে জগতের বরাবর ওই পরমাত্মার প্রতিমা, এরূপ বলেছে। এই আকাশ অনন্ত। যে প্রকার আকাশের কোন সীমা নেই ওই প্রকার পরমেশ্বরেরও কোন অন্ত নেই। এই কথা উক্ত দুই মন্ত্রে বলা হয়েছে।
এখন আসি যজুর্বেদের নিম্ন মন্ত্র-
ও৩ম্ খং ব্রহ্ম।। (যজু০ ৪০। ১৭)
'(ও৩ম্ ব্রহ্ম) সবার রক্ষাকারী ব্রহ্ম (খং) আকাশের সমান ব্যাপ্ত।'
এই মন্ত্রের ভাব উক্ত অর্থের দুই মন্ত্রের সমান।
তাই আরো দেখুন-
ত্বং ভুবঃ প্রতিমানং পৃথিব্যাঃ।। (ঋ০ ১।৫২।১৩)
'তুমি পৃথিবী থেকে উল্টো প্রমাণ রাখেন।' অর্থাৎ পৃথিবী ছোট আর তুমি মহান। যথা-
সূ ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বাহত্যতিষ্ঠদ্দশাংগুলম্।
(ঋ০ ১০।৯০।১; আরণ্য স০ ৪।২; অথর্ব০ ১৯।৬।১; যজু০ ৩১।১; তৈ০ আরণ্য০ ৩।১২।১)
'সে পরমাত্মা পৃথিবীকে (বিশ্বতঃ) চারিদিক থেকে (বৃত্বা) ঘিরে (দশাংগুলং) দশ আঙ্গুলের সমান ছোট বিশ্বকে (অতি অতিষ্ঠত্) বিশ্বের বাহিরেও আছে অথবা বিশ্বের উপর শাসন করেন।'
এই মন্ত্রে উক্ত আশায় অনেক স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তথা আরো মন্ত্র দেখুন-
ন হীন্বমস্য প্রতিমানস্যত্যন্তর্জাতেষূত য়ে জনিত্বাঃ। (ঋ০ ৪।১৮।৪)
'(অস্য ন) নিশ্চয়ই ইহার (জাতেষু অন্তঃ) বানানো পদার্থের অন্তর (উত) আর (য়ে জনিত্বাঃ) যে বানানোকারী হয় তাহার মধ্যে কোন (প্রতিমানম্) তুলনা, প্রতিমা (ন অস্তি) হয় না।, যথা-
এই প্রকার প্রতিমা আর প্রতিমান শব্দের প্রয়োগ বেদ মন্ত্রে এসেছে, ইহার নিম্ন লিখিত অর্থ-'প্রতি-মা' র অর্থ-বানানোকারী প্রতিমা, সাদৃশ্য, উপমা, প্রতিবিম্ব, মাপ, তোলা, বিস্তার, বরাবর, 'প্রতি-মান' এর অর্থ-নমুনা সাদৃশ্য, তোলা, ওজন, মাপ, প্রতিবিম্ব, বিপরীত, শত্রু এই বিবিধ অর্থ দেখে তথা মন্ত্রের সংবন্ধ দেখে, উক্ত মন্ত্রের অর্থ বিচার করা উচিত।
কিং সময় ঋধক্ কৃণবদ্ য়ংসহপ্রে মাসো জভার শরদশ্চ পূর্বীঃ।
নহী ধ্বস্ত প্রতিমানমত্ত্য ন্তর্জাতেষূতে য়ে জনিত্বা।।৪।।
প্র তুবিদ্যুম্নস্য স্থবিরস্য ঘৃষ্বের্দিবো ররপ্শে মহিমা পৃথিব্যাঃ।
নাস্য শত্রুর্ন প্রতিমাননস্তি ন প্রতিষ্ঠিঃ পুরুমায়স্য সহ্যোঃ।।১২।।
(ঋ০ ৪/১৮/৪; ৬।১৮।১২)
পদার্থঃ (য়) যাহার (সহস্রং মাসঃ পূর্বী শরদঃ চ) হাজার মাসের আর অনেক বর্ষ পর্যন্ত (জভার) ভরণপোষণ করেন, (সঃ) সে (ঋধক্ কিং কৃণবত্) বিরুদ্ধ কর্ম কে করবে? (য়ে জনিত্বাঃ) যে উৎপন্নকারী তাহার আর (গাতেষু) উৎপন্ন হওয়ার (অন্তঃ) মাধ্যমে (অস্য প্রতিমানম্ নহি) এই ইন্দ্রের কোন উপমা নেই।।৪।।
ভাবার্থঃ যাহার অনেক মাসের আর বর্ষ পর্যন্ত ভরণপোষণ করেন, সে নিজের পোষণকরীর কোন কার্য কে করবে? অর্থাৎ কেউ করবে না। উৎপন্নকারী আর উৎপন্ন হওয়ার মধ্যে এই ইন্দ্রের সমান কেউ নেই।।৪।।
পদার্থঃ (তুবি-দ্যু-ম্নস্য) অত্যন্ত তেজস্বী (স্থবিরস্যা) স্থির আর (ঘৃষ্বেঃ) দুষ্টতাকে চূর্ণকারী ঈশ্বরের (মহিমা) মহত্তা দ্যুলোক আর পৃথিবীর মর্যাদার থেকেও বাহিরে (ররশ্পে) বিস্তার। (ন অস্য শত্রুঃ) এই ঈশ্বরের কোন শত্রু নেই (ন অস্য প্রতিমানম্) না ইহার কোন প্রতিমা আছে। (পুরু-মায়স্য) অনন্ত জ্ঞানবান (সহ্যোঃ) আর সহন শক্তিবান বলবান ঈশ্বরকে ছেড়ে আর (প্রতিষ্ঠিঃ) আশ্রয় হয় না। অর্থাৎ সেই এক সবার আশ্রয়।।১২।।
এখন আসি প্রতিমানম্ শব্দের কি অর্থ করেছেন বৈদিককোষ
বৈদিককোষ প্রতিমানম্; পৃষ্টা ৬৪১।
পরিমাণসাধনানম্ ৪ ১৮ ৪ সাদৃশ্য পরিগান বা ১ ৩২ ৩ রামন্তাত্ প্রতিমীয়তে
পরিণীয়তে প্রতিক্রিয়তে গেন তত্ (স্ব-সুখমন্তরিক্ষ বা) ১ ৫২ ১২
প্রতিমীয়তে য়ত্ (জগত্) ১ ১০২ ৮ অতিসমর্থানামুপমা ১ ১০২ ৬
পরিমাণসাধক (ইন্দ্র=পরমেশ্বরী বিদ্যুদ্বা) ২ ১২.৯
পরিমাণসাধকম্ (জ্ঞানম্) ৩ ৩১ ৮ প্রতিমান অর্থাৎ পরিমাণের কর্তা (ঈশ্বর) আর্যাভি০ ১ ১৩,
ঋ০ ১ ৪.১৪ ১২, [প্রতি+মাঙ্মানে (জু০) ধাতো করণে ল্যুট্]
তাই সামবেদও ঘোষণা করছেন-
মা চিদন্যদ্ বি শংসত সখায়ো মা রিষণ্যত।
ইন্দ্রমিত্স্তোতা বৃষণং সাচ সুতে মুহুরুক্থা চ শংসত।।১০।।
সামবেদ ২৪২
পদার্থঃ হে (সখায়ঃ) মিত্র! তুমি (অন্যত্) দ্বিতীয় কোন বস্তু পাথরের মূর্তি, নদী, পর্বত ইদিকে (মা চিত্) না কখনো (বি শংসত) উপাস্য রূপে পূজা করো, (মা রিষণ্যত) যে উপাসনীয় নয় তাহার উপাসনা করে হানি প্রাপ্ত করো না। (সুতে) জ্ঞান, কর্ম আর ভক্তির রস নিষ্পাদিত হয়ে (সচা) সাথে মিলে (বৃষণম্) সুখবর্ধক (ইন্দ্রম্ ইত্) পরমেশ্বরেরই (স্তোত) স্তুতি-উপাসনা করো আর (শংসত) গান করো।।১০।।
ভাবার্থঃ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র আর জগতে যে সম্মানের যোগ্য তাহাকে সম্মান তো করাই উচিত, কিন্তু তাহাদের মধ্য থেকে কাউকে পরমেশ্বরের রূপে পূজা করা উচিত নয়, না নদী, বৃক্ষ, পর্বত আদি জড় পদার্থকে পূজা করা উচিত নয়। ইন্দ্র আদি নামের দ্বারা বেদের মধ্যে প্রসিদ্ধ সুখবর্ষী এক জগদীশ্বরই পুনঃ-পুনঃ স্তুতি, প্রার্থনা, অর্চনা আর উপাসনা করার যোগ্য।।১০।।
ভাষ্যঃ আচার্য ড. রামনাথ বেদালঙ্কার বিদ্যামার্তণ্ড
।।ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি।।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ